উত্তর-প্রজন্ম

বুলবন ওসমান

শান্তিনিকেতনে বসন্ত একটু দেরিতে আসে। ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহ তাই শীতময়। চৈত্রে বসন্ত-উৎসব। সব গেস্ট হাউস হয় পূর্ণ। তাই কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন যাত্রার আগে ফজল সাংবাদিক-বন্ধু রাতুলের শরণাপন্ন, একটা পরিচিত কোনো গেস্ট হাউস বুকিংয়ের জন্যে। রাতুল জানায় যে, এখন অতটা চাপ পড়বে না। নিশ্চিন্তে যেতে পারে। তবু ফজল বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক-বন্ধু জনককে ফোন করে। ভালো একটা গেস্ট হাউসে বুকিং দিতে বলে। ভাস্কর জনক তার রতনপলস্নীর বাড়ির কাছে শ্যামবাটিতে একটি গেস্ট হাউস বুকিং দেয়। বরাবর সে বন্ধুদের জন্যে এটা বরাদ্দ করে। একে তো তার বাড়ির কাছে, দ্বিতীয়ত, নামে এবং কাজে গেস্ট হাউসটি মনোরম। এটির উল্টোদিকে আর একটি গেস্ট হাউস আছে, বেশ বড় তবে অতটা বাগানসজ্জিত নয়, তাই এটার প্রতি পক্ষপাতিত্ব। আরো একটা বাড়তি সুবিধা, এই গেস্ট হাউসে পঞ্চব্যঞ্জনযুক্ত আহার মেলে। একেবারে ষোলো আনা বাঙালি খাবার। গৃহস্থবাড়ির রান্নার মতো। কুক ছেলেটি খুবই পটু। বিশেষ করে তার টমেটোর চাটনি মুখে লেগে থাকে।

যে-ই একবার এখানে আহার গ্রহণ করেছে, মনে-মনে ছেলেটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন না করে পারে না।

ইদানীং বয়সকে সমীহ জানাতে শুরু করেছে ফজল। তাই যাত্রায় সঙ্গে গ্রহণ করেছে মধ্য পঞ্চাশের হোসেনকে। হোসেন 888sport slot gameপিয়াসী ব্যক্তিত্ব। পেশায় ওকালতি। চৌকস। জ্ঞানার্জনে প্রবল আগ্রহ।  আছে জিজীবিষা।

সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের কাছে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়ে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের এসির অগ্রিম টিকিট চেয়ে ফজল বিফল। শুধু বিফল নয়, হতাশ হওয়ার মতো সংবাদ। ট্রাভেল এজেন্সি জানায়, কোথাও এখন এসি টিকিট মিলবে না। প্রমাদ গোনে ফজল। তাহলে উপায়?

হোসেন বলে, ফজলভাই, কুছ পরোয়া নেই। এখন তো শীতের আমেজ আছে, সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় যাওয়া যাবে। হোসেনের উপস্থিত-বুদ্ধি ফজলকে চিন্তামুক্ত করে।

বলে, ঠিক বলেছ! যে চমৎকার আবহাওয়া, এসির দরকার কী? বরং ওটা বদ্ধঘর। একটু বাইরের দৃশ্য দেখার উপায় নেই। আর শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস খুব বড় গাড়ি… সেকেন্ড ক্লাসের বগি যথেষ্ট… আরো একটা ভালো দিক আছে হোসেন।

কী?

আজ মঙ্গলবার। আগামীকাল বুধ। বুধবার শান্তিনিকেতন ছুটির দিন। সুতরাং যাত্রী খুব কম হবে। যাত্রীর ঢল নামে শনিবার। তাছাড়া দোলপূর্ণিমা পড়বে ১৬ বা ১৭ মার্চের দিকে। আজ ৪ তারিখ, সুতরাং গেস্ট হাউস ফুল হওয়ার কোনো কারণ নেই। এত আগে কেউ যাবে না। ভাড়াও মডারেট হবে। আমরা স্টেশনে ঘণ্টাখানেক আগে যাব। টিকিট পেতেও ঝামেলা হবে না।

পরদিন সাড়ে আটটার মধ্যে দুজন হাওড়া স্টেশনে। একটি কুলি যুবক ব্যাগ নিতে চাইলে হোসেন গররাজি, কিন্তু ফজল অনুমতি দিলে, এটা সে বাবার কাছ থেকে পেয়েছে, গরিবের প্রতি কমপ্যাসনেট গ্রাউন্ডে অনেক সময় প্রয়োজন না থাকলেও কাজ দেয়।

যুবক ছেলেটি আশ্বাস দিলে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে সে তুলে দেবে এবং করবে জায়গার ব্যবস্থাও।

গাড়ি এখনো ইন করেনি। ছেলেটি তাদের বারো নম্বর পস্ন্যাটফর্মে নিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় দাঁড়াল।

এখান থেকে সব বগি রিজার্ভেশন ছাড়া। আপনাদের অসুবিধে হবে না।

যুবক ছেলেটিকে ভদ্রঘরের ছেলে বলে মনে হলো ফজলের। ফর্সা রং, রোদে পুড়ে উজ্জ্বল তামাটে বর্ণ।

তোমার বাড়ি কোথায় বাবু? ফজল জিজ্ঞেস করে।

আমরা লিলুয়ায় থাকি। বাড়ি ছিল নোয়াখালী, 888sport apps।

নোয়াখালী! কোথায়?

মাইজদি।

বল কি! তোমরা এদিকে কবে এলে?

888sport apps হবার আগেই বাবা এদিকে চলে এসেছেন।

বাবা বেঁচে আছেন?

হ্যাঁ।

বাবাকে বলো পাসপোর্ট করতে, সঙ্গে তোমারটাও করে নেবে। 888sport apps ঘুরে আসবে।

দেখি, বাবাকে বলব। বাবা অবশ্য প্রায়ই দেশের গল্প শোনান…

তাদের কথার মধ্যেই দেখা গেল একটি ট্রেন পস্ন্যাটফর্মে ইন করছে।

আরে, আজ দেখি গাড়ি তাড়াতাড়ি এসে গেল! খুব ভালো হলো… শান্তিনিকেতনের যাত্রীরা এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি। একেবারে খালি গাড়ি পেয়ে যাবেন।

তাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি পস্ন্যাটফর্মে ইন করল। যাত্রীরা নামছে। তারা পেছনে সরে আসে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে গাড়ি খালি। এদিকে সব বগি পুরো জনশূন্য।

আসুন বাবু, বলে যুবক তাদের নিয়ে একটি কামরায় ওঠে।

একেবারে শূন্য বগি।

এভাবেই তাদের আরো ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হলো। কেউ উঁকিও দিচ্ছে না।

যুবক নতুন খেপের জন্যে চলে গেছে। ফজল আর হোসেন যুবকটির আচরণের ভদ্রতা নিয়ে আলাপ করে চলে।

888sport appsের লোক তো, মনটা এখনো শুকিয়ে যায়নি, বলে হোসেন।

ফজল সায় দেয়।

সাড়ে নটার পর দু-একজন করে যাত্রী উঠতে শুরু করে।

যথাসময়ে গাড়ি ছাড়ে। কামরায় এখন মোট আটজন যাত্রী। ইচ্ছা করলে তারা শুয়ে-শুয়ে যেতে পারে; কিন্তু তারা 888sport apps থেকে এসেছে সবকিছু দেখতে, তাই বসে-বসে বাইরের দৃশ্য অবলোকনে মাতে। রেলের দুলুনিতে ঝিমুনিও আসে না। স্নায়ুকোষ সজাগ।

সাড়ে বারটার দিকে বোলপুর। রিকশায় শ্যামবাটি যাত্রা।

বছর দেড়েক ফজল দেখে গিয়েছিল অ্যাপ্রোচ রোডটা মেরামত হচ্ছে, এখন এদিকটা বেশ ভালো বাঁধানো। মনে-মনে সে খুশি হয়। শান্তিনিকেতন-দর্শনার্থী যেন আনন্দে চলাচল করতে পারে। খানিকটা গিয়ে দেখে, মেরামত হয়েছে অল্প কিছুদূর। তারপর সেই ভাঙাচোরা, গর্ত, জল জমে থাকা।

এই সময় একটা ট্রাক যাওয়ায় বীরভূমের লাল ধুলো উড়তে শুরু করে। অ্যালার্জিতে ভোগা হোসেনের নাকে রুমাল। ফজল শান্তিনিকেতনকে ভালোবাসে বলে সয়ে যায়।

শ্যামবাটিতে গেস্ট হাউসে প্রবেশ করে হোসেন এতক্ষণে প্রশংসার বাণী উচ্চারণ করে।

বলে : না, গেস্ট হাউসটা সুন্দর!

টবে হাজার রঙের মৌসুমি ফুল। তার মধ্যে ফ্যান্সির রূপ অপরূপ। কাগজের বাহারি ফুলের মতো। মনে হয় যেন কৃত্রিম। আছে পিটোনিয়া, দায়ান্থাস, কার্নেশন… সব টবে। আর সামনের স্বল্পপরিসরে সাজানো বড়-বড় গোলাপ… তাজমহলকে সহজে চেনা যায়। আছে ডালিয়া। চন্দ্রমলিস্নকা।

দোতলার কামরাটি বেশ খোলামেলা। হোসেন খুশি।

ফাল্গুনের বিকেল ছোট। তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে এলো।

কাপড় পরতে-পরতে হোসেন জিজ্ঞেস করে, আমরা এখন কোথায় যাব?

আমরা যাব আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ভাস্কর জনকের বাসায়। তবে মনটা খুব খারাপ।

কেন?

এক বছর আগে আমি ওর স্ত্রীকে দেখে গেলাম… তিনি মারা গেছেন। বিশ-বাইশ বছরের সম্পর্ক ওদের সঙ্গে।

সত্যি, দুঃখজনক।

খুবই খারাপ লাগছে। একটা সুখী পরিবার হঠাৎ করে দুঃখের সাগরে পড়ে গেল। তবে একটা ভালো খবর আছে। বউদি ছেলের বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছেন। ওদের একটা পৌত্রও হয়েছে শুনেছি।

ভালো। এই শিশু সব দুঃখ ভুলিয়ে দেবে।

তাই প্রার্থনা করি।

গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে সামান্য ডানে গিয়ে বাঁয়ে একটা রাস্তা গড়ানো চলে গেছে। এদিকটায় সব বসতবাড়ি। ঢাল ধরে
নামতে-নামতে শেষ মাথায় বাঁয়ে বাঁক নিতে হয়। এটা আসলে জনকবাবুর বাড়ির সীমানা-দেয়ালের গায়ে এসে লাগছে।

সন্ধ্যা নেমে গেছে। জায়গাটা টিলাসদৃশ। বীরভূম অঞ্চলের ল্যান্ডস্কেপ এরকমই। প্রাচীন ভূমিরূপ। ফটকে হাত দিতেই ভেতর থেকে কুকুরের হাঁক। গলা উঁচিয়ে ফজল জনকবাবুর নাম ধরে ডাকে।

এক ডাকেই সাড়া মেলে।

দাঁড়ান, কুকুরটাকে বাঁধি।

মিনিট দুই পর সদ্য অবসর নেওয়া অধ্যাপক জনক দরজা খোলে।

আসুন… আসুন…

আধো আলো আধো অন্ধকারে ফজল খেয়াল করে, জনকের তারুণ্যগাথা শরীরে হঠাৎ করে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে। ভাস্করের পেটা শরীরটা যেন কিছুটা হেলে পড়েছে।

ফজল হোসেনের সঙ্গে পরিচয় করে দেয়।

কুকুরটা ডেকে চলেছে।

প্রচুর শিশুগাছ আশপাশে। নীড়ে-ফেরা পাখির কলতান। চড়াই ধরে তারা বাড়িতে পৌঁছায়। অনেকগুলো সিঁড়ি ভাঙতে হয়। সামনেই অর্ধবৃত্তাকার ব্যালকনি। এখানে পাদুকা খলন করে তারা বসার ঘরে। লম্বাটে কামরাটায় সোফা বাদে বই ঠাসা। আছে ছোটখাটো ভাস্কর্য। দেয়ালে চিত্র।

ফজল মিসেসের প্রয়াণ-কথাটা পেড়ে তার সহানুভূতি প্রকাশ করে। দীর্ঘশ্বাস পড়ে জনকের।

আপনি গত বছর দেখে গেলেন, আজ নেই।

আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, ভগবান যখন নেওয়ার তাকে তো কেউ ঠেকাতে পারবে না। অবসর জীবন এখন কেমন করে কাটাচ্ছেন?

বাড়িতে নতুন সদস্য এসেছে, তাকে নিয়েই সময় কাটে।

এ-কথা বলে জনক তার পুত্রবধূকে ডাক দেয়।

পুত্রবধূ সন্তানকে কোলে করে প্রবেশ করে। অহম বোরো গোত্রের মঙ্গোলীয় চেহারা মেয়েটির। জনকের পৌত্রটি হয়েছে প্রায় মায়ের মতো। ফর্সা, নাদুসনুদুস, বছর হতে যাচ্ছে বয়স।

বাচ্চাকে সবাই আদর করে।

বাচ্চার খাবার সময়। তাই মা-ছেলে ভেতরে যায়।

ব্যক্তিগত আলোচনা থেকে আলোচনা সামনের নির্বাচন পর্যন্ত গড়ায়। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান আলোচনায় আসে বেশি। লোকসভায় কারা ভালো ফল করবে। বর্তমান রাজ্য সরকারের নীতি নিয়েও আলোচনা হয়। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত আসে।

রাত সাড়ে আটটার দিকে ফজল জনকের বাড়ি ত্যাগ করে।

রাতের শান্তিনিকেতন অনেক নির্জন। আকাশে শুধু তারার মেলা। ঝিঁঝির ঐকতান সর্বত্র।

হোসেনের এই প্রথম শান্তিনিকেতন দর্শন। তাই পরদিন নটার দিকে তারা বিশ্বভারতীতে পৌঁছায়। এক-এক করে ফজল সব দেখিয়ে চলে। কলাভবন, সংগীতভবন, পাঠভবন, শিক্ষাভবন. ঘণ্টাঘর… পরে তারা ঢোকে উত্তরায়ণে। অনেক দর্শনার্থী এখানে। দু-চারজন বিদেশিও দেখা যায়। এখন এখানে ফোন বন্ধ রাখতে হয়। ছবি তোলা নিষেধ। অনেক কড়াকড়ি। মাটির বাড়ি শ্যামলীর ওপর ক্যানভাসের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এটায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। সব নবীকরণের কাজ চলছে।

গোটা উত্তরায়ণ চত্বর কাঁকর-বিছানো। ফাল্গুনের দুপুরে তপ্ত। বাতাস লুর মতো তেতে উঠেছে। এখানের সবকিছু একসময়
খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখেছে ফজল। তাই সে একটি বড় বৃক্ষির ছায়ায় দাঁড়ায়।

হোসেন, তুমি সব দেখো। আমি একটু ছায়ায় দাঁড়াই। আমার সব দেখা।

ঠিক আছে, বলে হোসেন এক-এক করে সব ভবন দেখতে চলে যায়।

ফজল দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে হাজার রকম দর্শনার্থী দেখতে থাকে। মনে পড়ে, কবিগুরুর 888sport app download apkর লাইন : এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে… চোখের সামনে সেই মানব দল চলেছে। আর এই মানব দল চলেছে কবিগুরুর 888sport sign up bonusকে মনে করে। আজ কবি নিজেই সাগর হয়ে গেছেন। সবাই আসছেন সেই সাগরে সণান করে পরিশুদ্ধ হতে।

উত্তরায়ণে ফুলের কেয়ারিতে এখন অনেক মৌসুমি ফুল। একটি কেয়ারির সামনে একটি বাচ্চা বাবাকে ধরেছে বেগুনি রঙের একটা পিটোনিয়া তুলে দিতে। বাবা বোঝাতে চেষ্টা করছে, বাগানের ফুল তোলা নিষেধ। ছেলেটি জিদ করেই চলেছে। বাবা অগত্যা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সিকিউরিটির লোকের ভয় দেখাল। তা-ও ছেলেটি শুনবে না। বাবাকে সাহায্য করতে ফজল এগিয়ে যায়।

খোকা ফুল নেবে? চলো আমার সঙ্গে, বাইরে গিয়ে তোমাকে আমি ফুল দেবো। এটা তো বাগান, সবাই দেখতে আসে, এখান থেকে ফুল ছিঁড়তে হয় না।

ছেলেটি তাও গোঁ ধরে।

সিকিউরিটির যুবক ছেলেটি মনে হয় খেয়াল করেছে। সে-ও এগিয়ে আসে।

ছেলেটি এবার একটু চিন্তিত হয়। তারপর বলে, ঠিক আছে বাইরে গিয়ে ফুল দিতে হবে।

নিশ্চয় পাবে, আমি কথা দিচ্ছি… ফজল বলে। কিন্তু আমার সঙ্গে তোমাকে আমাদের গেস্ট হাউসে যেতে হবে। কত ফুল চাও? যত চাও, তত দেবো।

আমি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গেস্ট হাউসে যাব, বলে ছেলেটি।

ঠিক আছে। এখন বাবার সঙ্গে সব ঘুরে দেখ। আমি ওই গাছতলায় অপেক্ষা করছি।

ফজল নিজের জায়গায় ফেরত আসে।

সিকিউরিটির ছেলেটি মুচকি হেসে নিজের দায়িত্বে চলে গেল।

পাঁচটার দিকে ফজল হোসেনকে বলে, চলো একটু তাড়াতাড়ি বেরোই। তোমাকে এক ঐতিহাসিক চরিত্র দেখাব।

তাই!

হ্যাঁ।

আচ্ছা, শায়রবীথি বলে একটি প্রতিষ্ঠানের অনেক বিজ্ঞাপন দেখছি, এটা কী?

ঠিক আছে, তোমাকে প্রথম শায়রবীথি দেখাব। তারপর দেখাব আমার চেনা এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।

গেস্ট হাউসের সামনে দুটি রিকশা অপেক্ষমাণ।

ফজল হোসেনকে বলে, তুমি বলো, কোথা যাবে?

হোসেন সামনের রিকশাকে বলে, শায়রবীথি যাবেন?

যাব।

কত নেবেন?

কুড়ি টাকা।

এত! শান্তিনিকেতনে রিকশাভাড়া বেশি, তাই হোসেনের বিস্ময়।

উঠে পড়ো, বলে ফজল। ওখানে গিয়ে ফেরত যাত্রী পাবে না। তাই ভাড়া বেশি।

ক্যানালপাড়ের ব্রিজ পার হয়ে রিকশা ডানে মোড় নেয়।

ক্যানালপাড়ের এই জায়গাটা হলো শান্তিনিকেতনের হার্ট। ইয়াং কবি, 888sport live footballিক, 888sport live chatীরা বিকেল থেকে রাত আট-নটা পর্যন্ত এখানে আড্ডা দেয়। চায়ের দোকানগুলো আহামরি কিছু নয়, কিন্তু প্রাণের ছোঁয়া আছে। এখানে মাছ-ভাতও পাওয়া যায়। বেশ সস্তা। বয়ান করে চলে ফজল।

ক্যানালপাড়ে চমৎকার বাগান। মৌসুমি ফুলে ভরা।

বাগানটা সুন্দর, বলে হোসেন।

বাগানটা সুন্দর বলে চায়ের দোকানগুলো অসুন্দর মনে হচ্ছে।

কথার পিঠে কথা জোড়ে ফজল। সামান্য এগিয়ে রিকশা বাঁয়ে বাঁক নেয়। এবং একনাগাড়ে গড়ানে চলতে থাকে। দুপাশে সুদৃশ্য সব

একতলা-দোতলা বাড়ি।

রিকশা তো সেই গেস্ট হাউস থেকে ঢালুতেই চলছে, ভাড়া মনে হয় বেশি নিল, হোসেনের মন্তব্য।

কিন্তু ফেরার সময়? তাছাড়া এদিকে যাত্রী পাওয়াও ভার। ওখানে পৌঁছে আমরা ওকে রেখে দেবো। না হয় আর রিকশা পাওয়া যাবে না।

রিকশা এবার ডানে মোড় নেয়। বাঁয়ে উঁচু বেড়া, তার ওপর ঘন হেঞ্জ।

ফাঁক দিয়ে একটু-একটু জল দেখা যাচ্ছে, এটা কী? প্রশ্ন হোসেনের।

ওটাই তোমার শায়রবীথি। আমি সেই ১৯৯২ সালে প্রথম যখন আসি, এসব খোলা ছিল। শীতকাল তখন। প্রচুর পাখি ছিল। সে এক মধুর দৃশ্য।

এই ঘেরাটা কি ভালো হলো? প্রশ্ন হোসেনের।

কী করবে, এসএসডিএ রোজগার করতে চায়। বাৎসরিক লিজ দিয়ে টাকা পাচ্ছে।

এসএসডিএটা কী?

শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।

কবিগুরুর প্রতিষ্ঠানের লোকেরা এরকম করল কেন? শুধু বেড়া দিত। লুক থ্রম্নথাকত।

কমার্সের যুগ।

কিন্তু কবি তো একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। এটা তো লাভের জন্যে তৈরি হয়নি। বরং তিনি এখানে বসবাস করে প্রকৃতিকে মূল্য দিয়েছেন। তিনি তো কলকাতাতেও থাকতে পারতেন। তিনি অরণ্যের আহবান জানিয়েছিলেন। দাও ফিরে সে অরণ্য… এটা তাঁর আহবান। একটা মেসেজ। বাণী। তা এভাবে অবহেলিত হবে?

যুগধর্ম হোসেন! উপায় নেই। মানুষ যখন এই মর্মবাণী বুঝবে, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। হয়তো আর ফেরা যাবে না।

রিকশা আবার বাঁয়ে মোড় নেয়। বেশ খানিকটা এগিয়ে শায়রবীথির ফটকে হাজির। বিপরীত দিকে একটা ফাঁকা জায়গা। তারপর পেছনে বেশ কয়েকটা বাড়ি। এদিকে রাস্তার পাশে পাকা দেয়ালঘেরা কয়েকটা পস্নট।

রিকশা থেকে নেমে ফজল রিকশাঅলাকে অপেক্ষা করতে বলে। দুজন ফটক ছাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। চত্বরটি বাঁধানো। অনেক টব দিয়ে সাজানো। মৌসুমি ফুল বসন্ত-বাহার গাইছে।

শায়রবীথি সম্বন্ধে জানার জন্যে ফজল হোসেন সিকিউরিটির ছেলেটির সঙ্গে আলাপ করে। ছেলেটির নাম ফিলিপ ছত্রী। জানায় : ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে এটি চালু হয়। দোতলায় আছে রেস্টুরেন্ট। পার্কের দর্শনী কুড়ি টাকা। খোলে সকাল দশটায়। শীতে সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় বন্ধ – গ্রীষ্মে সাড়ে আটটা। গড়ে ২৫০ থেকে ৪০০ জন হয় দর্শনার্থী। দিঘিতে আছে বোটিং। রাতে থাকার ব্যবস্থা নেই। আছে লাইব্রেরি, জিম ইত্যাদি।

ফজল আর হোসেন পুরো চত্বর ঘুরে দেখে। শান্তিনিকেতনি সাজার চেয়ে প্যাভেলিয়ন-প্যাভেলিয়ন ভাবটা বেশি।

এবার ফেরার পালা। সন্ধ্যা নামছে তালতোড়ে। হঠাৎ করে ঠান্ডাটা যেন ঝপ করে নেমে এলো। সব বাড়ির সীমানা-দেয়াল জুড়ে নানা রঙের বাগানবিলাস মহাসমারোহে সজ্জিত। রিকশা এবার উতরাইয়ে। ধীরগতি। পর্যটকদের সুবিধে। চারিয়ে চারিয়ে সবকিছু উপভোগ করতে পারে।

ক্যানালপাড়ে উঠতে রিকশাঅলাকে নেমে টানতে হলো।

হোসেন, চলো আমরা নেমে পড়ি, বলে ফজল।

না, বাবু, এই তো একটু রাস্তা, আপনারা বসেন।

সে যেন যাবার বেলার সুবিধাটা এখন খেটে পুষিয়ে দেবে।

তার কথা না শুনে দুজন রিকশা থেকে নেমে পড়ে।

ক্যানালপাড় পৌঁছে ফজল বলে, চলো, আমার আর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে তোমাকে নিয়ে যাই। তোমার ভালো লাগবে। ভদ্রলোক তোমার মতো আইন ব্যবসায়ী। বাহাই সম্প্রদায়ভুক্ত। খুব সজ্জন ব্যক্তি। মানুষের উপকার করার জন্যে সদাপ্রস্ত্তত। তবে এই পরিবারেও সেই একই ট্র্যাজেডি। ভদ্রলোকের স্ত্রী সম্প্রতি মারা গেছেন। এদেরও একমাত্র সন্তান হলো ছেলে। এখনো ছোট। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা সারাদিন বাইরে। ফেরে সন্ধ্যায়। বোঝো, কী রকম একটা অবস্থা।

ক্যানালপাড়ের মোড়ে রিকশা ছেড়ে দেয় ফজল। তারা গোয়ালপাড়ার দিকে ঢালে নেমে যাওয়া পাকা রাস্তা ধরে এগোয়। এদিকে রাস্তায় বাতি নেই। দু-একটা জোনাকির দেখা মেলে। খানিকটা গিয়ে বাঁয়ে ঢাল ধরে একটা সরু রাস্তা নেমে গেছে। এদিকটায় বাতি থাকায় চলাচল সহজ। দুপাশে সুন্দর-সুন্দর সব বাড়ি। কয়েকটা বাড়ি পার হয়ে একটা ছোট পুকুরসমেত তিনতলা বাড়ির সামনে ফজল দাঁড়িয়ে যায়।

এই বাড়ি, বলে সে কলিংবেলে চাপ দেয়।

একজন যুবক বেরিয়ে আসে। ফজল চিনতে পারে। বলে, কাকা, বাবা আছেন?

বাবা একটু বাইরে গেছেন। ভেতরে আসুন। এখনি এসে পড়বেন।

বসারঘরটি সুন্দর করে সাজানো। আইনের বই আছে কিছু।

তারা বসে আলাপ করছে, এর মাঝে একটি তরুণী-কর্মী ঢোকে। আপনাদের চা দিই?

বাবু জেনে গেছেন যে, আপনারা পৌঁছে গেছেন। তিনি এসে গেলেন বলে।

মেয়েটি সাঁওতাল, পাশেই বনের পুকুরডাঙ্গায় যে সাঁওতাল পলিস্ন আছে ওখানকার মেয়ে। এরা বড় বিশ্বস্ত ও সরল। পুরো বাড়ি এদের হাতে ফেলে রেখে গৃহস্থ নিশ্চিন্ত।

মিনিটপাঁচেকের মধ্যে অ্যাডভোকেট মুকুলবাবু হাজির। খেলোয়াড়সুলভ চেহারা, বয়স ষাটের কাছে, কিন্তু বোঝা যায় না।

ঘরে ঢুকেই ফজলকে জড়িয়ে ধরে। কতদিন পর দেখা। আপনি দুঃসংবাদটা জানেন তো?

হ্যাঁ, জানি ভাই! মনটা খুব ব্যথিত। কী সুন্দর মানুষটা… এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন। কে জানত!

ফজলভাই, বাড়িটা একেবারে খালি হয়ে গেছে! সব জিনিসে তার হাতের ছোঁয়া। আপনি তো দেখেছেন, কী সুন্দর দেখতে ছিল…

সত্যি সান্তবনা দেবার কোনো ভাষা নেই ভাই। বাচ্চাটার কথা ভাবলে আরো খারাপ লাগে।

এত সুন্দর জীবন কাটছিল রে ভাই… কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল… বাচ্চাটা ছ্যাঁওড় হয়ে গেল… ছেলেমেয়ের কাছে মা-ই তো সব…

ঠিকই ভাই। কিন্তু মানুষের হাতে তো সবকিছু নেই। কোথা দিয়ে কী হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। সবুর করা ছাড়া কিছুই করার নেই।

এ-সময় তরুণী মেয়েটি চা নিয়ে ঢোকে।

ফজল হোসেনের সঙ্গে মুকুলের আলাপ করিয়ে দেয়।

আপনারা বার্ড অব সেম ফেদার আলাপ করে আনন্দ পাবেন। হোসেন খুবই সোফিসটিকেটেড মানুষ। আইনজ্ঞ হিসেবে নাম আছে।

সালাম ভাই। একই পেশার মানুষ যখন ঘনিষ্ঠতা হবেই। খুব কষ্টের মধ্যে আছি ভাই, ফজলভাই সবই জানেন। আপনার ভাবি কী চমৎকার মানুষ ছিলেন… গলা ধরে আসে মুকুলের।

সত্যি, কী বলে যে আপনাকে সান্তবনা দেবো, কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, বলে হোসেন।

নিন, চা নিন। ঠান্ডা হয়ে যাবে… মুকুল গৃহকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

সবাই জাগতিক পরিবেশে প্রত্যাবর্তিত। পরিবেশ হালকা করার জন্যে হোসেন বলে, আপনার বাড়ির আশপাশে পাঁচ কাঠা জায়গা দেন না, আমি আর ফজলভাই আপনার প্রতিবেশী হই!

অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি যখন বাড়ি করি, ফজলভাইকে বলেছিলাম পাঁচ কাঠা জায়গা রাখতে। তখন কাঠা ছিল দশ-বারো হাজার। এখন জমিই নেই। আর কেউ যদি বেচে তো আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা কাঠা চাইবে।

আপনার কাছেপিঠে দেখেন, ওই রেট তা-ও কবুল। জোর দিয়ে বলে হোসেন।

দেখতে পারি, কিন্তু এখানে এখন কেউ বেচতে চাচ্ছে না। সব ধরে বসে আছে।

জমি এমন একটা জিনিস, সহজে কেউ হাতছাড়া করতে চায় না – বলে ফজল।

এই সময় মুকুলের ছেলে প্রবেশ করে।

বাবা, জিমের সময় হয়ে এলো…

হ্যাঁ, বাবা আসছি। এই তোমার চাচাদের সঙ্গে আর দু-মিনিট… তোমার ফজল চাচা অনেক দিন পরে এলেন…

না না, আমরা উঠি। ছেলের জিমের সময় হয়ে গেছে… আমরা আর এক সময় আসব সময় নিয়ে… চায়ের কাপ শূন্য করে তারা উঠে পড়ে।

ঠিক আছে ফজলভাই, আর একদিন সময় করে বসা যাবে। হোসেনভাই, আপনিও আসবেন। আপনি প্রথম এলেন…

আবার আসব… ভালো থাকবেন বলে হোসেন।

ক্যানালপাড়ে পৌঁছার আগে ফজল হোসেনকে বলে, এবার তোমাকে এক ঐতিহাসিক চরিত্রের কাছে নিয়ে যাব। আজ থেকে বিশ-বাইশ বছর আগে তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল; মুকুলবাবুর সঙ্গেও আলাপ ওই সময়। যে-ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করাব, তিনি এখন আশি-বিরাশি বছরের মানুষ হবেন… যখন প্রথম আলাপ হয় তিনি বিশ্বভারতীর চাকরি থেকে মাত্র অবসর নিয়েছেন… পিয়ন ছিলেন… ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর যতজন পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তার মধ্যে অনেক কষ্ট গেছে… প্রাণহানি ঘটেছে… সর্বস্বান্ত হয়েছেন… সম্ভ্রম গেছে… সবকিছুর পরও পূর্ববঙ্গের জন্যে তাদের সবার মনের বড় অংশজুড়ে আছে ভালোবাসা। যেমন যারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে স্থানান্তর হয়েছেন, তাদেরও আছে পশ্চিমবঙ্গের জন্যে ভালোবাসা। এটা মূলত জন্মভূমির মায়া। যা স্বর্গের চেয়ে দামি। আমি পূর্ববঙ্গ থেকে আসা যত লোকের সঙ্গে মিলেছি তার মধ্যে যার সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দেবো… ভদ্রলোকের নাম অনিল মিত্র, বরিশালের মানুষ… আসলে পিরোজপুরের… তাঁকে আমি দেশের কথা বলতে-বলতে যেভাবে ডুকরে কাঁদতে দেখেছি, এমনটা আর কখনো দেখিনি। এই ভদ্রলোক তাই আমার কাছে এক ঐতিহাসিক চরিত্র। একটি খাবার দোকান চালান।

পূর্বাশা।

হ্যাঁ, ওটা তো তালগেড় যাবার সময় আমার চোখে পড়েছে। একেবারে ক্যানালপাড়ের মোড়ে।

হ্যাঁ। তখন একটা ছিল। এখন দু-ছেলের একই নামে পাশাপাশি।

ক্যানালপাড়ে পৌঁছে ফজল পূর্বাশার রাস্তার দিকের দোকানে ঢোকে। একজন যুবতীকে পেল সামনে।

আচ্ছা, অনিলবাবুকে পাব?

ঠাকুরদা! তিনি তো মারা গেছেন!

কী বললে!

তিনি মারা গেছেন?

ফজলের সারা অন্তর বিষাদে ভরে গেল। কত আশা করে এসেছিল হোসেনকে একজন ঐতিহাসিক চরিত্র দেখাবে। আর এবার সে জোর চেষ্টা চালাবে অনিলবাবুকে পিরোজপুর নিয়ে যাবার। সব ব্যর্থ করে দিয়েছেন অনিলবাবু।

সে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। অপেক্ষমাণ হোসেনকে বলে, হোসেন আমাদের মিশন ফেল।

কী হলো?

অনিলবাবু মারা গেছেন। চলো ভেতরে গিয়ে জানি, কবে এবং কীভাবে মারা গেলেন।

দুজন দোকানে ঢুকে মেয়েটিকে পেয়ে গেল।

তোমার নাম কী?

উত্তরা।

আমি ফজল… তোমার দাদুর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল…

আমি আপনাকে দেখেছি, কিছুদিন আগে আপনি তো এসেছিলেন?

হ্যাঁ।

দাদু গত বছর ৩০-এ মে মারা যান।

কী হয়েছিল?

ক্যান্সার।

হ্যাঁ, শেষবার তোমার ঠাকুরদার সঙ্গে যখন আলাপ করছিলাম, দেখলাম খুব শুকিয়ে গেছেন…

… বুঝতে পারিনি তিনি অসুস্থ। তিনি এ-ব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনওনি। তখনো তোমার দাদু দেশের কথা বলছিলেন। তুমি লেখাপড়া করছ?

হ্যাঁ। পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে বিশ্বভারতীতে অনার্স পড়ছি।

খুব ভালো।

তোমার দাদু শেষের দিকে কী বলতেন?

খালি দেশের কথা বলতেন। তার খুব ইচ্ছা ছিল দাহটা যদি পিরোজপুরে করা যায়!

তোমার দাদু দেশত্যাগের দুঃখ ক্ষণিকের জন্যেও ভুলতে পারেননি।

হ্যাঁ। আমি পাসপোর্টের জন্যে ফরম জমা দিয়েছি।

স্কলারশিপ পেয়েছ নাকি? কোন দেশে যাবে?

না। আমি যাব ঠাকুরদার দেশে।

ঠাকুরদার দেশ!

সপ্রতিভ উত্তর।

স্মিত হেসে বলে,

না, আমাদের দেশে।