বুলবন ওসমান
তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি
গানের সুরে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
না, জাগতে হলো না 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীকে। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, চিরনিদ্রায় – 888sport appর আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবমঞ্চে। আমরা চাই আর না চাই, এমন মৃত্যু বড় ভালো। কাউকে দীর্ঘ জীবনের বিড়ম্বনা দিয়ে গেলেন না, কোনো তিরস্কার দেখে যেতে হলো না, অকস্মাৎ সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে গেলেন।
মৃত্যুর দিন-দশেক আগে সতেজ গলায় আমাকে ফোন করলেন : বুলবন, তোমার কাছে আমার ওপর প্রথম লেখাটা আছে?
বলি, দেখতে হবে। তবে 888sport live chatকলায় পেয়ে যাবেন।
ওখানে দেখেছি, নেই।
এ কেমন কথা! ওরা তো শেষ ভরসা?
তুমি একটু দেখো। একটা বই বের করব। অনেকদিন কোনো বই বের করা হয়নি? তোমার লেখাটা প্রথমে যাবে। সৈয়দ আজিজুল হক সম্পাদনা করবে। শুনে ভালো লাগল।
বলি, আমি যদি অ্যাট অল না পাই, আপনি 888sport live chatী হাসান মাহমুদের কাছে খোঁজ নিন। ও ক্যাটালগ এবং এসব লেখা সংগ্রহ করে। ভালো সংগ্রহ আছে ওঁর।
প্রথম উচ্চারণে হাসানকে চিনতে পারলেন না। তারপর 888sport live chatী শাহাবুদ্দিনের রেফারেন্স দিতে চিনতে পারলেন।
বললেন, ঠিক আছে খোঁজ নিচ্ছি, তুমি তোমার দিকটা দেখো।
কথা দিলাম।
এরপর কথা প্রসঙ্গে বললাম, ঘর থেকে বের হই না ইদানীং।
বললেন, বেরোনোর দরকার কী? চুপচাপ ঘরে বসে লেখো।
বৈরী সমাজে বাস করি, তাঁর কথায় বেশ ভরসা পেলাম। মনে জোর এলো।
তিনি আরো বললেন, লেখা দেখি না কেন?
বললাম, কালি ও কলম ছাড়া অন্যত্র তেমন লিখি না। খবরের কাগজে এখন আর লিখতে ইচ্ছা করে না। 888sport live footballপত্রিকা এত কম!
লেখাটা খুঁজে দেখো। পেলে আমাকে জানিও।
বললাম, জানাব।
লেখাটা খুঁজে বের করার আগেই তিনি চলে গেলেন। জয়নুল-কামরুল অনুসারী কাইয়ুম দেশের প্রকৃতি ও মানুষকে অবিচ্ছেদ্যভাবে অংকন করে গেছেন। ইদানীং কালি ও কলমে গল্পের ইলাস্ট্রেশন করছিলেন নিয়মিত। কী সাবলীল তুলির টান। আশি বছর অতিক্রান্ত করেছেন, সবকিছু জলবৎ তরলং হয়ে গেছে। ভাবের আগেই হাত চলতে শুরু করে। প্রতিটি গল্প-888sport app download apkর নির্যাস কী সহজে দৃশ্যায়িত করেন। অংকন সহজ, বলা অনেক। গভীর।
সেই সদাহাস্য মুখ আর দেখতে পাব না ভাবলেই মনটা কেমন করে ওঠে।
টেলিফোন ছাড়ার আগে নীরোগ সতেজ-সরল কাইয়ুমভাইকে কেন জানি বলে বসি – কাইয়ুমভাই, সেঞ্চুরি পুরোতে হবে।
উচ্চৈঃস্বরে হাসলেন।
মনে হলো তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু স্রষ্টা যে অলক্ষে মুচকি হাসলেন তা তো আর আমাদের গোচর হওয়ার কথা নয়! অদ্ভুত সংগীতপিপাসু মানুষ ছিলেন।
একসময় আমাদের ৭নং মোমেনবাগের বাড়িতে প্রতিবেশী পুলিশ অফিসার আবদুল বাকি সাহেবের বাসা থেকে বেশকিছু ৭৮ আরপিএম রেকর্ড সংগ্রহ করি। খবরটা পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে কাইয়ুমভাই বাসায় হাজির। যা রেকর্ড ছিল সব নিয়ে গেলেন। আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া প্রমুখ।
নজরুলগীতি-888sport live chatীদের রেকর্ড তখন দুষ্প্রাপ্য। রেকর্ড করা শেষে সঙ্গে সঙ্গে সব ফেরত দিলেন।
আমার জানামতে, রেকর্ড সংগ্রহে 888sport appsে তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর মতো আরেক রেকর্ড সংগ্রহকারী 888sport live chatী আছেন কলকাতায় : তাপস কোনার। অনেক পুরনো যুগের ধ্রুপদী 888sport live chatীদের গাওয়া রেকর্ড আছে। তাপসকে আমি কাইয়ুমভাইয়ের খবরটা দিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা ছিল দুজনকে মিলিয়ে দেবো। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না।
এঁরা দুজন মিললে দুই বাংলার রেকর্ড সংগ্রহের একটা মূল্যবান আর্কাইভ করা যেত।
১৯৫৯ সালে আমার চট্টগ্রামের বাস উঠে গেল। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হলাম। এর বছরখানেক পর মা ও ভাইবোন সবাই চট্টগ্রামের বসবাসের পাট উঠিয়ে 888sport appয়। বাবা (888sport live footballিক শওকত ওসমান) তখন 888sport app কলেজে ১৯৫৮ সালে বদলি হয়ে এসেছেন। এভাবে আমরা আমাদের দ্বিতীয় আবাসভূমি চট্টগ্রাম থেকে চলে আসি।
১৯৬১-র দিকে কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে করি ছাত্র ইউনিয়ন। আমি সহ-সভাপতি – সাংস্কৃতিক দিকটা দেখতে হয়। একটা অনুষ্ঠানের ব্রোশিওর করতে হবে। কভারের জন্যে ছুট লাগাই কাইয়ুমভাইয়ের কাছে। তাঁর তখন একচ্ছত্র রাজত্ব এই প্রচ্ছদ888sport live chatে। তিনি চারুকলার শিক্ষক, কিন্তু কিছুটা সময় দিতেন দৈনিক অবজারভারে। তার ডেস্কে গিয়ে পরিচয় দিলাম। তিনি খুশি হলেন।
বললেন, তুমি শওকতভাইয়ের ছেলে! বলো, তোমার জন্যে কী করতে পারি?
আমি কাগজপত্র বের করে বললাম, আমাদের ব্রোশিওরের কভারটা করে দিতে হবে।
তিনি বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা বুলবন, টাকা ছাড়া আমি কাজ করি না।
আমি চুপ করে ভাবছি কোথা থেকে টাকা জোগাড় করব।
তিনি আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন, মিনিমাম পঁচিশটা টাকা দিও। তোমাদের কাছ থেকে তো আর বেশি চাইতে পারি না।
আমি রাজি হয়ে যাই। অবজারভার থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবি, ঠিকই তো 888sport live chatীকেও তো সংসার চালাতে হয়, তাঁর শ্রমের তো একটা মূল্য আছে। সব মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, এমন সমাজ গড়ার সংগ্রামই তো আমরা করছি। শ্রমের মূল্য তো দিতেই হবে!
আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের ১৯৬৩-র ব্যাচ। এমএ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোল ১৯৬৪ সালে। বেকার জীবনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৬৬ সালে, 888sport app চারুকলায় সমাজতত্ত্বের প্রভাষকের পদে যোগদান করে।
শর্ত – প্রথম ছমাস অ্যাডহক চাকরি। নিয়োগপত্র পেয়ে কাজে যোগ দিতে চারুকলায় প্রবেশ করেছি – সামনের করিডোর পেরিয়ে চিত্রকলার প্রথম বর্ষের ক্লাসে ঢুকব বন্ধু রফিকুন নবীর সঙ্গে দেখা করার জন্যে। বারান্দায় এই সময় বিপরীত দিক থেকে আসছিলেন কাইয়ুমভাই। সহাস্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, কনগ্র্যাচুলেশনন্স বুলবন। ওয়েলকাম। তাঁর সেই উজ্জ্বল হাসিভরা মুখ মনটাকে ভরে দিলো।
তারপর একসঙ্গে কাটল একটানা কয়েক যুগ। হাসি-কান্নাভরা জীবনের জয়গাথায় কাইয়ুমভাই জড়িয়ে দিলেন এদেশের সুকুমার কলাসহ সবকিছুর পরতে পরতে। চোখের সামনে হয়ে উঠলেন চারুকলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। আজ হঠাৎ কেমন যেন ফাঁকা লাগছে চারুকলার জগৎটা। তীব্র রোদ এগিয়ে আসছে! মাথার ওপর আচ্ছাদন কোথায়? আমাদের আরেকজন কাইয়ুম চৌধুরী যে নেই!

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.