কবীর চৌধুরী

আনিসুজ্জামান  

৮৮ বছর বয়সে, নিজে কষ্ট না পেয়ে এবং অন্য কাউকে কষ্ট না দিয়ে, মহাপ্রস্থান করলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। আমাদের সংস্কৃতিক্ষেত্রে এবং সামাজিক জীবনে তাঁর অবদান চির888sport app download for androidীয় করে রেখে গেলেন।

পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ আমলের বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা। তাঁর তখনকার কর্মক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবীর চৌধুরীর জন্ম হয় ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে। চোদ্দ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার অগ্রজ। ভাইবোনদের প্রায় সকলেই কৃতী। মুনীর চৌধুরীর বহুধা খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। নাদেরা বেগম রাজনীতিতে ও শিক্ষকতায় বিশিষ্টতা অর্জন করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আবদুল কাইউম ইংরেজিতে 888sport app download apk লিখে প্রশংসিত হয়েছেন। ফেরদৌসী মজুমদার অভিনয়জগতের নক্ষত্রস্বরূপ।

কবীর চৌধুরী লিখেছেন, জন্মলাভের বহু আগেই তাঁর নামকরণ হয়ে যায়। কারণ তাঁর মায়ের আকিকালব্ধ নাম ছিল উম্মে কবীর আফিয়া বেগম অর্থাৎ কবীরের মাতা আফিয়া। সুতরাং জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নামও কবীর নির্ধারিত হয়ে যায়। পুরো নাম আবুল কালাম মোহাম্মদ কবীর, সংক্ষেপে, ইংরেজি রীতিতে, এ কে এম কবীর। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে এই সংক্ষিপ্ত নামটাই প্রচলিত ছিল। পঞ্চাশের দশকে যখন তিনি বাংলায় লেখালিখি শুরু করেন, তখন তিনি কবীর চৌধুরী নাম ব্যবহার করতে থাকেন। একই সময়ে ইংরেজিতে একভাবে এবং বাংলায় অন্যভাবে নিজের নাম লিখতে তাঁকে আমরা দেখেছি। তাঁর ডাকনাম ছিল মানিক। কবীর মানে বড়। তিনি সার্থকনামা ছিলেন।

কবীর চৌধুরীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাড়িতে, একেবারে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন পিরোজপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে, ১৯৩৩ সালে। সেখানে কবি আহসান হাবীব ও 888sport live chatী শফিকুল আমিন তাঁর ওপরের ক্লাসে পড়তেন। ১৯৩৫ সালে তিনি 888sport appর কলেজিয়েট স্কুলে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন বেতার-জগতের বিখ্যাত পুরুষ নাজির আহমদ এবং 888sport appর বিশিষ্ট আলোকচিত্রী হিমাংশু দত্ত। 888sport app বোর্ডে সপ্তম স্থান অধিকার করে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর 888sport app ইন্টারমিডিয়েট কলেজে আই এ পড়েন। সেখানে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান লাভ করে ১৯৪০ সালে তিনি আই এ পাশ করেন। তারপর ইংরেজিতে অনার্স এবং অর্থনীতি ও ইতিহাস সাবসিডিয়ারি নিয়ে সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্ররূপে প্রবেশ করেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, ড. এস এন রায়, পি কে গুহ ও অমলেন্দু বসু এবং অর্থনীতির ড. এ কে দাশগুপ্ত। স্কুলজীবন থেকে তিনি ফুটবল খেলতেন, সেইসঙ্গে পরে ক্রিকেট, হকি ও টেনিস খেলায় পারদর্শিতার পরিচয় দেন। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি – তিনটাতেই হলের দলে খেলেছেন, উপরন্তু ক্রিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাদশে তাঁর স্থান হয়েছিল। তাছাড়া বিতর্ক ও বক্তৃতা-প্রতিযোগিতায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন, একবার নাটকেও অভিনয় করেন। তবে এসব ছাপিয়ে তাঁর পরিচয় ছিল ভালো ছাত্র বলে। যথাসময়ে বি এ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেছিলেন এবং ওই বিভাগে বুদ্ধদেব বসুর পরই নাকি ভালো ফল ছিল তাঁর। এম এতে ১৯৪৪ সালে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন পাঁচজন। কবীর চৌধুরী ছিলেন প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন প্রণব গুহ – ষাটের দশকে তিনি 888sport appয় ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনার ছিলেন। চতুর্থ স্থানে ছিলেন এ কে এম আজিজুল হক, যিনি পরে কুমিল্লার পল্লি-উন্নয়ন-একাডেমির (বার্ড) পরিচালক, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লি-উন্নয়ন-কেন্দ্রের (সিরডাপ) পরিচালক এবং রাষ্ট্রপতি জিয়ার উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন। পরে কর্মজীবনে ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে কবীর চৌধুরী মিনেসোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও মার্কিন 888sport live football অধ্যয়ন করেন ১৯৫৭-৫৮ সালে। আর ১৯৬৩-৬৫ সালে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে লোকপ্রশাসন বিষয়ে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পরীক্ষা দিয়ে কবীর চৌধুরী দু-আড়াই মাস পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছুটিজনিত শূন্যপদে শিক্ষকতা করেন, তারপর তিনি যোগ দেন বার্মা রিফিউজি অর্গানাইজেশনে ক্যাম্প অফিসাররূপে – ততদিনে তাঁদের এম এ পরীক্ষার ফল বেরিয়ে গেছে। মাস তিনেক সেখানে কাজ করে সরকারের বেসামরিক সরবরাহ বিভাগে মহকুমা নিয়ন্ত্রকের পদে তিনি নিয়োগলাভ করেন। কবীর চৌধুরীর কাছে চাকরিটি ছিল ‘লোভনীয়’ – কেননা কলেজে পেতেন মাসে ১৫০ টাকা, অন্যটিতে ৩০০ টাকা, এখানে ৫৫০ টাকা – 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেও এর কাছাকাছি বেতন হতো না। ১৯৪৫ সালের জুন মাসে ফরিদপুর সদরে তিনি কর্মে যোগ দেন, আর সে-মাসেই সেখানেই বিয়ে করেন মেহেরুন্নেসা তাইমুর ওরফে মেরীকে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ থেকে ফলিত রসায়নে এম এসসি পাশ করে কিছুকাল গবেষণা করেছেন, সাহচর্যলাভ করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের। ১৯৪৩ সাল থেকেই তাঁদের জানাশোনা। দিনাজপুরের মেয়ে, বয়সে প্রায় দুবছর বড় কবীর চৌধুরীর চেয়ে, ‘শ্যামল রং’, ‘দীর্ঘ মোটা বেণি কোমর নিতম্ব ছাড়িয়ে আরো নিচে নেমে গেছে, সাধারণ বাঙালি মেয়ের তুলনায় যে রীতিমতো লম্বা, যাকে প্রথম দর্শনেই আমার মনে হয় অত্যন্ত ব্যতিক্রমী। নানাদিক থেকে।’ ‘ফর্সা ছেলে তাঁর পছন্দ নয়, অথচ ফর্সা ছেলেরই প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি।’

ফরিদপুর, রাজশাহী, টাঙ্গাইলে চাকরি করে জেলা নিয়ন্ত্রকপদে উন্নতি, তারপর কুমিল্লা, 888sport app, চট্টগ্রাম, বরিশাল। প্রায় দশ বছর বেসরকারি সরবরাহ বিভাগে কাজ করার পর কবীর চৌধুরী সরকারকে লেখেন, তাঁর বর্তমান বেতন অক্ষুণ্ণ রেখে যদি তাঁকে শিক্ষা দপ্তরে কোথাও উপযুক্ত পদে বিন্যস্ত করা যায়, তাহলে তা হবে তাঁর পক্ষে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। শিক্ষাসচিব আসগর আলী শাহ্ সব ব্যবস্থা করে দেন উদ্যোগী হয়ে। ইস্ট পাকিস্তান এডুকেশন সার্ভিসে আত্তীকৃত হয়ে কবীর চৌধুরী ইংরেজির প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পান রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে যোগ দেন সেখানে। তারপর 888sport app কলেজের প্রফেসর, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ, জনশিক্ষা দপ্তরে সহকারী পরিচালক (পরিচালনা ও উন্নয়ন), জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরোর  (বি এন আর) সহকারী পরিচালক, ন্যাশনাল ইনসটিটিউট অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সিনিয়র ইনস্ট্রাকটর, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ এবং বাংলা একাডেমীর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

দুই

বাংলা একাডেমীতে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত কবীর চৌধুরী দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তেমন উৎকণ্ঠিত ছিলেন না। একসময়ে স্বাধীনতা পত্রিকার জন্যে প্রায় পুরো মাসের বেতন অর্পণ করেছিলেন – কিন্তু বামপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন করেননি। ভাইবোন কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ায় তিনি বেদনাবোধ করেছেন, তাঁদের খবরাখবর নিয়েছেন – কিন্তু তা তাঁকে তীব্রভাবে স্পর্শ করেনি। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তিত হওয়ায় মনের মধ্যে একটা ধাক্কা খেয়েছেন – তার বেশি নয়। বি এন আরের সঙ্গে কবীর চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনেকেই তাঁর বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন, তবে তিনি লিখেছেন, ‘সেখানে থাকাকালীন আমাকে কোনো বিবেকবহির্ভূত কাজ করতে হয় নি।’ মাসখানেকের জন্যে তিনি যখন বি এন আরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন, তখন প্রাদেশিক মুখ্য সচিবের কাছে পাকিস্তান সরকার একটি 888sport world cup rate চায়, যাতে বি এন আরের কাজের রিপোর্টও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। মুখ্য সচিব কবীর চৌধুরীকে এই অংশটুকু তৈরি করে দিতে বলেন। প্রস্ত্তত খসড়ায় ‘সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বিশেষ চাহিদা ও দৃষ্টিকোণের স্পষ্ট কিন্তু নমনীয় ও নিম্নকণ্ঠ উল্লেখ ছিল।’ 888sport world cup rateটি এভাবেই চলে যায়, পরে তা দেখে পরিচালক মোটেই খুশি হননি।

বাংলা একাডেমীতে কবীর চৌধুরী যোগ দেন ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শেষে – বস্ত্তত সেই দিনান্তেই পাকিস্তানে দ্বিতীয়বার সামরিক শাসন জারি হয়। কোনো বিবেকবান বাঙালির পক্ষেই সেই গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না – কবীর চৌধুরীর পক্ষেও তা সম্ভবপর হয়নি। দ্বিতীয় সামরিক শাসনের ধাক্কায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাময়িকভাবে ভাটা পড়ে বটে, কিন্তু নববর্ষ, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী প্রভৃতি ঘিরে তা এমনভাবে চাঙা হয়ে ওঠে যে, বাংলা একাডেমীর মতো আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করে পারেনি। অবশ্য একাডেমীর পরিচালকরূপে এক্ষেত্রে কবীর চৌধুরীর সুস্পষ্ট ভূমিকা ও দায়িত্ব ছিল। তবে একাডেমীর অধিকাংশ কর্মকর্তা – যাঁরা প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী ছিলেন – তাঁকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছিলেন। তারপর ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় এবং সাধারণ নির্বাচন। বাঙালিমাত্রেই তখন ইতিহাসের আহবান শুনতে পেয়েছিল। ১৯৭১ সালের 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করতে বাংলা একাডেমী আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কবীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু করবে। এর প্রায় পরপরই বঙ্গবন্ধুর আহবানে সূচিত হয় অসহযোগ আন্দোলনের। তাতেও শরিক বাংলা একাডেমীর সকলে – পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন পেলে বাংলা একাডেমীর কার্যক্রম কেমন হবে, তার রূপরেখা তৈরিতে তাঁরা ব্যস্ত। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ 888sport live chatীসমাজ, 888sport live footballিক ও শিক্ষকেরা বিক্ষোভপ্রদর্শনের কেন্দ্র হিসেবে বাংলা একাডেমীকেই বেছে নেন। আশ্চর্য নয় যে, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাংলা একাডেমীকে লক্ষ্য করে মর্টারের আঘাত হানে এবং শেলের একটা টুকরো দোতলায় পরিচালকের অফিসকক্ষে দেওয়াল ভেদ করে আঘাত হানে আর একতলায় সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষের অফিসকক্ষ আঘাতে আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে 888sport app download apk latest version বিভাগের অধ্যক্ষ আবু জাফর শামসুদ্দীনকে দুদফায় ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সেনারা জিজ্ঞাসাবাদ করে, সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ সরদার ফজলুল করিমকে কারাগারে নিক্ষেপ করে এবং কবীর চৌধুরীকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ থেকে নিবৃত্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক প্রশাসক সতর্কবার্তা প্রেরণ করেন।

এই পত্র পাওয়ার আগেই আরেকটি ব্যাপার ঘটে যায়। একদিন, সম্ভবত 888sport app বেতারের, দুজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী একটি বিবৃতি নিয়ে হাজির হয় বাংলা একাডেমীর পরিচালকের অফিসকক্ষে। বিবৃতিতে বলা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার মতো কিছু ঘটেনি; আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ২৫ মার্চের রাতে সরকারকে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল, দেশকে ধ্বংস ও নৈরাজ্য থেকে বাঁচাতে তার প্রয়োজন ছিল; এখন অরাজকতা নিয়ন্ত্রিত, শান্তি স্থাপিত এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চয়কৃত। বিবৃতির নিচে বাঁদিকে কবীর চৌধুরীর নাম ও পদবিও টাইপ-করা। আগন্তুকদ্বয় ডানদিকে তাঁর স্বাক্ষর দাবি করে। কবীর চৌধুরী একদিন সময় চেয়ে নেন। বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বলেন, তিনি ওই বিবৃতিতে সই করতে চান না, তবে তাতে তাঁর জীবনসংশয় দেখা দিতে পারে। মেহের কবীর এই ঝুঁকি নিতে সম্মতি দেন। কবীর চৌধুরী জানিয়ে দেন যে, তিনি স্বাক্ষর দেবেন না। তারপরও ওই বিবৃতি মুদ্রিত হয় অনেকের স্বাক্ষরসহ। শুধু সুফিয়া কামাল ও কবীর চৌধুরীর নাম ছাপা হয় বিনা স্বাক্ষরে। পরে বোধহয় বিষয়টির বিসদৃশতা কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে। এবারে রাওয়ালপিন্ডি থেকে কেন্দ্রীয় তথ্য দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ বাঙালি কর্মকর্তা কবীর চৌধুরীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হন এবং আবার ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিতে অনুরোধ করেন। এবারেও তিনি সই করেননি। বলেছিলেন, বিবৃতিটি তো দেশবিদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়ে গেছে – এখন তাতে তাঁর স্বাক্ষর নিয়ে কী হবে! তারপরও একদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা দুজন সৈনিককে নিয়ে কবীর চৌধুরীর বাসগৃহ তল্লাশ করে। বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো আলামত কিংবা আশ্রিত মুক্তিযোদ্ধা আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে তারা এসেছে। কবীর চৌধুরী তাঁর লাইসেন্সকৃত পিস্তল দেখান, ঘরবাড়ি সব দেখতে দেন – অঘটন কিছু ঘটেনি।

কিন্তু তাঁর অনুজ, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক, এ টি এম নাসিরকে কারাগারে নিক্ষেপ করে হানাদারেরা। ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী মুনীর চৌধুরীকে অপহরণ করে – তাঁর লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিন

১৯৭২ সালের জুন মাসে বাংলা একাডেমী ছেড়ে কবীর চৌধুরী সদ্যগঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য-সচিবের দায়িত্বগ্রহণ করেন। অচিরেই তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন। সেখান থেকে অব্যাহতি নিয়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন ১৯৭৪ সালে। অবসরগ্রহণের পর খন্ডকাল অধ্যাপকরূপে আমৃত্যু রয়ে যান বিভাগে। ১৯৯৮ সালে 888sport apps সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করে। ২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতিপদে নিয়োগলাভ করেন। এর বাইরে তিনি 888sport apps আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়নের সভাপতি পদে বৃত হন, সংশ্লিষ্ট থাকেন 888sport apps শান্তি পরিষদ, 888sport apps আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদ, 888sport apps-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সঙ্গে এবং দীর্ঘকাল 888sport appর থিয়েটার স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

জীবনের এই পর্বে, বিশেষ করে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে কবীর চৌধুরী সামাজিক ভূমিকাপালনে অধিক তৎপর হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পরে যখন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ক্ষমতাসীনেরা একে একে নস্যাৎ করতে উদ্যোগী হলো, তখন তিনি তীব্র প্রতিবাদ করলেন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালিত্বের চেতনা ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আদর্শকে তিনি উঁচুতে তুলে ধরলেন। তাঁর বাঙালিত্বের চেতনা অপরাপর নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকারকে অস্বীকার করেনি। কায়মনোবাক্যে তিনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চেয়েছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাই পালন করেছেন বিশিষ্ট ভূমিকা। রাষ্ট্রধর্ম-প্রবর্তনের সময়েও তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে তার বিরুদ্ধাচরণ করেন। স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার লগ্নে জাহানারা ইমাম যখন ১৯৭১-এর ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং গণ-আদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের আয়োজন করেন, তখন কবীর চৌধুরী তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তার ফলে সরকারি রোষে জাহানারা ইমাম ও অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও রাষ্ট্রদ্রোহ ও হত্যাচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত হতে হয়। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পরে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একাত্ম হয়ে যান। 888sport apps সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে যে রাষ্ট্রধর্মের বিধান রয়ে গেল, সর্বশেষে তারও প্রতিবাদ তিনি করেন আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলে। বাঙালি সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যেও তিনি নিরলস ভূমিকা পালন করেন।

চার

পঞ্চাশের দশকেই কবীর চৌধুরী প্রথমে বাংলা থেকে ইংরেজিতে এবং পরে ইংরেজি থেকে বাংলায় 888sport app download apk latest version করতে শুরু করেন। প্রথমে কাজটা ছিল শখের, পরে তা তাঁর নিয়মিত করণীয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। বস্ত্তত রোজই কিছু পড়া এবং কিছুক্ষণ লেখা তাঁর জীবনযাপন প্রণালির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়। ক্লিফোর্ড ওডেট্সের একাঙ্কিকার বঙ্গানুবাদ আহবান (১৯৫৬) তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা, পরে এটি শহীদের প্রতীক্ষায় ও সমরেশ কোথায় নামেও পুনর্মুদ্রিত হয়। ইংরেজিতে 888sport app download apk latest versionের প্রথম বই ছিল বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত Selected Poems of Nazrul Islam (১৯৬৩)। তারপর অজস্র 888sport app download apk-গল্প-888sport alternative link-নাটক এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করেছেন। 888sport app download apk latest versionের জন্যে তাঁর নির্বাচিত 888sport live footballিকদের মধ্যে আয়োনেস্কো, অ্যারিস্টফেনিস, ইউজিন ও’নীল, ইবসেন, কাফকা, কাহলিল জিবরান, জিরাদু, বেকেট, ব্রেখট, বোর্হেস, মলিয়ের, মার্কেজ, মেরী শেলী, রবার্ট পেন ওয়ারেন, রিচার্ড রাইট, শেখভ, স্কট ফিটজেরাল্ড, স্টেইনবেক ও হেমিংওয়ে আছেন; নজরুল ইসলামের 888sport app download apk, 888sport alternative link ও গান ছাড়াও আছে আবদুল গনি হাজারী, আবুল হোসেন, আল মাহমুদ, তসলিমা নাসরিন ও শামসুর রাহমানের 888sport app download apk; ফয়েজ আহমদের ছড়া; আনোয়ার পাশা, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত ওসমান, হাসনাত আবদুল হাই ও হোসনে আরা শাহেদের কথা888sport live football; আবদুল্লাহ আল মামুন ও মুনীর চৌধুরীর নাটক এবং 888sport appsের 888sport app download apkর একাধিক সংগ্রহ। যে-শ্রম ও ভালোবাসার সঙ্গে এই 888sport app download apk latest versionকর্ম তিনি করেছেন, তা সকলের 888sport apk download apk latest versionর যোগ্য।

পাশ্চাত্য 888sport live footballের নানাদিক নিয়ে তিনি লিখেছেন এবং এ-বিষয়ে ইংরেজিতে লেখা বই 888sport app download apk latest version করেছেন। তিনি লিখেছেন প্রাচীন ইংরেজি কাব্য সম্পর্কে, আধুনিক মার্কিন 888sport live football সম্পর্কে; ফরাসি নাটক ও ইউরোপীয় নাট্যকার সম্পর্কে; অ্যাবসার্ড নাটক ও অভিব্যক্তিবাদী নাটক সম্পর্কে; শেক্সপিয়র ও শিলার, স্তঁধাল ও প্রুস্ত, পুশকিন ও লোরকা – এঁদের সম্পর্কে। তিনি 888sport live footballকোষ সংকলন করেছেন, 888sport live footballসমালোচনা ও নন্দনতত্ত্বের পরিভাষা নিয়ে লিখেছেন। কত বিচিত্র ও বিস্তৃত তাঁর রচনার ক্ষেত্র, এ-থেকে তার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।

তাঁর আরেকটি প্রিয় ক্ষেত্র পাশ্চাত্য চিত্র888sport live chatীদের পরিচয়দান। বত্তিচেল্লি, রুবেনস, ভেলাসকুয়েজ, রেমব্রাঁ, ভারমিয়ের, গয়া, কুরবে, মিলে, সেজান, সার্জেন্ট, মাতিস, রদাঁ, পিকাসো এবং আরো অনেকের বিষয়ে তিনি বাঙালি পাঠককে অবহিত করেছেন। তাছাড়া গ্রন্থ রচনা করেছেন মানুষের চিত্রকর্ম, ন্যুড চিত্র888sport live chat, পাশ্চাত্য চিত্র888sport live chatী এবং ফরাসি চিত্র888sport live chatী সম্পর্কে।

কবীর চৌধুরী অজস্র মৌলিক 888sport live লিখেছেন। এর একদিকে আছে মানবকল্যাণ ও 888sport app (২০০০), মৌলবাদ, তার ইতিহাস ও প্রকৃতি অনুসন্ধান (২০০০), বুদ্ধির মুক্তি ও বিশ্বাসের শৃঙ্খলের (২০০০) মতো বই; অন্যদিকে রয়েছে অসমাপ্ত মুক্তিসংগ্রাম ও 888sport app (১৯৯১), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা (১৯৯২) এবং স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়ের (১৯৯৪) মতো বই। এসব রচনায় তাঁর চিন্তার পরিচয় যেমন পাই, তেমনি পাই রচনার প্রসাদগুণের পরিচয়। তাঁর 888sport sign up bonusকথা নাই বা হল পারে যাওয়া (পাঁচ খন্ড, ২০০৩-০৫) অতি উপভোগ্য রচনা।

জীবন সম্পর্কে কবীর চৌধুরীর কৌতূহল ছিল রেনেসাঁস-মানবের কৌতূহলতুল্য। জীবনকে তিনি উপভোগ করেছেন গভীরভাবে। আমার তো মনে হয়, তিনি আনন্দিত জীবনই যাপন করেছেন পূর্বাপর। তবে মৃত্যুচিন্তাও তাঁর ছিল। তার পরিচয় পাই ২০০৬ সালের ২৩ আগস্টে লেখা এই কথাগুলোয় :

আমি মাঝে মাঝে নিজের মৃত্যুর কথা ভাবি। তার মধ্যে ভয়, দুঃখ বা বেদনার অনুভূতি থাকে না। তবে মৃত্যুর পর আমার মরদেহ নিয়ে কী করা হবে সে-সম্পর্কে কিছু ইচ্ছার কথা বলে যেতে ইচ্ছা করে আমার। আগে, অন্যত্র, কিছু বলেছি। এখানে আবার তা উল্লেখ করছি।

(১) আমি মৃত্যুর পর দ্রুত সমাহিত হতে চাই। চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে হলেই ভালো হতো।

(২) নিকটস্থ মসজিদে নামাজ-এ-জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। একটি জানাজাই হবে। তার বেশি নয়।

(৩) আমার মরদেহ শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমী, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি কোথাও কারো 888sport apk download apk latest version প্রদর্শনের জন্যে রাখা হবে না।

(৪) কোনো মিলাদ, কুলখানি, চল্লিশা ইত্যাদি হবে না।

(৫) সর্বসাধারণের জন্যে যে গোরস্তানে আমি সেখানে সমাহিত [হতে] চাই, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের পর আরেকজন সমাহিত হতে পারবেন, আমার কবরের ওপরেই।

তাঁর অভিপ্রায় – সম্পূর্ণ না হলেও – অনেকটাই পূরণ করা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বরে। কবীর চৌধুরী কি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মবিলোপের কথা ভেবেছিলেন? তা বোধহয় নয়। তাঁর মতো মানুষের তো অজানা থাকার কথা নয় যে, অনেকে মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন এবং তিনি তাঁদেরই একজন।