ভূমিকা ও 888sport app download apk latest version : মনজুরুল হক
পেছনে আমাদের তাড়া করছে ভাগ্য,
ছুরি হাতে এক উন্মাদের মতো।
আর্সেনি আলেকজান্দ্রোভিচ তারকোভস্কি হচ্ছেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম সারির রুশ কবিদের একজন। 888sport app download apkর 888sport app download apk latest versionক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রাশিয়াজুড়ে। তবে বৃহত্তম রুশ পরিম-ল, যেটাকে অন্যভাবে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবেও আজকাল আখ্যায়িত করা হয়, সেই ভূ-পরিসীমার বাইরে দীর্ঘকাল ধরে তিনি কিছুটা অবহেলিত থেকে গেছেন হয়তো ব্যবহারযোগ্য অর্থের রাজনৈতিক পরিচয় তাঁর না থাকার কারণে। অনেক অপাঙ্ক্তেয় রুশ কবিও একসময় পশ্চিমে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন যতটা না এদের কাব্যপ্রতিভার গুণে, তার চেয়ে অনেক বেশি বরং সোভিয়েত সমাজব্যবস্থার সমালোচক হওয়ার কল্যাণে। তবে সময়ের চলার গতির সঙ্গে তাল রেখে চলা পরিবর্তনের সঙ্গে এঁদের অনেকেই এখন হারিয়ে গেছেন রুশ 888sport live football নিয়ে চলা আলোচনা থেকে।
তারকোভস্কির জীবদ্দশায়ও অবশ্য এমনকি খোদ রাশিয়ায়ও বড় এক সময় ধরে তাঁর রচনা সেভাবে প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। তবে সেই অবহেলার বাধা অতিক্রমে আর্সেনি তারকোভস্কির জন্য সবচেয়ে বড় সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুত্র আন্দ্রেই তারকোভস্কির পরিচালিত একাধিক ছবিতে পিতার কাব্যের ব্যবহার। বিশেষ করে উনিশশো সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আন্দ্রেই তারকোভস্কির ছবি জিওর্কালা বা আয়নায় অন্তর্ভুক্ত কবির স্ব-কণ্ঠের বেশ কয়েকটি 888sport app download apkর আবৃত্তি যেন নতুন করে আবিষ্কৃত এই প্রতিভা সম্পর্কে রুশ কাব্য-প্রেমিকদের সচেতন করে তুলেছিল। জটিলতামুক্ত বর্ণনার মধ্য দিয়ে জীবনের গভীরতার অনুরণন ফুটে-ওঠা সেসব কাব্য পিতা তারকোভস্কিকে নিয়ে গিয়েছিল নতুন এক শীর্ষে।
আর্সেনি তারকোভস্কির জন্ম বিপস্নব-পূর্ব রাশিয়ায় উনিশশো সাত সালে কাজাখস্থানের সীমান্তবর্তী শহর এলিজাবেথগ্রাদে। আর্সেনির পিতা আলেকজান্দর তারকোভস্কি ছিলেন ব্যাংকের কেরানি এবং শখের মঞ্চ-অভিনেতা। এলিজাবেথগ্রাদে সে-সময়ে ছিল নারোদিনিকি নামে পরিচিত রুশ জাতীয়তাবাদী চিমত্মাধারার অনুসারী গোষ্ঠীর প্রাধান্য এবং তারকোভস্কির পিতাও এদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উনিশশো সতেরো সালের রুশ বিপস্নবের সময় নারোদিনিকিরা বলশেভিক নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। সেই অর্থে বলা যায় বিপস্নবের রুগ্ণ একটি স্রোতধারা তারকোভস্কি পরিবারে ছিল বহমান, যদিও পিতা-পুত্র কাউকেই সেটা স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। তবে অন্যদিক থেকে আবার উদার রাজনৈতিক ভাবনাচিমত্মা ও সেইসঙ্গে পিতার শখের মঞ্চাভিনয়ের কল্যাণে 888sport live chat-সংস্কৃতির আবহাওয়া বিরাজমান সেই পরিবারে বাল্যকাল থেকেই একধরনের 888sport live footballিক অনুপ্রেরণা আর্সেনি লাভ করেছিলেন।
রুশ বিপস্নবের সময় আর্সেনি তারকোভস্কির বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাব্য রচনায় তাঁর জড়িত হওয়ার সময়কাল হচ্ছে বিপস্নব-পরবর্তী রাশিয়া – 888sport live chat ও 888sport live footballে নতুন নানারকম নিরীক্ষামূলক ধারা যে-সময়ে রুশ সমাজে লক্ষ করা যায়। তবে আর্সেনি তারকোভস্কির সেরকম কোনো নব্য888sport live football আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণও কোথাও মেলে না। বরং তিনি ছিলেন অনেকটাই যেন নিভৃতচারী, যদিও বিপস্নব তাঁকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করতে পেরেছিল।
উনিশশো চবিবশ সালে তারকোভস্কি পারিবারিক নিবাস ছেড়ে মস্কোয় চলে যান। বিপস্নব ততদিনে সবরকম প্রতিকূলতা পার করে দিয়ে শক্ত এক ভিত্তির ওপর বলশেভিক নেতৃত্বকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। মায়াকোভস্কি-ইয়েসেনিনের মতো কবিরা তখন ব্যস্ত ছিলেন তাঁদের পরীক্ষামূলক কাব্য রচনা জনতার সামনে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে। সেরকম এক সময়ে মস্কো চলে আসার পর রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানির শ্রমিকদের মুখপত্র গুদোকে একটি চাকরিও আর্সেনি তারকোভস্কির মিলে যায়। এরপর থেকে সেই পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখায় পাশাপাশি 888sport live footballচর্চায় তিনি নিয়োজিত হলে সেই সময়ের নেতৃস্থানীয় যে-কয়েকজন কবির সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওসিপ মান্দেলশ্তাম এবং মারিনাত সিভিতায়েভা। গুদোকের কাঠখোট্টা সম্পাদকীয় নিবন্ধে প্রাণসঞ্চার করার উদ্দেশ্যে মাঝেমধ্যে 888sport app download apkও তিনি সেখানে ঢুকিয়ে দিতেন। উনিশশো পঁচিশ সালে চাকরির পাশাপাশি নতুন করে আবারো ছাত্রজীবনেও তিনি ফিরে গিয়েছিলেন। এই পর্যায়ে তাঁর বিদ্যাপীঠ ছিল মস্কোয় নতুন চালু হওয়া 888sport live football ও সংস্কৃতিবিষয়ক ইনস্টিটিউট, যেখানে তিনি রাশিয়ার প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীর 888sport live football নিয়ে লেখাপড়া করেন। আর্সেনি তারকোভস্কির কাব্য 888sport app download apk latest versionের হাতেখড়ি সেখান থেকেই, যখন তিনি জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, তুর্কমেন ও 888sport app কিছু ভাষার 888sport app download apk রুশ ভাষায় 888sport app download apk latest version করেছিলেন।
আর্সেনি তারকোভস্কির নিজের বর্ণনায় উলেস্নখ পাওয়া যায় যে, 888sport app download apk তিনি লিখতে শুরু করেছিলেন একেবারে শৈশবে কমোডে বসার সময় থেকে। বিপস্নবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তাঁদের নারোদিনিকি পরিবারে কাব্য ছিল একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের খুবই স্বাভাবিক এক মাধ্যম। একে অন্যকে তারা ছন্দের ভাষায় চিঠি লিখতেন এবং পরিবারের বিভিন্ন বিষয়াবলি নিয়ে তাদের কথাবার্তাও চলত অনেকটা যেন কাব্যিক ধাঁচে।
যৌবনে উত্তরণের পর থেকে নিয়মিত 888sport app download apk লিখে গেলেও জীবদ্দশায় তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন মূলত একজন সফল 888sport app download apk latest versionক হিসেবে। ফার্সি ভাষার কবি নেজামি এবং পোল্যান্ডের আদাম মিশকয়েভিচের কাব্যের রুশ 888sport app download apk latest version হচ্ছে তাঁর খুবই উলেস্নখযোগ্য কিছু কাজ। তবে মৌলিক কাব্য রচনার দিক থেকে তিনি তাঁর নিজের প্রজন্মের কাব্যিক ঐতিহ্যকে কেবল সমুন্নতই রাখেননি, বরং একই সঙ্গে নিজস্ব সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতার আলোকে সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করে গেছেন। ফলে তাঁর কাব্য হয়ে উঠেছে এমন গভীর আত্মানুভূতির প্রকাশ, আন্না আখমাতোভা যেটাকে উলেস্নখ করেছেন সমকালীন পাঠকের জন্য নিবেদিত খুবই মূল্যবান এক উপহার হিসেবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গুদোকের কাজ ছেড়ে যুদ্ধ ফ্রন্ট সংক্রান্ত একটি দৈনিকে সমর প্রতিবেদকের কাজে তিনি যোগ দেন। জার্মান বাহিনীর পূর্বমুখী অগ্রসর হওয়ার সময়ের তীব্র লড়াইয়ে সৈনিক হিসেবেও তাঁকে লড়তে হয়েছে এবং একাধিকবার আহতও তিনি হয়েছিলেন। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পাওয়া অবস্থায় ক্যাপ্টেনের পদমর্যাদায় তাঁকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উনিশশো চলিস্নশ সালে তিনি সোভিয়েত লেখক ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করেন। তবে তারপরও কাব্যকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ারে তিনি রূপান্তরিত হতে দেননি। এক বছর পর হিটলারের জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে বসলে শুরুর কিছুদিন যুদ্ধ ফ্রন্টের সাংবাদিকতায় নিয়োজিত থেকে পরবর্তী সময়ে সরাসরি যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। মস্কোর কাছের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর তাঁর একটি পা শেষ পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে অবশ্য আর্সেনি তারকোভস্কির প্রতি সদয় কোনো অবস্থাতেই ছিল না। ততদিনে কবি হিসেবে পরিচিতি পেলেও আগে থেকে জুটে যাওয়া 888sport app download apk latest versionকের তকমা নিয়েই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল এবং নিজের কোনো কাব্যগ্রন্থ তিনি অনেকদিন প্রকাশ করতে পারেননি। অবশেষে উনিশশো বাষট্টি সালে নানারকম বাধা পার হয়ে প্রথম কাব্যগ্রন্থ তুষারপাতের আগে প্রকাশের অনুমতি তিনি পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য তাঁর আরো বেশ কয়েকটি মৌলিক 888sport app download apkর বই প্রকাশিত হয় এবং বিলম্বে হলেও কবি হিসেবে স্বীকৃতি তিনি পেয়ে যান। পিতার সেই কাব্য-স্বীকৃতির পেছনে অবশ্য পুত্র, খ্যাতনামা live chat 888sport-পরিচালক আন্দ্রেই তারকোভস্কির যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, ‘জিওর্কালা’য় পিতার স্বকণ্ঠের আবৃত্তিতে তাঁর লেখা কয়েকটি 888sport app download apkর অন্তর্ভুক্তি অজানা এক আর্সেনি তারকোভস্কিকে রুশ কাব্যপ্রেমিকদের সামনে নতুন করে নিয়ে এসেছিল।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই পিতার জীবদ্দশায় উনিশশো ছিয়াশি সালের ডিসেম্বর মাসে সুযোগ্য পুত্র আন্দ্রেই তারকোভস্কির পুত্রের অকালমৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল এবং আরো যে অল্প কয়েকটি বছরের জীবন এরপর তিনি লাভ করেছিলেন, শোকের সেই জীবন হয়ে উঠেছিল নিষ্ফলা। উনিশশো উননববই সালের সাতাশ মে আর্সেনি তারকোভস্কির মৃত্যু হয় এবং মস্কোর শহরতলি পেরেদেলকিনোয় তিনি শায়িত আছেন বিংশ শতাব্দীর রুশ কাব্যের আরেক দিকপাল বরিস পাসেত্মরনকের কবরের ঠিক পাশে। পুত্রের পরিচালিত আয়না ছবিতে অনেকটা খ্যাতির আড়ালে থেকে যাওয়া এই কবির নিজের কণ্ঠের সেই কয়েকটি লাইন মৃত্যুর এত বছর পরেও ভক্তদের আন্দোলিত করে, যেখানে তিনি বলেছেন :
অশুভ ইঙ্গিত কিংবা ভয়ের পূর্বাভাসে আমার নেই বিশ্বাস।
না অপবাদ না বিষ, কোনোটা থেকেই নই আমি
পলায়নপর। মৃত্যুর নেই কোনো অসিত্মত্ব।
অমর আমরা সবাই। এমনকি সবকিছুই।
জাপানের বিখ্যাত সংগীতকার রিউইচি সাকামোতো দুই হাজার এগারো সালের ভূমিকম্প আর সুনামিতে নিহতদের 888sport app download for androidে যে-সংগীত রচনা করেছিলেন, আর্সেনি তারকোভস্কির বিশেষ এই 888sport app download apkটি ছিল সেই সংগীতের পেছনের অনুপ্রেরণা। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি পিতা আর্সেনি তারকোভস্কি অমর হয়ে আছেন তাঁর অসাধারণ সব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে, ঠিক যেভাবে পুত্র আন্দ্রেই তারকোভস্কিকে অমরত্ব এনে দিয়েছে তাঁর অসম্ভব সুন্দর কিছু ছায়াছবি।
নদীর তীরে
সে ছিল নদীর তীরে বসে সেইসব নলখাগড়ার ভিড়ে
কৃষকরা যা কাসেত্ম দিয়ে কেটে নেয় কুঁড়েঘরের ছাদে মেলে দিতে।
সবকিছু সেখানে ছিল শান্ত, মন তার ছিল
আরো বেশি ধীর, আরো বেশি নিরুদ্বেগ।
জুতো খুলে নিয়ে
পা রেখেছিল সে নদীর পানিতে, আর ঠিক তখনই
পানির ভাষা যে তার জানা নেই, তা না বুঝেই
কথা বলতে শুরু করে পানি।
সে মনে করে নিয়েছিল পানি বুঝি মূক, বাকহীন,
ঘুমন্ত মাছের আবাসের নেই কোনো ভাষা,
মনে করে নিয়েছিল সেই পানি যার ওপর ভেসে বেড়ায় নীল ফড়িং
আর ধরে মশা কিংবা পতঙ্গ,
যা দিয়ে মুখ ধুতে চাইলে নির্দ্বিধায় তা করে নিতে পার তুমি,
পান করতে চাইলে করে নিতে পার পান, পানির তো আছে কেবল এটুকুই। তবে সত্যি বলতে কি,
পানির সেদিনের সেই ভাষা যেন ছিল এক চমক,
যেন কোনো একটি ঘটনা নিয়ে গল্প বলে যাওয়া,
কিছু একটা শাশ্বত যা কিনা
মনে হবে তারার আলো, অভ্রের দ্রম্নত হারিয়ে যাওয়া স্ফুরণের মতো
যেন বা দুর্যোগের ভবিষ্যৎ কথন।
আর সেখানে ছিল শৈশব থেকে ভেসে আসা এমন কিছু,
বয়সের হিসাবে জীবন গুনে নিতে যা নয় অভ্যস্ত
যা কিনা নামহীন
চলে আসে রাতে স্বপ্ন দেখার আগে
নিজেকে নিয়ে ভাবা তোমার
প্রথম মিলনের ভয়ংকর, উদ্ভিজ ভাবনা থেকে।
ঠিক তেমনই ছিল সেদিন নদীর সেই পানি,
আর তার কথাবার্তা ছিল ধ্বনি মাধুর্যবঞ্চিত কিংবা অর্থহীন।
জীবন, জীবন…
অশুভ ইঙ্গিত অথবা ভয়ের পূর্বাভাসে আমার নেই বিশ্বাস।
না অপবাদ না বিষ, কোনোটা থেকেই নই আমি
পলায়নপর। মৃত্যুর নেই কোনো অসিত্মত্ব।
অমর আমরা সবাই। এমনকি সবকিছুই।
মৃত্যুতে ভীত হওয়ার নেই কারণ সতেরো বছরে কিংবা
সত্তরেও নয়। যা আছে তা হলো কেবল এই শূন্যতা আর এই সময়,
আরো আছে আলো;
না মৃত্যু, না অন্ধকার, সবই অসিত্মত্বহীন।
আমরা সবাই পৌঁছে যাব উপকূলে;
আমি হলাম তাদেরই একজন জাল যাকে টেনে নেবে
ঝাঁকবাঁধা অমরত্ব যখন কাটবে সাঁতার কাছাকাছি।
দুই
যদি গৃহে হয় তোমার বসবাস – ভেঙে পড়বে না তোমার সেই ঘর।
যে-কোনো শতাব্দীর একটিকে আমি ডাকব কাছে,
তারপর সেখানে প্রবেশ করে তৈরি করে নেব একটি বাড়ি।
এ-কারণেই তোমাদের স্ত্রী আর সমত্মানেরা
একই টেবিলে বসে আছে আমার সঙ্গে, –
আছে সেখানে পূর্বপুরুষ আর প্রপৌত্রেরাও :
এভাবেই ভবিষ্যৎ এখন হচ্ছে গড়া,
আমার এই হাত একটু উঁচুতে তুলে ধরলে,
আলোর পাঁচটি বিম্বের সবকটি থাকবে তোমার সঙ্গে।
যেনবা দারুবৃক্ষের মতো অতীতকে টেনে তুলতে
প্রতিদিন কাজে লাগিয়েছি আমি আমার এই কাঁধের হাড়,
লৌহগোলকে তৈরি শিকল দিয়ে মেপে নিই আমি সময়
আর হেঁটে যাই এর ওপর দিয়ে, যেন সেটা হচ্ছে পর্বতময় উড়াল।
তিন
সময়কে আমি ছেঁটে নিয়েছি নিজের সঙ্গে মিলিয়ে
সেত্মপজুড়ে উড়িয়ে ধুলো, হেঁটে গেছি আমরা দক্ষিণে,
দীর্ঘকায় আগাছা হয়েছে ক্রুদ্ধ, ঘোড়ার খুরে হুলের স্পর্শে
ঘাসফড়িং উঠেছে নেচে, আর পুরোহিতের মতো ভয় দেখিয়ে
আমাকে দিয়েছে ধ্বংসের অভিশাপ।
লাগামে বেঁধে নিয়েছি আপন ভাগ্যকে আমি;
এবং এমনকি ঠিক এখন, আসন্ন এই সময়েও,
যেনবা শিশুর মতোই রেকাবে আমি উঠে দাঁড়াই।
মৃত্যুহীনতায় তৃপ্ত আমি,
আমার এই রক্ত বহমান হবে যুগ যুগ ধরে।
তারপরও যে উষ্ণতায় আমি রাখতে পারি আস্থা, তেমন এক নিভৃত ছায়ার জন্য
আমার এই সমগ্র জীবন আমি স্বেচ্ছায় করব সমর্পণ,
ঠিক তখনই যখন তার উড়ন্ত সুচ
সুতার মতো আমাকে পেঁচিয়ে নেবে পৃথিবীর চারদিক জুড়ে।
মোমবাতি
হলুদ জিবের কম্পনে
মোমবাতি নিঃসরিত দ্রম্নত তালে
একই সেই খেলা তোমার-আমার জীবনে
হৃদয় ছড়ায় আগুন আর দেহ যায় গলে
সেখানে দাঁড়িয়ে থেকো না
প্রাণ যাবে তোমার!
বাতাস! শুয়ে পড়!
অভিশপ্ত জীবন!
ভালো লাগার জীবন!
কল্পনাতীত অদ্ভুত এই জীবন!
বন্যজীবন!
পায়ের তলার দূর্বাদল,
হে আমার নীল প্রজাপতি,
মেঘ, শহর, হ্রদ আর পাল তোলা নৌকার যত মেঘ
আমাকে দাও আরেকটু সময় যেন নিতে পারি নিশ্বাস
লোভী, অর্থহীন এই জীবনে আরেকটু থেকে যেতে দাও আমাকে
ভোদকার খোঁয়াড়ি
হাতে নিয়ে পিস্তল
অপেক্ষায় থাকি আমি জার্মান ট্যাঙ্কের আগমনের
হোক না সে পরিখা, এখানেই থেকে যেতে দাও আমাকে।
কাল সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম আমি তোমার,
ওরা ভেবেছিল আসবে না বুঝি তুমি আর,
মনে কি পড়ে, আবহাওয়ার ছিল সে কি দারুণ সমাহার?
যেনবা লেগেছে উৎসব! ওভারকোটের ছিল না দরকার।
আজ তুমি এলে, আর দ্যাখো
কী বিষণ্ণ ভাব দিনের এই চেহারায়,
বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে আলোর হারিয়ে যাওয়া অবেলায়,
গাছের বরফ জমা ডালে হীমেল জলের ছুটে যাওয়া…
ভাষা দেয় না সান্তবনা, রুমালে যায় না মুছে নেয়া।
হালকা হয়ে আসে দৃষ্টির স্বচ্ছতা – শক্তি আমার,
হীরার অদৃশ্য দুটি ফলক;
শ্রবণ হয়ে আসে ক্ষীণ, একদিন ছিল যা বজ্র
আর পিতার ঘরের নিশ্বাসে ভরপুর;
শক্ত পেশির বন্ধন হয়ে আসে শিথিল,
হাল বেয়ে ক্লান্ত ধূসর কোনো মোষের মতো;
আর রাতে কাঁধের পেছনে
জ্বলে ওঠে না আর দুটি ডানা।
আমি উৎসবে পুড়ে যাওয়া বাতি।
প্রভাতে জড়ো করে নিও আমার এই গলে যাওয়া মোম,
ওইসব পৃষ্ঠাই বলে দেবে তোমাকে
কীভাবে কাঁদবে তুমি, কখন হবে গর্বিত,
মনের আনন্দে বিলিয়ে দিয়ে জীবনের শেষ তৃতীয়াংশ
সহজেই পৌঁছে যাবে মৃত্যুর দুয়ারে,
আর বিশাল এই নীল ছাদের নিচে
মৃত্যুর পরেও জ্বলবে তুমি শব্দ হয়ে।
প্রতিকৃতি
কেউ নেই আশপাশে আমার।
দেয়ালে ঝুলছে কারো একটি ছবি।
বৃদ্ধার ঘুমন্ত চোখের ওপর দিয়ে
হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে যায় মাছি,
মাছি,
আর মাছি।
ভালো আছ – বলে উঠি আমি –
কাচের নিচের তোমার ওই স্বর্গে?
গালের ওপর দিয়ে গুটিশুটি হেঁটে যায় মাছি,
ভেসে আসে বৃদ্ধার উত্তর :
আর তুমি, তোমার এই নিঃসঙ্গ ঘরে
একাকী ভালো আছ তো?
ইভানের উইলো
যুদ্ধের আগে হেঁটে যেত ইভান এই জলাশয়ের পাশ দিয়ে
যেখানে ঝুলে আছে এক উইলো, কার সে গাছ – নেই জানা কারো।
কেন সে ছড়িয়ে ডালপালা জলাশয় ঘিরে – জানে না তো কেউ;
হয়তোবা যেন তা ইভানেরই গাছ।
তার পুলিনে পেঁচানো দেহ নিয়ে ফিরে আসে ইভান,
যুদ্ধের শিকার হয়ে – নিজেরই সেই উইলো গাছের নিচে।
ইভানের উইলো,
ইভানের উইলো,
সাদা নৌকার মতো ভেসে যায় জলাশয়ে।
বিশ্রামরত ঈগল
সেত্মপের ধু-ধু প্রান্তরে বসে আছে ঈগল
পুড়ে যাওয়া এক বাড়ির কালো চিমনির মাথায়।
তাহলে এই বুঝি হচ্ছে সেই বেদনা, যা আমি যেনে এসেছি শৈশব থেকে,
তিক্ত এই দৃশ্য, যেন সিজারের রোম –
কুঁজো এক ঈগল, এর বাইরে নেই কোনো ধুয়া, নেই ঘর…
এ-ও তো, হৃদয় আমার, সইতে হবে তোমাকে।
জাগতিক
ঈশ্বরের কোলে মাথা রেখে জন্মানোর
নিয়তি যদি হতো আমার,
মেঘের পুণ্যময় দুগ্ধ পানে লালিত হতাম আমি
প্রশ্রয়ে থেকে স্বর্গের ধাত্রীমাতার।
হতে পারতাম ঝর্ণা অথবা বাগানের দেবতা
কবর কিংবা শস্যের প্রহরায় রেখে নজর, –
তবে না, মানুষ আমি, অমরত্বের নেই আমার প্রয়োজন :
স্বর্গীয় ভাগ্য, সে তো ভয়ংকর।
আমি তৃপ্ত, কেউ আমার ঠোঁট করেনি সেলাই
দূরে রেখে আমাকে জাগতিক ক্রোধ আর তিক্ততার।
অলিম্পাসের বেহালা, দূর হও তুমি তাই,
প্রয়োজন নেই আমার তোমার এই সংগীত মূর্ছনার।
ছয়জনের জন্য পাতা এই টেবিল,
আছে গোলাপ, আছে স্ফটিক,
অতিথিদের দলে আছে
দুঃখ আর বিষাদ।
সাথে আছেন পিতা,
আছে ভ্রাতা আমার।
সময় গড়িয়ে যায়
ভেসে আসে শব্দ কড়া নাড়ার।
বারো বছর আগের মতোই
শীতল সেই হাত,
আর নীল রেশমি কাপড়ে ফুটে থাকা
পুরনো দিনের ভাঁজ।
আঁধার থেকে ভেসে আসে মদিরার কণ্ঠস্বর,
পানপাত্র গায় গান :
‘কী গভীর ভালো বেসেছি তোমাকে আমরা,
পার হয়ে গেছে কত দিন!’
পিতা হাসেন তাকিয়ে আমার দিকে,
ভ্রাতা পানপাত্রে ঢালে সুরা,
অঙ্গুরিহীন হাতের ছোঁয়ায়
আমাকে বলেন তিনি :
পায়ের গিঁটে ধরেছে জড়া,
বিনুনি হয়েছে মলিন।
মাটির নিচ থেকে যেন সুর তোলে
আমাদেরই কণ্ঠস্বর।
যুদ্ধের পর
বনের ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ যেমন
পত্রময় হাত প্রসারিত রাখে পাতার ফাঁক দিয়ে
আর ঝুঁকে পড়ে, লতাগুল্মের ওপর ছড়িয়ে দেয়
শাখা চারদিকের বিসত্মৃতি জুড়ে –
আমিও ঠিক তেমনি বেড়ে উঠি ধীরে। পেশি আমার
ফুলে ওঠে, বুকের ছাতি হয় প্রসারিত। দংশনের মদিরায় ভরা
নীল পানপাত্র থেকে, ফুসফুস আমার
টেনে নেয় তৃপ্তি শিরার ক্ষুদ্রাংশ পর্যন্ত, আর হৃৎপি- আমার
টেনে নেয় রক্ত ধমনি থেকে, ধমনি
ফিরিয়ে দিয়ে সেই রক্ত আবারো নেয় তা টেনে
এর সবটাই ছিল যেন ক্ষুদ্র এক সুখ ক্ষুদ্র এক শোকে ভরা
মানবদেহের সূচনা আর জটিলতায় এর উত্তরণ।
দুই
জীবনের সবকিছুর জন্য আমি হব পরিপূর্ণ,
উদ্ভিদ আর মানুষ উভয়ের জন্য,
তাদের সকলের জন্য, কাছে কোথাও মৃত্যুর পথে দাঁড়িয়ে যারা
এবং পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দূরে
মার্সিয়াসের মতোই কল্পনাতীত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে
জীবিত যাদের দেহ থেকে তুলে নেওয়া হয় ত্বক। এদের জন্য বিলিয়ে দিলে জীবন
এই জীবনে, আত্মপরিচয়ে কিংবা রক্তের ঋণে
হতে হবে না আমাকে আরো একটু বেশি দরিদ্র।
তবে আমি তো হয়েছি মার্সিয়াস, জীবিতদের মাঝে দীর্ঘকাল বেঁচে থেকে
হয়ে যাই মার্সিয়াস আমি।
তিন
কখনো গ্রীষ্মের উত্তাপে এলিয়ে দিয়ে দেহ
তাকাও যখন তুমি আকাশের দিকে, উত্তপ্ত হাওয়া যেন
দোলনার মতো ঝুলে থাকে মাথার ওপরে, তুমি খুঁজে পাও
অনুভূতির অদ্ভুত এক অর্থ :
সংকীর্ণতার মাঝে আছে ফাঁক, আর সেই ফাঁক দিয়ে চলে আসে
বাইরের শীতল হাওয়া, যেন
বরফের সুচ।
চার
যেন কোনো বৃক্ষ ছড়িয়ে দিয়েছে মাটি
ওপরের দিকে, ঝুলে আছে
জলের ঘর্ষণে খয়ে যাওয়া গর্তের ওপর, আকাশে যার শিকড়,
নেমে আসা স্রোত উপড়ে নিচ্ছে যার ডালপালা,
আমারই দ্বৈত সত্তা ঠিক তেমনই
ভবিষ্যৎ থেকে যাত্রা করে চলে অতীতের দিকে।
উচ্চতা থেকে নিজের ওপর রাখি আমি চোখ
আর আঁকড়ে ধরি হৃৎপি- আমারই।
কে দিয়েছে
কম্পমান ডালপালা, শক্ত এক কা-
আর দুর্বল, নৈরাশ্যভরা শেকড়?
মৃত্যু সে যে বীভৎস, তবে জীবন যে আরো নিকৃষ্ট।
এর জুলুমের নেই কোনো লাগাম।
তুমি কি চলে যাচ্ছ, লাজারাস? তবে তাই হোক, চলেই যাও।
পেছনে তোমার অর্ধেক আকাশ এখনো প্রজ্বলিত।
কিছুই আমাদের ধরে রাখে না। ঘুমাও তুমি,
হে প্রাণোচ্ছল, ভাঁজ করে রাখো হাত
বুকের ওপর, ঘুমাও।
পাঁচ
এসো, নিয়ে যাও এসব তুমি, কিছুই আমার নেই প্রয়োজন,
যা আমি ভালোবাসি বিলিয়ে দেবো তার সবটাই, আর যা আমার অপছন্দ
দিয়ে দেবো তাও। যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে সেখানে যেতে চাই আমি,
তবে যদি বলি তোমাতে হব আমি রূপান্তর,
আমাকে বিশ্বাস কর না, হে অসহায় শিশু, আমি যে মিথ্যা বলছি…
লতার মতো আঙুলের এই হাত, আহা!
খোলা আর ভেজা চোখ,
কানের সেই ছোট্ট খোলস,
যেন ভালোবাসার সংগীতে পরিপূর্ণ পেয়ালা,
আর ডানা যেন বাতাসের টানে মসৃণভাবে কেটে নেওয়া।
আমাকে বিশ্বাস কর না, হে অসহায় শিশু, আমি তো মিথ্যা বলি,
মৃত্যুর বার্তা মাথায় নেওয়া কারো মতো ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করব আমি,
তবে এই অদ্ভুত অনুভূতি থেকে আমি যে বের হয়ে আসতে পারছি না,
পারছি না তোমার পাখায় ঝাপটা তুলতে কিংবা তোমার চোখ ছুঁয়ে দিতে
তোমারই ছোট আঙুলের স্পর্শে, কিংবা
তোমার চোখে তাকিয়ে দেখতে। আমার চেয়ে
শতগুণ শক্তিমান তুমি, তুমি তো
তোমার নিজেরই এক সংগীত, আর আমি
বৃক্ষ আর ঈশ্বরের প্রতিনিধি,
দ-প্রাপ্ত বিচারে তোমার, সংগীতের জন্য।
শৈশবে
শৈশবে একবার অসুস্থ হয়েছিলাম আমি
ভয় আর ক্ষুধা থেকে, আঁচড়ে নিয়ে ওষ্ঠের ক্ষত
ভেজা জিবে চেটে নিতাম ঠোঁট; মনে পড়ে
শীতল লবণাক্ত সেই স্বাদ।
তবে এখনো আমি চলছি, এখনো চলছি আমি, চলছি,
উঠানের সিঁড়িতে বসি আমি আর নিজেকে দেই উষ্ণতা,
বিকারগ্রস্ত আমি, বিস্ময়ে মনে হয়
যেন বংশীবাদকের সুর শুনে হেঁটে যাই নদীর তীরে,
নিজেকে দেই উষ্ণতা সিঁড়িতে বসে, জ্বরের ঘোরে।
মা থাকেন দাঁড়িয়ে, ডাকেন ইশারায়, মনে হয়
অল্প দূরেই তিনি তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে;
আরেকটু কাছে এগিয়ে যাই আমি, মাত্র তো সাত কদম,
ইশারায় ডাকেন, এগিয়ে যাই তবে এখনো দাঁড়িয়ে তিনি
মাত্র সাত কদম দূর থেকে, ইশারায় ডাকেন মা।
জ্বরের তাপ
আঁকড়ে ধরে আমাকে, খুলে নিয়ে কলারের বোতাম শুয়ে থাকি আমি –
ঢোলকে বাজে তূর্যধ্বনি, চোখের পাতায়
আঘাত হানে আলো, অশ্বেরা ধাবমান, মা আমার
উড়ে যান পাথরে বাঁধানো সড়কের ওপর, ডাকেন ইশারায় –
অতঃপর হারিয়ে যান…
আর এখন আমি স্বপ্ন দেখছি
আপেল গাছের নিচে, হাসপাতালের শুভ্র ওয়ার্ড,
গলার নিচে আমার শ্বেতশুভ্র চাদর,
আর শ্বেতশুভ্র ডাক্তার তাকিয়ে আমার দিকে,
শ্বেতশুভ্র নার্স দাঁড়িয়ে আমার পায়ের কাছে
ঝাপটায় ডানা। সবাই এরা থেকে যায়।
কেবল মা এসে ইশারায় ডেকে –
হারিয়ে যান শূন্যতায়।
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ হয়তো ক্ষমা করবেন আমাকে
তাঁকে সাহায্য করায় আমার এই অপারগতার জন্য,
পুড়ে যাওয়া পথে কখনো যে ছড়িয়ে দিইনি পলস্নবগুচ্ছ
তাঁর পা ফেলার সুবিধায় সে জন্য,
ক্ষমা করবেন তাঁর সেই ধুলামলিন জুতার
ফিতের বন্ধন খুলে না দেওয়ার জন্য,
দাবদাহে পানির পাত্র হাতে তুলে না দিয়ে,
হাসপাতালে নিজেকে গুলি করার সুযোগ তাঁকে করে দেওয়ার জন্য।
এখানে দাঁড়িয়ে আমি তাকাই চোখ মেলে
দেখি সাইপ্রেস গাছ দুলছে যেন অগ্নিশিখা।
ধূম্রনীল আর বাতাবিলেবুর হরিদ্রাভ, –
এরাই তো গড়ে দিয়েছে এই আমাকে।
নয়তো কবেই আমি ফেলে দিতাম আমার এইসব শব্দধ্বনি,
ছুড়ে ফেলতাম কাঁধের অজানা বোঝা।
এই সেই ঐশ্বরিক স্থূলতা যার মধ্য দিয়ে
তাঁর তুলির আঁচড় আর আমার পঙ্ক্তির গড়ে ওঠে সখ্য
পথ দেখিয়ে দেয় এরা তাঁর দর্শক আর আমার পাঠককে
সেই গন্তব্যের দিকে ভ্যান গঘ যেখানে নিচ্ছেন নক্ষত্রের নিশ্বাস।
মালবাহী গাড়িতে অন্ধের 888sport slot game
ব্রিয়ানস্ক থেকে উঠেছিল এক অন্ধ মালবাহী গাড়িতে,
ফিরছিল ঘরে ভাগ্যকে সাথে নিয়ে,
তাঁকে সান্তবনা দেওয়ার শব্দের সন্ধানে বলেছিল রমণী –
‘অন্ধত্ব আর যুদ্ধে আছে কি কোনো ফারাক?
ভাগ্যবান আপনি অন্ধ আর ভিখিরি হওয়ায়,
চোখ মেলে তাকানোর সুযোগ হলে বেঁচে থাকা হতো না আপনার।
জার্মানরা ফিরে তাকায় নি আপনার দিকে
আপনার মূল্য তো তাদের চোখে ছিল মলিন ছালার মতোই…
কাঁধে ঝুলিয়ে নিন আপনার এই শূন্য ছালা…
অনুমতি দিন আপনার চোখ দুটি খুলে দিতে…
ঘরে ফিরে যাচ্ছিল অন্ধ এক যাত্রী ভাগ্যকে সাথে নিয়ে,
ভাগ্য আর অন্ধত্ব – দুটি নিয়েই যে ছিল তৃপ্ত।
প্রথম অভিসার
আমাদের বিরল অভিসারের প্রতিটি মুহূর্ত
আমরা করেছি পালন খ্রিষ্টীয় উৎসবের মতো।
সারাবিশ্বে একাকী, নিভৃতচারী
সিঁড়ির নিচের পাখির চাইতে
আরো বেশি সাহসী আর হালকা। যেন বিহবল অপচ্ছায়া কোনো।
তুমি এসেছিলে তোমার পথে আমাকে নিয়ে যাবে বলে,
বৃষ্টিভেজা লাইলাকের ভেতর দিয়ে,
তোমার নিজের
আরশিনগরে।
রাত্রি নেমে এলে
আমি পেয়েছিলাম করুণার অনুগ্রহ,
খুলে গিয়েছিল বেদির দুয়ার
চকচকে আর
ধীরে সরে যাওয়া অন্ধকারে
ছিল তোমার নগ্নদেহ।
জেগে উঠে আমি বলেছিলাম :
ঈশ্বরের করুণা হোক তোমার ওপর!
যদিও জানা ছিল তোমার কতটা সাহসী আর অনাহূত
আমার সেই আশীর্বাদ। তুমি ছিলে গভীর ঘুমে মগ্ন
তোমার বন্ধ চোখের পাতায় ছিল চিরায়ত নীলের ছায়া
টেবিলের লাইলাক টানা উত্তেজনায় উদ্বেলিত।
নীলের ছোঁয়ায় তোমার চোখের পাতাজুড়ে
ছিল প্রশান্তি, হাত ছিল তোমার উষ্ণ।
স্ফটিক ফাটল নদীতে তুলেছিল স্পন্দন,
পাহাড় ছড়িয়ে দিয়েছিল ধুঁয়া, আর সাগরে উঠেছিল ঢেউ।
তোমার করতলে ধরে রেখেছিলে তুমি
স্ফটিক বর্ষা-ফলক, নিজের সিংহাসনে তুমি শান্তিতে নিদ্রামগ্ন।
আর সেই সাথে হা ঈশ্বর!
ছিলে তুমি শুধুই আমারই।
ঘুম ভেঙে জেগে উঠে সহসা বদলে দিয়েছিলে তুমি
মানুষের বলা আর ভাবনার ভাষা।
সুললিত গঠনের অভিব্যক্তি বের হয়ে এসেছিল
এতটাই বদলে যাওয়া ‘তুমি’ শব্দের মধ্য দিয়ে,
যেন সম্রাটের নতুন এক অর্থ তৈরি করে দিতে।
যেন বা ঘোরের মধ্যে সবকিছু হঠাৎ গিয়েছিল বদলে,
এমনকি প্রতিদিনের ব্যবহারের আর চেষ্টার নগণ্য সবকিছুও,
আমাদের মাঝখানে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে ছিল
জল-শক্ত, স্তরীভূত।
আমাদের সেটা নিয়ে গিয়েছিল কোথায় জানা নেই আমার।
আমাদের সামনে থেকে সরে যাচ্ছিল যেন মরীচিকার মতো
শহর, অলৌকিক-রকম পক্ষপাতহীন।
আমাদের পায়ের নিচে বিসত্মৃত হচ্ছিল পুদিনার ঘাস,
পাখিরা অনুসরণ করছিল আমাদের পথ,
নদীর বাঁকে এসেছিল মাছ,
আর আমাদের চোখের সামনে ছিল উন্মুক্ত আকাশ।
আর অন্ধের মতো আমাদের পেছনে তাড়া করছিল ভাগ্য,
যেন এক উন্মাদ, হাতে ধরে রেখে ছুরি।
সেত্মপ
জগৎ গ্রাস করে নিজেকে
আর আকাশের কোলে ঠুকে দিয়ে মাথা,
888sport sign up bonusর ফাঁকগুলো জুড়ে দেয়
মানুষ আর ঘাস দিয়ে।
অশ্বখুরের নিচে লুকায় ঘাস,
আত্মা হাতির দাঁতের বাক্সে;
কেবল চাঁদের নিচের শব্দ
ঝাপসা হয়ে দেখা দেয় সেত্মপজুড়ে
যে আছে ঘুমিয়ে মৃতদেহের মতো।
সমাধি সত্মূপের শিলাখণ্ডের মতো –
সম্রাট চোখ রাখে প্রহরীর দিকে –
যেন চন্দ্রালোকে নির্বোধ এক মাতাল।
শব্দের মৃত্যু হবে সবার শেষে
জলের তুরপুন যখন বেগে উঠে আসবে ঊর্ধ্বে
ভূগর্ভের শক্ত বহিরাবরণ ঠেলে,
আকাশে উঠবে তখন মন্থন।
চোরকাঁটার ভ্রম্ন ফেলে দীর্ঘশ্বাস
ঘাসফড়িংয়ের জিনের স্ফুরণে,
সেত্মপের পাখি আঁচড়ায়
ঘুমন্ত, রামধনু-ডানা।
ঠিক তখন, ধূসর-নীলে 888sport app ঘাড় বরাবর দেখা যায়
স্বর্গ থেকে নেমে এসে আদম ঢুকছেন সেত্মপে,
ফিরিয়ে দিয়ে পাথর আর পাখি দুজনকেই
বুদ্ধিদীপ্ত কথার উপহার;
এরা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আবারো তিনি তৈরি করে নেন
এদের ভয় জাগানো নাম,
আর এখন তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন সচেতন বিকারের নিশ্বাস,
আত্মার মতো ভালোবেসে, ঘাসজুড়ে।
গ্রীষ্ম নিয়েছে বিদায়।
হয়তো-বা কখনোই আসেনি সে।
উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে সূর্যে,
তবে এটাই যথেষ্ট নয়।
যা কিছু ঘটে যেতে পারত জীবনে
পাঁচ আঙুলবিশিষ্ট পাতার মতোই
কম্পন তুলছে তা আমার হাতে,
তবে এটাই যথেষ্ট নয়।
মন্দ কিংবা ভালো
কোনোটাই এখনো হয়ে যায়নি নিষ্ফল,
সবটাই দিচ্ছিল জ্বালা আর ছিল তা হালকা,
তবে এটাই যথেষ্ট নয়।
জীবন ছিল এক বর্ম
দিয়েছিল নিরাপত্তা,
ছিলাম আমি খুবই ভাগ্যবান,
তবে এটাই যথেষ্ট নয়।
পাতা যায়নি পুড়ে,
বৃক্ষশাখা পড়েনি ভেঙে,
দিন সে তো স্বচ্ছ কাচের মতোই পরিষ্কার,
তবে এটাই যথেষ্ট নয়।
বুলেটের নিচের গান
আমাদের বৈসাদৃশ্য এতটাই নিশ্চিত
যে শতাব্দী পারে না এই জট খুলে দিতে –
আমি দানব, আর তুমি নেকড়ে। বিশ্বের
চলমান স্রোতে একে অন্যের কাছাকাছি আমরা
যেন কাঁধে কাঁধ রেখে চলা অন্ধের মতো
হেঁটে যাই ভাগ্যের দেখিয়ে দেওয়া পথে,
এই দেশের অমর অভিধানে
দুজনেই আমরা পেয়েছি দ- মৃত্যুর।
আমরা যখন গাই এই রুশ সংগীত
নিজেদের স্বজাতির রক্তের ফোঁটা করি আমরা বেচাকেনা
আর আমি হয়ে যাই তোমার রাতের শিকার।
এতেই আছে অসিত্মত্ব আমাদের, নেকড়ের আর দানবের।
কসাইখানার মতো মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়ায় তুষার
আর সেত্মপের আকাশে আলো ছড়ায় না একটিও তারা।
শোনো হে বৃদ্ধ, এখনো সময় আছে ভাগ করে নিতে তোমার এই মুখ
অগ্রভাগে সিসার পাত জুড়ে নেওয়া চাবুকের আঘাতে।
জার্মান মেশিনগানার করবে গুলিবিদ্ধ আমাকে পথে, কিংবা
অশুভ বোমা ভেওে দেবে আমার পা, অথবা
এস এস বালক এক অন্ত্রে ঢুকিয়ে দেবে গুলি।
যাই হোক না কেন, এই যুদ্ধ ফ্রন্টে ছলনার আবরণে 888sport app আমি।
নাম, গৌরব, এমনকি কোনো বুট জুতো ছাড়াই,
আতঙ্কভরা চোখে দেখে যাব বরফ, রক্তিম রঙের। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.