মাকসুদার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কবি শামসুর রাহমানের দিকে। তার শুভ্র চুল, কাশফুলের মতো, কিছু কাঁচা, বেশিরভাগটাই পাকা। তার বড় বড় চোখ। তার মুখমন্ডল দিয়ে যেন ফুটে বেরুচ্ছে জ্যোতি।

তিনি পরেছেন সাদা শার্ট, তার ওপরে বাদামি রঙের সোয়েটার। তার চশমার ফ্রেম ভারী আর কালো, চশমার কাচ দেখেও বোঝা যাচ্ছে, পাওয়ার বেশি।

আজ তিনি এসেছেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দোতলায়। এখানে জাতীয় 888sport app download apk উৎসবের অফিস খোলা হয়েছে।

লোকজন আসছে-যাচ্ছে। আসছেন কবিরা।

নির্মলেন্দু গুণও একদিন এসেছিলেন টিএসসিতে। বড় বড় দাড়ি, তোবড়ানো গাল, গনগনে চোখ। চেহারাটা খানিকটা রবীন্দ্রনাথের মতোই দেখায়। নির্মলেন্দু গুণকে দেখে মাকসুদারের বড় ভালো লাগে। তার প্রিয় কবিমানুষটা এত কাছে, যদিও এর আগে কবি নির্মলেন্দু গুণের বাসায় একবার। তাদের হলে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ হয়। সন্ধ্যার সময় আয়োজন করা হয় আবৃত্তি বিতর্ক সংগীত প্রতিযোগিতার। তাতে বিচারক হন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. ইনামুল হক স্যার, যিনি টেলিভিশনে নাটক লিখে ও অভিনয় করে বিশেষভাবে বিখ্যাত। তাঁর সঙ্গে অনেক সময় পাওয়া যায় তাঁর স্ত্রী লাকী ইনামকে। ইনামুল হক স্যারকে ধরলে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে পাওয়া যায় অভিনেতা খালেদ খান, কিংবা নিমা রহমানকে। এঁরা আসেন বিচারক হয়ে। হলে তখন চাঞ্চল্য পড়ে যায়। নিমাকে একনজর দেখার জন্য ছেলেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘুরঘুর করতে থাকে। তখনই আয়োজকেরা লাকি কুপন বিলি করে। অনুষ্ঠানের শেষে লটারি হবে। তাৎক্ষণিক আকর্ষণীয় 888sport app download bd দেওয়া হবে সেই লটারি-বিজয়ীদের। ডাইনিং হলে খাওয়া-দাওয়া শেষে টেলিভিশন দেখতে কমনরুমে আসা ছেলেরা লটারির 888sport app download bdের লোভে অনেক সময় এইসব আবৃত্তি বা বক্তৃতার অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত রয়ে যায়। তাদের অনেকেরই পরনে থাকে লুঙ্গি।

সরিষা সানা আর কবি মাকসুদ (হলের ছেলেরা তাকে কবি বলে ডাকে) একদিন চলে যায় নির্মলেন্দু গুণের বাসায়।

নির্মলেন্দু গুণ পলাশীতেই থাকেন। মানে তাদের তিতুমীর হল থেকে জোরে ঢিল মারলে নির্মলেন্দু গুণের বাসার টিনের চালে পড়বে।

কবিকে তারা নিমন্ত্রণ করতে চায় তাদের হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। অতিথি হয়ে আসতে পারেন, বিচারক হিসেবে আসতে পারেন। আসল কথা হলো, কবির সান্নিধ্য পাওয়া। ওরে বাপরে! কত বড় কবি তিনি। তাঁর হুলিয়া 888sport app download apkর ওপরে সিনেমা বানানো হয়েছে, তানভীর মোকাম্মেল নামের একজন স্বল্পদৈর্ঘ্য live chat 888sport-আন্দোলন কর্মী বানিয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে তাদের হলের সামনে শামিয়ানা টানিয়ে সেই ছবি দেখানো হয়েছে। শেখ মুজিবকে যখন দেখানো হয়, তখন কী যে তালি পড়ে।

সরিষা সানা আর মাকসুদার কবির বাসা খুঁজতে বের হয়। তারা ঠিক দুপুরবেলা বের হয় কবির বাড়ির উদ্দেশে। দশ মিনিট হাঁটলেই এসে পড়ে পলাশীর ব্যারাক। চায়ের দোকানে গিয়ে তারা জিজ্ঞেস করল, কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ি কোনটা?

দোকানি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছেন। কথাটার মানে তিনি বুঝছেন না।

কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ি কোনটা?

তখন মাকসুদার একটু ভেঙে বলল, এই যে একটা লম্বা লোক, মুখে বড় বড় দাড়ি, মোছ, রবীন্দ্রনাথের মতো দেখতে, কবি… কবি নির্মলেন্দু গুণ…

এইবার দোকানি বুঝলেন। বললেন, ওই যে টানা হলুদ টিনে ছাওয়া ঘরটা, ওইটাতে থাকেন।

তারা সেই হলুদ দেয়াল টিনে ছাওয়া লম্বা ঘরটার দিকে এগিয়ে গেল।

বোঝা যাচ্ছে, একেকটা ঘরে একেকটা পরিবার বাস করে।

তাদের একটা কমন বাথরুম। সেই বাথরুমের সামনে 888sport promo code-পুরুষ-শিশুর ভিড়।

থালাবাসন মাজছেন, এমন একজন মহিলাকে তারা জিজ্ঞেস করল, নির্মলেন্দু গুণের ঘর কোনটা?

তিনি দেখিয়ে দিলেন কোনার দিকের একটা রুম।

তারা সেই রুমের বারান্দায় উঠল। মাকসুদার আবৃত্তি করতে লাগল হুলিয়া 888sport app download apk থেকে, আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম, দুপুর।

সে নিজের ছায়ার দিকে তাকাল। ছায়াটা ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন কায়া হয়ে গেছে কিনা!

নির্মলেন্দু গুণ বাড়িতেই ছিলেন।

তারা দরজার কড়া ধরে নাড়ছে।

ভেতর থেকে আওয়াজ এলো – কে?

মাকসুদার বলল, আমরা বুয়েট থেকে এসেছি। কবি নির্মলেন্দু গুণ কি আছেন?

তখন দরজা খুলে গেল।

একটা লাল রঙের লেপ, ওয়ার ছাড়া, গায়ে-মাথায় চাপিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ দরজা খুললেন।

বুয়েট থাইকা আইছ? আমার কাছে? ক্যান আইছ?

তিনি তার বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন। বললেন, বড় ঠান্ডা।

আসো। তুমি ওই চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসো। আর তুমি বিছানায় বসো। শোনো, তোমাকে বিছানায় বসতে বললাম বলে ভেবো না অসম্মানিত করছি, কবির বিছানায় বসতে পারায় গৌরব বেশি।

মাকসুদার বসল বিছানায়। আর সরিষা সানা চেয়ারে। ঘরে কোনো লেখার টেবিল নেই। একটা টেলিভিশন আছে। মাকসুদার জানে, এটা প্রকাশক ফরিদ আহমেদ তাঁকে দিয়েছেন বই লেখার রয়্যালটি হিসেবে।

ঘরের ভেতরেই হাঁড়িকুড়ি, থালাবাসনও দেখা যাচ্ছে একপাশে।

আর বিছানার অর্ধেকটা জুড়ে বই।

মাথার কাছে বই। মাটিতে বই। একটা বেতের বুকসেল্ফ জুড়ে বই আর বই।

সরিষা সানা বলল, দাদা, আপনার বুকে তো মনে হয় ঠান্ডা বসে গেছে। আপনি গরম সরিষার তেল বুকে মালিশ করেন।

মাকসুদার হাসি গোপন করতে পারছে না।

নির্মলেন্দু গুণ বললেন, তেল তো পাওয়া যাবে, মালিশ করার লোক নাই। কেন এসেছ, বলো!

মাকসুদার বলল, দাদা, আমরা তিতুমীর হলে থাকি। আমাদের 888sport live football সংস্কৃতি সপ্তাহ হচ্ছে। আপনাকে একদিন আসতে হবে আমাদের প্রধান অতিথি হয়ে।

নির্মলেন্দু গুণ বললেন, এই ঠান্ডার মধ্যে আমি বের হতে পারব না, বুঝলা। আমি কতদিন স্নান করি না জানো?

সানা বলল, কতদিন?

নির্মলেন্দু গুণ বললেন, আইজকা ২৬-২৭ দিন হবে। ঠান্ডার ভয়ে স্নান করি না। আরে মিয়া ঠান্ডার ভয়ে 888sport app download apkও লিখি না। লেপের নিচে হাত রেখে লেখা যায় না।

মাকসুদার বলল, দাদা, তাহলে বসন্তের সময় আপনাকে নিয়ে যাব একবার। একটা 888sport app download apk পাঠের আসর করব। আপনি আসবেন।

কবি বললেন, বসন্তের 888sport app download apkর আসর কি এখন সংগত হবে? দেশের মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করছে। আচ্ছা, আগে তো বসন্ত আসুক। রবীন্দ্রনাথ যেহেতু বলেছেন, তোমার বসন্তদিনে আমার বসন্তগান ধ্বনিত হোক ক্ষণতরে। কাজেই কিছু ক্ষণতরে একটা আসর বসতে পারে। আগে বসন্ত আসুক, কোকিল ডাকুক, তারপর আমাকে ডেকো। আমি বসন্তের কোকিল, শীতে আমার দেখা পাবে না।

সেই শীতকাতর কবি নির্মলেন্দু গুণও একদিন এসে হাজির হয়েছিলেন টিএসসির দোতলায়। চাদর জড়িয়ে। তবে তিনি যখন হাঁটেন, মাথা উঁচু করে হাঁটেন।

মাকসুদার তাকে দেখে এক কাপ গরম চা হাতে করে এগিয়ে গিয়েছিল, দাদা, চা খান। শীতকালের মহৌষধ। দাদা, মনে আছে, আমি আপনার বাসায় গিয়েছিলাম। বুয়েটের তিতুমীর হল থেকে। আপনি কিন্তু বুয়েটে বসন্তকালের 888sport app download apk উৎসবে আসতে রাজি হয়েছেন।

কবি বেশ আগ্রহ সহকারে তাকিয়েছিলেন, তুমি আমার বাসা গেছলা? হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে হয় গেছলা। তোমার নামটা যেন কী?

মাকসুদার রাহমান।

হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পড়ছে। আজকাল নাম মনে রাখতে পারি না বুঝলা। বড় কবিদের এই রকম হয়, তারা ভুলে যায়। আমার মনে হয় শিগগিরই আমি বড় কবি হয়ে যাচ্ছি।

দাদা আপনি তো বড় কবিই। আপনার তো 888sport app download apkর লাইন আছে – নাম ভুলে যাব দুর্বল মেধা 888sport app download for androidে রাখিব মুখ, কাল রজনীতে চিনিব তোমায় আপাতত 888sport sign up bonusভুক।

হ্যাঁ। আছে। তুমি তো দেখছি আমার 888sport app download apkর লাইন মুখস্থ রেখেছ।

আপনার অনেক 888sport app download apkই আমার মুখস্থ আছে দাদা।

 

সেদিন নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিল মাকসুদার। আজ শামসুর রাহমানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে সে। কিন্তু শামসুর রাহমান এত বড় কবি, আর তাঁর চেহারার মধ্যে এমন একটা দেবদূতোপম সৌন্দর্য আছে যে, মাকসুদার কাছে যাওয়ারই সাহস পাচ্ছে না।

তিনি কথা বলেন মৃদুস্বরে, কেউ কিছু বললে এমনভাবে তাকান যে, মনে হয় এই ধরনের কথা তিনি এর আগে কোনোদিনও শোনেননি।

 

কিন্তু তার জীবনের পরমতম সুযোগটি এসে গেল। শামসুর রাহমান বাড়ি যাবেন, একটা মাইক্রোবাস তাকে দিয়ে আসবে তল্লাবাগ, তাঁকে তো একা ছাড়া যাবে না, কারণ তাঁর নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে, কে কে যাবে সঙ্গে, আরো দুজন তরুণ কবির সঙ্গে সেই সুযোগ চলে এলো মাকসুদারেরও! মোজাম্মেল বাবু, যিনি কিনা বুয়েটেই পড়েন, বললেন, মাকসুদার তুমি যাও।

মনে মনে বাবুকে ধন্যবাদ দিলো মাকসুদার, যদিও মুখে কিছু বলতে পারলো না।

সামনে বসলেন তরুণ কবি শ্যামল।

মাঝখানে কবি শামসুর রাহমান।

পেছনে চলে গেলেন কবি অরুণ।

শামসুর রাহমানের পাশে বসার বিরলতম সুযোগটি পেলো মাকসুদার।

তারপর সে কুকরে রইল। একটা কথাও আর তার মুখ থেকে বেরুচ্ছে না।

শামসুর রাহমানের কত 888sport app download apk তার মুখস্থ।

সে কবিকে কবির লেখা 888sport app download apk শোনাতে পারে।

সে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারে, আপনি কখন লেখেন। সকালে না রাতে।

সে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারে, আপনার মা কেমন আছেন? তিনি কি কখনো ‘আমার মাকে’ 888sport app download apkটার কথা জানেন। এটা শোনার পরেও কি তিনি কখনো এক লাইন গানও গুনগুন করে গাননি!

কিন্তু সে তাকে কী বলে সম্বোধন করবে?

সবাই কবিকে ডাকে রাহমানভাই বলে।

মাকসুদারের নামের শেষেও তো রাহমান। সেই কথাটা কি সে তাকে বলবে? তিনি যদি মন খারাপ করেন। যদি বলেন, আমার নামের ইউনিকনেস তুমি কেন নষ্ট করবে?

কবি বেলাল চৌধুরী কবিকে ডাকেন ‘স্যার’ বলে।

তাহলে কি মাকসুদারও কবিকে ডাকবে স্যার বলে!

 

কবি নিজেই মুখ খুললেন। বললেন, আপনাদের কষ্ট করে আমার সঙ্গে যাওয়ার দরকার ছিল না। অযথা কষ্ট করলেন।

মাকসুদার জানে, কবি শামসুর রাহমান কাউকেই ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করেন না। সবাইকে তিনি ডাকেন ‘আপনি’ করে।

সে বলল, আমাদের তো কষ্ট নয়, এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, আপনার সঙ্গে একই গাড়িতে আমরা উঠেছি।

কবি বললেন, আমি কিন্তু আগে রাজনীতিবিমুখ ছিলাম। আমার বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমান খুব রাজনীতি-সচেতন ছিলেন, রাজনীতিসংলগ্ন ছিলেন। কিন্তু এখন আমি বুঝি, দেশের প্রয়োজনে কবিদেরও রাজনীতি-সচেতন হতে হয়। চুপচাপ বসেও থাকা যায় না। সক্রিয় হতে হয়। আমরা একাত্তর সালে মিছিল করেছিলাম। সেসব দিনের কথা মনে হচ্ছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মাকসুদার কবির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাইক্রোবাসে পাশাপাশি আসনে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা বেশ কষ্টেরই। মাকসুদারের ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যায়।

শামসুর রাহমানকে 888sport app download apk-উৎসবে পাওয়া একটা ঘটনা।

প্রেসিডেন্ট এরশাদ একটা এশীয় 888sport app download apk উৎসব করছেন। সৈয়দ আলী আহসান, ফজল শাহাবুদ্দীন, আল মাহমুদ প্রমুখ কবি আছেন ওই 888sport app download apk উৎসবের সঙ্গে। এই উৎসব বসবে পাঁচতারা হোটেলে।

তারই পাল্টা এই আয়োজন। যদিও জাতীয় 888sport app download apk উৎসবের কবিরা তা স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন, আমরা কারো পাল্টাপাল্টি উৎসব করছি না। আমরা চলছি আমাদের নিজেদের মতো, আমাদের নিজেদের মতে। 888sport app download apk একটা বিশুদ্ধ ব্যাপার, স্বৈরাচারী দুঃশাসনের সঙ্গে 888sport app download apk চলতে পারে না।

শৃঙ্খল-মুক্তির জন্য 888sport app download apk – এই হলো জাতীয় 888sport app download apk উৎসবের স্লোগান।

টিএসসির সড়কদ্বীপের কাছে বড় মঞ্চ বানানো হচ্ছে।

রাজপথ জুড়ে থাকছে প্যান্ডেল।

ফয়েজ আহমদ 888sport app download apk উৎসবের আহবায়ক। সভাপতিত্ব করবেন শামসুর রাহমান।

টিএসসির কার্যালয় বিকেল থেকে রাত নটা-দশটা অবধি গমগম করে। কবি মহাদেব সাহা আসেন, আসেন রফিক আজাদ, হুমায়ুন আজাদ। হেলাল হাফিজকেও দেখা যায় মাঝেমধ্যে।

আর আসেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

তিনি গান লিখেছেন 888sport app download apk-উৎসবের জন্য। সেটায় সুর দেওয়া হচ্ছে।

888sport live chatী ইউসুফ হাসান পোস্টারের নকশা করছেন 888sport app download apk উৎসব উপলক্ষে। মোজাম্মেল বাবু আর তারিক সুজাত ব্যস্ত 888sport app download apk উৎসবের বুলেটিন বের করার কাজে।

মাকসুদার 888sport app download apk উৎসবের বুলেটিনের জন্য লেখা তৈরি করছে। সেসব সে দেখিয়ে নিচ্ছে হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকে।

আল আমিন ব্যস্ত কবিদের নাম নথিভুক্ত করার কাজে। সারাদেশ থেকে কবিরা আসছেন 888sport app download apk নিয়ে। সে এক দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার।

এই দক্ষযজ্ঞের ভেতরে মাকসুদার পেয়ে গেল শামসুর রাহমানকে।

তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে মনে মনে আবৃত্তি করে :

জেনেছি কাকে চাই, কে এলে চোখে ফোটে

নিমেষে শরতের খুশির জ্যোতিকণা;

কাঁপি না ভয়ে আর দ্বিধার নেই দোলা –

এবার তবে রাতে হাজার দীপ জ্বেলে

সাজাব তার পথ, যদি সে হেঁটে আসে।

যদি সে হেঁটে আসে, প্রাণের ছায়াপথ

ফুলের মতো ফুটে তারার মতো ফুটে

জ্বলবে সারারাত, ঝরবে সারারাত।

জেনেছি কাকে চাই, বলি না তার নাম

ভিড়ের ত্রিসীমায়; স্বপ্ন-ধ্বনি শুধু

হৃদয়ে বলে নাম, একটি মৃদু নাম।

 

মাইক্রোবাস শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় হয়ে মিরপুর রোডে ওঠে। তারপর এগুতে থাকে তললাবাগের দিকে।

সোবহানবাগ মসজিদের উল্টোদিকে তল্লাবাগ। সেখানে কবির বাসা।

বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামলে শ্যামল তাড়াতাড়ি নামলেন। দরজা খুলে দিলেন। বললেন, রাহমানভাই দেখে নামেন। জায়গাটা একটু উঁচু-নিচু।

শামসুর রাহমান নামলেন।

তারপর নামল মাকসুদার।

কবি বললেন, আপনারা আসুন। চা খেয়ে যান।

শ্যামল বললেন, আরেকদিন আসব রাহমানভাই। অনেক কাজ বাকি। আমাদের দৌড়ে টিএসসি যেতে হবে।

শামসুর রাহমান বললেন, আচ্ছা তাহলে আরেকদিন অবশ্যই আসবেন। তিনি নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ানোর আগে হাত মেলালেন শ্যামল আর মাকসুদারের সঙ্গে।

মাকসুদারের হাতে কবি শামসুর রাহমানের হাত। কী মোলায়েম আর কী উষ্ণ।

মাকসুদার হাত ধরে কাঁপতে থাকে। এই হাতে তিনি লিখেছেন কী সব অমর পঙ্ক্তিমালা! ‘স্বাধীনতা তুমি’, কিংবা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’। এগুলোও মুখ্য নয়, তিনি তাঁর প্রথম 888sport app download apkর বই প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগের প্রথম 888sport app download apkটাই বা লিখতে পারলেন কোন জাদুবলে। ল্যাজারাস তিনদিন কবরে থেকে ফিরে এসেছে পৃথিবীতে, তাকিয়ে দেখছে পৃথিবীটাকে –

 

এই সেই পৃথিবী অপার মাটি যার এতকাল

সুপুষ্ট স্তনের মতো ফল আর ফাল্গুনের ফুল

করেছে উৎসর্গ নিত্য সন্তানের শ্রম প্রজ্ঞা প্রেমে

পূর্ণ হয়ে দীর্ণ হয়ে? এই সেই পৃথিবী সাবেকি?

 

একজন তরুণ কবির প্রথম 888sport app download apkর বইয়ের প্রথম 888sport app download apk এত পরিপক্ব হতে পারে! চিন্তাটাই কী অভিনব! বুদ্ধদেব বসুর প্রথম 888sport app download apk তো এত পরিণত ছিল না, এমনকি জীবনানন্দ দাশের প্রথমদিকের 888sport app download apkয় মোহিতলাল মজুমদার কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাব স্পষ্ট।

মাকসুদার হাত ছেড়ে দিয়ে শামসুর রাহমানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ।

 

অরুণও সামনে চলে এলেন। এবার তারা তিনজন গাড়িতে। প্রধান কবিকে নামিয়ে দিয়ে তারা ফিরে আসছে মাইক্রোবাসে।

মাকসুদারের মনে হচ্ছে, মাইক্রোবাস জুড়েই একটা সুরভি ছড়িয়ে আছে। ছড়িয়ে আছে 888sport app download apkর বইয়ের সোঁদা গন্ধ।

১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হলো 888sport app download apk উৎসবের। উদ্বোধন ঘোষণা করলেন সুফিয়া কামাল।

পতাকা উত্তোলনের সময় মাকসুদার গিয়ে দাঁড়াল সুফিয়া কামালের পাশে। তার পতাকার দড়ি বেঁধে দিলো সে পতাকাদন্ডে।

অনেকগুলো ক্যামেরায় সেই ছবি ধরা থাকল। মাকসুদারের মনে হলো, সে ইতিহাসের মধ্যে নিজের ছবি পুরে দিতে পারল।

প্রথম সন্ধ্যায় 888sport app download apk উৎসবে যোগ দিলেন হাজার হাজার মানুষ।

দ্বিতীয় সন্ধ্যায় 888sport app download apk পড়বেন 888sport appর কবিরা।

মাকসুদার তাঁদের সঙ্গে 888sport app download apk পড়ার সুযোগ পাবে না বটে, তবে তাঁদের আগে আগেই পড়ে ফেলবে।

সে একটা 888sport app download apk জমা দিয়েছিল। সেটা মনোনীত হয়েছে।

 

সুরঞ্জনা বাংলা 888sport app download apk, ওইখানে যেও নাকো তুমি

বলো নাকো কথা ওই বৃদ্ধের সাথে

বলো নাকো কথা ওই উর্দি ও বন্দুকের সাথে…

 

মাকসুদার এই 888sport app download apkটা পড়ছে। সুরঞ্জনা ওইখানে যেও নাকো শুনে অনেকেই হয়তো ভেবেছিল জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apk নিজের বলে চালাচ্ছে নাকি, কিন্তু পরের লাইন শোনা মাত্রই শ্রোতারা হাততালি দিয়ে উঠল।

মাকসুদারের গলা সামান্য কাঁপছিল বটে, কিন্তু সে নিজেকে ভালোই সামলে নিতে পেরেছে।

তবে সবচেয়ে বেশি করতালি পেলেন লুৎফর রহমান রিটন। তিনি পড়লেন :

আবদুল হাই

করে খাই খাই

এক্ষুনি খেয়ে বলে কিছু খাই নাই…

রাত এগারোটা পর্যন্ত চলল 888sport app download apk পড়া। মানুষ ভিড় করে 888sport app download apk শুনছে। হাততালি দিচ্ছে। মেলা বসে গেছে জায়গাটায়। লোকে লোকারণ্য।

মেলা রাতে মাকসুদার ফিরে এলো হলে।

প্রচন্ড শীত পড়েছে। হলের বেশিরভাগ রুমের বাতিই বন্ধ হয়ে গেছে।

রাতের খাওয়া খেতে হলে যেতে হবে আহ্ছানউল্লাহ হলের ক্যান্টিনে। এতরাতে হয়তো কেবল ওই ক্যান্টিনই খোলা আছে।

মাকসুদার আহ্ছানউল্লাহ হলের ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেল।

কুয়াশার মধ্যে ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো সাধ্যমতো আলো দিচ্ছে। মাকসুদারের পরনে জিন্স, গায়ে জিনসের শার্ট, তার ওপরে জিনসেরই জ্যাকেট, পায়ে কেডস, কুয়াশা আর নিয়ন আলোয় ভেজা, তার মাথার মধ্যে সারাদিনে মাইক্রোফোনে উচ্চারিত 888sport app download apkর পঙ্ক্তিমালা।

ডাস্টবিনের ময়লা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে রাস্তার কুকুরগুলো। তাদের আজ সে ক্ষমা করে দিতে পারে। আজ সন্ধ্যায় জাতীয় 888sport app download apk উৎসবের মঞ্চে তার নাম বলা হয়েছে, এবার 888sport app download apk পড়বেন 888sport appর কবি মাকসুদার রাহমান।

সে তো কবি। পথের কুকুরের থাবা এবং দেবদূতের ডানা দুটোই এখন তার কাছে সমান উজ্জ্বল, সমান ব্যর্থ এবং মূল্যবান। মূল্যবান এবং মূল্যহীন।

তিতুমীর হল থেকে আহ্ছানউল্লাহর ক্যান্টিন পাঁচ মিনিটের পথ।

ক্যান্টিন খোলা। বড় তাওয়ায় পরাটা ভাজা চলছে।

পরাটা ডাল ডিমের অর্ডার দিয়ে হাত ধুতে গেল মাকসুদার। ডান হাতের দিকে তাকাল। এই হাতে সে কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছে। এই হাতে সে ধরেছে সুফিয়া কামালের ধরা পতাকার দড়ি। তার হাত ধন্য হয়ে গেছে।

এই হাত সে কালকেও ধোয়নি। আজো ধোবে না।

যে-হাতে কবি শামসুর রাহমানের হাত ধরা যায়, সেই হাত চিরকালের জন্য জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। এই হাত ধোয়া মানে শামসুর রাহমানের স্পর্শ ধুয়ে ফেলা।

Published :


Comments

Leave a Reply