নতুন কিছু চান বস।
সম্পাদকের টেবিলে বসে তাগড়া গোঁফে তা দিতে দিতে একটাই কথা তাঁর, ‘ভাবুন মিস কবীর। নতুন অ্যাপ্রোচ আনুন। টাকা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা এবারের ঈদ888sport free betটি দিয়ে আলোড়ন তুলতে চাই এদেশে।’
মুখে অনর্গল ‘জি স্যার। জি স্যার’ করে অনীতা কবীর খসখস করে রাইটিং প্যাডে লিখে নেন, নতুন কিছু। এর ওপর অবিরাম কলম ঘষতে থাকেন তিনি। একসময় নতুন কিছুর আকৃতি রবীন্দ্রনাথের স্কেচের মতো রূপ নেয়। নিজেই নিজের লেখা আর বুঝতে পারেন না। মনে মনে বলেন, ‘কী লিখলাম এটা? নতুন কিছু নাকি ম্যা ম্যা করা ছাগলের বাচ্চা!’
অনীতা কবীর এর আগে দুটো মূলধারার পত্রিকায় কাজ করেছেন। 888sport live football পাতা, বিশেষ 888sport free bet, ঈদ888sport free bet প্রকাশের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। এখানে এসে এই ‘বাংরেজি’ ঘরানার মানুষটির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পড়েছেন মহাফাঁপরে। সবকিছুতেই শুধু নতুনত্বের স্বাদ পেতে চান। মাস দুয়েক আগে বিলাতফেরত মানুষটির জন্মদিন উপলক্ষে বসকে তিনি আপন শহর শেরপুর থেকে খাঁটি ছানার পানতোয়া এনে খাওয়ালেন।
জিজ্ঞেস করলেন, ‘মিষ্টিটা ভালো না স্যার?’
‘টেস্টি বাট প্রেজেন্টেশনটা একেবারে সেকেলে। এ-যুগের মিষ্টি বলে মনেই হয় না। ’
অনীতা কবীর আমসি হয়ে গেলেন নিমেষে। সবার সামনে তিনি এভাবে অপদস্থ হবেন ভাবেননি। হাসিমুখে অপমানটুকু হজম করে চলে এলেন নিজের রুমে।
নামজাদা করপোরেট হাউজের এই মিডিয়া উইংয়ে যোগদান করে অনীতা কবীর মনে মনে ভেবেছিলেন, আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন হাতের তালুতে। আরো ভেবেছিলেন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়তো আলী হোসেন সর্দারের পর তাকেই সম্পাদকের পদটি গ্রহণ করতে বলবেন। কিন্তু বলা নেই, কওয়া নেই, চেয়ারম্যান সাহেব হঠাৎ করেই বিলাতফেরত উচ্চশিক্ষিত নতুনত্বের সর্বত্রসন্ধানী এ-মানুষটিকে সম্পাদকের পদে বসিয়ে দিলেন। যে-মানুষ সারাজীবন ইংরেজিতে লেখাপড়া করেছেন তাঁকে দিয়ে কি এসব হয়?
মনে মনে গজগজ করছেন অনীতা। বন্ধু-বান্ধব সবাই জানে, তিনিই হবেন দৈনিক সূর্যের আগামী সম্পাদক। সেজন্যই তাঁকে নেওয়া হয়েছে। অথচ এ-লোকটি উড়ে এসে জুড়ে বসার পর অনীতার মনে হয়েছে, এবার চাকরি ছাড়ার সময় এসে গেছে। কিন্তু যে লুঙ্গি কোম্পানির এ-পত্রিকা, তারা সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধে এত সুশৃঙ্খল ও উদার যে শেষ পর্যন্ত ছাড়ার আর ইচ্ছে হলো না। লাখ টাকা বেতন, গাড়ির সুবিধা, হাসপাতাল বীমা, গ্র্যাচুইটি, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যালাউন্স – এসব চাইলেই কি মেলে? অগত্যা ফখরুল হোসেন, যাঁর ডাকনাম ডেভিড, তাঁকেই সম্পাদক হিসেবে মেনে নিয়ে তিনি কাজ করতে শুরু করেন ডেপুটি পদে। এখানে কেউ কাউকে ভাই বলে সম্বোধন করেন না। সিনিয়র কলিগ তাঁর জুনিয়রকে মিস্টার অমুক আর জুনিয়র তাঁর সিনিয়রকে স্যার বলেন সর্বদা। অনীতা কবীরও সেভাবেই চলছেন।
সকালবেলায় রীতি অনুযায়ী সম্পাদকের রুমে পা দেওয়া মাত্র অন্য কোনো কথা নয়, প্রথম জিজ্ঞাসা তাঁর, ‘মাথা থেকে কিছু বেরোল মিস কবীর?’
‘না।’ হেসে উত্তর দেন তিনি।
‘আমার বুদ্ধি নেবেন?’
‘পত্রিকা আপনার। ডিসিশন আপনার। আমরা তো আপনাকেই ফলো করবো স্যার।’ মেকি বিনয় ঝরান অনীতা।
ফখরুল হোসেন চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। নতুন এ-সম্পাদককে দেখতে যেমন রাগী মনে হয়, আসলে তিনি তা নন। মৃদু স্বরে কথা বলেন। অযথা রেগে যান না। অনীতার তা-ই মনে হয়।
আগের সম্পাদক আলী হোসেন সর্দার যেমনিভাবে সারাক্ষণ খ্যাকখ্যাক করে বেড়াতেন আর সিগ্রেট ফুঁকতেন, তিনি মোটেও তা নন। তিনি ধীরস্থির টাইপ। বড়সড় সাইজের মায়াবী চোখ। উঁচু-লম্বা গড়ন। জিমে নিয়মিত যাওয়া-আসা করা পেটানো শরীর। মাথা ভরা চুল। কথা বলেন সীমিত; কিন্তু যা বলেন, অনীতার ধারণা, ভাবনাচিন্তা ছাড়া বলেন না। একরোখা একটা ভাব রয়েছে আচরণে। সেটা এমনিতে বোঝা না গেলেও যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা ঠিকই বুঝে ফেলেন। যেমনটি বুঝে নিয়েছেন অনীতা কবীর।
সম্পাদকের পদে যোগদানের পর থেকে এক মাস ধরে এই সম্পাদক ভদ্রলোক তাঁকে শুধু খুঁচিয়েই চলেছেন, নতুন এক ঈদ888sport free bet হবে এবার। কিন্তু কীভাবে হবে তা খোলাসা করেন না। নতুনত্ব চাইছেন অথচ কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই, এতই সহজ নাকি নতুন এক ধারার ঈদ888sport free bet বের করা! ছেলের হাতের মোয়া!
অনীতা কবীরের বান্ধবী শায়লা নূর এখন কবি নজরুলের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। ভার্সিটির হল থেকে পেটে-পেটে সম্পর্ক তাদের। একই হলের একই রুমে কাটিয়েছে দীর্ঘ ছয় বছর। যে-কোনো সামান্য কথাও পরস্পরকে জানাতে না পারলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত দুজনার। একবার অসুখ হয়ে অনীতা নিজ বাড়ি শেরপুরে গেছেন। দুই সপ্তাহ না যেতেই হঠাৎ একদিন শায়লা এসে উপস্থিত শেরপুরে, ‘অনেক কথা জমে গেছে দোস্ত। হলে চল।’ বলে অসুস্থ অনীতাকে নিয়ে চলে এলেন 888sport appয়। সেই সম্পর্কটি এখনো বজায় রয়েছে। বলা যায়, দিনদিন পরস্পরের প্রতি টান যেন বেড়েই যাচ্ছে।
অনীতা রিং দেন ওকে, ‘চাকরিটা ছেড়ে দেবো।’
‘কেন নতুন সম্পাদক কি ওইটা?’
‘নারে ভাই। ওইটা হইলে তো ঢং-ফং করে ম্যানেজ করে নিতাম। এ তো অকর্মার ঢেঁকি। খালি নতুন-নতুন করে। টাকার দেমাগ দেখায়। চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয়, সেইটা ফলায়। কোনো পরিকল্পনা নেই। মাঝখান থেকে আমি যন্ত্রণায় মরি।’
‘তোর কিসের যন্ত্রণা? তুই বিয়ে করবি?’
‘কি সব কস না। বেআক্কেল লোকরে কেউ বিয়া করে? তোর মতন আমি?’
‘শেফাক বেআক্কেল? জিরো থেকে ব্যাটা এখন
বস্ত্র-কারখানার মালিক। তুমি তারে কও বেকুব? ওর হাবাগোবা ভাবটা ওর একরকম চতুরালি। সেটা ওর অনেক কাজ সহজ করে দেয়। মানুষের মনে অনুকম্পা তৈরিতে জাদুটোনার মতো কাজ করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়। বুঝলি? বাদ দে, তোর প্রবলেমটা কি, আগে ক দেখি?’
‘বাব্বা। তলে তলে খুব যে প্রেম, মুখে শুধু চটরপটর।’ বলে হাসিতে ভেঙে পড়েন অনীতা।
‘তোর প্রবলেমটা কি, বলবি তো?’
‘নতুন ধরনের এক ঈদ888sport free bet করবেন বলে আমার মাথা খেয়ে ফেলছেন নতুন এই সম্পাদক। কিন্তু কীভাবে করবেন কিছুই জানেন না। আমাকে শুধু চাপ দিয়ে যাচ্ছেন এ-সম্পর্কে ভাবতে। আমি কি ভাববো বল? আমি সম্পাদক? শালা একটা মিছরির ছুরি। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করতে চায়।’
‘লোকটা নাকি ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে পড়াশুনো করেছেন আমেরিকায়? উজবুক তো হওয়ার কথা নয়। আমার মনে হয় তোরে বাজিয়ে দেখছেন। বিয়ে করে ফেল ব্যাটারে।’
‘ধ্যাৎ! নিজে বিয়ে করে পস্তাচ্ছিস আর এখন আমাকে ফেলতে চাইছিস সেই গর্তে। আমি গাধা নই। রাখি। বাই।’ মোবাইল রাখতে না রাখতেই ইন্টারকম বেজে উঠল। ভদ্রলোক ডাকছেন।
অনীতা চটে গিয়ে আপনমনে বলে উঠলেন, ‘আবার ঈদ888sport free bet? এ তো মহাপাগলের পাল্লায় পড়লাম। এত বড় পত্রিকা অফিসে কি আর কোনো কাজ হয় না? অনীতাকে দেখলেই কেবল এসব মনে হয় কেন লোকটির?’
ফখরুল হোসেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র ছাত্র ছিলেন এককালে। 888sport apps থেকে এমবিএ করে তারপর চলে গেলেন আমেরিকায়। সেখানে ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো সেরে সম্প্রতি ফিরে এসেছেন দেশে। বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, সামনাসামনি বেশি দেখায়। অবিবাহিত বলেই কানে এসেছে কথা। এখন পর্যন্ত কেন বিয়ে করেননি তা এক রহস্য অনীতার কাছে। চেয়ারম্যান জুনায়েদ রফিকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে তিনি জানেন। নইলে হুট করে এরকম পদে বসে পড়েন? এসব করপোরেট হাউজের নিয়মকানুন বোঝা ভার। কখন যে কোনদিকে গাড়ি চলে তা বলা মুশকিল। অনীতার মাত্র দু-বছর হয়েছে এখানে। তাতেই বুঝে গেছেন, এখানে সবকিছু বড্ড বেশি ফরমাল। মালিকপক্ষের মাথায় যা খেলা করে তা-ই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। সম্পাদক সাহেব নিজেও মালিকপক্ষ। কিছু শেয়ারেরও মালিক হয়েছেন ইদানীং। তাই তাঁর কথাই এখানে শেষ কথা!
সেটা অনীতা বুঝে গেছেন এদ্দিনে। সম্পাদকের রুমে ঢুকে বেশ স্মার্টলি বলে উঠলেন, ‘আমাকে ডেকেছেন স্যার?’
‘হ্যাঁ। বসুন।’ এমনিতে লোকটি বেশ বিনীত। অ্যাটিকেট মানা লোক। অফিসের 888sport promo code কর্মচারীদের প্রতি সদয় ও মানবিক।
অনীতা টেবিলের সামনে পাতা চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে মানুষটির চোখে চোখ রাখলেন, ‘বলুন স্যার। আপনার তো একটু পর সবাইকে নিয়ে মিটিং রয়েছে।’ 888sport app download for android করিয়ে দিলেন অনীতা সে-কথা। নিউজ এডিটর, ফিচার এডিটরদের নিয়ে হয় নিয়মিত এ-বৈঠক। নানা বিষয়, নানা সমস্যার ওপর তাঁরা আলোকপাত করেন। এর ওপর ভিত্তি করে পত্রিকার অবস্থান নির্ধারিত হয়। অনীতাকেও উপস্থিত থাকতে হয় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে সেখানে।
‘আমি আপনাকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই।’
‘কী?’
‘একটা 888sport live football আড্ডা অ্যারেঞ্জ করতে পারবেন?’
‘আমি?’
‘888sport app ক্লাবে করবো। ডিনার-আড্ডা। আমি তো কাউকে তেমন চিনি না এখানকার। যদি আয়োজন করতেন, প্লিজ!’
প্রস্তাবটি আকস্মিক। তাই হজম করতে একটু সময় নিচ্ছেন অনীতা। এসব বেনিয়া কিসিমের করপোরেট হাউজের মিডিয়া উইংগুলোয় লেখক-কবিদের মর্যাদা কতটুকু, তা নিয়ে ওর মনে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। সাধারণত এঁরা ভাবতে অভ্যস্ত যে, সবাইকে টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব। এঁরা সেভাবে কিছু মানুষকে কিনেও ফেলেন কিংবা নিজস্ব একটি দল গঠন করে শুধু তাঁদেরই মদদ দেন। এঁদের বাইরে তাঁরা যেতেই চান না। বেশিরভাগ তরুণ মেধাবী লেখকের ওপর থাকে এঁদের শ্যেন দৃষ্টি। হয় আমার তাঁবুতে ঢুকে পড়ো, নয়তো তুমি কেউ নও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই হয়ে থাকে তাঁদের পথ চলার দর্শন।
একটুখানি ভেবে নিয়ে অনীতা উত্তর দেন, ‘ঠিক আছে স্যার। মূল দায়িত্বটা আমি ইরফান রেজাকে দিতে চাই। তিনি আমাদের 888sport live footballপাতাটা দীর্ঘদিন থেকে দেখছেন। এ বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও বেশ ভারি। আমি না হয় তদারকি করলাম। তারিখটা বলা যাবে এখন?’
‘আগামী শুক্রবার। সেভাবে কার্ড ছাপতে দিন। চেয়ারম্যান সাহেব রাজি হয়েছেন। আমন্ত্রণপত্র তাঁর নামেই যাবে। ব্যাপারটা তাতে গুরুত্ব পাবে।’
‘আপনি থাকবেন না?’
‘একপাশে আপনার আর আমার নামটাও রাখতে পারেন। ভেবে দেখেন।’ মুচকি হাসলেন।
‘ওকে।’ নোট নিয়ে বেরিয়ে গেলেন অনীতা কবীর। এই প্রথমবার মনে হলো লোকটির মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিন্তু সেটা কী? ঝেড়ে কাশলে ভালো হয় না?
দুই
প্রস্তাব শুনে ইরফান রেজা লাফিয়ে উঠলেন।
অনীতা কবীরের ভুরু কুঁচকে গেল। বয়স্ক মানুষ ইরফান রেজা। নিজেও 888sport app download apk লেখেন। মাঝে মাঝে সিগারেটের প্যাকেটে এক-দুই চরণে 888sport app download apk বা ছড়া লিখে ওকে দেখতে দেন। অনীতার প্রশংসার জন্য কাঙালের মতো তাকিয়ে থাকেন ওর দিকে।
‘এত উৎফল্ল হওয়ার কী হয়েছে?’ প্রশ্ন অনীতা কবীরের।
‘ওমা, কী বলছেন ম্যাডাম? এ সমাজে লেখক-কবিদের সবাই করুণা করে। যেখানে ‘কিছু করো, নাকি লিখেই চলে?’ প্রশ্ন সবার মনে, সেখানে 888sport app ক্লাবে পার্টি হবে লেখক-888sport live chatীদের নিয়ে, ভাবা যায়?’
‘আমাদের দেশের লেখকরা কি এতই দুর্দশাগ্রস্ত? আমি মানি না।’
‘ম্যাডাম, বিষয়টা এরকম নয়। যাঁরা সচ্ছল তাঁরা তো লেখার কারণে নয়, তাঁদের যোগ্যতায় তাঁরা সমাজে একটি অবস্থান অর্জন করেছেন । সেখানে ব্যুরোক্র্যাট লেখক রয়েছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার আছেন। সেটা তো লেখকসত্তার জাগতিক কৃতিত্ব নয় ম্যাডাম?’
‘যাকগে। আপনি একটি তালিকা করুন। আমাকে দেখান। তারপর সম্পাদকের সঙ্গে বসবো। ঠিক আছে? দ্রুত করতে হবে।’
কাজ শুরু হয়ে যায়। মাথা খাটিয়ে ইরফান রেজা একশ তিরিশ জনের একটি তালিকা সম্পন্ন করলেন। কম্পিউটার থেকে কপি বের করে সোজা ঢুকে গেলেন উপ-সম্পাদক অনীতা কবীরের কক্ষে। এই মহিলা সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হলের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতেন। একবার ওদের ডাইনিং হলে মেয়েদের ভেতর খুব চুল ছেঁড়াছেঁড়ি হলো। কাঁটা চামচের গুঁতো খেয়ে কোনো কোনো ছাত্রী আহতও হলেন। এ নিয়ে বড় এক স্টোরি হলো দৈনিক জাগরণ পত্রিকার প্রথম পাতায়। সেখান থেকেই ওর উত্থান। মাঝে মাঝে গল্প নিয়ে হাজির হতেন ইরফান রেজার কাছে। অতিকথন দোষে দুষ্ট ছিল অনীতার গল্প। তাই ছাপাতে পারেননি তখনকার নাক-উঁচু ইরফান। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, এখন আনাড়ি সেই মহিলার অধীনেই চাকরি করতে হচ্ছে তাঁকে!
চোখে রিডিং গ্লাস পরে অনীতা কবীর তালিকাটির ওপর একঝলক দৃষ্টি বুলিয়ে নিলেন। মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন, ‘এটা কোনো তালিকা হলো, রেজা সাহেব?’
হকচকিত ইরফান রেজা। মুখে বললেন, ‘কোনো ভুল ম্যাডাম?’
‘কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে এ-তালিকা করলেন? হাতের কাছে যাঁদের নাম পেয়েছেন তাই লিপিবদ্ধ করে নিয়ে এসেছেন। এ-রকম তালিকা নিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে মিটিং করা যায়?’
‘কী চাইছেন ম্যাডাম?’
‘কিসের ভিত্তিতে এ-তালিকা আপনার নিকট আইডিয়াল বলে মনে হলো সেটা বলুন। বয়স? 888sport app download bd? লেখার দক্ষতা? কে কোন ধরনের লেখালেখিতে দক্ষ সেটা উল্লেখ করুন।’
‘এবার বুঝতে পেরেছি, ম্যাডাম।’
‘এখনো বুঝতে পারেননি। আমি শিউর।’
‘তাহলে আরেকটু আউটলাইন দিন।’
‘ওকে। আপনি তিনটি রং বেছে নিন। সবুজ দেবেন সেসব লেখক-লেখিকাদের, যাঁরা অন্যরকম লেখা লেখেন অর্থাৎ ব্যতিক্রমী, কারো সঙ্গে ঠিক মেলে না, কিন্তু লেখাগুলো গভীর ও মননশীল। যাঁদের লেখা পড়ে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। দ্বিতীয় রং চুজ করেন নীল । যে লেখক-লেখিকার লেখা বেশ জনপ্রিয় কিন্তু অন্তঃসারশূন্য, ষাটের দশকে যা লেখা হয়ে গেছে, সেগুলোরই জাবর কাটা, তাঁদের জন্য নীল। আর লাল দিন তাঁদের যাঁরা দু-রকম লেখাতেই পারদর্শী। অর্থাৎ মননশীল লেখা যেমন লিখতে সক্ষম তেমনি জনপ্রিয় ধারার লেখাও তাঁদের দিয়ে হয়। অথবা ভাবনা উদ্রেককারী লেখা লিখলেও অজনপ্রিয় নন মোটেই, তাঁরা। এভাবে তিনটে রং দিয়ে সুনির্দিষ্ট একটা তালিকা করুন। বুঝতে পারলেন?’
‘এবার বুঝে গেছি ম্যাডাম।’ বলে মেকি উচ্ছ¡াস দেখিয়ে নিজের ডেস্কে ছুটে পালাচ্ছিলেন ইরফান রেজা। মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অনীতা শেষ কথা বলে উঠলেন, ‘আমার কথা শেষ হয়নি ইরফান সাহেব। আপনি অভিজ্ঞ মানুষ। অভিজ্ঞতার আলোকে এদেশের লেখকদের তালিকাটি ফাইনাল করতে পারেন।’
‘বুঝে গেছি।’
‘কী বুঝলেন বলুন তো?’
‘প্রকৃত লেখক খুঁজে বের করা। যাঁদের বড় লেখকের ভান রয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খুবই দুর্বল লেখক, তাঁরা নন। যাঁদের গø্যামার নেই; কিন্তু লেখায় রয়েছে সত্যিকারের গ্ল্যামার, তিনি যেই হোন, যেখানেই থাকুন, তাঁদের সামনে নিয়ে আসা। ঠিক না ম্যাডাম?’
একটুক্ষণ কী যেন ভাবলেন অনীতা। ঘাড় নেড়ে মুচকি হেসে বলে ওঠেন, ‘ঠিক তাই। করুন না একটা তালিকা, যা খুশি আপনার মন চায়। সিরিয়াসলি লেগে পড়–ন।’ তাড়া দেন অনীতা।
‘জি ম্যাডাম।’ ইরফান রেজা চলে গেলেন।
কিন্তু নিজের টেবিলে ফিরে এসে ইরফান রেজা আকাশ-পাতালের মাঝখানে মহাশূন্যে ভাসতে লাগলেন। ম্যাডামকে বড় কথা বলে তো এলেন; কিন্তু এরকম এক লেখক-তালিকা করা কি সহজ কথা?
এমনিতে লেখার অভাব নেই এখানে। ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার লেখক-কবির রচনা হাতে চলে আসবে। কেউ বড় চাকুরে হয়েও শখের বশে লেখক। কারো চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সময় কাটতে চায় না। অগত্যা তিনি লেখক। কেউ 888sport live footballের শিক্ষক। বইপুস্তক পড়ে কীভাবে লেখক হতে হয় তা খাতাপত্রে লিখে-জেনে মুখস্থ করে তারপর কৃতকার্য হয়ে চাকরিতে রয়েছেন। কী আর করা? এক-দুটো ক্লাসের পর অফুরন্ত অলস সময় হাতের তালুতে বৃষ্টির পানির মতো গড়াগড়ি খায়। ব্যস, লেখক হয়ে গেলেন। আবার কেউ বেকার, কিছু করতে ইচ্ছে হয় না, কেবলি পাগলামো করতে বা ঘুরে বেড়াতে মন চায়। ব্যস, লেখক কিংবা কবি হয়ে পড়লেন। সমাজে কিছুটা মানসম্মান পাওয়া গেল। এরকম অবস্থায় প্রকৃত লেখক যে কে বা কারা তা বোঝা সত্যি মুশকিল। যাঁরা লেখক-কবি হিসেবে এরই মধ্যে নাম কামিয়েছেন, তাঁদের ভেতর থেকে তালিকা একটা করে ফেললেই তো হতো। তিনি তো সেটা করেছেনও। কিন্তু ম্যানেজমেন্টের তো তা পছন্দ হলো না। তাহলে?
ইরফান রেজা ভেতরে ভেতরে তেতে উঠলেন।
অফিস-আদালতে সবারই কাজের একটা নির্দিষ্ট ধারা থাকে। এই কাজটার পর ওই কাজ। কিন্তু হঠাৎ কোনো দুর্বোধ্য কাজ ঘাড়ে এসে পড়ে গেলে ধাক্কা তো একটা লাগেই। সঙ্গে থাকে চাপা বিরক্তিবোধ। সেই উহ্য উষ্মা থেকে তিনি কম্পিউটার ডিভিশনের শান্তনুকে ডেকে পাঠালেন। সে তাঁর নিয়মিত 888sport live footballপাতার আইটি সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করে দেয়। মূলত সে ওর সঙ্গেই রয়েছে। বয়স কম, তাঁতিবাজারেরর দিকে থাকে। হালকা-পলকা বেটেখাটো তিরিশ বছরের এক যুবক। এহেন বিষয় নেই যা সে বোঝে না। যা বলা হয় তাতেই ওর হ্যাঁ, কোনো না নেই অন্তরে-বাহিরে।
চোখের সামনে শান্তনু এসে দাঁড়াতেই ইরফান রেজার সব রাগ গিয়ে পড়ল ওর ওপর। হাতে ধরা
লেখক-তালিকাটি ওর দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘কিস্যু হয়নি। একটুখানি কি ঘিলু নেই মাথায়?’
‘ব্যাপারটা কি রেজা ভাই? এ-তালিকা তো আমি তৈরি করিনি। এটা আপনার ফরমায়েশ অনুযায়ী করা। কোনো প্রবলেম?’
‘এ-তালিকটাই পুনরায় করে নিয়ে এসো। বয়স, লেখক কতদিন থেকে লিখছেন, লেখালেখির বিষয়, গুণগত মান, ভাষার স্বকীয়তা, সব উল্লেখ করতে হবে সংক্ষেপে।’ অনীতা কবীরের কাছে যা শুনেছিলেন সব ঢেলে দিলেন শান্তনুর ওপর। মুখে-চোখে দুর্বোধ্য এক উত্তেজনা। শান্তনু বুঝতে পারে না।
‘লেখক কোন এলাকার সেটা?’ মিনমিন করে প্রশ্ন করে সে।
‘ফাজলামো মারো? যা খুশি বানিয়ে নিয়ে এসো। কাল মিটিং বসের সঙ্গে।’ বলে ইরফান রেজা আর দাঁড়ালেন না। জোহরের নামাজের সময় হয়ে গেছে। তাই নামাজ আদায়ের জন্য নামাজঘরের দিকে ছুটে গেলেন।
তিন
তিন মাস ধরে চোখের সামনে রয়েছেন এই ফখরুল হোসেন। ডাকনাম যাঁর ডেভিড। কিন্তু অনীতা কবীরের কাছে চরিত্রটি ঘোলাটে বলেই মনে হয় বারবার। কখনো লাগে লোকটার সবকিছু ভান। কিছুই জানে না। মালিকপক্ষের আত্মীয়-পরিজন হওয়ার সুবাদে মাথার ওপর সম্পাদক হয়ে বসে রয়েছেন। আসলে পুরোদস্তুর একজন অযোগ্য মানুষ।
আবার মাঝে মাঝে ভিন্ন কথাও মনে হয়। যেভাবে মরমর মার্কেটিং বিভাগটিকে সাজালেন, যেভাবে নিউজ-সেকশনটিকে প্রাণবন্ত করে তুলে পাঠকের মনে আকর্ষণ জাগিয়ে তুললেন, যেভাবে যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনার ভেতর নিয়ে এসে মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে কর্মচঞ্চল করে তুললেন, ভাবলে সব মিলিয়ে রীতিমতো বিস্ময় জাগে অনীতার মনে। এখন আদাজল খেয়ে লেগে রয়েছেন ঈদ888sport free betর পেছনে। কী চাইছেন – কেউ কিছুই বুঝতে পারছেন না। অথচ তাঁর পিছু পিছু ছুটে ছুটে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন সবাই। শেষ পর্যন্ত কী হবে – এই কৌতূহল বারবার ধোঁয়া হয়ে মগজে রহস্য তৈরি করছে। অবশ্য একধরনের রহস্যমেশা চাপা আনন্দও মিশে আছে তাতে।
বাইরে যতই গম্ভীর সেজে থাকুক, অনীতা কবীরের মনে কথা জমা হলে তিনি শায়লা নূরের কানে সেসব না তোলা পর্যন্ত স্বস্তি খুঁজে পান না।
‘লোকটা একটা রহস্যময় পুরুষ। কখনো খুব জ্ঞানী-গুণী মনে হয়। কখনো মনে হয় ব্যাটা কিস্সু জানে না।’
‘বিয়ে করেছে কি না সেটা জেনেছিস?’
‘তুই কি সুখে আছিস বিয়ে করে? খালি অন্যের স্ট্যাটাস জানতে চাস?’
‘শীতের রাতে বাচ্চারে মাঝখানে রেখে জামাইরে জড়াইয়া ধরার যে সুখ-সুখ উষ্ণতা, সেটা তুই বুঝবি না। সময় থাকতে বিয়ের গাড়িতে উঠে পড়। ব্যাটার খবর নে আগে। হবে তোর। এবার হবেই। আমি নিশ্চিত।’
‘ধ্যাৎ!’ মোবাইলটা টেবিলের কাচের ওপর রেখে দিয়ে মুচকি হাসেন তিনি। কপালের সবুজ টিপটি ঠিক জায়গায় আছে কি না পরখ করে নেন আন্দাজে। তারপর উঠে গিয়ে ইরফান রেজাকে তাড়া দেন, ‘হলো কিছু?’
ইরফান রেজা বিড়বিড় করে দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন নীরবে। আচমকা অনীতা কবীরের তাড়া খেয়ে একনিশ্বাসে বলে ওঠেন, ‘বিকালের মধ্যেই সেরে ফেলবো ম্যাডাম।’
অনীতা নিজের কাচঘেরা রুমে গিয়ে ইন্টারকমে সম্পাদককে ধরেন। গিয়ে বললেই ভালো হতো, শোভন হতো বিষয়টা। কিন্তু তলে তলে সম্পাদকের এ-পদটির প্রতি তাঁর রয়েছে তীব্র আকর্ষণ। সেখানে পা দিলেই পুরনো অন্তর্জ্বালায় পেয়ে বসে ওকে।
‘স্যার, আগামীকাল সকালে বসতে চাই।’
‘বিষয়?’ শুনে নিমেষে মেজাজ বিগড়ে যায় অনীতার। ভদ্রলোক ভালোই জানেন কদিন ধরে কী বিষয় নিয়ে ওর সঙ্গে তিনি তালাতালি করে বেড়াচ্ছেন। এখন ন্যাকা সেজে ‘কোন বিষয়’ বলে পাল্টা প্রশ্ন করছেন ওকে। অসহ্য!
তবু কণ্ঠ মোলায়েম করে উত্তর দেন, ‘ঈদ888sport free bet।’
‘ওহো। সরি। আমি অন্য কিছু ভেবেছিলাম। নিশ্চয়ই, চলে আসুন। এ-প্রজেক্টটা তো সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট একটা জব।’
‘জি। কাল কটায় সময় হবে স্যার।’ অনীতা বুঝতে পারেন না ঈদ888sport free betর মতো একটা রুটিন জব এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কিভাবে? এ কি সম্পাদকের অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ?
‘আপনার কাছেই তো আমি থাকি। খবর নিয়ে চলে আসবেন!’
মনে মনে ফের চটেন অনীতা কবীর। সময়টা বলে দিলে কি হয়?
যা হোক, সারাদিনের খাটাখাটুনির পর একটা তালিকা দাঁড় করানো হলো। এখানে যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁরা সবাই প্রতিষ্ঠিত মূলধারার লেখক হিসেবে পরিচিত। এর ভেতর কিছু লেখক রয়েছেন যাঁরা বিদেশে থেকে 888sport live footballচর্চা করেন। কেউ রয়েছেন স্বল্পপরিচিত কিন্তু মেধাবী লেখক। এঁদের সবার বয়স ষাটের ভেতর। গুনেগুনে দেখা গেল, মোট একশ তিরিশজন সুপরিচিত, অর্ধপরিচিতি এবং স্বল্পপরিচিত গদ্যকার ও কবির নামের হিসাব এটি। অনীতা কবীর মনে মনে ভাবলেন, এর চেয়ে বেশি কিছু আপাতত করা সম্ভব নয়। লেখক-888sport free betটা ইচ্ছে করেই বাড়িয়ে দেখানো হলো। পরে সম্পাদক চাইলে কমানো যাবে।
পরদিন অফিসে এসে অনীতা কবীর প্রথম ফোনকল করেন সম্পাদক মহোদয়কে। রিং বেজেই যাচ্ছে; কিন্তু তাঁর পাত্তা নেই। খবর নিয়ে জানা গেল, হোটেল শেরাটনে একটা মিটিং রয়েছে তাঁর; সেটি সেরে অফিসে ফিরবেন তিনি। রান্নার কড়াইয়ে সম্বার দেওয়ার মতো ছ্যাঁৎ করে উঠল ভেতরটা। এটা গতকাল বললে কী এমন দোষ হতো? অনীতা কবীরের নিজেরও তো জরুরি কাজ থাকে। তাড়াহুড়ো না করে সেগুলো সেরে আসা যেত।
‘কিসের পার্টি?’ পিয়ন সুলেমানকে না জিজ্ঞাসা করে পারেন না।
‘আপনি জানেন না ম্যাডাম? সম্পাদকদের মাসিক মিটিং। জরুরি হইলে রিং দ্যান।’
রীতিমতো অপমান বোধে তিনি বিদ্ধ হলেন। অনীতা কবীর এ-পত্রিকার দ্বিতীয় কর্তাব্যক্তি। ওকে ভবিষ্যতে সম্পাদক করা হবে – এই আশ্বাস দিয়ে চাকরি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অথচ কাজের সময় ওকে অবজ্ঞা করে ফখরুল হোসেন নামে এক অপরিচিত অখ্যাত মানুষকে সম্পাদক বানিয়ে বসিয়ে দিলেন মাথার ওপর। মালিকপক্ষের আত্মীয়তার নিকট অনীতা কবীরের সাংবাদিকতা বিষয়ক দেশ-বিদেশের ডিগ্রি-ডিপ্লোমা কিংবা অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যই রইলো না। মাঝে মাঝে চরম হতাশায় বিদেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে। ডয়েচে-ভেলে কিংবা বিবিসির বিদেশ-কার্যক্রমে যোগ দিয়ে আলবিদা বলতে ইচ্ছে করে মাতৃভূমিকে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, জার্মানি কিংবা চীন – যেকোনো দেশেই নির্বিঘ্ন জীবন কাটিয়ে দিতে মন চায়। বিশেষ করে যখন পিয়নের কাছ থেকে সম্পাদকের রোজনামচা জেনে নিতে হয় ওর মতো সাংবাদিককে, তখন!
সম্পাদক মহোদয় অফিসে এলেন বিকাল চারটায়। ওর রুমের সামনে দিয়ে ইতালিয়ান শু-র মচমচ শব্দ তুলে নিজের সেগুন কাঠের তৈরি রুমে ঢুকে পড়লেন। অনীতা কবীর আর দেরি করলেন না। সঙ্গে সঙ্গে হাতে তালিকাটি নিয়ে সম্পাদকের দরজায় আগাম তিনটি টোকা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে দিলেন সুইং ডোর আলগা করে। মুখে প্লাস্টিক হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘মে আই কাম ইনসাইড স্যার?’
‘আসুন, আসুন।’ একমুখ হেসে ওকে স্বাগত জানান তিনি।
‘স্যার তালিকা কিন্তু রেডি। আপনি দেখলেই কাজ শুরু হতে পারে।’
‘দেখি।’ বলে তিনি ওর দিকে পূর্ণভাবে তাকান। এ-তাকানোর ভেতর একটা আঠালো ব্যাপার রয়েছে। চোখে চোখ পড়লেই কেমন যেন লাগে। কৌতূহল জাগে সামনে বসা জটিল প্রকৃতির লোকটি সম্পর্কে।
অনীতা কবীর চেয়ারে বসে তাঁর হাতে তালিকাটি তুলে দেন। তিনি তীক্ষ্ন চোখে এক মিনিট পরখ করে দেখলেন সেটি। পাতা ওল্টালেন। মুখে বললেন, ‘চা চলবে তো? পিউর দার্জিলিং টি। দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে পুরনো বাগানের ফার্স্ট ফ্ল্যাশ চা।’
‘চলবে।’ হেসে ফেললেন অনীতা কবীর। ভেতরে এতক্ষণ যা কিছু ক্ষোভ জমেছিল তা পাতলা হতে শুরু করে। ওর বড়ভাই মাহতাব কবীরের কথা মনে পড়ে গেল। একটা চকলেট হাতে গুঁজে দিয়ে যখন-তখন অনীতার মনের সব রাগ পানি করে দিত। একটি মাত্র ভাইয়ের কথা মনে হলে এখনো সব স্থবির হয়ে যায়। সব ফাঁকা লাগে। কতদিন সামনাসামনি দেখা হয় না প্রবাসী ভাইটার সঙ্গে!
মিনিট পাঁচেকের ভেতর বিশাল কাপে করে দার্জিলিং চা এসে উপস্থিত। পিয়ন সুলেমান প্রশ্ন করে, ‘বিস্কুট দিমু আফা?’
‘না।’
ওরা দুজন একসঙ্গে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর দুজন দুজনকে চোরা চাউনি দিয়ে লক্ষ করছেন। সহসা ফখরুল হোসেন বলে ওঠেন, ‘এ তালিকায় বেশিরভাগ লেখক সম্ভবত বয়স্ক। চল্লিশ পেরোনো – আমি আন্দাজ করি। মনে হচ্ছে এঁদের বেশিরভাগ টিপিক্যাল লেখক। চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে যেভাবে লেখকগণ নিজেদের প্রকাশ করতেন, তাঁরা হয়তো সেরকম ভাবধারায় রয়ে গেছেন। এটা আমার ধারণা। ভুল হতেও পারে।’
‘আপনি কোন ধরনের লেখা পছন্দ করেন স্যার?’
‘আমি?’ খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান তিনি। পূর্ণ চোখে তাকান অনীতা কবীরের দিকে।
‘আপনি কিরকম লেখক পছন্দ করেন স্যার?’ সোজসাপ্টা প্রশ্ন অনীতার। হয়তো মেপে নিতে চাইছেন লেখক সম্পর্কে মানুষটির বোধবুদ্ধির গভীরতা।
‘আমি?’ কী যেন একটু ভেবে বলে ওঠেন, ‘সেমি-ক্লাসিক্যাল গান শুনেছেন? ওস্তাদ বা গুরুজি চোখ বুজে আঙুল দিয়ে বাতাসে একধরনের আঁকিবুকি রচনা করেন। আমরা ভাবি এগুলো শারীরিক তাড়না বুঝি বা। কিন্তু তা নয়। এর ভেতর দিয়ে তাঁরা একটা সুরের বিস্তার ঘটান, আল্পনা আঁকেন সুরে-সুরে। সেটা সুর তান লয়ের এক অদৃশ্য বায়বীয় আকাশ। সেখানে উড়ে বেড়াতে প্রপেলারের মতো কাজ করে এই হাত-আঙুলের মুদ্রাগুলো। আমি সেরকম গল্প পড়তে চাই যা অতীন্দ্রিয় এক ঘোরের আকাশে রংবেরঙের প্রজাপতির মতো পাঠককে উড়িয়ে আবার মাটিতে এনে স্থির করে। বেশি বলে ফেললাম,
হা-হা-হা।’
অনীতা কবীর নিশ্চুপ হয়ে শুনলেন। পুরু গোঁফের দিকে তাকালে যেরকম তরল স্বভাবের বলে মনে হয় মানুষটিকে, হয়তো তিনি তা নন। নইলে এমন গুছিয়ে কথা বলা তো
যাঁর-তাঁর কাজ নয়!
‘আচ্ছা শুনুন, আমি তালিকাটি নিয়ে নিলাম। রাতে ভালো করে দেখবো। সমস্যা নেই তো?’
‘না, না। কেন আপত্তি থাকবে? নিয়ে নিন।’ চাপা হাসেন অনীতা কবীর। চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার দিকে পা বাড়ান।
এসময় পেছন থেকে সম্পাদক মহোদয় বলে ওঠেন, ‘একটা কথা। বয়স হলেই লেখকের লেখা বুড়োটে হয়ে যায় তা নয় কিন্তু। লেখার শক্তি এ-বয়সেই বরং অনেক বেশি ম্যাচিউর হয়। এ-উপমহাদেশের অনেক প্রেমের গান বুড়োদের হাত থেকে বেরিয়েছে। মূল কথা, আপনি কতটুকু শক্তিশালী কেবল সেটুকু বিবেচ্য বিষয় হলেই চলবে। আর কিছু নয়।’
‘আপনি গান খুব পছন্দ করেন?’
‘খুব। বিশেষ করে এদেশের সেমি-ক্লাসিক্যাল ঘরানার সংগীত। গানের সঙ্গে আমি গল্পের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। সত্যি বলছি।’ নির্বিকার মানুষটিকে এই প্রথম আবেগঘন লাগল অনীতার কাছে।
তিনি হাসতে হাসতে বেরিয়ে যান।
রুম থেকে বেরিয়ে বিড়বিড় করে বলে ওঠেন, ‘আপনি একটা বুড়ো। বুড়োরাই এসব শোনে।’
চার
ফখরুল হোসেনকে প্রথম প্রথম যত অযোগ্য ভাবতেন অনীতা কবীর, সময়ের সঙ্গে সেই মনোভাব পাল্টাতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে বেশ মেধাবী লাগে মানুষটিকে। পড়াশুনো না থাকলে, এর সঙ্গে অভিজ্ঞতা না মিশলে এরকম হওয়ার কথা নয়। অথচ তাঁর শারীরিক গঠনে একটা মাস্তান-মাস্তান ভাব রয়েছে। গম্ভীর হয়ে যখন কথা বলেন তখনো মনে হয় বুঝি লোকটি ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে রয়েছেন। এজন্য মিটিংয়ের ভেতর খুব জরুরি না হলে কেউ মুখ খুলতে চায় না। অথচ তাঁকে কখনো অভব্য কথা বলতে শোনেননি অনীতা। কখনো মাথা গরম করে যা খুশি তা বলতেও দেখেননি। এমনকি, উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে কাউকে কাজে বাধ্য করেননি তিনি। পিয়ন সুলেমানের ভাষ্য, ‘স্যার খুব রাগী, ম্যাডাম। চা দিতে গেলেও হাত কাঁপে।’
‘তোমারে কোনোদিন বকা দিয়েছেন?’
‘না ম্যাডাম। সুযোগই দিই নাই।’
‘চাকরির ভয় দেখাইছে?’
‘না, না। মিছা কতা কমু ক্যান। এরহম কিছুই বলে না। কিন্তু ভয় লাগে। রুমে ঢুকলেই হাত-পাও কাঁপে।’
অনীতা কবীর হেসে ওঠেন। তাঁর ব্যক্তিত্বটাই এমন ধারালো যে কিছু না বলেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন তিনি।
ইদানীং অনীতা কবীর সাজতে শুরু করেছেন। ভার্সিটির হলে থাকার সময় বিকেলে বের হওয়ার আগে শায়লা আর তিনি যেভাবে নিজেদের ফুলের তোড়া সাজিয়ে গেটের বাইরে বেরোতেন, অনেকটা সেরকম। তাঁর সাজুগুজু বেশ মেলায়েম, চটজলদি বোঝা মুশকিল তিনি সেজে রয়েছেন। হালকা লিপস্টিক, পাটভাঙা শাড়ি , থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ, কপালে শাড়ির পাড়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টিপ, আয়ত চোখে হালকা কাজলের রেখা, এলো চুল – সব মিলিয়ে অপ্রকাশিত এক প্রসাধনী যা অন্যের মনে রহস্যময় এক ছায়া ফেলে, সেটাই অনীতার পছন্দের সাজ। ওর ছিপছিপে দেহকাঠামোর সঙ্গে এ-ধরনের নরোম সাজগোজ খুব যায়। নতুন আমপাতার মতো গায়ের উজ্জ্বল রংটিও এর সঙ্গে মানায় খুব।
ব্যক্তি ফখরুল হোসেনকে অনীতা কবীর চেনেন না। তিনি যদি দেশের সাংবাদিকতা-জগতের কেউ হতেন তো অনেককিছুই জেনে ফেলার ভেতর থাকত। কিন্তু এ-পত্রিকায় তাঁর আগমন উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। তাই তেমন কিছুই জানা নেই। আমেরিকান-নিগ্রোদের মতো বিশাল শরীর থাকা সত্ত্বেও তিনি স্বল্পাহারী তা অনীতা জানেন। একটা ব্রাউন রুটির স্যান্ডউইচ দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সারেন আর ঘণ্টায়-ঘণ্টায় চিনিহীন তরল চায়ে চুমুক দিয়ে নিজেকে উজ্জীবিত করে রাখেন। মদ্যপান করেন কি না জানা নেই। সঠিক বয়স কত তাও অজানা। পরিবারে কারা রয়েছেন তা-ও জানেন না। সুলেমান বলেছে, স্যারের কোনো বউ নেই। কিন্তু আগে কেউ ছিল কি না তাও তিনি বলতে পারবেন না। মোদ্দাকথা, অনীতা কবীরের কাছে তিনি এখনো, তিন মাস কেটে যাওয়ার পরও, এ ফখরুল হোসেন ওরফে ডেভিড নামের সম্পাদক মহোদয় অপরিচিত এক মানুষ। তবু কেন যে লোকটি সম্পর্কে নতুন কোনো সংবাদ পেলে কৌতূহলী হয়ে ওঠে মন!
পরদিন সকালে সম্পাদক মহোদয় অফিসে এসে প্রথমেই অনীতা কবীরকে ডেকে পাঠালেন রুমে। তালিকাটি ওর হাতে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্লিজ মেক ইট এ লিস্ট অফ সিক্সটি। এর বেশি নয়।’
‘সিক্সটি কি ফাইনাল স্যার?’
‘না, না। আমরা আড্ডা দেবো তাঁদের সঙ্গে। সেখান থেকে বড়জোর বিশজন মেধাবী লেখক-কবিকে শর্টলিস্ট করবো।’
‘লেখকগণ কি আপনার অফিসে চাকরি করেন? এভাবে তো কোম্পানির এইচআরডি কাজ করে থাকে স্যার।’
এবার হেসে উঠলেন ফখরুল হোসেন। বললেন, ‘ওভাবে না নিলে খুশি হবো। আমি চাইছি দেশের সবচাইতে মেধাবী লেখকদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের দিয়ে ঈদ888sport free betটি সাজানো। কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই।’
‘আজকাল অনেক পত্রিকাই কিন্তু লেখকদের বড় হোটেল কিংবা ক্লাবে নিয়ে ডিনার-লাঞ্চ দিচ্ছে। সঙ্গে পত্রিকায় লেখার জন্য মোটা অংকের দক্ষিণা তুলে দিচ্ছে হাতে। বিনোদনের এক নতুন মাত্রা।’
‘আমি জানি সেগুলো। আপনি তালিকাটা ছোট করে নিয়ে আসুন। তবে মেধাবী কেউ যেন বাদ না পড়েন। সেদিকে লক্ষ রাখবেন প্লিজ।’
‘ওকে।’ বলে অনীতা কবীর বেরিয়ে এলেন সম্পাদকের কক্ষ থেকে।
নিজের কাচঘেরা কক্ষের ভেতর বসে ফের দুশ্চিন্তার এলোমেলো বাতাসে উতলা হয়ে ওঠেন তিনি। একশ তিরিশজনের তালিকাকে ষাটজনের তালিকায় নামিয়ে আনা তো সহজ ব্যাপার নয়। তাতে মূলধারার অনেক লেখক-কবিকে হয়তো ছাঁটাই করতে হতে পারে। সেটা কি খুব শোভন আচরণ হবে এখানকার 888sport live football-জগতের প্রতি? পরে যদি সবাই বয়কট করেন অনুষ্ঠানটি? তখন পুরো দায়িত্ব বর্তাবে অনীতার ঘাড়ে। সম্পাদক আর চেয়ারম্যান মিলে ওর চাকরিটাই নট করে দেবেন। এসব করপোরেট অফিসে সকাল-বিকাল যখন-তখন চাকরি চলে যায়। চেয়ারম্যানের খাস পিয়ন দুধরাজের কথায়ও নাকি অনেক ভালো নির্বাহীর চাকরি ঢিলে হয়ে গেছে – এরকম বেশকিছু ফিসফাস চালু রয়েছে এখানে। আগের সম্পাদক আলী হোসেন সর্দার তো এসব কারণেই, বিশেষ করে মালিকপক্ষের সঙ্গে হার্দ্য সম্পর্ক না রাখার কারণে, এ-অফিস থেকে বিতাড়িত হন। বহু সম্পাদক বা মুখ্য নির্বাহীর মেজাজ খিটখিটে থাকে, টক-শোতে উপস্থিত হয়ে কতই না অসংলগ্ন কথা বলে বেড়ান তাঁরা। কিন্তু মালিকদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখায় শরীরে দিব্যি হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাঁদের। কই, তাঁদের বেলায় তো কিছু ঘটে না?
অফিস সুনসান। সবাই নামাজঘরে। থাকার ভেতর অন্য ধর্মের কজন টেবিলে নিরীহ বেড়ালের মতো বসে রয়েছেন। কানে মোবাইল লাগিয়ে স্বামী-সন্তান আর কাজের লোকের তত্ত্ব-তালাশ নিচ্ছেন। ইরফান সাহেব নামাজে যাওয়ার সময় তাঁকেও তাড়া দিয়ে গেছেন, ‘ম্যাডাম নামাজে যাবেন না? চলেন।’
অনীতা কবীর সলজ্জভাবে মাথা নেড়ে ওকে এড়িয়ে গেছেন। নিউজ-এডিটর জয়নাল সাহেব তো সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, ‘নামাজ পড়েন না?’
‘পড়ি। আজ শরীরটা ভালো না।’
প্রত্যুত্তরে তিনি আর কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। মেয়েলি সমস্যা ভেবে হয়তো কথা বাড়াননি। এ-সময়টায় অনীতার ভেতর একধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। ভীষণ খারাপ লাগে। ইদানীং ভাবছেন, তিনি ধর্মকর্মে মনোযোগ দেবেন। আলাদা হয়ে আর কতদিন?
পাঁচ
ইরফান রেজা যত মাথা নেড়ে ‘না না’ করেন তত অনীতা কবীর জোর দিয়ে বলতে থাকেন, ‘এটা আপনাকে করতেই হবে। একশ তিরিশ জনকে ষাটজন করে দেবেন। নইলে আপনার-আমার দুজনারই চাকরি থাকবে না।’
‘ম্যাডাম এদেশে লেখক-কবি অগণিত। এর ভেতর থেকে একশ তিরিশ জন করেছি। একে ষাট বানাবো কীভাবে? লেখকদের শত্রুতে পরিণত হবো আমি। ওরা ভালো লিখতে পারুক আর না পারুক, অন্যের পেছনে আদাজল খেয়ে খুব লাগতে পারে। কেন এ-বয়সে ওদের সঙ্গে আমার যুদ্ধ বাধাতে চাইছেন ম্যাডাম?’ বেশ কাতর শোনায় ইরফান রেজার গলা। খানিকটা অভিনয় মিশেছিল সেখানে। অনীতা কবীর না হেসে পারেন না। মুখে বলেন, ‘আপনি পারবেন। আপনার ওপর আমার ভরসা রয়েছে।’
ইরফান চোখের সামনে তালিকাটি মেলে ধরে হতাশ হয়ে টেবিলের ওপর ফেলে দিয়ে বলে ওঠেন, ‘কিভাবে সম্ভব?’ প্রশ্নটা নিজেকেই নিজে করে যেন চটজলদি উত্তর পেতে চাইছেন।
‘প্রথমে তিরিশজন প্রবীণ লেখক বেছে নেন। যাঁরা লেখাটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন সেরকম তিরিশ প্রবীণ। আর নেন মেধাবী তিরিশ তরুণ। যাঁরা দেশ-বিদেশের 888sport live football নিয়ে ওয়াকিবহাল, নতুনত্ব দিয়ে সমৃদ্ধ করতে চাইছেন নিজেদের লেখাকে। তবে একটা বিষয়।’
‘বলুন।’
‘বয়স সিলেকশনে সজাগ থাকুন। কাঁচা তারুণ্যকে পরিহার করাটাই ভালো। অপেক্ষার মাত্রা খানিক বাড়িয়ে লেখককে বাজিয়ে নিলে মন্দ কী।’
‘ম্যাডাম, একটা সত্যি কথা বলি। কিছু মনে করবেন না যেন। যে-দেশে সবকিছুর জন্য অর্থ দেওয়া হয় কিন্তু লেখালেখির জন্য একটা আধুলি দিয়েও উৎসাহ জোগাতে নারাজ মিডিয়াগুলো, সেখানে অত গালভরা বুলি কি মানায়? অনেকক্ষেত্রে উপহাসের পাত্র হতে হয় তাঁদের। সত্যিকারের 888sport free betলঘু এ সম্প্রদায়!’ একটা লম্বা শ্বাস নেন ইরফান রেজা।
‘আপনি বলতে চাইছেন, লেখকদের কোনো সামাজিক সম্মান নেই এ-সমাজে? তানিয়া আসাদ, ফুয়াদ রহমান,
আল-মনসুর, আদিত্য সৈয়দ, জুন রায়হান, তন্ময় কবীর, মোজাম্মেল হক, আবুল ফাত্তাহ, তমালকৃষ্ণ দত্তরা কোনো সম্মান পান না?’
‘না। যেটুকু পান সেটা অন্য কারণে। যাঁদের নাম বললেন, ব্যক্তিগত জীবনে কেউ বিসিএস ক্যাডার, ডাক্তার, করপোরেট হাউসের হোমরাচোমরা। এঁদের সম্মান আসে সেখান থেকে। অজস্র বিজ্ঞাপন, তদ্বির ও চোখ-ধাঁধানো 888sport app download bdে উঁচু হয় তাঁদের লেখক-সম্মান। এঁরা যদি শুধু লেখালেখির ভরসায় চলতে চাইতেন তাহলে তাঁদের ভিক্ষা করতে হতো মতিঝিলের রাস্তায়, ম্যাডাম। এটাই বাস্তবতা।’ কবি হিসেবে ইরফান রেজার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা যেন
এ-কথাগুলোর ভেতর দিয়ে ঠিকরে বেরোতে চাইছে। হতাশা ও ক্রোধ একসঙ্গে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রতিটি শব্দের উচ্চারণে।
উত্তরে অনীতা কবীর কিছু বললেন না। মুখে হাত দিয়ে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। তিনি নিজেও গদ্যকার হতে চেয়েছিলেন একসময়। কিন্তু এসব বাস্তবতার কারণে তিনি আর এগোননি। 888sport live footballের কঙ্কালকে আঁকড়ে ধরে এদেশে কি হবে ভেবে কদিন হতাশায় ভুগে সাংবাদিকতার মূলস্রোতে যোগ দিয়েছেন। এখন বেশ রয়েছেন। মাঝে মাঝে লেখেন না তা নয়। কিন্তু স্রেফ শখের বশে, কোনো সিরিয়াসনেস ওকে মোটেই তাড়া করে না। ইচ্ছে আছে বুড়ো বয়সে ঢাউস একটা আত্মজীবনী লেখার, নাম দেবেন, ‘যাপিত জীবনের মাছগুলো’!
‘একটু চেষ্টা করেন। বসের নির্দেশ। পালন তো করতে হবে। আপনি পারবেন। আমার বিশ্বাস রয়েছে আপনার ওপর।’ ইরফান রেজাকে উদ্বুদ্ধ করতে চান অনীতা।
ইরফান কথা না বাড়িয়ে বিমর্ষ মুখ করে তালিকাটি টেবিল থেকে নিজের হাতে তুলে নেন। তারপর অনীতা কবীরের রুম ছেড়ে চলে যান। সত্যিকার লেখক খুঁজে বের করা যে সত্যি কত কঠিন একটি কাজ , আজ
হাতে-কলমে কাজ করতে গিয়ে টের পেলেন তিনি। দুটো 888sport app download apk কিংবা দুটো গল্প লিখে যাঁরা রবীন্দ্রনাথ মানিক জীবনানন্দ হতে চান তাঁরা যে কতবড় বোকার স্বর্গে বাস করেন তা তিনি ভালোই বুঝতে পারেন। তবু নিজেকে ব্যক্ত করা, ব্যাখ্যা করার মাঝে যে পরমানন্দের বসবাস তা কি অবহেলা করা যায়? ভেতরে কত ক্রোধ আর কত আবেগ দানা বাঁধে প্রতিদিন। তা যদি অন্যকে না জানানোই গেল তো বেঁচে থাকার কি কোনো মানে হয়? এই আকাক্সক্ষাই এত লেখক বিস্ফোরণের কারণ। না জেনে, না বুঝে নিজেকে প্রকাশ করার তাগিদ থেকেই এত লেখকের জন্ম। যাঁরা জেনে-বুঝে লেখার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের নাম জড়ো করে এ-তালিকা তিনি তৈরি করেছেন। তাছাড়া, তিনি 888sport live footballপাতার প্রধান হয়ে দীর্ঘকাল নানা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অনেক লেখকের জন্ম ও মৃত্যু তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছে। ওসব অভিজ্ঞতার ওপর ভর করেই এ-তালিকা। ভেবেচিন্তে কাজটা শেষ করেছেন। এখন সেটি যদি খর্বকায় করতে হয় তাহলে প্রথমত মুশকিলে পড়তে হবে তাঁকেই। কিন্তু সবার ওপর দুর্মূল্যের বাজারে ভাবতে হয় এই চাকরির কথা। এরকম শক্তিশালী ব্যবসায়ী পরিবারের অধীনে বেড়ে ওঠা একটি পত্রিকা এটি। করপোরেট হাউসের ডাট-ঠাঁটের নির্বাহীদের মতো তাদেরও বেতন-ভাতা সবকিছু পর্যাপ্ত ও নিয়মমাফিক। এ-অনুরোধ অস্বীকার করার মতো কি তিনি অত বোকা?
সিটে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলেন। ইরফান রেজা নিজেকে প্রশ্ন করেন, লেখক তাহলে কে? রং চড়িয়ে যিনি পুরনো জিনিস নতুন করে বলে বাহবা কুড়োতে জানেন তিনিই কি লেখক? যুগে যুগে মানব-সভ্যতার পরিবর্তন ঘটেছে। সেই সঙ্গে ভাবুকদের হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির অদলবদল। সেই অদলবদলকে চিন্তকরা কল্পনা চড়িয়ে বারবার নতুন করে তুলে ধরেছেন এক-এক কালে। তা-ই কি 888sport live football? তাহলে 888sport appsের 888sport live footballের গতিপ্রকৃতি কী? এদেশে যে-লেখকের ভেতর সুদূরপ্রসারী কোনো স্বপ্ন নেই, শুধুই কতগুলো চরিত্র আর পুতুলসম
আচার-আচরণ নিয়ে নাড়াচাড়া গল্প-888sport alternative linkে, তাদের কি লেখক বলবেন ইরফান?
ইরফান রেজার বয়স হয়েছে। এখন ঠিকই বুঝতে পারেন, মানুষের মনে দাগ কাটা অত সহজ কাজ নয়। যে সমাজ বদ্ধ জলাশয় হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়, একে ঠেলে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব লেখক-888sport live chatীর। কল্পনার রং ছড়িয়ে মনের ভেতরকার অন্ধকার দূর করার ক্ষমতা কেবল এঁদেরই থাকে। সেটা এদেশে বেশিরভাগ লেখক-888sport live chatীই বুঝতে পারেন না। যাঁরা শুধুই স্থূল ঘটনা দিয়ে পাতার পর পাতা, ক্যানভাসের পর ক্যানভাস সাজান, কদিন বাদে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন জেনেও এখানে কিছু ক্ষমতাধর মানুষ নিজের কথা আপনমনের মাধুরী মিশিয়ে নিরলসভাবে বলে চলেছেন, এসবেরই বা ভবিষ্যৎ কি? ক্রোধ ঝরে ইরফানের মনে।
ওর বড় রাগ হলো। তিনি ঘচঘচ করে কিছু আমলা আর ক্ষমতাধর কর্মকর্তাদের নাম পেনসিল দিয়ে কেটে দিলেন। পরক্ষণে মনে হলো, একজন লেখক তিনি যে পেশাতেই থাকুন, তিনি ধনী কিংবা নির্ধন হোক, মেধাবী লেখক হলে তাঁকে সম্মান জানাতে অসুবিধা কোথায়? ওপার বাংলার বুদ্ধদেব গুহ তো সম্পদশালী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, তাঁকে কি কেউ খারাপ লেখক বলবেন? অথবা অন্নদাশঙ্কর রায় ব্যক্তি জীবনে একজন আমলা ছিলেন, তিনি কি প্রতিভাহীন লেখক? অপরপক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা রবীন্দ্রনাথের সেরকম কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই। কিন্তু বাংলা888sport live football কি তাঁদের উদাহরণ ছাড়া এগোতে পারছে এখনো?
ইরফান রেজার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বয়সের ভিত্তিতে তিনি একশ তিরিশ জন লেখক-কবির তালিকাটিকে পাঁচ ভাগ করে নিলেন। প্রতিটি ভাগে পড়ল ছাব্বিশজন লেখক-কবি। সেখান থেকে নির্দিষ্ট হারে যাচাই-বাছাই করে কমিয়ে নিয়ে এলেন ষাট জনে। বেশিক্ষণ লাগেনি। এর ভেতর প্রস্তুত হয়ে গেল ষাটজনের তালিকা। তিনি দ্রুত চলে এলেন অনীতা কবীরের কাচঘরে। বেশ খানিকটা উৎফুল্ল চেহারা নিয়ে বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম ষাটজনে নামিয়ে এনেছি।’
‘গুড। কিভাবে করলেন?’
ইরফান রেজা বয়সভিত্তিক পাঁচ ভাগ করা লেখক-কবিদের কথা উল্লেখ করলেন। অনীতা চট করে বললেন, ‘ভালো করে দেখে নিয়েছেন তো? গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান কেউ বাদ পড়েনি তো?’
‘যতখানি পারি তো করেছি। বাকিটা মাবুদের ইচ্ছা।’
অনীতা কবীর কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। সহসা বলে উঠলেন, ‘888sport promo code-পুরুষের ইয়েটা কত? এটা লক্ষ করেছেন?’
ইরফান রেজা মুশকিলে পড়ে গেলেন। এতদিকে নজর রাখা কি সম্ভব? এ-প্রশ্নে খানিকটা দমে গিয়ে বলেন, ‘ওভাবে তো চিন্তা করিনি।’
‘888sport promo code-লেখকদের বাদ না দিলেই ভালো।’ অনীতার ঠোঁটের ফাঁকে মৃদু হাসি।
‘যদি প্রতিভাভান না হয়, ম্যাডাম? যদি ম্যাদমেদা লেখা হয়? তো?’
‘সেটার স্বাধীনতা তো আপনাকে দেওয়া রয়েছেই। তবে 888sport promo codeরা অনেক কষ্ট করে লেখালেখিতে আসেন। সাধারণত এঁরা অপ্রতিভাবান হন না।’ এবার হেসে উঠলেন গলা ছেড়ে অনীতা। ইরফানের মনে হলো তিনি নিজেকেই ইঙ্গিত করছেন এ-সময়।
‘তাহলে ম্যাডাম এ-তালিকাটি কি রাখব?’
‘ওকে। কত আর কসরত করবেন?’ বলে তালিকাটি হাতে তুলে নিলেন অনীতা।
ওঁরা বিকালের দিকে সম্পাদকের কক্ষে গেলেন। সম্পাদক মহোদয় ষাটজন লেখকের তালিকাটি নিজের কাছে রেখে দিয়ে মোবাইলে কথা বলতে লাগলেন। একসময় মোবাইলটি দু-হাতের তালুর ভেতর পাখির ছানার মতো চেপে ধরে বলে উঠলেন, ‘আমি জানাবো। কথা হবে পরে।’ বলে চোখের ইশারায় উঠে যেতে বললেন দুজনকে।
মনে মনে বিরক্ত হলেন অনীতা কবীর। এটা কোনো ব্যবহার হলো? নিজেকে ভাবেন কি ভদ্রলোক? উড়ে এসে জুড়ে বসে সবকিছু সস্তা ভাবছেন?
নিজের কক্ষে ঢোকার আগে ইরফান রেজাকে বলে উঠলেন, ‘এদেশে কিছু হবে না। বুঝলেন ইরফান সাহেব।’
‘জি।’
‘এখানে চাচা-মামার জোরে সব অযোগ্য তখতে-তাউসে চড়ে বসেন। তখন ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। নিজের ওজন বুঝতেই পারেন না।’
‘জি।’
‘লেখকদের বেলাতেও দেখবেন, ভালো করে দুটো বাক্য লিখতে পারেন না, অথচ ঝুলিতে দুই-চারটা 888sport app download bd নিয়ে দিব্যি অনুষ্ঠানের প্রথম সারি দখল করে রাখেন। এজন্য দেশটার এমন অবস্থা। কোথাও সঠিক মানুষটি খুঁজে পাবেন না। সবসময় সঠিক মানুষ রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়ান আর নষ্টগুলো মাথার ওপর বসে বাঁদরের মতো হাত-পা নাচায়। যত্তোসব!’ ক্রোধের অনর্গল লাভাস্রোত বেরোতেই থাকে অনীতার মুখ থেকে।
ইরফান রেজা সবই বুঝতে পারেন। ম্যাডাম বেজায় খেপে আছেন। কারণটাও অবোধগম্য নয়। তবু মুখ খুলতে নারাজ তিনি। চুপ থাকেন। মুখে বলেন, ‘জি ম্যাডাম। একদম একশ ভাগ সত্যি কথা। এজন্যই আপনাকে ভাল্লাগে ম্যাডাম।’
নিজ কক্ষে ঢুকে পেছন ফিরে গম্ভীরমুখে ইরফানকে বলেন, ‘ঠিক আছে। সিদ্ধান্ত হলে জানাবো।’ এ-সময় অনীতার ফর্সা মুখ লাল হয়ে ওঠে রাগে। ভেতরে যে আগুন জ্বলছে, মুখের দিকে তাকালে ঠিক বোঝা যায়।
পুরনো স্ট্যাটাসে থাকলে ইরফান ঠিক-ঠিক এসময় বলে উঠতেন, ‘ডোন্ট টেক এভরিথিং টু হার্ট ডিয়ার। কাম ডাউন।’
কিন্তু অনীতা কবীর এখন এ-অফিসের দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি। তাঁকে কোনোভাবেই যা খুশি বলে অবজ্ঞা করা যায় না। এসব কথা তাঁর কাছে অপমানজনক বলে মনে হতে পারে। তাই তিনি চুপ করে গেলেন। নিজের সিটে এসে বিড়বিড় করে নিজেকে বলেন, ঠিকই বলেছেন ম্যাডাম। এদেশে কে যে কোথায় চলে যায় আচমকা, কেউ জানে না!
ছয়
ফখরুল হোসেন পরদিন সকালে তালিকাটি দিয়ে দিলেন অনীতা কবীরের হাতে। বললেন, ‘মনে হচ্ছে ঠিক আছে। আমরা আজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসব। লেখকদের নিয়ে আমাদের একটি বড় প্ল্যান রয়েছে। সেজন্যই জুনায়েদ স্যারকে প্রয়োজন।’ বলে অস্ফুট হাসিতে ভরিয়ে দিলেন নিজের চেহারা।
‘ওকে। কটায় মিটিং, স্যার?’
‘আমি ডেকে নেবো আপনাকে। অফিসে আছেন তো?’
‘জি।’ বিরক্ত বোধ করলেন তিনি। লোকটা কোনোকিছুই খুলে বলতে পারেন না। সামান্যকিছু বলেন আর বেশটুকু পেটের মধ্যে অজানা বায়ুর মতো চেপে বসে থাকেন। সে-কথা মনে করে দুশ্চিন্তায় সময় কাটে ওর। যে বস তাঁর অধস্তনকে বিশ্বাস করতে পারেন না, তাঁকে কি ভালো বলা যায়?
নিজের রুমে এসে শায়লা নূরকে ধরেন। ফেটে পড়েন রাগে, ‘লোকটা একটা ডিজগাস্টিং পারসন। সম্ভবত চাকরিটা ছাড়তেই হবে আমাকে।’
‘কী হয়েছে বলবি তো?’
‘কিছু না। আমাকে কি পিয়ন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাবেন লোকটা? আমি না হয় বিদেশে থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে পড়িনি। কিন্তু দুনিয়াদারি আমরা তো বুঝি। সারাক্ষণ একটা সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স নিয়ে ঘুরে বেড়ান। অসহ্য!’
‘ডোন্ট টেক এভরিথিং টু হার্ট ডিয়ার।’ অতিপরিচিত সান্ত্বনা-বাক্য শায়লার মুখে।
‘তুই একথা বললি? নিজের জামাই নিয়ে যখন কুকথা বলিস তখন? ’
‘আমি তো শেফাকের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি দোস্ত। ওকে মানিয়ে নিয়েই তো চাকরিটা করছি। নইলে চাকরি করে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারতাম? আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারতাম, বল? বস্ত্রকারখানার অঢেল টাকা যার, তাকে পোষ মানানো অত সহজ? বড়গাছের নিচে কি আমার মতো ছোট গাছ বাঁচে বল? কিন্তু আমি মানিয়ে চলি। ওর খারাপগুলোকে অ্যাভয়েড করি আর ভালোগুলোকে বরণ করি, ভালোবসি। তুইও তাই কর। বস আর হাজবেন্ডের ভেতর সেক্স ছাড়া থোড়াই ফারাক। হিহিহি।’
‘বলা সহজ। রেগে গেলে তো তোর হাজবেন্ডকে যা খুশি বলে দিয়ে সরি বলে দিস পরে। আমি তা বললে পরদিন ‘ইয়ুর জব ইজ নো মোর রিকোয়ার্ড’ চিঠি পেয়ে যাবো। এই হলো পার্থক্য বাসার সঙ্গে অফিসের। বুঝলি টেটনি বিবি?’
ওরা আরো কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা লেনদেন করে একসময় থামে। এর ভেতর দুবার ইরফান রেজা শান্তনুকে নিয়ে ঘুরে গেছেন। ওকে মোবাইলে ব্যস্ত থাকতে দেখায় ফিরে যান নিজের ওয়ার্কিং-স্টেশনে।
অনীতা কবীর মোবাইল রেখে বেল টিপে পিয়নকে দিয়ে ওদের ডেকে পাঠান। ইরফান রেজা আর শান্তনু ওর সামনে দাঁড়াতেই অনীতা প্রশ্ন করেন, ‘কোনো জরুরি কাজ?’
‘একটু টেনশনে রয়েছি তো তালিকাটি নিয়ে।’
‘কেন?’
‘লেখক-888sport live chatীরা ভালো লিখতে পারুক আর না পারুক, দলবাজিতে ওস্তাদ। সেটা আগেই বলেছি ম্যাডাম। যদি বয়কট করে বসে আমাদের? পুরো ব্যাপারটাই তাহলে হয়তো ভেস্তে যাবে। ডাকলেও কেউ আর আসবেন না। এজন্য আমার একটা প্রস্তাব রয়েছে ম্যাম।’
‘বলুন।’
‘দু-চারজন লেখক যাঁরা গোল বাধাতে পারেন, তাঁদের সংযোজন করে নিলে কেমন হয়? অবস্থা বুঝে আমরা তখন ব্যবস্থা নিতে পারব, ম্যাডাম।’
‘সমস্যা হবে না। ঠিক আছে। তবে অপ্রতিভাবান কাউকে অ্যাভয়েড করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সম্পাদক সাহেব সেটি চাইছেন না।’
‘ওকে।’ অনীতার পরামর্শ মাথা নুয়ে মেনে নেন ইরফান রেজা আর শান্তনু। তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে চলে যান নিজেদের ফ্লোরে। এ-বিষয়টি ইরফানের মাথায় দুশ্চিন্তা হয়ে দুষ্টু বাঁদরের মতো ঠোকর বসাচ্ছিল অনেকক্ষণ থেকে। অনুমোদনটা পাওয়ার পর বেশ হালকা মনে হচ্ছে নিজেকে। শান্তনুকে অভিজ্ঞ ইরফান জানালেন, ‘বুঝলা, কোন কিছু নিজের ভেতর রাখতে নেই। সামান্য সন্দেহ দেখা দিলেও বসকে জানিয়ে উগড়ে দিবা। দেখবা, শরীর-মন সব সাফ।’
শান্তনু বিশ্বাস এ-সময়ের তরুণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই-তে মাস্টারস করেছে। ইচ্ছে ছিল বিদেশে পাড়ি জমাবে। কিন্তু 888sport app download apkর ভ‚ত ওকে পত্রিকায় নিয়ে এসেছে।
সে-পত্রিকার আইটি সেকশনটি দেখভাল করে। বেতন ইরফান রেজার চেয়েও বেশি। কিন্তু ইরফানের মতো প্রখ্যাত 888sport live football সম্পাদকের সে ফ্যান। কবি হওয়ার অদম্য বাসনা তাকে ওঁর পিছু ঘুরঘুর করায় ঘাড় ধরে। ইরফানও এরকম প্রতিভাশালী শিষ্য পেয়ে মহাখুশি। নিজে কম্পিউটার চালাতে জানেন না। তিনি মুখে মুখে বলেন আর শান্তনু বিশ্বাস তা প্লেটে সাজিয়ে তাঁর ডেস্কে নিবেদন করেন। এরকম সুদিন ইরফান রেজার কপালে কতদিন বজায় থাকবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে নিজের মনে। ছেলেটা বিসিএস দিচ্ছে কয়েক বছর ধরে। কবে বলবে, আমি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেছি। আর এখানে নয়। এ-দুশ্চিন্তায় সময় কাটে তাঁর। মুখে না বললেও সে পাশে না থাকলে অত সহজে কি তিনি তালিকাটি হালনাগাদ করতে পারতেন? বসের কাছে কত যে বকাঝকা খেতে হতো – ভাবলেই শরীর শিউরে ওঠে। এসব করপোরেট হাউসে কেউ কাউকে ক্ষমা করে না। বরং কে কাকে দুমড়ে-মুচড়ে নিজের প্রতিভা বসের নিকট তুলে ধরবে তা নিয়ে সারাক্ষণ প্রতিযোগিতা চলে।
এই সংগোপন কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ইরফান রেজা তাঁর 888sport live footballপাতায় শান্তনু বিশ্বাসের 888sport app download apk গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেন। অন্য পত্রিকার সম্পাদকদের বলেন, ‘এসময়ের সেরা কবি আমার চোখে একজনই।’
অধীর আগ্রহে প্রবীণ সম্পাদকের কাছে তরুণ সম্পাদককুল জানতে চায় সেই নাম। তিনি গম্ভীর হয়ে উত্তর দেন, ‘শান্তনু বিশ্বাস। কী অসাধারণ চিত্রকল্প। কী নিত্যনতুন উপমা-উৎপ্রেক্ষার প্রয়োগ। ‘জুতার শুকতলির মতো এ জগৎ, ঘাম ঝরানো পিচে ঘষটে ঘষটে এখন অবসন্ন, হয়তো মৃতপ্রায় …’ চিন্তা করে দেখো কী অসাধারণ লাইন। এ টিকে যাবে। আমি বললাম একটা কথা। শান্তনু টিকে থাকবে জীবনানন্দ-আল মাহমুদের মতো। দেখো।’ শান্তনুর গুরুত্ব বাড়ে 888sport app download apkঙ্গনে। বিনিময়ে গুরু সম্বোধন দিয়ে অফিসের সব প্রয়োজনীয় কাজ চোখের নিমেষে সম্পন্ন করে তুলে দেয় ওঁর হাতের তালুর মাঝখানে।
এদিকে অনীতা কবীর অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন সম্পাদকের ডাকের। জুনায়েদ রফিকের সঙ্গে আজ ওঁর মিটিং। এর এজেন্ডা সম্পর্কে কিছুই জানা নেই তাঁর। আর এই না-জানার কারণে টেনশন বাড়ছে। জুনায়েদ রফিক অত্যন্ত রাশভারী মানুষ। লম্বা ছিপছিপে স্বাস্থ্য। গুরুগম্ভীর কথা বলার ধরন। আচার-ব্যবহারে ভদ্র সভ্য। মূল ব্যবসা তাঁদের লুঙ্গি। আরমান লুঙ্গি তাঁদের সেরা ব্র্যান্ড। লুঙ্গির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আজ তাঁরা এদেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ী গ্রæপে পরিণত হয়েছেন। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, শেয়ার, ইলেকট্রনিকস – কী নেই তাঁদের? জুনায়েদ রফিকের দুই ছেলে। তাঁরা আমেরিকায় এমবিএ করছেন। তাঁর খুব আশা ছিল, তারা বিদেশ থেকে ফিরে এসে বিশাল এ ব্যবসা সাম্রাজ্যের হাল ধরবে। কিন্তু দুজনই বিদেশিনী বিয়ে করে আর ফিরতে চাইছে না দেশে। স্ত্রীও গত হয়েছেন গতবছর।
একসময় ইন্টারকম বেজে ওঠে। ওপাশ থেকে সম্পাদক মহোদয় বলে ওঠেন, ‘তৈরি তো? চেয়ারম্যান স্যার এসে গেছেন অফিসে। যে-কোনো সময় ডাকবেন।’
‘আমি ডাকের অপেক্ষায় বসে আছি।’
‘ওকে।’ বলে তিনি কথা শেষ করেন।
অনীতা কবীরের হাতে লেখক-তালিকা। বারবার চোখ বুলাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগের রাতের অবস্থা ওর। কী কথা হবে আর কী কী জিজ্ঞাসা করা হবে কিছুই জানা নেই। তবু নিজেকে তৈরি থাকতে হচ্ছে।
পিয়নকে বলে এক পেয়ালা ব্ল্যাক-কফি নিলেন। কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে সাত-পাঁচ অনেককিছু ভেবে চলেছেন। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার যে যাতনা তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এখানে চাকরি করতে এসে। করপোরেট হাউসে এসে একটা জিনিস মাথায় ঢুকে বসে রয়েছে ওঁর। এখানে কেউ নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেন না। যে বা যিনি নিজে থেকে কিছু করতে যাবেন, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে মারা যাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে সিদ্ধান্তের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হয়। তারপর ওপর থেকে সিদ্ধান্ত পেলে যার যেটুকু কাজ তা নিখুঁত দক্ষতার সঙ্গে করে গেলেই মাসের শেষে বেতন নিশ্চিত। সঙ্গে প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট ও আনুষঙ্গিক ভাতা তো রয়েছেই। এখানে 888sport apkী কেরানি হবে, ডাক্তার হয়ে পড়বে স্রেফ অ্যাটেন্ডেন্ট। ভেবে হাসি পাচ্ছে অনীতার।
সহসা সম্পাদক ফখরুল হোসেন কাচের দরজা খুলে নিজের মুখ সামান্য ঢুকিয়ে নিয়ে হাসি দিয়ে বললেন, ‘চলুন। স্যার ডাকছেন।’
পড়িমড়ি করে ছুটলেন দুজন একত্রে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে।
সাত
জুনায়েদ রফিকের প্রাণ বলা চলে লুঙ্গি। তিনি শখ করে যে চৌদ্দতলা ভবন বানিয়েছেন, সেটিরও আদর করে নাম রেখেছেন লুঙ্গি টাওয়ার।
জুনায়েদ রফিক যে-রুমে বসেন সেটিও লুঙ্গি দিয়ে সাজানো। চিরায়ত গ্রামবাংলার লুঙ্গি-চেকের চিত্র চারপাশে। দেয়ালে লুঙ্গি, টেবিলে লুঙ্গি, জানালার পর্দায় লুঙ্গি, কার্পেটে লুঙ্গি। পুরো রুমটি লুঙ্গিময়।
চেয়ারম্যানের যে খাস পিয়ন, যার দাপটে পুরো অফিস তটস্থ, তার পরনের উর্দিটিও লুঙ্গি চেকের। শার্টের ডানদিকে পকেটের ওপর সুতা দিয়ে লেখা তার নাম – ‘দুধরাজ’। একসময় গায়ের রং ছিল দুধে-আলতায়, পুড়ে পুড়ে এখন তামাটে। হয়তো শৈশবে মা-বাবা সন্তানের সেই রঙে মোহিত হয়ে আদর করে নাম রেখেছিলেন দুধরাজ। গায়ের রং উজ্জ্বল হলেও স্বভাব ওর চতুরতায় ভরা। কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যত খবর সব ওর মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাহেব পান। তাই তাকে তোয়াজ করে চলেন সবাই। শুধু অনীতার মাঝে মাঝে মনে হয়, দুধরাজের গালে একটা শক্ত থাপ্পড় কষাতে। ওর মূর্খতা, অজ্ঞানতা এবং বেআদবিতে পূর্ণ চালচলন দেখলে ওর একথাটাই বারবার করে মনে হয়।
ওরা দুজন এসে খাস পিয়ন দুধরাজের সামনে দাঁড়ান। দুধরাজের বসার জন্য চেয়ার-টেবিলও রয়েছে। ওদের দেখে সে দাঁড়ায় না। বরং একধরনের উদাসীনতা দেখিয়ে আয়েস করে পান চিবোতে থাকে। বেটেখাটো মানুষটিকে এসময় অসহ্য লাগে অনীতার।
সম্পাদক ফখরুল হোসেন নরম গলায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার আমাদের আসতে বলেছেন, দুধরাজ। যাওয়া যাবে?’ একই গ্রামের মানুষ ওরা। তবু মামার খাস লোক হওয়ায় দুধরাজকে তিনিও সমীহ করে কথা বলেন। রাগে-ক্ষোভে অনীতার ভুরু জোড়া কুঁচকে থাকে। একই গ্রামের মানুষ হলেই কি এত সমাদর মিলবে অফিসে?
‘চইলে যান। কোনো অসুবিদা নাই মামা।’ এমনভাবে বলল যে অনীতার মনে হলো, দুধরাজ নিজেই চেয়ারম্যান। লোকটা সম্পাদকের যে-কোনো আদেশ মানতে রাজি। অথচ পাশে দাঁড়ানো অনীতার দিকে ফিরেও তাকাল না একবার। ভেতরের রাগ আরো বাড়ে ওঁর।
ওঁরা ভেতরে ঢুকে দেখেন জুনায়েদ রফিক গভীর মনোযোগ দিয়ে সাধারণ এক ক্যালকুলেটার টিপে হিসাব কষছেন। ওঁরা চেয়ার আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন চেয়ারম্যানের নির্দেশের জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি মাথা তুলে ওঁদের দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে প্রবল আন্তরিকতার সঙ্গে বলে ওঠেন, ‘আরে ডেভিড, তুই আইসা দাঁড়াইয়া আছস। গলা খাকারি দিবি না?’
‘আপনে মনোযোগ দিয়া হিসাব কষতাছেন, তাই।’
‘ব, আগে ব।’ বলে অনীতা কবীরকেও চোখ দিয়ে ইশারা করেন। তারপর বেল টিপে দুধরাজ পিয়নকে বলে ওঠেন, ‘কফির লগে স্কটল্যান্ডের যে কুকিটা আনছি সেইটা দাও।’
কফি আর মোলায়েম কুকির স্বাদ নিতে নিতে একসময় ফখরুল হোসেন বলে ওঠেন, ‘মামা, আমরা ষাটজন প্রথিতযশা লেখক-কবির তালিকা করেছি। 888sport app ক্লাবকে বলে দেবো। কার্ড কিন্তু আপনার নামে যাবে।’
‘আমারে আবার জড়াও কেরে? আমি তো ব্যবসা ছাড়া আর কিছু বুঝি না। লুঙ্গি দিয়া ব্যবসা শুরু করছি। লুঙ্গিতেই থাকবার চাই। বুঝলা? 888sport app download apk-গল্প নিয়া ভাবনের সময় কই?’
‘একটু সময় যে দিতে হবে মামা।’
‘কবে?’
‘আগামী শুক্রবারের কথা ভাবতাছি। ডিনার দিতে চাই। একটা ফার্স্টক্লাস ঈদ888sport free bet করে একটা উদাহরণ সেট করতে চাই।’
‘তা করো তুমি। কিন্তু মনে রাখবা ব্যবসা না হলে সব ব্যর্থ। তোমার লুঙ্গির ব্র্যান্ড চলে তো সব ঠিক। নইলে তোমার-আমার পৃথিবী শূন্য। তোমার নাম যেন কী?’ অনীতা কবীরের দিকে দৃষ্টি।
‘জি অনীতা কবির। ডেপুটি এডিটর।’
‘মনে থাকে না আজকাল। তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট তো আমিই দিছি। তবু মনে থাকে না। কী যে হচ্ছে। পোলা দুইটা যে কবে আইসা হাল ধরব। আল্লাহ জানে ওগো মতি কবে ফিরব। যাউকগা, আমি কিন্তু লুঙ্গির ব্যাপারী। এই লুঙ্গির টাকা দিয়াই তেজগাঁওর এই আলিশান চৌদ্দতলা টাওয়ার হয়েছে। ভৈরবে হাতে লইয়া হাটবারে লুঙ্গি বেচতাম। সেই জুনায়েদ ফাইট করতে করতে এই পর্যন্ত আইছে। আমার পোলারা কি সেই কষ্ট বুঝব, কও? হেগো ট্যাকা উড়াইয়া শান্তি। দায়িত্ব নিতে রাজি না। আর আমার শান্তি রোজগারে। এইজন্য আমারে হগলে কিপটা কয়। আমি মাইন্ড করি না। আমার কাছে প্রতিটা ট্যাকা মূল্যবান। ডেভিড, তুমি এই পরিবারের রক্ত। রোজগারের দিকে খেয়াল রাখবা। এইডাই অনুরোধ।’ বলে তিনি থামেন। হালকা গরম চায়ে কুকি ডুবিয়ে জিহ্বায় তুলে দেন সেটি। চিবোতে চিবোতে রুমাল দিয়ে ঠোটের কোণ মুছে নেন। কফি শেষ হওয়ার পর তিনি একটি বিদেশি কারুকাজময় কৌটা বের করে আনেন টেবিলের তলা থেকে। সেখান থেকে সবুজ পানের মতো একটা কিছু বের করে মুখে পুরেন। অনীতার দিকে হেসে বলে ওঠেন, ‘কী ভাবছো? পান খাইতাছি? না, না। এইডা সমুদ্রতলের শ্যাওলা। সি মস কয়। অনেক দাম। খুব উপকারী। হাহাহা।’
ওরা দুজনও হাসেন। সম্পাদকের পাশে বসা অনীতার মনে হয় লোকটির যা করার তা করে ফেলেছেন। এখন শুধু নেড়েচেড়ে একশকে দুশো করার চিন্তায় সময় কাটান। গুলশানের বাংলোতে একা থাকেন। গত বছর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আরো একা। তিনি শুনেছেন, চাকর-বাকরদের কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেন না। নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসেন। একমাত্র দুধরাজই কাছে ঘেঁষতে পারে। এজন্যই ওর এত দাপট।
সম্পাদক ফখরুল যেজন্য চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে এসেছেন সেটি তুলে ধরলেন এবার, ‘মামা, আমরা
যে-প্রজেক্টটি নিয়ে এগোচ্ছি, তাতে কিন্তু অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপার রয়েছে। পত্রিকার তো নিজস্ব অত অর্থ নেই। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে যা মেলে তাতে বেতনও হয় না কর্মচারীদের। কোম্পানির কাছ থেকে দান-খয়রাত করে চলতে হয়। তাই কোম্পানির ফান্ড থেকে হেল্প প্রয়োজন। এটাও একটা ব্র্যান্ডিং মামা। ভবিষ্যতে কাজে দেবে।’
‘কত?’
‘লাখ পঞ্চাশ।’
‘এত্ত ট্যাক দিয়া তুমি কী করবা? হুদা ঈদ888sport free bet বের করবা?’
‘না মামা। আরো চিন্তাভাবনা আছে।’
‘অ।’ বলে তিনি ফ্যালফ্যাল করে ফখরুল হোসেনের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। মাঝে মাঝে চশমায় 888sport app সেই দৃষ্টি ওয়ালম্যাটের লুঙ্গি-ডিজাইনের ওপর গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে। থুতনিতে আঙুল, আঙুল ঘষে ঘষে কী যেন একটা ভাবছেন। ফখরুল হোসেনের টেনশন বাড়ে। অর্থ বরাদ্দ না পেলে পুরো ব্যাপারটাই ভেস্তে যাবে। নতুন সম্পাদক হিসেবে ওর মানসম্মান তো কচুপাতার জলবিন্দু হয়ে পড়বে সবার কাছে!
অনীতা কবীর বেশ মজা পাচ্ছেন। চেয়ারম্যানকে একজন ঘাগু ব্যবসায়ী বলে মনে হচ্ছে। তিনি কেন এ-অর্থ ছাড় দেবেন? এ-অর্থ একবার অপচয়ের গুদামে চলে গেলে আর কি ফিরে আসবে? মনভরা কৌতুক ও কৌত‚হল নিয়ে অনীতা বসে থাকেন। জলের ছলছলের মতো একটুকরো হাসি ভেতরে খুব সুড়সুড়ি দিচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতার পর জুনায়েদ রফিক বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে। তবে আমার কতা মনে রাইখো।’
‘জি।’ ফখরুল হোসেনের মুখভরা হাসিতে বিজয়ীর আভাস। অনীতা কবীরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘চলেন। মামা রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। আর কি ভাবনা!’
মামা জুনায়েদ রফিক আয়েস করে শ্যাওলা চিবোতে চিবোতে ফখরুল হোসেনকে ফের বলেন, ‘কি বলছি বুঝলা তো ডেভিড? আয়ের রাস্তাটা আগে ভাববা, তারপর সেইটা পাওনের লাইগা ট্যাকা খরচ করবা। সেইটা কোম্পানির গায়ে লাগবো না। আয় বাড়ানোর লাইগা ব্যয় করছো। তাছাড়া, পত্রিকাডা তো একটা লস প্রজেক্ট। খালি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকনের লাইগা দরকার পড়ে। যাউকগা, যা কইছি মনে রাইখো। অহন যাওগা। একটা লুঙ্গির পার্টি আইবো। বিদেশের লগে কাম করে। তোমরা অহন যাওগা। যা ভাবছো তাই কইরা ফেলাও। ভালা কইরা কইরো।’
‘জি মামা।’ বলে ওরা ফিরে আসেন চেয়ারম্যানের রুম থেকে। ফখরুল হোসেন নিজের রুমে ঢোকার আগে অনীতাকে বলেন, ‘তাহলে কাজগুলো শুরু করে দেন। কার্ড লেখা আর দাওয়াতটা আপনি আর ইরফান করেন। 888sport app ক্লাবের ব্যাপারটা আমি দেখছি।’
‘জি স্যার।’ বলে স্রোতে ভাসিয়ে দেন অনীতা নিজেকে।
আট
পত্রিকাজুড়ে একটা হইহই ব্যাপার।
করপোরেট হাউসগুলো ব্যবসা ছাড়া অন্যকিছু বোঝে না বলে নিন্দুকদের একাধিক রটনা চালু রয়েছে বাজারে। দৈনিক সূর্য সেসব মূর্খের মুখে উচ্ছের তেতো রস ঢেলে দিয়েছে যেন। মুক্তাদির সিটি এডিটর। অনীতা কবীরের রুমে ঢুকে বলে গেল, ‘ম্যাডাম, করপোরেট হাউজগুলোই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। এটাই বাস্তবতা। এবার দৈনিক সূর্য অনেকের মনে হিংসার আগুন জ্বালাবে। হাহাহা।’
অনীতা কবীরের মুখে কোনো কথা নেই। তাঁর মাথার ওপর এখন হাজারটা দায়িত্ব। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে সম্পাদক ব্যাটা পুরো দায় ওর ঘাড়ে চুইংগামের মতো সেঁটে দেবে। খুব জানা রয়েছে এসব বিটকেলেপনা।
মুক্তাদির মাঝবয়সী চালাক-চতুর মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে কমিশন-বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদপুরের কিক-অফ নামের বিশাল বুটিক হাউসটি ওর; সারাক্ষণ সাজুগুজু করা ওর স্ত্রী সেটি চালান। দুর্মুখেরা অনেককিছু বলে। কিন্তু মুক্তাদিরের হাত চেয়ারম্যান পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ায় কেউ তাঁকে ঘাঁটায় না।
অনীতা কার্ডের ভাষা নিয়ে চিন্তিত। নতুন কিছুর তাগিদ এখন সবখানে। তাই মুখে বললেন, ‘মুক্তাদির ভাই, পরে কথা বলবো। খুব ব্যস্ত।’
‘ওকে ম্যাডাম। নো প্রবলেম।’ বলে চলে যান তিনি।
ইরফান রেজা আর শান্তনু বিশ্বাসকে নিয়ে কার্ডের ভাষা বারবার করে পরিমার্জনা করছেন অনীতা কবীর। কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। শেষমেশ শান্তনু বলে উঠল, ‘এটাই ঠিক আছে। সম্পাদককে দেখান। ’
ওরা চলে এলো সম্পাদকের রুমে। ফখরুল হোসেন কথাগুলোর ওপর একঝলক দৃষ্টি বুলিয়ে বলে ওঠেন, ‘ড্রেসকোড উল্লেখ করবেন না?’
অনীতা সামান্য ভড়কে যান। আমতা আমতা করতে থাকেন। এরকম বোকা-বোকা ভুল কিভাবে ওর হয় তা ভেবে তিনি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে ওঠেন।
সম্পাদক মহোদয় এবার ইরফান রেজা আর শান্তনু বিশ্বাসের দিকে চোখ রেখে পুরুষ্টু গোঁফ নাড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘ড্রেসকোড দিন বেগম রোকেয়া ও ড. আনিসুজ্জামান।’
নাম-দুটো উচ্চারিত হতেই ইরফান রেজা মুখভরা হাসিতে সম্পাদককে বরণ করে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘বেগম রোকেয়াকে তো দেখার সৌভাগ্য হয়নি স্যার। কিন্তু আনিসুজ্জামান স্যার আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। করোনায় তাঁর প্রাণবিয়োগ হওয়ায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরকম পণ্ডিত আর হবে না।’ ইরফান রেজার চেহারায় স্বজন-হারানোর বেদনা ভেসে বেড়ায়।
‘দুজনকেই বলতে গেলে সবাই চেনেন। এ 888sport live football-বাসরে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের মতো ক্রিম রঙের এক পাড়ওলা গরদের শাড়ি ও থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পরিধান করবেন লেখিকাগণ আর পুরুষ লেখকেরা প্রয়াত আনিসুজ্জামান স্যারের মতো ঢোলা পাজামা আর খদ্দরের পাঞ্জাবি পরে অনুষ্ঠান অলংকৃত করবেন। আমরা সেগুলো জোগান দেব। সেটাই হোক এ-অনুষ্ঠানের ড্রেসকোড। কী বলেন অনীতা কবীর?’ সরাসরি তাকালেন অনীতার দিকে।
অনীতা কবীর ভেতরে ভেতরে বেশ বিস্মিত। কেন যেন মনে হচ্ছে এ-লোকটির আড়ালে কোনো অদৃশ্য সুসংস্কৃত মানুষ রয়েছেন, যিনি এসব বুদ্ধি জুগিয়ে প্রতিনিয়ত সাহায্য করছেন তাঁকে।
অনীতা দ্বিরুক্তি না করে লোকটিকে উত্তর দেন, ‘ঠিক আছে। কার্ডের ভাষাটা ফাইনাল করে দেবেন না স্যার?’
‘ওটা আপনাদের। দুজনই 888sport live footballমনস্ক মানুষ। সৃজনশীলতার কমতি হবে বলে মনে হয় না। তবে আরেকটু ভাবলে ভালো হয়। যেটা এনেছেন সেটাও ঠিক আছে।’ বলে ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেলেন।
অনীতা কবীর নিজের রুমে ফিরে কার্ডের ভাষা নিয়ে পুনরায় চিন্তা করতে বসেন। ল্যাপটপে কিছু লিখছেন। পরক্ষণে তা কেটে আবার শুরু করছেন। একসময় মনে হলো, এবার অনেকটা ওর আবেগের কাছাকাছি এসেছে ভাষা।
বিড়বিড় করে আপনমনে পাঠ করতে শুরু করেন। ‘হে প্রিয়, হে সৃজন, বলুন তো কতদিন দেখা হয় না আমাদের? ইচ্ছে কি করে না একটুখানি আড্ডা দিতে, ঘুরে বেড়াতে আর পরিচিত লেখক-কবিকে আলিঙ্গনের ভাষায় হৃদয়ের কাছে টেনে নিতে?
আর কিছু বলেবো না।
যদি সত্যি-সত্যি মন তা চায় তো চলে আসুন আগামী পরশু সন্ধ্যা ছ’টায় 888sport app ক্লাবের স্যামসন এইচ মিলনায়তনে। প্লিজ। ভালো লাগবে কথা দিচ্ছি।
সদা আনন্দে থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন সবাইকে নিয়ে।
আহ্বানকারী,
জুনায়েদ রফিক
দৈনিক সূর্য
সমন্বয়ক : ফখরুল হোসেন, সম্পাদক
ড. অনীতা কবীর, ডেপুটি সম্পাদক
ড্রেস কোড : বেগম রোকেয়া ও ড. আনিসুজ্জামান।’
সম্পাদকের অনুমোদন নিয়ে কার্ডটি প্রেসে পাঠিয়ে দিতে না দিতেই সম্পাদকের রুমে ডাক পড়ল অনীতার। ইরফান রেজা অনীতার রুমে, চেয়ারে বসে 888sport app ক্লাবের মিলনায়তনের দেয়ালে-দেয়ালে ব্যানার-ফেস্টুন কী ঝুলবে, অনীতার সঙ্গে পরামর্শ করে সেগুলো ঠিক করে নিচ্ছেন একে একে। সবই বাঘা বাঘা সব 888sport live footballিকের কলমনিঃসৃত বাণী। তারপর এলো গান বা সংগীতের কথা। কি বাজবে মিলনায়তনে? ইনস্ট্রুমেন্ট হলে ভারতীয় আমজাদ খান, বিসমিল্লাহ খান, আলী আকবর খান নাকি রবিশঙ্কর চলবে? কী হবে সেসব? সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না অনীতা।
সম্পাদককে অনীতা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘আমাদের পুরনো রোমান্টিক গানগুলো মৃদুভাবে চললে কি খুব বিঘœ ঘটবে?’
‘যেমন?’
‘আকাশের মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে জাতীয় গানগুলো? মন্দ হবে কি?’
‘ওকে স্যার। হয়ে যাবে।’ সিদ্ধান্ত পেয়ে খুশিমনে ফিরে এলে, তিনি। নিজের রুমে থিতু হতে না হতে ফের ফখরুল হোসেনের ফোন। ইরফান রেজা অনীতার রুমে।
ইরফান রেজার দিকে তাকিয়ে অনীতা বলে উঠলেন, ‘আর পারি না। মরে যাবো।’ বলে মন্তব্য করতে করতে ছুটে চলে আসেন সম্পাদকের রুমে।
ফখরুল ওকে দেখে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন, ‘প্রত্যেক লেখককে পাঁচ হাজার টাকা আর আড়ংয়ের একটা গিফট কিনে দিতে হবে। পাঞ্জাবি হলে ভালো হয়। বাজেট পার পারসন দশ হাজার টাকা।’
অনীতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবলেন। পরক্ষণে বলে উঠলেন, ‘স্যার, গিফট না দিয়ে পুরোটাই নগদ টাকা হিসেবে দিয়ে দিলে কি খুব খারাপ দেখাবে?’
‘কেন বলুন তো?’
‘আজকাল কবি-লেখকদের অর্থ-সম্মানী কেউ দিতেই চায় না। পত্রিকাগুলো তো নিজেরাই চলতে পারে না। লেখক-কবিদের কি দেবে? ঈদ888sport free betর জন্য কিছু সম্মানী ছাড় হয় বটে। তবে সেগুলো খুবই কম স্যার। এর চাইতে আমাদের ব্র্যান্ডের দুটো লুঙ্গি আর দশ হাজার টাকা ক্যাশ হিসেবে দিয়ে দিলে কি মন্দ হবে স্যার?’ অনীতা সরাসরি চোখ তাক করেন সম্পাদকের দিকে। কথায় মিশে থাকে একধরনের পুরুষালি দৃঢ়তা।
ফখরুল হোসেন এক সেকেন্ড ভাবেন। তারপর ডান হাতের পাতাকে ওর দিকে উড়িয়ে মাথা নেড়ে উত্তর দেন, ‘দিয়ে দেন।’
সম্পাদকের রুম থেকে বের হয়ে অনীতা ইরফান রেজাকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। তিনি আনন্দে ডগমগ হয়ে পড়েন। মুখে বলেন, ‘বহুত খুব ম্যাডাম। দৈনিক সূর্যের নাম এখন কোথায় পৌঁছায়, বুঝতে পারবেন। করপোরেট হাউস বা মতুয়া-পত্রিকা হিসেবে যতরকম দুর্নাম ছিল এর, সব কেটে যাবে। যাই, ছড়িয়ে দিই সংবাদটি।’
এ-মানুষটি দীর্ঘদিন লেখকসঙ্গ করায় তাঁদের বড় আপন মনে করেন। তাঁদের ভালো-মন্দ নিজের বলে ভাবেন।
প্রবীণ 888sport live football সম্পাদক ইরফান রেজার উচ্ছ্বাস দেখে আপনমনে হেসে ওঠেন অনীতা।
নয়
ছুটির দিনে অনীতা কবীরকে চেনা মুশকিল। চুল এলোমেলো। মুখে বিউটি প্যাক। পরনে ন্যাকড়ার মতো পাতলা কাপড়। সব মিলিয়ে একটা এলানো অবস্থা। ধানমন্ডির এ-ফ্ল্যাটে এখন তিনি একাই বসবাস করেন। মা-বাবা দুজন বড় ভাই মাহতাব কবীরের কাছে আজ ছয় মাস, কানাডার টরন্টো শহরে। নতুন বাড়ি কিনেছেন অনীতার ভাই। পেছনের একটুকরো জায়গায় শসা লাউ শিম টমেটো ফলিয়েছেন। ভাই আর ভাইর বউ দুজনই প্রকৌশলী। সরকারি চাকরি করেন সেখানে। আনন্দে গদগদ হয়ে আব্বা-আম্মাকে তুলে নিয়ে গেছেন সেখানে। একমাত্র ছেলে মিঠুন এআই নিয়ে পড়ছে সেখানকার এক বিশ^বিদ্যালয়ে। বড় বোন লিথি আপা আমেরিকার নিউইয়র্কে। দুলাভাইর লন্ড্রির ব্যবসা সেখানে। তাঁরও দেদার রোজগার। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেশ সুখে রয়েছেন। শুধু মাঝে মাঝে লিথি আপার নিন্দা করে বড় সুখ পান দুলাভাই। মুখে বলেন, ‘তোমার আপা যে কি করে 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে মাস্টার্স করেছেন বুঝতে পারি না। টরন্টো শহরে থেকে এত সেকেলে হয় কি করে তোমার আপু?’
‘কেন?’
‘এখনো বালতিতে পানি নিয়ে গোসল করতে চায়। কিছুতেই শাওয়ার ছাড়বে না। শাড়ি পরবে, চোখে দেবে কাজল আর মুখে দেবে একদলা পাউডার। মেকাপের দেশে, ঠান্ডার দেশে এসব চলে বলো?’
‘আপনার ছেলেমেয়েরা তো শিখছে। তাতেই চলবে। আপাকে তো চাকরিটাও করতে দিলেন না।’
‘চাকরি করবে তোমার আপা? আমার লন্ড্রির হিসাবে বসিয়েছিলাম কদিন। ক্যাশে একটু চাপ হলে আর ডলার গুনতে বললে নিমেষে উল্টাপাল্টা হয়ে যায় ওর। কত যে লস হয়েছে আমার।’
‘আপারে শুধু নিন্দাই করতেছেন। এরকম একটা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রীর প্রশংসার কিছু নাই জগন্নাথ কলেজের সোশিওলজির ছাত্র সফল ব্যবসায়ী দুলাভাইর কাছে?’ মিষ্টি কথায় খোঁচা দেন অনীতা।
‘আছে তো। আমি এ-কথা সবাইকে বলি।’
‘কি?’
‘তোমার আপার কুকিংয়ের হাতটা অসাধারণ। খাইয়ে খাইয়ে আমার ভুঁড়িটা বড় করে দিয়েছে। এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেও আর ভালো লাগে না। তোমার আপুর হাতের খাবারের কথা মনে হয় শুধু। হাহাহা।’
অনীতা শুধু শোনেন। কখনো ভাগ্নে-ভাগ্নি, মা-বাবা, ভাইবোনদের সঙ্গে ভিডিওকলে ব্যস্ত সময় কাটান। মাঝে মাঝে ইংরেজির প্রভাষিকা শায়লা নূর চলে আসেন হলজীবনের নস্টালজিয়া-কাতর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে। কথায় আড্ডায় খাওয়ায় জমিয়ে দেন বন্ধুত্বের আসর। পনেরোশো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটটি হাসি আর কথায় গমগম করে ওঠে। এমনিতে ছুটির দিনে বাইরে বেরোতে চান না অনীতা। অলস সময়টুকু তিনি গান শুনে, নেটফ্লিক্সে ছবি দেখে, বুয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান্নার আয়োজন করে এবং সর্বোপরি ঘুমিয়ে ব্যস্ততাহীন সময়কে টাটা-বাই-বাই জানান।
ঠিক এরকম এক হিমেল জানুয়ারির শুক্রবারে টেলিফোন করে বসলেন ফখরুল হোসেন। বারবার টেলিফোনটা বাজছিল। অনীতা তখন ড্রয়িংরুমে বসে একটা ইংরেজি সিরিজ দেখছেন টেলিভিশনে। সবে নাশতা হয়েছে। বুয়ার হাতের চালের গুঁড়ার ছিটা রুটি আর হাঁসের মাংস দিয়ে জম্পেশ নাশতা সেরেছেন। একটু পর মুখে প্যাক নেবেন। খুব বিরক্ত হয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা মোবাইলটা চোখের সামনে তুলে ধরেন। আরে, এ তো সম্পাদক সাহেব? কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে তিনি বলে উঠলেন, ‘সরি। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ছুটির দিনে বিরক্ত করছি।’
মনে মনে অনীতা বলে উঠলেন, ‘বিরক্ত যা করার তা তো করেই ফেললেন। এখন বলুন কী করতে হবে? নিশ্চয়ই ঈদ888sport free bet? এছাড়া আপনার আছেটা কি?’
মুখে বললেন, ‘জি না স্যার। বলুন।’
‘আমরা দুপুরে একটু 888sport app ক্লাবের ভেন্যুতে যাবো। হলটা একটু দেখতে চাই। সেই সঙ্গে লাঞ্চের দাওয়াত আপনাকে।’
এবার হাসি পেল অনীতার। হেসেই বললেন, ‘কিভাবে যাবো? অফিসের ড্রাইভারকে তো আসতে মানা করে দিয়েছি।’
‘আমি পিক করবো। আমার গাড়িতে উঠতে আপত্তি নেই তো?’
‘আপনি আমার বস। আপত্তি থাকবে কেন?’
‘যদি বস ড্রাইভারের বেশে আসে?’
একটুক্ষণ চুপ। তারপর অনীতা বলে ওঠেন, ‘অফিসের কাজ। আপত্তি করবো কেন?’
‘থ্যাংক ইউ। দুটোর দিকে চলে আসবো।’
কথামতো ফখরুল হোসেন মগবাজারের চৌরাস্তার কাছাকাছি এসে রিং দেন অনীতাকে। অনীতা তৈরি হয়ে রওনা দিয়েছেন সবে। চট করে উত্তর দিলেন, ‘আড়ংয়ের সামনে রয়েছি। চলে আসুন।’
কয়েক মিনিটের ভেতর আড়ংয়ের সামনে সম্পাদকের কালো রঙের প্রাডো গাড়িটি চলে এলো। এর ভেতর থেকে ফখরুল হোসেন নেমে এলেন। বেশ কমবয়স্ক আর কেয়ারলেস দেখাচ্ছে তাঁকে। এক দেখাতেই ভালো লেগে গেল অনীতার। একটা বুক চিতানো পুরুষালি ব্যাপার রয়েছে। আফটার-শেভের গন্ধটা মাদকতায় ভরা। ঝিম ধরে যায় মাথার ভেতর।
অনীতা নিজেও জিন্স আর একটা গাঢ় সবুজ রঙের ফতুয়া পরে এসেছেন। পুতুল-পুতুল ফর্সা মুখ, স্বাস্থ্য সচেতন সিøম ফিগার – সব মিলিয়ে শীতের তাজা সকালের মতো অনুভূতি ছড়িয়ে যায় ফখরুলের ভেতর।
ওরা মিনিট দশেকের ভেতর চলে আসেন 888sport app ক্লাবের স্যামসন এইচ সেন্টারে। আগে থেকে সুনির্দিষ্ট লোকজন অপেক্ষা করছিলেন তাঁদের জন্যে। ওরা হলে ঢুকতেই ঘিরে ধরেন তারা। দুজন মিলে তাদের নির্দেশ দিয়ে চলেন। ডিনারে কটা গোল টেবিল বসবে, সোফা কোথায় থাকবে, স্টেজ হবে কোথায় ইত্যাদি। ফখরুল হোসেন সহসা অনীতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বসেন, ‘মেন্যুটা কী হবে ম্যাডাম?’
অনীতা এতটুকু না ঘাবড়ে উত্তর দেন, ‘অবশ্যই বাঙালি খাবার হবে।’
‘যেমন?’
‘বলতে হবে?’ প্রশ্ন করে অনীতা নিজেই হেসে ফেললেন ,‘ধরুন, ইলিশ মাছ ভাজা, বেগুনভাজা, ভর্তা, ঘন ডাল, চিতলের কোপ্তা, ভেটকি গ্রেভি, চিংড়ি ভুনা, মিক্সড ভেজিটেবলস, দই, মিষ্টি আর পুডিং। কিছু অ্যাপেটাইজার থাকবে, ঠিক?’
ফখরুল হোসেন ক্লাব-ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে নির্দেশ দিলেন, ‘নোট নিয়ে নিন। সফট-হার্ড ড্রিংকস কিছু রাখবেন। কিছু অ্যাপেটাইজার রাখবেন। ওকে?’
‘অ্যাপেটাইজার কি দেওয়া যায় স্যার?’
‘এটা আমি বলি। প্রন-কেক, ওনথন, ভেজিটেবল স্প্রিং রোল, ফিশ ফ্রাই, চপ, কাটলেট, নানারকম জুস আর বাদাম। আরো কিছু অ্যাড করতে চাইলে করতে পারেন।’ ফখরুল হোসেন বলেন।
বিনয়াবনত ম্যানেজার উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস স্যার।’
তারপর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে মঞ্চ ও হলের সাজসজ্জা নিয়ে আরো কিছু নির্দেশ দিলেন ফখরুল হোসেন। যখন ওদের দুজনার কাজ প্রায় শেষ তখন ঘড়িতে তিনটা বাজে। ফখরুল অনীতাকে নিয়ে লাঞ্চ করতে বসলেন। 888sport app ক্লাবের মোরগ-পোলাওটা খুব জমে। আজ মোরগ-পোলাওর দিন। তাই দুজন মোরাগ-পোলাওয়ে মজে রইলেন। খেতে খেতে অনীতা হালকা সুরে প্রশ্ন করলেন, ‘বাসায় স্পেশাল কেউ নেই?’ ঠোঁটের ফাঁকে কৌত‚হলী হাসির ঝলক।
‘আমার? না।’ মুরগির হাড় চিবোতে চিবোতে উত্তর দেন তিনি।
‘কেউ নেই?’
‘আছে। মা-বাবা ভাইবোন সবাই। ফ্রি-স্কুল স্ট্রিটেই তো আমাদের পৈতৃক বাড়ি। আমরা এখানকার স্থানীয় তো। আপনি কি বোঝাতে চাইছেন অনীতা?’
রহস্যময় অস্ফুট হাসি হেসে অনীতা বলেন, ‘কোনো স্পেশাল কেউ?’
‘ওহ সেকথা। আমেরিকায় থাকতে ডোনা নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে খুব জমে ওঠে। বিয়েও করি। কিন্তু জানেন তো, আমেরিকানরা টু মাচ ক্রেজি আর হুইমজিক্যাল। তিন মাসের মাথায় আমায় ‘টু মাচ শভিনিস্ট’ তকমা দিয়ে কেটে পড়ে। তারপর ও আরো দুটি বিয়ে করে। আমি এদেশে চলে আসি। এই তো। আপনি?’
‘আমি? একটুখানি নাক উঁচু ছিলাম। তাই তেমন কিছু হয়নি। অনেককে ভালো লাগে। কিন্তু ফাইনাল কিছু গড়ে ওঠেনি সেভাবে।’ সুলতানের কথা অনীতা চেপে যান এ-সময়।
‘আমাকে আপনার কেমন লাগে বলুন তো? খুব শভিনিস্ট মনে হয়?’
এবার অনীতা না হেসে পারেন না। হাসি থামিয়ে,
মোরগ-পোলাও খাওয়ায় সাময়িক ছেদ দিয়ে উত্তর দেন, ‘আপনি তো আমার বস। আমাদের দেশে বস ইজ অলওয়েজ রাইট কথাটা খুব চালু রয়েছে।’
‘না, না। বস নয়। আমি তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছি আপনার মাথার ওপর। সম্পাদক তো হওয়ার কথা ছিল আপনার। আমি ছিনিয়ে নিয়েছি আপনার পজিশন। আমি সব জানি। এজন্য আপনি কখনোই আমায় ইজিলি নিতে পারেন না। অ্যাম আই রাইট? বাট আই অ্যাম নট এ ব্যাড ফেলো। বিলিভ মি।’
এরকম ভরাট গলার সঙ্গে এমন নরম উচ্চারণ ঠিক মানায় না। ডেভিডকে কেমন যেন আশ্রয়হীন ও কাঙাল লাগে অনীতার। তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশে আপনার মতো একটুখানি শভিনিস্টিক অ্যাটিটুডের মানুষই বেশ গ্রহণীয়। যেকোনো মেয়ে তা অ্যাকসেপ্ট করে নেবে। নো ওরি।’
‘আপনিও?’
‘আমি তো আপনার সাব-অর্ডিনেট। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। চলুন, খাওয়া শেষ।’
ফেরার পথে দুজনার মুখে কোনো কথা নেই। দুজন দুদিকের গ্লাসের ওপারে মুখ রেখে চোখ দিয়ে কী যেন ভাবছেন।
বাইরে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। ইট-কাঠ-রড-ধুলার এই সাম্রাজ্যে যে-কটি গাছপালা এই প্রচণ্ড শীতেও জবুথবু হয়ে জীবিত রয়েছে, অনীতার মনে হচ্ছে, ধুলায় ধূসরিত হওয়ায় ওদের নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। হয়তো একসময় শক্তিহীন দুর্বল হয়ে আছড়ে পড়বে মাটিতে।
ধুলার কারণে শুধু পাতা নয়, গ্লাস ও ওইন্ডস্ক্রিন ক্ষণে ক্ষণে আবছা হয়ে আসছে। ড্রাইভার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওয়াইপার দিয়ে সেই আবছায়া দূর করতে।
উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাওয়া 888sport appয় কি শিশিরভেজা গাছপালা আর কখনো চোখে পড়বে না?
দশ
ইরফান রেজা ফিসফিস করে অনীতাকে জানালেন, ‘ম্যাডাম, কিছু কি জানেন?’
নিজের ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছেন তিনি তখন। অগত্যা মুখ তুলে তাকালেন। চোখে-মুখে অধীর আগ্রহ। এমন কি ঘটল যে ওর জানার আওতার বাইরে?
‘কী ব্যাপার রেজা সাহেব?’
‘একটা লোক এসেছে সম্পাদকের রুমে। আমি তারে চিনি।’
মনে মনে বিরক্ত হলেন অনীতা। ভুরু জোড়ায় গিঁট পড়ল। একে তো সকালবেলায় বিনা অনুমতিতে ওর
টেবিল-ঘনিষ্ঠ চেয়ারে বসে রয়েছেন। তার ওপর নিকটাত্মীয়ের মতো আবোল-তাবোল বকতে চাইছেন। সম্পাদকের রুমে কে আসবে, কে যাবে সেটা তাঁর একান্ত ব্যাপার। এটা নিয়ে ফিসফাস করার কি রয়েছে? এ-ধরনের লোকগুলো অফিসের করপোরেট উদার আবহাওয়াটা নিজের অজান্তে নষ্ট করে ফেলে।
‘তাতে আপনার কী?’ কর্কশভাবে প্রশ্ন করেন অনীতা।
‘লোকটা একজন প্রকাশক। বাংলাবাজারে তার প্রকাশনা সংস্থা ছিল এককালে। লস দিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন। খুব ধুরন্ধর লোক। অনেকে বলে, বেশি ব্যবসা বুঝে বলেই ব্যবসা করতে পারে না। অন্যকে শুধু উপদেশ দিয়ে বেড়ায়।’
‘এসব নিয়ে আমাদের ভাবার কিছু নেই। নিজের কাজে ফিরে যান। 888sport app ক্লাবের অনুষ্ঠানে সবাই আসবে কি না সেগুলো কনফার্ম করে আমাকে জানান। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তাও জানান রেজা সাহেব। এসব ফালতু বিষয় নিয়ে আপনার-আমার ভাবনার কিছু নেই।’
অনীতার কাছ থেকে নির্দয় কথা শুনে ইরফান রেজা যেন সম্বিৎ ফিরে পান। মুখ চুন করে নিজের ওয়ার্কিং-স্টেশনে ফিরে আসেন। তবু মূল কথাটা বলতে না পারায় কেমন যেন খচখচ করছে ভেতরটা। একসময় সব ভুলে 888sport app ক্লাবের অনুষ্ঠানের কাজে দলবল নিয়ে ডুব দেন।
ইরফান বিদায় হতে না হতেই ইন্টারকমে সম্পাদকের ডাক পড়ে। ল্যাপটপ খোলা রেখে অনীতা চলে যান ফখরুল হোসেনের রুমে।
সম্পাদকের রুমের সোফায় একজন অপরিচিত লোক বসা। অনীতার চোখ ফখরুল হোসেনের ওপর। দৃষ্টিতে কৌত‚হল। সাধারণত অপরিচিত কারো সামনে তিনি অনীতাকে ডেকে পাঠান না। তাহলে আজ কেন?
ফখরুল হোসেন কোনো ভনিতা ছাড়াই বলেন, ‘ম্যাডাম, আমরা আমাদের 888sport app ক্লাবের অনুষ্ঠানে একটা ঘোষণা দিতে চাই।’
‘বলুন।’
‘আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশনা সংস্থা খুলতে চাই এদেশে। কী বলেন?’
‘পত্রিকা তো রয়েছেই।’
‘ওটা হবে একেবারে আলাদা। আমাদের গ্রুপ অফ কোম্পানিজে আরেকটি উজ্জ্বল সংযোজন হবে এই প্রকাশনা সংস্থা। মামা রাজি হয়েছেন।’ একথা শুনে অনীতা মনে মনে বলে উঠলেন, ‘তাইলে আমাকে জানাচ্ছেন কেন? সব তো মামা-ভাগ্নেই সেরে নিচ্ছেন।’ কিন্তু মুখে বললেন, ‘খুব ভালো উদ্যোগ।’
‘এটা চালাবেন এই ভদ্রলোক। উনার নাম নির্জন খন্দকার। বাংলাবাজারের দাপুটে বইর ব্যবসায়ী ছিলেন। সবাই চেনে। লস হওয়ায় এখন ছেড়েছুড়ে ঝাড়া হাত-পা। আমি তাকে এ দায়িত্ব দিতে চাইছি।’
‘ভালো।’ কথা বলতে গিয়ে 888sport live football-সম্পাদক ইরফান রেজার কথা মনে পড়ে গেল। সব সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিয়ে নিলে ওঁকে কেন আবার এর ভেতর টেনে আনা?
‘এর ভেতর বেশ কিছু কাজও করে নিয়েছেন নির্জন খন্দকার। জয়েন্ট স্টকের অনুমতিটাও পেয়ে গেছেন। আরো অনেক সরকারি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলো তিনিই সারবেন। আমরা তাঁকেই এর দায়িত্বটা দিতে চাই।’
‘এটা কি লাভজনক হবে? ইরফান সাহেব বলেন, এদেশে কেউ বই পড়তে চান না। জোর করে পড়াতে হয়।’ মৃদু কণ্ঠে বলে ওঠেন অনীতা।
‘দেখা যাক।’ গোঁফের ফাঁকে পরিচিত রহস্যময় সেই হাসি।
অনীতা আর কথা বাড়ালেন না। নির্জন খন্দকারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ফখরুল হোসেন নিজে থেকে এ নতুন লোকটি সম্পর্কে বলে উঠলেন, ‘আমাদের সূর্য পরিবারে এ হলো নতুন সংযোজন। বয়স বেশি নয়। কিন্তু কাজের লোক।’
স্বয়ং সম্পাদক মহোদয় যেখানে নতুন লোক সম্পর্কে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে কথা বলেন, সেখানে ওঁর আর কী-ই বা বলার থাকে। তিনি দু-চারটা কথা বলে ফিরে এলেন নিজের রুমে। চেয়ারম্যানের এই আত্মীয় আসলে কী করতে চাইছে এখানে তা ওর মগজে ঢুকছে না। এরকম অতি উৎসাহী অনভিজ্ঞ লোকের খপ্পরে পড়ে অনেক মিডিয়া-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। ফখরুল কি সেদিকেই এগোচ্ছে নিজের সব বালখিল্য নিয়ে?
প্রশ্নটা বারবার কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে। শায়লা নূরকে মোবাইলে ধরলেন। মুখে বললেন, ‘ফেডাপ হয়ে যাচ্ছি এই লোকের খপ্পরে পড়ে। কি করি বল তো?’
‘কিছু কি এগোলো?’
‘কি এগোবে?’
‘আহারে নান্নি-মুন্নি, কিছুই বোঝে না।’
‘তোর এসব ফালতু কথা রাখ তো। 888sport live football পড়িয়ে তোর মাথাটা এক্কেরে গেছে। সারাক্ষণ কল্পনাবিলাস। এটা আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপার। ক্যারিয়ার আর ওসব রোমান্টিকতা কখনো একসঙ্গে চলে না। নিজের জামাই তো গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। দেদার রোজগার। তুই কি বুঝবি?’
‘ওই দর্জির কথা বাদ দে। তোর কথা বল। তোর সম্পাদক কি সত্যি সত্যি তোর মতো পুতুল-পুতুল একটা মেয়ের প্রতি ইনটারেস্টেড নন?’
‘আরে, ওই ব্যাটা আমেরিকায় একটা হোয়াইট স্কিনের মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ডিভোর্স হয়ে গেছে। পাকা জিনিস। বুঝলি?’
‘তাতে কী? এখন তো একা। তাছাড়া, তুই নিজেও তো ভার্জিন নস। এত তাড়াতাড়ি সুলতানের কথা ভুলে গেলি?’
নিমেষে মনটা কেমন কাদামাটি হয়ে গেল অনীতার। ছয় মাস সুলতানের সঙ্গে ওর লিভ-ইন সম্পর্ক বজায় ছিল। এখানে আসার আগে যে-পত্রিকায় ছিল, সুলতান ছিল সেখানকার সিনিয়র সাংবাদিক। ওর সঙ্গে থেকে অনেককিছু শিখেছেন তিনি। একসময় জড়িয়ে গেলেন সম্পর্কে। কিন্তু সম্পর্কের পর মানুষটাকে ভিন্ন বলে মনে হলো। ভীষণ স্বার্থপর, আবেগপ্রবণ আর সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত। কদিনেই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই সুলতান এখন আমেরিকায় একাধিক বিয়ে করে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছে। অনীতা চাকরিবদল করে এখানে। খারাপ লাগে মৃত কোনো সম্পর্কের কথা কেউ 888sport app download for android করিয়ে দিলে। শায়লা নূর ওর সার্বক্ষণিক বন্ধু। এ খোঁচাটা না দিলেও পারত!
অনীতা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললেন, ‘পরে কথা বলবো রে। একটা কথা জেনে রাখিস। আমি এখন সেই অনীতা নই। আমার কাছে ক্যারিয়ারটাই আসল। এজন্য কাউকে খুন করতে হলেও আমি রাজি। বুঝলি বিশ্বস্ত হাউসওয়াইফ আর নিশ্চিন্ত সরকারি চাকরিজীবী?’
খিলখিল করে হেসে উঠল শায়লা। বলল, ‘তুই সবসময় তুই-ই। হাজারবার চাইলেও তুই ইটকাঠ হতে পারবি না। দেখিস।’ বলে মোবাইলটা রেখে দিলো।
অনীতা নিজের দিকে একবার আড়চোখে তাকালেন। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলেন, সত্যি সত্যি কি অনীতা কবীর তা-ই?
এগারো
888sport app ক্লাবে পা দিয়েই মন ভালো হয়ে যায় অনীতার। ফুল আর আলোয় ভরা চারপাশ। এর মাঝে আনন্দের আতিশয্যে খলবল করছেন লেখককুল।
ভেন্যুতে আসতে সামান্য দেরি হয়েছে ওঁর। কিন্তু লেখকবৃন্দ সময়ের আগেভাগে ক্লাবে এসে উপস্থিত। প্রচন্ড উৎসুক এই লেখককুলকে সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ইরফান রেজার।
হাসি ঝলমল অনীতাকে হলে ঢুকতে দেখে ছুটে এলেন ইরফান। মুখে বললেন, ‘বিফোর টাইম সবাই চলে এসেছেন। হানড্রেড পারসেন্ট অ্যাটেনন্ডেন্স ম্যাডাম। সবাই ভীষণ হ্যাপি। আপনার বুদ্ধিটা খুব কাজে লেগেছে।’
‘কোনটা?’
‘ওই যে আপনি সবাইকে অফিসের গাড়ি দিয়ে সসম্মানে ক্লাবে আনার ব্যবস্থা করেছেন, সেটা।’
‘ঠিক আছে। এঁরা যাতে হ্যাপি হয়ে ফিরে যান সেদিকে লক্ষ রাখুন।’ বলে অনীতা আড়চোখে খুঁজে বেড়ান দৈনিক সূর্যের সম্পাদক ও এসবের মূল পরিকল্পনাবিদ ফখরুল হোসেনকে। হঠাৎ চোখে পড়ে গেল তাঁকে। তিনি হলের বাইরে রিসেপশন ডেস্কের সামনে দাঁড়ানো। হাতে ফুলের তোড়া। অনীতা ছুটে চলে এলেন তাঁর পাশে।
মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করলেন, ‘স্যার এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যে?’
‘চেয়ারম্যান স্যারের জন্য। তিনি এক্ষুনি চলে আসবেন। রওনা দিয়েছেন অলরেডি। আমি সরাসরি মামাকে নিয়ে মঞ্চে চলে যাবো। আপনি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে কাজ করবেন। অনুষ্ঠানটা স্টার্ট করে দিন।’
‘আমি? ইরফান রেজা হলে ভালো হয় না?’
‘তাঁকে সঙ্গে রাখুন।’
‘ঠিক আছে। আমি তাহলে চলি?’
‘হ্যাঁ।’ বলে ফখরুল একঝলক তাকালেন ওর দিকে। পুরুষের এ-তাকানোর কী অর্থ তা অনীতা ভালোই জানেন। তিনি আজ ক্রিম কালারের লাল পাড়ওলা রাজশাহী সিল্ক চড়িয়েছেন গায়ে। খোঁপায় লাল গোলাপ। কপালে দুধসাদা টিপ। কাঁধ থেকে আলতো করে ঝোলানো সিলেট থেকে কেনা মেরুন রঙের চাদর।
অনীতা চলে যেতে গিয়েও ফিরে আসেন ওর সামনে। বলে ওঠেন, ‘স্যার ড্রেস কোড ঠিক আছে?’
তিনি একটু তাকিয়ে উত্তর দেন, ‘গ্রেশাস। আজকের বেগম রোকেয়া।’ চোখে-মুখে মুগ্ধতাভরা চাপা হাসি।
অনীতা আর দাঁড়ান না। ইরফান রেজাকে নিয়ে মঞ্চে উঠে কথা বলতে শুরু করেন। চোখের সামনে সকল পুরুষ লেখককে মনে হচ্ছে এক-একজন 888sport live football-অনুরাগী আনিসুজ্জামান। ঢোলা পাজামা আর খদ্দরের আজানুলম্বিত পাঞ্জাবিতে বেশ দেখাচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি 888sport promo codeদের পরনের ক্রিম কালারের লাল পাড় শাড়ি ও লম্বা হাতার সাদা বøাউজ দেখে কেন যেন অনীতার মনে হচ্ছে, ওরা প্রত্যেকে এক-একজন আত্মপ্রত্যয়ী বেগম রোকেয়া। বিশেষ এই পোশাকগুলো ওদেরই দেওয়া। 888sport app শহরের একটি চেইন ডিজাইনার হাউসকে এ-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে কাজটা ওরা সুচারুরূপেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। শেষ সময়ে এ-সিদ্ধান্তটি নিয়ে ভালোই হলো। নিখুঁত হলো পুরো আয়োজন। যেদিকে তাকাচ্ছেন অনীতার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য পুরো ক্রেডিটটা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে। কিন্তু এসব কি টাকার অপচয় নয়?
হলের বাতাসে ফুল আর অ্যাপেটাইজারের ম-ম গন্ধ। এর সঙ্গে হারানো দিনের বাংলা গান। কখনো ‘তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে এই রাত এমন মধুর’, কখনো ‘আকাশের ওই মিটিমিটি তারার পানে কইবো কথা, নাইবা তুমি এলে’, আবার কখনো বা মন মাতিয়ে বেজে উঠছে ‘888sport sign up bonus ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে, পানি টলমল মেঘলা নদীর কাছে আমার অনেক ঋণ আছে’ গানগুলো। ‘উচাটন মন ঘরে রয় না’র মতো অবস্থা সবার। সমুদ্রের গভীরে অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতর যেন স্বপ্নের মাছেরা ঘোরাঘুরি করছে সবখানে। অনীতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, উচ্ছল এই লেখককুল কতটা আনন্দ ও সম্মানের ভেতর নিজেদের আবিষ্কার করছেন অবিরাম।
স্টার্টার ও সফট ড্রিংক নিয়ে উর্দিপরা অ্যাটেন্ডেন্টরা ঘুরঘুর করছেন লেখকদের চারপাশে। কেউ টুথপিক দিয়ে একটি নাগেট মুখে পুরে হাতে সফট ড্রিংক নিয়ে সবার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছেন। কখনো টেবিলে বসে সতীর্থদের মাঝখানে মেতে উঠছেন 888sport live footballালাপে। যে তৃষ্ণা ও আবেগ নিয়ে লেখালেখিতে এসেছেন তা যেন পূরণ হচ্ছে এখানে। চারপাশের কর্কশ নিষ্ঠুরতার ভেতর তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন আপনসত্তার সত্যিকার সার্থকতা।
এসময় ইরফান রেজাকে সামনে পেয়ে বিখ্যাত কথা888sport live footballিক আদিত্য সৈয়দ বলে উঠলেন, ‘এই যে ভাইয়া, ক্লাবে এসে কি শুধু কোক-ফান্টা টানবো। হার্ড কিছু নেই?’
ইরফান রেজা ছুটে গেলেন অনীতার কাছে। অনীতা দ্রুত ফখরুল হোসেনকে জানালেন সে-কথা। তিনি চেয়ারম্যানের জন্য অপেক্ষা করছেন ফুল হাতে নিয়ে। ওর প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই রয়েছে। দক্ষিণ দিকের কোনায় ছোট করে একটা বার রয়েছে। সেখানকার বাটলারকে বললেই হবে। নিজের চয়েস যেন বলে দেন।’
সঙ্গে সঙ্গে অনীতা কথাটা ইরফান রেজাকে জানিয়ে দিলেন। শুনে তিনি নিজে বড় খুশি হয়ে গেলেন। হয়তো গোপনে এক পেগ গলাধঃকরণের ইচ্ছে রয়েছে তারও। হাসি পেল অনীতার। এসব ব্যাপারে কত যে রাখঢাক চলে এখানে!
অনীতা উঠে পড়লেন মঞ্চে। শুরু হয়ে গেল অনুষ্ঠান। কবি 888sport live chatী লেখকদের গুণগান করলেন বেশ কিছুক্ষণ। পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর ও মোহময় তা যে সর্বকালে সৃষ্টিশীল মানুষের স্বপ্ন দিয়ে বোনা, তা নতুন করে 888sport app download for android করিয়ে দিলেন সবাইকে। যেখানে সৃষ্টিশীলতা নেই, সেখানে পাথর ও বালু ছাড়া কিছুই থাকে না, তাও তিনি বললেন। সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এই লেখকেরা যে আজ এই মহতী সন্ধ্যায় একত্রিত হয়েছেন তা দেখে ওর চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কোনো ভুলত্রুটি যদি হয়ে থাকে তবে সেজন্য তিনি বারবার করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন সবার কাছে। একপর্যায়ে তিনি এ-উদ্যোগটির পুরো কৃতিত্ব তুলে দিলেন ‘লুঙ্গি গ্রুপ অফ কোম্পানিজে’র চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মানবতাবাদী সমাজকর্মী জুনায়েদ রফিকের কাঁধে। সবাই হাততালি দিয়ে অপরিচিত সেই চেয়ারম্যানকে সমর্থন জানালেন।
এসব বলার ভেতর সহসা হুট করে লেটেস্ট মডেলের মার্সিডিজে চড়ে চলে এলেন চেয়ারম্যান সাহেব। তিনি হাত নেড়ে সবাইকে স্বাগত জানাতে জানাতে সোজা মঞ্চে উঠে এলেন। সঙ্গে সম্পাদক ফখরুল হোসেন।
চেয়ারম্যানের দিকে অনীতা একঝলক শুধু তাকালেন। হাসি পেয়ে গেল বড়। এতক্ষণ যে লোকটাকে এত করে ইনিয়ে-বিনিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সংবেদনশীল এই লেখকদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাঁকে দেখে মনে হলো, তিনি নিজে একখানা আরমান ব্র্যান্ডের লুঙ্গি ছাড়া আর কিছু নন। মাথায় লুঙ্গি চেকের টুপি। যথারীতি পাঞ্জাবি ও চাদর সবই লুঙ্গি চেকের। তাঁকে বলা হয়েছিল আনিসুজ্জামানের ড্রেস কোড পরতে। তিনি রাজি হননি। মুখের ওপর বলে দিলেন, ‘পণ্ডিতের লগে ব্যবসায়ী যায় না রে ডেভিড। ব্যবসায়ীর ট্যাকা ছাড়া পান্ডিত্য অচল। বুজলানি?’
বারো
কথা বলার ফাঁকে অনীতার দৃষ্টি ঘুরে বেড়ায় হলের চারপাশে। রংবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে রয়েছে চারদিক। কথাগুলো চমকে দেওয়ার মতো। এটা যে একটি 888sport live footballবাসর তা ওগুলোর ওপর চোখ রাখলেই চলে। এক জায়গায় দুই রকমের দুটো পা আর ভিন্নরকম জুতো জোড়া দেখা যাচ্ছে। নিচে লেখা, 888sport live footballিকের মুখ্য কাজ কি জানেন? অন্যের জুতোয় নিজের পা গলানো। অন্য একটি ফেস্টুনে লেখা, উত্তম 888sport live football শুধুমাত্র সমস্যাকে তাক করে তীর ছোড়া নয়, আরো বেশি কিছু। কোথাও লেখা, কেবল লেখকই পারেন মানুষের অন্তরে আলো জ¦ালাতে। এক জায়গায় একটি বাঘ মানুষে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে, নিচে লেখা, 888sport live footballই পারে আপনার সঙ্গে থেকে আপনাকেই পাল্টে দিতে। আরেকটি জায়গায় দুটো মুখ আঁকা রয়েছে। একটি মুখ ভয়ংকর আর অন্যটি সুবোধ সুশালীন। নিচে যথরীতি লেখা রয়েছে, 888sport live football ভালোমন্দ কিছুই বোঝে না। এ এমন এক মানবীয় ভাবের খেলা যে কে ভালো আর কে মন্দ তা কেবল 888sport live footballিকই বলতে পারেন আর পাঠক তা পাঠ করে বারবার বিস্ময় অনুভব করেন।
এত রকমারি কোটেশন ইরফান রেজা কোথায় পেলেন তা ভেবে অনীতা কবীর রীতিমতো বোকা বনে যাচ্ছেন। এসব নিজের বানানো আপ্তবাক্য নয়তো?
ফখরুল হোসেন কানে কানে ওঁকে বললেন, ‘লেখকদের বলুন কিছু বলতে? লাঞ্চের আগে সব শেষ করে দেবেন। মামা চলে যাবেন।’
‘ওকে স্যার।’
এবার লেখকদের পালা। অনীতা ইরফান রেজার কানে কানে সে-কথা বলে দিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সবাই তো কথা বলতে পারেন না। তিন-চারজনের নাম বলুন যাঁদের কথা সবাই শুনবেন।’
ইরফান রেজা মাথা চুলকে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর উত্তর দিলেন, ‘ম্যাডাম, কবি, গল্পকার, 888sport liveকার, শিশু-888sport live footballিক আর ঔপন্যাসিক মিলে চারজনের নাম বলবো?’
‘বলেন।’
‘কথাসহিত্যিক আদিত্য সৈয়দ, কবি তন্ময় কবীর, শিশু888sport live footballিক মোজাম্মেল হক, ঔপন্যাসিক তানিয়া আসাদ আর গল্পকার তমালকৃষ্ণ দত্ত।’
‘ঠিক আছে।’ অনীতা নামগুলো নিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাঁড়ালেন। প্রথমেই তানিয়া আসাদকে সংক্ষেপে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন।
অনীতা তাঁর 888sport alternative link ‘পাখিদের বীজমন্ত্র’ পাঠ করেছেন। সমসাময়িক শহুরে মানুষের গল্পের সঙ্গে তিনি এদেশের গ্রামবাংলার অতীতকে মিশিয়ে দুশো পৃষ্ঠার একটি টানটান 888sport alternative link লিখেছেন। এ-888sport alternative linkের দুটি ফল্গুধারা। একদিকে গ্রামবাংলার একদা সময়কে একজন বাউল গল্পচ্ছলে বয়ান করেছেন তাঁর মজ্জাগত সারল্য ও মমতা দিয়ে। পাশাপাশি লেখক উত্তম পুরুষের আশ্রয় নিয়ে নিজের দেখা সম্পদ-ব্যাকুল অভিবাস-কাতর শেকড়বিচ্ছিন্ন এখনকার শহুরে জীবনটিকে পাখির চোখ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। ইরফান রেজা নিজে ওঁকে উপহার দিয়েছিলের এ-বইটি। লেখক লন্ডনপ্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার। দেখে মোটেই তা মনে হয় না। বয়স হলেও হাসিখুশি তারুণ্য-উদ্দীপ্ত চেহারা। বয়স অনুমান করা রীতিমতো কঠিন। বছরে এক-দুবার বেড়াতে আসেন দেশে। অনীতা মতিচুরের দ্রোহী লেখক বেগম রোকেয়ার বেশে তানিয়া আসাদকে ডেকে নিলেন স্টেজে।
তিনি বললেন, ‘একজন লেখকের ট্র্যাজেডি কি জানেন? তিনি যা বলতে চান আজ, খুঁজলে দেখবেন, সেগুলো বহু আগে আরো কেউ কেউ নানা দেশে নানা জায়গায় বলে ফেলেছেন। আপনার জন্য এক চিমটি জায়গাও নেই। তখন গোলকধাঁধার ভেতর পড়ে তাঁকে হাতড়ে মরতে হয়, কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন তিনি। এ দুশ্চিন্তা থেকেই কাফকা-কামু-হেমিংওয়ের জন্ম। আমরা শুধুই হাতড়ে চলেছি কনটেন্ট ও ফর্মের বৈচিত্র্যে আমাদের পূর্বপুরুষ লেখকদের টেক্কা মারতে। কেউ কেউ জিতে যান এ-প্রতিযোগিতায়। বেশিরভাগ আমরা নিজেদের লেখা লিখে প্রশান্তি ও আত্মতুষ্টি নিয়ে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ি। মহান লেখক আর হতে পারি না। তবে লিখে যে শান্তি পাই, আমার নিকট তা-ই যথেষ্ট। এ নিয়েই আমি তুষ্ট।’ বলে হেসে উঠলেন তানিয়া। তিনি প্রশংসা করলেন দৈনিক সূর্যের টিমকে। এরকম প্রয়াস লেখকদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কবি তন্ময় কবীরকে উচ্চতা ও দেহের মাপে দূর থেকে আনিসুজ্জামান মনে হচ্ছে। মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। কোনো চাকরি-বাকরি করেন না। বোহেমিয়ান জীবন তাঁর। দুবার বিবাহ-বিচ্ছেদের পর এখন তিনি একা। অনীতা এসব জেনেছেন ইরফান রেজার কাছ থেকে। এ-কবির বেশ কিছু জনপ্রিয় 888sport app download apkর চরণ রয়েছে যা যুবকদের ভেতর ভীষণ জনপ্রিয়। দুটো রোমান্টিক গান তো একসময় সবার মুখে মুখে ফিরত।
তিনি মাইক্রোফোনে টোকা দিয়ে শুরু করলেন নিজের বক্তব্য, ‘এই যে স্টেজে একজন বসে রয়েছেন, নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন তাঁকে। এ কোম্পানির প্রাণপুরুষ। পরনে লুঙ্গিচেক। পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে টুপি-চাদর – সবখানে তিনি লুঙ্গিময়। 888sport app download apkও তেমনি। পুরো সত্তাকে আবৃত করে মননের রসে জারিত হয়ে বের হয় একটি 888sport app download apkর চরণ। তাই কবিকে হতে হয় মাটিসংলগ্ন। যে কবি মাটি চেনে না, সেটি ঊষর মরুভ‚মি কিংবা বৃষ্টিসজল কাদামাটি কিংবা বরফসাদায় 888sport app শুষ্ক ভূমি হোক, তিনি কবি হতে পারেন না। যিনি 888sport app download apkকে আস্বাদন করতে জানেন, তিনি কখনো অমানবিক হতে পারেন না।’ বলে দম নেন। মিনারেল ওয়াটারের বোতল খুলে পানি ঢালেন শীতে শুকনো খরখরে হওয়া গলায়। তারপর আবার বলতে শুরু করেন।
শিশু888sport live footballিক মোজাম্মেল হক এ-আয়োজন দেখে আনন্দে আত্মহারা। সারামুখ জুড়ে হাসি। হিটলারি গোঁফ তাঁর। কানের কাছে কয়েক গাছি চুল ছাড়া গোটা মাথা ফাঁকা। পাতলা-সাতলা গড়নের কারণে যৌবনের আনিসুজ্জামান লাগছে তাঁকে। শিশু একাডেমিতে অনেকদিন চাকরি করে এখন বই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নিজের বইগুলো নিজেই প্রকাশ করেন। বেশকিছু শিশু সংগঠন রয়েছে তাঁর। ফেসবুকে প্রায়ই তাঁর কাজকর্ম সংবলিত নানা সংবাদ দিয়ে পোস্ট দিয়ে থাকেন তিনি। সেখানে অনীতাও রয়েছেন; তাই খবর পান নিয়মিত। লোকটির সততা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও লেখায় বেশ দম রয়েছে। ইরফান রেজা বলেন, ‘এই লোকের পড়াশুনো আছে। আধুনিক শিশু888sport live footballের একটা ধারা এদেশে তিনি নির্মাণ করতে চান।’ সে-কথা এখন মনে পড়ে গেল অনীতার।
মোজাম্মেল হক মঞ্চে উঠে বললেন, ‘শিশু888sport live football বললেই আমরা কিছু কাল্পনিক কাহিনির ঘনঘটা বুঝি। আমি ব্যক্তিগতভাবে হ্যারি পটারের পক্ষে নই। আমাদের দেশে শিশুদের নিয়ে কত বঞ্চনা আর নিগ্রহ ঘটে। সেগুলোও তো বলতে জানলে গল্পের রূপ নিতে পারে। কল্পনার সমুদ্রে হাবুডুবু না খেয়ে সেসবকে সামনে নিয়ে আসুন না। বিপন্নতার ছবি না দেখালে শিশুরা বুঝবে কেমন করে তার কী করা উচিত। শিশু888sport live footballে আইলা-সিডর না থাকলে শিশুরা কিভাবে বুঝবে সেগুলোর ভয়াবহতা? গ্রামের বদলোকের হাতে দখল হওয়া স্কুলঘরটি কিংবা খেলার মাঠটির গল্প না শুনলে ওরা বুঝবে কীভাবে সেগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। স্কুলের শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে গল্প না জমালে ওরা কীভাবে প্রশ্ন তুলবে বাস্তবজীবনে বলুন? তাই স্বপ্নকে নিয়ে আসতে হবে বাস্তবের কাছে। নর-888sport promo codeর সম্পর্ক তো শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ভেতর সীমাবদ্ধ নয়, শিশুরাও তো প্রচণ্ড কৌতূহলী এসব ব্যাপারে। শিশু মনস্তত্ত¡ বুঝে সেখানে আলো না ফেললে আপনার শিশুর নৈতিকতা এগোবে কি?’ এভাবে অনেকক্ষণ বললেন মোজাম্মেল হক। বেশি বলতে গিয়ে প্রথমদিকে যেরকম আকর্ষণীয়ভাবে শুরু করেছিলেন তা ঝুলে গেল শেষদিকে। বারবার করে যত তিনি ‘আমি কথা আর বাড়াবো না। শুধু একটি কথা বলতে চাই’ বলেন, দর্শকের উসখুস তত বাড়ে। সময়জ্ঞান না থাকায় শেষমেশ বেশ কবার চিরকুট দিয়ে কথা সংক্ষিপ্ত করার অনুরোধ জানিয়ে তাঁকে নামাতে হলো স্টেজ থেকে। তবু কথা না বলতে পারার অনুযোগ উহ্য থাকে তাঁর ভেতর। অনীতা তা বুঝতে পারেন।
অনীতা এবার বললেন, ‘আমাদের সময় খুব সংক্ষিপ্ত। আমরা এবার বিশিষ্ট গল্পকার তমালকৃষ্ণ দত্তকে গল্প নিয়ে কিছু কথা বলার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ-বক্তব্যের পরপরই দৈনিক সূর্যের পক্ষ থেকে সমাগত সবাইকে ফুল ও সুভেনির দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। তারপর প্রধান অতিথির দু-কথা শুনে আমরা ডিনারে চলে যাবো।’
শুরু হলো তমালকৃষ্ণের বক্তৃতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির শিক্ষক। গল্পে তাঁর নানারকম সমীক্ষার উপকরণ রয়েছে। এজন্য তাঁর গল্পগুলো খুব একটা জনপ্রিয় নয়। সব যেন মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। অবোধ্য বলে অনেকে দোষারোপ করলেও ইরফান রেজার বক্তব্য, এ-গল্পকার সময়ের আগে চলেন। জীবনানন্দ দাশকে যেমন তাঁর কালে অনেকেই বুঝতে পারেননি, তমালকৃষ্ণ সেরকমই এক লেখক। তাঁর লেখার অগম্যতাকে অতিক্রম করতে হলে পাঠকের যোগ্যতার প্রয়োজন।
নিপাট ভদ্রলোক তমালকৃষ্ণ। বেটেখাটো গাট্টাগোট্টা হলেও বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা তাঁর। মঞ্চে এসে সংক্ষেপে যা বললেন তা হলো, ‘888sport live footballের কোনো জমিতেই ফসল ফলানোর কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন নেই। আপনি 888sport live footballিক। আপনিই জানেন একটি সামান্য ঘটনাকে মৃৎ888sport live chatীর মতো কীভাবে 888sport live chatের মর্যাদায় উত্তরণ ঘটাবেন। ঘটনা যে কেউ বলতে পারেন। কিন্তু ঘটনার আড়ালে যা থাকে, সেই অদৃশ্য ঘটনাই হলো জাদুকরের জাদুশক্তি বা 888sport live football। তাই 888sport live footballিক হওয়া সহজ কাজ নয়। কথার পিঠে কথা বা ঘটনার পর ঘটনা সাজালেই 888sport live football হয় না। মন পঙ্কিলতায় ভরা বদ্ধ জলাশয় হলে যত মেধাই থাকুক, আপনি 888sport live footballিক হতে পারবেন না। আলো দেখাতে হলে আলোকিত হতে হয়। নইলে নয়। মনে রাখবেন চর্বিত-চর্বণ 888sport live football নয়। রামের জায়গায় রহিম বসালেই হবে না। রাম রহিম যোসেফ মং-বড়–য়াদের একত্রিত না করতে পারলে কিসের কী। সব ভুয়া। কূপমণ্ডূকতার চিরচেনা চিত্র।’ অনুচ্চ গলায় মিনিট দশেক বলার পর দৈনিক সূর্যকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি। তিনিই প্রথম যিনি চেয়ারম্যানকে নয়, সম্পাদক ফখরুল ও অনীতা কবীরকে আন্তরিক অভিবাদন জানালেন এরকম অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।
বক্তৃতাপর্বের পর ফুল ও সুভেনির দিয়ে ষাটজনকে চেয়ারম্যান জুনায়েদ রফিক বরণ করে নিলেন। এসময় ফখরুল হোসেন অনীতাকে নিয়ে এক কোণে চলে এলেন। সঙ্গে নিলেন ইরফান রেজাকে। বললেন, ‘আমাদের একটা কাজ করতে হবে।’
‘কি?’
উত্তর না দিয়ে কতগুলো কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিলেন অনীতার হাতে। মুখে বললেন, ‘এ কাগজগুলোর উত্তর আমার চাই।’
‘মানে?’ প্রশ্ন অনীতার। পাশে দাঁড়ানো ইরফান রেজার চোখে বিস্ময়।
‘শুনুন। আমরা এখান থেকে প্রতিভাবান চারজন ঔপন্যাসিক, ছজন কবি, দুজন 888sport liveকার, শিশু888sport live footballিক তিনজন এবং গল্পকার পাঁচজন বেছে নেব। আপনি ছাড়া আপনার প্রিয় গল্পকার, সেরা 888sport liveকার, সেরা ঔপন্যাসিক, সেরা শিশু888sport live footballিক – প্রশ্নসংবলিত চিরকুটটি ছড়িয়ে দিন উপস্থিত এই ষাটজনের ভেতর। তারপর উত্তরগুলো নিয়ে শর্টলিস্ট করে ফেলুন যে কজনের কথা বলেছি তাঁদের। ওকে? পারবেন তো?’ গোঁফের ফাঁকে সেই চালাকিভরা পুরনো হাসির ছটা। অনীতা চোখ ফিরিয়ে বাচ্চাদের মতো করে ইরফান রেজাকে একই প্রশ্ন করলেন, ‘পারবেন তো?’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘এটা এমন কী কঠিন কাজ। আমি এক ঘণ্টার ভেতর করে দিচ্ছি।’
অনীতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। লোকটা যে কী চাইছে, এত কাছাকাছি থেকে এখনো কিছুই বুঝতে পারছেন না। এমন রহস্যময় মানুষকে কি জীবনসঙ্গী ভাবা যায় কোনোকালে? এ তো থ্রিলার 888sport alternative linkের মতো চরিত্র ও কাহিনি, শায়লার সঙ্গে সুযোগ বুঝে কথা বলতে হবে।
তেরো
যে-লোক একটা ঈদ888sport free bet সাজাতে গিয়ে এত হ্যাপা সামাল দিচ্ছেন, তাঁকে কি অপদার্থ সম্পাদক ভাবা যায়?
এ-জায়গায় আলী হোসেন সর্দার হলে পুরো অফিসকে চিৎকার-চেঁচামেচি দিয়ে মাথায় তুলে ফেলতেন। অথচ
এ-ভদ্রলোক গোটা কর্মপরিকল্পনাটি নিজের ভেতর চেপে রেখেছেন। লাটাইর সুতো ছাড়ার মতো যেখানে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই শুধু সবার নজরে নিয়ে আসছেন। এটা কি একধরনের আধুনিক ব্যবস্থাপনা? জানা নেই অনীতার।
ফখরুল হোসেন আজ অনুষ্ঠানের প্রথম থেকেই অনীতা কবীরকে বেগম রোকেয়া বলে সম্বোধন করছেন। বলার ভেতর কোনো অবজ্ঞা নেই। বরং প্রশংসা ও 888sport apk download apk latest versionবোধ রয়েছে। যতবার তিনি ওকে বেগম রোকেয়া বলছেন ততবার হেসে ফেলছেন অনীতা। কার না ইচ্ছে হয় একজন বিখ্যাত মানুষ হওয়ার? সেটা ছায়ার মতো অর্থহীন অনুকরণ হোক না, তাতে কি!
লেখকদের ভেতর ফুল ও সুভেনির বিতরণের পরপরই শুরু হয়ে গেল জুনায়েদ রফিকের বক্তৃতা। তিনি প্রথমেই বললেন, ‘আপনারা হইলেন আল্লাহ-তালার পেয়ারের লোক। মহান রবের দোয়া না থাকলে কেউ জীবন ও জগৎ লইয়া নিত্যনতুন কতা সাজাইতে পারে না। আমি কোনোদিন ভাবি নাই আপনাদের লাহান দিগ্গজদের সামনে কতা কইতে পারুম। এই জুনায়েদ এককালে ভৈরবের হাটে লুঙ্গি কান্দে কইরা বেড়াইতো। যারা লুঙ্গি বোনে, হেরার কাছ থেইক্যা সস্তায় কিইন্যা হাটে সামান্য লাভে বেচতাম। সেই লুঙ্গি বুননকারীরা আইজও আমার লগে আছে। আমি তাগো ছাড়ি নাই। হেরার লুঙ্গি বিদেশে যায়। 888sport app download bd মিলে। সম্মান মিলে। অর্থ তো আছেই। আইজ আমার নানারঙের ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তুক আমি লুঙ্গিরে অবহেলা করি নাই। এর নকশা, রং, সুতা নিয়া আমি একটি ইনস্টিটিউট গড়তে চাই। বুননকারীদের কেউ আমারে টেলিফোন করলে সব ফালাইয়া আমি তাঁর কথা শুনি। আমার দুই ছেলে। এরা কেউ দেশে আসবার চায় না। জানি না আসবে কি না। আমি জানি আমার মতো তাগো প্রেম থাকবে না লুঙ্গির প্রতি। হয়তো ব্যবসাটাই বুজবে। কিন্তু যে লাভ-ক্ষতির সঙ্গে পিরিত মিশে না, সেইটা বেশিদিন টিকে না। আপনেরা যে জ্ঞানের কাজে লিপ্ত, মানুষরে যে নতুন সূর্যালোকে গোসল করাইতে চান, সেইখানে কোমল-কঠিন পিরিত না থাকলে সব বানের পানিতে ভাইসা যাবে।
আমার সন্তানতুল্য ফখরুল আপনাগো লগে রয়েছে। সে ছোটবেলা থেকেই যত মেধাবী তত নরোম তার মন। সে কিছু একটা করতে চায়। আপনার তার লগে থাকবেন আশা করি। সে কারো ক্ষতি করবে না। সেইটা জোর গলায় কইতে পারি।’
বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন বুফে-ডিনারের শেফিং-ডিশের ওপর। আদিত্য সৈয়দ দু-তিন পেগ হুইস্কি ঢেলে দিয়েছেন গলায়। চিতল মাছের কোপ্তা নিজের প্লেটে নিয়ে তিনি গদগদ। অনীতা ও ফখরুল ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। চেয়ারম্যান সাহেব বক্তৃতা শেষ করে বিদায় নিয়েছেন একটু আগে। একটা ফিশ-ফ্রাই মুখে দিয়েছেন কি দেননি। পেটে সহ্য হয় না। তাই ছুটে বেরিয়ে গেছেন দ্রুত। মাংসাশী হয়েও ইদানীং বাধ্য হয়ে তিনি ভেজিটেবল খাচ্ছেন। শরীরিক কারণে মাছ-মাংসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন দিনদিন। তাই বাসায় ফিরে গেছেন।
আদিত্য সৈয়দ উল্লসিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘চিতল মাছের মুইট্টা? আহা! মেন্যুটা কে ঠিক করলেন?’
ফখরুল হাসিমুখে উত্তর দিলেন, ‘এই যে আমার চোখের সামনে, বেগম রোকেয়া! তিনি।’
আদিত্য হেসে উঠলেন হো-হো করে। হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এই বেগম রোকেয়া আমাদের মুসলিম সমাজের পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে কী যুদ্ধটাই না করে গেছেন সারাজীবন। লেলিহান আগুনে পুড়ে কাঠকয়লা হয়ে যাবেন, তবু ঘরের বাইরে বেরুচ্ছেন না 888sport promo code, পাছে পরপুরুষের মুখোমুখি হয়ে পড়বেন, সেই আশংকায়। এই ছিল এককালের মুসলিম গোঁড়া সমাজ। বেগম রোকেয়া সাজলে হবে না। সেটা মশকরা। সেটা ফার্স। তাঁর চিন্তাকে ধারণ করতে হবে। তবেই 888sport promo code-সমাজ এগোবে।’ বলে তিনি একে একে শেফিং-ডিশগুলো তুলে দেখতে থাকেন। ভোজনরসিক মানুষ, যত দেখেন তত আপ্লুত হন আনন্দে।
অনীতা হাসিমুখে তাঁর কথা শুনে গেলেন। আতিশয্যের ঘোরে নানাজন নানা কথা বলে চলেছেন। কেউ দ্রব্যগুণে, কেউ এমনি-এমনি। নীরব হাসিতে মুখ ভাসিয়ে সব শুনে যাওয়া ওদের কাজ।
একটু ফাঁকা জায়গায় ফখরুল হোসনেকে একা পেয়ে অনীতা সোজাসুজি ওর চোখের দিকে তাকালেন, ‘সব ক্রেডিট যে আমায় দিচ্ছেন? আপনার মতলবটা কী? গাছের উপরে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছে?’
‘মেন্যু-চয়েসটা তো আপনারই। মিথ্যা বললাম? তাছাড়া আমি তো মইটা চিরদিনের জন্য দিতেই চাই। কেউ নিতে না চাইলে আমি কি করতে পারি?’ একথা বলে বেসুরো সুরে গান ধরেন, ‘চিরসখা হে, ছেড়ো না মোরে।’
অনীতা মেয়েলিসুলভ মুখঝামটা দিয়ে বলে ওঠেন, ‘ফালতু। দু-পেগ ফাঁকে হয়েছে নাকি?’ চোখেমুখে তরল হাসির রেখা।
‘না, না। আমি ওসবে নেই। আমি একেবারে ভেজিটেরিয়ান।’
‘তাই? দেখতে তো পাচ্ছি।’ চোখে অনীতার দুষ্টুমির ঝলক।
এসময় 888sport liveকার আবুল ফাত্তাহ ওঁদের কাছে এসে দাঁড়ালেন। চোখে পুরু চশমা। অবসরপ্রাপ্ত ব্যুরোক্র্যাট। বয়স হলেও টানটান হয়ে হাঁটার অভ্যাস। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব সারাক্ষণ চোখেমুখে ভেসে বেড়ায়। ফ্যাসফ্যাসে গলায় ফখরুল হোসেন আর অনীতা কবীরকে বলে ওঠেন, ‘এ জীবনে কত অনুষ্ঠানেই তো গেছি। কিন্তু এমন নিটোল 888sport live football-বাসর চোখে পড়েনি। আমি যখন জয়েন্ট সেক্রেটারি কালচারেল মিনিস্ট্রিতে, তখন ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় …।’
কথা শেষ করার আগে শিশু888sport live footballিক মোজাম্মেল হক হাসতে হাসতে ওদের মাঝখানে এসে ফাত্তাহ সাহেবের কথার তোড় বন্ধ করে দেন। অন্য প্রসঙ্গ টেনে মুখে বলেন, ‘এই গানগুলো কোথায় পেলেন ভাই? আমি যে ক্ষণে ক্ষণে কত সংগোপন 888sport sign up bonusর ভেতর ঢুকে পড়ছি।’
‘কোন গানগুলো?’
‘ওই যে ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই/ মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই’ কিংবা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলেই ঠুস’ গানগুলোর কথা বলছি। অসাধারণ। মনে রাখার মতো আয়োজন।’
আবুল ফাত্তাহ মাঝখানে বলে উঠলেন, ‘সেদিন একটা গান শুনলাম। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ফোক গান। কী বলবো। মনটা ভরে গেল। আমার ছেলে আমেরিকা থেকে গানটার ক্লিপ পাঠিয়েছে।’
‘মৈমনসিংয়ের ‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইলো বাইঙ্গন’ গানটাও মজার। স্যারের বাড়ি তো নেত্রকোনা?’ মোজাম্মেল হক আগ্রহ নিয়ে আবুল ফাত্তাহর উদ্দেশে বলে ওঠেন।
আবুল ফাত্তাহ খানিকটা অপ্রস্তুত হলেও কথা চালিয়ে যান স্বাভাবিক গতিতে।
এই ফাঁকে ফখরুল ও অনীতা কেটে পড়েন। মাঝে মাঝে অনীতার হাত ধরে টান দিচ্ছেন ফখরুল, কখনো তিনি গান গাইছেন মৃদু স্বরে – সম্পাদকের এরকম তূরীয় অবস্থা দেখে অনীতার কেবল বাল্যবন্ধু শায়লা নূরকে মনে পড়ছে। ওকে ছাড়া হবে না। লোকটা অনুষ্ঠানের সাফল্যে আপ্লুত হয়ে আত্মগর্বে এসব করছেন নাকি সত্যি সত্যি কিছু একটা বোঝাতে চাইছেন ওকে, সেটা ইংরেজি 888sport live footballের ছাত্রী প্রিয় বান্ধবীটির সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়া কিছুতেই বোঝা সম্ভব নয়। অনেকদিনের অভ্যস্ততা, ওকে ছাড়া কি কিছু হয়?
চৌদ্দ
‘তোর বর কি বাসায়?’ অনীতার জিজ্ঞাসা।
‘ওই ব্যাটারে কে পুঁছে? ক, কিছু ঘটল? বিয়া কি পাক্কা ওই ডাকাতের লগে?’
‘নারে শালু। লোকটাকে যতটা ভিনডিকটিভ ভাবছিলাম, আসলে তিনি তা নন। বেশ স্মার্ট। উদারও। লোকটা বোধহয় আমার প্রেমে পড়ে গেছেন।’ ন্যাকা গলায় অনীতা বান্ধবীকে জানান।
‘এতদূর! আমি বলি নাই? তোরে অ্যাভয়েড করা অত সহজ কাজ নয়। সবাই তো সুলতান নয়।’
‘এখন আমার কি করা উচিত?’
‘সম্পাদকের চাবিটা তোরে দিতে রাজি?’
‘চাবি ঠিক না। মই দিতে চাইছিল 888sport app ক্লাবে।’
‘মানে? তুই এ বয়সে গাছে উঠবি নাকি?’
‘এখন বল এগোব কি না?’
‘আরো কদিন বাজা না। তবে দোস্ত একটা কথা।’
‘ক?’
‘কুমারী 888sport promo codeর অভিনয়টা ভালো করে করিস। অভিজ্ঞ 888sport promo codeর পরামর্শটা নিস মা জননী। মনে রাখিস তোর মা-বাবা কানাডা যাওয়ার সময় তোর দায়িত্ব আমার ঘাড়ে সঁপে গেছেন। শোন, এদেশের ভণ্ড পুরুষগুলো নিজেরা যা-ই হোক, 888sport promo codeদের এখনো আপেল-কমলার মতো ভাবে। একবার খেয়ে ফেললে শেষ। এরা মনে মনে পঞ্চাশ-ষাট দশকের ছায়াছবির নায়িকাদের খুব পছন্দ করে। সুচিত্রা সেন কবরী শাবানার নায়কের সঙ্গে মাথা নিচু করা আকুল-ব্যাকুল চাহনি মনে গেঁথে রয়েছে এদের। কিন্তু মুখে মুখে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি টম ক্রুজ জন ট্রাভোল্টা ব্র্যাড পিট মেরিল স্ট্রিপ আর কেট উইন্সলেটের প্রশংসা। খুব বোঝা হয়ে গেছে। তোর সুলতানের বেলায় যা হলো।’
‘আমার দেহ আমার। তাতে কার কী? তোর বরের খবর কি? শেফাকের ধারণা কি তোর সম্পর্কে?’
‘আমার সোনামণি বলে তো সে খুব আকুল। বন্ধুদের কয়, আমার মতোন এমন পরহেজগার দায়িত্বশীল 888sport promo code না পেলে নাকি সে গার্মেন্টসের মালিক হতে পারতো না।’
‘শেফাক ভাইর বাপদাদার সহায়সম্পদ অর্থবিত্ত সব বৃথা তাহলে?’
এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে শায়লা। উত্তর দেয়, ‘রিফিউজিদের আবার অর্থবিত্ত কী? শেফাক সেলফ-মেইড ছেলে। কোনোরকমে পাস কোর্সে বিকম করে অভাবের তাড়নায় ব্যবসায় লেগে গেছে। সেখান থেকে এখন দর্জিদের রাজা বনে গেছে। হিহিহি। তবে হারামজাদা ফরেন ট্যুরের কতা কইয়া যেসব দেশে যায় সেখানে কিছু করে না তা আমি বিশ্বাস করি না। করুকগা। আমিই বা হেরে কি দিয়া কেয়ার করি? পোলা মাইয়া আছে না? হেহেহে।’
‘তাইলে অভিনয়টা ভালোই রপ্ত করেছিস, না?’
‘তোকেও বলি অভিনয়টা ফলাতে। নইলে আম-ছালা সব যাবে।’
‘ওকে। বাই।’
শায়লা নূরের সঙ্গে কথা বলে অনীতা রওনা দেন অফিসের উদ্দেশে। এর আগে পোষা বেড়াল জিনিয়াকে
খাইয়ে-দাইয়ে শুইয়ে দেন ওর বিছানায়। আজকাল বিড়ালের খাদ্যের দাম এত বেড়েছে যে হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না, রীতিমতো ঝলসে ওঠে। তবু একমাত্র পোষ্যের জন্য সব সই। কেননা, লাখ টাকার এ পার্সি বেড়ালটা ওর বড় প্রিয়!
অফিসে পা দিয়ে বুঝতে পারেন চারপাশে একটা থমথমে অবস্থা। সবার চেহারা গম্ভীর। কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলছে না। ফখরুল হোসেনের রুমে একবার উঁকি দিলেন। সুলেমান বলে উঠল, ‘স্যাররে পাইবেন না অহন। স্যার তো হাসপাতালে।’
‘মানে?’
‘আপনি জানেন না ম্যাডাম? চেয়ারম্যান স্যারের পেট খারাপ। তিনি ইউনাইটেডে ভর্তি রয়েছেন। আপনি জানেন না?’
সঙ্গে সঙ্গে অনীতা কবীরের মেজাজ বিগড়ে গেল। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল সম্পাদক ফখরুল হোসেনের ওপর। লোকটার আমেরিকান বউটা যে কারণে ওকে ছেড়ে গেছে সেটা একদম ঠিক। এসব আত্মকেন্দ্রিক পুরুষ মানুষের বেলায় এরকমটাই হওয়া উচিত।
নিজের রুমে বসেও শান্তি নেই। ওর কোম্পানির চেয়ারম্যান অসুস্থ আর এ-গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি ওকে জানাল না কেউ? অনীতা কবীর এ-অফিসের লোক-দেখানো ডেপুটি এডিটর?
এলোমেলো চিন্তায় মনটা যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ছে বারবার তখনই হন্তদন্ত হয়ে সম্পাদক ফখরুল হোসেন ওর রুমে ঢুকে পড়েন। এই প্রথম তিনি সরাসরি ওর রুমে এসে চেয়ারে বসে পড়লেন। মুখে বললেন, ‘কিছু খেতে দিন তো।’
সসলিজ বেকারি থেকে অনীতার কিছু কুকি আনানো রয়েছে। সেগুলো এয়ারটাইট কাচের বয়ামে যত্ন করে রাখা আছে। মাঝে মাঝে ক্ষুধা পেলে চায়ে বা কফিতে ডুবিয়ে একটা-দুটো কুকি খেয়ে নিলে বেশ ফুরফুরে লাগে নিজেকে।
সেখান থেকে প্লেটে করে চারটি কুকি নিজ হাতে বেড়ে দেন ফখরুল হোসেনকে। তারপর কলিংবেল টিপে পিয়নকে দিয়ে দু-কাপ মেশিনের কফি নিয়ে আসতে বলেন।
‘মামার এ-ব্যাপারটা অনেকদিন থেকে। কিছু খেলেই স্টম্যাক আপসেট হয়ে পড়ে। সিঙ্গাপুরে দেখিয়েছেন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। লন্ডনেও ডাক্তার দেখেছেন। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মামি থাকলেও একটা কথা ছিল। তিনিও নেই। বাচ্চারাও বিদেশি বিয়ে করে দেশে আর ফিরতে চায় না। ভোরবেলায় মামার ফোন পেয়ে নিয়ে এলাম ইউনাইটেডে। এখন ভালো।’
সব শুনে অনীতার মেজাজ পড়ে যায়। এরকম অসুখে ওর কী-ই বা করার আছে? তিনি নিজেও তো জানেন না রোগের গতিপ্রকৃতি। মাঝখান থেকে ওর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটত। যা গেছে ভাগ্নের ওপর দিয়ে গেছে ভেবে মনে মনে সুখ খুঁজে নেন।
এ-সময় সুইংডোর ঠেলে রুমে ঢুকে পড়লেন ইরফান রেজা। অনীতা কবীরের রুমে ফখরুল হোসেনের আয়েস করে কফিতে ডুবিয়ে কুকি খাওয়ার দৃশ্য এই প্রথম। কিছুটা ভড়কে গেলেন।
ফখরুল ওকে দেখেই হইহই করে উঠলেন, ‘আপনাকেই খুঁজছি। লিস্টটা তৈরি হয়েছে?’
‘জি। কালই হয়ে গেছে।’
‘একসেলেন্ট। তাহলে ম্যাডামকে লিস্টটা দেখিয়ে সোজা চলে আসুন আমার রুমে। অনেক কথা রয়েছে। আপনার লেখক-কবিদের ফিডব্যাক কেমন কালকের গেট-টুগেদার নিয়ে?’
‘স্যার, একটা অসাধারণ উদ্যোগ। তা কি ভোলার মতো? আজকাল 888sport live chatী-888sport live footballিকদের তো কেউ মর্যাদা দিতেই চায় না। যে লেখকসত্তা কাঙাল হয়ে রয়েছে বছরের পর বছর, সেখানে এতবড় প্রতিষ্ঠান এতটা নিস্বার্থ সম্মান জানালেন তাঁদের, তা কি ভোলার মতো কাজ স্যার?’
‘বসুন। আপনি আমাদের মুরুব্বি, লিটারারি কনসালট্যান্ট। দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেন? বসুন। আচ্ছা, আমাদের কালকের অনুষ্ঠানের কোন দিকটা সবার মনে ধরেছে বলে মনে হয়?’
‘প্রথমত ড্রেসকোড, দ্বিতীয়ত হারানো দিনের মেলোডি আর তৃতীয়ত রকমারি খাওয়া।’ চেয়ারে বসে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে মন্তব্য করেন ইরফান রেজা।
‘ওকে। আমি উঠলাম। আপনারা তালিকাটা নিয়ে চলে আসুন আমার রুমে। মনে রাখবেন, কাজের কিন্তু সবে শুরু। বাই।’ বলে এক পলক তাকালেন অনীতার দিকে। সব মেয়ের মতো অনীতাও পুরুষের এ-জাতীয় দৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত। তিনি চলে যেতেই মুখ ঘুরিয়ে ইরফান রেজাকে প্রশ্ন করেন, ‘দেখান তো দেখি কী করেছেন?’
‘সঙ্গে আনিনি ম্যাডাম। টেবিলে রয়েছে।’
‘নিয়ে আসুন।’
‘জি ম্যাডাম।’ বলে তিনি ছুটে গেলেন নিজের ডেস্কের দিকে।
পনেরো
অনীতা কবীর বিশজনের তালিকাটি ভালো করে দেখলেন। ঔপন্যাসিকদের ভেতর তানিয়া আসাদ, ফুয়াদ রহমান,
আল-মনসুরকে চিনতে পারলেও চতুর্থ নামটি তাঁর অজানা। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই সাদি রুহানি কে?’
‘খুব ভালো লিখছেন তিনি ইদানীং। 888sport appsি অভিবাসীদের নিয়ে ‘ছন্নছাড়া’ 888sport alternative linkটি খুব নাম করেছে। পড়তে দেবো আপনাকে ম্যাডাম। এটা ওর প্রথম 888sport alternative link।’
‘বয়স কত?’
‘বেশি নয়। তিরিশ-বত্রিশ।’
‘ওহ। 888sport live footballের দৌড় দৌড়াতে গিয়ে পালাবে না তো আচমকা?’ অনীতা কবীরের স্বরে সন্দেহ।
‘ঠিকই বলেছেন ম্যাডাম। অনেকেই মাঝপথে ঝরে যায়। অথবা প্রথমে যে চমক দিতে পেরেছিলেন তা আর রক্ষা করতে পারেন না পরে। মানুষ তাই ভুলে যায়। ওকে সেরকম মনে হচ্ছে না। একটু রিস্ক নেওয়া যেতে পারে।’
‘তা নিন। তবে বেশি বেশি এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে যেন মূল 888sport live footballের সরসতাকে ভুলে বসে না থাকে। সেদিকে খেয়াল রাখুন।’
‘জি।’
অনীতা কবীর এবার ছোটগল্পের তালিকায় চোখ ফেলেন। তমালকৃষ্ণ দত্ত, জামাল খান, সুমন বড়–য়া, জ্যোৎস্না খন্দকার ও শাহীন হকের নাম রয়েছে সেখানে। এই পাঁচজনের ভেতর সুমন বড়–য়াকে নিয়ে ওঁর সন্দেহ রয়েছে। এই গল্পকারের গল্প তিনি পড়েছেন। ম্যাদমেদা গল্প। আধুনিক গল্পের গতিপ্রকৃতি, ভাষার স্মার্টনেস কোনোটাই অনীতাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে তাঁর গল্প পড়ছেন। কোনো উত্তরণ নেই বলেই ওর ধারণা।
জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুমন বড়ুয়া তো সেই সমুদ্র-জীবনের রূপকার লেখক প্রয়াত অমল বড়ুয়ার আত্মীয়?’
‘জি।’ উত্তর দেন ইরফান।
‘ওকে বাদ দিন। আমি একটি নাম দিচ্ছি। রূপা আইচ পড়ে দেখুন তো? ভালো লাগলে ওকে ঢুকিয়ে দিন। আমরা আগামীদিনের লেখক চাই।’
‘ঠিক আছে ম্যাডাম। আর কোনো অসংগতি?’
‘দেখছি।’ বলে শিশু888sport live footballিক তিনজনের নাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে লাগলেন। মোজাম্মেল হক, আমির হোসেন, ঢালি মনোয়ার।
‘এঁরা কী লিখবেন?’
‘888sport alternative link অথবা শিশুতোষ বড়গল্প।’
‘ভালো করে দেখে নিয়েছেন তো? শিশু888sport live footballের বেশিরভাগ লেখক কিন্তু এখনোা বাঘ-ভালুক হাতি-ঘোড়া
পরী-জিনের গল্প বলে শিশুদের মোহিত করতে চান। ট্যাব, গেম আর এআইর যুগে লেখক যদি যুগোপযোগী না হন, যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে শিশুরা এগোবে কী করে? পরিবেশ, শিক্ষা, যৌনতা, আর্থ-সামাজিক বিপন্নতা বলে কিছু নেই? শিশু বলে সব কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখতে হবে নাকি? মোটেই ঠিক নয়।’
‘জি ম্যাডাম। বদলে দেব কোনো নাম?’
‘না। দরকার নেই। লেখক পাবেন কোথায়?’
‘কবিদের নাম নিয়ে কি কিছু বলবেন?’ একঝলক তাকিয়ে অনীতা উত্তর দিলেন, ‘ঠিক আছে। আমরা যে সমাজ গড়েছি লেখক-কবিদের তো এর ভেতরই থেকে চলতে হবে। সমাজ বুড়িগঙ্গার মতো পঙ্কিলতায় ভরা থাকলে সেখানে অক্সিজেন পাবেন কোথায় মাছরূপী লেখককুল। বেশি আশা করেও লাভ নেই।’ একটা দীর্ঘশ্বাস চাপলেন অনীতা কবীর।
একটু বাদে ইরফান রেজাকে তাড়া দিয়ে বললেন, ‘যান ঠিক করে নিয়ে আসুন। সম্পাদকের সঙ্গে তো বসতে হবে।’
‘স্যার আসলে কী চাইছেন?’
‘সেটা তো আমিও জানি না। আলী হোসেন সর্দার স্যার তো আগেভাগে সব কথা প্রাণ খুলে ঢেলে দিতেন সবাইকে। কোনোকিছুই পেটে রাখতে পারতেন না তিনি। কী করবেন, কী তাঁর – পরিকল্পনা সব। কিন্তু এখনকার উনি তো ভিন্ন। যেটুকু কাজ সেটুকুই বলেন। বাকিটুকু পেটে চাপা পড়ে থাকে। বুঝি না কিছু । এত চাপা মানুষ হয়?’ প্রশ্নটা যেন নিজেই নিজেকে করলেন। বিষাদের ছায়া চেহারায়।
ইরফান রেজা দেরি না করে দ্রুত চলে গেলেন। কিছু না বুঝে কাজ করার মতো এমন বিরক্তিকর কিছু নেই। এটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ইরফান রেজা। নিজেকে মাঝে মাঝে আহাম্মক লাগে। কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকে না কাছে।
কেন যেন মনে হয়, নিজের সঙ্গে গার্মেন্টসকর্মীর কোনো তফাত নেই। ভাগ্য ভালো যে, ওকে দেখে ওর দুই ছেলের কেউ পত্রিকার লাইনে পা দেয়নি। দুজনই ভিন্ন ভিন্ন চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। একজন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে এমএ করেছে। এখন প্রশাসনিক ক্যাডারের বিসিএস কর্মকর্তা। ছোটজন খুবই প্রতিভাবান। সে ইসলামিক টেকনিক্যাল কলেজ থেকে ট্রিপল ই-তে পড়াশুনো করে এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছে। শুরুতেই মোটা অঙ্কের বেতন। ছোটজনের ইচ্ছে বাইরে চলে যাওয়ার। সেই লক্ষ্য নিয়েই সে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
সবমিলিয়ে ওদের সুখের সংসার। শুধু ইরফান রেজার মনে সুখ নেই। আগের জীবনে যেভাবে দাপটের সঙ্গে চাকরি করেছেন, 888sport live football নিয়ে যা বলেছেন তা-ই আপ্তবাক্য হয়ে মুখে মুখে ফিরেছে তরুণদের ভেতর। কতজনের নাম সংস্কার করে হ্রস্ব করে দিয়েছেন। তাঁরা এখন নামজাদা কবি। কিন্তু ইরফান রেজাকে এখনো তোয়াজ করে চাকরি রক্ষা করতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবেন, চাকরির চাকরবৃত্তিতে আর মগ্ন হবেন না। কিন্তু ঘরে বসে কী করবেন? কে কথা বলতে চায় বেকার বুড়োর সঙ্গে?
একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে বুকের গহ্বর থেকে। শান্তনুকে ডেকে কাজটা বুঝিয়ে বলে ওঠেন, ‘দশ মিনিটের বেশি সময় দেওয়া যাবে না। অনীতা ম্যাডাম আর সম্পাদক সাহেবের সঙ্গে এখুনি বসতে হবে।’
‘অত তাড়াহুড়ো কেন রেজা ভাই?’
‘জানি না রে ভাই। কিছুই জানি না। এ-যুগে এসে মেশিন হয়ে পড়েছি। যা বলে, পিয়নের মতো মেশিনের মতো করে চলেছি। মাস শেষে বেতন পাই, সেটাই বড় তৃপ্তি।’ বলে হো-হো করে হেসে ওঠেন।
হাসির ভেতর চোরাকাটার মতো একধরনের বিমর্ষতা লুকিয়ে থাকে।
ষোলো
অনুষ্ঠানের দিন 888sport app ক্লাবের কোথাও নির্জন খন্দকারকে দেখা যায়নি। একবার ফখরুল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করার কথা মনে হয়েও শেষ পর্যন্ত ভুলে গেছেন অনীতা কবীর।
আজ আবার মনে হলো। সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারকমে তিনি সম্পাদককে ধরলেন, ‘হ্যালো?’
‘চলে আসুন ইরফান রেজাকে নিয়ে।’
‘আসছি। একটা কথা মনে হলো। তাই জিজ্ঞাসা করতে চাইছি।’
‘আপনার জিজ্ঞাসা। ভেরি ইন্টারেস্টিং। বলুন ম্যাডাম।’
‘আচ্ছা, নির্জন খন্দকারকে যে 888sport app ক্লাবের অনুষ্ঠানে দেখতে পেলাম না। গুডবাই বলে দিয়েছেন?’
একথা শুনে ফখরুল হোসেন হো-হো করে হেসে উঠলেন। অনীতা থমকে গেলেন। প্রশ্নটি কি খুব হাসির? এসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কত মানুষ স্বার্থের কারণে আসে-যায়, যাকে আজ ফুলের মালা গলায় দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে, তাকেই দুদিন পর ফাইনাল পেমেন্টের টাকা না দিয়ে অপবাদে, আর্থিক অভিযোগে জর্জরিত করে ঘাড়ধাক্কা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ – এ কি নতুন বিষয়? তাহলে হাসির কী হলো?
হাসি থামিয়ে ফখরুল উত্তর দিলেন, ‘নির্জন আমাদের জন্য একটি পাবলিকেশন হাউস তৈরিতে মগ্ন রয়েছেন। তিনি নিজেই এখানে না আসার কথা বলেছেন। অবশ্যই তিনি রয়েছেন আমাদের সঙ্গে।’
‘ওহ।’ মনে মনে বললেন, ‘ঈদ888sport free betর মতো আরেকটা লস প্রজেক্ট। বুঝবেন যখন ব্যবসায়ী মামা ঠেলা দেবেন।’
এসময় ইরফান রেজা আর শান্তনু বিশ্বাস এলেন ওঁর রুমে। বিশজন লেখক-কবির তালিকাটি অনীতার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘শান্তনু কি সম্পাদকের রুমে যাবে?’
‘প্রয়োজন নেই। আপনি তো রয়েছেনই। দরকার হলে ডাকবো। ডেস্কে থাকেন শান্তনু।’ বলে উঠে পড়লেন তিনি।
ফখরুল হোসেন ওদের অপেক্ষাতেই ছিলেন। একটু আগে কোম্পানির পিআরওর সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি এখনো পত্রিকা ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির বিষয়ে মাথা ঘামান না। তবে বাজারে জনশ্রুতি রয়েছে, ধীরে ধীরে তিনি এই গ্রুপ অব কোম্পানিজের পুরো দায়িত্বটাই পেয়ে যাবেন। চেয়ারম্যানের সন্তানদের মতিগতির ওপর নির্ভর করছে সব। বুড়ো সেভাবেই ভাবছেন।
অনীতা আর ইরফান রেজা বসতেই ফখরুল হোসেন কোনো ভনিতা না করে বলে ওঠেন, ‘এই বিশজনকে আমরা শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সালেহিন টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ হোটেলে চা-বাগানের নিবিড় প্রকৃতির সান্নিধ্যে রাখবো। তাঁদের কোনো পিছুটান থাকবে না। খাবেন-দাবেন আর প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াবেন। রুমে ফিরে শুধু লিখবেন। কোনো পিছুটান নয়। পনেরো থেকে বিশ দিন সময়। তাঁদের এর ভেতর একটি 888sport alternative link, একটি গল্প, একটি 888sport app download apk, একটি 888sport live কিংবা একটি শিশু888sport live football রচনা করতে অনুরোধ করবো। কী বলেন?’
অনীতা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘ওসব রাশিয়ার কট্টর বাম শাসনে হতো। সাজানো বাগানে সৃষ্টিশীলতা বাড়ে না স্যার। বরং কমে। রাশিয়ার বাম সরকার যখন লেখকদের নিবিড় প্রকৃতির মাঝে নিশ্চিন্ত নির্ভাবনাময় জীবনে রাখলেন তখন সেখান থেকে একজনও লিউ টলস্টয় বা আন্তন চেখভ বা পুশকিন তৈরি হননি। সেটা স্যার মনে রাখতে হবে।’
‘সেটার কারণ রয়েছে। সেখানে রাইটারদের জন্য সব
থাকলেও একটা জিনিস ছিল না। সেটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। হয়তো সেজন্যই হয়নি।’
অনীতা আর কথা বাড়ান না। তিনি ইরফান রেজার দিকে তাকান। ইরফান রেজা তাঁর সাদা চুলে হাত বুলিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ লেখক আটপৌরে জীবন যাপন করেন। চাকরি-বাকরি ব্যবসা করে খান। লেখা তাঁদের পেশা নয়। একধরনের মোহ বলতে পারেন। সব ছেড়ে একা একা চায়ের দেশে থাকবেন, সেটা আদৌ বাস্তবসম্মত নয় স্যার।’
অনীতা বললেন, ‘একাকিত্বের ব্যাপারটাও চিন্তা করতে হবে।’ সুর মেলান তিনি।
‘আমরা স্পাউজ রাখার অনুমতি দেব। তাতেও আপত্তি হবে? ভালো কিছু লিখতে হলে ভালো পরিবেশ তো চাই। আমরা সেই নিশ্চয়তা দিতে চাই লেখকদের। লেখকের সর্বোৎকৃষ্টটা আমরা আমাদের ঈদ888sport free betয় ছাপতে চাই। অ্যাপ্রোচটা কি খুব খারাপ?’
‘আরেকটা ব্যাপার রয়েছে স্যার।’ ইরফান রেজা অনীতার দিকে তাকিয়ে খানিকটা আমতা আমতা করে বলে ওঠেন।
‘কি ব্যাপার? বলুন। ডিসকাসন করুন। নইলে আমি বুঝব কি করে?’ সম্পাদক তাড়া লাগান ওকে।
‘স্যার এখানকার লেখকদের অনেকে দ্রুত লিখতে জানেন না। তাঁরা পাঁচ বছর লাগিয়ে একটা 888sport alternative link লেখাকে ক্রেডিটের ব্যাপার মনে করেন। যাঁরা দ্রুত লেখেন তাঁদের দিকে তাকিয়ে প্রায়ই নাক সিঁটকান। বলেন, সারাজীবনে একটা-দুটো বাঘ-সিংহ শাবক প্রসব করাই উত্তম। কুকুর-বিড়ালের মতো ঘনঘন বিয়োবার নাকি দরকার হয় না।’
এ-কথায় ফখরুল হোসেন ও অনীতা দুজনই হেসে ওঠেন প্রাণ খুলে। হাসি থামার পর ফখরুল বলেন, ‘যাঁর প্রতিদিন লেখার অভ্যেস নেই বা লেখেন না, তিনি কি করে লেখক হন? লেখা তো একটা বাতিকগ্রস্ত ভূতের মতো চেপে বসে থাকে লেখকের মাথায়। তিনি না লিখতে পারলে মানসিক রোগী হয়ে পড়বেন। সেটা আত্মহত্যার নামান্তর। যিনি সত্যিকার লেখক, লেখার টেবিলে বসলে প্রেমিকার সান্নিধ্যের থেকেও বেশি আনন্দ ও স্বস্তি বোধ করার কথা। এক-দুজন ব্যতিক্রম থাকতে পারেন। লিও টলস্টয়ের মতো, রবীন্দ্রনাথের মতো, শেকসপিয়রের মতো পরিমাণের বিচারে কজন লিখেছেন বলুন। অপারগ লেখকরাই এসব যুক্তি খাড়া করেন। কারণ তাঁরা লিখতেই জানেন না। ধান্দাবাজ লেখক-কবির কথা বাদ দিন।’
ওরা দুজন চুপ। বোঝা গেল তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল। এখান থেকে তিনি কিছুতেই সরবেন না। শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
একসময় অনীতা বললেন, ‘আমাদের কী করতে হবে স্যার?’
‘চিঠি দেবেন এই বিশজনকে। সম্মতি জানানোর জন্য সময় বেঁধে দেবেন। কেউ রাজি না হলে ওয়েটিং লিস্ট একটি তৈরি করে সেখান থেকে লেখক-কবি চুজ করে পুনরায় চিঠি দেবেন। আপনাদের হাতে চারদিন সময়। মনে রাখবেন, ঈদ888sport free bet বের করার একটা ডেটলাইন রয়েছে। সেটা কিছুতেই ক্রস করা যাবে না।’ কথায় আত্মবিশ্বাস ঝরে তাঁর।
‘কেন যেন মনে হচ্ছে স্যার, এই প্রজেক্টটা ফ্লপ হবে। লেখকদের মাথার ওপর দিয়ে যাবে এরকম প্রস্তাব। এখানকার মানুষ ঘরে বসে প্রিয় বিছানায় শুয়ে বউর হাতে প্রিয় খাওয়া খেয়ে ছেলেমেয়ের তত্ত্বতালাশ করে খানিকটা সময় পেলে তখন লিখতে বসেন। তাঁরা ফাইভ-স্টারে গিয়ে ঘোড়ারোগ বাধাবে কেন স্যার?’ যেতে যেতে অনীতা কবীর মন্তব্য করতে ছাড়েন না। এখন অনেকখানি জড়তা কেটে গেছে ওঁর। তাই কোনো কথা বলতে আর ভাবতে হয় না। আর যাঁর সঙ্গে রাতদিন কাজ করবেন, তাঁকে কথা বলতে যদি ভাবনাচিন্তা করতে হয় তো কাজ এগোবে কী করে?
‘ট্রাই করে দেখুনই না। আগেভাগে নেগেটিভ মন্তব্য করে লাভ কি?’ বলে তিনি ইন্টারকমে পিআরও সাহেবকে আসতে বললেন।
‘জি। চেষ্টা করছি।’ বলে ওরা দুজন বিদায় নেন।
সতেরো চিঠির খসড়াটা অনীতা বাসায় বসে তৈরি করে নিলেন।
এককালে খুব আগ্রহ ছিল লেখক হওয়ার। সেটা আর হলো না। কিন্তু 888sport live footballের পড়াশুনো ওঁর রয়েছে। ভালোমন্দ ব্যাপারটা সহজেই বুঝতে পারেন। ভালো গান, ভালো ছায়াছবি, ভালো 888sport live chatকর্ম ওঁর ভেতর কৌতূহলের জন্ম দেয়। চাইলেও এর থেকে নিস্তার নেই যেন। অনীতা খুব বুঝতে পারেন।
খসড়াটা বারবার করে কেটেছেঁটে যা দাঁড় করালেন তা বারবার পড়তে লাগলেন। কানে বাজলেই সামান্য অদলবদল করে ঠিক করে নিচ্ছেন। কাজটি করতে গিয়ে আনন্দ ও উত্তেজনা দুটোরই স্বাদ পাচ্ছেন তিনি।
প্রিয় ঔপন্যাসিক তানিয়া আসাদ,
প্রতিবারের মতো এবারো দৈনিক সূর্যের ঈদ888sport free bet বেরোবে। আমরা মনে করছি, আপনি এদেশে এসময়ের সেরা প্রতিনিধিত্বশীল ঔপন্যাসিক। তাই লোভ হয় যদি আপনার সর্বোৎকৃষ্ট 888sport alternative linkটি দিয়ে সাজাতে পারতাম আমাদের এই উৎসব-888sport free bet!
আমাদের মতো আপনিও কি ভাবেন দৈনিক সূর্যের ঈদ888sport free betর কথা?
তবে 888sport appর এই ইট-কাঠ-পাথরের রসকষহীন শুষ্ক বৈচিত্র্যহীন পরিবেশে কত আর লেখার বিফল প্রয়াস হবে লেখকের! তাই এবার আমরা ভাবছি 888sport appsের সবুজ-শ্যামলিমায় ভরা অরণ্যের রূপ-প্রকৃতির মাঝে আপনার প্রিয় লেখাটি জন্ম নিক।
চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান ঘেরা গভীর প্রকৃতির মাঝে গ্র্যান্ড সালেহিন ফাইভ-স্টার হোটেলে আমরা কিছুদিনের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সঙ্গে আপনার প্রিয় একজনকেও রাখতে পারবেন। কখনো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে, কখনো মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ঘন সবুজ কোঁকড়ানো চুলের মতো দেখতে
চা-বাগানে ঘুরে বেড়াবেন। হোটেলে এসে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটবেন রাজহাঁস হয়ে। রকমারি খাবারের ভেতর নিজের পছন্দের খাবারটি বেছে নেবেন, একাকী মধ্যাহ্নে ছায়াছবি দেখবেন। পড়তে ইচ্ছে হলে লাইব্রেরির ভেতর নিজের প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি হাতে নেবেন।
এটা কোনো ইউটোপিয়া নয়, পিছুটানহীন একজন লেখককে দিয়ে তাঁর অপার সৃজনীশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমাদের চাওয়া কেবল একটাই। আপনার মতো প্রিয় লেখকের সেরা 888sport alternative linkটি। দৈনিক সূর্যের ঈদ888sport free betর জন্য আমরা সেটাই চাই।
যদি সম্মতি পাই তবে মনে রাখবেন, আপনার সকল আরাম-আয়েসের দায়-দায়িত্ব আমাদের।
আমাদের আশাহত না করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ!
বেশ কবার কাটাছেঁড়া করার পর অনীতা কবীর প্রথমে সেটি পাঠিয়ে দিলেন ইরফান রেজার হোয়াটসঅ্যাপে। সঙ্গে মন্তব্য করলেন, ‘তাড়াতাড়ি বলুন চলবে কি না?’
পাঁচ মিনিটের ভেতর উত্তর এলো, ‘ম্যাডাম চলবে কেন? দৌড়াবে। খুব সুন্দর হয়েছে।’
‘ওকে।’
এবার তিনি ফখরুল হোসেনের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এভাবে লিখতে চাই স্যার। যদি আপত্তি না করেন।’
একটু বাদে উত্তর এলো, ‘অ্যাকসিলেন্ট। বাট ওনলি নভেলিস্টস? হোয়াট অ্যাবাউট পোয়েটস, স্টোরি-রাইটার্স অ্যান্ড আদার্স ম্যাম?’
‘স্যার, এটা একটা ড্রাফট। যখন ফাইনাল হবে তখন যিনি কবি তাঁর ক্ষেত্রে কবি বলা হবে। যিনি গল্পকার, তাঁকে গল্পকার বলেই সম্বোধন করা হবে। এটা ব্যাপার নয়।’
‘ত্হালে কালই ছেড়ে দিন। দেরি না করাই বেটার।’
‘জি।’
যথারীতি পরদিন দৈনিক সূর্যের প্যাডে বিশটি চিঠি কালার-কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করা হলো। চিঠির ভাঁজে রাখা হলো রজনীগন্ধার পাপড়ি। ছিটানো হলো সুগন্ধি। তারপর মেসেঞ্জার দিয়ে লেখকদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো সবকটি 888sport live footballবার্তা। সম্মতি জ্ঞাপন কিংবা অপারগতা প্রকাশের জন্য চিঠির নিচে রয়েছে ইরফান রেজার মোবাইল নম্বর।
লেখকদের চিঠি পাঠিয়ে ফখরুল ও অনীতার অস্থিরতা আর কাটে না। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন ফিডব্যাকের জন্য।
সম্পাদক তো টেনশনে প্রায় আধমরা। এতবড় একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। যদি মাঠে মারা যায়? এ-ব্যর্থতাকে কি আদৌ সহজভাবে নেবেন চেয়ারম্যান সাহেব? পুরো অফিস কি ভাববে? এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্ব?
চিঠি বিতরণের একদিন পর অনীতার মোবাইলে একটি কল এলো। অপরিচিত নম্বর। সাধারণত এ-ধরনের নম্বর তিনি ধরেন না। কিন্তু বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর অনেকটা কৌতূহলবশত নম্বরটি তিনি ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ঔপন্যাসিক তানিয়া আসাদ নিজের পরিচয় দিয়ে আবেগঘন গলায় অনীতাকে বলে উঠলেন, ‘আমি তো এ মাসেই চলে যেতে চেয়েছিলাম লন্ডনে। কিন্তু চিঠিটি পেয়ে আমি এতই আপ্লুত যে কী বলবো? থ্যাংক ইউ। আচ্ছা একটি কথা।’
‘বলুন।’
‘আমার স্বামী থাকেন লন্ডনে। আমি কি সঙ্গে আমার আম্মাকে নিতে পারবো?’
‘নিশ্চয়ই। আম্মার চেয়ে কে আর প্রিয়জন হতে পারেন ম্যাডাম?’
‘ওয়েল সেইড। ওয়েল সেইড।’ বলে রেখে দিলেন ফোন।
এ-সময় ওর রুমে ছুটে এলেন ইরফান রেজা। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম, কেল্লা ফতে।’ বলে একটু থামেন। কথাগুলো গুছিয়ে নেওয়ার জন্য হয়তো সময় নেন।
অনীতা তাড়া দেন সঙ্গে সঙ্গে, ‘ব্যাপার কি ইরফান সাহেব? খুলে বলুন।’
‘আমাকে এ পর্যন্ত যাঁরা রিং করছেন তাঁরা সবাই চিঠি পেয়ে প্রশংসায় রীতিমতো পঞ্চমুখ। কেউ কেউ তো সন্দেহে ভুগছেন। এত খাতিরের মানেটা কি? যাঁদের গোনায় ধরে না কেউ, ‘কিছু করো নাকি লিখে-লিখেই চলে’ ধরনের করুণামাখা জিজ্ঞাসা হরহামেশা যাঁদের নিয়ে, সেখানে সন্দেহ তো থাকবেই। শেষ পর্যন্ত পুরো বিলটা নিজের ঘাড়ে বর্তাবে না তো? প্রশ্ন কারো কারো।’
‘খুবই স্বাভাবিক, রেজা সাহেব। তাহলে বলতে চাইছেন সবাই সম্মত?’
‘এখন পর্যন্ত পনেরোজন আনকনডিশনালি রাজি। শুধু ফ্যাকড়া বাধিয়েছেন 888sport liveকার ব্যুরোক্র্যাট আবুল ফাত্তাহ।’
‘কি ফ্যাকড়া?’
‘উনি জানালেন, তিনি যেতে পারেন তবে দুটো রুমের বরাদ্দ তাঁকে দেওয়া লাগবে। কারণ তাঁর একমাত্র
মেয়ে-মেয়েজামাই ও নাতি এই শীতে দেশে এসেছে বেড়াতে। তাঁদের ছাড়া তিনি নড়বেন না।’
‘কী আশ্চর্য! এটা তো সুইজারল্যান্ডে বেড়ানোর প্রস্তাব নয়। একজন লেখককে লেখার পুরো ক্ষমতা কাজে লাগানোর একরকম প্রণোদনা। উনার মতো শিক্ষিত মানুষের তো এটা বোঝার কথা।’ বলতে বলতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।
‘এখন কী করবো?’
‘চলুন সম্পাদকের রুমে। তিনিই তো এসবের প্রণেতা। তিনি কী বলেন জেনে নিই?’
‘চলুন ম্যাডাম।’
সম্পাদক সব শুনে মুচকি হাসলেন। থুতনিতে আঙুল ঘষতে ঘষতে মন্তব্য করলেন, ‘তাহলে আমরা উতরে যাচ্ছি।’ কথা শেষ করে তিনি ইন্টারকমে কোম্পানির নতুন পিআরও জুবায়েরকে ডাকলেন। জুবায়ের সাহেব নাট্যাভিনেতা। টেলিভিশনের চেনা মুখ। সম্প্রতি তাঁর এখানে চাকরি হয়েছে। তারপর তিনি ডাকলেন বিজ্ঞাপন সেকশনের প্রধানকে।
অনীতা ও ইরফান রেজাকে বললেন, ‘একটুখানি বসুন।’
জুবায়ের স্টাইলিশ মানুষ। স্রিম-ট্রিম শরীর। থুতনির নিচে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। পত্রিকার বিজ্ঞাপন ইনচার্জ আবদুল লতিফ বয়স্ক মানুষ। মোটাসোটা ধর্মভীরু লোক। কখনো নামাজ কাজা হতে দেন না। খুব কাজের লোক। দৈনিক সূর্যের দুঃসময়ে তিনিই হাল ধরেছিলেন। যেজন্য কর্মচারীদের কারো চাকরি যায়নি।
সবাই উপস্থিত হওয়ার পর ফখরুল হোসেন বলে ওঠেন, ‘আপনাদের দুজনের ওপর নির্ভর করছে এই ঈদ888sport free bet প্রজেক্টের সাফল্য। আপনি জুবায়ের সাহেব একটা বিষয় মনে রাখবেন, এদেশে এর আগে কোনো করপোরেট হাউস 888sport live chatী-888sport live footballিককে অতটা নিঃস্বার্থ সম্মান দেখায়নি। আমরা বন্ধ দরজাটা ভাঙতে চাইছি। নতুন উদাহরণ তৈরি করতে চাই সমাজে। সেটাকে হাইলাইট করতে হবে। প্রতিটি মিডিয়া হাউস যেন ব্যাপরটা তুলে ধরে। সেটা এনশিউর করবেন। তাছাড়া অ্যাডিশনাল টাস্ক হচ্ছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে আপনিও থাকবেন। লেখকদের যাওয়া-আসাসহ তাঁদের সার্বক্ষণিক সুখ ও নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখা আপনার কাজ।’
‘জি স্যার।’
এবার ফখরুল হোসেন মুখ ঘোরালেন বিজ্ঞাপন ইনচার্জ আবদুল লতিফের দিকে। সোজাসুজি বললেন, ‘আপনাকে আর কি বলবো স্যার? দৈনিক সূর্যের সুনাম এখন সুধীমহলে। সবাই জানেন এটা ভদ্রলোকের পত্রিকা। এরা প্রতিভা বোঝে। ধান্দা নয়। আপনি শুধু বিজ্ঞাপনের ফুল কুড়িয়ে নেবেন এই সুনাম কাজে লাগিয়ে। পারবেন তো স্যার?’
‘আমার কাজই তো এটা।’ হেসে ফেললেন লতিফ সাহেব।
‘এবারের ঈদ888sport free betর জন্য পঞ্চাশ লক্ষের বিজ্ঞাপন চাই স্যার।’ মুচকি হাসলেন ফখরুল হোসেন।
‘টু অ্যামবিশাস স্যার। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। আপনি যেভাবে পত্রিকাটিকে সামনে নিয়ে আসছেন, হতে পারে স্যার। সম্ভব, পসিবল স্যার।’ বিড়বিড় করে উঠলেন লতিফ সাহেব।
‘সবই ওপরওলার ইচ্ছা। কি বলেন?’ বলে হো-হো করে হেসে ওঠেন সম্পাদক ফখরুল হোসেন।
অনীতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন বসের দিকে। এই লোকটিকেই তিনি অযোগ্য ভেবেছিলেন একসময়? যত দেখছেন তত বিস্মিত হচ্ছেন। নিঃস্বার্থ সংস্কৃতিচর্চা করছেন একদিকে। দেখে মনে হচ্ছে, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছেন। কোম্পানিকে বুঝি ডুবিয়ে ছাড়বেন। পরক্ষণে লোকটির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা মুগ্ধ করছে ওঁকে। একই লোক দুই ভিন্ন ধারা সামলে চলছেন, ভাবতে গিয়ে বারবার আশ্চর্য হচ্ছেন অনীতা।
ওঠার সময় ইরফান রেজা প্রশ্ন করলেন, ‘আবুল ফাত্তাহর ব্যাপারটা স্যার কী করবো?’
‘এটাও বলে দিতে হবে আমাকে? উনাকে বুঝিয়ে বলুন। উনি একজন মেধাবী মানুষ। অবশ্যই যুক্তি দিতে পারলে মেনে নেবেন।’
‘জি।’ বললেন বটে। কিন্তু কীভাবে এ-ধরনের ভিআইপিকে পোষ মানাবেন বুঝতে পারেন না। রাগানোও চলবে না। আবার বেশি বলে বিরক্ত করা যাবে না।
কী মুশকিল!
আঠারো
রাত বারোটায় শায়লা নূর রিং দিলেন অনীতাকে। অনীতার ঘুম চেয়েচিন্তে হাত পেতে নিতে হয় না। চোখ বোজামাত্র শ্যামল মেঘের মতো ঘুম চলে আসে চোখে। কিন্তু ঘুমানোর আগে হয় গান নয়তো বই পড়তে হয় ওঁর। এ-দুটোর যে-কোনো একটি হাতে পেলেই আধঘণ্টার ভেতর ওঁর আর খবর থাকে না।
মাত্র দশ মিনিট কাটল একটা পুরনো ঈদ888sport free betয় চোখ বুলাতে গিয়ে। তখনই বান্ধবীর ফোন।
‘অত রাতে আবার কি ম্যাডাম? শেফাক ভাই কি দেশে নাই?’
‘আরে না। সুলতান তো দেশে এখন। পিঙ্ক সিটির সামনে সামনাসামনি পড়ে গেলাম। বলল, তোর সঙ্গে দেখা করবে।’
‘কি বলিস?’ ধক্ করে উঠল ওঁর ভেতরটা। এদ্দিনে ওর চেহারাটাই ভুলে বসে রয়েছেন অনীতা। জোর করেও মনে করতে পারছেন না। অথচ সেই পুরনো 888sport sign up bonus এখন ওঁকে দগ্ধ করতে এগিয়ে আসছে!
‘তোর সুলতানকে আশকারা দেওয়ার কোনো মানে হয় না। পরে কথা হবে। আমি এখন ঘুমাবো।’
‘শোন, আমাকে ভুল বুঝিস না। সে-ই তো একথা বলল।’
অনীতার শোনার সময় নেই। দেরি না করে ঘুমের বরণডালা মাথায় তুলে নিলেন। এক ঘুমে সকাল আটটা। পোষা বেড়াল জিনিয়াও ওর সঙ্গে ব্লাংকেটের তলায় ঘুমে নেতিয়ে পড়ে।
তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে নিজের ফ্ল্যাট থেকে করিডোরে এসে তালাবদ্ধ করে নেন মূল দরজা। তারপর সোজা লিফটের ভেতর নিজেকে সেঁধিয়ে দেন। যাওয়ার আগে জিনিয়াকে আদর দিতে ভোলেন না তিনি।
অফিসে এখন তুলকালাম অবস্থা। কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। শ্রীমঙ্গলে চলছে লেখকদের মিলনমেলা। এ নিয়ে অনীতার মন থেকে সন্দেহ আর কাটছে না। খচখচ করছে ভেতরটা। লেখকের সুখ-সুবিধার জন্য যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তা দৈনিক সূর্যের বিজ্ঞাপন থেকে কখনো উঠে আসবে কি না এ-বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ওঁর। এসব উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ওদের চাকরি-বাকরি ও সুযোগ-সুবিধায় থাবা বসাবে না তো?
আজ 888sport app শহরে অনেক জ্যাম। অফিসে পৌঁছতে সময় নেয়। টেবিলে ব্যাগ রেখে নিজের চেয়ারে বসার আগেই ফখরুল হোসেনের ফোন, ‘তাড়াতাড়ি আসুন।’
ছুটে যান অনীতা। গিয়ে দেখেন ইরফান রেজা আগে থেকেই বসে রয়েছেন সেখানে। মুখ গম্ভীর।
অনীতা চেয়ারে বসতেই ফখরুল হোসেন বলে উঠলেন, ‘আবুল ফাত্তাহ সাহেবকে কি এসব শোভা পায়?’
‘কি? আমি তো কিছুই জানি না স্যার।’ আকাশ থেকে পড়লেন অনীতা।
‘এই যে ইরফান রেজা সাহেব, বলুন।’
‘ম্যাডাম, ফাত্তাহ সাহেব সারাজীবন এত বড় চাকরি করেছেন। অথচ তিনি এরকম একটা কাণ্ড ঘটাবেন, ভাবিনি।’
‘অনুযোগ সত্তে¡ও মেয়ে-মেয়েজামাই আর নাতিদের নিয়ে গেছেন রিসোর্টে? আমাদের পরামর্শ মানেননি।’ প্রথমে যা মনে এলো তা-ই বলে দিলেন।
‘না, না। তিনি তো সেটা মেনেছেন। শুধু স্ত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। সেটাও বড় কথা নয়। তিনি ঘটনা ঘটিয়েছেন তানিয়া আসাদের সঙ্গে।’
‘মানে?’
‘জি ম্যাডাম। উনি স্ত্রীর গহনা চুরি করে চা-বাগানে ঘোরার নাম করে তানিয়া আসাদকে প্রেম নিবেদন করে বসেন। নিজেকে গাছের আড়ালে লুকিয়ে সেই চিত্র মোবাইলে ধারণ করেন কবি তন্ময় কবীর। তিনি সেটি পাঠিয়েছেন আমাকে।’ বলে ইরফান রেজা নিজের মোবাইলটি অনীতার দিকে এগিয়ে দেন।
তিনি সেই ভিডিও-ক্লিপ না দেখতে মাথা নেড়ে অসম্মতি জানান। মুখে বলেন, ‘এগুলো দেখার কি আছে। নিজের কাছেই রাখুন।’
‘আগে দেখুন না। প্রবলেম কী? এগুলো লেখকদের রোমান্টিক-পারস্যুটের অংশ। কে জানে, এগুলো একদিন ইতিহাস হয়ে যেতে পারে ভবিষ্যতে?’
সঙ্গে সঙ্গে অকালপ্রয়াত বোহেমিয়ান কবি আবুল হাসান ও রূপবতী কবি অধ্যাপক সুরাইয়া খানমের কথা মনে পড়ে গেল অনীতার। ইংরেজির ছাত্রী শায়লা নূরের কাছে সেসব গপ্পো অনেক শুনেছেন এককালে। শুনে শুনে মন খারাপ হতো তখন।
সম্পাদকের অনুরোধে অনীতা মোবাইল স্ক্রিনে দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করলেন। ওঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল বুড়ো-বুড়ির প্রণয় নিবেদনের ছবি।
ফাত্তাহ সুটেড-বুটেড। চোখে কালার চশমা। মাথায় দামি উইগ। ক্লিন-শেভড চেহারায় একটা আগ্রাসী ভাব। কোমর ও হাঁটুব্যথার কারণে একটু বাঁকা হয়ে হাঁটতে হয় তাঁকে। নিজে থেকে অনীতাকে একবার বলেছিলেন সে-কথা। বাধ্য না হলে সহজে বেরোতে চান না কোথাও। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিতে হয় বলে সময় দিতে পারেন না অনেককে।
সেই মানুষটি চা-বাগানের মাঝখানে ভাঙা হাঁটু ও কোমরের ওপর ভর দিয়ে আধভাঙা অবস্থায় আঙুলের ফাঁকে কিছু একটা ধরে রেখে তানিয়া আসাদকে বলে চলেছেন, ‘এ হলো চায়ের ফুল। সচরাচর মেলে না। আমি একটি খুঁজে পেলাম। আমি ফুলটি আপনাকেই দিতে চাই। কেননা আপনার হাসি আমার ভালো লাগে। আপনার উচ্ছ্বাস আমায় অনির্বচনীয় আনন্দ দেয়। আপনার কথার প্রতিটি শব্দ 888sport app download apkর স্বাদ দেয় আমায়। গ্রহণ করুন সুন্দরী।’ এ-বয়সে যা হয়, ফাত্তাহর গলার স্বর অসম্ভব বাজখাঁই শোনায়। উত্তরে তানিয়া আসাদ হেসে আকুল। তাঁর শিফন শাড়ি শীতের হিমেল হাওয়ায় ছিপছিপে গায়ে থাকতে চাইছে না। মাথার দুদিকে রং করা নাতিদীর্ঘ পাতলা এলো চুল যুবতীর ঘন এলোকেশের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ফর্সা চামড়া বয়সের চাবুক খেয়ে কুঁচকে গেলেও ক্রিম-লোশনের যতেœ বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। চোখের দৃষ্টি ম্রিয়মাণ দেখালেও ফাত্তাহর সামনে জ¦লে উঠতে চাইছে বারবার, তারুণ্যের পুরনো নেশায়।
অনীতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘এ-ভিডিওটা এত কাছ থেকে তন্ময় তুলে ফেললেন? ওরা টের পেল না? আমি স্কেপটিক ব্যাপারটা নিয়ে।’ সরাসরি নিজের মতামত তুলে ধরেন অনীতা।
‘কি জানি ম্যাডাম।’ ইরফান রেজার উত্তর।
সব দেখেশুনে ফখরুল হোসেন হেসে ওঠেন শব্দ করে। কফির কাপে কুকি ডুবিয়ে একটুকরো মুখে পুরে মন্তব্য করলেন, ‘এসব আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে, লেখা এগোচ্ছে কি না সেটা এনশিউর করা। ইরফান সাহেব আর জুবায়ের সাহেবদের দলবলের এটাই মুখ্য কাজ। সবার ভালোটা আদায় করে নেওয়া। আয়েসের ভেতর থেকে লেখক যেন কিছুতেই ভুলে না বসে থাকেন তিনি প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয়ত লেখক। এখানে এ-সম্মানে ভ‚ষিত হয়েছেন শুধুমাত্র তিনি লেখক বলেই। অন্য কোনো কারণে নয়। সুতরাং দায়িত্বে অবহেলা নয়। এ-মেসেজটা বিনীতভাবে রিলে করবেন আপনারা।’
‘জি স্যার।’
‘আর এসব বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন না। ওঁদের প্রবলেম ওঁদেরই সামাল দিতে দিন। আবেগের মাঝখানে তারকাঁটার বেড়া দেওয়া আমাদের কাজ নয়।’
‘জি।’
একসময় অনীতা ও ইরফান রেজা বেরিয়ে এলেন সেখান থেকে।
অনীতা নিজের রুমের কাছাকাছি আসতে না আসতে ওর পিয়ন বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম, আপনার একজন গেস্ট এসেছেন। আমি ওয়েটিংরুমে বসতে বলেছিলাম। তিনি শোনেননি। তিনি জোর করে আপনার রুমেই বসে রয়েছেন। তিনি নাকি আপনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, ম্যাডাম।’ কাঁচুমাঁচু হয়ে পিয়ন শঙ্কু একথা জানায়।
শুনে বুকটা ধক্ করে ওঠে ওঁর। রুমে পা দিয়ে ঠিক যা ভেবেছিলেন তাই দেখতে পেলেন। সুলতান বসে রয়েছে ওর টেবিলের একপাশে। গায়ে জিন্সের জ্যাকেট। আগের মতোই মাথাভরা চুল। মোটা পুরু আধপাকা গোঁফ। চুলেও পাক ধরেছে, লুকানোর কোনো স্পৃহা নেই, বোঝা যায়। ডান হাতের কব্জিতে শোভা পাচ্ছে শিখদের মতো স্টিলের বালা আর মাজারের অনেকগুলো সুতো। ঢলঢল চোখে আর মাংসল মুখে আগের মতোই হিংস্রতার সঙ্গে মমতা জড়ানো।
নিজের চেয়ারে বসে প্রথমেই প্রশ্ন করেন অনীতা, ‘তুমি কি করে সাহস পাও আমার সঙ্গে দেখা করার?’
‘তোমাকে ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয় অনি। তাই ফিরে এলাম।’
‘আমি তোমার চেহারাটাও ভুলে গেছি।’
‘তুমি কি আর কারো সঙ্গে এনগেজড?’
‘সেটা জানার কি কোনো অধিকার তোমার রয়েছে?’
‘ওহ।’ একটু থামে। তারপর আবার প্রশ্ন করে, ‘কোনোই অধিকার নেই?’
‘না।’
‘কেন?’
‘সেটা তো বহু আগে ভাবা উচিত ছিল। যখন শাহবাগে ফুলের দোকানের সামনে একটি মেয়েকে দাঁড় করিয়ে রেখে আর কখনো ফিরে এলে না, তখন।’
‘তুমি কি সত্যি সত্যি জানো কেন ফিরে আসতে পারলাম না? গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল ওদের ডেরায়। সাংবাদিক হিসেবে আমার লেখা নাকি ওদের সরকারের বিরুদ্ধে যায়, সেজন্য। আমি টের পেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলাম। ফিরতে পারিনি তোমার কাছে।’
‘দারুণ নাটক! আমার তিন লাখ টাকা? সেটা কি তখন তাদের ভেট হিসেবে দিতে হয়েছিল?’
‘ওই টাকা দিয়ে আমি দেশ ছেড়েছিলাম।’
‘বিদেশে গিয়ে যে বিয়ে করলে? সেটা কি আমায় ভোলার জন্য? প্লিজ তুমি যেতে পারো।’
‘ওখানে বিয়ে করেছি সত্যি। কিন্তু সেটা পার্মানেন্টলি থাকার জন্য। আর কিছু নয়।’
‘দ্বিতীয় বিয়েটা?’ অনীতার কণ্ঠে শ্লেষ।
‘প্লিজ। আমি এতকিছুর উত্তর দিতে পারবো না। আমি তোমাকে ফোন করিনি, যোগাযোগ রাখিনি। সব মানছি। এখন সব পিছুটান ছিন্ন করে তোমারই কাছে এসেছি। নেবে আমায়? আমি আগের মতো হিংস্র আর স্বার্থপর হতে পারি না এখন। সময় আমাকে অনেক বদলে দিয়েছে। আমি তোমাকে নিয়ে বাকি জীবনটা বাঁচতে চাই। সুযোগ দেবে?’
‘সম্ভব নয়। তুমি যেতে পারো। ভুলকে সাদরে কোলে নিলে পুনরায় ভুলই হয়। তুমি যেতে পারো।’ ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিরাসক্ত গলায় কথা বলে চলেছেন অনীতা।
সুলতান উঠে দাঁড়ালেন। করুণ চোখে ওঁকে কিছুক্ষণ দেখলেন। সহসা বলে উঠলেন, ‘একটা সেলফি নেব? শেষ 888sport sign up bonus।’
‘নো। প্লিজ গেট লস্ট।’
দুজনার ভেতর আর কথা এগোল না। সুলতান পরাজিত এক মানুষের মতো ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
অনেকদিন পর অনীতা কবীরের আজ কান্না পেল। ফুলের দোকানের সামনে অসহায় রিক্ত মেয়েটির কথা খুব করে মনে পড়ছে আজ, সুলতান নয়!
উনিশ
‘যাবেন?’ রাত-বিরাতে এমন প্রশ্ন আর কেউ করলে অনীতা কবীর পুলিশ ডাকতেন ট্রিপল নাইনে ফোন করে। কিন্তু তিনি ফখরুল হোসেন। শুধু বস নন, বেশ দক্ষ একজন সম্পাদক। ইদানীং এ-বিশ্বাস দৃঢ়মূল হচ্ছে ওঁর ভেতর। ধীরে ধীরে মাথা নত হয়ে আসছে তাঁর পারঙ্গমতার কাছে। সংস্কৃতি ও বাণিজ্য দুটো আলাদা জগৎকে একসঙ্গে মিশিয়ে লেজে-গোবরে না করেও যে এগিয়ে যাওয়া যায়, এ-লোককে দেখে-শুনে সে-কথাই বিশ্বাস করতে হচ্ছে। কাজটা যে সহজ নয় পোড়খাওয়া সবাই তা জানেন।
‘কোথায় স্যার?’ আকাশ থেকে পড়ার ভান অনীতার কণ্ঠের ওঠানামায়। পাশে বসা পোষা বিড়াল জিনিয়া ওঁর দিকে তাকিয়ে। যেন কত বোঝেন তিনি!
‘কাল সকালে আমি, আপনি আর ইরফান রেজা একটু শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সালেহিনে যেতে চাইছি। প্র্যাকটিক্যালি যাওয়া উচিত নয় কি আমাদের ম্যাডাম?’
‘অবশ্যই। সেক্ষেত্রে আপনি আর ইরফান রেজার গেলেই তো চলে।’ অনীতার মন্তব্য।
‘আপনি এ-প্রজেক্টের পার্ট অ্যান্ড পার্সেল একজন কর্মকর্তা। আপনাকে ছেড়ে কীভাবে যাই বলুন?’
‘হয়েছে। বুঝতে পারছি। যাবো। বাসা থেকে?’
‘ইয়েস। ভোর ছটায় রওনা দেব। বাই। গুডনাইট।’
‘শুভরাত্রি।’
ভোরবেলায় ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে অনীতা পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে জিনিয়াকে শূন্য ঘরে ছেড়ে দেন । মুখে বলেন, ‘একদম দুষ্টুমি করবি না। লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবি। খাবি আর ঘুমাবি। কোনো হুলো ডাকলেও জানালার কাছে দৌড়াবি না। বুঝলি?’ কিছু না বুঝে জিনিয়া ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অনীতা বুকের কাছে ওকে জড়িয়ে নিয়ে আদর দেন। একসময় ফখরুল হোসেনের রিং পেয়ে বেরিয়ে পড়েন।
ভোরে রওনা দিয়ে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছতে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লেগে গেল ওঁদের। গাড়ি থেকে নেমে সিকিউরিটির কাজ সম্পন্ন করে হোটেল লবিতে পা রাখতেই পিআরও জুবায়ের সাহেব ফুল দিয়ে ওঁদের স্বাগত জানায়। পাশে থাকা হোটেল ম্যানেজার গদগদ হয়ে ওঠেন ওঁদের আগমনে।
‘স্যার, আপনারা কি এখন রুমে যাবেন?’ ম্যানেজারের প্রশ্ন।
‘না। আমরা আপনাদের কনফারেন্স রুমে যাচ্ছি। বলেন নাই জুবায়ের?’ জুবায়েরের ওপর ফখরুল হোসেনের চোখ। হোটেলের বেশ কজন অ্যাটেন্ডেন্ট মহিলা ওকে ঘিরে রয়েছে।
‘জি স্যার। সেখানে সবাই অপেক্ষা করছেন আপনাদের জন্য। সব রেডি।’
‘তাহলে চলুন সেখানে।’ তাড়া দেন সম্পাদক মহোদয়।
কনফারেন্স রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে হইহই করে উঠলেন। এ যেন সমবেত উল্লাস ও কৃতজ্ঞতার এক চিত্র। সবইকেই এখানে বেশ প্রাণবন্ত ও উচ্ছল দেখাচ্ছে। এটাই চেয়েছিলেন ফখরুল হোসেন। যে প্রাণাবেগ লেখককে লিখতে সহায়তা করে, সেটি কোনো কারণে স্তিমিত হয়ে পড়লে লেখক আর কখনো সৃজনশীল কাজে সফল হতে পারেন না। হলেও পাঠক বিরক্ত হন। বুঝতে পারেন, তিনি ফুরিয়ে গেছেন। তাই চিরায়ত-চিরনতুন শিশুসুলভ সেই প্রাণসত্তাকে লেখকের মাঝে জাগিয়ে রাখতে হয়। কাজটা বেশিরভাগ সময়ে তিনি নিজে করেন। এবার দৈনিক সূর্যের টিম চেষ্টা করছে। কে জানে তাতে লেখকের সৃজনশীলতার জ¦ালামুখ খুলবে কি না।
ফখরুল হোসেন এ-কাজটাই এগিয়ে নিতে চেয়েছেন।
‘কেমন রয়েছেন আপনারা?’
সামনের সারির শিশু888sport live footballিক মোজাম্মেল হক বলে ওঠেন, ‘ভীষণ উদ্দীপিত বোধ করছি। এদেশে যে এভাবে একজন লেখককে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া যায় তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল এদ্দিন। সম্মান ও পরিবেশ আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকদূর বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনাদের থ্যাংক ইউ।’
‘আপনারা সবাই একমত স্যার?’
সবাই একসঙ্গে বলে ওঠেন, ‘একমত।’
ঔপন্যাসিক আল মনসুর একটু লাজুক প্রকৃতির মানুষ। বয়স পঞ্চাশের ঘরে। ব্যাংকে চাকরি করেন। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘তিরিশ বছর পর আমি পানিতে নেমেছি কাল। তাও শীতের সন্ধ্যায়। কুসুমগরম পানিতে সাঁতার কাটতে কাটতে সহসা মনে হলো, আমি একটা নয়, পরপর দুটো 888sport alternative link লিখতে পারবো। এক উদ্দীপক আবেগ আমায় তাড়া করছিল।’
গল্পকার তমালকৃষ্ণ দত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিনীত ও সুশৃঙ্খল তাঁর প্রকৃতি। তাঁকে কিছু বলতে বলায়
শান্ত-সমাহিত গলায় বললেন, ‘এদেশে লেখালেখিটা একেবারেই পরিত্যক্ত টাইপের ঐচ্ছিক বিষয়, কোনোক্রমেই অপরিহার্য নয়। এখানে এসে প্রথমবার মনে হলো, এ-সমাজে আমরাও অপরিহার্য। আমাদের ছাড়া সমাজ কোনোদিন এগোয়নি। এগোবেও না। ‘মড়ার আবার জাত কি’ ধরনের নির্ভীক প্রশ্ন কেবল লেখকরাই করতে পারেন সমাজকে।’
রুমের সবাই চুপ। কথাগুলো উপলব্ধিতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই। ফখরুল হোসেন এবার অনীতা কবীরের দিকে তাকলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ম্যাডাম কিছু বলবেন?’
অনীতা কনফারেন্স টেবিলে ফখরুল হোসেনের পাশে বসা। এরপর ইরফান রেজা। একই সারিতে রয়েছেন পিআরও জোবায়ের ও বিজ্ঞাপন ইনচার্জ আবদুল লতিফ। সামনে উচ্ছল-উৎফুল্ল লেখকবৃন্দ।
অনীতা টেবিলে রাখা মুক্ত মাইক্রোফোনটি হাতে নিয়ে সবাইকে প্রশ্ন করেন, ‘একটা বিষয় কি নতুন করে বুঝতে পারছেন?’
সমবেত সবাই পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কী?’
‘লেখালেখিটা যে একটা সিরিয়াস কাজ সেটা? অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, বর্তমানকে ভবিষ্যতের কাছে সমর্পণ করা যে সত্যি কঠিন ও দায়িত্বশীল এক চর্চা তা কি অনুধাবন করতে পারছেন আপনারা?’ প্রশ্নটা করে পরক্ষণে মনে হলো, এ-ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক উচিত হয়নি অনীতার। এতে ওঁর একধরনের অনধিকার চর্চা বা প্রগলভতা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি চটজলদি কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলেন, ‘আপনারা সবাই এক-একজন প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ মানুষ। আপনাদের যৎকিঞ্চিৎ আনন্দ দিতে পারছি, সেটাই আমাদের পরম পাওয়া। সবাই ভালো থাকুন, লেখার মাধ্যমে আমাদের সবাইকে উজ্জীবিত রাখুন সবসময়। এই আশা রইল।’
কথা888sport live footballিক আদিত্য সৈয়দ উত্তর দেন, ‘888sport live football হচ্ছে এক বিশাল সমুদ্র। প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় লক্ষকোটি মানুষ এর ব্যবচ্ছেদ করে চলেছেন। আমরা সেখানে সামান্য বুদ্বুদের মতো অকিঞ্চিৎকর। নিজের ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করে চারপাশের বিশালতাক উপলব্ধির চেষ্টাই তো 888sport live football ম্যাডাম। সেখানে দুর্বিনীত হওয়ার কোনো স্থান নেই। লেখকের ইগো থাকে, অহংকার নয়। দুর্বিনীত লেখক মূলত একজন মূর্খ মানুষ। তিনি গল্প-888sport app download apk-888sport liveের একটি চরণও লেখার যোগ্যতা রাখেন না। আমি তাই বিশ্বাস করি।’
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথাবিনিময়ের পর ইরফান রেজা জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাদের আরাধ্য লেখাটি কি পাচ্ছি স্যার?’
সবাই একসঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘অবশ্যই।’
সবার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের আগে ফখরুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বসলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। সবার মনেই এক কৌতূহল – লেখকরা এতই গুরুত্বপূর্ণ সমাজে? অনেক কথা হলো তাঁদের সঙ্গে। এরকম উদ্যোগের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে কি না তা জানতে চান সবাই। ফখরুল হোসেন হাসতে হাসতে উত্তর দেন, ‘শুধুই নতুনত্বের তৃষ্ণা। হাহাহা।’
‘বাণিজ্য?’ সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা।
‘বাণিজ্য চাইলে কি এরকম রিস্কি জায়গায় কেউ ইনভেস্ট করে, বলুন? সমাজের সবচাইতে পরিশীলিত, সবচাইতে অগ্রগ্রামী দলকে আর কতকাল আমরা এড়িয়ে যাবো বলুন? সেই জায়গা থেকেই আমাদের এ-আয়োজন।’
‘এসব করে কি সফল হবেন অর্থাৎ 888sport live chatী-888sport live footballিকদের কি তাঁদের হৃতরাজ্য ফিরিয়ে দিতে পারবেন সত্যি সত্যি?’
‘তা বলতে পারবো না। তবে আঁচড় তো কাটলাম একটা। সেটাই বা মন্দ কী?’ একথায় সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। ফখরুল বেরিয়ে এলেন সাংবাদিকদের ঘেরাটোপ ছেড়ে।
দুপুরে লেখকদের সঙ্গে বুফে-লাঞ্চ সেরে ওঁরা আর দেরি করেননি, প্রাডোতে চড়ে ছুটতে শুরু করেন 888sport appর উদ্দেশে। বিকালের দিকে চা-তেষ্টা পাওয়ায় একটি হাইওয়ে হোটেলে ঢুকে ওঁরা চা ও কিছু স্ন্যাকসের অর্ডার দিলেন। ফখরুল হোসেন ইরফান রেজার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘888sport live football সম্পাদকের কাজটা থেকে আপনাকে অব্যাহতি দিতে চাই। কী বলেন?’
নিমেষে মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেল ইরফান রেজার। এ-বয়সে চাকরি হারানো বউ হারানোর মতোই বেদনাদায়ক। ভুক্তভোগী মাত্র সে-কথা বুঝতে পারেন। অবশ্য সরকার নির্ধারিত অবসরকালীন বয়স তো কবেই চলে গেছে তাঁর। তা সত্ত্বেও সংসারে আমৃত্যু স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার সুখ কি অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয়? পৃথিবীতে যত আনন্দধারা, এর ভেতর অর্থনৈতিক আনন্দ সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকা সর্বোত্তম। সেটাই কেড়ে নিতে চাইছেন ফখরুল হোসেন?
‘না, ভয় পাবেন না। আমি আপনাকে আমাদের সূর্য প্রকাশনের দায়িত্ব নিতে বলছি।’
‘নির্জন খন্দকার?’
‘ও তো মার্কেটিংটা দেখবে। আপনি ওভারঅল প্রকাশনাটা সুপারভাইজ করবেন। আপনি আপনার কাজেই থাকবেন।’
‘কবে থেকে কাজ শুরু হবে স্যার?’
‘চেয়ারম্যান সাহেব তো চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় রয়েছেন। তিনি ফিরলেই আমরা এ-প্রজেক্টটি উদ্বোধন করাবো তাঁকে দিয়ে। কাজ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। নির্জন খন্দকার সেগুলো সামাল দিচ্ছে। কিন্তু একটা ডিসিপ্লিন তো লাগবে। ওর কাজ হবে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং। আপনি অভিজ্ঞ মানুষ। প্রকাশনার মান যাতে একনম্বরে থাকে সেটা এনশিউর করবেন। একটা টিম বানাতে চাই। অনীতা ম্যাডাম কি অ্যাডভাইজার হিসেবে থাকবেন সেখানে? কী বলেন?’
‘আমি? কেন, তো দৈনিক সূর্যের 888sport live footballপাতা?’
‘এ পাতাটা দেখবে আপাতত শান্তনু। ও আইটিতে আন্ডারলোডেড। এটা হবে ওর অ্যাডিশনাল ডিউটি। পরে আমরা সুইটেবল কাউকে পেয়ে গেলে অ্যাপয়েন্ট করবো 888sport live footballপাতায়।’
‘এর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে না?’
‘বললাম তো, এটা টেম্পোরারি অ্যারেঞ্জমেন্ট। আমরা একটা টিম হিসেবে থাকবো। যেখানে যা প্রয়োজন সেখানো হাত বাড়াবো। আপাতত প্রকাশনাটা আমাদের নতুন প্রজেক্ট। এর সাফল্য দেখতে চাই।’ আত্মবিশ্বাস ঝরে তাঁর কথায়।
একসময় চা আর ছোট ছোট পাফ খেয়ে ওরা হাইওয়ে রেস্তোরাঁ থেকে উঠে পড়েন। গাড়ি চলতে থাকে। রাস্তা অন্ধকার। শীতের ধোঁয়া মেশানো কুয়াশা চারপাশ দখল করে রেখেছে। এরই ভেতর ফগলাইট জ্বেলে ড্রাইভার ছুটিয়ে চলছে গাড়ি।
বিশ
দৈনিকে এবারের ঈদ888sport free betটি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে সুধীমহলে। দেশে-বিদেশের বাঙালি পাঠকেদের ভেতর শুধুই জানার আগ্রহ, কবে বেরুচ্ছে 888sport free betটি?
বেশকিছু পাঠক তো অফিসে বয়ে এসে খবর নিয়ে গেছেন। এজেন্টরা চেয়েও কোটার বাইরে বাড়তি 888sport free bet পাচ্ছেন না। ফখরুল হোসেন নির্দেশ দিয়েছেন এক লাখ ঈদ888sport free bet বের করতে। ইরফান প্রথম ধাপে পঁচিশ হাজার বের করার টার্গেট নিয়ে রেখেছেন। পাঠক ও এজেন্টের আগ্রহ লক্ষ করে পরের ধাপে আরো পঁচিশ। এভাবেই এগোনোর চিন্তা করছেন তিনি।
আশাতীত হারে বিজ্ঞাপন আসছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের পিআরও আগ্রহ দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে চাইছেন। যুক্ত হতে চাইছেন এরকমের এক 888sport live footballপ্রয়াসে। এ-কাজে এমন আশাতীত সাফল্য মিলবে, পত্রিকার অনেকেই তা ভাবেননি। পোড়খাওয়া ইরফান রেজা তো কোনোভাবেই এটা আশা করেননি।
বরং তাঁর বড়রকমের সন্দেহ ছিল শ্রীমঙ্গলের প্রজেক্ট নিয়ে। লেখকরা শুধু মৌজ-মাস্তিতেই ব্যস্ত থাকবেন। লেখার বেলায় কিছুই বেরোবে না। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যেকের লেখা যথাসময়ে ওঁর হাতে পৌঁছে গেছে। লেখাগুলোও যথেষ্ট মানসম্মত। পত্রিকার নিজস্ব সম্পাদকীয় বোর্ড ইরফান রেজাকে বলেছেন, ‘প্রতিটি লেখাই উন্নত মানের। কী করে সম্ভব হলো?’
তিনি আরো ভেবেছিলেন, রিসোর্টে হয়তো চুরি-ছ্যাঁচরামো বা ভাঙচুরের মতো কোনো অঘটন ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তাও ঘটল না। সব ঠিকঠাক। যে কটি ল্যাপটপ গেল রিসোর্টে, সবগুলো অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে অফিসে। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনো ক্ষতি বা খোয়া যায়নি হোটেল সম্পত্তির। যে-কটি মাইক্রোবাস রাখা ছিল, লেখকদের আশেপাশে ঘোরাঘুরির জন্য, সেগুলোর তেল-গ্যাসও তেমন পোড়েনি। আপন ভেবে সবাই সীমিতভাবে গাড়ি ব্যবহার করেছেন সেখানে।
শুধু একটাই কলঙ্ক লেগেছিল এ-অধ্যায়ে। সেটি হলো আবুল ফাত্তাহ আর তানিয়া আসাদের পরকীয়ার ভিডিওক্লিপ। কিন্তু শেষ অবধি সেটাও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। ভিডিও করার সময় আবুল ফাত্তাহর নিজের স্ত্রী নাকি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তানিয়া আসাদ আবুল ফাত্তাহর দূরসম্পর্কের শ্যালিকা। মশকরার জন্ম দিতেই এ-আয়োজন। ইংরেজিতে যাকে বলে প্রাঙ্ক করা।
ইরফান রেজা অনীতার রুমে ঢুকে হাসিভরা মুখে বলেন, ‘ফখরুল স্যার সাকসেসফুল।’
‘আর লেখককুল?’
‘উনারাও প্রমাণ করে ছেড়েছেন, এদেশের লেখক সুযোগ পেলে অনেকদূর যেতে পারেন। অনেক ভালো লিখতে পারেন। ঠিক না ম্যাডাম?’
‘এখন শুধু ঈদ888sport free betর জন্য অধীর অপেক্ষা। আপনার কাজ।’
‘হ্যাঁ ম্যাডাম। এগিয়ে নিচ্ছি। বিজ্ঞাপনের নির্দিষ্ট তারিখেই বের করে ফেলবো।’ দৃঢ়ভাবে নিজেকে প্রকাশ করেন ইরফান রেজা।
অনীতার চোখেমুখে হাসির ছটা। প্রতিষ্ঠান ভালো থাকলে কর্মচারীরাও ভালো থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
888sport cricket BPL rate
ফখরুল হোসেনের রাত জাগার অভ্যাস। কখনো বই পড়েন। কখনো সিনেমা দেখেন নেটফ্লিক্সে। কখনো বা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেন একটি গোপন ডায়েরির পাতায়।
ওঁর রুমটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। একইসঙ্গে ছিমছাম। কাঠের জিনিসের ভেতর কাঠের বড় আলমিরা, খাট ও ড্রেসিং টেবিল। একসেট সবুজ চামড়ায় মোড়ানো সোফা। একদিকে পঁয়ষট্টি ইঞ্চি স্যামসাং টিভি ও মিউজিক সিস্টেম। ওয়ালে শুধুই আয়াতুল কুরসি লেখা একটি কাচের ফ্রেম।
ফখরুলের মা-বাবা অন্য রুমে থাকেন। আব্বা ছিলেন সরকারি কলেজের অধ্যাপক। মা গৃহিণী। এখন মাসের শেষে পেনশনের টাকা তোলেন আর আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে বেড়ান। ছোটভাই আর্কিটেক্ট হারুন থাকে মা-বাবার সঙ্গে। এখনো সে অবিবাহিত। সব মিলিয়ে চার ভাইবোন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন ছয়তলার 888sport app ফ্ল্যাটজুড়ে। বড়ভাই পিজির নামজাদা নেফ্রোলজির ডাক্তার। তাঁর বউ চোখের ডাক্তার। বড় ছেলেও তাই। দোতলায় থাকে। বড়বোন হাইকোর্টের বিচারক। স্বামী আর্মির ডাক্তার। একটাই মেয়ে। ফ্যাশন ডিজাইনার।
ওঁদের কোনো ভাড়াটিয়া নেই। যখন একতলা বাংলো বাড়ি ছিল তখন আব্বা-আম্মার সঙ্গে ওরা যেভাবে কাটাতেন, এখনো ঠিক সেভাবেই রয়েছেন। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, পালা করে মা-বাবার যতœ-আত্তি করা আর পারস্পরিক ভাব-ভালোবাসা বিনিময়ের নমুনা দেখে কাজের ছুটা বুয়াদেরও চোখ কপালে ওঠে, ‘মাইয়ো গো মাইয়ো, এই যুগেও অত্ত মিল-মহব্বত!’
ফ্রি-স্কুল স্ট্রিটে জায়গা কেনার আগে কলেজ অধ্যাপক আব্বা আবু রায়হান থাকতেন পৈতৃক বাড়ি ভৈরবের নারায়ণপুরে। ফখরুল হোসেনের আম্মার বাড়িও সেখানে। ওরা পরস্পর আত্মীয়। আজকের জুনায়েদ রফিক একই গ্রামের সন্তান। ফখরুলের আম্মার আপন চাচাতো ভাই। গরিব হওয়ায় ওদের অসহায় পরিবারটির দেখভালের দায়িত্ব ছিল নানাবাড়ির। বিয়ের পর আবু রায়হানের ভালো লেগে যায় এই উদ্যোগী যুবককে। তিনি ধার দেন ওকে পাঁচ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে লুঙ্গির ব্যবসা শুরু করে আজ তিনি শতকোটি টাকার মালিক। তবে বড়লোক হলেও জুনায়েদ রফিক তাঁর অতীত কোনোদিন ভুলে যাননি। সেই কৃতজ্ঞতাই ফখরুলকে এ-দায়িত্বে এনে বসার সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া, তাঁর নিজের ছেলে দুটোরও এদেশে ফেরার সম্ভাবনা খুব কম। বিদেশিনীর প্রেমে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে সারাক্ষণ।
ফখরুলের মামার এটাই সবচেয়ে কষ্ট যে, তিনি তাঁর নিজের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলেন না। এ-কষ্টে তিনি আরো কাহিল হয়ে পড়ছেন দিনদিন। ফখরুল নিজেও জানেন না মানুষটি কতদিন আর এ-যাতনা বইতে পারবেন একাকী।
সহসা ওকে চমকে দিয়ে ওর মোবাইল বেজে ওঠে। এই ভোরবেলায় ফোন কল? পিলে চমকে ওঠার মতো শব্দ। এসময়ে মোবাইল বাজার নানারকম অর্থ করা যায়। বেশিরভাগই শঙ্কায় ভরা। তিনি মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে চমকে ওঠেন। এ যে জুনায়েদ মামা!
‘হ্যালো মামা?’ বিস্ময় চেপে রাখেন নিজের ভেতর।
‘ভালো আছিস তোরা?’ ফখরুল যে রাত জেগে ভোরের দিকে ঘুমাতে যান, সেটা মামার জানা। তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন তাঁর।
‘কী ব্যাপার মামা?’ বিদেশে গেলে সচরাচর খুব একটা প্রয়োজন না হলে তিনি ফোন করেন না। তাই প্রচÐ আগ্রহ জন্মায় ওর ভেতর।
‘শোন ডেভিড, আমি ভালো হয়ে গেছি। আমি এখন যা খুশি তাই খেতে পারি আগের মতোন। আমার হয়ে সকল এমপ্লয়িদের একটা করে বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দে।’
ফখরুল হোসেন রীতিমতো বিস্মিত। এ কী করে সম্ভব? যে মানুষের পেটে একটা ফিশফ্রাই হজম হতো না, সঙ্গে সঙ্গে ছুটতে হতো বাথরুমে, কোনো জরুরি অনুষ্ঠানে গিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখান থেকে যাঁর বেরিয়ে আসতে হতো তাড়া খাওয়া বাঘের মতো, তিনি কীভাবে ভালো হয়ে গেলেন রাতারাতি? এত ওষুধ, দেশ-বিদেশের এত চিকিৎসা যাঁর ওপর শিলাবৃষ্টির মতো বর্ষিত হলো দিনের পর দিন, তিনি কি এমন জাদুটোনার দেখা পেলেন যে কণ্ঠ থেকে যুবকের আনন্দ ঝরে পড়ছে?
‘মামা, কীভাবে সম্ভব?’
‘এখানকার ডাক্তার সব চেকটেক করে একটা পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দিলেন। আমরা ছোটবেলায় সেটা খেয়েছি।’
‘কি নাম?’
‘টেট্রাসাইক্লিন। একসপ্তাহ খাওয়ার পরই আমি আগের মতোন। অথচ কত হাই পাওয়ারের ওষুধ আমার গিলতে হয়েছে। এবার বল, তোদের খবর কী?’
‘মামা, আমাদের ঈদ888sport free betর প্রজেক্টটা হানড্রেড পরসেন্ট সফল। মারমার-কাটকাট করে বাজারে চলছে। ছাপিয়ে কুল পাওয়া যাচ্ছে না। আশার চাইতেও বেশি।’
‘গুড। কিন্তু ঈদ888sport free bet বিক্রি করে কি তুই লাভের মুখ দেখার আশা করছিস? বিজ্ঞাপনের খবর কী?’ জুনায়েদ রফিক ষাটের দশকের ম্যাট্রিক পাশ মানুষ। মাথা কম্পিউটারের আগে চলে।
‘বিজ্ঞাপন ম্যানেজার বললেন, দৈনিক সূর্যের সকল রেকর্ড ভেঙে ফেলবে এবারের বিজ্ঞাপনের জোয়ার। সব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এজেন্টদের চাপ দিয়ে আমাদের এখানে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এগজাক্ট অংকটা আপনি এলে বলতে পারবো।’
‘বুঝতে পারছি। দৈনিক সূর্যকে পায়ের ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টায় সফল হওয়ায় কনগ্রাচুলেশনন্স। এখন ঘুমা।’
‘মামা একটা কথা।’
‘বল।’
‘আরমান-এমরানের খবর কী? ওরা ফিরবে না?’
‘আমার মৃত্যুর পর।’ একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তাঁর বুকের ভেতর থেকে। একটু থেমে বললেন, ‘আমি এখন বড়জনের অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছি নিউইয়র্কে। ভালো আছি। আচ্ছা একটা কথা। একটা মেয়ে যে তোর সঙ্গে কাজ করে, কী যেন নাম?’
‘অনীতা কবীর।’
‘অবিবাহিতা?’
‘জি।’
‘তোর অতীত জানে?’
‘জি।’
‘আপত্তি আছে?’
‘জানি না মামা।’
‘যদি আপত্তি না থাকে তো বিয়ে করে নে। একা একা আর কদ্দিন? নে, এখন ঘুমা। কতকাল আর রাত জেগে জীবন কাটাবি।’ জুনায়েদ রফিক রেখে দিলেন ফোন।
ফখরুল হোসেন থ হয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর মুচকি হেসে ব্লাংকেটের তলায় মাথা দিয়ে চোখ বুজে ফেললেন। সহসা মনে হলো, অনীতা ওকে বলছেন, ‘এই যে নবাবজাদা, ভালো আছেন তো?’
বাইশ
ছুটির দিন শুক্রবারের শীতের সকালের রূপ-মাধুর্য অনীতার কাছে অবর্ণনীয় সুখের।
যখন জানালার কাচে জমে থাকা কুয়াশা কাটিয়ে উষ্ণ রোদের পরশ নিজের মুখে উজ্জ্বল হলুদ আলো ছড়িয়ে দেয় এবং পাশে শুয়ে থাকা পোষা বিড়াল জিনিয়া গা ঝাড়া দিয়ে মিঁউ বলে ওঠে তখন চোখের পাতা না খুলেও তিনি স্বর্গীয় এক পরমানন্দের স্বাদ পান গহিনে।
এসময় দরজার কলিংবেল কার ভালো লাগে? এখন কোনো বুয়ারও আসার কথা নয়। মাসিক ডিশ, পত্রিকার বিলগুলো তো নিয়ে গেছে কবে। তাহলে কে এলো দস্যু হয়ে ছুটির দিনের এ সাত সকালে ওর আনন্দে ছুরি বসাতে?
ঢুলুঢুলু চোখে ক্যাটস-আইয়ে গিয়ে চোখ রাখেন অনীতা। এত সকালে শায়লা নূর? বরের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে নাকি? কিন্তু শেফাকভাই তো সাত চড়ে কথা বলার লোক নয়। তাহলে?
দরজা খুলে দিতেই শায়লা হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লেন। যেন নিজের বাপের বাড়ি। পারলে স্বামী-সন্তান রেখে ওর সঙ্গেই থাকতে চাইত। কিন্তু বাস্তবতার কথা মনে করে সেদিকে আর যায়নি।
‘কী ব্যাপার? এত সকালে?’
‘মনে পড়ল তোর কথা। চলে এলাম। আগে ঘুমিয়ে নিই কিছুক্ষণ। তারপর কথা হবে। ’
‘তোর দীপ্ত আর শেফাকভাই ঠিকঠাক?’
‘সব ঠিক। আমি এলাম তোর কথা ভেবে।’ বলতে বলতে ওঁরা এগিয়ে যান বিছানার দিকে। জিনিয়া শায়লাকে খুব ভালো করে চেনেন। তাই মুখ দিয়ে ওম-ওম করে ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকেন। শায়লা ওকে আদর করে দিলে চোখ বুজে ফেলে আনন্দে।
হলের মতো একই বøাংকেটের তলায় ঢুকে শায়লার প্রথম প্রশ্ন, ‘সুলতানকে নিয়ে নতুন করে ভাবা যায় না অনি?’
‘এজন্য তুই ছুটে এসেছিস? ওকে তো বলেই দিয়েছি আমার ফাইনাল ডিসিশন। একই ঘা রগড়ে রক্তাক্ত করছিস কেন বারবার?’
‘বেচারা তোর জন্য খুব কেঁদেছে সেদিন।’
‘তোর বাসায় গিয়েছিল?’
‘টেলিফোনে। আগামী সপ্তাহে চলে যাবে। মায়া লাগে খুব।’
‘তুই এখনো পুরুষদের চিনিস না। 888sport live footballের সফরসঙ্গী হয়ে রইলি সারাজীবন। দেখিস ও একা ফিরবে না। কাউকে না কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাবে।’
‘বাজে কথা। এ-জায়গাটায় আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি।’ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন শায়লা।
আর কথা বাড়ান না তিনি। স্পষ্ট বুঝতে পারেন, সুলতান চিরতরে বিদায় নিয়েছে অনীতার মন থেকে। সেখানে সুলতানের নাম করে আর কখনো বৃষ্টি ঝরবে না। সেই চেষ্টা কেউ করলেও শুধু ভুল ঝরবে সেখান থেকে।
অগত্যা ছুটির দিনে সচরাচর যা হয়, অনলাইনে খাবার আনিয়ে খাওয়ার প্রসঙ্গে চলে যান ওঁরা দুজন।
‘কি খাবি? আমি খাওয়াবো।’ শায়লা ভ্যানিটি-ব্যাগ ঘেঁটে ক্রেডিট কার্ড হাতে নিয়ে অনীতাকে বলেন।
‘ওকে। আজ আমরা পূর্বাণীর স্মোকড হিলসা আর সাদাভাত খেতে ইচ্ছে করছে। সঙ্গে প্রন আর টমেটো ভর্তা, ডাল, সবজি আর পুডিং। চলবে?’
‘আমরা গিয়ে খাবো, নাকি আনাবো?’
‘গিয়ে খাবো।’
‘হঠাৎ করে এরকম ব্রিটিশ আমলের রেস্টুরেন্টের কথা যে মনে হলো?’ প্রশ্ন শায়লার।
‘আমার আব্বু যখন 888sport app কলেজে পড়াতেন তখন বোর্ডের খাতা দেখার থোক টাকা হাতে এলে আমরা একসঙ্গে খেতে আসতাম সেন্ট্রাল রোডের ভাড়া করা বাসা থেকে।’
‘নস্টালজিয়া?’
‘ঠিক তাই?’ উত্তর দেন অনীতা। পরক্ষণে প্রশ্ন করেন, ‘তোদের এরকম কোনো 888sport sign up bonus নেই?’
‘আমরা এবং শেফাকরা তো রিফিউজি পরিবার। তাড়া খেয়ে বহরমপুর থেকে মাইগ্রেট করে এসেছিলেন আমাদের আব্বা-আম্মা। শেফাকরা এসেছিল জঙ্গিপুর থেকে। খুবই কষ্টে কেটেছে আমাদের শৈশব-কৈশোর। এখানকার অপরিচিত পরিবেশের সঙ্গে, দারিদ্র্যের সঙ্গে ফাইট করে করে বড় হয়েছি আমরা। তোর মতো অত সুখভরা শৈশব তো অলীক কল্পনা তখন আমাদের কাছে।’ বলে শায়লা থামেন।
ওঁরা দুজন চুপ। জিনিয়া শুধু ওঁদের মাথা আর শরীরের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। মুখে একধরনের শব্দ। হয়তো উঠতে বলছে দুজনকে। হয়তো ওর ক্ষুধা লেগেছে। জিনিয়ার অবস্থা দেখে ওরা দুজন একসঙ্গে হেসে ওঠে।
অনীতার মনে হয়, জিনিয়া রয়েছে বলেই ওঁর ভয়-ডর বলে কিছু নেই। নইলে এই একাকী ফ্ল্যাটে টেকা সত্যি মুশকিল হতো।
শায়লা নূর যেতে যেতে রাত হয়। এর ভেতর বেশ কবার ওঁর একমাত্র পুত্র দীপ্ত রিং দেয়। একটাই প্রশ্ন তার, ‘কখন আসবা?’ বারবার ‘চলে আসব। আন্টির শরীর খারাপ তো। কিছু চাইলে আসমাকে বলো। আমি চলে আসব ’ বলে থামাতে চাইছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে। শেফাক অফিসে। শুক্রবারেও ওর গাজীপুরের কারখানা খোলা।
শায়লা নূর বিরক্তভরা গলায় মন্তব্য করেন, ‘মানুষ কেন যে বিয়ে করে? নিজের মতো আর থাকা যায় না। কাজের লোক রয়েছে। দাদি রয়েছে। তবু ম্যা, ম্যা। হিহিহি।’
একচোট হাসিবিনিময় হয় নিজেদের ভেতর।
অনীতা বলে ওঠেন, ‘নিজে সামাল দিতে পারছিস না সংসার, আমাকে আবার বিয়ের ফাঁসিতে ঝুলাতে চাইছিস যে?’
‘তারপরও মজা আছে রে। একা থাকার কোনো আনন্দ নেই। দেখবি একসময় চারপাশের সব খাঁ-খাঁ করবে। দাম্পত্যে ভালোবাসা থাকে না। কিন্তু মায়া থাকে রে। একসঙ্গে থেকে থেকে মায়া জন্মে যায়। সেটাই আনন্দের। পরে বুঝতে পারবি।’ এসময় অনীতা স্পষ্ট বুঝতে পারেন, শায়লা মুখে যা-ই বলুক, শেফাকভাই ওর একমাত্র প্রিয় মানুষ।
পরদিন সকালে লুঙ্গি-টাওয়ারে পা দিতেই চমকে ওঠেন অনীতা কবীর। নিজের অফিস চেনাই যাচ্ছে না। করিডোর, লিফট, ফ্লোর সব যেন উৎসব-আয়োজনের ভেতর মেতে রয়েছে। নানা রঙের বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো চারদিক। বিয়েবাড়ির মতো সুবাস চারপাশে। তিনি পাঞ্চ-মেশিনে আইডি কার্ড পাঞ্চ করে নিজের ফ্লোরে পা রাখতেই দৈনিক সূর্যের সমবেত কর্মকর্তা-কর্মচারীর দল হইহই করে ওঠে। ফখরুল হোসেন আগে থেকেই তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। লোকটা এই কদিনে একদম মিশে গেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে। এখন তিনি চাইলেই যা খুশি করাতে পারেন তাঁদের দিয়ে। এমনি নিয়ন্ত্রণ জন্মে গেছে তাদের ওপর।
তিনি খালি গলায় ঘোষণা দেন, ‘ঈদ888sport free betর কৃতিত্ব শুধু দু-চারজনের নয়। এটি দৈনিক সূর্যের পিয়ন থেকে শুরু করে সম্পাদক পর্যন্ত সবার মেহনতের ফসল। আমরা সামনে ছিলাম। আপনারা পেছনে ছিলেন। এই যা তফাত। এজন্য আমরা আজ একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। কোনো কাজ নয়। গোটা দিনের ক-ঘণ্টা হই-হুল্লোড় করে কাটিয়ে দেবো।’
উল্লসিত সবাই লাফিয়ে ওঠেন ফখরুল হোসেনের কথায়। ওদের আনন্দ যেন আর ধরে না। প্রতিটি চেহারা এতই প্রফুল্ল দেখাচ্ছে যে অনীতা কবীরের মনে হয়, একটি ভালো প্রতিষ্ঠান যেরকম হওয়া উচিত ফখরুল হোসেনের হাতে পড়ে সেটি সেরকমই আদল পাচ্ছে। কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে ওঁর প্রতি।
ফখরুল ফের বলে ওঠেন, ‘আমার কথা শেষ হয়নি। মূল সুসংবাদটাই দেওয়া হয়নি আপনাদের।’
সবাই এবার হতবাক। উসখুস করছে সবার মন। পাশে দাঁড়ানো অনীতা, ইরফান রেজা, পিআরও জুবায়ের, বিজ্ঞাপন ইনচার্জ আবদুল লতিফ, নিউজ এডিটর জাহাঙ্গির সাহেব – সবার মুখে বিস্ময়ভরা কৌতূহল।
তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় চেয়ারম্যান জুনায়েদ রফিক দীর্ঘদিন থেকে পেটের অসুখে ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুর ব্যাংকক লন্ডনে বছরের পর বছর চিকিৎসার পরও ভালো হতে পারেননি। এবার আমেরিকার এক ডাক্তারের সংস্পর্শে এসে প্রথমবার জানতে পারলেন, তাঁর কিছুই হয়নি। খাওয়ার পর কুলি-টুলি করতে গিয়ে কোনো একটা ই-কোলি পেটে ঢুকে পড়েছিল। ওই রাসকেলটার হারামিতেই তিনি এদ্দিন কষ্ট পেয়েছেন। পুরনো অ্যান্টিবায়োটিকের এক সপ্তাহের ডোজেই সুস্থ হয়ে গেলেন তিনি। সেই আনন্দে তিনি গ্রুপ অফ কোম্পানিজের সকল এমপ্লয়ির জন্য একটি স্পেশাল বোনাস ডিক্লেয়ার করেছেন। হিপহিপ হুররে।’
সমবেত দৈনিক সূর্যের কর্মচারীবৃন্দ হাত ছুড়ে গলা ফাটিয়ে উত্তর দিলেন, ‘হিপহিপ হুররে।’
ফখরুল হোসেন হাসতে হাসতে বললেন, ‘ঈদের ফেস্টিভ্যাল বোনাসের সঙ্গে এটি পাবেন আপনারা। আমাদের চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করবেন।’
অনীতা পাশ থেকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার কবে ফিরবেন?’
‘আগামী সপ্তাহে। আসুন আমার রুমে। কথা রয়েছে।’
ওঁরা সবাই এসে সম্পাদকের রুমে ঢোকেন। তিনি এখন এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। নিজের গুরুত্ব কীভাবে বাড়াতে হয় তিনি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এমন স্বতঃস্ফূর্ত উত্তরণ কম চোখে পড়ে। প্রতিভা ও বুদ্ধি না থাকলে এসব কখনোই সম্ভব নয়। অথচ লোকটিকে প্রথমদিকে কী-ই না ভেবেছিলেন অনীতা। এখন ভাবলে হাসি পায় নিজের।
‘শুনুন। আমাদের ঈদ888sport free bet প্রজেক্টটি 888sport live football সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের মাপকাঠিতে সফল হয়েছে।’
‘এটার পুরো ক্রেডিটই আপনার।’ ইরফান রেজা গদগদ হয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবাই সমর্থন জানান তাতে। এতে যে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই সবাই এখন বুঝতে পারছেন।
‘শুনুন, প্যাম্পারিং আমার পছন্দ নয়। অংক কষে কাজ করবেন। ফল পাবেন। ব্যস। আপনার কত লাভ হবে সেটা ভেবে রাত নষ্ট না করে আপনি যা করছেন সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এবার ডিফিকাল্ট একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। ঈদ888sport free bet প্রজেক্টটি ছিল আমাদের সাময়িক এক্সপেরিমেন্ট। এবার আমরা পার্মানেন্ট প্রজেক্ট কিক-অফ করতে চাই। বনানীর সূর্য প্রকাশন আমাদের সেই ড্রিম প্রজেক্ট। কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। নির্জন খন্দকার সেটি দেখছেন। ইরফান রেজাও সেখানে থাকবেন। আগামী সপ্তাহে এর উদ্বোধন। চেয়ারম্যান সাহেবেকে দিয়ে সেটি উদ্বোধন করাতে চাইছি। কারো কোনো আপত্তি?’
সবার একই উত্তর, ‘আপনি যা বলবেন তাই।’
‘অনীতা?’
হেসে ফেললেন তিনি। মাথা নেড়ে উত্তর দিলেন, ‘নো।’
তেইশ
জুনায়েদ রফিক এয়ারপোর্ট থেকে সোজা রওনা দিলেন সূর্য প্রকাশনের কার্যালয়ের দিকে।
লুঙ্গি টাওয়ারের মতো বনানীর এ-জায়গাটাও তাঁর নিজের কেনা। জায়গাটা নিয়ে মাল্টিস্টোরেড করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই অস্থায়ী কার্যালয় বানিয়ে দৈনিক সূর্যের প্রেসটা বসিয়ে রেখেছেন এখানে। ফখরুলের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি নিজে থেকে এর প্রস্তাব দেন। প্রথমত পত্রিকার বিশাল ছাপাখানা রয়েছে এখানে। পাশে আরো দুটো মেশিন স্থাপন করে সূর্য প্রকাশনের ছাপাখানা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া চারপাশের বিশাল সব অট্টালিকার ভেতর জায়গাটা বেশ খোলামেলা।
এক-দুটো মরমর গাছ রয়েছে খালি জায়গায়। বই বাঁধাইর কাজটাও এখান থেকেই হবে। প্রজেক্টটি লাভজনক হয়ে উঠলে তখন নতুন করে হয়তো ভাবা যাবে।
কদিন থেকেই নিজেকে বড় উৎফুল্ল লাগছে জুনায়েদের। স্ত্রীকে হারানোর পর ভেবেই নিয়েছিলেন, এই রোগেই বুঝি তিনি কবরে যাবেন। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে নিজের গাড়িতে চড়ে মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে যেভাবে রাস্তার তেলেভাজা খেলেন ছোটবেলার মতো, তাতে নিজেই নিজের ওপর বিস্মিত হয়ে গেলেন। আগে হলে সঙ্গে সঙ্গে তলপেটে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে যেত এতক্ষণে। এরই ভেতর বেশ কবার টয়লেটে যেতে-আসতে হতো। কী যে নিদারুণ মানসিক ও শারীরিক কষ্ট। নিজেকে মনে হতো নিঃস্ব-রিক্ত। জীবনটাকে লাগত অন্তঃসারশূন্য এক বেলুন। সেই জুনায়েদ গাড়ি থামিয়ে মাঝপথে 888sport appর রাস্তার তেলেভাজা খেয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হাহাহা। নিজের মনে নিজে হেসে ওঠেন।
ফখরুলকে রিং দেন তিনি, ‘আমি কিন্তু তোদের এখানেই আসছি। রেডি তো সব?’
‘রেডি মামা। তবে বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নেবেন না?’
‘না না। কাজটা আগে। আমি তো এখন ভালো হয়ে গেছি। শরীরের ক্লান্তি চলে গেছে। আসছি।’
এদিকে ফখরুল হোসেন দশ কাঠা প্লটের এককোণে খালি জায়গায় অস্থায়ী মঞ্চ ও প্যান্ডেল সাজিয়ে উদ্বোধনের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।
দর্শক-শ্রোতা হিসেবে যাঁরা সুসজ্জিত চেয়ার ও সোফায় বসে রয়েছেন তাঁরা সবাই লেখক। ঈদ888sport free betর বিশজন তো রয়েছেনই। সঙ্গে আছেন আরো ষাটজন। বুফে-স্ন্যাকস ও একটি করে দামি ডিজিটাল ঘড়ি রয়েছে তাঁদের জন্য। সে-কথা সবাইকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ইরফান রেজা। তাই সবার মুখে লেগে রয়েছে প্রসন্নতার ছটা।
গাড়ির ভেতর সুট-কোট বদলে লুঙ্গি-অঙ্কিত পাজামা-পাঞ্জাবি আর ওভারকোট পরে নিয়েছেন জুনায়েদ রফিক। বনানীর প্লটে পৌঁছার পর হাসতে হাসতে হাত নেড়ে সোজা মঞ্চে চলে এলেন তিনি। রোস্ট্রামের সামনে গিয়ে বলে উঠলেন, ‘কদিন আগেও ভাবিনি আমি বেঁচে ফিরবো। কেউ বলেন, রোগটার নাম ফাংশনাাল ডিসপেপসিয়া। কেউ বললেন, দূর, কেউ কিছু বোঝেন না। এটা আইবিএস অর্থাৎ ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম। কারো কারো মুখ ছিল আরো গম্ভীর, এটা স্টম্যাক ক্যান্সার ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু আমেরিকার এক ডক্টর মিস্টার এলবার্ট টেস্ট-ফেস্ট করে হাসিমুখে ঘোষণা দিলেন, মিস্টার রফিক, তোমার কিছু হয়নি। একটা উইকেড ই-কলি কি করে যেন তোমার খাওয়া অথবা পানির মধ্য দিয়ে পেটে বাসা বেঁধে ফেলেছে। ওটাই ঝামেলা করছে। আমি একটা পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছি। দেখো পাও কি না। ওটা খেলেই তুমি ভালো হয়ে উঠবে। এখন আমি পুরো ভালো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। বড় অসহ্য সময় কাটিয়েছি ক-বছর ধরে। সব বৃথা মনে হচ্ছিল তখন।’ বলতে বলতে তাঁকে মনে হচ্ছিল বিশাল এক যুদ্ধের ময়দান থেকে তিনি সদ্য বিজয়ী হয়ে সবার মাঝে ফিরে এসেছেন। এবার তিনি ফিতা কেটে উদ্বোধন করলেন সূর্য প্রকাশনের লোগো।
ফখরুল হোসেন এবার মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে দুটো টোকা দিলেন। মাইকওলাকে দিয়ে মাইক্রোফোনের উচ্চতা ঠিক করে নিয়ে সমবেত সবাইকে বৈকালিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘সুধীবৃন্দ, ঈদ888sport free betর মতো এটাও আমাদের একটা ড্রিম প্রজেক্ট। এখান থেকে বোর্ড-কলেজ-ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত চিরায়ত 888sport live footballের কিছু পাঠ্যবই বের হবে। আর হবে বস্তাপচা নোটবইর বদলে সহায়ক শিরোনামের সিরিজ। আমাদের নতুনত্ব হচ্ছে আমরা স্কুল-কলেজের হেডমাস্টার-অধ্যাপকদের দিয়ে এগুলোর কাজ করাবো না। আমরা আপনাদের কাজে লাগাবো। দেশের সর্বোৎকৃষ্ট সৃজনশীল মানুষগুলো যখন সহায়ক লিখবেন তখন কেমন হবে, ভাবুন তো একবার? 888sport app download apkর ভিন্ন অর্থ জানা যাবে। গল্পের ভেতরের গল্পটি খুঁড়ে বের করবেন তাঁরা। 888sport liveের মূল প্রেক্ষাপটে আলো ফেলে শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে দেবেন সহজ করে কিভাবে 888sport live footballের প্রাণবিন্দুতে পৌঁছতে হয়। সরকার যদি চান তবে এখান থেকে আমরা শিশুদের হাতে তুলে দেওয়ার পাঠ্যবই ছাপাবো। সকল কাজে আগাগোড়া থাকবেন আপনারা। এতে আপনাদের মতো সৃজনশীল মানুষগুলো যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি সূর্য প্রকাশন সমাজে 888sport live footballমনস্কতা তৈরিতে অবদান রাখার সুযোগ পাবে। লেখকেরা যে সমাজের অপরিহার্য অংশ সেটা প্রমাণ করার ক্ষেত্র তৈরি হবে। আসলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনি সমাজকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। সমাজে সম্পৃক্ত হয়েই আপনি আপনার কথাটা বলবেন। সেই সুযোগ আমরা আপনাদের করে দেবো। ভুল হলে আমাদের ধরিয়ে দেবেন। সে অধিকার আপনাদের দেওয়া রইলো।’ বলতে বলতে তিনি দুবার পানি পান করলেন। যখন কথা শেষ করলেন তখন তুমুল করতালিতে তাঁকে স্বাগত জানান সবাই। গর্বে বুকটা ভরে ওঠে মঞ্চে বসা জুনায়েদ রফিকের। একই সঙ্গে নিজের ছেলেদের কথা ভেবে মনটা কঁকিয়ে ওঠে। আজ যদি ওরা তিনজন মিলে সবকিছুর হাল ধরত!
অনীতার গাড়ি নষ্ট। তাই অনুষ্ঠান শেষে অনীতা কবীরকে লিফট দিলেন ফখরুল হোসেন।
অনীতা যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইরফান রেজা একা সামলাতে পারবেন তো সবকিছু?’
‘উনাকে দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’
‘888sport live footballপাতা কি শান্তনুই সামাল দেবে?’
‘না। মত বদলেছি। কানিজ সুবর্ণাকে চেনেন?’
‘চিনব না কেন? সাপ্তাহিক মাঝিমাল্লা পত্রিকার সম্পাদক।’
‘তিনি দেখবেন পাতাটা।’
‘আর আমি? রাস্তায় ঘুরে বেড়াবো আর আপনার পিএসগিরি করব?’ কণ্ঠে ঝাঁঝ। কিছুতেই নিজেকে সামলানো যাচ্ছে না।
‘আপনার আব্বা-আম্মা এসেছেন কানাডা থেকে?’
‘না। ’
‘কবে আসবেন?’
‘জানি না।’ বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। চাপা হাসি ঠোঁটের ভাঁজে।
চব্বিশ
অসময়ে ফোন করা শায়লা নূরের বদভ্যাস। এমন নয় যে তিনি বুঝতে পারেন না। বরং তিনি জেনে-বুঝেই বান্ধবীকে ক্ষ্যাপাতে এ-কাজটা করে থাকেন। কেননা অনীতার সমস্ত কাজকর্মের রুটিন ওঁর জানা। কিছু বললেই হি-হি করবে। এই হি-হিটুকুর জন্যই ওঁর এ-দুষ্টুমি। অনীতাও ফোনকলের সময় দেখে বুঝতে পারেন, এটা কার ফোন।
‘কি, বল?’ অনীতা তরবারির মতো দাঁতে টুথব্রাশ ঘুরাতে ঘুরাতে বিরক্তভরা প্রশ্ন করেন শায়লাকে।
‘এটা ফাজলামি নয়। সুলতান আজ চলে যাচ্ছে।’
‘তো? আমিও তো একটু পর অফিসে যাবো।’
‘সুলতান সঙ্গে করে কাউকেই নিয়ে যায়নি। তোর জন্য ও একা এসেছিল। আজ একাই চলে যাচ্ছে।’
‘এই সাত সকালে এ-সংবাদ শোনাতে রিং দিয়েছিস?’
‘ওর জন্য মায়া হচ্ছে। মেয়েদের মতো কাঁদছিল। বলছিল আমি নিজেকে নিজে খুন করেছি।’
‘উফ। একটা ইমোশনাল পাগলকে নিয়ে তোর এমন আবেগ দেখে তো আমি বিরক্ত হচ্ছি।’
‘সাংবাদিকতা ছেড়ে নিউইয়র্ক শহরে একটা বিরিয়ানি হাউস খুলেছে। সেটারও নাম দিয়েছে ‘অনীতা বিরিয়ানি হাউস’।’
‘ডিজগাস্টিং। রাখি।’
‘একটুও মন তোর ব্যাকুল হচ্ছে না অনি? কেউ কখনো ফার্স্ট লাভ ভুলে যায়?’
‘শাহবাগের ফুলের দোকানের সামনে যে সারাদিন অপেক্ষা করে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরেছিল, সে মরে গেছে। ওরে এখন খুঁজে লাভ নেই। সুলতান কি তোর বাসার ড্রয়িংরুমে?’ অনুমান করে তীর ছোড়েন অনীতা।
আচমকা ধরা পড়ে যাওয়ায় আমতা আমতা করতে থাকেন শায়লা। মুখে বলেন, ‘ওর একটা অনুরোধ ছিল। বলতে পারিস শেষ অনুরোধ। তুই যদি সময় করে ওকে সি-অফ করিস এয়ারপোর্টে এসে। পারবি?’
‘তুই কেন দড়ি প্যাঁচাচ্ছিস ওর হয়ে বল তো? আমার সময় নেই এসব পঞ্চাশের দশকের লেখক-সিনেমাওলার তৈরি সস্তা ইমোশনে গা ভাসাতে।’
‘তুই তাহলে নতুনদাকেই বেছে নিলি?’
‘নতুনদা কে?’
‘তোর সম্পাদক নতুনত্বের অন্বেষণকারী ফখরুল হোসেন?’
‘রাখলাম। বাই।’ অনীতা কবীর ছুটে যান বাথরুমে। সময় নেই হাতে। এক্ষুনি রিং চলে আসবে ওর মোবাইলে।
ফখরুল হোসেন ওকে পিক করতে হয়তো চলেই এলেন।
ওঁর নিজের গাড়িও চলবে। তবে সম্পাদকের প্রাডোর ঠিক পিছু-পিছু।
আজ যেতে যেতে ডেভিডকে সুলতানের ব্যাপারটা বলেই দেবেন অনীতা।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.