888sport promo codeর অতৃপ্ত বাসনা থেকে প্রতিটি পরকীয়া সম্পর্কের শুরু, কিন্তু শেষ হয় পুরুষের অসহিষ্ণুতা থেকে। ঠিক দুশো আটাত্তর দিনের মাথায় মাহমুদ আর সীমন্তিনীর সম্পর্কটা ভেঙে গেলে এই কথাটাই মনে এসেছিল মাহমুদের। কীভাবে শুরু হয়েছিল সম্পর্কটা? মাহমুদ ভাবতে চেষ্টা করে।
একটা জমজমাট অনুষ্ঠানশেষে মঞ্চ থেকে নেমে আসছিল। তখনই এক তরুণী সামনে এসে পথ আগলে দাঁড়ায়। পাশ কাটাতে গেলেই তরুণী বলে ওঠে, ‘আমি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।’
‘হ্যাঁ, বলেন।’
‘আমি আপনার ফেসবুকে কয়েকটা মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি উত্তর দেননি।’
‘হ্যাঁ, আমি সাধারণত অচেনা কোনো মহিলা নক করলে উত্তর দিই না।’
‘আমি একটা পত্রিকা সম্পাদনা করি। আমিই প্রধান সম্পাদক। ওই পত্রিকার জন্য আপনার একটা লেখা প্রয়োজন।’
‘আচ্ছা, আরেকবার ফেসবুকে নক করবেন। চেষ্টা করবো।’
কথাটা বলেই মাহমুদ পাশ কাটিয়ে চলে আসে। আসতে আসতে দেখতে পায় ওই তরুণী খুব দ্রুত সরে গিয়ে আরেকজন বিখ্যাত লেখকের পাশে বসে সেলফি তুলছে। এবার একটু দূরত্ব থেকে তরুণীকে মাহমুদ দেখে। আসলে খুব কাছে থেকে তো কোনো দেখা সম্পূর্ণ হয় না। দৃষ্টিবিভ্রম ঘটে। মাহমুদ লক্ষ করে, তরুণীটি মোটামুটি সুশ্রী, যদিও আহামরি কিছু নয়। ফেসবুকে কয়েকবার নক করেছে। মাহমুদ পাখির চোখে তরুণীর ফেসবুক ওয়ালটাও দেখেছে। কিন্তু কথা বলার তেমন আগ্রহ খুঁজে পায়নি।
তরুণী লেখাই চেয়েছিল। কিন্তু এরকম তো কতজনই চায়। লেখা চাইলেই যে লেখা হয়ে ওঠে তা তো নয়। ফলে, অনেকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তরুণীর ফেসবুক মেসেজেও তাই তেমন উৎসাহ দেখায়নি। কিন্তু রাতেই আবার নক করে সে।
‘কথা বলতে পারি?’ এই মেসেজটা মাহমুদের চোখে পড়ে অনেক পরে। ইনবক্সে খুব একটা ঢোকা হয় না, বা হলেও অনেক পরে-পরে মেসেজগুলো দেখে মাহমুদ। বেশিরভাগ মেসেজই মাহমুদ ইগনোর করে। এই মেসেজটাও তার চোখে পড়েছে অনেক দেরিতে। উত্তরটাও তাই দেরিতেই দিতে হলো।
‘বলেন, ওহ্, আপনার অনেক আগের মেসেজ। বলেন, এখন আমি ইনবক্সে আছি।’
কিছুক্ষণ পরেই তরুণীর উত্তর : ‘আপনার সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় কথা হয়েছিল। মনে আছে?’
‘হ্যাঁ, আছে। বলেন।’
‘না, ওই লেখাটা …।’
‘হ্যাঁ, লেখা হয়ে উঠলে দেবো তো বলেছি।’
‘তাড়াতাড়ি দিলে ভালো হয়। আমাদের এবারকার 888sport free betটা খুব শিগগির বেরুবে।’
‘আচ্ছা, দেখছি, তাড়াতাড়ি পাঠাতে পারি কি না।’
মাহমুদ নীরব হয়ে যায়। তার অভিপ্রায় হচ্ছে কথা আর কনটিনিউ না করা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার তরুণীর মেসেজের নোটিশ ল্যাপটপে ভেসে ওঠে।
‘আপনাকে আমি অনেক আগে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম। 888sport live chatকলা একাডেমীতে ছিল সেই অনুষ্ঠানটা। আপনি 888sport app download apkর ওপর চমৎকার বলেছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।’
কী উত্তর দেবে মাহমুদ, ভেবে পায় না। সাধারণত নিজের প্রশংসা শুনলে ভালো লাগার পাশাপাশি সে বিব্রতই বোধ করে বেশি।
‘আচ্ছা।’ ছোট্ট এই মেসেজটা দেয়।
‘জানেন, তখনই আমি আপনার ভক্ত হয়ে পড়ি। কী চমৎকার বলেন আপনি।’
এবারো মাহমুদ নীরবতার পথই বেছে নেয়। কারণ, এখন তরুণীর মুগ্ধতা বুঝি অন্য কিছু ছুঁয়ে দিতে চাইছে। কী সেটা, অনুরাগ, না অন্য কিছু? মাহমুদ তো জানে, যে মেয়েরা প্রগলভ হয়, পরিচয়ের পরপরই সেই মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি চুপসে যায়। পেঁয়াজের যে ঝাঁজ সেটা শুরুতেই থাকে। পরে আর তার রেশ থাকে না। এই মেয়েটিকেও তার তাই মনে হচ্ছে। মাহমুদ তাই সংক্ষেপে উত্তর দেয় :
‘তাই? অনেক ধন্যবাদ।’ খুব সতর্ক মাহমুদ। সে জানে, ফেসবুক একধরনের ফাঁদ। এই সতর্কতার মধ্যেই লেখালেখি সম্পাদনা নিয়ে কথা বলার পরই তরুণীটি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে আনে। আজ কি মাহমুদ মনে করতে পারবে, কী ছিল সেই কথাগুলো?
মনে পড়ে যায়, ফেসবুকের আরেকটা ইনবক্সে একটা গানের লিংক চলে এসেছিল। ‘আজো আছে গোপন ফেরারি মন।’ শ্রেয়া ঘোষালের গান। দূরের আরেক বন্ধু। কত কত গান যে সে পাঠায়। বন্ধুত্বটা এমনই। শুধু গান পাঠায়। মাহমুদ আর সে, পরস্পরের মধ্যে কোনো কথা হয় না। শুধু গানবিনিময় করে। বন্ধুত্বটা এতটাই প্রগাঢ় যে, তার গান একদিন না এলে মাহমুদ শঙ্কিত হয়ে পড়ে। মনের মধ্যে একধরনের কু-ডাক দেয়। ভালো আছে তো সুরবালা? সুরবালা নামটা সেকেলে। রবিবাবুর একটা গল্পের নায়িকার নাম। বন্ধুটি যেদিন ইনবক্সে প্রথম একটা গান পাঠায়, সেদিনই নামটা হুট করে মাথায় চলে আসে। নামটা মাহমুদই ধার করেছে রবীন্দ্রনাথের একটা গল্প থেকে। গল্পটা খুবই ট্র্যাজিক। যে-বন্ধুটি গান পাঠায়, সে কিন্তু জানে না তার একটা নাম দিয়েছে মাহমুদ। সুরবালা। এরকম একটা সেকেলে নাম দিয়েছে শুনলে সে নির্ঘাত তেড়েফুঁড়ে বলবে :
‘এই, আমার এই নামটা আপনাকে কে দিতে বলেছে? এত সেকেলে নাম!’
‘কেউ না, আমার মনে হয়েছে তাই দিয়েছি। সেকেলে, ঠিক। কিন্তু যে আমাকে শুধু সুরই পাঠায়, মানে গান, তার এমন একটা নাম হতে পারে না?’
‘কিন্তু নামটা তো সেকেলে। রবীন্দ্রনাথের ‘একরাত্রি’ গল্পের নায়িকার নাম। আমি কি আপনার একরাতের বন্ধু?’
‘না, অবশ্যই নয়। আমরা তো জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধু।’
‘হুম, সেই তো। গানের ভেলায় ভেসে চলা দুই বন্ধু।’
‘আমি আপনাকে শুধু গান পাঠাই, আর তো কিছু নয়।’
‘তাতেই আমার স্বস্তি। কিন্তু যদি বলি, আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী, বলো কোন পারে গিয়ে ভিড়িবে তোমার সোনার তরী।’
‘আবার রবি এসে ভর করলো আপনার ওপর? যান, দেখুন হয়তো কোনো সুন্দরী আপনার ইনবক্সে অপেক্ষায় আছে।’
ইনবক্সে? তাই তো, মাহমুদ ভুলেই গিয়েছিল আজ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে দেখা তরুণীটির কথা। ফেসবুকেই তো কথা হচ্ছিল। এবার সেখানে ফিরল মাহমুদ।
‘এই যে, আপনি আছেন ইনবক্সে?’
‘হ্যাঁ আছি। কিন্তু আমার অভিমান হয়েছে। অনেকক্ষণ আপনার দেখা নেই।’
কী উত্তর দেবে মাহমুদ, ভেবে পায় না। এতক্ষণ সে সুরবালার সঙ্গে কথা বলছিল। কথা বলছিল এমনটা কী বলা যাবে? আসলে সুরবালার সঙ্গে যে কথা হয়েছিল, তার সবটাই মাহমুদের কল্পনা। গানের ভেলায় যে তাকে ভাসায়, তার সঙ্গে ফেসবুকে মাহমুদের কখনো কথা হয় না। একটা কথাও না। শুধু বিনিময় হয় গান। একজনের ভালো লাগা গান আরেকজনকে পাঠায়। এইটুকু। এই সম্পর্কের বেশি কিছু নয়। আজো কোনো কথা হয়নি। তরুণীর উত্তরটা তাই সে সহসা দিতে পারে না।
‘না বলেন, গান শুনছিলাম।’
‘কী গান?’
‘আজো আছে সেই ফেরারি মন …।’
‘এটা আমারও প্রিয় গান। অনেকবার শুনেছি। কিন্তু জানেন, মনের হদিস আজো পাইনি।’
মেয়েটি কী চায়? সামান্য কোনো ব্লেড দিয়ে কি বিশাল কোনো মহীরুহের কাণ্ড কেটে ফেলা যায়? মাহমুদ লেখে :
‘কিন্তু আপনার দুঃখটা তো বুঝলাম না। আপনার ওয়াল যতটা দেখেছি, সুখী একটা পরিবারই তো মনে হলো আপনাদের।’
‘হ্যাঁ, ওপরে ওপরে সুখী। আমি সুখী সুখী ভাবও করে থাকি। এক ছেলে আর মেয়ে। হাজব্যান্ড রাজনীতি করে। কত তার নাম-ডাক। সুখী তো বটেই।’
এরপর তরুণীর ইনবক্সে খইয়ের মতো নানান কথা ফুটতে থাকে। কত যে কথা, কথার শব্দ। শব্দগুলো মাহমুদের চোখের সামনে ফুটতে থাকে। ফুটন্ত এই ইনবক্স থেকে মাহমুদ যে চোখ সরাবে, তাও পারছিল না। এরই মধ্যে কখন যে ভোর হয়ে এসেছে। টের পায়নি। একটা খটকা মনের মধ্যে থেকেই যায়। কোনো বিবাহিত 888sport promo code কি সারারাত ধরে কোনো পুরুষের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারে? পারা কি সম্ভব? পাশেই তো স্বামীপ্রবরের শুয়ে থাকবার কথা। এমনকি ছেলেটিরও তো ওই একই বিছানায় থাকবার কথা! মনের মধ্যে জীবনানন্দের একটা 888sport app download apk ঘনিয়ে আসে, শিশুটিও ছিল পাশে, তারপরও কোন ভূত দেখেছিল সে! ভাবতে ভাবতে শেষরাতে মাহমুদের ক্লান্ত চোখে ঘুম নেমে আসে। মাহমুদ শুয়ে শুয়ে চ্যাট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। তরুণীটি টের পায়, মোবাইলের ওই প্রান্তটা কখন যেন নীরব-নিথর হয়ে গেছে।
মাহমুদের মনে পড়ে, এরকমই কেটেছিল প্রথম রাত। পরদিন তরুণীটি সরাসরি জানিয়েছিল, মাহমুদের প্রতি সে অনুরক্ত। এটাই হয়তো ভালোবাসা।
দুই
ভালোবাসা? কী অদ্ভুতভাবে মাহমুদ জড়িয়ে পড়লো তরুণীটির সঙ্গে। ফেসবুকের সূত্রে আগেই তো নামটা জানা ছিল। দ্বিতীয় দিনে নিজের নামটা জানিয়ে সীমন্তিনী বললো, তাকে ছোট্ট করে সীমা বলতে হবে। সীমা? না, হ্রস্ব-ই-কার দিয়ে নয়, দীর্ঘ-ই-কারযুক্ত সীমাই সে থাকতে চায়। নামটা নাকি তার ভীষণ প্রিয়। কিন্তু নামটাতে একটা সীমাবদ্ধতার ভাব আসে না? মাহমুদের তাই ওই নামে সায় ছিল না। সে আরো দু-তিনটি বিকল্প নাম বলে। যেহেতু সীমন্তিনীকে তার বেশ প্রাণবন্ত বা বর্ণিল মনে হয়েছিল, তাই সে একটা নাম দেয় – ‘পাতাবাহার’। সীমন্তিনী এই নামটা পছন্দ করে। ইনবক্সে আরো দু-রাত কথা বলে সীমন্তিনী। কিন্তু চতুর্থ দিনেই মাহমুদকে সতর্ক করে দেয় সীমা। আজ রাতে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারবো না। বলা বাহুল্য, আপনি সম্বোধনটা ততদিনে তুমিতে নেমে এসেছে। কিন্তু এটা কী বলা হলো তাকে? গত চার রাত ধরেই তো কথা বলছিল সীমা, আজ তাহলে কেন বলতে পারবে না? কী হলো আসলে? অসুস্থতা নয়তো?
ব্যাপারটা ঠিক বুঝে ওঠার আগেই সীমা বা পাতাবাহার বলে, আজ সে ফিরবে। সে মানে তার হাজব্যান্ড। তার স্বামী সপ্তাহান্তের দু-তিনদিন, শুক্র-শনিবার গ্রামে গিয়ে কাজ করে। সামনেই তো ইলেকশন। এখন থেকেই জনগণের মধ্যে গ্রাউন্ড তৈরি করছে। এবার জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়াবে। প্রতি বৃহস্পতিবার তাই এক ডাক্তার বন্ধুকে নিজের গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় নিয়ে যায়। সেখানে সে একটা দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছে। ডাক্তার বন্ধুটি সেখানে গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেয়। লোকে অবশ্য অন্য কথা বলে। সব হলো মানুষ ভোলানো কায়কারবার। ইলেকশনে দাঁড়াবে তো, তাই ডাক্তার এনে জনগণের সেবা করছে। পরে, জিতে গেলে, এই জনগণেরই ঘাড় মটকাবে। সেই দেশসেবক স্বামী আজ গ্রাম থেকে ফিরবে। সীমা আজ তাই প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু রাত পোহালেই পারবে। রাজনীতির কারণে পার্টি অফিসে, অমুক নেতা তমুক নেতার কাছে ধরনা দিতে হয়, সারাদিনই চলে এই তদবির। ফলে, সকাল নয়টা-দশটা বাজতে না বাজতেই তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। স্কুলপড়ুয়া ছেলে আর কলেজপড়ুয়া মেয়েকেও ড্রাইভারই পৌঁছে দেয়। আর তখনই সীমা ফ্রি, নিজের বিছানাটাকে আকাশ বানিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে থাকে।
প্রথম সুযোগেই বিছানায় শুয়েই মেসেঞ্জারে কল করে মাহমুদকে। মাহমুদের তখনো ঘুম ভাঙেনি। একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক মাহমুদ। ‘প্রতিভা’ নামে একটা প্রকাশনা সংস্থা আছে বাংলাবাজারে। সেটাই সে দেখাশোনা করে। দেখাশোনা বলতে কর্মচারীদের চালায়, কখন কী করতে হবে নির্দেশনা দেয়। মূল নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে নিজেই।
‘কী গো রাজকুমার, ঘুম ভাঙলো।’ সীমার মেসেঞ্জার ফোন।
‘ভাঙলো কই, তুমি না ভাঙালে কী আর ভাঙে।’
‘কিন্তু আমি তো গতরাতে তোমাকে একটুও ডিসটার্ব করিনি। নিশ্চয়ই সারারাত ধরে লেখালেখি করেছো?’
‘নাহ্, তোমার বিরহে ভুগেছি।’
‘আহা রে, কী কথা।’
‘সত্যি বলছি।’
‘তাহলে প্রমাণ দাও যে তুমি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসো।’
‘কী রকম?’
‘আমাকে এই মুহূর্তে পাঁচ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠাও।’
‘মানে?’
‘তুমি যে আমাকে ভালোবাসো, এর মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। টাকার চাইতে নিশ্চয়ই আমার গুরুত্ব তোমার কাছে বেশি, তাই না?’
‘হ্যাঁ’, অনেকটা দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলে মাহমুদ। ঘুমটা ছুটে যায়, কিন্তু গলায় কথারা আটকে গেছে। উত্তরটাও জড়িয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে, ‘টাকাটা দিয়ে কী করবে তুমি?’
‘এত কথা কেন জিজ্ঞেস করছো। আমার দরকার, তুমি দেবে। অনেকদিন হয় বেশকিছু কসমেটিক্স ড্রাই হয়ে গেছে।’
‘বুঝলাম না!’
‘তুমি মেয়েদের জিনিসের কী বুঝবে? আরে, একজন আমার জন্য মালয়েশিয়া থেকে কসমেটিক্স কিনে এনে উপহার দিয়েছিল। গতকাল দেখি তার ভেতরকার অনেকগুলি লিপস্টিক একেবারে ড্রাই হয়ে গেছে, মা গো …।’ সীমা আর্তনাদ করে ওঠে। আর্তনাদের শব্দ শুনতে পায় মাহমুদ।
‘কে দিয়েছিল ওগুলা? তোমার সেই আর্কিটেক্ট প্রেমিক, যার অফিসে এক শুক্রবারে প্রথম দেখা করতে গেলে রেইপড মতো হয়েছিলে?’
‘আবার তুমি ওই লোকটার কথা মনে করালে?’
‘না, না, থাক। আর কিছু বলবো না। আমি তো কেবল ঘুম থেকে উঠলাম। তোমাকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি। এখন রাখছি।’
মাহমুদ ঝট করে ফোনটা কেটে দেয়। তারপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে মনে পড়ে যায় অনতিদূরের ঝাপসা হয়ে আসা দু-তিনটি বছরের কথা।
ফাহমিদা, ফাহমিদাই তো! অনেকটা এরকমই ছিল। এক বইমেলায় পরিচয়। গল্প লেখে আর শৌখিন মডেল। আহামরি সুন্দরীও নয়। তবে এমন কিছু 888sport promo code আছে যারা ঝকঝকে মেকআপ আর কথা বলার সপ্রতিভ ভঙ্গির কারণে পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, ফাহমিদা অনেকটা এরকমই। প্রথম দেখা হওয়ার মুহূর্তে পরিচয় হওয়া ছাড়া আর কিছু ঘটেনি।
মাহমুদ তখন একা। নিঃসঙ্গ। উদ্ভান্ত। বইমেলা থেকে ফিরে গিয়ে ফাহমিদা সেই রাতেই তাকে ফেসবুকে নক করে। পরপর কয়েক রাত। নিজের সব কথা মাহমুদকে খুলে বলে। আঠারো বছর বয়সে সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। দুই বছরের মাথায় আসে পুত্রসন্তান। এরপর পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবন। সন্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা ঘর, আলাদা বিছানা। ফুলের মতো প্রস্ফুটিত ফাহমিদাকে কাছে টেনে নেওয়ার আগেই ভ্রমরের মৃত্যু হতো। কখনোই তার মধু পান করা হতো না। সন্তানটির জন্ম যে কীভাবে হয়েছিল, ফাহমিদার কাছে সে এক বিস্ময়। এর অনেকদিন পর ফাহমিদা নয় বছর জড়িয়ে ছিল ইংল্যান্ড-প্রবাসী এক পুরুষের সঙ্গে। কিন্তু তার শেকড় ছিল ইংল্যান্ডে। এক বঙ্গললনার পরাশ্রয়ে। কথা888sport live footballিক হিসেবে সেই বঙ্গললনার বেশ খ্যাতি। তো ফাহমিদা তার সঙ্গে পেরে উঠবে কী করে? ওই পুরুষটি 888sport appয় এসে ফাহমিদার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন দুই রাত যাপন করে গেলেও তাকে সে ধরে রাখতে পারেনি। আর তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার মুহূর্তেই মাহমুদের সঙ্গে বইমেলায় তার পরিচয়। মাহমুদও তখন বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভীষণ একা। পৈতৃক বৈভব আর ব্যবসায় তার মন নেই। নিজের লেখার ঘরের বাতাসও নিজের কাছে ভারী মনে হয়। ফাহমিদার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই এই নরককুণ্ড থেকে সে এসে দাঁড়িয়েছিল নীলনির্জন প্রেমের অবারিত দিগন্তে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই একটা শর্ত জুড়ে দিলো ফাহমিদা।
‘শোনো, তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এর অর্থ হলো, আমার সব দায়-দায়িত্ব তোমার। আমার চলার জন্য যত টাকাই লাগুক, দিতে হবে। না হলে কোনো সম্পর্ক আমি রাখবো না।’
‘কেন, তোমার হাজব্যান্ড তো তোমাকে যথেষ্টই টাকা-পয়সা দেয়। তুমিই তো আমাকে বলেছো? আর্মি অফিসার!’
‘না, ওতে আমার হয় না। আমার ড্রেস, মডেলিং, কসমেটিক্স – এসবের জন্য অনেক টাকা লাগে। তুমি জানো না, মডেলিং করি নিজের জন্য। এই মডেলিং করি বলেই লোকে আমাকে চেনে, গুরুত্ব দেয়। পুরুষেরা আমার সঙ্গে কথা বলে কৃতার্থ হয়ে যায়। তোমার তো এজন্য অহংকার হওয়ার কথা। তোমার গার্লফ্রেন্ডকে কত কত পুরুষ পছন্দ করে।’
ফাহমিদার কথা শুনে স্তম্ভিত মাহমুদ। নিশ্চিত বুঝতে পারে, ফাহমিদা ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছে। সেই ফাঁদেই পা দেয় মাহমুদ। একটা বড় অংকের টাকা মাসে মাসে দিতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে ব্যবসার কিছু টাকা একজনের কাছে আটকে গেলে সেই মাসে দিই দিই করেও ফাহমিদার টাকাটা দেওয়া হয় না। এতেই ফুঁসে ওঠে ফাহমিদা। টাকা পাওয়ার আগের দিনগুলোতে ফাহমিদা বেশ নরম সুরে কথা বলতো। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় আর যোগাযোগই করলো না। এর মধ্যে একদিন বিকেলে, ফাহমিদাকে ফোন করে মাহমুদ। ফোনের ওই প্রান্তে কলগুঞ্জন। মাহমুদ প্রশ্ন করে :
‘কোথায় তুমি?’
‘এই তো একটা অফিসে?’
‘অফিসে মানে?’
‘আমার এক মেয়েবন্ধু আমাকে নিয়ে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। একটু পরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।’
ফোনটা কেটে দেয় ফাহমিদা। তারপর কেটে যায় পুরা একটা রাত। পরদিন দুপুর পর্যন্ত কোনো ফোন আসে না। বিকেলে আবার ফাহমিদাকে ফোন করে মাহমুদ। প্রথমে ফোন রিসিভ না করে কেটে দেয় ফাহমিদা। তিনবারের বার ফোন ধরে। ফোনের ওই প্রান্তে আবার সেই কলগুঞ্জন। ‘পরে ফোন করছি’ বলে আবারো ফোন কেটে দেয়। কিন্তু সেই রাতে কোনো ফোন করে না ফাহমিদা। পরদিন ছিল শুক্রবার। মাহমুদের ইচ্ছা ছিল ওইদিন সে ফাহমিদাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসবে। গাড়ি চালাবে নিজেই। আগে প্রায়শই এভাবে বেড়াতে বের হতো মাহমুদ আর ফাহমিদা। কিন্তু অন্যদিন ফোন ধরলেও সকাল এগারোটার দিক থেকেই দেখে ফাহমিদার ফোন বন্ধ। দিনে আরো সাত-আটবার ফোন করে একবারও সে ফাহমিদার ফোন খোলা পায় না। ভীষণ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কচ্ছপের গতিতে দিনটা শেষ হয়। রাত যখন দশটা, তখন ফাহমিদার ফোনে রিং হলেও ফোনটা সে ধরেনি। এগারোটার দিকে ফাহমিদার ফেসবুক ওয়ালে চোখ রাখতেই একটা ছবি দেখে চমকে ওঠে মাহমুদ। ছবিটা এমন – অচেনা এক সুন্দরী 888sport promo code মডেল তার হাতদুটো ডানার মতো মেলে ধরে যেন উড়ছে। ছবির সঙ্গে এই কথাগুলো লেখা, ‘আবার এলো যে প্রেম, এলো …।’ ফাহমিদাকে মাহমুদ বিলক্ষণ চেনে। তার মনে যখন যে-ভাবের উদয় হয় বা বাস্তবে ঘটে, তারই প্রতিফলন দেখা যায় তার ফেসবুকে। হয় কোনো অর্থবোধক ছবি দেয় অথবা লেখে একটা কিছু। ফেসবুক ওয়ালের ছবিটা দেখে আজকাল ফাহমিদা কী করছে, বুঝতে পারে। সম্পর্ক শেষের সূচনা যে ঘটে গেছে, ওই সাংবাদিক-বিন্দুতে যে লাটিমের মতো সে ঘুরছে, সেটা বুঝতে তার বাকি থাকে না। কিন্তু মাহমুদ বুঝতে পারে না, ফাহমিদার টাকার কি এতই প্রয়োজন! অনেক উত্থান-পতনের পরও তো ফাহমিদার সঙ্গে তার স্বামী সম্পর্কটা টিকিয়ে রেখেছে। একই ছাদের নিচে দুজনে থাকে। সংসার চালানো আর ফাহমিদার যাবতীয় হাতখরচ তো সে-ই দেয়। এরপরও ফাহমিদার টাকা চাই। একটা মাস শুধু মাহমুদ দিতে দেরি করছে, তাতেই এই অবস্থা। পরপর কয়েকদিন। ফাহমিদার ওয়ালে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ানোর ছবি। ঘুড়ি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, মাহমুদের কাছে মনে হচ্ছে বিন্দুর মতো আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। একসময় দেখতে পায়, সুতোর এ-প্রান্তটা ছিন্ন হয়ে গেছে। কিছু নেই। শূন্য।
নেই তো নেই। মাহমুদ আর ফাহমিদার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। কিন্তু তার কানে আসে বইমেলায় নতুন প্রেমিকের সঙ্গে ফাহমিদার ঘুরে বেড়ানোর কথা। কিন্তু প্রেমিকের স্ত্রীটি ঝানু গোয়েন্দা। একদিন স্বামীর মানিব্যাগ হাতড়ে কোনো একটা শাড়ির দোকানের ক্যাশমেমো দেখে প্রচণ্ড খেপে যায়। তারপর যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘটে, তাতে ফাহমিদার ঘুড়ি হয়ে খোলা আকাশে ওড়ার শখটা মিটে যায়। গোত্তা খেয়ে সেই যে ভূপাতিত মর্মাহত হয়ে কিছুদিনের জন্য ঘরমুখো হয়, নতুন করে এক ডাক্তারের সঙ্গে পরিচয়ের পূর্ব পর্যন্ত জনসমক্ষে তাকে দেখা যায়নি।
এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। নিজের নিয়তিকেই অনিবার্য বলে ভেবেছিল মাহমুদ। কিন্তু মানুষের মিলনই বোধহয় মৌলিক, না হলে সীমন্তিনী আসবে কেন তাঁর জীবনে! কিন্তু এ কেমন আসা? পরিত্যক্ত জীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে ভারবাহী গাধার মতো আবারো নদী পার হতে হবে তাকে? মানুষ কবে বুঝবে যে সেতুটাই আসল, দূরত্ব সামান্যই। এই দূরত্বটা স্বামীর সঙ্গে সামাজিকভাবে কুয়াশাঘেরা ছিল ফাহমিদার। যুগলবন্দি হয়ে তারা আজ মালয়েশিয়া যাচ্ছে তো কাল থাইল্যান্ড, পরশু সাজেক যাচ্ছে তো তরশু কক্সবাজার। লোকে বোঝেই না, তাদের কোনো দাম্পত্যজীবন নেই। সীমন্তিনীরও একই অবস্থা। এক স্থপতি আনাড়ি কবির সঙ্গে সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। প্রথম দিনই, সীমন্তিনীর ভাষায় এক ছুটির দিনে তার নির্জন অফিসে গেলে রেপড হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ছুটে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তারপরও সেই লোকটির সঙ্গে সীমন্তিনী সম্পর্ক রেখেছিল। সে-ই তাকে অনেক কিছু উপহার দিত। মালয়েশিয়া থেকে লোকটা সীমন্তিনীর জন্যে দামি দামি লিপস্টিকসহ অনেক কসমেটিক্স কিনে এনেছিল। মাঝেমধ্যে শাড়ি-সালোয়ারও কিনে দিত। ওই লোকটির সঙ্গে এখনো সীমন্তিনীর সম্পর্ক আছে। হয়তো আজীবনই থাকবে। কিন্তু মাহমুদের সঙ্গে শরীরীতৃপ্তিতে ভেসে যেতে যেতে সীমন্তিনী যখন মিষ্টি মিষ্টি ঢেঁকুর তোলে, তখন সে ‘জান’, আর বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলেই বমি বমি ভাব আসে। কদিন হয়তো স্বামীর বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে ফেসবুকে বইয়ে দেয় বিমর্ষ স্ট্যাটাসের ঢল, আবার কিছুদিন গেলেই স্বামীর সঙ্গে কণ্ঠলগ্ন হাসিখুশি অজস্র ছবির স্রোত! একদিকে ফেসবুক বন্ধুদের আহা-উহু, অন্যদিকে কৌতুকমিশ্রিত মিছরির হাসি। এসবের মাঝে কোনো প্রেমিকের কি স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ আছে, অথবা আনন্দযাপনের?
এসব 888sport promo code আসলে কী চায়, ভেবে পায় না মাহমুদ। এই যে দ্বৈতজীবন, এই যে দ্বিচারিতা, এই যে দ্বিখণ্ডিত (হয়তো-বা তারও বেশি) হৃদয়, এর শেষ কোথায়! এমন নয় যে মাহমুদ নীতিবাগিশ মানুষ। পরকীয়ার ব্যাপারে তার কোনো ইনহিবিশন নেই। তবে দ্বৈততায় মাহমুদের আস্থা নেই। মনে পড়ে গেল বৈষ্ণব 888sport app download apkয় এরকম কি যেন একটা তত্ত্ব আছে – অদ্বৈত-দ্বৈতবাদ। জীবাত্মা রাধার সঙ্গে পরমাত্মা কৃষ্ণের একইসঙ্গে সংযুক্তি ও বিযুক্তি, এই দুই ধরনের সম্পর্ক। কিন্তু নিজের জীবনে এমনটা ঘটবে, মাহমুদ মেনে নিতে পারে না। বিশেষ করে কোনো সম্পর্কের মধ্যে ‘অর্থ’ এলেই সেই সম্পর্ককে মাহমুদ নিরর্থক মনে করে। সীমন্তিনীকে তাই ফোন করে কী বলবে, মাহমুদ বুঝে উঠতে পারে না। ফোনটা হাতে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে : ‘সীমন্তিনী, আমি টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েছি।’ সীমন্তিনীর গলায় দারুণ উচ্ছ্বাস : ‘উমম, জান …’, মানে ভার্চুয়াল চুমু।
এবার মাহমুদ ঠান্ডা গলায় বলে : ‘এখন থেকে তুমি আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। ভালো থেকো।’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.