কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের দেড়শো বছরপূর্তি উপলক্ষে প্রদর্শনী

মৃণাল ঘোষ

কলকাতার সরকারি চারম্ন ও কারম্নকলা মহাবিদ্যালয়, যার প্রকৃত নাম ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’ ২০১৪ সালে দেড়শো

বছরে পদার্পণ করেছে। ভারতের 888sport live chatশিক্ষার ইতিহাসে এটা একটা গুরম্নত্বপূর্ণ ঘটনা। এই দেড়শো বর্ষ উদযাপিত হয়েছে এক বছর ধরে। ২০১৫- তে আয়োজিত হল সমাপ্তি অনুষ্ঠান। এ-উপলক্ষে একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে আর্ট কলেজে এবং অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সব গ্যালারি জুড়ে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর। এ ছাড়া আর্ট কলেজে দুটি গুরম্নত্বপূর্ণ সেমিনার বা আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রদর্শনীটিতে চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের শুরম্ন থেকে সম্প্রতি পর্যমত্ম যে সমসত্ম 888sport live chatী ও শিক্ষক এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের ছবি ও ভাস্কর্য জনসমক্ষে তুলে ধরার, যাতে 888sport live chatচর্চার বিবর্তনকে অনুধাবন করা যায়। এই প্রদর্শনীর আলোচনাই আমাদের এ-লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু তার আগে আমরা এই প্রতিষ্ঠানটির বিবর্তনের ইতিহাস একটু 888sport app download for android করার চেষ্টা করব।

আজকের এই আর্ট কলেজ একসময় ছিল ‘আর্ট স্কুল’। নাম ছিল ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’। ১৯৫১ সালের ১ জুলাই আর্ট স্কুল আর্ট কলেজে উন্নীত হয়। ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কুলটির সূচনা ২৯ জুন, ১৮৬৪। এই দিন থেকে হেনরি হোভার লকের ওপর এই স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়। এর আগে লক ছিলেন ‘লন্ডন স্কুল অব ডিজাইনে’র সুপারিনটেনডেন্ট। এজন্য ১৮৬৪ সালকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাবর্ষ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এই সূচনারও একটি পূর্ব ইতিহাস আছে।

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৯৮ সালে জমিদার বিদ্যাধর রায়ের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকায় সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও

ডিহি – কলকাতা র এই তিনটি গ্রাম কেনে। আজকের শহর কলকাতার পত্তন হয় সেই সময় থেকে। ক্রমান্বয়ে কলকাতা হয়ে ওঠে ইংরেজদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র এবং

ব্রিটিশ-ভারতের রাজধানী। সেই থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে নানা দিকে কলকাতার বিকাশ ঘটলেও 888sport live chatকলা শিক্ষার কোনো পরিকাঠামো ছিল না। ইতোমধ্যে বাংলার এবং সারা ভারতেরই দরবারি 888sport live chatের বিলোপ ঘটেছে। লৌকিক 888sport live chatও কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। কিন্তু একশ্রেণির মানুষের অর্থ ও প্রতিপত্তি বাড়ছে। এ-দেশে আসা ব্রিটিশ 888sport live chatীদের ছবি দেখে 888sport live chatকলা সম্পর্কেও সচেতনতা জাগছে। একটা অভাববোধ তৈরি হয়েছে যে, এখানকার সাধারণ মানুষকে 888sport live chatশিক্ষা দেওয়া বা তাদের মধ্যে এ-বিষয়ে সচেতনতা জাগানো দরকার। এই অভাববোধ থেকেই ১৮৩৯ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি কলকাতায় ‘দ্য মেকানিকস ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইন্ডিয়া রিভিউ নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ড. ফেডেরিক কোরবিনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এই স্কুল। ভালোভাবে শুরম্ন হয়েও বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি এই স্কুল, সম্ভবত জনসাধারণের সক্রিয়তার অভাবে। কিন্তু প্রয়োজনবোধটা থেকে গিয়েছিল।

এরই ফলে ১৮৫৪ সালের ১৬ আগস্ট চিৎপুরের গরানহাটায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পরিচালনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘দ্য স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’। ১৯৫৪ সালের নভেম্বর মাসে স্কুলটি গরানহাটা থেকে কলুটোলায় মোতিলাল শীলের বাড়িতে স্থানামত্মরিত হয়। এতদিন স্কুল চলত কিছুটা সরকারি অনুদানে, কিছুটা ছাত্রদের বেতন থেকে সংগৃহীত অর্থে। কিন্তু সেই টাকায় কুলোতো না। তখন কমিটি সরকারকে স্কুল অধিগ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। সরকার সম্মত হয়। কেননা সরকারি সত্মরেও 888sport live chatী-কারিগর তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। তখন এইচ.এইচ. লককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে সরকার স্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করে। স্কুল স্থান পরিবর্তন করে। চলে আসে ১৬৬, বৌবাজার স্ট্রিটে। ১৮৬৫ সালে স্কুলের নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম হয় ‘দ্য গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’। তখন স্কুলের অবস্থান ছিল বৌবাজার স্ট্রিটে। কিন্তু কালক্রমে ওই বাড়ি জীর্ণ হয়ে যায়। আরো বেশি জায়গারও দরকার হয়। ১৮৯২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে স্কুল উঠে আসে চৌরঙ্গি রোডে, ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশের ভবনে। আজ পর্যমত্ম সেখানেই এই স্কুল তথা কলেজের অবস্থান।

১৮৬৪ থেকে প্রায় একশো বছর বাংলা তথা ভারতের আধুনিক 888sport live chatকলার বিকাশে কলকাতার এই আর্ট স্কুল তথা কলেজের ভূমিকা ছিল অত্যমত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। বহু 888sport live chatী এখানে প্রশিক্ষেত হয়ে পরবর্তীকালে 888sport live chatকলার বিকাশে অসামান্য অবদান রেখেছেন। যখন এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় তখন পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য ছিল কিছু 888sport live chatী-কারিগর তৈরি করা। এখানে 888sport live chatশিক্ষা শুরম্ন হয়েছিল ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতার আঙ্গিকে। এইচ.এইচ. লক অধ্যক্ষ ছিলেন ১৮৬৪ থেকে ১৮৮২ সাল পর্যমত্ম। তিনি লন্ডনের সাউথ কেনসিংটন স্কুলের শিক্ষাধারাকেই এখানে চালু করার চেষ্টা করেছেন। সেই সময়ের মধ্যে অবশ্য ইংল্যান্ডে রোমান্টিক আন্দোলন জেগেছে, প্রি-র‌্যাফেলাইট আন্দোলন হয়েছে। ফ্রান্সে ইম্প্রেশনিজম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সেইসব আঙ্গিক-পদ্ধতি এখানে প্রয়োগের কথা ভাবেননি লক। লকের পর অধ্যক্ষ হয়ে আসেন গ. ঝপযধঁসনঁৎম. তিনি চেষ্টা করেছিলেন ফ্রেসকো পেইন্টিংয়ে ভারতীয় অলঙ্করণ-পদ্ধতি শেখানোর জন্য। কিন্তু অনেক ছাত্রই তাতে সাড়া দেননি। ডবিস্নউ.এইচ. জবিনস অধ্যক্ষ হন ১৮৮৭ সালের জুন মাসে। এরপরে অধ্যক্ষ হন ই.বি. হ্যাভেল

(১৮৬১-১৯৩৪)। তিনি যোগ দেন ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে। তিনি এতদিনের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন আনেন।

ভারতবর্ষের 888sport live chatকলার উৎকর্ষ ও বৈভব সম্পর্কে তাঁর প্রকৃষ্ট ধারণা ছিল। অন্য ইংরেজ 888sport live chatবেত্তাদের অনেকেই মনে করতেন, ললিতকলা বলতে যা বোঝায় ভারতবর্ষে তার কোনো অসিত্মত্ব ছিল না কখনো। তাই 888sport live chatশিক্ষায় ভারতীয় রূপরীতির কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে না। একমাত্র হ্যাভেলই তখন অনুধাবন করেছিলেন নিজস্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত না হলে কোনো 888sport live chatশিক্ষাই সম্পূর্ণ হয় না। এ জন্য কলকাতা আর্ট স্কুলে তিনি ভারতীয় আঙ্গিকে 888sport live chatশিক্ষা প্রবর্তনের পরিকল্পনা করেন। আর্ট স্কুলের 888sport live chatসংগ্রহ থেকেও বিদেশি মাঝারি মানের চিত্র-ভাস্কর্য সরিয়ে সেখানে দেশের উৎকৃষ্ট 888sport live chatের দৃষ্টামত্ম বাড়াতে উদ্যোগী হন, যাতে শিক্ষার্থীরা দেশের 888sport live chatকলার উৎকর্ষ সম্বন্ধে অবহিত হতে পারে। এ-কাজ তিনি যে খুব সহজে

করতে পেরেছিলেন, তা নয়। বাইরে ও ভেতরে অনেক প্রতিরোধ এসেছিল। এই সিদ্ধামেত্মর প্রতিবাদে ১৮৯৭ সালেই তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র রণদাপ্রসাদ গুপ্তের নেতৃত্বে কিছু ছাত্র আর্ট স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘জুবিলি অ্যাকাডেমি’ নামে নতুন স্কুল খুলেছিলেন, যেখানে অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতার আঙ্গিকেই চিত্রশিক্ষা দেওয়া হত। হ্যাভেলের উদ্যোগকে অনেকেই ভালভাবে নেননি। তাঁদের মনে হয়েছিল, উচ্চমানের 888sport live chatশিক্ষা থেকে ছাত্রদের বঞ্চিত করার এটা একটা চক্রামত্ম।

কিন্তু হ্যাভেল তাঁর ভাবনায় অনড় ছিলেন। ১৮৯৭ সালে তাঁর সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় হয়। অবনীন্দ্রনাথ তখন ঐতিহ্যগত দেশীয় আঙ্গিকে ছবি অাঁকার দিকে অগ্রসর হয়েছেন। ১৮৯৭-তেই তিনি এঁকে ফেলেছেন ‘রাধাকৃষ্ণ’ চিত্রমালা, যেখান থেকে বলা যায় নব্য-ভারতীয় ঘরানার সূচনা। হ্যাভেল অবনীন্দ্রনাথকে আর্ট স্কুলের প্রশিক্ষণে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিলেন। ১৯০৫ সালে অবনীন্দ্রনাথ আর্ট স্কুলের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিলেন। তাঁদের দুজনের যৌথ উদ্যোগে আর্ট স্কুলে ভারতীয় রীতিতে শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন হল।

আর্ট স্কুলে অবনীন্দ্রনাথের পর্বের ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন নন্দলাল বসু (১৮৮২-১৯৬৬), সুরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি (১৮৮৫-১৯০৯), অসিত কুমার হালদার (১৮৯০-১৯৬৪), ক্ষেতীন্দ্রনাথ মজুমদার

(১৮৯১-১৯৭৫), কে. ভেংকটাপ্পা (১৮৮৭-১৯৬৫) প্রমুখ। এঁরাই হলেন নব্য-ভারতীয় ধারার দ্বিতীয় প্রজন্মের 888sport live chatী, যদি অবনীন্দ্রনাথকে এই ধারার প্রথম প্রজন্ম বলে গণ্য করা হয়। ১৯০৭ সালে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’ প্রতিষ্ঠা হল। এর ভেতর দিয়ে নব্য-ভারতীয় ঘরানা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। ভারতীয় 888sport live chatকলার আধুনিকতার বিসত্মারে নব্য-ভারতীয় ঘরানার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সেই বিসত্মারে আর্ট স্কুলের বিশেষ ভূমিকাও অনস্বীকার্য।

আর্ট স্কুলের প্রথম যুগে সেখান থেকে স্বাভাবিকতাবাদী রীতিতে দক্ষ যেসব 888sport live chatী বেরিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অন্নদাপ্রসাদ বাগচি (১৮৪৯-১৯০৫), শ্যামাচরণ শ্রীমানী (?-১৮৭৫), শশীকুমার হেশ (১৮৬৯-?), বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৫১-১৯৩২), গঙ্গাধর দে, প্রমথনাথ মিত্র, ভাস্কর্যে রোহিনীকামত্ম নাগ (১৮৬৮-১৮৯৫), হিরণ্ময় রায়চৌধুরী (১৮৮৪-১৯৬২), ফণীন্দ্রনাথ বসু

(১৮৮২-১৯২৬), গোপেশ্বর পাল (১৮৯৪-১৯৮৩) প্রমুখ। এসব 888sport live chatী এবং নব্য-ভারতীয় ধারার পূর্বোক্ত 888sport live chatীরা আধুনিকতার দুটি প্রবাহকে পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

হ্যাভেলের পর অধ্যক্ষতায় আসেন পার্সি ব্রাউন। ১৯০৯ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি তিনি যোগ দেন। অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর মতামত্মর হয়। ১৯১৫ সালে অবনীন্দ্রনাথ পদত্যাগ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন যামিনী প্রকাশ গাঙ্গুলি। পার্সি ব্রাউন ও তাঁর যৌথ উদ্যোগে আর্ট স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ফাইন আর্ট, যেখানে পাশ্চাত্য প্রথায় শিক্ষা দেওয়া হত এবং ইন্ডিয়ান স্টাইল, যেখানে ভারতীয় আঙ্গিকের চর্চা হত। মুকুল চন্দ্র দে অধ্যক্ষ হন ১৯২৮ সালের জুলাই মাসে। ভারতীয় রীতির শিক্ষাব্যবস্থায় তিনি একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসেন। এতদিন সেখানে কেবল পৌরাণিক ও ধর্মীয় বিষয়েরই চর্চা হত। অনেক সময়ই ঝোঁক এসে যেত ‘রিভাইভালিজম’ বা পুনরম্নজ্জীবনবাদের দিকে। মুকুল দে ভারতীয় বিভাগে ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ দৈনন্দিন জীবনের বাসত্মবতা নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করেন ছাত্রদের। আর্ট স্কুলে ১৯৩৯ সাল থেকে মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা শুরম্ন করার কৃতিত্বও তাঁর। তাঁর আহবানে রবীন্দ্রনাথ এসে কিছুদিন ছিলেন আর্ট স্কুলে অধ্যক্ষের বাসস্থানে। এখানে ছবিও এঁকেছেন কবি। রবীন্দ্রনাথের ছবির প্রথম প্রদর্শনীও হয়েছিল এই আর্ট স্কুলেই ১৯৩২ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি থেকে মুকুল চন্দ্রের উদ্যোগেই।

এর পরে আর্ট স্কুলের শিক্ষাধারা নানা প্রবাহে এগিয়েছে। ১৯৪৩ সালে অধ্যক্ষ হয়েছেন রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তারপরে এসেছেন অতুল বোস, সতীশ চন্দ্র সিংহ। চিমত্মামণি কর অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৬ সালের আগস্টে। ১৯৬০-এর দশক পর্যমত্ম আর্ট স্কুল থেকে যেসব ছাত্র বেরিয়েছেন, তাঁরা চিত্র-ভাস্কর্যের আধুনিকতাকে দিগমত্ম থেকে দিগমেত্ম প্রসারিত করেছেন। আমরা 888sport app download for android করতে পারি যামিনী রায়, প্রহ্লাদ চন্দ্র কর্মকার, প্রদোষ দাসগুপ্ত, ভবেশ চন্দ্র সান্যাল, বসমত্ম কুমার গাঙ্গুলি, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, হরেন দাস, গোবর্ধন আশ, গোপাল ঘোষ, জয়নুল আবেদিন, সোমনাথ হোর, সুরেন্দ্রনাথ কর, সুনীল কুমার পাল, নিখিল বিশ্বাস, গণেশ পাইন, সুনীল দাস, প্রকাশ কর্মকার, যোগেন চৌধুরী, মানিকলাল ব্যানার্জি, শানু লাহিড়ী, অনিতা রায় চৌধুরী, শক্তি বর্মণ, অমল ঘোষ, ধীরাজ চৌধুরী, শ্যামশ্রী বসু প্রমুখ 888sport live chatীর কথা, যাঁরা পাশ্চাত্য ও ভারতীয় রীতিতে কাজ করেন এবং এই দুই রীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ভারতীয় আধুনিকতা ও আধুনিকতাবাদী 888sport live chatকে আজ বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

কলকাতার এই গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল তথা কলেজই একমাত্র 888sport live chatশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে একই সঙ্গে পাশ্চাত্য স্বাভাবিকতার রীতি ও ভারতীয় রীতির নিবিষ্ট চর্চা হয় এখনো একই সঙ্গে। এখন পশ্চিমবঙ্গের ও ভারতের 888sport app 888sport live chatশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কলকাতার আর্ট কলেজের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে উপযুক্ত ও পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষকের অভাবে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থা এখন অনেকটাই ভারাক্রামত্ম। এই সংকট থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে পুনরম্নজ্জীবিত করতে, এর এতদিনের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে সকলের সামনে তুলে ধরতে এর প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে এই প্রদর্শনী – যা এর অতীত ও বর্তমানের ওপর অনেকটাই আলো ফেলতে পেরেছে।

এই প্রদর্শনীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশ অতীতের 888sport live chatীদের কাজ। সেই কাজ সংগৃহীত হয়েছে আর্ট কলেজের নিজস্ব সংগ্রহ থেকে যেমন তেমনি একটি সমৃদ্ধ অংশ এসেছে ড. প্রকাশ কেজরিওয়ালের সংগ্রহ থেকে। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সংগ্রহ থেকেও এসেছে দশটি বিখ্যাত ছবি।

পুরনো দিনের ছবি ও ভাস্কর্যের ওপরই আমরা প্রথমে আলোকপাতের চেষ্টা করব। পাশ্চাত্য স্বাভাবিকতাবাদী ও ভারতীয় রীতি দুধরনের ছবিই প্রদর্শনীকে সমৃদ্ধ করেছে। ডবিস্নউ.এইচ. জবিনস, যিনি একসময় আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন, তাঁর একটি গ্রিসীয় আঙ্গিকের মুখাবয়ব রচনা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অন্নদা প্রসাদ বাগচির ছবি খুব বেশি দেখার সুযোগ হয় না আজকাল। তাঁর করা ওড়িষা মন্দির অলংকরণের কিছু অনুলিপির সঙ্গেই সাধারণ মানুষ বেশি পরিচিত। এখানে প্রকাশ কেজরিওয়ালের সংগ্রহ থেকে এসেছে তাঁর একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ছবি। ছবিটি ড্রয়িংধর্মী, স্বাভাবিকতার রীতিতে অাঁকা। ধুতিপরা খালি গায়ে এক যুবক একটি যুবতীকে পুঁথি ধরনের বই থেকে কিছু পড়াচ্ছে। মেয়েটি নিবিষ্টভাবে তাকিয়ে আছে বইটির দিকে। ছবিটি 888sport promo codeশিক্ষারও একটি উলেস্নখযোগ্য দলিল। রণদা প্রসাদ গুপ্তের একটি ছবিও এসেছে কেজরিওয়াল সংগ্রহ থেকে। এটিও ড্রয়িংধর্মী। এক নগ্ন যুবক দাঁড়িয়ে আছে পেছন ফিরে। তার বলিষ্ঠ সুঠাম শরীরের সুদক্ষ ও সুনিপুণ চিত্রায়ণ এই ছবিতে।

এই প্রদর্শনীতে নেই, থাকলে খুব ভালো হত ই.বি. হ্যাভেল ও বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো ছবি। তবে স্বাভাবিকতাবাদী চিত্ররীতির দৃষ্টামত্ম হিসেবে আমরা পাই বসমত্ম গাঙ্গুলির একটি সুদক্ষ মুখাবয়ব-চিত্র, যদুলাল চক্রবর্তী, ইউ.এন. মুখার্জি, বি.এল. মুখার্জি, হরকৃষ্ণ ব্যানার্জি, পূর্ণেন্দু প্রসাদ বোস, নিরাময় রায়, বি.আর. চৌধুরী, সি.ডি. গুপ্ত প্রমুখ 888sport live chatী আজকের দিনে অনেকের কাছেই খুব বেশি পরিচিত নন। কিন্তু প্রতিকৃতি-রচনায় তাঁরা যে কত দক্ষ ছিলেন, এই প্রদর্শনীতে এর নিদর্শন দেখে আমরা সমৃদ্ধ হই। এরকম কত 888sport live chatী যে আজ বি888sport sign up bonusর আড়ালে চলে গেছেন তার কোনো হিসাব নেই। রাধাচরণ বাগচি আজো কিছুটা পরিচিতির আলোয় রয়েছেন। তাঁর অনেক স্বাভাবিকতা-আশ্রিত ছবি রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। নানা বিষয় নিয়ে তিনি এঁকেছেন। কানওয়াল কৃষ্ণের (১৯১০-৯৩) দুটি ছবি দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ পর্যমত্ম। মূলত গ্রাফিক্স 888sport live chatী হিসেবে তিনি সুপরিচিত। প্যারিসে হেটারের আতলিয়ে ১৭-তে ইমত্মালিও পদ্ধতির প্রাকরণিক শিক্ষা নিয়ে সারাজীবন গ্রাফিক্সের চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন। এই প্রদর্শনীতে তাঁর দুটি ছবিতে স্বাভাবিকতা ও ভারতীয় রীতির সুন্দর সমন্বয় দেখতে পাই।

জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবি ছাড়াও রয়েছে গ্রামীণ নিসর্গের একটি ছবি। দুটি মাটির চালাঘরের মাঝখান দিয়ে পথ। সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুটি মানুষ। এই ছবিটিতেও স্বাভাবিকতার সঙ্গে দেশীয় আঙ্গিকের সমন্বয় রয়েছে। কামরম্নল হাসানের একটি নিসর্গ-রচনাতে স্বাভাবিকতার দিকে ঝোঁকই বেশি।

স্বাভাবিকতার পাশাপাশি নব্য-ভারতীয় ধারার ছবিরও অজস্র দৃষ্টামত্ম ছিল এই প্রদর্শনীতে। এর কয়েকটি এসেছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সংগ্রহ থেকে। যেমন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুসাফির’, অসিত হালদারের ‘হিল উওম্যান’, নন্দলাল বসুর ‘স্কাল্পটর’ ও ক্ষেতীন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘হানি বী’। অ্যাকাডেমি সংগ্রহের আর যে-কয়েকটি ছবি ছিল তার মধ্যে রয়েছে হেরম্ব গাঙ্গুলির জলরঙে অাঁকা ‘মাদার গিভিং বার্থ টু হার চাইল্ড’। গোবর্ধন আশের জলরং ‘দ্য লাস্ট রিসোর্সেস’, ইন্দু রক্ষেতের ছাপচিত্র ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড’, রথীন মৈত্রর তেলরং ‘গোল্ডেন ডিয়ার’, অরম্নণ বোসের তেলরং ‘কম্পোজিশন’ ও গণেশ পাইনের টেম্পারা ‘বস্নু হার্ব’। শেষোক্ত ছবিটি সম্পর্কে দু-একটি কথা আমরা এখানেই বলে নিতে পারি। ‘দ্য বস্নু হার্ব’ রচনাটি ১৯৭৪-এর কাজ। চেয়ারের পেছনদিকে একটি নীল লতা বয়ে গেছে। লতাটি বিষাক্ত; যার মধ্যে মৃত্যুর ইঙ্গিত আছে। যুবকটির চেহারায় 888sport live chatীর নিজের আদল চিনে নেওয়া যায় সহজেই। ভারতীয় চিত্ররীতিকে পাশ্চাত্য আধুনিকতাবাদী চিত্ররীতির সঙ্গে সমন্বিত করে আধুনিকতার ভারতীয় আত্মপরিচয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গণেশ পাইনের অবদান অসামান্য। এই ছবিটি এরই একটি দৃষ্টামত্ম।

যামিনী রায় ছিলেন আর্ট স্কুলের একজন কিংবদমিত্ম 888sport live chatী। স্বাভাবিকতার আঙ্গিকেই তিনি এখানে শিখেছিলেন। তারপর নিজের উদ্ভাবিত লৌকিক-ঐতিহ্য-সম্পৃক্ত আঙ্গিকে আমাদের নিজস্ব আধুনিকতাকে বিশ্বের সামনে গৌরবান্বিত করে তুলে ধরেছেন। এই আর্ট স্কুলের শ্রেষ্ঠ অবদানের মধ্যে গণ্য হন নন্দলাল বসু, ক্ষেতীন্দ্রনাথ মজুমদারের মতো যামিনী রায়ও।

নব্য-ভারতীয় ঘরানার উজ্জ্বল 888sport live chatীদের মধ্যে এই প্রদর্শনীতে অনেকেই ছিলেন। হেরম্ব গাঙ্গুলি তত পরিচিত নন। তাঁর নদী ও নৌকার নিসর্গের ছবিটি অসামান্য। আনওয়ারম্নল হক এঁকেছেন সাধারণ জীবনের দারিদ্রে্যর ছবি। এস. ঘোষ নামে এক 888sport live chatীর নদীর ঘাটে অজস্র মানুষের সণানের দৃশ্যটিও উলেস্নখযোগ্য। মানিকলাল ব্যানার্জির কয়েকটি ছবিতে সুনিপুণ আঙ্গিকে ভারতীয় রীতির প্রচলিত চিত্রকল্প পাই। পরবর্তীকালে তাঁর রেশমি কাপড়ের ওপর জলরঙের ছবিতে এই রীতিকে তিনি অতিক্রম করে গিয়েছিলেন। জি. কানুনগো, সমর ঘোষ, অবনীরঞ্জন দেব, শামিত্মরঞ্জন ব্যানার্জি, কালীকিঙ্কর ঘোষ দসিত্মদার, মৃণাল কামিত্ম দাস, স্বপ্না সেন, স্ত্ততি লাহা, নীলিমা দত্ত, গৌতম সেনগুপ্ত প্রমুখ 888sport live chatীর ছবিতে ভারতীয় রীতির নানা দিক উদ্ভাসিত হয়েছে। দেশীয় চিত্ররীতি নিয়ে নিবিড় চর্চায় এই আর্ট কলেজের অবদানের খানিকটা আমরা পাই এই প্রদর্শনীতে। সবটা নয়।

আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনো সাম্প্রতিক 888sport live chatীদের অজস্র কাজ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। কিন্তু সেগুলো একটু অগোছালো, সঠিক পরিকল্পিত নয়। আরো একটু সুচিমিত্মত কিউবেশনের প্রয়োজন ছিল। বিগত কয়েক বছর যাবৎ আর্ট কলেজে সণাতকোত্তর শিক্ষা শুরম্ন হয়েছে। বিশ্বায়ন ও উত্তর-আধুনিকতাকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করছেন তরম্নণ শিক্ষার্থীরা। 888sport app 888sport live chatশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খানিকটা প্রতিযোগিতার জায়গাও তৈরি হয়েছে। এই প্রদর্শনী এই প্রতিষ্ঠানের অতীত গৌরবকে চিনতে সাহায্য করে। এখন প্রয়োজন সরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে এই প্রতিষ্ঠান আরো সঞ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে।