রফিক কায়সার
প্রস্ত্ততি এবং সময় নিয়ে রশীদ করীম তাঁর প্রথম 888sport alternative link উত্তম পুরুষ প্রকাশ করেন। 888sport live footballচর্চা শুরু করেন চল্লিশের দশকে, চল্লিশের শেষ ভাগ থেকে 888sport live footballচর্চায় স্বেচ্ছাকৃতভাবে বিরতি দেন। ছোটগল্প দিয়ে 888sport live footballজগতে প্রবেশ। পরে ঔপন্যাসিক হিসেবেই তিনি প্রতিষ্ঠা পান। সমালোচনা 888sport live footballেও তাঁর অবদান রয়েছে। সমসাময়িক লেখকদের নিয়ে লিখেছেন, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকদের কোনো রচনা মনে ধরলে প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন, নিজের লেখা সম্পর্কেও প্রশংসাকাতর ছিলেন। বলা যায়, নিজের লেখার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন – একটু বৈশিই ছিলেন। তাঁর 888sport alternative linkের 888sport free bet হাতেগোনা নয়, মাহমুদুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা হাসান আজিজুল হকের মতো বারোটি 888sport alternative link লিখেছেন রশীদ করীম। এর মধ্যে বহুল আলোচিত 888sport alternative link হিসেবে বিবেচিত হয়েছে উত্তম পুরুষ, আমার যত গ্লানি এবং প্রসন্ন পাষাণ। বাকি নয়টি 888sport alternative link এই তিনটি 888sport alternative linkের মতো পাঠকের নজর কাড়েনি। তাঁর প্রথম 888sport alternative link উত্তম পুরুষ (১৯৬১) এবং প্রসন্ন পাষাণ (১৯৬৩) পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী দ্বিতীয় 888sport alternative link সময়ের পাঠক এই দুই 888sport alternative linkকে যথেষ্ট ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। এমনকি ‘হুমায়ূন’ ঢেউয়ের শীর্ষ সময়েও উত্তম পুরুষের দুই দফায় সংস্করণ তাঁর নিজের রচনার প্রতি প্রগাঢ় আস্থাশীলতারই কার্যকারণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। 888sport alternative linkের পাঠক-চাহিদা নয়, রশীদ করীমের আস্থাশীলতার মূলে রয়েছে তাঁর আন্তরিকতা। বিষয়বস্ত্ত এবং চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই সততার পরিচয় দিয়েছেন – এই ক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো কতটুকু 888sport live footballসফল হয়েছে সে-বিচার পরের বিষয়। দ্বিতীয়ত, নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে এসে লেখেননি, একটা ছকের মধ্যে থেকেছেন, ছকের বাইরে আসেননি। ফলে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মধ্যে অনেক সময় যান্ত্রিকতার আভাস ফুটে উঠেছে। পরিলক্ষিত হয়েছে পৌনঃপুনিকতার অভিব্যক্তি। তারপরও পাঠক তাঁর সৃষ্ট চরিত্র সেলিনা বা আয়েশাকে অভিন্ন বলে মনে করলেও, গল্প বলার গুণে তাদের আলাদা করে ভাবতে পারে। এ-প্রক্রিয়া আসলে পাঠকের ভাবনাকেই সমৃদ্ধ করে। পাঠকের ভাবনাকে রশীদ করীম কখনই যৌনতার আবেশে স্পষ্ট করতে চান না। যেমন সেলিনার যাপিত জীবনে যৌনতার অনুভূতি সম্পূর্ণ আড়াল হয়ে থাকে, সামনে চলে তাঁর নিজস্ব বোধ এবং সামাজিক অবস্থানজনিত কারণে সৃষ্ট মানসিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি। লেখক অস্পষ্ট রাখেন সেলিনার অভিসারের যুক্তি-শৃঙ্খলার বিন্যাসকে, বরং পাঠককে ভাবিত করেন সেলিনার বিষয় নিয়ে ভাবতে। ফলে পাঠক এবং লেখকের মধ্যে তৈরি হয় চরিত্র নিয়ে ভাবনার ঐক্য, যে-ঐক্যের সূত্র রশীদ করীমের গদ্যশৈলী। যে-গদ্যশৈলীর আবর্তে কাহিনি এগিয়ে যায়, মোড় নেয়, বাঁকও নেয়, বাঁক নেওয়ার সময় হয়তো কোনো কোনো ঘটনাক্রম হারিয়ে ফেলে কাহিনিসূত্রের পরম্পরাকে, যার অভিক্ষেপ আমরা উত্তম পুরুষে পাব। রশীদ করীমের গল্প বলার কৌশল স্বতঃস্ফূর্ত বলেই হয়তো অনেক সময় তিনি কাহিনিকে সুনির্দিষ্ট অবয়ব দিতে পারেন না বা চান না। তাঁর 888sport alternative linkে কাহিনির বিস্তার ঘটে আত্মজৈবনিক বচনে। এই প্রক্রিয়া রশীদ করীমের পছন্দের এবং স্বাচ্ছন্দ্যেরও পরিধি। আর আত্মজৈবনিক প্রক্রিয়ায় পাঠকের আস্থা অর্জিত হয় দ্রুতলয়ে। এই রীতিরও সীমাবদ্ধতা আছে। কাহিনির কথকই মুখ্য। অন্যরা ক্রমশ গৌণ হয়ে আসে। ব্যক্তির প্রাধান্যই অন্যদের বিকাশকে বা বিবর্তনকে ক্ষুণ্ণ করে। উত্তম পুরুষের শুরুতেই রশীদ করীম আখ্যান সম্পর্কে একটা বয়ান দিয়েছেন। নায়কের জবানীতে। নায়ক শাকের নিজেকে আদর্শবান বা নীতিবাদী মানুষ বলে দাবি করেনি। ভালো-মন্দ, দোষ-গুণ নিয়ে সে একজন গড়পড়তা মানুষ। নিজেকে আত্মকেন্দ্রিক বলে দাবি করলেও পুরো 888sport alternative linkে তার অবস্থানটা একজন সামাজিক মানুষের। কর্তব্যনিষ্ঠ, বন্ধুবৎসল এবং দায়িত্বশীল। তার মধ্যে আছে পরিমিতিবোধ এবং সাফল্য-মর্যাদার প্রতি সচেতনতা। বয়সের চাইতে সে একটু বেশি পরিণত মানসিকতার তরুণ। লেখক সেভাবেই তাকে নির্মাণ করেছেন। চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকের বাংলা 888sport alternative linkের নায়কদের সব গুণই তার মধ্যে আছে – সুদর্শন, মেধাবী, সত্যনিষ্ঠ, সাহসী। ভালো ফুটবল খেলোয়াড়ও সে। কলকাতার বনেদি বাঙালি মুসলমান পরিবারের ছোট ছেলে। মা-ন্যাওটাও বটে। একদা মানে দুই পুরুষ আগে তাদের প্রভাব ছিল। শাকেরের দাদার চাকরির সুবাদে। এখন তাদের পরিবারে অর্থকষ্ট আছে তবে অসচ্ছল বলা যাবে না। শাকেরের বাবা একজন সাব-ডেপুটি আমলাতন্ত্রের পদ সোপানে এদের অবস্থান ছিল নিচের দিকে, ক্ষমতাও কম, আয়ও কম। তিন-চার পুরুষ ধরে এরা সরকারি চাকুরে। বলা যায় রাজভক্ত পরিবার। জীবিকার জন্যই এই পরিবারের অধীত বিষয় ইংরেজি। শাকের তার পরিবারের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। তার বাবা মেজাজি। দাদা আরো বেশি ক্ষমতাবান ছিল বলে কলকাতার মুসলিম সমাজে তাঁকে নিয়ে একসময় কিংবদন্তি ছিল। সে শাকের তার পরিবারকে নিয়ে চাপাভাবে হলেও গর্বিত। বাবার সঙ্গে দূরত্ব শুধু তার মেজাজের জন্য নয়, তার অবস্থানের জন্যও, তিনি কলকাতার বাইরে থাকেন। বদলির চাকরি। ছেলেদের ও স্ত্রীকে কলকাতায় রেখেছেন, ছেলেদের ‘মানুষ’ করার প্রয়োজনে। বাবা নয়, মা-ই শাকেরের সবচেয়ে কাছের মানুষ। বড় দুই ভাই তার চাইতে বয়সে বড় বলে তাদের রয়েছে স্বাভাবিক দূরত্ব। উত্তম পুরুষের মূল উপন্যানের পাশাপাশি আছে কয়েকটি উপাখ্যান। তার মধ্যে শাকেরের ছেলেবেলার ঈদের আগের দিনের বর্ণনার মধ্যে আশি দশক আগের কলকাতার মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা প্রতিচ্ছবি আছে। আছে ঈদের দিনের প্রস্ত্ততি, খাদ্য সম্ভার, সামাজিকতা এবং ঈদের আনন্দের কথা। এই বর্ণনা পড়তে পড়তে আমরা জানতে পারি কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের বাগ্বিধির প্রসঙ্গ। রশীদ করীম মাত্র একটি বাক্য প্রয়োগ করে কলকাতার মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারের বাচনভঙ্গির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। একসময় রান্নাঘর থেকে দাদি ডাক দেন : ‘দুলহীন বিবি, এদিকে এসো, কাজ আছে।’
‘দুলহীন বিবি’ মানে আমাদের অতি পরিচিত ‘বউমা’। বোঝাই যায়, গত শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত কলকাতার মুসলিম অন্দরমহলে উর্দু বা ফার্সি শব্দের ব্যবহার ছিল। রশীদ করীমও মাঝে মাঝে কয়েকটি ফার্সি শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন খুশনসিব, নেক, খেলাপ বা তরিবত, শুনতে ভালোই লাগে। লেখক তাঁর ছেলেবেলার 888sport sign up bonusকে শব্দ, গন্ধ এবং বর্ণ দিয়ে ধরে রাখতে চান। কলকাতা তাঁর প্রিয় শহর। এখনকার জল-হাওয়া, পথঘাট, মানুষজন উত্তম পুরুষের আরেকটি প্রসঙ্গ। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, ওয়াসেল মোল্লার দোকান, ফারপো, কফি হাউস, বসন্ত কেবিন 888sport alternative linkের অনেক চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে আছে। রশীদ করীম আসলে একটা সময়কে ধরে রাখতে চেয়েছেন। চল্লিশের দশকের 888sport appsের কথা বলতে চেয়েছেন। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়গুলোকে রশীদ করীম দেখতে চেয়েছেন তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মধ্য দিয়ে।
যেমন 888sport alternative linkের নায়িকা সেলিনার গোপন অভিসার সাঙ্গ করে বাড়ি ফেরার পর। শাকের একা অন্ধকারে দাঁড়িয়েছিল। তাকে দেখতে পেয়ে তার বন্ধু ও সেলিনার ভাই মুশতাক বলে :
অাঁধারে দাঁড়িয়ে করছিস কী?
বলেই সেও সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ে হাঁফাতে লাগল।
শুনেছিস, খবর শুনেছিস! এই দ্যাখ টেলিগ্রাম। স্টেটম্যানের বিশেষ 888sport free bet। খবর জাপানিরা পার্ল হারবারে বোমা ফেলেছে – যুদ্ধ ঘোষণা না করেই।
তখন আশ্চর্য বা আতঙ্কিত হবার মতো মনের অবস্থা আমার ছিল না।
যুদ্ধের সংবাদকে রশীদ করীম একটা প্রতীকী দৃশ্যে রূপান্তরিত করেন, আবার অনিমার জন্মদিনের পার্টি শেষ করে শাকের ফেরার পথে দেখতে পায় ভিখারিরা মিষ্টির দোকান লুট করেছে। অনিমার বাসা থেকে খুশি মনে ফেরেনি। তর্ক করেছে শাকের। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে, জিন্নাহকে নিয়ে, পাকিস্তান রাষ্ট্রকে নিয়ে। উত্তম পুরুষের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের জটিলতা, সংঘাত ও বিরোধ এর বিষয়টি। ছেলেবেলায় স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার, ছোঁয়াছুঁয়ির বিষয়টিকে লেখক শাকের চরিত্রের অনুষঙ্গে তুলে ধরেছেন। শাকের নিজে জিন্নাহভক্ত, পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিশ্বাসী, হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক অবস্থান এবং ভিন্নতাকে সে মানে। বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতাগুলো বস্ত্ততপক্ষে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাজনিত কারণে সৃষ্ট। রশীদ করীম কেবল কাহিনির অনুষঙ্গে এবং চরিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়গুলোকে ব্যবহার করেছেন। তৈরি করেছেন হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে নিজস্ব বয়ান। এড়িয়ে যাননি। পাশ কাটাননি। এখানেই তাঁর সততা এবং আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধই হয় না। পঞ্চাশ বছর আগে সমকাল পত্রিকা রশীদ করীমের উত্তম পুরুষের ধারাবাহিক রচনা স্থগিত করে লেখকের ভিন্নমতকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি। দ্বিতীয়ত রশীদ করীম তাঁর রচনায় কখনই কোনো বিশেষ সম্প্রদায়কে আঘাত করে কিছু লিখেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সমকালের উল্লিখিত কার্যক্রমটি অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলেই প্রতীয়মান হয়।
উত্তম পুরুষের মূল বিষয় অবশ্যই হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নয়। মূল বিষয় শাকেরের অসম প্রণয়। পুরো 888sport alternative linkে তিনটি 888sport promo code চরিত্রের নৈকট্য লাভ করে শাকের। কিন্তু বাধা আসে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। প্রথমে ধরা যাক সেলিনার কথা। বয়সে বড়। ঘরও বড়। সেলিনা শাকেরের বন্ধু মুশতাকের বড় বোন। ওদের বাবা বড় চাকুরে। সুপারিনটেনন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার। শাকেরের বাবার চাইতে বেশ কয়েক ধাপ ওপরে তার অবস্থান। পরিবারের সবাই কম-বেশি এই পদমর্যাদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। খেলার মাঠ থেকে, শাকেরের খেলা দেখে অভিভূত হয় মুশতাক। তাকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে, যদিও সে নিজে খেলেছে মুশতাকের বিপক্ষে। শাকেরের উপস্থিতি ওর বোন সেলিনা পছন্দ করেনি। বোধকরি পছন্দ হয়নি মুশতাক ও সেলিনার বাবা এহসান সাহেবের :
তোমার আববার নাম কী?
এহসান সাহেবের প্রশ্ন।
সৈয়দ আবু নাসের।
তিনি কী করেন?
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
এহসান সাহেব কী যেন ভাবলেন। তারপর আবার প্রশ্ন করলেন : তোমরা আগে কোমেদান বাগান লেনে থাকতে না?
– জি!
তোমার আববা ডেপুটি, না সাবডেপুটি?
চোর ধরা পড়লে যেমন হতবুদ্ধি হয়ে যায়, আমি সেই রকম মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। বস্তত আমার আববা সাবডেপুটি কালেক্টর। কিন্তু সেই বয়সেই আমার এই এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। আববার এই পরিচয়টা তেমন গৌরবের নয়। অন্য নিকট আত্মীয়রা কেউ ডি-এস, কেউ ডেপুটি সেক্রেটারি। আমি দেখেছি, তারা পর্যন্ত আববার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না।
তাই এহসান সাহেবকে আমি বলতে পারিনি আমার আববা সাবডেপুটি, একটু বাড়িয়ে বলেছি। ডেপুটি। কিন্তু এইভাবে ধরা পড়ে গিয়ে আমি ঘামতে লাগলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে দুটি প্রখর চোখের দৃষ্টি আমার দিকে কঠিন প্রশ্ন চিহ্নের মতো নির্মম প্রত্যাশায় উদ্যত হয়ে থাকল, সেলিনার চোখের ভ্রুকুটি। তার ঠোঁটের কোণে প্রথমার চাঁদের মতো তির্যক হাসি।
সেলিনার তির্যক হাসিটি অনেকাংশে প্রতীকী। পাঠকের কাছে মনে হবে সেলিনা শাকের বোধহয় জুটি বাঁধবে। না, গল্পটা এমন হয়নি। সেলিনা তার 888sport promo codeসুলভ প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতে পারে, শাকেরের হীনমন্যতাকে। পরের দৃশ্যে দেখব সেলিনার নির্দয় মন্তব্য।
এই বুঝি তোমাদের বাড়ি?
আমি কোনো জবাব দিই না।
আর ওই যে, বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল – সে কে?
– আমার আম্মা।
– ও সরি! আমি মনে করলাম কোনো ঝি বুঝি।
রশীদ করীম একটু উঁচু পর্দায় পাঠকের আবেগকে নাড়া দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরিত্রের ভারসাম্য। আমরা এই সংলাপে লক্ষ করব সেলিনার অসহিষ্ণু এবং ঔদ্ধত্যকে অর্থাৎ শাকেরের হীনমন্যতার বিপরীতে সেলিনার অসহিষ্ণু মানসিকতার মধ্য থেকে লেখক নির্মাণ করতে চেয়েছেন মানবিক সমীকরণ। বিপরীতধর্মী প্রবণতার মধ্যকার সংশ্লেষে গড়ে উঠবে ভাব বা মায়া অথবা ভালোবাসার সমীকরণ। তবে লেখক অন্তরালে রেখেছেন তার গোপন অভিপ্রায় অর্থাৎ সেই বঙ্কিমী প্রবচন, ‘বাল্য প্রণয়ে কিছু অভিসম্পাত থাকে।’ আভাস বা ইঙ্গিতে পাঠকের মধ্যে সঞ্চারিত করেন সম্ভাব্য প্রণয়ের সম্পর্ক। শাকের-সেলিনার সম্পর্ক কী ভালবাসা বা প্রণয়ের স্তরে উপনীত হয়েছিল, এই প্রশ্নকে আড়ালে রেখে রশীদ করীম কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পরিণতির দিকে। মাঝে মাঝে তৈরি করে দেন পাঠকের উৎকণ্ঠা, সংশয় এবং দোলায়মান পরিস্থিতির। এতে করে হ্রাস পায় কাহিনিগত শৃঙ্খলা।
যেমন যে-ঘটনার মধ্য দিয়ে সেলিনার গোপন অভিসার তার সাক্ষী দুবারই শাকের। যে-পুরুষের সঙ্গে সেলিনার প্রণয় সে দুবার পাঠকের সমীপে এসেছে, তবে দৃশ্যমান হয়নি, আমাদের কাছে দৃশমান শাকের। সেলিনার প্রতি তার দুর্নিবার আকর্ষণ বা মোহ আমাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হলেও সেলিনার খিদিরপুর অভিসারযাত্রা আমাদের উৎকণ্ঠার মধ্যে নিয়ে যায়। আমরা ভাবতে থাকি সেলিনা কি প্রতারিত হচ্ছে, অথচ উত্তেজনার বশে সে কক্ষচ্যুত অথবা অন্য কোনো দুর্নিরীক্ষ্য কারণে সে কি তবে এই অজ্ঞাত মানুষের কাছে যায়? আমাদের কাছে অস্পষ্টই থাকে সেলিনার অভিসার উপাখ্যান। আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শাকের এবং সেলিনার শারীরিক ভাষা। শেষ পর্যন্ত সেলিনার গোপন অভিসারকে রশীদ করীম এসে উহ্য রেখে, প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মীয় নৈতিকতাকে :
তুমি বড় বেশি কল্পনা করছ। ইতরটা শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। তাইতেই আমি নিঃস্বের মতো উদ্ভ্রান্ত বোধ করছিলাম। ভুলে যেও না, আমি মুসলমানের মেয়ে, আমার অধঃপতনের একটা সীমা আছে।
সেলিনার এই নৈতিকতার বিপরীতে শাকেরের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনাটিকে রশীদ করীম বিবেচনায় আনেনি। সেলিনার গোপন বা অসামাজিক প্রণয়ের সাক্ষী শাকেরকে সে ভয় পায়, ভয় থেকে আসে প্রতিশোধস্পৃহা, রাতের বেলায় বাড়িতে আসতে বলে চূড়ান্ত অবমাননা করে শাকেরকে। পরে অবশ্য সে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে নিজের মতো করে :
সেলিনা কোনোরকম ভূমিকা না করে বললো :
সেদিন রাত্রের ব্যবহারে তুমি নিশ্চয়ই খু-উ-ব অবাক হয়েছ। তাই না? সেই যেদিন তোমাকে ডেকে এনে ধরিয়ে দিলাম। খুবই অবাক হয়েছ। তাই না? কিন্তু তুমি আমার সম্বন্ধে বড় বেশি জান। তাই তোমার কথা কেউ যাতে বিশ্বাস করতে না পারে সেই জন্য আমাকে এই কৌশল করতে হয়েছিল। পারলে আমাকে মাফ করো। আবার দেখা হবে।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, সেলিনার নৈতিকতার বিষয়টি স্বার্থবোধতাড়িত উক্তি, হৃদয়সঞ্জাত উক্তি নয়, বস্ত্ততপক্ষে লেখক চাননি সেলিনা সম্পর্কে উত্থাপিত হোক কোনো নৈতিক প্রশ্ন, ধর্মীয় মূল্যবোধের মধ্যে দিয়ে প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছেন। শাকেরের দ্বিতীয় ভালোলাগা মেয়েটি চন্দ্রা। হতদরিদ্র পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। শাকেরের মেধাবী বন্ধু শেখরের বোন। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারটিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন লেখক। আর্থিক ও নৈতিক সংকটের ঘনঘটাগুলো যেন বেশি মাত্রায় নাটকীয়। শেখরের মা-বাবার নৈতিক স্খলন কাহিনির প্রয়োজনে দ্রুত কম সময়ের মধ্যে ঘটে গেছে। হিন্দু বলে চন্দ্রার সঙ্গে শাকেরের প্রণয় শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেছে। তবে সেলিনার চাইতে শাকের চন্দ্রার সঙ্গে কথা বলেছে সহজ, সাবলীল এবং সানন্দে। সেলিনা-শাকেরের সম্পর্কে কোথায় যেন অদৃশ্য দেয়াল ছিল। লেখক ইঙ্গিতে, আভাসে আমাদের বলে দিয়েছেন, যদিও স্পষ্ট করেননি। ঔপন্যাসিক হিসেবে এখানেই তার জিৎ। হেরে গেছেন নিহার ভাবি আর শাকেরের দেবর-ভাবির সনাতনী সম্পর্ক বিনির্মাণের প্রশ্নে। নিহারকে বড় বেশি গ্রাম্য, স্থূল করে এঁকেছেন। এতটা তার প্রাপ্য ছিল না। রেস্তোরাঁয় যে পুরো এক বোতল সস চাওয়া বা যখন-তখন ব্লাউজের বোতাল খুলে ফেলা শোভন নয়, শালীনও নয়। শাকেরকে কাহিনির প্রয়োজনে এই 888sport promo codeর সান্নিধ্যে এনেছেন। তবে শেষ দৃশ্যটি মনোরম। শাকের অনুশোচনার অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে :
আমি এখনো যা করিনি আজ তাই করলাম। এগিয়ে গিয়ে নত হয়ে পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলাম। আমার চোখের এক ফোঁটা অশ্রু তার পায়ের পাতার ওপর গড়িয়ে পড়ল। মুখ ফুটে যা বলতে পারলাম না, এক ফোঁটা অশ্রু তাই বলে দিল।
নিহার ভাবিকে দিয়ে সব অসম্পূর্ণতা যেন উল্লিখিত বাক্য সমুচয় দ্বারা দূর হয়ে যায়। বিষয়টি রশীদ করীমের কথা888sport live footballের অন্যতম শক্তি। তাঁর গদ্য ভাষায় রয়েছে সাবলীলতা এবং স্বতঃস্ফূর্ততার স্পর্শ, সঙ্গে যুক্ত থাকে পরিমিতি বোধ এবং বিষয় সম্পর্কে দখল। যেমন 888sport alternative linkে ফুটবল এবং ক্যারম খেলার রচনা আছে। দুটো খেলা সম্পর্কে লেখক সম্যকভাবে অভিহিত। বর্ণনার বাক্য গঠন এবং শব্দ ব্যবহারে প্রতিফলিত হয়েছে সেই অভিব্যক্তি :
ডান পা দিয়ে বলটি থামালাম। একবার দেখলাম ধাবমান বিপক্ষ খেলোয়াড়রা তখন কোথায়। একবার ভালো করে দেখে নিলাম গোলপোস্টটা কোথায়। তারপর তবলচি যেভাবে তবলা ঠুকে ঠুকে দেখে সেইভাবে ডান পা দিয়ে বলটি টিপে টিপে দেখলাম।
কিন্তু এসবই এক নিমেষের মধ্যে ঘটে গেল।
তারপর বাঁ পায়ের এক মার। জ্যা মুক্ত শরের মতো বলটি পাঁচজন ছেলের মাথার ওপর দিয়ে পোস্টের মধ্যে গলে গেল।
রশীদ করীমের গদ্যে নেই অতিকথন বা অতিশয়োক্তির ভার। পাঠকের মনে এই নির্ভার বর্ণনা স্থায়ী হতে সময় নেয় না। ক্যারম খেলার বর্ণনা করতে গিয়ে রশীদ করীম শাকেরের ইচ্ছাশক্তি এবং জেতার আকাঙ্ক্ষাকে উপস্থাপন করেন টানটান গদ্যে, পাঠকের জন্য নির্মাণ করেন ক্যারম খেলার এক অনন্য বর্ণনা :
দাঁত দিয়ে রুমালটি ভালো করে চেপে ধরলাম। ‘স্টাইকারটাকে’ একেবারে বাম দিকে সামলিয়ে সরিয়ে আনলাম। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে লাগালাম এক ‘রিবাউন্ড’ মার। স্টাইকারটি আমাদের সাদা গুটিটির ঠিক মাথার ওপর বাজ পাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। কালো গুটি দুটি তারই ধাক্কায় সসম্মানে দুদিক সরে গেল, আমাদের সাদা গুটিটি রাজার মতো সমারোহ আর মর্যাদায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেল।
পুরো খেলার ভেতর দিয়ে রশীদ করীম সচেষ্ট হয়েছেন শাকেরের মনো-দৈহিক অনুভূতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও দুটি উপমা ব্যবহার করেছেন যথাক্রমে – ‘বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল’ এবং ‘রাজার মতো সমারোহ আর মর্যাদায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেল’। এই দুই উপমার মধ্যে দিয়ে লেখক শাকেরের ব্যক্তিত্ব এবং মানসিক দৃঢ়তাকে পাঠকের মধ্যে সঞ্চালিত করে দেন। যে সঞ্চালন প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিতে হয় সেলিনাকে :
সেলিনা পর্দার কাছে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বললো :
– থ্যাংকস।
তারপর পর্দা তুলে চলে গেল।
তার হাতের চুড়ি আর পর্দার রিং একসঙ্গে বেজে উঠল।
শাকেরের পৌরুষকে সেলিনা অস্বীকার করতে পারেনি। শাকেরও পারেনি তার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করতে। বুঝতে পারছে অসম প্রণয়। কিন্তু এড়াতে পারে না, অনিবার্যভাবেই শাকের প্রস্ত্ততি নেয় সেলিনার সাথে দেখা করতে :
ভেবেছিলাম যাব না। কিছুতেই যাব না। কিন্তু রাত দশটা বাজতেই কে যেন জোর করে আমাকে বিছানা থেকে তুলে দিল।
সেলিনার স্বভাব-চরিত্র নিয়ে শাকেরের মধ্য অনুভূত হতে থাকে সংশয় এবং উৎকণ্ঠা। তার বাসায় যাবার পথে সে দেখতে পায় :
কড়ায়া বোডের দু’একজন নিশীথিনী শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণবর্ণের গাউন ঝুলিয়ে অলস পদক্ষেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়তো তাদের মন্দির এখনো শূন্য, তাই। তাদের ঠোঁটের জ্বলন্ত সিগারেট অন্ধকারে রক্তচক্ষুর মতো জ্বলছে। এই প্রেম পসারিণীদের পাড়া থেকে তুলে দেয়ার জন্য ভদ্র প্রতিবেশীরা কয়েকবার আন্দোলন করেছে। কিন্তু এখনো তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। হয়তো যুদ্ধের পর তাদের তুলে দেওয়া হবে। তাদেরই পাশ কাটিয়ে আমি অভিসার শুরু করলাম।
পুরো ঘটনার মধ্যে একটি প্রতীক নির্মাণের উপকরণ থাকলেও রশীদ করীম কোনো অখন্ড প্রতীক এই ঘটনা থেকে নির্মাণ করতে পারেননি। বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে গেছে বর্ণনার শেষ অংশে ‘হয়তো যুদ্ধের পর তাদের তুলে দেওয়া হবে’।
বরং শাকেরের স্বপ্নে সেলিনাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা অনেক বেশি ইঙ্গিতধর্মী।
রশীদ করীমের গদ্যের ইতিবাচকতা আমাদের তাঁর নির্মাণ কৌশলের প্রতি আস্থাশীল করলেও তাঁর সপ্রতিভ গদ্যশৈলীতে হিউমারের অভাব পাঠককে এক ধরনের ক্লান্তিতে আক্রান্ত করে, আর সব চরিত্রই যেন একই ভঙ্গিতে সংলাপ উচ্চারণ করে। ফলে গৌণ চরিত্রগুলো প্রাণ পায় না যেমন – সলিল, তার বাচনভঙ্গিতে মনে হবে না যে সে একজন কালোবাজারি। ‘নেড়ে’ ছাড়া কোনো অপশব্দ নেই 888sport alternative linkটিতে। রশীদ করীমের গদ্যে মাজাঘষার মাত্রাটা বেশি বলেই বা হিউমারের ঘাটতি থাকায় তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো দানা বাঁধতে পারে না, হয়ে উঠতে পারে না সময়ের যথাযথ প্রতিনিধি। তবে তাঁর নির্মিত কাহিনিতে পাওয়া যায় অনেক ডিটেইল বা প্রাসঙ্গিক অনুপুঙ্খের বর্ণনা। যেমন চল্লিশের বাংলা সিনেমার জগৎ, সাইগল, পঙ্কজের গান, আকাশ বাণীর সংগীতশিক্ষার আসর, তৎকালীন মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের জীবন আলেখ্যও ফুটে ওঠে। সামাজিক জীবনে হিন্দু-মুসলমান সংঘাতের বিষয়টিও অনিবার্যভাবে চলে ঘরের বাইরের জীবনে। সামাজিক বিষয়গুলোর বর্ণনায় তিনি স্বীকার করে নেন সামাজিক বাস্তবতা। ফলে তাঁর উত্তম পুরুষের আদলে চলে আসে সমসাময়িক জীবনের ধারাভাষ্য। চরিত্রের মধ্যেও থাকে দালিলিক বিশ্বাসযোগ্যতা। উত্তম পুরুষের কাহিনি ও চরিত্রে গত শতাব্দীর নগরবাসী বাঙালি মুসলমান সমাজের যাপিত জীবনের দলিল পাওয়া যাবে। তবে সম্পূর্ণ দলিল নয়, আংশিক বা খন্ডিত দলিল।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.