কণা আর স্ফুলিঙ্গ রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন এবং 888sport apkের 888sport app download apk

888sport app download apk latest version : কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়

888sport live footballের চেয়ে 888sport apkের বই আমি বেশি পড়ি। যদি এই উৎসাহ আমার লেখায় প্রকাশ পায়, তার আনন্দ তুমি খুঁজে পাবে।১

                 – হেমন্তবালা দেবীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি, ৬ বৈশাখ, ১৩৪৪ (১৯ এপ্রিল ১৯৩৭)

১৯৯৪ সালে সালজ্বার্গ উৎসবে প্রদত্ত বক্তৃতায় বরেণ্য সমালোচক জর্জ স্টেইনার সেই পৌরাণিক কাহিনিগুলোর কথা বলেন যেগুলো অতীতে মহৎ 888sport live chat ও 888sport live football সৃষ্টি করেছে, এখন তেমন পৌরাণিক কাহিনির অভাবের কথা এবং নূতন পৌরাণিক কাহিনির প্রয়োজনের কথা। উপসংহারে তিনি জিজ্ঞাসা করেন :

আমাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ কোন গল্পের, কোন পৌরাণিক কাহিনির; আমাদের ইউরোপীয় সত্তার সামনে একটি জীবন্ত আয়না তুলে ধরতে পারবে কোন পৌরাণিক কাহিনি?

আমার বিশ্বাস, তেমন কাহিনিকে আয়ত্তে রাখতে হবে 888sport apkের বাস্তবকে। পশ্চিমা কল্পনার শক্তিহীনতা এবং সংকোচনের সবচে বড় লক্ষণ-প্রমাণ হচ্ছে চাঁদে অবতরণের ঘটনার প্রতি সাড়া দিতে আমাদের ব্যর্থতা। একটি কোনো মহৎ 888sport app download apk, ছবি কিংবা রূপক এই শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা থেকে আসেনি।২ 

জর্জ স্টেইনার আরো বলেন, এমন পৌরাণিক কাহিনিকে নিশ্চিতই ‘888sport promo codeদের দৃষ্টি আর কণ্ঠস্বরকে পূর্ণ নিয়োজন (deployment) দিতে হবে এবং সর্বোপরি মুখোমুখি হতে হবে সোয়া (Shoah)-র সচেতনভাবে … পৃথিবীতে নরক নির্মাণের নাৎসি সময়কালে।’ স্টেইনার ইউরোপের কথা বলেছিলেন এবং তাঁর অভিযোগ যথার্থই সত্য হতে পারে, যে-কোনো ইউরোপীয় লেখক তেমন একটি সামগ্রিক দৃষ্টি (vision) নিয়ে হাজির হননি। কিন্তু যদি সম্পূর্ণভাবে এবং বাংলায় – রবীন্দ্রনাথের রচনাকে তিনি জানতেন তাঁর বক্তৃতাটি তাহলে তেমন দৃষ্টির সম্ভাবনা সম্পর্কে আরো আশাবাদী হতে পারতো। কারণ, আমি কোনো আধুনিক কবিকে জানি না যিনি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আরো গভীর এবং ব্যাপকভাবে 888sport apkকে আত্মস্থ করেছেন। তাঁর দিক থেকে 888sport promo codeদের দৃষ্টিগগন (vision) এবং কণ্ঠস্বরগুলোকে ব্যবহার সাধনও ছিল নজিরবিহীন, এবং স্টেইনারের শেষ আর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের ব্যাপারটিতে রবীন্দ্রনাথের ১৯৪১ সালের বিখ্যাত ‘সভ্যতার সঙ্কট’ বক্তৃতা নির্দেশ করে যে, তিনি নিশ্চিতই প্রতিক্রিয়া জানাতেন – তাঁর সত্তার গভীর থেকে – নাৎসি হলোকাস্টে।

যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে প্রধানত তাঁর ইংরেজি 888sport app download apk latest versionের মাধ্যমে জানেন, তাঁদের কাছে তিনি যে 888sport apkের প্রতি একজন সাড়াদানকারী ছিলেন, তা বিস্ময়কর মনে হতে পারে। গীতাঞ্জলির কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস এবং অন্যদের কাছে নবশক্তিপ্রদ এক অবৈজ্ঞানিক ব্যক্তি মনে হতে পারেন, যিনি পশ্চিমাদের 888sport app download for android করাচ্ছেন আধ্যাত্মিক আর কাল্পনিক বাস্তবগুলোকে, আধুনিক 888sport apk যাকে হুমকি দিচ্ছে কিংবা প্রতিস্থাপন করছে। মানব ধর্মের (১৯৩০) বক্তৃতাগুলোতে রবীন্দ্রনাথ বারবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করেছেন। যেমন পঞ্চম বক্তৃতায় তিনি বলেন,

এটা সত্য যে এই পৃথিবীর সত্যের অব্যক্তিক (impersonal) দিক রয়েছে, যাকে অব্যক্তিক 888sport apkের ব্যক্তি অনুসরণ করেন। পুত্রের সাথে পিতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবে একজন পুত্রের সত্যকে সেই সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন এবং নিজের কাছে পুত্রকে হতে দিতে পারেন এক বিমূর্ত, জৈবিক কর্মকাণ্ডসম্পন্ন একটি জীবন্ত দেহ। তার পুত্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান একটি সত্য সম্পর্কে তথ্য, কোনো সত্যের উপলব্ধি নয়। তার পুত্রের জন্যে অন্তরঙ্গ অনুভূতিতে তিনি একটি চূড়ান্ত সত্যকে স্পর্শ করেন – একটি সম্পর্কের সত্য, বিশ্বে একটি সৌসাম্যের (Harmony) সত্য, সৃষ্টির মৌল নীতিকে।

একজন বালক হিসেবে বিতাড়নের যে আঘাত আমি পেয়েছিলাম, যখন একজন চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র এক টুকরো মানবিক শ্বাসনালি আমার কাছে এনেছিল এবং এর গঠনের জন্যে আমার প্রশংসা আদায় করার চেষ্টা করেছিল, আমি তা এখনও 888sport app download for android করি। সে আমাকে বোঝাতে চাইলো যে এটাই সুন্দর মনুষ্যকণ্ঠের উৎস। কিন্তু 888sport live chatীর জন্যে নির্দ্ধারিত সিংহাসন এক কারিগর দখল করবে যে নাকি যন্ত্রটি গোপন করেছিল এবং প্রকাশ করবে অবর্ণনীয় একত্বে, এ আমি গ্রহণ করতে পারিনি।৩ 

এটাই রবীন্দ্রনাথের প্রামাণিক কণ্ঠস্বর, এবং তাঁর চিন্তায় তা নিশ্চয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। বাঙালি কিংবা অবাঙালি যারা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সারাংশ করে (summarise), তাঁদের মার্জনা করা যেতে পারে যদি তাঁরা এই অনুচ্ছেদ কিংবা সদৃশ অনুচ্ছেদের ওপর ভিত্তি করে তা করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বিশ্ব-আধ্যাত্মিকতার একটি এনসাইক্লোপিডিয়ায় সম্প্রতি প্রকাশিত সীতাংশু শেখর চক্রবর্তীর একটি সহায়ক এবং সাবলীল নিবন্ধ-নিম্নরূপ বলছে :

রবীন্দ্রনাথের কাছে আধ্যাত্মিক সাধনা বৈজ্ঞানিক সাধনার চেয়ে বেশ ভিন্ন এবং এখন ব্যাপারটি বিশেষ মনোযোগ দাবি করে যখন সবকিছুরই বিশ্বাসেেযাগ্যতা পাওয়ার জন্যে বৈজ্ঞানিক অনুমোদন প্রয়োজন হয়। পার্থক্য হচ্ছে বৈজ্ঞানিকের কাছে পৃথিবী তথ্য বহন করে, যেখানে 888sport live chatী কিংবা কবির কাছে পৃথিবী শুধু কারো সত্তার সঙ্গে ‘শুধু তথ্য নয় বরং একটি সাযুজ্য বহন করে‘ (মানুষের ধর্ম, পৃ : ৩৪)। এই সাযুজ্য ফর্মুলার ভাষায় পৌঁছে দেয়া কোনো সত্যগত জ্ঞানের ব্যাপার নয়, বরং কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে সাধিত পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ে আসা উপলব্ধির ব্যাপার, কখনোই যা বৈজ্ঞানিক সন্ধানের লক্ষ্য নয়।৪

এই মতের পক্ষে অধিকতর প্রমাণ হিসেবে ইংরেজিতে প্রাপ্তব্য রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballকর্ম আরো খুঁজে দেখা যেতে পারে। মুক্তধারা (Three Plays – এ মারজরি সাইকস্ কর্তৃক অনূদিত) কিংবা রক্তকরবীতে (রবীন্দ্রনাথ নিজে জবফ Red Oleander হিসেবে 888sport app download apk latest version করেছিলেন) যন্ত্র এবং যন্ত্রভিত্তিক 888sport live chatায়নের প্রতি যে-সন্দেহ আমরা দেখতে পাই, তাকেই 888sport apk এবং তার সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্দেহের যৌক্তিক প্রসারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

শেষদিককার একটি শক্তিশালী 888sport app download apk, ‘পক্ষীমানব’ (Nabjatok-এ যা Flying Man), তেমন সকলের উদ্দেশে এটি একধরনের পুনর্সমাবেশের আহ্বান, যারা আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিগত পৃথিবীকে অসহনীয় এবং ধ্বংসাত্মক মনে করেন। 

যুগে যুগে তারা গগনের পথে পথে

জীবনের বাণী দিয়েছিল আনি

অরণ্যে পর্বতে;

আজি একি হল, অর্থ কে তার জানে।

স্পর্ধা পতাকা মেলিয়াছে পাখা

শক্তির অভিমানে।

তারে প্রাণদেব করে নি আশীর্বাদ।

তাহারে আপন করে নি তপন,

মানে নি তাহারে চাঁদ।

আকাশের সাথে অমিল প্রচার করি

কর্কশস্বরে গর্জন করে

বাতাসেরে জর্জরি।৫

তথাপি, এই লেখাটি এবং 888sport app রচনায় দেওয়া ধারণা সত্ত্বেও, রবীন্দ্রনাথকে 888sport apkবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন হবে মারাত্মক ভুল। তিনি বিরোধী ছিলেন 888sport apkের নয়, বৈজ্ঞানিকতার (scientism), তদর্থে যন্ত্রের নয়, তাদের অপপ্রয়োগের। প্রাক-বৈজ্ঞানিক পৃথিবী থেকে আগত এক চারণকবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ইয়েটসীয় ভাবমূর্তিটিকে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির দুটো উপকরণ দ্বারা সংশোধন করে নেওয়া প্রয়োজন – যা 888sport apk এবং প্রযুক্তির আধ্যাত্মিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাঁর চেতনার মতোই শক্তিশালী।

রবীন্দ্রনাথের জীবনে যারা এতোটুকু প্রবেশ করেছেন – পল্লী উন্নয়নে তাঁর পথিকৃতের অভিযান সম্পর্কে পড়েছেন – প্রথমে পূর্ববঙ্গে তাঁর পরিবারের জমিদারিতে এবং পরে সুরুল এবং শান্তিনিকেতনে, তাঁরাই প্রথম উপাদানটি সম্পর্কে ভালো জানেন। গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে রবীন্দ্রনাথ লিওনার্দ এলম্হার্স্টকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, কৃষি আর গোপালন শেখার জন্যে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে তিনি ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন;  ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিতে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির সার্বিক প্রয়োগ সম্পর্কে তিনি অনেক বক্তৃতা দিয়েছিলেন; গ্রাম এলাকায় কীটবাহিত রোগের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত গবেষণায় ড. হ্যারি টিমবার্সকে রবীন্দ্রনাথ উৎসাহ দিয়েছিলেন;৬ পরি888sport free betন তথ্য সংগ্রহে কালিমোহন ঘোষকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন তিনি, সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জুগিয়েছিলেন – এসবই তাঁর গভীর প্রত্যয়কে প্রমাণ করে যে, ভারতবর্ষকে পশ্চিমা 888sport apkের কাছ থেকে শিখতে হবে এবং নিজের প্রয়োজন আর পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে হবে।

ইতঃপূর্বে উল্লিখিত (রবীন্দ্রনাথের) 888sport apkবিরোধী ভাবমূর্তির সংশোধনী যে দ্বিতীয় উপাদানটি তা গভীরে নিহিত কবি এবং 888sport live chatী হিসেবে তাঁর পরিচয়ের মধ্যে। আমার জন্যে তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, কবি রবীন্দ্রনাথকে 888sport app download apk latest version আর সমালোচনার মাধ্যমে উপস্থাপনে আমার প্রয়াসের মধ্যে।

বিশুদ্ধ 888sport apkে সমগ্র মানব প্রয়াসে, পর্যবেক্ষণে, পরীক্ষা এবং অঙ্কের মাধ্যমে নিজেদের, আমাদের পৃথিবী এবং মহাবিশ্বকে বোঝায় – রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল ঐকান্তিক এবং মনোযোগী, এবং তাঁর দীর্ঘ জীবনে তিনি তা সক্রিয়ভাবে রক্ষা করে গিয়েছেন। তাঁর সৃজনশীল কাজে তা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল যে এ-বিষয়ে তাঁর অন্তত আধা-ডজন বই রয়েছে।৭ এর শুরু হয় যখন তিনি খুব ছোট এবং এর উদ্ভব আর বিকাশ সম্পর্কে মৌলিক তথ্য মেলে রবীন্দ্রনাথের আত্মজীবনী, জীবন888sport sign up bonusতে (সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক My Reminiscences নামে অনূদিত)। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ একে সুনির্দিষ্টভাবে বিবৃত করেছেন তাঁর জীবনের শেষদিকে লিখিত তাঁর 888sport apkবিষয়ক বই বিশ্বপরিচয় (Introducing the Universe)-এ। এ-বইয়ে আমি ফিরে আসবো, কিন্তু এই পর্যায়ে 888sport apk সম্পর্কে তাঁর অবস্থান বিষয়ে তাঁর নিজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নেওয়াটা মূল কাজ, আমি 888sport apkের সাধক নই সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু বাল্যকাল থেকে 888sport apkের রস আস্বাদনে আমার লোভের অন্ত ছিল না। আমার বয়স বোধ করি নয়-দশ বছর; মাঝে মাঝে রবিবারে হঠাৎ আসতেন সীতানাথ দত্ত  [ঘোষ] মহাশয়। আজ জানি তাঁর পুঁজি বেশি ছিল না, কিন্তু 888sport apkের অতি সাধারণ দুই-একটি তত্ত্ব যখন দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতেন আমার মন বিস্ফারিত হয়ে যেত। মনে আছে আগুনে বসালে তলার জল গরমে হালকা হয়ে উপরে ওঠে আর উপরের ঠান্ডা ভারী জল নীচে নামতে থাকে, জল গরম হওয়ার এই কারণটা যখন তিনি কাঠের গুঁড়োর যোগে স্পষ্ট করে দিলেন, তখন অনবচ্ছিন্ন জলে একই কালে যে উপরে নীচে নিরস্তর ভেদ ঘটতে পারে তারই বিস্ময়ের 888sport sign up bonus আজও মনে আছে। যে ঘটনাকে স্বতই সহজ বলে বিনা চিন্তায় ধরে নিয়েছিলুম সেটা সহজ নয় এই কথাটা বোধ হয় সেই প্রথম আমার মনকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তার পরে বয়স তখন হয়তো বারো হবে  (কেউ কেউ যেমন রঙ-কানা থাকে আমি তেমনি তারিখ-কানা এই কথাটি বলে রাখা ভালো) পিতৃদেবের সঙ্গে গিয়েছিলুম ডালহৌসি পাহাড়ে। সমস্ত দিন ঝাঁপানে করে গিয়ে সন্ধ্যা বেলায় পৌঁছতাম ডাকবাংলায়। তিনি চৌকি আনিয়ে আঙ্গিনায় বসতেন। দেখতে দেখতে, গিরিশৃঙ্গের বেড়া দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলি যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন, গ্রহ চিনিয়ে দিতেন। শুধু চিনিয়ে দেওয়া নয়, সূর্য থেকে তাদের কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং 888sport app বিবরণ আমাকে শুনিয়ে যেতেন। তিনি যা বলে যেতেন তাই মনে করে তখনকার কাঁচা হাতে আমি একটা বড়ো 888sport live লিখেছি। স্বাদ পেয়েছিলুম বলেই লিখেছিলুম, জীবনে এই আমার প্রথম ধারাবাহিক রচনা, আর সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে।

তারপরে বয়স আরো বেড়ে উঠল। ইংরেজি ভাষা অনেকখানি আন্দাজে বোঝবার মতো বুদ্ধি তখন আমার খুলেছে। সহজবোধ্য জ্যোতির্888sport apkের বই যেখানে যত পেয়েছি পড়তে ছাড়ি নি। মাঝেমাঝে গাণিতিক দুর্গমতায় পথ বন্ধুর হয়ে উঠেছে, তার কৃ”্রছতার উপর দিয়ে মনটাকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছি। তার থেকে একটা এই শিক্ষা লাভ করেছি যে, জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতার পথে সবই যে আমরা বুঝি তাও নয় আর সবই সুস্পষ্ট না বুঝলে আমাদের পথ এগোয় না এ কথাও বলা চলে না। জলস্থল-বিভাগের মতোই আমরা যা বুুঝি তার চেয়ে না বুঝি অনেক বেশি, তবুও চলে যাচ্ছে এবং আনন্দ পাচ্ছি। কতক পরিমাণে না বোঝাটাও আমাদের এগুবার দিকে ঠেলে দেয়। যখন ক্লাসে পড়াতুম এই কথাটা আমার মনে ছিল। আমি অনেক সময়েই বড়ো বয়সের পাঠ888sport live football ছেলেবয়সের ছাত্রদের কাছে ধরেছি। কতটা বুঝেছে তার সম্পূর্ণ হিসাব নিইনি, হিসাবের বাইরেও তারা একরকম করে অনেকখানি বোঝে যা মোটে অপথ্য নয়। এই বোধটা পরীক্ষকের পেনসিল মার্কার অধিকারগম্য নয় কিন্তু এর যথেষ্ট মূল্য আছে। অন্তত আমার জীবনে এই রকম পড়ে-পাওয়া জিনিস বাদ দিলে অনেকখানিই বাদ পড়বে।৮ (বিশ্বপরিচয়, ভূমিকা (সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে লেখা চিঠি) ৫২০-২১, রর, ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, অগ্রহায়ণ, ১৪২১, কলকাতা, ভারত) কুড়ি বছর বয়সের কোঠায় পৌঁছে রবীন্দ্রনাথ প্রায়শই ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত পত্রিকাগুলোতে বৈজ্ঞানিক বিষয়ে নিবন্ধ লিখছিলেন : প্রথমে তরুণদের পত্রিকা বালক-এ, তারপরে গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা সাধনায়  (যেখানে রবীন্দ্রনাথের অনেক ছোটগল্প প্রথমে ছাপা হয়েছিল)। তেমন একটি প্রথমদিককার নিবন্ধে তিনি সমসাময়িক এক আবিষ্কার সম্পর্কে 888sport world cup rate করেন যে, যেসব বস্তু থেকে সমস্ত জল সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সেগুলো আগুনে পুড়বে না; আর একটি লেখায় তিনি জানান ভূমি-গঠনে সাগরের ঢেউয়ের ফল সম্পর্কে; ১৮৯১ সালের সাধনার একটি নিবন্ধের শিরোনাম: ‘গতি নির্ণয়ের ইন্দ্রিয়’(‘The Perception of movement by the sense’); আর একটি রচনার শিরোনাম: ‘ইচ্ছামৃত্যু’, এবং এতে আলোচনা ছিল পশ্চিমের চিকিৎসা-সংবাদপত্রে তখন উল্লিখিত একটি ঘটনা, জীবন-লক্ষণাদির, আত্ম-প্ররোচিত সাময়িক রোধন, আর একে রবীন্দ্রনাথ তুলনা করেছিলেন ভারতীয় যোগীদের সদৃশ কৃতির সঙ্গে। ১৮৯৩ সালের একটি লেখার শিরোনাম ‘অভ্যাসজনিত পরিবর্তন’-এর বিষয় তখনকার জন্যে তপ্ত ডারউইন-উত্তর বিতর্ক-আয়ত্তকৃত (acquired) চরিত্রবৈশিষ্ট্য জিনে প্রেরিত হতে পারে কি-না। যে-রচনাটিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথের প্রথমদিককার বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম ‘ভূগর্ভস্থ জল এবং বায়ুপ্রবাহ’, এটি সাধনায় প্রকাশিত হয় ১৮৯৪ সালে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, ‘ভূবিদ্যা বিষয়ে এ ধরনের প্রথম শ্রেণীর 888sport live বাংলাভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।” রবীন্দ্রনাথের 888sport apkবিষয়ক সাংবাদিকতা সম্পর্কে বুদ্ধদেবের সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদটিই চক্ষুরুন্মীলক, যে নিবন্ধগুলো পুনর্মুদ্রিত হয়নি, তা থেকে দীর্ঘ উদ্ধৃতি রয়েছে, এর পরিধি আর মান সম্পর্কে প্রমাণে পূর্ণ।৯

এমন আগ্রহ আর জ্ঞান যেখানে, সেখানে এটা প্রত্যাশিতই ছিল যে, 888sport apk মধ্য-১৮৮০ থেকে শুরু করে বারবার ছুঁয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk এবং 888sport app সৃজনশীল রচনাকে। বাঙালি সমালোচকগণ রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক 888sport apkের 888sport live footballিক ব্যবহারের সন্ধান করেছেন, মানসী, সোনার তরী, বলাকা কিংবা পত্রপুটের গুরুত্বপূর্ণ 888sport app download apkকে বেছে নিয়েছেন, জীবনের শেষ তিন বছরে লেখা শেষ ছটি কাব্যগ্রন্থে তাঁরা 888sport apkের উপস্থিতিকে প্রবল দেখতে পেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের নাটক এবং গদ্য888sport live footballেও তাঁরা 888sport apkের স্রোতকে খুঁজেছেন। যে ‘অন্ধ আর অদ্ভুত কুসংস্কার’-এর প্রতি অবিশ্বাসকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশ্বপরিচয়ের মুখবন্ধে পুনর্বিবৃত করেছেন, তাঁর মধ্যে তা লালিত-পালিত হয়েছে 888sport apk দ্বারা। হাস্যকৌতুক আর ব্যঙ্গকৌতুক রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গাত্মক নাটিকা আর 888sport liveের সংবলন, এই সব রচনায় উপহাস করা হয়েছে অনেক কিছুকেই, তার মধ্যে অন্যতম হলো পুনরুজ্জীবনবাদী হিন্দু দাবি যে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে ছিল এ-কালের আধুনিক 888sport apkের আবিষ্কার-উদ্ভাবন।১০ জ্ঞানের প্রসারে বাধাদানকে প্রত্যাখ্যান রবীন্দ্রনাথের গোরা এবং যোগাযোগ 888sport alternative linkের বড় বিষয়বস্তু। অপরপক্ষে, ইতোপূর্বে উল্লিখিত সংকীর্ণতাবাদী-দৃষ্টবাদী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব চতুরঙ্গের নাস্তিক জগমোহন১১ এবং একই সময়ে প্রকাশিত ঘরে-বাইরের অগ্নিময় দ্রোহী সন্দীপের মাধ্যমে প্রকাশিত। মানুষ হিসেবে 888sport apkীদের সম্পর্কে ঔৎসুক্য প্রতিফলিত তাঁর অন্য অনেক 888sport alternative link, ঔপন্যাসিকা এবং গল্পে – বিশেষত সবশেষ দিককার তিন সঙ্গীতে১২, তিনটি গল্পেই একজন 888sport apkী উপস্থিত।

রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে 888sport apkের 888sport live footballিক ব্যবহারের উদাহরণ এবং সংজ্ঞা দিতে আমি আমার রবীন্দ্র-888sport app download apk latest versionের দুটো পেঙ্গুইন বই ব্যবহার করতে পারতাম, উদ্ধৃতি দিতে পারতাম ‘সৃষ্টি প্রলয়’, ‘বৃক্ষবন্দনা’ কিংবা ‘পৃথিবী’ থেকে, কিংবা ‘কঙ্কাল’-এর মতো ছোটগল্প থেকে; এই গল্পটিতে নিশ্চিতভাবেই মানবিক দেহ888sport apkের (anatomy) পাঠসমূহের ছাপ রয়েছে, যা ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের এক ছাত্র তরুণ রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর ভাইদের দিয়েছিল, যার সকৌতুক 888sport sign up bonusচারণ রয়েছে জীবন888sport sign up bonusতে। পরিবর্তে, আমি ব্যবহার করতে চাই রবীন্দ্রনাথের খুব ছোট-ছোট 888sport app download apkর যে তিনটে বই আমি সম্প্রতি 888sport app download apk latest version করেছি, তাকে, যেখানে তাঁর বৈজ্ঞানিক আগ্রহের কেন্দ্রিকতা অত্যন্ত সুতীক্ষè এবং সাবলীলভাবে বেরিয়ে আসে। এই সংক্ষিপ্ত 888sport app download apkগুলো, এ-888sport liveের শিরোনামের ‘কণা আর স্ফুলিঙ্গ’ প্রাণ আর সারবস্তু দেবে তাকে, যা আমি প্রতিক্ষণ অনেকটাই শুষ্ক এবং সত্যভিত্তিক (factual) ভাবে বলেছি।

তবে তার আগে আমি চাইবো রবীন্দ্রনাথের জীবনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দিকে তাকাতে, যাঁদের বাদ দিয়ে 888sport apkের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে। আর এই দু-ব্যক্তির সূত্রে 888sport apkবিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ছোট বই বিশ^পরিচয়কেও বিবেচনা করতেই হবে।

প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন বিখ্যাত বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত প্রথম ভারতীয় 888sport apkী। রবীন্দ্রনাথের মতোই ব্রিটিশরা তাঁকে নাইট উপাধি দিয়েছিল, এবং ১৯২০ সালে গণিতবিদ শ্রীনিবাসন রামানুজনের পরে তিনি ছিলেন রয়্যাল সোসাইটির দ্বিতীয় ভারতীয় সদস্য। ১৮৫৮ সালে জন্মে তিনি ১৯৩৭ অবধি বেঁচে ছিলেন এবং তিনি রবীন্দ্রনাথের যথার্থ সমসাময়িক এবং রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের একজন। ১৮৯০-এর দশকে তাঁরা বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তখন শিয়ালদহে রবীন্দ্রনাথের বাসস্থানে জগদীশচন্দ্র বসু মাঝেমাঝেই আসতেন। রবীন্দ্রনাথের তখনকার কিছুসংখ্যক ছোটগল্পের তিনিই ছিলেন প্রথম শ্রোতা; আর বর্ণনাত্মক 888sport app download apkর দুটো বই কথা আর কাহিনী জগদীশ বসুকেই উৎসর্গিত। জগদীশ বসুর পরামর্শেই রবীন্দ্রনাথ তখন মহাভারতের একটি কাহিনির ভিত্তিতে তাঁর নাট্যকাব্য কর্ণ-কুন্তী সংবাদ লিখেছিলেন, এবং কাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত পদার্থবিদদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে জগদীশ বসু বিশাল সাফল্য লাভ করেন, এবং ধাতুর ওপরে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক বিকিরণের ফলপ্রভাব নিয়ে তাঁর প্রথমদিককার কাজ বেতার টেলিগ্রাফি আর রেডিওর বিকাশে পূর্ব সম্পর্কযুক্ত (germane) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। তবে, জগদীশ বসু পেটেন্ট নিতে অবহেলা করেন এবং কৃতিত্ব চলে যায় মার্কোনির কাছে। প্যারিস কংগ্রেসের পরে রবীন্দ্রনাথ ইউরোপে জগদীশ বসুর গবেষণা চালাতে সাহায্য করার জন্যে ত্রিপুরার মহারাজার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। কংগ্রেসে তাঁর গবেষণাপত্র ছিল ব্যাঙের চোখের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনার ফল সম্পর্কে, এবং বাকি কর্মজীবনে এবং বিশেষত ১৮৯৭ সালে ভারতে ফিরে আসার পরে তাঁর গবেষণা নিবদ্ধ ছিল বৈদ্যুতিক উদ্দীপনের (stimulation) প্রতি উদ্ভিদ এবং প্রাণী কোষের প্রতিক্রিয়ার ওপরে।

রবীন্দ্রনাথ জগদীশ বসুকে সমর্থন শুধু বন্ধুত্ব এবং তহবিল উত্তোলনের মাধ্যমেই দেননি, দিয়েছিলেন তাঁর গবেষণাকে ব্যাখ্যাকারী দুটো প্রভাবশালী 888sport liveের মাধ্যমেও। ১৯০১ সালের বঙ্গদর্শন-এ এই 888sport live প্রকাশিত হয়, এবং দ্বিতীয়টির শিরোনাম, ‘জড় কী সজীব’ নির্দেশ করে জগদীশচন্দ্র বসুর প্রথমদিককার গবেষণার বিশেষ কোন ব্যাপার তাঁকে বিশেষভাবে চমৎকৃত মুগ্ধ করেছিল : (রবীন্দ্রনাথ যেভাবে দেখতেন) ধাতুর মধ্যে চৌম্বক এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহ ওই বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রবহমান প্রাণ কিংবা জীবনশক্তির প্রকাশ, যা একইভাবে জীববিশ্বের মধ্যেও প্রবহমান।১৩ ১৯৩৭-এর শেষের দিকে প্রবাসীতে প্রকাশিত হয় জগদীশ বসু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি মৃত্যুসংবাদ (obituary) রচনা, তাতে ছিল :

জীবনের উপাদান গোপনে লুকানো থাকে অসাড় বস্তুতে। জগদীশ এই ধারণাকে একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেবে – এমন প্রত্যাশা সে সময়ে আমাকে প্রবলভাবে উত্তেজিত করেছিল। কারণ, শৈশব থেকেই আমি ঋষিদের এই শব্দাবলির সাথে পরিচিত ছিলাম: যদিদং কিঞ্চ জগত, প্রাণা এজতিনিঃস্ত্রম – এই বিশ্বের প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি চলমান, জীবন থেকে উৎপন্ন এবং প্রাণে স্পন্দমান। এই স্পন্দমানতার কথা 888sport apk আজ বলছে। কিন্তু, সে সময়ে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি যে এই স্পন্দন আর প্রাণের কম্পন একই ব্যাপার। আমার বিশ্বাস ছিল যে প্রমাণ দূরে নয়।১৪

এই মৃত্যু-বিবৃতিতে (obituary notice) উদ্ভিদ এবং বৈদ্যুতিক উদ্দীপকের প্রতি তাদের সাড়াকে নিবন্ধিত করার যে-সংবেদনশীল যন্ত্র বোস তৈরি করেন, তার প্রশংসা রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন। উদ্ভিদের যে প্রাথমিক স্নায়ুব্যবস্থা রয়েছে, এটা প্রমাণ জগদীশ বসু করেছিলেন, তা 888sport apkের একটি অন্ধগলিতে পৌঁছায়। তবে রবীন্দ্রনাথের জন্যে এই গবেষণা এবং পদার্থবিদ্যায় বসুর আরো আগের কাজের গুরুত্ব ছিল জড় এবং জীবের এবং উদ্ভিদজীবন আর প্রাণীজীবনের মধ্যকার ব্যবধানগুলোর অনুমিত বাধা ভেঙে ফেলতে। বনবাণীতে জগদীশ বসুকে উৎসর্গিত 888sport app download apk, একই বইয়ের বড় রচনা (‘In Praise of Trees’)-র মতোই, প্রাণশক্তির এক সানন্দ উদ্যাপন; এ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ সর্বপ্রাণবাদ :

বৃক্ষবন্দনা

অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান

প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ,

ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা

ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ-’পরে; আনিলে বেদনা

নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে।

                             সেদিন অম্বর-মাঝে

শ্যামে নীলে মিশ্রমন্ত্রে স্বর্গলোকে জ্যোতিষ্কসমাজে

মর্ত্যরে মাহাত্ম্যগান করিলে ঘোষণা। যে জীবন

মরণতোরণদ্বার বারম্বার করি উত্তরণ

যাত্রা করে যুগে যুগে অনন্তকালের তীর্থপথে

নব নব পান্থশালে বিচিত্র নূতন দেহরথে,

তাহারি বিজয়ধ্বজা উড়াইলে নিঃশঙ্ক গৌরবে

অজ্ঞাতের সম্মুখে দাঁড়ায়ে। তোমার নিঃশব্দ রবে

প্রথম ভেঙেছে স্বপ্ন ধরিত্রীর, চমকি উল্লসি

নিজেরে পড়েছে তার মনে – দেবকন্যা দুঃসাহসী

কবে যাত্রা করেছিল জ্যোতিঃস্বর্গ ছাড়ি দীনবেশে

পাংশুমøান গৈরিকবসন-পরা, খণ্ড কালে দেশে

অমরার আনন্দেরে খণ্ড খণ্ড ভোগ করিবারে,

দুঃখের সংঘাতে তারে বিদীর্ণ করিয়া বারে বারে

নিবিড় করিয়া পেতে।

                          মৃত্তিকার হে বীর সন্তান,

সংগ্রাম ঘোষিলে তুমি মৃত্তিকারে দিতে মুক্তিদান

মরুর দারুণ দুর্গ হতে; যুদ্ধ চলে ফিরে ফিরে;

সন্তরি সমুদ্র-ঊর্মি দুর্গম দ্বীপের শূন্য তীরে

শ্যামলের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিলে অদম্য নিষ্ঠায়,

দুস্তর শৈলের বক্ষে প্রস্তরের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়

বিজয়-আখ্যানলিপি লিখি দিলে পল্লব-অক্ষরে

ধূলিরে করিয়া মুগ্ধ, চিহ্নহীন প্রান্তরে প্রান্তরে

ব্যাপিলে আপন পন্থা।

                              বাণীশূন্য ছিল একদিন

জলস্থল শূন্যতল, ঋতুর উৎসবমন্ত্রহীন –

শাখায় রচিলে তব সংগীতের আদিম আশ্রয়,

যে গানে চঞ্চল বায়ু নিজের লভিল পরিচয়,

সুরের বিচিত্র বর্ণে আপনার দৃশ্যহীন তনু

রঞ্জিত করিয়া নিল, অঙ্কিল গানের ইন্দ্রধনু

উত্তরীর প্রান্তে প্রান্তে। সুন্দরের প্রাণমূর্তিখানি

মৃত্তিকার মর্তপটে দিলে তুমি প্রথম বাখানি

টানিয়া আপন প্রাণে রূপশক্তি সূর্যলোক হতে,

আলোকের গুপ্তধন বর্ণে বর্ণে বর্ণিলে আলোতে।

ইন্দ্রের অপ্সরী আসি মেঘে হানিয়া কঙ্কণ

বাষ্পপাত্র চূর্ণ করি লীলানৃত্যে করেছে বর্ষণ

যৌবন অমৃতরস, তুমি তাই নিলে ভরি ভরি

আপনার পুত্রপুষ্পপুটে, অনন্তযৌবনা করি

সাজাইলে বসুন্ধরা।

                     হে নিস্তব্ধ, হে মহাগম্ভীর,

বীর্যেরে বাঁধিয়া ধৈর্যে শান্তিরূপ দেখালে শক্তির;

তাই আসি তোমার আশ্রয়ে শান্তিদীক্ষা লভিবারে

শুনিতে মৌনের মহাবাণী; দুশ্চিন্তার গুরুভারে

নতশীর্ষ বিলুণ্ঠিতে শ্যামসৌম্যচ্ছায়াতলে তব –

প্রাণের উদার রূপ, রসরূপ নিত্য নব নব,

বিশ্বজয়ী বীররূপ ধরণীর, বাণীরূপ তার

লভিতে আপন প্রাণে। ধ্যানবলে তোমার মাঝার

গেছি আমি, জেনেছি, সূর্যের বক্ষে জ্বলে বহ্নিরূপে

সৃষ্টিযজ্ঞে যেই হোম, তোমার সত্তায় চুপে চুপে

ধরে তাই শ্যামস্নিগ্ধরূপ; ওগো সূর্যরশ্মিপায়ী,

শত শত শতাব্দীর দিনধেনু দুহিয়া সদাই

যে তেজে ভরিলে মজ্জা, মানবেরে তাই করি দান

করেছ জগৎজয়ী; দিলে তারে পরম সম্মান;

হয়েছে সে দেবতার প্রতিস্পর্ধী – সে অগ্নিচ্ছটায়

প্রদীপ্ত তাহার শক্তি বিশ্বতলে বিস্ময় ঘটায়

ভেদিয়া দুঃসাধ্য বিঘ্নবাধা। তব প্রাণে প্রাণবান,

তব স্নেহচ্ছায়ায় শীতল, তব তেজে তেজীয়মান,

সজ্জিত তোমার মাল্যে যে মানব, তারি দূত হয়ে

ওগো মানবের বন্ধু, আজি এই কাব্য-অর্ঘ্য ল’য়ে

শ্যামের বাঁশির তানে মুগ্ধ কবি আমি

                        অর্পিলাম তোমায় প্রণামী।  

এই সর্বপ্রাণবাদ বিশ্বপরিচয়েও প্রবাহিত। বইটি যে অস্পষ্ট কিংবা রহস্যময়, তা নয় : ঊন-আণবিক (sub-atomic) বিশ্ব, নক্ষত্রমণ্ডিত বিশ্ব, সূর্য, গ্রহসমূহ এবং পৃথিবীর একটি সুন্দর সাবলীল এবং যথাযথ বিবরণ এই বই। জোর (emphasis) রয়েছে বস্তুবিশ্বের ওপরে (material universe) (পৃথিবীর বুকে প্রাণের বিবর্তন সম্পর্কে লেখা হয়েছে শেষ অধ্যায়ে, তা গোটা বইয়ের এক-দশমাংশ), কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বস্তুবিশ্ব পূর্ণ আলো, রং এবং গতিতে। প্রাণের প্রাচীন ভারতীয় ধারণাকে 888sport apk নূতন সত্যতা (validity) দেবে বলে রবীন্দ্রনাথের প্রথমদিককার প্রত্যাশাকে কণা পদার্থবিদ্যা (particle physics) পূর্ণ করেছিল, মনে হয় : ১৯১৩ সালে নিইলস বোর কর্তৃক অণুর মৌল কাঠামোর আবিষ্কার সম্পন্ন হয়, এবং ১৯৩২ সালে নিউট্রন, ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের অস্তিত্ব প্রমাণ হয়। বিশ্বপরিচয়ের প্রথম অধ্যায়টি অণু-সম্পর্কিত। দেখা যাচ্ছে যে, রবীন্দ্রনাথ সময়ের সঙ্গে সমান গতিতে চলছিলেন এবং বিশ্বের সৃজনশক্তি সম্পর্কে তাঁর কাল্পনিক উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করে যেতে পারে এমন যে-কোনো বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি সজাগ থেকেছেন।

যদি আমি এখানে রবীন্দ্রনাথের শৈলীগত উৎকর্ষ (stylistic brilliance) এবং জীবন্ত রূপকসমূহকে হাজির করতে পারতাম, যা জীবনের পরিচিত জগৎকে বস্তুজগতের স্বল্পতর পরিচিত কিন্তু সমান গতিময় জগৎকে যুক্ত করে! হাজির করতে পারতাম ‘ইনফ্রা-রেড’, ‘আল্ট্রা-ভায়োলেট’ ইত্যাদির জন্যে তাঁর বাংলা পরিভাষার কৌশলী নির্মাণকে (যদিও রবীন্দ্রনাথ প্রামাণ্য ইংরেজি পরিভাষার ব্যবহারের এতটুকু বিরোধী ছিলেন না, যখন স্পষ্ট বোধগম্য কোনো বাংলা ভাষান্তর উপস্থিত হয় না)। রবীন্দ্রনাথের বৃদ্ধবয়সের এই অসামান্য সৃষ্টিটিকে এসবই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে।১৬

888sport apkে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহের সকল আলোচনায় অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সর্বমোট চারবার : ১৯২১ সালে বার্লিনে, ১৯২৬ সালে ডুসেলডর্ফে এবং ১৯৩০ সালে দু-বার – ১৪ই জুলাই কাপুঠে (Kaputh) এবং ১৯শে আগস্ট, বার্লিনে। কবি অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথের সচিব হিসেবে কাজ করছিলেন, তিনি ১৯৩০ সালের দুটো সাক্ষাৎকারেরই বিবরণ (notes) নিয়েছিলেন। প্রথমটি ১০ই আগস্ট নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, দ্বিতীয়টি ১৯৩১-এর মার্চে নিউইয়র্কভিত্তিক এশিয়া ম্যাগাজিনে। রবীন্দ্রনাথ প্রথম সংলাপটিকে পরবর্তীকালে আরো একবার প্রকাশ করেন কলকাতায়, কিছুটা সম্পাদিত রূপে এবং তাঁর হিবার্ট বক্তৃতা, মানুষের ধর্ম (১৯৩১)-এর পরিশিষ্ট হিসেবে। সম্প্রতি বিশ্বভারতীর রসায়ন বিভাগ দুটো সংলাপের সম্পূর্ণ অনুুলিখনই (transcript) প্রকাশ করেছে।১৭ 

অনেকে এই সংলাপ পড়ে হতাশ হওয়ার কথা বলেছেন, ‘তারা আইনস্টাইন আর রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দার্শনিক যোগাযোগের অভাব’১৮ লক্ষ করেছেন, যা সম্ভবত আরো বেড়েছে ভাষার বাধায় (তাঁরা জনৈক দোভাষীর সাহায্যে কথা বলেছিলেন)। আমি নিজেও এ-সংলাপকে হতাশাব্যঞ্জক মনে করি, যদিও অন্য কারণে। 888sport apk সম্পর্কে তাঁর সমস্ত ঔৎসুক্য নিয়ে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কেন আইনস্টাইনকে সরাসরি প্রশ্ন করেননি? নিশ্চয়ই তিনি এ-সম্পর্কে তাঁর বুঝকে (understanding) পরিষ্কার করে নিতে চেয়েছিলেন?

এই আপাতসংকোচের দুটো সম্ভাব্য কারণ আমি ভাবতে পারি। একটি হচ্ছে, ১৯৩০ সাল নাগাদ রবীন্দ্রনাথ জার্মানিতে একটি বড় তারকা হিসেবে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত, ‘প্রাচ্য থেকে আসা এক আলো’, যার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাপার প্রত্যাশিত। আইনস্টাইনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি – সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে – তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকার সমান হওয়ার তাগিদ বোধ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, এটা সম্ভব যে (যদিও আমাকে এটা যাচাই করতে হবে) যে-ধরনের জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক 888sport live football রবীন্দ্রনাথ পড়তেন, তা আইনস্টাইনকেও কিংবা কোয়ান্টাম মেকানিকসের ক্ষেত্রে হাইজেনবার্গের আরো বেশি সাম্প্রতিক যুগান্তকারী কাজকেও ধরে উঠতে পারেনি।১৯ রবীন্দ্রনাথের যে আপেক্ষিকতার সঙ্গে পরিচয় ছিল, তার প্রমাণ রয়েছে বিশ^পরিচয়-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি অনুচ্ছেদে। কিন্তু এর অস্পষ্টতা  (গোটা বইটির জন্যে যা সত্য নয়) এবং এর শিষ্ট শেষ বাক্য আত্মপ্রত্যয়ের অভাব নির্দেশ করে।

উদ্ধৃতি দিচ্ছি :

অবশেষে আইনস্টাইন দেখিয়ে দিলেন এটা একটা শক্তিই নয়। আমরা এমন একটা জগতে আছি যার আয়তনের স্বভাব অনুসারে প্রত্যেক বস্তুই প্রত্যেকের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য। বস্তুমাত্র যে-আকাশে থাকে তার একটি বাঁকানো (inverse) গুণ আছে, মহাকর্ষে তারই প্রকাশ। এটা সর্বব্যাপী, এটা অপরিবর্তনীয়। এমন কি আলোককেও এই বাঁকা (inverse) বিশ্বের ধারা মানতে হয়। তার নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোঝার পক্ষে টানের ছবি সহজ ছিল কিন্তু যে নূতন জ্যামিতির সাহায্যে এই বাঁকা (concave) আকাশের ঝোঁক করে জানা যায় সে কজন লোকেরই বা আয়ত্তে আছে।২০ (বিশ^পরিচয়, ৫৪১, রর, ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ^ভারতী, অগ্রহায়ণ ১৪২১, কলকাতা, ভারত)    

এতদসত্ত্বেও দুটো সংলাপেই অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক একটি কেন্দ্রীয় বিষয় রয়েছে, যা রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক আর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে (understanding) সমৃদ্ধ করে। প্রথম সংলাপটি মূলত সত্যের প্রকৃতি নিয়ে। বৈজ্ঞানিক সত্যেও কি মনুষ্য-কল্পমূর্তি-নিরপেক্ষভাবে কোনো সিদ্ধতা (validity) রয়েছে (আইনস্টাইনের মত), নাকি সত্য মানুষের মাধ্যমে অর্জনযোগ্য (রবীন্দ্রনাথের)। দ্বিতীয় সংলাপটি দ্রুতই পশ্চিমা আর ভারতীয় সংগীতের মধ্যকার পার্থক্য বিষয়ে একটি বিস্রস্ত (rambling) আলোচনায় গড়িয়ে যায়, তবে শুরু হয় তা কার্য-কারণ-সম্বন্ধ বিষয়ে একটি মোক্ষম বক্তব্য দিয়ে –

রবীন্দ্রনাথ : আজ আমি ড. মেডেলের সাথে নূতন গাণিতিক আবিষ্কারগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এরা বলছে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুর জগতে দৈবের (rambling) খেলা চলে। অস্তিত্বের নাটক চরিত্রের দিক থেকে পরমভাবে পূর্বনির্দ্ধারিত নয়।

আইনস্টাইন : সে সত্যসমূহ 888sport apkকে এই মতের দিকে চালিত করে, তারা কার্যকারণকে বিদায় জানায় না।

রবীন্দ্রনাথ : হয়তো নয়; তবে মনে হয় যে কার্যকারণের ধারণা মৌলের (chance) মধ্যে নেই, যে তাদের সাথে মিলে অন্য কোনো শক্তি একটি সংগঠিত বিশ্ব গড়ে তোলে।

আইনস্টাইন : আমরা বোঝার চেষ্টা করি কিভাবে ক্রমটি (ড়ৎফবৎ) একটি উচ্চতর স্তরে – ক্রমটি সেখানে যেখানে বড় মৌলসমূহ একত্রিত হয় এবং অস্তিত্বকে পরিচালিত করে, কিন্তু মৌলে এই ক্রমটি পরিদৃৃশ্যমান নয়।

রবীন্দ্রনাথ : এই দ্বৈততা অস্তিত্বের গভীরে যুক্ত এবং পরিচালক ইচ্ছের (directive will) দুটি দ্বন্দ্বে, যা তাদের ওপর কাজ করে এবং ব্যাপার-স্যাপারের একটি ক্রমান্বয়িক ছকের orderly scheme of things) উদ্ভব ঘটায়।

আইনস্টাইন : আধুনিক পদার্থবিদ্যা বলবে না যে তারা দ্বন্দ্বাত্মক। দূর থেকে মেঘেদের একপ্রকার দেখায়, কিন্তু আপনি যদি কাছ থেকে দেখেন, তারা নিজেদেরকে জলবিন্দুর এলোমেলো ছকের মধ্যে দেখায়।

(উদ্ধৃত,‘Particles and sparks : Tagore, Einstein and the poetry of science’, William Radice. India International Centre Quarterly, Vol. 25, No. 2/3 (SUMMER/MONSOON 1998), pp.131-150) India International Centre Stable URL://www.jstor.org/ stable/ 23005686

Accessed : 15/05/2013 05: 48

যেমনটা অনেকেই জানেন, আইনস্টাইন একজন পাকা নিমিত্তবাদী (determinist) থেকে যান, এবং ‘ঈশ্বর পাশা খেলেন’ এই ধারণাটা তিনি গ্রহণ করতে পারেননি, ঊন-আণবিক (sub-atomic) কণার গতিতে হাইজেনবার্গের অনির্ণেয়তার ধারণা যা পরোক্ষভাবে নির্দেশ করে। আইনস্টাইনের পরবর্তী কর্মজীবনে তাঁর এবং হাইজেনবার্গের মধ্যে এই মৌল প্রশ্নে মতের অমিল ছিল একটি বড় গুণক (factor)। এখানে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য দেখায় যে, হাইজেনবার্গের কাজ সম্পর্কে তাঁর কিছু জ্ঞান ছিল, কিন্তু আবারো তিনি সম্ভবত এ-ব্যাপারে তাঁর ধারণা (understanding) সম্পর্কে এতটা পর্যাপ্ত প্রত্যয়ী বোধ করেননি যে, বিশ^পরিচয়-এ তাকে অন্তর্ভুক্ত করবেন। আর, ১৯২৯ সালে হাইজেনবার্গ যখন ভারতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, কোনো নথি নেই যে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কোয়ান্টাম মেকানিকস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, আইনস্টাইনকে আপেক্ষিকতা সম্পর্কে যে-প্রশ্ন করেছিলেন, ততোধিক। আবারো তাঁর নিকট প্রত্যাশিত ভূমিকাই তিনি পালন করেন। Uncommon Wisdom-এ ফ্রিৎজফ ক্যাপ্রা লিখেছেন :

১৯২৯ সালে হাইজেনবার্গ স্বনামধন্য ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অতিথি হিসেবে ভারতে কিছু সময় কাটান, তাঁর সাথে 888sport apk এবং ভারতীয় দর্শন নিয়ে তাঁর দীর্ঘ কথাবার্তা হয়। হাইজেনবার্গ আমাকে বলেন যে ভারতীয় চিন্তার সাথে এই পরিচয় তাঁকে অনেক শান্তিপূর্ণ উপভোগ এনে দেয়। হাইজেনবার্গ দেখতে পান যে, পদার্থগত বাস্তবতার (physical reality) মৌল দিক হিসেবে আপেক্ষিকতা, আন্তঃসম্পর্ক এবং অস্থায়িতার স্বীকৃতি ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একান্ত ভিত্তি, অথচ, এগুলো তাঁর এবং সহকর্মী  পদার্থবিদদের জন্যে ছিল দুরূহ। হাইজেনবার্গ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এই আলাপ-আলোচনার পরে যেসব ধারণাকে আগে খেপা (crazy) মনে হয়েছিল, সেগুলোকে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ মনে হচ্ছে। এতে আমার অনেক সাহায্য হলো।’২১

রবীন্দ্রনাথের নিকট হাইজেনবার্গের তত্ত্বগুলো অনেক আবেদন রেখেছিল, যেহেতু তিনি নিশ্চিতই কোনো নিমিত্তবাদী ছিলেন না; এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া যে রহস্যজনক উপায়ে কোয়ান্টাম তত্ত্বে অনপারমাণবিক কণাসমূহকে (sub-atomic particles) প্রভাবিত করে তা ভালোভাবেই মিলে যায় রবীন্দ্রনাথের প্রত্যয়ের সঙ্গে, মিলে যায় যে সত্যকে তার মনুষ্য প্রত্যক্ষকরণ থেকে পৃথক করা যায় না।

এই পরবর্তী বিষয়ে, যা আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সংলাপের বিষয়বস্তু, এটা বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ যে রবীন্দ্রনাথ কোনো বার্কেলিয়ান বিষয়ীবাদের (subjectivism) পক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন না। তিনি সবটা সচেতন ছিলেন যে, মানুষ কখনো ডাইনোসরের পরিণতির পথে চলে যেতে পারে, এবং তিনি বলেছিলেন না যে, সেটা দেখতে পাওয়ার জন্যে যদি কোনো মনুষ্যপ্রাণী না থাকে, তার আইনকানুনসহ জীববিশ্ব অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। সর্বোপরি, মানুষ দৃশ্যপটে আবির্ভূত হওয়ার আগে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়। বিষয়গত বাস্তবে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয় বিশ্বাস করতেন, এবং সত্য প্রত্যক্ষকরণে মনুষ্যমনকে একটি ভূমিকা পালন করতে হয়। অবশ্য, বিশৃঙ্খলা আর খামখেয়ালসহ তা ব্যক্তিমন নয়, বরং ‘বিশ্বমানবের মন’।

এ এক মহান অস্পষ্ট বাকবন্ধের মতো শোনায়, এবং এ দ্বারা তিনি কী বুঝিয়েছেন, আইনস্টাইনের নিকট তা ব্যাখ্যা করতে সম্ভবত তিনি সফল হননি। আমার মনে হয়, তিনি সম্ভবত শুধু সেই সমষ্টিগত মানবিক বুঝ (understanding)-কে নির্দেশ করেছেন, যা গ্রহণ করে ২+২ = ৪, যদিও আমাদের মধ্যে তেমন উন্মাদ কেউ কেউ রয়েছে যারা ভাবে ২+২ = ৫। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।

সত্য প্রত্যক্ষকরণে বিশ্বমন যে ভূমিকা পালন করে, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘটনা আর সত্যের মধ্যে পার্থক্য করার পক্ষে সহায়ক মনে করি – একটি পার্থক্য যা আইনস্টাইন কিংবা রবীন্দ্রনাথ কেউ করেননি; কিন্তু যা করলে পরে তাদের আলোচনা আরো পরিষ্কার হতো।২২ এটি একটি ঘটনা যে, আমি যদি বাম হাতে দুটো আপেল এবং ডান হাতে দুটো আপেল নিই, সবসুদ্ধ আমার তখন চারটে আপেল। কিন্তু একে যদি আমি একটি পাটিগণিতিক সমীকরণ হিসেবে প্রকাশ করি, ২+২ = ৪, তাহলে একটি সাধারণ সত্যে পৌঁছুনোর জন্যে একটি সামষ্টিক মানবিক বুঝ ব্যবহার করছি। বস্তুবিশ্বে একটি ২ কিংবা একটি ৪ বলতে কিছু নেই। আইনস্টাইনের সঙ্গে প্রথম সংলাপে এটাই রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছিলেন যখন তিনি বলেন : ‘888sport live footballের বাস্তবতার চেয়ে অনন্ত পরিমাণ ভিন্নভাবে রয়েছে কাগজের বাস্তবতা। কাগজ কাটে যে আলোপতঙ্গ (moth), তার ধরনের মনের ক্ষেত্রে 888sport live football সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন, কিন্তু মানুষের মনের জন্যে খোদ কাগজের চেয়ে সত্যের অধিকতর মূল্য 888sport live footballের।’

মানবজাতি যদি মুছে যেতো, কিন্তু শেক্সপিয়রের (কিংবা রবীন্দ্রনাথের) রচনাসমগ্রের একটি কপি যেতো টিকে, কোন অর্থে এটি রয়ে গেছে বলা যাবে, এটা পড়ার কেউ তো কোথাও নেই? রবীন্দ্রনাথের মতে, 888sport apkবর্ণিত এবং সংজ্ঞায়িত সত্যগুলোর বেলায়ও তা-ই, যাদের উপলব্ধির জন্যে প্রয়োজন মন কিংবা সামষ্টিক মানবমন। রবীন্দ্রনাথের কাছে আইনস্টাইন স্বীকার করেন, প্রত্যক্ষকরণে কোনো মন না থাকলেও ‘বেলভেডিয়ারের

অ্যাপোলো আর সুন্দর থাকবে না।’ কিন্তু, কোনো কিছু বাধায় তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একমত হননি যে, একই ব্যাপার সত্যের

বেলায়ও প্রযোজ্য।

***

সময় হলো রবীন্দ্রনাথের আরো কিছু 888sport app download apkয় যাওয়ার, আমি শুরু করছি কণিকার ‘কীটের বিচার’ অণু888sport app download apkটি যোগে, তিনটে বইয়ের মধ্যে এটি প্রথম, যেগুলো আমি সম্প্রতি 888sport app download apk latest version করেছি। 888sport app download apkটি সেই কীট/ কাগজ ধারণাকে সহর্ষে এবং সকৌতুকে ব্যবহার করে, যা দেখছি আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সংলাপে।

মহাভারতের মধ্যে ঢুকেছেন কীট,

কেটেকুটে ফুঁড়েছেন এপিঠ-ওপিঠ।

পণ্ডিত খুলিয়া দেখি হস্ত হানে শিরে;

বলে, ওরে কীট, তুই এ কি করিলি রে!

তোর দন্তে শান দেয়, তোর পেট ভরে,

হেন খাদ্য কত আছে ধূলির উপরে।

কীট বলে, হয়েছে কী, কেন এত রাগ,

ওর মধ্যে ছিল কিবা, শুধু কালো দাগ!

আমি যেটা নাহি বুঝি সেটা জানি ছার,

আগাগোড়া কেটেকুটে করি ছারখার। 

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৫৩)

রবীন্দ্রনাথ এবং 888sport apk এবং তাঁর অণু888sport app download apkর তিনটি বইয়ের মধ্যকার সম্পকর্কে বের করে আনার জন্যে খোদ 888sport app download apkগুলোকে বলতে দেওয়াই সর্বোত্তম – সংক্ষিপ্ততম কিছু নির্দেশিকা সহযোগে। রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় 888sport apk-সম্পর্কিত অধ্যায়টিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন যে, কণিকা বইটিতে 888sport apk বিশেষভাবে উপস্থিত নয়, যদিও তিনি এটা বলেন যে, 888sport app download apkগুলোর আঙ্গিকগত পরিচ্ছন্নতায় বৈজ্ঞানিক সুনির্দিষ্টতা (precision) রয়েছে।২৩ কিন্তু আপনাদের সামনে আমাকে অনেকবার 888sport app download apk হাজির করতে হবে না, আপনারা দেখতে পাবেন যে, 888sport apkে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ 888sport app download apkগুলোর পক্ষে একটি মোক্ষম পশ্চাৎপট তৈরি করে, এবং কখনো-কখনো তাদের বিষয়বস্তুতে তথ্য হিসেবে থাকে। প্রথম 888sport app download apkটি, ‘যথার্থ আপন’ নিন, আমার কাছে যার বিষয় প্রকৃতির সত্যবিন্যাস (order) (888sport apkের অপরিহার্য বিষয়), যাকে মানুষ প্রায়শই ইচ্ছেকৃতভাবে বিকৃত ব্যাখ্যা করে :

কুষ্মান্ডের মনে মনে বড়ো অভিমান

বাঁশের মাচাটি তার পুষ্পক বিমান।

ভুলেও মাটির পানে তাকায় না তাই,

চন্দ্রসূর্যতারকারে করে ভাই ভাই।

নভশ্চর ব’লে তার মনের বিশ্বাস,

শূন্যপানে চেয়ে তাই ছাড়ে সে নিশ্বাস।

ভাবে শুধু মোটা এই বোঁটাখানা মোরে

বেঁধেছে ধরার সাথে কুটুম্বিতা-ডোরে।

বোঁটা যদি কাটা পড়ে তখনি পলকে

উড়ে যাব আপনার জ্যোতির্ময় লোকে।

বোঁটা যবে কাটা গেল, বুঝিল সে খাঁটি

সূর্য তার কেহ নয়, সবই তার মাটি।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৫১)

একই রকম সকৌতুকে ‘অসম্পূর্ণ সংবাদ’ বিশ্বের চূড়ান্ত বিনাশ এবং সময়ের আপেক্ষিক মাপ সম্পর্কে বলে :

চকোরী২৪ ফুকারি কাঁদে, ওগো পূর্ণ চাঁদ,

পণ্ডিতের কথা শুনি গনি পরমাদ!

তুমি নাকি একদিন রবে না ত্রিদিবে,

মহাপ্রলয়ের কালে যাবে নাকি নিবে!

হায় হায় সুধাকর, হায় নিশাপতি,

তাহা হইলে আমাদের কী হইবে গতি!

চাঁদ কহে, পণ্ডিতের ঘরে যাও প্রিয়া,

তোমার কতটা আয়ু এসো শুধাইয়া।

(‘অসম্পূর্ণ সংবাদ’, কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৫১)

‘অচেতন মাহাত্ম্য’ রচনাটিতে আমরা পাই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোর আপাতপ্রয়াসহীনতা :

হে জলদ, এত জল ধরে আছ বুকে

তবু লঘুবেগে ধাও বাতাসের মুখে।

পোষণ করিছ শত ভীষণ বিজুলি

তবু স্নিগ্ধ নীল রূপে নেত্র যায় ভুলি।

এ অসাধ্য সাধিতেছ অতি অনায়াসে

কী করিয়া, সে রহস্য কহি দাও দাসে।

গুর-গুরু গরজনে মেঘ কহে বাণী,

আশ্চর্য কী আছে ইথে আমি নাহি জানি।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৫৭)

বিশ্বপরিচয়-এর আণবিক জগৎ-বিষয়ক অধ্যায়টিতে আমরা জানতে পাই, প্রকৃতিতে মাপের যে-বিস্ময়কর ক্ষুদ্রতা পাওয়া যায়, প্রকৃতির বিশালত্বও একই রকম মুগ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথকে। কণিকার ‘হাতে-কলমে’তে সে-ধারণাটিই পাই :

বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,

এরি তরে মধুকর এতো করে জাঁক।

মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,

আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৫৯)

‘উদারচারিতানাম’-এ পাই সূর্যেও স্থিরতার ধারণা :

প্রাচীরের ছিদ্রে এক নামগোত্রহীন

ফুটিয়াছে ছোটো ফুল অতিশয় দীন।

ধিক্ ধিক্ করে তার কাননে সবাই –

সূর্য উঠি বলে তারে, ভালো আছো ভাই?

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬০)

আর, ‘স্পর্ধা’য় পাই প্রকৃতির বিস্ময়কর ক্ষমতার বিপরীতে মানুষী ঔদ্ধত্য :

হাউই কহিল, মোর কী সাহস, ভাই

তারকার মুখে আমি দিয়ে আসি ছাই!

কবি কহে, তার গায়ে লাগে নাকো কিছু

সে ছাই ফিরিয়া আসে তোরি পিছু পিছু।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬১)

প্রাকৃতিক নিয়মে অপরিবর্তনশীলতা রয়েছে ‘কাকঃ কাকঃ পিকঃ পিকঃ’-এ –

দেহটা যেমন ক’রে ঘোরাও যেখানে,

বাম হাত বামে থাকে, ডান হাত ডানে।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬৩)

‘উপলক্ষ’ রচনাটিতে আভাস মেলে সময় এবং সময়-পরিমাপনের মধ্যকার হতবুদ্ধিকর সম্পর্কের (আপেক্ষিকতা তত্ত্বের পূর্বাভাষ?) চকিত জ্ঞাপন।

কাল বলে, আমি সৃষ্টি করি এই ভব।

ঘড়ি বলে, তা বলে আমিও স্রষ্টা তব।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬৪)

প্রকৃতিতে সবকিছুরই যে একটি পালন করার মতো ভূমিকা রয়েছে, তা বলা হয়েছে ‘অনাবশ্যকের আবশ্যকতা’য়।

কী জন্যে রয়েছ, সিন্ধু তৃণশস্যহীন –

অর্ধে জগৎ জুড়ি নাচ নিশিদিন।

সিন্ধু কহে, অকর্মণ্য না রহিত যদি

ধরণীর স্তন হতে কে টানিত নদী?

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬৫)

সুন্দর ‘নতিস্বীকার’-এর বিষয়বস্তু সূর্য আর চাঁদ :

তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয়

তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয়,

অপেক্ষা করিয়া আছি অস্ত সিন্ধু তীরে

প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬৫)

‘সত্যের সংযম’-এ রয়েছে সত্যের নিয়ম। ব্যাপারটির উপলব্ধিতে আমাদের মন যে-ভূমিকাই পালন করুক না কেন, আমার বন্ধু জুয়ান মাসকারোর (Juan Mascaro) ভাষায়, আমরা ২+২ = ৫ ভাবার স্বাধীনতা রাখি না।২৫

স্বপ্ন কহে, আমি মুক্ত, নিয়মের পিছে

নাহি চলি। সত্য কহে, তাই তুমি মিছে।

স্বপ্ন কয়, তুমি বদ্ধ অনন্ত শৃঙ্খলে।

সত্য কয়, তাই মোরে সত্য সবে বলে।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৬৮)

আমি আরো অনেক উদ্ধৃত করতে পারতাম। এই নির্বাচন শেষ করছি কণিকার ‘চিরস্বাধীনতা’-যোগে, যার বিষয় হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুর অপরিহার্য ভূমিকা :

দিনান্তের মুখ চুম্বি রাত্রি ধীরে কয় –

আমি মৃত্যু তোর মাতা, নাহি মোরে ভয়।

নব নব জন্মদানে পুরাতন দিন

আমি তোরে করে দিই প্রত্যহ নবীন।

(কণিকা, রর, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ৭০)

এই চয়ন থেকে আপনারা বুঝতে পেরেছেন কণিকা এগোতে-এগোতে কণ্ঠস্বরের একটি ক্রমান্বয়িক গভীরতা সাধন আর অর্থের প্রসারণ ঘটে। শেষ অব্দি এর মেজাজ হয়ে দাঁড়ায় লেখন এবং মরণোত্তর সংকলন স্ফুলিঙ্গ-এর আত্যন্তিক ভাব (অনুভব এবং চারিত্র্য)। বিশ্ব888sport live footballে এই ভাবকে আমার অনন্য মনে হয়। এগুলো ঠিক ক্ষুদ্র 888sport app download apk (epigram) কিংবা প্রবচন (aphorism) নয়, বরং সংক্ষিপ্ত 888sport app download apk, যা অনায়াসে বয়ে আসে এবং অসাধারণ সাবলীলতা আর সংক্ষেপণযোগে রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করে।২৬ 888sport apkে তাঁর জীবনভর আগ্রহ ছাড়া এগুলো অসম্ভব হতো।

আইনস্টাইনের সঙ্গে মতানৈক্যের দুটো আত্যন্তিক বিন্দুকে স্পর্শ করে যায় এমন কিছু 888sport app download apkকে, চলুন, আমি আমার স্ফুলিঙ্গ-এর 888sport app download apk latest version থেকে খুঁজে নিই : বৈজ্ঞানিক সত্যে মনের অংশগ্রহণ এবং প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণকারী আইনকে সমান শক্তিতে বিরোধিতা করে এমন অনিয়ম। 888sport app download apkগুলোর কোনো শিরোনাম নেই। ২৪নং 888sport app download apkটি বলছে যে ফুল তার নিজের মূল্য বোঝে না২৭ –

আপন শোভার মূল্য

পুষ্প নাহি বোঝে

সহজে পেয়েছে যাহা

দেয় তা সহজে।

(স্ফুলিঙ্গ, রর, চতুর্দশ খণ্ড, নং-২৪, পৃ ১১)

একই ধারণা রয়েছে ৫১নং স্ফুলিঙ্গে :

কহিল তারা, জ্বালিব আলোখানি

আঁধার দূর হবে না হবে

সে আমি নাহি জানি।

(স্ফুলিঙ্গ, রর, চতুর্দশ খণ্ড, নং-৫১, পৃ ১৬) 

অনেকগুলো 888sport app download apkর মতো, ৫২নং লেখা ক্ষণজীবিতা নিয়ে। আমি মনে করি, রবীন্দ্রনাথের মনে এর সম্পর্ক ‘অনিয়মের’ সঙ্গে, স্বাধীনভাবে পরিবর্তমান বিশ্বের খেলা কিংবা লীলার সঙ্গে, যে-কারণে যা ক্ষণস্থায়ী, তা নিরন্তর পরিবর্তিত হয়।

গাছের পাতায় লেখন লেখে

বসন্তে বর্ষায়

ঝ’রে পড়ে, সব কাহিনী

ধুলায় মিশে যায়।

(পৃ ২০)

১৩৩-সংখ্যকে অমনুষ্য প্রকৃতি নিজেকে পড়তে পারে না :

পাখি যবে গাহে গান

জানে না, প্রভাত-রবিরে সে তার

প্রাণের অর্ঘ্যদান।

ফুল ফুটে বনমাঝে –

সেই তো তাহার পূজা নিবেদন

আপনি সে জানে না যে।

(পৃ ৩১)

১৭৭-সংখ্যকে প্রকৃতি নিজেই কবি :

বিশ্বের হৃদয় মাঝে

কবি আছে সে কে!

কুসুমের লেখা তার

বারবার লেখে –

অতৃপ্ত হৃদয়ে তাহা

বার বার মোছে

অশান্ত প্রকাশব্যথা

কিছুতে না মোচে।

(পৃ ৩৯)

নিয়ম আর স্বাধীনতাকে নিয়ে লেখা হয়েছে ১৯৭-সংখ্যকে :

মৃত্তিকা খোরকি দিয়ে

বাঁধে বৃক্ষটারে,

আকাশ-আলোক দিয়ে

মুক্ত রাখে তারে।

(পৃ ৪৩)

২২০-সংখ্যকে রয়েছে প্রকৃতির ক্ষেত্রে মানুষী অনুভূতি আর প্রত্যক্ষকরণের ভূমিকা :

রূপে ও অরূপে গাঁথা

এ ভুবনখানি

ভাব তারে সুর দেয়,

সত্য দেয় বাণী।

এসো মাঝখানে তার,

আনো ধ্যান আপনার

ছবিতে গানেতে যেথা

নিত্য কানাকানি।

(পৃ ৪৭)

আর শেষের এটি লেখা হয়েছে প্রকৃতির চির-নবায়মান প্রাণকে নিয়ে, যা রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় আর কাব্যিক উপাসনার সত্য লক্ষ্য :

সময় আসন্ন হলে

আমি যাব চলে

হৃদয় রহিল এই শিশু চারাগাছে

এর ফুলে, এর কচি পল্লবের নাচে

অনাগত বসন্তের

আনন্দের আশা রাখিলাম

আমি হেথা নাহি থাকিলাম।

(স্ফুলিঙ্গ, রর, চতুর্দশ খণ্ড, ২৩৯, পৃ ২৩৯) 

***

এখন আমাকে গুটিয়ে আনতে দিন। রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক দৃষ্টিদিগন্ত (vision) এতটাই সামগ্রিক (comprehensive) ছিল যে তা কখনোই 888sport apkকে বাদ দিতে কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। একই পরিমাপে কোনো সত্যকার সম্পূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিদিগন্তের 888sport app download apkকে বাদ দেওয়া কিংবা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। অপরদিকে 888sport liveের বই, সঞ্চয়-এ (১৯১৬) রবীন্দ্রনাথ বারবার 888sport apkকে ছুঁয়ে যান, সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সৃষ্টি শুধু অণু এবং কণা নয় – আমাদের মন যা বিচিত্র সময় আর স্থানে দেখে তার সৃষ্টি। শুধু স্পন্দমান আলোকতরঙ্গ সৃষ্টি নয়, আমাদের আলোকে প্রত্যক্ষকরণও সৃষ্টি। অনুভবকে (বোধ) বাদ দিয়ে যুক্তি দিয়ে যা দেখি তা ধ্বংস, অনুভবসহ যা দেখি তা-ই সৃষ্টি।’২৮

অনেক টীকাকার বলেছেন, ১৯৩০-এ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আইনস্টাইনের সাক্ষাতের পরে 888sport apk স্থিরগতিতে রবীন্দ্রনাথের দিকে এগিয়েছে : পদার্থ888sport apk, জীব888sport apk এবং রসায়নবিদ্যার মধ্যকার ভেদরেখার অস্পষ্টতার দিকে; অনিশ্চিত এবং এলোমেলোর বৃহত্তর ভূমিকার দিকে, মহাবিশ্বকে বুঝতে সক্ষম সংবেদী প্রাণীর বিকাশের জন্যে পরিকল্পিত (programmed) একটি মনুষ্যমুখী বিশ্বের ধারণার দিকে। লন্ডন টাইমস থেকে স্টেটসম্যানে পুনঃপ্রকাশিত নিজেল হক্সের (Nigel Hawkes) একটি নিবন্ধে বিবর্তনে সমকেন্দ্রভিমুখতা নীতির কথা বলা হয়েছে : তেমন বিবর্তন যা, যেভাবে-যেখানেই তা শুরু হোক, অনিবার্যভাবে প্রাণের বুদ্ধিমান রূপ সৃষ্টি করবেই।২৯ রবীন্দ্রনাথে হলে বলতেন, ‘গতির ধারায়।’ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ তাঁর ভবিষৎ সম্পর্কিত জ্ঞানের জন্যে নন, তা তাঁর 888sport app download apkর জন্য – 888sport app download apk, যা আমার জানা অন্য কোনো 888sport app download apkর চেয়ে ভালোভাবে 888sport apkকে দ্রবীভূত এবং প্রকাশ করেছে। 888sport apkের যা মহত্তম দাবি আর লক্ষ্য – এক বিস্ময় এবং রহস্য বৈশ্বিক এবং ঐক্যকর দৃষ্টিদিগন্ত, তা-কে প্রকাশ করায় একজন কবির একটি ভূমিকা কার্যত থাকতেই পারে। ১৯৬৪ সালে এথেন্সে প্রদত্ত একটি বক্তৃতার শেষে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ এতটাই স্বীকার করে নেন। এজন্যে আমি কৃতজ্ঞ বিশ্বখ্যাত এক গাণিতিক পদার্থবিদ – 888sport appsের চট্টগ্রামের অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের প্রতি। চট্টগ্রামে বহুবার বেড়াতে গিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথোপকথন উপভোগ করেছি, এবং তাঁর নিজের অনেক নিবন্ধ আর বক্তৃতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীরভাবে সপ্রশংস অধ্যাপক ইসলাম হাইজেনবার্গের নিম্নোল্লিখিত কথাগুলো পছন্দ করতেন : ‘যদি কোনো সমাজের সৌসাম্য ‘এক’-এর সাধারণ (common) ব্যাখ্যার ওপরে নির্ভর করে, ব্যাপার-স্যাপারের (phenomena) বহু 888sport free betর পেছনকার ঐক্যের অনুরূপ ব্যাখ্যার ওপরে, কবির ভাষা বৈজ্ঞানিকের ভাষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’৩০

888sport apk এবং 888sport app download apkর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একটি সমঅংশীদারিত্বের অধিক কিছু চাইতেন না। তবে, হাইজেনবার্গ যে 888sport app download apkর মূল্য খুব ভালো বুঝতেন, ওই বক্তব্য থেকে ওটা লক্ষ করে তিনি প্রীত বোধ করতেন।

তথ্যপঞ্জি

১.        রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিঠিপত্র, নবম খণ্ড, পত্র নং ২০৮ (প্রথম সংস্করণ, বিশ্বভারতী, ১৯৬৪), পৃ ৩২৮ । এই সূত্রের জন্যে আমি অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পালের কাছে ঋণী। পরামর্শের জন্যে ঋণী অধ্যাপক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং অরুণ দেবের নিকট।

২. ‘Modernity, Mythology and Magic’, লন্ডনে ১৯৯৪-এর ৬ আগস্ট তারিখে দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত বক্তৃতাটির একটি সম্পাদিত অংশ।

৩.       শিশির কুমার দাস (সম্পাদিত)। দ্য ইংলিশ রাইটিংস অব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নতুন দিল্লি, 888sport live football একাডেমি। ১৯৯৬, তৃতীয় খণ্ড, পৃ ১২৪-১২৫।

৪. কে. আর. সুন্দররঞ্জন (সম্পাদিত)। ‘The Spirituality of Rabindranath Tagore : The Religion of an Artist’. World Spirituality : an Encyclopedic History of the Religious Quest, নিউইয়র্ক, ক্রস রোড পাবলিশিং কোম্পানি, ১৯৯৭, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ ২৬৮-৮২।

৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। Selected Poems, পেঙ্গুইন, ১৯৮৫। পৃ ১১২-১১৩।

৬.       এর অনেকগুলোই বিশ্বভারতী কর্তৃক পক্ষীপ্রকৃতিতে সংগৃহীত এবং প্রকাশিত হয়, ১৯৬২।

৭.       নিম্নোল্লিখিত তিনটি বইকে আমার বিশেষভাবে উপকারী মনে হয়েছে : বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথের 888sport apkচেতনা, সম্বোধী পাবলিকেশানস্, ক্যালকাটা, ১৯৬৫; পরিমল গোস্বামী, রবীন্দ্রনাথ ও 888sport apk, নবগ্রন্থনা, ক্যালকাটা, ১৯৭০; হরিতোষ জানা, রবীন্দ্র888sport live footballে-888sport apkচেতনা, পুস্তক বিপণী, ক্যালকাটা, ১৯৯৮।

৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। Our Universe। মূল বাংলা থেকে ইংরেজিতে তর্জমা করেছেন ইন্দু দত্ত, পূর্বকথন লিখেছিলেন Malcolm Macdonald, Meridian Books.  লন্ডন, ১৯৫৮, পৃ ৪-৬। এই উদ্ধৃতিতে প্রথম বাক্যে আমি তার সাধক-এর 888sport app download apk latest version পরিবর্তন করেছি, কারণ, 888sport app download apk latest version, ‘Needless to say I am no devotee of science…’ প্রকৃতপক্ষে যা, তার বিপরীতকেই বোঝায়।

৯.       বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (১৯৬৫)। রবীন্দ্রনাথের 888sport apkচেতনা। সপ্তম অধ্যায়। সম্বোধী পাবলিকেশন্স, ক্যালকাটা, পৃ ১১০-১৩০।  

১০. বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, পৃ ১৬৬, ধারণা দেন যে, 888sport apkের প্রতি রবীন্দ্রনাথ আর স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে ‘বিবেকানন্দ প্রাচীন শাস্ত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্য খুঁজে পান।’ রবীন্দ্রনাথ কখনো-কখনো সংযোগ দেখতে পেয়েছেন, কিন্তু তিনি মনে করতেন না যে ‘আধুনিক 888sport apk দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাবে’ শাস্ত্রকে। তবে এটা নয় যে, বিবেকানন্দ অধিকতর হাস্যকর পুনরুজ্জীবনবাদী দাবিগুলোকে গ্রহণ করতেন।

১১.      কায়সার হক-অনূদিত, হাইনিম্যান, ১৯৯৩।

১২.      সুজিত মুখার্জী-অনূদিত, ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯২২।

১৩.      জগদীশচন্দ্র বসু ১৯০১ সালের ২৪ জুলাই এই নিবন্ধগুলোর জন্যে ধন্যবাদের একটি উষ্ণ চিঠি লেখেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘The outline of my work that you gave in Bangadarshan last month was very fine. I was amazed at how easily you can grasp scientific truths and how beautifully you can express them.’ 

১৪.      বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কর্তৃক উদ্ধৃত, পৃ ১৯০। প্রবাসীর ১৩৪৪ সালে পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) 888sport free betয় 888sport apk download apk latest versionপত্রটি প্রকাশিত হয়।

১৫. তপস্বী – এ-প্রসঙ্গে 888sport app download apk latest version করা দুঃসাধ্য। গভীর চিন্তক? যার ধ্যান প্রকৃতির গোপনকে ভেদ করে প্রবেশ করে?

১৬. ইন্দু দত্তের 888sport app download apk latest version বইটি সম্পর্কে একটি ন্যায্য ধারণা দেয় (৮নং পাদটীকা দেখুন) এবং সাতটি 888sport apk-প্রভাবিত 888sport app download apkর 888sport app download apk latest version তাতে অন্তর্ভুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত এর আর পুনর্মুদ্রণ হয়নি এবং এখন আর হাতে-পাওয়া কঠিন।

১৭. Confluences of Minds : Tagore-Einstein Colloquy. ১৯৯৮-র ৯-১৩ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় First Indo-US Workshop on Mathematical Chemistry। এই পুস্তিকায় রবীন্দ্রনাথকে লেখা আইনস্টাইনের দুটো চিঠিও রয়েছে, রয়েছে আইনস্টাইন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের 888sport sign up bonus (যাThe Religion of Man বইয়ের পরিশিষ্টে সংকলিত তাঁদের সংলাপের ভূমিকা) এবং ওই পুস্তিকায় সংকলিত রয়েছে ১৯৩১-এর Golden Book of Tagore-এ অন্তর্ভুক্ত আইনস্টাইনের সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ।

১৮. দেখুন জার্নাল অব কনসাসনেস স্টাডিজ ২, নং ২, সামার ১৯৫৫, পৃ ১৬৭-১৭৯, দীপঙ্কর হোম এবং অ্যান্ড্রু রবিনসন প্রণীত নিবন্ধ ‘আইনস্টাইন অ্যান্ড ট্যাগোর : ম্যান, নেচার অ্যান্ড মিস্টিসিজম’। দত্ত অ্যান্ড রবিনসন-সম্পাদিত সিলেক্টড লেটারস্ অব ট্যাগোর বইয়ের পরিশিষ্টে এটা পুনর্মুদ্রিত এবং ইংরেজি ভাষায় তা এ-পর্যন্ত বিষয়টির পূর্ণতম আলোচনা।

১৯. রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত দেশ সাময়িকীর একটি বিশেষ 888sport live football 888sport free betয় (১৯৩৮) রবীন্দ্রনাথ এবং 888sport apkবিষয়ক একটি খুব মূল্যবান নিবন্ধে দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের পঠন-পাঠনের হালনাগাদির (Up-to dateness) প্রশংসা করেন, যেখানে তিনি দেখান কীভাবে ১৯৩২ সালে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই নিউট্রন এবং প্রোটনের প্রমাণ আয়ত্ত করেন তিনি ১৯৩৭ সালেই। আর, হ্যারন্ড রিচার্ডসনের ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত বই The Universe Surveyed রবীন্দ্রনাথের হাতে এসেছে ১৯৩৮ সালেই। দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এটা বলেন না যে, রবীন্দ্রনাথ আপেক্ষিকতা কিংবা কোয়ান্টাম মেকানিকস সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত ছিলেন।

২০.      বিশ্বপরিচয়, পৃ ৫০। 

২১.      দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক B.E 1398-এ দেশ 888sport live football888sport free betর ‘কালের মন্দিরা : আধুনিক 888sport apk ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক 888sport liveে উদ্ধৃত, পৃ ৮০।

২২.      অন্যত্র, অবশ্য, রবীন্দ্রনাথ প্রায়ই 888sport apk ‘সত্য’ (facts) নিয়ে কাজ করে বলেছেন, মূল্যবোধ নিয়ে নয়। দ্য রিলিজিওন অব ম্যান থেকে আমার উদ্ধৃতি দেখুন।

২৩.      পূর্র্বোক্ত, পৃ ১৫।

২৪.      চন্দ্রালোক-পান উপভোগ করে বলে কথিত একটি পাখি।

২৫.      জুয়ান মাসকারো (Juan Mascaro) (১৮৯৭-১৯৮৭) পেঙ্গুইন ক্লাসিকসের জন্যে উপনিষদ (Upanishads), ভগবদ্গীতা (Bhagavad Gita) এবং ধম্মপদ (Dhammapada) 888sport app download apk latest version করেছিলেন। তিনি তাঁর নিজের এক উপনিষদও সংকলন করেছিলেন, যা আমি সম্পাদনা এবং প্রকাশ করি, The Creation of Faith শিরোনামে (Mallorca : Editorial Moll, 1993 and Delhi : Rupa co. 1995)। রূপা সংস্করণের ২৯ পৃষ্ঠায় রয়েছে : ‘Thought must have freedom to think. But only in truth is there freedom. We are not free to think that 2+2 = 5! If we do, we are not free : we are in the bondage of error.’

  ২৬.    সংক্ষিপ্ত 888sport app download apk (‘Brief poems’) আমার পছন্দের পরিভাষা। রবীন্দ্রনাথ নিজে একে বলেছিলেন কবিতিকা (poemlets).

২৭.      আমার 888sport free betগুলো স্ফুলিঙ্গ-এর (১৯৪৫) প্রথম সংস্করণের সঙ্গে যুক্ত, পরিবর্ধিত দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সংস্করণের সঙ্গে নয়।

২৮.      বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কর্তৃক উদ্ধৃত, পৃ ১৫৮ (সঞ্চয়, পৃ ১৩১)।

২৯.      ‘Whose life is it anyway?’ স্টেটস্ম্যান, ক্যালকাটা, মার্চ ৭, ১৯৯৮।

৩০.      হাইজেনবার্গ ডব্লিউ, Natural Law and the Structure of Matter (Rebel Press, 1970); ১৯৯৬-এর ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম রোটারি ক্লাবে জামাল নজরুল ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত বক্তৃতা, ‘Science, Technology and Development.’ * ১৯৮৮ সালের ৩০ মার্চ তারিখে নতুন দিল্লির ম্যাক্স মুলার ভবনে প্রদত্ত বক্তৃতা।