কমলকুমার : রাজনীতি ও সংস্কৃতি

রফিক কায়সার

নন্দনতত্ত্ব-বিষয়ক কমলকুমার মজুমদারের রচনা ‘রীতিরহস্য’। এই সন্দর্ভে তিনি তাঁর সৌন্দর্যতত্ত্ব-বিষয়ক ধারণাকে উত্থাপন করেছেন। তাঁর সৌন্দর্য-বিষয়ক ধারণার রূপরেখা রয়েছে এ-রচনাটিতে। সৌন্দর্যবোধের বা উপলব্ধির মূলে রয়েছে ব্যক্তি মানুষের অনুভূতিশীলতার প্রতিক্রিয়া :

আমাদের হাটে যাবার রাস্তায়, রাস্তা যেখানে ক্রমে বেঁকেছে ওখানে করবী গাছ। পিছনেই নীল আকাশে পাখি উড়ে, মেঘ থাকে। করবী ফুটেছে অজস্র। ভারী সুন্দর। দৃষ্টিগতলীলার এ মাধুরী কেমন করে আমার কাছে আসে তা বিস্ময়ের, কেমন করে আমি এই সম্মুখের সৌন্দর্যের দিকে পৌঁছাই তা বলা দুরূহ। আমি কি পৌঁছাই চিত্রকরের মতোই আর ফিরে আসি কাব্যলীলার একটি রূপ সংঘাত নিয়ে? এই প্রশ্নের সমাধানে বহু রাত্র গেছে। আমরা কি দোমনা হয়ে একক সৃষ্টিতে প্রাণবান।

দৃশ্যমান বস্ত্ত থেকে আহরিত উপলব্ধি বা উপলব্ধিসঞ্জাত অভিজ্ঞতাই সৌন্দর্যবোধের উৎস হিসেবে ক্রিয়াশীল বলেই লেখকের কাছে প্রতিভাত হয়েছে। এই ক্রিয়াশীলতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ‘কাব্য প্রতিভার কৌশল’ বা সৃষ্টিশীলতার কার্যকারণ। যে-কার্যকারণের সূত্রে নিহিত থাকে নীতিবিষয়ক জ্ঞানের আধার। কমলকুমার তাঁর এই সন্দর্ভে উপস্থাপন করেছেন 888sport apkের বিধির সঙ্গে কবির অনুভবের প্রশ্নটিও। প্রশ্নটি নিয়ে বিস্তৃতির দিকে যান না। যেমন যান না পাশ্চাত্য কাব্য-বিষয়ক মন্তব্য করার পর আরো একটু বিশদ ব্যাখ্যায়।

পাশ্চাত্য কাব্যের নিজস্ব ঘোর অচলতা আছে, এ-কথা অদ্যও কেউ বলেননি – সে-কথা আমাদের দেশেই একমাত্র বুঝতে পেরেছিল আবছাভাবে। এ-কথা ভাবেনি, যেই কলম ছোঁয়ালুম, সেই 888sport app download apk। অবশ্য এ-কথা বুঝি যে, কথাটা আপাতদৃষ্টিতে হালকা হলেও সুস্পষ্টরূপেই রহস্যময়।

কমলকুমার মীমাংসায় উপনীত হন চৈতন্যদেবের উক্তির সাহায্যে : ‘বিচারি কবিত্ব কৈলে হয় সুনির্মল।’

পরবর্তী 888sport app রচনায়ও আমরা লক্ষ করবো চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণ ও কেশব সেনের উক্তি এবং উক্তির প্রয়োগ। বিষয়টি কমলকুমারের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হলেও এই প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিত, এই পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে ভিন্নতর বয়ান। যে-বয়ানের মধ্যে থেকেই কমলকুমার তৈরি করে নেন নিজস্ব অবস্থান। বিষয়টি নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো।

888sport live football ও নন্দনতত্ত্ব নিয়ে কমলকুমার মজুমদারের উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে রোজনামা : ১, রোজনামা : ২, রাত্র একাকিনী। রোজনামায় রয়েছে 888sport live football-বিষয়ক কথা। জার্নালের ঢঙে এ-লেখাতে লেখক-প্রদত্ত তথ্যের প্রাচুর্য লক্ষণীয়। রোজনামায় লেখক নিজেকে খানিকটা আড়ালে রেখেছেন, বুঝতে চেয়েছেন সময়কে : মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে যেয়ে কখনো এসেছে ডন কুইজট, কখনোবা ওয়াল্টার র‌্যালে, আছে রাখাল বালক মোহন পিয়ারী, আছে হিন্দু পুরাণের যম, নচিকেতা ও ঐতিহাসিক চরিত্র বিক্রমাদিত্য। আরো অনেক চরিত্র আছে, আছে বর্ণনার মধ্যে গল্পের আদল, আছে লেখকের পঠন-পাঠনের ব্যাপকতার স্বাক্ষর। ফলে তথ্যভারে বা প্রাচুর্যের চাপে লেখাটি নুয়ে পড়ে। ভাবনাগুলো দানা বাঁধে না। বাংলা ভাষা-বিষয়ক কমলকুমার মজুমদারের ‘কথা ইসারা বটে’ ভগবান রামকৃষ্ণ বলিয়াছেন’ একটি সন্দর্ভ। এ-সন্দর্ভে লেখকের ভাষাবিষয়ক ভাবনা সম্যকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ভাষাদূষণে কমলকুমার ভাবিত ও ঈষৎ বিচলিতও বটে :

অতএব আমাদের প্রয়োজন বাঙলার কথা লিখিয়া রাখা (SIC) বংশপরম্পরা যাহার ঐতিহ্য যায় না। অতএব বাংলাভাষা যে খুবই চোট্ খাইবে তাহা এখন সকলেই বুঝিতে আছে, যে কাহারে বুঝাইবার জন্য বাঙলা ভাষার এই দশা প্রাপ্তি; ইহাই কি অমোঘ ছিল যে ঘটিল! অথবা ইহা যেমন শুনিয়া থাকি যে কখনও বাটালির কারণে কোথাও হয়, খারাপ লিপিকারের জন্য ভাষার ফেরতাই আসে, সেই রূপ! শুনিলাম জনগণের জন্যে লিখিতেই এমনি হইল।

তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি। ভাষার সমাজতত্ত্ব এবং ভাষার বিবর্তন বিষয়ে লেখকের অবস্থান অনেকাংশেই রাজনৈতিক, যদিও তিনি অরাজনৈতিক লেখক, কিন্তু রাজনৈতিক- বিষয়ক মন্তব্যে প্রতিফলিত হয় একদেশদর্শিতা ও সরলীকরণের প্রবণতা :

যাহারা ইদানীং সেনসস গুণতিমতে অক্ষরজ্ঞ – আমাদের ভাবনাতে 888sport live football কাব্য তাহাদের সকলের জন্য নহে, – কিন্তু এক পক্ষ যাহারা সাম্যবাদী তাহারা, যে এবং যাহারা রাজনীতি করে, গণতন্ত্রের বিশ্বাসী – প্রকাশ থাক্ আমরা কোনরূপ যাহাতে বিশ্বাসী নই, কেন না উচ্চ অভিজাতরাই ছাড়া; এই পৃথিবী খরাপূর্ণ – ধর্মনিরপেক্ষ তাহারা, আপন অজ্ঞতার জন্য জনগণ সুবাদে ভাষাকে বিকৃত করে, বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণে লইয়াছেন বাঙলার জন্য তাহা আর এক।

কমলকুমারের এই ব্যাখ্যা আমাদের কাছে যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না। স্ববিরোধিতাও আছে প্রদত্ত ব্যাখ্যায়। আবার একই রচনায় তিনি তাঁর স্বকীয় বাক্বিভূতি দিয়ে বিনির্মিাণ করেন বাংলাভাষার ইতিবৃত্তকে :

ঈশ্বরগুপ্ত মহাশয় বহু দৈনন্দিন ব্যাপার পাঠে যোগ্য করিলেন, এবং কখনও দ্ব্যর্থক বা ছন্দ বা ছন্দ ভাঙিয়া সূক্ষ্ম সচেতনতা আনিলেন; মধুসূদনই আধুনিক বাংলার আদত সৃষ্টিকর্তা, তাহাদের মধ্যে ক্রিয়াপদ সাধারণ চলিত হইতে নির্ম্মিত, আমরা দেখিতে থাকি! পরে অবশ্য কেশববাবু তাহার আধ্যাত্মিক ভক্তির বিষয়ে, কথাতে বহুপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করিতেন, বঙ্কিমবাবুর দ্বারা ভাষা সুনিয়ন্ত্রিত হইল। কাব্য হইল।

সন্দর্ভের উপসংহারে কমলকুমার ভাষাবিষয়ে তাঁর অবস্থানকে স্পষ্ট করেন মার্শেল প্রুস্তের উদ্ধৃতি দিয়ে :

ভাষা বিষয়ে যে লেখক জেহেদ করে বা ভাষাকে আক্রমণ করে সেই ঠিক।

‘ফাৎনা মনস্কতা’ 888sport liveটিতে কমলকুমার উনিশ শতীয় বঙ্গীয় নবজাগরণের বিষয়ে তাঁর মূল্যায়ন ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন ইংরেজদের সঙ্গে বাঙালি সমাজ এবং জীবনের অভিঘাত এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, লেখকের বাঙালি মানে বাঙালি বর্ণ হিন্দু। তাঁদের মেধা এবং বৌদ্ধিক শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে তিনি সংশয়হীন। ‘ফাৎনা মনস্কতা’র মূল চরিত্র কেশব সেন। কেশব সেনের জীবনবৃত্তান্তের নানা স্তরের ঘাত, প্রতিঘাত, তাঁর অর্জন ও ব্যর্থতা, তাঁর সীমাবদ্ধতা, তাঁকে কেন্দ্র করে স্বচ্ছ সমাজের দুই দফায় ভাঙন বা নিজ কন্যার বিবাহ-বিষয়ক বিতর্ক নিয়ে কমলকুমার প্রশ্ন তোলেননি। প্রশ্ন তোলেননি কেশব সেনের সঙ্গে ঔপনিবেশিক সরকারের সম্পর্ক নিয়ে। কমলকুমার গুরুত্ব দিয়েছেন কেশবের আধ্যাত্মিক জীবনের শেষ পর্যায়ের ভক্তিবাদের প্রতি অনুরাগকে।

‘সেই ফেরঙ্গ মোহিত চটকের সময়েতে, কি কুৎসিত যে দিনগুলি, আহেলীদের জৈবজড় প্রধান যখন প্রকৃতি, যখন নৈতিকতা (!) আহার-নিদ্রা-মৈথুন হইল, যে যখন শুক আর নাম শিখিল না, শহর সরু হইল, তখন একজন মহাভাবে নিমগ্ন আছিলেন, ভগবানের মুখনিঃসৃত যাহা, যে বাক্য, তাহা অন্যথার না। কেশববাবু সুমহৎ বঙ্গীয় শুদ্ধ বাস্তবতা পৌঁছাইতে পারিয়াছিলেন।’ কেশব সেনের আধ্যাত্মিক জীবনের বয়ানের মাঝেই কমলকুমার নিয়ে আসেন শৈশবের 888sport sign up bonus, যে-888sport sign up bonusতে আছে কেশব সেনের ভক্তদের আবেগ আপ্লুত বিহবলতার প্রসঙ্গ। এই কাহিনি শেষ হবার আগেই তিনি চলে যান অন্য প্রসঙ্গে, তৈরি হয় বৈঠকি আমেজ। কেশব সেনের গল্পেতে ফিরে এসে কমলকুমার চলে যান মৃত্যুর বয়ানে :

মৃত্যু বাঙালির নিকট বড় আদরের মৃত্যুকে এবং কেমনে ভালোবাসিতে হয় ইহাই তাহার সাধনা।

কমলকুমারের মৃত্যুর বয়ানে চলে আসে শরৎচন্দ্রের ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটির কথা। কমলকুমার এ-গল্পটির উল্লেখ করে মহিমান্বিত করেন শরৎচন্দ্রকে : ‘প্রত্যেকেই এবং যে মৃত্যুর সৌন্দর্যই জীবন ধারণ করিয়া আছে। এই বিষয়তে শরৎ চাটুজ্যে মহাশয়ের কাছে কেহ নহে, যদিও যে তাহার পক্ষে পুরা হিন্দু ভাবতত্ত্ব জানান দেওয়া ঘটিয়া উঠে নাই, কিছুটা যাহা তদানীন্তন যুগের কাপুরুষতায়, কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ আর অভাগীর স্বর্গ একাই বাংলা 888sport live football! যে প্রকৃষ্ট হিন্দু কাব্যধারাসঞ্জাত তাহা উহাতে এই মতিত্ব, অভ্রান্ত যে যাহা, আসিবে; বাঙলা 888sport live football এখন যে মাস্টার বলিতে যাহা বুঝায়, একমাত্র রামপ্রসাদ বাদে, যেমন বঙ্কিম যেমন কেশব বাবু, বটে যে ইহারা সুদারুণ ইহারা সিদ্ধ কিন্তু শরৎ চাটুজ্জের ন্যায় কেহই নির্ভীক সচতুর হলপ কাটিয়া বলা যায় না;’

কমল কুমারের এ-ধরনের মন্তব্যের বা মতামতের সারবত্তা বা যৌক্তিকতা নিয়ে সমালোচনা হয়নি। উপরে উল্লিখিত অংশে আমরা লক্ষ করবো যে, এখানে বিশ্লেষণের প্রসঙ্গটি গৌণ, গৌণ বক্তব্যের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা। কথার ঝোঁকে বলার ভঙ্গিতে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন, এই ভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রে বক্তব্যের গভীরতাকে প্রতিষ্ঠিত করে না। যেহেতু তাঁর অধিকাংশ লেখা লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল বলে তিনি নিজের লেখার ব্যাপারে অপার স্বাধীনতা পেয়েছেন। অকৃপণভাবে ভোগ করেছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা বোধকরি ব্যক্তিত্ব এবং ব্যাপক জানাশোনার কারণে তাঁর লেখার বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারেননি। ফলে তাঁর কমবেশি সব লেখাই সম্পাদকীয়, নিরীক্ষার ছাড়পত্র ছাড়াই মুদ্রিত হয়েছে। অপরদিকে কলকাতার বিদ্বৎসমাজ কমলকুমারের প্রতি খুব একটা আগ্রহী ছিল বলে (তাঁর জীবৎকালে) মনে হয় না। একদিকে উঠতি তরুণ সম্পাদকদের ভীতি এবং বিদ্বৎজনদের উপেক্ষায় কমলকুমার নিজের মতামত প্রকাশে কর্তৃত্বপরায়ণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এতে করে তাঁর 888sport liveে যৌক্তিক শৃঙ্খলার ঘাটতি ঘটে। মূল বক্তব্যে আসে না যুক্তির স্ফূর্তি। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়াতে ঘটে বিঘ্ন। অনেক সময় কালিক বা ইতিহাসের শৃঙ্খলাও মানতে চান না বা মানেন না কমলকুমার। যেমন এই 888sport liveে তিনি এক লহমায় চলে আসেন রামপ্রসাদের কাল থেকে রামকৃষ্ণের কালে, এর ফাঁকে তিনি ঢুকিয়ে দেন শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ্যকার তরজা। তরজার মধ্যে তিনি নিয়ে আসেন বাঙালি হিন্দুর ইংরেজি শিক্ষার অধ্যায়। কালিক বিচারে হয়তো ঘটনাসমূহের দূরত্ব খুব একটা নেই। তবে কালিক নির্ঘণ্টের তো একটা শৃঙ্খলা বা বিন্যাস আছে। কমলকুমার তাঁর রচনায় কালানুক্রমিক বিন্যাসের শৃঙ্খলায় না এসে তিনি চলেন কালিক উল্লম্ফনে। এই উল্লম্ফনের প্রক্রিয়ায় তিনি গড়ে তোলেন তাঁর 888sport live রচনার নিজস্ব শৈলী। এই শৈলীতে বক্তব্যের স্থানিক এবং কালিক সমীকরণ না হওয়াতে 888sport liveের ভাবনাগুলো স্থিতি পায় না, যেমন বাঙালি হিন্দুর ইংরেজি শেখার প্রসঙ্গে এসে আমাদের কাছে মনে হয়েছে কালিক নির্ঘণ্ট ব্যাহত হয়েছে :

যে লর্ড মানে ‘ঈশ্বর’ প্রাচীন সময়েতে দোভাষী হওনে লোকে এইভাবে ইংরেজি শিক্ষা করিত : গড মানে ঈশ্বর লর্ড মানে ঈশ্বর। কম মানে এস। ইহা একটি ছড়া প্রায়; জানাতে আমাদের প্রাচীনদের চৈতন্য (!) উদয় হইল, যে এবং যুগপৎ চিন্তাশীল হইল, অজ্ঞাতকে জানিবার কারণে যে দেশের মানুষ হৃদয়কে শ্মশান করিল, যে দিক হইয়াছে অম্বর যাহাদের সেইখানে এক নূতন স্বরভঙ্গের তপ্ত জ্ঞান লাভ করিলেন দোভাষীরা, যে এবং তাহাদের হৃদয়ের মহানুভবতা হয় এই যে দেশবাসীর নিমিত্তে অন্ধকারের সেবা করিতেছে এবং যেমন বোঙা উপাসককাতর হইলেন।

এই অংশটুকুতে কমলকুমারের ভাবনার স্বাতন্ত্র্য অনস্বীকার্য। উনিশ শতকের ইংরেজি জানিয়েদের প্রসঙ্গটা কালিক মাত্রায় উপস্থাপন করলে তাঁর যুক্তির মধ্যে স্পষ্টতা পরিলক্ষিত হতো। আমাদের প্রশ্ন, কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত ‘নূতন স্বরভঙ্গের তপ্ত জ্ঞান’ ‘দোভাষী’রা লাভ করেছিল, সেই সময়ের উল্লেখ থাকলে বক্তব্য কি স্পষ্টতা পেত না? কমলকুমারের ব্যাখ্যা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের প্রশ্নে তিনি প্রথাগত বা প্রচলিত নিয়মনীতি মানেন না বা মানতে চান না। আবার টীকাভাষ্যও তিনি সহজে সংযুক্ত করেন না (ব্যতিক্রম আছে কয়েকটি রচনায়)। তিনি চান গল্প বলতে বা করতে, তাই ফুটনোট তাঁর কাছে বাহুল্য মাত্র। তবে তাঁর গল্পের বাঁক আছে, মোচড় আছে, সরলরেখায় তিনি তাঁর গল্পকে জমিয়ে তোলেন না। যেমন বঙ্কিম ও শরৎচন্দ্র সম্পর্কে বলতে না বলতে চলে আসেন রুশো, দিদারো বা লুথার প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে যান (সংগীত প্রসঙ্গে আনেন)। রবীন্দ্রনাথকে সহজে আনেন না (এটুকুই আমাদের জন্য মোচড়)। এঁদের প্রসঙ্গে বলতে বলতে চলে যান ফরাসি বিপ্লব প্রসঙ্গে, এই প্রসঙ্গে তিনি রক্ষা করেন না কালিক শৃঙ্খলা বা নৈর্ব্যক্তিকতা : ‘ফরাসি বিপ্লব নামে এক বজ্জাতি’। এই মূল্যায়নের বিপরীত মূল্যায়নও আছে। কমলকুমারের কাছে ফরাসি বিপ্লবের ইতিবাচকতা বা নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ন্যায্যতা পায় না। ফলে তাঁর ইতিহাসবোধ নিয়ে আমাদের সংশয়ও ঘোচে না। ফরাসি বিপ্লবের অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যাদানের পর তিনি প্রত্যাবর্তন করেন অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে এবং উনিশ শতকের প্রথম ভাগের 888sport appsে, প্রসঙ্গ সতীদাহ প্রথা, বিষয় বাঙালি হিন্দু সমাজের দলাদলি, লক্ষ্য রামমোহন রায়কে আক্রমণ। তিনি রামমোহনের প্রতি অসহিষ্ণু :

সতীদাহ প্রমাণিত যে আমরা এক জঘন্য পর্যায়ের সকলে, দোভাষীরাই একমাত্র প্রাতঃ888sport app download for androidীয়, আমাদের দেশে যাহারা সমাজ সংস্কারক (?) রহস্যস্থলে বলা যায় যে সকলেই অবলাবান্ধব, একজন সতীদাহ উচ্ছেদে করিতকর্ম্মা হইলেন (?) যে উহার কারণে যে যে বিধবা সকল বাঁচিল, বিদ্যাসাগর তাহাদের বিবাহ দিলেন; এবং যাহারা ঐ বিধবারা বিপথগামিনী হওয়ত বৃত্তি অবলম্বন করিল তাহাদের আর একজন সামাজিকভাবে বিবাহ দিতে, হিন্দুমতে নহে লাগিলেন – (এই সমাজ সংস্কারক) ইনি সেই ঠাকুরকে বেশি ঈশ্বর ভাবিলে বেহেড হয়। বলিয়াছেন, ঐ উদার মহানুভব শহরে প্রচার করিলেন যে রামকৃষ্ণ পাগল।

পুরো অভিযোগনামায় কমলকুমার রামমোহন, বিদ্যাসাগর এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারার বুদ্ধিজীবীদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ন্যায্যতা দিয়েছেন তাঁর ব্রাহ্ম-বিরোধিতাকে। এই ন্যাব্যতা থেকেই কেশব সেনের গুরুত্ব তাঁর কাছে রামমোহনের চাইতে বেশি। গুরুত্ব দিয়েছেন ব্রাহ্মণ ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসা বিজয়কৃষ্ণের অবদানকে। ব্রাহ্ম আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন – নতুন ধর্ম আন্দোলনে ভক্তিবাদ ছিল না।

কমলকুমারের এই ব্যাখ্যা অনেকাংশেই যথার্থ।

‘শরৎবাবু ও ব্রাহ্মণ্য’ 888sport liveে কমলকুমার শুরুতেই আমাদের জানিয়ে দিলেন : ‘এখানে আমি শরৎ বাবুর প্রশস্তি করিব।’

প্রশস্তি শুরু হয়েছে তার হিন্দুধর্মের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার জন্য, বিভিন্ন রচনা থেকে তুলে এনেছেন শরৎচন্দ্রের ব্রাহ্মণ্য তথা হিন্দুত্বের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টান্তসমূহকে; শ্রীকান্ত 888sport alternative link থেকে পিয়ারী বাইয়ের গঙ্গাস্নান প্রসঙ্গে এসে সংস্কারপন্থী হিন্দুদের প্রতি তাঁর উষ্মা লক্ষণীয়। আলোচনায় এসেছে শরৎচন্দ্রের গদ্যশৈলীর প্রসঙ্গ, বঙ্কিমের গদ্যশৈলীর প্রসঙ্গ, বাদ পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের 888sport promo codeরাও বাদ পড়েছে। রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে একটু পিছনে ফিরে তাকিয়েছেন কমলকুমার। ‘মধুসূদন অসংখ্য মর্মান্তিক লাইনে, রমণীকুলের খেদ গাহিলে, (তথাপি) এবং বঙ্কিমচন্দ্র 888sport promo code চরিত্র চাহিলেন। কোথাও 888sport promo code চরিত্র শুধু ভূমিকায় হইল।’

এবারো রবীন্দ্রনাথের 888sport promo codeরা উপেক্ষিত। এহেন উপেক্ষার কোনো যুক্তি নেই। উপেক্ষার মূলে রয়েছে খন্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি। কমলকুমারের আলোচনায় এই খন্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর সমালোচক সত্তাকে খর্ব করেছে।

ফরাসি ভাষা এবং 888sport live footballে কমলকুমার মজুমদারের দখল ও দক্ষতা ফরাসি চর্চাকারী বাঙালি লেখকদের স্বীকৃতি পেয়েছে। মূল ভাষায় মহৎ 888sport live footballপাঠের অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। ফরাসি 888sport live football সম্পর্কে কথা বলার অধিকার তাঁর আছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় কিছুসংখ্যক 888sport app download apk latest versionের পাঠে সীমিত বিধায় ফরাসি 888sport live football সম্পর্কে কমলকুমারের এই রচনা সম্পর্কে মন্তব্য করার অধিকারী নই। আমরা কেবল আমাদের ভালো লাগার বিষয়টা জানাতে পারি। ফরাসি 888sport live football নিয়ে কমলকুমারের দুটি লেখা আমাদের নজরে এসেছে, একটির শিরোনাম ‘নাতুরালিসম’, অপরটি মার্শেল প্রুস্তের শতবার্ষিকীতে (১৯৭১) লেখা ‘মার্শেল প্রুস্ত-বিষয়ক কিছু’। ‘নাতুরালিসম’ 888sport liveে কমলকুমার গোঁকুর ভ্রাতৃদ্বয় ও তাঁদের রচিত বাস্তবধর্মী 888sport alternative link নিয়ে আলোচনা করেছেন। রচনাটি পরিচিতিমূলক।

প্রুস্তের ওপর লেখাটিও আমাদের কাছে পরিচিতিমূলক লেখা বলেই বিবেচিত হয়েছে। বুদ্ধদেব বসুর শার্ল বোদলেয়ারের ভূমিকা পাঠে যে শিহরণ, উৎকণ্ঠা এবং মুগ্ধতায় আমাদের হৃদয়-মন ভরে ওঠে, কমলকুমার সেই আবহ ও মেজাজ আনতে পারেননি। তবে কমলকুমারের এই লেখায় ভালো লাগার দিকও যথেষ্ট আছে। আমরা জানতে পারি, প্রুস্তের 888sport alternative linkের কিছু কিছু প্রসঙ্গ, বাঙালি লেখকদের সঙ্গে প্রতি-তুলনাও। প্রুস্তের 888sport alternative linkের মূল উপজীব্য ‘বিষাদ’। এ-সম্পর্কে কমলকুমারের বিশ্লেষণে ফরাসি জ্ঞানের সঙ্গে বাঙালি ভাবনার মেলবন্ধন করেছেন : ‘বিষাদ শব্দ এক অনৈসর্গিক জাতিত্ব বহন করে, হুগোর উক্তিতে ‘তৃণ অঙ্কুরিত হইবে শিশু মরিবে’ যে এবং ঐ শব্দ বড় বাইবেলীয়, এবং বেসুর কণ্ঠস্বর তাহা আরও তাৎপর্য লাভ করে, ‘Mon amis est, thiste jusgua la morte’ মৃত্যু পর্যন্ত আমার আত্মা বিষাদিত। ঐ শব্দ-এর নিমিত্ত অসংখ্য লোকের চোখে জল আসে। নৌকা ঘাট হইতে সরিলে স্রোত-আঘাতে আমরা হাত কামড়াইয়া ক্রন্দন বোধ করি, আঃ কি সুন্দর এক reflex অদ্যও আমাদের কূটস্থ চেতনায় – সীতার উক্তি হইতে বৈষ্ণব 888sport app download apkর লাইনে, বঙ্কিমবাবু-রামপ্রসাদ-সজীববাবু এমনকি সুখ-দুঃখর গল্পে – কিংবা গুণবর্তী বোন আমার মন কেমন করে – দুর্গাপ্রতিমা ভাসানের দিন আমরা চোখ মুছিয়াছি। তাই বিষাদ আমরা অাঁচ করিতে পারি।’ বিষাদ সম্পর্কে প্রুস্তের প্রসঙ্গে যাবার আগে কমলকুমার আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন বাঙালি মানসে বিষাদের সামষ্টিক অভিজ্ঞতাকে, অর্থাৎ আমাদেরকে তৈরি হবার সুযোগ করে দিলেন বা প্রুস্তকে বোঝার জন্য আবহ তৈরি করে নিলেন :

‘জীবন বড় কঠিন ব্যাপার, যাহা খুব কাছ হইতে কষিতে থাকে, চিরকালের জন্য আমাকে পীড়িত করে। যখন আমি অল্পবয়সী ছিলাম, ‘পবিত্র’ গ্রন্থের (বাইবেল) আর শোকই নোয়ার মত মন্দভাগ্য আমার নিকট মনে হইত না। কেন না সেই প্রলয়, যে কারণে চল্লিশ দিন ধরিয়া তাঁহাকে সেই নৌকাতে থাকিতে হয়। পরে যখন আমি প্রায়ই রোগাহিত হইতাম – তখন বুঝিতে পারি ঐ আর্ক ছাড়া কখনই ভালভাবে নৌকার সব দিক বন্ধ, যদিও রাত্রি ঘিরিয়া আছে – জগৎসংসারকে দেখেন নাই।’ প্রুস্তীয় বিষাদের এই বিশ্লেষণ, বিশ্লেষণের আগে বাঙালি মানসে বিষাদের অনুভবের বর্ণনার মধ্য দিয়ে কমলকুমার প্রতিষ্ঠিত করেন বিষাদের বৈশ্বিক ঐক্যকে, সঙ্গে যুক্ত করেন ফরাসি না-জানা বাংলাভাষীদের জন্য প্রুস্ত-বিষয়ক মূল্যায়নের প্রতিকৃতি। এই মূল্যায়ন বস্ত্ততপক্ষে পাঠকের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। তবে কমলকুমার প্রুস্ত সম্পর্কে একটি প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন :

‘প্রুস্তের লেখাতে অজস্র খোঁচা আছে।’

তাঁর নিজের লেখাতেও তাই, বিশেষ করে ব্যক্তিবিশেষ সম্পর্কে বা ভিন্নমত নিয়ে শ্লেষ, ব্যঙ্গ, তীর্যক উক্তিতে ভরপুর। অনেকটা যেন তাঁর স্বভাবজাত। খোঁচা দিতে ভালোবাসেন আড্ডায় এবং লেখাতে।

বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে কমলকুমারের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরেও 888sport live football-বিষয়ক সম্পর্ক ছিল বলে কোনো তথ্যও আমাদের জানা নেই। তবে মহাভারতের কথা লেখার সময় কমলকুমারের হুল-ফোটানো মন্তব্য দ্রুতগতিতে কলকাতার লিখিয়েদের মধ্যে পল্লবিত হয়েছিল :

ঘটনা বলি, একদিন কয়েক বছর পূবের্ব ইন্দ্রনাথের দোকানে বসিয়া আছি, হঠাৎ আমাদের সে প্রশ্ন করিল কাহার কাহার মহাভারত ইংরাজিতে আছে। আমরা কহিলাম, ‘কেন? কোন… মেটে ফিরিঙ্গির’ ওইটুকু বলিতেই সে নিম্নকণ্ঠে কহিল ‘অমুকের’ লোক দাঁড়াইয়া আছে। এবং মাস কয়েক পরে শুনিলাম তিনি মনোজ্ঞ মহাভারতের কথা লিখিতেছেন। এইরূপ আমাদের দেশীয় পন্ডিত। ৩০-৪০-এর কবি পন্ডিতরা ইদানীং উপনিষদ চর্চা করিতেছেন – ইঁহারা জবর প্রগতিশীল সাম্যবাদী। ইঁহারা আমাদের পূবর্বগামী। আমরা ইঁহাদের নিকট কিছুই পাই নাই।

বুদ্ধদেব বসু সম্পর্কে এহেন হুল-ফোটানো মন্তব্যের পর তাঁর সম্পর্কে কমলকুমার লিখলেন ‘রেখ মা দাসেরে মনে’ শীর্ষক এক 888sport app download for android স্মারক। কমলকুমারের স্ববিরোধিতা বা তাঁর আপাতঃ বৈপরীত্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও আমাদের কাছে বুদ্ধদেব সম্পর্কে এই লেখাটি অর্থবহ এবং গুরুত্বপূর্ণ। কমলকুমার খুব কৌশলে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে এড়িয়ে গেছেন। প্রথমত তিনি তাঁর 888sport app download apk সম্পর্কে মতামতদানে বিরত থেকেছেন, বিরত ছিলেন তাঁর 888sport app download apk latest version সম্পর্কে, কথা বলেননি বুদ্ধদেবের কাব্যনাটক নিয়ে, আর যে মহাভারতের কথা নিয়ে তাঁর তীর্যক মন্তব্য, সেই মহাভারতের কথা সম্পর্কেও তিনি ঘোষিতভাবে নীরব থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছেন। বুদ্ধদেব সম্পর্কে আলোচনায় এসেছে তাঁর 888sport alternative link এবং সমালোচনা 888sport live football। তাঁর গদ্যশৈলী এবং বিদেশি 888sport live footballের প্রভাব নিয়েও মতামত দিয়েছেন কমলকুমার। তবে এই দীর্ঘ 888sport liveের বিষয়বস্ত্ত কী? দীর্ঘ এই 888sport liveের বিষয়বস্ত্ত নানাবিধ, অনেক প্রসঙ্গ আছে, আছে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ। রাজনীতিও আছে। কমিউনিস্টবিরোধিতাও আছে। উনিশ শতকের উদ্ভূত হিন্দু নবজাগরণের প্রসঙ্গও আছে। আছে ব্রাহ্মদের প্রসঙ্গ, আছে 888sport promo codeমুক্তির প্রসঙ্গ। এইসব বলার ফাঁকে ফাঁকে বুদ্ধদেব প্রসঙ্গও ছুঁয়ে যান কমলকুমার। বুদ্ধদেবের বাঙালিত্ব এবং বৈশ্বিক বোধের সমীকরণকে কমলকুমার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। তাঁকে প্রতিস্থাপন করেন উনিশ শতকের হিন্দু নবজাগরণের ধারাবাহিকতার সঙ্গে। তবে মহাভারতের কথার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে। বুদ্ধদেবের বাংলাভাষার প্রতি অঙ্গীকার এবং নিজ কর্তব্যকর্মের প্রতি নিষ্ঠায় কমলকুমার অভিভূত। প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত এই 888sport liveটি এক পর্যায়ে এসে আমাদেরকে বুদ্ধদেব প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে রেখে, পরিচয় পত্রিকা এবং সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে লেখকের দুর্জ্ঞেয় ক্ষোভের কথা আমাদেরকে জানিয়েছেন :

সেদিনও ‘পরিচয়’ বড় কম ক্ষতি করে নাই। বুদ্ধদেব বাবু ইঁহার প্রশংসা করিয়াছেন তাহা খানিক বন্ধু বাৎসল্যে। ইহা তাঁহার স্বাভাবিকতা। এই সকলের পান্ডিত্য, এখানে প্রকাশ থাক, তখনকার জিজ্ঞাসু-প্রিয় কাগজ যেমন হোরাইজন, নিউ স্টেটসম্যান এন্ড দি নেশন, টাইম লিটেরারী সাপ্লিমেন্ট, লিসনার এবং অনেক 888sport live-লেখক (যতদূর মনে পড়ে ম্যাক্স ইস্টম্যান আদি) হইতে নকল এখানে স্থান লাভ করিত।

বুদ্ধদেবের আস্তিক্যবোধ এবং হিন্দুত্বের প্রতি অঙ্গীকার কমলকুমারকে তাঁর প্রতি মরণোত্তর 888sport apk download apk latest versionজ্ঞাপনে উজ্জীবিত করেছে : ‘কিন্তু আমাদের মতে সার্থক 888sport live football মাত্রই ধর্মের কথা, ভগবানের বন্দনা’, – বুদ্ধদেবের এই আপ্তবাক্যের মধ্যেই নিহিত আছে তিরিশের অপর কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে কমলকুমারের দ্বিধাজড়িত মূল্যায়ন, ‘সুধীনবাবু আমাদের একমাত্র মহৎ কবি, আমাদের শান্ত ও গর্বিত করিয়াছে। কিন্তু আমাদের তেমন উদ্বুদ্ধ করিলেন না।’ রামকৃষ্ণভক্ত কমলকুমারকে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করার কথা নয়। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের নাস্তিক্য চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে কমলকুমারের অবস্থান। বরং ভাবগত নৈকট্য রয়েছে বুদ্ধদেবের সঙ্গে, এই নৈকট্য এবং বুদ্ধদেবের জীবৎকালের তিক্ততা (মেটে ফিরিঙ্গি) দূরীকরণেই কমলকুমারের প্রতি আত্মপক্ষ সমর্থনের এই জবানবন্দি ‘রেখ মা দাসেরে মনে’।

মুদ্রণ এবং গ্রন্থচিত্রণ বিষয়ে কমলকুমারকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য করা হয়। উভয় বিষয়েই তিনি স্বশিক্ষিত। স্বউদ্যোগে এবং আগ্রহের ফলেই উভয় বিষয়ে লীন তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ‘বঙ্গীয় গ্রন্থ চিত্রণ’ শীর্ষক 888sport liveটি ‘সুশীলকুমার কুমার ঘোষ’ 888sport sign up bonus-বক্তৃতা রূপে ‘বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদ’ পঠিত হয় – অর্থাৎ গ্রন্থচিত্রণ বিষয়ে তাঁকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

‘বঙ্গীয় গ্রন্থচিত্রণ’ শীর্ষক 888sport liveটি কমলকুমারের একটি  গুরুত্বপূর্ণ রচনা। 888sport liveটি তাঁর 888sport app রচনার চাইতে অধিকতর সংহত (লিটল ম্যাগাজিনের জন্য নয় বলে কি?)। তথ্যপ্রাচুর্য লক্ষণীয়, দৃষ্টান্ত হিসেবে আছে দশটি কাঠখোদাই ছবি। তথ্যপ্রাচুর্যে ভরপুর হলেও বাদ পড়েছে মুসলিম লেখকদের পুঁথির প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গটি আনলে আমরা জানতে পারতাম, তাঁরা কী গ্রন্থচিত্রণ করতেন অথবা করতেন না, জানতে পারতাম এই বিষয়ে তাঁদের অবস্থান। এই প্রসঙ্গটা উত্থাপন না করাকে আমরা যৌক্তিক বলে বিবেচনা করি না।

কমলকুমার গ্রন্থচিত্রণের প্রাক্কথন শুরু করেছেন সতেরো শতকের কাঁথা888sport live chatের মহৎ কর্মনৈপুণ্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে, দৃষ্টান্ত হিসেবে এনেছেন দীনেশ সেন-সংকলিত রূপরামের ধর্মরাজনীতি, দুর্গামূর্তি, ফিরে তাকিয়েছেন ময়নামতী এবং পাহাড়পুরের যক্ষিণী মূর্তির অবয়বে, এই পরম্পরা থেকে দাঁড় করিয়েছেন বঙ্গীয় গ্রন্থচিত্রণের ফর্ম-সম্পর্কিত ব্যাখ্যা। বাঙলা গ্রন্থচিত্রে ‘ধার্ম্মিক গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দক্ষিণারঞ্জণ মিত্র মজুমদার আমাদেরকে ‘চৈতন্য দিয়া থাকেন।’

বৈষ্ণবধর্ম-আন্দোলনের প্রভাবে 888sport appsে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই সকল গ্রন্থের চিত্রণপদ্ধতি নিয়েও কমলকুমার তথ্য জুগিয়ে গেছেন। সঙ্গে দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। নিজে চিত্র888sport live chatী হওয়াতে ছবির আকার, গড়ন এবং ছবির পরিভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন ‘সংকীর্ত্তন’ ছবিটির প্রসঙ্গ। অষ্টাদশ এবং উনিশ শতকের এচিং ও কাঠখোদাই-বিষয়ক তথ্য এবং বিবর্তনের বিবরণ দিয়েছেন। বেশ কিছু কাজের বর্ণনাও দিয়েছেন। কয়েকটি পত্রিকার ছাপা ছবির উল্লেখের পর ‘হাসিখুশি’ হয়ে চলে এসেছেন ঠাকুরমার ঝুলিতে। এই দুইটি বইয়ের মুদ্রিত চিত্র দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। ঠাকুরমার ঝুলি সম্পর্কে কমলকুমারের মন্তব্যের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি। তাঁর ভাষায়, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ যে একটি বড় কাজ, যে ইহা একটি সভ্যতা।’ ঠাকুরমার ঝুলি যে বড় কাজ এই বিষয়ে দ্বিমত নেই। দ্বিমত রয়েছে বাক্যটির দ্বিতীয় অংশে অর্থাৎ ইহা একটি সভ্যতা। প্রথমত, কমলকুমারের এই মন্তব্য অতিশয়োক্তি। সভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে তিনি এক করে দেখাতে এই বিপত্তি।

ঠাকুরমার ঝুলির ছবি সম্পর্কে কমলকুমারের বিশ্লেষণে অভিনবত্ব আছে : ‘ঠাকুরমার ঝুলিতে ছবিতে নাটক আছে, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র 888sport app বিকট ও উদ্ভট ছবিও এক সৃষ্টি। এখানেতে স্থাপত্য পশু পাখি বড় অভিনব। অভিব্যক্তি ছাড়া, অথচ বঙ্গীয় নানান এতাবৎ অনুসৃত ধরন আর নাই তবু ইহা বাংলারই।’

বঙ্গীয় গ্রন্থচিত্রণে কমলকুমার গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজ সম্পর্কে যে-বিশ্লেষণ করেছেন, সেই বিশ্লেষণ কেবল হৃদয়দ্রবী নয়, আমাদেরকে উদ্দীপ্ত করে :

‘প্রসেস ব্লক আসাতে অসামান্য কাজ গগনবাবুর, তাহার মত মহত্ত্ব বিরল, জীবন888sport sign up bonusবৃত যে কাজ করিয়াছেন, তাহা আমাদের কল্পনা ধর্মকে সুউচ্চ মার্গে লইয়াছেন, যথা – ঝিরা সলতে পাকাইতেছে, জলে মাস্টার মশাই আসিতেছেন, বটগাছ ইহা এই কলিকাতা নগরীর সৌন্দর্যকথা, আলোই এখানে বাস্তবতা, সাধারণ realism হইতে ছবিতে কেমন করিয়া যাইতে হয়, সেই চাতুর্য তিনি জানিতেন, এখানে ছবির বিষয় এক বিরাট কবির জীবন888sport sign up bonus, তাহার পরিবেশে নিঃসঙ্কোচে প্রবেশ করা তাঁহার মতো স্থিতপ্রজ্ঞ ‘সহজ’ সহজিয়ার পক্ষেই সম্ভব।’

এরপর কমলকুমার অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-অঙ্কিত আরব্যরজনী, কবিকঙ্কন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘নদী’ চিত্রণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নন্দলাল বসুর লিনোকাটের কাজের কথা বলে আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দেন, ‘তাঁর যন্ত্রগুপ্তি ইঁহারা মহৎ মহৎ মহৎ।’

ঠাকুরবাড়ির পর কমলকুমার চলে আসেন রায় চৌধুরীদের বাড়িতে। আমাদের 888sport sign up bonusতে তখন খেলা করে উপেন্দ্র কিশোরের টুনটুনির বই মহাভারত এবং হিন্দুস্তানী উপকথার ছবিগুলোর কথা, যে-ছবিগুলোর ‘আকর্ষক’-ক্ষমতা আজো অব্যাহত।

সুকুমার রায়ের বইয়ের ছবি প্রসঙ্গে কমলকুমার তাঁর ব্যাখ্যায় নিয়ে আসেন ভাববিহবল আবহ, এই আবহে তৈরি হয় ছড়া আর ছবি, ছবি আর গল্পের অপরূপ ভাব-সম্মিলন : ‘তাঁহার ছবির সহিত 888sport app download apkগুলির কি অদ্ভুত যমজতা, এমনকি খুব abstract ব্যাপার যেমন – ‘কেউ যবে তার রয় না কাছে দেখতে নাহি পায়/ গাছের ছায়া ছটফটিয়া এদিক ওদিক চায়।’ এই রূপের সমক্ষে যাহা তাহাকে কথায় বাঁধা, বড় দারুণ ব্যাপার।’ সুকুমার রায়ের পর কমলকুমার আলোচনায় এনেছেন বিশ এবং ত্রিশের দশকের গ্রন্থচিত্রীদের প্রসঙ্গ। আলাদা করে আলোচনা করেছেন পরশুরামের গ্রন্থচিত্রী যতীন্দ্রনাথ সেনের কাজ সম্পর্কে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কমলকুমারের পারিবারিক 888sport sign up bonus। যে-888sport sign up bonusতে যতীন্দ্রনাথের ছবির প্রসঙ্গ আমাদের কাছেও উপভোগ্য করে তোলেন কমলকুমার। বঙ্গীয় গ্রন্থনচিত্র পাঠে আমরা সমৃদ্ধ হই। তাঁর বিশ্লেষণের গভীরতা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সুকুমার রায়ের ছবিগুলো আমাদেরকে নতুন করে ভাবনায় আচ্ছন্ন করে।

শ্রীপান্থ-রচিত যখন ছাপাখানা এলো বইটির আলোচনা করেছিলেন কমলকুমার মজুমদার। আলোচনাটি দীর্ঘ। এতো দীর্ঘ পরিসরে বাংলা ভাষায় সাধারণত বইয়ের আলোচনা হয় না। ‘ছাপাখানা আমাদের বাস্তবতা’ আসলে গ্রন্থ সমালোচনা নয়। শ্রীপান্থের যখন ছাপাখানা এলো বইটিকে সামনে রেখে কমলকুমার তাঁর মুদ্রণবিষয়ক ভাবনাকে আমাদের কাছে হাজির করেছেন। শ্রীপান্থের বইটিকে একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। ওই গ্রন্থ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কমলকুমার নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন। বিনির্মাণ করেছেন তাঁর মুদ্রণবিষয়ক ভাবনাকে, যে-ভাবনাগুলো মৌলিক এবং বিশ্লেষণধর্মী।

ইউরোপ, বিশেষ করে ইংরেজ এবং তাঁদের সংস্কৃতির কোনো কোনো বিষয় নিয়ে আপত্তি থাকলেও ছাপাখানায় তাদের অবদান নিয়ে কমলকুমারের কোনো আপত্তি নেই। ছাপাখানার প্রশ্নে তাঁর অবস্থান ঋজু, স্বচ্ছ এবং সুস্পষ্ট : ‘মাধরায় নম, জয় রামকৃষ্ণ তারা ব্রহ্মময়ী। কম্পাস হইতে উনিশ শতকের বাষ্পশক্তি পশ্চিমকে বিশাল হইবার সাধ্য দিল। লৌহযন্ত্র  – ইস্পাত সভ্যতার রেখাপাত হইল। যখন আমাদের পরিবর্তনের সম্ভাবনা আসিল একটি যন্ত্রে। অবশ্য তাহা হস্তচালিত, যেটি কাঠের – আদতে ইহা অষ্টাদশ শতকের শেষে আসে – এবং এইটির দ্বারাই আমাদিগের বিগত শতাব্দী আশাতীত সম্ভ্রান্ত মর্যাদার হইল, ইহা মুদ্রণ যন্ত্র।’ শ্রীপান্থকে সামনে রেখে কমলকুমার আমাদেরকে ছাপাখানার গল্প শুনিয়ে গেছেন, এই গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে জানা-অজানা তথ্যের সূত্র। আছে কমলকুমারের বিশ্লেষণ এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আবার শ্রীপান্থের প্রদত্ত তথ্যকে তিনি ব্যবহার করে দাঁড় করান নিজস্ব ব্যাখ্যা – এই ব্যাখ্যা আমাদের জানার পরিধিকে বাড়িয়ে দেয় : ‘এখানে ছাপাখানার ব্যস্ততা লইয়া শ্রীপান্থ ভারী চমকপ্রদ বর্ণনা 888sport app download apk latest version করিয়া দিয়াছেন সেখানে তুমি দেখবে ভারতীয়রা নানা ভাষায় শাস্ত্র 888sport app download apk latest version করছেন।  অথবা  প্রুফ সংশোধন করছেন।… ভারতীয় হিন্দু, মুসলমান এবং খৃষ্টান কর্মীরা ব্যস্ত। তাঁরা হরফ সাজাচ্ছেন সংশোধন করছেন হরফ আবার খোপে খোপে রাখছেন…।’ সতেরো শতকের ইউরোপীয় ছাপাখানার ছবির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে যেন শ্রীরামপুরের বিবরণ। শেষ অংশটুকু কমলকুমারের সংযুক্তি।

ছাপার মান, হরফ এবং রোমান হরফ সম্পর্কে শ্রীপান্থের মতামত নিয়ে কথা বলেছেন কমলকুমার। রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবে তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন তিনি। রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রসঙ্গটা এসেছে বাংলা টাইপ তৈরির সময় থেকে; টাইপ তৈরির কাজে কোন ধারার হস্তলিপিকে প্রতিমান হিসেবে ধরা হবে, হালেদ-এর ব্যাকরণের গ্রন্থের বাংলা অক্ষরের লিপিকার খুশমৎ মুনশী। কমলকুমার হস্তলিপি বা লিপিকার্যকে ভদ্র পেশা হিসেবে বিবেচনায় এনেছেন। উল্লিখিত তথ্যগুলো দেওয়ার পর তিনি উত্থাপন করেছেন চৈতন্যদেবের প্রসঙ্গ, ‘আমাদের এই সূত্রে মনে পড়ে শত শত সন্ন্যাসী শ্রমণ লিপিকার্য্য করিয়াছেন – এই বিষয়ে মহান 888sport live chatী নন্দলালবাবুর এক ছবি আছে – মহাপ্রভু লিখতেছেন (শ্রীচৈতন্য টোল)।’

হস্তলিপির আলোচনার পর কমলকুমার চলে আসেন কলম প্রসঙ্গে; স্থগিত রাখেন শ্রীপান্থের ছাপাখানার প্রসঙ্গ। হিন্দু সংস্কারে এবং প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে কলমের যোগসূত্রের সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা দেওয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে আমাদের জানিয়ে দেন, মীর মশাররফ হোসেনের  আমার জীবনী থেকে একটি তথ্য। তথ্যটি হচ্ছে যে, বাঙালি মুসলমান বাড়ির অাঁতুরঘরে দোয়াত কলম রাখার সংস্কার ছিল। তথ্য সংযুক্তির কারণে আমরা ঈষৎ আহ্লাদিত হই এই ভেবে যে, কমলকুমারের রচনায় বাঙালি মুসলমানদের জীবনের একখন্ড ছবির ব্যবহার দেখে। কারণ তাঁর বাঙালিত্বের ধারণায় বাঙালি মুসলমানদের অবস্থান আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়নি। এই বিষয়ে আমাদের আরো কিছু বলার আছে।

কমলকুমার কলম প্রসঙ্গ স্থগিত রেখে ফিরে আসেন বইয়ের আলোচনায়। এবারের প্রসঙ্গ মুদ্রণ888sport live chatের বিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঙালি হিন্দুর ইংরেজি শেখার প্রচেষ্টার কথা। এখানেও গল্প আছে, আছে মূল প্রসঙ্গের বাইরে চলে আসার প্রবণতা। এই রকম প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে আসা-যাওয়ার মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে শ্রীপান্থের বইয়ের গল্পকথা। শ্রীপান্থের বইয়ের ফাঁকও ধরেন কমলকুমার, তবে শোভন এবং সুললিত ভাষায় : ‘এখানে আমাদের কাছে কিছু ফাঁক থাকে, যথা গ্রন্থটির আকার এবং টাইপের পয়েন্ট – ইহা জানান ভাল ছিল।’

আবার শুরু হয় কমলকুমারের ছাপাখানা-বিষয়ক গল্প, গল্পের সূত্রধর শ্রীপান্থ। শ্রীপান্থের বইটি নিয়ে এই কথা বলার মাঝেই তিনি বাংলা টাইপের চেহারা নিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আমাদেরকে জানিয়ে দেন একটি জরুরি তথ্য : ‘বাঙলা  টাইপ চেহারা এক বিচিত্র উৎকর্ষের দিকে মুখিয়া চলিতে লাগিল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলিয়াছেন : ‘ব্রাহ্মণরা পশ্চিম দেশ হইতে আসিয়াছিলেন। তাহারা পশ্চিমের অক্ষরের পক্ষপাতী ছিলেন। এই দুইয়ের লড়াই দেশের লোকে অর্থাৎ বৌদ্ধরা জয়লাভ করিল। তেকোনা অক্ষর চলিয়া গেল।’

শ্রীপান্থের ছাপাখানার বাস্তবতা শীর্ষক  গ্রন্থের সমালোচনাকে ছাপিয়ে কমলকুমারের মুদ্রণ বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি, বিষয়টির ওপর তাঁর কর্তৃত্বের পরিধি দেখে আমরা বিস্মিত হই।

পশ্চিমবঙ্গের লোকজীবন ও লোক888sport live chat সম্পর্কে কমলকুমার মজুমদারকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ-বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রথাগত কোনো অনুশীলন তাঁর ছিল না। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম জনগণনার (১৯৫১) সময়ে অশোক মিত্র রাজ্য সরকারের জনগণনা বিভাগে কাজ করার সুযোগ করে দেন। কমলকুমার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক পরি888sport slot game করেন। জনজীবন এবং লোক888sport live chat সম্পর্কে তাঁর উৎসাহ এবং আগ্রহ এই সময় মাঠপর্যায়ের অর্জিত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে থাকে। লোক888sport live chat সম্পর্কে সরেজমিনে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামীণ 888sport live chat ও কারু888sport live chat দফতরে কাজ করার সময়। কেবল চাকরিসূত্রে নয়, গ্রামীণ জীবন এবং লোক888sport live chat সম্পর্কে তাঁর নিষ্ঠা, আগ্রহ ও কৌতূহলের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন একজন স্বীকৃত সমঝদার। এই সমঝদারিত্বের দায়িত্ব থেকেই লিখেছিলেন পটকথা, বাঙলা টেরাকোটা, ঢোকরা কামার ও বাঙলার মৃৎ888sport live chat।

পটকথা কমলকুমারের একটি মনোজ্ঞ রচনা। গল্পের মতো করে পটুয়াদের কথা বলেছেন। পুরো লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হয় যে, তাঁর কথা দিয়ে তিনি আমাদের আটকে রেখেছেন।

এই লোকটি এসেছে এখানে, কয়েক দিন হলো। কথার  সাফাই শুনিয়ে, গাঁয়ে গ্রামান্তরে আসে যায়। পাঁচ থানা, দশ নদী পার, বহু নদীর জল সে অাঁজলায় পান করেছে, লাল পথ খর পথ ইদানীং পাঁশুটে পথ তাও পার হবে। আকাশে বাতাসে মুঠো মুঠো পটল-চেরা চোখ, স্মিত হাস্যের রেখা উঁচিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। জনমানুষের চোখে চোখে ঘুরছে সেগুলো। আর তার কাছে জনমানুষ কথার ফের শিখবে, বলবে।

কমলকুমার এরপর পটুয়াদের জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প বলেন, গল্প বলেন গ্রামের মানুষদের, তাদেরকে নিয়ে  রঙ্গরসিকতার প্রসঙ্গ। এসব গল্পের মতো পটুয়াদের শেষ হয়। তাঁরা পেটের দায়ে নগরায়ণ চাপে এবং উন্নয়নের জোয়ারে হারিয়ে যায়। এমনও কেউ আছে যারা মাঠে কাজে লাগে। ফলে হাতের খেলাটি মোটা করে ফেলেছে। নোনা লাগিয়েছে।

এইভাবে একভাবে তাদের নিজস্ব ধারাটি হারিয়েছে। বাঙ্গালার টেরাকোটা কমলকুমারের লোক888sport live chat-বিষয়ক আরেকটি রচনা। টেরাকোটা নিয়ে তিনি একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে তাঁর এই রচনার তথ্য এবং উপাত্তের অসম্পূর্ণতা আছে  বলে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। লেখাটি নিয়ে আমাদের প্রথম আপত্তি হচ্ছে, লেখাটির শিরোনাম নিয়ে। বাঙ্গার টেরাকোটা বলতে আমরা বুঝি 888sport apps এবং পশ্চিমবঙ্গের টেরাকোটার বিবরণ। কমলকুমার তাঁর প্রদত্ত বিবরণে কেবল পশ্চিমবঙ্গের মন্দিরের টেরাকোটার কথা বলেছেন। বাদ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মসজিদ। মসজিদের দেয়ালের কাজের বিবরণ। দিলে লেখাটি সম্পূর্ণ হতো। লোকজীবন সম্পর্কে কমলকুমারের শ্রেষ্ঠ রচনা ঢোকরা কামার। একটি নিটোল গল্পের আকারে তিনি সাজিয়ে তুলেছেন ঢোকরা কামারদের জীবনকথা। একটি পেশাজীবী গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলা 888sport live footballে অন্য কোনো রচনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। একদিকে নির্ভার গদ্য অন্যদিকে নৈর্ব্যক্তিক বর্ণনার মেলবন্ধন ঘটেছে এ-রচনায়। মতিলাল পাদরী, নিম অন্নপূর্ণ, তাহাদের কথার মতোই কমলকুমারের আরো শ্রেষ্ঠ গল্প ঢোকরা কামার – অন্তত এই বাক্যটির জন্য।

‘হিঁ গো এগুলো তোমরা কেমন করে কর গো?

এরা হেসে উত্তর দেবে – আমরা লায়েক বটে, আমাদের দ্যানা আছে গো…

তোমাদের মত…?’

বাঙলার মৃৎ888sport live chat কমলকুমারের লোক888sport live chat-বিষয়ক তাত্ত্বিক এবং বর্ণনামূলক রচনা। 888sport liveটিতে তথ্য আছে, তত্ত্ব আছে, আছে কুমারদের পরম্পরা সম্পর্কে পুরাণ-বর্ণিত লোকশ্রুতি, আছে মাটির গুণাবলি এবং কুমারদের যাপিত জীবনের কথা।

888sport live football ও লোকসংস্কৃতির মতো সংগীতও কমলকুমারের আরো একটি আগ্রহের বিষয়। নিয়ম করে বা বিবিধভাবে সংগীতের চর্চা করেছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। পঞ্চাশের দশকে সংগীত বিষয়ে চতুরঙ্গ পত্রিকায় লিখতেন।

একই দশকে সিনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত live chat 888sport পত্রিকায় ‘live chat 888sportের গানের ব্যবহার’ শীর্ষক 888sport liveটি লেখেন। সংগীত-বিষয়ক অপর 888sport live ‘প্রসঙ্গ বাঙলা গান’ চতুরঙ্গে প্রকাশিত সংগীত-বিষয়ক খন্ড-খন্ড রচনার যোগফল।

‘live chat 888sportে গানের ব্যবহার’ শীর্ষক 888sport liveে কমলকুমার সংগীত- পরিচালকদের যোগ্যতা, দক্ষতা তাদের সংগীতবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন সংগীত-পরিচালকদের জনপ্রিয়তার আকাঙ্ক্ষা নিয়েও। জনপ্রিয়তার চাপে ভারতীয় সংগীতের  প্রাণ ও গভীরতা হারিয়ে যাচ্ছে বলে কমলকুমার মনে করেন।

888sport live দুটির অনেকটা অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। কমলকুমার 888sport live football বা 888sport live chat-বিষয়ক রচনায় রবীন্দ্রনাথকে দূরেই রাখেন। কমলকুমারের সমালোচনামূলক রচনায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান ক্ষীণকায় স্রোতের মতো। সংগীত-বিষয়ক আলোচনায় রবীন্দ্রনাথকে আনতেই হয়েছে তাঁকে :

আমাদের গানের ট্র্যাডিশন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিদেশীদের থেকে। ছবিতেও তাই আমাদের প্রধান অবলম্বন এই কণ্ঠসংগীত। এই অসুবিধা আছে, তাই, অর্কেস্ট্রার সঙ্গে আমাদের গান চাপা পড়ে, রূপ পায় না। আমাদের  বাজনা থাকে গানের পিছনে, গানকে আঘাত না করে। রবীন্দ্রনাথ এর একমাত্র উদাহরণ। রবীন্দ্রসংগীতকে আমরা জীবনে উপলব্ধি করেছি তাই সে গান ভালো।

কমলকুমার তাঁর দ্বিতীয় 888sport liveে রবীন্দ্রসংগীতের গড়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন :

তাঁর একটি দিক ছিল, সেটা এই যে সুরকে তিনি বিশেষ বিচক্ষণতা সহকারে উপলব্ধি করে নিয়েছিলেন, ফলে বাক্যগুলি অন্ততঃ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বার হতো ও সুরে বেশ মিশ খেয়ে যেতো। এটা আমরা বিশেষভাবে দেখতে পাবো তাঁর প্রতিটি গানের মুখে তথা অস্থায়ীর কলিতে – সেখানে অদ্ভুত গাম্ভীর্য্য আছে, রস আছে, এবং যুক্তির অবিশ্বাস্য দৃঢ় রূপ আছেই। কাল সেখানে নেই, সমস্ত কিছু তথা যাহা কিছু তা অমরতার মর্য্যাদায়। ভক্তিই থাকে, মন কোন অস্থিরতা লাভ করে না।

আবার একটি গানে নিয়ে অন্য কথা বলেছেন, যে-মন্তব্যে রয়েছে সংশয়, গানটির গঠনগত দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন :

কথাটা আমার অন্যায় কোনক্রমেই নয় যথা ‘হে নূতন দেখা দিক’ এখানে মুখটির মজাটা অলৌকিক। কয়েক মুহূর্ত পরেই একটি বিচ্ছেদ আছে, সেটি সত্যই অবাক করে। আমি শুনেছি বহু গান প্রথমটুকু যেটা চিরকালের যা রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করেছেন সেটুকু সুন্দর এবং পরেরটুকু, যেটুকুতে তিনি নিজে –  আমাদের ভাল লাগে না।’

রবীন্দ্রনাথের পর নজরুলের গানের সুর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কমলকুমার। প্রশ্ন তুলেছেন সলিল চৌধুরীর সুর নিয়ে। আমাদের  জানতে ইচ্ছে করে, এখন থেকে ষাট বছর আগে কমলকুমারের  এই সব মন্তব্য নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। অথবা তাঁর এই মন্তব্যগুলো কি পাঠকের নজর এড়িয়ে গেছে?

পেশাগত জীবনের একপর্যায়ে কমলকুমার ছিলেন চারু ও কারুকলার শিক্ষক। এই বিষয়েও তিনি প্রথাগত শিক্ষা নেননি। নিজে ছবি অাঁকতেন। বার তিনেক তাঁর ছবির একক প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনী করতে পারেননি। মৃত্যুর পর অবশ্য কমলকুমারের চিত্র-প্রদর্শনী হয়েছিল! বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি এঁকেছেন। নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন। চল্লিশের দশকে ‘ক্যালকাটা গ্রুপে’র প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল। সমকালীন 888sport live chatীমহলে ছবি সম্পর্কে তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হতো। ছবির নন্দনতত্ত্বের জ্ঞানটা পেয়েছিলেন শচীন চৌধুরীর কাছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন নিজের চেষ্টায়। কমলকুমারের দীর্ঘতম রচনা বঙ্গীয় 888sport live chatধারা। 888sport live chatকলা সম্পর্কে এটি তাঁর তাত্ত্বিক ও মৌলিক রচনা। 888sport liveটির কাঠামো সংহত। বক্তব্যের ধারাবাহিকতাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। 888sport liveের বক্তব্যসমূহের স্পষ্টতা লক্ষণীয়। ছবি সম্পর্কে তাঁর ভাবনাগুলো এই 888sport liveে প্রতিফলিত হয়েছে। 888sport live chatকলা আমাদের এখতিয়ার-বহির্ভূত বিষয় বিধায় আমরা লেখকের তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে দূরে থাকতে সচেষ্ট হবো। রং, রেখা, ঘের নিয়ে কমলকুমারের ব্যাখ্যা সম্পর্কে কথা বলার হক আমাদের নেই। আমরা সচেষ্ট হবো 888sport liveের আনন্দদায়ক এবং উপভোগ্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে। এই ক্ষেত্রে সুবিধাও আছে, কমলকুমারের রচনাশৈলী কেতাবী নয় বলে আমরা তাঁর তত্ত্বের জগতে উঁকি দেওয়ার সুযোগ পাব। আস্থা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি তাঁর 888sport live chat-বিষয়ক বয়ান উত্থাপন করেন। যথারীতি তথ্যসূত্র ব্যতিরেকে। তাঁর ব্যাখ্যায় দ্বিধা নেই, আছে স্বতঃস্ফূর্ততা :

‘বাঙলাদেশের সমস্ত দিক হইতে নিজস্ব একটি ইতিহাস আছে। সমস্ত দিক হইতে বাঙলাদেশ স্বতন্ত্র। যদিও ভারতের মধ্যে সে একটি  প্রদেশ মাত্র, সেই তুলনায় তাহার ঐশ্বর্য অনেক। বাঙলাদেশে আবির্ভাব হইয়াছে নতুন নতুন বিশ্বাসের এবং বাস্তবতার। ধর্ম্ম, কাব্য, চিত্র, সংগীত – ইহাদের সহিত বাঙালীর নাড়ীর যোগ রহিয়াছে। ভারতে ভগবানের কোন আদর্শ চাই বলিলে হাস্যকর হইবে, তেমনই বাঙালীর 888sport live chatের কোন আদর্শ নাই এই বাক্য যদি কেহ বলে, তাহা হইলে সকলেই তাহাকে বিদ্রূপ করিব। এই আদর্শ কিভাবে পরিপুষ্ট হইয়াছে তাহা আমরা কিছু কিছু জানি।’

বঙ্গীয় 888sport live chat ধারায় কমলকুমার তাঁর 888sport live chatার্দশকে ধর্মীয় ভাবধারায় জারিত করে দাঁড় করিয়েছেন বঙ্গীয় 888sport live chatতত্ত্বকে! যে-তত্ত্বের বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে চৈতন্যদেব-প্রবর্তিত বৈষ্ণব আন্দোলন এবং বাংলার প্রকৃতির সমন্বয়ে। এই সমন্বয়ের চলমানতায় নিহিত রয়েছে 888sport live chat, 888sport live football, সংগীত এবং জীবন। কমলকুমারের ভাষায়, ‘এই সজীবতা যদি না থাকিত তাহা হইলে আমাদের দেশে বৈষ্ণব ধর্ম্মও এত বেশি লোকের মন জানিত না। বৈষ্ণব ধর্ম্মের কাছ বাঙলার জীবন যে কীভাবে ঋণী তাহা স্বীকার না করিয়া পারা যায় না।’

কমলকুমারের 888sport live chat-বয়ানের মূলে রয়েছে ভক্তি ও প্রগাঢ় ধর্মীয় চেতনা। এই চেতনার সূত্র ধরে তিনি ব্যাখ্যা করে যান আলো, রং, রেখা এবং ঘেরের তত্ত্বকে। তাঁর তৈরি তত্ত্বের মধ্যে সঞ্চালিত করেন চৈতন্যদেবের সমাধিপ্রাপ্তির বেদনাবোধকে। ‘সমুদ্রের নীল দেখিয়া কি যেন হইল, কি যেন ঘটিয়া গেল, যে আলো ছিল যে নীল ছিল তাহার মধ্যে সে জন কি যেন দেখিতে পাইল, সে নীল তাহাকে অভিভূত করিয়াছিল, তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিল, রঙ আর বাস্তবতা তাহাকে আর চেতনায় রাখিল না। নীলের মধ্যেই তাঁহার শেষ হইল।’

কমলকুমার চৈতন্যদেবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিনির্মাণ করতে চেয়েছেন বঙ্গীয় 888sport live chatধারার ট্র্যাজিক ভিত্তিকে। রেনেসাঁস-পরবর্তী ইউরোপের যিশুর ক্রুসিফিকেশন এবং যিশুর জীবনকে নিয়ে যেমন সৃষ্টি হয়েছিল মহৎ 888sport live chatীদের সৃষ্টির উল্লাস, তেমনি সৃষ্টিসুখের উল্লাস চৈতন্যদেবের জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে নিহত আছে বলে কমলকুমার আমাদেরকে ইঙ্গিতে বলে যান। আমাদের সৌভাগ্য যে, 888sport live footballের মতো চৈতন্যদেবের প্রভাব 888sport live chatকলায় ঘটেনি। বাঙালি মহৎ 888sport live chatীদের মধ্যে অনেকেই চৈতন্যদেবকে নিয়ে ছবি এঁকেছেন, ভক্তিবাদে আস্থা রেখেছেন, তবে ভক্তিবাদই বাংলা পশ্চিমবঙ্গের চিত্রকলার একমাত্র ধারা নয়, বহুমুখীন ভাব সম্মিলনে এর বিকাশ ঘটেছে। চিত্রকলার বহুত্ববাদী চরিত্রও বোধকরি কমলকুমারের প্রত্যাশা পূরণ করেনি।

কমলকুমারের হিন্দু মানস সম্যকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ‘কলকাতার গঙ্গা’ শীর্ষক নিবন্ধে। প্রকৃতি এবং মানুষের শাশ্বত বিশ্বাসের সমীকরণ পরিলক্ষিত হবে এই রচনায়। কমলকুমারের গঙ্গা বাঙালি হিন্দুর, হিন্দিবলয় বা আর্যাবর্তের গঙ্গা নয়। তাঁর গঙ্গার ইতিহাসের শুরু চৈতন্যদেবের সময় থেকে, রামকৃষ্ণ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব সেনের 888sport sign up bonusবিজড়িত কমলকুমারের গঙ্গা। এই গঙ্গার 888sport sign up bonusতে ’৪৬-এর দাঙ্গা, বোনের বৈধব্যবরণের 888sport sign up bonusবর্ণনায় আমরা অভিভূত হই : ‘একদা এই গঙ্গার তীরে দিদি কুশপুত্তলিকা দাহ করিয়া বৈধব্য গ্রহণ করিলেন, আকাশমার্গে সেই ধূমকালো করিয়া উঠিল।’ চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণ এবং গঙ্গা ধর্মীয় ভাবকল্পের বিপরীতে লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতি সিক্ত গঙ্গায় আমরা অবগাহন করলেও কমলকুমার আমাদের নিয়ে যান তাঁর ধর্মীয় ভাবকল্পে, যে-ভাবকল্পের স্মারক চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণ এবং কেশব সেন, এঁদের নিয়ে দাঁড় করান তাঁর বাঙালিত্ব এবং হিন্দুত্বের বয়ানকে। কমলকুমারের এই বয়ানের ফলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে বাঙালিত্বের পরিসর। ইতিহাসের নিরিখে দুর্বলতাও রয়েছে যথেষ্ট। যেমন চৈতন্যদেবকে আনতে চান না ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলা তথা ভারতবর্ষের ভক্তি-আন্দোলনে সুফিদের অবদান অনস্বীকার্য হলেও বাংলার ভক্তিবাদে এঁদের প্রসঙ্গ আনেন না। বাংলায় বৈষ্ণব-আন্দোলনে ইসলাম ধর্মের প্রভাবের বিষয়টি তাঁর বয়ানে পরিলক্ষিত হয় না। চৈতন্যদেব বা বৈষ্ণব আন্দোলন নিয়ে উনিশ এবং বিশ শতকের 888sport appsে বিতর্ক কম হয়নি। আমাদের আপত্তি চৈতন্যদেবের দেবত্ব আরোপের প্রতি তাঁর ‘নরে নারায়ণ’ তত্ত্বের ভাবকল্পকে আমরা বাঙালির মৌল ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা তাঁর ঐতিহাসিক পক্ষপাতী। আমাদের 888sport app download for androidে আছে বৈষ্ণব আন্দোলন নিয়ে বঙ্কিমের তীর্যক উক্তি : ‘উচ্চাভিলাষশূন্য, অলস, ভোগাসক্ত, গৃহপরায়ণ।’ 888sport app download for androidে আসে ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের  মূল্যায়ন : ‘It relaxed the fivers of the national character in the filed of action.’

বৈষ্ণব-আন্দোলনের এহেন নেতিবাচক মূল্যায়নের বিপক্ষে সুকুমার সেন জ্ঞাপন করেছেন ইতিবাচক অবস্থান : ‘এসব ভাবনা গভীর অলস কল্পনা মাত্র, ইতিহাস সমর্থিত ও যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং বলিতে পারি চৈতন্য বাঙ্গালীকে একটা বৃহৎ উদ্যোগের পথ খুলিয়া দিয়াছিলেন।’

বৈষ্ণব-আন্দোলন সম্পর্কে এই বিতর্কের মধ্যে মমতাজুর রহমান তরফদারের মূল্যায়ন আরো গভীর এবং তাৎপর্যপূর্ণ :

‘কেউ কেউ চৈতন্যের আন্দোলনকে রেনেসাঁস অভিধায় চিহ্নিত করেছেন। সীমিত অর্থে বৈষ্ণব আন্দোলনের কোনো কোনো পর্যায়কে রেনেসাঁস বলা যায়। ইউরোপীয় রেনেসাঁসের উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে কতকগুলি হচ্ছে চার্চের আধিপত্য থেকে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মের আপেক্ষিক মুক্তিলাভ, মানবমনের মুক্তি ও ব্যক্তিমর্যাদার প্রতিষ্ঠা। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রাহ্মণ্য পৌরহিত্যের স্থান ছিল না। যে কোনো ব্যক্তি নামসংকীর্তনের মাধ্যমে পরমতত্ত্বের প্রতি যুক্তভাবে ভক্তি নিবেদন করতে পারতেন। বাংলা কাব্য888sport live footballের মানবিকতার সুর বোধহয় প্রথম বেজে  উঠেছিল বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রভাবেই। আমরা লক্ষ করেছি, 888sport live football-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৈষ্ণব ধর্ম বঙ্গভূমিকে উর্বর করে দিয়েছে।’

মমতাজুর তরফদারের এই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, বৃহৎ বাঙালি সমাজ বিষয়ক মন্তব্য, বৃহৎ বাঙালি সমাজে এবং হিন্দু সমাজের ভেতরে কিন্তু নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিলো। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিভেদ যেন বৈষ্ণবদের মাধ্যমেই প্রথম পাকাপোক্ত হলো।

চৈতন্যদেব এবং তাঁর আন্দোলনের সমাজতত্ত্ব নিয়ে তরফদারের ব্যাখ্যায় আমরা পাব কমলকুমারের হিন্দুত্ববাদী বাঙালিত্বের কার্যকারণকে। কমলকুমার উনিশ ও বিশ শতকের মনীষীদের চৈতন্যদেব বা বৈষ্ণব-আন্দোলন সম্পর্কে তাঁদের নেতিবাচক সমালোচনার জবাবে বিনির্মাণ করেছেন চৈতন্যদেবের বহুমাত্রিক ভাবমূর্তিকে। 888sport live football, 888sport live chat এবং সংগীতে তাঁর প্রভাবকে তিনি রেনেসাঁস ও বাঙালিত্বের দ্যোতক এবং পরম্পরা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। চিহ্নিতকরণের পর এই পরম্পরাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন উনিশ এবং বিশ শতকের ইউরোপীয় প্রভাবজাত ধর্মনিরপেক্ষতার বিপক্ষে। ভক্তিবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার অভিঘাতে কমলকুমারের বয়ানে তৈরি হয় না সংশ্লেষ, তিনি আমাদেরকে পৌনঃপুনিকভাবে ফিরিয়ে আনেন চৈতন্য, রামকৃষ্ণ এবং কেশব ভাবকল্পে। এই ভাবকল্প দিয়ে তিনি তৈরি করেন তাঁর বাঙালিত্বের বোধকে। এই বাঙালিত্ব মানে বর্ণহিন্দুর জয়গাথা, যশগাথা। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা বাঙালি বলিতেই কলিকাতাস্থ ধার্ম্মিক জন888sport free betকে গণনা করি।’ তাঁর বাঙালিত্বের খন্ডিত সূত্রের মূলে রয়েছে তরফদার-রচিত বৈষ্ণব আন্দোলনকালীন সময়ের বৃহৎ বাঙালি সমাজের বিভাজন। রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর মতামতও যৌক্তিক বলে আমরা বিবেচনা করি না। রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসূচক উক্তি আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয়নি। নিজেকে রাজনীতিবিমুখ বলে দাবি করে একপেশেভাবে বামদের প্রতি তাঁর বিরতিহীন আক্রমণ যে-কোনো কমিউনিস্টবিরোধী নেতাকেও হার মানাবে। তবে তাঁর সাংস্কৃতিক বোধের পরিধি এবং পরিপ্রেক্ষিত ব্যাপক। 888sport live football, 888sport live chat এবং চিত্রকলার বিষয়ে তাঁর বিদ্যাবত্তা ঈর্ষণীয়। তাঁর সাংস্কৃতিক বোধের এই গভীরতা রক্ষণশীল হিনদুত্বের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি ঘোষিতভাবে বাঙালি হিন্দুত্বের উত্তরাধিকারী। এই উত্তরাধিকারকে কমলকুমার আস্থা ও অনুরাগের সঙ্গে আজীবন বহন করেছেন। তাঁর এই আস্থা এবং অনুরাগের তীব্রতায় অনেক সময় আমরা বিভ্রান্ত হই, আমরা অনুপ্রাণিত হই তাঁর সৃষ্ট নিম্নবর্ণের মানুষদের অবলোকনে (বৈজুনাথ, ঢোকরা কামার, সুখরাই)। তাঁর হিন্দুত্ববাদী বাঙালিত্ব এবং গদ্যের দুর্ভেদ্য দুর্গ (সব রচনায় নয়) আমাদের মধ্যে তৈরি করে দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা। এই দূরত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাই তাঁর রচনা পাঠে আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কালের অন্যতম মহৎ লেখক কমলকুমার মজুমদার। তাঁর মহত্ত্বের পরিধি অনেকটাই সীমিত এবং সীমাবদ্ধ।

গ্রন্থপঞ্জি

১। 888sport live সংগ্রহ – কমলকুমার মজুমদার, চর্চাপদ পাবলিকেশন, ২০০৯, কলকাতা।

২। কমলকুমার ও কলকাতার কিস্সা, অনিরুদ্ধ লাহিড়ী, তালপাতা, ২০০৮, কলকাতা।

৩। কমলকুমার কলকাতা পিছুটানের ইতিহাস, রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স, ২০০৫, কলকাতা।

৪। কমলকুমার মজুমদারের 888sport alternative linkের করণকৌশল, শোয়াইব জিবরান, বাংলা একাডেমি, 888sport app।

৫। কমলকুমার, রফিক কায়সার, 888sport cricket BPL rateে পাবলিকেশন্স, ২০০৯, 888sport app, 888sport cricket BPL rateে সংস্করণ-২০০১, 888sport app।

৬। বঙ্কিম রচনাবলী-২য় খন্ড, যোগেশ বাগল-সম্পাদিত, দ্বিতীয় সংস্করণ, 888sport live football সংসদ, ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ, কলকাতা।

৭। History of Bengal Muslim Period, Sir Jadunath Sarkar, Academica Asisxtica, 1973, Patna.

৮। বাঙালা 888sport live footballের ইতিহাস – প্রথম খন্ড, আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৭৫, কলকাতা।

৯। বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস – দ্বিতীয় খন্ড, চতুর্থ অধ্যায়, প্রধান সম্পাদক আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমি, ২০০৯, 888sport app।

১০। মুহাম্মদ এনামুল হক রচনাবলী – প্রথম খন্ড, ‘বঙ্গে সুফী প্রভাব’, মনসুর মুসা-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ১৯৯১, 888sport app।