হাসনাতভাইকে নিয়ে লিখতে বসেছি, ভাবছি, কোথা থেকে শুরু করব। তাঁকে কীভাবে চিনি, কবে থেকে চিনি, আমার জীবনে তাঁর ভূমিকা ও উপস্থিতি – এ-কথাটুকু বলা সহজ; কিন্তু এর অভিব্যক্তি অসীম।
১৯৯০-৯১ হবে, একজন শান্ত সুদর্শন সৌম্য অমায়িক ভদ্রলোক প্রায়ই 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষকদের রুমে আসতেন। আমিও তখন চারুকলায় পড়াই। সে-সময় সামান্য সৌজন্য ও কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, জানলাম তাঁর নাম আবুল হাসনাত। আমার পরম সৌভাগ্য যে, আমরা প্রিন্টমেকিং বিভাগের সকল শিক্ষক এক রুমে বসতাম – কিবরিয়া স্যার, সফিউদ্দীন স্যার, আলভী স্যার, মাহমুদুল হক স্যার – না হলে হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা-পরিচয় কিছুই হতো না।
হাসনাতভাই স্যারদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। বিশেষ করে কাইয়ুম স্যারের সঙ্গে তাঁর অনেক কাজ থাকত। আমি নিজে খুবই লাজুক স্বভাবের। হাসনাতভাইও তাই। যাঁরা তাঁকে চেনেন তাঁরা সবাই তাঁর লাজুক স্বভাব সম্পর্কে অবগত। ফলে প্রথমদিকে শুভেছাবিনিময় ছাড়া আমাদের কথা আর বিশেষ এগোয়নি। একদিন সবাই মিলে, মানে কিবরিয়া স্যার, সফিউদ্দীন স্যার, হাসনাতভাইসহ আমরা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে গিয়েছিলাম। সেদিনই প্রথম হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়। জানতাম তিনি দৈনিক সংবাদের 888sport live footballপাতার সম্পাদক। পত্রিকা নিয়ে আমার আগ্রহ দেখে জিজ্ঞেস করলেন আমি ইলাস্ট্রেশন করতে চাই কি না। এখানে আমার জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ লাভ। অনেক বড় বড় 888sport live chatী তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন। এখন হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন, এ আর এমন কী! তবে একজন 888sport promo code চিত্র888sport live chatী হিসেবে সে-সময় আমার সামনে এমন কোনো 888sport promo code চিত্র888sport live chatীর উদাহরণ ছিল না। কেউ তেমন হাতও বাড়িয়ে দেননি। এক অর্থে আমার চলার পথ মসৃণ ছিল না। আমার মনে তখন অনেক স্বপ্ন, সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথ, কারণ আমি শুধু একজন চারুকলার শিক্ষক হয়ে থাকতে চাইনি; আমার স্বপ্নের আকাশটা ছিল অনেক বড়, বিস্তৃত। তবে এর আগেও যে ইলাস্ট্রেশন করার সুযোগ আসেনি তা নয়, কিন্তু তা ছিল নিয়মবদ্ধ সাজানো ড্রইংয়ের অনুরোধ। আমার তাতে মন ভরছিল না। এমন মন-কেমন করা সময়ে হাসনাতভাইয়ের আহ্বান। তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, আমার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে ড্রইং ও গঠনশৈলীর বিষয়ে। তিনি 888sport live chatীকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতেন নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে ইলাস্ট্রেশন করতে। হাসনাতভাই এই উদারনৈতিক চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে এদেশের ইলাস্ট্রেশন ধারণায় একটা বিপ্লব সাধন করে গেছেন নিঃসন্দেহে।
যা হোক, তাঁর সেই প্রস্তাবে আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। আমার জন্য একটা কল্পনার দ্বার যেন খুলে গেল। তিনি গল্প দিতেন আর আমি আমার মতো করে ইলাস্ট্রেশন করে দিতাম; প্রকৃত অর্থে সেগুলো ড্রইংই ছিল। এভাবে আমার ফিগার ড্রইং ক্রমে একটা স্বকীয় চরিত্র নিতে থাকল, দৃঢ়ভাবে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ হাসনাতভাইয়ের কাছে। সে-সময় সংবাদ পত্রিকার বেশির ভাগ কাজ করতেন কাইয়ুম স্যার। সুতরাং সেখানে জায়গা করে নেওয়া বা সুযোগ পাওয়াটা ছিল এক অর্থে কঠিন কাজ ও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু হাসনাতভাইয়ের আনুকূল্যে ও অনুপ্রেরণায় আমি একটা জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম বলেই মনে হয়।
এই লেখাটা লিখতে বসে ভাবছিলাম হাসনাতভাই থাকলে এর মধ্যে কতবার মৃদু তাগাদা দিতেন, ‘রোকেয়া লিখছেন তো?’ মানুষকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার ওঁর একটা সহজাত প্রতিভা ছিল। যখন আমি প্যারিস থেকে ফিরে আসি, তখন তাঁর বারবার তাগিদেই প্যারিসের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা লেখা লিখে ফেলি; যা ছাপা হয় সংবাদে। এখন ভাবি, হাসনাতভাইয়ের সেই ‘তাগাদা’র কারণেই আমার এমন একটি মূল্যবান অভিজ্ঞতা ছাপার অক্ষরে নথিবদ্ধ হয়ে থাকল। কারণ 888sport sign up bonus ক্রমশই ধূসর হতে থাকে। আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা নিয়েও তিনি লেখার তাগিদ দিতেন। প্রায়ই বলতেন, ‘লিখে ফেলুন রোকেয়া’। কিন্তু আমার স্বভাবজাত আলসেমির জন্য তা আর লেখা হয়ে ওঠেনি। হয়তো ভবিষ্যতে লিখব, কিন্তু তখন তো আর হাসনাতভাইকে দেওয়া হবে না।
হাসনাতভাই চলে যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এসব রচনার মধ্য দিয়ে তাঁর আরো অনেক নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে আমার সামনে। লেখাগুলো পড়ে ভাবছিলাম, হাসনাতভাই আমাদের মাঝে থাকা অবস্থায় যদি এসব আলোচনা হতো তাহলে কতো ভালো লাগত তাঁর। তিনি জানতে পারতেন সবাই কত উপকৃত হয়েছেন তাঁর দ্বারা।
হাসনাতভাই যখন কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্ব নিলেন তখন আমারও সুযোগ এলো এই অসাধারণ 888sport live football পত্রিকায় কাজ করার। এই পত্রিকায় বিভিন্ন 888sport free betয় আমার কাজ পত্রস্থ হয়েছে। ইলাস্ট্রেশন করেছি ধারাবাহিক 888sport alternative link, গল্পের। এক্ষেত্রেও হাসনাতভাইয়ের প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেওয়া ও মৃদু তাগাদা থাকত। শুধু আমাকে নয়, অনেক 888sport live chatীকেই ইলাস্ট্রেশন করতে উৎসাহিত করেছেন তিনি। এরকম আর কে হবে?
হাসনাতভাইয়ের মতো অত্যন্ত পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান কিন্তু প্রচারবিমুখ মানুষ আজকের সময়ে বিরল। আমার পরিবারের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিবারের নিবিড় সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁর একমাত্র কন্যা গুণী সংগীত888sport live chatী দিঠি হাসনাতের সঙ্গে আমার কন্যা লরার বন্ধুত্ব গাঢ় হলো। তাঁর স্ত্রী বিশিষ্ট সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, আমাদের মিনু ভাবি, আমার ও রুমির বন্ধু হলেন। পেলাম তাঁর অপত্য স্নেহ-ভালোবাসা। এভাবেই হাসনাতভাইয়ের অনেক সুহৃদ, 888sport live footballিক, সাংবাদিক, 888sport live chatী বন্ধু আমাদেরও চলার পথের সহযাত্রী হলেন। হাসনাতভাই কত সময় যে তাঁর সুচিন্তিত মতামত দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না।
তিনি কালি ও কলমের দায়িত্ব পেয়ে নানাদিক থেকে একে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর সেই প্রয়াসে সর্বতো সহযোগিতা করেছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। ফলে দিন দিন পত্রিকাটি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর রূপ ধারণ করে উপমহাদেশ তথা বাংলাভাষার একটি বিশিষ্ট 888sport live football পত্রিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
কালি ও কলম যেন লেখক ও অঙ্কন888sport live chatীদের মিলনক্ষেত্র। 888sport appsের প্রায় সকল খ্যাতিমান চিত্রকরকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এ-পত্রিকায়। পত্রিকাটির এক-একটা 888sport free bet যেন এক-একটা অ্যালবাম। ২০২০ সালের ছায়ানটের ক্যালেন্ডারে কাপড়ের ওপর আমার ম্যাডোনার ছাপ হাসনাতভাইয়ের আরেকটি উদ্যোগ। প্রায়ই হাসনাতভাইকে বলতাম, ‘আপনার জন্যই আমার ড্রইং ও রেখা নতুন ফর্মের উপলব্ধিতে আত্মস্থ হলো।’ তবে সে-সময়ও তিনি তাঁর স্বভাবজাত হাসিমুখে চুপ করে শুনতেন; কিছু বলতেন না।
জীবন সতত বয়ে চলে এর গতিতে। এই ছুটে চলায় কিছু মানুষ শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও আমাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ জুগিয়ে যান তাঁদের কর্মযজ্ঞ দিয়ে। ঈশ্বরের দান হাসনাতভাই তেমনই একজন ছিলেন।
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, আজীবন 888sport live footballঘনিষ্ঠ নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ হাসনাতভাইকে 888sport live football-সংস্কৃতি-888sport live chatের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। এখন মনে হয়, হাসনাতভাইকে নিয়ে এত লেখা এত আলোচনা তিনি কোথাও থেকে নীরবে হাসিমুখে দেখছেন, শুনছেন। যেখানেই থাকুন হাসনাতভাই আমার হৃদয়ের গভীর 888sport apk download apk latest version গ্রহণ করুন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.