এখন হূদয়ের গভীরে শূন্যতা

মতিউর রহমান

888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী নেই। এখন আমাদের মাঝে গভীর শূন্যতা বিরাজ করছে। তাঁর চিত্রকর্মগুলোর সামনে গিয়ে যখন দাঁড়াই, হূদয়ে গভীরে বেদনা অনুভব করি।

কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল গত ২৪ নভেম্বর বিকেল চারটায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সেমিনার-কক্ষে। সেদিন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসার আত্মজীবনী আমার বেলা যে যায় গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অতিথি হয়ে। সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল প্রথমা প্রকাশন।

সাংবাদিক এবিএম মূসা, আমাদের মূসাভাইয়ের এই বইয়ের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ ছিল কাইয়ুমভাইয়ের। বইয়ের প্রচ্ছদটি তাঁরই আঁকা। তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল ৫০ বছরের বেশি সময়ের। সেদিনের অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের সহযাত্রী এবিএম মূসার কথা বলেছেন, করেছেন নানা সময়ের 888sport sign up bonusচারণা। জীবনের আনন্দ-দুঃখ-বেদনার সময়গুলোতে কীভাবে একে অপরের কাছাকাছি থেকেছেন – সেসব কথা শুনিয়েছেন আমাদের কাইয়ুমভাই।

পরের দিন (২৫ নভেম্বর) আমি জাপানের হিরোশিমা শহরে যাই এক সম্মেলনে অংশ নিতে। 888sport appয় ফিরে আসি ১ ডিসেম্বর। ফেরার পথে ব্যাংককে ছিল পাঁচ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি। সকালেই আইপ্যাডে দিনের কাগজে দেখি, গত রাতে (৩০ নভেম্বর) ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে’ হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে বক্তৃতা শেষে আবার উঠে ‘একটি কথা’ বলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে মঞ্চে পড়ে যান। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। এই সংবাদ পড়ে বিমূঢ়-বিস্মিত হয়ে যাই। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে সিলভিয়া নাজনীনকে তিনি বলেছিলেন, ‘নিয়তির হাতে শুধু মৃত্যুকেই রেখেছি, বাকি সব মানুষের পরিশ্রমের ফসল।’ এমনই সক্রিয় মানুষ ছিলেন 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী।

888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় সেই ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় হরতাল আর কারফিউয়ের দিনগুলোতে। এখনো স্পষ্ট মনে আছে, এরকম একদিন সকালে আসাদুজ্জামান নূরকে (এখন সংস্কৃতিমন্ত্রী) নিয়ে 888sport apps প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে আজিমপুরে কাইয়ুমভাইয়ের বাসায় গিয়ে হাজির হই। উদ্দেশ্য, 888sport cricket BPL rate নিয়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদ থেকে প্রকাশিতব্য একটি 888sport app download apk-সংকলনের প্রচ্ছদ আঁকিয়ে নেওয়া। আমাদের প্রস্তাবে তক্ষুনি তাঁর সম্মতি পেয়ে যাই। কাইয়ুম চৌধুরী ঊনসত্তরে 888sport cricket BPL rateে উপলক্ষে প্রকাশিত বজ্রে বাজে বাঁশীর তিন রঙের একটা প্রচ্ছদ এঁকে দেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে। ওই সংকলনে 888sport live chatী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর দুটি ড্রয়িংও ছেপেছিলাম। তবে তিনি আমাদের প্রস্তাব করেন শুধু 888sport live chatীদের ড্রয়িং বা 888sport live chatকর্ম দিয়ে 888sport cricket BPL rateকে নিবেদিত আরেকটি সংকলন করার জন্য। আমরা তাঁর প্রস্তাবে রাজি হই। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সে-বছর, সেই ঊনসত্তরের 888sport cricket BPL rateে উপলক্ষে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে 888sport live chatী কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, রশিদ চৌধুরী, হামিদুর রহমান, ইমদাদ হোসেন, দেবদাস চক্রবর্তী, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু, প্রাণেশ কুমার মন্ডল, রফিকুন নবী প্রমুখের আঁকা ছবি দিয়ে সংকলনটি বের করি। এই সংকলনের কোনো নাম ছিল না। কাইয়ুমভাই সে-সময় শামসুর রাহমানের আলোড়ন সৃষ্টিকারী 888sport app download apkর তিনটি পঙ্ক্তি ‘লোক, আমাদের চোখের পাতায় লোক/ লোক প্রতিটি পাঁজরের সিঁড়িতে লোক/ লোক, ধুকপুকে বুকের ভেতরে লোক’ দিয়ে দারুণ একটা একরঙা প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন।

পরের বছর ১৯৭০ সালে আবারো তাঁরই উৎসাহে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের পক্ষ থেকে সেরা 888sport live chatীদের আঁকা ছবি আর সেরা কবিদের 888sport app download apk নিয়ে বের করেছিলাম রয়েল সাইজের দারুণ একটা সংকলন। সেই সংকলনের ছাপা দেখতে তাঁর আজিমপুরের বাসা থেকে সদরঘাটে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে চলে গিয়েছিলেন কাইয়ুমভাই।

সেই পরিচয়ের পর থেকে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। রাজনীতির নানা উত্থান-পতন, সংগীত, চিত্রপ্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক নানা কর্মকান্ডের সুবাদে আমরা অনেক কাছাকাছি চলে আসি। ধীরে ধীরে জীবন-সংগ্রামের আনন্দ-দুঃখ-বেদনা থেকে শুরু করে পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পথে আমাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর সব চিন্তা, সব উদ্যোগের সঙ্গে আমি এবং আমার বন্ধুরা একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েক দশক ধরে আমাদের কাইয়ুমভাইও সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রাজনীতি এবং সংবাদপত্র-প্রকাশনাসহ আমাদের সব কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন, উদ্যোগী হয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথম আলোর নামলিপি থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনের           ছোট-বড় সব ধরনের কাজকর্ম – নিমন্ত্রণপত্র, বিশেষ 888sport free bet, সব ঈদ888sport free betর প্রচ্ছদ, 888sport live chat-888sport live footballের ক্রোড়পত্রের সাজসজ্জায় ছিল তাঁর বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া, তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আমাদের প্রথমা প্রকাশনের যাত্রা শুরু হলে প্রথম থেকেই তিনি এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ পর্যন্ত আমাদের প্রকাশিত ২২১টি বইয়ের মধ্যে ১৪৩টির প্রচ্ছদ তাঁরই আঁকা। ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তার (প্রথম 888sport free bet : জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১১) নামলিপি ও সব 888sport free betর প্রচ্ছদও তাঁরই করা। এ ছাড়া তিনি প্রথম আলোতে ছড়া, 888sport app download apk, প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে 888sport sign up bonusকথা ও বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন অনেক।

বলা যায়, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলো থেকে এবং আরো অনেক পরে প্রথম আলোর প্রথম 888sport free bet থেকে শুরু করে তাঁর মৃত্যু-অবধি তিনি আমাদের সব কাজের সঙ্গেই ছিলেন, আমাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ একজন হয়ে গিয়েছিলেন। ব্যাংককে সেদিন সকালে বারবার শুধু মনে পড়ছিল তাঁর সঙ্গে হূদ্যতা-ঘনিষ্ঠতা আর বহুমুখী কাজের সুবাদে অসংখ্য আড্ডা আর গল্প-আনন্দের কথা। এভাবেই ৪৫ বছরের বন্ধুত্ব বেড়েছে আমাদের। অনেক সকাল-দুপুর-রাতে আমাদের কত না উজ্জ্বল সময় কেটেছে তাঁর সঙ্গে!

২৪ নভেম্বর এবিএম মূসার আত্মজীবনী আমার বেলা যে যায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানের মাত্র দুদিন আগে সন্ধ্যা থেকে বেশ রাত পর্যন্ত বন্ধু আবুল হাসনাত ও আমি 888sport live chat-888sport live football-রাজনীতি-দেশ নিয়ে 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে কত-না কথা বলেছিলাম। তাঁর স্বপ্নের কথা, 888sport live chatকলা নিয়ে নানা ভাবনার কথা সেদিন তিনি আমাদের বলেছিলেন। সেদিনও তাঁর কণ্ঠে ছিল প্রবল আশাবাদ। নানা কথা-আলোচনার মাঝে তাঁর  শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার কথাও বলেছিলাম। আমাদের পরামর্শ ছিল সকালে আবার যেন হাঁটাহাঁটি শুরু করেন কাইয়ুমভাই।

আমরা জানতাম, হূদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘদিন সকালে নিয়ম করে রমনায় হাঁটাহাঁটি করতেন কাইয়ুমভাই। সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর বহুমুখী কর্মব্যস্ততার কারণে। সেদিনের সেই সন্ধ্যারাতের গল্পসল্পের শেষে কাইয়ুমভাইকে বলেছিলাম, জাপান থেকে ফিরে একদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আমার বাসায় ফরাসি দুই ভাস্কর অগাস্টিন রঁদা আর কেমিলে ক্লদেলের জীবননির্ভর প্রেম-ভালোবাসা-সংঘাতের live chat 888sportটি দেখব। একটা পুরো বেলা গল্প করে আনন্দে কাটাব। সেই ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না। সেই live chat 888sportটাও আর কাইয়ুমভাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখা হলো না। সেটাই আমাদের শেষ উচ্ছল গল্প-আড্ডা হবে, তা কে জানত?

আমাদের বাসার বড় বসার কক্ষের দুদিকের দরজা এবং মাঝের দরজার কাচের রঙিন আঁকাআঁকি ছিল তাঁরই করা। দুপুরের উজ্জ্বল আলোয় সেসব দেখে খুব আনন্দ পেতেন তিনি। তাঁর উপস্থিতিতে পুরো পরিবেশটা হয়ে উঠত মনোরম।

দেশের বাইরে কলকাতা, দিল্লি, প্যারিস বা নিউইয়র্কে গেলে তাঁর পছন্দের কোনো বই, গান বা live chat 888sportের সিডি এনে কাইয়ুমভাইকে উপহার দিতাম। সেসব পেয়ে কী যে খুশি হতেন! গত সেপ্টেম্বরে প্যারিস থেকে তাঁর জন্য এনেছিলাম 888sport live chatী ভ্যান গঘকে নিয়ে নির্মিত নতুন একটি live chat 888sport। এর আগে মাদ্রিদ থেকে এনেছিলাম স্পেনীয় ফ্লেমিংগো বাজনার সঙ্গে বিশ্বখ্যাত সেতারবাদক রবিশঙ্করের কন্যা আনুশকা শঙ্করের সেতারের সিডি।

 

দুই

জীবনকে নানাভাবে উপভোগ করার বিপুল উৎসাহী প্রয়াস ছিল তাঁর। গত এক দশক দেশ-বিদেশে 888sport live chatকর্ম-প্রদর্শনীর আয়োজন, 888sport slot game আর নানা অনুষ্ঠান নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। এসব 888sport slot game ও 888sport live chatপ্রদর্শনীর বিষয়ে তাঁর বড় সঙ্গী ছিলেন আমাদের বন্ধু বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালক সুবীর চৌধুরী। কিছুদিন আগে সুবীর চৌধুরীর মৃত্যুতে খুবই শোকাহত হয়েছিলেন – বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন কাইয়ুমভাই। মাঝেমধ্যেই বলতেন, আমাদের 888sport live chatাঙ্গনের সক্রিয় এক সঙ্গীকে হারালাম। সুবীর চৌধুরী  দেশ-বিদেশের বহু শহরে নিয়ে গিয়েছিলেন কাইয়ুমভাইকে। এসব নিয়ে নতুন অনেক পরিকল্পনাও ছিল তাঁর মধ্যে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে 888sport live chatী গৌতম চক্রবর্তী কাইয়ুমভাইসহ কয়েকজন 888sport live chatীকে নিয়ে ভুটানে গিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে গৌতম চক্রবর্তীকে তিনি বলেছিলেন, আবার ভুটানে যেতে চান ছবি আঁকতে।

888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীর 888sport live chatকর্মে জলরং, তেলরং, গোয়াশ, প্যাস্টেল, অ্যাক্রিলিক, কালি-কলম প্রভৃতি মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সফল প্রয়াস আমরা দেখতে পাই। অন্যদিকে একনিষ্ঠ নিবিড় 888sport live chatচর্চার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন অগুনতি। প্রচ্ছদ888sport live chat ও প্রকাশনাজগতে তিনি ছিলেন একক নায়ক। তাঁর আঁকা প্রচ্ছদের 888sport free bet কত হবে? চার হাজার, পাঁচ হাজার? হয়তো দশ হাজার! অনেক বন্ধুবান্ধবের পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের লোগোসহ ভালো উদ্যোগ বা কাজের অসংখ্য পোস্টার করে দিয়েছেন তিনি। পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের সচিত্রকরণ করেছেন বহু। নানা ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণলিপি করেছেন অগণিত। একসময় কার্টুনও করেছেন। এলপি রেকর্ডের কভারও করেছেন।

শিশুদের জন্য তাঁর ছড়ার বই বের হয়েছে তিনটি। গান শোনার প্রতি খুব দুর্বলতা ছিল কাইয়ুমভাইয়ের। সিনেমা দেখতে ভীষণ পছন্দ করতেন। একবার এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন, 888sport live chatজগতের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে সিনেমাহলে। বই পড়া আর বই সংগ্রহের নেশাও ছিল তাঁর প্রবল। গানের রেকর্ড, সিনেমার ভিডিও ও বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে তাঁর। পত্রিকা প্রকাশ আর বই প্রকাশনার কাজে কাইয়ুমভাইয়ের উৎসাহের কোনো শেষ ছিল না।

এসব শখ আর নেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাইয়ুম চৌধুরী এক আলাপচারিতার সময় 888sport sign up bonusকাতর হয়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘গান শোনা, সিনেমা দেখা – এসব উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। আমার বাবা গান শুনতেন। আমাদের বাসায় একটা কলের গান ছিল – গ্রামোফোন রেকর্ডের সংগ্রহ ছিল। আমি বাবার কোলে বসে প্রথম সিনেমা দেখি। ভালো ছবি দেখা আর ভালো গান শোনার আকর্ষণ আমার প্রবল। আমি হয়তো ছবির জন্য রং কিনতে গেলাম, হঠাৎ এক জায়গায় দেখলাম ভালো রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে, আমি রং না কিনে রেকর্ড কিনে চলে এসেছি। এরকমটা হয় বইয়ের ক্ষেত্রেও। আমার বাবার পারিবারিক ভালো একটা লাইব্রেরি ছিল। শুধু বই নয়, সব ম্যাগাজিন পাওয়া যেত। পুরনো প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বঙ্গশ্রী  – এসব ম্যাগাজিন আমি বাবার হাতে দেখেছি। এ বিষয়গুলো আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে, শৈশব-কৈশোরে পড়ার যেসব উপাদান আমরা পেয়েছি – কলকাতা থেকে আসত দেব 888sport live football কুটিরের বই – সেগুলোর সচিত্রকরণ দেখে আমার ছবি আঁকার উৎসাহ হতো। মনে হতো, এরকম একটা 888sport live chatী হতে পারলে আমার জীবন সফল হবে। সিগনেটের প্রকাশনায় সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদ দেখে অবাক হয়ে যেতাম। কী অপূর্ব! যখন প্রথম সুযোগ পেয়েছি, তখন কলকাতায় গিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমার কাছে একজন আদর্শ মানুষ, 888sport live chatী।’

প্রায় ছয় দশক আগে, ১৯৫৬ সালে, তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ভাবতেই বিস্ময় জাগে, হাঁটতে হাঁটতে একদিন ঢুকে পড়েছিলাম প্রেসক্লাবে। সেখানে তখন মুর্তজা বশীর, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আর কাইয়ুম চৌধুরীর 888sport live chatকর্মের প্রদর্শনী চলছিল। খবরটি হয়তো পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছিলাম। কিশোর চোখে বিস্ময়ের সঙ্গে সেদিন দেখেছিলাম তিন 888sport live chatীবন্ধুর 888sport live chatকর্ম। আমাদের নবাবপুর স্কুলে বিখ্যাত তিনজন 888sport live chatীকে পেয়েছিলাম ড্রয়িং-শিক্ষক হিসেবে। তাঁরা হলেন 888sport appsের প্রধান তিন 888sport live chatী মোহাম্মদ কিবরিয়া, মুর্তজা বশীর ও কাজী আবদুল বাসেত। মূলত তাঁদের সান্নিধ্য পেয়েই কিশোর বয়সেই আমার মধ্যে চিত্র888sport live chatের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ১৯৬১ সালে কাইয়ুম চৌধুরী সারা পাকিস্তানের সেরা 888sport live chatীর 888sport app download bd পাওয়ায় আমাদের আনন্দের কথা আরো মনে পড়ে। পরবর্তীকালে তিনি 888sport appsের স্বাধীনতা 888sport app download bd, 888sport cricket BPL rateে পদকসহ বেশ কিছু 888sport app download bd-স্বীকৃতি-সম্মাননা পেয়েছেন।

তিন

১৯৫৪ সালে ২০ বছর বয়সে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজ থেকে পান করে বের হলেও দ্রুত কোনো কাজে যোগ দেননি। সে-সময় তেমন কোনো ভালো কাজের সুযোগও ছিল না। ১৯৫৫-৫৬ সালে তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ, 888sport free bet loginের সচিত্রীকরণের কিছু কাজ করেছেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজে যুক্ত থেকেছেন। সে-সময়ে জহির রায়হানের উদ্যোগে আলফাবিটা নামে প্রকাশনী সংস্থায় যুক্ত হলেও তা অগ্রসর হয়নি। এর মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী বছরখানেকের জন্য সিনেপত্রিকা ছায়াছবি সম্পাদনা করেন যুগ্মভাবে। অত্যন্ত বিস্ময়কর হলেও সত্যি, তখন তিনি একাধিক live chat 888sportের সহপরিচালকের কাজও করেছেন। এ-সময়েই কবি আহসান হাবীবের প্রকাশনা সংস্থা কথাবিতান থেকে জহুরুল হকের সাতসাঁতার এবং মহিউদ্দিন আহমেদের প্রকাশনা সংস্থা বার্ডস অ্যান্ড বুকস থেকে প্রকাশিত হয় শামসুর রাহমানের প্রথম 888sport app download apkর বই প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে। কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা বই দুটির প্রচ্ছদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

১৯৫৭ সালে 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে কামরুল হাসানের আহবানে তিনি আর্ট কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে যোগ দেন তৎকালীন সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির 888sport live chat করপোরেশনের (স্বাধীনতা-পরবর্তী নাম 888sport apps ক্ষুদ্র ও কুটির 888sport live chat করপোরেশন বা বিসিক) ডিজাইন সেন্টারে। এক বছরের মধ্যেই আবার ওই কাজ ছেড়ে অবজারভার গ্রুপে যোগ দেন প্রধান 888sport live chatী হিসেবে। তখনো অনেক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। ১৯৬৫ সালে 888sport live chatী জয়নুল আবেদিনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আবার আর্ট কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রচ্ছদ আঁকা এবং 888sport app কাজও চলছিল। সে-সময়ের বন্ধু গাজী শাহাবুদ্দিনের মাসিক সচিত্র সন্ধানীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। শুধু প্রচ্ছদ নয়, এই মাসিকের অঙ্গসৌষ্ঠব বৃদ্ধির সব কাজই তিনি করেছেন। পত্রিকাটি প্রকাশের পর ১৯৫৯ সালে সন্ধানী প্রকাশনীর কাজ শুরু হলে কাইয়ুমভাই আঁকাআঁকির সব দায়িত্ব নেন। গাজী শাহাবুদ্দিনের উদ্যোগে সন্ধানী প্রকাশনী থেকে দারুণ সব বই বের হতে থাকে। তখন জহির রায়হান-কাইয়ুম চৌধুরী-গাজী শাহাবুদ্দিন ত্রয়ীর মধ্যে যে গভীর সখ্য গড়ে ওঠে, তা অটুট ছিল আজীবন। জহির রায়হান চলে গেছেন বহুদিন আগে। কাইয়ুম চৌধুরী আর গাজী শাহাবুদ্দিনের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। এখন গাজী শাহাবুদ্দিন একাকী বন্ধুর জন্য শোক করেন, গভীর শূন্যতা এখন তাঁর হূদয়ে।

 

চার

আমরা জানি, 888sport live chatকলার সব ক্ষেত্রেই কাইয়ুম চৌধুরীর প্রধান বিষয়বস্ত্ত ছিল পাখি, পাখা, নৌকা, নদী, গ্রাম প্রভৃতি। একই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম, লাল-সবুজ পতাকা আর কৃষক-শ্রমিক-মজদুর-888sport promo code-তরুণদের প্রতি কাইয়ুম চৌধুরীর ছিল প্রধান পক্ষপাত। কারণ, এসবের মধ্য দিয়েই 888sport appsকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ও চেতনা উদ্ভাসিত হয়েছে। তাঁর চিত্রকর্ম, ছড়া, 888sport app download apk ও বিভিন্ন লেখায় মূলত লোকজ 888sport apps, সংগ্রামী 888sport appsই মূর্ত হয়ে উঠেছে বারবার।

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় যখন আমাদের সঙ্গে কাইয়ুমভাইয়ের পরিচয়, তখন তিনিও ছাত্র-শিক্ষক-888sport live chatীদের মিলিত সভা-সমাবেশ-মিছিলে অংশ নিয়েছেন প্রতিদিন। সে-সময় মুক্তিযুদ্ধের আগে চারু-কারু888sport live chatীদের যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তার যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী ও মুর্তজা বশীর। মিটিং আর মিছিলে সে-সময় ব্যস্ততায় কেটেছে তাঁর। সেই দিনগুলোর কথা মনে করে কাইয়ুমভাই উদ্দীপ্ত হয়ে উঠতেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘বায়ান্ন, ঊনসত্তর বা একাত্তরের মতো দিনগুলোতে, যখন এরকম গণঅভ্যুত্থান ঘটে, তখন আমি মানসিকভাবে ভীষণ সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি। আমি সমাজ-সচেতন, রাজনীতি-সচেতন মানুষ।’

নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর কাইয়ুম চৌধুরী নতুন 888sport apps গড়তে প্রবল উৎসাহ নিয়ে বহুমুখী কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। নতুন নতুন 888sport live chatকর্ম সৃষ্টিতে আত্মমগ্ন হয়ে কাজ করেছেন। এ সময়ই তিনি গভীর বেদনা আর স্বকীয় অনুপ্রেরণা নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ছবিগুলো এঁকেছেন। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘888sport apps ’৭১’, ‘গণহত্যা’, ‘দগ্ধ গ্রাম’, ‘বন্দর জ্বলছে’, ‘মাঝিদের বিদ্রোহ’ প্রভৃতি। ‘মাঝিদের বিদ্রোহ’ (আমার বোন নিনার সংগ্রহে আছে) ছবিটা আজো যখন মাঝেমধ্যে দেখি, তখন নতুন করে উদ্দীপ্ত হই। সেইসঙ্গে ওই সময়ের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের ওই ছবিগুলোতে কাইয়ুম চৌধুরী লাল, সবুজ, নীল, হলুদ রং ব্যবহার করেছেন। এক সাক্ষাৎকারের সময় তিনি আমাকে বলেছেন, ‘সে সময়ে দেশ যে চরম উত্তেজনায় কাঁপছে, সেটা বোঝানোর জন্য আমি লাল ও 888sport app রং ব্যবহার করেছি।’

এভাবেই 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী ছয় দশক ধরে মানুষের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাংলার নদী-জল-মাটি আর লতাপাতা, পাখি, গ্রাম আর অতীত ঐতিহ্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন আমাদের। একই সঙ্গে লাল-নীল-সবুজ রং দিয়ে ভবিষ্যতের পথে 888sport appsের এগোনোর অবিচল নিশানা এঁকে দিয়েছেন। এজন্য তাঁর ছবিতে বারবার দেখি 888sport promo code-পুরুষ আর কৃষক-জনতার হাতে 888sport appsের লাল-সবুজ পতাকা।              ব্যক্তি কাইয়ুম চৌধুরীর মধ্যে রাষ্ট্র ও সমাজের সব অত্যাচার-নির্যাতন আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা এক প্রতিবাদী 888sport live chatীকে, একজন সোচ্চার মানুষকে দেখেছি।

কাইয়ুম চৌধুরী প্রবল আশাবাদী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি এক আলাপচারিতায় আমাকে বলেছেন, ‘888sport appsের মানুষের জীবনীশক্তি অত্যন্ত প্রবল। একাত্তরে তা আমরা দেখেছি। যখন গণহত্যা আর গণনির্যাতন শুরু হলো, 888sport app শহরের মানুষ তো চলে গেল গ্রামে। গ্রামের মানুষেরা নিজেরা খেতে পায় কি না পায়, সেদিকে না তাকিয়ে যাঁরা অতিথি হয়ে এসেছেন, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের একটিমাত্র কাঁথা-বালিশ, সেটাও তাঁরা এগিয়ে দিয়েছিলেন। এই যে সহানুভূতি, মানুষের সঙ্গে একাত্মবোধ, এটি 888sport appsকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ব্যাপার। আর ভালো কাজের জন্য যদি আবার দেশবাসীকে একত্র করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয়, মানুষ সাড়া দেবে। আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’

কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর মৃদু কণ্ঠস্বর অথচ আবেগভরা হূদয় নিয়ে গত ষাটের দশকের উত্থান-পতনের এক নিরলস পথিক ছিলেন। আর ৪৫ বছর ধরে কাছ থেকে তাঁর প্রায় সব কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করার ফলে একটা কথা বারবার আমাদের বুকের ভেতরে প্রতিধ্বনিত হয়, একজন মানুষ কত দিতে পারে! দীর্ঘ সময়ের এই অভিজ্ঞতা থেকে বলি, তাঁর কাছে কোনো কিছু চেয়ে পাইনি, এমন দৃষ্টান্ত নেই। বরং আমাদের সময়কালের সব অর্জনের পেছনে ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। তাই আমরা বারবার বলি, 888sport appsের সব সফলতা, যা কিছু অর্জন, তার পেছনেও ছিলেন একজন কাইয়ুম চৌধুরী।

আমরা বহু পড়েছি, বীরের মৃত্যু হয় সম্মুখসমরে, যুদ্ধক্ষেত্রে। কাইয়ুম চৌধুরী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে – মঞ্চে সংগীত নিয়ে কথা বলতে বলতে। আরো ‘একটি কথা’ বলতে চেয়েছিলেন তিনি। নিশ্চয়ই সেটা ছিল সংগীত কিংবা 888sport apps নিয়ে কোনো কথা। এরকমই মহান মৃত্যু হয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কামরুল হাসানেরও। তিনি ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে জাতীয় 888sport app download apk পরিষদের অস্থায়ী উৎসবমঞ্চে আকস্মিকভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কামরুল হাসানের জীবন ও 888sport live chatকর্ম গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল কাইয়ুম চৌধুরীকে।

গত এক মাস ধরে যখনই কোনো কাজ নিয়ে ভাবি, কোনো চিত্রকর্মের কথা মনে করি কিংবা সামান্য অবসর পাই, তখনই কাইয়ুমভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। প্রতিনিয়তই আমার সংগ্রহে থাকা তাঁর প্রতিকৃতির কাছে যাই; চোখে জল এসে যায়। যখনই তাঁর ড্রয়িং, জলরং বা তৈলচিত্রগুলো দেখি, হূদয়ের গহিনে বিরাজমান শূন্যতা আরো বেড়ে যায়।