উত্তর-আধুনিকতার বিচার : ‘মালিতে বা মেয়োতে এর অর্থ কী?’

শিরোনামের উদ্ধৃতাংশটি টেরি ঈগলটনের লিটেরারি থিওরি : এন ইন্ট্রোডাকশন গ্রন্থ থেকে নেওয়া। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের (১৯৯৬, ভারতীয় পুনর্মুদ্রণ, ২০০০, নয়াদিল্লি : মায়া ব্ল্যাকওয়েল) ‘পুনশ্চ’ অংশে
উত্তর-আধুনিকতা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নের একপর্যায়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘উত্তর-আধুনিকতা কি আমাদের সময়ের যথাযথ দর্শন? অথবা, তা কি একসময়ের পশ্চিমা বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীদের একটি বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দলের বিশ্ব-দর্শন, যারা তাদের স্বভাবজাত ঔদ্ধত্য নিয়ে এটিকে সমকালীন সামগ্রিক ইতিহাসের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন? … যেসব সমাজ এখনো সম্পূর্ণভাবে খোদ আধুনিকতাতেই প্রবেশ করতে পারেনি, তাদের কাছে এর অর্থ কী?’ (২০২) ঈগলটন আরো কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, জানতে চেয়েছেন, উত্তর-আধুনিকতা শব্দটি কি ‘নিরপেক্ষভাবে কোনো ভোক্তাসমাজকে বর্ণনা করে, নাকি জীবনের কোনো বিশেষ স্টাইলকে ইতিবাচকভাবে সুপারিশ করে? এটি কি, ফ্রেডরিক জেমসনের ভাষ্যমতে, অন্তিম পুঁজির সংস্কৃতি – সংস্কৃতির ভেতরে পণ্যের চূড়ান্ত প্রবেশ – নাকি এটি হচ্ছে – যেমন এর বিপ্লবী প্রবক্তারা বলে থাকেন – সকল উচ্চবর্গীয়তা, শ্রেণিক্রমতা, মুখ্য-আখ্যানসমূহ (master narratives) এবং পরিবর্তনাতীত সত্যের ওপর এক চোরাগোপ্তা হামলা?’ (২০২) এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর অবশ্য ঈগলটন দেননি, কিন্তু উত্তর-আধুনিকতার প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়েও তিনি স্বীকার করেন, এ-প্রশ্নগুলো অনেক বিতর্কের জন্ম দেবে, যার একটি কারণ এই যে, ‘উত্তর-আধুনিকতা হচ্ছে সকল তত্ত্বের [থিওরির] মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, যার শেকড় প্রোথিত কিছু সুনির্দিষ্ট সামাজিকচর্চা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের গভীরে।’ (২০৩)

ঈগলটন মালি বা মেয়োতে উত্তর-আধুনিকতার যে-প্রাসঙ্গিকতার কথা তুলেছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে উত্তর-আধুনিকতার আলোচনায় তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মালি ও মেয়োর একটু ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণ করলে 888sport appsকে আমরা ঈগলটনের জিজ্ঞাসার মাঝখানে স্থাপন করতে পারব। 888sport appsে উত্তর-আধুনিকতার কী প্রাসঙ্গিকতা? কী অর্থ বহন করে এই নতুন কিন্তু ঈগলটনের ভাষায় ‘শক্তিশালী’ দর্শনটি এদেশের মানুষের কাছে? প্রশ্নটি সংগত, নিঃসন্দেহে, এবং এর উত্তর খোঁজাটাও জরুরি। কেননা, আমরা চাই বা না চাই, আমরা পছন্দ করি বা না করি, উত্তর-আধুনিকতার ঢেউটি – তত্ত্ব এবং চর্চা উভয় অর্থে – আমাদের কূলেও এসে আছড়ে পড়েছে। 888sport appর আকাশ-আঁচড়ানো দালানগুলো দেখুন – উত্তর-আধুনিকতার আদল দেখবেন অনেক দালানে। শিশির ভট্টাচার্য্য, নাজলী লায়লা মনসুর অথবা রনি আহম্মেদের চিত্রকর্ম দেখুন, উত্তর-আধুনিকতার সংবেদী প্রকাশ সেগুলোতে পাবেন। খবরের কাগজে চোখ মেলুন – উত্তর বাংলার পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় বাংলা ভাইয়ের শাসনপ্রতিষ্ঠার খবর দেখবেন। এটিও এক দূরবর্তী এবং নেতিবাচক অর্থে উত্তর-আধুনিকতা, যেহেতু বাংলা ভাই শ্রেণিক্রমের শাসনের বিপরীতে উপহার দিয়েছে নৈরাজ্য; পুলিশি মাস্টারকোডকে মাথার ওপর দাঁড় করিয়ে তৈরি করেছে এক স্থানীয় আখ্যান, যার যুক্তিহীনতাই একটি প্রধান যুক্তি। 888sport appর রাস্তার পাশে বসানো বিলবোর্ডগুলো পড়ুন, অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম, যেমন ‘মডার্ন ইরেকশন’, আপনি প্রচুর কৌতুকের জোগান পাবেন, প্রচুর আয়রনির, প্রচুর আত্মবাচক উপাদানের। এই 888sport live যদি শেষ পর্যন্ত পড়ার ধৈর্য আপনার থাকে, তাহলে
উত্তর-আধুনিকতার সূত্রগুলোর সঙ্গে আপনার অনুধাবনকে মিলিয়ে দেখবেন। একটি সিদ্ধান্তে আশা করি পৌঁছাতে পারবেন যে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলুন (এমটিভি অথবা এফটিভি) আর তরুণ কোনো গল্পকারের গল্পই বলুন (মামুন হুসাইন অথবা হাবিব আনিসুর রহমান), অভিজাত পাড়ার কনভেনশন সেন্টার বলুন অথবা ব্যান্ড মিউজিকের ‘ফিউশন’ পরিবেশনাই বলুন, উত্তর-আধুনিকতার প্রকাশ আছে হাজার জায়গায়। শুদ্ধবাদী আধুনিকবাদীরা এর ‘ছোঁয়া’ বাঁচিয়ে চলতে চান, যেন বা উত্তর-আধুনিকতা এক ধরনের ডেঙ্গু জ্বর, আক্রান্ত হলে নির্ঘাৎ জীবের পরিসমাপ্তি। কিন্তু এর ছোঁয়া অজান্তেই গায়ে লেগে যায় তাদের। হয়তো জেমসনের কথায় সত্যতা আছে, হয়তো পুঁজির অন্তিমকালের সাংস্কৃতিক এক যুক্তির নাম উত্তর-আধুনিকতা, যা পণ্য-সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে, বিশ্বায়নের বড় বড় ঠাকুরের পক্ষে এক চোরাগোপ্তা ওকালতিতে নামে, কিন্তু এর কিছু ইতিবাচক দিকও আছে, অবদানও আছে – সেসব অস্বীকার করার উপায় নেই। আর 888sport appsে উত্তর-আধুনিকতার প্রাসঙ্গিকতা বা অর্থ কী? এ-প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, আছে, প্রাসঙ্গিকতা আছে। অর্থও আছে। তা না হলে এদেশের অনেক স্থপতি, চিত্রকর, গল্পকার, কবি, বিজ্ঞাপনচিত্র-নির্মাতা, স্থাপনা888sport live chatী এটিকে ব্যবহার করতেন না। অথবা তাদের কাজে এর অনুষঙ্গগুলো মূর্ত হতো না।

এই প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি যদিও এই 888sport liveের শেষে গুরুত্ব পাবে, উত্তর-আধুনিকতা-বিষয়ে কোনো আলোচনাতে যে এর অবতারণা একেবারেই জরুরি, তা আমি মনে করি না। একটি তাত্ত্বিক আলোচনা আমরা করতেই পারি। তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর-আধুনিকতা-বিষয়টি আমরা একটি ব্যাখ্যার অঞ্চলে সীমাবদ্ধ রাখতেই পারি, যেখানে ‘তৃতীয় বিশ্বে’র ক্ষেত্রে এর প্রায়োগিক গুণ বা দোষ-বিচার বিবেচ্য না-ও হতে পারে। এ-প্রসঙ্গে কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারের কথা মনে পড়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা বিষয়ে ওই সেমিনারে আমি উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে একটি অ্যাকাডেমিক 888sport live উত্থাপন করেছিলাম। 888sport liveে প্রচলিত তত্ত্বগুলোর একটি সারাংশ দিয়ে উত্তর-আধুনিকতা বিষয়টিকে আমি বোঝার প্রয়াস পেয়েছিলাম। 888sport live পড়া শেষ হলে আমাকে সেমিনারে অংশগ্রহণকারী একজন প্রশ্ন করেছিলেন, একজন তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে উত্তর-আধুনিকতা সম্বন্ধে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা 888sport liveে কেন প্রকাশ পায়নি। প্রশ্নটি একদিক থেকে দেখলে যৌক্তিক,
নিঃসন্দেহে – সেই ঈগলটনের ‘মালি বা মেয়োতে’ এর অর্থ কী, ওই চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে দেখলে প্রশ্নটি প্রাচ্যবাদী ধ্যানধারণাপুষ্ট বলে মনে হবে। ‘তৃতীয় বিশ্ব’ বর্ণনাটিই প্রাচ্যবাদী, মূল্য-বিচারধর্মী। আমি ‘তৃতীয় বিশ্বে’ আছি বলে আমাকে ‘তৃতীয় বিশ্বে’র একজন গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে সবসময়ে সবকিছু মূল্যায়ন করতে হবে; প্রচলিত তত্ত্বগুলো, যেগুলো ‘প্রথম বিশ্বে’ উৎপাদিত, সেগুলো সম্পর্কে ‘প্রথম বিশ্বের’ গবেষকের স্বাধীনতা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না, এটি খুব বিপজ্জনক চিন্তা। কেউ তো অস্বীকার করবে না যে, আধুনিকতা,
উত্তর-আধুনিকতা – এসব তত্ত্ব-চিন্তা পশ্চিমের অবদান, কিন্তু আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় এগুলো এখন এমনভাবে ঢুকে গেছে, খাপ খেয়ে গেছে যে, ‘আধুনিকতা’ বলতে একটি দেশীয়/ স্থানীয় সংস্কৃতিগত পরিচিতিও তো নিজ থেকে দাঁড়িয়ে যায়। এই আধুনিকতাকে ব্যাখ্যা করার সময় সবসময়ে ‘তৃতীয় বিশ্বে’র পরিচিতিকে মস্তিষ্কে রাখতে হবে, তার কোনো কারণ নেই। আমার এক নেপালি বন্ধুর স্ত্রী 888sport apps থেকে সিল্কের কাপড় কিনে নিউইয়র্কের ফ্যাশন-গোষ্ঠীর জন্য সান্ধ্য-গাউন তৈরি করে ওই শহরেই বিক্রি করছেন। এই পোশাক নেপালে কেউ পরে না, যদিও কারো কারো সে-সম্পর্কে ধারণা থাকতে পারে। আমার বন্ধুর স্ত্রী যে-‘আধুনিক’ ফ্যাশনের চিন্তা থেকে গাউনগুলো তৈরি করেন, তা নেপালি নয়। কিন্তু তার উৎপাদিত গাউন একজন শৌখিন নিউইয়র্কবাসী মহিলা কিনছেন, সোৎসাহে গায়ে চড়িয়ে পার্টিতে যাচ্ছেন। আধুনিকতা, দীর্ঘকাল থেকেই, পেটেন্টেড কোনো চিন্তা নয়। যদিও ইউরোকেন্দ্রিক চিন্তায় ‘তৃতীয় বিশ্বের আধুনিকতা’ বিষয়টি অনেক সময় স্ববিরোধী বলে চিহ্নিত করা হয়। সম্প্রতি ভারতীয় নির্বাচনে বিজেপি-জোট যে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ স্লোগান নিয়ে নেমেছিল, এ-সম্পর্কে সরকার থেকে বলা হয়েছিল, বিজেপি-জোট সরকার ভারতকে যে ‘আধুনিক’ একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, স্লোগানে তারই প্রতিধ্বনি রয়েছে। ভারতের মিডিয়াতেই এই ‘আধুনিকতার’ অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে-দেশে অসংখ্য গ্রামে বিদ্যুৎ অথবা বিশুদ্ধ খাবার পানিই পৌঁছেনি, সে-দেশ কীভাবে আধুনিক হয়? যৌক্তিক প্রশ্ন বটে। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়াতেও একই প্রশ্ন যখন তোলা হয় তখন কেউ এ-বিষয়টি উল্লেখ করেন না যে, আমেরিকা খুব আধুনিক একটি দেশ হলেও এর অনেক শহরে মানুষ ফুটপাতে ঘুমোয়। আধুনিকতা যদি একটি বর্ণনাবাচক শব্দ হয়, এবং আপেক্ষিকতা হয় তার একটি শর্ত (যেহেতু চূড়ান্ত অর্থে আধুনিক বলে কেউ কিছু নির্দিষ্ট করতে পারবেন না) তাহলে ‘তৃতীয় বিশ্বে’ এর বর্ণনাটির সঙ্গে একটি কৈফিয়ৎ কেন যুক্ত করে দিতে হবে? একই প্রশ্ন তোলা যায় উত্তর-আধুনিকতার ক্ষেত্রেও। পশ্চিমের এবং আমাদের উত্তর-আধুনিকতার অভিজ্ঞতা কখনো এক হতে পারে না, কিন্তু তাত্ত্বিক আলোচনায়, উত্তর-আধুনিকতাকে একটি ধারণাগত বিষয় হিসেবে বিবেচনার জন্য, দেশজ প্রেক্ষাপটটি মূল নির্ণায়ক কেন হবে? সেটি হবে প্রায়োগিক আলোচনায়, যখন আমরা দেখব উত্তর-আধুনিকতা কীভাবে অনুভূত হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি এবং জীবনচর্চার কিছু অঞ্চলে।

উত্তর-আধুনিকতা, এই বিশ্বায়নের যুগে, পশ্চিমকে, ‘প্রথম বিশ্ব’কে, পূর্ব অর্থাৎ ব্যাপকভাবে ‘তৃতীয় বিশ্বে’র কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। একদিকে তা পূর্ব-পশ্চিমের মূল্যবিচারকে অস্বীকার করছে; স্থানীয় সংস্কৃতির জয়গান গাইছে; কেন্দ্রকে ভেঙে প্রান্তের কাছে হাজির করার, তার সীমানাচক্র লোপ করার কথা বলছে, অন্যদিকে প্রসার ঘটাচ্ছে পশ্চিমের পণ্য-সংস্কৃতির। বড়ই গোলমেলে ব্যাপার। কিন্তু ‘প্রথম’ ও ‘তৃতীয়’ বিশ্বের এই শ্রেণিকরণকে প্রকাশ্যে নাকচই করছে উত্তর-আধুনিকতা। পাল্লাটা তার দিকেই ভারি। সেজন্য ‘মালি বা মেয়ো’র মতো 888sport appsে
উত্তর-আধুনিকতার প্রাসঙ্গিকতা-আলোচনায় এই বিষয়টিকে আমলে আনা যেতে পারে।

দুই

উত্তর-আধুনিকতা বিষয়টি গোলমেলে, সন্দেহ নেই, কটা এরকম তত্ত্ব/ মতবাদ পৃথিবীতে এসেছে, যারা এসেই জানান দিয়েছে নিজেদের প্রস্থানের? উত্তর-আধুনিকতা, (postmodernism) যে একটি ওংস (তত্ত্ব/ বাদ)
এ-বিষয়টি এর ইন্তেকালের আগাম খবর জানিয়ে দেয়, কারণ এর একটি প্রধান আক্রমণের লক্ষ্য হচ্ছে তত্ত্বের – ওংস-এর – এককেন্দ্রিকতা বা আধিপত্য। উত্তর-আধুনিকতাকে কীভাবে বিচার করা যায়? উত্তর (পরবর্তী অর্থে) আধুনিকতা হিসেবে? বিপরীত-আধুনিকতা অথবা আধুনিকতা-বিরোধিতা হিসেবে? উত্তর-আধুনিকতা কি আধুনিকতার প্রবণতাগুলোকে সামনে নিয়ে যায়, আত্মস্থ করে, সম্প্রসারিত করে, অর্থাৎ একটি স্বাভাবিক স্রোতপ্রবাহে আধুনিকতাকে একটি পূর্ণতর রূপ দেয়? নাকি আধুনিকতাকে তা প্রতিহত করে, এর বিরোধিতা করে, একে অতিক্রম করে যেতে চায়, এর আইকনগুলোকে ভেঙে ফেলতে চায়? উত্তর-আধুনিকতা কি কোনো সময়চিহ্নবাচক, নাকি এটি কিছু প্রবণতার নাম? নাকি এটি একটি প্রকল্প, যেমন জার্মান পণ্ডিত ইয়ুর্গেন হাবারমাস আধুনিকতাকে, সেই জ্ঞানালোকপ্রাপ্তির যুগ থেকে চলে-আসা আধুনিকতাকে, একটি ‘প্রকল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন (এবং বলেছেন সেই প্রকল্প অসমাপ্ত এবং উত্তর-আধুনিকতা একে অসমাপ্ত রেখে দেওয়ার পক্ষেই ক্রিয়াশীল। তাহলে উত্তর-আধুনিকতাও একটি প্রকল্প।)। বছর চারেক আগে একটি দৈনিক পত্রিকার 888sport live football সাময়িকীতে আমি উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে একটি 888sport live লিখেছিলাম, উত্তর-আধুনিকতাবিরোধী এক চিত্রকর ওই 888sport liveের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, উত্তর-আধুনিকতা আবার কী? যদি আধুনিক হয় আজ, তাহলে উত্তর-আধুনিক তো আগামীকাল। আজকেই আগামীকাল চলে আসে কীভাবে?

গোলমাল আরো আছে। উত্তর-আধুনিকতার নানা প্রকাশকে বোঝাতে বাংলায় উত্তর-আধুনিক এবং আধুনিক-উত্তর – এ-দুটি বর্ণনা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এরা কি একই বিষয় তুলে ধরে? একবিংশ নামের 888sport live footballপত্রের সম্পাদক কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন সে-প্রশ্নের একটি মীমাংসা করতে চেয়েছেন। তিনি তাঁর একটি 888sport liveের শুরুতেই জানিয়েছেন, বিষয়টিকে ‘কেউ বলেন “উত্তরাধুনিক”, কেউ “আধুনিকোত্তর”; অতুল
সেন-অমিতাভ গুপ্ত জুটি “উত্তর-আধুনিক” – এই বিশ্লিষ্ট জোড়াকে নমস্য করেছেন : রুদ্র কিংশুক প্রমুখের পছন্দ “অধুনান্তিক” : প্রভাত চৌধুরীর সম্পাদনায় বই বেরিয়েছে পোস্টমডার্ন বাংলা 888sport app download apk। নানা নামে একই প্রপঞ্চকে ধরবার প্রয়াস, তবু যেন কোনো-একটা অভিধায় সবটা ধরা গেল না বলে কেউ কেউ গাইছেন লালনের
ভঙ্গিতে – “নড়ে চড়ে হাতের কাছে, খুঁজলে জনমভর মেলে না”।’ 888sport liveের শেষদিকে তিনি 888sport app download apkয় পশ্চিমা পোস্ট মডার্নিজমের বাংলাভাষী চর্চা এবং দেশীয় ঐতিহ্যে লালিত উত্তর-আধুনিক – এই দুই ধারাকে পৃথক করে দেখেছেন। বলেছেন, ‘একদিকে পশ্চিমি “পোস্টমডার্ন” ধারণার অনুগামী শেকড়হীন বায়বীয়তার চর্চা, অন্যদিকে ঐতিহ্য ও স্বদেশকে উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রজ্ঞা দিয়ে খুঁজে নেওয়ার প্রধাবনা – এই দুটি ধারাই পশ্চিমবঙ্গের মতো 888sport appsেও ক্রিয়মান থেকেছে।’ (‘পোস্টমডার্ন লীলাসাম্য ও বাংলা 888sport app download apk’, একবিংশ, ২২, নভেম্বর ২০০৩ : ১৮৯-২১৫)

এই মীমাংসায় উত্তর-আধুনিকতার দু-ধরনের প্রয়োগের নজিরটা পরিষ্কার হয় বটে, কিন্তু উত্তর-আধুনিকতা-বিষয়টি কি তা জিজ্ঞাসার অঞ্চলেই রয়ে যায়।

যদি উত্তর-আধুনিকতার একটি সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমরা এভাবে বলি যে, আধুনিকতার কিছু চিন্তা ও পদ্ধতিগত জটিলতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উত্তর-আধুনিকতা একটি বিকল্প-দর্শন উপহার দিয়েছে – যেমন, সর্বজনীন, নির্বিশেষ বা প্রমিত এবং সময়হীনতার প্রতি আধুনিকতার পক্ষপাতিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উত্তর-আধুনিকতা সেই জায়গায় স্থানীয়, বিশেষ/ নির্দিষ্ট এবং সময়-মধ্যকে অধিষ্ঠিত করেছে, তাহলে ‘আধুনিক’ শব্দটিরও একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞার প্রয়োজন। উত্তর-আধুনিকতাকে যদি আমাদের সময়ের, অর্থাৎ সমকালীন একটি চিন্তা বা দর্শন হিসেবে দেখা হয়, তাহলে উত্তর-আধুনিকতার প্রপঞ্চকেই একটি সময়-কাঠামোতে আটকে দেওয়া হয়, এর অতীত বলে তখন কিছুই থাকে না – অথচ সকল দর্শনেরই একটি অস্তিত্বসূচক অতীত থাকে, যে-অতীতে এর মৌলরূপটি হয়তো থাকে ভিন্ন। 888sport app download for android করা যায় যে, post-modernism শব্দটি উনিশ শতকে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল, যেমন, হাবারমাস জানান, modern শব্দটি, এর ল্যাটিন modernus রূপে সেই পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দেই ব্যবহৃত হয়েছিল – প্যাগান অতীত থেকে খ্রিষ্টান বর্তমানকে আলাদা করে দেখার জন্য। উত্তর-আধুনিকতা কোনো আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঘটনাও নয়, কেননা, লিন্ডা হাচিওন একটি 888sport liveে দাবি করেন, (‘রিপ্রেজেন্টিং দি পোস্ট-মডার্ন’, এ পোস্ট-মডার্ন রিডার, সম্পাদনা জোসেফ ন্যাটোলি ও হাচিওন, ১৯৯৩ : ২৪৪) এটি মূলত একটি ইউরোপীয় ও আমেরিকান ধারণা। হাচিওনের চিন্তাটি কি প্রাচ্যবাদী না প্রকৃত, এটি ঠাহর করতে গেলেও উনিশ ও কুড়ি শতকের মূল বৌদ্ধিক ও ধারণাগত এবং সাংস্কৃতিক মতবাদ ও আন্দোলনগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা আমাদের পেতে হবে। এজন্য
উত্তর-আধুনিকতাকে একটি আপাত নিরীহ এবং পাঠক/চিন্তকবান্ধব দর্শন মনে হলেও (যার বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে আয়রনি, আত্মবাচকতা, বক্রোক্তি, কৌতুক, মশকরা-লঘুত্ব এবং উচ্চ ও নিম্ন888sport live chatের শ্রেণিবিভাগ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা, যে-বৈশিষ্ট্যগুলো অনুধাবনে কোনো বিরাট প্রতিবন্ধকতা আসার কথা নয়) একটি পর্যায়ে
উত্তর-আধুনিকতার পেছনে (বা সমান্তরাল) থাকা আধুনিকতা এবং এর গুরুত্বপূর্ণ সকল অনুষঙ্গ-সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকাটা জরুরি হয়ে পড়ে। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে উত্তর-আধুনিকতা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একটি পাঠ্যবিষয়। এই বিষয়ে যখন ক্লাস নিতে শুরু করি, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ-নিয়ে একটি কৌতূহল লক্ষ করি। কিন্তু এই ‘উপরিতল’ প্রসারকারী দর্শনটির গভীরে যখন প্রবেশ করতে হয়, এবং আধুনিকতা-বিষয়ে একটি রিভিশন দেওয়াটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, তখন কৌতূহলটা একটি অস্বস্তিতে পর্যবসিত হয়। ‘আবার এতটা পড়তে হবে!’ এরকম একটি অনীহাও দেখা দেয়। কিন্তু যখন আধুনিকতার সূত্রগুলো উত্তর-আধুনিকতার সূত্রগুলোর পাশাপাশি রেখে তারা পরীক্ষা করে, তাদের কৌতূহলটা ফিরে আসে, এবং এক ধরনের আনন্দও। কেননা, আধুনিকতার অনেক বিষয়ও তখন নতুনভাবে ধরা পড়ে। কুর্ট ভনেগুট জুনিয়রের দি ব্রেকফাস্ট অফ চ্যাম্পিয়নস এবং গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের স্ট্রেঞ্জ পিলগ্রিমস তখন আধুনিকতার প্রধান টেক্সটগুলো থেকে একটি ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। ভনেগুটের 888sport alternative linkের স্যাটায়ার, প্যারোডি, আত্মবাচন; এর হেত্বাভাস, অনিশ্চয়তা, নিজের অবস্থান নিয়ে ঠাট্টা; এর 888sport live footballশ্রেণির বেড়াভাঙা, সায়েন্স ফিকশন এবং এয়ারপোর্ট-রোমান্সের উপাদানসমূহের যথেচ্ছ ব্যবহার; এর নিশ্চয়তা, চূড়ান্তবাদ এবং যুদ্ধবিরোধী অবস্থান – এ-সবই নতুন মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তখন আধুনিকতার সূত্রগুলো নতুন অর্থ নিয়ে হাজির হয়।

উত্তর-আধুনিকতাকে আমাদের খোলা মন নিয়ে দেখতে হবে। হাবারমাসের ঈগলটনের আপত্তি বা সন্দেহের প্রয়োজন আছে, কিন্তু সিগমুন্ট বওম্যানের মতো উৎসাহ নিয়ে না হলেও একটি মাঝামাঝি অবস্থান থেকেও এর বিচার করা যায়। মার্কসবাদীরা মোটেও এই দর্শনকে পছন্দ করেন না, মানতে চান না, কারণ উত্তর-আধুনিকতা যেহেতু সকল মেটা-ন্যারেটিভ বা মহাআখ্যান ও মোড়লমনা বাচনকে অস্বীকার করে; স্থির, ধ্রুব, একবচনীয় ‘সত্য’ এবং অনড় ‘আদর্শকে’ মানতে রাজি হয় না এবং এর নিরিখে মার্কসবাদকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে, সেহেতু মার্কসবাদীদের আপত্তি থাকতেই পারে ‘পণ্য-প্রসারী, উপরিতল সর্বস্ব এবং বিধ্বংসী’ এই মতবাদের প্রতি। আমি নিজে মার্কসবাদে আস্থা হারাইনি; মার্কসবাদের প্রায়োগিক রূপ, বিশুদ্ধ অর্থে, ইহজীবনে দেখার সৌভাগ্য হবে না, তা জেনেও; কিন্তু উত্তর-আধুনিকতার অনেক দিক আমাকে আকৃষ্ট করে। এর একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক পশ্চাৎভূমি আছে, যেটি আসলে আধুনিকতার। একসময়ে ওই ভূমিতে উত্তর-আধুনিকতার স্থাপনাগুলো যখন দাঁড়াতে থাকে, বেশ কৌতূহলোদ্দীপক হয়ে দাঁড়ায় ব্যাপারটি। কাজেই ওই জ্ঞানতাত্ত্বিকতার অঞ্চলে প্রবেশ করলে উত্তর-আধুনিকতায় পৌঁছার একটি পথ মোটামুটি পাওয়া যায়।

তিন

888sport liveটি যেহেতু উত্তর-আধুনিকতা বিষয়ে, সেজন্য এর পদ্ধতিটাও কিছুটা উত্তর-আধুনিক হলে দোষের কিছু নেই। গবেষণা-888sport liveের ঋজু শৃঙ্খলা মেনে চললে প্রথমে এই দর্শনের ইতিহাস বা প্রেক্ষাপট, তারপর এর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উপাদানসমূহ, এর নানাবিধ প্রকাশ, 888sport live chat 888sport live football সংগীত চিত্রকলা সিনেমা টিভি স্থাপত্য এসব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে সবশেষে একটি সারাংশ নির্মাণের প্রয়াস সেই শৃঙ্খলাতে পড়ে। সে-রকম অগ্রসর হওয়া হয়তো যায়, কিন্তু ভিন্ন-একটা রাস্তায়ও চলা যায়। স্থাপত্যেই প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-আধুনিকতার – এরকম একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সেই ধারণামতো এগিয়ে, এর কিছু সংজ্ঞা ইত্যাদি এবং এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে আধুনিকতার সঙ্গে এর সম্পর্ক-অসম্পর্ক-পার্থক্য ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়। এই
সম্পর্ক-অসম্পর্ক-পার্থক্যটি বেশ কার্যকর হয়, আমি দেখেছি, যেহেতু বেশির ভাগ উত্তর-আধুনিকতাবিরোধী বা এর প্রতি অনাকৃষ্ট লোকজন আধুনিকতাকে উচ্চতর এবং উত্তর-আধুনিকতাকে নিম্নতর দুই দর্শন হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত। তাদের যেহেতু আধুনিকতা-বিষয়ে একটা ভালো ধারণা থাকে, তা থেকে উত্তর-আধুনিকতায় তখন পা রাখতে বেশি বেগ পেতে হয় না। এই পা-রাখাটা কারো কারো কাছে উত্তর-আধুনিকতার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করার জন্য আমন্ত্রণমূলক।

‘উত্তর-আধুনিকতার রাস্তায় হাঁটা’ – এই উৎপ্রেক্ষাটি আমার নয়। এটি উত্তর-আধুনিকতার এক ব্যাখ্যাকারী নিয়াল লুসি-র। তিনি উত্তর-আধুনিক ঔপন্যাসিক টমাস পিঞ্চনের দি ক্রাইং অফ লট ৪৯ শীর্ষক হ্রস্ব 888sport alternative linkের আলোচনাকালে এ-কথাটি বলেছেন (পোস্টমডার্ন লিটেরারি থিওরি, সম্পাদনা নিয়াল লুসি, অক্সফোর্ড : ব্ল্যাকওয়েল, ১৯৯৭)।

তিনি বলতেই পারেন, কারণ তিনি বেশ জোরেশোরেই হেঁটেছেন, এখনো হাঁটছেন।

চার

আরেকজন হাঁটছেন বহুদিন থেকেই, তাঁর নাম চার্লস জেঙ্কস। স্থাপত্য-সমালোচক। তাঁর লেখা দি ল্যাঙ্গুয়েজ অফ পোস্টমডার্ন আর্কিটেকচার (১৯৭৭) বস্তুত শিরোনামে ‘পোস্টমডার্ন’ শব্দটি ব্যবহারকারী প্রথম বই। যাক সে-কথা। চার্লস জেঙ্কস তাঁর এক বক্তৃতায় ঘোষণা দিলেন, ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই, অপরাহ্ণ ৩টা ৩২ মিনিটে আধুনিক স্থাপত্যের মৃত্যু হয়েছে। ওই দিনক্ষণ ঠিক করে কীভাবে মৃত্যু হয়, আধুনিক স্থাপত্যের মতো এক বিরাট প্রাণের? না, জেঙ্কস জানান, ওইদিন ওই সময় আমেরিকার সেন্ট লুইতে এক বিশাল আধুনিক হাউজিং প্রজেক্টকে ধুলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

না, গৃহায়ন-প্রকল্পটি পুরনো হয়ে পড়েনি, শাঁখারিবাজারের দালানগুলোর মতো যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার হুমকিতেও ছিল না সেটি, বরং প্রকল্পটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইস্পাত, কাচ ও কংক্রিটের এক অনন্ত নকলযোগ্য বাক্সসমষ্টি, যাকে মিয়েস ভ্যান ডার রোয়ে বেশ গর্বভরে বলতে পারতেন ‘মেশিন ফর লিভিং’ বা বসবাসের জন্য যন্ত্র হিসেবে। চার্লস জেঙ্কস অবশ্য পুরো বিষয়টি বানিয়ে বলেছিলেন। ওইদিন সেন্ট লুইতে কোনো দালানগুচ্ছ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি। এটিও উত্তর-আধুনিক ন্যারেটিভের একটি বৈশিষ্ট্য। কোনটি প্রকৃত, কোনটি অপ্রকৃত, এই ধান্ধায় পাঠক-শ্রোতাকে রেখে উত্তর-আধুনিকতা সত্য-সন্ধ বা চূড়ান্তবাদী কোনো মত-সিদ্ধান্তের সম্ভাবনাকেই নাকচ করে দেয়। টি এস এলিয়ট তাঁর 888sport app download apkয় দান্তে থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, দি ওয়েস্ট ল্যান্ডের শেষে দু-আড়াই পৃষ্ঠা টীকা-টিপ্পনি জুড়ে দিয়েছেন। এলিয়ট একটি উদ্ধৃতি বানিয়ে দিয়েছেন, ঠাট্টা করে একটি মনগড়া উদ্ধৃতি দান্তের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, এটি ভাবা যায় না। অথচ উত্তর-আধুনিক 888sport live footballে তা হামেশা হয়। উত্তর-আধুনিকতাকে এজন্য চটুলতা, গভীরতা-হীনতা – এসব অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছে। কিন্তু জেঙ্কসের কথায় ফিরে গেলে তাঁর ওই বানোয়াট বর্ণনার একটি প্রতীকী তাৎপর্য উদ্ধার করা যাবে।

জেঙ্কস যে-কাল্পনিক হাউজিং প্রজেক্টের কথা বলেছিলেন, তার বাস্তব রূপ কিন্তু পশ্চিমে প্রচুর ছিল – এখনো আছে। আমাদের আজিমপুর এস্টেটের কয়েকগুণ বড়, কয়েকগুণ আধুনিক এবং ঝকঝকে রূপায়ণ এরকম হাউজিং প্রজেক্টগুলোর উদ্দেশ্য খুবই প্রায়োগিক, যাকে বলে functional। মানুষ কম খরচে উন্নত বাসস্থান পাবে, বসবাসের জন্য একটি যন্ত্র পাবে, যা খুব কার্যকরভাবে তাদের প্রয়োজনগুলো মেটাবে। কিন্তু এসব বাড়ি প্রতিটি একইরকম, প্রতিটি বাড়ি তার ‘চৌকোনাত্ব’ এবং প্রশস্ত লবি, ঝকঝকে সিঁড়ি ও লিফট, হালকা কিন্তু আকর্ষণীয় নির্মাণসামগ্রী সমৃদ্ধ এবং শোভিত হয়ে বেশ গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বাসিন্দাদের তারা কোনো নিজস্ব পরিচিতি দেয় না। আমি বি-২০৩-এর বাসিন্দা। করিম সাহেব সি-২০৩-এর, জেঙ্কস ডি-২০৩-এর। একরাতে জেঙ্কস সামান্য মাতাল হয়ে আমার অথবা করিম সাহেবের বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারেন। এসব দালানে ব্যক্তি অবহেলিত, পদ্ধতি মূল্যায়িত। একসময় দালানগুলো ক্লান্তি উৎপাদন করে, এক ধরনের অনিশ্চয়তাও। সেন্ট লুইয়ে কল্পিত হাউজিং প্রকল্প কেন ভাঙা হলো? কারণ সেখানে রুগ্নতা বেড়েছিল, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছিল, সহিংসতা ও
মাদক-ব্যবহার বেড়েছিল। দেখা গেছে, দালানগুলো ভিন্ন ছাঁদের হলে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক চিহ্নসমৃদ্ধ করা হলে, ওইসব সমস্যা অনেকখানিই চলে যায়। জেঙ্কস বলতেন, একটি দালান হচ্ছে একটি ভাষার মতো, একটি বইয়ের মতো, যাকে পড়া যায়। একই সময়ে একাধিক বক্তব্য দিতে পারে একটি দালান। উত্তর-আধুনিকতাকে তিনি সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘ডাবল-কোডিং হিসেবে’ অর্থাৎ যেখানে ‘আধুনিক কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হবে অন্য কিছু (যেমন একটি প্রথাগত স্থাপত্যশৈলী), যাতে স্থাপত্য জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে পারে, এবং সংশ্লিষ্ট এক 888sport free betলঘু দলের সঙ্গে – অর্থাৎ 888sport app স্থপতিদের সঙ্গে’ (হোয়াট ইজ পোস্ট মডার্নিজম? লন্ডন ও নিউইয়র্ক : সেন্ট মার্টিনস প্রেস, ১৯৮৭ : ১৪)। জেঙ্কস আধুনিক স্থাপত্যে, বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল স্টাইলের স্থাপত্যে যে ‘একভাষিক’ ঋজুতা দেখেছিলেন তার প্রকাশ দেখা যায় ল্য কর্বুসিয়ের, ওয়াল্টার গ্রোপিয়াস বা লুডউইগ মিয়েস ভ্যান ডার রোয়ের কাজে। গ্রোপিয়াস অবশ্য দাবি করেছিলেন যে, ইস্পাত, কংক্রিট ও কাচ স্পেসের ওপর এক নতুন আধিপত্যকে সম্ভব করে তোলে, যা ‘মানবাত্মার নান্দনিক তৃপ্তির জন্য আধুনিকতার উপহার’ (দি নিউ আর্কিটেকচার অ্যান্ড বার্ডহাউস, 888sport app download apk latest version পি. মর্টন শ্যান্ড, লন্ডন : ফেবার অ্যান্ড ফেবার, [১৯৩৫] ১৯৬৫ : ৪০)। তবে সমালোচকরা বলেন ভিন্ন কথা। ইন্টারন্যাশনাল স্টাইলের ভবন-নির্মাণ ও পরিকল্পনাকে তারা ইউরোপীয় আধুনিকতার যুক্তিবাদী-অগ্রসরবাদী প্রবণতার সঙ্গে সমার্থক হিসেবে দেখেন। প্রমিতিকরণ, প্রি-ফ্যাব্রিকেশন ও যান্ত্রিকায়নের বিষয়গুলো যখন নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল, একটা স্বয়ম্ভূ চরিত্র দাঁড়াল তাদের, কোনো বিধেয় হিসেবে তারা আর থাকল না; ইতিহাস ও কৃষ্টি এবং পুরনো সংস্কৃতি থেকে গা বাঁচিয়ে ঝকঝকে, শুদ্ধবাদী, ফর্মালিস্ট স্থাপত্য সৃষ্টি হতে লাগল, তখন অনুভূতি ও ভাবনার রাজ্যে একটি সমস্যা সৃষ্টি হলো ঠিকই। ‘আর নয় পেছনে পা রাখা, পুরোনো, উনিশ শতকী স্টাইল, বলে যখন ল্য কর্বুসিয়ের স্থাপত্যকে আগের সব ঐতিহ্য থেকে ঝেড়ে ফেললেন, যার ফলে শুদ্ধ, চূড়ান্ত ফর্ম, কিউব, শঙ্কু, সিলিন্ডার, বর্গ, পিরামিডের ব্যবহার ক্রমাগত একটি আদর্শে নিয়ে যেতে থাকল স্থাপত্যকে, যাতে নির্ণীত হলো উন্নত গাণিতিক একটি শৃঙ্খলা, ভোক্তারা তখন কী ভাবলেন, সেটি খেয়াল করা হলো না। ভোক্তারা – ওইসব দালানের বাসিন্দারা – এই ঝকঝকে কাঠামোগুলোর তারিফ করলেন বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অধস্তন বোধ করতে লাগলেন বিশাল সেই দালানগুলোর। নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে একটি ছাইরঙা কংক্রিট ও কাচের আকাশছোঁয়া অট্টালিকায় যারা সকালে ঢুকতেন – অট্টালিকাটি ছিল একটি অফিস-বিল্ডিং – তাদের অনেকের ভেতর কাজ করত একটি অস্বস্তি। দালানটি আমার থেকে বড়, আমার অবস্থান ঊনজনের – এরকম মনে হতো তাদের। কাজেই তাদের কাজে প্রভাব পড়ল এই চিন্তার। দেখা গেল, অনেক অফিসের লোকজনের প্রয়োজনীয় প্রাণশক্তির মাত্রা অপ্রতুল। এক মনস্তত্ত্ববিদ এবং এক স্থপতি বিষয়টি পরীক্ষা করলেন। এক সোমবার সকালে অফিস-কর্মীরা দালানে ঢুকতে গিয়ে সভয়ে পিছিয়ে গেলেন। তারা দেখলেন, একটি লাল রঙের থাম আড়াআড়ি পড়ে আছে মূল প্রবেশপথের বাইরে, দেয়ালে হেলান দিয়ে। প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো : দালানটি কি ভেঙে পড়ছে? যখন দেখা গেল থামটি ওই দালানের নয় (এটি লাল রঙের, এবং দালানের থাম দেয়ালের সঙ্গে মেশানো, আলাদা নয়), পরন্তু ওটি প্যাপিয়ার ম্যাশের তৈরি, তাতে লাল রং লাগানো হয়েছে মাত্র, প্রতিক্রিয়াটি হলো ভিন্ন – হাসি এবং তৃপ্তি। দালানটি তাহলে পতনশীল, মরণশীল। সোমবার সকালটা খুব খারাপ সময়, অফিস-কর্মীদের জন্য, যেখানে শনি রবি দুদিন ছুটি। সেই সোমবার সকালে কর্মীদের মুখে হাসি। কিছুটা অহংকারও। অথচ দালানের স্থাপত্যে কোনো হেরফের হয়নি। তার একক-কোডের ওপর একটি ভিন্ন কোড বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাত্র। লবিতে দেয়ালের রং করা হলো গোলাপি। লিফটের দেয়ালে পিন-আপ মেয়েদের ছবি লাগানো হলো। একই লিফটে বড়সাহেব উঠছেন, কেরানি উঠছেন। কেরানি মুখ টিপে হাসছেন, বড় সাহেব হয় গাম্ভীর্য বজায় রেখে লিফটের পথটুকু উঠলেন, না হয় নিজেও হাসলেন। যে-কোনো ভাবেই, যা ঘটল, তা হলো, একটি ঋজু, শ্রেণিক্রমতাশাসিত, কেন্দ্রিক বিষয় পরিবর্তিত হলো স্থিতিস্থাপক, নৈরাজ্যের আভাস দেওয়া,
কেন্দ্রহীন-বিষয়ে। স্থাপত্যে এই ডাবল-কোডিং উত্তর-আধুনিকতার একটি বৈশিষ্ট্য।

আর কী করে উত্তর-আধুনিক স্থাপত্য? তার অনেক কর্তব্যের মধ্যে আছে :

– পুরনো, যৌথ পরিবারের ঘরবাড়িতে যে সকলের অভিন্ন একটি জায়গা ছিল, স্পেস ছিল, সেটিকে পুনরুদ্ধার করা।

– ঐতিহ্যকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা, প্রয়োজন হলে উদ্ধৃতি দেওয়া (ধ্রুপদী ও স্থানীয়), স্থাপত্যের একটির মধ্যে অন্যটির উদ্ধৃতি বসিয়ে দেওয়া।

– ইতিহাসহীনতার অভিযোগ সত্ত্বেও স্থাপত্যকে ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত করা, যদিও সেখানে কৌতুক বা আয়রনি থাকতে পারে, ইতিহাসের নতুন বা মনগড়া ব্যাখ্যাও থাকতে পারে।

১৯৮০ সালে মাইকেল গ্রেভস পোর্টল্যান্ডের সিটি হলের সঙ্গে একটি অ্যানেক্স ভবন নির্মাণের জন্য অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। তাঁর প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর তর্ক হয়। পিয়েট্রো বেলুশি অভিযোগ করেন যে, দালানটি পুর-888sport live chat হিসেবে স্থাপত্যের মেরুদণ্ড বলে কথিত যে-শৃঙ্খলা, তাকেই ভেঙে দেবে। এই শৃঙ্খলা ভাঙাটা উত্তর-আধুনিকতা দুভাবে করেছে – শৃঙ্খলার ভেতরে/ পিছনে যে-আধিপত্যবাদ বা নিয়ন্ত্রণকারী একটি মনোবৃত্তি, তার বিরুদ্ধে তা দাঁড়িয়ে এবং চিন্তার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বহিঃপ্রকাশ, যা ব্যাখ্যার ক্ষমতা এবং কল্পনাকে সীমিত করে অনেক সময়, একটি মিথ্যা আশ্বাস দেয় মানুষকে, অথচ মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না তার জীবনে, তাকে পরিহার ক’রে। এই প্রশ্নে অনেক বিতর্ক হতে পারে এবং উত্তর-আধুনিকতার নামে অনেক বাজে কাজও হয়েছে – স্থাপত্যে এবং সংস্কৃতির 888sport app ক্ষেত্রে, কিন্তু শৃঙ্খলা, একভাষিকতা, চূড়ান্তবাদী চিন্তা – এসব নিয়ে পুনর্বার ভাবার একটি সুযোগও তা করে দিয়েছে।

পাঁচ

স্থাপত্যে আধুনিকতার যে-প্রবণতাগুলোকে পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন উত্তর-আধুনিক স্থপতিরা, সেগুলো প্রধানত ইন্টারন্যাশনাল স্টাইলে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু মোটামুটিভাবে এই প্রবণতাগুলো সংস্কৃতির 888sport app ক্ষেত্রেও আধুনিকতার (888sport live footballের ক্ষেত্রে হাই-মডার্নিজম) চারিত্রলক্ষণ বলে স্বীকৃত হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, যে-আধুনিকতাকে বা তার প্রবণতাগুলোকে প্রশ্ন/ তদন্তের সম্মুখীন করছে উত্তর-আধুনিকতা, সে-আধুনিকতাটি কী? উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে অনেক আলোচনায় আমি দেখেছি, পুরো আধুনিকতা-বিষয়টিকেই যেন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটি কি ঠিক?

আধুনিকতার সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের একটি খতিয়ান এই 888sport liveের স্বল্পপরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু আলোচনার স্বার্থে এখানে একটি বিভাজন এখনি করে নেওয়া ভালো। এ-বিভাজন-রেখার একদিকে আধুনিকতার যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো নিয়ে উত্তর-আধুনিকতা প্রশ্ন তোলেনি – বস্তুত সেগুলো তা ব্যবহারও করেছে। বিভাজন-রেখার অন্যদিকে যা আছে, তা নিয়েই উত্তর-আধুনিকতার আপত্তি।

প্রথমেই বিভাজন-রেখার এ-দিকের কথা বলা যাক। আমরা জানি, একটি সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক-বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন হিসেবে আধুনিকতার/ আধুনিকবাদের সূত্রপাত হয়েছিল উনিশ শতকে, পশ্চিম ইউরোপে, যার মূলে ছিল দ্রুতগতির 888sport live chatায়ন ও নগরায়ণ, যার সঙ্গে জড়িত ছিল প্রথাগত জীবনচর্চায় অপ্রত্যাশিত অনেক পরিবর্তন; পুঁজির বিকাশ ও শিক্ষার বিস্তার; নানা সামাজিক/ বৈজ্ঞানিক/ অর্থনৈতিক চিন্তা ও মতবাদের প্রভাব (ডারউইন, কার্ল মার্কস এবং শতাব্দীর প্রান্তে এসে সিগমুন্ড ফ্রয়েড; উপনিবেশী শাসনের বিস্তার, যান্ত্রিকায়ণ ও মানুষের জায়গা যন্ত্রের দখল করে নেওয়া (চার্লি চ্যাপলিনের সেই ছায়াছবিটি নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন, যেখানে অ্যাসেম্বলি লাইনে গণ-উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যক্তির নিজস্বতা হারানোর বিষয়টি এক নিষ্ঠুর কৌতুকের আবরণে উঠে এসেছে); মিডিয়ার বিকাশ (পত্রিকা, বিজ্ঞাপন, ফোটোগ্রাফি); জেন্ডারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর গুরুত্ব অর্জন; ভৌত ও পদার্থ888sport apkে কার্যকরণের স্থলে প্রোবাবিলিটি (সম্ভাব্যতা), নিশ্চয়তার জায়গায় আপেক্ষিকতা, এককের জায়গায় কোয়ান্টাম-ফাঁক। এই তালিকাটি আরো দীর্ঘ করা যায়। এই 888sport liveের পাঠকেরা সকলেই কিছু-না-কিছু যোগ করতে পারবেন, কেননা, আধুনিকতা/ আধুনিকবাদের উন্মেষের ইতিহাস/ প্রেক্ষাপটটি দীর্ঘ, এর অভিঘাত প্রচণ্ড। আধুনিকবাদীরা জাতীয়তার বিপরীতে মানবতাবাদকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে স্বতন্ত্র একটি পঠনের ভেতরে নিয়ে এসেছিলেন, বিশ্ব-দর্শনে বহুমাত্রিকতা এবং সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ – বিশেষ করে সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। ভিক্টোরিয়ান যুগের ঈশ্বরকেন্দ্রিকতা, প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতাকেন্দ্রিকতাকে তারা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। ভিক্টোরিয়ান যুগে, বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের উপনিবেশী শাসন বিশ্বের অনেক অঞ্চলকেই করায়ত্ত করে নিয়েছিল, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যে কেন্দ্র-পরিধি, আমরা-তারা, ‘সভ্য’-‘বর্বর’, ‘সাদা-কালো’ – এরকম দ্বৈততার সৃষ্টি হয়, আধুনিকবাদীরা তার বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। আমরা জানি, ঔপনিবেশিকতার পক্ষে কোনো কোনো আধুনিক কবি-888sport live footballিকের এক ধরনের মৌন সমর্থন ছিল (যেমন এজরা পাউন্ডের হোমেজ টু সেক্সটাস প্রোপার্টিয়াস অশ্বেতাঙ্গদের ‘আদার’ বা তারা/ অন্যরা হিসেবে দেখেছে) যা উত্তর-আধুনিকতার জন্য একটি ভূমি তৈরি করে দিয়েছিল, কিন্তু আমরা এ-ও দেখেছি যে, আধুনিকতা/ আধুনিকবাদের চর্চায় উপনিবেশী মানুষজনকে, বিভিন্ন জাতিগত ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী, সামাজিকভাবে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজন (সমকামী পুরুষ ও 888sport promo codeদের), ব্যাপক অর্থে 888sport promo codeদের, সামাজিক বিপ্লবীদের একটি অবস্থান তৈরির পক্ষে ব্যাপক প্রয়াস ছিল। এ-কারণে আধুনিকতা-বিষয়টিকে ঢালাওভাবে দোষী না করে, এর কিছু সীমাবদ্ধতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। তবে তার আগে নাইজেল হুইলের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে আধুনিকতা/ আধুনিকবাদের যে-কোনো হ্রস্বীকরণের বিরুদ্ধে তিনটি আপত্তি ওঠানো যেতে পারে :

১. কুড়ি শতকে সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে আধুনিকতার প্রভাবে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে, তাদের মাত্রা এত ব্যাপক যে, একটিমাত্র চাদর-শব্দে (আধুনিক) এগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করলে বিভ্রান্তির অবকাশ থেকে যায়।

২. আধুনিকতার একটি ঋজু এবং একমাত্রিক ধারণা এই দীর্ঘ সময়ে যে-বিচিত্র ধরনের কাজ হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্যগুলো নিরূপণে সফল হয় না। 888sport live footballে উদ্ভটের তত্ত্ব, চেতনাপ্রবাহ-পদ্ধতি অথবা মুক্ত-পরোক্ষ বর্ণনা যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, বাস্তববাদী অনেক 888sport live footballও তেমনি রচিত হয়েছে (ভার্জিনিয়া উলফ-এর টু দি লাইট হাউস এবং ই.এম. ফর্স্টার-এর প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া কি একশ্রেণির কাজ?)। সেজন্য ‘প্রকরণধর্মী-অগ্রসরবাদী’ 888sport live chat এবং ‘প্রথাগত-বাস্তববাদী’ কাজের মধ্যে বিভাজনটি বিভ্রমের শিকার হয়।

৩. যদি আধুনিকতার সার্বিক অভিঘাতটিকে অস্বীকার করা হয়, যদি আধুনিকতাকে তারিখ নির্দিষ্ট করে একটি জায়গায় এনে বলা হয়, আধুনিকতার দিন শেষ, তাহলে একটি বড় গোলমাল বেধে যায়। একটি বিষয় তো খুবই স্পষ্ট যে উত্তর-আধুনিকতা যেমন আমাদের সময়ের কিছু চিন্তা, কিছু ভঙ্গি বা স্টাইল (বা trope), কিছু প্রতিবাদ ইত্যাদিকে বিম্বিত করছে, আধুনিক 888sport live football বা 888sport live chatও তেমনি করছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেশি তীব্রতা, কার্যকারিতা এবং প্রত্যয় নিয়ে।

একটু আগে আধুনিকতার বিষয়, প্রকাশ, চিহ্ন, আইকন – এসবের ভেতর দিয়ে একটি বিভাজনরেখা টানার কথা বলেছিলাম, সে-রেখার এই দিকটিতে আছে আধুনিকতার সোনালি ফসলগুলো। এ-অঞ্চলটি এখনো বিশাল। রেখার অন্যপ্রান্তে যা আছে, উত্তর-আধুনিকতা যাকে অস্বীকার করছে, যার বিরুদ্ধে তার নিজস্ব উপায়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বা যাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে (অর্থাৎ অবহেলা করছে) সেগুলোরও একটি তালিকা করা যায়। যেমন – আধুনিকতা যে-সত্য বা মূল্যবোধের কথা বলছে, তা একসময় বিপজ্জনকভাবে ঋজু এবং অসহিষ্ণু একটি চূড়ান্ত-চিন্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। উত্তর-আধুনিকতা সত্যকে বহুবাচনিক রূপে দেখতে চায়, সত্য নয় – সত্যসমূহ। তাছাড়া, মূল্যবিচারকে সে পরিহার করে। মূল্যবোধ যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে মূল্যহীনতার বোধ কী সেটিও দেখতে হবে। তাছাড়া যে-মূল্যবোধ আমি 888sport live footballে চাই, জীবনে চাই, তা কার? সেটি নির্ধারণে আমার কী ভূমিকা ছিল? সেই মূল্যবোধ কি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে? আমাদের দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর ওপর আমাদের ‘মূল্যবোধ’ আরোপ করার ফল তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। একইভাবে আধুনিক 888sport live footballে ও 888sport live chatে কাঠামো বলে যে-বিষয়টি রয়েছে (যার সম্প্রসারণ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজনীতিতেও প্রতিফলিত)
তা-ও তো একসময় অত্যাচারী হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কাঠামোর বিপরীতে উত্তর-আধুনিকতার কাঠামোহীনতা। এইখানে কেউ হয়তো বলতে পারেন, উত্তর-আধুনিক 888sport live chat888sport live footballের কি কোনো কাঠামো নেই? তা আছে বটে, তবে তা খুবই স্থিতিস্থাপক, মোটেও ঋজু নয়। তাছাড়া কাঠামোর চিন্তাটিতে যে-শৃঙ্খলার আভাস থাকে, যদি সেই চিন্তাটিই শুরুতে থাকে অনুপস্থিত, তাহলে শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণটি থাকে না। এই শৃঙ্খলার সঙ্গে আধুনিকতার আরেকটি সূত্র যোগ করা যায়। লেখকের কর্তৃত্ব। আধুনিক 888sport live footballে authorship একটি বড় ব্যাপার। লেখকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব, তার সচেতন অংশগ্রহণ একটি আখ্যানের উৎপাদনে, সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত। একইভাবে উৎপাদিত আখ্যান বা text-টি একটি বিশেষ কীর্তি, তাতে লেখকের কেন্দ্রীয় একটি ভূমিকা থাকে, উত্তর-আধুনিকতা লেখকের সার্বভৌম ভূমিকাকে অস্বীকার করে (‘লেখক/ author মৃত’); এবং text বলতে তা সবকিছুকেই গ্রহণ করে, শুধু 888sport live footballের text নয়। আর উত্তর-আধুনিকতায় কোনো কিছুই কেন্দ্রীয় নয়, বস্তুত কেন্দ্রের ধারণাটিকেই তা নাকচ করে দেয়।

অর্থাৎ আধুনিকবাদে/ আধুনিকতায় একসময় যা ছিল নতুন, এমনকি বিপ্লবীও, তা একসময় যখন একটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত চর্চা বা পদ্ধতি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়, অথবা একটি মুখ্য চিন্তা/জ্ঞান হিসেবে, তাতে কিছু শৃঙ্খলা চলে আসে, কিছু অতিরঞ্জন; এবং একসময়, কেন্দ্রিকতার প্রবণতা। আধুনিক 888sport live footballে তো কবেই দেখানো হয়েছে, দৃষ্টিভঙ্গি অথবা দেখার দৃষ্টি বহুবিধ; অথবা নৈতিক কোনো কেন্দ্র নেই (অথবা উদ্ভটের 888sport live footballে যেমন – চরিত্র ঘটনা, স্থান-কাল-পরম্পরার কোনো অর্থ নেই), লেখকের নিয়ন্ত্রণও খুবই সাময়িক, প্রভিশনাল। আধুনিক 888sport live footballের কাঠামোও ভঙ্গুর, বর্ণনা খণ্ডিত। কিন্তু আধুনিকতার প্রধান টেক্সটগুলো একসময় এসব প্রবণতাকে একটি সমতলে নিয়ে এসে একটি বড় অর্থের সন্ধানে তাদের লাগিয়ে দেয়। এলিয়টের ‘দি ওয়েস্টল্যান্ড’ পড়লে মনে হবে সভ্যতা জুড়ে আত্মার অসুখ চলছে, তাই নিদানের প্রয়োজন। এটি গির্জার কথাও। সমাজপতিদেরও। একাকিত্ব, পারক্যবোধ, অপরিমেয় যৌনতা আত্মার সবুজ অঞ্চলকে পতিত ঊষর জমিতে রূপান্তরিত করেছে। এখন বৃষ্টি চাই, বৃষ্টির সন্ধানে আর্থুরিয়ান বীর নামলেন পথে, আমাদের নিয়ে গেলেন সেই পতিত জমির মধ্য দিয়ে। তারপর এক বাত্যাবিধ্বস্ত ক্যাথিড্রালে রাত্রিযাপন। সবই প্রতীকী, সবখানেই মেটাফর। বৃষ্টির আগে বজ্র, বজ্রের নির্ঘোষ, দ, দ, দ। দত্ত। দয়াধর্ম। দম্যতা। পতিত মানুষ, তুমি কি কবুল করলে? জি করলাম। তথাস্তু। এবার বৃষ্টি নামবে। শান্তি। শান্তি। শান্তি। যে-শান্তি জ্ঞানবুদ্ধির বাইরে।

মানুষ যে পতিত সেটি কি মানুষ বলেছে? মানুষকে যে ‘রে পাতক …’ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনালেন, সে কি বলেনি, অন্তত একজনও, ‘আমি আত্মার অসুখ নিয়েই থাকতে চাই, চমৎকার আছি। বৃষ্টি চাই না। আর বৃষ্টি এলে ওই অন্ধকার ভাঙা ক্যাথিড্রালে মাথা গুঁজে এক ছিলিম গাঁজা টেনে ঘুমোতে চাই। দ দ দ ডাকে আমার ঘুম ভাঙবে না। কাল যদি বেঁচে থাকি, জনাব, দেখা হবে।’ যদি একজনও তা বলে, তাহলে এলিয়টের কেন্দ্রিকতার একটি বিকল্প পাঠ তৈরি হয়। (আমার এক বন্ধু বলেছিল, ‘দি ওয়েস্টল্যান্ড’ পড়লে তার মনে হয়, এলিয়ট যেন তার স্কুলের মাস্টার মশাই, বেত হাতে বসে আছেন শাসানোর জন্যে) উত্তর-আধুনিকতা এই কেন্দ্রিকতা, এই
নীতি-নির্দেশিকা, এই সামান্যিকরণের বিপরীতে।

অথবা ইতিহাসের কথাই ধরা যাক। আধুনিক যুগের ইতিহাসটি কী? ওয়াল্টার বেঞ্জামিন বলেছেন, ইতিহাস কখনো নিরপেক্ষ নয়। প্রথাগত ইতিহাসবিদ্যার মূল ঝোঁকটি কিসের ওপর – এই প্রশ্নের উত্তরে বেঞ্জামিন বলেছেন, এই ঝোঁক বিজয়ীর ওপর। ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদের পক্ষে। তিনি আরো কড়া কথা বলেছেন : সভ্যতার এমন কোনো দলিল নেই, যা একই সময়ে বর্বরতার একটি দলিল নয়। সমকালীন ইতিহাসের দিকে তাকান। প্রথাগত ইতিহাসে বিজয়ীরাই করায়ত্ত করে সব। বিজিতরা আসে ফুটনোটের ওজন নিয়ে। গত তিন বছরের ইতিহাস পড়ুন – জর্জ বুশ আছেন কতটা জায়গা জুড়ে, আর প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি বর্বর সেনাদের গুলিতে নিহত
কিশোর-যুবকদের মায়েদের একটি সংগঠন – নামটি এই মুহূর্তে ভুলে গেছি, জুন মাসের শুরুর দিকে বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে দু-চার মিনিটের জন্যে তাদের দেখানো হয়েছিল – তারা পেল কতটা জায়গা? ইরাক-যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে ‘এমবেডেড’ সাংবাদিকরা যা লিখেছেন, তা সমকালীন মার্কিন ইতিহাসের কাঁচামাল হয়ে গেছে। আমেরিকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা জানবে আমেরিকানদের বীরত্ব, কিন্তু ইরাকি প্রতিরোধের কথা তারা শুধু মনে রাখবে ‘টেরোরিস্ট’দের ‘বেপরোয়া আক্রমণ’ ইত্যাদি হিসেবে।

প্রথাগত ইতিহাসবিদ্যা যে ক্ষমতা ও ক্ষমতার আইকনের পক্ষে থাকে, তা যে-কোনো ইতিহাস-বই পড়লে বোঝা যাবে, গ্রিক নাটকের মতো ইতিহাসের পাত্রপাত্রী সব রাজা-মহারাজা-সেনাপতিরা। সাধারণ মানুষজন অনুপস্থিত সেই ইতিহাসে, উনিশশো সত্তরের দশকে ভারতীয় ও পশ্চিমা কিছু ইতিহাসবিদ, যাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন রণজিৎ গুহ, সাবঅল্টার্ন বা নিম্নবর্গীয় ইতিহাস-প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বছর বারো চলার পর এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে, অথবা, টিকে থাকলে, রীতিমতো কোনো প্রকাশনা নেই। এই নিম্নবর্গীয় ইতিহাস জাতীয়তাবাদী ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে যে-ইতিহাস রচনায় হাত দিলো, তাতে সাবঅল্টার্নরাই গুরুত্ব পেল। এই প্রকল্পে প্রজাবিদ্রোহ, স্থানীয় প্রতিরোধ এসবের পাশাপাশি কারাগারের রেকর্ডপত্র থেকে নিয়ে গ্রামের কৃষকের রচিত কোনো গান বা পুঁথিও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হলো। উত্তর-আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতো নিম্নবর্গীয় ইতিহাসের প্রবক্তারা যা ঘটেছে, বিশেষ করে ক্ষমতার দরবার মহলে, তার বর্ণনাকে ইতিহাস হিসেবে আমলে না নিয়ে ‘প্রকৃত’ যা ঘটেছে, তার স্বরূপ উন্মোচনের মাধ্যমে ইতিহাস লেখায় গুরুত্ব দিলেন। ইতিহাসে যা দেখানো হয়েছে, তার বাইরে গিয়ে অন্য কিছু তারা দেখতে চেয়েছেন; সাংস্কৃতিক পরিচিতিগুলোকেও তদন্ত করে তারা দেখেছেন। উত্তর-আধুনিক ইতিহাসে যদি অতীতের জন্য আবেগ বা নস্টালজিয়া পপ-সংস্কৃতির আদল নিয়ে প্রকাশিত হয়, অতীত নিয়ে একেবারে ফ্যান্টাসির নানা বর্ণনায় বিধৃত হয় – অর্থাৎ ‘প্রকৃতে’র খোঁজে নেমে প্রকৃত-অপ্রকৃতের একটা বিভ্রম তৈরি করে ইতিহাসের রেপ্রেজেন্টেশানটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে – ১. প্রকৃত-অপ্রকৃতের মূল্যবিচারে অনভ্যস্ত উত্তর-আধুনিকতা একটি পালাবার পথ রেখেছে, এবং/ অথবা ২. পুরো প্রথাগত, জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের গোড়ায় কোপ মেরে তাকে ফেলে দিচ্ছে। প্রথাগত ইতিহাস আমাদের ‘সত্যে’র নামে যে-তথ্য দেয়, তা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। এলিয়ট বলেছেন, ইতিহাসের আছে অনেক চোরাগোপ্তা পথ – cunning passages, contrived corridors। সেগুলো ধরে হাঁটলে বিপদ। অন্তত উত্তর-আধুনিক পপ-সংস্কৃতির ইমেজসমৃদ্ধ, নস্টালজিয়া পীড়িত ও ফ্যান্টাসিশোভিত ইতিহাসে সেই বিপদ নেই।

888sport app অনেক জায়গার মতোই, এখানেও আধুনিকতার ভেতরে ক্রিয়াশীল কিছু প্রবণতাকে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। জাঁ ফ্রাসোয়া লিওতার যাকে বলেছেন মানুষের অগ্রগতি ও মুক্তির ‘গ্রান্ড ন্যারেটিভ’, যার ভিত্তি জ্ঞানালোক প্রাপ্তির কালের যুক্তি, বিচার, ব্যাখ্যার ক্ষমতায়, তা আমাদের কালে এসে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত মানুষ, ঈশ্বরের পুত্র এখন কী করছে? সে তো আণবিক বোমা হাতে ছুটে বেড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। কোথায় যুক্তি, কোথায় বিচার? অথচ আধুনিক 888sport live footballের তলে তলে এই গ্রান্ড ন্যারেটিভের পক্ষে একটি পক্ষপাতিত্ব আছে – এটি লিওতার বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। হাবারমাস যে-যুক্তি, বিচার, গণতন্ত্র – এসবের ভিত্তিতে একটি ‘যোগাযোগধর্মী ক্রিয়া উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন, তার কাজ কী? কার্যকারিতা কী? এটি কি একসময়    একটি ‘সামগ্রিকতা’-totality-হয়ে দাঁড়াবে না? আর লিওতার তো সেই totality-র বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

আর ফুকোর লেখায় জ্ঞানের সঙ্গে ক্ষমতার যে-কার্যকর সূত্রের কথা বলা হয়েছে, তাতে টোটালিটির চিত্রটি বেশ ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় একশ রকমের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ। জিল ডেলুজ ও ফিলিক্স গুয়াটারি যেমন বলেছেন, ‘আমাদের এখন গাছের ওপর, শিকড়ের ওপর থেকেই মানুষের চিন্তা এক ধরনের ‘বৃক্ষধর্মী মডেল’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’ সেই জ্ঞান-বৃক্ষের কথা কি মনে পড়ে, সেই tree of knowledge -এর? যদিও ডেলুজ ও গুয়াটারি বলেন, চিন্তা কখনো বৃক্ষধর্মী হওয়া উচিত নয়, হওয়া উচিত রাইজোমধর্মী। রাইজোম কী? শিকড়ের মতোই কিন্তু শিকড় নয়, কোনো বৃক্ষের এরকম প্রধান আনুভূমিক কাণ্ড, সাধারণত যা থাকে মাটির নিচে, কিন্তু যাতে কুঁড়ি জন্মায়, গ্রন্থি জন্মায়, আঁশের মতো পাতাও থাকে। অর্থাৎ অপ্রকৃত শিকড়। বৃক্ষের শিকড়, কাণ্ড, বৃক্ষের স্থির স্থাপনা – এসব ভাবনা থেকে চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় ঋজু। আর জ্ঞান-বৃক্ষের উৎপ্রেক্ষার মূলেও সেই স্থিরতা চিন্তা, সেই শিকড়, সেই নিয়ন্ত্রণ (সেই সর্বত্র শিকড় ছড়ানোর আশা)।

ঘুরেফিরে আধুনিকতার অনেক লক্ষণই যেন একটি নিয়ন্ত্রণ অথবা আদিপত্য-প্রত্যাশী, কেন্দ্রাভিমুখী, উচ্চবর্গীয়, সফিস্টিকেটেড (উচ্চ888sport live chat-নিম্ন888sport live chatে বিভাজিত)। উত্তর-আধুনিকতার একটি কাজ এসব চিহ্নিত করে প্রতিকল্পের জোগান দেওয়া। বৃক্ষের জায়গায় রাইজোম, কাঠামোর জায়গায় কাঠামোহীনতা, উপস্থিতির জায়গায় অনুপস্থিতি। বদলেয়ার তাঁর একটি 888sport liveে (‘দি পেইন্টার অফ মডার্ন লাইফ’, ১৮৬৩) সেই প্রায় দেড়শো বছর আগে জানিয়েছিলেন, ‘আধুনিকতা হচ্ছে স্বল্পস্থায়ী, ক্রমবিলীয়মাণ এবং সাপেক্ষ; এটি হচ্ছে 888sport live chatের অর্ধাংশ, অন্য অর্ধাংশ হচ্ছে চিরন্তন এবং অপরিবর্তনশীল।’ দেখা যাচ্ছে, বিকাশের একটি পর্যায়ে আধুনিকতা – প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে – 888sport live chatের অন্য অর্ধাংশের চিরন্তনতা ও অপরিবর্তনশীলতায় স্থিত হতে চেয়েছে।
উত্তর-আধুনিকতার চোখে বিবাদটি তখনি শুরু হয়েছে।

ছয়

উত্তর-আধুনিকতার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি দেওয়া এবং একে বোধগম্য করে তোলার ক্ষেত্রে যাঁদের নাম প্রথমেই আসে, তাঁদের মধ্যে একজন ইহাব হাসান। তাঁর দি পোস্টমডার্ন টার্ন গ্রন্থে (ওহাইও ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭) ‘টুওয়ার্ড এ কনসেপ্ট অব পোস্টমডার্ন’ অংশটিতে (যা পোস্টমডার্নিজমের ওপর অনেক সংকলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ 888sport live হিসেবে স্থান পায়) আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতার তুলনামূলক একটি ব্যাখ্যা রয়েছে, যা
উত্তর-আধুনিকতার ছাত্রদের একটি অবশ্যপাঠ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসান তাঁর লেখায় বলেন, ‘আধুনিকবাদ ও
উত্তর-আধুনিকবাদ কোনো লৌহ যবনিকা বা চৈনিক দেয়াল দ্বারা বিভাজিত নয়।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমরা একই সঙ্গে খানিকটা ভিক্টোরিয়ান, আধুনিক এবং উত্তর-আধুনিক।’ তিনি এ-ও বলেন, আধুনিকবাদ বা রোমান্টিকবাদের মতো, উত্তর-আধুনিকবাদেরও ‘ঐতিহাসিক এবং তাত্ত্বিক উভয় সংজ্ঞার প্রয়োজন।’ তাঁর লেখায় অতঃপর হাসান আধুনিকতা/আধুনিকবাদ ও উত্তর-আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকবাদের ভেতর কয়েকটি মৌল পার্থক্য নিরূপণ করেন। হাসানের নির্ণিত পার্থক্যগুলোর একটি সংক্ষেপিত রূপ তাঁর ব্যবহৃত ছকে এভাবে দেখানো যেতে পারে :

আধুনিকতা/ আধুনিকবাদ উত্তর-আধুনিকতা/

ফর্ম (সংযুক্তিধর্মী, রুদ্ধ)   উত্তর-আধুনিকবাদ

        অ্যান্টিফর্ম (অসম্বন্ধ, মুক্ত)

উদ্দেশ্য  ক্রীড়া

শ্রেণিক্রম নৈরাজ্য

দূরত্ব    অংশগ্রহণ

সৃষ্টি/ চূড়ান্তকরণ সৃষ্টি থেকে বিচ্যুতি/ বিনির্মাণ

উপস্থিতি অনুপস্থিতি

কেন্দ্রীয়করণ     বিকিরণ

888sport live footballশ্রেণি/ সীমানা     টেক্সট/ আন্তঃটেক্সট

মেটাফর মেটোনিমি

শিকড়/ গভীরতা রাইজোম (অপ্রকৃত শিকড়)/

        উপরিতল

ব্যাখ্যা/ পঠন     ব্যাখ্যা-বিরোধিতা/ ভুল পঠন

পাঠককেন্দ্রিক    লেখককেন্দ্রিক

অধিবিদ্যা        আয়রনি

মূল তালিকাটি দীর্ঘ। তাতে আধুনিকবাদের সুনির্দিষ্টতার বিপরীতে উত্তর-আধুনিকতার অনির্দিষ্টতা; আধিপত্যের বিপরীতে ক্লান্তি – এরকম আরো অনেক বাইনারি বা দ্বিত্বের সমাহার ঘটেছে। যদি হাসানের চিন্তাকে কিছুটা সম্প্রসারিত করা যায়, তবে আধুনিকতার সঙ্গে উত্তর-আধুনিকতার পার্থক্যগুলোর কয়েকটিকে একটি বর্ণনায় ফেলা যায়। যেমন :

আধুনিকতা একটি একক অবিভাজিত সত্তাকেই ব্যক্তিসত্তার যথাযথ বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেছে। এমনকি চেতনাপ্রবাহ পদ্ধতিতেও ঘুরেফিরে খণ্ডিত সত্তাকে বোঝার চেষ্টা করা হয় একটি অখণ্ডতার চিন্তার নিরিখে। যদি তা না-ই হয়, তাহলে এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি আলো কেন সত্তার/ ব্যক্তির ওপর ফেলা হয়। উত্তর-আধুনিকতা সে-তুলনায় একটি কেন্দ্রচ্যুত, খণ্ডিত, বহুধাবিভক্ত সত্তাকে প্রকাশ করে, যার পরিচিতির মধ্যে রয়েছে নানাবিধ সংঘাত।

আধুনিকতার পক্ষপাত রয়েছে ইতিহাসের মাস্টার ন্যারেটিভ/ মেটান্যারেটিভের প্রতি, জ্ঞানের অখণ্ডতার প্রতি; এর বিশ্বাস রয়েছে মিথ ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের ওপর; 888sport apk ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অগ্রগতির ওপর। তুলনায় উত্তর-আধুনিকতা এসবকে সন্দেহ করে, প্রত্যাখ্যান করে। মাস্টার ন্যারেটিভকে সে আয়রনির সাহায্যে বিনির্মাণ করে; সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বহুত্বে বিশ্বাস করে; প্রযুক্তির প্রতি একটি অবিশ্বাস রয়েছে এর। আধুনিকতার বিশ্বাস রয়েছে মিডিয়ার বাইরে একটি ‘প্রকৃত’ অবস্থানের ওপর, যা কোনো প্রতিরূপায়ণে বিকৃত হতে পারে না; উত্তর-আধুনিকতা তুলে ধরে হাইপার-রিয়ালিটি (অধি-বাস্তবতা)-কে, এবং ভার্চুয়াল-রিয়ালিটিকে। উত্তর-আধুনিকতা ‘প্রকৃত’ কোনো ইমেজে বিশ্বাস করে না, কারণ একটি ইমেজের প্রতিরূপ আরেকটি ইমেজ, তার প্রতিরূপ আরো একটি ইমেজ – এভাবে উৎপাদিত হতে হতে ইমেজসমূহ প্রকৃতকে অপ্রকৃত করে তোলে। লিওতার এই অনন্ত-প্রতিরূপায়ণকে বলেছেন Simulara, যা মূল/প্রকৃতকে অস্বীকার করে। আধুনিকতার আছে এনসাইক্লোপিডিয়া; উত্তর-আধুনিকতার ওয়েব। আধুনিকতায় জৈব এবং অজৈবের মধ্যে, মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে আছে পরিষ্কার বিভাজন; উত্তর-আধুনিকতায় জৈব ও অজৈবের মিশ্রণ ঘটে (যাতে সাইবর্গ নামে এক যন্ত্র-মনুষ্য-সত্তার আবির্ভাব ঘটে); মানুষ-যন্ত্র এবং ইলেকট্রনিক ইমেজ এক হয়ে যায়। আধুনিকতায় যৌন পার্থক্যের শৈল্পিক একটি শৃঙ্খলা তৈরি হয়, যৌনতার মধ্যেও একটি নিয়মের বিষয় থেকে যায়, পর্নোগ্রাফি পরিত্যাজ্য হয়; উত্তর-আধুনিকতায় লৈঙ্গিক বিভাজন মুছে যায়, উভয় লৈঙ্গিক পরিচিতি অনুমোদন পায়, পর্নোগ্রাফি বাজার পায়। (আরো ব্যাপক পার্থক্যায়নের জন্য মার্টিন আর্ভিন, পোস্ট-মডার্ন, পোস্ট-মডার্নিজম, পোস্ট-মডার্নিটি’, ১৯৯৮ অথবা www.georgetown.edu/faculty/irvinem/technoculture/pomo দেখুন।

উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে যারা লেখালেখি করেছেন, তাদের অনেকেই বলেছেন, উত্তর-আধুনিকতা এমন একটি চিন্তা/ দর্শনে পরিণত হয়েছে, যাকে যেমন খুশি ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তবে তারা স্বীকার করেন, এই স্বাধীনতা আসলে উত্তর-আধুনিকতারই একটি শর্ত। টেক্সটকে এই দর্শন রুদ্ধ না দেখে মুক্ত হিসেবে দেখে বলে ব্যাখ্যার বাহুল্য এবং বহুমাত্রিকতাকে তা শুধু মেনে নেয়-ই না, উৎসাহিতও করে। তবে হাসানের সূত্রায়ন ও আধুনিক উত্তর-আধুনিকের পার্থক্য নির্ণয় একটি তত্ত্বীয় কাঠামোতেই অর্জিত। সেজন্য এর উদ্দেশ্য শুধু মূল প্রবণতাগুলো (আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক উভয় চর্চার) নির্ণয় করা। হাসানের পর অসংখ্য বই, 888sport live, বক্তৃতায়
উত্তর-আধুনিকতাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাতে অসংখ্য অনেক বিষয়ও উঠে এসেছে, কিন্তু ঘুরে-ফিরে
হাসান-নির্দেশিত মৌল প্রবণতাগুলো এখনো দৃশ্যমান। তাহলে কি বলা যায়, উত্তর-আধুনিকতা মোটেও ততটা সাময়িক, অনির্দিষ্ট, স্বল্পজীবী কোনো দর্শন নয়, এর একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে, প্রাসঙ্গিকতা আছে, যেহেতু তা এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করে, যা আমরা চাইলেই অস্বীকার করতে পারি না? এবং তা মালি বা মেয়ো যেখানেই হোক?

সাত

উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে আরো অনেক কিছু লেখা যায়, এর আরো উপাদান ও প্রকাশ চিহ্নিত করা যায়, এবং শত শত বই, 888sport live ইত্যাদি যদি কোনো নির্দেশক হয়ে থাকে তাহলে বলা যায়, এ-বিষয় নিয়ে আলোচনার অঞ্চলটি আসলেই বিশাল, কিন্তু একটি 888sport liveের পরিসরে তা সম্ভব নয়। সেজন্য ওই প্রাসঙ্গিকতার কথায় ফিরে গিয়ে আমাদের সময়, আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উত্তর-আধুনিকতার স্থান কী হতে পারে, সে-আলোচনায় এগুনো যায়।

প্রথমেই একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন তোলা যায়। উত্তর-আধুনিকতাকে একটি সচল মুদ্রায় পরিণত করার পেছনে জাক লাকাঁর একটি অবদান ছিল। বলা হয়, ১৯৫০ ও ’৬০-এর দশকে তাঁর লেখায় মনোবিশ্লেষী ও কাঠামোবাদী চিন্তার সংমিশ্রণ – এই দর্শনের উন্মেষের পেছনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। লাকাঁ, আমরা 888sport app download for android করতে পারি, রেনে দেকার্তের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমি চিন্তা করি কাজেই আমি আছি’ (cogito ergo sum)-এর বিপরীতে ‘আমি যেখানে চিন্তা করি না সেখানেই আছি’ (I am where I think not) উক্তিটি উপহার দেন। দেকার্তের ধারণাটি কেন্দ্রবাদী, অস্তিত্বসূচক, উপস্থিতিমূলক, যুক্তিবাদী, এবং নিশ্চয়তাধর্মী – বস্তুত জ্ঞানালোক-প্রাপ্তির যুগের গঠনের পেছনে তাঁর বৈজ্ঞানিক, বিশ্লেষী, চূড়ান্ত-নিশ্চয়তাকাঙ্ক্ষী দৃষ্টিভঙ্গি ক্রিয়াশীল ছিল। তুলনায় লাকাঁর চিন্তায় অনুপস্থিতি, অনিশ্চয়তা, যুক্তিনিরপেক্ষতা ও কেন্দ্রচ্যুতি প্রতিধ্বনিত ছিল। 888sport appsের রাষ্ট্র, ধর্ম, সমাজব্যবস্থায় যে-চূড়ান্তবাদী মনোভাব প্রকাশিত, 888sport appsের শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি এবং পরিবার ও সমাজগঠনে যে-কেন্দ্রবাদী মনোভাব প্রতিফলিত, তার প্রতিক্রিয়ায় কি লাকাঁর উক্তিটি মুক্তির (বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যক্তির মুক্তি না হলেও অবচেতনের ক্ষেত্রে) নির্দেশক হতে পারে না?

আমার 888sport liveের একস্থানে আধুনিকতার প্রবণতা ও চর্চাসমূহের ভেতর দিয়ে একটি বিভাজনরেখা টেনে আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, আধুনিকতার একটি বড় ক্ষেত্রই এখনো এবং আগামীতে মানুষের কল্যাণধর্মী এবং সৃজনশীল সক্রিয়তার সমার্থক ও সমর্থক এবং এক বিরূপ বিশ্বে ব্যক্তির নির্বাণের সহায়তাকারী। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রটি, যেখানে চর্চা ও চিন্তার ক্ষেত্রে আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ; নানাবিধ বৃহৎ বা মুখ্য আখ্যানের মোড়লিপনা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা লক্ষ করা যায়, এবং জ্ঞানকে ক্ষমতার পার্থিব আধার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই কল্যাণধর্মিতা ও সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। এ-অবস্থাটি পশ্চিমে যেমন বর্তমান, আমাদের দেশেও তেমনি।

রাষ্ট্র নিয়ে আমরা আধুনিক চিন্তা করেছি একসময়, সমাজ ও মানুষ নিয়েও। রাজনীতির ক্ষেত্রেও, অন্তত 888sport appsের সংবিধান যদি একটি উদাহরণ হয়, আমরা আধুনিক চিন্তার সমাবেশ ঘটাতে চেয়েছি। সমাজ-পরিবর্তনের জন্য সর্বহারাদের বিপ্লব আমরা কামনা করেছি। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় আধুনিক চিন্তার প্রকাশ আমরা দেখতে চেয়েছি – কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনটিকে, উদাহরণস্বরূপ, আমরা আধুনিক বলে বর্ণনা করেছি। আমরা 888sport apk ও যুক্তিকে জীবনে গ্রহণ করতে চেয়েছি। 888sport apkের সুফল আমরা ভোগ করেছি এবং করছি। আমাদের ছাত্র-আন্দোলনে, কৃষক-শ্রমিকদের আন্দোলনে আমরা আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন দেখেছি। জেন্ডার ইস্যুতে বাস্তবে অতি নগণ্য পরিমাণ কাজ হলেও তত্ত্বের অঞ্চলে আমরা একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি। কৃষিতে 888sport apk আমাদের সহায়তা দিয়েছে – এই ক্ষেত্রে আমরা জিএম (জেনেটিক্যালি মোডিফাইড) খাদ্যের ফাঁদেও পা রেখেছি, আবার অর্গানিক খাদ্যের জন্য নতুন কৃষি-আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পশ্চিমা ‘আধুনিক’ বলয়ে প্রবেশ করেছে, অর্থাৎ বিশ্বায়নের প্রভাব সামলাতে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আধুনিক চিন্তা করেছি। এই তালিকাটি অনিবার্যভাবেই অনেক দীর্ঘ হতে পারে। গত শতকের ষাটের দশকের কথা ভাবুন।
888sport live chat-888sport live football-সমাজ-রাজনীতি – এসব প্রায় সকল বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল প্রকৃতই আধুনিক। আর
888sport live chat-888sport live footballের প্রসঙ্গে বলা যায়, আমাদের 888sport live football ও 888sport live chatকলায় আধুনিকতার প্রকাশগুলো খুবই স্পষ্ট। আমাদের সঙ্গীতে তরুণরা যে-নতুন ধারা সৃষ্টি করছে এবং আমাদের মিডিয়াতে যে-চিত্রভাষা তৈরি হচ্ছে, তাকে আধুনিক বললে কেউ নিশ্চয় আপত্তি করবেন না।

এতক্ষণ যে-‘আধুনিক’ অভিধাটি ব্যবহার করা হলো, তার ব্যাখ্যা দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে, অনাধুনিকতার, আধুনিকতা-বিরোধিতার এবং অনেক ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয়তার মাত্রাটিও এত ব্যাপক যে, দূর থেকে একটি পাখির দৃষ্টি দিয়ে দেখলে, 888sport appsের রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা, রাজনীতি – এ-সবকিছুকেই অনাধুনিক মনে হতে পারে। শুরুতে বাংলা ভাইয়ের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম উত্তর-আধুনিকতার একটি উদাহরণ সৃষ্টির জন্য – কিন্তু বাংলা ভাই ফেনোমেনোনকে এই অনাধুনিক/ প্রতিআধুনিক/ মধ্যযুগীয় ছকে ফেলাটাই সংগত। প্রতিদিন খবরের কাগজে যা ছাপা হয় তাতে অনাধুনিক এবং মধ্যযুগীয়র প্রকাশটাই সিংহভাগ – অ্যাসিড নিক্ষেপ, পুড়িয়ে মারা, চোখ তুলে নেওয়া, রাজনীতিবিদদের প্রবঞ্চনা, শঠতা, পেশাজীবীদের সুবিধাবাদিতা, আমলাদের দুর্নীতি, বুদ্ধিজীবীদের হঠকারিতা – এখানে তালিকাটি আবশ্যিকভাবেই দীর্ঘ।

তাহলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াচ্ছে? ‘আধুনিক’ গণতন্ত্রের নামে আমরা পেয়েছি মধ্যযুগীয় সামন্ত ও স্বৈরাচারী শাসন, ‘আধুনিক’ পুলিশ ব্যবস্থার নামে একটি উৎপীড়ক, ব্যক্তিস্বাধীনতা-বিরোধী, নিয়ন্ত্রণকামী বাহিনী। আমাদের ধর্মব্যবস্থাকে ব্যক্তির বিরুদ্ধে, 888sport promo codeর বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে 888sport free betলঘু এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকারবঞ্চিত করার জন্য; আমাদের সামরিক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে (যেমন সামরিক শাসনের সময়) মানবাধিকারকে অস্বীকার করার জন্য, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে দমন করার জন্য (পার্বত্য চট্টগ্রামে যেমন); আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা সকলের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার পরিবর্তে সৃষ্টি করছে শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব বৈষম্য; আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধনীদের স্বার্থে গরিবকে শোষণ করছে (আমাদের গার্মেন্টস-888sport live chatে প্রয়োগ হচ্ছে নতুন নীলচাষ পদ্ধতি)। এই প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কিন্তু ‘আধুনিক’ ও ‘যুগোপযোগী’ প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে অথবা দোহাই দেওয়া হয়েছে। ঈগলটন যে কোনো কোনো সমাজের কথা বলেছেন, যেখানে আধুনিকতার লক্ষণগুলোই দেখা যায়নি বা সেগুলো সেখানে প্রবেশ করেনি, 888sport apps স্পষ্টতই সে-রকম কোনো সমাজ নয়। আধুনিকতা এখানে অপরিচিত কোনো আবহাওয়া নয়, কিন্তু আধুনিকতার নামে যা হয়, তার ভেতরে অনেক ফাঁক থেকে যায়। এই ফাঁকগুলোকে যদি তুলে ধরতে চায় উত্তর-আধুনিকতা, তাহলে এই দর্শনটিকে কি অপ্রাসঙ্গিক বলা যাবে? আশির দশকে যখন জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এলেন হয়েছে, আবার একটি সুবিধাভোগী চিত্রভাষাকে তা আক্রমণও করেছে। এই সমাজে 888sport promo codeর অবস্থানকে একটি গুরুচণ্ডালি ভাষায় আতিয়া তুলে ধরেছেন। গুরুচণ্ডালি ভাষাটি, আমরা 888sport app download for android করতে পারি, উত্তর-আধুনিকতার একটি ভাষা। স্কুলে যখন পড়তাম, তখন গুরুচণ্ডালী ভাষাকে ছোঁয়াচে রোগের মতো গণ্য করতে শিখিয়েছিলেন শিক্ষকরা। আমি নিজেও যখন ক্লাসে যাই, ভাষার বিশুদ্ধতা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু যে-প্রিভিলেজ্ড ভাষাটি শহুরে শিক্ষিতজনের, তাতে ব্রাত্যজনের ভাগ যাতে না বসে তার একটি ব্যবস্থাও তো ভাষার বিশুদ্ধতা-রক্ষার পেছনে কার্যকর। ভাষা তো ক্ষমতার একটি উপায় – ফুকো কথাটি বলেছেন। আর লাকাঁ বলেছেন, ভাষা সবসময় বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। একটি শব্দের অর্থ বলে আমরা যা ধরে নিই, তা আসলে ওই ভাষার অন্য সকল শব্দ থেকে তার পার্থক্যটিই। লাকাঁর ‘দ্যোতকের (Signifier) নিচে দ্যোতিতের (Signified) অবিরাম পিছলে পড়া’র ধারণাটি আসলে ভাষার ভেতরে যে-অভাবটি তিনি দেখেন, তা কোনো বস্তুকে বোঝানোর তার ক্ষমতা। তাহলে, ভাষার শুদ্ধতা-বিষয়টি কীভাবে ইতিবাচক অর্থ-উৎপাদনে কাজে আসবে? রেটোরিকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে (অথবা স্টাইলিস্টিকসে) ভাষার প্রমিত একটি রূপ গুরুত্বপূর্ণ হতেই পারে, কিন্তু সামাজিক ডিসকোর্স হিসেবে ভাষার কোনো একক শুদ্ধ রূপ থাকতে পারে না। আমাদের 888sport live footballে সম্প্রতি গুরুচণ্ডালি ভাষার ব্যবহার বেড়েছে। অনেক তরুণ কবি ও গল্পকার তা করছেন, গ্রামের ভাষা, স্থানীয় ডায়ালেক্ট এবং ‘শুদ্ধ’ ভাষা মিলে এক নতুন 888sport live footballভাষা তৈরি হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেকেই। এটি ভালো কি মন্দ – সে-বিচার করা এ-888sport liveের উদ্দেশ্য নয়, সে-বিতর্ক চলুক তার নিজস্ব গতিতে। কিন্তু এই যে নতুন একটি 888sport live footballভাষা কেউ কেউ ব্যবহার করছেন, তার পেছনে একটি অনিবার্যতাও আছে। ভাষাকে ক্ষমতার একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা এবং ভাষাকে বাস্তবতার প্রকাশে একটি সুবিধাভোগী মাধ্যম হিসেবে দেখা – এ-দুয়ের উত্তর-আধুনিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই 888sport live footballভাষা। এবং উত্তর-আধুনিকতার একটি সূত্র বলে যে, মূল্যবিচার শেষ পর্যন্ত প্রচল, ক্ষমতা, কেন্দ্রের পক্ষেই যায়।

উত্তর-আধুনিক-সত্তাটি কোনো সুসংগত সত্তা নয়, বস্তুত এর পরিপার্শ্বের ওপর কোনো শৃঙ্খলা-অর্পণের ক্ষমতাও তার নেই – এ-বিষয়টি যদি আমরা বিবেচনায় রাখি, এবং একই সঙ্গে নিজেদের অবস্থানটি পরীক্ষা করে দেখি, তাহলে কী দেখতে পাই? আমরা কি পারি আমাদের পরিপার্শ্বকে নিজেদের মতো করে নিতে? বিশ্বায়নের এই প্রবলযুগে আমরা বৈশ্বিকভাবেই ঊণজন। দেশের ভেতরে আমাদের অবস্থা নাজুক। পরিবেশ থেকে নিয়ে রাজনীতি – সর্বত্র চলছে ক্ষয়। এ-অবস্থায় আধুনিক মানুষ কিছুটা হলেও নির্বাণ খোঁজে – একটি নৈতিক আখ্যানে একটি সমাধান চায় (আধুনিক 888sport alternative linkে – বাংলা, ইংরেজি বা 888sport app ভাষার – এরকম একটি সমাধান-কামনা বা সমাধানের আভাস দেখা যায়)। কিন্তু সমাধান কি আসলে মেলে?

888sport appর রাস্তায় ঠেলাগাড়ি চলে, ষাট লাখ টাকা দামের লাক্সারি সেডান চলে; শপিং সেন্টারে ভিড় জমায় উঠতি ধনপতিরা, বাইরে ফুটপাতে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসে থাকে নিশ্চল ভিক্ষুক। সরকারি দফতরের কেরানি-মেজো সাহেব-বড় সাহেব ঘুসের টাকা পকেটে নিয়ে মসজিদে ঢোকে। মাথার ওপর 888sport app download bdঘোষিত সতেরো হত্যামামলার আসামি আর অসংখ্য অপরাধে অপরাধী টপটেরর গ্রামের বাড়িতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে; একটি উপনির্বাচনে সরকারি দল ভোটের নামে চরম প্রহসন করে প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়ে ঘোষণা দেয়, আগামী উপনির্বাচনও এরকম ‘নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে’। উদাহরণের অভাব নেই – দিতে গিলে 888sport liveের কলেবর দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু এসবের সঙ্গে বোঝাপড়াটা করবে কীভাবে মানুষ? এবং এই বোঝাপড়া করতে গিয়ে ঠাট্টা, ব্যঙ্গ-কৌতুক, আত্মভাবনা, প্যারোডি, আয়রনি আর অনিশ্চিত দ্যোতনা-সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি যদি স্বস্তিমূলক উপাদান হয়ে দাঁড়ায় আমাদের আখ্যানগুলোর, তাহলে দোষটা কাকে দেওয়া যায়? অথবা, আরো বড় যে-প্রশ্ন, দোষ কি থাকে তাতে?

ক্রিস্টোফার নরিস উত্তর-আধুনিকতাকে আক্রমণ করেছিলেন এজন্য যে, সত্য ও মিথ্যা, বাস্তব ও বিভ্রম, সিরিয়াস এবং সিরিয়াস নয় – এমন সব ডিসকোর্সের মধ্যকার সব পার্থক্য তা মুছে ফেলছে। কিন্তু 888sport appsের সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় বহু আগেই তা ঘটে গেছে। তাহলে একটি উত্তর-আধুনিক সমাজেই তো আমরা বাস করছি, নাকি? আর যদি তা না হয়, তাহলে এই পার্থক্য-ঘোচানো সমাজের ছবিটি তুলে ধরলে উত্তর-আধুনিক 888sport live football বা চিত্রকলাকে কেন বকা দিতে যাবো?

টীকা

১. ইংরেজিতে পোস্টমডার্ন, পোস্টমডার্নিজম ও পোস্টমডার্নিটি – এই তিনটি বর্ণনার মধ্যে ধারণাগত ও বিষয়গত অনেক পার্থক্য বিদ্যমান এবং এসব পার্থক্য বিবেচনায় রেখেই বর্ণনাগুলোকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একই কথা প্রযোজ্য মডার্ন, মডার্নিজম এবং মডার্নিটির ক্ষেত্রে। ওই দুই গুচ্ছ বর্ণনার বাংলা আমরা সাধারণত এভাবে পাই – উত্তর-আধুনিক, উত্তর-আধুনিকবাদ ও উত্তর-আধুনিকতা এবং আধুনিক, আধুনিকবাদ ও আধুনিকতা। তবে বাংলায় উভয় গুচ্ছের প্রথম ও তৃতীয় শব্দদুটি সাধারণত ব্যবহার করা হয়। আধুনিকতা ও আধুনিকবাদ (অথবা
উত্তর-আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকবাদ) এক জিনিস নয় – প্রথমটি গুণবাচক এবং দ্বিতীয়টি ধারণাবাচক একটি পদ, কিন্তু প্রায়শ এ-দুটি বর্ণনা স্থান-বদল করে নেয়। এ-888sport liveেও এই চর্চাকে অনুসরণ করা হয়েছে। মডার্নিজম এবং পোস্টমডার্নিজমকে যথাক্রমে আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা হিসেবেই তরজমা করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে – বিশেষ করে যেখানে শব্দ দুটির একটি তাৎক্ষণিক তাত্ত্বিক পরিমণ্ডলকে চিহ্নিত করা হয়েছে – যেখানে একটি বক্ররেখার দুদিকে দুটি বর্ণনাকেই, অথবা শুধু আধুনিকবাদ অথবা উত্তর-আধুনিকবাদ ব্যবহার করা হয়েছে।

২. উত্তর-আধুনিক শব্দটির সুনির্দিষ্ট ব্যবহার আরো পরের ঘটনা। ১৯৩৫ সালে স্পেনের লেখক ফেদেরিকো দে ওনিস ‘আধুনিক 888sport app download apkর প্রতি কাব্যিক প্রতিক্রিয়া’র বর্ণনা হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৭৫ সালে ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টোয়েনবি ‘বহুত্ববাদ ও অ-পশ্চিমা সংস্কৃতিসমূহের উত্থান’ বর্ণনা করতে এর প্রয়োগ করেছিলেন। (জিম পাওয়েল, পোস্টমডার্নিজম ফর দি বিগিনার্স, চেন্নাই : ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৯৮ : ৭৮)। য় প্রথম বর্ষ, ষষ্ঠ 888sport free bet, ভাদ্র ১৪১১, আগস্ট ২০০৪