উচ্চস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের চালচিত্র

রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়েই শুরু করি। ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘শিক্ষার স্বাঙ্গীকরণ’ 888sport liveে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ’। তাঁর এই 888sport liveে তিনি – ‘বাংলাভাষার মাধ্যমে সকল জ্ঞান-888sport apk প্রচারিত হোক’১ – এমন প্রত্যাশাও করেছিলেন। এর প্রায় বছর তিনেক আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষার বিকিরণ’ নামে এক বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন :

এদিকে রাষ্ট্রক্ষেত্রে স্বরাজ পাবার জন্যে প্রাণপণ দুঃখ স্বীকার করি, কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বরাজ পাবার উৎসাহ আমাদের জাগেনি বললে কম বলা হয়। এমন মানুষ আজো দেশে আছে যারা তার বিরুদ্ধতা করতে প্রস্তুত, যারা মনে করে শিক্ষাকে বাংলাভাষার আসনে বসালে তার মূল্য যাবে কমে।

বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করতে হয়, প্রায় সত্তর বছর আগে উচ্চারিত এই বক্তব্য আজো কত প্রাসঙ্গিক – প্রবচনতুল্য এই উক্তির সত্যমূল্য কালান্তরেও কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।

দুই

বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা এবং সেই সঙ্গে সংবিধান-স্বীকৃত রাষ্ট্রভাষাও। তবে এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সময়ের সংগ্রাম, ত্যাগ ও রক্তের ইতিহাস। সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে বর্তমান 888sport apps ভূখণ্ডের মানুষ একটি নতুন রাষ্ট্রের অধিবাসী হলেও প্রত্যাশিত আত্মবিকাশের সুযোগ তারা পায়নি। এই নব্য-ঔপনিবেশিক শাসনে জাতিগত নিপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে প্রথমেই বাঙালিকে ভাষার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। বায়ান্নোর ভাষা-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সেই সংগ্রাম সফল হয়, বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি অর্জন করে। কিন্তু এই স্বীকৃতি সত্ত্বেও অনুকূল পরিবেশের অভাবে বাংলাভাষার যথাযথ বিকাশ ও প্রচলন সম্ভব হয়নি – প্রশাসনিক, শিক্ষাক্ষেত্রে কিংবা সামাজিক কোনো স্তরেই। প্রকৃতপক্ষে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র 888sport appsের প্রতিষ্ঠা সেই সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে।

তিন

আমরা পেছনের দিকে তাকিয়ে একবার চটজলদি দেখে নিতে চাই যে, গোড়ার দিকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাভাষার স্থান এবং বাংলা- বিদ্যাচর্চার অবস্থাটা কেমন ছিল। বৃহত্তর বঙ্গদেশের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৫৭-তে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে বাংলা-বিদ্যা পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা হয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬২ বছর পরে অর্থাৎ ১৯১৯ সালে – তা-ও ‘বাংলা বিভাগ’ পরিচয়ে নয়, ‘Department of Indian Vernaculars’ নামে। এই বিভাগ প্রবর্তনের তিন বছর পর ১৯২২ সালে সমাবর্তন সভায় উপাচার্যের ভাষণে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করেছিলেন :

For the first time in the history of Indian Universities, it became possible for a person to take the highest University degrees on the basis of his knowledge of his mother tongue.৩

১৯৩৮ সালে এই বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘Department of Modern Languages’ রাখা হয়। বঙ্গভাষা ও 888sport live football বিভাগ বা বাংলা বিভাগ নামে পরিচিত হওয়ার ঘটনা আরো অনেক পরের কথা।

অন্যদিকে জন্মলগ্ন (১৯২১) থেকেই 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের পঠন-পাঠনের শুরু। অবশ্য এখানেও প্রথম থেকেই বাংলাকে সংস্কৃতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ১৯৩৭ সালে সংস্কৃত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘বাংলা’ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বিভাগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

অবিভক্ত বঙ্গদেশে বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে ‘বাংলা বিভাগ’ নাম নিয়ে ১৯৩৭-এর আগে আলাদা কোনো বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। বাংলাভাষা ও 888sport live football পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে একটা অনীহা-অন্তরায় এবং উপযোগ-বোধের অভাব হয়তো সমাজে ছিল। একটা সময় পর্যন্ত স্কুল-পর্যায়েও ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরে বাংলায় পড়ানো হতো না। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত প্রবেশিকা-স্তরে বাংলা-মাধ্যমে পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এরপর যখন বাংলা চালু হলো, কেউ সেই পরীক্ষায় বসতে চাইলে তাকে অন্যের ঠাট্টা-বিদ্রƒপের মুখে পড়তে হতো – এমন ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।৪ দীর্ঘদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রান্স থেকে বি.এ. পরীক্ষা পর্যন্ত বাংলা ছিল ঐচ্ছিক বিষয়, আবশ্যিক নয়। সবমিলিয়ে বাংলা-পরীক্ষার্থীর 888sport free bet ছিল কয়েকশ ‘মাত্র’। প্রথম থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাংলার ওপর সংস্কৃত ও আরো একটি ভারতীয় ভাষা আবশ্যিক পাঠ্য হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৩৭-এর আগে পর্যন্ত বাংলাভাষায় পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ উপস্থাপনের অনুমোদন ছিল না। আমাদের দেশে কলেজ-পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ‘বাংলা’ প্রবর্তিত হয় ষাটের দশকে।৫ এই বিবরণ থেকে স্পষ্টই ধারণা করা চলে যে, উচ্চশিক্ষার সূচনাপর্ব থেকেই বাংলা পঠন-পাঠনের পথ সুগম ছিল না এবং এ-বিষয়ে সামাজিক চাহিদাও তেমন তৈরি হতে পারেনি, অনুরাগ-আগ্রহ তো নয়ই।

চার

888sport apps প্রতিষ্ঠার ফলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সাংবিধানিক স্বীকৃতির ভেতর দিয়ে বাংলা ‘একক-রাষ্ট্রভাষা’র মর্যাদা পায়। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি এবং প্রশাসন ও আইন-আদালতসহ সকলপ্রকার সরকারি কাজকর্মে বাংলাভাষার বাধ্যতামূলক ব্যবহারের নির্দেশ সার্বিক ক্ষেত্রে বাংলা- প্রচলনের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে।

ব্যবহারিক জীবনে মাতৃভাষা-চর্চার গুরুত্ব ও প্রয়োজন কোনো বিবেচক, যুক্তিনিষ্ঠ ও দেশপ্রেমিক মানুষ অস্বীকার করতে পারেন না। মাতৃভাষার প্রচার-প্রসার-প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জাতীয় চাহিদা, অনুভূতি, আকাক্সক্ষা ও মর্যাদার বিষয়টি জড়িত। তাই সংগত কারণেই মাতৃভাষার গুরুত্ব রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও শিক্ষানীতিতে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। যেহেতু মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠার জন্যে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালিকে, তাই 888sport appsের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

ড. কুদরাত-এ-খুদা কমিশন-প্রণীত স্বাধীন 888sport appsের প্রথম শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে (১৯৭৪) শিক্ষার মাধ্যম কী হবে সে-সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় :

জাতীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করলে তা শিক্ষার্থীদের সহজবোধ্য হয় এবং এতে তাদের সহজাত বুদ্ধি, মৌলিক চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির বিকাশ সাধন সহজতর হয়। অধিকন্তু জাতীয় ভাষায় রচিত গ্রন্থাদি শ্রেণিকক্ষের বাইরেও জনগণের মধ্যে জ্ঞানপ্রসারে সহায়তা করে। শিক্ষাপদ্ধতিতে ভাষার গুরুত্ব খুব বেশি এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে  জ্ঞানবিস্তার, সংস্কৃতির প্রসার এবং জাতীয় ঐক্যবোধের সৃষ্টি। অতএব আমাদের শিক্ষা-পরিকল্পনাকে সার্থক করে তুলতে হলে অবিলম্বে সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যমরূপে বাংলাভাষার ব্যবহার করতে হবে। (৪.১)৬

পাঁচ

বাংলা-মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার সঙ্গে সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একজন পদস্থ আমলা তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে যথার্থই বলেছেন, ‘সরকারি পর্যায়ে এককভাবে বাংলার প্রয়োগ-প্রচলন সম্পূর্ণ হবে না, যদি-না শিক্ষাঙ্গনে তা সফল ও কার্যক্ষম হয়।’৭ এখন আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে বাংলাভাষা কতটুকু আসন করে নিতে পেরেছে এবং এর সাফল্য, সমস্যা, সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা কতটুকু – সে-বিষয়ে কিছু ধারণা গ্রহণের চেষ্টা করবো।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক 888sport apk অনুষদের প্রায় সব বিভাগেই পাঠদান ও পরীক্ষার মাধ্যম বাংলাভাষা। কিন্তু 888sport apk কিংবা বাণিজ্য-বিষয়ে বাংলার চল এখনো হয়নি বললেই চলে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষারই ব্যবহার আছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম পুরোপুরিই ইংরেজি। চিকিৎসা-শিক্ষার ক্ষেত্রে এই একই কথা প্রযোজ্য।

১৯৮৩ সালে পেশকৃত ‘বাংলাভাষা কমিটি’র রিপোর্টে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের আংশিক পরি888sport free betন পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের শতকরা ভাগ যথাক্রমে ৭২ ও ১৮। ১৯৭২-৭৯ সালে শেষপর্ব স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় শতকরা ৭৬ ভাগ পরীক্ষার্থী বাংলা এবং শতকরা ২৪ ভাগ ইংরেজি-মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।৮ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর 888sport free bet ছিল মোট ৮৭৭ জন। এর মধ্যে বাংলা-মাধ্যমে ৩৬৩ ও ইংরেজি মাধ্যমে পরীক্ষা দেন ৫১৪ জন। ওই একই কালপর্বে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৭২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৬১ জন বাংলা ও ৫৮১ জন ইংরেজি ভাষা-মাধ্যম ব্যবহার করেন।৯ অবশ্য এই পরি888sport free betনে কোন কোন বিভাগ বা অনুষদ অন্তর্ভুক্ত তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে নমুনা-জরিপ হিসেবে গ্রহণ করে এই খতিয়ানের ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলাভাষায় পঠন-পাঠন ও পরীক্ষা গ্রহণে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ ও অগ্রগতি মোটের ওপর সন্তোষজনক হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রটি হতাশা জাগায়।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা-শিক্ষার দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে বাংলাভাষা পুরোপুরিই উপেক্ষিত। অথচ প্রকৌশল, চিকিৎসা ও 888sport apkশিক্ষার উচ্চপর্যায়ে ভাষাশিক্ষার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এর ব্যতিক্রম হলে পেশাগত জীবনে যে-সমস্যার সৃষ্টি হয় সে-সম্পর্কে একজন প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ বলেছেন :

অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও বিশ্বাস করেন, যে-ছাত্র উচ্চশিক্ষার শেষে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে যাচ্ছে, পদার্থ888sport apk বা রসায়নবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ হতে চলেছে, তার জন্য ভাষার পেছনে অতিরিক্ত সময় দেয়ার দরকার নেই। দিলে সেটা তার মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে ভবিষ্যতের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও 888sport apkীদের জন্য মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে ভাষার জায়গা সঙ্কুচিত করা হয়েছিল। ফলে এ-ই হয়েছে যে, আজ চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা ও 888sport apkের ছাত্র তার নিজস্ব বিদ্যার অনুশীলনে এবং সে-বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার পথে সহজ ও দ্রুতগতিতে চলতে পারছে না। দেশী ও বিদেশী ভাষার যোগ্যতা তার জন্যেও যে কত জরুরি, তাকে ঠেকে শিখতে হচ্ছে। অথচ দেখে শেখার পথ সবসময়েই খোলা ছিল।১০

বিস্ময় ও বেদনার হলেও এ-কথা সত্য যে, আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাভাষার কোনো স্থান নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাকে অনেকটাই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পণ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। শ্রেণিবৈষম্যের প্রতীক এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সমাজের বিশেষ সুবিধাভোগী উচ্চবিত্তের মানুষের সন্তান-সন্ততিই মূলত শিক্ষার সুযোগ      পেয়ে থাকে। এখানে একমাত্র ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই পঠন-পাঠন ও পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। না-আছে বাংলাভাষা, না-আছে বাংলা বিভাগ।   দেশের ভাষা-888sport live football-সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্রবশূন্য এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ভাষা-মাধ্যমে বাংলার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি সংবিধান, জাতীয় শিক্ষানীতি, বাংলাভাষা কমিটির সুপারিশ, জনগণের অনুভূতি এবং ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।

কয়েক বছর হলো 888sport appsে বেশ কয়েকটি 888sport apk ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হয়তো     বাস্তবায়িত হবে অচিরেই। কিন্তু এখানেও বাংলায় পঠন-পাঠন ও বাংলা-শিক্ষা বর্জিত হয়েছে। এর আগে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল 888sport apk ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য সীমিত-পর্যায়ের বাংলা কোর্স চালু আছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা-মাধ্যম কিংবা বাংলা বিভাগ না থাকলেও এখানে ইংরেজি ভাষা ও 888sport live football বিভাগ আছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েই কেবল বাংলাভাষা ও 888sport live footballের পূর্ণাঙ্গ বিভাগ আছে এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের ভাষা বাংলা। এই মূল্যায়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও সংগত কারণেই আসে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ-পরিধি ব্যাপক। দেশের কলেজগুলোতে স্নাতক, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠসূচি প্রণয়ন থেকে পরীক্ষা গ্রহণ, সব কার্যক্রমই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে বাংলাভাষার ফাউন্ডেশন কোর্স চালুসহ 888sport apk-প্রযুক্তি ও বাণিজ্য-বিদ্যার ক্ষেত্রে পঠন-পাঠন ও পরীক্ষায় বাংলাভাষা ব্যবহারের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের সুযোগ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তা হয়নি।

শিক্ষার্থীদের ভাষাজ্ঞানের জন্যে ভাষার ফাউন্ডেশন কোর্সের গুরুত্ব ও প্রয়োজন খুব বেশি। 888sport appsে একমাত্র 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষার ফাউন্ডেশন কোর্স প্রবর্তিত হয়নি। এখানে কলা অনুষদের সব বিভাগের জন্যেই ১০০ নম্বরের একটি ‘বাংলা ভাষা’ কোর্স চালু আছে। এতে বাংলা-ভাষার শুদ্ধতার ধারণার পাশাপাশি উচ্চারণ-ব্যাকরণ-শব্দসম্ভার-বর্ণমালা-পরিভাষা, বিভিন্ন ভাষারীতি, গদ্যরচনার কৌশল ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়ে থাকে। তবে এর পাশাপাশি ব্যবহারিক বাংলা, বাণিজ্যিক বাংলা, প্রাযুক্তিক বাংলা কোর্সও বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে প্রবর্তিত হওয়া প্রয়োজন। ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক উপযোগিতার দিকটিই এখন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।

ছয়

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার ব্যবহার-সম্পর্কে বিভিন্ন সমস্যা-অসুবিধার কথা নানাজনে বলে থাকেন। প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তকের অভাবকেই এ-ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপরে বাংলার বিপরীতে ইংরেজির অপরিহার্যতার পক্ষেও কেউ কেউ যুক্তি উত্থাপন করেন। এছাড়া পরিভাষা, বানানরীতি, ভাষারীতি, ভাষা-সংস্কার – এসব নিয়েও নানা সমস্যার কথা উঠে থাকে। বাংলা-প্রচলনের ব্যাপারে কিছু বাস্তব সমস্যা-অসুবিধার পাশাপাশি এক ধরনের বৈরী মানসিকতার পরিচয়ও পাওয়া যায়।

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হওয়ায় কেউ কেউ কিছু যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে এর বাস্তবায়নের সমস্যা তুলে ধরেছেন এবং পাঠ্যপুস্তক-প্রণয়নের ব্যবস্থা না-করে এর প্রচলন-চেষ্টার সমালোচনা করেছেন। এ-বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর মনে করেন :

বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করা অথচ বাংলা-ভাষায় প্রয়োজনীয় এবং অতি প্রয়োজনীয় 888sport free bet login না-থাকার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যে কী বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে সেটা সহজেই বোধগম্য। কিন্তু প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত 888sport appsের শাসকশ্রেণির প্রত্যেকটি সরকার রাজনৈতিক ফায়দার জন্যে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করা ও সর্বক্ষেত্রে বাংলার প্রচলন নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও তাদের কাছে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করার অর্থ কার্যক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলায় ক্লাস-বক্তৃতা দেওয়া ও বাংলায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কিছু বলে মনে হয় না।১১

তবে স্বাধীনতার ৩২ বছর পরেও উচ্চপর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে যে বাংলার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি তা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলায় প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তকের অভাব এর একটি বড় কারণ স্বীকার করে নিয়েও বলা যায়, কিছু আন্তরিকতার অভাবও এর পেছনে রয়েছে। বাংলা একাডেমী বিভিন্ন সময়ে এ-পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মৌলিক ও 888sport app download apk latest version পাঠ্য ও পাঠ্যসহায়ক পুস্তক প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকাশনা-সংস্থার উদ্যোগও এতে যুক্ত হয়েছে। হয়তো প্রকাশনার 888sport free bet প্রয়োজনের তুলনায় কম, তবে কাজ শুরুর জন্যে তা অগ্রাহ্য করার মতো নয়। এ-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য 888sport app download for android করা যেতে পারে :

আমি জানি তর্ক উঠিবে তুমি বাংলাভাষার যোগে উচ্চশিক্ষা দিতে চাও, কিন্তু বাংলাভাষায় উঁচুদরের শিক্ষাগ্রন্থ কই? নাই সে কথা মানি কিন্তু শিক্ষা না চলিলে শিক্ষাগ্রন্থ হয় কী উপায়ে? শিক্ষাগ্রন্থ বাগানের গাছ নয় যে, শৌখিন লোকে শখ করিয়া তার কেয়ারি করবে, – কিংবা সে আগাছাও নয় যে, মাঠে ঘাটে নিজের পুলকে নিজেই কণ্টকিত হইয়া উঠিবে। … বাংলায় উচ্চঅঙ্গের শিক্ষাগ্রন্থ বাহির হইতেছে না এটা যদি আক্ষেপের বিষয় হয় তবে তার প্রতিকারের একমাত্র উপায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার উচ্চঅঙ্গের শিক্ষা প্রচলন করা …।১২

উনিশ শতকে আইন, 888sport apkের নানা শাখা, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বই রচিত ও অনূদিত হয়েছে। এতে বেশ বোঝা যায়, ‘ব্যবহারিক জীবনে ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাভাষার ব্যবহার একসময়ে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল’, কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ‘ইংরেজি-মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের নিয়ম প্রচলিত হওয়ায় বাংলা 888sport free bet loginের সমাদর কমে যায়।’১৩ এই তথ্য থেকে একটি সত্য বেরিয়ে আসে যে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে যে-ভাষা চালু থাকে, গরজে-প্রয়োজনে সে-ভাষায় বই লেখা হয়-হবে। তবে ভাষার দ্বৈত এ-ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে, 888sport appsের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার দিকে তাকালে তা বেশ বোঝা যায়।

888sport appsের প্রথম শিক্ষা কমিশন ১৯৭৪ সালে শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা-মাধ্যমের সুপারিশ করেছিল। ২৬ বছর পরে অধ্যাপক শামসুল হকের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’-বিষয়ক কমিটির ২০০০ সালের রিপোর্টে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার অপরিহার্যতা স্বীকার করে নিয়েও বলা হয়েছে, যেহেতু ‘বাংলাভাষায় বই, সাময়িকী 888sport app download apk latest version করা এখনো পর্যাপ্তভাবে হয়নি’, তাই ‘সাময়িকভাবে হলেও প্রয়োজনবোধে ইংরেজি-মাধ্যম চালু থাকবে।’১৪ এতে বেশ বোঝা যায়, তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার উচ্চপর্যায়ে বাংলা-প্রচলনের সাফল্য আশানুরূপ নয়। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আবার পেছনের পথ ধরে ২০০০-এর শিক্ষানীতিতে প্রকৌশল ও চিকিৎসা-শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার সুপারিশ করা হয়েছে। আইনশিক্ষার ক্ষেত্রেও ইংরেজির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষানীতি পর্যালোচনা করলে বেশ বোঝা যায় ড. কুদরাত-এ-খুদা কমিশন শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দ্বিধাহীনভাবে সর্বস্তরে বাংলাভাষা ব্যবহারের যে-সুপারিশ করেছিল, তা থেকে এই কমিটি অনেকখানি সরে এসেছে। কমিটি এই ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, শিক্ষার ভাষা-মাধ্যম হিসেবে বাংলা সফল হতে পারেনি, মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি অপরিহার্য – তার কোনো বিকল্প নেই, ইংরেজি ও বাংলা দুই মাধ্যমই সমান্তরাল চালু থাকাই বাস্তবসম্মত।

বাংলা-প্রচলন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির শিক্ষকের মধ্যে সংশয় ও অনীহা আছে। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক ‘এমবিএ ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় লিখিত উত্তরপত্রগুলো নিরীক্ষার অযোগ্য বলে বাতিল’ করে দেন।১৫ অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক 888sport world cup rateে দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করা হয়। সংবাদপত্রের ভাষ্য-অনুযায়ী মঞ্জুরি কশিমন ‘এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য’ যে-সুপারিশমালা পেশ করে তার অন্যতম হলো – ‘ইংরেজি ভাষার উপর গুরুত্ব আরোপ’।১৬ মঞ্জুরি কমিশনের 888sport world cup rateের সূত্র ধরে ‘উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ধসে’র অন্যতম প্রধান কারণ নির্দেশ করে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাবশালী সিনিয়র শিক্ষক মন্তব্য করেছেন :

কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী শিক্ষক বাংলাচর্চার নামে ইংরেজি চর্চার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা চালু হওয়ায় এ-দেশের ছাত্রছাত্রীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের অভাবে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার গভীরে প্রবেশ করতে পারছে না। অন্যদিকে বাংলা ভাষায়ও তেমন কোনো পাঠ্যবই রচিত হচ্ছে না। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কোনোরকমে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, কিছুই শিখতে পারছে না।১৭

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয় এককালের বাংলা-উর্দু বিতর্ক, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখন অনেকটা বাংলা-ইংরেজি বিতর্কে রূপ নিয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে যাঁরা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকে গ্রহণের পক্ষে, তাঁদের যুক্তি – পঠন-পাঠনের জন্যে প্রয়োজনীয় বাংলা বই-পুস্তকের অভাব এবং ইংরেজি-মাধ্যমে লেখাপড়া না করলে বিদেশে শিক্ষা বা চাকরিক্ষেত্রে সুযোগ-বঞ্চিত হওয়া। ইংরেজি জানার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রশ্ন তাঁরা তুলে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব কোনো মন্তব্য পেশ না করে একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ এবং ইংরেজি ভাষা ও 888sport live footballের বিশিষ্ট অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সাক্ষ্য গ্রহণ করব। তিনি বলেছেন :

কোথায় আমাদের উচ্চশিক্ষার দুর্বলতা তার কারণ খুঁজতে বেশিদূর যেতে হয়নি। মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি থাকার যে-অসুবিধার দিক, তা প্রথম থেকেই স্বীকৃত। একটি বিদেশী ভাষার সহায়তা এক কথা, তার উপর একান্ত নির্ভরতা অন্য জিনিস। সব দেশেই উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-সমাজ মাতৃভাষার বাইরে 888sport app দু-একটি ভাষার সাহায্য দরকারমতো নিয়ে থাকে, তবে তাদের প্রধান অবলম্বন মাতৃভাষাই।১৮

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বলা যায়, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাকে গ্রহণের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর নানা দেশে আছে। এদের মধ্যে অনেকেই উন্নতির শিখরে উঠেছে, কেউ কেউ বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবেও স্বীকৃত। উদাহরণ হিসেবে চীন ও জাপানের নাম আসে, সোভিয়েট ইউনিয়নসহ পূর্ব-ইউরোপীয় প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কথাও উল্লেখ করা যায়।

তাই নির্ধারিত ও মীমাংসিত হয়ে-যাওয়া বাংলার গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি পুনরায় উত্থাপন এবং বাংলার বিকল্প হিসেবে ইংরেজির পুনর্বাসন ঐতিহাসিক দিক দিয়েই একটি ভ্রান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ বলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একাধিক ভাষাশিক্ষার প্রয়োজনকে মেনে নিয়েও বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান যে-কথা বলেছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ :

অবশ্য নিজের ভাষায় যার গোড়াপত্তন হবে না, সেই সঞ্চারী মন বৃথাই ভিন্নভাষার অভিধানে ব্যাকরণে ঘুরে মরবে।১৯

বাংলা-প্রচলনের বিষয়টিকে কেউ কেউ ভিন্ন মানসতার কারণে মেনে নিতে পারেননি। এখানে দুটি উদাহরণ পেশ করি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান উল্লেখ করেছেন :

মাত্র একমাস আগে [অর্থাৎ জানুয়ারি ১৯৮৫] দায়িত্বশীল এক সরকারি কর্মকর্তা আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন : ‘আপনার কি মনে হয় না যে, শিক্ষার মাধ্যম বাংলা করে আমরা ভুল করেছি?’ আমার জবাব শুনে তিনি বলেছিলেন : ‘অবশ্য আপনি বাংলার লোক এই কথাই বলবেন। জাপানিরা কিন্তু এখন খুব করে ইংরেজি শিখছে। আমার তো মনে হয়, বাংলা-বাংলা করে আমরা জাতিকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছি।’২০

বাংলাভাষা কমিটির (১৯৮৩) রিপোর্ট পেশকালে এর আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন :

রিপোর্টটি উপস্থাপনকালে একজন অতি ক্ষমতাবান আমলা বলেছিলেন, ‘চিন্তা নেই, এই রিপোর্টটি 888sport app বহু রিপোর্টের মতো গুদামে থাকবে, ধুলো জমবে।’ আজ প্রায় দশ বৎসর পর তাঁর কথার সত্যতা প্রায় প্রমাণিত।২১

সাত

শিক্ষা ও 888sport app ক্ষেত্রে বাংলা-প্রচলন-বিষয়ে সবার পর্যবেক্ষণ অভিন্ন নয়। যেমন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রশাসন, শিক্ষা, আইন-আদালত, ব্যাংক-ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘কিছু অগ্রগতি’ হয়েছে মেনে নিয়েও মন্তব্য করেছেন, ‘কিন্তু বেশিদূর এগোনো যায়নি’।২২ এ-বিষয়ে বদরুদ্দীন উমরের বক্তব্য একটু কঠোর, – বাংলা-মাধ্যম হওয়ার ফলে শিক্ষার মান উন্নত না হয়ে বরং দ্রুত অবনতি ঘটে চলেছে।২৩ অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ‘বাংলাভাষা কমিটি’র (১৯৮৩) আহ্বায়ক ছিলেন যিনি, এ-বিষয়ে বলেছেন, ‘… জীবনের ও শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলাভাষা ব্যবহারের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ আজো গৃহীত হয়নি বরং সৃষ্টি হয়েছে নানা কুয়াশা ও ধূম্রজাল’।২৪ অধ্যাপক মনসুর মুসা কিছু ‘অস্বাভাবিক’ ক্ষেত্র ছাড়া ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাঙলা-প্রচলন ব্যাপকতা লাভ করেছে’ বলে মনে করেন।২৫ তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ-ও 888sport app download for android করিয়ে দিয়েছেন, এক্ষেত্রে ‘ব্যাপকতা’ এলেও ‘পূর্ণতা’ আসেনি।

আট

অফিস-আদালতে প্রশাসনিক কাজকর্মে বাংলাভাষা ব্যবহারের বিষয়টি 888sport appsের প্রতিষ্ঠার পরপরই নিশ্চিত হয়ে যায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায়। তবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিই বাংলা-প্রচলনের জন্যে যথেষ্ট ছিল না। তাই এ-সম্পর্কে বারবার সরকারি নির্দেশমালা জারির প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু অনুকূল পরিস্থিতিতেও পুরোপুরি বাংলা প্রচলিত হয়নি। এর কারণ হিসেবে একদিকে দ্বিধা-অনীহার মানসিকতা এবং অন্যদিকে বাস্তব কিছু সমস্যা-অন্তরায়ের কথাও উচ্চারিত হয়ে থাকে।

পাকিস্তান আমলের শেষদিকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলাভাষার প্রচলন ও ব্যবহার না-হওয়ায় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘অথচ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্মচারীরা সকলেই  বঙ্গসন্তান’।২৬ স্বাধীনতার পরও বাংলা-প্রচলনের বিষয়ে উদ্যোগের অভাব ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতিকে নতুন করে নির্দেশ জারি করতে হয়। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম সখেদে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘… মাতৃভাষার প্রতি কেন এই অবহেলা অথবা ব্যাপারটা অবহেলা মাত্র নয়, পরিকল্পিত অন্তর্ঘাতমূলক কোনো কর্ম?’২৭

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলা-প্রচলনের যে সমস্যা ও অন্তরায়ের কথা বলা হয়, তা হলো : বাংলাভাষায় দখলের অভাব, বাংলাচর্চায় অনভ্যাস, বাংলা মুদ্রাক্ষরিক-সাঁটলিপি-কম্পিউটার কর্মীর অভাব, পরিভাষা সমস্যা ইত্যাদি। এই সমস্যা-সমাধানের জন্যে কিছু সরকারি উদ্যোগ গৃহীত হলেও তা যথেষ্ট ছিল না এবং সেই সঙ্গে বলা যায় আদিষ্ট হয়ে বাংলা ব্যবহার করলেও এতে বোধ করি স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিকতা ছিল না। অবশ্য ১৯৭৫-এর পর বাংলা-প্রচলনের প্রয়াস ও তৎপরতা সমানতালে চলেনি, যদিও সব সরকারই এ-বিষয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে এসেছে বারবার। ১৯৮৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাভাষা    বাস্তবায়ন সেল’ গঠনের মাধ্যমে কিছু প্রয়োজনীয় ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সরকারি প্রশাসনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকেও ১৯৭২ সালেই বাংলা-প্রচলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ-বিষয়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা ও প্রয়াস সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।২৮

খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না যদি ঔপনিবেশিক আমলের একটি সরকারি আদেশের কথা এখানে উল্লেখ করি। ১৮৩৭ সালে এক সরকারি আদেশ জারি করে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়, ‘দেশীয় প্রত্যেক জিলায় কোনো আমলা দেশীয় ভাষায় সুবিজ্ঞ না হইলে তাঁহাকে কর্ম্মযোগ্য বোধ করা যাইবে না।’২৯ সরকারি অফিস-আদালতে বাংলা ব্যবহারে অনীহ-অপারগ ‘বিধিলঙ্ঘনকারী’র শাস্তির কথা উল্লেখ ছিল 888sport appsের রাষ্ট্রপতির ১৯৭৫ সালের নির্দেশে। কিন্তু ‘বিধিলঙ্ঘনকারী’ কেউ শাস্তি পেয়েছিলেন কি-না সে-তথ্য আমাদের জানা নেই।

নয়

বিচার-ব্যবস্থায়, বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ে, বাংলা ব্যবহারের অবস্থাটা বোধকরি সবচেয়ে শোচনীয়। নিম্ন-আদালতের কাজকর্মে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলার প্রচলন থাকলেও উচ্চ-আদালতে বিরল-ব্যতিক্রম ছাড়া এখনো ইংরেজির ব্যবহার রয়েছে অব্যাহত। অথচ আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলায় আইনের অনেক প্রয়োজনীয় বইয়ের তরজমা হয়েছে। জোনাথান ডানকান থেকে নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায় – এবং তারপরেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। 888sport appsে এ-বিষয়ে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন গাজী শামছুর রহমান। প্রায় সাড়ে ছশো বছর আগে ব্রিটেনে আইনের মাধ্যমে ইংরেজি আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩৮ সালের গোড়ায় এ-দেশে সরকার এক নির্দেশ জারি করে ‘আদালত ও রাজস্ব সম্পর্কীয় কার্যে’ ফারসির বদলে দেশীয় ভাষা অর্থাৎ বাংলা-প্রচলনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে এক বছরের সময় সীমা বেঁধে দেয়।৩০ কিন্তু স্বাধীন স্বদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও আমাদের আইন-আদালতে বাংলা প্রচলিত হতে আরো কত সময় লাগবে, এ-প্রশ্নের জবাব হয়তো আমাদের কারো জানা নেই। কিছুকাল আগে কাগজে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলার স্বীকৃতি’ এই শিরোনামে। এনা পরিবেশিত এই খবর থেকে জানা যায় : ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তাদের সার্কুলারে এখন বাংলাভাষাও ব্যবহার করছে। মার্কিন ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইটে বিশেষ রেজিস্ট্রেশনের নিয়মাবলিও বাংলাভাষায় দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের মুখপাত্র জর্জ মার্টিনেজ জানান, বাংলায় লেখা নিয়মাবলির সার্কুলার ইমিগ্রেশনের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে বিতরণ করা হয়। নিউইয়র্কপ্রবাসী অনেক বাঙালির ধারণা, আগামীতে মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বাংলাভাষার আরো প্রসার ঘটবে।’ (দৈনিক প্রথম আলো, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩/৮ ফাল্গুন ১৪০৯)।

দশ

উচ্চপর্যায়ের 888sport app ক্ষেত্রেও বাংলাভাষা ব্যবহারের অবস্থা কেমন সে-বিষয়ে দ্রুত দৃষ্টিপাত করা যাক। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম বাংলাভাষার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে ব্যাংক-বীমা,     অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলা প্রচলিত হয়েছে অতি সীমিত পর্যায়ে। সামরিক     বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর দাপ্তরিক কাজকর্মে বাংলার ব্যবহার কতটুকু – সে-তথ্য আমাদের জানা নেই। আমাদের দূতাবাস কিংবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নেই বললেই চলে। অথচ একসময়ে নির্দেশ জারি হয়েছিল বিদেশী রাষ্ট্র বা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হবে বাংলায়, তবে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি বা সংশ্লিষ্ট ভাষার প্রতিলিপি ব্যবহার করা যাবে। এসবই এখন ধূসর 888sport sign up bonus – বিবর্ণ ইতিহাস। বিদেশীদের বাংলা শেখানোর কাজেও আমরা পিছিয়ে আছি। ষাটের দশকের শুরুতে বাংলা একাডেমীতে ‘বিদেশী ভাষারূপে বাংলা শিক্ষাদান’ শুরু হয়। ১৯৭৮-এ কোর্সটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট এই দায়িত্ব গ্রহণ করে। তবে নানা কারণে ইনস্টিটিউটও এ-বিষয়ে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে ‘বাংলা-ভাষা কমিটি’র রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এ-বিষয়ে ‘ভাষা কমিটির মন্তব্য :

বিদেশ থেকে আগত গবেষকবৃন্দ বাংলাভাষা শিখতে হলে 888sport appয় না-এসে কলকাতায় যান। বর্তমানে শিকাগো, লন্ডন, মস্কো এবং প্যারিসে বিদেশীদের বাংলা শেখার যে-ব্যবস্থা রয়েছে তা 888sport appতেও নেই।৩১

উনিশ শতকের একদম গোড়াতেই প্রশাসনিক কাজে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দড় করে তোলার প্রয়োজনে দেশীয় ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা হয়েছিল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে। দীর্ঘকাল ইংরেজি ভাষায় অফিস-আদালতে কাজকর্মে অভ্যস্ত বাংলা-ভাষাজ্ঞানে অপটু 888sport appsের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারিক বাংলার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল জরুরি। সরকারি নির্দেশের পাশাপাশি এই ধরনের উদযোগ নিলে বাংলা-প্রচলনে তা আরো বেশি কার্যকর হতে পারতো।

বাংলা একাডেমী তার সীমিত সামর্থ্যরে ভেতরেও অফিস-আদালতে বাংলা-প্রচলনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। একাডেমীর উদ্যোগেই প্রথম প্রশাসনিক পরিভাষা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি 888sport apps সচিবালয় ও 888sport app অফিস-আদালতে বাংলা-প্রচলনে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় যে-উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে একাডেমী সহায়ক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৭৫-এর ২৫ মার্চ থেকে একাডেমী-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষা-প্রশিক্ষণের এক কোর্স চালু করে। বাংলা একাডেমীর তরফ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি অফিস ও সংস্থাকে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। অবশ্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কতদিন চলেছিল, কারা এই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং তা কতটুকু প্রলপ্রসূ হয়েছিল, সে-তথ্য অজ্ঞাত।

এগারো

ভাষা-আন্দোলনের স্মারক-দিবস 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর মর্যাদা পেয়েছে। এর ভেতর দিয়ে আমাদের ভাষার সংগ্রাম বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে, বাংলাভাষা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মনোযোগ। ইউনেস্কোও ‘মাতৃভাষার মাধ্যমে উন্নতচিন্তা, জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাপ্রদানের’ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।৩২ এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাসহ জাতীয় জীবনের প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে বাংলা-প্রচলনের বিষয়টি ভিন্ন এক মাত্রা ও গুরুত্ব পেয়েছে সাম্প্রতিককালে। দ্বিধা-সংশয়-অন্তরায়-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উচ্চপর্যায়ে বাংলাভাষা শিক্ষা ও প্রচলনের প্রয়াসকে আরো গতিশীল ও সার্থক করা যায় কীভাবে সে-বিষয়ে আমাদের লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ-ভাষাচিন্তকরা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন নানা লেখায়। এ-বিষয়ে ভাষা888sport apkী অধ্যাপক মনসুর মুসা ‘প্রাজন্মিক পরিকল্পনা’র (generation planning) প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছেন। ‘সরকারি-বেসরকারি সচেতনতা’ সৃষ্টি এবং ‘সুষ্ঠু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যথোপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উপযুক্ত সামাজিক আন্দোলন’-এর মাধ্যমেই কেবল বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে তিনি মতপ্রকাশ করেছেন।৩৩

প্রকৃতপক্ষে যদি শিক্ষা ও 888sport app ক্ষেত্রে বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে জরুরিভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগে একটি কেন্দ্রীয় 888sport app download apk latest version-সংস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি ‘উপযুক্ত 888sport app download apk latest versionক ও দোভাষী তৈরির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ কোর্স চালু’ খুব কার্যকর ও ফলপ্রসূ কর্মসূচি হতে পারে। ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মতো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, যে-সংস্থা কেবল উচ্চপর্যায়ের মৌলিক ও অনূদিত পাঠ্য এবং সহায়ক গ্রন্থ প্রকাশ করবে। অবশ্য এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমীর পাঠ্যপুস্তক বিভাগকে পরিকল্পিতভাবে আরো কার্যকর করে তোলা যেতে পারে। জাতির আকাক্সক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং 888sport apk ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা সংযোজন প্রয়োজন। আইন করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকেও শিক্ষার আবশ্যিক মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতিদান বিশেষ জরুরি। শিক্ষা কমিশন (১৯৭৪) ও বাংলাভাষা কমিটির রিপোর্ট (১৯৮৩) বাস্তবায়ন হবে উচ্চপর্যায়ের বাংলাভাষা শিক্ষা ও বাংলা প্রচলনের জন্য বিশেষ কার্যকর।

বারো

ভাষা-আন্দোলনের অর্ধ-শতক পেরিয়ে গেছে – মুক্তিযুদ্ধের তিন দশক অতিক্রান্ত – কিন্তু এখনো কোনো পর্যায়েই বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠা ও প্রচলন নিশ্চিত ও সফল হতে পারেনি। বাংলা-প্রচলনের ক্ষেত্রে আগানো-পিছানো নীতির টানাপোড়েন আজ শিক্ষা কিংবা প্রশাসনের ব্যবহারিক ক্ষেত্রকে দ্বিধান্বিত করে তুলেছে। বাংলা প্রবর্তন-প্রচলনের প্রতিজ্ঞা ও দায়বদ্ধতা থেকে আমরা সরে আসতে পারিনা, কোনো যুক্তিতেই নীরব কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। যদি তাই হয়, তাহলে তা হবে ভাষা-আন্দোলন ও মুুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এবং জাতীয় আকাক্সক্ষাকে অস্বীকার করা। এই প্রবণতা লক্ষ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান যে-মন্তব্য করেছেন তা আজ আমাদের 888sport app download for android রাখা প্রয়োজন :

888sport apps নামটা আছে, কিন্তু এ কোন 888sport apps? 888sport apps নামটা থাকবে। কিন্তু তা 888sport apps হবে, না ক্ষুদ্রতর পাকিস্তানে পরিণত হবে, তা নির্ভর করবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ আমরা কতটুকু বাঁচিয়ে রাখতে পারব, তার ওপর। 888sport apps হবে কি-না, তা নির্ভর করবে জীবনের সকল স্তরে মাতৃভাষার প্রয়োগ কতখানি সফল হচ্ছে, তার ওপর।৩৪

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হয়, আমাদের ভাষার লড়াই এখনো শেষ হয়নি, হয়তো এ-লড়াই কাল থেকে কালান্তরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে। সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিম ক্ষোভে-খেদে উচ্চারণ করেছিলেন :

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণএ না জানি॥

দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে না যুয়াএ।

নিজ দেশ ত্যাগি কেন বিদেশ না জাএ ॥

– কবির এই বক্তব্য কী আজো প্রযোজ্য নয়?

তথ্যনির্দেশ

১. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মাতৃভাষার সপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (888sport app, ১৩৯০; পৃ. ১) গ্রন্থে উদ্ধৃত।

২. ঐ; পৃ. ৩৫-৩৬।

৩. নীলরতন সেন সম্পাদিত, বাংলা বিদ্যাচর্চা (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৮১); পৃ. ৪৬।

৪. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পূর্বোক্ত; পৃ. ৩৯।

৫. মনসুর মুসা, ভাষাচিন্তা : প্রসঙ্গ ও পরিধি (888sport app, ১৩৯৮); পৃ. ১০৩।

৬. 888sport apps শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪ : সার-সংকলন (শিক্ষাবার্তা প্রকাশনা, 888sport app, প্রকাশকালের উল্লেখ নেই); পৃ. ২০।

৭. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, ‘সরকারি ক্ষেত্রে বাংলা প্রচলন : প্রগতি ও অন্তরায়সমূহ’, উত্তরাধিকার, শহীদ দিবস 888sport free bet ১৯৭৪। মনসুর মুসার পূর্বোক্ত গ্রন্থে উদ্ধৃত; পৃ. ১১২।

৮. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ভাষা আন্দোলন : শিক্ষায় ভাষা পরিকল্পনা (888sport app, ১৩৯৮); পৃ. ৫৯।

৯. ঐ; পৃ. ৬০।

১০. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, 888sport appsে উচ্চশিক্ষা : সংকট ও সম্ভাবনা (888sport app, ২০০০); পৃ. ১৪১।

১১. বদরুদ্দীন উমর, শিক্ষা ও শিক্ষা আন্দোলন (888sport app, ২০০১); পৃ. ৬২।

১২. রবীন্দ্র-রচনাবলী, অষ্টাদশ খণ্ড (পুর্নমুদ্রণ, বিশ্বভারতী, ১৩৬১); পৃ. ৫০৬-০৭।

১৩. আনিসুজ্জামান, বাংলাভাষা ও 888sport apps, 888sport cricket BPL rateের 888sport live, বাংলা একাডেমী, 888sport app; পৃ. ১৮।

১৪. শিক্ষাবার্তা (মাসিক), অক্টোবর ২০০১; পৃ. ১৩।

১৫. মনসুর মুসা, পূর্বোক্ত; পৃ. ১০৩।

১৬. দৈনিক সংবাদ, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৩।

১৭. ঐ।

১৮. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, পূর্বোক্ত; পৃ. ৪৮।

১৯. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৮।

২০. আনিসুজ্জামান, পূর্বোক্ত ; পৃ. ১।

২১. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ৮।

২২. আনিসুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৩।

২৩. বদরুদ্দীন উমর, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৫।

২৪. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৬।

২৫. মনসুর মুসা, পূর্বোক্ত; পৃ. ১০৪।

২৬. রফিকুল ইসলাম, মাতৃভাষার প্রচলন ও আমাদের স্ববিরোধিতা, 888sport cricket BPL rateের সংকলন, বাংলা একাডেমী, 888sport app; পৃ. ১০৩।

২৭. মনসুর মুসা, 888sport appsের রাষ্ট্রভাষা (প্রথম পুনর্মুদ্রণ, 888sport app, ১৪০৯; পৃ. ৩১) গ্রন্থে উদ্ধৃত।

২৮. ভাষাচিন্তা : প্রসঙ্গ ও পরিধি, পূর্বোক্ত; পৃ. ১২৬-৭৫।

২৯. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা (তৃ-স; কলকাতা, ১৩৫৬); পৃ. ২২১।

৩০. আনিসুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৪।

৩১. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ৯৫।

৩২. 888sport appsের রাষ্ট্রভাষা, পূর্বোক্ত; পৃ. ৪৪।

৩৩. ক. ভাষাচিন্তা : প্রসঙ্গ ও পরিধি, পূর্বোক্ত; পৃ. ১১৯-২০।

   খ. 888sport appsের রাষ্ট্রভাষা, পূর্বোক্ত; পৃ. ৪৩।

৩৪. আনিসুজ্জামান, পূর্বোক্ত; পৃ. ১৩।