একজন স্বপ্ন ফেরিঅলা ও তাঁর স্বপ্ন

তিনি ছিলেন সিনেমার ফেরিঅলা। নিজেকে তিনি তা-ই মনে করতেন। তিনি ফেরিঅলার মতো নিজের সিনেমা ফেরি করে দেশে-বিদেশে, শহরে-উপশহরে,
গ্রামে-গঞ্জে প্রদর্শন করতেন। যেন এ-অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সুতা ধরে নেমে আসা এক বায়োস্কোপঅলা। তিনিই তারেক মাসুদ – সিনেমার জন্য যিনি জমিজমা সর্বস্ব বিকিয়ে দিতে পারতেন, সিনেমা ছিল যাঁর কাছে স্বপ্ন, যিনি আসলে স্বপ্নই ফেরি করে বেড়াতেন।

তারেক মাসুদের সঙ্গে আমার কখনো আলাপ-পরিচয় ছিল না। তবে তাঁকে একবার দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। তিনি তাঁর আদম সুরত নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের দেখাতে – সেদিন তাঁকে দেখেছি, তাঁর কথা শুনেছি দূর থেকে। কী বলেছিলেন আজকে এত বছর পর আর মনে নেই। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর লেখা থেকে বা তাঁর সম্পর্কে যা পড়েছি, যা জেনেছি তাঁর বন্ধুবান্ধব বা অনুরাগীদের কাছ থেকে, তাঁর live chat 888sport দেখে যা বুঝেছি, সব মিলিয়ে আমার নিজের যা মনে হয়েছে আজকে তা-ই বলার চেষ্টা করছি।

জহির রায়হানের পর আলমগীর কবির। আর তার পরে 888sport appsি live chat 888sportে তারেক মাসুদের মতো এত বিশালকায় আর তেমন কাউকে দেখা যায়নি। তারেকের অকালমৃত্যুর পর সে-শূন্যতা পূরণ করবেন, তেমন কাউকে দেখা যায় না। অবশ্য কিছু live chat 888sportকার যথা – তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ, নুরুল আলম আতিক, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রমুখ আছেন, যাঁদের কাছ থেকে পাই কর্ণফুলীর কান্না, চাকা, নিরন্ত, চিত্রানদীর পাড়ে, লালসালু, কীর্তনখোলা, নদীর নাম মধুমতি, ডুবসাঁতার, মেঘমল্লা, পিঁপড়াবিদ্যাসহ বেশকিছু বিকল্পধারার live chat 888sport। কিন্তু আমার মনে হয় না তাঁরা কেউই তারেক মাসুদের শূন্যতা পূরণের ক্ষমতা রাখেন।

১৯৬৭ সালে খান আতাউর রহমানের নবাব সিরাজউদ্দৌলা আমার মনে হয় প্রথম live chat 888sport, যেখানে ঔপনিবেশিক শক্তির বিপক্ষে বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদী জাগরণের প্রকাশ প্রথম ঘটে। ১৯৭০ সালে জহির রায়হান তাঁর জীবন থেকে নেয়া live chat 888sportে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে সরাসরি ধারণ করে দেখান। তারপর তাঁর স্টপ জেনোসাইড। পরবর্তীকালে আলমগীর কবিরকে আমরা জহির রায়হানের উত্তরাধিকার হিসেবে গভীরভাবে পাই। তাঁর কাছ থেকে পাই সূর্যকন্যা, ধীরে বহে মেঘনা, রুপালি সৈকতে, সীমানা পেরিয়েসহ কিছু live chat 888sport। এছাড়া চাষী নজরুল ইসলাম, আলমগীর কুমকুম, মসিহউদ্দিন শাকের, শেখ নিয়ামত আলী, আমজাদ হোসেন, হুমায়ূন আহমেদসহ আরো কয়েকজন চিত্রনির্মাতাকে পেয়ে যাই, যাঁরা চলমান স্রোতের বিপরীতে live chat 888sport বানানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে পাই ওরা এগারোজন, আবার তোরা মানুষ হ, রুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, সূর্য দীঘল বাড়ী, শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণিসহ বেশকিছু live chat 888sport। কিন্তু আলমগীর কবিরের পর তারেক মাসুদকেই তাঁর যথার্থ উত্তরাধিকারী বলে আমার মনে হয়েছে। আলমগীর কবির যেমন বহুমাত্রিক, সর্বদা গতিশীল, আর সর্বদা কর্মময় একজন কর্মী ছিলেন, তারেকের মধ্যেও সেসব গুণ আমরা দেখেছি। কোনো না কোনোভাবে তারেকের অস্তিত্ব টের পাওয়া যেত।

তারেক মাসুদের live chat 888sportের হাতেখড়ি হয়েছিল মূলত মুহম্মদ খসরু ও তারপর আলমগীর কবিরের হাত ধরে। জহির রায়হান ও আলমগীর কবিরের live chat 888sport হয়ে উঠেছিল মেইনস্ট্রিম বাণিজ্যিক live chat 888sportের পাশে বিকল্পধারার live chat 888sport। এই দুই live chat 888sportকারের পর তারেক মাসুদই হয়ে উঠেছিলেন বিকল্পধারার live chat 888sportের উজ্জ্বল বাহক। যদিও তারেক মূলধারা কিংবা বিকল্পধারা কোনো প্রকারেই বিশ্বাস করতেন না। তিনি মনে করতেন, live chat 888sportের কেবল বিচার হতে পারে ভালো আর খারাপ – এই মানদণ্ড। তিনি ভালো live chat 888sport বানানোর জন্যই অঙ্গীকারবদ্ধ ও নিবেদিত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নতুন দিনের live chat 888sport কেমন হবে তার পথ অনুসন্ধানে প্রয়াস অব্যাহত রেখেছিলেন। মুহম্মদ খসরু ও আলমগীর কবিরের পর 888sport appsে একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ফিল্ম আর্কাইভ গড়ে তোলার আন্দোলনে তাঁর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।

তারেক মাসুদ মূলত live chat 888sportকার হলেও তাঁর আরো পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ইত্যাদি। তিনি গীতিকারও ছিলেন, তাঁর live chat 888sportে ব্যবহৃত অধিকাংশ গানই তাঁর রচিত।

আমরা দেখতে পারি, তারেক মূলত মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন। আমার মনে হয়, চিন্তাচেতনার দিক থেকে মধ্যপন্থার মানুষ ছিলেন তিনি। এ-ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ইতোপূর্বে আহমদ ছফার মধ্যে দেখি। তারেকের বানানো live chat 888sportগুলো দেখে মনে হয়, তিনি কোনো সিদ্ধান্তই উপস্থিত করেন না। সমস্যাগুলোকেই শুধু উপস্থাপন করেন। বলতে পারি, চরম বা পরম কোনো প্রকার তাঁর মধ্যে উপস্থিত ছিল না, ছিল খানিকটা মরমি মনোভাব; যা কিছুটা আমাদের
লোকসংস্কৃতির মধ্যকার অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক চেতনাকে লালন- পালন করে।

তারেক মাসুদের শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্য কেটেছে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ে, রক্ষণশীল পরিবেশে। কিন্তু সেই মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেটির পরবর্তীকালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, live chat 888sport দেখা, live chat 888sport-আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়া, অবশেষে live chat 888sportকার হয়ে-ওঠার ঘটনাকে কিন্তু তাঁর কালের জন্য অভাবনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা দেখতে পারি।

তারেকের বিভিন্ন live chat 888sportে দেখানো নৌকাবাইচ, গ্রাম্যমেলা, লোকনৃত্য, লোকগান, পুতুলনাচ ইত্যাদি বিষয় আসলে আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের ঐতিহ্যকেই ধারণ ও উন্মোচন করে। হতে পারে এ-অঞ্চলের লোক, মরমি, সহজিয়া, বাউল ইত্যাকার দর্শনই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল এভাবে চিন্তা করার বিষয়ে। মূলত তিনি এ-অঞ্চলের ইতিহাস ও দর্শন পাঠ করেছেন তাঁর নিজের মতো করে।

ডকুমেন্টারি, ফিচারফিল্ম, শর্টফিল্ম, অ্যানিমেশনসহ তারেক মাসুদ খুব সম্ভবত তেরো-চোদ্দোটি live chat 888sport বানিয়েছিলেন। এর বাইরে তাঁর বেশকিছু চিত্রনাট্য তৈরি ছিল, যা থেকে live chat 888sport বানাবেন বলে ঠিক করেছিলেন। দু-একটা বাদ দিয়ে তাঁর প্রায় সব live chat 888sportই আমি নানা সময়ে দেখেছি।

888sport live chatী এসএম সুলতানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত দিয়ে তারেক মাসুদের live chat 888sport জগতে পদার্পণ। ১৯৮২ সালে প্রামাণ্যচিত্রটি বানানোর কাজে হাত দেন তিনি, শেষ করতে সময় নেন সাত বছর, মানে শেষ করেন ১৯৮৯ সালে। তাঁর live chat 888sport- প্রতিভার প্রকাশ ঘটে এই আদম সুরতের মাধ্যমেই। তাঁর live chat 888sport-চিন্তার বিকাশে সুলতানের যে প্রচ- প্রভাব পড়েছিল, তা এ-live chat 888sport দেখলেই বোঝা যায়। আদম সুরত বানানোর মাঝখানে মানে ১৯৮৫ সালে সোনার বেড়ি নামে একটা শর্টফিল্মও তৈরি করেন। এটা খুব সম্ভবত আলমগীর কবিরের ওয়ার্কশপে বানানো। এটা আমি দেখিনি, তাই এটা সম্পর্কে কিছু বলতে পারলাম না।

১৯৯৫ সালে লিয়ার লেভিনের আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তারেক নির্মাণ করেন মুক্তির গান নামে একটি কালজয়ী প্রামাণ্যচিত্র। মুক্তির গানকে তাত্ত্বিক বিচারে বলা যায় ন্যারেটিভ ডকুমেন্টারি। কিন্তু তারেক মাসুদ এ-জাতীয় live chat 888sportকে প্রামাণ্যচিত্র বা কাহিনিচিত্র কোনোটাই মনে করতেন না, তিনি একে ডকু-ফিকশন বলতেন।

তারপর ১৯৯৬ সালে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে মুক্তির গান প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা ও প্রদর্শনকালীন ধারণকৃত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিডিও ফুটেজকে ব্যবহার করে বানানো হয় মুক্তির কথা। আমার মনে হয়, মুক্তির গান live chat 888sportের অপূর্ণ বাসনা পূরণ করতেই তারেক তাঁর মুক্তির কথা নির্মাণ করেন। মুক্তির কথাকে বলা যায় কথ্য ইতিহাস।

মুক্তির গানমুক্তির কথা নির্মাণ করতে গিয়েই খুব সম্ভবত তারেক বাঙালি জাতীয়তাবাদ-সংক্রান্ত ধারণার সামনাসামনি পড়ে যান। তিনি উপলব্ধি করেন, কথিত জাতীয়তাবাদের এ-ধারণা একরৈখিক এবং তা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত মূল্যবোধকে ধারণ করে না। ফলত, তারেক চলমান সমাজবাস্তবতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার পুনর্ব্যাখ্যা করার প্রয়াস নেন তাঁর পরবর্তী live chat 888sportে। জাতীয়তাবাদী চেতনায় ভাবাবেগ ও একরৈখিকতা তাঁর ভালো লাগত না। অবশ্য তিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে জাতীয়তাবাদী চেতনার বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি। অর্থাৎ তিনি প্রচলিত জাতীয়তাবাদী ধারণার বাইরে খুব একটা যাননি বলেই আমার মনে হয়েছে।

আগেই বলেছি, তারেক জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে বেরিয়ে আসেননি, কিন্তু ২০০২ সালে মাটির ময়না live chat 888sportে জাতীয়তাবাদের মৌলিক কিছু সংকটকে সামনে নিয়ে আসেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় ইসলাম ধর্ম প্রশ্নে যে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা বিদ্যমান,  তিনি নিজের জায়গা থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টার মূলকথা ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধের ইতিহাসকে আশ্রয় করেই দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ধর্ম যেখানে প্রতিপক্ষ হয়ে থাকবে না। মাটির ময়না live chat 888sportে তারেক একদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে ইসলামী জাতীয়তাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যদিও ইসলাম কখনো লোকধর্ম হতে পারে না। তারপরও তিনি এ-অঞ্চলের 888sport app ধর্মের মতো ইসলামকেও লৌকিক বা লোকজধর্ম হিসেবে দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়েছে।

মাটির ময়নাকে সত্যজিতের পথের পাঁচালীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। আনু আর তার বোনের চরিত্র, অপু আর দুর্গার মতোই অনেকটা; কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই live chat 888sportের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা ও অবস্থানের প্রকাশ তীব্র। একজন শহরফেরত তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানকে দেখা যায় নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়তে পাঠাচ্ছেন। এটাকেও কিন্তু ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে একধরনের নীরব প্রতিবাদ হিসেবে ভাবা যায়।

মাটির ময়না ঠিক আত্মজৈবনিক live chat 888sport না হলেও তারেকের শৈশবে একাধিক মাদ্রাসায় পড়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনাই এই live chat 888sportের একাংশজুড়ে বিদ্যমান। তারেকের সঙ্গে মাটির ময়নার আনুর সম্পর্ক মূলত শৈশবের সঙ্গে পূর্ণবয়স্ক সময়ের বোঝাপড়ার সম্পর্ক। এই live chat 888sportে আনু একটা অনুঘটক চরিত্র, একটা চোখ, যে-চোখ দিয়েই মূলত সব আমরা দেখি। তবে একই live chat 888sportে এত বিষয় আমার ভালো লাগেনি, একই সঙ্গ যুদ্ধ, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ইত্যাকার সব বিষয়ই যেন প্রধান হয়ে উঠেছে। সিঙ্গল একটা স্টোরি লাইনে বাকি সব অনুষঙ্গ হিসেবে আসতে পারত হয়তো।

২০০৬ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন ন্তর্যাত্রা নামে আরেকটি live chat 888sport। ন্তর্যাত্রা হলো ঘরে ফেরার গল্প। তবে গতানুগতিক। এরকম গল্প আমরা আরো অনেকের live chat 888sportে দেখেছি। এটাও তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনারই প্রকাশ। এই live chat 888sportের চরিত্রগুলো পূর্ণতা পেয়েছে বলে মনে হয়নি। live chat 888sportের নির্মাণ-ধরন তেমন ভালো লাগেনি, এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে জাম্পকাটের মাধ্যমে যাওয়ার বিষয়টিও ভালো লাগেনি। আলমগীর কবিরের live chat 888sportে যেমন রুপালি সৈকতেও জাম্পকাট আমরা দেখি, সেখানে কিন্তু খারাপ লাগে না। এই live chat 888sport নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলার নেই। এই live chat 888sport দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছিল, তারেক এই live chat 888sport না বানালেও এমন কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না।

এবার বলব নরসুন্দরের কথা। এটা ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বানানো একটি শর্টফিল্ম। মুক্তিযুদ্ধে বিহারিদের ভূমিকা নিয়ে প্রচলিত ঐতিহাসিক ধারণার পাশাপাশি স্টিরিওটিপিকাল ধারণা থেকে বেরিয়ে একজন ব্যতিক্রম বিহারির ভূমিকা। একজন বিহারি নাপিতের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানি মিলিটারির হাত থেকে কৌশলে বাঁচানোর কাহিনি। এরকম ব্যতিক্রম কিন্তু বাস্তবেও কতিপয় আছে। যেমন সৈয়দ খান নামে একজন বিহারি ছিলেন, যিনি 888sport appsের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন।

এবার রানওয়ে live chat 888sportের কথা বলি। ২০১০ সালে তিনি এই live chat 888sport নির্মাণ করেন। live chat 888sportের প্রেক্ষাপট ২০০৫-০৬ সালের, যখন দেশে উগ্র ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান ঘটে। রুহুল থাকে এয়ারপোর্টের রানওয়ের পাশে। বাবা মধ্যপ্রাচ্যে গেছে, কিন্তু অনেকদিন ধরে কোনো খবর নেই। ছোট বোন গার্মেন্টসে কাজ করে। আর মা এনজিও থেকে টাকা নিয়ে কেনা গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। মাদ্রাসাপড়ুয়া রুহুলের কোনো চাকরি নেই, মানে সে পায় না। তার জীবন কাটে হতাশায়। সে মামার সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে কম্পিউটার শেখার চেষ্টা করে। সেখানে আরিফ নামে এক ছেলের মাধ্যমে জঙ্গিচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

মাদ্রাসা মানেই যে ধর্মান্ধ উগ্রদের আখড়া নয়, তা রানওয়ে live chat 888sportে বোঝানোর চেষ্টা ছিল। তারপর উগ্র মৌলবাদী শক্তির উত্থান ও বিস্তার লাভ, এদের আশ্রয়দাতা, কর্মপদ্ধতি সবকিছুই দক্ষতার সঙ্গে তুলে আনা হয়েছে। যদিও এখানে আমরা দেখি তাঁর  সেই সমন্বয়বাদী মনোভাব, মাঝামাঝি থাকার ব্যাপার। তারপরও জঙ্গিচক্র থেকে বের হওয়ার সহজ উপায়ও দেখানো হয় এই live chat 888sportের কাহিনির মধ্যেই।

এই live chat 888sportের কিছু দৃশ্য চোখে আটকে থাকার মতো, যেমন রুহুল যখন পুকুরের পানিতে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে, পুকুরে তখন আকাশের আর মেঘের ছায়া পড়ে। আর ঠিক তখনই সেই ছায়ার মধ্য দিয়ে একটা পেস্ননকে উড়ে যেতে দেখা যায়। আরেক দৃশ্যে রুহুলকে মা গরুর দুধ দিয়ে মুখ ধুইয়ে দিচ্ছে। তারপর পাথরকে মাঝখানে রেখে রুহুলের প্রেমালাপ কিংবা উড়োজাহাজকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার জন্য ছোট এক বালকের গুলতি ছুড়ে মারার দৃশ্য। তারপর মনে পড়ে আরিফের সর্ষেক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দিগন্তের দিকে যাওয়ার দৃশ্য, মনে হয় সে স্বর্গের দিকেই যাচ্ছে, তার ব্যাকপ্যাকে সম্ভবত বোমা, আর মনের মধ্যে শহিদ হওয়ার বাসনা, ইসলামে যেটাকে শাহাদাতের তামান্না বলে। আমি মনে করি, এ-live chat 888sportে এসে তারেক মাসুদ পূর্ণতা লাভ করেন।

রানওয়েতে আরো দেখি মনোলগের ব্যবহার, সংলাপের পরিবর্তে প্রকৃতি-নিঃসরিত শব্দের মাধ্যমে একটা বিন্যস্ত আবহ তৈরি করা – মনি কাউলসহ আরো অনেকের live chat 888sportে যেমন আমরা নৈঃশব্দ্যের ব্যবহার দেখি। তবে তারেক মাসুদের live chat 888sportের কাহিনি ও ফর্ম বরাবরই ঘনিষ্ঠ থেকেছে এ-অঞ্চলের সংস্কৃতি আর ইতিহাসের সঙ্গে। তিনি মনে করতেন, এই live chat 888sport কেবল কিছু বোদ্ধা দর্শকের জন্য নির্মিত হয়নি, এটি সাধারণ দর্শকদের জন্য বানানো।

তারেক মাসুদ ‘কাগজের ফুল’ নামে একটা live chat 888sport বানাতে চেয়েছিলেন। সেটা মাটির ময়নার পূর্বের প্রেক্ষাপট, দেশভাগের গল্প সম্ভবত, আনুর বাবা কাজী সাহেবের উত্তাল যৌবনের গল্প। ১৯৭১-এর গোঁড়া ও ধর্মভীরু কাজী সাহেব ১৯৪৭-এর ‘কাগজের ফুলে’ দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধোত্তর অবিভক্ত বাংলার কলকাতা শহরে ঘুরে বেড়ানো এক স্বাপ্নিক যুবক।

‘কাগজের ফুল’ ছিল তারেক মাসুদের স্বপ্নের প্রকল্প। রানওয়ে বানানোর আগে থেকেই এই স্বপ্ন তাঁর মাথার ভেতর ছিল, হয়তো  চিত্রনাট্যও তৈরি ছিল। সেই live chat 888sport বানানোর লোকেশন খুঁজতে খুঁজতে ফেরার পথেই তারেক সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে চলে গেলেন। তবে আশা রাখি, তাঁর আজীবনের সহযোদ্ধা ক্যাথরিন মাসুদ নিশ্চয়ই কোনোদিন ‘কাগজের ফুল’ live chat 888sport বানাবেন। তখন আমরা দেখব তারেক আসলে এই live chat 888sportে কী দেখাতে চেয়েছিলেন।

খুব সম্ভবত মিশেল ফুকো তাঁর আর্কেওলজি অব নলেজ বইতে বলেছিলেন, ‘ভাষা যার দখলে, সত্যও তার দখলে।’  এর মানে ভাষা (সেই ভাষা 888sport live chatের হতে পারে, 888sport live footballের হতে পারে, বক্তব্যের হতে পারে, সিনেমার হতে পারে, আরো অনেক কিছুর হতে পারে) যদি ললিত, বিন্যস্ত ও সাধারণের বোধগম্য হয় তবে সেই ভাষা প্রতিষ্ঠা পাবে, আর সেই ভাষার মধ্যে যদি মিথ্যা উপাদানও থাকে তারপরও সত্য বলে পরিগণিত হবে। মূলত তারেক মাসুদ সেই রকম একটি live chat 888sport ভাষার দখল নিতে চেয়েছিলেন, যেখানে তাঁর দৃষ্টিতে যা কিছু সত্য তা প্রতিষ্ঠা পাবে।

এ-কথা বলা যাবে না যে, তারেক মাসুদ একেবারে শুদ্ধ live chat 888sport বানাতেন। তাঁর live chat 888sportেও অনেক অসঙ্গতি ছিল। তবে তাঁর live chat 888sportের ন্যারেটিভ প্রথাগত নয়। তারপর তাঁর live chat 888sportের মতো বাহুল্যহীনতা অন্যদের live chat 888sportে বিরল। আর live chat 888sportের কম্পোজিশন অসাধারণ সব বুনন নিয়ে আমাদের সামনে আসে, যার অবগুণ্ঠনে 888sport app পড়ে আমাদের সহজাত চোখে দেখা ছোটখাটো অসংগতি।