আদনান সৈয়দ
কবি শহীদ কাদরীর নামের আগে ’প্রয়াত’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে এই লেখাটি লিখতে হবে তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। জানি, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, ২০০২ সাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিসের মতো কঠিন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছিল। প্রায় সময়ই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে তিনি যেতেন আবার হাসপাতাল থেকে হাসিমুখেই বাড়ি ফিরতেন। গত চোদ্দো বছরে এটাই ছিল কবি শহীদ কাদরীর নিউইয়র্কের নিয়মিত রুটিন-জীবন। কোনো রোগবালাই, কোনো কষ্ট, কোনো ঝুটঝামেলা কবিকে তাঁর এই রুটিন-জীবন ব্যাহত করতে পারেনি। সে-কারণেই শহীদভাইয়ের এই প্রয়াণ আমাদের জন্যে আকস্মিক, কঠিন বেদনার মোড়কে 888sport app এক প্রয়াণ। আমাদের নিউইয়র্কের রাসত্মা এখন বড্ড এলোমেলো, ধূসর, গমত্মব্যহীন। শহীদ কাদরীবিহীন এই শহর যেন সাক্ষাৎ এক প্রেতপুরী। ভাবতেও পারি না, কবি শহীদ কাদরী এই শহরে আর কখনো বাস করবেন না।
২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট। সময়ের হিসাবে খুব একটা লম্বা সময় নয়। এই আগস্ট মাসেও নিউইয়র্কের রাসত্মায় যেন জুন-জুলাইয়ের খাই খাই গরমের তোপ! যেদিকে তাকাই শুধুই মরুভূমির শুষ্কতা! প্রবাস-জীবনের কঠিন এক জীবনে বন্দি হয়ে আছি তখন। নিউইয়র্কের আকাশে যখন কোনো মেঘ নেই, কোনো আশা নেই, আলোর শেষ কণাটাও আর খুঁজে পাই না, ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা। কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই। জানা গেল, বাঙালিদের শহর জ্যাকসন হাইটসে একজন বড় কবি এসেছেন। নাম শহীদ কাদরী। সেদিন ছিল কবির ৬২তম জন্মদিন। শহীদ কাদরীর 888sport app download apkর সঙ্গে আগেই বেশ পরিচিত ছিলাম। তবে এভাবে কবির সঙ্গে দেখা হবে এর জন্য আমার আত্মা মোটেও সত্যি প্রস্ত্তত ছিল না। আমি শার্টের বোতাম লাগাতে-লাগাতে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল হাইওয়ে ধরে জ্যাকসন হাইটসের দিকে ছুটলাম। ততক্ষণে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩-এর স্ট্রিটের হাটবাজারে ছোটখাটো একটা ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে নিউইয়র্কের বিশ্ব888sport live football কেন্দ্রের পরিচালক আশরাফুল হাসান বুলবুল আমাকে নিয়ে গেলেন ঠিক কবির সামনেই।
অনেক মানুষের ভিড়ে সেদিন কবির সঙ্গে খুব বেশি কথা হয়নি। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘বাসায় আইসো, আড্ডা হবে’। কবিপত্নী নীরা ভাবিও কাঁধ ঝাঁকিয়ে কথায় সায় দিলেন। ব্যস, আর যায় কোথায়? যাত্রা হলো শুরু। হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম নিউইয়র্কের আকাশে ঝকঝকে রোদ। এই আকাশ উজ্জ্বল, বাতাসে যেন প্রাণের খেলা! সপ্তাহামেত্ম কোনো এক শুক্রবারের সন্ধ্যায় জ্যামাইকার পাসন্স বুলভার্ডের ১১তলায় কবির বাসায় টোকা দিলাম। নীরা ভাবি দরজা খুলে দিলেন আর সেসঙ্গে কবি শহীদ কাদরীর জাদুর কলসটিও আমার সামনে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করে দেওয়ার সুযোগ করে দিলেন। কী আছে সেই জাদুর কলসে? অবাকবিস্ময়ে বিস্ফারিত চোখে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করি! সেই জাদুর কলসটি ঠাসা রয়েছে নিরেট বাঙালির টসটসে আড্ডা, রসে টইটম্বুর নানা উপাদেয় 888sport live chat-888sport live football, টক ঝাল মিষ্টি 888sport appর নানা 888sport sign up bonusকথা, নস্টালজিয়ায় ভরা বাল্য888sport sign up bonus, দেশভাগ, বিউটি বোর্ডিং, কবিবন্ধু শামসুর রাহমান এবং অন্যদের নিয়ে নানারকম অফুরমত্ম গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, চেনা-অচেনা নানামুখী 888sport free bet login নিয়ে আলোচনা, খুনসুটি, জোকস, আরো কত কী? তখন আমার ত্রাহি দশা। এক কথায় কাদরীর নেশায় বুঁদ। প্রতি সপ্তাহামেত্মই সবকিছু ছেড়েটেড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহে আবিষ্ট হয়ে আমরা কজন তরুণ শহীদ কাদরীর বাসায় হাজির হই। তার পর গভীর রাতে চোখদুটো জবাফুলের মতো লাল করে আবার ঘরে ফিরি। সেই থেকেই যাত্রা। বলা যেতে পারে, শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের এক নতুন জীবন!
কবি শহীদ কাদরীর আড্ডার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা সবাই চোখ বুজে কবুল করবেন যে, কাদরী আড্ডায় একাই একশ। বিশ্ব888sport live football থেকে শুরু করে কলকাতার পার্কসার্কাস লেনের নিজ বাড়িতে কোনো শৈশব888sport sign up bonusর প্রতিটি দৃশ্য এমনভাবে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে সবার
সামনে উপস্থাপন করেন যে, মনে হবে আপনি বুঝি বসে একটা সাদা-কালোয় নির্মিত নিখাদ প্রামাণ্য live chat 888sport দেখছেন। সে-বর্ণনায় থাকে কোমল আবেগ, যুক্তি, হিউমার, আর থাকে তাঁর বাচনভঙ্গির দুর্নিবার আকর্ষণ। শহীদ কাদরী অসাধারণ কৌতুক জানতেন। মাঝে-মাঝে সেরকম কোনো কৌতুক বলে উপস্থিত সবাইকে তিনি তাঁর ঐন্দ্রজালিক এক মোহে আবিষ্ট করে ফেলতে ছিলেন ওসত্মাদ। তাঁর পুরো ঘরটা বাঙালির অট্টহাসির জোয়ারে তখন বেদম ধাক্কা খেত আর কবি শহীদ কাদরী নিজেও কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাসতে-হাসতে সেই অট্টহাসি উপভোগ করতেন।
এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন কবি শহীদ কাদরী। তিনি ছিলেন আমাদের সবার প্রাণের শহীদভাই। শহীদভাইয়ের বাসায় ১১ এফের অ্যাপার্টমেন্টে টোকা দেওয়া মানেই ভেতর থেকে সেই দরাজ আর চিরচেনা ভরাট কণ্ঠস্বর, আরে আদনান, কী খবর? বসো বসো। না, এই কথাটা আর কেউ এমন আপন করে বলবে না। ভালোবাসা আর আদর মিশিয়ে আর কেউ তাঁর পাশে বসিয়ে লেখালেখির খোঁজ নেবে না, ব্যক্তিগত খবরাদি জানতে চাইবে না। বয়সের হিসাবে কবি শহীদ কাদরী ছিলেন বাবার বয়সী কিন্তু মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন আমাদের প্রাণের ইয়ারের বন্ধু। বয়সের জন্যে তাঁর সঙ্গে কখনোই কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি বরং বলা যায় শহীদভাই নিজেই তা হতে দেননি। তাঁর ভেতর একটা শিশুর মতো সরল আরো ভালো মানুষকে বসবাস করতে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে আড্ডায় তিনি প্রায় সময়ই উপদেশ দিতেন, ‘এই বইটা পড়ো, এইটা 888sport app download apk latest version করো, বসে থাকলে চলবে না’, আর কত কী। আবার কখনো-কখনো হো-হো করে হেসে তিনি এমন একটা জোকস বলতেন, তখন কখনো মনে হতো না, তিনি আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় অথবা তাঁর হাত দিয়ে বৃষ্টি-বৃষ্টি অথবা সংগতির মতো অসাধারণ কিছু 888sport app download apkর জন্ম হয়েছে। অথচ আমরা সবাই জানি, পঞ্চাশ-উত্তর বাংলা 888sport app download apkধারায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে যে-কজন কবির নাম উলেস্নখ করা যায়, কবি শহীদ কাদরী তাঁদের অন্যতম। বিশ্বনাগরিকতা বোধ, স্বাদেশিকতা, আধুনিক নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখ, রাষ্ট্রযন্ত্রের কূটকৌশল, শহুরে জীবনের সুখ-দুঃখ, দেশপ্রেম – সবকিছুই তাঁর 888sport app download apkয় উঠে এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
কবি শহীদ কাদরী নিজের লেখাজোখা বা 888sport app download apk নিয়ে তিনি খুব একটা কথা বলতেন না। তাঁর কোনো 888sport app download apkর কথা বা লেখালেখির কথা এলেই শুধু বলতেন, আরে ধুর! বাদ দাও। বরং বলা যায়, তিনি অন্যদের লেখালেখির খোঁজ বেশি নিতে চাইতেন। বিশেষ করে 888sport appsের 888sport app download apk কোন পথে এগোচ্ছে, নতুন কে কী লিখছেন, কী কী নতুন বই তাঁর হাতে এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে যাঁরা কবি শহীদ কাদরীর খুব কাছে আসার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা কবুল করবেন যে, শহীদ কাদরী শুধু আড্ডাবাজ একজন কবি ছিলেন তা নয় বরং তিনি তাঁর আড্ডার ভাষায় পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান-888sport apkের ঝাঁপিটি সবার সামনে যেন মেলে ধরতেন। যাঁরা নতুন লেখালেখি করছেন তাঁদের সবসময় তিনি বিভিন্নভাবে উপদেশ দিতেন, সঠিক রাসত্মায় হাঁটার পরামর্শ দিতেন। এই কাজটি তিনি করতেন খুব আমত্মরিকভাবে, আর খুব নিষ্ঠার সঙ্গেই। শহীদভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে বা ফোনে কথা হলেই তিনি বলতেন, তোমার লেখালেখির কী খবর? এখন কী লিখছো?। যদি বলতাম ‘না, শহীদভাই, ব্যস্ততার কারণে কিছু লেখা হচ্ছে না’। তখন তিনি এই কথা শুনে চুপ হয়ে যেতেন। অথবা বলা যায়, তিনি এ-ধরনের নেগেটিভ কথা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেন না। তাঁর ভাষায়, লেখালেখি থামিয়ে রাখা চলবে না। বুজলা, কলমেরও গলা সাধা দরকার। যদি হাতে কিছু না থাকে 888sport app download apk latest version করো। থামবা না। মেজর 888sport live football পত্রিকাগুলোতে অমত্মত তিন মাস অমত্মর-অমত্মর হলেও লিখতে হবে। নিজের অসিত্মত্ব প্রকাশ করতে হবে।’ হায়! এই কথা এখন নিউইয়র্কে আর কে বলবে? কে বলবে যে এই বইটা পড়ো, দেখো তো এই বইটা আমাজনে সার্চ দিলে পাওয়া যায় কিনা? অথবা পুরনো বইয়ের দোকানে যাইয়া একটু দেইখো তো পাও কিনা? না, এই কথা বলার জন্যে আর কেউ রইল না।
জানি, কবি শহীদ কাদরী বাংলা ভাষার অন্যতম একজন কবি; 888sport appsের কবি। কিন্তু আমাদের আত্মায় তিনি সবসময়ই আমাদের কবি, তিনি আমাদের নিউইয়র্কের কবি। তাঁর অসুস্থতায়, তাঁর জন্মদিনে, তাঁর ১১ এফের কফির চুমুকের সঙ্গে ব্যক্তিগত আড্ডায় তিনি কখন আর কীভাবে যেন আমাদের হয়ে গেছেন। আমাদের নিউইয়র্কের হয়ে গেছেন। নিউইয়র্ক মানেই কবি শহীদ কাদরী, আমাদের শহীদভাই। হয়তো সে-কারণেই তাঁর এই প্রয়াণ আমাদের কাছে খুব কঠিন আর নির্মম। তাঁর এই প্রয়াণ আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।
তবে এ-কথা আমরা সবাই জানি যে, কবি শহীদ কাদরী শারীরিকভাবে নিউইয়র্কে ছিলেন বটে; কিন্তু তাঁর প্রাণ সবসময়ই বিচরণ করত 888sport appর রাসত্মায়, বাংলা একাডেমির বইমেলার জমজমাট আসরে অথবা রাসত্মার পাশে কোনো কফির দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে অমত্মরঙ্গ আড্ডায়। শহীদভাই একদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন সে-কথা। ‘বুজলা, যদি হাঁটতে পারতাম তাহলে ধেইধেই করে 888sport appsে চলে যেতাম।’ শহীদভাইয়ের খুব শখ ছিল তিনি 888sport appsে যাবেন, সেখানে তাঁর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাবেন। কিন্তু শহীদ কাদরীর শারীরিক অসুস্থতা এমনই এক ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল যে, তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, তাঁর আর কখনো 888sport appsে যাওয়া হবে না। কবি শহীদ কাদরীকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম, প্রায় তিন যুগ হলো আপনি 888sport appsের বাইরে আছেন। দেশের জন্য কেমন লাগে? এই কথা শুনে কপালটা কিছুটা কুঁচকে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে ছিলেন কবি। উদাস-চোখে পাইপে আগুন ধরাতে-ধরাতে তিনি বলেছিলেন, ‘যেদিন থেকে দেশ ছেড়েছি সেদিন থেকেই দেশকে অনুভব করি। আমার একজন ভারতীয় ডাক্তার বন্ধু বলতেন, টাকা-পয়সা তো অনেক করেছি কিন্তু রাত হলেই দেশের জন্য কেঁদে-কেঁদে বালিশ ভিজাই। সত্যি, দেশে অভাব আছে, অনটন আছে, তার পরও দেশ তো দেশই। নিজ দেশের চেয়ে আর কি কোনো ভালো দেশ হতে পারে? এই আমেরিকাতেও 888sport appsের মতো অবিরাম বর্ষা হয়। কিন্তু 888sport appsের বর্ষার মতো এত সুন্দর বর্ষা পৃথিবীর আর কোথায় দেখতে পাব? 888sport appsে বৃষ্টি মানেই ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা কাগজের নৌকা পানিতে ভাসাচ্ছে, প্যান্ট গুটিয়ে মানুষজন রাসত্মা পার হচ্ছেন। এই দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করলে আমার কাছে উৎসবের মতো মনে হয়। 888sport appsের আকাশ অনেক সুন্দর, 888sport appsের বৃষ্টিও অনেক বেশি সুন্দর। আমি স্বপ্ন দেখি কবে আবার সেই সবুজ দেশটাকে দেখব। দেখব তো?’
না, কোনো ভালোবাসা দিয়েই আমরা শহীদভাইকে আর নিউইয়র্কে আগলে রাখতে পারিনি। শহীদভাই শেষ পর্যমত্ম চলেই গেলেন। তিনি চলে গেলেন তাঁর প্রিয় শহর 888sport appয়। নিউইয়র্কের হাজারো 888sport sign up bonus পেছনে ফেলে তিনি এখন আবার সেই 888sport appর রাজকুমার। বিউটি বোর্ডিং, রেক্স, পুরানা পল্টনের রাসত্মায় কি কবি এখন ধেইধেই করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? কবি, আপনি কি তাহলে আপনার এই পরিকল্পনার কথা আগে থেকেই জানতেন?
একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহবরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে’
তোমাকে অভিবাদন হে শহীদ কাদরী। অভিবাদন আমার প্রিয় শহীদভাইকে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.