কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর প্রবাহিত মনুষ্যত্ব

সময়ের উত্তাপ শুধু 888sport app download apkরই নয়, কবিরও নবজন্ম ঘটায়। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরও নবজন্ম আমরা নানাভাবে দেখতে পেয়েছি সত্তরের দশকে এসে। তাঁর কাব্যচেতনারও এক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই, যে-পরিবর্তনের নেপথ্যে এক ধরনের ক্ষোভ/ ভালোবাসা – দুটোই জড়িয়ে ছিল। 

দুই

ক্ষোভের কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর ‘জবাবদিহি’ থেকে আমরা সেটি বুঝে নিতে পারি। চোখের সামনেই তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন : ‘সত্তরের দশক মুক্তির দশক’ – এই কথা অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে  একদিন   উচ্চারিত   হলেও   এবং   888sport live footballে  অপসংস্কৃতির    বিরুদ্ধে    আমাদের    প্রগতিশীল   888sport live chat   ও   সংস্কৃতির   কর্ণধারেরা   দীর্ঘস্থায়ী   ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও এতদুদ্দেশ্যের ‘কমিটেড’ কবিদের একঘরে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। হয়তো স্বদেশীয় ‘ঈঁষঃঁৎধষ জবাড়ষঁঃরড়হ’-এ আমাদের কোনো ভূমিকাই নেই।’ (‘বেঁচে থাকার 888sport app download apk’ : মে, ১৯৭৮)। আর ভালোবাসাটা উৎসারিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন – ‘নকশালপন্থীদের সঙ্গে [আমার] কোনো যোগই ছিল না। প্রথম-প্রথম কাগজে পড়তাম। কোনো উৎসাহ বোধ করিনি। … কিন্তু তারপর ক্রমেই সরকারের অত্যাচার দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে উঠলাম।’ এই অস্থিরতার উৎস সম্পর্কেও তিনি আমাদের জানিয়েছেন, ‘অল্প বয়সের ছেলেরা শুধু মিছিল করছে, সভা করছে বলে যেভাবে অত্যাচার হয়েছে তাদের ওপর, জেলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে … সেজন্যই তাদের মনে করে, তাদের উদ্দেশে, অত্যাচারের প্রতিবাদে আমার 888sport app download apk।’ (এপ্রিল : ১৯৮৫)। ঘটনাগুলো আরেকটু বিস্তারে গিয়ে বুঝে নেওয়ার জন্যে সমর সেনের এই লেখাটি খুব জরুরি। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ করলে পাঠকের পক্ষে এই সময়টার চালচিত্র বিষয়ে আরেকটু দিশা পাওয়া হয়তো সম্ভব হবে। সমর সেন লিখেছিলেন – ‘দিনকাল ছিল উত্তেজনায় ভরা। ১৯৬৮-তে চারদিকে গরম হাওয়া, দেশে ও বিদেশে। দেশে নকশালবাড়ি আন্দোলন নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফ্রন্টিয়ার-এ ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন করা হয় অবশ্য, কিন্তু দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের কীর্তিকলাপ উজ্জ্বল মনে হয়নি।

অনেকে ভুলে গিয়েছেন যে, খুনোখুনি প্রথম শুরু হয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের শরিকদের মধ্যে, ক্ষমতা-বিস্তারের ‘সংগ্রামে’। তারপর শুরু হয় নকশালপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ। 

জ্যোতিবাবু, প্রমোদবাবু নিহত ‘মার্কসবাদী’-দের কথা এখনো কথায় কথায় বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিবাবুর জানা উচিত যে, একজন ‘মার্কসবাদী’ নিহত হলে অন্তত চারজন নকশালপন্থী খতম হতেন। তাছাড়া থানা-পুলিশ তাঁর হাতে ছিল, ওখানে নকশালপন্থীদের যাবার উপায় ছিল না।’ (জুলাই : ১৯৭৮)

তিন

নকশাল আন্দোলন এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অনেকটা বাধ্য হয়ে চল্লিশের রাজনৈতিক সচেতনতার গতানুগতিক ধারা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁকে যে ‘অমল মানুষ’ কিংবা ‘প্রসারিত হৃদয়ের কবি’ বলা হয়ে থাকে – এর মধ্যে সামান্যতম আতিশয্য নেই, বরং সেই সত্যটাই এখানে দেখতে পাই, যার মধ্যে আতুর বিহ্বলতা আছে, আমরা তাতেই অভিভূত হই। তাঁর বিনয়ী মনোভঙ্গি নয়, উল্টো মানুষ হওয়ার অহংকার আমাদের যেন জানিয়ে দেয়, তিনি একজন সচেতন বিপ্লবী কবি। রোমানিয়ান চিন্তাবিদ ইমিল চোরান (ঊসরষ গ. ঈরড়ৎধহ : ১৯১১-৯৫) যেমন গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে স্পর্ধা নিয়েই বলেছিলেন : ‘ও ষড়হম ঃড় নব ভৎবব – ফবংঢ়বৎধঃবষু ভৎবব. ঋৎবব ধং ঃযব ংঃরষষনড়ৎহ ধৎব ভৎবব.’ (ঞযব ঞৎড়ঁনষব ডরঃয ইবরহম ইড়ৎহ, ১৯৭৩)। আর অন্যদিকে বীরেন্দ্র চট্টেপাধ্যায় বলছেন : 

অহংকার থাকা ভালো;

কিন্তু নিজেকে নিয়ে নয়।

স্পর্ধা থাকা ভালো :

কিন্তু দল, এমনকী দেশকে নিয়েও নয়।

সেই অহংকার আমাদের মানায়;

আমি একজন মানুষ, সমস্ত পৃথিবীর নাগরিক আমি।

সেই স্পর্ধা আমাদের ভালো রাখে;

মানুষের চেয়ে নির্মল এই পৃথিবীতে কিছুই নেই, আমারও

                                               অধিকার আছে

মনুষ্যত্বে।’ (‘বেঁচে থাকার 888sport app download apk’, ১৯৭৭)

এই কথা তো আমরা বলতেই পারি যে, জীবনের সক্রিয়তার বোধ ও মার্কসবাদী চেতনা এই কবিকে সমস্ত পৃথিবীর নাগরিকত্বের উপলব্ধির আলোয় উদ্বুদ্ধ করেছিল। জার্মান পণ্ডিত এরিক ফ্রম (ঊৎরপয  ঋৎড়সস : ১৯০০-৮০) তাঁর গধৎী’ং ঈড়হপবঢ়ঃ ড়ভ গধহ গ্রন্থে (১৯৬১) মার্কস সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছিলেন,  ‘মার্কস সৃষ্টিশীল, লিপ্ত, স্বাধীন একজন মানুষ। তাঁর লেখা মানুষকে নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখায়। জগৎ এবং মানুষের জীবন নিয়ে তিনি যা ভেবেছেন, সে-ভাবনাকে তাঁর তত্ত্বে তিনি সৃষ্টিশীলভাবে রূপায়িত করেছেন। …’ মানুষ মার্কস ছিলেন আপাদমস্তক মানববাদী

 তাঁর কাছে মানুষের চেয়ে আপন আর কিছু ছিল না। আর এই অনুভূতি প্রকাশের জন্য হেগেলের একটি উদ্ধৃতি তিনি বারবার করে বলতেন, ‘স্বর্গীয় বিস্ময়কর ভাবনা থেকে একজন অপরাধীর অপরাধ নিয়ে চিন্তা করা অনেক বেশি মহৎ আর মোহনীয়।’ তিনি সেইসঙ্গে আরো বলেছিলেন, ‘দুঃখ প্রকাশের দিক থেকে তিনি ছিলেন একজন বিনয়ী মানুষ। যে দোষকে তিনি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন, তা হলো দাসত্ব।’ 

তাঁর সবচেয়ে প্রিয় আপ্তবাক্য হচ্ছে ‘মানবীয় যা কিছু তার সবই আমার আপন’ আর ‘সবকিছুকেই সন্দেহ করো’। একটু মনোযোগ দিয়ে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apk পাঠ করলে আমরা দেখতে পাবো যে, সেখানে রাগ আছে, ক্ষোভ আছে, প্রতিবাদ আছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ আছে; আর তার চেয়েও যেটি বেশি আছে সেটি হচ্ছে : ‘প্রবাহিত মনুষ্যত্ব’।

প্রবাহিত মনুষ্যত্বের একটি ভালো উদাহরণ আমরা পাই ফরাসি দার্শনিক-888sport live footballিক জঁ পল সার্ত্র (ঔবধহ-চধঁষ ঝধৎঃৎব : ১৯০৫-৮০)-এর বক্তৃতার এই অংশটুকু থেকে। ভিয়েতনামে সংঘটিত সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন : ‘ধানক্ষেতে যখন কোনো ভিয়েতনামি কৃষক মেশিনগানের গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন, তখন আমরা প্রত্যেকেই তাতে আহত হই। ভিয়েতনামিরা সমগ্র মানবের জন্য লড়ছে, আর মার্কিন সেনারা লড়ছে তার বিরুদ্ধে। রূপকার্থে নয়, বিমূর্তভাবেও নয়। … এই অর্থে সাম্রাজ্যবাদী গণহত্যা আজ আরো পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠছে। আর ভিয়েতনামের সূত্রে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাকে শাসাচ্ছে, সন্ত্রস্ত করে তুলছে, বস্তুত সে হলো সমগ্র মানবজাতি।’ (মে, ১৯৬৭)। তার মানে দাঁড়ায়, যাকে মনুষ্যত্ব বলা হচ্ছে, তার মধ্যেও একটি আদর্শ, একটি বিপ্লবী চেতনা সক্রিয় থাকে। সেটি আমরা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apkর মধ্যেও দেখতে পাই। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বিশ্বাস করতেন যে, ‘আদর্শ মুখের প্রসাধন নয়, সারাজীবন তাকে লালন করতে হয়/ রক্তের মধ্যে।’ আর সেই রক্ত থেকেই যেন আগুন জ্বলে, প্রতিবাদের আগুন –

মাথায় আগুন নিয়ে সে

এঁকেছিল মানুষের মুখ।

ছবি তাই আগুন ছুঁয়েছে। 

স্পষ্টতার কাছে সমর্পিত বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এসব 888sport app download apk পাঠ করে মনে হয়, মানুষের প্রতি দায় ছাড়া তাঁর যেন অন্য কোনো দায় নেই। কবি ও 888sport app download apkর উদ্দেশ্য এসব লেখায় একটুও যেন গোপন থাকে না। অথচ প্রচলিত ধারণায় 888sport live chatের মধ্যে আলো-আঁধারের রহস্য খুঁজে চলাটাকেই অনেকে একটি বড়ো ঘটনা বলে মনে করেন। মহামতি ফ্রেডারিক অ্যাঙ্গেলস (১৮২০-৯৫) বলেছিলেন, ‘আমি উদ্দেশ্যপ্রবণ 888sport app download apkর আদৌ বিরোধী নই।’ কিন্তু তারপরও তাঁর মনে হয়েছে : ‘লেখকের মতামত যতই চাপা থাকে,

888sport live chatকৃতির দিক থেকে ততই ভালো।’ (এপ্রিল : ১৮৮৮)। এই মতটাকে গ্রাহ্যতার মধ্যে নিয়েই কবি-প্রাবন্ধিক শঙ্খ ঘোষ (১৯৩২-২০২১) বলেছিলেন, ‘888sport app download apkর কাছে মানুষ তো কেবল 888sport live chatসৌকর্য খুঁজতে যায় না, সেখানে সে যায় তার দুুঃখ-আনন্দের একটা ভর পেতে, সংকটমুহূর্তেও সাহস পেতে, মানুষ হিসেবে একটা সংযোগ খুঁজতে।’ শঙ্খ ঘোষ এ-ও মনে করতেন, ‘পাঠকেরা জেনেছিলেন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apkয় ছড়ানো আছে সেই সংযোগের ব্যাপকতা, সংযোগের সহজতা। আর সেইসঙ্গে যা কিছু এই সহজ সংযোগের বাধা বা প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে চায়, সেই সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধিক্কার আর প্রতিবাদ আছে সেখানে।’ আর সেসব কারণেই ‘সমস্ত অর্থেই বাংলার সবচেয়ে প্রতিবাদী এই কবি, তাঁর 888sport app download apk যেন আমাদের সামনে একটা সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরে, আমাদের হৃদয়ের ইতিহাস আর আমাদের সময়ের ইতিহাস।’ (জানুয়ারি : ১৯৮৮)। এলিয়টের মতো কবিও অস্বীকার করতে পারেননি যে, ‘চড়বঃৎু সধু যধাব ধ ফবষরনবৎধঃব, পড়হংপরড়ঁং ংড়পরধষ ঢ়ঁৎঢ়ড়ংব।’  

চার

বাংলা আধুনিক 888sport app download apk সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘আধুনিক বাংলা 888sport app download apkর দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা যেন সবিস্ময়ে এই কথাটা উপলব্ধি করি যে ঐক্যের মধ্যেও বিপরীতের স্থান আছে, বিরোধের মধ্যেও সংহতির সম্ভাবনা।’ (নভেম্বর : ১৯৫৩)। বিষয়টাকে স্পষ্ট করতে গিয়ে তাঁকে আরো বলতে হয়েছিল, ‘এই আধুনিক 888sport app download apk এমন কোনো পদার্থ নয় যাকে কোনো-একটা চিহ্ন দ্বারা অবিকলভাবে শনাক্ত করা যায়। একে বলা যেতে পারে বিদ্রোহের, প্রতিবাদের 888sport app download apk, সংশয়ের, ক্লান্তির, সন্ধানের, আবার এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়ের জাগরণ, জীবনের আনন্দ, বিশ্ববিধানে আস্থাবান চিত্তবৃত্তি।’ আমরা জানি, বুদ্ধদেব রাজনীতি আর সমাজসচেতনতার ব্যাপারে একধরনের তীব্র বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। তারপরও আধুনিক 888sport app download apkয় বিদ্রোহের, প্রতিবাদের ধরনটিকে অস্বীকার করেননি কিংবা করতে পারেননি। এটা তাঁর 888sport live footballিক সততারই এক অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

চল্লিশের দশকের শুরু থেকেই আমাদের 888sport live footballে কবিদের সচেতন সমাজ ও রাজনৈতিক মনোভঙ্গি নানাভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে। অরুণ মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মণীন্দ্র রায়, দিনেশ দাস, ফররুখ আহমদ – এরকম বেশকিছু কবির নাম এ-প্রসঙ্গে উচ্চারিত হয়। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন তাঁদের একজন, যদিও এক সাক্ষাৎকারে তিনি খোলাখুলিভাবে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমার 888sport app download apk কোনোদিনই চল্লিশের প্রগতিশীল 888sport app download apk বা কবিদের কাছ থেকে অন্ন বা জল আহরণ করেনি। বরং আমি নিজের 888sport app download apkকে যতটা বুঝি, আমার 888sport app download apkর শিকড় অন্যখানে। সেখানে আজও যাঁরা জলসিঞ্চন করছেন তাঁরা সবাই দলছুট একক কবি – যেমন জীবনানন্দ, তারপর নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ।’ (নান্দীমুখ : ১৯৮০)। তাঁর সতীর্থদের প্রায়-সবাই চল্লিশের দশকের হলেও তিনি ওই একই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘চল্লিশের ‘প্রগতি 888sport live football’ প্রথম থেকেই আমার কাছে খণ্ডিত এবং যান্ত্রিক বলে মনে হয়েছে। বাংলা 888sport app download apkয় শ্রেণীসচেতনতা অথবা সাম্যবাদের ভাবনাটা চল্লিশের কবিরাই প্রথম আনেননি। গোবিন্দচন্দ্র দাস, সত্যেন্দ্রনাথ, নজরুল, বিজয়লাল, প্রেমেন্দ্র মিত্র অনেকদিন আগেই আমাদের কাছে ঐ বার্তা বয়ে এনেছেন।’ চল্লিশের দশকের 888sport app download apkর বিপ্লবী-বার্তার চেয়ে তাঁর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে মুক্তির দশক হিসেবে চিহ্নিত সত্তরের দশককে। তিনি এ-প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার কেবলই মনে হয়েছে, ঐ দশকের [চল্লিশের দশক] প্রগতিশীল কবিদের কাছ থেকে আমাদের আর কিছুই চাওয়ার অথবা পাওয়ার নেই। বরং সত্তরে যেসব নতুন কবি এই দশকের রক্তস্নানকে সাক্ষী রেখে সামনে এগিয়ে আসছেন, সুযোগ পেলে একদিন আমার ভিক্ষাপাত্র নিয়ে তাঁদের সামনে উপস্থিত হবো।’ 

বাংলা 888sport app download apkয় সমাজসচেতনতার শুরু চল্লিশের দশক থেকে – এই প্রতিষ্ঠিত ধারণাকেও তিনি মেনে নিতে পারেননি। বরং এটিকে আরো পেছনে টেনে নিয়ে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘বাংলা 888sport app download apkর সমাজচেতনতা মঙ্গলকাব্যের সময় থেকেই আমরা অনুভব করে আসছি। আধুনিক 888sport app download apkর যারা ভগীরথ – ঈশ্বর গুপ্ত, মাইকেল, হেমচন্দ্র, নবীন – তাঁদের প্রত্যেকের 888sport app download apkয় তাঁদের নিজস্ব সমাজভাবনাগুলি বারবার উঁকি দিয়েছে।’ সেইসঙ্গে তিনি এটিও যোগ করেছিলেন, ‘দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গোবিন্দচন্দ্র দাস, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং মাঝে মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ 888sport app download apkর মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব সমাজভাবনাগুলিকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।’

মানবজাতির  অন্যতম  মহান  শিক্ষক  মাও  সে-তুং  যে-বিপ্লবী সংস্কৃতির কথা বলেছিলেন, সেটিকে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেভাবে আত্মস্থ করেছিলেন, আমাদের বাংলা 888sport live footballে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মাও সে-তুং বলেছিলেন, ‘বিপ্লবী সংস্কৃতি হচ্ছে, ব্যাপক জনসাধারণের পক্ষে বিপ্লবের বলিষ্ঠ অস্ত্র। বিপ্লবের পূর্বে তা হচ্ছে বিপ্লবের মতাদর্শগত প্রস্তুতি।’ (জানুয়ারি : ১৯৪০) এই প্রস্তুতিটা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেশ জোরালোভাবেই নিয়েছিলেন।

পাঁচ

নিজের কাব্যচেতনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অকপটভাবে জানিয়েছিলেন, ‘আমার রাস্তা প্রথম থেকেই ছিল ভিন্ন। আজও তাই। ‘মুখোশ’, ‘প্রভাস’ অথবা আমার ব্যক্তিগত প্রেমের 888sport app download apkগুলি থেকে আমি কোনওদিনই মুখ ফিরিয়ে নেবো না। আজও যদি তাদের কাছাকাছি কোনো প্রেম বা অপ্রেমের 888sport app download apk আমার কলম থেকে বেরোয়, তাদের আমি অবশ্যই পত্রিকায় ছাপতে দেবো। বইয়ে ছাপবো। আমাদের দেশ অথবা পৃথিবী এখনও কোনো স্বর্গরাজ্য বা তার কাছাকাছি কোথাও পৌঁছাতে পারেনি।’ তিনি সেইসঙ্গে এটিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ‘আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের তো সারাজীবনের লড়াই থেকে যায় এই পৃথিবীটাকে বদলে দেবার। আমার কাজ মাটিতে কান রেখে কোথায় কি হচ্ছে, তার সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার। আর, তখনই আমাকে ঘুরে ফিরে একটি করে নতুন ‘মুখোশ’ লিখতে হয়। লেখা উচিত।’

বলা যায়, এই 888sport live footballিক ঔচিত্যবোধ থেকে তিনি

বলেছিলেন, ‘নকশাল তরুণ-তরুণীদের নিয়ে যখন পুলিশী তাণ্ডব চলছিল, সত্তর দশকের সেই কয়েকটা বছর শুধু প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আমাকে শতাধিক 888sport app download apk লিখতে হয়েছে। ‘মুণ্ডহীন ধড়গুলো আহ্লাদে চীৎকার করে’, ‘আমার রাজা হওয়ার স্পর্ধা’, ‘রাস্তায় যে হেঁটে যায়’, ‘মানুষখেকো বাঘেরা লাফায়’ – এইসব পুস্তিকা প্রধানত তারই ফলশ্রুতি।’ 888sport app download apkগুলো যে অনেকাংশে সময়ের প্রয়োজনে লেখা সেই সত্যটিও বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একেবারে অস্বীকার করেননি।

ছয়

সব্যসাচী দেব  মনে করতেন – ‘কখনও ঈষৎ নৈরাশ্য, কখনও কিছুটা বিদ্রƒপও, হয়তো তা তিক্তও, তবু বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apk ভালোবাসায় স্পর্শ করতে চায় মানুষকে, জীবনের উষ্ণতাকে। সেই স্পর্শের আকুলতা দেখা যায় তাঁর 888sport app download apkয়।’ (বীরেন্দ্র সমগ্র, চতুর্থ খণ্ড, ২০১৬)। আর সেই আকুলতার ধরন দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে, এ হচ্ছে সেই মানুষেরই বেঁচে

থাকার 888sport app download apk, যে-মানুষ অহংকার আর স্পর্ধা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। যে-মানুষ মিথ্যাটাকেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে সত্যটাকেই নিরন্তর খুঁজে চলেছে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apk তো সেইসব মানুষের জন্য। বাস্তবতার এই চিত্রকে তিনি কখনোই অস্বীকার করেননি, কিন্তু তাকেই নিঃশব্দে মেনে নেওয়ার বিরোধী ছিলেন –

মিথ্যা যখন সত্যকে কান ধরে

বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে বলে,

আমরা সবাই গাধার টুপি মাথায়

দৃশ্যটা উপভোগ করি।

নিজেদের লাঞ্ছনা ও অপমানকে

তখন খুবই স্বাভাবিক মনে হয়।

সাত

সিরীয়-আরব কবি আদোনিস (অফড়হরং : ১৯৩০) বিশ্বাস করেন, ‘চড়বঃৎু রং ধহ ধপঃ রিঃযড়ঁঃ ধ নবমরহহরহম ড়ৎ ধহ বহফ. ওঃ রং ৎবধষষু ধ ঢ়ৎড়সরংব ড়ভ ধ নবমরহহরহম, ধ ঢ়বৎঢ়বঃঁধষ নবমরহহরহম।’ আমরা যেন মনে রাখি যে, আদোনিসের একেবারে বিপরীত মেরুর কবি হয়েও বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  আর এক আরম্ভের জন্য (১৩৮৮) প্রস্তুতি নিতে কখনো ভোলেননি। ‘অনেক জন্মদিন’ তাঁর সেই প্রস্তুতিরই স্মারকচিহ্ন –

জন্মদিনে

আমার ঘরে বন্ধুরা আসে

তারা আমাকে 888sport app download apk শোনায়!

আমি অনেকদিন কোনো 888sport app download apk লিখিনি;

আমার মনে তার বিষণ্নতা আছে।

কিন্তু আজ আমার জন্মদিন,

বন্ধুরা বারবার অনুরোধ জানায়

তারা আমার পুরনো 888sport app download apkই শুনবে।

কিন্তু এ-সব আমার স্বপ্ন।

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমৃত্যু বিশ্বাস করতেন, ‘তিনিই সত্যিকারের কবি, যাঁর আত্মার অমলতা বাইরের সমস্ত ঝড়-ঝাপটায়, এমন কি মানবসমাজের মধ্যে যে বিপরীত অমানুষিকতা … আমাদের উন্মাদ করে, তার বিষক্রিয়াতেও, একই রকম অমøান থাকে।’ আর সেইসঙ্গে ‘চারদিকের পীড়িত মানবগোষ্ঠীগুলির মধ্যে তার কাজ বিশল্যকরণী বৃক্ষের মতো, যে বৃক্ষ শুধু ছায়া এবং আশ্রয়ই দেয় না, অধিকন্তু আরোগ্যের মন্ত্র জানে।’ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আরোগ্যের সেই মন্ত্র-জানা কবি।

আট

এই সেপ্টেম্বর, ২রা সেপ্টেম্বর, আজ শতবর্ষ পরে এসেও আমাদের সেই কথাটাই নতুন করে জানিয়ে দিয়ে যায়। প্রতিদিনই একজন প্রকৃত কবির জন্মদিন, প্রতিবছরই তাঁর জন্মশত বছর। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জানাই 888sport apk download apk latest version।