এক মহান স্থপতির সহকর্মীর অভিজ্ঞতা

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

 

Mazharul Islam

মহা ও মহান স্থপতি মাজহারুল ইসলাম সম্প্রতি সংসারমঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন। নিজের জগৎ স্থাপত্যকলা তথা সুকুমার 888sport live chatের সাধনার জগৎ ও জনগণের মুক্তি আন্দোলনের জগৎ কয়েক বছর আগে থেকেই তাঁকে ছাড়তে হয়েছে বার্ধক্য ও অসুস্থতার দরুন, কিছুটা অভিমান-আহত অবস্থায় ও পরিবেশে।
তিনি শুধু স্থাপত্য888sport live chatে নিবেদিত একজন পেশাজীবী স্থপতিই ছিলেন না, পথিকৃৎ হিসেবে এ-888sport live chatে তৎকালীন অভিজ্ঞতা, উদাসীনতা, রক্ষণশীলতা ও রুচিহীন জাঁকালোতার বিরুদ্ধে লড়ে শুদ্ধ সংস্কৃত স্থাপত্যচর্চায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথ করে গেছেন। তিনি ছিলেন আধুনিকতাবাদী, প্রগতিবাদী – শুধু স্থাপত্য888sport live chatে নয়, সুকুমার888sport live chatের চারুকলা ও 888sport app সকল ক্ষেত্রে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে কোথাও স্থাপত্যবিদ্যার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। বোম্বাই শহরসহ কয়েকটি শহরে নকশাবিদ প্রস্তুত করার স্কুল ছিল। ব্রিটিশ সরকারের বড় বড় স্থাপনার কাজের জন্য ব্রিটেন থেকে মূল স্থাপত্য নকশা আমদানি করা হতো। ভারতবর্ষে প্রতিটি শহরে পাঠান-মোগল আমলে তৈরি মসজিদ, ইমামবাড়া, উপাসনালয়, দুর্গ, সুবেদারসহ উচ্চ রাজকর্মকর্তাদের বাড়ি, সমাধিসৌধ, 888sport sign up bonusসৌধ খুব সামান্য 888sport free betয় ছিল। তার সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের ব্রিটিশ স্থপতিকৃত ভবন যুক্ত হয়, তবে তা আদৌ মোগল স্থাপত্যরীতির প্রভাবমুক্ত হয়ে আধুনিক রীতি সৃষ্টি করতে পারেনি।
888sport appsে ফিরি। 888sport appsে গ্রামে-শহরে পাঠান-মোগল আমলে বা তার রীতি অনুযায়ী পরবর্তীকালে বহু স্থাপত্যকীর্তি বা নিদর্শন মেলে। জমিদার শ্রেণি তাঁদের প্রমোদশালা, উপাসনালয়, কাছারিঘর, সভাস্থল বা বিচারালয় হিসেবে দরবার হল ইত্যাদির জন্য একতলা-দোতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করতেন। তাঁরা স্থানীয় সুদক্ষ অভিজ্ঞ নামকরা মিস্ত্রি বা কারিগরদের নিয়ে কলকাতায় ও প্রদেশের বাইরে অন্য বড় শহর ঘুরে তাঁদের দৃষ্টিতে দর্শনীয় সৌধ দেখিয়ে আনতেন, যাতে তাঁরা 888sport sign up bonus থেকে যথাসম্ভব অনুকরণ করে জমিদারদের নিজ বাড়িতে ভবন নির্মাণ করতেন। জমিদার ছাড়া ব্যবসায় বা নানা পেশায় সম্পদশালীরা জমিদারদের মতোই স্থাপত্যে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তবে তা আবাস ভবন, মসজিদ, মন্দির, প্রবেশ ফটক বা সমাধিসৌধের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামের কৃষি বা কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় নিয়োজিত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিও আধাপাকা ও কাঁচা বাড়িতে স্থাপত্যকলার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন দোচালা, চারচালা, আটচালা অসমতলীয় জ্যামিতিক দৃষ্টিনন্দন ত্রিমাত্রিক খড়ের ছাদ এবং বাঁশের চটি, বেত বা কাঠ দিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় নাতিদীর্ঘস্থায়ী কাজ, ঘরের সিলিং কাজ, ঘরের অভ্যন্তরে গোলার বা বাইরের উঠানের পাশে শস্যগোলার কাজের মাধ্যমে। উত্তরে রাঢ় ও বরেন্দ্র এলাকায় এবং 888sport app টাঙ্গাইলের গড় এলাকায় ক্লে বা আঠালো মাটি ও গোবরপানি দিয়ে মাঝে মাঝে নিকানো প্রায় সাদা রঙের মাটির দেয়ালবাড়িও প্রচলিত ছিল। এমনকি মাটি দিয়ে সীমানা দেয়াল করা হতো Ñ তবে বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচানোর জন্য ওপরে দে য়াল বরাবর দীর্ঘ দোচালা খড়ের ছাদ দেওয়া হতো। এমনি মাটির দেয়াল ব্যবহার করে দোতলা বাড়িও ছিল। আরো ছিল ইটের চেয়ে পাতলা করে পোড়ামাটির সুন্দর প্রোফাইলের আয়তাকার টাইল বা টাইলের ছাদের কাজ। কাঠের সলিড বা খড়খড়িযুক্ত দরজা-জানালা ও খুঁটিতে নানা অলঙ্করণ করা হতো। জানালায় নানা রঙের ছোট কাচ বসানোর ব্যবহারও ছিল। আরো ছিল নানা ছবি-অঙ্কিত টেরাকোটা দিয়ে দেয়ালগাত্রে অলংকরণের কাজ।
১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান আমলে অবাঙালি 888sport live chatপতিদের দাপট শুরু হয় 888sport appsের পূর্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে। বিশ্ববিদ্যালয়, রেলওয়ের অধীনে বিভিন্ন ভবন, বৃহৎ মসজিদ,কল-কারখানা, 888sport live chatপতিদের আবাস ভবনের ডিজাইনের কাজ অবাঙালি পুঁজিপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। কয়েকটি হাতেগোনা প্রতিষ্ঠান দেশের স্থাপত্য কাজ দখল করে নেয়, যেগুলোর মধ্যে ছিলেন থারিয়ানি পরিবার, তাজ উদ্দীন, এম ভাসানী, পিরিয়ানী প্রমুখ তথাকথিত স্থপতি। তাঁরা কেউ ছিলেন প্রকৌশলী, কেউ ছিলেন ব্রিটেন থেকে কোনো ডিপ্লোমাধারী। তাঁরা সমঝদারদের দৃষ্টিতে মর্যাদা লাভ করেননি, কারণ তাঁরা আদৌ কোনো চারুকলাবিদ নন। শুধু ভবনের অভ্যন্তরীণ বা সাইটে স্থাপনা পরিকল্পনার ব্যবহারিক শর্ত বা নিয়মকানুন নিয়েই তাঁদের শিক্ষা ও সে-ভিত্তিতে যোগ্যতা মূল্যায়ন। এই অবাঙালি স্থপতিগণের রেখে যাওয়া ‘কীর্তি’ আমাদের জন্য একটি বোঝা। বহু অবাঙালি 888sport live chatপতি বাসভবন করেছেন বিরাট কংক্রিটের ঢালু ছাদ ব্যবহার করে। থারিয়ানি রেখে গেছেন বিরাট বায়তুল মোকাররম মসজিদ, যা যে-কোনো যুগের জন্য অতি নিম্নমানের মসজিদ স্থাপত্যের কাজ। ভাসানী সৃষ্টি করেছেন একেবারে সাদামাটা ঢঙে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভবন ও বিরাট বিরাট ছাত্রাবাস। পিরিয়ানী রেখে গেছেন কার্জন হলের উত্তরে একটি 888sport apk ভবন (অধুনা এর facade-এর ওপর দৃষ্টিনন্দন আবরণী দেওয়া হয়েছে) নতুন সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিংয়ে পাকিস্তান আমলে জহুরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন কর্তৃক নির্বাচিত কোনো অখ্যাত স্থপতি প্রতিষ্ঠানের কীর্তি। এই বিরাট সৌধের ডিজাইন সুযোগ্য স্থপতির হাতে ন্যস্ত না করাটা হয়েছে ক্ষতির কারণ, যা দীর্ঘকাল সহ্য করতে হবে।
পাকিস্তান আমলে মাত্র একজন বাঙালি ছিলেন, যিনি অবাঙালি তথাকথিত স্থপতিদের মতো স্থাপত্য পেশায় ‘ব্যবসা’ করতেন। দেশ বিভাগের আগে তিনি কলকাতায় অবস্থিত দালানকোঠা নির্মাণ পেশায় নিয়োজিত BIRDS & Co বা JESSOP & Co বা এ-ধরনের কোনো নামের এক ব্রিটিশ ফার্মের নকশাবিদ হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং দেশ বিভাগের পর 888sport appsে আসেন। নাম তার এম এস জাফর। বাড়ি কুচবিহার। সেই সূত্রে ইসলামিক সংগীতসম্রাট আব্বাসউদ্দীন ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একই সূত্রে তৎকালীন বিখ্যাত সার্জন ড. আসিরুদ্দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। তাঁর আনুকূল্যে জাফর সাহেব পাকিস্তান আমলে বিরাট দৈর্ঘ্যরে কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্থাপত্যকর্মের দায়িত্ব পান। বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক জিপি হাসপাতাল), যার মূল অংশ তৎকালীন অভিজাত হোটেল শাহবাগকে সম্প্রসারণ ও সম্মুখদৃশ্য নবায়ন করে নির্মাণ করা হয়, এরও দায়িত্ব পান জাফর সাহেব। জাফর সাহেবের স্থাপত্য ডিজাইনের আরেকটি কাজ হলো 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝঢ়ড়ৎঃং ও ঝরিসসরহম চড়ড়ষ ঈড়সঢ়ষবী। তিনি স্থাপত্য পেশায় নিজের ‘জুড়ে বসা’ অবস্থানের দরুন যে-বিবেকদংশন বা অপূর্ণতা বোধ করতেন তা মোচন করেছেন কন্যা ওয়াজেদা জাফরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত স্থপতি হিসেবে উত্তীর্ণ করিয়ে। কন্যা ও জামাতা, যিনি একজন স্থপতি বা পরিকল্পনাবিদ, বর্তমানে তাঁরা বিদেশে বসবাস করছেন।
পাকিস্তান আমলে সরকারি কাজের স্থাপত্যকর্মের জন্য দায়িত্বে কোনো Department ছিল না। | Public Works Department (PWD)-এর অধীনে Directorate of Architecture ছিল। পাকিস্তানে স্থাপত্যে ডিগ্রি শিক্ষাদানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় চুক্তিভিত্তিতে বিদেশ থেকে Directorate-এর প্রধান হিসেবে স্থপতি নিযুক্ত করা হতো। তার অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দেশীয় নকশাবিদ স্থাপত্যনকশা প্রস্তুত করতেন। PWD-এর অধীনে প্রকৌশলীরা প্রকৌশল-নকশা প্রস্তুত করতেন ও টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ ও তাদের নির্মাণ কাজ তত্ত্বাবধান করতেন, যে-নিয়ম এখনো চালু আছে। তবে Architecture-এর জন্য পৃথক Department হয়েছে। ১৯৬২ সালে BUET প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এর স্নাতক স্থপতিরাই এতে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৬০-এর দশকের প্রথমদিকে ফিরে যাই। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম East Pakistan PWD-এর অধীনে Directorate of Architecture-এর প্রধান স্থপতি কর্নেল আর মেক’লে নামক চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এক ব্রিটিশ ব্যক্তির অধীনে দ্বিতীয় অবস্থান থেকে কাজ করেছেন ও স্থাপত্যকলায় প্রায় ‘অশিক্ষিত’ মেক’লের কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতেন। মেক’লে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের সদস্য পদবিধারী ছিলেন বটে; কিন্তু তিনি স্থাপত্যশাস্ত্র কিছুই জানতেন না বলা চলে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা রণাঙ্গনে কৃতিত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করায় যুদ্ধাবসানে তাঁকে ‘888sport app download bd’ হিসেবে ARIBAপদবি দেওয়া হয়। স্থপতি হিসেবে তাঁর অযোগ্যতার প্রমাণ তাঁর ‘কীর্তি’ নয়তলা সচিবালয়, যা এমনকি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরনো তিনতলা ভবনের দর্শনযোগ্য স্থাপত্যের তুলনায় একেবারে সাদামাটা। যা হোক মাজহারুল ইসলাম সংগত কারণেই মেক’লেকে একেবারে সহ্য করতে পারতেন না। তিনি সরকারি কাজের সম্ভবত বাইরে তখনকার দিনে Institute of Fine Arts বা সাধারণ মানুষের ভাষায় আর্ট কলেজের স্থাপত্য ডিজাইন ও লে-আউট করেন। পুরকৌশল ডিজাইনের কয়েকটি তৎকালে নতুন ধরনের element-এর কাজে PWD-এর প্রধান প্রকৌশলীর সুপারিশে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনি পাবলিক লাইব্রেরি ভবনের কাজ করেন। এর পরবর্তী কাজ (বেসরকারি পর্যায়ে) Bangladesh Council of Scientific and Industrial Research (BCSIR)  বা সাধারণের ভাষায় সায়েন্স ল্যাবরেটরিজের কয়েকটি চারতলা বিশিষ্ট বিরাট আয়তনের গবেষণাগার ভবন। তখন ইঈঝওজ-এর শীর্ষ পদে ছিলেন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক ড. কুদরাত-এ-খুদা। তাঁর সঙ্গে মাজহারুল ইসলামের পিতা সরকারি কলেজে গণিতের অধ্যাপক উমদাতুল ইসলামের ভালো পরিচয় ও বন্ধুত্ব ছিল। তাছাড়া উদীয়মান তেজি সেকালে একমাত্র বাঙালি স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নাম শুনেছেন ও পরে পরিচয় হয়। আমি দেখেছি কুদরাত-এ-খুদা ইসলাম সাহেবকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। সরকারি সময়ের বাইরে বাড়তি সময়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বসেই ইসলাম সাহেবকে স্থাপত্য কাজ করার সুযোগ করে দেন। এ প্রকল্পে সকল পুরকৌশল কাজের দায়িত্ব ইসলাম সাহেব আমাকে দেন।
এর দু-এক বছর পরের কথা। রিকশা দিয়ে যাচ্ছি, ইসলাম সাহেব গাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন। যেই দেখা তিনি গাড়ি থামিয়ে আমি কী করছি জিজ্ঞাসা করলেন। আমি আমার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সে লোকসান যাচ্ছে বলাতে তিনি বললেন, চলুন, একসঙ্গে উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। যে-কথা সেই কাজ। আমার ফার্মের অফিস তখন ছিল ১০৪নং মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত গ্লোব চেম্বার্স ভবনের চারতলায়। সেখানেই আপাতত অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হলো। অফিসের পুরো জায়গায় একটি বিরাট হল। দেয়ালের কাছে দক্ষিণের জানালা ঘেঁষে কয়েকটি টেবিল, তাছাড়া সব খালি। খুব সুবিধা হলো। তখন কোনো নাম দেওয়া হয়নি। ১৯৬৩ সাল। কনস্ট্রাকশন ফার্ম গুটিয়ে ফেলার আগে যে এক বছর সময় লাগে সে-কাজ চলছে। ইসলাম সাহেব তাঁর স্থাপত্য কাজ করে যাচ্ছেন। শুরুতে আর্থিক বিনিয়োগের অধিকাংশ বহনের জন্য ধনাঢ্য প্রকৌশলী আজিমুদ্দিন আহম্মদকে পাওয়া যায়, যিনি আমার চাচাশ্বশুর, সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ছেলে আজমল হায়াত আহমদ, পরে বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক, এখন প্রয়াত। ইসলাম সাহেব, আমি ও তিনি এই তিনজন অংশীদার মিলে যাত্রা শুরু করি। অংশ ইসলাম সাহেব চল্লিশ, আমি তিরিশ ও তিনি তিরিশ ভাগ- এ নিয়ে আমাদের যাত্রা। ছয়-সাত মাস পর মাজহারুল ইসলাম খুঁতখুঁত শুরু করলেন যে, আজিমুদ্দিন সাহেব প্রকৌশলশাস্ত্র ভুলে গেছেন, অতএব তাঁকে কোনো পেশাগতভাবে উৎপাদনশীল কাজে লাগানো যাবে না। কয়েক মাস ইতস্তত করার পর তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।
মাজহারুল ইসলাম সাহেবের কাছে বহু গুণী 888sport live chatী দেখা করতে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিশেষ করে পটুয়া কামরুল হাসানের সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের ফার্মের নাম রাখা হয় বাস্তুকলাবিদ। আমরা দুজন অংশীদার। ইসলাম সাহেব ষাট ভাগ ও আমি চল্লিশ। বাড়িভাড়া পাওয়া গেল বাগানবাড়ি পরিবেশে ছবির মতো সুন্দর এক বিঘা জমি। পেছনে একতলা লম্বা দালান পুরনো স্টাইলে নির্মিত, পূর্বপাশে পুকুর। বাড়ির নাম ফরহাত মনজিল, ৩নং পরীবাগ। মজার ব্যাপার, আমাদের অফিসের দক্ষিণের রাস্তায় লাগা দক্ষিণেই পরীবাগের পির সাহেবের আস্তানা। কত বিচিত্র ভক্ত-মুরিদ পির সাহেবের কাছে দোয়া-খয়রাত নিতে আসতেন তা গুনে শেষ করা যাবে না।
যে-বাড়ি ভাড়া নেওয়া হলো তার মালিক ফরহাত বেগম। খাজা নাজিমুদ্দিনের ভ্রাতা খাজা শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী। দক্ষিণে বিরাট বাগান ছিল সবুজ ঘাসে মোড়া। মাঝে মাঝে গুল্মজাতীয় ফুলগাছ। মাঝারি আকারের গাছও ছিল কয়েকটি, যার মধ্যে কামিনী ফুল ও শরিফা ফলের কথা মনে পড়ে। বাগানের মধ্য দিয়ে অফিসে প্রবেশের জন্য পিচের রাস্তা ছিল। মূল ভবনের সামনে গাড়িবারান্দাও ছিল। দক্ষিণে লম্বা বারান্দার দুই প্রান্ত দুই বড় ঘর (বোধহয় বেডরুম ছিল) সেগুলি হলো ইসলাম সাহেব ও আমার কামরা। ইসলাম সাহেব পূর্ব প্রান্তের কামরায়, আমি পশ্চিম প্রান্তের কামরায়। ভবনটির সরাসরি পশ্চিম দিকে গাছের আবডাল থাকায় পশ্চিমের রোদ যন্ত্রণা দিতে পারেনি। মাঝের অংশে বিরাট কামরা, বোধহয় ড্রইং, ডাইনিং বা পার্টির জন্য ব্যবহৃত হতো – এ অংশটি আমরা ব্যবহার করলাম নকশাবিদদের ও প্রাক্কলনবিদদের কাজে। পশ্চিমে আলাদা একটি একচালা টালির ছাদের ঘর ছিল, যা ব্যবহার করা হতো হিসাবরক্ষকদের ও করণিকদের কাজে।
স্থাপত্য-উপদেষ্টা ফার্মের জন্য বাড়িটি ছিল খুব মানানসই। ১৯৬৪ সালে শুরু হয়ে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধকাল পর্যন্ত এই সাত বছর ছিল রমরমা কর্মকেন্দ্র ও বহু গুণীর মিলনমেলা। যাঁরা আসতেন তাঁদের মধ্যে এঁদের কথা বেশি মনে পড়ে। ব্যবসায়ী 888sport live chatপতি – এ কে খান, অধ্যাপক, কবি, 888sport live footballিক, সংস্কৃতিসেবী ও আইনজ্ঞ – সিকান্দার আবু জাফর, শওকত ওসমান, খান সারওয়ার মুরশিদ, আহমদুল কবির, রেহমান সোবহান, ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, কে এম সোবহান, সৈয়দ আলী আহসান, শহীদুল্লাহ কায়সার, পটুয়া কামরুল হাসান, মৃৎ888sport live chatী মীর মোস্তফা আলী, Tapestry 888sport live chatী রশিদ চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ হাসান ইমান, সন্জীদা খাতুন, ওবেদ জায়গীরদার। রাজনীতিবিদ – অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মোনায়েম সরকার, আবদুর রাজ্জাক (বাকশাল), নবী দম্পতি (সিপিবি), নুুরুর রহমান (ক্ষেতমজুর), মুস্তফা সারওয়ার (আওয়ামী লীগ), মুঈদুল হাসান, আলী আকসাদ (শান্তি পরিষদ), মতিয়া চৌধুরী, মালেকা বেগম, আয়েশা খানম। সামরিক বাহিনী – কর্নেল ওসমানী, কর্নেল জামান (সম্বন্ধী), ব্রিগেডিয়ার-পরবর্তী মেজর জেনারেল মজিদুল হক (ভায়রা ভাই)। মন্ত্রণালয়ের সচিব – সানাউল হক (তথ্য ও সংস্কৃতি), বুরহানুদ্দিন (শিক্ষা), এ কে এম আহসান (কৃষি), আহমদ ফজলুর রহমান, আসফউদ্দৌলা (পরে সচিব), নুরুল কাদের খান। প্রকৌশলী  – হাতেম আলী খান, আবদুল লতিফ, নুরুল হোসেন।
বাস্তুকলাবিদে যাঁরা কাজ করে আমাদের সাহায্য করেছেন (888sport sign up bonus থেকে যতখানি উদ্ধার করতে পেরেছি) তাঁদের মধ্যে স্থপতিবৃন্দ – রবিউল হুসাইন, খাদেমুল ইসলাম, আমীর হোসেন, মাহবুব হোসেন, বশীরুল হক; নকশাবিদগণ – এস ইউ খান, ফজলুর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও প্রয়াত কালাম সাহেব।
বাস্তুকলাবিদের কাজ যতদূর 888sport sign up bonus থেকে উদ্ধার করতে পেরেছি তদনুযায়ী ছোট-বড় সব প্রকল্পের বিবরণী।
জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের জমির টপোগ্রাফিক্যাল জরিপ – ফি ২০ হাজার টাকা।
888sport live chatপতি আলম (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ভাইস চ্যান্সেলর আজীজুল হকের জামাতা), তাঁর মালিকানায় টঙ্গীর অদূরে ‘888sport app ডাইং’ নামে রফতানিযোগ্য টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদনের জন্য কারখানার ডিজাইন – ফি, নির্মাণ ব্যয়ের ১.৫ শতাংশ।
মতিঝিল এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে ‘পাকিস্তান কাউন্সিল সেন্টারে’র অভ্যন্তরীণ ডিজাইন।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়েরNIPA (National Institute of Public Administration) ভবন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ও আমেরিকান স্থপতি Stanley Tiger man-এর সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে বরিশাল, বগুড়া, পাবনা, রংপুর ও সিলেটে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট – বিরাট প্রকল্প। (5 Polytechnic Project)4th Shooting Floor Ñ Film Development Corporation, Tejgoan.
কৃষি ভবন (সদর দফতর) দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা।
জীবন বীমা ভবন (তখনকার নাম ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়ন ইনসিউরেন্স কোম্পানি। 888sport cricket BPL rateতলা ভবন তৎকালে সর্বোচ্চ)¬ – মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা।
BCSIR-এর (888sport apps কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ) কয়েকটি গবেষণাগার ও 888sport app ভবন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় – বিরাট প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় – বিরাট প্রকল্প।
রূপপুর পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের আবাসিক ভবন।
বেইজিংয়ে (তৎকালে পিকিং) পাকিস্তান এমবাসি ভবনের কাজ (এ-কাজ এগোয়নি)।
রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরিজের প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক ভবন।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন – বাস্তুকলাবিদ গঠনের আগে প্রকৌশলী হিসেবেও আমি জড়িত ছিলাম।
জাতীয় আর্কাইভস ভবন।
বগুড়া, জামালগঞ্জ কয়লাখনি প্রকল্পের আবাসিক ভবনসমূহ।*
888sport appর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল আর্কাইভ ভবনের কাজ।*
পরীবাগে বর্তমানে বিশ্বব্যাংককে ভাড়া বা লিজ দেওয়া অফিস ভবন।*
* চিহ্নিত এই তিনটি প্রকল্পের কাজ আসে বাস্তুকলাবিদ থেকে আমাকে বিদায় দেওয়ার পর।
5 Polytechnic Project-এ মাজহারুল ইসলামের নিয়োগের পেছনে একটি ইতিহাস আছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে স্থপতি Serge Kadleigh আসেন স্থানীয় স্থপতি নির্বাচনের জন্য। একদিন মাজহারুল ইসলাম সাহেবের বাসায় তিনি উপস্থিত হন। তিনি বলেন যে, 888sport appয় Institute of Fine Arts I Public Library ভবন দেখে প্রীত হয়ে এগুলোর স্থপতি ইসলাম সাহেবের নাম ও ঠিকানা জানতে পারেন। তাই তিনি তাঁর কাছে এসেছেন যে, তিনি এ-প্রকল্পের দায়িত্ব নেবেন কিনা জানতে। তবে বিশ্বব্যাংকের শর্ত হিসেবে Principal স্থপতি হতে হবে একজন US স্থপতি। মাজহারুল ইসলাম সাহেব তাঁর আমেরিকার সহপাঠী Stanley Tigerman-এর নাম বললেন। Kadeigh সম্মত হয়ে এ জুটিকে কাজ দিতে মনস্থ করেন।
888sport cricket BPL rateতলা Eastern Federal Union Insurance Company-র (বর্তমান জীবনবীমা ভবন) কাজ পান এককালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাজী আনোয়ারুল হকের সুপারিশে। তিনিও ইসলাম সাহেবের পিতাকে চিনতেন ও প্রতিভাবান বাঙালি স্থপতি ইসলাম সাহেবের প্রতি প্রীত ছিলেন।
ইসলাম সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে নানাবাড়িতে। দাদাবাড়ি চট্টগ্রামের কায়েতপাড়ায়। পিতা বাড়ি নির্মাণ করেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের বিপরীত দিকে পাহাড়ের ওপর অনেকখানি জায়গাজুড়ে জমির ওপর। পিতা অধ্যাপক উমদাতুল ইসলাম কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ উত্তীর্ণ, বিভিন্ন সরকারি কলেজে (রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষ্ণনগর) গণিতের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে দীর্ঘ আয়ুর দরুন দীর্ঘ অবসর জীবন ভোগ করেছেন। চাচাও এমএ পাশ, কলেজে অধ্যাপনা করে গেছেন। পিতা ও চাচারা অত্যন্ত নিরহংকার, পরিচ্ছন্ন ও মৃদুভাষী। মাতা জাকিয়া খাতুন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 888sport apk ও পুরকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ১৯৫২ সালে। ইউকে আর্কিটেকচারাল অ্যাসোসিয়েশন স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা লাভ ১৯৫৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ ১৯৬১ সালে। স্ত্রী সালমা ইসলাম (আপন খালাতো বোন), যাঁকে বেবী আপা বলে সবাই ডাকেন। ইসলাম সাহেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম সাবেক চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমান চেয়ারম্যান  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
ইসলাম সাহেবকে তাঁর অনুসারীরা বয়স নির্বিশেষে মজুভাই বলে ডাকতেন। আমি তাঁকে স্বতন্ত্র মর্যাদার আসন দিয়ে ইসলাম সাহেব বলেই পরিচয় দিতাম। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে খুব আনন্দ পেতাম। তিনি আমুদে লোক ছিলেন। তাঁর সুদর্শন চেহারার সঙ্গে সুমিষ্ট স্মিত হাস্য মনোমুগ্ধকর ছিল। রুচি ও সংস্কৃতিতে তাঁর  কৌলীন্য ছিল; কিন্তু আচরণে কোনো অহংকার ছিল না। তিনি ছিলেন সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উদার প্রকৃতির মানুষ।
তিনি ছিলেন খাঁটি জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক। দেশের কল্যাণ ও জনগণের সার্বিক মুক্তি সাধন তাঁর চিন্তা-চেতনায় নিত্য জুড়ে ছিল। এ কারণে তিনি স্থাপত্য পেশায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। স্থাপত্যকলা দিয়ে একটি ভবন ও এর আশপাশের এনভায়রনমেন্ট সুন্দরভাবে নির্মাণ করা যায়। কিন্তু সমস্ত 888sport appsকে সাজানো বাগানের মতো সজ্জিত করা যায় ফিজিক্যাল প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে। তাই সরকারে যে দু-একজন প্ল্যানার ছিলেন (বেসরকারি পেশায় কোনো প্ল্যানার ছিলেন না), তাঁদের তিনি অফিসে আমন্ত্রণ করে গভীরভাবে ও গুরুত্বসহকারে দিনের পর দিন আলাপ করতেন। ফিজিক্যাল প্ল্যানিং মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে  গেছেন। রাজনীতিবিদদের আগ্রহ ও আমলাদের উদ্যোগের অভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
চরম শুদ্ধতাবাদী (Perfectionist) না হলেও সবদিকে কাজের উচ্চমান বজায় রাখার দিকে ইসলাম সাহেব দৃষ্টি দিতেন। Master Plan, Important Report-গুলো ইংরেজি ভাষায় প্রণয়ন করা হলে (যা তখনকার দিনে করা হতো) ভাষাগত মান ও ব্যাকরণগত ত্র“টি পরীক্ষা করার জন্য 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অধ্যাপক ড. খান সারওয়ার মুরশিদের শরণাপন্ন হতাম ও তাঁকে সম্মানী দেওয়া হতো।
প্রতিভা, সততা, দেশপ্রেম ও গণহিতৈষী চরিত্র স্বাভাবিকভাবেই আত্মমর্যাদা বোধের জন্ম দেয়। ইসলাম সাহেবের বেলায় এ-কথা বিলক্ষণ খাটে। তাঁর পেশা চর্চার ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা তিল পরিমাণও ক্ষুণ্ন হতে দেননি ব্যবসায়িক স্বার্থে। আত্মমর্যাদা রক্ষার একটি উদাহরণ দিই। করাচি থেকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী সাহেব এসেছেন। তিনি ইসলাম সাহেবকে খবর পাঠালেন, যেন তিনি মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাঁর পুত্রের জন্য এক ভবন নির্মাণের স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও Architects Brief নেন। ইসলাম সাহেব নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। কারণ client তাঁদের প্রয়োজন হলে Professional-দের কাছে যাবেন। যা হোক শেষ পর্যন্ত আমাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে দুকুল রক্ষা করেন।
তিনি দাবি করতেন মানবিক বিষয়ে পড়াশোনা দরকার হয় বলে স্থাপত্য পেশায় নিয়োজিত 888sport live chatীগণ স্বভাবতই উন্নত মান  ও চরিত্রের অধিকারী হন ও দুর্নীতির পথে যান না। অন্যদিকে প্রকৌশল পেশায় যেহেতু Humanities বিষয়ে পড়াশোনা লাগে না, তাই প্রকৌশলীগণের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হতে বাধে না। আমি প্রতিবাদ করে বলতাম তাঁর তত্ত্ব অর্ধসত্য। শুধু এ-বিষয়ে পড়াশোনাই যথেষ্ট নয়। উন্নত চিন্তা-চেতনা, চরিত্র, দেশপ্রেম, শোষিত জনগণের মুক্তি নিয়ে চিন্তা না থাকলে শুধু পড়াশোনা করলেই সৎ হওয়া যায় না। তাঁরই পেশাজীবনের শেষদিকে বহু স্থপতি-চালিত উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান জন্ম নিল। স্থপতিদের হাতে অঢেল অর্থের আমদানি হতে লাগল। তাঁদের উল্লেখযোগ্য অংশই উন্নত চরিত্র রক্ষা করতে পারেননি।
অবশ্য তিনি চড়া মেজাজের লোক ছিলেন। কিন্তু তাঁর চড়া মেজাজ কাউকে হেয় বা অপমানিত করত না। তিনি সবাইকে আপন করে নিতে জানতেন। তাঁর সঙ্গে পরিচয় একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল। বস্তুত তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। নতুন করে সমাজ-চেতনার উন্মেষ ও জীবন দর্শন আমার চক্ষু খুলে দেয়, নতুন মনের জগতে প্রবেশ করি। তাঁর বিয়োগের পর নিজের অন্তরে যখনই তাঁর 888sport sign up bonusচারণ করি, বিয়োগব্যথা ছাড়িয়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দ বোধ করি। তাঁর উদারতার ফসল অনেকেই ভোগ করেছেন। যেহেতু তিনি আধুনিক স্থাপত্যের চর্চা করতেন, ধনী সচ্ছল আত্মীয় বন্ধুরা তাঁদের ভবন নির্মাণে বিনা পারিশ্রমিকে স্থাপত্য ডিজাইনের সঙ্গে আমার প্রকৌশলী-সেবা লাভ করেছেন। আমি অবশ্য নির্বিচারে ধনী ও সচ্ছল আত্মীয় বন্ধুদের সেবাদানকে বৈষম্যমূলক মনে করতাম – অন্তত বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারের জন্য ভবন নির্মাণে। কিন্তু তিনি এই বিচার করতেন না। আমি মনে করতাম এবং এখনো করি, বিনা পারিশ্রমিকে ধনীদের সেবাদান – চূড়ান্ত বিশ্লেষণান্তে এর অর্থ হচ্ছে তাদের জন্য ব্যয় অন্য পারিশ্রমিক দাতা client-দের কাছ থেকে উসুল করা, বা নিজের সম্ভাব্য আয়লব্ধ লাভ ক্ষয় করে দান করা। আমার মত ছিল – এখনো আছে, ধনীদের স্বার্থে দান হচ্ছে নির্ধনদের স্বার্থহরণ। আমার কথা হচ্ছে, দান বা স্বার্থত্যাগ হবে নির্ধনদের জন্য, ধনীদের জন্য নয়; কিন্তু এসব চিন্তার ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন নির্বিচারে উদার।
তিনি ঝড়ো গতিতে চলতেন। সুষম আর্থিক ব্যবস্থাপনার তাগিদ তিনি বোধ করতেন না। হুট করে তিনি অনড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতেন। কেউ তা পালটাতে পারত না। তাঁর ধানমণ্ডির ২৪ ও ২৫নং রোডের মধ্যবর্তী নিজের বসবাসের জন্য বাড়ি কত যতœ, কত পরিশ্রম করে স্থাপত্যের দৃষ্টিতে তিলোত্তমা করে ডিজাইন করেছিলেন। তাঁর স্নেহের সন্তানদের কে কোন কামরায় থাকবেন, স্বামী-স্ত্রী কোন ঘরে থাকবেন, পরিবারের মিলনস্থল ও আহারের জায়গা কোথায় হবে তা নিয়ে কত চিন্তা করতেন, কত আলোচনা করতেন আমিসহ অন্য সহযোগীদের সঙ্গে, তার শেষ নেই। সে-বাড়ি কীভাবে হাতছাড়া করলেন! তার পরিবার কতখানি মনে কষ্ট পেয়েছেন জানি না, কিংবা তিনি পরে কতখানি অনুতাপ করেছেন তাও জানি না, তবে আমরা শুভানুধ্যায়ীরা গভীর বেদনা বোধ করি। আমরাও বাড়ির ডিজাইন ও নির্মাণে যথেষ্ট শ্রম দিয়েছি। তিনি ও তাঁর পরিবার আমৃত্যু এ-বাড়িতে বসবাস করলে কতই না সুখের হেতু হতো আমাদের সবার জন্য। আমরা এখন স্তম্ভিত দর্শক মাত্র।
একই কথা বলা চলে পরীবাগের ভাড়া করা, মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মালিকানায় পাওয়া সম্পত্তিটি সম্বন্ধে। অন্যত্র বলেছি, তখন আমি তাঁর বাস্তুকলাবিদের অংশীদার নই। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আঠারো মাস আগেই ইসলাম সাহেব আমাকে বিদায় দেন।
সন-তারিখ মনে নেই। ১৯৭৬ সাল হতে পারে। পদ্মা-যমুনা নদীর ওপার থেকে ফেরিযোগে 888sport appর দিকে ফিরছি। কেবিনে দুজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা। একজন ব্যারিস্টার সিগমা হুদা, অন্যজন 888sport appর খাজা পরিবারের। দ্বিতীয় জন আমাকে চার্জ করলেন যে, মুক্তিযুদ্ধের পর পট পরিবর্তনের সুযোগে আমরা blackmail করে সামান্য মূল্যে পরীবাগের সম্পত্তি হস্তগত করেছি। আমি তাঁর উত্তরে বললাম, আমি তখন বাস্তুকলাবিদের অংশীদার ছিলাম না। ইসলাম সাহেব নিজেই সম্পত্তি কিনেছেন। যথার্থ মূল্যের বিনিময়ে কিনা, তা আমি কিছুই জানি না। এটা বুঝলাম, সম্পত্তি হস্তান্তর ক্রিয়াটি জমিদার পরিবার ভালো চোখে দেখেননি।

বাস্তুকলাবিদ থেকে বিদায়
আমি ১৯৬৯ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে কারান্তরীণে যাই, মার্কসবাদী নামে একটি পত্রিকা সুখেন্দু দস্তিদার, মোহাম্মদ তোয়াহা, হক সাহেবদের পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে ছাপিয়ে দেওয়ার অপরাধে। সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে 888sport app সেন্ট্রাল জেল থেকে অধিকতর কষ্ট দেবার জন্য পাবনা ডিস্ট্রিক্ট জেলে স্থানান্তর করে কর্তৃপক্ষ। পাবনা জেলে মাজহারুল ইসলাম সাহেব সহযোগী স্থপতি Stanley Tigerman-কে নিয়ে ইতিপূর্বে প্রস্তুত একটি দলিলে সই করানোর জন্য যান। আমি স্বেচ্ছায় বাস্তুকলাবিদ থেকে বিদায় নিচ্ছি বলে যেন সম্মতি দিই। আমি বিনা প্রতিবাদে, বিনা বাক্যব্যয়ে তাতে স্বাক্ষর দান করি। এই দলিল কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্দিষ্ট হয় ৩০ জুন ১৯৭০। তবে স্বভাবসিদ্ধ উদারতার সঙ্গে ইসলাম সাহেব প্রস্তাব দেন যে, ১ জুলাই ১৯৭০ থেকে স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান হবে, যার নাম হবে শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। যতদিন আমি কারাগারে থাকব ততদিন অস্থায়ীভাবে পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন আমার একজন ভায়রাভাই প্রকৌশলী। বাস্তুকলাবিদে কর্মরত প্রকৌশলীগণ ও তারsupporting staff তাঁর অধীনে থাকবেন, একটি স্বতন্ত্র ভাড়া করা বাড়িতে তাঁরা কাজ করবেন। শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আয়ের উৎস-বাস্তুকলাবিদে যা আয় হবে তার শতকরা ৪০ ভাগ। এর থেকে শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সকল ব্যয় নির্বাহ করে যা লাভ থাকবে তা আমার। এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে, যতদিন না আমি কারাগার থেকে মুক্ত হই।
যা হোক, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন 888sport appsে আমি মুক্তি লাভ করি। আমি বাস্তুকলাবিদ অফিসে গিয়ে ইসলাম সাহেবের সঙ্গে দেখা করি, প্রস্তাব দিই, আসুন আবার আগের মতো দুজনে মিলে বাস্তুকলাবিদ চালাই। শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বাদ দিই। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হলেন না। তবে সব হিসাব-কিতাব সুন্দরভাবে সমাপ্ত করে দেনা-পাওনা সাঙ্গ করি। এখানে বলে রাখি, ২৪ মাসের অধিক কারাবাসকালে বাস্তুকলাবিদে আমার উদ্বৃত্ত সঞ্চয় থেকে নিয়মিত মাসে চব্বিশশো টাকা ইসলাম সাহেব আমার পরিবারকে দিয়ে গেছেন (যে-হারে টাকা প্রতি মাসে আগেও আমার খরচের জন্য তুলতাম)। তখনকার দিনে এ-টাকা আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট ছিল। কোনো আর্থিক কষ্ট হয়নি।
আমাকে বাস্তুকলাবিদ থেকে বিদায় দিয়ে একা চালানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইসলাম সাহেবের মারাত্মক ভুল ছিল। রাজনৈতিক মতভেদ ছিল। কিন্তু তার জন্য এ-বিভক্তি প্রয়োজন ছিল না। তবে কি ব্যবসায়িক স্বার্থে? আমি লাভের ৪০ শতাংশ ভোগ করতাম, তবে আয়ের ৪০ শতাংশ স্বতন্ত্র করে দিলে সকল প্রকৌশলী (পুরকৌশল, প্ল্যানিং ও বৈদ্যুতিক), প্রকৌশলী নকশাবিদ জনবল ও প্রাক্কলন কাজ জনবলের ব্যয় স্থপতিদের ও স্থাপত্যে নিয়োজিত নকশাবিদদের ব্যয় মিলিয়ে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশের অধিক ছিল। সেটা বিবেচনায় নিলে বিভক্তিতে ইসলাম সাহেবের বেশি লাভ হবার কথা।
বাস্তবে তা ঘটেনি। কারণ তিনি একা কাজ করার লোক ছিলেন না। তার সঙ্গীর অবশ্যই প্রয়োজন ছিল, যিনি client-দের সময়মতো কাজ শেষ করে দেবার জন্য তাগিদ দিতে পারতেন। কোম্পানির আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুচারু করার জন্য একজন যোগ্য সহকর্মীর একান্ত প্রয়োজন ছিল, হোক সে স্থাপত্য পেশার বাইরে। অতএব client-দেরservice দান এবং ঠিকমতো ফি আদায় করা এগুলোতে ঘাটতি থেকে যাবার কথা। যা হোক যে-গতিতে ‘বাস্তুকলাবিদ’ সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছিল, সেই গতি আর থাকল না।
আমাদের অনেক common বন্ধু এই বিচ্ছেদে মর্মাহত হয়েছিলেন। আমাকে বলতেন, ইসলাম সাহেব ঠিক কাজ করেননি। পক্ষান্তরে শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস পুনরায় শূন্য থেকে শুরু হয়ে অল্পদিনেই উন্নতি লাভ করে। বাস্তুকলাবিদের কাজে ভাটা পড়ে।
তবে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের মধুরতা ক্ষুণ্ন হয়নি। যখন আমার কাছে যে কারিগরি পরামর্শ চেয়েছেন বা এমনকি ডিজাইন জড়িত করেছেন তা করে দিয়েছি। বলা আবশ্যক, আমার বিদায় নেবার পর আমার চেয়ে সুলভে অনেক প্রকৌশলী সেবা পেয়েছেন কিন্তু তৃপ্তি হয়নি বলে আমার মনে হয়।
বাস্তুকলাবিদের শ্রী হ্রাসের 888sport app কারণ
রাজনৈতিক শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন ও পরবর্তী শাসনকালে প্রতিভা ও যোগ্যতার পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও রাজনৈতিক বন্ধুদের মধ্যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন প্রবণতা।
পাকিস্তান আমলে আইয়ুব সরকারের হুকুম বরদার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান রাজনৈতিক বৈপরীত্য সত্ত্বেও ইসলাম সাহেবকে তৎকালে একমাত্র বাঙালি যোগ্য স্থপতি আখ্যা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাট কাজের দায়িত্ব দেন। তাঁর পুত্র খসরু অবাঙালি থারিয়ানির পক্ষে সুপারিশ করলেও তা গভর্নর মোনয়েম খান প্রত্যাখ্যান করেন। মজার ব্যাপার, স্বাধীনতার পর ইসলাম সাহেবের রাজনৈতিক বন্ধুস্থানীয় উপাচার্য জিল্লুর রহমান ইসলাম সাহেবকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব কাজ বাকি ছিল তা দেননি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ভবনের জন্য বিভিন্ন স্থপতি নিয়োগ করে স্থাপত্যরীতির ঐক্য ও সংহতি ভঙ্গ করেন। ফলে স্থাপত্যের দিক দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষতি করেছেন।
আবার ইয়াহিয়ার আমলে ফজলুল কাদের চৌধুরী (একবার প্রেসিডেন্টের বিদেশে অবস্থানকালে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন) অবশ্যই ইসলাম সাহেবের তথা জনগণের রাজনৈতিক শত্র“ ছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু বাঙালি নন, নিজ জেলার এই গুণী স্থপতি ইসলাম সাহেবকে মর্যাদা দান করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ দেন। এই কাজ শুধু বিরাট এলাকা জুড়ে বিশাল কাজ নয়। পাহাড়ের ঢালের উপর শুইয়ে ভবনগুলির স্থাপনাগুলো প্রকৃত challenging কাজ ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের পর যাঁরা এলেন তাঁরা বাকি কাজগুলোর জন্য ইসলাম সাহেবকে নিয়োগ করেননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। স্বাধীনতার পর ড. খান সারওয়ার মুরশিদ এর উপাচার্য নিযুক্ত হন। ইতিপূর্বে তিনি মতিঝিলে তাঁর বাণিজ্যিক কাজ বন্ধু ইসলাম সাহেবকে দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে করিয়ে নিয়েছেন। অথচ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আমলে করা কাজের জন্য মাজহারুল ইসলামকে একেবারে এড়িয়ে গেছেন।
সৈয়দ আলী আহসান – তিনি ইসলাম সাহেবের রাজনৈতিক শত্রু বা মিত্র, তা জানি না। তবে আমাকে নিয়ে গেলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের কাছে। পরে ইসলাম সাহেব আমাকে বললেন, তিনি একজন Radical Humanist, যা হোক তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ফলে দুজনের রাজনীতিতে অবশ্যই ভিন্নতা ছিল। তা সত্ত্বেও সৈয়দ আলী আহসান সত্যিই চারুকলার সমঝদার ছিলেন। তিনি ইসলাম সাহেবকে একজন গুণী স্থপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তাঁর সুপারিশে ইসলাম সাহেব জাতীয় আর্কাইভস ও লাইব্রেরির কাজ পান। আর্কাইভসের কাজ শেষ হয়েছে; কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে লাইব্রেরির কাজ পরে তিনি পাননি। আমি অবশ্য এ-সময় বাস্তুকলাবিদে আর নেই।
স্থাপত্য উপদেষ্টা পেশায় বর্তমানে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিবিশিষ্ট বা নির্লজ্জভাবে দুর্নীতিবাজ বা দুর্নীতি-আশ্রয়ীদের 888sport free bet অনেক। সৎ যোগ্য আত্মমর্যাদাযুক্ত পেশীজীবীদের কোনো মূল্যায়ন বা স্বীকৃতি নেই। তাঁদের পক্ষে কাজপ্রাপ্তির পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

নির্মাণ উপকরণ
888sport cricket BPL rateতলা জীবন বীমা ভবন (পরে তলার 888sport free bet বৃদ্ধি করা হয়), কৃষি ভবন সদর দফতর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে R.C Frame ও R.C দেয়াল ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি সব ভবনের roof ও floor slab-এ শুধু R.C Slab ব্যবহার করা হয়েছে। তা ছাড়া মিসেস আলী জুনদ ইস্পাহানী ও সম্ভবত রেহমান সোবহান ও বেগম সালমা রহমান দম্পতির আবাসিক ভবনে সম্পূর্ণ অবয়বে R.C ব্যবহার করা হয়েছে। R.C দেয়াল চার ইঞ্চি পুরু। As cast, চার ইঞ্চি চওড়া খাড়া কাঠের তক্তার formwork এর impression যুক্ত।
উপরোক্ত কাজগুলো বাদে প্রায় সব ভবনই Load bearing brick wall-এর কাজ। ইটের ওপর cement plaster করতে দেননি। Exposed Brick রেখেছেন। প্রায় সব স্থপতিই তাই করেন। তবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার দুর্ভাগ্য যে, পরে স্থপতির পরামর্শের মূল্য দেন না client-রা। যেমন হয়েছে স্বনামধন্য পটুয়া 888sport live chatী কামরুল হাসানের বেলায়। Exposed Brick-এর কাজ করতে অনেক detail করা লাগে। স্থপতিরা সবাই জানেন detail-এর কাজেও প্রচুর শ্রম লাগে। পারিশ্রমিক না দিয়ে ডিজাইন পেলে তার মর্যাদা বহু ক্ষেত্রে রক্ষিত হয় না। কামরুল হাসানভাই তাঁর সকল দেয়াল plaster করিয়ে তাতে ইটের আদলে দাগ দিয়েছেন। হাসানভাই নিজে এক চারুকলা শাখার দিকপাল, তাঁর পক্ষে অন্য একটি শাখা স্থাপত্যের আরেক দিকপালের ডিজাইনকে আমলে না নেওয়ার ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক।
যা হোক exposed brick যদি প্রত্যেক মেঝেতে বা অনেক উঁচুতে ছাদের বেলায় যথেষ্ট প্রস্থের cantileverd shade না পায়, (অনেক সময় স্থপতি ঊর্ধ্বমুখীনতা emphasize করার জন্যshear wall অর্থাৎ কোনো ঢাকনা ছাড়া দেয়ালকে রাখতে চান) তাহলে ইট ভেজার সুযোগ পায়। সাধারণ hand made brick নিজের ওজনের ১৭ শতাংশ পর্যন্ত পানি শোষণ করতে পারে। যদি ইটের মধ্যে দ্রবনীয় salt থাকে common salt অর্থাৎ লবণ বাদেও অনেক ধরনের salt থাকতে পারে, তবে তা দ্রবীভূত হয়ে পানির দ্বারা বাহিত হয়ে বাইরে আসে ও পানি উড়ে গেলে salt পড়ে থাকে। এতে efflorescence হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যhand made bricks যতই পোড়ানো হোক machine made bricks প্রস্তুতকালে যে de-airing করা হয়, তা hand made (HM) brick-এ করার সুযোগ না থাকায় এই HM brick-এর পাত্রে সর্বত্র pore বা ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকতে পারে। ভিজে গেলে বা স্যাঁতসেঁতে অবস্থা fungus, algae এসব অতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ জন্মানোর চমৎকার সুযোগ করে দেয়। এই ইটের ওপর organic আচ্ছাদন পড়ে কালাটে হয়ে যায়। যদি স্থপতি এ-অবস্থা পছন্দ না করেন, অনেকেই করেন না, তবে এ-সমস্যা হবেই। অতএব HM ব্যবহার করলে যথেষ্ট cantilevered slab-এর shade এ রাখতে হবে যাতে ক্ষণস্থায়ী wind driven rain (যা সিক্ত করার পর দেয়াল শুকিয়ে যায়) ছাড়া প্রায় খাড়া লঘু intensity-র দীর্ঘস্থায়ী drenching rain-এর দরুন সিক্ত হওয়ার সুযোগ না পায়। তাছাড়া দেয়াল ভিজলে দেয়াল slab-এর joint দিয়ে বা এমনকি ইটের দেয়াল ভেদ করে পানি দেয়ালের ভেতর সাইডে প্রবাহিত করতে পারে। ফরাসি স্থপতি Bruno lan quang মিরপুরে শাক্যমণি প্রকল্পে ছাদের slab-এ বিরাট cantilever করেছেন, যাতে তার HM ইটের দেয়াল সর্বদা শুকনা থাকে। স্থপতি বশীরুল হক সাহেব আমাদের এক common বন্ধু। প্রকৌশলীর চট্টগ্রামে OR Nizam road-এ shear brick wall ব্যবহার করাতে বন্ধু অসুবিধায় পড়লে আমি বন্ধুকে ছাদ বাড়িয়ে cantilever extension দিতে বলি, তবে বশীরুল হক সাহেবের মতো চাই। তিনি সম্মতি দেন।
মাজহারুল ইসলাম সাহেব প্রায় সর্বত্রই machine made brick ব্যবহার করেছেন। 5 Polytechnic Project যেহেতু মফস্বল শহরে, সেখানে machine made brick পাওয়া যায় না আবার 888sport app থেকে পরিবহনব্যয়ও বেশি পড়ে। তাই সহযোগী আমেরিকান স্থপতি Stanley Tigerman HM brick ব্যবহার করে তাঁর ওপরsalt glazing করার ব্যাপারে খরচের হিসাব করেন। তাও বেশি পড়ে বলে ও Earthquake প্রতিরোধের স্বার্থে ভেতরে concrete core দিয়ে তার ভেতর reinforcing rod বসিয়ে reinforced brickwall with thin concrete core ব্যবহার করেন ও sheer খাড়া দেয়াল ব্যবহার করেন। কিন্তু সমস্যা থেকে যায় নির্মাণকালে দুপাশের পাঁচ ইঞ্চি wythe wall-কেsandwiched concrete core ঢালাইয়ের পার্শ্বচাপ বহন করার জন্য শক্তি পাওয়ার আগেই কাজের গতির স্বার্থে concrete core ভালো করে compact করে না। ফলে core power হয়ে যায় ও বাইরের পানি ভেতরে ঢোকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অসমর্থ হয়। এ ত্র“টি সত্যিই হয়েছে।
স্বাধীনতার পর খোদ বঙ্গবন্ধুও স্থপতি ইসলাম সাহেবকে চেনাজানা সত্ত্বেও তাঁকে উপেক্ষা করেছেন, কাজে লাগাননি। অথচ ইসলাম সাহেব বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ সমর্থক এবং রাজনৈতিক বন্ধু রাজ্জাক সাহেবের আহ্বানে বাকশালে সেবা ও পরিশ্রম দান করেছেন। বাকশালের অবলুপ্তি ঘটার পর এর অনুসারীদের আওয়ামী লীগে পুনর্মিলিত করার ব্যাপারেও খেটেছেন ও তারপর আওয়ামী লীগের সেবা করার জন্য উপদেষ্টা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকেছেন। বন্ধু রাজ্জাক সাহেব ও অধ্যক্ষ আবু সাইদ সাহেবকে মাজহারুল ইসলাম সাহেব স্থাপত্যকর্মে নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই করেননি বলা চলে। ইসলাম সাহেব বঙ্গবন্ধুকে Physical Planning-এর গুরুত্ব বুঝিয়ে এর পৃষ্ঠপোষকতা দানের জন্য বহু আশা নিয়ে তদবির করে গেছেন কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাননি। অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে (প্রতিদ্বন্দ্বী সকল বুর্জোয়া দলের মতোই) দেশের চেয়ে নিজের স্বার্থই দেখেছেন। স্থাপত্য পেশাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মানসিকতাও কম।
পাকিস্তান আমলে মাজহারুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী সচিবদের সঙ্গে পরিচয় তো বটেই, বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ময়মনসিংহে নির্মিতব্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস ডি চৌধুরীর সঙ্গেও সখ্য ছিল। আমেরিকায় স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র হিসেবে যেসব বিশ্বখ্যাত মনীষী অধ্যাপকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছেন এদেশে এসে, তাঁদের দুজনকে বিরাট জাতীয় প্রকল্প যথা তৎকালে

Second Capital প্রকল্পে (বর্তমান জাতীয় সংসদ ভবন প্রকল্প) ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্তির ব্যাপারে বন্ধুদের সাহায্য পেয়েছিলেন। তাঁদের পক্ষ থেকে ইসলাম সাহেবের সামান্য অংশের কোনো কাজের অফারও তিনি গ্রহণ করেননি। তিনি নিঃস্বার্থ অবস্থানে থেকে কোনো সুযোগ নেননি। সবাই জানেন জাতীয় সংসদ ভবনের ডিজাইন করেছেন লুই আই কান। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কাজ করেছেন পল রুডলফ।
লুই কানও Reinforced Brickwall with concrete core ব্যবহার করছেন। তবে core ছিল যথেষ্ট পুরু, পাঁচ ইঞ্চি, তা সত্ত্বেও Compaction-এর অভাবে core নিশিছদ্র হয়নি। দেয়াল ভেদ করে  বৃষ্টির পানি ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে, সমালোচনাও হয়েছে। Paul Rudolph HM ইট ব্যবহার করছেন না, তাঁর resident স্থপতি William Grinderes-এর তত্ত্বাবধানে HM ইট ভালোভাবে পুড়িয়ে নিয়েছেন। তবু De-airing-এর অভাবে কিঞ্চিৎ লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তার ইটের দেয়ালে organic growth ঠেকেনি। ফলে ইটের দেয়াল মলিন হয়ে সাধারণের চোখে দৃষ্টিকটু হয়েছে। তার অনুপম স্থাপত্যকর্মের সৌন্দর্য কিছুটা মলিন হয়ে গেছে।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে বর্তমানে practising স্থপতিদের মধ্যে দুই দল দেখতে পাই। একদল আছেন, যাঁরা ইসলাম সাহেবের প্রতি প্রগাঢ় 888sport apk download apk latest versionশীল, যাঁরা ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে সম্মান করেন এবং তাঁর স্থাপত্য কাজের অনুরাগী হিসেবে ইসলাম সাহেবকে পথপ্রদর্শক ও আধুনিক স্থাপত্যের প্রবর্তক হিসেবে তাঁর অবদানকে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দেন আর এক দল আছেন, যাঁরা ইসলাম সাহেবের প্রতি কিঞ্চিৎ উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। যাঁরা তার পেশাচর্চায় আপসহীন সততাকে মূল্য দেন এবং নিজেরা পেশাচর্চায় সততা অবলম্বন করেন, তাঁদের অধিকাংশকে প্রথম দলে পাই।