মনজুরুল হক
ইয়ান্নিস রিৎসোস বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে পরিচিত গ্রিক কবিদের একজন। জন্ম গ্রিসের মনেমভাসিয়ায় ১৯০৯ সালের ১ মে, আর মৃত্যু এথেন্সে ১৯৯০ সালের ১১ নভেম্বর। একাশি বছরের দীর্ঘ জীবনে কবির ভাগ্যে খ্যাতির পাশাপাশি জুটেছে কারাবাস। ১৯৩৪ সালে প্রথম 888sport app download apkর বই ট্রাক্টর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে 888sport live footballানুরাগীদের নজরে আসেন এ-কবি। একই বছর তিনি গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে কাব্য রচনার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। এর আগে ত্রিশের দশকের শুরুর দিক থেকে অভিনেতা ও নর্তকী হিসেবেও তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তবে কমিউনিস্ট মতাদর্শ তাঁর জীবনে রেখেছিল বিশাল প্রভাব। খ্যাতি এবং বিড়ম্বনা, দুইয়ের পেছনেই ছিল সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের ছোঁয়া।
১৯৩৫ সালে প্রকাশিত রিৎসোসের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ পিরামিড গ্রিসের 888sport live footballে প্রথমবারের মতো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ধারা থেকে 888sport app download apkকে বের করে এনে সহজ ভাষার রাজনৈতিক মতাদর্শের 888sport app download apkর আগমনের বার্তা শুনিয়েছিল। রিৎসোস ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত 888sport app download apk ‘এপিটাফিওস’ লিখেছিলেন একই বছর ধর্মঘটী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত এক শ্রমিকের রক্তাক্ত দেহের ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে। ১৯৩৬ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণপন্থী একনায়ক সরকার গ্রিসে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারি অনুপ্রেরণায় উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এথেন্সের এক্রোপলিসে প্রকাশ্যে ‘এপিটাফিওস’ পুড়িয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে গ্রিস নাৎসি জার্মানির দখলাধীনে এলে রিৎসোস কমিউনিস্ট গেরিলা দলে যোগ দিয়ে নাৎসিবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেন। কমিউনিস্টদের সে-সংগ্রাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধশেষে গৃহযুদ্ধ দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরেও অব্যাহত ছিল। ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টরা পরাজিত হলে রিৎসোসকে গ্রেফতার করা হয় এবং চার বছর তিনি কারাগারে আটক থাকেন। ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে সামরিক বাহিনী গ্রিসে ক্ষমতা দখল করলে বামপন্থায় বিশ্বাসীদের ওপর আবারো নেমে আসে নিপীড়ন। ১৯৬৭ সালে রিৎসোসকে আটক করা হয়। শুধু তাই নয়, গ্রিসে তাঁর 888sport app download apkর প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল কবিকে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সে-নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত ছিল। এতটা উথাল-পাতালের জীবন সত্ত্বেও সৃজনশীলতার কোনোরকম ঘাটতি কবির মধ্যে একেবারেই দেখা যায়নি। 888sport app download apk, নাটক ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ১০০টির বেশি বই লিখেছেন তিনি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছর 888sport live footballের নোবেল 888sport app download bdের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম এলেও সম্ভবত বামপন্থী মতাদর্শের কারণেই 888sport app download bd তাঁর কপালে শেষ পর্যন্ত জোটেনি। তবে গ্রিসের 888sport live footballে স্থায়ী জায়গা তিনি ঠিকই পেয়েছেন।
মুনলাইট সোনাটা
মুনলাইট সোনাটা বিটোফেনের বিখ্যাত সংগীতগুলোর একটি। এই শিরোনামে রিৎসোস দীর্ঘ একটি 888sport app download apk লিখেছিলেন ১৯৫৬ সালে। অসাধারণ সে-888sport app download apkয় চন্দ্রালোকে প্লবিত রাতে এক যুবকের সামনে বয়স্ক মহিলার করে যাওয়া স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে রিৎসোস ফুটিয়ে তুলেছেন সেসব বঞ্চনা আর প্রতারণার কথা, জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে যা আমাদের পীড়া দেয়। রমণীর একক সংলাপে লেখা সেই 888sport app download apk পাঠ করে যাওয়ার মধ্যে যেন অনুভব করা যায় পেছনে বেজে যাওয়া বিটোফেনের সেই সংগীত, যেটিকে আরো বেশি উপস্থাপনযোগ্য করে তুলতে 888sport app download apkর মাঝে পাশ্চাত্য ধ্রম্নপদী সংগীতের তাল আর লয়ের 888sport free betগত মিটারের প্রতিফলনও কবি ব্যবহার করেছেন এ-888sport app download apkয়।
বসমেত্মর এক সন্ধ্যা। পুরনো বাড়ির বড় এক ঘর। কালো পোশাকে সজ্জিত কিছুটা বয়স্ক এক মহিলা কথা বলছেন এক যুবকের সঙ্গে। ঘরের বাতি তাঁরা জ্বালাননি। দুটি জানালা দিয়েই চাঁদ ফেলে যাচ্ছে আলো অবিশ্রান্ত। বলতে ভুলে গেছি, কালো পোশাকের সেই রমণী আংশিকভাবে ধর্মীয় আবহযুক্ত দুটি কিংবা তিনটি 888sport app download apkর বই প্রকাশ করেছেন। কালো পোশাকের সেই মহিলা এখানে বলে যাচ্ছেন তাঁর একক সংলাপ যুবকের সামনে :
আমাকে তোমার সাথে যেতে দাও। কি দারুণ চাঁদ আজ রাতে!
চাঁদ যে সদয় – দেখাবে না সে
আমার এই সাদা হয়ে আসা চুল। আমার এই চুলে
আবারো চাঁদ নিয়ে আসবে সোনালি আভা। বুঝবে না তুমি।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
আকাশে চাঁদ দেখা দিলে ঘরের ছায়া হয়ে ওঠে মস্ত বড়,
অদৃশ্য সব হাত টেনে দেয় পর্দা,
ভুতুড়ে এক আঙুল পিয়ানোতে জমা হওয়া ধুলায় লিখে নেয়
ভুলে যাওয়া নানা শব্দ। চুপ! আমি তা শুনতে চাই না আর।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে
নিচে আরো কিছুটা দূরে, ইটের ভাটার দেয়াল পর্যন্ত,
সেই সীমা অবধি, পথ যেখানে নিয়েছে বাঁক এবং দৃষ্টিতে আসছে
কংক্রিট আর বাতাসের পর্দায় 888sport app শহর, চাঁদের আলোয় ধবল-স্নাত,
কেমন নিঃস্পৃহ, যেন সারগর্ভ-হীন
অধিবিদ্যার মতোই নিশ্চিত
যেন অবশেষে তুমি বিশ্বাস করতে পার তুমি আছো আবার তুমি অসিত্মত্বহীন,
যেন কখনো ছিলে না তুমি, যেন সময় এর বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে হাজির হয়নি কখনো।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
আমরা বসবো ক্ষণিকের জন্য নিচু দেয়ালে, পাহাড়ের ঢালে,
আর বসমেত্মর হাওয়া আমাদের চারদিকে বয়ে গেলে
হয়তো আমরা এমনও কল্পনা করে নেব, যেন উড়ছি আমরা,
কেননা, বিশেষ করে আজকাল প্রায়শই নিজের পোশাকের শব্দ আমি শুনতে পাই
যেন বলিষ্ঠ দুটি ডানার মতো খুলে যাওয়া আর বন্ধ হওয়ার শব্দ,
যেন মনে হবে তোমার ঠোঁট, পাঁজর আর মাংসপেশি আঁকড়ে ধরা শক্ত জাল
আর তুমি যখন নিজেকে নিয়ে আসবে উড়ে যাওয়ার সেই শব্দের আরো একটু কাছে,
যেন অনুভব করবে তুমি তোমারই কণ্ঠনালি, তোমার ডানা, আর মাংসের শক্ত বন্ধন,
আর এভাবেই উজ্জ্বল নীল বাতাসের পেশিতে সংকুচিত হতে হতে,
স্বর্গের বলিষ্ঠ স্নায়ুর চাপে সংকুচিত হওয়া অবস্থায়,
তুমি যাচ্ছ, না ফিরে আসছ তা হয়ে যায় অর্থহীন
তুমি যাচ্ছ কি ফিরে আসছ তা হয়ে যায় অর্থহীন
আর আমার এই চুল সাদা হয়ে আসছে কিনা, তাও হয়ে পড়ে অর্থহীন
(দুঃখ আমার এজন্য নয় – দুঃখ হলো
আমার এই হৃদয়টাও কেন হচ্ছে না সাদা)
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
আমার জানা আছে সবাই আমরা যাত্রা করি একা ভালবাসবো বলে,
বিশ্বাসে একা, মৃত্যুতেও আমরা একা।
এ আমার আছে জানা। আমি নিজেও দেখেছি চেষ্টা করে। লাভ হয়নি কোনো।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
এই ভুতুড়ে বাড়ি, ধাওয়া করছে আমার পেছনে –
আমি যা বলতে চাই তা হলো, অনেকটাই বুড়িয়ে গেছে সে, পেরেকগুলো হয়ে গেছে ঢিলে,
মানুষের প্রতিকৃতিগুলো সব পড়ে যাচ্ছে নিচে, যেন শূন্যতায় দিচ্ছে ডুব,
পলেস্তারা খসে পড়ে শব্দহীন
মৃত ব্যক্তির টুপি অন্ধকার প্রবেশ পথে ঝুলানো আঙটা থেকে পড়ে যাওয়ার মতো
যেভাবে ব্যবহারে জীর্ণ উলের দস্তানা নীরবে পড়ে যায় জানু থেকে
কিংবা কড়িকাঠ হঠাৎ খসে পড়ে পুরনো, গদি ছিঁড়ে যাওয়া চেয়ারের ওপর।
একদিন সেটাও ছিল নতুন – যে-ছবির দিকে তুমি তাকিয়ে সন্দেহের চোখে, সেটা নয় –
চেয়ারের কথা বলছি আমি, খুবই আরামের সেই চেয়ার, বসে থাকা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা
চোখদুটি বন্ধ করে আর সেরকম স্বপ্নের কথা ভেবে যা দেখা দেয় তোমার মনে
– বালির সৈকত, মসৃণ, ভেজা, চাঁদের আলোতে উজ্জ্বল,
চকচকে, যেন আমার পুরনো চামড়ার জুতোটার চাইতে বেশি,
সেই জুতো যা আমি মাসে একবার নিয়ে যাই গলির মোড়ের বুট পলিসের দোকানে,
কিংবা মাছধরা নৌকার মেলে দেওয়া পাল, নিজের নিশ্বাসের ভারে তলিয়ে যায় যা নিচে,
তিন কোনা পাল যেন এক পাশে কাত করে ভাজ করা এমন এক রুমাল
যার ভেতরে রেখে দেওয়া কিংবা বেঁধে নেওয়ার নেই কোনো কিছু
বিদায়ে তাই ঝটপট খুলে নেওয়ার নেই কারণ। রুমালের প্রতি বরাবর আসক্ত আমি,
ভেতরে কিছু বেঁধে রাখার জন্য নয়,
না বীজ কিংবা সূর্যাসেত্মর আগে মাঠ থেকে তুলে আনা ক্যামোমিল পাতা,
চারটি গিঁট এতে বেঁধে নেওয়ার জন্যেও নয়, নির্মাণকাজের শ্রমিকের টুপির মতো
যেমনটা দেখা যায় পথের পাশে,
চোখ মুছে নেওয়ার জন্যেও নয় – চোখের দৃষ্টি আমি রেখেছি ভালো;
কখনো প্রয়োজন হয়নি চশমার। খামখেয়ালি মেজাজের নিরীহ রুমাল।
চার ভাঁজে মুড়ে নিই আমি সেই রুমাল, মুড়ে নিই আট ভাঁজে, ষোলো ভাঁজে
শুধু নিজের এই আঙুলকে রাখতে ব্যস্ত। মনে পড়ছে আমার
এভাবেই একদিন গুনতে হতো আমাকে সংগীতের তাল ওডিওনের দিনগুলোতে
সাদা কলারের নীল জামা আর উজ্জ্বল রঙের দুটি বেণি নিয়ে –
৮, ১৬, ৩২, ৬৪ –
আমার এক ছোট বন্ধুর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তুলেছি ফুল, হালকা, চপল,
(ক্ষমা করবেন আমার এই অপ্রাসঙ্গিকতা, বদভ্যাস) – ৩২, ৬৪ – আর পরিবারের ছিল
বিশাল আশা আমার সংগীতপ্রতিভা নিয়ে। তবে আমি যে বলছিলাম চেয়ারের কথা –
ছিঁড়ে যাওয়া সেই চেয়ার – মরচে ধরা স্প্রিং দেখিয়ে দিচ্ছে যার গদি –
পাশের আসবাবের দোকানে পাঠিয়ে দেব, ভেবেছিলাম আমি,
তবে কোথায় সেই সময়, অর্থ কিংবা আগ্রহ – কোনটা যে শুরুতে করতে হয় মেরামত?
ভেবেছিলাম এর ওপর চাদর বিছিয়ে দেব – তবে এমন এক চাঁদনী রাতে
ধবধবে সাদা চাদরকে নিয়ে ছিল আমার ভয়। বসেছেন এই চেয়ারে একদিন সেইসব মানুষ
দেখেছিলেন যারা মহান সব স্বপ্ন, যেমনটা দেখছ তুমি এবং দেখছি আমিও।
আর এখন সবাই তাঁরা ঘুমিয়ে মাটির নিচে, চাঁদ কিংবা বৃষ্টির বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
সেন্ট নিকোলাসের মর্মর সিঁড়ির ধাপে এসে নেব আমরা স্বল্প বিরতি,
আর এরপর তুমি নেমে যাবে নিচে আর আমি ফিরে যাব,
আমার বাঁদিকে লেগে থাকা তোমার কোটের অসতর্ক ছোঁয়ার স্পর্শ,
সেই সাথে পাশের ছোট জানালা থেকে পড়া আলোর কয়েকটি চৌকোনা ছায়া নিয়ে,
চাঁদের এই বিশুদ্ধ ধবল কুয়াশা, যেন রুপালি রাজহাঁসের দর্পিত শোভাযাত্রা –
এতটা সুস্পষ্টতায় ভীত নই আমি, কেননা অন্য এক সময়ে
বসমেত্মর অনেক সন্ধ্যায় চাঁদের আলোর এমন মহিমা ছড়ানো পোশাক পরে
সামনে দেখা দেওয়া ঈশ্বরের সাথে কথা বলেছি আমি –
আর এমন কি তোমার চাইতেও সুন্দর অনেক তরুণকে করেছি নিবেদন তাঁকে –
চাঁদের আলোর শুভ্রতায়
মিশে যাই আমি এমন স্বচ্ছ, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা নিজের ধবল অগ্নিশিখায়,
পুরুষের কোলাহলপূর্ণ দৃষ্টি আর যৌবনের সাময়িক মগ্নতায় পুড়ে গিয়ে,
জমকালো তামাটে দেহে আবদ্ধ থেকে,
বলিষ্ঠ বাহু সাঁতার কাটে পুকুরে, টেনে রেখে দাঁড়, দৌড়ায় ট্র্যাকে, ফুটবলের মাঠে
(আমি ভান করি যেন দেখছি না কিছুই),
ললাট, ওষ্ঠ, গলা, হাঁটু, আঙুল আর চোখ,
বুক আর বাহু আর এসব (আসলেই আমি দেখিনি এর কোনোটাই)
জানো, কখনো কখনো তুমি যখন হও অভিভূত, ভুলে যাও কি তোমাকে করছে উদ্বেলিত
অভিভূত হওয়াটাই হয়ে যায় যথেষ্ট –
হায় ঈশ্বর, তারকা-উজ্জ্বল চোখ, আর অস্বীকৃতির ব্রতচ্যুত তারায় হয়েছিলাম আমি উদ্বেলিত
কেননা এভাবে ভেতর আর বাইরে থেকে অবরুদ্ধ হয়ে
উপরে উঠে যাওয়া কিংবা নিচে নামার অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না সামনে আমার
না, এটা যথেষ্ট নয়।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
আমি জানি দেরি হয়ে গেছে অনেক। তারপরও যেতে দাও,
কেননা দীর্ঘ এই সময়ে – দিনে, রাতে আর রক্তিম দুপুরগুলোতে – আমি ছিলাম একা।
একগুঁয়ে, একা আর নিষ্কলুষ,
ঈশ্বরের জানুতে অর্পণ করতে লিখে গেছি মহিমান্বিত সব 888sport app download apk,
সেইসব কাব্য, যা টিকে থাকবে, বলছি তোমাকে, আমার এই জীবন আর তোমার পরেও
যেন মর্মর পাথরে খোদাই করা, ত্রম্নটিহীন। তবে এটা যথেষ্ট নয়।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
এই বাড়ি আমাকে সইতে পারছে না আর।
পিঠে আমি নিতে পারছি না এর ভার।
তোমাকে থাকতে হবে সতর্ক সবসময়, থাকবে তুমি সতর্ক,
প্রাতরাশের বিশাল আয়োজনের দেয়াল ধরে রাখতে,
ধরে রাখতে চেয়ারসহ টেবিল
নিজের হাতে তুলে নিতে চেয়ার
ঝুলে থাকা কড়িকাঠের তলায় নিজের কাঁধ পেতে দিতে।
আর ডালা বন্ধ কালো কফিনের মতো পিয়ানো। খুলবে না কখনো তুমি সেটা।
সতর্ক থাকবে তুমি, খুবই সতর্ক, যেন পড়ে না যায় এসব, যেন পড়ে না যাও তুমিও।
আমি আর সইতে পারছি না।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
ভেতরের সবকিছু মরে গেলেও এই বাড়ির মরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
মৃতদের নিয়ে বেঁচে থাকার জেদ ধরেছে সে
মৃতদের বিক্রি করে দিয়েই বেঁচে থাকা
নিজের মৃত্যুর নিশ্চয়তাকে নিয়ে বেঁচে থাকা
জেদ ধরেছে মৃতদের জন্য বাড়িটিকে রেখে দিতে, পচন ধরা পালঙ্ক আর তাকগুলোসহ।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
এখানে নিজে আমি অবশ্য নিঃশব্দে হেঁটে যাই সন্ধ্যার কুয়াশার ভেতর দিয়ে,
কখনো চপ্পল থাকে পায়ে, কখনো আবার খালি পায়ে হেঁটে গেলেও,
কিছু শব্দ ঠিকই ভেসে আসে : জানালা কিংবা আয়নার কাচে চিড় ধরার শব্দ,
শোনা যায় কারো পদধ্বনি – আমার নিজের নয়।
বাইরে রাস্তায় সেই শব্দ হয়তো যায় না শোনা –
লোকে বলে, অনুতাপ নাকি চলে কাঠের জুতো পায়ে দিয়ে –
আর তুমি যদি তাকাও এদিকের কিংবা সেদিকের আয়নায়,
ধুলা আর ফাটলের পেছনে,
উপলব্ধি করবে তুমি – অন্ধকার আর আরো বেশি টুকরো হয়ে যাওয়া – নিজের মুখ,
সেই মুখ, সমস্ত জীবন তুমি যা রাখতে চেয়েছ পরিচ্ছন্ন আর পরিপূর্ণ।
গvসের ঠোঁটে দীপ্তি ছড়ায় চাঁদের আলো
যেন বৃত্তাকার ছুরির ফলা – বল, কীভাবে আমি তুলে নিই সেটা আমার ওষ্ঠে?
যতই তেষ্টা পাক না কেন – কীভাবে তুলি সেটা – দেখছ না তুমি?
হাসির মেজাজ ফুটিয়ে তুলতে আমি প্রস্ত্তত এখন – অন্তত এটুকু আমার আছে এখনো,
কমে যে যায়নি এখনো বোধশক্তি, সেই আশ্বাস দিচ্ছে আমাকে।
আমাকে যেতে দাও তোমার সাথে।
সন্ধ্যা নেমে এলে কখনো আমার মনে হয়
জানালার বাইরে ভালুকের মালিক যাচ্ছে হেঁটে পুরনো ভারী ভালুককে সাথে নিয়ে,
ভালুকের পশম জ্বালা-পোড়া আর কাঁটায় ভরা,
পাশের রাস্তায় ধুলোয় নাড়া দিয়ে,
ধুলার হতশ্রী এক মেঘ ঢেকে দেয় গোধূলিকে,
শিশুরা ফিরে গেছে ঘরে রাতের খাবারের আগে, অনুমতি নেই আবারো বেরুবার,
যদিও দেয়ালের বাইরে বুড়ো ভালুকের হেঁটে যাওয়া বড় পছন্দ ওদের –
আর ক্লান্ত সেই ভালুক নিঃসঙ্গ বিচক্ষণতায় হেঁটে যায়, না জেনে কোথায় আর কেন –
ভারী হয়ে গেছে দেহ, পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে নাচতে অপারগ,
শিশুদের আনন্দ দিতে লেসের টুপি আর পরে নিতে পারে না সে, নাছোড়বান্দা, অলস,
একমাত্র ইচ্ছা তার পথের ওপর শুয়ে পড়ার
মাড়িয়ে যাক মানুষ ওর পেট আর এভাবে সাঙ্গ হোক জীবনের শেষ খেলা,
দেখিয়ে দিয়ে নিজের হাল ছেড়ে দেওয়ার ভয়ংকর ক্ষমতা,
তার উদাসীনতা অন্যদের উৎসাহে, নিজের ঠোঁটে লাগানো আঙটায়, আর দাঁতের পীড়ায়,
ব্যথা আর জীবনের প্রতি তার উদাসীনতায়
মৃত্যুর নিশ্চিত দুষ্কর্মে – এমন কি ধীর এক মৃত্যুরও –
তার চূড়ান্ত উদাসীনতা জীবনের ধারাবাহিকতা আর জ্ঞানের জানান দেওয়া মৃত্যু নিয়ে
যা তার দাসত্বকে ছাপিয়ে যায় জ্ঞান আর কর্ম নিয়ে।
তবে কেই বা পারে শেষ অবধি এই খেলা খেলে যেতে?
ভালুক তাই আবারো উঠে দাঁড়ায় আর হেঁটে যায়
অনুগত থেকে নিজের গলায় বাঁধা বেল্ট, আঙটা আর দাঁতে,
ছুড়ে মারা পয়সার দিকে চেয়ে হাসে ফেটে যাওয়া ঠোঁটের সন্দেহমুক্ত শিশুরা
(সুন্দর, ঠিক সন্দেহমুক্ত বলেই)
আর বলে ওঠে ধন্যবাদ। কেননা বুড়ো ভালুক
কেবল একটি কথাই তো বলতে পারে : তোমাকে ধন্যবাদ; তোমাকে ধন্যবাদ।
আমাকে তোমার সাথে যেতে দাও।
এই বাড়ি শ্বাসরোধ করে আমার। বিশেষ করে রান্নাঘর
যেন সমুদ্রের গভীর তলদেশ। ঝুলে থাকা কফির পেয়ালাগুলো ছড়ায় দীপ্তি
অবাস্তব মাছের বিশাল, গোলাকার চোখের মতো,
পেটগুলো ধীরে দোল খায় যেন জেলি-মাছ,
চুলে আমার লেগে যায় সমুদ্র শৈবাল আর শঙ্খ – পরে আর খুলে নিতে পারি না আমি –
ফিরে যেতে পারি না আমি জলের ওপরে –
হাত থেকে আমার নিঃশব্দে পড়ে যায় ট্রে – তলিয়ে যায় নিচে
আর আমি দেখি আমার নিশ্বাসের বুদ্বুদ উঠে যায় ওপরে, উঠে যায় ওপরে
আর এদের দেখে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি আমি
অবাক হয়ে ভাবি সেই বুদ্বুদ দেখে কি মনে হবে ওপরে থাকা কারো,
হয়তো মনে হবে ডুবছে কেউ, কিংবা সমুদ্রের গভীরে চালাচ্ছে অনুসন্ধান কোনো এক ডুবুরি।
আসলে কিন্তু সেখানে, ডুবে যাওয়া সেই গভীরে, একাধিকবার খুঁজে পেয়েছি আমি,
প্রবাল আর মুক্তা, সেই সাথে ডুবন্ত জাহাজের রত্ন,
অতীত বর্তমান আর অনাগত দিনের অপ্রত্যাশিত সেইসব সাক্ষাৎ
তো হচ্ছে যা কিছু প্রায় চিরন্তন তারই নিশ্চিত স্বীকৃতি,
কোনো এক বিরতি, মৃত্যুহীন কারো হাসি, যখন তাঁরা বলে,
এক টুকরো সুখ, উন্মত্ততা, এমনকি অনুপ্রেরণা,
প্রবাল, আর মুক্তা আর নীলমণি;
আমারই কেবল জানা নেই কিভাবে এদের দিতে হয় – না আমি দিচ্ছি এদের;
আমার শুধু জানা নেই এরা তা নিতে পারবে কিনা – তবে তারপরও দিয়ে যাই এদের।
আমাকে তোমার সাথে যেতে দাও।
একটু অপেক্ষা কর, আমি নিয়ে আসছি আমার জ্যাকেট।
যেভাবে বদল হয় আবহাওয়া, আমার অবশ্যই সাবধান থাকা দরকার।
সন্ধ্যা কেমন স্যাঁতসেঁতে, আর তোমার কি আসলেই মনে হয় না
চাঁদ যেন শীতকে করে দেয় আরো তীব্র?
তোমার শার্টের বোতাম আমি লাগিয়ে দিই – বুক তোমার কেমন বলিষ্ঠ –
কেমন বলিষ্ঠ চাঁদ – আমি বলতে চাইছি সেই চেয়ার, আর যখনই আমি টেবিল থেকে
তুলে নিই কাপ, মৌনতার গর্ত থেকে যায় নিচে। হাতের তালুতে তখনই আমি ঢেকে দিই
যেন দেখা না যায় এর ভেতরটা – কাপ আমি রেখে দিই আগের জায়গায়;
আর চাঁদ – সে তো হচ্ছে পৃথিবীর করোটির এক ছিদ্র – এর ভেতর দিয়ে তাকাতে নেই,
সে এক চুম্বক শক্তি যা তোমাকে টানবে – তাকাবে না তুমি। তোমরা কেউ তাকাবে না,
শোনো আমি কী বলি – তোমরা পড়ে যাবে নিচে। এই ইন্দ্রিয়-বিলাস হচ্ছে
অপূর্ব, ভাসমান – পড়ে যাবে তুমি –
চাঁদের মর্মর কূপে,
ছায়াগুলো দুলছে, আর শব্দহীন ডানা, রহস্যময় কণ্ঠস্বর – শুনতে কি পাচ্ছ না তুমি?
গভীর, গভীর সেই পতন,
গভীর, গভীর উঠে আসা,
বায়বীয় মূর্তি এর নিজেরই ডানায় বিজড়িত,
গভীর, গভীর, মৌনতার অপ্রতিরোধ্য হিতাকাঙক্ষা –
উলটোদিকের সৈকতে কম্পমান বাতি, যেন দোদুল্যমান তুমি নিজেরই ঢেউয়ে,
সমুদ্রের শ্বাস নেওয়া। অপূর্ব, ভাসমান
এই ইন্দ্রিয়-বিলাস – সাবধান পড়ে যাবে তুমি। আমার দিকে তাকাবে না।
এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব, তৃপ্তিকর এই শিরো-ঘূর্ণন – এটাই তো হচ্ছে আমার সঠিক জায়গা।
আর তাই প্রতি সন্ধ্যায় থাকে আমার সামান্য মাথাব্যথা, ক্ষণিকের বিহবল মুহূর্ত।
প্রায়শই যেতে হয় রাস্তার ওপারের ওষুধের দোকানে অ্যাসপিরিন-খোঁজে,
তবে কখনো ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি আর থেকে যাই এখানেই মাথাব্যথা নিয়ে
আর শুনি দেয়ালে পাইপের ফাঁকা আওয়াজ,
কিংবা পান করি কফি, আর বরাবরের মতোই মনের বিভ্রান্তিতে
ভুলে গিয়ে বানিয়ে নিই দুকাপ – কে করবে পান অন্যটি?
এ যে আসলেই হাস্যকর, জানালার পাশে রেখে দিই কফির কাপ ঠান্ডা হওয়ার জন্য
কখনো নিজেই করি পান দুটোই,
জানালার বাইরে ফার্মেসির উজ্জ্বল সবুজ ভূ-গোলকের দিকে চোখ রেখে,
সেই আলো যেন আমার রুমাল, ছিঁড়ে যাওয়া জুতো, কালো ব্যাগ, আর 888sport app download apkসহ
আমাকে নিতে আসা শব্দহীন এক ট্রেনের সবুজ বাতি
তবে সুটকেস ছাড়াই যাব আমি – কী হবে সেটা নিয়ে?
আমাকে তোমার সাথে যেতে দাও।
আহা, তবে কি চলে যাচ্ছ তুমি? শুভরাত্রি। আমি যাচ্ছি না তোমার সাথে। শুভরাত্রি।
একটু পরে নিজেই আমি চলে যাব। ধন্যবাদ। কেননা শেষ অবধি
এই ভেঙেপড়া বাড়ি থেকে আমাকে নিশ্চয় বের হতে হবে।
শহরের অল্পকিছু অবশ্যই দেখে নিতে চাই আমি, না চাঁদ নয় –
উদাসীন হাতের এই শহর, দৈনন্দিন কাজের শহর,
সেই শহর যে রুটি আর মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে করে অঙ্গীকার,
সেই শহর যে আমাদের সংকীর্ণতা, পাপ, ঘৃণা,
আমাদের আকাঙক্ষা, অজ্ঞতা আর জরাসহ
আমাদের সকলকে করছে বহন এর পিঠে।
শহরের মহান সেই পথযাত্রার শব্দ আমাকে শুনতে হবে,
আর তোমার অথবা ঈশ্বরের, এমনকি নিজের
পায়ের আওয়াজ শোনার ইচ্ছাও আমার আর নেই। শুভরাত্রি।
ঘর অন্ধকার হয়ে আসে। মনে হয় মেঘ হয়তো চাঁদকে ঢেকে দিয়েছে। হঠাৎ করেই কাছের কোনো এক পানশালায় কেউ যেন চালিয়ে দেয় রেডিও, খুবই পরিচিত এক সংগীতের অংশ সেখানে শোনা যায়। তখনই আমি বুঝতে পারি ‘মুনলাইট সোনাটা’র কেবল প্রথম বিচলন ধীরে বেজে যাচ্ছিল পুরো দৃশ্যজুড়ে। যুবক এখন হেঁটে যাবে পাহাড়ের নিচের দিকে তাঁর সুন্দর, ধারালো ঠোঁটে শেস্নষপূর্ণ, কিংবা হয়তো সহানুভূতির হাসি নিয়ে। যুবক সেন্ট নিকোলাসে পৌঁছে যেতেই মার্বেলের সিঁড়িতে পা রাখার আগে সে হেসে উঠবে উচ্চৈঃস্বরের থামাতে-না-পারা হাসি। চাঁদের নিচে তাঁর সেই হাসি খুব বেশি অশোভন শোনাবে না। হয়তো একমাত্র অশোভন হচ্ছে এমন কিছু যে, কোনোকিছুই অশোভনীয় নয়। যুবক তাই চুপ করে যাবে, হয়ে উঠবে গম্ভীর, আর বলবে : ‘একটি যুগের অবক্ষয়।’ আর তাই, আরো একবার খুবই শান্ত হয়ে গিয়ে আরো একবার শার্টের বোতাম খুলে নেবে সে এবং নিজের পথে আবারো হেঁটে যাবে। আর সেই কালো পোশাকের মহিলার বেলায় বলা যায়, বাড়ি থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি বের হয়ে যেতে পেরেছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই। চাঁদ আবারো দীপ্তি ছড়াচ্ছে। আর ঘরের কোনায় ছায়াগুলো অসহনীয় অনুতাপ, অনেকটা যেন অসম্ভব ক্রোধ নিয়ে হয়ে উঠছে গাঢ় – জীবনের জন্য ততটা নয়, যতটা অর্থহীন স্বীকারোক্তির জন্য। শুনতে কি পাচ্ছেন। রেডিও বেজে যাচ্ছে। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.