এক যুবক কবি ভিড়ের আড়ালে দূর থেকে বুদ্ধদেব বসুকে দেখছেন। মাঝখানে তাঁর দৃষ্টি ঢেকে কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় ঘণ্টি বাজিয়ে ট্রাম চলে যায়, কত হাজাররকম ব্যস্ততা ফুলেফেঁপে ওঠে। যুবক শুধু দূর থেকে দেখে যান স্বনামধন্য কবি ও সম্পাদক বুদ্ধদেব বসুকে – নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতে কোথাও যেন সংকোচ হয় তাঁর। … এই একই ঘটনার অন্য এক বয়ান জানা যায় এর বহুদিন পর সেই যুবকেরই স্বীকারোক্তিমূলক একটি লেখা থেকে – ততদিনে অবশ্য সেই যুবকও বৃদ্ধ হয়েছেন। আর অন্ধকার এক ঘরের কোণে খাটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে, জানলার গ্রিলে বাঁধা টেবিল-ল্যাম্পের মাথা রহস্যজনকভাবে পাতার ওপর ঝুঁকিয়ে তাঁর লেখাটি পড়তে পড়তে দৃশ্যটি চোখের সামনে ঘটতে দেখছি আমি। তখন আমিও সেদিনের সেই যুবকই যেন বা – সেই লাজুক, ভিড়ের মধ্যে একা হয়ে থাকা এক যুবক – একলব্য বোধহয় আমার নাম। সেদিনের সেই যুবক কিংবা আজকের সেই লেখক – আমারই দ্রোণাচার্য তিনি – তাঁর নাম শ্রী শঙ্খ ঘোষ। মহাভারতের গল্পের মতো অন্যায়ভাবে কোনো অর্জুনকে রক্ষা করার দায় নেই তাঁর – দুজনের মধ্যে অমিল বলতে এইটুকুই। যাঁর কাছে কখনো যাবার প্রশ্ন কিংবা প্রস্তুতিও নেই, তাঁর কাছ থেকেই নিরন্তর 888sport app download apkর শিকড় খুঁজে নেবার প্রত্যাশা যেন বেড়েই চলে আমার – এক অলীক সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে টলটলে জলে প্রকৃত 888sport app download apkর মুখ দেখতে চাইছি আমি! আশ্চর্য এই যে, সেই নিভৃত পাঠের অনেক বছর পরের অন্য আর একদিন, দরজা অবধি এগিয়ে দেবার সময় স্বয়ং তাঁর কাছ থেকেই কথায় কথায় বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে তাঁর সেই দেখা না-দেখার ঘটনাটা শুনতে পাব আমি। এ কি সত্যি, জুতো পায়ে গলাতে গলাতে আমি ভাবি – কতদিনের পুরনো সেই ঘটনা দ্বিতীয়বার এত দীর্ঘ বিরতিতে বলার সময়ও তার বর্ণনা হুবহু এক! এও কি সত্যি, অন্য আর এক দিক থেকে আবারো ভাবি – হঠাৎ কী এমন ঘটে যেতে পারে যা অন্ধকার আচ্ছন্ন আমার সেই একান্ত পাঠচক্র থেকে সন্ধেরাতের আলোয় একেবারে তাঁর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে আমাকে!
সাক্ষাৎকার যে-কোনো প্রকৃত কবির দ্বিতীয় একটি স্টান্স – যেনবা পুনর্জন্ম। কথায় কথায় কত নতুন দিকে আলো এসে পড়ে – হতে পারে তা তাঁর নিজেরই 888sport app download apkর কোনো অচেনা মুহূর্ত, হতে পারে কোনো 888sport app download apkয় কবির আজানু ডুবে থাকা জীবনের আকস্মিক উদ্ধার। কোনো একটি প্রশ্নের ফুলকি হয়তো রংমশালের মতো জ্বালিয়ে দিয়ে গেল কবিকে! 888sport app download apkর মধ্যে কবিকে খুঁজে নেবার এক নিরন্তর খননও বলা যায় একে। ‘কথার পিঠে কথা’ নামের চওড়া মোটা বইটি তাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি আমি – কোথায় সেই আলোমাখা তীক্ষ্ন প্রশ্নের তীরগুলো – কোথায় তাদের গূঢ়তম অভিযান! পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ আর গান্ধর্ব 888sport app download apkগুচ্ছ – এই দুটি 888sport app download apkবইয়ের প্রশ্ন আর উত্তর মিলিয়ে এই এত বড়ো বইতে মোটে তিন সাড়ে তিন পাতা, তাও একাধিক সাক্ষাৎকার মিলিয়ে! তাঁর দুটি শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য আমাদের আগ্রহ এইটুকুই! না কি দুর্ভেদ্য ভেবে প্রশ্নকর্তারা এড়িয়ে গেলেন! আমি সন্তুষ্ট নই – আমার প্রশ্নোপনিষদের কথা মনে পড়ছে। আচ্ছা, কেমন হয় যদি আমি নিজেই তাঁকে জিজ্ঞেস করি! দেখাই যাক না আমার কথার পিঠে তাঁর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে হয় কি না – কয়েক মাসের তীব্র অনুশীলনের শেষে যেন এক ঘোরের মধ্যে আমার প্রশ্নগুলো শেষ অবধি এক জায়গায় গুছিয়ে ফেলি আমি, আর তাঁর কাছে পৌঁছেও যায় তা। এবার অপেক্ষা – অপেক্ষাই তো সেই ঝরনাতলা!
কিছুদিন পরের কথা। সেদিন বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিলাম বোধহয়, অলোকদার (কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের) ফোন চলে এলো! অন্যদিন হলে তিনি নিশ্চিত বলতেন – দপ্তরের কাজ শেষ হলো? হারুন অর রসিদের মতো এবার নগর পরিক্রমায় বেরিয়েছ বুঝি! আজ ছদ্ম অভিমানে তাঁর গলার স্বর কিছুটা ভারী। প্রথমেই তিনি জানালেন, শঙ্খবাবুর সাক্ষাৎকারের জন্য তাঁকে একবার বললেই তো হতো। তারপরেই রীতিমতো উত্তেজিত শোনায় অলোকরঞ্জনের কণ্ঠস্বর, এইরকম প্রশ্ন তিনি আগে নাকি কারোর কাছ থেকে পাননি! আমি জানি অলোকরঞ্জনের স্নেহ এমনই পুষ্পিত, তাই মুখ দিয়ে কথা সরে না আমার। কিন্তু, কী আশ্চর্য, দেখা হতে এই কথাটা তিনি নিজে থেকেই আমাকে জানালেন যে – কার কাছে রাখি এত কৃতজ্ঞতা! বিস্ময়, বিস্ময় – তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়ে গেল অবশেষে, তাঁর নিজেরই বিবেচনায় যা গভীর এক কথোপকথন। কীভাবে সম্ভব হলো এই জাদুর সেরা জাদু!
শুচিশ্রী রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে আমার হাতে ফোনটা তুলে দেয় একদিন, স্যার অনেকক্ষণ তোমাকে ফোনে চেষ্টা করে পাচ্ছেন না, নাও কথা বলো। এর মধ্যে অবশ্য কালি ও কলমে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়ে গেছে। ফোনটা কানে ধরে স্বপ্নতাড়িতের মতো শুনতে পাই তাঁর শিরীষ-ছায়ার মতো ভারী মসৃণ স্বর – আমার নেওয়া সাক্ষাৎকারটি তাঁর বইতে রাখতে চেয়ে আমার ‘অনুমতি’ চাইছেন তিনি! আমার দ্রোণাচার্য – তিনি চাইবেন অনুমতি! তিনি কি জানেন না, এতে আমাকেই কত বড়ো 888sport app download bd দেওয়া হলো! জীবন তোলপাড় করা এমন এক ঘটনা আমার রূপকথার চিলেকোঠায় রেখে দিতে চাই শুধু! কদিন পরেই কলকাতা বইমেলায় বের হয় বইটি। সেবার ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে তাঁর বাড়ি থেকে ফিরেই বইমেলা যাই আমরা – সেই বইটা তো সব থেকে আগে খুঁজে নিতে হবে! দিনটা যেন অন্যরকম একটা দিন, সকালের দিকটা তাঁর জন্মদিনের বিনীত উদ্যাপনে শরিক ছিলাম আমরাও। বইটি হাতে নিয়ে দারুণ এক শিহরণ হয়, কিন্তু সাক্ষাৎকারের শেষে পত্রিকার নাম বা সাক্ষাৎকার গ্রাহক হিসেবে আমার নাম কোথায়! কেমন অবশ হয়ে যায় আমার সমস্ত শরীর – আবার ছুটে যাই প্রকাশনা দফতরে। তিনি নাকি বলেননি কালি ও কলম পত্রিকা অথবা আমার নাম কোথাও রাখার কথা! তা হয় নাকি – শুচিশ্রী রীতিমতো অবিশ্বাসের সুরে বলে – কলকাতা কালি ও কলমের উদ্বোধনী 888sport free betয় ছাপা হয়েছিল এই সাক্ষাৎকার – আমাদের পত্রিকা বা তোমার, কারোর কোনো নামই থাকবে না! স্যার এমন নির্দেশ দিতে পারেন বলে মনে হয় তোমার? এখনি তাঁকে একটা ফোন করো। বইমেলা থেকে ফোনে যোগাযোগ করা খুব সহজ নয়, তবু একসময় তাঁকে ফোনে পেয়ে যাই। বিষয়টা স্থিরভাবে শোনেন তিনি – সারাদিনের শ্রান্তি লেগে আছে যেন গলায়, অথবা দীর্ঘ রোগভোগের পর সবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন ঝরাপাতার মতো কণ্ঠস্বর তাঁর – মনে ভার নিয়ে ঘরে ফিরে আসি আমরা। মাঝখানে একটা দিন পার হয়েছে সবে, ৭ তারিখেই রাতের দিকে তাঁর ফোন আসে – বইটির ‘বিপণন’ আপাতত বন্ধ রাখা হবে – তিনি নিজে গিয়ে কথা বলে এসেছেন প্রকাশকের সঙ্গে । ত্রুটি সংশোধন করা মাত্রই বইটি আবার বইমেলায় পাওয়া যাবে। আমি যেন কোনোভাবে হতাশ না হই – এই ছিল তাঁর সংক্ষিপ্ত বার্তা। পরের রবিবার সুন্দর একটা কাগজের খামে মুড়ে উপহার হিসেবে বইটা আমাদের হাতে তুলে দিলেন তিনি। একান্তে এই মোড়ক খুলতে হবে, স্যার কী লিখেছেন দেখতে হবে, এই ভেবে বাড়ি ফিরে বইটি বের করতেই পাথর হয়ে যাই দুজনে – এ তিনি কী লিখেছেন! সামনের রোববারই ফেরত দিয়ে আসতে হবে বইটা, শুচিশ্রী বলে – স্যারকে বলতে হবে নিজের হাতে লেখাটা কেটে অন্য কিছু লিখে দিতে – এই আনন্দের উপহার কোনোদিন কারুকে দেখাতেই পারব না যে! – বইটা এবং শুচিশ্রীর সেই অনুরোধ একই সঙ্গে তাঁর কাছে পৌঁছোয়। আর্জি শুনে মৃদু হাসেন তিনি – যা লেখা আছে তা তো সত্যি! পরের রবিবারেই বোধহয় আমাদের হাতে নতুন উপহারের মোড়ক চলে আসে। আবারো বাড়িতে এসে সেটার মুখ খোলা, আবারো বিস্ময় – সংশোধিত বইটি নতুন একটি শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে এসেছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে হাজির আগের বইটিও – কোথাও তাঁর নিজের হাতের লেখা কেটে বা ঢেকে দেবার বিন্দুমাত্র আভাস তো নেই! এই সময়ের খুব কাছাকাছি একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। একদিন একটি ফোন পাই। একজন জানান ‘শঙ্খদা’ তাঁর সল্টলেকের বাড়ির এক ঘরোয়া সভায় খুব সামান্য কয়েকজনের সামনে 888sport app download apk পড়বেন – আমি সময় করতে পারলে যেন যাই। ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার আলাপ নেই, সভায় উপস্থিতিও রীতিমতো নিয়ন্ত্রিত বলে জানা গেল – তাহলে আমি কীভাবে আমন্ত্রণ পেলাম! এর উত্তর আজো আমি জানি না!
একদিন কোনো একটা দরকারে অফিস থেকে তাঁকে ফোন করেছি – আমাকে রীতিমতো অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো, কী পড়ছি এখন? আমি কী-ই বা জবাব দেব, তিনিই ওই প্রান্ত থেকে বললেন, তোমার এলিয়টের 888sport app download apk latest version পড়ছি। এলিয়টের দীর্ঘ এবং দুরূহ 888sport app download apk ‘ফোর কোয়ার্টেটসে’র একটি পর্বের 888sport app download apk latest version কলকাতা কালি ও কলমে প্রকাশিত হয় এর কিছুদিন আগেই। তিনি যদি বলেন, ভালো হয়েছে, আমি নিশ্চিত জানি, তিনি ঠিক সেটাই বলতে চান। তাঁকে তো বলতে শুনেছি, আমার ‘না’ মানে ‘না’। একটা গল্প বলি। একবার এক ভদ্রলোক কোনো এক সভার আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম ছাপিয়ে কার্ড দিতে এসেছেন। কীভাবে কখন তাঁকে পৌঁছোতে হবে, বিশদে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বললেন, আমি কি উপস্থিত থাকব বলেছিলাম? ভদ্রলোক নানান কথায় তাঁকে বাধ্য করতে চাইছিলেন – তাঁর শুধু একটাই কথা – আমি কি উপস্থিত থাকব বলেছিলাম? শেষে বোঝা গেল সভায় থাকবেন এমন কোনো আশ্বাস তিনি দেননি। যাই হোক, হচ্ছিল এলিয়ট 888sport app download apk latest versionের কথা। তখন বোধহয় সেপ্টেম্বর মাস, আমার ভয়াবহ কাজের ব্যস্ততা – তাঁর কাছে যাওয়াও সম্ভব হয়নি বেশ কিছুদিন। দুর্গাপুজোর ঠিক আগের এক রবিবারে পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর দিনে আবার দেখা হলো। 888sport app download apk latest version তাঁর ভালো লেগেছে জেনে সাহস বেড়ে গেল আমার। কথায় কথায় তাঁকে বলি, এলিয়টের দুটি দীর্ঘ 888sport app download apk ‘দি ওয়েস্ট ল্যান্ড’ এবং ‘ফোর কোয়ার্টেটস’ 888sport app download apk latest version করেছি কিছুদিন হলো। এখন টীকা তৈরির কাজ করছি – তিনি কি একবার দেখে দেবার সময় পাবেন? সবাই জানেন, সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত নামের 888sport app download apk latest versionের একটি প্রামাণ্য বই তিনি এবং অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন বহুকাল আগেই, আর সেখানে তাঁর নিজের 888sport app download apk latest versionেই তো ‘ফোর কোয়ার্টেটসে’র একটি পর্ব ছাপা হয়েছিল! আমার অনুরোধে তিনি মৃদু হাসেন, বেশ কিছুটা সময় লাগবে কিন্তু! তাঁর দেখাশোনার কাজটা শুরু হয় এই কথাবার্তার আরো কিছুদিন পরে আর কাজটা চলতে থাকে আরো চার বা সাড়ে চার বছর একটানা – আমার বদ্ধ জীবনে সে এক বসন্তবাগান! কবে তাঁর কাছে যেতে হবে তিনি জানিয়ে দিতেন, সময়টা প্রায় প্রতিবারই সন্ধে সাড়ে ৬টা থাকত। সাড়ে ৯টার কাছাকাছি সময় অবধি কাজ চলত। আমাকে খুঁজে নিতে হতো টাইপস্ক্রিপ্টের পাশে তাঁর দাগ দেওয়া পেন্সিলের ছোট ছোট বিন্দু কিংবা বৃত্তগুলো (মাঝখানে ফাঁকা)। কোথাও কোনো শব্দ বা পরামর্শ, কিছুই লেখা থাকত না! প্রতিটি বিন্দুর পাশের পঙ্ক্তিটি পড়ে শোনাতে হতো তাঁকে। দাগ দেওয়ার কারণ কথায় কথায় উঠে আসত। আমি হয় তখনই সিদ্ধান্ত নিতাম, পরিবর্তন করার পর শেষ পর্যন্ত লাইনটা কী হলো তাঁকে পড়ে শোনাতাম, কখনো আবার পরের দিনের জন্য জমানো থাকত কাজগুলো। প্রথমবার পাণ্ডুলিপি খুলেই দেখি ‘ফোর কোয়ার্টেটসে’র ‘বার্নট নর্টন’ পর্বের প্রথম লাইনের পাশেই তাঁর অমোঘ পেন্সিলের দাগ! ফেল করা ছাত্রের মতো বিহ্বল অবস্থা হয় আমার। তর্জমা করার পর আমি তো কিছুটা নিশ্চিন্তই ছিলাম! তিনি স্থির চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে – ভর্ৎসনা তো নয়, যেন এক কৌতুকের আভাস সেই দৃষ্টিতে! এর কারণ কী কিছু পরেই বোঝা গেল। বোঝা গেল এই জন্য বলছি, সত্যি সত্যিই বুঝে নিতে হতো তিনি কোন দিকে যেতে চান – তিনি নিজে তো সিদ্ধান্ত দেবেন না, তাহলে তো পাশে লিখে দিলেই কাজ মিটে যেত – তিনি একটা জানলা খুলে দেবেন শুধু! ‘Time’ শব্দটা ওই যে ঘুরে ঘুরে এসেছে প্রথম পাঁচ লাইনে, কিন্তু শ্রুতির ভারসাম্য আর অন্ত্যমিল বজায় রাখতে আমি ‘সময়’ এবং ‘কাল’ – এই দুটি শব্দকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছি – তাতেই বিপত্তি! তার মানে আমায় যেকোনো একটি শব্দকে বেছে নিতে হবে! এলিয়ট তাঁর প্রায় সমস্ত 888sport app download apkয় ‘Time’ শব্দটির ওপর অশেষ ভর রেখেছেন – তাঁর সারাজীবনের 888sport app download apkভাবনা বা দর্শনকে ছুঁয়ে আছে, ‘Time’ এবং ‘Space’ এই দুটি পরিসর। ‘টাইম’ শব্দটিকে একটি মাত্র কথায় বেঁধে ফেলা কি এতই সহজ! তার থেকে পিছমোড়া করে আমায় জলে ফেলে দিলে ঢের সুবিধা হতো! শুধু প্রথম পাঁচ-সাত লাইন বদলাতেই যে কতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, এখনো ভাবি। কখনো অন্ত্যমিল হারিয়ে যায়, কখনো বাক্যের ভেতরে ধ্বনির মিল! যদি বা এই দুটোকেই কিছুটা গুছিয়ে নেওয়া গেল, ছন্দ গেল নড়ে! আমার তৈরি করা দু-তিন রকম বয়ান থেকে একটি তাঁর অনুমোদন পেল (‘এই যে সময় আর সময় অতীত/ মনে হয় ভাবীসময়ের মধ্যে থেকে যায়/ এবং ভাবীসময় সময় অতীতে রাখা থাকে…’)। এইরকম কত যে পরামর্শ! কখনো হয়তো তিনি বললেন, ‘পাথর’ না বলে ‘পাষাণ’ বলা যায়? ওয়েস্ট ল্যান্ডের ৩৩১ থেকে ৩৫৯ পঙ্ক্তির মধ্যে অন্তত দশবার ‘পাষাণ’ শব্দটাকে ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে – তাতে কি কিছুটা একঘেয়ে শোনাবে না? তিনি বললেন, পড়ো। আমি পড়ে শোনালাম। পড়া শেষে তিনি নিজেই মুলতবি রাখলেন প্রস্তাবটিকে। অতএব পাথর শব্দটাই থেকে গেল সেখানে। এই একই 888sport app download apkয় একটা অংশ হলো, ‘London Bridge is falling down,/ Falling down, falling down’ – আমার 888sport app download apk latest versionের পাশে যথারীতি একটা বিন্দু। আমি জিজ্ঞেস করাতে উনি একটা গল্প বললেন। একবার ইংল্যান্ডে গেছেন। তাঁদের দুজন বন্ধুর নিমন্ত্রণ হয়েছে এক গৃহস্থ পরিবারে। খাবার পরিবেশনের দেরি আছে তখনো। ওয়েস্ট ল্যান্ড 888sport app download apkটি তখন পৃথিবীজুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কখনো বোধহয় গুনগুন করে এলিয়ট থেকে আবৃত্তি করে থাকবেন তিনি, হঠাৎ বাড়ির এক সদস্য বললেন, এটা যে একটা খেলা জানো তো তোমরা? কথাটা তাঁদের জানা ছিল না। একজন অল্পবয়সী মেয়ে তখন পাশের ঘরে তাঁদের নিয়ে যায়। খেলাটা শুরু হবে এইবার। দুটি মেয়ে হাতে হাত জুড়ে একটা খিলান তৈরি করেছে আর তারা ছড়ার সুরে একসঙ্গে গান ধরেছে, লন্ডন ব্রিজ ইস ফ-লিং ডাউন/ ফ-লিং ডাউন ফ-লিং ডাউন … তাদের দুজনের মধ্যের ফাঁক দিয়ে অন্যেরা গলে চলে যাচ্ছে – সেই খিলান ক্রমশই নিচু হতে হতে একসময় খেলোয়াড়দের কোনো একজনকে বন্দি করে ফেলে। যেভাবেই রক্ষা করতে চাও, না থাকার হলে সব সেতু একদিন ভেঙে পড়বেই, আর কোনো সেতু যদি সত্যিই ভেঙে যায় তখন মাঝসেতুর মানুষজন তো বন্দি হয়েই থাকে! ফোর কোয়ার্টেটসের একটি অংশে ছড়ার আদল লক্ষ করে আমি তার বাংলা তর্জমা করেছিলাম, ‘বুড়ো মানুষের জামার হাতায় ছাই/ সেইসব ছাই উড়িয়েছিল দগ্ধ গোলাপরাই/ হাওয়ায় ভাসা ধুলো ধুলো কত ধুলো/ বুঝিয়ে দেয় এইখানে এক গল্প ফুরিয়েছিল …।’ আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং বড়োমাপের একজন কবি সেখানে দু-এক জায়গায় পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন – এক বা দুই শ্রুতি হয়তো যোগ করতে বলেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম, ছন্দে কোনো সমস্যা নেই তবু দু-একটা জায়গা তাঁর কথায় বদলে দিই আমি। কাজটা তাঁর কাছে পৌঁছানোর মাসখানেক পড়ে আবার আমার ডাক পড়ে। এবার ছড়া অংশের পাশে একটি ছোটো দাগ – এটা তো আগে ছিল না! আমি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাতেই তিনি বলেন, আগেরটিই তো বেশ ছিল! সবাই জানেন ওয়েস্ট ল্যান্ড 888sport app download apkটির শেষ চরণে ‘শান্তি’ শব্দটি এনেছিলেন এলিয়ট। কথায় কথায় তিনি জানালেন, সম্ভবত ১৯১২ সালে অধ্যাপক উডস এবং শ্রীমতী উডসের হার্ভার্ডের বাড়িতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। উডস দম্পতির অনুরোধে উপনিষদ থেকে শান্তিপাঠ শোনান তিনি। যুবক এলিয়ট সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এইসব কথা বলতে বলতে হঠাৎ এক মুহূর্ত থেমে যান তিনি – সালটা ১৯১২ বা ১৯১৩, একবার দেখে নিশ্চিত হতে হবে। পরের দিনই তাঁর ফোন পেলাম – ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই ঘটনাটির বিবরণ পাই সমীর সেনগুপ্তের রবীন্দ্রসূত্রে বিদেশিরা বইটি থেকেও। প্রাচ্য দর্শন এবং উপনিষদে এলিয়ট রীতিমতো দীক্ষিত ছিলেন। তবু রবীন্দ্রনাথে প্রভাবিত হয়ে ওয়েস্ট ল্যান্ডে ‘শান্তি শান্তি’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করার সম্ভাবনাও কিছু উড়িয়ে দেবার নয়। যাই হোক এই ঝাড়াই-বাছাই পর্ব শেষ হতে না হতেই প্রকাশকের জিজ্ঞাসা, স্যারকে ভূমিকা লেখার ব্যাপারে আমি বলতে পারি কি না। আমি তাঁকে বেশ কিছু বছর দেখার সুযোগ পেয়েছি। কোনো অন্যায় আগ্রহ কখনো তাঁকে মেনে নিতে দেখিনি। আমার পক্ষে তাঁকে অনুরোধ করা সম্ভব নয়, আমি জানিয়ে দিই। প্রকাশক অবশ্য তাঁর অনুমতি আদায় করে নিলেন। তাঁর বাড়ির ঘরোয়া আড্ডাতেই বইটি প্রকাশ করা হয়। আমি সেদিন পেছনের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফেলে আসা ছ-সাত বছরের দিকে তাকিয়ে আছি, হঠাৎ ডাক পড়ল আমার। তিনি বইটি থেকে কিছু অংশ আমাকে পাঠ করতে বললেন। এইটা তাঁর বিশেষ একটি ভঙ্গি। – এই সময়ে এলিয়ট চর্চার চল খুব যে নেই, সে-কথা তাঁর থেকে আর বেশি কে জানে – তাঁর ভূমিকাতেই তো এর একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়! তবে এত বছর ধরে আমাকে সময় দিলেন কেন? কেন আজ ডেকে নিয়ে বই থেকে পড়তেই বা বললেন – এ তো তিনি বড়ো একটা করেন না – বিস্ময়ের পরে বিস্ময়! বই প্রকাশ হয়ে যাবার পরে যেমন একদিন জানতে চাইলেন, প্রকাশক কিছু বলেছেন তোমাকে? সেদিন বিশিষ্ট কবি একরাম আলি আসরে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মুখেও হালকা এক হাসির পরত। বোঝা গেল প্রকাশক সম্ভবত দুজনের উপস্থিতিতেই কথাটা কোনো সময় বলে থাকবেন। তিনি নিজেই জানালেন তারপর, 888sport appsে বইটিকে ঘিরে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে …
এইভাবে কত যে স্নেহ পেয়েছি তাঁর! আমি ছিলাম রবিবারের সভার নীরবতম সভ্য। তাঁর দিকে সরাসরি তাকাতেও আমার কিছুটা প্রস্তুতি লাগত – জিরাফের মতো নিজের সত্তাকে উঁচু করে তাঁর সামনে তুলে ধরা কি মুখের কথা! অথচ তিনি কতই অনায়াস, ভেতরের ঘর থেকে আসরে ফেরার পথে একদিন যেমন বললেন, দাড়ি রাখবে ঠিক করেছ? শুচিশ্রী কোনোদিন না গেলে তিনি এক সময় জানতে চাইবেনই – আর একজনের খবর কী? শুচিশ্রী সামনে থাকলে সহাস্য মধুর এক জিজ্ঞাসা, গলা কি তোমার এখনো খারাপ? বকলমে, গান শুরু করো। একবার তিনি সবার সামনে শুচিকে জিজ্ঞেস করলেন, অলোকের সঙ্গে তোমার কাজটা কতক্ষণের? শুচি জবাব দিলো, এক ঘণ্টার থেকে কিছু কম। তিনি আবার বললেন, আমাদের হাতে তো সময় আছে। তারপরই সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, শুচিশ্রী একটি অপার্থিব কাজ করেছে। অলোকরঞ্জনের 888sport app download apkয় সুর জড়িয়ে শুচিশ্রী একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। শুচি বলল, স্যার, সিডিটা আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই। তিনি ফিরতি বললেন, আমার কাছে আছে! শুচি ঘাড় নেড়ে বলল, আচ্ছা পরের দিন তাহলে ল্যাপটপটা নিয়ে আসব। তিনি তড়িতে জবাব দেন, সিডি চালাবার ব্যবস্থাও আছে তাঁর বাড়িতে। এইবার শুচি কিছুটা বিহ্বলতা নিয়ে উত্তর দেয়, তাহলে সন্দীপনকে বলছি … কথাটা শেষ হতে না দিয়েই তাঁর প্রতিক্রিয়া, আমি যন্ত্রটা চালাতে জানি – এবার তিনি নিজেই পাশের ঘর থেকে সেটা নিয়ে এলেন!
একবার তাঁর কোনো পুরনো ছাত্রী বিদেশ থেকে দেখা করতে এসেছেন, এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের লেখা ছড়ার ঝুলি থেকে মুখস্থ বলে চলেছেন। তিনি যে বিশিষ্ট এক কবি, কথায় কথায় তাও বেরিয়ে আসছে কিছুটা বোধহীন গরিমায়, সবাই উশখুশ করছে কিন্তু তিনি স্থির হয়ে শুনে যাচ্ছেন। শুচি বারেবারেই বলত, স্যার নীরবতার এক কঠিন ব্রত পালন করে চলেছেন – সত্যিই বোধহয় তাই। আমি গিয়ে সবচেয়ে শেষের সারিতে বসতাম। অন্যদের কথা যখন মন দিয়ে শুনতেন তিনি, তাঁর মুখের আলোছায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। নেহাতই আটপৌরে এই ঘরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একজন মানুষ বসে আছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বের কম্পন কোথাও হয়তো আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে – এই ভালোলাগাটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। ছাত্রজীবনে তেমন কোনো গুরু পাইনি, এই হাহাকার আমার ভেতরে কান পাতলে আজো শুনতে পাই। তাঁর রবিবারের আড্ডার শেষ আসনে বসে আমি শুধু ভাবতাম, সময়টা টাইম মেশিনে যদি বেশ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া যেত! আমার একটি 888sport app download apkর বই একবার তাঁর ভেতরের ঘরে রেখে এসেছিলাম। বোধহয় দুটি মাত্র পর্ব খুলে রেখে বাকিটা স্টেপল করে সঙ্গের চিরকুটে কারণ হিসেবে লিখে আসি, তাঁর দামি সময় নষ্ট না হয়, তাই এই ব্যবস্থা। বাদ দেওয়া পর্বের একটি পর্বে ছিল আমার অনেক আগের লেখা একটি দীর্ঘ 888sport app download apk। একদিন রাতে তাঁর ফোন পেলাম। তিনি যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যে-কোনো কবির কাছে, বিশেষত আমার মতো নিজের লেখালেখি নিয়ে সারাক্ষণ সংশয়ে ডুবে থাকা একজন 888sport app download apk লেখকের কাছে তা একটা লাইফ জ্যাকেট। দীর্ঘ 888sport app download apkটি নিয়েও সেদিন বেশ কিছু কথা হলো। কিন্তু আমি তো নিশ্চিতভাবেই স্টেপল করে দিয়েছিলাম ওই পর্বটাও – কী আশ্চর্য!
অনেকেই তাঁর অসাধারণ রসবোধের খবর জানেন না। একবার বললেন, আমি পড়ে গেছি শুনে অলোক (কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত) কাল ফোন করেছিল। আমরা কিছুটা উৎকণ্ঠা নিয়ে বাকি কথাটা শোনার অপেক্ষা করছি। কী বললে সে জান – প্রশ্ন করলেন আমাদের দিকে তাকিয়ে। আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি দেখে জানালেন, অলোক গেয়ে উঠল, আমার এ দেহখানি তুলে ধরো …
গত বছর জন্মদিনের বিকেলে তাঁকে প্রণাম করতে যাই। তাঁর শরীর তখন ভালো যাচ্ছে না। ভেতরের ঘরে হাসপাতালের মতো একটা বিছানায় কোমর থেকে কিছুটা তোলা অবস্থায় শুয়ে বা বসে আছেন। একজন পরিচারিকা তাঁর দেখাশোনা করছেন। আমরা তাঁকে প্রণাম করতে তাঁর চোখে কত যে স্নেহময় আকুতি ঝরে পড়ল – এত কথা-জাগা সেই চোখ দুটি! এই অসুস্থতার ভেতরেও তাঁর কোনো পুরনো ছাত্রী অথবা আত্মীয়ার সঙ্গে শুচির আলাপ করিয়ে দিতে শুধু এইটুকু বলতে পারলেন, শুচিশ্রী, খুব ভালো গান গায় – মুখে এক শুদ্ধ ব্যথাময় হাসির বিস্তার। কখনো কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তাঁর কাছে যাবেন ভাবলে আমাদের ফোন করতেন বা লিখতেন, গুরুগৃহে যাবে না! আমরা যাবার পথে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নিতাম। শ্রী শঙ্খ ঘোষ তো তাঁরও আচার্য! … আমাদের সেই আশ্রম, সেই গুরুগৃহ, মেধা-মনন ও বোধের সেই নিবিড় ছায়া মাথার ওপর আজ আর নেই – বাঙালি আবার কবে তাঁর মতো মানুষ, তাঁর মতো কবি ও মনীষা খুঁজে পায়, সেই দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। একরামদার কাছ থেকে একবার একটা গল্প শুনেছিলাম, সত্যি ঘটনার সত্যিকারের গল্প। কোনো কারণে তাঁর শোবার ঘরে যেতে হয়েছে একরামদাকে, খুব সম্ভব কোনো বই বা পাণ্ডুলিপি নিয়ে আসতে – টেবিলে চাপা দেওয়া একটি চিরকুটে তাঁর নজর পড়ে। সেখানে এক দুই তিন এইভাবে সতেরো বা আঠারোটা কাজ লেখা আছে, সমস্তই অন্যের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার কাজ, বলাই বাহুল্য। সবশেষে একটি দাগ না-দেওয়া এন্ট্রি – ‘হা, হা, হা’! এই কথাটা ফাঁস করে দিতেই স্যার কিছুটা লাজুকভাবে হেসে উঠেছিলেন, মনে আছে। দাগ না দেওয়া এই অট্টহাসি কি মুক্তির ইচ্ছার কথাই বলে – রাজ্যের দায়দায়িত্ব থেকে, পাহাড়প্রমাণ কাজের থেকে, প্রুফ দেখা আর সভাসমিতির বাধ্যতা থেকে, দেশের বিবেকের কঠিন এক দায়িত্ব পালন করা থেকে, তা কি নিজের মতো করে নিজের দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথাই বলে! উলটো দিক থেকে দেখতে চাইলে এই কি তাঁর আস্তিত্বিক বিষাদ, যেখানে তিনি নিজেই জানেন তেমন মুক্তি কোথাও নেই বাস্তবে! আমার নেওয়া সাক্ষাৎকারের শিরোনাম তাঁর বইতে তিনি আস্তিত্বিক বিষাদ রেখেছেন। তিনি তো জীবনপথিক – পথ যদি বা বেদনার হয়, তবুও। … মনে হয় তাঁর আরো কিছু বলার ছিল, বলা হলো না আর – শেষ দেখা তাঁর চোখ দুটো কোনোদিন ভোলার নয়। সে যে কী ভালোবাসার নীরব স্রোত! প্রণাম তাঁকে যিনি আমার দ্রোণাচার্য। আমি একলব্য না হতে পারলেও তাঁর গৌরব তাতে ভেসে যাবার নয়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.