এক ও বিবিধ : মুর্তজা বশীর

জাফরিন গুলশান

‘Man! How fine! What a proud sound it has!’ ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত এ-লাইনটি অনেক সংগতিপূর্ণ মুর্তজা বশীরের একক প্রদর্শনীর সামগ্রিক বিশ্লেষণে। পঞ্চাশের দশকে যাত্রা শুরু করা 888sport live chatী মুর্তজা বশীর 888sport appsের সংস্কৃতি অঙ্গনে ব্যতিক্রমী চরিত্র। নানামুখী তীব্র কৌতূহল ও নিরীক্ষাপ্রবণ মুর্তজা বশীর কোনো বিশেষ 888sport live chatরীতিতে নিহিত থাকেননি। বিভিন্ন মূর্ত ও আধাবিমূর্ত প্রকরণ থেকে সম্পূর্ণ বিমূর্ততার মধ্যে সঞ্চারমান থেকেছেন। কিন্তু বিষয় হিসেবে বস্ত্তগত ও নির্বস্ত্তগত ভাবনার স্থানে মানুষকেই তাঁর প্রধান মনোযোগের কেন্দ্র করেছেন। কারণ, মুর্তজা বশীর নিজেকে একজন সমাজ ও রাজনীতিসচেতন 888sport live chatী মনে করেন।

গ্যালারি কায়ায় ১৯৫৪ থেকে ২০০৪ সালের ৪৬টি 888sport live chatকর্ম নিয়ে একক প্রদর্শনীটি নানা আঙ্গিকে গুরুত্বপূর্ণ।

গ্যালারির প্রথম ঘরের দেয়ালে ঝুলছে তেল-প্যাস্টেলে আঁকা ‘রিভিউ সিরিজ’। বিবিধ ভঙ্গিমা ও অভিব্যক্তিতে বৈচিত্র্যময়ই এই 888sport promo code-চিত্রমালা। মুর্তজা বশীর ইতিপূর্বেও 888sport promo codeদের নিয়ে কাজ করেছেন। এ-সিরিজের সূত্রপাত ১৯৬২ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত করা ফিগারেটিভ পেইন্টিং কিংবা ১৯৯২-৯৩-তে 888sport promo code প্রতিকৃতি করার মধ্য দিয়ে। মুর্তজা বশীরের ‘রিভিউ সিরিজে’র 888sport promo codeরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির কিংবা উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরানার। গাঢ় ও শক্তিশালী রেখার প্রাধান্য চিত্রগুলোতে কর্তৃত্ব করছে। জোরালো ও চড়া রঙের ব্যবহার এবং মূল ফর্মের গঠনগত সরলীকরণ ঘটেছে। অনেক বড় টানা চোখ, ঠোঁট কিংবা গালের গড়ন ঠিক বাস্তবিকের সরাসরি অনুসরণ নয়, খানিকটা স্বাধীন-স্বতন্ত্র। ফভিজম ও কিউবিজমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এক আমেজ তৈরি করেছে। অন্তত যাঁরা 888sport live chat-ইতিহাস পাঠ করেছেন, তাঁরা বিষয়টি অবগত হতে পারেন। আবার 888sport live chatী নিজেও নিজেকে কিউবিজম, বিশেষত পিকাসো, দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে করেন। বতিচেল্লি, মাতিস, মদিগলিয়ানি, ভ্যানগঘ – সবসময়ই মুর্তজা বশীরকে অনুপ্রাণিত করেছে। মুর্তজা বশীর অতীত ও ইতিহাস পাঠ করেন বর্তমানকে বুঝতে চান বলে। এভাবেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্যাস্টেলে আঁকার প্রথম অভিজ্ঞতা ঘটেছিল ১৯৫৪-তে, যখন তিনি কলকাতার আশুতোষ মিউজিয়ামে আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশনের ওপর কোর্স করছিলেন। পরবর্তীকালে এ-মাধ্যমে আর কাজ করেননি। সবসময়ই তেলরঙে কাজ করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডাক্তাররা তাঁকে তেলরঙে কাজ করতে বারণ করেছেন। তাই আবারো প্যাস্টেল মাধ্যমে ফিরে আসা। এ-মাধ্যমের নতুন সিরিজের 888sport promo codeচিত্রগুলোতে মুর্তজা বশীর দিয়েছেন এদেশের লোকজ চিত্রের রস। একধরনের আনাড়িপনার সহজ আকর্ষণ। যদিও পুরোপুরি ঠিক তাও নয়। বরাবরের মতোই পশ্চিমের 888sport live chatীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত, কিন্তু নিজ জাতীয়তাবোধ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের মিশেলে জন্ম হয়েছে নতুন সিরিজটির।

পঞ্চাশের দশকের অনেক 888sport live chatীর মতোই মুর্তজা বশীর ইউরোপে পড়তে যান। যখন ফিরে আসেন দেশে, তখন থেকেই পশ্চিম ও প্রাচ্য এবং এদেশীয় একান্ত 888sport live chatশৈলী নিয়ে নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিকাশ ঘটাতে থাকেন নব্য ফিউশনে নির্মিত আলাদা চিত্ররীতির। আসলে পঞ্চাশের দশককে আমাদের 888sport live chatকলায় আন্তর্জাতিক 888sport live chatের প্রভাব ও লক্ষণসমূহের উন্মেষের ক্রান্তিকাল ধরা হয়। ওই সময়ের অন্য যে কোনো 888sport live chatীর ছবি বিশ্লেষণ করলে এমন এক রূপের দেখা মেলে।  মুর্তজা বশীরের রেখাচিত্র অর্থাৎ ড্রইংগুলোর মধ্যে যেগুলো সাম্প্রতিক সময়ে আঁকা, সেগুলো খুব সরল ও পরিষ্কার রেখায় আঁকা প্রতিকৃতি। রেখার মিনিমাইজেশন বা সংক্ষেপায়নে প্রতিকৃতিগুলোর অভ্যন্তরীণ অভিব্যক্তি তীব্রতরভাবে বেরিয়ে এসেছে। মডেলদের কেমন বয়স, কেমন উচ্চতা, কেমন স্বাস্থ্য – কিংবা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য – এসব বিষয়ও প্রকাশ পেয়েছে এ-সিরিজে। ড্রইংয়ের ওপর উচ্চমার্গের দক্ষতা না থাকলে এত সরলীকরণের মধ্য দিয়ে সঠিক অনুপাত ও পরিপ্রেক্ষিতকে উপস্থাপন করা অসম্ভব। অন্য ড্রইংগুলোর মধ্যে দেশে ও দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় করা বিভিন্ন বন্ধুর প্রতিকৃতি রয়েছে। ১৯৫৬ সালের তরুণ কাইয়ুম চৌধুরীকে আমরা দেখি মুর্তজা বশীরের ড্রইংয়ে। তাঁরা বন্ধু ছিলেন। অধিকাংশ ড্রইং কলমে করা, অনুশীলনধর্মী কিছু পেনসিল ড্রইংও পাওয়া যায়। নানা সময়ের ছবি নিয়ে এ-ধরনের কালেকশনধর্মী প্রদর্শনীর গুরুত্ব এই যে, এটি প্রকৃতপক্ষে একজন 888sport live chatীর চর্চা বেড়ে ওঠার বয়ান ছাড়াও সময়ের ঐতিহাসিক দলিলের মতো প্রতিভাত হয়।

মুর্তজা বশীরের কোলাজগুলো এক অর্থে পূর্ণাঙ্গভাবে তাঁর অনুসন্ধানী বিশ্লেষণাত্মক ও সমাজসচেতনতার প্রমাণ। খুব অল্প বয়সে বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, জেল খাটা, বিদেশে পড়তে যাওয়া, বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়তা, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র পুত্র হয়েও নিজেকে বাবার খ্যাতির ছায়ামুক্ত করতে নাম পরিবর্তন, সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা, 888sport live chat-নির্দেশনা দেওয়া, 888sport alternative link লেখা, গবেষণা পুস্তক মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশী সুলতান এবং বাংলার তৎকালীন সমাজ প্রকাশ, মুদ্রা ও টাকা সংগ্রহ ইত্যাদি বিবিধ মাত্রায় উচ্চ সৃজনশীল ব্যক্তি মুর্তজা বশীর। যা তাঁর ভালো লেগেছে তা-ই করেছেন। যুক্তিবিহীন ছবি তিনি আঁকেননি। তাই ছবিকে পণ্যও করতে পারেননি। এরকম একজন 888sport live chatীর চিত্রকর্ম সহজ মনে হলেও সহজ হয় না। কোনো রং-রেখা আলাদাভাবে ব্যবহার না করে শুধু কাগজের টুকরো জোড়া দিয়ে তৈরি করেছেন কোলাজগুলো। ‘হোয়াট মেকস অ্যা ক্রিয়েটিভ থিংকার-১৯৯০’, ‘আর্স্টিস্ট অ্যান্ড ট্রান্সমিটেড এনার্জি-১৯৯১’, ‘লিবার্টি নাউ-১৯৯১’, ‘বার্থ অব ভেনাস – হোমেজ টু বতিচেল্লি-১৯৯০’ কোলাজগুলো অসাধারণ। বর্তমানের নানা বিষয় উঠে এসেছে এগুলোতে। ১৯৯১-তে ‘নো মোর ওয়ার’ শিরোনামে কোলাজ সিরিজটি ইরাক যুদ্ধের অবস্থাদৃষ্টে করা।

‘ওমেন-১ : ১৯৯০’-এ করা কোলাজটিতে খুব মোহনীয় ভঙ্গিমায় ড্রইং করা 888sport promo codeর অন্তর্বাসে করা কোলাজ। ইরোটিসিজমকে উতরে গিয়ে সমাজে 888sport promo codeজীবনের নান্দনিক ও বীভৎসতার এক সত্য অবস্থার বয়ান দিয়েছে।

মুর্তজা বশীর কখনো একই রীতিতে আবদ্ধ থাকতে চাননি বলেই বৈচিত্র্যময় তাঁর সৃষ্টি। একঘেয়েমি লাগে না। একজন সৃষ্টিশীল গবেষকধর্মী 888sport live chatীর দৃষ্টি তো বৈচিত্র্যপূর্ণভাবেই সমাজকে এগিয়ে দেয়। এ-প্রদর্শনীর আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, 888sport live chatকর্ম বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ। 888sport live chatী কিছুদিন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন, সেখানে খরচ বাবদ বেশ কিছু ঋণ হয়েছে তাঁর। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, 888sport live chatীদের জীবনে এরকম পর্যায় খুব সাধারণ ঘটনা। 888sport live chatীরা অনেক ক্ষেত্রেই যথাযোগ্য সম্মান পান না সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। তাঁরই পরিণাম হয় এরকম। প্রদর্শনীটি ১২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছে।