অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
খেলাচ্ছলেঁ
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্তর দশকের শুরুর দিকেও প্রত্ন ভারততত্ত্বের দাপট ছিল অব্যাহত। কে না জানে নাৎসি ফুরারের ব্যক্তিগত অভীপ্সায় গোটা জার্মানিজুড়ে তেরোটি – বলা বাহুল্য একটি অমাঙ্গলিক 888sport free bet – চেয়ারে অধিষ্ঠিত ছিলেন ইন্ডোলজির বাঘা-বাঘা দিগ্গজ পন্ডিত যাঁরা পরস্পরের সঙ্গে সংস্কৃতেই সংলাপ চালাতেন।
এই ভয়াবহ আবহ এক ঝটকায় সরিয়ে দেওয়ার মন্দ্রণায় যখন আমরা দুই বন্ধু – লোথার লুৎসে ও আমি – নব্য ভারততত্ত্ব বিভাগের পত্তন করলাম ধ্রুপদী শিবির থেকে আমাদের ‘অনার্থ’ বলেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই বিষয়টিকে এক কথায় আমরা, দার্শনিক নিৎসের ভাষা বলে ‘সানন্দ জ্ঞানচর্চা’ হিসেবেই অভিষিক্ত করতে চেয়েছিলাম। পাঠক্রম বা সিলেবাস পড়ুয়াদের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রণীত হতো। গবেষকেরা বনে-প্রান্তরে নৃতত্ত্ব কিংবা সমাজ888sport apkে সুদীক্ষিত, অন্তরঙ্গ মানুষজনের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত, কখনোবা লোকচর্যার উষ্ণ সৌজন্যে, কোনো বাউল কিংবা চারণকে এনে হাজির আমাদের দক্ষিণী এশীয় ইনস্টিটিউটের ক্লাসঘরে। তাদের গান ও কথকতার ভিত্তিতেই গড়ে উঠত অ্যাকাডেমিক-নান্দনিক আড্ডা ও আলাপন। এরই পাশাপাশি চলত আপনমনে বা যুগলবন্দির চাহিদায়, ইংরেজির দোভাষিতা বরবাদ করে দিয়ে, সরাসরি কবীর-দাদুর-রজ্জব কিংবা রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkর ভাষান্তর।
ইনস্টিটিউটের একটি ঘর বরাবর বরাদ্দ ছিল ‘অজ্ঞেয়’র (সচ্চিদানন্দ হীবানন্দ বাৎসায়ন ১৯১১-৮৭) জন্য। হিন্দি ভাষায় অনারোহ এই কবি-ব্যক্তিত্ব তাই তো কী মমতা নিয়েই লিখতে পেরেছিলেন : ওইখানে ও দেশে/
এক একবার একটি ঘর ছেড়ে-আসার মুখেও/ ফিরে এসে খুঁটিয়ে দেখেছি/ সব কিছু/ ঠিক আছে কিনা – তার মানে/ আমার এমন কোনো ছোপ-ছাপ রেখে গেলাম কিনা/ যা আমার সবঘেঁষা পড়োশনের পক্ষে/ অস্বস্তিকর ঠেকলেও ঠেকতে পারে।
সেরকম হওয়ার জো ছিল না। দিল্লি থেকে আবার কবে আসবেন, সেই অপেক্ষায় ছাত্রীরা কতোবার যে বরণমালা নিয়ে বিমানঘাঁটির দিকে রওনা হয়ে চলে যেত। একবার বিকেলের মুখে ফ্রাংকফুর্টে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মেয়েরা তাঁকে ঘেরাও করে ধরে এনে 888sport app download apk পড়তে বসিয়ে দেয়। কোথায় জিট-ল্যাগ বা উড়াল অবসাদ! কোথায় কী, সেই যে 888sport app download apkপাঠে বৃত হলেন, তাঁকে আর থামায় কে রে! এর একমাত্র তুলনীয় দৃষ্টান্ত বোধহয় সেনেট হলে মঞ্চলাজুক জীবনানন্দের সেই নিরন্তর স্বরচিত 888sport app download apk আবৃত্তির উত্তাল ঘনঘটা যখন উদ্যোক্তাদের মধ্যে কারুরই সাহস ছিল না সে মাইক্রোফোনটা ঈষৎ সরিয়ে নেয়।
অজ্ঞেয়-র এটাই ছিল জ্যোতির্ময় অসুবিধে, এই দিগ্বিজয়ী-কমপ্লেক্স। অনুষ্ঠানের শেষে – তখন রাত সাড়ে নটা – হঠাৎ আমায় ডেকে বললেন : ‘অলোকরঞ্জন, একটু আগেই শুনলাম, আপনার আস্তানায় টেব্ল টেনিস খেলার সাজ-সরঞ্জাম আছে। চলুন। আপনার ওখানে গিয়ে পিংপং খেলে আসি।’
বাড়ি আসার পথে বলতে থাকলেন, এই খেলায় একদা তিনি চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তার উত্তরে আমি বলি : ‘সেন্ট জেভিয়ার্সে আমিও একটু-আধটু টেব্ল টেনিস খেলেছি বই-কি!’ পরিশেষে রাত এগারোটায় উভয়ে অসম প্রতিযোগিতায় প্রবৃত্ত হওয়া গেল। বিধাতার এ কী প্রপঞ্চনা, পরপর পাঁচ রাউন্ডে অজ্ঞেয়জী আমার মতো আনকোরা না-খেলুড়ের হাতে হেরে ভূত! এর পরেও দিনতিনেক তিনি আমাদের ডেরায় ছিলেন, কিন্তু পরাভবের অবমাননায়, লজ্জায় আমার সঙ্গে একটি বাক্যাংশও বিনিময় করেন নি।
হোলকার থেকে কলকাতা
প্রিয়ব্রত হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে এসে খবর দিলো, ‘জানো তো সি এস নাইডু ওঁর দাদা সি কে নাইডুর সঙ্গে ঝগড়া করে পাকাপাকি আমাদের ওই যাদবপুরেই চলে আসছেন। এখন তিনি মাঝরাস্তায়। স্বয়ং গাড়ি চালিয়েই সি এস এই পাড়ি দিয়েছেন।’
শুনে তো আমি আনন্দে হৃতবাক। আমরা যাঁরা অনাদিকাল থেকেই যাদবপুরের আদি বাসিন্দা তাদের প্রত্যেকের মনেই এই সংস্কার বদ্ধমূল ছিল যে, এরকম একটা জায়গা ভূভারতে আর দ্বিতীয়টি নেই। এই আঞ্চলিক অহংকারের যুক্তিসহ নানাবিধ প্রমাণ পেশ করার সুযোগ আমরা ছাড়তাম না। কলকাতা-৩২-এর বাইরে থেকে যে-কোনো টুরিস্ট এলেই তাঁরে সরাসরি নিয়ে যেতাম সেন্ট্রাল রোডের প্রান্তিক সেই দিঘিটার দিকে, তাঁর উদ্দেশে নিবেদন করতে থাকতাম, এই দিঘি দেখেই আমাদের কবি অরবিন্দ গুহ ওরফে ইন্দ্র মিত্র লিখেছেন : ‘হাঁস ঠোঁট রাখে হাঁসের ছায়ার ঠোঁটে/ তুষার তৃষ্ণা ফাল্গুন হয়ে ওঠে।’ আর এই যে উলটো দিকের কুঞ্জগলিটা দেখছেন তার শেষের বাংলো-প্যাটার্নের কুঠিতে বসে উনিশ শতক নিয়ে পুঁথির পর পুঁথি লিখছেন বিনয় ঘোষ। আসুন, বিনয়দার সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দিই। আর একটু দূরেই থাকেন হীরালাল দাশগুপ্ত। না, তিনি কবি হীরালাল নন, বাঘশিকারি হীরালাল, আর এ দুজনের নামমাত্র সাযুজ্য থেকেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অর্থাৎ নীরেনদা ছড়া বেঁধেছেন : ‘এক হীরালাল বাঘশিকারি, পদ্য-লেখক অন্যে’ কিন্তু যেটা বলতে চেয়েছিলাম এখন বলে নেওয়া আশু প্রয়োজন। এই দুজনের সঙ্গে আমার জান-পহেচান নেই। আমরা যাঁকে জানি এবং পূজা করি তিনি হীরালাল রায়, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রসায়ন শাস্ত্রের দিগ্গজ অধ্যাপক। সেটাই তাঁর প্রসঙ্গে বড়ো কথা নয়। আসল কথাটা হচ্ছে এই যে, সংস্কৃতির এরকম পরিপোষক বৃহৎ বঙ্গে আর কোথাও নেই।
একবার এক নিশ্বাসে এই অন্তরঙ্গ 888sport world cup rate জানিয়ে দম নিচ্ছি, এমন সময় কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, আকৈশোর সখা আমার, এসে বলে উঠল : শোনো, শোনো, কী চমৎকার আজব ব্যাপার। বরোদা রাজ্যের হোলকার দলের মুকুটমণি সি এস নাইডু নিজেই স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে কাল বিকেলে আমাদের এই শহরতলিতে এসে পৌঁছে গিয়েছেন। হীরালালবাবুর ছেলে বিনুদার অনুরোধে ওঁদের বাড়িতেই উনি থাকতে রাজি হয়ে গেছেন। মোহনবাগানের হয়ে সি এস মাসতিনেক ক্রিকেট খেলতেন, সে-খবর রাখতাম। কিন্তু তিনি যে আমাদেরই প্রতিবেশী বনে যাবেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
দু-তিনদিন পরেই অধ্যাপক হীরালাল রায়ের প্রযোজনায় ওঁদের প্রাঙ্গণমঞ্চে চিত্রাঙ্গদা হলো। যদ্দুর মনে পড়ছে, শান্তিনিকেতন থেকে মোহরদিকেও ধরে আনা হয়েছিল। দেখি, এক কোণে সি এস নাইডু বসে এক মনে দেখছেন। একজন খেলোয়াড়কে এমন সৌম্যসুন্দর আর কখনো দেখিনি।
পরদিন, জানতামই, প্রকাশ্যে তাঁর একটা বড়ো ভূমিকা ছিল। হয় রাজ্যপাল একাদশের অধিনায়ক হয়ে মাঠে নামা অথবা রাজ্যপালের দলে কমনওয়েলথ একাদশের অনুরূপ গুরুতর দায়িত্বে। যতদূর মনে হয়, প্রথম অনুমানটাই সঠিক। নাকি 888sport sign up bonus আমার সঙ্গে সান্দ্র প্রতারণা করছে, কেননা সেবারই তো, বাহান্ন কি তেপ্পান্ন ফ্রাংক ওরেল প্রথম কলকাতার মাটিতে পা রাখলেন। সে যা-ই হোক, সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুরুদুরু দৃপ্ত চলনে সি এসের দরোজায় টোকা দিলাম। আমায় যেন কতোকাল চেনেন, সেই সুভদ্র মুদ্রায় তিনি আমায় ভিতরঘরে টেনে নিলেন। দেখি সারাটা কপাল শ্বেতচন্দনে প্লুত। তাহলে বুঝি ভোরবেলায় উঠে কুলদেবতা পদ্মনাভনের উপাসনা সেরে এইমাত্র উঠে এলেন। কী ঋজু অথচ নমনীয় তাঁর আঙ্গিক। একটু পরেই যে তাঁকে খেলার মাঠে হাজির হতে হবে তৎসংক্রান্ত উত্তেজনার তিলমাত্র ঠাহর করা গেল না স্মিত মুখমন্ডলে। নিজের হাতে কফি বানিয়ে পরিবেশন করতে করতে আমায় বললেন : ‘আচ্ছা, গুরুদেবের চিত্রাঙ্গদার তত্ত্বটা আমায় একটু বুঝিয়ে দেবেন?’
ছিন্নপত্র : পূর্বসূরিকে
২১/১ সেন্ট্রাল পার্ক
কলকাতা-৩২
২০.০৩.৬৩
888sport apk download apk latest versionস্পদেষু,
আপনার নির্দেশে গালিব থেকে দু-তিনটি শোলোক তর্জমা করলাম এইমাত্র।
১. আসাদ, আমি, জলজ্যান্ত ভিখিরি এক মরুচারণরত হরিণ সে-ও অাঁচড়ে দেয় চোখের পাতা ঘষে আমার পিঠে।
২. লিখতে গিয়ে কালি যেমন কাগজ ব্যেপে ছলকে যেতে পারে/ তেমনি আমার নিয়তিপুঁথি, নির্বাসিতের রাতের চিত্রলিপি।
৩. তাহলে চলো সেখানে যাই, যেখানে কেউ একেবারেই নেই,/ আমার ভাষা বলার মতো আমার সঙ্গে কথা বলার মতো।
৪. থাকার মতো কিছু একটা বানিয়ে নেব, না-দোর না দেয়াল,/ আমায় আব্জে রাখার মতো পড়োশন থাকবে না, একজনাও।
৫. আমায় হঠাৎ অসুখ হলে কেউ আমায় যত্ন করবে না,/ মরে গেলেও আমায় জন্যে হা-হুতাশ করবে না একজনও।
আপনার এবারকার চিঠিতে বেজে উঠেছে অভিমানের মিড়। সবসময় আপনিই আমার কৌণিক নিষাদ প্রশমিত করেন। এবার আমার পালা, থেরাপির। আপনাকে কে বা কারা ‘প্রবাসী’ বলে চিহ্নিত করেছেন, তা বলে আপনি কি ভেঙে পড়বেন, না মিজরাবে টংকার দেবেন মুক্ত ছন্দে? কলকাতা উজিয়ে কেউ যদি লিলুয়া অব্দি চলে যায় তাকেই তো পরবাসী পদবিতে লাঞ্ছিত করা হয়ে থাকে! তা বলে ভাবনা করা চলবে না!
প্রণত অলোকরঞ্জন
৬/৩/৬৩
888sport apk download apk latest versionস্পদেষু,
শীতের নিয়তিময় অনিশ্চিতি সরে গিয়ে এক কবোষ্ণ আবহ রেখে গিয়েছে বিশেষ করে শেষ রাত্রে তার তরুণ সকালে তার আমেজ স্থানীয় আকাশে ছড়িয়ে থাকে। এই সময়টাকে আমি ‘নির্বাচিত শীত’ বলব। আপনার চিঠি না পেয়ে আমি একটুও ভুল বুঝিনি। শুধু মনেপ্রাণে চিঠির প্রার্থনায় ছিলাম। ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম ভিতরে-ভিতরে আপনি কেমন আছেন সেই চিন্তায়। যে-মরুচর্যার কথা লিখেছেন তা এখন থেকে-থেকেই আমার কাছে আসে, আমার সমস্ত উত্তরাধিকার আমি হারিয়ে ফেলি। জোর করে আমি সেই মরুকঠোর সময় রূপান্তরিত করতে চাই না। কেননা, এসবই মনে হয়, পুরুষকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অদৃশ্য পরামর্শ। চলে যায় যখন, আবার ফিরে আসার শতসহস্র ফাঁদ পেতে রেখে যায়। কিন্তু আমরা – বিধাতার স্বমনোনীত প্রাণ সংঘ – আমরাও যদি ভেঙে পড়ি তবে লজ্জার শেষ নেই, এই ভেবে টানটান হয়ে দাঁড়াই। আমাদের ভিতরে যেন সব সময় – এমনকী প্রাত্যহিক স্তরে – যোগাযোগের পুণ্যপ্রবাহে চলতে থাকে, নইলে আত্ম আস্থার ভরকেন্দ্র হারিয়ে যাবে যে, আমরা কেমন করে যৌথ তমিস্রার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব?
আপনি যেন দ্রুত সৌর উৎসবের মুহূর্তে প্রত্যাবর্তন করেন। আপনার উদ্বেল স্থৈর্য আমার অত্যন্ত দরকার – আমি এখন যে অল্প কয়েকটি প্রপাত থেকে শক্তি সংগ্রহ করি তার মধ্যে আপনি অন্যতম।
‘সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত’র বিজ্ঞাপনে ওইসব জরুরিতম নাম বাদ পড়ে গিয়েছে – বইয়ের ভিতরে কিন্তু ওঁরা সবাই আছেন। প্রকাশক মহাশয় নিজেই ভার নিয়েছেন, বইখানি আপনাকে পাঠিয়ে দেবেন, পেয়েছেন? প্রণাম, স্নেহলিপ্সু অলোক
পুনশ্চ
অন্তরঙ্গ পাঠক নিশ্চয়ই ঠাহর করতে পেরেছেন, উপরে উদ্ধৃত দুটি পত্রাণু আমার পরম প্রিয় অরুণ মিত্রকেই নিবেদিত। এক এক সময় উত্তরসূরিকেও তার পূর্ণাচার্যের বিজন বিষাদের শামিল হতে হয়।
বাংলা আকাদেমির সংবেদী কর্মী উৎপল ঝা অভিলেখাগার থেকে অরুণ মিত্রকে লেখা আমার বেশ কিছু চিঠি উদ্ধার করে আমায় উপহার দিয়েছেন। মনে হলো, কলকাতা এক ঝলকের পড়ুয়াদের এদের এক-একটি ভগ্নাংশ প্রত্যুপহার দিলে কেমন হয়।
বলা বাহুল্য একতরফা এই নৈবেদ্য থেকে পুরো ছবিটা ঠাহর করা যাবে না। কেননা, প্রকৃত প্রস্তাবে, আমার প্রণম্য ওই পথপ্রদর্শকই দিনের পর দিন আমায় অকূল উদ্দীপন জুগিয়ে গেছেন। কিন্তু এলাহাবাদ থেকে তিনি আমাকে এই মর্মে চিঠি লিখেছেন তার অধিকাংশই আমি একে ওকে বিলিয়ে দিয়েছি যে 888sport sign up bonusচিহ্ন এভাবে অকাতরে বিতরণ করা কি সহনীয় অপরাধ নয়?
আপাতত সেই বিতর্কের ভিতরে না গিয়ে এটুকুই বলতে চাই, অরুণ মিত্রের স্নেহচর্যায় ছিল এক সতীর্থময়তা, যার আলো আরোগ্যের।
লিটল ম্যাগাজিন
কবে প্রথম লিটল ম্যাগাজিন শীর্ষক শব্দদ্বৈত উড়ে এসে জায়গা জুড়ে বসল? দীর্ঘদিন ধরে এই মর্মে মাথা ঘামিয়েছি, কিন্তু সঠিক কোনো সদুত্তর পাইনি। এই সেদিন হঠাৎই লন্ডনের পুরনো বইয়ের দোকানে সাতবাসি পত্রপত্রিকা ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটি মিলান্ত্য স্যাটায়ার আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল :
Of all the literary scenes
Saddest this sight to me
The graves of little magazines
Who died to make verse free…
সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাতেই এর একটি চটজলদি তর্জমা করে বসলাম :
আমার কাছে 888sport live footballজগতে
এটাই বুঝি গভীরতম ক্ষত :
পদ্যকে স্বাধীন করার পথে
লিট্ল ম্যাগাজিনের কবর যত…
বলাবাহুল্য, যথাসম্ভব মূলানুগ হলেও মন-পসন্দ হলো না এই রূপান্তরণ আমার। মনে হলো, বাংলা ভাষার সৌকর্যে অন্তত আরেকটি লাইন জুড়ে দিলে ভালো হতো হয়তো। এসব যখন ভাবছি, বই-দোকানি উদ্গ্রীব হয়ে আমার এই দৈব দুর্দশা অনুমান করতে পারলেন : ‘আপনাকে কি কোনো সাহায্য করতে পারি?’ তাঁকে আমি ঊর্ধ্বশ্বাসে তখন বাংলা 888sport live footballের দৃশ্যপট কিছুটা ব্যক্ত করি। বলি, ‘আমি লিটল ম্যাগাজিনেরই ঘরানার লোক। আজ আচম্বিতে ওই শব্দসংজ্ঞার উৎসঠিকানা পেয়ে গেলাম। আপনাকে কীভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই, ভাবছি।’ এর উত্তরে তিনি ‘এই কাগজটা আপনাকে আমি উপহার দিলাম।’
আত্মহারা দশায় হাঁটতে-হাঁটতে সেই ছিন্নপত্র পড়তে থাকি। মনে পড়ে যায়, একদা গড়িয়াহাটের মোড়ে এভাবেই ডাকসাইটে অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্যকে পথে যেতে যেতে দিনের কাগজ পড়তে দেখেছি। আজ আমি কি তবে তাঁর মতোই চলমান পড়ুয়া? তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এভাবে কি সিরিয়াসলি কিছু পড়া যায়? তিনি বললেন : ‘তা না হলেও অর্ধমনস্ক এই পাঠের প্রক্রিয়া থেকে অপঠিত জায়গাগুলো নিয়ে কৌতূহল বাড়তে থাকে।’ তাঁর কথাটার জের ধরে আমি হাইড পার্কের এক কোণে বসে আমার হাতের মুঠোয় ধরে রাখা কাগজটাকে এক সময় মেলে ধরি, আবিষ্কার করি, ওই চার ছত্রের নাম কিথ প্রেসটন (Keith Preston)। এবং রচনাকাল ১৯২০।
প্রেসটন কি জানতেন, লিট্ল ম্যাগাজিন একদিন সাম্প্রত বাংলা 888sport live footballের নিয়তি হয়ে উঠবে! অর্থাৎ আয়ুষ্ক হয়ে তার বরাতে নেই। আবিষ্ক্রিয়ার ওই মুহূর্তে আমার মনে পড়ে যায়, কিশোর দশায়, শান্তিনিকেতনে, আমরা তিন সহপাঠী অর্থাৎ মধুসূদন, অমর্ত্য আর আমি – আচমকা একটি ক্ষণজীবী 888sport live footballপত্র প্রকাশ করেছিলাম যার নাম রেখেছিলাম স্ফুলিঙ্গ।
প্রকাশোন্মুখ ওই মুহূর্তে প্রেমেন্দ্র মিত্র আশ্রমে এসে হাজির। সরাসরি একদিন তাঁর দরবারে গিয়ে হানা দিলাম। এক কথায় তিনি রাজি। আমার সলজ্জ আবেদন অনায়াসেই মঞ্জুর করে তিনি বলে উঠলেন : ‘কালকের কথা আজ ভেবো না। যদি তোমাদের পত্রিকা এক ঋতুতেই শেষ হয়ে যায়, তাতে কোনো অনুতাপের কারণ নেই।’ বলেই গেস্ট হাউসের একটা দেরাজ থেকে একটা কাগজ বার করে এনে ফসফস করে যে 888sport app download apkটি লিখে দিলেন তার একটি অংশ, নিতান্তই অংশ, এখনো মনে পড়ে :
কাল কী হবে কে জানে,
এই স্ফুলিঙ্গ সুষুপ্ত কোন্ সূর্য!
আজ হয়তো নিভবে জ্বলেই, কালকে
ধ্রুবতারার মতো
অমর হবে জ্যোতি ও মাধুর্য।
তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয়েছিল। দু-তিন 888sport free bet বেরুবার পর স্ফুলিঙ্গ চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেজন্যেই হয়তো তাকে ঘিরে আশ্রমিক গবেষকদের মনে দীর্ঘদিন লেগে ছিল এরকম অনুরণনের জের। প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতকপর্বের সতীর্থ ভাস্কর মিত্রকে নিয়ে একদিন আমাদের প্রারব্ধ একটি লিট্ল ম্যাগাজিনের প্রত্যাশায় জীবনানন্দের কাছে যাওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গের প্রথম 888sport free betটি নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি দেখেশুনে বললেন : ‘বাঃ প্রেমেনের আশীর্বাণীটা তো ভালোই। কিন্তু যে পত্রিকার আয়ু দুয়েক 888sport free betতেই ফুরিয়ে যায়, সেখানে আমি তো লিখতে সাহস পাই না। কে পড়বে!’
তিন তরঙ্গ
গুরুপল্লি উজিয়ে হাঁটছি। নগেনদা সারাদুপুর ধরে রাজ শেখরের ‘বাক্য মীমাংসা’য় আমাকে দীক্ষাদানে পন্ডশ্রম করেছেন। ভাবছি ওই অলংকারশাস্ত্র দিয়ে আমার কী হবে! ভাবছি আর হাঁটছি এমন সময় স্বগত হাসির সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ি। অশেষদা ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন আর একা একা হাসছেন। আমায় দেখে বললেন, ‘অলোক এসো, লাটাইটা ধরো তো!’ এরকম সময়োচিত আমন্ত্রণ পেয়েও আমি কুণ্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। অশেষদা এতো কাছের মানুষ, অহংকার তাঁর নাগাল পায় না। তবু আগের দিনই মন্দিরে তাঁর এস্রাজ শুনে ঠাহর করতে পেরেছি, তিনি আমাদের এই ইহজগতের মানুষ নন। কোন দুঃসাহসে তাহলে তাঁর ডাকে সাড়া দিই! অশেষদা এর মধ্যে ভুলে বসে আছেন আমাকেই যে তাঁর দরকার। মাথা নিচু করে আরো কিছুক্ষণ দাঁড়াই, আবার চলতে থাকি। পিছন ফিরে দেখি অশেষদা স্থির হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে। অশেষদার ঘুড়িটা উড়তে-উড়তে একখন্ড মেঘে টক্কর দিলো।
মোহরদির কথা ভাবতে বসলেই live chat 888sportের মতো এই রকমের টুকরো-টুকরো মোটিভ মনের মধ্যে ভাসে। আলাদা করে তাঁর কথা আমার মনেই পড়ে না। সমস্ত আলেখ্যর আড়ালে তিনি অন্তর্বৃতা হয়ে থাকেন। এইখানেই তাঁর মহিমা, আর সেই সংগ্রহ সম্পূর্ণ হলে আবার তাদের তিনি উৎসের কাছে ফিরিয়ে দেন। সংকলয়িজার মুখ কারুর চোখেই পড়ে না। মিডিয়া তাঁকে প্রশ্রয় দেওয়ার পরেও দেখেছি আত্মপ্রচারে তাঁর কী প্রবল অস্বস্তি, নিজেকে নিয়ে কোথায় রাখবেন সেই মর্মে কী অপরিমাণ দুরবগাহ কুণ্ঠা।
অশেষদার চ্যালেঞ্জে ঝাঁপিয়ে না-পড়ার আরো একটি প্রত্যক্ষ কারণ এখানে ব্যক্ত করা জরুরি। আসলে তখন আমার অন্য কোথাও যাবার কথা। সেই অন্য কোনোখানে আসলে মোহরদির বাড়ি। পরের দিন সকালের প্রার্থনানুষ্ঠানে পাঠভবনের পালা। মোহরদির কাছে। ‘এদিন আজই কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার’ গানটা ঝালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু একা একা গিয়ে কী করব? রবীন্দ্র আর সুভদ্রেরও তো চিত্রাভবনের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করার কথা ছিল। এদের উপর ভারি রাগ হতে থাকল। শেষ পর্যন্ত একাই মোহরদির কাছে গিয়ে হাজির হলাম। মন দিয়ে তিনি আমার ভাষ্য একবারই মাত্র শুনলেন। কোথাও এতটুকু শুধরেও দিলেন না। শিক্ষয়িত্রী হিসেবে এটাই হয়তো ছিল তাঁর পারমিতা : শিক্ষার্থীকে তার নিজের মতো তৈরি হতে দেওয়া। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মোহরদি এভাবে গাইলেই চলবে?’ ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই’, উত্তর করলেন তিনি, ‘আমি যদি গানটা গেয়ে শোনাই, যেভাবে তোমরা গাইলে আমার পছন্দ হবে না।’
ফেরার পথে তাঁর ওই ঔদার্য আমাকে আচ্ছন্ন করে তুলেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই, শৈলজাদার সৌজন্যে, মোহরদির সেদিনকার সংকোচ অনুমোদনের যথার্থ কারণটি জানতে পেরেছিলাম। শৈলজাদা আমাকে জানিয়েছিলেন, ‘ওই গানটা মোহরের তেমন পছন্দসই নয়।’
কেন? সেই প্রশ্নের নিরসন নিজের কাছেই খুঁজেছি। আমার মনে হয়েছে, মোহরদির অকূল জনপ্রিয়তার পিছনে সক্রিয় হয়ে আছে খুবই স্বল্পসংখ্যক কয়েকটি গান। আর সেসব গান মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের সংঘটন। 888sport live chatী তাঁদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়ে নিজে নিমিত্তমাত্রিক দুর্জ্ঞেয়তায় অধিষ্ঠান করেন। সে সমস্ত গানকে তিনি ব্যাখ্যা বিশারদ করে তোলেন না বলেই তাদের কাছে আমরা অহরহ ঘোরাফেরা করি। ‘এদিন আজই কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বারা’ গানটি একবার শুনলেই তার কাছে আমাদের সমূহ তিয়াসা মিটে যায়। রবীন্দ্রসংগীতের বিশ্বভুবন থেকে আমাদের ভিতর-বাইরের নির্বাচন করার সময় এসে গেছে, আর সেই কাজে মোহরদির সংকেতগ্রন্থিল প্রবর্তনা অনুধাবনযোগ্য।
দুই
মোহরদি হাঁটছেন। আশ্রমতনয়ার অনাহত সারল্য তাঁকে বলয়িত করে রেখেছে। তান-লিকে বললাম, ‘আচ্ছা, মোহরদি আমাদের এতো কাছের মানুষ বলেই কি তাঁর কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার কথা আমাদের মনেও পড়ে না?’ তান-লি কিছু না বলেই হাসল। এটাই ছিল তখনকার আশ্রমের স্বতঃসিদ্ধ বুনুনি, সবাই পরস্পরের মনের কথা জানত, বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ত না। মোহরদি ততোক্ষণে আমাদের ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে গেছেন। স্যিলুয়েৎ থেকে বোঝা যায়, নিরাভরণ সরলিমা সত্ত্বেও তিনি জানেন নিজের মনের গহন এষণার কথা।
জয়তী আমাদের একদিন বলল, ‘মোহরদির বিয়ের রহস্যটা তোমাদের বলি।’ জয়তীর কথকতা থেকে জানা গেল, বীরেনদা ডাকঘরে দইঅলার ভূমিকায় মোহরদিকে যে অভিভূত করেছেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না। ‘দই দ-ই ভালো দ-ই’ – বীরেনদার উদাত্ত স্বরায়নে এই মন্থটি শুনেই মোহরদি নাকি মনোনয়নের দুরূহ দায় সম্পন্ন করে ফেলেছেন। বীরেনদাকে আমি অনেকবার এই মর্মে জেরা-জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি শুধু মিটিমিটি হেসেছেন। গায়ক হিসেবে বীরেনদার কৃতিত্বের কোনো নিদর্শন আমার জানা ছিল না। কেন তবে এক মুহূর্তের অডিশনে ওঁকে তিনি পাস করিয়ে দিলেন। হাজারীপ্রসাদ দ্বিবেদীর ছেলে, জগদীশ প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দ্রুত কোথায় মিলিয়ে গেল।
মোহরদির কথা ভাবতে বসলেই এমন এক স্বয়ংবরার কথা আমার মনে হয়, আটপৌরে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আচমকা ময়ূরকণ্ঠী সূর্যাস্তের দিকে চলে গিয়েছেন।
তিন
পাঠভবনের পর্ব শেষ হওয়ার মুখে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় শামিল হওয়ার জন্য আমার একবিন্দুও মাথাব্যথা নেই। কমিউনিস্ট পার্টি তখন গোপনে গোপনে নতুন পদ্ধতি খুঁজছে। স্বাধীনতা এসে গেছে, কিন্তু তাকে অর্জিত বলেই যে মেনে নিতে হবে মনের মধ্যে এরকম কেনো তাগিদ নেই। বোলপুরের কলকারখানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ইশতেহার বিলি করছি আমরা, এরকম একটি রোমাঞ্চসঞ্চারী মুহূর্তে আমার কাঁধে হাত রাখলেন বীরেনদা।
এসটাব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধে এরকম উদ্যত হওয়া এমন-কিছুই সাহসিক ক্রিয়াকলাপ নয়, কিন্তু অগ্রজ যদি বাজার থেকে ফেরার মুখে সেই দৃশ্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন তাহলে বঙ্গীয় বিপ্লবীর দশা তখন রীতিমতো করুণ হতে বাধ্য। ধরা পড়ে গিয়ে কুঁকড়ে আছি। বীরেনদা কিন্তু দেখেও যেন দ্যাখেননি। এমন সহাস্যে মোলায়েম মুখ করে ভুবনডাঙার দিকে সরে গেলেন। যাবার সময় বললেন, ‘অলোক, আজ সন্ধের দিকে তোমাদের বাসায় যাব। তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।’
তক্ষুণি বুক-কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল আমার। বিদ্রোহের মহড়া তাড়াহুড়োয় চুকিয়ে বাড়ি ফিরি। দেখি লণ্ঠনের আলোয় বীরেনদা মাকে তাঁর নতুন লেখা গল্প পড়ে শোনাচ্ছেন। পরের দিন নাকি 888sport live footballসভায় পড়বেন। আমি শুধু শেষ অংশটির শ্রবণসাথি হয়েছিলাম। মর্মটা এরকম – সারাদিন স্বামী আর স্ত্রী দুদিকের স্বতন্ত্র কাজে হয়ে দিনান্তে পার্কে এসে বেঞ্চিতে বসেছেন। দুজনেই ভাবছেন, গার্হস্থ্য পরিসরের বাহির থেকে অচেনা কেউ পাশে এসে প্রার্থী হয়েছেন বুঝি। একটু পরেই অবশ্য ভুল ভেঙে যায়। ঠাহর করতে পারেন, ওরা সেই একই দম্পতি, বাইরে আকাশের নিচে গিয়ে, তাঁদের প্রেমকে এখন পুনর্নব করে নিচ্ছেন। এভাবেই বোধহয় অন্তর ও বাহির এ-ওর পরিপূরক হয়ে ওঠে।
মোহরদির কথা ভাবলেই একই ঝলকে বীরেনদার কথাই আমার বেশি করে মনে পড়ে।
রিখিয়া থেকে অনেক দূরে
রিখিয়া থেকে বাবুডি যাবার পথে 888sport sign up bonus থেকে আপনি আমায় বীজমন্ত্রের মতো এই 888sport app download apk শুনিয়েছিলেন :
কি দেখলে তুমি রৌদ কঠিন হাওয়ার অট্টহাসি
দু-হাতে ছড়িয়ে নিয়ে নিষ্ঠুর মৃত্যুর প্রেতসেনা
মাঠে মাঠে বুঝি ফিরছে? ফিরুক, তবু তার পাশাপাশি
কৃষ্ণচূড়ার লাবণ্য তুমি একবারও দেখলে না?
প্রথম অভিঘাতে আমার মনে হয়েছিল, আপনি বোধহয় অনাহত বিশ্বাসে আমাকে দীক্ষিত করতে চাইছেন। মনে হয়েছিল, জগৎ ও জীবনের যাবতীয় অবক্ষয় থেকে আমায় আপনি আব্জে রাখতে দৃঢ়সংকল্প। আমার কৈশোরে তাই মঙ্গলাচরণের মতো কাজ করেছে আপনার 888sport app download apk। তার সম্মোহগুণ এতো প্রবল ছিল যে, আপনার দৃপ্ত উচ্চারণের পরতে-পরতে যে অন্যতম কোনো গূঢ় ভাবনার অন্ধকার স্তরপর্যায় থাকতে পারে সে-কথা আমার মনেই হয়নি। আপনার অধিকাংশ 888sport app download apkই তাই প্রথম শ্রুতিসংবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। শুধু আমারই নয়, আমার সমীপকালের আরো অনেকেরই। এই ব্যক্তিগত ও যৌথ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে পারি, তিরিশের পর বাংলা ভাষায় আপনিই সম্ভবত সবচেয়ে 888sport sign up bonusধার্য পঙ্ক্তি রচনা করেছেন। এই নির্ধারণ থেকে এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছুনো সম্ভব, প্রাগাধুনিক বাংলা লোক888sport live footballের মৌখিক উত্তরাধিকার আপনার সার্থক 888sport live chatায়নে সঞ্চারিত হয়ে গিয়েছে। যাঁরা আপনার সস্নেহ সান্নিধ্য অনায়াসেই অর্জন করে নিয়েছেন, শুনেছেন আপনার ধীরোদাত্ত কণ্ঠে ব্যালাডের চারণধর্মী সেই গান যার ধ্রুবপদ হলো ‘প্রথমে বন্দিলাম আমি গুরুচরণ’, তাদের কাছে ঐতিহ্যের প্রতি আপনার নিবিড় অঙ্গীকার গোপন থাকবার কথা নয়। রন্ধ্রসন্ধানী সমালোচকেরা আপনার সেই চিরায়রিক বিশ্বস্ততাকে কখনো-কখনো অনাধুনিক প্রতিপন্ন করবার সুযোগ নিয়েছেন। তাঁদের অ-নান্দনিক সংশয় অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে পাঁচ দশক জুড়ে ও ছাপিয়ে আপনার কাব্যধারা আজও প্রবাহিত, অনবচ্ছিন্ন। প্রাণবন্ত এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, আপনার সারস্বত চর্যায় আধুনিকতা সমন্বয়ী এমন একটি সংঘটন যা প্রজন্ম ফারাকের তোয়াক্কা করে না, যার ভিতরে নানান সময়ের ধ্যান-ধারণা এবং প্রকরণ ওতপ্রোত হয়ে আছে। এদিক থেকে দেখলে আপনাকে যৌগিক প্রতীতি ও প্রত্যয়ের কবি বলে মেনে নিতেই হয় আমাদের। রিখিয়া থেকে বাবুডি যাওয়ার মর্মে সেদিন একটি উদ্দীপন-বিভাব ছিল। বিষ্ণু দে-র সঙ্গে এক লহমা দেখা করে আসা। বিষ্ণু দে ছিলেন তখন গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর মতো অনারোহ একটি বিগ্রহ। তাঁর বলয়বিভা কিংবা aura ছিল কিংবদন্তিপ্রতিম। আমরা দুজনে বড়ো জোর পনেরো কুড়ি মিনিট তাঁর উপস্থিতির শরিক হতে পেরেছিলাম। হঠাৎই এক ঝটকায় সেই দেবায়তন থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। ফেরার পথে আমার মনে হয়েছিল, আপনি আমার কত কাছের মানুষ, আপনাকে আলাদা করে কবি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। আমার সেই অনুমিতির মর্যাদা আপনি অক্ষুণ্ণ রেখেছেন, আপনি নিজেকে কাল্ট হতে দেননি, সহ-নশ্বরদের মধ্যে কত সহজেই ভিড়ে গিয়েছেন এবং সেজন্য আপনার অনন্যতা সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না। আপনার রচিত অসংখ্য উক্তি লোকমুখে আজ পরিকীর্ণ, অনেকেই জানে না তাদের রচয়িতার নাম। এখানেই আপনার অ-শনাক্ত স্বকীয়তা।
বাবুডীয় অবস্থান অনেকটা টিলার মতো, সেখান থেকে সমতলে নেমে আসা স্বতশ্চল আনন্দের ব্যাপার। ফেরার মুখে কোনো কথা না বলেই আপনার আরব্ধ 888sport app download apkর সম্পূরক স্তবকটি আপনি আবৃত্তি করলেন :
একবারও তুমি দেখলে না তার বিবর্ণ মরা ডালে
ছড়িয়ে গিয়েছে নম্র আগুন, মৃত্যুর সব দেনা
তুচ্ছ, সেখানে, নবযৌবনা কৃষ্ণচূড়ার ডালে
ক্ষমার শান্ত লজ্জা কি তুমি একবারও দেখলে না?
নীরেনদা, আমায় মার্জনা করবেন। আপনার এই 888sport app download apkর মুদ্রিত পাঠ আমি কখনো দেখিনি, এখন আমার বাল্য888sport sign up bonus থেকে 888sport app download apkটির যে-বয়ান আমি উদ্ধৃত করলাম, তার কোনো কোনো অংশে আমার স্বযাচিত আরোপন থাকতেই পারে। তবু সত্যের সৌজন্যে এইটুকুই জানাই, আমার তখন মনে হয়েছিল, আপনি আমাকে আর দীক্ষিত করতে চাইছেন না, বরং আপনি এমন একটি স্বরায়ন প্রণয়ন করেছেন যা একই সঙ্গে আত্মপ্রশ্ন এবং শ্রোতার জন্যে জিজ্ঞাসাকে ধারণ করে আছে।
অর্থাৎ কবি কোনো সংস্কারক নন। তিনি একবার যে-প্রস্বর তৈরি করেছেন সেটাই তাঁর কাছে স্বতঃসিদ্ধ নয়। এই পারমিতাবশে অর্জিত একটি প্রস্থানকোণই আপনার কাছে চূড়ান্ত কোনো সত্য নয়। পরবর্তীকালে পিছুটানের গরজে আপনার এই 888sport app download apkর কাছে ফিরতে গিয়ে আমি ঠাহর করতে পেরেছি, এই মনোভঙ্গি থেকেই আলংকারিক প্রশ্ন বা rhetorical question ঠিকরে বেরিয়ে আসে। এখানে প্রশ্নের ধরনের মধ্যেই লুকিয়ে তার উত্তর। অমিয় চক্রবর্তীর অলংকৃত জিজ্ঞাসাবাদ যখন রণিত হয়, ‘ভেবে বুঝি বলেনি তোমায়/ সূর্য উঠেছে স্নাত নীল শূন্যে/ একটুও শেষ রাত নেই,’ আমরা স্বতশ্চালিত সাড়া দিয়ে বলতে বাধ্য, হ্যাঁ, কেউ আমায় এই অরুণোদয়ের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে সুধীন্দ্রনাথ যখন ভ্রুকুঞ্চনে আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জসঞ্চারী প্রশ্ন তোলেন, ‘অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?’ একমুহূর্ত অপেক্ষা না করেই আমরা কবুল করি, না, অন্ধতা কোনো প্রলয়ের প্রতিবন্ধক হতে পারে না। অমিয় চক্রবর্তীর ‘হ্যাঁ’ এবং সুধীন্দ্রনাথের ‘না’ – এ দুয়ের মাঝখানে জীবনানন্দের দ্ব্যর্থদ্যোতক অমীমাংসা : ‘মানুষ তবুও তার বিছানায় মাঝরাতে নৃমুন্ডের হেঁয়ালিকে আঘাত করিবে কোনোখানে?’ এটাও আরেকরকম আলংকারিক জিজ্ঞাসা।
ইচ্ছে করেই এখানে তিনজন পূর্বসূরির প্রসঙ্গ উত্থাপন করলাম। এঁদের সবার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আপনি এসেছেন এবং আস্থা অর্জন করে নিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের সঙ্গে অবশ্য ঈষৎ দেরিতেই আপনার ঘনিষ্ঠতা ঘটে। কিন্তু তাঁর সেই আতিথেয়তা বিলম্বিত হলেও ‘888sport app download apk ভবনে’র অর্ধরুদ্ধ দরজা খুলে যাওয়ার পর থেকেই আপনি অনবরত তার সঙ্গে পরিপার্শ্বের যোজক একটি ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। কবিদের কোনো শিবির বা লবিকেই আপনি কবুল করে নেননি। সেই কারণেই সম্ভবত বুদ্ধদেব একবার আপনার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘Sober, unassuming, and yet smart’। বাংলা করলে বোধহয় এরকম দাঁড়াবে : ‘সুভদ্র এবং নিজেকে জাহির না করেও সপ্রতিভ’। এদিক থেকে দেখলে তিরিশ এবং চল্লিশ-পঞ্চাশের মধ্যে আপনি সেতুর কাজ করে এসেছেন। তা সত্ত্বেও তিরিশের প্রভাব আপনার ওপরে তেমন বর্তায়নি। আপনার অলংকৃত জিজ্ঞাসায় কোনো দার্শনিকতা বিচ্ছুরিত হয়নি, বরং তার মধ্যে এমন একটি ভঙ্গি আছে যার ভরকেন্দ্র পথচারীর স্ববিরোধচিহ্নিত সংলাপের স্বাভাবিকতায়। কবি-সম্মেলনে তাই অদীক্ষিত পাঠকও আপনার 888sport app download apkয় আবিষ্ট হয়, নিজের বাক্বুলির সম্ভাব্য বিম্বন লক্ষ করে। বিম্বন, কিন্তু প্রতিবিম্বন নয়। ক্লিষ্ট মুদ্রায়নের দিকে না গিয়েও সামান্য একটু মোচড় দিয়ে সেই যাপিত প্রাত্যহিকতাকে আপনার 888sport app download apkয় কেমন সহজেই আপনি স্টাইলাইজ করে তোলেন। চল্লিশের কবিদের মধ্যে এখানেই আপনার স্বাতন্ত্র্য।
যাঁরা আপনাকে অব্যবহিত সামীপ্যের শর্তে জেনেছে, তাঁদের কাছে আপনি কবিত্বের মুখচ্ছদ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের আপনি বুঝতে দিয়েছেন 888sport app download apk লেখাটা আপনার ব্রত হলেও তার মধ্যে খেলার একটা অপীড়িত ছন্দ আছে। মনে পড়ে পূর্বাশায় আপনার একটি 888sport app download apkর ধুয়া ছিল : ‘আরো কতকাল সন্ধ্যা সকাল লেখা খেলতে বলো?’ এটিও একটি অলংকৃত জিজ্ঞাসা, কিন্তু কতো অনলংকৃত তার মর্জি। সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের বড়ো মনঃপুত ছিল এই 888sport app download apk। তৎসত্ত্বেও তিনি আমাদের বলেছিলেন : ‘আরেকটু গভীর হলে লেখাটা যেন দার্শনিকতায় আক্রান্ত হতে পারত।’ আজ আমার মনে হয়, এতে কোনো আক্ষেপের কারণ নেই। কেননা আজ আমার জেনে গিয়েছি, 888sport app download apkর পরিশেষে প্রেক্ষণী আভাসিত হয়ে ওঠে, তার বেশি দার্শনিকতায় আমাদের আস্থা নেই। আগেই বলেছি, কবিদের দার্শনিক এবং দার্শনিকদের কবি ফ্রিডরিশ শিলার Spiel বা খেলাকেই 888sport live chatের কোরক সত্য হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছিলেন : ‘খেলতে খেলতেই একজন মানুষ সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে।’
সৌভাগ্যের কথা, সম্পূর্ণতা বা totality-র জায়গাটা থেকেও আপনি সরে এসেছেন। খন্ডিত, অনিকেত মানুষের ছিন্নভিন্ন অস্তিত্বকে 888sport app download apkর মধ্যে সংগত জায়গা করে দিতে গিয়ে আপনার স্বস্তিশোভন পাঠকদের একটি অংশকে আপনি খুইয়েছেন। আপনার সাম্প্রত 888sport app download apkয় তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নেওয়ার এই দুর্মর সাহসিকতা আমি নন্দিত করি। সাঁওতাল পরগনায় রিখিয়া থেকে বাবুডি এবং বাবুডি রিখিয়ার কল্পস্বর্গ পার হয়েও আপনার এই আমসৃণ আত্মঅতিক্রান্তির পথে আমি, আপনার অনুজ একজন গুণগ্রাহী, আপনার সঙ্গে যেন আরো কিছুদূর হেঁটে যেতে পারি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.