888sport app download apk latest version : সুব্রত বড়ুয়া

উনি যে ফিরে এসেছিলেন-কেন উনি ফিরে এসেছিলেন, সে কথা আর্নেস্টো কি জানতে পেরেছিল অথবা পারেনি-আমি তা কখনো জানতে পারিনি, কিন্তু আসল ঘটনাটা ছিল, এর অল্প কিছুকাল পরেই সে তালায় চলে গিয়েছিল এবং সে গ্রীষ্মে আমরা ওকে একবার কিংবা দুবারের বেশি কখনো দেখতে পাইনি। ওর চোখের দিকে তাকানো সত্যিই কঠিন ছিল। এর কারণ বোধ হয় ছিল হুলিও আমাদের মাথায় যে কথাটি ঢুকিয়ে দিয়েছিল সেটি-কারণ এটি ছিল তারই একটি ভাবনা-সেই হুলিওর এবং এই অদ্ভুত মনের মধ্যে গোলমাল সৃষ্টিকারী নোংরা চিন্তাটি-আমাদের মনে অপরাধবোধ ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আমাদের ভাবনা-চিন্তাগুলো যে খুব রক্ষণশীল ছিল, তা কিন্তু নয়। সেই বয়সে এবং ঐ রকম একটি জায়গায় কেউ রক্ষণশীল থাকতে পারে না। কিন্তু কেবল সে কারণেই, কারণ আমরা সত্যিই রক্ষণশীল ছিলাম না, কারণ আমাদের মধ্যে পবিত্রতা অথবা ধর্মানুরাগ বলতে কিছুই ছিল না এবং আসলে আমরা ছিলাম প্রায় অন্য সবারই মতো, সেই ভাবনাটির মধ্যে কেমন যেন      অস্বস্তিকর একটা কিছু ছিল। সে যা-ই হোক না কেন ব্যাপারটা ছিল তমসাবৃত অন্ধকারের মতো, নির্মম। সর্বোপরি আকর্ষণীয়।

সে অনেক আগের কথা। আলাবামা তখনো সেখানে ছিল, শহরের ঠিক বাইরে হাইওয়ের পাশে সেই জায়গাটায়। আলাবামা ছিল নিরীহ একটা রেস্তোরাঁ, নিরীহ দিনের বেলায়, এই পর্যন্ত অন্তত, কিন্তু রাত এগারোটার পর সেটি হয়ে উঠত একটি আদিম নাইট ক্লাব। এর আদিমতা লুপ্ত হয়েছিল কেবল তুর্কি লোকটি রেস্তোরাঁটির উপরের তলায় কয়েকটি কক্ষ তৈরি করার এবং সেখানে মেয়েমানুষ এনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়।

লোকটি একটি মহিলাকে এনে তুলেছিল সেখানে; মাত্র একজন।

‘না।’

‘হ্যাঁ। একজন মহিলা।’

‘কোথায় সে অই মেয়ে মানুষটিকে পেয়েছিল?’

হুলিওর মুখে ফুটে উঠল সেই রহস্যময় ভাব যা আমরা খুব ভালোভাবেই চিনতাম-কারণ ওর ছিল বিশেষ ধরনের হাবভাব, শব্দ, গলার স্বর, যা ছিল ওর বিশেষত্ব এবং ওকে ঈর্ষণীয় করে তুলেছিল, অনেকটা একজন প্রাদেশিক ব্রুমেল-এর মতো-এবং এরপর গলার স্বর নামিয়ে সে জিজ্ঞেস করেছিল :

‘আর্নেস্টো কোথায়?’

আমি বললাম : গ্রামে গেছে। আর্নেস্টো, প্রায় সময়ই, তালায় ওদের খামারে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে আসত। এটা সে করছিল ওর বাবার সাথে তাঁর স্ত্রীর সেই ঘটনাটা ঘটে যাবার পর থেকে, যখন উনি শহরে আসতে অস্বীকার করেছিলেন। আমি বললাম : ও-তো গ্রামে গেছে, এবং এরপরে জিজ্ঞেস করলাম : ‘এর সঙ্গে আর্নেস্টোর কী সম্পর্ক?’

হুলিও একটা সিগারেট ধরিয়েছিল। হাসছিল সে : ‘তোমরা কি জানো অই মহিলাটি কে, তুর্কি লোকটা কে?’

অ্যানিব্যাল ও আমি পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর্নেস্টোর মায়ের কথা এবার আমার মনে পড়ল। আমরা কেউ কোনো কথা বললাম না। চার বছর আগে ছোট ছোট শহরে যে-সব নাটকের দল ঘুরে বেড়ায় তাদেরই একটির সঙ্গে উনি চলে গিয়েছিলেন। খারাপ মেয়ে-আমার দাদিমা তখন ওঁর সম্পর্কে বলেছিলেন। উনি ছিলেন সুন্দরী : কালো এবং কিছুটা স্থূলাঙ্গিনী, আমার মনে পড়ল এবং তাঁর বয়সও খুব একটা বেশি ছিল না, সম্ভবত চল্লিশ অথবা তার কাছাকাছি। কে জানে।

‘বেশ্যা, হা হা।’

আমাদের মধ্যে নীরবতা নেমে এলো। আর তখনই হুলিও কথাটি আমাদের বলল। অথবা সম্ভবত আমরা তার আগেই সেটি চিন্তা করেছিলাম।

‘উনি যদি ওর মা না হতেন …।’

কেবল এই কথাটিই বলেছিল সে।

কে জানে! হয়তো আর্নেস্টো ব্যাপারটা জানতে পেরেছিল, কেননা অই গ্রীষ্মে আমরা ওকে মাত্র একবার কি দুবার দেখেছিলাম-পরে, সবাই বলছিল, আর্নেস্টোর বাবা তাঁর সবকিছু বেচে দিয়েছিল এবং কেউ আর কখনো ওদের কথা শোনেনি-এবং এর কিছুকাল পর আমরা ওকে দেখেছিলাম। ওর চোখের দিকে তাকানো সত্যিই খুব কঠিন ছিল। ‘কিসের জন্য দোষ দেবো? বেশ্যা একটা। আর ছ’মাস ধরে আছেন ওই আলাবামায় এবং আমাদের যদি তুর্কি লোকটার আর একজন মেয়েলোক খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে তদ্দিনে বুড়ো হয়ে মরেই যাবো আমরা।’

এরপর হুলিও আরো বলেছিল, আমাদের যা দরকার হবে তা হলো একটা গাড়ি, তারপর আমরা যাবো, পয়সা দেবো, আর কি। আর আমাদের যদি ওর সঙ্গে যাওয়ার সাহস না থাকে তাহলে ও এমন আর কাউকে খুঁজে বের করবে যে আমাদের মতো ভীতুর ডিম নয়, আর অ্যানিব্যাল এবং আমি ওকে আমাদেরকে ভীতু বলতে দিতে পারি না।

‘কিন্তু উনি আর্নেস্টোর মা।’

‘ওর মা! কী রকম মা? একটা শূকরীরও বাচ্চা থাকে।’

‘আর শূকরী ওদেরকে খেয়ে ফেলে।’

‘অবশ্যই ওদের খেয়ে ফেলে। তাতে কি?’

‘আর ওটা নিয়ে ভাববার কি আছে? আর্নেস্টো বড় হয়েছে আমাদের সাথে।’

আমরা সবাই যখন একসাথে খেলতাম সেই সময়কার কথা আমি কিছু বললাম : এরপর আমি ভাবতে শুরু করলাম এবং কেউ যেন আমার চিন্তাটা শব্দ করে প্রকাশ করে ফেলল। সম্ভবত আমি     নিজেই :

‘মনে করে দেখো উনি কেমন ছিলেন …।’

অবশ্যই আমরা মনে করতে পারলাম। এগুলো আমরা মাসের পর মাস ধরে 888sport app download for android করে চলছিলাম : তিনি ছিলেন কালো এবং স্থূলাঙ্গিনী, মোটেই কোনো মায়ের মতো নয়।

‘তাছাড়া শহরের অর্ধেক লোকই এর মধ্যে ওখানে গিয়ে এসেছে। কেবল আমরাই এখনো …।’

আমরা : কেবল আমরাই। এই যুক্তিটার পেছনেই ছিল যেন প্ররোচনা; ওঁর ফিরে আসাটাও। অতঃপর, খুবই ঘৃণার কথা, সবকিছুই যেন কেমন সহজ হয়ে গেল। আজকে আমি চিন্তা করি- যদি অন্য কোনো মেয়েলোক হতো, তাহলে হয়তো ওখানে যাওয়ার কথা আমরা তেমন গুরুত্বের সাথে চিন্তাও করতাম না। কে জানে! এ কথা বলাও সাংঘাতিক একটা ব্যাপার, কিন্তু গোপনে আমরাও হুলিওকে সাহায্য করছিলাম যেন সে আমাদের স্বীকৃত হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে; কারণ বদমাইশি, অবমাননা, এসবের প্রতি দুর্দমনীয় আকর্ষণ, সবই ছিল সম্ভবত ব্যাপারটার মধ্যে আমাদেরই একজনের মা সম্পর্কিত ছিল বলে।

‘তোমার অই নোংরা মুখটি বন্ধ করে রাখো, বুঝলে?’ অ্যানিব্যাল বলল আমাকে।

এক সপ্তাহ পর হুলিও আমাদের আশ্বস্ত করল যে সে রাতেই গাড়িটা যোগাড় হয়ে যাবে। অ্যানিব্যাল এবং আমি বড় রাস্তার পাশে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

‘ও হয়তো শেষ পর্যন্ত সটকে পড়েছে।’

‘সম্ভবত গাড়িটা যোগাড় করতে পারেনি ও।’

মনে পড়ল, প্রায় ঘৃণার সাথেই কথাটা বলেছিলাম আমি; কিন্তু এ অনেকটা যেন আবার প্রার্থনার মতোই: সম্ভবত সে সটকে পড়েছে। অ্যানিব্যালের গলাটা কেমন যেন অদ্ভুত শোনাল, অন্যরকম-নিরুৎসুক :

‘ওর জন্য সারারাত দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না আমি; দশ মিনিটের মধ্যে যদি ও না আসে, তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।’

‘মহিলা দেখতে কেমন এখন?

‘কে, ওর … মহিলাটি?

সে প্রায় বলেই ফেলেছিল : ওর মা। ওর মুখে আমি কথাটা দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু ও বলেছিল-মহিলাটি। দশ মিনিট অনেক সময়। আর্নেস্টোর সঙ্গে আমরা যখন খেলা করতাম সেই সময়গুলোর কথা ভুলে যাওয়া সত্যিই কঠিন, আর অই কালো, স্থূলাঙ্গিনী মহিলাটি আমাদের বলতেন-আমরা দুধ আর বাড়িতে তৈরি কেক খাবার জন্য অপেক্ষা করব কি-না। সেই কালো মহিলা, স্থূলাঙ্গিনী।

‘এটা খুব বাজে ব্যাপার, জানো?’

‘তুমি ভয় পাচ্ছো,’ আমি বললাম।

‘না, ভয় না; অন্য একটা কিছু।’

আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। ‘এসব মহিলার সবারই বাচ্চা থাকে। কারো না কারো মা তাকে হতেই হবে।’

‘এটা একই ব্যাপার নয়। আমরা আর্নেস্টোকে চিনি।’

আমি বললাম যে, ওটা সবচেয়ে বাজে কোনো ব্যাপার নয়। দশ মিনিট। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো উনি আমাদের চেনেন, আর উনি তো আমাদের দিকে তাকাবেন। হ্যাঁ, আমি জানি না কেন, তবে একটা ব্যাপারে আমি যেন নিশ্চিত ছিলাম : উনি যখন আমাদের দিকে তাকাবেন, তখন কিছু একটা ঘটবে।

অ্যানিব্যালকে তখন ভীত দেখাচ্ছিল। দশ মিনিট অনেক দীর্ঘ সময়। সে জিজ্ঞেস করল :

‘উনি যদি আমাদের বের করে দেন, তাহলে কি হবে?’ আমি এর জবাব দিতে যাচ্ছিলাম আর ঠিক তখনই আমার পেটের মধ্যে কিছু একটা জট পাকিয়ে যাচ্ছিল যেন : বড় রাস্তার দিক থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে সাইলেন্সারহীন একটা গাড়ির গর্জনের শব্দ শোনা গেল।

‘এটা হুলিও,’ আমরা একসঙ্গে বলে উঠলাম। গাড়িটি ঝড়ের মতো একটা বাঁক নিল। এর সবকিছুই ঝড়ের মতো : উঁচু বিম, হর্ন, এগ্ঝস্ট। আমরা       সবাই চাঙ্গা হয়ে উঠলাম। ও যে বোতলটা সঙ্গে এনেছিল সেটা দেখে আমাদের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল।

‘এটা চুরি করেছি আমাদের বুড়োটার কাছ থেকে।’

ওর চোখ দুটি জ্বল জ্বল করছিল। প্রথম একটি চুমুকের পর আমাদের চোখগুলোও জ্বল জ্বল করে উঠল। পপলার স্ট্রিট ধরে রেলরোড ক্রসিংয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা। যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন ওই মহিলার চোখ দুটিও জ্বল জ্বল করত, অথবা সম্ভবত আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন আমি ওগুলো জ্বল জ্বল করতে দেখেছি। উনি মেক-আপ করতেন, বেশ ভারি মেক-আপ। বিশেষত লিপস্টিক।

‘মনে আছে, উনি সিগারেট খেতেন?’

আমরা সবাই একই জিনিস চিন্তা করছিলাম, কারণ এ কথাটা আমি বলিনি; অ্যানিব্যাল বলেছিল। আমি হ্যাঁ বলেছিলাম যে, কথাটা আমার মনে আছে এবং আমি আরো বললাম যে, তোমাকে কোনো না কোনোভাবে শুরু করতে হবে।

‘ওখানে পৌঁছতে কতক্ষণ লাগবে আর?’

‘দশ মিনিট।’

এবং আবার সেই দীর্ঘ দশ মিনিট; কিন্তু এখন তা দীর্ঘ অন্যভাবে। আমি ঠিক জানি না। হয়তো আমার সবকিছু মনে পড়ছিল বলেই, আমরা সবাই 888sport app download for android করছিলাম সেই বিকেলের কথা যখন তিনি মেঝে পরিষ্কার করছিলেন। তখন ছিল গ্রীষ্মকাল এবং যখন তিনি শরীরটাকে বাঁকিয়ে নিচু হচ্ছিলেন তখন শরীর থেকে তাঁর পোশাকটা সরে যাচ্ছিল আর আমরা একে অন্যকে কনুই দিয়ে ঠেলা মারছিলাম।

‘এটা একটা শাস্তি’-অ্যানিব্যাল তোমার গলার স্বরে যেন কোনো জোর ছিল না-‘আর্নেস্টোর নামে একটা প্রতিশোধ। ঠিকই বুঝতে পারবে, গালি।’

‘শাস্তি! তুমি কি ঠাট্টা করছো নাকি?’

কেউ যেন, আমি ভাবলাম এ যেন আমি, বেরিয়ে এলো

স্থূল ও কুরুচিকর এক অশ্লীলতা নিয়ে। অবশ্যই এ আমি। আমরা তিনজন সশব্দে হাসতে লাগলাম। হুলিও গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিল।

‘উনি যদি আমাদের বের করে দেন তাহলে কি হবে?’

‘গাধার মতো কথা বলো না। যে মুহূর্তে উনি ওরকম কিছু একটা করবেন, আমি তুর্কিটাকে ডেকে এমন হৈচৈ বাধিয়ে দেবো যে, ওরা খদ্দেরের সাথে খারাপ আচরণের জন্য ওকে ভালোমতো প্যাঁদানি দেবে।’

সে সময়ে খুব বেশি লোক পানশালায় ছিল না : কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান এবং দুজন কী তিনজন ট্রাক ড্রাইভার; শহরের কেউ নয় এবং কী জানি কেন, এতে আমি বেশ সাহসী হয়ে উঠলাম। শাস্তিযোগ্য নয়। কাউন্টারের পেছনের স্বর্ণকেশী মেয়েটির দিকে চেয়ে আমি চোখ টিপলাম; হুলিও এর মধ্যে, তুর্কিটার সঙ্গে কথা বলছিল। তুর্কিটা কয়েক সেকেন্ড আমাদের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখল। অ্যানিব্যালের বেপরোয়া চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সেও সাহসী হয়ে উঠেছে। তুর্কিটি স্বর্ণকেশীকে বলল :

‘ওদের ওপরে নিয়ে যাও।’

স্বর্ণকেশী সুন্দরী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিল ঃ ওর পা দুখানার কথা আমার মনে আছে এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় কিভাবে তার নিতম্ব দুলছিল। আমার আরো মনে আছে আমি কিছু খারাপ কথা বলেছিলাম, আর মেয়েটিও তেমনি একটা কিছু বলে জবাব দিয়েছিল, যা (হয়তো গাড়িতে ব্রান্ডি খাওয়ার কারণে অথবা বারে জিন) আমাদের কাছে বেশ মজার বলে মনে হচ্ছিল। এরপর আমরা ওপরে একটি কক্ষে গিয়ে পৌঁছলাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নৈর্ব্যক্তিক, যেন পরিত্যক্ত। সেখানে ছোট একটা টেবিল : একজন দন্তচিকিৎসকের ওয়েটিং রুম। আমি ভাবলাম-হয়তো আমরা দাঁত তুলতে যাচ্ছি। কথাটা আমি ওদেরও বললাম :

‘মনে হচ্ছে আমরা দাঁত তুলতে যাচ্ছি।’

হাসি চেপে রাখা অসম্ভব মনে হলো, কিন্তু আমরাচেষ্টা করলাম যাতে কোনো গোলমাল না হয়। কথা বলছিলাম আমরা ফিসফিস করে।

‘গির্জার মতো,’ বলল হুলিও এবং আবার আমরা ভাবলাম যে এটা ভারি মজার একটি ব্যাপার; তবে অ্যানিব্যাল মুখে হাত দিয়ে এবং নাসিকার এক ধরনের শব্দ করে যখন অন্যদের বলল, তেমন হাসির ব্যাপার আর কখনো নয়।

‘এখন যদি পাদ্রি সাহেবও এখানে এসে হাজির হন, তাহলে কী হবে?’

হাসতে হাসতে আমার পেটে খিল ধরে গিয়েছিল এবং গলাও গিয়েছিল শুকিয়ে। আমি ভাবলাম। কিন্তু হঠাৎ আমরা সবাই চুপ হয়ে গেলাম। ভেতরে যে লোকটি ছিল সে বেরিয়ে এসেছিল। বেঁটে-খাটো নাদুস-নুদুস একটা লোক, শূকরছানার মতো। তৃপ্ত একটা ছোট শূকর। কক্ষের দিকটায় মাথা হেলিয়ে ইঙ্গিত করে চোখ ঘুরিয়েছিল সে, আত্মতৃপ্তির সাথে ঠোঁট কামড়েছিল এবং যেন কিছুটা বীতস্পৃহ।

সিঁড়িতে লোকটির পায়ের শব্দ তখনো শোনা যাচ্ছিল। হুলিও বলল :

‘কী ব্যাপার?’

আমরা একে অপরের দিকে তাকালাম। অই মুহূর্তের আগে পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝতে পারিনি অথবা নিজেকে বুঝতে দিইনি যে, আমরা একা হয়ে যাবো, আলাদা-এটাই: আলাদা-মহিলাটির সামনে। আমি ঘাড় ঝাঁকালাম।

‘আমি কিছুই পরোয়া করি না। কাউকে না।’

আধখোলা দরজার পেছন থেকে আমরা ফসেট থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। শৌচাগার। অতঃপর কোনো শব্দ নেই এবং আলো এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমাদের চোখের ওপর। দরজাটা পুরোপুরি খুলে গেল। সেখানে মহিলাটি দাঁড়িয়ে। আমরা ওঁর দিকে তাকালাম, আকর্ষণীয়া। আধখোলা গাউন এবং সেই গ্রীষ্মের বিকেল যখন তিনি ছিলেন আর্নেস্টোর মা এবং পোশাকটি তাঁর শরীর থেকে সরে গেছে আর তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করছেন আমরা দুধ আর কেক খাবো কি-না। তবে ব্যতিক্রম এই যে মহিলাটি এখন স্বর্ণকেশী। স্বর্ণকেশী এবং পৃথুলা। তাঁর মুখে পেশাদারি হাসি; কুৎসিত এক হাসি।

‘ঠিক আছে? …’

তাঁর গলার স্বর অপ্রত্যাশিতভাবে চমকে দিল আমাকে: সেটি একেবারেই বদলায়নি। তবে তাঁর গলার স্বরে কিছু একটা বদলে গেছে। মহিলা আবার হাসলেন এবং আবার বললেন, ‘ঠিক আছে।’ আর এটি ছিল আদেশের মতো; তপ্ত এবং চটচটে আদেশ। হয়তো সেজন্যই আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে থাকলাম। তাঁর গাউন, আমার মনে আছে, ছিল কালো, প্রায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ।

‘আমি যাবো’, অস্ফুটভাবে বলল হুলিও এবং দৃঢ়সংকল্প হয়ে সে এগিয়ে গেল।

মাত্র দু কদম এগিয়েছে সে- দু কদমের বেশি নয়। কারণ মহিলাটি এবার পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে আমাদের মুখের দিকে তাকাল এবং সে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। সে দাঁড়িয়েছিল কেন কে জানে : ভয়ে, সম্ভবত লজ্জায়, অথবা আকস্মিক প্রতিক্রিয়ায় এবং সেটিই ছিল সবকিছুর শেষ। কারণ উনি আমাদের দেখছিলেন; এবং আমি জানতাম, যখন উনি আমাদের দিকে তাকাবেন তখন কিছু একটা ঘটবে। আমরা স্তব্ধ হয়ে নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইলাম, যেন মেঝের সাথে পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে আমাদের এবং আমাদের মুখ দেখে, জানি না আমাদের মুখে কি ফুটে উঠেছিল, তাঁর মুখের চেহারা ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে লাগল, বিস্ময়ভরা ভীতচকিত দৃষ্টি ফুটে না ওঠা পর্যন্ত। প্রথমে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাঁর চোখে ছিল বিহ্বল ভাব অথবা হতচকিত দৃষ্টি। অতঃপর যেন কিছু একটা বুঝে ফেললেন তিনি এবং ভয়ার্তভাবে যন্ত্রণার্ত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমাদের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর কথা বললেন তিনি। জিজ্ঞেস করলেন- আর্নেস্টোর কিছু হয়েছে কি-না।

তাঁর গাউনটা গুটিয়ে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলেন  তিনি।

আবেলার্দো ক্যাস্টিল্লো (জন্ম, ১৯৩৫) বুয়েন্স আয়ার্স প্রদেশের সান পেড্রো নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে লিখতেন 888sport app download apk। পরে সেগুলি পুড়িয়ে ফেলেন। বাইশ বছর বয়সে তিনি লেখেন তাঁর প্রথম নাটক El otro Judas (The other Judas)। ১৯৫৯ সালে তাঁর অপ্রকাশিত নাটকের জন্য তিনি Gaceta Literaria পত্রিকা থেকে প্রথম 888sport app download bd লাভ করেন। সে বছরই তিনি প্রকাশ করেন ঊষ মৎরষষড় ফব ঢ়ধঢ়বষ (The Paper Cricket) নামে একটি পত্রিকা, যা ছয় 888sport free bet প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ বন্ধ করে দেয়। ১৯৬১ সালে তিনি El escarabajo de oro (The golden beetle) নামে আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। সেটি এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৬৩ সালে ওংৎধভবষ নামে অ্যাডগার অ্যালান পো-এর জীবনভিত্তিক নাটকের জন্য তিনি প্যারিসে Contemporary Latin American Dramatists Association প্রতিযোগিতায় প্রথম 888sport app download bd লাভ করেন। নাটকটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৬৬ সালে বুয়েন্স আয়ার্সে বিপুল সমাদর লাভ করে। ১৯৬৮ সালে তাঁর তিনটি নাটক একখণ্ডে প্রকাশিত হয় : অ চধৎঃরৎ ফব ষড়ং ংরবঃব (অভঃবৎ ংবাবহ ঙ’পষড়পশ), ঝড়নৎব ষধং চরবফৎধং ফব ঔবৎরপড় (On the stones of Jericho) এবং El Otro Judas। 888sport cricket BPL rate বছর বয়সে লেখা তাঁর ক্ষুদ্র 888sport alternative link La casa de ceniæa (House of ashes) প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে।

আবেলার্দো ক্যাস্টিল্লো-এর প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম La otras Puertas (1961, The other doors)। এখানে অনূদিত Earnesto’s Mother গল্পটিও এতে রয়েছে। এ বইটির জন্য তিনি Casa de las Americas 888sport app download bd লাভ করেন। বইটি বেশ কয়েকবার পুনর্মুদ্রিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থের নাম Cuenfos Crueles (Cruel Stories, 1966)। ক্যাস্টিল্লোকে ল্যাটিন আমেরিকার মেধাবী লেখকদের মধ্যে একজন মনে করা হয়। প্রতিটি সংস্করণে গল্পের পরিমার্জনা করা তাঁর বৈশিষ্ট্য।