একজন সংস্কৃতিমান শিক্ষকের প্রস্থান

আশি ও নব্বইয়ের দশকে দৈনিক সংবাদের 888sport live football সাময়িকীটি ছিল উল্লেখযোগ্য। স্কুলে পড়ার সময় ওই 888sport live football সাময়িকীতে প্রথম সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখা পড়ি। ‘অলস দিনের হাওয়া’ নামে তিনি একটি পাক্ষিক কলাম লিখতেন। বিশ্ব888sport live football, কখনো কখনো চিত্রকলা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতেন। পরে জেনেছি তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। কথা888sport live football, নন্দনতত্ত্ব, 888sport live, চিত্রকলা ইত্যাদি তাঁর 888sport live footballচর্চার ক্ষেত্র।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে প্রথম দেখি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর। কলাভবনের দোতলায় ছিল আমাদের বিভাগ। পাশেই ইংরেজি বিভাগ। আমার বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সেরা শিক্ষকদের কক্ষে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম। এ আমার পরম সৌভাগ্য। ইংরেজি বিভাগের দুই খ্যাতিমান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কক্ষে প্রায়ই যেতাম। 888sport live chat, 888sport live football, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাঁদের কথা শুনেছি, সমৃদ্ধ হয়েছি। তাঁদের বিভিন্ন লেখা সম্পর্কে মুগ্ধতার কথা জানাতাম। লেখালেখির বিষয়ে আমাকে উৎসাহ দিতেন।

বিতর্কচর্চার সুবাদে বিভিন্ন সময় বিতর্কের বিষয়ে রসদ সংগ্রহের জন্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে যেতাম। তাঁর পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্তঃহল ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি।

পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের রসবোধ ছিল সূক্ষ্ম ও আকর্ষণীয়। ২০০৫ সালে তিনি ও যতীন সরকার স্যার ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’য়ের জন্য পুরস্কৃত হন। ২০১৮ সালে এ-দুজন আবার একসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল 888sport live football 888sport app download bd পান। এ-অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। রসিকতা করে মনজুর স্যার আমাকে বলেছিলেন, ‘রাজীব, যতীনদা আর আমার জুটি অপরাজিত। আমরা এভাবেই একসঙ্গে 888sport app download bd পেতে থাকবো।’ মাত্র দু-মাসের ব্যবধানে এই দুই গুণী প্রয়াত হয়েছেন।

আমার চাকরিজীবনের অধিকাংশ সময় 888sport appর বাইরে কেটেছে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতাম। 888sport appর জীবনে নিয়মিত দেখা হতো বাংলা একাডেমি, 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমি, বিশ্ব888sport live football কেন্দ্রে। কখনো কখনো তিনি বক্তা ছিলেন, কখনো আমি বক্তা ছিলাম। তিনি গর্বের সঙ্গে সবাইকে বলতেন, ‘রাজীব আমার ছাত্র।’

888sport live football 888sport live chat সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিভিন্ন বিষয়ে আমাকে লিখতে বলতেন। ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হতো আমাদের। শিক্ষার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করতেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে আমার কাজের প্রশংসা করতেন। কালি ও কলম এ-বছরের শুরুতে জীবিত গুণীজনদের নিয়ে একটি বিশেষ 888sport free bet প্রকাশ করে। সেই 888sport free betর আলোচিত তিন গুণীজন সন্জীদা খাতুন, যতীন সরকার ও আহমদ রফিক। যতীন সরকারকে নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছিলেন। আমার লেখাটি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে। লেখাটি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম খুব পছন্দ করেছিলেন।

কথা888sport live footballে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিজস্ব ধারা তৈরি করতে পেরেছিলেন। তাঁর গল্প ও 888sport alternative link সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে তাঁর আসল কৃতিত্ব সমালোচনা 888sport live football তথা 888sport live 888sport live footballে। সমালোচনার ক্ষেত্রে তাঁর বহুমাত্রিকতা লক্ষণীয়।

আশির দশকে নন্দনতত্ত্ব বইটি লিখে 888sport live chat-সমালোচনার জগতে নিজের একটা স্থান করে নেন মনজুরুল ইসলাম। এ-বিষয়ে 888sport appsে এটিই ছিল প্রথম বই। ছোট ছোট পরিচ্ছেদে বিভক্ত বইটি নন্দনতত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সৌন্দর্য ভাবনার অসামান্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেই লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতি –

পৃথিবীতে যত মানুষ তত তার ভিন্ন প্রকাশ। 888sport live chatের এই বহুবিস্তৃত প্রেক্ষাপট থাকায় এর এক বিশালতা আছে, ব্যাপ্তি-গভীরতা আছে। কোনো বিশেষ আলোচনায় 888sport live chatের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন অসম্ভব ব্যাপার, কোনো দার্শনিক, 888sport live chatী চিন্তাবিদ 888sport live chat সম্বন্ধে শেষ কথা কোনোদিনই বলতে পারবেন না। এজন্য নন্দনতত্ত্ব প্রাচীন শাস্ত্র হয়েও চিরকালই প্রাসঙ্গিক। মানুষের হৃদয়ের প্রকাশের সাথে এর যোগ, মানুষের সৃষ্টির সাথে এর সম্পর্ক এবং মানুষের কর্মকাণ্ডেই এর বৈধতা, এসব মিলিয়েই নন্দনতত্ত্ব।

পাশ্চাত্যের বিখ্যাত চিত্র888sport live chatীদের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার অসামান্য মূল্যায়ন করেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিভিন্ন 888sport liveে বহুবার তিনি চিত্রকর রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ছবি ভারতীয় চিত্রকলার পূর্ববর্তী বা সমকালীন ধারা থেকে ভিন্ন ছিল। নিজের ছবিকে রবীন্দ্রনাথ ভাবপ্রধান করেননি, আধুনিক ইউরোপীয় চিত্রকলার মতো আঙ্গিকপ্রধান করেছেন। নিজের ছবিকে বলেছেন রেখা ও রঙের ছবি, ভাবের ছবি নয়। ১৮৯৪ সালের ১৩ই জুলাই এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার মনে হয় বিশুদ্ধ আর্ট হচ্ছে ছবি ও গান, 888sport live football নয়। মানুষের ভাষা, মানুষের তুলি ও কণ্ঠের চেয়ে ঢের বেশি মুখর। 888sport live footballে আমরা অনেক জিনিস মিশিয়ে ফেলি …।’

১৯২১ সালে 888sport appয় 888sport live chat বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি মূল্যবান ভাষণ দেন। সেই ভাষণ ‘The Meaning of Art’ (888sport live chatের ভাবার্থ) নামে প্রকাশিত হয়। এ-ভাষণে তিনি তাঁর সময় থেকে অনেক অগ্রসর হয়ে 888sport live chatের সম্ভাবনার দিগন্তকে বিস্তৃত করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে ‘রবীন্দ্রনাথের চিত্রভাবনা’ 888sport liveে মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন –

ঐতিহ্যকে রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন খাটো করে দেখেননি – 888sport live chatের পেছনে কার্যকর শাস্ত্রীয় এবং ঐতিহ্যিক নন্দন চিন্তাকে তিনি আধুনিকতার জানালা দিয়ে দেখতে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেননি। বস্তুত বাস্তবতা এবং ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যের পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি চিরায়ত কিছু চিন্তাভাবনা ও বোধ-অনুভূতিকে তিনি যথাযথ স্থান দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে ঐতিহ্য জড় কোনো উত্তরাধিকার ছিল না, তা ছিল সচল এবং গতিময় এক ইতিহাস পরম্পরার নাম। মানুষের সঙ্গে তার ইতিহাস একটি অনিবার্যতার সুতায় বাঁধা এবং সেই ইতিহাস যদি জীবন্ত হয়, তাহলে তার অতীত এবং বর্তমান হয় পরস্পর ক্রিয়াশীল। তবে এ পরম্পরায় তখনই ছেদ পড়ে যখন কোনো আরোপিত ভাবনাচিন্তার আলোকে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে দেখা শুরু হয় যদি ‘ভারতীয় ঐতিহ্য’ বলতে একটি বিশেষ সময়ের চিন্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় অথবা বহিঃস্থ কোনো চিন্তার অনুসরণে তাকে সাজানো হয়, তাহলে ওই ঐতিহ্যটি একটি জড় ইতিহাসপিণ্ড হয়ে দেখা যাবে। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের সময়ে 888sport live chatকলায় ‘ভারতীয় 888sport live chat’ বলতে যে বিষয়বস্তু এবং স্টাইলের প্রাধান্য দেখা যেত, তাতে অনেক কিছুই আরোপিত এবং সময় নির্দিষ্ট ছিল। রবীন্দ্রনাথ 888sport live chatের এ বিশেষ শ্রেণিকরণ মেনে নিতে পারেননি। ‘888sport live chatের ভাবার্থ’ ভাষণ/ 888sport liveে তিনি তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন।

বোদলেয়ার যে অর্থে অমঙ্গলবোধের কবি ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তা ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে আবু সয়ীদ আইয়ুব আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা তাঁর 888sport live footballের পরিপূরক ছিল। 888sport app download apkর অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন চিত্রকলাকে। এ সম্পর্কে মনজুরুল ইসলামের বিশ্লেষণ তাৎপর্যপূর্ণ :

আমার আরেকটি অনুধাবন এই যে, আহত রোমান্টিক কবি রবীন্দ্রনাথ অশুভকে 888sport app download apkয় ঠিক ওইভাবে নিয়ে আসতে পারতেন না, যেভাবে বোদলেয়ার পেরেছেন। বোদলেয়ারের অমঙ্গলবোধ বাস্তবতার পঙ্ক থেকে জন্মানো। কিন্তু একসময় সেটি পঙ্কজের শুভ্রতা এবং আকর্ষণ নিয়ে প্রস্ফুটিত হতে পারে। রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব অশুভ চিন্তায় এ শেষোক্ত সম্ভাবনা প্রকাশের সুযোগ ছিল না। কিন্তু ছিল এক জায়গায়, যেখানে প্রতীকের বহু স্তরবিন্যাস বুদ্ধিকে আমন্ত্রণ জানাবে তার অর্থ উদ্ধারের জন্য, 888sport app download apkর আবেগ সেখানে ওই পাঠোদ্ধারে সফল হবে না, এবং জায়গাটি ছিল চিত্রকলা।

রবীন্দ্রনাথে চিত্রকলা তাঁর Fleurs Du Mal, তাঁর ক্লেদজ কুসুম, অশুভের ফুল।

বাঙালির 888sport live football-সংস্কৃতির জগতে রবীন্দ্রনাথের পর যে নামটি অবধারিতভাবে চলে আসে তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের অবদানের ভিন্নতর মূল্যায়ন করেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নজরুলের ছিল না। তিনি আবেগপরায়ণ ও উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে মানুষের মুক্তির কথা ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই মুক্তিকে তিনি বৈশ্বিক মুক্তি আন্দোলন উপনিবেশীকরণের প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছিলেন। ইংরেজের প্রাচ্যবাদী ও উপনিবেশী ফাঁদ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম সচেতন ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র এ-ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। দুজনের ভূমিকার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন :

বঙ্কিমচন্দ্রের চিন্তা ছিল জাতীয়তাবাদী, কাজেই এর কার্যকারিতার গণ্ডিও ছিল সীমাবদ্ধ। দেশের একটি প্রধান সম্প্রদায়কে পাশ কাটিয়ে গেছে সেই চিন্তা। সে তুলনায় নজরুলের চিন্তাভাবনা ছিল অনেক বেশি অগ্রসর,
বহু-সম্প্রদায়কেন্দ্রিক এবং এক বিশেষ অর্থে বৈশ্বিক। তিনি কলোনিয়াল 888sport sign up bonusহীনতাকে প্রত্যাখ্যান করে শুধু এক নতুন ইতিহাস চর্চার সূত্রপাতই করলেন না – যেখানে বহু-সম্প্রদায় তাদের নিজেদের এবং পারস্পরিক
আদান-প্রদানে সমৃদ্ধ অভিন্ন ইতিহাসটির উদ্ধার কাজ হাতে নেবে – এই ম্যাক্রো-ইতিহাস উপনিবেশী উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এবং কর্মপদ্ধতিকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। যেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের মতো স্থিতধী এবং সচেতন লেখকের ইতিহাস চর্চা উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেনি – বরং একটি একক সম্প্রদায়-ধর্মী হওয়ায় তা শেষ বিচারে উপনিবেশের complicit শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নজরুলের মতো ‘বাউন্ডেলের’ পক্ষে সম্ভব হয়েছিল একটি প্রতিরোধক সংস্কৃতি তৈরি করা, যা কলোনিয়াল শাসনের 888sport sign up bonusহীনতা মেনে নিতে প্রবলভাবে অস্বীকৃতি জানায়, এবং একই সঙ্গে তার নিজের শক্তিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সমালোচক সত্তার একটি সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। বিশ্বের সেরা 888sport live footballিক, চিত্র888sport live chatীদের কাজের মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বাংলার শ্রেষ্ঠ 888sport live footballিক ও চিত্র888sport live chatী সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাউল 888sport live chatীদের অবদানকেও তিনি 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে অবলোকন করেছেন। শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে একটি 888sport liveে তাঁর মূল্যায়ন :

শাহ আবদুল করিম ছিলেন গণমানুষের বাউল, তাদের দুঃখের দিনের কাণ্ডারি শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের একজন। তিনি বেঁচে রইলেন অনেকগুলো পরিচয়ে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি যে একজন বাঙালি এবং বিশ্বমানব ছিলেন, সে পরিচয়টি আমাদের অনন্ত অনুপ্রেরণা দেবে, যেমন দেবে তাঁর বাউল সাধনার গানগুলো।

‘বাঙালি’ পরিচয়টি সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই পরিচয়টি প্রধানত সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক হলেও একে রাজনৈতিক কষ্টিপাথরে মাঝেমধ্যে পরখ করে নিতে হয় এবং সেই রাজনীতির চরিত্র গণমুখী, গণতান্ত্রিক, সবার অংশগ্রহণমূলক ও অসাম্প্রদায়িক। বাঙালিত্বের এ-চেতনা ইতিহাসের নানা পর্বে আক্রান্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমনটি হতে পারে। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেছেন, এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাঙালিত্বের অমোঘ শক্তিতে আস্থা রেখে ‘বাঙালিয়ানার পুনর্জন্ম’ 888sport liveে লিখেছেন :

ভাষা আন্দোলনের পর যখন পাকিস্তানি শাসকের চোখ রক্তবর্ণ হলো, তখনই প্রথম বাঙালি মুসলমান দেখতে পেল, হিন্দু ও অন্য 888sport free betলঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার, এদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বটা এখন তার ওপরই পড়েছে। সে বুঝল, এ দায়িত্বটা তাকে নিষ্ঠা দিয়ে, সততার সঙ্গে পালন করতে হবে। কিন্তু তা করতে গেলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা বড় ঐক্যের জায়গা খুঁজতে হবে। ওই ঐক্যের জায়গাটাই বাঙালিয়ানা।

… ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি পরিচয়টিকে গুরুত্ব দিত না। ফলে তারা যে একটি উপনিবেশী শক্তির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, পাকিস্তানিদের সমান মর্যাদায় নয়, এ বিষয়টিও তাদের বিবেচনায় ছিল না। কিন্তু ১৯৫৪-এর নির্বাচনে এদের হটিয়ে দিয়ে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরই বাঙালি রাজনৈতিকভাবে তার বাঙালিয়ানা প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ পেল, যার পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন। এই বাঙালিয়ানায় মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান – সবার ছিল সমান প্রবেশাধিকার।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সব বাঙালি যে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের মাঠে নামল, তা ওই বাঙালিয়ানার একটি মহৎ প্রকাশ। একাত্তরে বাঙালিয়ানার একটি পরীক্ষা হয়েছে এবং তাতে আমরা সফল হয়েছি। ফলে একাত্তরের বাঙালিয়ানা একটা মডেল হয়ে রয়ে গেছে আমাদের কাছে।

আধুনিকতা, পরিশীলিত রুচি, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অসামান্য রসবোধের মিশ্রণে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এক আদর্শবান ব্যক্তিত্ব। এ ব্যক্তিত্বের মূলে ছিল গভীর সংস্কৃতিমনস্কতা। সংস্কৃতি ছাড়া যে শিক্ষা অপূর্ণ সেটি তিনি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কখনো তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। ‘শিক্ষায় সংস্কৃতি’ 888sport liveে যথার্থই বলেছেন –

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই পূর্ণ হয় না, যদি না তাতে যুক্ত হয় সাংস্কৃতিক শিক্ষা। সাংস্কৃতিক শিক্ষা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় দিতে পারে না, বরং এর বিরুদ্ধ শিক্ষাই তারা দেয় মাঝে মাঝে। সাংস্কৃতিক শিক্ষা দেয় পরিবার ও সমাজ, প্রধানত পরিবার। পরিবার অথবা সমাজ থেকে তা না পেলে একজন শিক্ষার্থী কখনো সম্পূর্ণ মানুষ হতে পারে না। তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষও পরিবার থেকে সাংস্কৃতিক শিক্ষা পেলে তথাকথিত অনেক শিক্ষিত মানুষ থেকে বেশি শিক্ষিত হতে পারে, যেহেতু শিক্ষার সংস্কৃতিকে সে গ্রহণ করে অনেক সহজে। এ-বছর বইমেলায় সংস্কৃতি বিষয়ে আমার লেখা সংস্কৃতি : দ্বন্দ্ব ও সমন্বয় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে বইটি পাঠিয়েছিলাম। আমার মতো সামান্য লেখকের বইটি পড়ে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। বইয়ের একটি 888sport liveে লিখেছিলাম, ‘সংস্কৃতিমান ব্যক্তি মাত্রই শিক্ষিত, শিক্ষিত মাত্রই সংস্কৃতিমান নন। শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনই শিক্ষাকে পূর্ণতা দান করতে পারে।’ আমার এ-কথাটি তিনি খুব পছন্দ করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ব888sport live football কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে জীবনের শেষ বক্তব্যে মনজুরুল ইসলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘শিক্ষার একটা সংস্কৃতি আছে, আবার সংস্কৃতিরও একটা শিক্ষা আছে। এই দুইটা যদি এক হয়, তাহলে সমাজ এগোয়। যেসব দেশ এই দুইটাকে মেলাতে পেরেছে তারাই উন্নত হয়েছে।’ এদেশে যে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষাবিদ তাঁদের জীবনব্যাপী সাধনায় সংস্কৃতিচর্চাকে অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর অকালপ্রয়াণ আমাদের 888sport live chat-সংস্কৃতির জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে।