কলকাতার 888sport appই প্রেমিক

হাসনাত সাহেব। এই নামেই ডাকতাম আবুল হাসনাতকে। জনান্তিকে আমি তাঁকে আমার ‘সম্পাদক’ হিসেবে পরিচয় দিতাম। তিনি আমায় ‘বন্ধু’ বলে পরিচয় দিতেন। ইমেইলে তাঁকে সম্ভাষণ করতাম ‘শ্রদ্ধেয় হাসনাত সাহেব’ বলে। তিনি সম্ভাষণ করতেন ‘বন্ধুবরেষু’, পরের দিকে ‘সুজনেষু’। আমার সঙ্গে তাঁর এক প্রজন্মের ব্যবধান। আমি জন্মাবধি মোটের ওপর কলকাতার বাসিন্দা। তিনি 888sport appর। তৎ সত্ত্বেও আমাদের সে-বন্ধুতা দিনে দিনে দৃঢ় হয়েছে। দেখাশোনা বেড়েছে। ইমেইল, ইন্টারন্যাশনাল কল, ভাইবার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ কলের দৌলতে তা পাকাপোক্ত হয়েছে। যতটা হলে পরস্পরের আস্থাভাজন হওয়া যায় ততটা তো বটেই। 888sport appকে আপন করে নেবার জন্য আমার কাঙালপনাকে তিনি উসকে দিয়েছেন। কলকাতার কাছে পৌঁছনোর জন্য তাঁর আকুলিবিকুলি নিয়ে আমি খুনসুটি করেছি। বন্ধুতায় যা হয়েই থাকে।

অথচ হাসনাত সাহেবের সঙ্গে আমার অনেক দিনের আলাপ নয়। সাড়ে পাঁচ বছরের। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ দুপুরবেলায় পিতৃপ্রতিম রামেন্দু মজুমদারের সৌজন্যে।

সেবারই প্রথম 888sport appsে এসেছি। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের 888sport apps কেন্দ্রের উদ্যোগে দ্বিতীয় 888sport app আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে যোগ দিতে। সফরের তিনদিনের মাথায় সকাল-সকাল রামেন্দুদা এসে ‘হোটেল ৭১’ থেকে আমাকে গাড়িতে তুলে নিলেন। ধানমণ্ডিতে মজুমদার দম্পতির বাসায় খানিক সময় কাটিয়ে যাওয়া হলো বনানীতে এক্সপ্রেশনসের দফতরে। ঝটিতি সেখানকার জরিপ সেরে রামেন্দুদা আমাকে নিয়ে গেলেন একজনের সঙ্গে আলাপ করাতে। কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি তার কোনো ধারণাই আমার ছিল না। একটা চোখজুড়োনো বাড়ির সামনে এসে থেমেছিল আমাদের গাড়ি। কী হয়েছিল সেদিন, কী মনে হয়েছিল, কী কথা উঠেছিল তার একটা বয়ান আমার দিনলিপিতে রয়ে গেছে।

পরের গন্তব্য খিলখেত। নিউ এয়ারপোর্ট রোডের ওপর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সদর দফতর বেঙ্গল সেন্টার। 888sport appsের প্রমুখ 888sport live footballপত্র ‘কালি ও কলমে’র সম্পাদক আবুল হাসনাতের সঙ্গে আমার আলাপ হবে। বনানী থেকে বেঙ্গল সেন্টারে আসতে গাড়িতে মিনিট দশেক লাগল। লম্বাটে এক ঝিলের ধারে বাড়ি। দোতলার ঝিলের দিকে মুখ করে হাসনাত সাহেবের অফিস। সুভদ্র মানুষ। ছদ্ম গাম্ভীর্যের খোলসে 888sport app পড়ে নেই। কলকাতা আর শম্ভু মিত্র নিয়ে অগাধ আগ্রহ। বইমেলায় গেছিলেন। বাক্স ভরে বই এনেছেন। বাবাকে নিয়ে শাঁওলী মিত্রের নতুন বই কিনে ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছেন। রামেন্দুদা বলছিলেন, 888sport cricket BPL rateের বইমেলার শেষ দিন শম্ভু মিত্র স্মারক বক্তৃতা দিয়েছেন হাসনাত সাহেব। ২০ মার্চ আমাদের নাট্যোৎসবে সারাদিনমান একটা সেমিনার হবে। সেখানে ‘888sport appয় শম্ভু মিত্র’ নিয়ে একটা মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন দেবার কথা আমার। রামেন্দুদাই আমার হয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন। হাসনাত সাহেব সাগ্রহে গ্রহণ করেছেন। বেরোনোর আগে আমাদের ‘কালি ও কলম’ দফতর ঘুরিয়ে দেখালেন হাসনাত সাহেব। নিয়ম করে বাংলা মাসের প্রথম দিনে ‘কালি ও কলম’ বেরোয়। আজ সকালেই চৈত্র 888sport free bet বেরিয়েছে। শশব্যস্ততা নেই।

দুই বাংলার লেখকদের সমান মর্যাদা দিচ্ছেন, অথচ কলকাতায় কেন ‘কালি ও কলম’ পাওয়া যাচ্ছে না? জানা গেল কলকাতায় কাগজ পাঠানো-বিক্রি করা-টাকা তোলা সবই সাদা হাতি পোষার সামিল। একেবারে পড়তা হচ্ছে না। তার চাইতে কলকাতা থেকে কাগজ ছাপিয়ে বিকিকিনির বন্দোবস্ত হলে পোষায়। সেই চেষ্টাই চলছে, বললেন হাসনাত সাহেব।

কোনো 888sport sign up bonusই অক্ষয় নয়, অবিকল নয়। তবু প্রথম দর্শনে হাসনাত সাহেবকে কেমন লেগেছিল তা এভাবেই ধরা আছে।

কালি ও কলমের পাঠকমাত্রেই জানেন যে কলকাতা থেকে কালি ও কলম বেরোনোর তোড়জোড় সদর্থক হয়েছিল। সে-বছরই পুজোর মরসুমে এক চমকপ্রদ আবির্ভাব ঘটেছিল কালি ও কলমের কলকাতা সংস্করণের। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিবেশে দাগ কাটতে সফল হয়েছিল সেই সংস্করণ। সেই সুবাদে কলকাতায় আনাগোনা আরো বেড়েছিল হাসনাত সাহেবের। আড়াই বছরের মাথায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সেই কলকাতা সংস্করণ। কেন? তার একটা ব্যাখ্যা হাসনাত সাহেব আমায় দিয়েছিলেন। এক সহমর্মীর কাছে এক ব্যথাতুর যেভাবে নিজেকে জাহির করেন, সেইভাবে। সে কথা আজ থাক।

প্রথম আলাপের পাঁচদিনের মাথায় 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমিতে ‘888sport appয় শম্ভু মিত্র : দুই অধ্যায়’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা। সেদিন শুক্রবার ছিল। জিরোবার অমন সুযোগ ছেড়ে দুপুরবেলায় 888sport live chatকলার সেমিনার কক্ষে বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন হাসনাত সাহেব। ঘণ্টাখানেকের বক্তৃতা ও তৎপরবর্তী আলোচনার শেষে কথা হলো। জানতে চাইলেন ওই বক্তৃতার কোনো লিখিত  রূপ আমার হাতে আছে কি না। ছিল না। মাল্টিমিডিয়া স্লাইড প্রেজেন্টেশনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বলেছিলাম সেদিন। হাসনাত সাহেবের অনুজ্ঞা এসেছিল যত দ্রুত সম্ভব ওই বক্তৃতার লিখিত রূপ তৈরি করে দিতে হবে। অনুজ্ঞা শিরোধার্য করেছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকে তিনি আমার সম্পাদক।

দু-দশকের লেখালেখির জীবনে অনেক সম্পাদকের কাছে এসেছি। হাসনাত সাহেবের সংস্পর্শে এসেছিলাম।  আক্ষরিক অর্থে। সম্পাদকীয় বন্ধুতার খাতিরে ধানমণ্ডিতে তাঁর ও মিনু ভাবির সাজানো সংসারে আতিথেয়তা পেয়েছি। দু-বছর আগে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে আমার লেখা একটা বই (বঙ্গনাট্যের সন্ধানে, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, 888sport app, ২০১৮ খ্রি.) প্রকাশ করেছিলেন হাসনাত সাহেব। লালমাটিয়াতে ‘বেঙ্গল বই’য়ের দোকানে এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ উপলক্ষে দুদিনের ঝটিকা সফরে 888sport appয় উড়ে এসেছিলাম। তাঁর মনে হয়েছিল, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অতিথিশালায় নয়, তাঁদের বইয়ে ছবিতে সয়লাব ঘরে কয়েকটা দিন কাটালে আমার ভালো লাগবে। তাই হয়েছিল। বলা ভালো বর্তে গেছিলাম। এক বাড়ি বই আর ছবি নিয়ে কীভাবে এক শোভন অথচ সংবেদনশীল জীবনযাপন করা যায় তার শিক্ষা পেয়েছিলাম ওই সফরে। সব ঘরে থিকথিক করছে বই। শোবার ঘরের আট আনা দখল করে নিয়েছে। অথচ কোনোকিছু অগোছালো নয়। দিব্যি পরিপাটি। ছবির কথা আর কী বলি! উঠতে পরিতোষ সেন, বসতে কাইয়ুম চৌধুরী, বাঁদিকে ঘাড় ঘোরালে এস এম সুলতান, ডানদিকে ঘোরালে যোগেন চৌধুরী, বিছানার এক পাশে জয়নুল আবেদিন, আরেক পাশে সুহাস রায়! একটাও রিপ্রোডাকশন নয়, সব ওরিজিন্যাল! রামেন্দুদা মজা করে বলতেন, ‘এটা হাসনাতের সামার কালেকশন। উইন্টার কালেকশনটা পরে আসবে! এই স্তুতি মাথায় করে রাখতেন হাসনাত সাহেব।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক যত গাঢ় হয়েছে তত বুঝেছি যে, কলকাতার জন্য এক নাছোড়বান্দা প্রেম আছে হাসনাত সাহেবের মনে। কলকাতার প্রেমিক ছিলেন তিনি। খাঁটি প্রেমিক। যে খালি দিতেই জানে, নিতে নয় সেই প্রেমিক।

এই প্রেমপর্বের সূচনাবিন্দু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ কয়েক মাস কলকাতাই তাঁর ডেরা ছিল। একাত্তরের যে কলকাতাকে কাছ থেকে চিনেছিলেন সেই কলকাতাকে বড়ো ভালোবেসেছিলেন তিনি। সেই কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার শ্রমিকনেতা কমল গাঙ্গুলির বাড়িতে মাথা গুঁজেছিলেন তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। কমল আর তাঁর গুণবতী স্ত্রী ঊষার হেফাজতে ছিলেন বেশ কয়েক মাস। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মাথায় পেতে পার্ক সার্কাস মহল্লায় কংগ্রেস এগজিবিশন রোড আর দিলখুশা স্ট্রিট সংলগ্ন পার্টি অফিসে সংগঠনের কাজ করেছেন। যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন কলকাতাকে চেনার ততটুকু সদ্ব্যবহার করেছেন। কলকাতার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহকে শুষে নিয়েছেন।

বিশেষ করে ভালোবেসেছেন কলকাতার থিয়েটারকে। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে সে বছরই গ্রুপ থিয়েটারের পালা জমতে শুরু করেছে। শম্ভু মিত্রের নির্দেশনায় বাদল সরকারের পাগলা ঘোড়া প্রযোজনা করছে বহুরূপী। ওদিকে বাদল সরকারের মন সরে গেছে প্রসেনিয়াম থিয়েটার থেকে। পথেঘাটেমাঠেবাটে থার্ড থিয়েটারের মহড়া দিচ্ছেন তিনি। গ্রুপ থিয়েটারের আটপৌরে সংসার থেকে বেরিয়ে হাতিবাগানের পাবলিক থিয়েটারের পাড়ায় নিজেদের কব্জির জোর পরখ করতে এসেছে নান্দীকার। সাড়া ফেলছে তিন পয়সার পালা করে। আর বছরের মাঝামাঝি টিনের তলোয়ার প্রযোজনা করে সাড়া ফেলে দিচ্ছেন উৎপল দত্তের দল পিপলস লিটল থিয়েটার। বামপন্থী সাংস্কৃতিক চেতনায় দৃপ্ত এই কলকাতাকে মনপ্রাণ সঁপে দিয়েছিলেন যুবক আবুল হাসনাত। এই তপ্ত কটাহে নিজেকে আগাগোড়া সেঁকেছিলেন। সেই সব দিনের রোমন্থনে বরাবরই অক্লান্ত দেখেছি তাঁকে। মানুষমাত্রেই যেভাবে যৌবনকে উদযাপন করে, সেভাবে নয়। সেই রোমন্থনে মননঋদ্ধ ঔদার্যে পরিপূর্ণ এক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের জন্য ব্যাকুলতা থাকত। যত দিন গিয়েছে 888sport app আর কলকাতা তাঁর কাছে পরিপূরক হয়ে উঠেছে। এই কলকাতার অস্থিমজ্জায় একাত্তরের অনুবর্তন দেখতে চাইতেন তিনি। পেতেনও।

ইদানীং হাসনাত সাহেব কলকাতায় এলে উঠতেন বৈষ্ণবঘাটায় এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে। আমাদের যাদবপুরের বাড়ির দোর তাঁর জন্য খোলাই ছিল। সে-বাড়িতে তাঁর খাতিরযত্ন কিছু কম হবে না এ তাঁর আন্দাজ করার কথা। তবু নিভৃতচারী তিনি ওই বিজন ঘরের কোণকেই প্রার্থিত মনে করতেন। বছর দুয়েক আগে, ২০১৮-এর আগস্ট মাসের চতুর্থ সপ্তাহে এলেন সস্ত্রীক। উঠলেন ঢাকুরিয়াতে। স্টেশনের কাছে আরেক বন্ধুর ফাঁকা বাড়িতে। কলকাতার সঙ্গে তাঁর সখ্য কত নিবিড় হলে একের পর এক বাড়ির নিভৃত আহ্বানে সাড়া দেওয়া যায় সে-কথা ভেবে আজ শিহরিত হচ্ছি।

একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। ২৫ আগস্ট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ। হাসনাত সাহেব কলকাতায় এসেছেন। ভাবিও এসেছেন। ঘটনাচক্রে অধ্যাপক আবদুস সেলিমও তখন কলকাতায়। তিনজনকেই লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করলাম। হিন্দুস্তান পার্কে ইন্ডথালিয়া রেস্তোরাঁতে। হাত-পা ছড়িয়ে বসা হলো। হালকা চাইনিজ লাঞ্চ অর্ডার হলো। আরো কেউ কেউ লাঞ্চে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে তিন মাঝবয়সী 888sport promo codeও আছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে 888sport free bet login নিয়ে আলোচনায় মেতে আছেন। বাংলা ইংরিজি নানান রকমের নানান ধরনের বই। কে কী পড়ছেন না-পড়ছেন তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা। একটা সময় বুঝতে পারলাম হাসনাত সাহেবের মন আর খাওয়াতে নেই, পাশের টেবলের আলোচনাতে চলে গেছে। রসিক শ্রোতার মতো তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেই নাতিব্যক্তিগত আলাপন শুনছেন তিনি। আমাদের চোখের ইশারাতে তিনি বুঝছেন যে আমরা তাঁর মনোভাব ঠিক বুঝছি। ভ্রুক্ষেপ করছেন না এমন নয়। মিটিমিটি হাসছেন। তা বলে কান সরাচ্ছেন না।

সেদিন দুপুর তিনটেয় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে চেতনার নতুন নাটক ডন তাকে ভালো লাগের মঞ্চায়ন ছিল। মিগেল দু সেরভান্তিসের দন কিহোতে অনুসরণে নাটক। ওঁদের দেখাব বলে আগে থেকেই টিকিটের বন্দোবস্ত করা ছিল। দোতলার ব্যালকনিতে আয়েস করে পাশাপাশি বসলাম। অসাধারণ প্রযোজনা। যেমন নাটক নিয়ে কলকাতা আজো বুক ঠুকে দেমাক দেখাতে পারে, তেমন নাটক। তিন অতিথিই মোহিত হয়ে গেলেন। হাসনাত সাহেবকে অতিশয় উৎফুল্ল দেখাল। 888sport appsের মঞ্চনাটককে নিয়ে আমার যাবতীয় উচ্ছ্বাসকে আশকারা দিলেও তাঁর কাছে কলকাতার প্রসেনিয়াম থিয়েটারের দর অনেক উঁচু তারে বাঁধা ছিল। সেই মান বজায় আছে ভেবে তিনি আহ্লাদে আটখানা হয়েছিলেন সেদিন। বিধি ও ব্যতিক্রমের পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতে আমার মন চায়নি সেদিন।

ফেরার পথে তাঁদের নিয়ে গেলাম শিশির মঞ্চে। সেখানে প্রতীচী ট্রাস্টের অনুষ্ঠান। উপস্থিত আছেন অমর্ত্য সেন। অমর্ত্য নাকি বক্তৃতাও দেবেন। পাবলিক লেকচার। একটু দেরিতে ঢুকেছি আমরা। অডিটোরিয়াম ভিড়ে ঠাসা। বসা তো দূরস্থান, দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। তারই মধ্যে কোনোরকমে গা ঘেঁষাঘেঁষি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কলকাতার বুধমণ্ডলের উত্তাপ নিলেন তিনজন। একটা সময় প্রবীণ নাগরিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুয়েকজন আসন ছেড়ে দিলেন। বসার উপায় হলো। না হলেও আপত্তি করতেন না হাসনাত সাহেব। এতই আপ্লুত ছিলেন তিনি। অমর্ত্য ঠিক বক্তৃতা দেননি সেদিন। শ্রোতাদের জিজ্ঞাসার চাঁছাছোলা জবাব দিয়েছিলেন। তার অনুপুঙ্খে ভারত জুড়ে হিন্দুত্ববাদী মেরুকরণের রাজনীতির তীব্র সমালোচনা ছিল। প্রেক্ষাগৃহ সচকিত। হাসনাত সাহেব বিগলিত।

তাঁর জীবনে নাসিমুন আরা হকের ভূমিকা কেমন, তার খানিক আঁচ পেয়েছিলাম সেদিন। এমন সমঝদার দাম্পত্য অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে।

কলকাতার এই বুধমণ্ডল তাঁকে তানিত করে রাখত। নবতিপর অশোক মিত্র যখন আরেক রকম নামের এক পাক্ষিক পত্র সম্পাদনা শুরু করলেন, তখন হাসনাত সাহেবের সঙ্গে আমার আলাপ হয়নি। আলাপের পর আমি আরেক রকমে লিখি জেনে ওঁর চোখমুখ বদলে গেছিল। তাতে অশোক মিত্রের প্রতি একজন সর্বার্থে ঋজু অনমনীয় বামপন্থী চিন্তাবিদের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছিল। অশোক মিত্রের প্রয়াণের পর আরেক রকমের যে-বিশেষ 888sport free bet বেরিয়েছিল সেটা তাঁর খিলক্ষেতের দফতরে হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছিল। ভারি খুশি হয়েছিলেন। পরে অশোক মিত্রকে নিয়ে দীর্ঘ এক মূল্যায়ন করেছিলেন কালি ও কলমের পাতায়। প্রসঙ্গত নবনীতা দেবসেনের প্রয়াণের পর তাঁর মূল্যায়নের কথা মনে পড়ছে। দুটো লেখার জন্য প্রবল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন হাসনাত সাহেব। লিখে তৃপ্তি পেয়েছিলেন। সেই তৃপ্তি তাঁকে ছেড়ে যায়নি।

শম্ভু মিত্রের প্রতি তাঁর অনুরাগ সর্বজনবিদিত। তাঁকে নিয়ে সাম্প্রতিকতম রচনাও হাসনাত সাহেবের নজর এড়ায়নি। বাদল সরকারের নাট্যদর্শন ও নাট্যপ্রয়োগ নিয়েও তাঁকে সবিশেষ আগ্রহী হতে দেখেছি। হাল আমলে বাদলকে নিয়ে দুটো বই প্রকাশ করেছিলেন থীমা। সে দুটো পড়ে, বিশেষ করে বাদলের শেষ জীবনের সঙ্গিনী বিশাখা রায়ের বয়ান পড়ে হাসনাত সাহেবের বিস্ময় জেগেছিল। বারে বারে সে-কথা জানান দিতেন। একইভাবে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের 888sport sign up bonusকথা অজিতেশের শেষ ঠিকানা খুব মনে ধরেছিল হাসনাত সাহেবের। মনে হতো অভিনেতার বাইরের সত্তার চাইতে ভেতরের সত্তা তাঁর কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

পাঠক হিসেবে অনুপম ছিলেন হাসনাত সাহেব। জীবনী বা আত্মজীবনী পাঠে তাঁর বড়ো তৃপ্তি ছিল। বড়ো মানুষের বা বলা ভালো যে প্রিয় মানুষের ব্যক্তিজীবন নিয়ে হাসনাত সাহেবের কৌতূহল যে বেড়েই চলেছে সেটা টের পেতাম মাঝেমধ্যেই। এ-বছরের গোড়া থেকে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোকে নিয়ে তাঁর আগ্রহ বাঁধ ভেঙেছিল। ইদানীং গাব্রিয়েল মিস্ত্রাল আর ওকাম্পোর চিঠিচাপাটি পড়ে এর সূত্রপাত। নতুন করে পড়ছিলেন ওকাম্পোকে নিয়ে নানানজনের পুরোনো লেখা। একটা বই খুঁজছিলেন। কৃষ্ণ কৃপালনির লেখা ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর জীবনী। সে-বই দুষ্প্রাপ্য। দুম করে পাওয়া যায় না। হাসনাত সাহেব অনেক খুঁজেও পাননি। আমি অভয় দিয়েছিলাম। কৃষ্ণ কৃপালনির পরমাত্মীয় সজনী কৃপালনি মুখোপাধ্যায় আমার শিক্ষক ছিলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরিজি বিভাগে। তাঁকে বললে একটা সুরাহা হতে পারে এমন আশ্বাস পেয়ে বড়ো প্রীত হয়েছিলেন হাসনাত সাহেব। কোভিড ১৯-এর খবরদারি কমলে একদিন সজনীদির সঙ্গে যোগাযোগ করে বইটার একটা ফটোকপি করিয়ে রাখব এই অভিপ্রায় ছিল। বারেবারে মনে করিয়ে দিতেন কথাটা।

সে সুযোগ আর এলো না। এ-আক্ষেপ রইল।

কোভিড ১৯-এর খেল শুরু হবার পর কি মুষড়ে পড়েছিলেন হাসনাত সাহেব? তা পড়েছিলেন বইকি! কালি ও কলমের নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশে ছেদ পড়ল। তাছাড়া কালি ও কলমের দফতর তা সে যেখানেই হোক না কেন তাঁর বড়ো আপনার ছিল। গত দু-বছরের মধ্যে দুবার দফতর বদল হলেও তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যবোধের তেমন হেরফের হয়নি। খিলক্ষেতের ওই সুরম্য পরিবেশ পাননি তো কী হয়েছে, ধানমণ্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে খানিকটা হেঁটেই কালি ও কলমের আপিসে চলে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটা সুদে আসলে উশুল করেছিলেন। ইচ্ছে করলে ছুটির দিনে, বিশেষ করে শনিবারে অফিসে চলে গিয়ে একা একা লেখাপড়া করার মধ্যে তৃপ্তির স্বাদ পেতেন। কোভিড ১৯ জুজু তাঁকে আর সে-সুযোগ দেয়নি। লকডাউনের সময় আপিসে কবে আবার যাবেন বলে হাপিত্যেশ করেছেন। সুরাহা হয়নি। তবে কয়েক মাস আগে যখন ফের ঠিকানা বদলাল কালি ও কলম দফতর, উঠে এলো তাঁর প্রাণের আরেক দোসর ছায়ানটের দোরগোড়ায়, তখন খুবই উজ্জীবিত শুনিয়েছিল তাঁকে। লালমাটিয়ায় ‘বেঙ্গল বই’য়ের ঠেক উঠে যাবার দুঃখ ভুলতে বেশি দেরি হয়নি তাঁর।

এই ক-মাসে তাঁর মন খারাপের কারণ ঘটেছিল অনেক। প্রিয়জনের বিয়োগসংক্রান্ত বিষাদ ঘিরে ফেলছিল তাঁকে। কথায় কথায় টের পাচ্ছিলাম যে লকডাউন চলাকালীন একের পর মৃত্যুসংবাদ যেন টলিয়ে দিচ্ছে হাসনাত সাহেবকে। এঁদের অনেকেই তাঁর আত্মার আত্মীয়। এঁদের মধ্যে একমাত্র অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মৃত্যুশোক তাঁকে বহন করতে হলো না। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেই দেবেশ রায় চলে গেলেন। অরুণ সেন চলে গেলেন। একে একে। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের উঁচু দরের কারিগর ছিলেন দুজনই। দুজনের সঙ্গেই অনেক দিনের বন্ধুতা ছিল হাসনাত সাহেবের। পারিবারিক সন্নিধি সেই বন্ধুতাকে আরো নিবিড় করেছিল। কলকাতায় এলে যাঁদের কাছে যাবার জন্য ছটফট করতেন হাসনাত সাহেব, তাঁদের মধ্যে দেবেশ-অরুণ দুজনই ছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ায় চেনা কলকাতার চেহারা একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল তাঁর কাছে। কতক অনিবার্যভাবে কালি ও কলমের পাতা 888sport app download for androidলেখভারাতুর হয়ে উঠল। তাঁর গলাতেও নিঃসঙ্গতার বোধ ফুটে উঠল উত্তরোত্তর।

তবে মন খারাপের সবচেয়ে বড়ো কারণ ছিল ১৪ মে দেবেশ রায়ের প্রয়াণের কয়েক ঘণ্টা আগে আনিসুজ্জামানের চলে যাওয়া। খবর পাওয়া মাত্র কথা হলো। হাসনাত সাহেব মুহ্যমান। কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে তো বটেই, আনিস সাহেবের সঙ্গে তাঁর দৈনন্দিন যোগাযোগ ছিল। হরদম দেখাশোনা না হলেও টেলিফোনে কথা চালাচালি হতো হরবখত। পরামর্শদাতা হিসেবে আনিস সাহেবকে প্রবল মান্যতা দিতেন তিনি। মাথার ওপরকার ছাদ সরে গেলে যেমন হন, সেদিন কতক তেমন শুনিয়েছিল তাঁকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কদিন বাদেই তাঁর ফোন এলো। কর্তব্য স্থির করে ফেলেছেন। আনিস সাহেবকে নিয়ে কালি ও কলমের বিশেষ 888sport free betর পরিকল্পনা করেছেন। যারপরনাই উত্তেজিত হাসনাত সাহেব। কারা লিখছেন, কী লিখছেন তার খানিক ফিরিস্তি পাওয়া গেল। আমাকেও লিখতে বললেন। দুয়েক দিনের মধ্যেই জানালাম কী নিয়ে লিখব। এক কথায় সম্মতি দিলেন। ওই বিষয় প্রসঙ্গে আরো কী পড়লে লেখাটা আরো উপাদেয় হবে জানতে চাইলে অকাতরে সহযোগিতা করলেন। দু-দিন বাদে আরো দুয়েকটা লেখার নাম মনে পড়ায় সেটাও জানান দিলেন। সম্পাদক-লেখকের  মিথোজীবিতা যে একটা লেখাকে কত মজবুত করতে পারে এই উপলব্ধি আরো গভীর হয়েছিল সেদিন। লেখার জন্য তাগাদা দেবার এক মার্জিত ভঙ্গি ছিল তাঁর সহজাত। ‘আপনার লেখাটা হয়ে গেছে? এইটুকুই। হয়তো বললাম, ‘এই হয়ে এসেছে। একটা খসড়া তৈরি করে ফেলে রেখেছি। ঘষেমেজে পাঠিয়ে দেব কদিন বাদে। হাতে সময় আছে তো? সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলতেন, ‘হয়ে গেলে পাঠিয়ে দিন। পেজ মেকআপে সময় লাগবে। বোঝেনই তো সব! প্রুফ পাঠিয়ে দেব। কিছু জুড়বার থাকলে ওখানেই জুড়ে দেবেন।’ একথার পর আর দেরি করা যেত না। লকডাউন উঠতে না উঠতে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহেই কালি ও কলমের ‘আনিসুজ্জামান 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি’ বেরিয়ে গেল। হাতে পেতেই শামসুজ্জামান খান তার মলাট সমেত কয়েকটা ছবি আপলোড করে দিলেন ফেসবুকে। শাবাশি সমেত। জামান সাহেবের পোস্ট দেখে তাক লেগে গেল। খানিক বাদেই দেখি রামেন্দুদা হোয়াটসঅ্যাপে সূচিসহ কয়েকটা পাতার ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন। আরো তাজ্জব হলাম। সোজা হাসনাত সাহেবকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করলাম, ‘করেচেন কী মশাই? চেহারাছবি দেখেই তো প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। ভেতরে না জানি কত যকের ধন জমানো আছে! তারিফ শুনে বড়ো প্রসন্ন শুনিয়েছিল তাঁকে। হা হা করে হেসেছিলেন খানিক। একটু যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়েছিলেন। ‘লোকজন তো ভালোই বলছে’, বলার মধ্যে পরম সন্তোষের এক অনুভব জড়ানো ছিল। কালি ও কলমের ওই 888sport free betকে আরো মার্জনা করে গ্রন্থাকারে বের করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। আমাকে বলেছিলেন যে চাইলে আরো বিস্তৃত করতে পারি আমার মূল্যায়ন। সম্পাদকের কাছে এত স্বাধীনতা আর এত প্রশ্রয় যে কোনো লেখকের আকাঙ্ক্ষিত। তা পূর্ণ মাত্রায় পেয়েছি।

আজ মনে করে দেখছি যে কালি ও কলম আর 888sport live chat ও 888sport live chatী মিলিয়ে দু-ডজন লেখা এই সাড়ে পাঁচ বছরে তিনি আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। কোনোটাই খুচরো লেখা নয়। 888sport live। নিদেনপক্ষে চার পাতার। একটা তো ১১ পাতার! এর মধ্যে কয়েকটা বার্ষিক 888sport free betর লেখাও আছে। আগামী বার্ষিক 888sport free betর জন্য লেখা চেয়ে রেখেছিলেন। যখনই কোনো উল্লেখযোগ্য নাটক দেখেছি এমন নাটক যা কালি ও কলমের পাতায় বিশদ আলোচনার দাবি রাখে তখনই তাঁকে জানিয়েছি। কোনোদিন জিজ্ঞেস করেননি কাদের নাটক, কীসের নাটক। বলেছেন, ‘পাঠিয়ে দিন।’ তৎক্ষণাৎ মনে মনে ছকে ফেলতেন কোন 888sport free betয় বের করবেন সেই সম্ভাব্য রচনা। বলেও দিতেন, ‘পরশুর মধ্যে পাঠাতে পারলে নেক্সট ইস্যুতেই দেব। নইলে পরেরটায় যাবে। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আপনি ধীরেসুস্থে লিখুন।’ লিখেছি। পাঠিয়েছি। কোনোদিন কোনো লেখার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা বলেননি। কোনো মতকে নাকচ করেননি। উচ্ছ্বাস প্রকাশ তাঁর ধাতে ছিল না। ইতি বা নেতি কোনোটাই নয়। প্রশ্রয় টের পেতাম। তাতেই যে দায়িত্ববোধ অনুভব করেছি তা চরম উদ্দীপক। নাসিরুদ্দিন শাহর অনুরাগী ছিলেন হাসনাত সাহেব। নাসিরুদ্দিনের আত্মজীবনী দেন ওয়ান ডে বেরোনোর পর উনি চেয়েছিলেন আমি একটা বুক রিভিউ লিখি। দরাজ হাতে। ‘শব্দ888sport free bet নিয়ে ভাবতে হবে না।’ লেখাটা কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। শেষমেশ পাঠাতে আমার বছরখানেক লেগেছিল। কোনো উষ্মাপ্রকাশ করলেন না। ‘যাক ভালোই হল’ বলে প্রতিক্রিয়া শেষ।

এমনিতে অল্প কথায় গল্প শেষ হতো তাঁর। বিশেষ করে 888sport appয় থাকলে। আবার যখন নিউইয়র্কে কন্যা দিঠির কাছে যেতেন, তখন সবিস্তারে কথা বলার ইচ্ছে হতো তাঁর। হঠাৎ হয়তো ফোন এলো ‘আমি হাসনাত বলছি। … ভালো আছেন? … না, এমনিই ফোন করলাম। অনেকদিন কথা হয় না, তাই।’ কথা খানিক এগোনোর পর অবধারিতভাবে সেই কৌতূহল তাঁর ভেতর মাথা চাড়া দিত। ‘নতুন বই কী বেরোল? বলতাম। সাধারণত জবাব পেতাম, ‘হ্যাঁ, ওটা আনতে দিয়েছি।’ কদাচিৎ তাঁর বিস্ময়ের উদ্রেক হতো। কারণ কলকাতা থেকে সব আগ্রহব্যঞ্জক প্রকাশনার খাস খবর তাঁর নখদর্পণে থাকত।

তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হলো ৬ অক্টোবর সন্ধেবেলায়। আগের দিনই শঙ্খ ঘোষের কাছে গেছিলাম। আমার হাল আমলের নাট্য-সমালোচনার সংকলন নাটকে কোনো বিরতি নেই (মৌহারি, কলকাতা, ২০২০ খ্রি.) শঙ্খবাবুকে উৎসর্গ করা। সেটা শঙ্খবাবুর হাতে তুলে দিতে গিয়ে কিছু কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। দুই বাংলার 888sport live football ও সংস্কৃতিকে এক সুতোয় গাঁথার ক্ষেত্রে আনিসুজ্জামান, দেবেশ রায়, অরুণ সেনের চলে যাওয়াটা যে বড়ো বিপর্যয় এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ঘটনাচক্রে কালি ও কলমের কথা উঠল। কালি ও কলমের কলকাতা সংস্করণের পরম শুভার্থী ছিলেন শঙ্খবাবু। এই সংস্করণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘আমাদের খুব বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল’ বলেছিলেন শঙ্খবাবু। কালি ও কলমের ‘আনিসুজ্জামান 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি’ যে মহাসমারোহে বেরিয়েছে সে-কথা জেনে তৃপ্ত হয়েছিলেন। সেই সংলাপ বৃত্তান্ত হাসনাত সাহেবের কানে তুলে দেওয়াতে কী খুশিই না হয়েছিলেন! কলকাতার যে সব বাসিন্দার কুশলকামনা তাঁর নিশ্বাসপ্রশ্বাসের গাঁথা ছিল, তাঁদের সর্বাগ্রে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ।

এর দুয়েকদিন আগে কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অবস্থা উদ্বেগজনক। খবর পেয়েছিলেন হাসনাত সাহেব। এ নিয়ে দু-চার কথা হলো। আগের বছর ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক 888sport app download bd প্রদান অনুষ্ঠানে’র প্রধান অতিথি করে সৌমিত্রকে 888sport appয় নিয়ে যেতে সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। আমার মারফত সৌমিত্রর সঙ্গে তাঁর কথাবার্তাও হয়েছিল। সৌমিত্র কিছুতেই সময় বের করতে পারেননি বলে সে-যাত্রায় তাঁর 888sport app যাওয়া হয়নি। ফলপ্রসূ না হলেও সজ্জন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সুভদ্র আবুল হাসনাতের সাক্ষাৎকার দুজনের মনেই দাগ কেটেছিল। সেই সুখ888sport sign up bonus ফের মনে এলো হাসনাত সাহেবের। কখনো যে এমন আয়োজনের উপায় হবে না সে-আশংকাও আমাদের মনে জেগেছিল। কিন্তু সৌমিত্র চলে যাবার দু-হপ্তা আগে যে তাঁর পরমায়ুও ফুরিয়ে যাবে এ আমাদের দূরতম আশংকাতেও ঠাঁই পায়নি।

যে-আমলে বাংলা ভাষায় 888sport live football পত্রিকা বের করা এক অসম্ভব ব্যাপার, যে-আমলে 888sport live footballের সঙ্গে হরেকরকমবা ফোড়ন জুগিয়ে টিকে থাকাটাই দস্তুর, সে-আমলে প্রকাশকের সানুগ্রহ সমর্থনকে পাথেয় করে দেড় দশক ধরে বাংলা 888sport live football ও সংস্কৃতির সেবা করে যাওয়া মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। র‌্যাডক্লিফ লাইনকে মুছে দিয়ে, দেশমহাদেশের চৌহদ্দি উড়িয়ে দিয়ে সমকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি 888sport live footballিক ও সমালোচকদের একজোট করে তাঁদের লেখা সাজিয়েগুছিয়ে যত্নআত্তি করে ছেপে বের করার জন্য এক আশ্চর্য মন লাগে। সেই মন বড়ো দুর্লভ ইদানীং। আবুল হাসনাতের মধ্যে এই গুণপনা যেন আপনাআপনিই চলে এসেছিল। 888sport app ও কলকাতাকে একই রকম মমতায় দেখাশোনা করার ক্ষমতা তাঁর ছিল। পরিপার্শ্বের বিভাজনস্পৃহা যেন তাঁকে স্পর্শই করতে পারেনি। প্রকৃত প্রস্তাবে আবুল হাসনাতের প্রয়াণের ফলে এক নিখাদ কলকাতা প্রেমিকের তিরোভাব ঘটল। যে-প্রেমের বীজতলি রচেছে দ্রোহকাল, যে প্রেমের বুকে আলোর ফুলকির মতো জেগে আছে যুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus, যে প্রেমের টানে উথালপাথাল বাঙালি সংস্কৃতির অবিভাজ্যতা, যার সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি ছিল কালি ও কলমের পাতা কিংবা ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে সিলেটে বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের সমন্বয়ী মঞ্চ সেই প্রেম দিনে দিনে নিঃসঙ্গ হচ্ছে আজকাল। অচিরেই অতল বিরহে ডুবে যাবে বলে।