নগরজীবনে তো আমরা এডিট করে কথা বলি। সব কথা সব জায়গায় বলতে পারি না। কথায় আমরা এডিট করি না 888sport slot gameে গেলে। মুখে যা আসে তা-ই বলি। এই ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে জিসান। সে হাসির কারিগর। তার কথায় হাসতে হাসতে আমাদের পেট ফাঁকা হয়ে যায়। প্রত্যয় কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট। তবে যখন কথা বলে তখন হাসির এমন জোয়ার শুরু হয়, সহজে আর ভাটা পড়তে চায় না। আর মুহিম তো সারাক্ষণ হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই থাকে। তার পেটটা রসের হাঁড়ি। ঢাকনা খুললে রস বেরুতেই থাকে। সে না থাকলে 888sport slot game আসলে জামে না।
কমপক্ষে আমরা পাঁচটি 888sport slot game করি বছরে। অনেকে আমাদের সঙ্গী হতে চায়, আমরা নিই না। নিলে যদি কথা এডিট করতে হয়! এবারের 888sport slot gameে সঙ্গী হয়েছেন মনজু ভাই আর হেলাল ভাই। দুজনেই আমাদের সিনিয়র। আট-দশ বছরের বড়। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতোই। তাদের সঙ্গে এডিট করে কথা বলি না। মনজু ভাই টরন্টো প্রবাসী। বছরে একবার আসেন। হেলাল ভাই বহুদিন পর আমাদের 888sport slot gameসঙ্গী হয়েছেন। রয়েল ব্যাংকের ডিএমডি তিনি। ব্যস্ত মানুষ। আমাদের মতো এতো 888sport slot gameের সময় পান না। কথা বলেন মেপে মেপে। কখনো একটি বাহুল্য শব্দ বলে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে ‘সরি’ বলে এডিট করে নেন।
মনজু ভাই তুমুল গাল্পিক। আড্ডা জমিয়ে রাখতে পারেন। টানা ছয়-সাত ঘণ্টা কথা বললেও ক্লান্তি আসে না। তবে তার একটাই সমস্যা – কথা বলার সময় ক্ষণে ক্ষণে ইউরোপ-আমেরিকায় চলে যান। এই সমস্যা সমাধানে জিসান এবার নিয়ম করেছে যে, মনজু ভাই ইউরোপ-আমেরিকার প্রসঙ্গ তুললেই আমরা তার কথা শুনব না, অন্য আলাপ শুরু করে দেব। মনজু ভাই মেনে নিয়েছিলেন।
কিন্তু সেদিন ফাগুনের মনোরম বিকেলে, আমরা যখন সেন্টমার্টিন সৈকতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, মনজু ভাই শুরু করলেন কানাডার তুষারপাতের গল্প। জিসান কি আর চুপ থাকে? সে বলতে লাগল পানিপথের যুদ্ধের ইতিহাস। কী আর করেন মনজু ভাই, কানাডা থেকে এক লাফে চলে এলেন সেন্টমার্টিনে। বলতে লাগলেন এই নারিকেল জিঞ্জিরার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা। তখন আমরা খেয়াল করি, কাছে একটা ছাতার নিচে বসা এক তরুণী আমাদের কথা শুনছে। তার পাশের লোকটি মোবাইলে ব্যস্ত। সম্ভবত তার স্বামী। আমাদের মনে পড়ে যায় প্রিন্সেস ডায়ানার মুখ। ডায়ানার মতোই তরুণীর মাথায় গোল ক্যাপ। আমাদের চোখে ভাঙতে থাকে মুগ্ধতার ঢেউ, চঞ্চল থেকে চঞ্চলতর হয়ে উঠতে থাকে চিত্ত। গতকালের চেয়ে আজ দ্বিগুণ সুন্দর মনে হতে থাকে সেন্টমার্টিন সৈকতকে। ডায়ানার মুখের দিকে স্থির হয়ে থাকে আমাদের চোখগুলি। হেলাল ভাইয়ের মতো নিপাট ভদ্রলোকও চোখ ফেরাতে পারছেন না। যেন এমন সুন্দরী জীবনে কখনো দেখেননি।
ডায়ানার জন্য আমাদের মধ্যে তৈরি হয় এক অব্যক্ত হাহাকার। আহা, কুড়ি-888sport cricket BPL rateের এমন সুন্দরী তরুণীর কি না এমন বয়স্ক স্বামী! পঁয়ত্রিশের বেশি হবে না লোকটির বয়স, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে চল্লিশোর্ধ্ব। ফুটবলের মতো ভূঁড়িটা যেন যে-কোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে সৈকতে। মাথায় এমন টাক, যেন ফুটবল খেলার মাঠ। ভ্রু দুটো এতোই চওড়া, যেন পিচঢালা সড়ক। গায়ের গেঞ্জিটা দেশীয় প্রোডাক্ট বলে মনে হচ্ছে না। মনজু ভাই বললেন, এমন গেঞ্জি আমেরিকার ফিলিং স্টেশনের কর্মীরা গায়ে দেয়। আমরা ভাবি, লোকটি হয়তো সত্যি সত্যি ফিলিং স্টেশনের কর্মী। বেশভূষায় প্রবাসীই মনে হচ্ছে। হয়তো ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা কানাডায় থাকে।
জিসান গেয়ে উঠল, ‘তুমি আমার প্রথম সকাল/ একাকী বিকেল ক্লান্ত দুপুর বেলা …।’ সঙ্গে সঙ্গেই মনজু ভাই গেয়ে উঠলেন, ‘কেন তারে ধরিবারে করি পণ অকারণ, মায়াদ্বীপ বিহারিণী …।’ আমরা হেসে উঠলাম সমস্বরে। আমাদের মুখের ভাষা, চোখের ভাষা, গানের কথা আর হাসির ধরন দেখে ডায়ানার স্বামীর বুঝি সন্দেহ জাগে। চেহারায় বিরক্তির রেখা দেখে আমরা বুঝতে পারি। মনে মনে আমাদের বুঝি সে গালি দিচ্ছে। কাছে কোথাও পুলিশ থাকলে নিশ্চিত আমাদের বিরুদ্ধে সে নালিশ করত।
আমি তার নাম দিলাম মিস্টার মদন। মুহিম বলল, কারো নাম নিয়ে বিদ্রƒপ করা অনুচিত। তার নাম হতে পারে মিস্টার আলু অথবা মিস্টার টমেটো।
আমরা অট্টহাসি দিলাম। আশপাশের মানুষজন আমাদের দিকে তাকায়। জিসান বলল, আমাদের গ্রামে দেখতে ঠিক এরকম এক লোক ছিল, যার নাম ছিল বদিউল আলম। সবাই তাকে বদিউল, বদি বা বইদ্যা বলে ডাকত।
হেলাল ভাই বললেন, এই লোকটাকে আমরা বদিউল বা বদি বলে ডাকতে পারি।
আমরা খেয়াল করি, বদিউল বা বদি এখান থেকে চলে যেতে চাইছে, কিন্তু ডায়ানা রাজি হচ্ছে না। ডায়ানা কেন থাকতে চাইছে আমরা বুঝতে পারি। মুহিমের সঙ্গে এরই মধ্যে তার ভাষাবিনিময় হয়ে গেছে। চোখের ভাষা। মুহিমের এই এক আশ্চর্য ক্ষমতা – চোখের ভাষায় যে-কোনো মেয়েকে কাবু করে ফেলতে পারে। আর জিসানের ক্ষমতা কথা। তার কথার জাদুতে রূপের দেমাগে মাটিতে পা না-পড়া মেয়েটিও গলে-মজে পানি হয়ে যায়।
বদিউল ধমকে ওঠে, আমরা শুনতে পাই, বেহায়ার লাহান খাড়ায়া থাকবা? লজ্জা-শরম কিছু নাই?
মাথার ক্যাপটা হাতে নিল ডায়ানা। এক পলক আমাদের দিকে তাকিয়ে হাঁটা ধরল। হাঁটুর নিচে ছড়িয়ে থাকা তার চুল দেখে আমরা চোখ ফেরাতে পারি না। স্বামীর পায়ে পায়ে সে হাঁটতে থাকে পশ্চিম সৈকতের দিকে। ফিউজ বাল্বের মতো হয়ে গেলাম আমরা। যেন পূর্ণিমায় আচমকা অমাবস্যা হানা দিলো। যেন হুট করে সূর্যটা সমুদ্রের অতলে ডুব মেরে পৃথিবীতে বিষণ্ন সন্ধ্যা নামিয়ে দিলো।
পর্যটকরা সূর্যাস্ত দেখছে, ক্যামেরায় সূর্যাস্তের দৃশ্য ধারণ করছে, হই-হুল্লোড় করছে। আমরা আবার হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলাম। কিন্তু আগের সেই উদ্দীপনা পাই না আর। যেন আমাদের সব আনন্দ-ফুর্তি লুট করে নিয়ে গেছে ডায়ানা। আমাদের আর বসতে ইচ্ছে করে না। লুট হওয়া ফুর্তি উদ্ধারে রওনা হলাম পশ্চিম সৈকতের দিকে। আমাদের চিত্তে থইথই অস্থিরতা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা ডায়ানাকে খুঁজি। সবচেয়ে বেশি অস্থির হেলাল ভাই। তার খোঁজারু চোখ বিরাম পাচ্ছে না। খুঁজছে, কেবলই খুঁজে বেড়াচ্ছে ডায়ানাকে।
সূর্যের শেষ আলোটুকু মুছে যাচ্ছে, সৈকতজুড়ে নামছে অন্ধকার। পর্যটকরা ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। মনে সমুদ্রসমান বিষণ্নতা নিয়ে আমরাও রিসোর্টের দিকে রওনা হলাম। হাঁটতে হাঁটতে আলাপ করি ডায়ানা ও বদিউলকে নিয়ে। স্ত্রীর সঙ্গে বদিউলের সম্পর্কে যে-ধরন, তাতে আমাদের মনে হয়, বদিউল বহু কষ্ট করে বিদেশ গেছে, বহু পরিশ্রম করে টাকা-পয়সা ইনকাম করেছে। শিগগির ডায়ানাকেও বিদেশ নিয়ে যাবে। কিন্তু ডায়ানা যেতে রাজি নয়। স্বামীর প্রতি তার টান নেই। কেননা যেমন স্বামী সে প্রত্যাশা করেছিল বদিউল তেমন নয়। বদিউল স্বর্বস্ব দিয়ে হলেও স্ত্রীর ভালোবাসা পেতে চায়। কিন্তু স্বর্বস্ব দেওয়ার কায়দাকানুন জানে না বলে ভালোবাসা পায় না।
বদিউল ও ডায়ানা বিষয়ে আলাপ করতে করতে আমরা প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্টের গেটে পৌঁছে গেলাম। রিসোর্টে ঢুকতেই চঞ্চল হয়ে উঠলেন হেলাল ভাই। দেখতে ডায়ানার মতো এক তরুণীকে কিংবা ডায়ানাকে দেখে বললেন, ডায়ানা না? ডায়ানাই তো!
ডায়ানাই বটে। হাঁটুতক ছড়িয়ে থাকা চুল দেখে আমরা চিনতে পারি। স্বামীর পিছে পিছে রিসেপশনের দিকে যাচ্ছে। জিসান বলল, একই রিসোর্টে! মুহিম হেসে উঠল। হাসির শব্দে পেছনে ফিরে তাকাল ডায়ানা। মুচকি হেসে ওড়নায় মুখ ঢাকল। আমাদের মনে হলো, হাসি নয়, একটা ধারালো ছুরি ঝিলিক দিলো। ছুরির এক পোচে আমাদের হৃদয়টা কেটে নিয়ে গেল। আমি হেলাল ভাইয়ের হাতটা ধরে রাখলাম। বলা যায় না, তিনি ডায়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান কি না!
রিসেপশনে আমাদের দেখে বদিউলের মাথায় বুঝি বাজ পড়ল। সে রিসেপশনিস্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, আমাদের দেখেই ডায়ানার হাতটা চেপে ধরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল। যেন আমরা ডায়ানাকে কিডন্যাপ করতে এসেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের চোখের সামনে থেকে ডায়ানাকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
আমাদের হাসি পেল। হাসতে হাসতে দোতলায় উঠলাম। স্ত্রীকে নিয়ে বদিউল দক্ষিণের রুমটায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমাদের রুম উত্তরে। পাশাপাশি তিনটি রুম। রুমগুলোর বারান্দা থেকে সমুদ্র দেখা যায়। আমরা রুমে ঢুকলাম। হেলাল ভাই দাঁড়িয়ে রইলেন বারান্দায়। কেন দাঁড়িয়ে রইলেন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। ডায়ানাকে আরেকবার দেখার জন্য, একটিবার কথা বলার জন্য তিনি বড় ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। ব্যাকুল অবশ্য আমরাও। কিন্তু ডায়ানা কি এখন আর বের হবে? মনে হচ্ছে না। বের হতে চাইলেও বদিউল দেবে না।
জিসানের রুমে মেঝেতে গোল হয়ে বসলাম আমরা। মনজু ভাই কানাডা থেকে এনেছেন দুই বোতল ম্যাক্সিকান টাকিলা আর তিন বোতল জ্যাক ড্যানিয়েল। গ্লাসে গ্লাসে ঢেলে দিতে লাগল প্রত্যয়। সিগারেটের ধোঁয়া ঘুরছে গোটা রুমে। আমি দরজাটা খুলে দিলাম। ধোঁয়া বেরিয়ে যাক। গ্লাস হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন হেলাল ভাই। জিসান বলল, ডায়ানা বারান্দায় এলে আমাদের ডাক দিয়েন হেলাল ভাই।
হেলাল ভাই বললেন, আরে ধুর! আমি চাঁদ দেখতে এসেছি।
প্রত্যয় বলল, অমাবস্যায় চাঁদ! হা হা হা।
মুহিম বলল, হেলাল ভাই ভুল কিছু বলেননি, চাঁদ দেখতেই গেছেন বটে। তবে সেই চাঁদ আকাশে নয়, দক্ষিণের রুমে উঠেছে। হুট করে বারান্দায় দেখা দিতেও তো পারে। ধৈর্য ধরেন হেলাল ভাই, নিরাশ হবেন না।
আমরা জিসানের অস্থিরতাও খেয়াল করি। বারবার বাইরে তাকাচ্ছে সে। যে-কোনো সময় গ্লাসটা নিয়ে সেও বেরিয়ে পড়বে। একই অস্থিরতা প্রত্যয়ের মধ্যেও। আমার মধ্যেও কি নেই? মিথ্যে বলি কী করে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে আমি হেলাল ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। জিসানও এলো। ভেতরে মুহিমের সঙ্গে মনজু ভাই কানাডার বেগমপাড়ার গল্প করছেন। আমরা একবার আকাশের দিকে তাকাই, একবার দক্ষিণের বারান্দার দিকে। আকাশে অযুত-নিযুত নক্ষত্র, দক্ষিণের বারান্দায় খা খা শূন্যতা। আমাদের কেবলই মনে হচ্ছে, এই বুঝি ডায়ানা এসে দাঁড়াল। এই বুঝি তার চুলের ঘ্রাণ এসে লাগল। কিন্তু না, আমাদের গ্লাসের সবটুকু মদ ফুরিয়ে যায়, অথচ ডায়ানা আসে না। আকাশের বহু নক্ষত্র জ¦লতে জ¦লতে ক্লান্ত হয়ে নিভে যায়, ডায়ানা আসে না।
আমরা রুমে ফিরে গেলাম। আবারো আমাদের আলাপের বিষয় হয়ে উঠল ডায়ানা ও বদিউল। হেলাল ভাই তো টাল। ডায়ানার বাবা-মায়ের মুণ্ডুপাত করতে লাগলেন। কোন বিবেচনায় প্রতিমার মতো মেয়েটাকে এমন একটা টমেটোর সঙ্গে বিয়ে দিলো তারা?
টাকা-পয়সা দেখে, নিশ্চয়ই টাকা-পয়সা দেখে দিয়েছে। ব্যাটার মনে হয় অনেক টাকা। বিদেশে থাকে তো, বোধহয় ভালোই কামিয়েছে।
মনজু ভাই বললেন, ডায়নাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন হেলাল ভাই। নইলে রাতে ঘুম হবে না।
জিসান বলল, মাথা থেকে ফেলে দেওয়ার গল্পটা জানেন তো মনজু ভাই? শোনেন, দুই জেন গুরু বারো বছর সাধনা করে হিমালয় থেকে ফিরছিল। একজন প্রৌঢ়, অন্যজন যুবক। পথে একটা নদী পড়ল। খেয়া নেই, সাঁতরে পার হতে হবে। ঘাটে এক তরুণীর দেখা পেল তারা। তরুণীও পার হবে, কিন্তু সে সাঁতার জানে না। দুই গুরুর সাহায্য চাইল সে। অপারগতা প্রকাশ করল যুবক। কারণ পার করতে হলে তরুণীকে তো কাঁধে নিতে হবে। 888sport promo codeর ছোঁয়া লাগলে তো নষ্ট হয়ে যাবে বারো বছরের সাধনা। কিন্তু রাজি হলো প্রৌঢ়। তরুণীকে কাঁধে চড়িয়ে পার করে দিলো নদী। তরুণী চলে গেল তার পথে। দুই গুরু হাঁটছিল। যুবক বলল, আপনি 888sport promo code ছুঁলেন! এটা কি ঠিক কাজ করলেন গুরু?
প্রৌঢ় : কোন 888sport promo code?
যুবক : ওই যে মেয়েটা, যাকে কাঁধে চড়িয়ে নদী পার করলেন।
প্রৌঢ় নিশ্চুপ।
কিছুক্ষণ পর যুবক আবার বলল, আপনি 888sport promo code ছুঁলেন! এটা কি ঠিক হলো গুরু?
প্রৌঢ় : কোন 888sport promo code?
যুবক : ওই যে মেয়েটা, যাকে কাঁধে চড়িয়ে নদী পার করলেন।
প্রৌঢ় : তুমি এখনো তাকে মাথায় নিয়ে ঘুরছ? আমি তো তাকে ঘাটেই মাথা থেকে ফেলে দিয়ে এসেছি।
হেলাল ভাই বললেন, ভাইরে, আমি তো গুরু না, সাধারণ মানুষ। কোনো সাধনা করে অসাধারণ হতে পারিনি। আমার কী মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে, বয়স যদি তিরিশ হতো, তবে যে-কোনো মূল্যে ডায়ানাকে আমার করে নিতাম। হায় যৌবন, কত দ্রুতই না ফুরিয়ে গেল। ওহ ডায়ানা, যৌবনে কেন তোমার দেখা পেলাম না?
অবস্থা খুবই খারাপ দেখছি! মনজু ভাই বললেন।
মুহিম বলল, মদ খাওয়ায় ভীমরতি বেড়ে গেছে।
দশটার দিকে আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় গেলাম ডিনারে। লোকজন বেশি নেই। দশ-বারোজন। আমাদের চোখ খুঁজে বেড়ায় ডায়ানাকে। ডায়ানা সম্ভবত খেয়ে চলে গেছে। কিংবা এখুনি খেতে আসবে। আমরা খাই আর বারবার দরজার দিকে তাকাই। আমাদের খাওয়া শেষ হয়, ডায়ানা আসে না। আমরা অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষা করতে করতে এগারোটা বেজে যায়, তবু ডায়ানা আসে না। দীর্ঘশ^াস বুকে চেপে আমরা রুমে ফিরে চলি। দোতলায় উঠে দক্ষিণের বারান্দায় তাকাই। শূন্যতা ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। আমরা ডায়ানার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। না, স্বপ্নেও দেখা দিলো না ডায়না।
ছেঁড়াদ্বীপ যাব বলে সকাল ন’টায় আমরা ঘাটে গেলাম। ছেঁড়াদ্বীপের ট্রলার খুঁজছিলাম, তখন এক মাঝি ‘ছেঁড়াদ্বীপ ছেঁড়াদ্বীপ’ বলে হাঁক দিচ্ছে।
আপ-ডাউন ভাড়া জনপ্রতি তিনশো। মাঝির ট্রলারের দিকে তাকাতেই ধক্ করে উঠল আমাদের বুক। ট্রলার পেয়েছি বলে নয়, ট্রলারে ডায়ানাকে দেখতে পেয়ে। কপালে হাতের তেলো ঠেকিয়ে সে আমাদের দিকে তাকিয়ে।
মুহূর্ত দেরি না করে ট্রলারে চড়ে বসলাম আমরা। আমাদের দেখে বদিউল তো মহাখাপ্পা। তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারি। কী করবে, কী করা উচিত, ভেবে পাচ্ছে না সে। ট্রলার স্টার্ট করার জন্য আমি মাঝিকে তাড়া দিলাম। দেরি করলে বদিউল যদি ডায়ানাকে নিয়ে নেমে পড়ে! মাঝি দেরি করল না, ট্রলার স্টার্ট করল ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশে। আমরা সীমাহীন উতলা। সবচেয়ে বেশি উতলা হেলাল ভাই। যেন ফিরে এসেছে তার যৌবন। একটা গাঙচিল দেখে আমরা হর্ষধ্বনি দিই। গাঙচিলের মতো দু-হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিই। প্রত্যয় গান ধরে, ‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি/ সাগরের ঢেউয়ে চেপে/ নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ …।’ ওড়নায় মুখ চেপে ডায়ানা হাসে। বদিউলের কি সহ্য হয়? সে গলুইর দিকে ঘুরে বসল। ডায়ানাকেও ঘুরে বসতে বাধ্য করল। তবু ডায়ানা বারবার পেছন ফিরে তাকায়। ওড়নায় মুখ ঢেকে হাসে। যতবার তাকায় ততবার আমাদের বুকে মুগ্ধতার ঢেউ আছড়ে পড়ে।
ট্রলার তখন ছেঁড়াদ্বীপের কাছাকাছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তীরে ভিড়বে। হঠাৎ একটা পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেল ট্রলার। আমরা চিৎকার করে উঠলাম। কয়েক মুহূর্তের জন্য ভাষা হারিয়ে ফেললাম। নীরবতা ভেঙে মাঝির উদ্দেশে বদিউল বলল, দেইখা চালাইতে পারস না বাস্টার্ড!
ট্রলার রক্ষায় ব্যস্ত মাঝির কানে বদিউলের কথাটা ঢুকল না।
এবার আমরা পানি পানি বলে চিৎকার করে উঠি। ট্রলারে পানি ঢুকছে। পাটাতন ভরে যাচ্ছে নোনাজলে। নিশ্চয়ই কোথাও ছিদ্র হয়ে গেছে। মাঝির সহযোগী ছেলেটি পানি সেঁচে বাইরে ফেলতে লাগল। জিসান বলল, যেভাবে পানি উঠছে তাতে তো ট্রলার ডুবতে বেশি সময় লাগবে না।
আমার দৃষ্টি গেল ছিদ্রটার দিকে। দুই হাতে আমি ছিদ্রটা চেপে ধরলাম। মুহিম ও প্রত্যয় হাতের কাছে ঘটিবাটি যা পেল তা দিয়ে পানি সেচে বাইরে ফেলতে লাগল। মনজু ভাই নার্ভাস। চোখেমুখে ভয়। ট্রলারের গতি বাড়ানোর জন্য মাঝিকে তাড়ার পর তাড়া দিচ্ছে জিসান। ডায়ানা ভয়ে অস্থির। বদিউল গলুইর কাছে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। কাঁপছে আর দোয়া-দরুদ পড়ছে।
একটা ঢেউ লেগে ট্রলারটা দুলে উঠতেই ডায়ানা চিৎকার করে উঠল – বাবা! কয়েক মুহূর্ত। তারপর বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর আমাদের হুল্লোড় চাপিয়ে হেলাল ভাই চিৎকার করে উঠলেন – মা! বিস্ময়ে আমরা তার দিকে তাকালাম। তিনি বদিউলের দিকে হাত বাড়িয়ে কিছু বলতে চাইলেন। বললেন না। চট করে ডায়ানার কাছে গিয়ে তার একটা হাত ধরে বললেন, ভয় পেয়ো না মা, আমি সাঁতার জানি। ট্রলার ডুবে গেলে আমার কাঁধে চড়ে বসবে, আমি ঠিক তোমাকে ঘাটে পৌঁছে দেব।
ডায়ানা কেঁদে উঠল। তার কান্না বদিউলের কানে ঢোকে না। সে বিড়বিড় করে মুশকিল আসানের দোয়া পড়েই যাচ্ছে। ডায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে হেলাল ভাই বললেন, একদম ভয় পাবে না মা। বাবা আছি না?
মাঝি বলল, এসে গেছি, আর ভয় নেই।
আর ভয় নেই বটে। ডুবে যাওয়ার আগেই ঘাটে ভিড়ল ট্রলার। হুট করে গলুই থেকে লাফ দিলো বদিউল। পড়ে গেল বালিতে। উঠে দাঁড়িয়ে ডায়ানার উদ্দেশে বলল, তাড়াতাড়ি নামো, তাড়াতাড়ি।
হেলাল ভাই শক্ত করে ধরে রেখেছেন ডায়ানার হাত। হাত ধরে ধীরেসুস্থে নামালেন। তাদের পিছু পিছু আমরাও নামলাম। হেলাল ভাই বললেন, দেখলে মা, কিচ্ছু হয়নি।
ডায়ানার ঠোঁট দুটি কাঁপতে লাগল, গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কিছু বলতে চাইল, কিন্তু পারল না। বদিউল এসে এক ঝটকায় হেলাল ভাইয়ের হাত থেকে ডায়ানার হাতটি ছাড়িয়ে বলল, আসো!
শালা খাচ্চর। মৃদুস্বরে বলল প্রত্যয়।
আমরা রাস্তায় উঠে দাঁড়ালাম। ডাবওয়ালাকে বললাম ডাব কেটে দিতে। পশ্চিমের পথ ধরে হনহন করে হেঁটে চলছে বদিউল। ডায়ানা পেছনে পড়ে গেছে। জোর পায়ে হেঁটে স্বামীকে ধরার চেষ্টা করছে। হেলাল ভাই অপলক তাকিয়ে সেদিকে। চোখেমুখে বিষাদ।
ফেরার সময় আমরা ডায়ানা ও বদিউলকে পেলাম না। আমাদের আগেই বুঝি চলে গেছে। কিংবা পরে যাবে। সেন্টমার্টিন ঘাটে ফিরতে ফিরতে চারটা বেজে গেল। এক হোটেলে লাঞ্চ করে রিসোর্টে ফিরলাম। ডায়ানা ও বদিউলের কথা জিজ্ঞেস করলাম রিসেপশনিস্টকে। সে বলল, তাদের আরো দুদিন থাকার কথা ছিল। হুট করে বুকিং ক্যানসেল করে তিনটার জাহাজে চলে গেছে। গতরাতের মতো বুকে দীর্ঘশ^াস চেপে আমরা দোতলায় উঠলাম। দক্ষিণের বারান্দায় আগের সেই শূন্যতা। আরো গভীর। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা সিগারেট ধরালাম। রেলিং ধরে দূর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হেলাল ভাই। হঠাৎ শুনতে পাই তার কান্নার শব্দ। হুহু করে কাঁদতে লাগলেন। এই কান্না যে বহু বছর আগে পদ্মায় ডুবে যাওয়া তার মেয়ের জন্য, আমরা বুঝতে পারি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.