আন্দালিব রাশদী
888sport app শহরের দেয়ালের লিখন যদি বিপ্লব ছড়াতে পারে, স্বাধীনতার আগুন জ্বালাতে পারে, ফাঁসির দাবি জানাতে পারে, ভোট ভিক্ষা চাইতে পারে, সরকার উৎখাতের হুমকি দিতে পারে, জনৈক বাবুল মিয়া এবং অজ্ঞাত এক লাইলির মাঝখানে যোগচিহ্ন বসিয়ে তাদের ভালোবাসার ডঙ্কা বাজাতে পারে, নিরাপদ এমআর এবং ডিঅ্যান্ডসির গ্যারান্টি দিতে পারে, তাহলে তার কষ্টের কথা কেন শহরবাসীকে জানাতে পারবে না?
সে-কারণে 888sport app শহরের দেয়ালে দেয়ালে তার কষ্টের কথা লেখা আছে। লেখা আছে বলা ঠিক হবে না, লেখা ছিল। সময় দেয়ালের লিখন মুছে দেয়।
ব্রাশের আঁচড় ইট কি মনে রাখে? কে জানে। কিংবা প্লাস্টার? তিনি দেয়ালে দেয়ালে কষ্টের সিলমোহর মেরেছেন। কম্পমান রেখা বলে দেয় Ñ কষ্ট তার একটু বেশিই।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের উলটোদিকে শিক্ষকদের বহুতল আবাসনের সীমানাদেয়ালে কালো অক্ষরে দরদ মিশিয়ে তিনি লিখলেন : কষ্টে আছে আইজুদ্দিন।
এই তিনটি শব্দ মিলেই তৈরি করেছে তার বেদনার সিলমোহর।
তার বিশ্বাস দু-চারজন লম্পট ও বেপরোয়া দলবাজ শিক্ষক বাদ দিলে রাস্তার এপারে-ওপারে বেশ কজন ভালো মানুষ বাস করেন। ভালো মানুষই ভালো শিক্ষক। ভালো শিক্ষকরা তার কষ্টের কথা জেনে রাখুন। তারা অন্তর দিয়ে অনুভব করবেন এবং শিক্ষার্থীদের অনুভূতিকে আরো সংবেদনশীল করে তুলবেন।
ছাত্রীদের পুরনো হলটির মূল ফটকের ডান পাশে প্রায় তিরিশ গজ দূরে ফাঙ্গাস-888sport app দেয়ালের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। ফাঙ্গাস এক প্রকার বৃক্ষ; দেয়াল বৃক্ষের জন্ম দিয়েছে। কাটা একটা টিনের পাত হাতে নিয়ে তিনি বেশ খানিকটা জায়গা চেঁছে দেয়াল বের করলেন। মোটা ব্রাশ কালো রঙে চুবিয়ে লিখলেন : কষ্টে আছে আইজুদ্দিন।
কালো হরফের তিনটি শব্দের আকুতি কি কারো চোখেই পড়বে না? তিনি ভাবলেন, মেয়েদের কারো কারো অন্তর পাষাণের মতো হলেও অধিকাংশ মেয়ের অন্তর এখনো কোমল। তার কষ্টের কথা কোমল অন্তরের মেয়েরা কেন জানবে না?
মন্ত্রীদের পাড়ায় দেয়ালে তেমন ফাঙ্গাস নেই। দেয়ালের ইটে দুনম্বরী কম। প্লাস্টারে সিমেন্ট-বালুর মিশেলে সবটাই বালু নয়, সিমেন্টও আছে। প্লাস্টার ভালো, গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার দেয়ালে চুনকামের কাজটা ভালোই করেছে। সমস্যা একটাই : নেতা ও নেতার সন্তান-সন্ততির গুণকীর্তনে দেয়াল ঠাসা। না মুছে নতুন কিছু লেখার সুযোগ নেই। নেতারা যদি খোঁজা হতেন, নেত্রীদের যদি জরায়ু না থাকত, দেয়ালে কিছুটা শূন্যস্থান পাওয়া যেত। তিনি নামগুলোর দিকে আড়চোখে তাকান Ñ এসব নামের সঙ্গে পৃথিবীতে লভ্য সকল ভালো বিশেষণই দারুণ মানায়। গুণের বর্ণনা স্থির থাকে কিন্তু ঋতুভেদে কেবল নাম পালটায়।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে আনুমানিক দশ ফুট বাই আড়াই ফুট দেয়ালের অংশ নিজ অধিকারে আনার উদ্দেশ্যে এক কোট চুনা মারলেন। একবার মনে হলো নামগুলো তলিয়ে গেছে, কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যেই আবার ভেসে উঠল। তারপর আরো এক কোট গাঢ় চুনা।
ততক্ষণে সীমানা দেয়ালের গা-ঘেঁষা ড্রেন থেকে উঠে আসা মশার একটি বিক্ষিপ্ত বাহিনী তার অবস্থান অসহনীয় করে তোলে। তিনি একবার পশ্চিমে যান একবার পূর্বে। দ্বিতীয় প্রলেপের চুনা শুকিয়ে এলে তিনি তার প্রিয় কালো অক্ষরে প্রিয় শব্দ তিনটি লিখলেন : কষ্টে আছে আইজুদ্দিন।
তার বিশ্বাস মন্ত্রীদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ সেবা বলতে মানুষের সেবাই বোঝেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার হাতড়ানো নয়। তারা যদি তার কষ্টের কথা জানতে পারেন, ব্যথিত হবেন।
তিনি একবার তোপখানা রোডে আসেন, একবার নবাব আবদুল গণি রোডে। দুদিকেই সচিবালয়ের দীর্ঘ সীমানাদেয়াল। তার কথা উৎকীর্ণ করার মতো যথেষ্ট পরিসরও আছে। কিন্তু সচিবালয়ের যন্ত্রমানবদের ওপর তিনি আস্থা আনতে পারেন না। তারা দেয়ালের লিখন পড়েন না, অহর্নিশ সংস্কারের কথা বলেন, নেতানেত্রীদের অপঘাত মৃত্যু কামনা করেন এবং তাদের কুলখানিতে আয়েশ করে রসালো জিলিপি খান।
তিনি সচিবালয়ের দেয়ালে কিছুই লিখলেন না।
তোপখানা রোড ধরে এগিয়ে জাতীয় ঈদগাহ বাঁয়ে রেখে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভাজক রাস্তা ধরে তিনি ফুলের দোকানের সামনে এসে ঘ্রাণ নেন। মধ্যরাতে দোকান খোলা থাকে না, তবে কোনো কোনো দোকানে পরের দিনের চালানটা আগাম চলে এলে দোকানিদের সজাগ থাকতে হয়। ফুলের গন্ধ কষ্ট কমায় না বাড়ায়, তিনি বুঝতে পারেন না। কিন্তু তার ভালো লাগে। কষ্টের সবটুকুই কি আর যাতনা, সুখ কি একটুও নেই? প্রশ্নটা তারই। তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে নিজেকেই জবাব দেন। তার জবাব ফুলের দোকানের সামনে বিজলি বাতির আলো ও মেঘলা আকাশের অন্ধকারে ঘুরপাক খায়। অন্যরা এর মানে বুঝতে পারে না।
রাস্তা পার হয়ে জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি ডিঙিয়ে তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউশনের দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়ান। চার ব্যাটারির টর্চলাইট জ্বেলে দেয়ালে একটুখানি জায়গা খোঁজেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত Ñ পুরো দেয়ালজুড়ে সুখের আল্পনা আঁকা। দুঃখের কথার কোনো ঠাঁই নেই। তিনি তার অনুসন্ধানী চোখ ব্যবহার করে দুই আল্পনার মাঝখানে এক চিলতে জায়গা বের করেন। ব্যাগ থেকে কালো রং ও ব্রাশ বের করে চারপাশটা একবার দেখে নেন। টহল পুলিশ কিংবা বিশেষ কোনো বাহিনীর গাড়ি এ-পথে আসতে-যেতে যদি তার কাছাকাছি থেমে যায়, তাহলে বলবেন, তিনিও 888sport live chatী। কষ্টের 888sport live chatী।
এক চিলতে জায়গাতে কালো কালিতে লিখলেন : কষ্টে আছে আইজুদ্দিন। তিনি ভাবলেন কথাটা যদি নবীন 888sport live chatীদের কারো অন্তরে গেঁথে যায় তাদেরই কেউ আঁকবেন তার কষ্টের তৈলচিত্র, কেউ তৈরি করবেন কষ্টের ভাস্কর্য। বিমূর্তধারার কোনো 888sport live chatীর আঁকা ছবির নাম হবে ‘আইজুদ্দিনের কষ্ট’; কিন্তু সেই ছবি দেখে কেউ বুঝবে না কোথায় আইজুদ্দিন আর কোথায় তার কষ্ট। বিমূর্ত ছবি এমনই। তবু 888sport live chatীরা তার কষ্টের কথা জানুন।
শীতের রাতে বারিধারা দূতাবাস সড়কে সদ্য চুনকাম করা একটি দেয়ালে সযতেœ লিখলেন : কষ্টে আছে আইজুদ্দিন।
তার কষ্টের আন্তর্জাতিকীকরণ হোক এটা তিনি চাইতেই পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূতরাই তার সহায় হতে পারেন।
লেখাটা শেষ করার পরই মনে হলো এক্সিলেন্সি রাষ্ট্রদূত কিংবা হাইকমিশনার নিশ্চয়ই বাংলা জানেন না। তাহলে এ-লেখা পড়তে পারবে কেবল তাদের পাহারাদার আর দেশি বাবুর্চি।
কষ্টের যথার্থ কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ তার মনে পড়ল না। আইজুদ্দিন ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, বড় করে দম নেয়, বিড়বিড় করে বলে Ñ যারা বাংলা জানে না তাদের মনে হয় কষ্ট নেই। সেজন্যেই সঠিক শব্দটি তারা আমাদের জানাতে পারেননি।
সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলা লেখাটার পাশে ঠিক তিন শব্দের একটি ইংরেজি বাক্য লিখবেন : আইজুদ্দিন ইজ সাফারিং।
তার সন্দেহ ‘সাফারিং’ শব্দটি তার বিশাল কষ্টের বড়জোর এক রত্তি প্রকাশ করবে, তবু একটু তো কাজ হবে। পশ্চিমের রাষ্ট্রদূতরা 888sport appsের ভেতরে এদেশের মানুষের সাফারিংস নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। নিজ দেশে আবদ্ধ ভ্যানে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছত্রিশ 888sport appsির মৃত্যু তাদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগায় না। আইজুদ্দিনের সাফারিংস যদি তাদের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে মন্দ কী।
ইংরেজিতে কেবল লিখতে শুরু করেছেন অমনি দুই সুবেশ পাহারাদার তার বাপ-মা তুলে গাল দিয়ে রঙের কৌটা, ব্রাশ আর চার ব্যাটারির টর্চলাইট কেড়ে নিয়ে বলল, শালা এক্ষণ ভাগ, পুলিশে দেবো।
তিনি এটা মেনে নেন। এটা বড় ধরনের দুর্ব্যবহারের পর্যায়ে পড়ে না। লালবাগ দুর্গের বাইরের দেয়ালে ‘কষ্টে আছে’ এটুকু লেখার পরই স্থানীয় মাস্তানরা তাকে বেদম মার দিলো। একজন বলল, ঘোড়ার পো হেভি ছ্যাঁকা খাইছে ওস্তাদ। ওস্তাদ বলল, আহা! দিল ব্যাপারী মজনু মিয়া! হালারে ধইরা চুমা খা।
তিনি পিছু হটেননি। সিটামল ট্যাবলেট খেয়ে শরীরের ব্যথা সহ্য করেছেন। নতুন করে রং, ব্রাশ, টর্চ এসব কিনেছেন।
তিনি কষ্টের কথা লিখেছেন হৃদরোগ হাসপাতালের দেয়ালে।
একই কথা লিখতে চেয়েছেন সংসদ ভবনের দেয়ালে। কিন্তু চারদিকে সশস্ত্র প্রহরা থাকায় কালো রঙে চুবানো ব্রাশ বের করতে পারেননি। পার্লামেন্ট নিয়ে মহামতি লেনিন কিসের যেন খোঁয়াড় কিংবা যা-ই বলে থাকুন না কেন তার মনে হয়, এমপিদের মধ্যে যারা কষ্টে আছেন তারা নিশ্চয়ই তাকে বুঝতে চেষ্টা করবেন।
একবার ভেবেছেন, একটি অতিকায় বেলুনের গায়ে ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন’ কথাটা লিখে সংসদ ভবনের আকাশে উড়িয়ে দেবেন। 888sport app শহরের সব কেপিআই Ñ কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের শীর্ষে উডুক তার কষ্টের পতাকা; কিন্তু সে-সামর্থ্য তার কোথায়?
যখন প্রেসক্লাবের দেয়ালে চুনা মেরে সাদার ওপর ওই কথাটি লিখতে শুরু করলেন, বন্ধ ঘোষিত একটি পত্রিকার চাকুরে কবি নাসিরুল ইসলাম এক নম্বর দশ ইঞ্চি ইট হাতে নিয়ে তেড়ে এলেন। বললেন, কী লিখছিস?
তিনি বললেন, আমার কষ্টের কথা। কষ্টে আছে আইজুদ্দিন।
কষ্টের মায়েরে বাপ Ñ এমন একটা অকাব্যিক কথা বলে নাসিরুল ইসলাম ইট ছুড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলার হুমকি দিলে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। সেদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল, হয়নি। তিনি ছাতা নিয়ে বের হয়েছিলেন। সে-রাতেই ছাতার আড়ালে কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়ালে কষ্টের কথাটি লিখতে পেরেছিলেন। কারা-পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে, বাধা দেয়নি। একজন এগিয়ে এসে বলল, লাল রঙে লেখ, চউক্ষে বেশি পড়ব।
আইজুদ্দিন কারা-পুলিশের আচরণে সন্তুষ্ট হন।
পরের রাতে তার অপারেশন কমলাপুর সফল হয়। তিনি একটি ওয়াগনের গায়ে কষ্টের কথাটি লিখতে সমর্থ হন। এই ওয়াগন চট্টগ্রাম যাবে। কথাটা সেখানকার মানুষও জানুক।
কষ্ট বড় সংক্রামক। আইজুদ্দিন কষ্ট ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। কষ্টের বোমা যেখানে-সেখানে নিক্ষেপ করছেন। দেয়ালে দেয়ালে কষ্টের সিলমোহর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা আবার কোন অ্যানথ্রাক্স?
এটা আবার কোন ডব্লিউএমডি? উইপন অব মাস ডেস্ট্রাকশন!
সাতাশতম দিনে আরো একটি কেপিআইর দেয়ালে ব্রাশ চালাবার মুহূর্তে হাতেনাতে ধরা পড়েন। তিনি বুঝতে পারেননি যে একটি এলিট বাহিনী তার জন্যই ওঁৎ পেতে ছিল। তারা কষ্টের সমাপ্তি টানতে চাচ্ছেন।
তিনি কিছু বোঝার আগেই সশস্ত্র চারজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি ভূপতিত হন। তার মাথা দেয়াল-ঘেঁষা নর্দমার নোংরা আবর্জনা ছুঁয়েছে, দেহটা উপুড়, পিছমোড়া করে কড়া লাগানো। আশি কেজি ওজনের একজন তার পিঠে বসেই আছেন।
গ্রেফতারের সময় ব্রাশটি তার হাতেই ছিল। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াডের সদস্যরা সতর্ক হাতে তার হাতব্যাগটি সরিয়ে নিল। চক্ষু সরু করে তাদের চারজন দূর থেকে ব্যাগের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করল। তাদের চোখ বিস্ফারিত হয়নি, পাছে তার ব্যাগের তেজস্ক্রিয় কোনো দ্রব্যের হঠাৎ ঝলকানি তাদের চোখ অন্ধ করে দেয়। পরবর্তী আধঘণ্টায় তাকে ঘিরে রাখা এলিট সদস্যের 888sport free bet একশ ছাড়িয়ে গেল। সার্ক স্কোয়াডের সদস্যরা বিশেষ সতর্কতার মধ্যে তার ব্যক্তিগত অধিকারে থাকা দ্রব্যসামগ্রীর একটি তালিকা তৈরি করলেন :
১ x ৩ ফুট বাই ২ ফুট চটের ব্যাগ
১ x ১৮ ইঞ্চি চায়নিজ স্কেল
৩ x ব্রাশ (১ বড় + ১ মাঝারি + ১ ছোট)
১ x এইচবি পেনসিল
১ x চুনা গোলাবার কৌটা (বড়)
৪ x কালো রঙের কৌটা
১ x স্পিরিটভর্তি বোতল
১ x নতুন গামছা
৯ x প্যারাসিটামিল ট্যাবলেট (পাতার একটি খাওয়া হয়েছে)
১ x অর্কভুক্ত ছোট পাউরুটি
১ x বড় বাহু-মাদুলি
১ x ভেতরে ছবিযুক্ত লকেট (কালো সুতোয় ঝুলানো)
১ x একশ 888sport cricket BPL rate টাকা পঁচিশ পয়সা
১ x ব্রেসিয়ারের একাংশ Ñ একটি লাল কাপ।
বড় ব্রাশটি ছিল হাতে, একটি রঙের কৌটা বাইরে, টাকাগুলো প্যাকেটে আর সবই চটের ব্যাগে। চৌদ্দ পদের এ-তালিকাটির নাম সিজার লিস্ট। তালিকার নিচে ডান পাশে তাকে সই করতে হবে। এলিটদের একজন ধমকে উঠলেন, আরবিতে সই করুন।
তিনি বললেন, সইয়ের কোনো ভাষা নেই।
স্কুলজীবনে আল-আদাবুল আসরে এবং আল-আদাবুল জাহিদ নামের দুটো কেতাব পড়ার কারণে তিনি কিছুটা আরবি শিখেছেন। নাম লেখাও। তিনি সিজার লিস্টে বাংলা ও ইংরেজির পাশে আরবিতেও নামটা লিখে নিলেন। এছাড়া তিনটি সাদা কাগজে নিচের দিকে তিন ভাষাতেই নিজের নাম লিখলেন। এতে তারা তাদের ইচ্ছেমতো আসামির স্টেটমেন্ট লিখবেন।
তাকে কোথায় আনা হলো বুঝতে পারেননি। রাতের বাকি অংশ টাইল-বসানো মসৃণ মেঝেতে ঘুমোবার সুযোগ পান। গ্রেফতার হওয়ার মুহূর্ত থেকেই তার কষ্টের তীব্রতা একটি বিন্দুতে স্থির হয়ে গেছে। মেঝেতে তোষক-বালিশ এসব না থাকলেও তার কষ্টের কোনো ওঠানামা না থাকায় তিনি বেশ ঘুমিয়েছেন। যারা তাকে নিয়ে এসেছেন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাননি। ঘুম ভাঙতেই দেখেন তার সামনেই একটি ট্রেতে কয়েকটি পরোটা, এক বাটি ছোলার ডাল এবং একবাটি রঙিন হালুয়া। এই হালুয়া তার অতিপ্রিয়। আগের দিনের কাস্টমারদের উচ্ছিষ্ট ভাঙা মিষ্টি এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন তাবৎ মিষ্টান্ন একপাতে সুজির সঙ্গে গুলিয়ে পোড়া তেল-ঘিতে ভেজে মিষ্টির অঢেল উচ্ছিষ্ট সিরা ঢেলে এই বাহারি হালুয়াটি তৈরি করা হয়। হালুয়া তার ক্ষুধা উসকে দেয়। বাইরে থেকে একপাট জানালা খুলে সুদর্শন একজন প্রহরী বলল, ড্রেনের ময়লার গন্ধ সহজে যায় না। অ্যাটাচড বাথরুম আছে, ভেতরে সাবান, গামছা আছে। যান, পরিষ্কার হয়ে নাস্তা সেরে নিন।
তার বাড়তি কোনো পোশাক নেই। সুতরাং পরনের যা কিছু ছিল তা-ই খুলে বেসিনের বাঁদিকে ছোট রেলিংয়ে রেখে সাবান ঘষে একটা ভালো গোসল দিলেন। নর্দমার আঠালো ময়লা তখনো মাথায় জট পাকাতে পারেনি। ঠিক গামছা নয়, পুরনো একটা তোয়ালে ছিল। শরীরটা মুছে এদিক-ওদিক তাকান। কেউ তার নগ্নøানের ভিডিও করেনি তো? কোনো লুকোনো ক্যামেরা?
অবশ্য 888sport appsের হাড়-জিরজিরে পুরুষ মানুষের নগ্নতার কোনো বাজারমূল্য নেই।
দুপুরে খাওয়া নাও মিলতে পারে – এ-আশঙ্কায় তিনি সবকটা পরোটা, সবটুকু ডাল ও হালুয়া খেয়ে নেন। পাহারাদার আবার জানালায় উঁকি দিয়ে বলে, আপনার জন্য দুটি গরম সেদ্ধ ডিমের বরাদ্দও ছিল। স্যার নিজেই সার্ভ করবেন।
কিছুক্ষণ পর দরজার তলা দিয়ে বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক ঢুকিয়ে দিয়ে পাহারাদার বলল, প্রথম পাতায় আপনার ছবি আছে। আপনি এখন সেলিব্রেটি।
তার হ্যান্ডকাফ নেই, পায়ে ডান্ডাবেড়িও না, ভেতরের কষ্টও স্থির – খবরের কাগজ পড়তে অসুবিধে নেই। দেয়ালে ঠেস দিয়ে তিনি শিরোনাম পড়তে শুরু করলেন : শেয়ারবাজারে ধস : অর্থমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ; পেন্টাগন ইরান অভিযানের পরিকল্পনা করছে; চাঁদনী গণধর্ষণের সকল আসামি বেকসুর খালাস; অস্ত্র ও বোমাসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আইজুদ্দিন গ্রেপ্তার।
তিনি নিজের খবর পেয়ে গেছেন, অন্য খবরে আর আগ্রহ নেই। তিনি পড়ে যাচ্ছেন মধ্যরাতে পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের কষ্ট-সংক্রমণ স্কোয়াডপ্রধান, দক্ষিণ-এশীয় চ্যাপ্টারের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আইজুদ্দিন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উড়িয়ে দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াকরণের সময় ন্যাশনাল এলিট ফোর্সের ডালমেশান স্কোয়াডের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নাশকতামূলক দ্রব্যাদির মধ্যে রয়েছে : একটি তিন ফুট বাই দুই ফুট অ্যামুনেশন ব্যাগ, একটি আঠারো ইঞ্চি স্বয়ংক্রিয় দূরপাল্লার বন্দুক, একটি বড় বোতলভর্তি সাদা তরল বিস্ফোরক, চার কৌটা কালো বিস্ফোরক, এক বোতল পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড, তিনটি তেজস্ক্রিয় ব্রাশ, এক পাতা (একটি কম) প্যারাসিটামল সদৃশ বিস্ফোরক ট্যাবলেট, মাদুলির ভেতর নাশকতার ফর্মুলা (বিশেষজ্ঞরা তা ডিসাইফার করার চেষ্টা করছেন), একটি লকেটের ভেতর শ্মশ্র“মণ্ডিত একজন মানুষের খোদাই করা ছবি, একটি ব্রেসিয়ারের একাংশ (কার্যকারিতা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি)। পেনসিল, গামছা ও কিছু অর্থ। (বাকি অংশ ১৩-এর পাতায়)
প্রথম পাতায় ছয় ইঞ্চি বাই সাড়ে চার ইঞ্চি ছবিতে তিনি উপুড় হয়ে শোয়া। হাত পিঠের ওপর হ্যান্ডকাফে বাঁধা, সামনে একটি ড্রেন, নির্দেশক্রমে তিনি ছবি তোলার জন্য মাথা উঁচু করে রেখেছেন। চশমার লেন্স পুরু হওয়ায় ক্যামেরার ফ্লাশের প্রতিফলন মুদ্রিত ছবির চোখ দুটো সাদাটে করে দিয়েছে। তারপরও তাকে ভালোই চেনা যায়।
এ-সময় তালা খুলে দুজন ডালমেশান অফিসার ভেতরে প্রবেশ করলেন। একজন বললেন, আইজুদ্দিন ডিম সেদ্ধ হচ্ছে।
তিনি বললেন, জি স্যার, শুনেছি দুটো বরাদ্দ আছে।
অফিসার বললেন, সেদ্ধ ডিম কিন্তু খুব গরম রাখা হয়।
তিনি বললেন, কেন স্যার?
তাতে কাজ ভালো হয়। অফিসার জবাব দিলেন।
এ-সময় হাতে গ্লাভসপরা কুস্তিগীর চেহারার আরো একজন ভেতরে ঢুকেই বললেন, ডিম আরো গরম করা হচ্ছে।
প্রথম দুজন কর্মকর্তার একজন গ্লাভসপরা লোকটির সঙ্গে আইজুদ্দিনের পরিচয় করিয়ে দেন : আবদুল কাইয়ুম খান। বয়েলড এগ ইনসার্টার। তিনি মানবদেহের উলটোমুখ দিয়ে খোসাসুদ্ধ গরম ডিম ঢুকিয়ে থাকেন। তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্রুত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে থাকেন।
আইজুদ্দিন নিজের ভেতরে কষ্ট খুঁজতে খুঁজতে বললেন, এটা সাবেক মন্ত্রীদের ওপর প্রয়োগ করার কথা শুনেছি। আমাকে কেন?
আপনি ইন্টারন্যাশনাল সেলিব্রেটি। এই স্ট্যান্ডার্ডের নিচে নামার কোনো হুকুম নেই।
দুই
তিনটি বিষয়ে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞরা বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। প্রথমত : মাদুলিতে প্রবিষ্ট কাগজে পাওয়া ফর্মুলা :
জুঁইত গাঁথুনি উঁচা পাঞ্জা কেমনে কিতা যায় না বুঝা
আব-আতশ-বাদ-খাকের গুঞ্জা জুড়া আদম মা’র ॥
কারিগরের নাই ঠিকানা, ঘরের খবর হয় না জানা
আয়াত শাহ আদার ব্যাপারী নাই জাজের খবর ॥
ঠিকানাহীন এই কারিগর গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত মাদুলির ফর্মুলা পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, লকেটে খোদাই দাড়িওয়ালা মানুষটি কে?
প্রথমটির সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে না পারলেও আইজুদ্দিন বললেন তিনি আমার গুরুর গুরু আয়াত শাহ পির। কিন্তু আয়াত শাহ পিরের অন্য কোনো ছবি দেখিয়ে তিনি তার বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেন না। ডালমেশান রিসার্চ সেলের দাবি ছবির মানুষটি আইমান আল-জোহায়রিয়া। তার চেয়ে নিচু মর্যাদার কেউ লকেটে থাকলে আইজুদ্দিনের অবমূল্যায়ন হবে বলে তারা মনে করেন।
তৃতীয়ত, অর্ধেক ব্রেসিয়ার। কেবল একটি লাল কাপ। আইজুদ্দিন হাসেন।
বয়েলড এগ ইনসার্টার কাইয়ুম খান 888sport app download for android করিয়ে দেন, ডিম আরো গরম হচ্ছে।
তিন
রিমান্ডে আছেন আইজুদ্দিন। দ্বিতীয় ডিম প্রবিষ্ট হওয়ার আগেই তিনি সব স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখনো ক্রসফায়ারে মৃত্যুবরণ করেননি। প্রচণ্ড তার আশাবাদ – তার কষ্টের দিন শেষ হয়ে আসছে।
[দ্রষ্টব্য : এই সহস্রাব্দের সূচনায় আবির্ভূত দেয়াল-লেখক জনাব আইজুদ্দিনের সঙ্গে গল্পের আইজুদ্দিনের কোনো সম্পর্ক নেই। গল্পের আইজুদ্দিন ভিন্ন মানুষ। কেউ বলেন আদার ব্যাপারী, কেউ বলেন জাহাজের।]

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.