এক ও অদ্বিতীয় আনিসুজ্জামান

বলতে পারি না, আমি কখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলাম। গত দু-বছরে দেখা হয়নি একবারও। মফস্বলে থাকি। 888sport app যাইনি অনেকদিন। এক 888sport live football-সংস্কৃতি মেলায় তিনিই এখানে এসেছিলেন। তারপর আর না। ফোনালাপও নয়। সংকোচ ছিল আমারই। অকারণে তাঁকে বিরক্ত করা – মন চায়নি। তাছাড়া তাঁর শরীরের অবস্থা! সাবধান হতে হয় বইকি। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান – আমাদের সবার জন্যে। তিনি না মানলেও। নিজেকে তিনি অবলীলায় নানা উদ্যোগে ছড়িয়ে দিলেও। নিরুপায় আক্ষেপে এখন ভাবি, যখন তাঁর বিশ্রাম প্রয়োজন – আমাদের দাবি বা আবদার তখন তা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে।
সত্য কথা, তিরাশি বছরে জীবনের অবসান – একে অকালপ্রয়াণ বলা যায় না। কিন্তু মানুষটি যদি হন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, যিনি শেষ সচেতন মুহূর্ত পর্যন্ত থাকেন প্রাণবান, থাকেন বিবিধ মানবকল্যাণ উদ্যোগে শামিল, নেতৃত্বেও; এবং তাতে অকল্যাণের-অবমাননার প্রতিবাদে-প্রত্যাখ্যানে নির্দ্বিধায় একাত্ম ও সরব – তবে তাঁর চলে যাওয়ায় এই পরিপূর্ণতাতেও যে-শূন্যতার সৃষ্টি, তা শুধুই আবেগের সঞ্চার করে না – আমাদের বিপন্নতাও বাড়ায়। নামগ্রাসী, আকারগ্রাসী বাস্তবের পায়ে মাথা কুটি; আমাদের চেতনায় তাঁকে বয়ে নিয়ে সামনে এগোবার আগ্রহ ও সামর্থ্য যেন আমরা না হারাই।
যখন নামটি প্রথম শুনি, তখন আমি সবে ঢুকেছি স্কুল পেরিয়ে কলেজে। তিন বছর আগের ভাষার সংগ্রাম পৌরাণিক বিভা ছড়ায়। নায়ক-নায়িকারাও – চেতনায় স্বপ্ন বোনে। তখন কানে আসে, আনিসুজ্জামান নামে এক বালক আটচল্লিশের পর্ব থেকেই এর নিবেদিত সৈনিক। হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় পরে 888sport cricket BPL rateের যে ইতিহাস-গড়া সংকলন বেরোয় তাতে তিনি কনিষ্ঠ লেখক। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী, মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী, আলাউদ্দিন আল আজাদ – এঁদের তালিকায় তাঁর নামটাও যোগ হয়। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে আমরা তখন খালি পায়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো -’ গেয়ে শহরকে জাগিয়ে তুলি। সন্ধ্যায় দৃপ্তকণ্ঠে আবৃত্তি শুনি, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।’ 888sport app download for androidে আসে হঠাৎ হঠাৎ কিশোর আনিসুজ্জামানের নিঃশব্দ ক্রিয়াকলাপও। তবে ওই সময়েও তিনি ছাত্র। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের। এবং মেধাবী বলে পরিচিতিও যথেষ্ট।
তারপরেও একটা প্রশ্ন ছিল। কখনো কাউকে করা হয়নি যদিও। আর তাঁর মেধার দীপ্তি শতমুখে যেমন ছড়িয়েছে, তাতে ওই কৌতূহল আর মাথা তোলেনি। বরং তাঁর গৌরবে আমাদেরও যে মান বেড়েছে, এটা মনে মনে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি। নিজেদের প্রমাণ করার দায় যাদের আছে, তাদের কাছে এর মূল্য কম নয়। চাপা পড়ে গেলেও প্রশ্নটা কিন্তু আজো তোলা যায়। উত্তরটা খুঁজি অবশ্য নিজেরাই। ওই সময়ে বিষয় নির্বাচনে, আমরা দেখেছি, তুলনায় ‘ভালো’ ছাত্ররা বেছে নিতেন এমনসব বিদ্যা – যেগুলো পড়ে সাধারণভাবে মনে করা হয় সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা ও ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনা তুলনায় বেশি। এই মনে করার পেছনে বাস্তব অভিজ্ঞতাও হয়তো কিছু থাকে। ব্রিটিশ পর্বে সর্বভারতীয় প্রশাসনিক আইসিএস পদ ছিল সবচেয়ে মহার্ঘ, ক্ষমতার প্রদর্শনীতে সবচেয়ে জমকালো। সেই ধারাতেই পাকিস্তানে সিএসপি ক্যাডার সৃষ্টি। অধিকাংশ মেধাবী ও চৌকস ছাত্রই তখন স্বপ্ন দেখে, সিএসপি হয়ে হুকুমদারিতে তাক লাগিয়ে দেবে। অর্থ-বিত্ত সঞ্চয়ের সুযোগও তাতে অঢেল। প্রশাসনিক কর্তৃত্বের দখল যদি না মেলে, তবু অন্য অনেক বিষয় পড়লে বাজারদরে তারা বাংলা ভাষা ও 888sport live football পাঠের তুলনায় বেশি সম্ভাবনা জাগায়। কাজেই বৈষয়িক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো মেধাবী ছাত্রের নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়া তখন ছিল বেশ ব্যতিক্রমী। চোখে পড়ার মতো এমন একটি সিদ্ধান্ত কিন্তু স্বেচ্ছায় নেন কিশোর আনিসুজ্জামান। কোনো দ্বিধা তাঁর ছিল না। বরং স্বপ্নসাধনার প্রত্যয় ছিল।
তাঁর কাছে কখনো জানতে চাইনি – তেমন সুযোগ কখনো পাইনি – তবে পূর্বাপর মিলিয়ে এটা সংগত মনে হয়, আমাদের ভাষার সংগ্রামে ঐকান্তিকতা তাঁকে জীবনসাধনার এই পথে ঠেলে দেয়। শুধু আবেগ দিয়ে নয়, মেধার সর্বোত্তম আকাঙ্ক্ষার শপথ দিয়েও তিনি মনস্থির করে থাকবেন, আপনার সাধ্যের সবটুকু তিনি তাঁর সত্য পরিচয়ের মর্মোপলব্ধিতে ও তার পূর্ণ মানবিক বিকাশের অসংকোচ অভিযানে নিয়োজিত করবেন। কোনো নাটকীয় ঘোষণার তাঁর প্রয়োজন পড়েনি। কী তখন, কী পূর্ণ জীবনের বিবিধ উদ্যমে তিনি এই লক্ষ্য থেকে মুহূর্তের জন্যেও একচুল সরে আসেননি। তাঁর নাছোড় উদ্যম আমাদের ভাষার গৌরব আরো বাড়িয়েছে। আমরা বিশ্ব মানব-বাস্তবতায় আরো নিশ্চিত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছি। এ-যাত্রার বিরাম নেই। মানব-অস্তিত্বের প্রবহমানতাতে সেও অশেষ। তিনি তাঁর কালপর্বে নিজের সবটুকু দিয়ে তাতে উল্লেখ করার মতো মূল্য সংযোজন করেছেন। আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। বিশ্বসভায় তিনি সামনে থেকে আমাদের পরিচিত করেছেন। আমাদের গৌরব বেড়েছে।
তবে বাহান্নর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি এককভাবে তাঁকে পথ দেখিয়েছে, এমনটি না-ও হতে পারে। তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যেও বোধহয় মিশে ছিল দিকচিহ্নের অদৃশ্য নিশানা। কেউ হয়তো খেয়াল করি না। সবার ভেতরে সফলও হয় না। কিন্তু কখনো-কখনো যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়ে যায়। আমরা বড়জোর কিছু আন্দাজ করি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বেলাতেও মনে হয় তেমন। তাঁর পিতামহ শেখ আবদুর রহিম (১৮৫৯-১৯৩১) ছিলেন তাঁর সময়ের এক বিশিষ্ট 888sport live football-সাধক। আত্মসচেতন, উদার ও নিঃশর্ত মানবিক। লেখালেখিতে তাঁর মায়েরও পরিচিতি ছিল। আনিসুজ্জামান তাই – অনুমান করি – বড় হয়ে উঠেছেন কোনো হীনম্মন্যতার বোঝা মাথায় না নিয়ে। নিজেকে জাহির করার বাড়তি কসরত দেখানোর তাঁর প্রয়োজন পড়েনি। ভাষার সংগ্রাম যে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট চেনায়, তাতে তিনি অনায়াসে খাপ খেয়ে যান। সেখানে হৃদয় ও মন দুই-ই তাঁকে বাংলা ভাষা-888sport live footballের দিকে টানে। তিনি ইতস্তত করেন না। সংসারে নিক্তির ওজনে 888sport app চাহিদার হিসাব-নিকাশ মাথায় আনেন না। এবং সেখানে তাঁর অনন্যসাধারণ মেধাই তাঁকে চেনায়। তাঁর সময়ের একজন সেরা মনীষী হয়ে ওঠায় – এবং তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে – তিনি সহজ-সাবলীলতায় এগিয়ে যান। তবে আপন ঐতিহ্যের স্বাভাবিকতায় বরাবর থেকে যান পরিপূর্ণ মানুষ।
লক্ষ করি, ছাত্রজীবনে তিনি শুধুই বইমুখো থাকেননি। তখন চারপাশে অর্থ-অনর্থের জটলা। সংকীর্ণতার ও মানসমুক্তির আকাঙ্ক্ষার দ্বৈরথ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশ্রয় বেশি কূপমণ্ডূকতায়। এই বাস্তবতার তিনি মুখোমুখি হয়েছেন। উদার মানবিক বোধ কখনো গোপন করেননি। এমনকি প্রগতিশীল সাংগঠনিক কাজেও জড়িয়েছেন। সাধ্যমতো অবদান রেখেছেন। তারপরও কিন্তু পরীক্ষায় মিলেছে সাড়া-জাগানো ফল। সম্মান-পরীক্ষায় কলা অনুষদে প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে অর্জন করেন বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক। মাস্টার্সেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। কলেজে পড়ার সময়েই এসব কীর্তিকথা আমার কানে আসে। আমি শিহরিত হই। যদিও তাঁকে চোখে দেখিনি। তখনো এখানে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা অর্জন ছিল ছাত্রজীবনে মেধার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। চোখে না দেখলেও তাই তিনি স্বপ্নের নায়ক হয়ে ওঠেন। এরপর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অধ্যাপনায় যোগদান আমাদের বিস্মিত করে না।
তবে একেবারে যে অবাক হইনি, তা নয়; যখন জানি, 888sport appতেই তিনি ডক্টরেট করছেন। উচ্চতর শিক্ষার কোনো আয়োজন ওই পাকিস্তানি আমলে তখনো এখানে দানা বাঁধেনি। এমনকি বাংলা ভাষা ও 888sport live footballেও পাণ্ডিত্যের সর্বোচ্চ সিলমোহর পেতে দৌড়–তে হতো লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে; অথবা আমেরিকার শিকাগো, মিশিগান বা এইরকম আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আনিসুজ্জামান প্রশান্ত আত্মবিশ্বাসে ওই অল্প বয়সেই এই রীতি ভেঙে বেরিয়ে এলেন। এবং যথানিয়মে সময়মতো সফল হলেন। ‘সময়মতো’ বলার সংগত কারণ আছে। কারণ, তখনো ডক্টরেট করার অবকাঠামো এখানে তেমন গড়ে ওঠেনি। এবং, দ্বিতীয়ত – আনিসুজ্জামান তাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতি, এমনকি রাজনৈতিক ক্রমবর্ধমান সংযোগ ও দায়িত্ব থেকে এতটুকু সরে আসেননি। তারপরও এই গবেষণাকর্মের ওপর ভিত্তি করে দু-বছর পর তিনি যে-বই প্রকাশ করেন, মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football (১৯৬৪) – তা আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রকে যে শুধু প্রসারিত করে তা-ই নয়, নিরাসক্ত-নিরহংকার দৃষ্টিতে কাল-চেতনার সঙ্গে বাস্তব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সংযোগ-সংঘাত-সমন্বয়ের ধারাকে অনুসরণ করে পূর্ণ মানবিক শ্রেয় ভাবনাকেও ফুটিয়ে তোলে। দেশে যখন সমরশাসনে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল, তখন এমন শান্ত-প্রসন্ন জ্ঞানের ক্রমবিকাশ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। তিনি কিন্তু কোনো কিছুই চাপিয়ে দেন না। বিনয় ও সততার সঙ্গে কালের যে-মন্দিরা বাজে, তা শোনেন। শোনান। অবাক হই না, এই বইটি আজ এক মহাগ্রন্থের মর্যাদায় স্থায়ী আসনে প্রতিষ্ঠিত। এর স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে।
এই বই আরো একটা দিকে নজর কাড়ে। তা তাঁর ভাষা। বিষয়, অস্বীকার করি না – কোথাও কোথাও কর্কশ। কিন্তু তাঁর ভাষার লাবণ্য এতটুকু ক্ষুণ্ন হয় না। তথ্যের উপস্থাপনায় ও বিচার-বিশ্লেষণে কোনো ঘাটতি কিন্তু কোথাও চোখে পড়ে না। মনে হয়েছে, এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। বিষয় জটিল বা দ্বন্দ্বমুখর যা-ই হোক, ভেতরের তাগিদসমেত তাকে অনাড়ম্বর ভাষায় সরাসরি ফুটিয়ে তোলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এটা আমাকে অবাক করে। কখনো মনে হয়নি, তিনি ভাবনাকে ভাষায় 888sport app download apk latest version করেন। ভাষা যেন তাঁর ভাবনার সহগামী। এবং ততটুকুই, যতটা ভাবনাকে সব অন্তর্জাল নিয়ে ফুটিয়ে তোলায় যথেষ্ট। এতটুকু কম বা বেশি নয়। এই অসাধারণ দক্ষতা আমার আয়ত্তের অনেক-অনেক বাইরে। তাই মুগ্ধতাও বেশি। বইয়ের আয়তন কিন্তু ছোট নয়। কোথাও কিছু বাদ পড়েছে, বা তিনি সংক্ষেপ করেছেন – এমনও মনে হয় না। বইটির বিপুল সমাদরের একটা কারণ বোধহয় তাঁর ভাষার এই সর্বত্রগামী স্বচ্ছতা। এমনটি তাঁর সব লেখাতেই।
তাঁর আরো ছোট ছোট লেখা নানা সময়ে চোখে পড়েছে। হয়তো নিজের কাজ নয়। অন্য কারো, অথবা অন্য কোনো প্রসঙ্গে। সে-সবেও দেখেছি নিটোল পূর্ণতা। আর ভাষার নিরাভরণ ব্যক্তিত্বের সরল মাধুর্য। কোনো কিছু মনে হয় না অকাজের বা অনর্থক। এটা বোধ হয় তাঁর মনোজাগতিক সাম্যের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসারণ। সবার জন্যে, সবকিছুর জন্যে সেখানে আসন পাতা। এবং তাঁর সৌজন্য সবসময় একই রকম অনাবিল। তাই মূল্যবিচার যে থাকে না, তা নয়। প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করায় তিনি কখনো পিছপা হয়েছেন বলে শুনিনি।
ডক্টর আনিসুজ্জামান জুন ১৯৬৯ থেকে আগস্ট ১৯৮৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তারপর আমৃত্যু 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনের সবটাই ফলবান। কী দেশে, কী বিদেশে 888sport live football-সংস্কৃতির অনুশীলনে নতুন নতুন দিগন্তের উন্মোচনে ছিলেন ক্লান্তিহীন। বিশেষ উল্লেখ দাবি করে লন্ডন ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির দলিল ঘেঁটে প্রাচীনতর বাংলা গদ্যের নমুনা সন্ধান ও নিজের সম্পাদনায় আর বিশ্লেষণে Factory correspondence and other Bengali Documents in the India office Library and Records (১৯৮১) এই শিরোনামে এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ। এরই অনুসরণে বাংলাতেও ছেপে বেরোয় তাঁর আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮২) ও পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪)। গবেষণাকাজে এমন সাবলীল নির্মেদ রচনা আপনা থেকে নিজেদের চেনায়। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই রকম আরো কত বিদ্যানুশীলন তাঁর দেশে-বিদেশে বিশ্বসেরা পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। মাত্র তেমন একটি প্রকাশনাই অনেককে অহংকারী করে। তিনি কিন্তু থাকেন নির্বিকার। তাঁর পরিচয় আর বাংলাতেই শুধু ধরে না। বিশ্বমানের সেরা মনীষীদের তিনি একজন। অনায়াসে কালের সীমা তিনি অতিক্রম করেন। অথচ আমাদের মতো অতি সাধারণরাও যখন-তখন তাঁর সময়ে ভাগ বসিয়েছে। তিনি বিরক্ত হননি। তারপরেও অত কাজ! কেমন করে পারলেন? যেন জীবনসাধনার উৎসব! এবং জীবনযাপনও একান্ত মানবিক। এর অসংকোচ, কিন্তু অনাবিল প্রকাশ ধরা পড়ে তাঁর 888sport sign up bonusকথায়। কাল নিরবধি (২০০৩) ও বিপুলা পৃথিবী (২০১৫)। দু-খণ্ডই বড়মাপের। এবং অসংখ্য খুঁটিনাটিতে ভরা। অনুমান, তাঁর 888sport sign up bonusশক্তি অনন্যসাধারণ। সেই সঙ্গে তিনি অকুণ্ঠ মানবিক। দুই খণ্ডই আমাদের অশেষ আদরের। বাংলায় 888sport sign up bonusকথার ধারা অগৌরবের নয়। তারপরেও তাঁর কথা আমাদের আলাদাভাবে আকর্ষণ করে। তাঁর কাল, তাঁর চর্চিত জীবন – দুটো মিলেমিশে একাকার। সেই সঙ্গে রুচির স্নিগ্ধতা। আমরা জানতে জানতে অগ্রসর হই। অগ্রসর হতে হতে শিখি। এ-শেখা মানুষকে দেখার-বোঝার, মানুষের মুখোমুখি হওয়ার। আত্মানুসন্ধান আছে, আত্মাবলোপন নেই। সভ্য হয়ে ওঠা আছে, সভ্যতার বিকার নেই। উভয়ের মধ্যযামে আমার একাত্তর (১৯৯৭)। আমার কাছে এর আলাদা আবেদন। আসলে ওই সময়টিতেই আমি তাঁর কাছাকাছি হই। তখন তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী 888sport apps সরকারের মরণপণ মুক্তিসংগ্রাম। তিনি সেই সরকারের পরিকল্পনা সেলের সদস্য। তাজউদ্দীনের সঙ্গে যেন একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। এছাড়া ওইখানে 888sport apps শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সেই সূত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠা 888sport apps সহায়ক সমিতির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তখন দেখেছি দিন-রাত এক করে তাঁর কর্মতৎপরতা। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই। কখনো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে, আবার পরক্ষণেই কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে; অথবা স্বাধীন 888sport appsের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগে। ওখানকার সর্বোচ্চ মানের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগ তাঁর। আপন ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মানবোধ, সদিচ্ছা ও লক্ষ্যে অবিচল নিষ্ঠা, তাঁর স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা ও বিনয় মিলে তাঁকে সর্বস্তরে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও শ্রদ্ধেয় করে তোলে। এই আমার একাত্তরে তাঁর অভিজ্ঞতার নিরাসক্ত বর্ণনা আছে। তবু পড়ে এখনো শিহরিত হই। মুক্তিসংগ্রাম আমাদের কোনো দ্বিমাত্রিক বিষয় মাত্র ছিল না। বিবিধ অনিশ্চয়তা ও অন্তর্ঘাতের বিকৃত প্রয়াস তাতে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল। সে-সবের অস্পষ্ট ইঙ্গিতও বইটিতে মেলে।
এক ধারাবাহিক আত্মবিকাশের প্রক্রিয়ায় কিন্তু তাঁর একাত্তরে আসা। স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬) তাঁর এক 888sport liveসংকলনের নাম। এই সন্ধান তাঁর কাছে শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন ছিল না। মাতৃভাষার সংগ্রাম থেকে শুরু করে বারবার ক্রান্তিলগ্নে তিনি নির্দ্বিধায় তাঁর বিবেকসিদ্ধ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। তিনি পরোয়া করেননি। ১৯৬১-তে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনে তিনি সামনে থেকে সক্রিয় থাকেন। ১৯৬৭-তে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে প্রকাশ্য বিবৃতি দেন। তাঁর অবস্থান এক ঐতিহাসিক কীর্তির রূপ নেয় ১৯৬৮-তে, যখন তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ। আত্মস্বরূপেরই এ এক চিন্ময় ঘোষণা, যা আমাদের সমন্বিত সত্তার অনুভবকে আরো সংহত করে। একাত্তরে মুক্তিসংগ্রামের ধারণাবৃত্ত গড়ে তোলায় এর ভূমিকা কম নয়। এ-কথার সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি মেলে যখন রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপনে বিশ্বভারতীর আগ্রহেই তাদের প্রকাশনা বিভাগ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশ করে অনুরূপ আরেক সংকলন – সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ : 888sport appsের 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি (২০১২)। রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর একক রচনার সংকলন আছে আরো দুটি। ২০১১-য় প্রকাশ পাওয়া রবীন্দ্রনাথ : ফিরে দেখা; ২০১৬-য় তাঁর সৃষ্টির পথ। এদের মননশীলতা ও নিরাসক্তি যে-কোনো আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের স্বরূপের সাধনায় অপরিহার্য – এ-কথা থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসি না যে, তাঁর ভাবনা ও সৃষ্টিকলার পরিমণ্ডলেই আমরা সম্পূর্ণ। রবীন্দ্রচর্চা স্বয়ং এমন ধারণা খণ্ডন করে। তার বিচারে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই প্রাথমিক সত্যটি বিস্মৃত হন না।
বিপুল কর্মজীবনে তিনি যে কখনো বিফল মনোরথ হননি এ-কথা বোধহয় পুরোপুরি সত্য নয়। তাঁর সময়ে তিনি উপাচার্য হতে পারেননি। তাঁর যে আগ্রহ ছিল না, এমন মনে হয় না। যোগ্য নেতৃত্ব যাঁরা চান, তাঁদের উৎসাহও ছিল। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ ও বৈরী গোষ্ঠী-স্বার্থ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইঁদুর দৌড়ে মাঠে নামা তাঁর রুচিতে বাধে। এ নিয়ে পরে আর তিনি ভাবেননি।
আজ পেছন ফিরে তাকিয়ে মনে হয়, উপাচার্য না হতে পারা তাঁর মোহমুক্তি ঘটিয়েছে। তাঁর কাজ আরো ফলপ্রসূ, আরো অর্থবহ, আরো বিস্তৃত হতে পেরেছে। উপাচার্য হলে ওই পদের বাধ্যবাধকতায় তিনি বাঁধা পড়তেন, আপন কাজে একাগ্রতা তাঁর ক্ষুণ্ন হতো। হয়তো তিনিও এক অচলায়তনের মাথাভারি পণ্ডিতের জমকালো নমুনা হয়ে আত্মপ্রসাদে ঘেরাটোপে বন্দিত্বের ভাগ্য সানন্দে মেনে নিতেন। যে-মনীষী আনিসুজ্জামানকে পূর্ণপ্রাণের বহুমুখী আয়োজনে আমরা পেয়েছি, তার অনেক কিছুই হয়তো অনায়ত্ত থাকতো। একে অসমর্থ সান্ত্বনা মনে করি না। তাঁর কালে সম্ভাবনাময় অনেককেই উপাচার্য-দশায় আক্রান্ত হয়ে বিপথে যেতে অথবা সৃষ্টিশীল মেধার অবলুপ্তি ঘটাতে দেখেছি। আর, আজকের বাস্তবতায় উপাচার্যের পদ তো আর কোনো 888sport apk download apk latest version আকর্ষণ করে না। অনেকে বেশি পরিচিত ঠ্যাঙাড়ে-বাহিনীর সর্দার বলে। কায়েমি স্বার্থের অন্তর্জালে বাঁধা পড়াই তাঁদের নিয়তি। বেরিয়ে আসতে চাইলে কপালে পড়ে অসম্মানের দাগ।
বিপরীতে দেখি, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মননশীল কাজে ছেদ পড়েনি কখনো। গতি বরং তাতে বেড়েছে। বেড়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশ্বজুড়ে তাঁর আমন্ত্রণ সেরা মনীষীদের আলোচনা সভায়। নিয়মরক্ষার জন্যে নয়। তাঁর ভাবনার গুরুত্ব বিপুল আগ্রহে স্বীকার করে। তিনিও কাউকে হতাশ করেননি। চিন্তার স্বচ্ছতায় ও গভীরতায় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। প্রতিভা তাঁর সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে উচ্চতর মানববিদ্যার নানা প্রতিষ্ঠান থেকে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও। 888sport apps রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান তিনি পেয়েছেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ববিদ্যামঞ্চে আমাদের সর্বাগ্রগণ্য সর্বজনমান্য প্রতিনিধি। তাঁকে নিয়ে সবার সামনে গর্ব করতে পারি আমরা। স্বীকৃতি মেলে তাঁর সর্বত্র। আমাদের মর্যাদা বাড়ে।
এ-কথা নিশ্চিত বলা যায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়-ঐতিহ্যে কোনোখানেই কোনো উপাচার্যের নাম বিশেষ গৌরবের প্রতিনিধিত্ব করেনি। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অধ্যাপক সত্যেন বোস, অমিয়কুমার দাশগুপ্ত, মুনীর চৌধুরী, গোবিন্দচন্দ্র দেব, সালাহউদ্দিন আহমদ – এঁদের ধারায়। এই ধারাতেই আর এক উজ্জ্বল নাম এখন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অবশ্য তাঁর 888sport sign up bonusর গর্ব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও। তবে আনিসুজ্জামান নামের মহিমা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়েই আবদ্ধ থাকে না। আমাদের সার্বিক উজ্জীবনেও যে সামনে থেকে তিনি দেখিয়েছেন এবং তা বরাবর – এ-কথা শুরুতেই আমরা জেনেছি।
মাতৃভাষার সংগ্রামে যার শুরু তা অব্যাহত থেকেছে আমৃত্যু-আজীবন। তিনি পথভ্রষ্ট হননি। আপসও করেননি। কিন্তু কখনোই আত্মপ্রচারে নামেননি।
একাত্তরের অগ্নি ও অশ্রুঝরা দিনগুলো পেরিয়ে যখন আবার আমরা খাদের কিনারে, তখন বিবেকসুদ্ধ সাহসে তিনি দ্ব্যর্থহীন নিজেকে চেনান। ১৯৯২-র মার্চে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যে প্রকাশ্য গণআদালত বসে, তাতে স্বয়ং বাদী হয়ে তিনি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। তৎকালীন সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা এনে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। তিনি নির্দ্বিধায় এই ঝুঁকির মুখোমুখি হন। পরে একই রকম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রাষ্ট্রীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে তিনি তার সামনে একাধিক চিহ্নিত ঘাতকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ভয় পান না। তবে মানবিক মূল্যবোধ থেকে একচুল নড়েন না। ভিন্নমত বা আদর্শের জন্য কেউ তাঁর ব্যক্তিগত ঘৃণার পাত্র হয় না। মানববিদ্বেষী ঘৃণ্য অপকর্ম অবশ্য অন্যমাত্রার। তাঁর কাছে তা ক্ষমার অযোগ্য।
888sport live football-সংস্কৃতির জগতে তিনি কিন্তু নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন একেবারে সামনে থেকে। শেষ পর্যন্ত তা থেকে তিনি বিরতি নেননি। কালি ও কলম তার উজ্জ্বল নিদর্শন। নতুন-নতুন উদাহরণ যোগ হয়েছে তাতে অসংখ্য। দেশে। বিদেশেও। তাঁর গোটা জীবনটাই তো এক সৃষ্টিশীল মানবমনের উদ্বোধনের উৎসব। তার বন্দনা গাই।
কারো জীবনাবসানে আমরা সাধারণত পরম আকুতিতে প্রার্থনা জানাই, তাঁর যেন শান্তিলোক অক্ষয় হয়। ওই শান্তিলোকের কোনো কল্পনা আমি করতে পারি না। তবে জানি, এই মর্ত্যভূমিতে তাঁর কীর্তিমূল্য অক্ষয়। এই প্রাণবান সত্য আমরা যেন কোনোকালে বিস্মৃত না হই।