দীপকরঞ্জন ভট্টাচার্য
আলোক সরকারের 888sport app download apk নিয়ে যে-কথাটা আমরা প্রথমেই বলি, তা হলো, তাঁর 888sport app download apk বিশুদ্ধ 888sport app download apk। অবশ্যই তাই। তবে তাঁর 888sport app download apkর বিশুদ্ধতা হুবহু মালার্মের আইডিয়াল বিউটির বিশুদ্ধতা নয়। তাঁর এই বিশুদ্ধতাকে পেতে হলে 888sport app download apkকে সচেতনভাবে গড়ে নিতে হয়। এই নির্মাণ যেন এক খেলা। দ্বিতীয় ভুবন রচনা করার খেলা। ঘটনার ডালপালা, আবেগ সরিয়ে দিয়ে ঘটনার অমত্মঃসারের কাছে নেমে যাওয়ার খেলা। রঙের কাছে, ঘ্রাণের কাছে, ধ্বনির কাছে। অভিজ্ঞতাগুলো মিলিয়ে-মিশিয়ে নতুনভাবে তাকে সাজিয়ে তোলা। অলৌকিক এক সুষমায় মেলে দেওয়া তাকে।
কোথায় সেই দ্বিতীয় ভুবন? জলের বাইরের গাছ কত নিবিড় আর রহস্যময় হয়ে ওঠে জলের ভেতরকার গাছে! নতুন সব গাছ নিয়ে দ্বিতীয় সত্যি হয়ে ওঠে। জলের বাইরের সত্যি জলের ভেতরের এক মিথ্যাকে ধরে রাখে। একটা ‘না’র জেগে ওঠা। ‘আমপাতা একটা নতুন জামা পরেছে না?’ ছোটবেলায় কাঁকুলিয়া রোডে তাঁর কতই যাতায়াত ছিল; কিন্তু সুবোধ ঘোষ মৌচাকের পাতায় ওই কাঁকুলিয়া রোডে বসেই পুতুলের জন্য যেসব দুঃখছড়ানো গল্প লিখতেন, সেই গল্পের পথ-বিপথ কত বদলে যায় না? একটা পথের ভেতর আর একটা পথ এসে মেশে। একটা সত্যির সঙ্গে একটা মিথ্যা এসে মেশে। কত বড়ো একটা ‘না’ এসে মেশে। তাঁর 888sport app download apk-লেখার প্রায় সমস্তটাই এই ‘না’-এর উপাসনা। ‘রোগা অন্ধ ছেলে আলপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে/ অভ্যস্ত নিপুণ হেঁটে-যাওয়া।/ জিগেস করতে বলেস্না সূর্যাস্ত দেখতে যাবে।/’ – যা দেখতে পাওয়া যায় না তাই দেখতে পেয়ে সে বলতে পারে, ‘সে অনেক রঙের ব্যাপার সে অনেক রেখার ব্যাপার।’
কেন এই দ্বিতীয় ভুবন? এর উত্তর খোঁজার একটা চেষ্টা করা যায় মাত্র। বছরে বছরে পাতা ঝরিয়েও প্রকৃতি আবার নতুন হতে পারে, কোনো অবসানই চিরদিনের নয় তার কাছে। ‘যা নেই’, তা দিয়েই যদি গড়ে তোলা যায় এক দ্বিতীয় ভুবন, তাকেও কি কোনোদিন ছুঁতে পারে, মৃত্যু? হয়তো তাই তাকে একটা আশ্চর্য হলুদ পাখি গড়ে নিতে হয়, গলায় যার অবাক করা রং, নিশ্বাস যার অলীক : ‘দেখেছি হলুদ পাখি আশ্চর্য গলার রঙ…’। এ তো গেল একটা দিক। আবার বেস্নকের মতোই তিনি সীমা না-থাকা সুর না-থাকা ছন্দ না-থাকা প্রকৃতিকে তাঁর নির্মাণের মধ্যে দ্বিতীয় ভুবনের মধ্যে এনে, রেখা দিয়ে সুর আর তাল দিয়ে তাকে আরো ভরিয়ে নিতে চান। একটা ‘না’ এনে সম্পূর্ণ করতে চাওয়া তাকে, কারণ প্রকৃতি কখনো শূন্যতার সাধনা করেনি। বাইরের গোলাপকে যদি ভেতরে নেওয়া যায়! অন্ধকারে ফোটানো যায় তাকে! প্রকৃতি যে কখনো দ্রষ্টার ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া পায়নি! রাম যখন বনবাসে যান দশরথের যে-বিলাপ, তা তো গড়ে তোলা অভিব্যক্তি ছাড়া, অবাস্তব ছাড়া আর কিছুই নয়, তবু কি সেই কান্না মুছে দেওয়া গেছে, আজো? যায়নি, কেননা তা 888sport live chat হয়ে উঠেছে, সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া পেয়েছে। কবি হিসেবে তাঁর কাজ এই সমগ্রতায় পৌঁছনো। দ্বিতীয় ভুবনে।
উতল নির্জন প্রকাশিত হয় ১৯৫০-এ। রবীন্দ্রনাথ বা ডিএল রায়ের 888sport app download apk এর আগে পড়া হয়ে গেছে তাঁর। দাদা কবি অরুণকুমার চক্রবর্তীর সুবাদে দেশ, 888sport app download apk, 888sport live footballপত্র, পূবর্বাশা বা নিরুক্তের মতো নামী সব পত্রপত্রিকা বাড়িতে আসছে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী বা বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apk পড়ছেন সেই দশ-এগারো বছর বয়স থেকেই। ইংরেজ রোমান্টিক কবিদের 888sport app download apkও ভালো লাগছে তখন। এসব পড়াশোনার একটা ছাপ ষোলো-সতেরো বছরের ছেলের মনে নিশ্চয়ই পড়েছিল। নিজের ভাষা পেতে তাঁকে কিছুদিন লেখা বন্ধ করে দিতে হয় তাই। অপেক্ষায় থাকতে হয় ১৯৫৪-এর শেষ অবধি।
কোন ছন্দে লেখা হবে, 888sport app download apk? প্রথাসিদ্ধ ছন্দে তো কোনোমতেই নয়, কারণ কবেই তা ব্যবহৃত হয়ে গেছে। আবার ছন্দহীন 888sport app download apk লেখা আর 888sport app download apk না-লেখা প্রায় একই কথা! তাঁর মতো মনননির্ভর কবিকে ছন্দ নিয়ে এযাবৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো খেয়াল রাখতে হচ্ছিল নিশ্চয়ই। জীবনানন্দের লেখাতেও স্বরবৃত্তকে অতিপর্ব বা অপূর্ণ-পর্বের বাঁধ দিয়ে তাকে দীর্ঘ ধীর করে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে : ‘জলের কলরোলের পাশে এই নগরীর অন্ধকারে আজ/ আঁধার আরো গভীরতর ক’রে ফেলে সভ্যতার এই অপার আত্মরতি’ (‘অনন্দা’, জীবনানন্দ দাশ)। অমিয় চক্রবর্তীর ‘যদি থাকতো কৃষ্ণচূড়ো/ ঝ’রে পড়তো রাঙাগুঁড়ো/ – ছিলো দু-ধারে নিমের ঝারি সবুজ সারি’ (‘দুই প্রত্যহ’) পদটির উদ্দীপনার কথাও ভুলে যাওয়ার নয়। ছড়ার ছন্দে চার মাত্রা ব্যবহারের যান্ত্রিক অভ্যাস পাঁচ মাত্রার পর্ব মিশিয়ে তিনিও ভেঙে দিতে চান এসব 888sport app download apkয়, ‘বাড়ি ফিরে টেবিলে দ্বীপ জ্বালাবো।/ একটি গোপন চিরকিশোর অনিদ্রিত ফুলে/ আমার ইপ্সিতার মুখ তাকে কি আমি জানাবো?’ (‘888sport live chatীর আক্ষেপ’) আধার বা ফর্ম যদি আধেয় বা কন্টেন্টের থেকে 888sport app download apkর জন্য বেশি জরুরি হয়ে থাকে তাঁর কাছে, তবে কি ছন্দ নিয়ে তাঁর ভাবনা-চিমত্মা এখানে এসেই থমকে যেতে পারে? আরো সামনে এগোতে হয় তাঁকে। এমন এক ছন্দহীনতায় পৌঁছতে হয়, যেখানে সেই ছন্দহীনতাও বেজে উঠতে পারে! একদিন গভীর রাতে এক পেট্রোল পাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে নতুন আঙ্গিকে হঠাৎ তিনটি লাইন পেয়ে যান তিনি। তখন তাঁর হাতে স্বরবৃত্ত যেন গদ্যের আরো অনেক কাছাকাছি : ‘সকালবেলার আলো-আকাশ নতুন দেশের বাড়ি/ শান্ত ছবি এঁকেছিল।/ দেখেছিলে মাঠে মাঠে সংহতির কুয়াশা যেন রহস্যের প্রথম ছবি।/ যেন একটি উন্মোচন হাজার সবুজ পাতায় কিংবা শুভ্রতায় তার-ই/ প্রতিশ্রম্নতি…।’ কিংবা, ‘মাঠের মধ্যে মস্ত বড়ো দরজা, রাজপ্রাসাদ/ কারো বেণী?/ নাকি সুদূর শীতল স্থির সাপ।/ ঈষাণ কোণে মেঘ, কিন্তু ঝড় এখনো আসেনি।/ প্রহরীটা স’রে গিয়ে কী-যে সর্বনাশ!’ (‘সোনার ঘণ্টা’)
আলোকিত সমন্বয়ে ছড়ার ছন্দ আর পয়ারভিত্তিক মিশ্র ছন্দের আশ্চর্য কারিগরি ছড়িয়ে আছে! শতভিষার পাতায় ছন্দ নিয়ে বলতে গিয়ে ১৮ কার্তিক, ১৩৮২ তারিখে লেখা একটি মূল্যবান চিঠিতে প্রবোধচন্দ্র সেন যে-শঙ্খ ঘোষ সম্বন্ধে লেখেন, ‘…শঙ্খ ঘোষের মনোভাবই যেন মোটের উপর সর্বাধুনিক যুক্তিনিষ্ঠ’, সেই শঙ্খ ঘোষ বললেন, আলোক স্বরবৃত্ত ছন্দে একটা নতুন চাল এনেছে। ছান্দসিক দীপংকর দাশগুপ্ত ‘ছড়ার ছন্দ’ 888sport liveটিতে লেখেন, ‘ইদানীন্তন কবিদের মধ্যে আলোক সরকার, আমার বিবেচনায়, ছড়ার ছন্দের ব্যবহারে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পর্বের বিচিত্র সংস্থান ক’রে, মধ্যখ-ন, অতিপর্ব, পঙ্ক্তির মধ্যে অপূর্ণ পর্ব, ইত্যাদি নানা কৌশলে ব্যবহার ক’রে, এবং ভাবযতি বা অর্থযতিকে পর্বযতির আনুগত্য থেকে বিযুক্ত ক’রে, শুধু পয়ার নয়, গদ্যের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন ছড়ার ছন্দের।’
আরো কত পরীক্ষা-নিরীক্ষা! অক্ষরবৃত্তের চেনা আদল কিছুটা বদলে নিয়ে ১০/৪/৬-এ পর্ব ভাগ করে লেখা, ‘ঐ যে পাখিটা উড়ে গেল/ ওকে আমি/ পাখি বলে চিনি।’ কিংবা, মাত্রাবৃত্তে কখনো অপূর্ণ পদ রেখে কখনো না রেখে বৈচিত্র্য আনার একটা চেষ্টা করা। হিমপ্রহর বইটা টানা গদ্যে মাত্রাবৃত্তে লেখা হলো। ১৯৬৬ নাগাদ তাঁর হাতে এলো এসব লাইন, ‘পলাশফুলগুলো/ ভেসে চলে যায়/ নদীর ওপারে/ আজ আমার/ অনেক বেলা হলো/ বকুলঝরানো পথে/ শেষ বিকেলের আলো…।’ এসব 888sport app download apkয় পর্বের ভাগ আছে, কিন্তু পর্বগুলো সমান নয় সে-কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। সম্ভবত এ-ব্যাপারে তাঁর সবচেয়ে পরিণত কাব্যগ্রন্থ, অমূলসম্ভব রাত্রি।
নিজের ভাষাবিন্যাস বা আত্মচিহ্নিত একটিমাত্র পঙ্ক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর যে খোঁজ, নিজের লেখা নিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে-না-পারার বেদনা, যা তাঁকে প্রায় দেড় বছর লেখা থেকে সরিয়ে রেখেছিল, তাঁর এই ‘হতে-চাওয়ার আকুতি’, তাঁর এই ভাবনা, ‘888sport app download apk রচনা করতে পারি আর না পারি, আশৈশব 888sport app download apkকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে আসছি… মানুষ যা হতে চায় সেইটেই তো মানুষের সত্যকার পরিচয়’ – যে-কোনো মহৎ লেখক-888sport live chatীরই অন্বেষণে ছিন্নভিন্ন হওয়ার দলিল যেন। কাফকা তাঁর দিনলিপিতে প্রায় একই স্বরে তো তাঁর আত্মধিক্কারের স্বরলিপি লিখে রাখেন : ‘দীর্ঘ পাঁচটা মাস কিছুই লিখতে না-পারার পর, যা আমাকে তৃপ্তি দিতে পারে, এমন কোনো শক্তিই নেই যে আমার ক্ষতিটুকু পূরণ করতে পারে… আমার মধ্যে এমন কিছু লুকিয়ে থাকে, যা এই একরাশ খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়… যে-খড়ের সত্মূপ বিগত পাঁচ মাস ধরে আমি জড়ো করেছিলাম… আর একটি বাক্যও লেখার শক্তি আমার নেই… যা লেখার পর একটি মানুষ তাঁর পূর্ণতাপ্রাপ্তির শান্ত ও গভীর মগ্নতায় ডুবে যেতে পারে।’ আবার পল গগ্যাঁ বলেন, 888sport live chatচর্চায় মনপ্রাণ সঁপে দিয়েছি, অথচ একটা কাজও হয়ে উঠছে না কিছুই। নিজেকে অপদার্থ-অসমর্থ মনে হচ্ছে।
উপমাহীন অতিকথনবর্জিত এক নির্ভার শর্তহীন বিশুদ্ধতার দিকে, আশ্চর্য সেই ‘হলুদ পাখি’র দিকে তাঁর 888sport app download apkর যে রোমাঞ্চকর
পথচলা, তার সূত্রগুলো একসঙ্গে বেশ কিছু 888sport live-নিবন্ধ এবং অত্যাশ্চর্য একটি আত্মজীবনীতে ধরা পড়েছে আমার 888sport app download apkজীবন বইটিতে। যত দিন যাবে তত এই বইটি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে বলে মনে হয়। সম্পাদক অমস্নান দত্তকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। বইটার প্রকাশক, অভিযান পাবলিশার্স।
দুই
জ্বালানি কাঠ, জ্বলো
কঠোপনিষদের গল্প এটা। অগ্নিচয়ন করতে চায় নচিকেতা। বদলে যম তাকে সোনায় মুড়ে দিতে চান, ভোগের অধীশ্বর করে দিতে চান। কিন্তু আগুন যে জ্বালাতে চায়, তাকে কি মানায় ওই সবে? তাকে বেদি প্রস্তুত করতে হবে, ইট সাজাতে হবে, অভীপ্সার শিখাগুলো আকাশে নিয়ে যেতে হবে! সে অনেক কথা। শেষে একরকম হার স্বীকার করে নিতে হয় যমকে। তিনি বলেন, তোমার মতো জিজ্ঞাসু যেন পাই। বলেন, নচিকেতা তোমার ঘর খুলে গেছে! আগুনের পাঠ নচিকেতার আয়ত্তে আসে।
এবার আর একটা আগুনের গল্প। এখানেও এক বালক-জিজ্ঞাসু। কেউ জানে না, কেউ চেনে না তাকে। বারো বছর বয়সেই তবু মনে হয়েছিল তার, একটা আত্মজীবনী লেখা ভারি প্রয়োজন। কতগুলো রঙের কথা বলতে হবে তাকে। কখনো খুব গাঢ়, কখনো ফিকে, কখনো ঢেউ-খেলানো সেসব রং। যে-888sport app download apk সে লেখে তা ওই রংগুলোরই 888sport app download apk। তার পাশে জেগে-ওঠা অনেকগুলো ধ্বনি। তার পাশে অনেক অনেক ঘ্রাণ। কত ছায়া। আর ওই তো জ্বালানি কাঠ, আত্মার আগুনে তাকে সে জ্বালিয়ে রেখেছে সারাদিন… এখানে এসে অনেক অমিল সত্ত্বেও দুটো গল্পের সুর কোথাও মিলে যায়।
বাড়ির নাম জঙ্গলবাড়ি। ওখানেই তাঁর ছোটবেলা কেটেছে। গানের একটা চল ছিল ওই বাড়িতে। কলের গানে অতুলপ্রসাদের একাকী গান বাজত। মা প্রায়ই ‘রবিবাবু’র ‘ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি পরমোৎসব-রাতি’ গানটা গাইতেন। ছয়-সাত বছর বয়স থেকে সেই পরমোৎসবের বাড়ির দিকেই আজো সে হেঁটে চলেছে। একটু অবজ্ঞা করলেই তার খুব অভিমান হয়। মা নিজেও রবিবাবু, ডিএল রায়দের 888sport app download apk পড়তেন। শ্বশুরবাড়ির গ্রামে তাঁর বিয়ের পদ্যলিখিয়ে হিসেবে বেশ নাম হয়েছিল। গরমের ছুটির দিনে, দুপুরবেলা ঘরের মেঝে ভালো করে ধুয়ে মেঝের ওপর বালিশ নামিয়ে মা কাশীরাম দাস সুর করে পড়তেন। আট-নয় বছর বয়স থেকে বাবা মুখে মুখে রামায়ণ–মহাভারতের কত গল্প শোনাতেন। পুরাণের কত গল্প। ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের স্ত্রী মৈত্রেয়ীর সেই সরল আর্তির কথা – তুমি তো চিরপ্রকাশ, আমার মধ্যে তুমি প্রকাশ পাও। দাদু শেক্সপিয়রের কোনো কোনো নাটক আগাগোড়া মুখস্থ বলে যেতে পারতেন। জঙ্গলবাড়ির একতলায় ছিল কলঘর। নির্জন, মেঝেতে শ্যাওলা-পড়া। টলটলে জলভর্তি প্রকা- চৌবাচ্চা। দোতলার বসার ঘরে দাদা অরুণকুমার সরকারের বন্ধুদের ভিড় লেগেই থাকত… চার-পাঁচবার বাড়ি বদলানো হলো। যুদ্ধের সময়ে কলকাতা ছেড়ে সবাই মিলে বরিশালের পটুয়াখালীতে চলে গেল ওরা। কী-সব দিন! দুপুরবেলা বাড়ির সামনের খালের ধারে ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে বসা। ওপারে ঘন বন। ফাল্গুনের হাওয়ার শব্দ, জলের গন্ধ, নিস্তব্ধতার গন্ধ। হুহু করছে চারদিক। পটুয়াখালীর বাড়ি ছেড়ে চলে আসার আগে সে কাগজে নিজের নাম লিখে তাতে একটা পয়সা মুড়ে টিনের কৌটোয় ভরে উঠোনের মাটি খুঁড়ে পুঁতে এসেছিল। ১৯৪২ সালে কলকাতায় ফিরে সেই যে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে উঠল, সেখানেই ১৯৯৩-এর নভেম্বর অবধি একটানা থেকেছে। মস্ত ব্যস্ততার জায়গা ছিল সেটা। তার সামনের পথে দুপুর আসত না কখনো, রাত হতে হতে একটা বেজে যেত। রাসবিহারীর বাড়ির সামনের মাটি কখনো গাছ-ছাড়া হতো না। কত গাছ! রাত একটু গাঢ় হলেই রাস্তার পানের দোকানে রোজই বেজে উঠত, শুনো সুরদাস শুনো সুরদাস (ঠিক শুনেছে তো?)। বালিশ ভিজে যেত ওর চোখের জলে। কেন সে নিজেও জানে না। ছাদের কার্নিশে আড়াআড়ি যে কড়িকাঠটা বসানো আছে ওটার ওপর নিত্য সওয়ার হয়ে একের পর এক 888sport app download apk বলে যাও, গানের দু-এক কলি গুনগুন করে গাও… কত বিকেল কেটেছে এভাবে।
ঘন নিমগাছটার কথা খুব মনে পড়ে। ওটার নিচে দাঁড়িয়েই সে বুঝেছিল, সারাটা জীবন একা একা পার হতে হবে। ওই তো আমগাছ। সাঁই সাঁই ঢিল ছুটছে। ঢিল ছুড়বে কী, মাটি থেকে সেটা তুলে নিতেই তার রাজ্যের দ্বিধা। আম-পাড়া শেষ করে ওদিকে সঙ্গীরা চলে যায়। হাসতে হাসতে ওরা দূরে চলে যাচ্ছে। সে যে-মাটিতে বসে আছে, কেউ তাকে ফিরেও দেখল না! বৃষ্টি পড়ে যখন কত ইচ্ছা হয় সেই ঘন কালো আকাশের নিচে দৌড়ে নেমে যেতে, গলা খুলে গান গাইতে। কিছুই করা হয় না শেষ অবধি। মস্ত একটা কাগজের নৌকো বানিয়ে বারান্দা থেকে আসেত্ম করে ফেলে দেয় ঢেউ-তোলা রাস্তার জলের ওপর। সে কি একা? একা কেন হবে, কত ভয়-পাওয়া আছে, আবছা, আবছা চাঁদের আলোয় ছোটবেলার সেই গন্ধরাজ ফুলের গাছটা আছে, পাঁচ নম্বর নকুলেশ্বর ভট্টাচার্য লেনের ‘জঙ্গলবাড়ি’র পেছনদিকের সেই সরু গলিটা আছে। সারাদুপুর হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে সেই গলি। সে ছাড়া আর তো কেউ ভুলেও যায় না ওইদিকে। কেন সে এতো একা? পুজোর সময় সবাই যখন হইহই করে, নতুন জামা পরে, একা একা পুজোম-পের এককোণে কেন সে দাঁড়িয়ে থাকে? তার বয়স যখন চার কী পাঁচ, বাড়ির কেউ একজন তাকে বলেছিল, সে নাকি কুড়িয়ে-পাওয়া ছেলে। সেটা যে মিথ্যা সে বুঝবে কেমন করে। দূরে দূরে থাকা কি সেই থেকেই? তার ছোটবেলার দিনগুলোকে, তার সমস্ত জীবনকে সে আজ করুণার চোখে দেখে। ‘সোনারতরী’র ঠাঁই-না-হওয়া মানুষটার সঙ্গে তার নিজের খুব যেন মিল।
মনেপ্রাণ সে এক ভ্রামণিক। সারাটা দিন শুধু একা একা ঘোরা। নকুলেশ্বর ভট্টাচার্য লেন ধরে মনোহরপুকুর রোড পর্যন্ত কোনোদিন, কখনো বড়োদিঘির চারদিকে এলোমেলো ঘোরা। কখনো রসা রোডের বিরাট সেই চার্চটার দিকে। হয়তো একদিন যাদবপুর নেমে হোগলা বনের ভেতর দিয়ে জলা আর ঝোপজঙ্গলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ার দিকে গেল। কোনোদিন আবার রহস্যময় বালিগঞ্জ স্টেশনে হাজির হওয়া। সেখানে, ‘আর কি তোকে ডরাই’, বসমেত্মর টিকের বিজ্ঞাপনে হাসি হাসি মুখ, কিংবা ‘রমা বিষ খেয়েছে’ গোছের অবাক-করা সব সিনেমার বিজ্ঞাপন। কোনোদিন যদি বৃষ্টি নেমেছে, সে আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে ঠায় ভিজতে থাকবে। দোকানেও ঢুকবে না, গাড়িবারান্দাতেও না। সবে তো তার ছয়-সাত বছর বয়স। তবু বাড়ির কারো খোঁজই নেই, সারাদিন সে কী করে! যুদ্ধের সময়ে বোমা পড়ার ভয়ে সবাই মিলে সেই যে বরিশালের কিছু দূরে পটুয়াখালী গেল, সেই প্রথম বিরাট-কে দেখা। ট্রেনে যেতে যেতে, সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে অফুরমেত্মর এক কুহক। ভয়-অসহায়তা-শিহরণ একসঙ্গে! রোজ বিকেলে স্টিমারঘাটা পেরিয়ে নদী যেখানে চওড়া হয়ে গেছে, তার পাশে জল সরে-যাওয়া মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা। ভাটার সময় মাঝিরা গুণ টেনে নৌকো নিয়ে চলেছে, আবছা অন্ধকারে থমথম করছে নদী। নিম, নাগেশ্বর, হিজল ও নারিকেল কত গাছ। সাত-আট বছর আগে জীবনানন্দ রূপসী বাংলা লিখেছেন এই মাটিতেই দাঁড়িয়ে। ওখানে নদীর ঠিক মাঝখানে চোরকাঁটায় ভরা একটা ছোট দ্বীপ ছিল। কত গোধূলি কেটেছে সেখানে। অনেক পাওয়া আছে। না-পাওয়াগুলো তবু মাঝে মাঝে এপার-ওপার জলভরা কালো মেঘ ডেকে আনে।
কত কিছু দেখা হলো। ওই তো জলসত্র, গাছের ছায়ায় বসে আনমনা লোকটা অল্প ঠোঁট ফাঁক করে একটা একটা করে ভিজে ছোলা মুখের ভেতর রাখছে, ইটরঙের বাড়ির দোতলার বারান্দায় তুলসীগাছের টবের ওপর ফুটো-করা মাটির ঘট থেকে টপটপ করে জল ঝরছে। ওষুধের দোকানের আলোগুলো কেমন মিটমিট করছে। দিদি তিনতলার ঘরে আসেত্ম আসেত্ম যক্ষ্মায় মারা যেতে বসেছে… পড়াশোনায় তার নেশা। স্কুল ছুটির পর রোজ বিকেলে একা একা এক রহস্যময় বইয়ের দোকানে হাজির হয়ে যেত। টুলে বসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় তার বই পড়া চাই। সতীশ মুখার্জি রোড যেখানে লাইব্রেরি রোডে মিশেছে সেখানে ছিল সতীশ 888sport sign up bonusমন্দির গ্রন্থাগার। সে তার সভ্য ছিল। পরে অবশ্য বন্ধু জ্যোতি দাশগুপ্তের সঙ্গে দেশপ্রিয় পার্কের লাইব্রেরিতে যেত। দিনে তিনটে করে গল্পবই শেষ করা চাই। বাড়িতে শিশু ছিল, মোহিতচন্দ্র সেন-সম্পাদিত রবীন্দ্ররচনা সংকলন ছিল। ভোম্বল সর্দার, রবিনসন ক্রুসো, যখের ধন, লাল কুঠি, হীরা মাণিক জ্বলে, বাগদী ডাকাত, সোনালি ফসল, মায়ামুকুর – কত বলবে! সুনির্মল বসুর লেখা পিতমের জন্য তার দিদির কান্না পড়ে বুক ফেটে যেত, ‘পিতম গেলি কোন সুদূর/ নাম-না-জানা কোন সে পুর।/ মান অভিমান সব ভুলে/ আয়রে পিতম আয় চলে।/ পিতমটা কি কাঠগোঁয়ার/ কথায় সাড়া দেয় না আর।’ কী-যে ভালো লাগত রংমশাল আর মৌচাক পড়তে! প্রথম পাঠ করা 888sport alternative link হলো পথের পাঁচালী। বিভূতিভূষণের সব বই, এমনকি তাঁর দিনলিপিগুলো অবধি পড়ে ফেলেছিল। তিনতলার ছাদে সারি সারি জলের ট্যাঙ্কের দুটোকে বেছে নিয়ে মাথায় তার মাদুর বিছিয়ে বেশ একটা ঘরমতো করে পথের পাঁচালী নিয়ে বসা। কতবার! বস্ন্যাক-আউটের দিনে লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে টিপু-সুলতানদের কবরখানা এক দৌড়ে চোখ বুজে পেরিয়ে কালীঘাট পার্কের একেবারে শেষে এসে তবে হাঁপ ছাড়া। একদিন কবরখানায় ফুটি ফুটি আলো ঘুরতে দেখেছিল। একদিন আবার কালীঘাট ট্রামডিপোর বিশাল ছাউনির নিচ থেকে কী-একটা গোঙানির আওয়াজ! 888sport app download apkভবন থেকে এক পয়সায় একটি নামে অসাধারণ-সব ষোলো পাতার 888sport app download apkর বই ছাপা হচ্ছে তখন, বনলতা সেন, অমিয় চক্রবর্তীর মাটির দেয়াল, অন্নদাশঙ্কর রায়ের উড়কি ধানের মুড়কি। রবীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, অমিয় চক্রবর্তী, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সবার 888sport app download apk পড়া চলছে। সহজপাঠ যদিও অনেক বড়ো হয়ে পড়েছে। এবার পরীক্ষায় বসে প্রশ্নপত্রের পেছনে অন্যমনস্কভাবে লিখে ফেলেছিল ‘শীতের প্রার্থনা বসমেত্মর উত্তর’ থেকে বুদ্ধদেব বসুর কটি পঙ্ক্তি, ‘এই শীতে গান নেই, যদি না বানাই আমি।/ কেননা শালিক, কাক, চড়ুয়ের ডাক/ গান নয় – যদিও আমার কানে গান…।’ বুদ্ধদেব বসুর গদ্যও কী-যে অপূর্ব, যেন 888sport app download apkই পড়ছে! 888sport app download apk পত্রিকা সবচেয়ে বেশি টানত তাকে। স্কুলে পড়ার সময়ে গোল্ডেন ট্রেসারি পড়া হয়ে গেছে। বাড়ির বইয়ের আলমারি থেকে পাওয়া গেল অল্ডাস হ্যাক্সলির Chrome Yellow। সবচেয়ে ভালো লেগেছে হ্যাক্সলির Time must have a stop বইটা। ইয়েটসের কালেক্টেড পোয়েমস, হার্ডি আর ডিকেন্সের দু-একটা 888sport alternative link পড়া হলো, হার্ডি বেশি ভালো। টেনিসনের 888sport app download apkর তো মস্ত বড়ো পাঠক সে। হট্ করে একদিন নজরে এলো বেস্নকের ‘Little boy lost’ 888sport app download apkটা। এলিয়টের আলফ্রেড প্রম্নফকের প্রেমগীতি বার-দশেক পড়া। বার্ট্রান্ড রাসেলের একটা মোটা 888sport liveের বই পড়ে তার ভাবনাকে ঢেলে সাজাতে হলো আবার। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস পড়ার পর সেই স্বচ্ছ যুক্তিনির্ভর ভাবনার দিকে আরো একটু এগিয়ে গেল সে… রাত-দিন 888sport app download apkর জন্য জেগে থাকা শুধু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। জার্মানির আগ্রাসন একটুও পছন্দ নয় তার। অথচ জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ না করা পর্যন্ত এ-দেশের কমিউনিস্টরা হিটলার-বিষয়ে মোটামুটি নীরব। ১৯৪৩ থেকে শুরু হলো নেই নেই। কাগজও নেই। এক ফর্মার মৌচাক বা 888sport app download apk পত্রিকা হাতে নিলে চোখে জল আসে। স্কুলে যাওয়ার পথে রোজ দেখে মানুষ মরে পড়ে আছে। মৃতদেহ ডিঙিয়ে যেতে হয়। ১৯৪৫ নাগাদ অবশ্য নিম্ন-মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের অবস্থা
ফিরতে শুরু করল। খবর এলো হিটলার আত্মহত্যা করেছে। মুসলিম লিগ এদিকে পাকিস্তানের দাবি তুলেছে, আর আশ্চর্য, কমিউনিস্ট পার্টি দেশভাগ সমর্থন করছে। ১৬ আগস্ট, ১৯৪৬ পাকিস্তানের দাবিতে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল। ভারত স্বাধীন হলো একদিন। রাতে পার্কে পার্কে উৎসব হলো, কিন্তু সে যেতে পারল না সেই উৎসবের ভেতরে। এই স্বাধীনতা কি সে চেয়েছিল? ওই যে বাস থেকে নেমে অন্ধ মেয়েটা ময়লা শাড়ি পরে রুক্ষ চুলে কলাবনের মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে আড়ালে চলে গেল, কেমন স্বাধীন হয়েছে সে? হঠাৎ মনে হলো অন্ধ সেই মেয়েটাকে আড়াল করে, স্বদেশলক্ষ্মীকে আড়াল করে এসব উৎসব অর্থহীন। কে হিন্দু, কে মুসলমান, মাথা গুনে গুনে এই দেশভাগ! এত শিক্ষা, এত প্রগতির আস্ফালনের পর! কর্মখালির অংশটুকু ছাড়া খবর-কাগজ পড়ে কী-আর লাভ!
ওর প্রথম বন্ধু হলো অনুপম বসুমলিস্নক। মহানির্বাণ মঠের পাশে রাসবিহারীর ওপর গোপাল গোস্বামীর বাড়ি। দুদিকে লাল সিমেন্ট-বাঁধানো রক – ওটাই গোপালের বৈঠকখানা। আর একটু সোজা হেঁটে ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছেলে শংকর দত্তের বাড়ি। কত বই এনেছে ওর থেকে। নবান্ন নাটকের লেখক বিজন ভট্টাচার্যের ভাই সলিল তার কলেজের প্রথম বন্ধু। সারাদুপুর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওর সঙ্গে হাজরা-পার্কে রোদ্দুরের মধ্যে বসে থেকেছে। মৃণালকান্তি দাশের সঙ্গে আলাপ হলো। মূলত সে কবি। শরৎ ব্যানার্জি রোডে থাকত সুনীল চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৪ সালে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সঙ্গে নিবিড় হয়ে উঠল যোগাযোগ। কবি হিসেবে সবাই তাঁকে চেনে। অলোকের মা একটা খাতা উপহার দেন তাঁকে। রাসবিহারীর বাড়ির পাশের কবিরাজি দোকানে রোজ সকালে এসে বসতেন সুনির্মল বসু। তাঁর প্রিয় কবি। একবার বুদ্ধদেবের দেখা পাওয়ার জন্য প্রতিভা বসু-সম্পাদিত বৈশাখী কিনতে গিয়েছিল 888sport app download apkভবনে, সঙ্গে বন্ধু সুনীল। দীপংকর দাশগুপ্ত তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ছন্দের ব্যাপারে কী আশ্চর্য দখল ওর। প্রায় তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল আলফা ক্যাফে। বিখ্যাত কবি অরবিন্দ গুহর সঙ্গে আলাপ হলো। তরুণ কবি থেকে তাজা মাস্তান, সবাই হাজির সেখানে। আলফা ক্যাফেতে তাঁর সবচেয়ে বড়ো পাওনা দীপংকর দাশগুপ্ত, তরুণ মিত্র আর শংকরের বন্ধুত্ব। রাত দশটার পরে তরুণ আসত, ওর সঙ্গে সাদার্ন অ্যাভিনিউর মাঝখানের বাগানে বসে গল্প করতে করতে রাত বারোটা। দীপংকর এলে বসা হতো মহীশূর রোডের মোড়ে একটা চায়ের দোকানে। শতভিষা পত্রিকার জন্ম ওই দোকানেই।
দশ-এগারো বছরের ছেলে চোখে নীল আলো জ্বেলে হেঁটে যায়। অন্যরকম একটা ঘরের দিকে তার যাওয়া। যেতে যেতে সে বলে ওঠে : ‘আমি বাহির হইব বলে/ যেন সারাদিন কে বসিয়া থাকে/ নীল আকাশের কোলে’… বাহির হইব বলে, আমি বাহির হইব বলে বারবার ঘুরে ঘুরে বলে, বলতেই থাকে। পথে কত নামের বাড়ি কত নামের রাস্তা, নাম না দিলে সবাইকে তাদের বসবাসের ভেতর রাখবে কী করে? হঠাৎ চোখ জুড়ে সাদা একটা মাঠ। ওই তো অরণ্য শুরু হলো। মরা পাতা জমে জমে পাহাড়। পিপুলগাছের পাশে পিছন ফিরে যে-লোকটা দাঁড়িয়ে তার দু-কাঁধে তিনটে সবুজ রঙের পাখি…ভাবতে ভাবতে চক্রবেড়িয়া রোডের ভাঙা টিউবওয়েল দেখতে পায়। ওই তো লালঘুড়ি নীলঘুড়ির দোকান। বই পড়তে পড়তে কখন যে মনের সেই গুরুগুরু বাজনা শুরু হয়ে যায়, বাজনা এ-গলি ও-গলি পার হয় দিঘির মাঝখানে যায় – ওই বাজনাটুকুর জন্যই তো তার বই-পড়া। সর্বক্ষণ এক যাওয়া-আসা। যাওয়া-আসা নিয়েই সারাটা ক্ষণ কত প্রশ্ন। ব্রত-পার্বণের সন্ধেবেলায় দিঘিতে মেয়েরা যে-কলাগাছের ডোঙা ভাসায়, দিপ দিপ করে আলো জ্বেলে সেগুলো যায় কোথায়? হাজার হাজার বাসমত্মী রং-পাতা প্রদীপের মতো জ্বেলে ওদের কোথায় নিয়ে চলেছে, হাওয়া? ওরা আর তো গাছে ফিরবে না। চোখে নীল আলো আর মনে মনে অদৃশ্য এক 888sport slot gameসূচি : ‘শোনো নারকেল গাছের মধ্য দিয়ে পথ, আমি তোমার নাম দিলুম ভরা শ্রাবণের পথ, তুমি যেখানে থেমেছ সেখানে শ্রাবণ মাস তার সব কালো-কাজল মেঘ দিয়ে মস্তবড়ো নিঝুম রাশি রাশি ভেজা শাদা ফুলের বাগান সাজিয়েছে, সেখানে আমি কোনোদিন যাব না, তবু তার সবটুকুই আমার জানা।’ আশ্চর্য, এ যে অমলের ইচ্ছেয়-ভেজা কণ্ঠস্বর!
888sport app download apk লেখা আর বিছানার নিচে সঙ্গে সঙ্গে তাদের লুকিয়ে ফেলা। তবু মেজদার হাতে একদিন একটা লেখা পড়ে গেল। মেজদা বলল, তুই তো ছন্দের কিছুই জানিস না। মেজদার কাছে সেই প্রথম ছন্দের হাতেখড়ি। টেবিলের কোণে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য। তারপরের সব বোঝাপড়া নিজের সঙ্গেই। শুধু 888sport app download apk লেখাও নয়, সাত বছর বয়সে রুল-টানা কাগজে বড়ো বড়ো হরফে লিখে ফেলেছিল ষোলো পাতার এক খুদে-888sport alternative link… ভালো 888sport app download apk কী, এখন তা সে বুঝতে পারে কিন্তু তার নিজের 888sport app download apk তার ধারে-কাছে যেতে পারছে না। অমিয় চক্রবর্তীর ‘রাত্রিযাপন’ 888sport app download apkটা পড়ে তার মনে হলো, 888sport app download apkর ভাষা বোধহয় সেখানেই খুঁজে পাবে। চোদ্দো বছর বয়সে এসে নিজের লেখার ওপর একটু যেন আস্থা এলো। তবে তাঁর 888sport app download apk কোনো হঠাৎ-পাওয়া নয়। বাঘের একটা মায়াচক্র আছে শুধু, ঘুরে ঘুরে সে আবার সেই বাঘের মুখে গিয়েই দাঁড়ায়। লেখা শেষ হলে একবার পড়ে, ভাবে আরো একবার পড়বে নাকি – মুখ না ফিরিয়েই দেখতে পায় পুরো একটা শরৎকাল, কাশফুল-শিউলিগন্ধ রোদ্দুর-মাখা খুশিমুখ… তেইশ বছর পেরিয়ে শেষে 888sport app download apk লেখার জন্য একটা খাতা কিনল সে। আর খুচরো কাগজে নয়, এবার থেকে বাঁধানো খাতায় 888sport app download apk লিখবে…
একটি কিশোর কেন 888sport app download apk লিখতে শুরু করে তার ইশারাগুলো ধরা আছে যেন এই জীবনীতে। তবে ঘটনা তো 888sport app download apk নয়! 888sport app download apk তো এক অলৌকিক! মাওরি উপজাতির দেবতা ওরো নাকি তাঁর সঙ্গীকে খুঁজে বেড়াতেন রামধনুকে সাঁকো করে তার একটা দিক মাটিতে গেঁথে আর অন্যদিকটা পাহাড়চুড়োয় রেখে।
888sport app download apk যেন সেই রামধনুর সাঁকো। তার ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে জীবনের উপত্যকা আর নদী-সাগরের ওপর দিয়ে আলগোছে পার হয়ে যাবেন কবি – তাঁর প্রকৃত জীবন থেকে ধীরে ধীরে 888sport app download apkয় উঠে যাবেন। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.