`এটি কোনো জাদুঘর নয়’
মাগ্রিত মিউজিয়ামে একদিন

মাগ্রিত মিউজিয়ামের সামনে যখন দাঁড়িয়ে আছি তখন রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর। ব্রাসেলস শহর রোববারের ছুটির দিনে ট্যুরিস্টদের পদচারণায় মুখরিত। ওয়াফলসের ট্রাকের সামনে ক্ষুধার্ত পরিদর্শকদের আনাগোনাকে পাশ কাটিয়ে, কোনিংস্প্লাইন রাস্তার রাজসিক অট্টালিকাগুলিকে খানিক দেখে নিয়ে রয়াল মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টসের প্রবেশদ্বারের প্রাস্তে এসে দাঁড়ালাম। কোভিড-১৯ ভাইরাসের দাপটের কারণেই কি না কে জানে, তেমন ভিড় নেই। নিয়মমাফিক ই-টিকিট, কোভিড সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট আইডি দেখিয়ে বিনা আড়ম্বরেই ঢুকে পড়লাম বিশালকায় জাদুঘরটার উদরে।

ব্রাসেলসের ফাইন আর্টস মিউজিয়ামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চারটি আলাদা মিউজিয়াম, যার মধ্যে ওল্ড মাস্টার্স ও মাগ্রিত মিউজিয়াম – এই দুটি জাদুঘর 888sport live chatপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ঢুকতেই প্রথমে একটা বিশাল প্রধান হলঘর, যেখানে দুটো কাউন্টারের পেছনে ব্যস্ত ভাব নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন একাধিক রিসেপশনিস্ট। প্রধান হলঘরটি সুসজ্জিত  লাইফসাইজের বেশ কতগুলি পেইন্টিং আর বড়সড় কিছু মার্বেলের ভাস্কর্য দিয়ে। রাজসিক বিশালত্বে প্রধান ইউরোপীয় জাদুঘরগুলির কাতারে নিজের অবস্থান গৌরবের সঙ্গে জানান দিচ্ছিল বেলজিয়ামের রয়াল মিউজিয়াম। 

কিন্তু দেখার ইচ্ছা এবং প্রস্তুতি আমার ছিল কেবল মাগ্রিত মিউজিয়াম। শুধু রেনে মাগ্রিতের মূল কাজগুলি চাক্ষুষ দেখবো বলেই পাশের দেশ নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছিলাম সেদিন। বেলজিয়ামের এই নন্দিত 888sport live chatীর চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ ছিল বহু বছর থেকেই; তাঁর জাদুকরী, সুররিয়াল, রহস্যাবৃত, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবিগুলির সামনে কখনো সশরীরে দাঁড়াবো – এই ইচ্ছা অন্তরতম বাসনাদের তালিকায় উঠে গিয়েছিল যখন থেকে সেগুলি দেখেছি বিভিন্ন

প্রিন্ট-বইয়ে, ওয়েবসাইটের পাতায়। সুযোগটা যে সত্যি পাব, তা অবশ্য ভাবিনি সেভাবে। নেদারল্যান্ডসে পড়াশোনা করতে আসার সূত্রে সেটা যখন সম্ভব হয়ে গেল, তখন আর দ্বিধা করিনি কোনো, ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে চলে এসেছি মাগ্রিতের আবাসভূমিতে।

মিউজিয়ামের একজন কর্মীকে জিজ্ঞেস করে মাগ্রিত মিউজিয়ামের দিকনির্দেশনা জেনে নিলাম। চলমান সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে আরো কিছু ভাস্কর্য চোখে পড়লো। কমন এরিয়ায় সাজিয়ে রাখা এই কাজগুলিও বেশ চিত্তাকর্ষক। নিচে নেমে আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলে আরেকটা বড়মাপের হলরুম। সেখানে স্বাগত জানাচ্ছে মাগ্রিতের চিত্রকর্মের পরিচিত মোটিফগুলির একটি বক্রাকার কোলাজ। তার নিচে থেমে অবাকদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ খণ্ডিত দৃশ্যগুলি পরখ করলাম। সমুদ্রতীরে বসে থাকা অদ্ভুত মৎস্যমানব, পাতা-গাছ, সাগরের সঙ্গে মিশে একাকার জলের জাহাজ – সবকিছু যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের, মাগ্রিতের ঐন্দ্রজালিক দুনিয়ায় প্রবেশ করতে। ভক্তদের জন্য মিউজিয়ামের এমন অভূতপূর্ব সাজসজ্জা নিঃসন্দেহে জাদুঘর দর্শনের অভিজ্ঞতায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সম্মুখে তাকাতেই চোখে পড়ে দেয়ালে গ্রাফিতি করা 888sport live chatীর ছবি। কিছুটা আবছায়ায় মুখ হাতে ঢেকে দাঁড়িয়ে আছেন মাগ্রিত – ‘দ্য ম্যান ইন দ্য বোলার হ্যাট-এর স্রষ্টা হিসেবেই বিশ^ময় অধিক পরিচিত যিনি।

এই নিচতলা থেকে লিফটে সোজা তৃতীয় তলায় উঠে যেতে হয়, সেখান থেকেই প্রদর্শনীর শুরু। তৃতীয় তলায় হলগুলির বাইরে সাদা-কালো আরেকটি ফটোগ্রাফ দেয়ালে গ্রাফিতি করা। প্রথম জীবনের একটি সুপরিচিত পেইন্টিংয়ের সঙ্গে তরুণ মাগ্রিতের ছবিটি একপাশের পুরো দেয়ালকে আচ্ছাদন করে আছে। হলের ভেতরে দ্রুত পায়ে ঢুকতে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম এক বিখ্যাত পেইন্টিংয়ের ওপর … নাকি তার রেপ্লি­কা? ভালো করে দেখতে বোঝা গেল, মাগ্রিতের মাস্টারপিস ‘দিস ইজ নট আ পাইপ’-এর একটি সিকুয়াল এই স্কেচটি, যেখানে একটি পাইপের নিচে স্পষ্ট করে লেখা – এটি এখনো একটি পাইপ নয় (দিস কন্টিনিউজ নট টু বি আ পাইপ)।

মাগ্রিতের কাজের সঙ্গে পরিচিত না হলে এর মাথামুণ্ডু না বোঝাটাই স্বাভাবিক। আসলে, ছবি আর শব্দের সম্পর্ক নিয়ে রেনে মাগ্রিতের আগ্রহ ছিল আজীবনের। সম্পূর্ণ সাদামাটা একটা পাইপের ছবির নিচে ‘এটি একটি পাইপ নহে’ লিখে তিনি কেবল চমকই তৈরি করতে চান না, বরং বস্তু বা বাস্তবতা এবং তার শাব্দিক ও ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনের মধ্যকার পার্থক্য এবং তার নির্মিত রূপকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন এভাবে। তাঁর এহেন চিন্তা আদতে ফরাসি ভাষা888sport apkী সসুরের শব্দ ও তাঁর নির্দিষ্ট অর্থের মধ্যকার খামখেয়ালিপূর্ণ (arbitrary) সম্বন্ধবিষয়ক তত্ত্ব হতে উৎসারিত হয়। সসুরের তত্ত্ব অনুসারে, শব্দ ও তার অর্থের মধ্যকার সম্পর্ক প্রকৃতিগত নয়, বরং তা আরোপিত। খুব সাধারণ শোনালেও শব্দ আর অর্থের এই বিচ্ছেদ ছিল পশ্চিমা জ্ঞানজাগতিক পরিসরের জন্য, বিশেষ করে বললে উত্তর-কাঠামোবাদী সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার ক্ষেত্রে একটি বড়সড় ধাপ।১ উল্লেখ্য, ফরাসি চিন্তাবিদ, দার্শনিক মিশেল ফুকো মাগ্রিতের উল্লিখিত চিত্রটিকে কেন্দ্র করে একটি পুস্তিকা রচনা করেছিলেন।

শুরুতেই পাইপের এই ছবিটি দর্শককে মনে করিয়ে দেয় মাগ্রিতের চিত্র888sport live chatের অনন্য এক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে – তাদের ভাবনা-উদ্রেককারী বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনশৈলী। গভীর চিন্তাশীল এই চিত্র888sport live chatী কেন নিজেকে একজন চিন্তক ভাবতে পছন্দ করতেন (যিনি কি না চিত্র888sport live chatের মাধ্যমে তাঁর চিন্তাগুলির বহিঃপ্রকাশ করেন), তা তাঁর ছবিগুলির মধ্যে স্পষ্টভাবেই প্রতিভাত হয়। তবে মাগ্রিত যে কেবল ছবি এঁকেই তাঁর 888sport live chatভাবনা প্রকাশ করতেন, তা নয়। বেলজিয়ামের সুররিয়ালিস্ট 888sport live chat-আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লি­ষ্ট বিভিন্ন মুখপত্র ও জার্নালে তাঁর লেখনীরও ছিল সরব উপস্থিতি। প্রথম প্রদর্শনী হলটিতে তাঁর পুরনো রচনাগুলির অরিজিনাল কপিও রয়েছে। এর মধ্যে পরিচিত একটি 888sport live ‘লে মো এ লেজ ইমাজ’ (শব্দ এবং ছবি) চোখে পড়ে গেল। ছাপার অক্ষরে সংরক্ষিত পুরনো লেখাটা মনে একটা চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি করছিল। মাগ্রিতের স্বহস্তে লেখা চিঠিপত্রের অরিজিনাল কপিও ছিল উপস্থিত, সঙ্গে সাদা-কালো অনেক 888sport sign up bonusমধুর ছবি, যার অনেকগুলিই একক পোর্ট্রেট অথবা তাঁর সহধর্মিণী জর্জেতের সঙ্গে তোলা যুগল ছবি।

 মাগ্রিতের প্রায় সব কাজকেই নিরীক্ষাধর্মী বলা যায়, এই অর্থে যে, দর্শককে কোনো নিপাট সুরম্য দৃশ্যজগতে বেখেয়াল হারিয়ে যেতে দিতে সেগুলি তৈরি হয়নি। অদ্ভুত রহস্যময়তা এবং দর্শকের মনে ধাঁধা লাগানোর একটি গুণ প্রথম থেকেই উপস্থিত ছিল তাঁর চিত্রকর্মে – যেমনটা সাক্ষ্য দিচ্ছে জাদুঘরের প্রথমতলার এই সংগ্রহশালা। ছবিতে আরো রহস্য যোগ করে তাদের শিরোনামগুলি। যেমন, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ছোট একটি টেবিলে পেছনে ফিরে থাকা একটা চুলশূন্য মস্তক। তার ঠিক নিচেই মেয়েদের একটি পরচুলা সাজানো। মনে হচ্ছে, চারদিকে এক ধরনের জঙ্গলের আবছায়া। বারান্দার কোণে একটি আয়নার একাংশ কেবল দৃশ্যমান হয়। রহস্যে ঘেরা এ ছবিটির নাম অধিক রহস্যপূর্ণ – ‘দ্য মিডনাইট ম্যারেজ’। এভাবে অপ্রত্যাশিত চমক তৈরি করে প্রথাগত চিন্তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে মাগ্রিত সুররিয়ালিস্ট 888sport live chatীদের মধ্যে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন।

দর্শন আর 888sport live chatজগৎ নিয়ে এমন প্রবলভাবে ভাবনাতাড়িত একজন আর্টিস্ট কিন্তু কাজ করেছেন বাণিজ্যিক পরিসরেও। প্রথম হলটিতে তাঁর এই ধরনের কাজের অনেক নমুনা প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। পোস্টার, পণ্যের বিজ্ঞাপনের ডিজাইন নমুনা দিয়ে একটি ঘর ছিল ঠাসা। পুরনো আমলের পোস্টার, কভারগুলি দেখতেও ভালো লাগছিল বেশ। এমন দুটো পোস্টারের ওপরে ফরাসিতে লেখা একটি টেক্সটে চোখ আটকে গেল। 888sport app download apk latest version করলে দাঁড়ায় – জীবন বিনা কোনো 888sport live chat নেই, এর আর কোনো বিকল্প নেই। উক্তিটি মাগ্রিতের নিজের অবশ্যই। তাঁর অধিকাংশ কাজ আপাতদৃষ্টে দর্শনে প্রোথিত হলেও, তিনি যে গভীরভাবে রাজনীতি-সচেতনও ছিলেন, জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সে-সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানান দিতে সচেষ্ট ছিল।

জাদুঘরের প্রদর্শনী-কক্ষগুলোর কোনো কোনোটিতে মাঝারি আকারের পর্দায় চলছিল কিছু ভিডিও, মাগ্রিত ও সুররিয়ালিস্ট দলের বিভিন্ন সাক্ষাতের মুহূর্তের ছবি আর পুরনো ভিডিও ক্লিপের সমন্বিত অডিও-ভিজুয়াল রূপায়ণগুলো মিউজিয়ামের স্বল্প আলোকিত আবহে একটা গতিময়তা যোগ করছিল যেন। মাগ্রিতের আঁকা জর্জেতের একটি স্কেচ ও এ-সময়কালের আরো গোটাকয় ছবিকে পাশ কাটিয়ে নিচের তলার হলগুলির দিকে রওনা দিলাম। দ্বিতীয়তলার হলগুলিতে মাগ্রিতের ১৯৩০ থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে করা কাজগুলোর নির্বাচিত সংগ্রহ সংরক্ষিত আছে। ঢুকতেই প্রথম কক্ষে 888sport live chatীর জীবনের এই সময়কার অর্জনসমূহ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির ছবি এবং ফরাসিসহ তিনটি ভাষায় সংক্ষিপ্ত বিবরণীসমেত একটি বিদ্যুতালোকিত বোর্ড চোখে পড়ে। এ সময়ই তিনি উঠতি 888sport live chatী থেকে স্বনামধন্য একজন 888sport live chatী ও 888sport live chatচিন্তক হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান বিভিন্ন গ্যালারি ও মিউজিয়ামে। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তাঁকে একবার দেশত্যাগ করতে হয়েছিল বলেও জানায় টাইমলাইন। তেতাল্লি­শে বেলজিয়াম জার্মানি কর্তৃক অধিকারের সময়কালে তিনি ইমপ্রেশনিস্ট ধারায় কাজ করছিলেন। ১৯৪৫ সালে জার্মানির দখলদারিত্বের ইতি ঘটলে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

এই হলের পেইন্টিংগুলি প্রথম হলগুলির থেকে বেশ ভিন্ন, পরিণত। ১৯২৯-পরবর্তী মাগ্রিতের কাজ সুররিয়ালিজম থেকে কিছুটা সরে গিয়ে 888sport live chat ও বাস্তবতা সম্বন্ধে তাঁর নিজস্ব চিন্তাকেই যেন অধিক প্রতিফলিত করে। অন্য সুররিয়ালিস্ট 888sport live chatীরা অবচেতন মন ও 888sport live chatের মাধ্যমে তাঁর বহির্মুখী প্রকাশ নিয়ে যখন ব্যস্ত (যেমন সালভাদর দালি), তখন মাগ্রিত মগ্ন ছিলেন বস্তু এবং তার ভাষাগত ও দৃশ্যগত উপস্থাপনের মধ্যকার ভেদ বা দ্বন্দ্ব নিয়ে।২ তাঁর 888sport live chatচর্চার এহেন সচেতন চরিত্রের কারণে আদ্রে ব্রেতো, সুররিয়ালিস্টদের মধ্যে অন্যতম প্রধান 888sport live chatী, মাগ্রিতের এ-সময়ের কাজগুলোকে ‘প্রকৃত’ অধিবাস্তব 888sport live chat ভাবতে নারাজ ছিলেন। অধিবাস্তব 888sport live chatের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না থাকলেও, তাঁর পেইন্টিংয়ের কাব্যিক গুণ ছিল বরাবরের মতোই অটুট। এ পর্যায়ে তিনি রিপ্রেজেন্টেশন নিয়ে দর্শকমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হন না, বরং বস্তুর আধেয় এবং আকৃতির মধ্যেই প্রথাগত সম্পর্কগুলিকে পুনর্নির্মাণ করতে সচেষ্ট হন। এভাবে ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’-এ কবুতরগুলি পেয়ে যায় পাতার শরীর, আর ‘দ্য বেজ’-এ আস্ত পাতাগাছগুলো আগুনরঙা আলোয় উদ্ভাসিত হয়।

এ-সময়কার কতগুলি রোমান্টিক ধাঁচের পেইন্টিংয়েরও দেখা মিলে যায় এই তলাতেই। ‘দ্য নভলেত’ আর ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ ছিল এমনই দুটি চিত্রকর্ম। ব্ল্যাক ম্যাজিকের অর্ধ-নীল নগ্ন 888sport promo codeটি যে আদতে জর্জেত তা দর্শকের বুঝতে এখন আর ভুল হওয়ার কথা নয়। এই তলারই কিছু কক্ষে আবার অনেক তীব্র সমাজ-সমালোচনামূলক চিত্রকর্মও প্রদর্শিত হচ্ছিল। তার মধ্যে স্যুট পরিহিত শূকরের মুখচ্ছবিটি (‘দ্য স্ট্রোক অফ লাক) পরিচিত ঠেকলো, আগে কোনো বইয়ে দেখা বোধহয়।

এই ফ্লোর ছেড়ে শেষ প্রদর্শনীশালার দিকে রওনা হলাম, ১৯৫১-৬৭ সালের মধ্যকার 888sport live chatকর্মগুলির দেখা মিলবে এখানে, ব্যানার জানালো। এখানেও এ-সময়কার ছবিসমেত টাইমলাইনটা জানান দিচ্ছে 888sport live chatীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ। মাগ্রিতের জীবৎকালেই তাঁকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল – অজানা ফ্যাক্ট। জানতে পারলাম আরো যে, ষাটের দশকে তিনি ছবি আঁকা কমিয়ে দেন অনেকটাই এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকায় তাঁর পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন প্রদর্শনী ও রেট্রোস্পেক্টিভ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। জীবদ্দশায় যে 888sport live chatীরা তাঁদের কাজের জন্য স্বীকৃত, উদ্যাপিত হয়েছিলেন, মাগ্রিত ছিলেন সেই সৌভাগ্যবানদের কাতারে থাকা একজন।

888sport live chatীদের সেরা কাজগুলি কি তাঁদের জীবনের শেষভাগেই সম্পন্ন হয়? সবার হয়তো নয়, তবে রেনে মাগ্রিতের ক্ষেত্রে বোধহয় এটা প্রযোজ্য (ভ্যান গগের কথাও 888sport app download for android হচ্ছিল এই সূত্রে)। এই তলার শেষ কক্ষগুলিতেই তাঁর বেশ কয়েকটি মাস্টারপিস চোখে পড়ছিল ঢুকতেই। এর মধ্যে বৃহদাকার ‘দ্য ডোমেইন অফ আর্নহেইম’ পেইন্টিংটি নিজ মহিমায় এবং কিউরেশনের কৌশলে ঘরের মধ্যমণি হয়ে ওঠে। পাহাড়ের ঈগল মস্তকের ওপরে বাঁকা চাঁদটা যেন দর্শনার্থীকে সম্মোহন করতে চায়, প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো তাকিয়ে থাকে পাখির বাসার দুটি ডিম। অদ্ভুত রহস্যময় এই পেইন্টিংটির আরো কয়েকটি সংস্করণ আছে, আরেকটা অপেক্ষা করছিল পাশের কক্ষেই। এই হলের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আরো ছিল ‘ন্যাচারাল গ্রেসেজ’। পাতা আর পাখির আদলে তৈরি করা একটি ভাস্কর্যও ছিল এই কক্ষের কোণে। এই ভাস্কর্যটিকে পূর্বোল্লিখিত পেইন্টিংয়েরই ধাতব রূপায়ণ বলে মনে হয়; দুটি তাই এক কক্ষেই সংরক্ষিত।

এই হলে কিছু নতুন, অর্থাৎ আগে না-দেখা ছবি পেলাম। তার মধ্যে ‘ওয়ার্ডস অফ উইশডম’ নামে একটি ছবি মনে দাগ কেটে গেল। খুবই সাধারণ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ল্যাম্পপোস্ট, টুইস্ট এখানে একটিই – ল্যাম্পপোস্টের শিরভাগে বাতির বদলে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ শোভা পাচ্ছে। এখানকার পেইন্টিংগুলি এমনই গভীর দর্শনবোধে সিক্ত ছিল। আরেকটি প্রিয় ছবি এখানে পেয়ে গেলাম, ‘দ্য কনভারসেশন’। অতিকায় পাথুরে স্তম্ভের সম্মিলনে নির্মিত একটি প্রাচীন কাঠামোর পাদদেশে প্রায় পিঁপড়ের মতো দুই মানবমূর্তিকে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায় এই ছবিতে। মাগ্রিতের ছবি এরকম অনেক অতিজাগতিক দৃশ্যকে অবলম্বন করে অঙ্কিত হয়, আকাশে ভাসমান গোলকপিণ্ডের দল, শূন্যে ভাসমান স্যুট পরা (মাগ্রিতের আদলের) অজস্র মানুষ, আকাশে উন্মীলিত ক্যানভাস জুড়ে থাকা মেঘপূর্ণ চোখ – এরকম অজস্র ছবি তিনি এঁকেছিলেন যেগুলি দেখলে সেগুলিকে ভিনগ্রহের কোনো জগৎ থেকে উত্থিত কল্পনার ঘোরে আঁকা দৃশ্যপট বলে মনে হয়।৩, ৪ এই ছবিগুলি এখানে আর কোনোটিই দেখতে পেলাম না।

তবে জাদুঘরের শো-স্টপার চিত্রকর্মটি দেখা কিন্তু তখনো বাকি রয়ে গেছে; সেটা অপেক্ষা করছিল পাশের ঘরে। সেখানে ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানালো ‘দ্য ব্ল্যাংক পেজ’- জ্যোৎস্না-উজ্জ্বল এক নাগরিক রাত্রির গীতের মতো ভেসে ওঠে সে আধো আলো-আবছায়ায়। জাদুঘরের পেইন্টিংয়ের ফ্রেমগুলিও কিন্তু বেশ তারিফ করার মতো, এই পেইন্টিংয়ের ফ্রেমটা দেখে মনে হলো আবারো। আরো লক্ষ করলাম যে, কাব্যিক এই চিত্রকর্মটি মাগ্রিতের জীবনের শেষ বর্ষে আঁকা। হলটির কোণে স্যুট পরা মাগ্রিতের একটি পেইন্টিং – সমুখে একটা পাইপ মুখকে আড়াল করে। এই সিরিজের ছবিগুলির মধ্যে অধিক জনপ্রিয় ‘সান অফ ম্যান’ (সমুখে পায়রা) আর ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য বোলার হ্যাট’ (সমুখে আপেল) – এই পেইন্টিংগুলি অবশ্য জাদুঘরে অনুপস্থিত।

এই সময়কালের ছবিগুলির মধ্যে 888sport live chatীর মৃত্যুভাবনা ও সময়কেন্দ্রিক চিন্তা, কিউরেশনের গুণেই হয়তো, বেশ লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। যেমন আলাপরত দুই বন্ধুর ভঙ্গিতে পাঁচিলে বসে থাকা দুটো কফিন (‘ওয়ান ফাইন লেইট আফটারনুন’) হয়তো জীবন সায়াহ্নের অবশ্যম্ভাবী পরিণতির কথাই 888sport app download for android করিয়ে দিতে চায়। আবার প্রস্তরীভূত একটি আপেল দিনের শেষে বেলাভূমিতে একলা অপেক্ষমাণ – এ-চিত্রটিও (‘দ্য প্লেজ’) কেমন এক প্রচ্ছন্ন বিষাদ আর ভাবালুতায় নিমগ্ন।

888sport sign up bonus (১৯৪৮)

এই হলের শেষ ভাগে দেখা পাওয়া গেল তাঁর ‘দ্য এম্পায়ার অব লাইটস’। ছবিটির বিষয়বস্তু প্রায় সাধারণ – সান্ধ্য আবছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাড়ি। কোনো ধাঁধার খেলা নেই, ভাসমান বস্তু নেই, হাস্যকর বা অদ্ভুতুড়ে কোনো অসামঞ্জস্য তুলছে না কোনো প্রশ্নের আঙুল। তবু এটার সামনে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। কারণ কী এই যে, ছবির বাড়িটি মাগ্রিতের নিজেরই ছিল? উত্তর জানা নেই, তবে ছবিটার সামনে সম্মোহিতের মতো দাঁড়িয়েছিলাম আমিও। সামনাসামনি দেখে লক্ষ করলাম যে, ছবিটা বেশ বড়সড়, আর্নহেইমের ছবিগুলির মতোই।

প্রদর্শনীর শেষ ছবিগুলি দেখতে দেখতে যখন বেরোচ্ছি তখন মনে হচ্ছিল, হ্যাট পরা কেতাদুরস্ত 888sport live chatীর এই জাদুঘরটি যেন তাঁর উদ্দেশে নির্মিত এক সাধনালয়ের মতো। কত দেশের, কত ভাষাভাষী মানুষের আগমনই না প্রতিদিন ঘটছে এখানে। 888sport live chatপ্রেমী দর্শনার্থীদের জন্য এই জাদুঘরগুলি প্রায় তীর্থস্থানের সমতুল্য। বহু দেশ থেকে বহু পথ ঘুরে বহু যুগ আগেকার পূজনীয় কোনো 888sport live chatীর প্রকৃত সৃজনসমূহের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য, কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাদের মহিমার ভাগীদার হওয়ার জন্যই তো দর্শনার্থীদের আসা। উন্নত বিশে^ 888sport live chatের অবস্থান এবং সমাদর ও মূল্যায়ন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় জাদুঘরের অন্দরমহল ও তার নিয়ত পরিচর্যার নমুনা দেখে – 888sport live chatতীর্থে আসা জনসাধারণের জন্য যা এক বাড়তি প্রাপ্তি।

জাদুঘর দেখা শেষে তবু মনে কিছুর অভাববোধ বুঝি থেকে যায়। মাগ্রিতের সবচেয়ে পরিচিত মাস্টারপিসগুলি – ‘দ্য লাভার্স’, ‘ম্যান ইন দ্য বোলার হ্যাট’, ‘গ্র্যান্ড ফ্যামিলি’, ‘গলকোন্দা’সহ আরো অনেক – মাগ্রিত মিউজিয়ামে অনুপস্থিত কেন? মনে পড়লো, আমস্টারডামে ভ্যান ঘগ মিউজিয়ামেও কিছু মাস্টারপিস ছিল না, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বহুল নন্দিত পেইন্টিং ‘স্টারি নাইট’। বিখ্যাত পেইন্টিংগুলির বিশ^জুড়ে এই ছড়িয়ে থাকা, ভিনদেশে আবাস খুঁজে নেওয়ার পেছনের গল্পগুলি অনেকাংশেই অর্থের ইশারায় লিখিত হয়। মিউজিয়াম ছাড়াও ব্যক্তিগত সংগ্রহে লুকিয়ে থাকে অজস্র পেইন্টিং, সকলের অগোচরে।

বেরোনোর পথে পড়লো মিউজিয়াম শপ – যেখানে ঢোকা প্রায় আবশ্যক কর্মের মধ্যে পড়ে। ভক্তরা সেখানে বিবিধ রকমের স্যুভেনিরের ওপর হামলে পড়ে – মাগ্রিতের হ্যাটের আকারের কি-রিং থেকে তাঁর আর্টের বিখ্যাত সব মোটিফ ব্যবহার করে যত প্রকার ছোটখাটো স্যুভেনির কল্পনা করা সম্ভব, পোস্টকার্ড, বুকমার্ক, বই, পোস্টার, নোটবই, টি-শার্ট, ফ্রিজ ম্যাগনেট – সবই মিলবে এই বিপণন কেন্দ্রে। এরকম মার্চেন্ডাইজে সমৃদ্ধ পশ্চিমা সব খ্যাতনামা 888sport live chat-জাদুঘরই। লোভনীয় এই মিউজিয়াম বিপণিগুলি জাদুঘরকে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান করছে নিশ্চিতভাবেই। লক্ষ করলাম, মাগ্রিতের যে কাজগুলি মিউজিয়ামে অনুপস্থিত ছিল, সেগুলির ছবিসমেত স্যুভেনিরও উপস্থিত এই সংগ্রহে। কিছু স্যুভেনির নিয়ে এ যাত্রা মিউজিয়াম থেকে বিদায় নিলাম। বাইরে তখন বিকেল গড়িয়ে গেছে, তবু তেরছা হলদে রোদ ব্রাসেলসের বারোক ধাঁচের দালান ও প্রাসাদগুলির চূড়ায় চুম্বন করে চলেছে। দিনের শেষ বিদায়ী চুম্বন।

এই শহরের নিজস্ব আলোই তো মাগ্রিতের পেইন্টিংয়ে ঘুরেফিরে আসে! নিজ চোখে দেখে যেমন মাগ্রিতের আকাশকে আরেকটু ভালো অনুভব করতে পারা যায়, তেমনি ব্রাসেলসের আকাশকেও যেন দেখতে পেলাম তখন মাগ্রিতের শৈল্পিক চোখে।

গ্রন্থপঞ্জি

১. James Harkness, 1983, Translator’s Introduction, This is Not a Pipe by Michel Foucault, University of California Press.

২. Britt, David (ed.), 2013, Modern Art : Impressionism to Post-Modernism, New York : Thames and Hudson.

৩. Oesterreicher-Mollwo, Marianne, 1979, Surrealism and Dadaism, Oxford, Phaidon.

৪. Marcel Paquet, 2015, Magritte, Taschen Books.