রিয়া চক্রবর্তী
আচ্ছা, বাল্মীকিই কি একমাত্র মানুষ, যিনি প্রথম শ্লোক উচ্চারণ করে বিস্মিত হয়েছিলেন? প্রথম আবেগকে নিজেরই অজান্তে বেঁধেছিলেন শব্দে? নাকি প্রতিটি সৃষ্টির সঙ্গেই প্রতিবার স্রষ্টার মনে জন্ম নেয় বাল্মীকির প্রথম সেই বিস্ময়? আসলে মনের প্রতিটি আবেগ, প্রতিটি ভাংচুর দ্বিতীয় সত্তা হয়ে কথা বলে আমাদের মনের সঙ্গে। দীর্ঘ, দীর্ঘ সেইসব আলাপন পর্ব। সেই দ্বিতীয় সত্তারই অভিমানের আঁচড়ে 888sport live football জন্ম নেয়, আনন্দের তুলির টানে ছবি আর অভিজ্ঞতার পলি থেকে দর্শন উঠে আসে, প্রথম খসড়ায়, পরিমার্জনাহীনভাবে।
সৃষ্টির ঠিক কোন ভাঁজে আমাদের চাওয়া-পাওয়া মিশে থাকে আর ঠিক কোথায় গিয়ে তা আমাদের অনির্বচনীয়কে ছুঁয়ে যায়, সে-রহস্য আজো আমাদের মনে হাতছানি দেয়। তন্নতন্ন করে খুঁজি সে-পথের দিশা। উত্তর হয়তো একটা পাই, কিন্তু সে-উত্তর তৃপ্তি দেয় না মনে।
এক কবি বলেছিলেন, ‘ব্যাকরণ জানা থাকলে আর শব্দের ভা-ার বৃহত্তর হলেই 888sport live football লেখা যায় না।’১ তাঁর মতে, শব্দগুলোকে প্রতিদিনের অর্থ থেকে বিমুক্ত করতে পারলে তবেই 888sport app download apkর জন্ম হয়, তা 888sport live football হয়ে ওঠে। চেনা শব্দ চেনা গ-িতে থাকলে সে আমাদের দিন-প্রতিদিনের কথোপকথন হতে পারে, কিন্তু তা 888sport live football হয় না। তখনই আনাড়ি কারিগর কলম তুলে বসে ভাবে, নাহ্, মন তো 888sport app download apk latest version হচ্ছে না, ভাব তো ভাষায় এসে মিলছে না। কবি বলছেন – ‘যেহেতু আমরা কলিংবেল টিপতে পারি, সাইকেলবেল বাজাতে পারি তাই আমরা একটু চেষ্টা করলেই বা ইচ্ছে হলেই সঙ্গীত রচনা করতে পারি এরকম কথা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করি না।’২ কিংবা, ‘দরোজায় রং লাগাতে পারলেই কিন্তু চিত্রকর হওয়া যায় না।’৩ তাই তিনি দেখতে পান 888sport promo codeপ্রেম থেকে জাত-প্রেমের 888sport app download apkয় প্রিয়তম মুখটি কীভাবে নেপথ্যে গিয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে সেই ভালোবাসা চেনা গ-ি পেরিয়ে, দিগন্তকে ফেলে কেবলই, কেবলই প্রসারিত হয়ে যেতে থাকে। কবি বলেন, ‘অভিজ্ঞতাকে সময়ের পটভূমিতে স্থাপন করতে পারাটাই লেখকের আসল প্রতিভা।’৪
ভাব ও ভাষার এই খেলাটাই আজ আমরা অনুভব করতে চেষ্টা করব সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিজেকে ঠিক তোমার জন্যে’ নামক 888sport app download apkকে কেন্দ্রে রেখে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই কবিরই কিছু বক্তব্যকে পূর্বের অনুচ্ছেদগুলিতে আমরা বন্ধনীর বন্ধনে রেখে পড়েছি। শামসুল হকও আসলে প্রাচীন অনাদি সেই প্রশ্ন – কাব্য আসলে কী? এর উত্তর খুঁজতে চেয়েছিলেন।
এই 888sport app download apkয় কবি দেখছেন একটি মন স্থির হয়ে বসে চারপাশের কর্মচাঞ্চল্যকে দেখছে। দেখছে লক্ষ্যকে সামনে ঝুলিয়ে সব খুঁড়োই তিন ঘণ্টার রাস্তা এক ঘণ্টায় পার হতে চাইছে। তাদের সেই চাওয়ার দ্রুততা, পাওয়ার তৎপরতা সভ্যতাকে আরো সুসভ্য করে তুলছে, বিলাসী করে তুলছে, বহির্মুখী করছে। যোগ্যতার প্রমাণ দিতে দিতে আমরা যোগ্যতর থেকে যোগ্যতম হয়ে উঠছি, কিন্তু নিজের কাছে? বুকের গভীরে জমা হওয়া দিন প্রতিদিনের গল্পটাও কি একই কথা বলে? কেবলই যোগ্য হওয়া? কেবলই জিতে যাওয়া? নাকি জিততে চেয়ে হেরে যাওয়া, দুহাত বাড়িয়ে পেতে চেয়ে সবকিছুকে হারিয়ে ফেলার লেখচিত্রও আছে সেখানে? কবি লিখছেন –
সকলেই কিছু না কিছু করছে – তৈরী করছে বাড়ি, কেউ জাহাজ, কেউ তরবারি।
কেবলই গড়ছে, সাজাচ্ছে, সভ্যতাকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর করে চলেছে। আর তারপর? –
এখন তারা যুদ্ধ করছে, একটা কিছু বাঁচিয়ে রাখতে তুলে ধরছে নিজের হাতে বানানো তরবারি।
তারা সরগরম করে তুলছে এ-পৃথিবীকে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরাকে তরবারির বেষ্টনে, জাহাজের পক্ষীরাজে চরিয়ে তারা তাদের সফলতার ঘর-বসত তৈরি করছে। ঠিক যেমন তাদের চাওয়া, যেমন তাদের কল্পনা। কিন্তু বসুন্ধরা বা সেই প্রেম বা সেই প্রিয়তম ঘ্রাণ কী চায় আমাদের কাছে, কখনো কি ভেবেছি আমরা? ভাববার প্রয়োজন অনুভব করেছি? প্রস্তুত করেছি নিজেকে? হয়তো না। কবি তাই লেখেন –
…আমার নিজেকেই তো তৈরি করা শেষ হলো না যে তোমার দিকে নতুন একটা হাত বাড়িয়ে হাত ধরতে পারি।
শুধু বাণিজ্য, শুধু যুদ্ধ, শুধু রাজপ্রাসাদ আর ঐশ্বর্যের দম্ভ নয়, প্রেমের জন্য কখনো প্রেমিকের দৃষ্টিকে কি প্রস্তুত করেছি আমরা? ভালোবেসে ভোগে না গিয়ে নির্বাণে গিয়েছি কি কখনো? বিনা শর্তে এ-সাম্রাজ্যকে ছেড়ে প্রেমে কাঙাল হতে কি পেরেছি আমরা? ইতিহাস বলে পারিনি, ভূগোলের রাজনৈতিক মানচিত্র বলে – না, পারিনি। কবি বলেন –
আমার দুটো হাত ছিলো তা অনেক আগেই
কাটা গেছে, আমার দুটো পা ছিলো সে অনেক আগেই ভুলে গেছে হাঁটা, আমার দুটো চোখ ছিলো তা অনেক আগেই
নগ্ন রোদ পুড়িয়ে দিয়ে গেছে
চোখের তারা
কবে যেন সব রূপ ধুয়ে গেছে, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে রং, জীবন হারিয়ে গেছে বাঁচার কু-লী থেকে। আমরা বুঝতে পারিনি, জীবন কখন আমাদের ফাঁকি দিয়ে, নিজের শেকলে আমাদের নিজেদেরকেই বন্দি করে রেখে গেছে। শীর্ণ অশত্থের ডালে যে-চাঁদ আটকে আছে সে কোনো প্রেমের মাধুকরীর ফল নয়, সে শুধু অমাবস্যার আসন্ন তিথিকেই কেবল ঘোষণা করে। যক্ষপুরী কোনোদিন ফসলের গান গায় না। ফসিল হয়ে যাওয়া প্রাগৈতিহাসিককে কেবলই খুঁড়ে তুলি, প্রাণকে ধরতে পারি না। কবি আবার বলেন –
তোমার মতো সে আছে যার
তার দরকার কি বাড়ি কিংবা জাহাজ, তরবারি?
তুমিই তাঁর বাসা এবং দূরে যাবার যান
… … …
এবং বাঁচিয়ে রাখার জন্যে দরকার তো
তুমিই সে ব্যক্তিগত তীক্ষè তরবারি।
কিন্তু বাইরের ঐশ্বর্যকে ফেলে, মনকে দম্ভের আবরণ থেকে মুক্ত করে দেখি দুঃসহ এক কাঙাল রৌদ্র সেই করোটি জুড়ে। দহন-ক্লান্তি-শূন্যতা কেবল সেখানে। চেনাই হয়নি তাকে, তার মতন করে। এ ব্যর্থতা কি প্রেমের? নাকি সময়ের? নাকি আত্মার? এ পরাজয় কার? সময় ও কালবেলার হিংস্রতার? নাকি ঘনকৃষ্ণ সেই আত্মার আবরণের? জানা নেই, শুধু জানি 888sport free betর পিঠে 888sport free bet বসিয়ে প্রাচীন হয়েছি আমরা কিন্তু সঞ্চয় হয়নি রসদ। অনাদি থেকে অনন্তের স্রোতে জলের ছাপ কাটার মতন এতটুকু বেদনাকে জমাতে পারিনি, রাখিনি অশ্রুর সঞ্চয়। তাই সে কঠিন ভূমে অশ্বারোহীর ক্ষুরধ্বনি তুলেছে, কিন্তু কোনো নূপুর বাজেনি। তাই ভালোবাসতে চেয়েও দুয়ার খুলতে পারিনি আমরা। স্বপ্নকে প্রজাপতির উড়ান শেখাতে পারিনি। কবির কথায় বলতে গেলে বলতে হয় –
…নিজেকেই তো তৈরি করা শেষ হলো না
যে হাত বাড়িয়ে ধরতে পারি,
যে পা বাড়িয়ে সঙ্গে যেতে পারি,
যে চোখে আবার স্বপ্নগুলো জমা রাখতে পারি,
যে তোমার সঙ্গে এক আসনে বসে আবার
শ্লোক রচনা করতে পারি।
না হয় অনেক দেরী হয়েই গেছে –
তবু এখনো তো পারি, আগের মতোই পারি,
… … …
যেমন লোকে বানায় বাড়ি, জাহাজ, তরবারি –
আমি আমার নিজেকে ঠিক তোমার জন্য তৈরি করে
হাত বাড়াতে পারি এবং
সঙ্গ দেবার জন্যে আবার পা বাড়াতে পারি।
এভাবেই শুদ্ধতার উজানযাত্রায় গিয়ে আবারো রক্ত-ক্লেদ আর গ্লানিকে মুছতে পারি আমরা, হয়তো, এখনো।
আচ্ছা এ কি কোনো প্রেমের আখ্যান? সে-আখ্যান কি 888sport promo codeর? না নদীর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যার ঢেউ প্রাজ্ঞ হয়েছে? কার কাছে কবি হাঁটু মুড়ে বসেন? কার জন্য প্রস্তুত করেন নিজেকে? বারবার প্রশ্নের সাঁকো ধরে সীমা অসীমের দিকে চলে যায়। ব্যক্তিজীবন ব্যাপ্ত জীবনের উদ্দেশে যাত্রা করে।
মনে পড়ে যায় কবির তেইশ বছর বয়সে লেখা এমনই আরেক প্রেমের 888sport app download apk – ‘একদা এক রাজ্যে’তে কবির হাহাকার জেগে উঠেছিল, জেগে উঠেছিল অবশ্যম্ভাবী এক পরাজয় একটি পঙ্ক্তি অথবা একটি প্রশ্নে। কবি সেই প্রিয় অনুভবের কাছে নতজানু হয়ে জানতে চেয়েছিলেন –
আমি কি দেখেছি তোমাকে তোমার বিদায়ে?
প্রতিহত তীব্র ধ্বনির মতো একটা জগৎ ছিল
যা গেছে;
জেগে উঠবো, আবার, এভাবে, তোমাকে বিদায় দিতে
একদা এক রাজ্যে।
এভাবেই সময়ের গ্রহণ লেগে আমাদের প্রেম থমকে গেছে, হৃদয় হারিয়ে গেছে কোনো চোরাপথের বাঁকে। তাই প্রেম কখন যেন ফোরানোর আখ্যান হয়ে গেছে, এই 888sport app download apkর ব্যাখ্যায় কবি নিজেই যা বলেছেন তা শুনতে শুনতে বুঝব চেনা ছবি, চেনা শব্দ কীভাবে 888sport app download apk হয়ে যায়, চিরন্তনের জলছবি হয়ে যায়, এখানেই 888sport live footballের ম্যাজিক, স্রষ্টার সার্থকতা। শামসুল হক বলছেন –
‘888sport app download apkটি প্রেম বিষয়ক হলেও, 888sport promo code এখানে 888sport promo code শুধু নয়; আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ করে তোলে, উন্নত করে তোলে, অগ্রসর করিয়ে দেয়, সব ও সব কিছুই সে।… আমরা এই ভূমিতে ক্রমাগত পিষ্ট হতে হতে এক বিকট গহ্বরে পতিত হয়েছি; আমাদের সমস্ত শ্রেয়োবোধ ভেঙে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে, আমি অসহায় বোধ করছি, নষ্টে আমি নিক্ষিপ্ত হচ্ছি, অশ্রু আমাকে প্লাবিত করছে, আমি জানছি যে, আমি ভেঙে ও ভেসে যাবো, কিন্তু না, এটিই শেষ কথা নয়; আমি রক্তবীজ পাখির মতো আবার জেগে উঠবো ভস্ম থেকে, আবার জন্ম নেবো, এবং আবার হারাবো, আবার হবো, ও আবার পরিণত হবো ভস্মে – চক্রাকারে আমি ফিরে ফিরে আসবো।’৫
সত্যিই তো, মানুষ পরাস্ত হতে পারে, পরাজিত নয়, আর এই অপরাজয়ের আকাক্সক্ষার নামই তো প্রেম।
তথ্যসূত্র
১ প্রতিদিনের ভাষা ও 888sport live footballের ভাষা, মার্জিনে মন্তব্য : গল্পের কলকব্জা, 888sport app download apkর ফিমিয়া, সৈয়দ শামসুল হক, প্রতিভাস, পৃ ৩১, সংস্করণ, জানুয়ারি, ২০০৮।
২। ওই, পৃ ৩০।
৩। ওই, পৃ ৩০।
৪। ভাব আছে ভাষা নেই, ওই, পৃ ৩৪।
৫। একদা এক রাজ্যে এবং গদ্যছন্দ, ওই, পৃ ২৭১।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.