কল্পনার রং-ছড়ানো নাট্য

আবু সাঈদ তুলু

সম্প্রতি নাগরিক নাট্যাঙ্গন গহর বাদশা ও বানেছা পরী শিরোনামে কল্পনার রং ছড়ানো অনবদ্য প্রযোজনা মঞ্চে এনে অত্যন্ত আলোচিত হয়ে উঠেছে। 888sport appsের দক্ষেণাঞ্চলের বহুল প্রচলিত একটি গাথাকে আলো, পোশাক, সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, প্রপস-মুখোশ ও সমকালীন নাট্যপ্রযুক্তি সহযোগে 888sport live chatসুষমায় অনবদ্য করে তুলে ধরেছে এ-নাট্যদলটি। নাট্যটির নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সদস্য হৃদি হক। গত ১৮ মে, ২০১৬ সন্ধ্যায় 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল মঞ্চে নাটকটির প্রদর্শনী হয়। সেখানে উপস্থিত দর্শকরা এ-প্রযোজনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিপ্রসঙ্গ, নবকথন প্রক্রিয়া, উপস্থাপন-বৈচিত্র্য, নান্দনিকতা ও দর্শকের উপযোগিতা অন্বেষণই এ-লেখার মূল লক্ষ্য।

বাংলার সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন জনপদকেন্দ্রিক এর বিকাশ। বং, বংগাল, বঙ্গ, বাংগালা, বাঙ্গাল, সুবে বাঙ্গালাহ, বেঙ্গল, বাঙলা, বাঙালি, 888sport apps প্রভৃতি শব্দবন্ধজাত ভূভাগ, রাজনীতি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকাশের মধ্য দিয়েই আজকের 888sport apps। প্রাচীন বাংলার যাপিত জীবনের গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মাছের ঝোল, নলিতা শাক, দই, পায়েস, ক্ষীর এখনো 888sport appsিদের পছন্দের খাবার। গুড়, খই, চিড়া, মুড়ি, নারিকেল, পান এবং ফলের মধ্যে কলা, তাল, আম, কাঁঠাল, নারিকেল ইত্যাদি এখনো বাঙালি সমাজে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। ফুলদানি, মাটির খেলনা, খাট, নানা আকৃতির কলস, বাটি, পান ও ভোজনপাত্র, মাটির জালা, লোটা, দোয়াত, দীপাধার, ঘড়া, জলচৌকি, পুস্তকাধার প্রভৃতি আজো বাংলার ঘরে-ঘরে। ঘটচিত্র, সরাচিত্র, শখের হাঁড়ি, পুতুল, নকশিকাঁথা, আল্পনা প্রভৃতি 888sport live chatরুচি আজো বিদ্যমান। নাট্, পাঁচালি, জারি, পালা, পার্বণ বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতিতে অবিচ্ছেদ্য। প্রতিদিন নৃত্যগীতের সাহায্যে নাট্যাভিনয়ের প্রচলনও ছিল প্রাচীন বাংলায়। (নীহাররঞ্জন রায়, বাঙ্গালীর ইতিহাস, আদিপর্ব, দেশ পাবলিশিং, কলকাতা, অষ্টম সংস্করণ, বৈশাখ-১৪২০, পৃ ৪৫১)। তেমনি আজকের 888sport appsের আনাচে-কানাচে হাটবাজারে নৃত্যগীতের মাধ্যমেই নানা আঙ্গিকের নাট্যাভিনয় বিদ্যমান। ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসন বাঙালিকে তার শেকড়চ্যুতকরণে তৎপর থাকলেও এখনো গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি স্তর হাজার বছরের বহমান সংস্কৃতিকেই প্রধান রূপে আঁকড়ে আছে।

সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমির লোকসংস্কৃতি সমীক্ষায় সংগৃহীত 888sport appsের নানা অঞ্চলে প্রচলিত অসংখ্য কিসসা, লোককাহিনি, সংগীত, লোকবিশ্বাস, গীতিকা, পালাগান, নাট্য, ছড়া, ধাঁধা, মন্ত্র, প্রবাদ প্রবচন, জারি, যাত্রাসহ নানা আঙ্গিকের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির বিপুল সমাহারের তথ্য পাওয়া যায়। আজকের 888sport apk ও প্রযুক্তির যুগেও বাংলা একাডেমির সম্প্রতি জরিপকৃত 888sport appsের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসংস্কৃতির বিশাল সমারোহের চিত্র দেখে সত্যি অবাক হতে হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন দেশীয় নিজস্ব সংস্কৃতিকে ‘ফোক’ তত্ত্ববদ্ধ করেছে। এ-ফোক তত্ত্বের তাত্ত্বিক মানদ- ও চর্চার মধ্যে রয়েছে দেশীয় 888sport live chatের বিকাশরোধী সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কৌশল। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের এ-প্রযোজনা সমকালীন বৈশ্বিক 888sport live chatসুষমায় উপস্থাপিত। বাংলার প্রচলিত গাথা উপস্থাপনে বৈশ্বিক ও সমকালীন 888sport live chatচেতনা নাটকটিকে পৌঁছে দিয়েছে 888sport live chat-সৌন্দর্যের অনন্যতায়।

888sport appsের দক্ষেণাঞ্চলের বহুল প্রচলিত একটি গাথা গহর বাদশা ও বানেছা পরী। এর রচিয়তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। একে অনেকে রূপকথা কিংবা লোককাহিনি বলে থাকেন। বহুল প্রচলিত কোনো গাথা বা কাহিনিকে নাট্যমঞ্চায়ন করতে গেলে নানা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়। তাতে প্রচলিত কাহিনির মূল রসপ্রাপ্তি নিয়ে নানা জনের ভালো-মনদ নানা মন্তব্য থাকে। হৃদি হক সম্ভব সে-পরিপ্রেক্ষিতেই প্রচলিত গল্পটি নিজের নাট্যভাষায় বলতে চেয়েছেন। এ-প্রযোজনাটিতে ‘নাট্যকার’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘সংকলিত গল্পের নবকথন’ শিরোধায় উপস্থাপন করেছেন তিনি। এটি তাঁর প্রথম মঞ্চনাটক নির্দেশনা। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ২০তম প্রযোজনা। নাটকটি উপস্থাপন, অভিনয়, আবহসংগীত, কোরিওগ্রাফি সব মিলিয়ে প্রশংসিত হয়েছে নাট্যমহলে।

নাটকটির কাহিনি এমন – বাদশা বিশ্বিং এসেছিলেন শিকার করতে। সারা বন খুঁজে শিকার না পেয়ে পরিশ্রান্ত বাদশা দোষ দিচ্ছিলেন নিজের ভাগ্যকে। ঠিক তখনই অদূর জলাশয়ে হরিণশাবকের আগমন অনুমান করে তীর ছোড়েন। পরক্ষণেই মানবসন্তানের কান্না বুঝিয়ে দেয় তিনি হরিণশাবক নয়, মনুষ্য সন্তানকে হত্যা করেছেন। অন্ধমুনি অভিশাপ দেন – সন্তান হারানোর কষ্ট তাকেও বইতে হবে। সেই অভিশাপের পর দুই পুত্রের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয় বাদশার। প্রথম সন্তানের নাম রাখেন গহর ও দ্বিতীয় সন্তানের নাম সনাতন। রাজ্যজুড়ে যখন আনন্দের বন্যা। কিন্তু বাদশার মনে সন্তান হারানোর ভয়। ধীরে-ধীরে বড় হতে থাকে সন্তানদ্বয়। কিন্তু বাদশা তার নিয়তিকে আটকে রাখতে পারেন না। বারো বছর বয়সে বিশ্বিং যখন বড় ছেলে গহরকে রাজ্যের অধিপতি করেন, তখন উজিরের চক্রান্তে গহর বনে শিকার করতে যায়। সেখানে গিয়ে সে বন্দি হয় দানবের হাতে। উজির রাজপ্রাসাদে এসে প্রচার করে, গহরকে বাঘে খেয়েছে। রাজা বিশ্বিং শোকে আত্মহত্যা করেন। রানী ও ছোট সন্তান সনাতনকে বন্দি করে রাজক্ষমতা দখল করে উজির। দানবের হাত থেকে রেহাই পেলেও বানেছা পরীর প্রেমবাণে উন্মাদ হয়ে ওঠে গহর। অনেক কৌশল, ত্যাগ, বাধাবিপত্তি পেরিয়ে পরিস্থানে পৌঁছায় সে। অনেক কৌশলে লাভ করে বানেছাকে। বহু যুদ্ধ ও সংগ্রাম পেরিয়ে একসময় বানেছাকে নিয়ে রাজ্যে ফেরে গহর; কিন্তু ততদিনে রাজ্য উজিরের দখলে। অবশেষে নানা দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বুদ্ধি, মেধা ও কৌশলে গহর জয় করে নিজের রাজ্য। এভাবেই কাহিনি এগিয়ে চলে।

নাটকটি উপস্থাপন করা হয়েছে ইউরোপীয় প্রসেনিয়াম মঞ্চধারায়; যদিও নাট্যবিষয় গ্রামবাংলার আবহমান পালা উপস্থাপনের মতো চারদিকে দর্শকবেষ্টিত মঞ্চে উপস্থাপনের দাবি রাখে। সমস্ত উপস্থাপনার মধ্যেই লোকজ একটি আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। মঞ্চটির পেছনে ও দুপাশে সাদা পর্দা ঝোলানো। দুপাশে তিনটি করে পাতা এবং পেছনে সাদা সায়াক্লোমার সামনেও অনেকগুলো পাতা ঝোলানো। সঙ্গে হালকা রঙের ঝালর। পাতার পরিবেশ দিয়ে বন-জঙ্গল এবং ঝালর দিয়ে রাজদরবারের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। মঞ্চের সবকিছুই সাদা। প্রকৃতপক্ষে এই সাদা রং দিয়ে নতুন এক 888sport live chatমাত্রা বা বৈচিত্র্য তৈরি করেছেন নির্দেশক। এই সাদা পর্দাগুলোতে নানা রং ফেলে নানা দৃশ্য রং, রূপ ও বৈচিত্র্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিরাভরণ বর্ণহীন মঞ্চে আলোর খেলার নতুন 888sport live chatবাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়। সায়াক্লোমার সামনে দুপাশে যন্ত্রীদল বসা। তার সামনে একটি উঁচু পাটাতন। পাটাতনটি রাজপ্রাসাদসহ নানা দৃশ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। সামগ্রিক মঞ্চবিন্যাসে এক ধরনের উঁচুতর 888sport live chatবোধের পরিচয় দেয়। নানা রঙের আলোয় নিরাভরণ স্থানে কীভাবে রঙিন দৃশ্য ফুটে ওঠে, তা দর্শককে অবচেতনীয় আনন্দের জোয়ারে ভাসায়। উপস্থাপনাটিতে নির্দেশকের বিসত্মৃত কল্পনা, নাটকীয়তা, নৈর্ব্যক্তিক নানা শৈল্পিক মাত্রার প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। নাটকটিতে একসঙ্গে কণ্ঠসংগীত, লাইভ মিউজিক ও রেকর্ডেড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে। নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ মিউজিকের অনুষঙ্গও আলাদা বৈচিত্র্য তৈরি করেছে। অসাধারণ মিউজিক ডিজাইন। বিদেশি বিভিন্ন ফোক মিউজিকের মিশ্রণও ঘটেছে এতে। চরিত্র ভিত্তিতে, একই অনুভূতি কিংবা অমত্মঃব্যঞ্জনা অনুসারে একই মিউজিক পরম্পরায় ব্যবহার করা হয়েছে নাটকে।

নাটকের শুরুতেই দেখা যায়, সূর্য ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে বনের বৃক্ষগুলো জেগে উঠছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই এ-বনের বৃক্ষের রূপদান করেছেন। সময়ের পরিবর্তনে তাদের প্রস্ফুটনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত নান্দনিক। কোরিওগ্রাফি, মিউজিক ও আলোর মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন নির্দেশক। আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে বন। অসাধারণ মিউজিক, সঙ্গে দানবের অট্টহাসি এবং বিশ্বিং বাদশার শিকারের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নাট্যটি শুরু হয়। কী অসাধারণ কল্পনা। ঘোড়াগুলোর নৈর্ব্যক্তিকতা অসাধারণ। গ্রামীণ জীবনে বহুল প্রচলিত কিস্সাপাঠের আবহ কণ্ঠে কাহিনির বর্ণনার মধ্য দিয়ে ঘটনায় প্রবেশ। প্রপস ও মুখোশগুলো গ্রামীণ 888sport live chatকলারই প্রতিনিধিত্ব করে। শিকার না পেয়ে বাদশার বিরহের মধ্যেও বারমাস্যার মতো গ্রামবাংলার শোকগীতি নতুন এক 888sport live chatসুষমায় ধরা দেয়। নাটকের প্রপস, মুখোশ, মিউজিক সবকিছুর মধ্যেই ঐতিহ্যবাহী বাংলা সংস্কৃতির অসাধারণ মিশ্রণ ঘটেছে। ঘটনা বর্ণনা ও উপস্থাপনেও গ্রাম্য সরলতা লক্ষ করা গেছে। পরিমিতিবোধ সম্পন্ন উপস্থাপন। পোশাক ডিজাইন অত্যন্ত কালারফুল। আবহ ডিজিটাল মিউজিক একটা সিনেম্যাটিক ফ্লেভার তৈরি করেছে। নাচ-গান, অভিনয়, গল্পকথন সবমিলিয়ে অসাধারণ এক প্রযোজনা এটি। ‘দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়’ গান ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে সময় পরিক্রমে গহর বাদশার বড় হওয়ার দৃশ্যেও অত্যন্ত নান্দনিক বোধের প্রকাশ ঘটেছে। বিশেষত গহরের অভিষেক দৃশ্যটি অত্যন্ত চমৎকার নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছে। কাহিনিগুলোর মধ্যে কোনো প্রলেপ নেই। গহরের বিয়ের দৃশ্যও অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল ও রঙিন।

কিছু-কিছু জায়গায় বর্ণনা থাকলেও নাট্যটি চরিত্রাভিনয়ের। সব চরিত্রই মঞ্চে খালি পায়ে বিচরণ করেছে। উজিরের অভিনয় অসাধারণ। একই চরিত্রে তরুণ উজির ও বৃদ্ধ উজিরের অসাধারণ প্রাণবন্ত অভিনয়। গহর চরিত্রে দুজন অভিনয় করেছেন। দুজনের অভিনয়ই অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও শৈল্পিক। মাঝে মাঝেই কিস্সা কথন ও পুঁথি পাঠ কিংবা পটচিত্রের মতো উপস্থাপিত হয়েছে। শিকারের সব হারিয়ে সরোবরের পাশে গহরের অপেক্ষা এবং সেখানে বানেছা পরী ও তার সখিদের নৃত্য অসাধারণ। পরম্পরা ছাড়াই যেন গহর ও বানেছার প্রেম গভীর প্রেমে রূপ নেয়। বানেছাকে একা পেয়ে বনের মধ্যে উজির আক্রমণ করে। বানেছা মোহমায়াবলে উজিরকে ধরাশায়ী করে। বানেছা ফিরে যায় পরীস্থানে। এ-দৃশ্যে বানেছার উঁচু হয়ে যাওয়া উজিরকে আঘাত করার চলনটি অসাধারণ মোহ সৃষ্টি করেছে। বানেছার বিরহে গহর প্রায় পাগলপারা হয়ে যায়। বারো বছরের পরিবর্তনে গহর চরিত্রের অভিনেতার পরিবর্তন ঘটে। ‘বানেছা বানেছা’ বলে একাধিক গহরের প্রতিধ্বনিটি এক নতুন মাত্রা যোগ করে। গহর যাত্রা করে পরিস্থানে। পথে সর্প হত্যা করে। বাংলার গ্রামীণ লোকবিশ্বাস এখানে অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রতিস্থাপিত। সর্প হত্যায় পুণ্য হয়। সাপটি চার টুকরা হয়ে চারদিকে গড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি অসাধারণ। পাখির সিম্বলও অত্যন্ত শৈল্পিক। পাখিরা গহরকে তাজ, ঘুঙুর ও গাছের ডাল উপহার দেয়। পাখির মুখোশগুলো অসাধারণ। পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য অত্যন্ত আবেগ সৃষ্টি করে দর্শকদের মধ্যে। সায়াক্লোমায় ভেসে ওঠে অর্ধচন্দ্র। রঙিন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মঞ্চ। পরিস্থানে পৌঁছে গেছে গহর। তবে উঁচুতর মিউজিকের পাশে যদি হঠাৎ বিরহী কণ্ঠের ধীরলয়ের সংগীত বেজে উঠে তা শ্রম্নতিকটু লাগে। নতুন দানবের আগমন ঘটে। দানবের আগমনকে ভয়ার্ত ও আকর্ষণীয় করতে নির্দেশক পেছনে ‘ফগসে’র ধোঁয়া ব্যবহার করেছেন। নানা মোহ ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে নাটকে। শিংওয়ালা এ-দানবের বহুরূপীত্ব অসাধারণ। রূপকথার মতোই এক দানব মরলে সব দানব মরে যায় প্রভৃতি চিন্তন স্থান পেয়েছে এতে। তবে, এ-দৃশ্যে পরক্ষণে মৃত দানবদের উঠে নৃত্য করা দৃষ্টিকটু লেগেছে। নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিরাজ সন্তুষ্ট হয়ে গহরের সঙ্গে বানেছাকে বিয়ে দেয়। গছর ও বানেছা হৃদরাজ্য পুনরুদ্ধারে ফিরলে পথের মধ্যে বিরহী কলাবতীর সঙ্গে দেখা হয়। রাজা-বাদশাদের বহুবিবাহ রূপকথার একটি অঙ্গ। এখানে গহরের বহুবিবাহের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে গহর কৌশলে বাউল বেশে নিজ রাজ্যে ফেরে। নির্দেশক কাহিনিতে এখানে উজিরের সুখ-দুঃখ নিয়ে একটি মজার গেম সৃষ্টি করেছেন। পরিবেশে অসুরের বিনাশ ও গহরের পুনঃরাজ্যাভিষেকের মধ্য দিয়ে নাটকটির পরিসমাপ্তি ঘটে।

নাটকটিতে গহরের দ্বিতীয় স্ত্রী শরাবান চরিত্রের বিকাশ লক্ষণীয় ছিল না। গিলামাইট বনে উজিরের সৈন্য-সামন্তকে বশীভূত করায় মনে হয়েছে উজির মায়াবিদ্যা জানে; কিন্তু অন্য কোথাও উজিরের এমন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়নি। আলো, মিউজিক, নৃত্য, কোরিওগ্রাফি মিলে উপস্থাপনাটিতে সিনেম্যাটিক ফ্লেভার তৈরি হয়েছে। তবে নির্দেশকের সচেতন থাকতে হবে, সিনেমা নয়, তিনি মঞ্চে নাটক উপস্থাপন করছেন। অত্যন্ত কালারফুল উপস্থাপন। রূপকথার সেই রঙিন কল্পজগতেই নিয়ে গিয়েছিলেন নির্দেশক।

সাধারণত গাথাগুলোর কাহিনিপরম্পরায় যুক্তিহীনতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু নাগরিক নাট্যাঙ্গনের এ-প্রযোজনায় গল্পের উপস্থাপনে তেমন কোনো হালকাবোধ কিংবা হেঁয়ালি মনে হয়নি। কাহিনি উপস্থাপন পরম্পরা অত্যন্ত টানটান ও চমৎকার। উক্তি-প্রত্যুক্তি বা সংলাপগুলোও অত্যন্ত পরিমিত। নির্দেশক শুধু অধিক প্রয়োজনীয় সংলাপগুলোই ব্যবহার করেছেন। বর্তমান সময়ে প্রচলিত একটি গাথাকে যে প্রযুক্তি-বাস্তবতায় শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে তা নির্দেশক দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রায় প্রত্যেকের অভিনয়ই অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও শৈল্পিক। নৃত্যগীতও ছিল অসাধারণ। অধিকাংশ চরিত্রের মধ্যে বাচিক প্রক্ষেপণ ও মড্যুলেশনও ছিল চমৎকার। মঞ্চে বিভিন্ন দৃশ্য উপস্থাপনে পর্দা, সাজেশন ও আলোর ব্যবহার ছিল অনবদ্য। কোরিওগ্রাফিও পরিমিতিবোধসম্পন্ন। রেকর্ডকৃত ডিজিটাল মিউজিক সিনেম্যাটিক একটি ফ্লেভার যেমন তৈরি করেছে, তেমনি লাইভ কণ্ঠসংগীতের ব্যবহারও নাটকটিকে করেছে প্রাণবন্ত। সবকিছুর মধ্যেই লোকসংস্কৃতির একটা সম্মিলন ঘটেছে। হাতি, ঘোড়া, সাপ, পাখি প্রভৃতি মুখোশ নির্মাণেও অত্যন্ত উন্নত 888sport live chatবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। পোশাক পরিকল্পনা নান্দনিক এবং অত্যন্ত কালারফুল। নাটকটিতে রঙের ব্যবহার অত্যন্ত শৈল্পিক। দলগত প্রচেষ্টা বা টিমওয়ার্ক ছিল অসাধারণ। নাচ-গান-অভিনয় সবমিলে অসাধারণ পরিবেশনা। সহজ-সরল, নির্মল বিনোদন, কালারফুল, উপভোগ্য শৈল্পিক প্রযোজনা গহর বাদশা ও বানেছা পরী। দেশজ 888sport live chatের এমন রঙিন বৈশ্বিক 888sport live chatমাত্রার উপস্থাপন নাটকটিকে করেছে গুণান্বিত।

গহর বাদশা ও বানেছা পরী নাটকের মঞ্চ-পরিকল্পনায় সাজু খাদেম, কণ্ঠ, যন্ত্র ও আবহ-সংগীতে কামরুজ্জামান রনি, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, কোরিওগ্রাফিতে ওয়ার্দা রিহাব, পোশাক পরিকল্পনায় মাহমদুল হাসান মুকুল এবং সংকলিত গাথার পুনঃকথন ও নির্দেশনায় হৃদি হক। r