অমিয় দেব
আমার 888sport apps
সুশীল সাহা
যুক্ত
888sport app, ২০১৯
৪০০ টাকা
যে -মাটিতে আমরা জন্মাই ও বেড়ে উঠি তা যদি ছেড়ে আসি, তার কি এক টান থেকে যায় না? কিন্তু যদি এমন হয় যে, যেখানে এলাম সেখানেও বেড়ে ওঠা চলতে থাকে, অর্থাৎ এক দ্বিতীয় শেকড় সেখানেও গাড়া হয়, তাহলে কি ওই টানটাই অমোঘ হয়ে থাকবে? যদি সত্তারই এক নবজন্ম হতে থাকে, তাহলেও? সম্প্রতি সুশীল সাহার আমার 888sport apps বইটা পড়ে এই প্রশ্ন চাগিয়ে উঠল। আমার জন্ম অবিভক্ত ভারতের অসম প্রদেশের বাংলাভাষী সিলেটে, যা দেশভাগে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি তখন ক্লাস সেভেনে। ১৯৫১-য় আমি 888sport app বোর্ডের ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতা চলে আসি কলেজে পড়তে, আর সিলেট ফিরে যাইনি।
সুশীল সাহার জন্ম অবিভক্ত বঙ্গের খুলনায় (যদিও পূর্বপুরুষের ভিটে যশোরে), দেশভাগের একটু আগে। তিনি বড়ো হয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানে। তাঁর স্কুল তো বটেই কলেজও (শেষ পর্যন্ত) খুলনায়, বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ – যা পারিবারিক কারণে খুব এগোয়নি – রাজশাহীতে। খুলনাই তাঁকে মানুষ করেছে, তাঁকে ভূষিত করে তুলেছে নানান গুণে। তিনি কবি-লেখক-সম্পাদক বা চিত্রকর বা নর্তক কি গায়ক কি অভিনেতা কি নির্দেশক, তথা এক আগাগোড়া সংস্কৃতিসাধক হয়ে উঠতেন না যদি খুলনার সারস্বত পরিবেশ পেতেন। তাঁর শিক্ষকভাগ্য এবং সহপাঠী ও বন্ধুভাগ্য ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি নিজেও ছিলেন সতত আগ্রহী; তাই এমন আত্তীকরণ ঘটতে পেরেছিল। কোনো খাদ ছিল না তাঁর খুলনাপ্রেমে। হোক না পূর্ব পাকিস্তান (দেশভাগ তো তাঁর একান্তই শৈশবকালীন ঘটনা, কোনো তাৎকালীন বোধ নিশ্চয়ই হওয়ার ছিল না), এই মাটি-জল-হাওয়াই তো তাঁকে পুষ্টি জুগিয়েছে। তাঁর বর্ণপরিচয়, তাঁর নামতা-শেখা সবই এই পূর্ব পাকিস্তানের গন্ধ গায়ে মেখে। পূর্ব পাকিস্তানি হিন্দু হয়েই তিনি বড়ো হচ্ছিলেন। তবে হিন্দু ছেলেদের যে-স্কুলে তাঁকে প্রথম পাঠানো হয় তা তাঁর ভালো লাগেনি। দ্বিতীয় স্কুল ছিল তাঁর কাছে আদর্শ, সেখানে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান সব রকমের সহপাঠীই তিনি পেয়েছিলেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে তাঁর স্থায়ী বন্ধুতাও হয়েছিল। তারা এখন কে কোথায় আছে তাও তিনি জানেন।
খুলনায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছিল না, তবে চৌষট্টিতে এক দাঙ্গা হয়। তাঁর স্কুল সবে শেষ হয়েছে। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হলো; এবং ভর্তিও করা হলো কলকাতার এক কলেজে। কিন্তু দাঙ্গা মিটতেই তিনি খুলনা ফিরে এলেন, বা খুলনাই তাঁকে ফিরিয়ে আনল। কলকাতা কোনো মোহ রচনা করতে পারেনি তাঁর মনে। ফিরে যে-দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে তিনি ভর্তি হলেন, তাতে বিদ্যাচর্চার কোনোই অভাব ছিল না : তাঁর অধ্যাপকদের জ্ঞানে ও নিষ্ঠায় তিনি অভিভূত। এক অধ্যাপককে তো তাঁর এতটাই ভালো লাগল যে, তিনি তাঁর ভক্ত হয়ে উঠলেন। আর সেই কায়কোবাদ স্যারেরও তিনি নিকট স্নেহ পেলেন। পরে তাঁর স্ত্রী মুক্তি মজুমদারেরও। বস্তুত এক আত্মীয়তাই যেন গড়ে উঠল যার ছেদ নেই। বুঝি খুলনারই অচ্ছেদ্যতার এক প্রতীক? এমনি আরো প্রতীক তাঁর আছে। যেমন জেলখানা ঘাট, উল্লাসিনী সিনেমাহল, সার্কিট হাউস ময়দান, বন্ধু আলতাফ বা রুমি বা আনোয়ারদের বাড়ি।
সুশীল সাহারা ভারতে চলে আসেন ১৯৭০-এ। অনিচ্ছায়, যেন অযাত্রা। মন পড়ে রইল পিছনে। কিন্তু সেই পিছন একটু বেসুরো লাগল যখন ’৭২-এ একবার এলেন, পারলে থেকে যেতে। কিন্তু রূঢ় বাস্তব তখন সদ্যোজাত 888sport appsের। সুখের না হলেও উত্তর চব্বিশ পরগনার নতুন ঠাঁই-ই তাঁর সই। তেইশের সুশীল সাহার অভিমান ঘুচবে তেত্রিশে এসে। ততোদিনে তাঁর প্রত্যয় বেড়েছে। তবে কোনো নবনির্মাণ ঘটেনি, তাঁর সত্তার যে-নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল তেইশের মধ্যেই তাতে মাটি লেগেছে। খুলনার সুশীলেরই বয়স বেড়েছে দশ বছর। ঠিকানা কলকাতামুখী হাবড়া বটে কিন্তু সত্তার সাকিন খুলনাই। ১৯৮২ সালে তাঁকে ডাক দিলো 888sport apps। তদবধি সেই ডাকে তিনি সাড়া দিয়ে চলেছেন (‘সে এক পরম রমণীয় অন্তর্যাত্রা।’)। আমার 888sport apps বইটি তারই সাক্ষী। কেউ কেউ যে তাঁকে দুই বাংলার সেতু মনে করেন সেই সত্যেও ছেয়ে আছে এই পঁয়তাল্লিশটি নিবন্ধ। তবে কোনো ১ ২ ৩-এর যৌগিত অঙ্কই মাত্র নয় তারা, ৩ ১ ২-এর সারল্যও তাদের আছে।
বস্তুত, কিছু কথা ঘুরে ঘুরে আসছে, যেন খানিকটা ‘লাইটমোটিভ’। যেমন খুলনার সেন্ট যোসেফ স্কুল ও তথায় তাঁর সহপাঠী বন্ধুবর্গ। ছাব্বিশটি নামের এক আস্ত তালিকা। কখনো প্রমুখ সহযোগে তাদের অনেকের উল্লেখ। কে কী রকম, কার কোথায় বাহাদুরি, কার বাড়িতে কত লোভনীয় ঈদের ভোজ ইত্যাদি ইত্যাদি যত বন্ধুবাৎসল্যের অভিজ্ঞান। সেন্ট যোসেফের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্লাটিনাম জুবিলিরও এক বিবরণ আছে যাতে ঢের প্রাক্তনীর সমাগম হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কোনো কোনো নিকট বন্ধু তো ততোদিনে মৃত, যেমন আলতাফ। আবার যারা বেঁচে আছে তাদের কেউ কেউ তো কেমন পালটেও গেছে। কিন্তু যে পালটায়নি সে আনোয়ার, যাকে তেত্রিশ বছর পরে খুঁজে বের করলেন সুশীল সাহা। এ নিয়ে এক 888sport app download apkও তিনি উপহার পেলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের কাছে, যার প্রথম তিন লাইন :
দেখা হোক বা না হোক হৃদয়বীণার তার
ছিঁড়ে যায় না, দুদিক থেকে হাত বাড়িয়ে হাসে
আবহমান দুজন বন্ধু, সুশীল আনোয়ার।
দ্বিতীয় যা ঘুরে ঘুরে আসে তা খুলনার 888sport live football-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের কথা। তাতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘সন্দীপন’ সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়, যাতে ছিলেন নাজিম মাহমুদ, হাসান আজিজুল হক, মুস্তাফিজুর রহমান, খালেদ রশীদ, বুলবুল ও সাধন সরকাররা। সুশীল সাহাদের মতো অতি তরুণদের তাতে জায়গা ছিল না। তাঁরা তৈরি করলেন ‘অনীক সংসদ’, যার বৈঠক হতো শুক্রবার শুক্রবার। তাতে তাঁরা নিজেদের লেখা পড়তেন। আর নিজেদের বাইরে শ্রোতাও পেয়ে যেতেন। বস্তুত সুশীল সাহার 888sport live footballিক জীবনের সূত্রপাত ওখানেই। প্রথিতযশাদের ‘সন্দীপন’ ও উদ্ভিন্নদের ‘অনীক’ ছাড়াও ছিল ‘খুলনা 888sport live football পরিষদ’, যাদের এক বৃহৎ সম্মেলনে তরুণ সুশীল আধুনিক 888sport app download apk নিয়ে এক 888sport live পড়েছিলেন। দেশত্যাগের ধাক্কায় যে তাঁর সংস্কৃতিচর্চা ব্যাহত হয়নি তার প্রমাণ হাবড়া সন্নিহিত দত্তপুকুরে তাঁর গড়ে তোলা নাচ ও গানের দল। আর সেই নৌকোয় পাল তুলে এক সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধও তিনি রচনা করলেন 888sport appsের সঙ্গে।
প্রথম আহ্বান এলো রাজশাহীর রবীন্দ্রমেলা থেকে। দল নিয়ে গেলেন। মাত করলেন। এতটাই যে 888sport app, নারায়ণগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডাক পেলেন। ওই এক যাত্রায়ই যশোর, এবং তাঁর অতি আপনার খুলনা থেকেও। প্রত্যুত্তরেই বুঝি-বা, হঠাৎ এক চার আবৃত্তিকারের দল এসে হাজির রাজশাহী থেকে। তাদের নিয়ে তিনি ঘুরলেন কলকাতার নানা জায়গায়, গেলেন শান্তিনিকেতনেও। অতিথি, আবার অতিথির বাড়াও, যে-মাটিতে তাঁর জন্ম ও মানুষ হয়ে ওঠা, সেই মাটিই যেন তাঁর দরজায় দাঁড়িয়ে। 888sport appsকে ‘আমার 888sport apps’ বলার হক তাঁর আছে। তা নইলে তাঁর গুরুপত্নী মুক্তি মজুমদারের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে উভয় বাংলার জ্যেষ্ঠ গায়কদের নিয়ে খুলনায় একবার রবীন্দ্রোৎসবের আয়োজন করেন? বা মুক্তি মজুমদারেরই আহ্বানে নিজে রাজপুত্র সেজে খুলনার খোলা আকাশের নিচে তাসের দেশ নৃত্যাভিনয় করেন?
888sport appsের যে-দুই উৎসব তাঁকে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে যায় তা, বলা বাহুল্য, 888sport cricket BPL rateে ও ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ সমন্বিত নববর্ষ। কিন্তু যে-মুক্তিতে হয়তো 888sport apps সবচেয়ে ধন্য সেই 888sport promo codeমুক্তির উদাহরণ তিনি খোঁজেন live chat 888sport888sport live chatেও। তৃতীয় এই গল্পটাও ঘুরে ঘুরে আসে এই বইতে। খুলনার সুশীল এমনিতেই সিনেমাপাগল, পূর্ব পাকিস্তানে যেসব বাংলা ছবি হতে শুরু করল এবং তাতে যেসব অভিনেত্রীদের দেখা যেতে লাগল তার হিসাব তাঁর নখদর্পণে। তাছাড়া যাঁরা উর্দু ছবিতে অভিনয় করেও উভয় পাকিস্তানে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁদের কথাও জানেন। বিশেষ করে শবনমের কথা, যাঁকে একদা করাচি মাথায় করে রেখেছিল। অধুনাবিস্মৃতা শবনমের সঙ্গে অনেক চেষ্টায় একবার দেখাও করেছিলেন সুশীল সাহা। অন্যদিকে, 888sport appsি live chat 888sport 888sport appsের শিক্ষিত 888sport promo codeরাও কী করে গড়ে তুলছিলেন, শুধু অভিনয় করে নয়, নির্দেশনা, এমনকি প্রযোজনা করেও, তারও পরম্পর খতিয়ান আছে সুশীল সাহার কাছে। বস্তুত, সাম্প্রতিককালের বাংলা সিনেমায় ও থিয়েটারে যে 888sport apps সাধারণভাবে কম এগিয়ে নেই, তা আমরা তাঁর সঙ্গে সবাই মানব। জহির রায়হানকে কি সহজে ভোলা যায়? আর এখনকার তানভীর মোকাম্মেল? তিনি তো তাঁর বন্ধু – তাঁর একটা ছবিতে তিনি একটুখানি অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু তার চাইতেও বড়ো কথা, তিনি তানভীর মোকাম্মেলের তৈরি ‘মানব রতন শিশুকেন্দ্রে’ এসে বছর বছর গান শেখান, 888sport app download apk বলতে শেখান, নাটক করতে শেখান।
সুশীল সাহার আমার 888sport apps এক অর্থে তাঁর আত্মজীবনীও। তাঁর কিছু কথার পুনরুদ্ধার বোধ করি অসমীচীন হবে না :
খুলনা আমার জীবন জুড়ে। সেই কবে এই শহরের হাসপাতালে জন্মেছিলাম ’৪৭-এর ফেব্রুয়ারিতে, সেই অর্থে ব্রিটিশ ভারতে। তারপর হলাম পূর্ব পাকিস্তানি এবং তার তেইশ বছর পরে একেবারে স্বেচ্ছায় ভারতীয়। দেখতে দেখতে পেরিয়ে এলাম এতগুলো বছর। অথচ আমার মন এখনো পড়ে আছে সেই খুলনায়। যদিও সেই সেদিনকার খুলনা আর আজকের খুলনায় অনেক তফাৎ। তবু আমার কাছে খুলনা খুলনাই।
২০১৮-তে যখন এই কথা লিখছেন তখন সুশীল সাহার বয়স একাত্তর। কিন্তু এই একাত্তরের ভিত তৈরি হয়ে গেছে ওই প্রথম তেইশ বছরেই। নইলে এতে শুধু বাজত এক সু-শীল ভাবাবেগ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.