আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না, তখন তোর জরায় ভর ক’রে এ আমায় কোথায় নিয়ে এলি। আমি কখনো অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না।
– ‘জরাসন্ধ’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়
প্রতিষ্ঠানের প্রথা-নিয়ম-রীতি ওয়াজউদ্দিন মামুন টের পান; কিন্তু মানতে পারেননি। কেন তিনি ছবি আঁকেন – সেরকম ভাষ্য তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় না। কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ, জঞ্জাল, পেরেক, লেদ মেশিনে ব্যবহৃত লোহার টুকরা, বেয়ারিংয়ের চাকায় ব্যবহৃত বল ছবির জমিনে জুড়ে দিয়েছেন। রং আর আকৃতির বিসত্মৃতিতে ছবির জমিনে সংঘাত তৈরি হয়। উষ্ণ রং আর আকৃতির সঙ্গে রেখার সংযোগ ক্যানভাসের বাইরে দৃষ্টি টেনে নিয়ে যায়। একরকম সংঘাত-টানাপড়েন আমরা ওয়াজউদ্দিনের কাজে দেখতে পাই। পুরান 888sport appর বংশালে তাঁর আদি নিবাস। এখনো তিনি ওই এলাকায় বসবাস করেন। অ্যাকাডেমিক 888sport live chatী হওয়ার যে-পথ সেদিকে তিনি হাঁটেননি। পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতায় এমন অ্যাকাডেমির খোঁজ ছিল না। কালের আবর্তে তাই পৈতৃকসূত্রে পাওয়া লেদ মেশিনের কারিগর হয়েই বেড়ে ওঠেন। 888sport live chatী নিসার হোসেনের ভাষ্যে, ‘একসময় মামুনের কাছে 888sport live chatচর্চা অর্থহীন বোধ হতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি হতাশাগ্রস্ত ও নিভৃতচারী হয়ে ওঠেন। পারিবারিক জীবনও তাঁকে বিপর্যস্ত করে তোলে। জীবনপ্রবাহ থেমে যাওয়ার উপক্রম হলেও ছবি আঁকা থেমে থাকে না।’
তাঁর আঁকা এই ছবি প্রদর্শিত হওয়ার মতো কি না সে-প্রশ্ন না করে তিনি চারুকলা অনুষদের সামনে ২০১৭ সালে ছবির বান্ডিল রেখে যান। 888sport live chatচর্চার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা ছাড়া মামুনের এই পথচলা ভিন্ন জীবনদৃষ্টির সন্ধান দেয়।
মামুনের সময় কাটে যন্ত্রের সঙ্গে। মানুষ আর যন্ত্র – দুয়ে মিলে গড়ে ওঠে নতুন জীবনভুবন। জীবনের প্রত্যক্ষ দর্শন মামুনকে মুখোমুখি করে প্রতিনিয়ত। সেই যাপিত জীবনের রং আর আকৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে ক্যানভাস।
প্রদর্শনীর মোট কাজের 888sport free bet ২১টি। বেশিরভাগ কাজের শিরোনাম থাকলেও বেশ কিছু কাজে শিরোনাম নেই। এতে ছবির গড়নের ভাষায় ভিন্নতা তৈরি হয়েছে, তা মনে হয়নি। নির্দিষ্ট কিছু রঙের প্রলেপের বাইরে এসে অপ্রচলিত রঙের ব্যবহার মামুনের কাজকে আলাদা করেছে। ছবির পুরো জমিনে মামুন আকৃতি ছড়িয়ে দিয়ে রঙের প্রবাহে গতি তৈরি করেন। এতে তাঁর উদ্ভ্রান্ত মন কিছুটা শান্ত হয়। ছবির চারপাশ ঘিরে থাকা গতিশীলতা 888sport live chatীর নিজেকে প্রকাশ করার অবস্থা বোঝায়। গনগনে তাপে 888sport live chatী যখন শহরের রাস্তায় হাঁটেন তখন তিনি চান ছায়া, সবুজ প্রান্তর। সবুজরঙা শহরের আকাঙক্ষা তাঁর কয়েকটি কাজে হাজির করেছেন।
বিষাদময় উত্তপ্ত এই শহরের ক্লামিত্ম এসে ভর করেছে মামুনের কাজে। গ্যালারিতে প্রদর্শিত মামুনের ফ্রেমহীন আর ফ্রেমবন্দি দুরকম কাজ নিয়ে দর্শকের মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। এতে ক্যানভাসের ঠাসা আকৃতির মাঝ থেকে শূন্য দেয়ালে এসে দর্শক কিছুটা খামতি টানবেন।
দুরকমের চিত্রতল মামুন নির্মাণ করেছেন। প্রথমত, ফেলনা পুরু বক্সবোর্ডের ওপর আরো কাগজ জুড়ে দিয়ে একধরনের ইমেজ তৈরি; দ্বিতীয়ত, ছবির জমিনে রং, বলপেন, কাগজের সঙ্গে একেবারে বিপরীত মাধ্যম লোহার টুকরা, পেরেক, সিসার তৈরি বল জুড়ে দেওয়া। ছবির বিষয়ের সঙ্গে মাধ্যম যুক্ত করার চেষ্টা কিছু কাজে দেখা যায়।
অন্যদিকে কোনো কোনো কাজে বলপেনের রেখা-রঙের প্রলেপে কোথাও কোথাও অস্পষ্ট হয়ে লুকিয়ে থাকা ইমেজের দৃশ্যাবয়ব তৈরি করে।
উষ্ণ আর শীতল রং মামুনের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর বিষয়ের মধ্যে যে তীব্র দহন দেখা যায় তাতে উষ্ণ রং যেমন লাল, হলুদ, কমলা ছবির জমিনের সঙ্গে ঐক্য তৈরি করে না; এসব রং ক্যানভাসের বাইরে এসে দর্শকদের দৃষ্টিতে ধরনা দেয়। খ–বিখ- আকৃতি নির্মাণ, একটি আকৃতির সঙ্গে আরেকটির সূত্রবদ্ধ হওয়ার মাঝে মানুষের ঐকতানের কথা বলতে চান মামুন।
ওয়াজউদ্দিন ব্যক্তিক কথন, সমাজভাবনা; চলতি সময়ে প্রিয় শহরের মুখ কেমন দেখায় সেটি ভাবেন। তাঁর ক্যানভাস একরকম বুনটে ঠাসা রং-আকৃতিতে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। ঠাস-বুনটের শহরে মামুন যেমন দেখতে পান সেটিই ছবিতে হাজির করেন।
ওয়াজউদ্দিনের ছবির ক্যানভাস নিয়ে বলা হলে এমন কথা বলা যায়, প্রথাগত রীতি মেনে চলা ছবির জমিন বাছাই তাঁর কাছে কষ্টসাধ্য। সহজলভ্য কার্টনশিট, লোহা-লক্কড়ের টুকরা, পুরনো ম্যাগাজিনের পাতা কোলাজ পদ্ধতিতে ছবির জমিনে জুড়ে দেন। জমিন তৈরিতে তিনি শ্রম দেন নির্মাণ শ্রমিকের মতো করে। ফলে তাঁর জমিনে পরিশীলিত টান টান রূপ তৈরি হয় ঠিক এমন বলা যায় না, বলা ভালো অধিক যত্নবান হয়ে তিনি বিচ্ছিন্নতার সুর সৃষ্টি করেন। সমকালের আর্তি-চিৎকার তাঁর ক্যানভাসকে ঘিরে আছে। দ্রোহ, ক্ষোভ, উত্তাপ, সবুজ ছায়ার আকাঙক্ষা, মানুষ আর প্রকৃতিতে সখ্য – সব ভাবনা তিনি একসঙ্গে দেখাতে চান। এতে করে ছবির কেন্দ্রবিন্দু থেকে দৃষ্টি সরে গিয়ে দর্শকের দৃষ্টি পুরো ক্যানভাসে ছড়িয়ে যায়। এতে বলা যায়, ওয়াজউদ্দিন ছবির নন্দনতাত্ত্বিক বিন্যাস আমলে নেন না। ছবি কী? কেন ছবির ব্যাকরণ মানতে হয়। 888sport live chatের ইতিহাস হাতড়ে দেখলে পাওয়া যায়, ব্যাকরণ আর প্রথাবিরুদ্ধ 888sport live chatীর 888sport free bet নেহায়েত কম নয়।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব888sport live chatকলায় একদল 888sport live chatী অপটিক্যাল, মিনিম্যাল, পপুলার, অ্যাকশন 888sport live chatকর্ম নির্মাণ করতে শুরু করেন। যার রেশ বা পরম্পরা সারা পৃথিবীতে অব্যাহত আছে। ওয়াজউদ্দিনকে আমরা অতিনাটকীয় 888sport live chat-নির্মাণের পথিক বলতে পারি না, বরং নিশ্চিত করে বলা যায় এক অন্তর্মুখী, নিজের ভেতরে লীন হতে থাকা এক 888sport live chatীশ্রমিক। শহুরে জীবনের তপ্ত দুপুর বেয়ে বুড়িগঙ্গার ধার ঘেঁষে নামতে থাকা সন্ধ্যা ওয়াজউদ্দিনের জীবনকে ঘিরে রাখে। এভাবেই একজন 888sport live chatীর জীবন-ক্যানভাস ভরে ওঠে নদীর রঙে, জীবনের রঙে। রাজধানীর কলাকেন্দ্রে গত ২৪ আগস্ট শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ১৬ সেপ্টেম্বর।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.