ইকতিয়ার চৌধুরী
ডেট লাইন : মাদ্রিদ, নভেম্বর ২০১২।
কাবির আমেদের মনটা ভালো নেই। একটু আগের একটা টেলিফোন তার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। শনি কিংবা রোববারের সকালে সে মাঝে মাঝেই এমন টেলিফোন পায়। সে এই ফোনকল প্রত্যাশা করে না। তাই ফোনটা বাজতে আরম্ভ করলেই বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। একা মানুষ সে। নিতান্তই একা। তদুপরি অনেক বয়স। সত্তর তো হবেই। কেন যে এই বয়সে একা পড়ে আছে তাও তো হিসাবে মেলে না। মাদ্রিদের মতো শহরে তার ছিমছাম ফ্ল্যাট; কিন্তু সেখানে থাকার মানুষ নেই। রেটিরো পার্কের একদম মুখোমুখি উনিশ শতকের শুরুতে নির্মিত একটি পুরনো ভবনের পাঁচতলায় তার ফ্ল্যাটটি। পুরনো হলে হবে কী। সেই সুবাদে ভবনটি এখন একপ্রকার হেরিটেজ শ্রেণিতে পড়ে গেছে। এর দাম তাই আর তার মতো মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। কয়েক মিলিয়ন ইউরোতে উঠে গেছে। সব মিলিয়ে কী নেই কাবির আমেদের। ছেলেরা। নাতি-নাতনি। বউ। অবশ্য বউ এখন সাবেক। মানে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তাও আজ দশ বছর। এঞ্জেলা এই শহরেই আছে। কাইয়ে দ্য সেরোনায়। রাস্তা হিসেবে সেরোনা অভিজাত। তাহলে ভালোই আছে এঞ্জেলা। আর তাহলেই বা কেন? খবরাখবর যা পায় তাতে ভালোই আছে সে। এক শহরে থাকা অথচ তাদের দেখা হয় না। কাবির আমেদ যেসব জায়গায় বিচরণ করে, এঞ্জেলার যাতায়াতও অনেক সময় সেখানেই। তার পরও তাদের দেখা হয় না। প্রায় চল্লিশ বছর আগে ভালোবেসে যে স্প্যানিশ তরুণী এঞ্জেলাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন; তার সঙ্গে দেখা না হওয়া আজ বাস্তবতা। স্ত্রী হিসেবে পাওনার দাবিতে এঞ্জেলা তাকে কোর্ট পর্যন্ত নিয়েছিল। মামলায় সে তার বিষয় সম্পত্তির প্রায় আধাআধি নিয়ে গেছে। এতে অবশ্য কাবির আমেদের কোনো দুঃখ নেই। এঞ্জেলা যা নিয়ে গেছে তা তো শেষ পর্যন্ত তার ছেলেরাই পাবে। কি স্বপ্নীল ভালোবাসার কি বুক ফোঁড় করা পরিণতি। অথচ সেই মধ্যষাটের দশকে পরিবারের সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ করে এঞ্জেলাকে অধিকার করেছিলেন তিনি। যখন তাদের বিয়ে হলো, তার প্রগতিশীল পিতাও তাতে ঘোরতর বাগড়া দিয়েছিলেন। বললেন,
: ডিসিশন ইজ ইয়োর্স। কারণ, জীবন যখন তোমার – সিদ্ধান্তও তোমার। আমার মতামত জানতে চাইলে জানাতে পারি।
: তাই যখন, তখন আমার সিদ্ধান্তে আপনাকে সম্মতি দিতে হবে।
একটু গো ধরে বলল কাবির আমেদ। কাবির চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ব্রিটিশ অ্যাকাউন্ট্যান্সি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া বিখ্যাত জেমস কুপার অডিট ফার্মে তখন তার চাকরি। যুবক কাবির ওই সময় তার কর্মস্থল লন্ডন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঙ্গিনী এঞ্জেলা। স্প্যানিশ ওই মেয়েটি ততদিনে তার বুকে গভীর মোচড় বসিয়ে দিয়েছে। তার মাত্রা এতই অধিক যে, এঞ্জেলাকে বিয়ে করা নিয়ে যে-কোনো ঝগড়ার জন্য সে তৈরি।
: তুমি যাকে খুশি বিয়ে করো। এ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে বিয়েটা দেশের কোনো মেয়েকে করলে আমরা আনন্দিত হবো।
: বিদেশিনীকে করলে আনন্দিত হবেন না কেন?
: তোমার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কমে যাবে। তাছাড়া তুমি তো এখন ভালো অবস্থানে আছ। তোমার সুবাদে আমাদের নিজেদের একজন মেয়ে যদি উন্নত জীবনের অধিকারী হয় মন্দ কী।
: অচেনা-অজানা একজনকে উন্নত জীবনে পৌঁছতে আমি নিজের জীবন নষ্ট করি – কী যে বলেন না আপনি।
: তর্ক করছ কেন? আমি তো প্রথমেই বলেছি, সিদ্ধান্ত তোমার।
: বলছেন তো সিদ্ধান্ত আমার; কিন্তু বাগড়া তো ঠিকই দিচ্ছেন।
: তোমার ভালোর জন্য বলছি বাবা। এ-বিয়েতে এঞ্জেলা আর তোমার কোনো অসুবিধে হবে না। তবে তোমাদের ছেলেমেয়েরা পরিচয়ের সংকটে ভুগবে।
জবাব দিলেন তার বাবা। কাবির তার কথা উড়িয়ে দিলো। বলল
: বাজে কথা। পরিচয়-সংকটে ভুগবে কেন। জেমস কুপারের মতো স্বনামখ্যাত ফার্মে যাদের বাবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, তাদের আবার পরিচয়ের সমস্যা?
: আরে গাধা, এ বাবা-মায়ের পেশার বিষয় নয়। এ হচ্ছে সাংস্কৃতিক – ধর্মীয় পরিচয়ের সংকট। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কাকে ফলো করবে? খ্রিষ্টান মাকে, না মুসলমান বাবাকে। ইউরোপীয় সংস্কৃতি না এশীয় জীবন-চর্চা?
: কেন বাবাকে ফলো করবে।
: ওদের মা যদি চায় তাকে অনুসরণ করুক। বাচ্চাদের জীবনে মায়েদের প্রভাব কিন্তু কম নয়।
: করলে করবে। এটি তাদের স্বাধীনতা। আই ডোন্ট কেয়ার।
: করবে। কারণ তোমরা থাকবে ইউরোপে। তারা যখন বুঝতে শিখবে, তখন চারপাশ দেখে তাদের মনে হবে, তুমি একজন বিদেশি। মায়ের ধর্ম-সংস্কৃতিকে তাদের মনে হবে নিজস্ব। আর তারা তাই অাঁকড়ে ধরবে।
: ধরুক। বলেছি তো, আই ডোন্ট কেয়ার।
এতকাল পর এই রোববারের সকালে কাবিরের উপলব্ধি হচ্ছে কেয়ার করলেই মনে হয় ভালো ছিল। ফোনটি করেছিল আলফানসো। আলফানসো তার ছোট ছেলে। বড়টির নাম রড্রিগুয়েজ। সন্তান তার এই দুজনই। রড্রিগুয়েজের জন্মের পর ওর বাঙালি নাম রাখতে চেয়েছিল সে। এঞ্জেলা বলল,
: তুমি আমাকে ভালোবাস না?
: কেন? কেন?
ব্যগ্র হয়ে জানতে চাইল কাবির।
: ছেলেমেয়েদের নাম রাখব আমি। তুমি তো যোগ-বিয়োগ ছাড়া কিছু বোঝ না – তোমার মাথায় সুন্দর নাম আসবে না।
শ্বেতাঙ্গিনী এঞ্জেলার তখন নীল চোখে মাতৃত্বের মাদকতা আর দুধে নত বিশাল ভারী স্তন। সেদিকে তাকিয়ে কাবিরের তার বাবার কথা মনে হলো। বিয়ের আগে তিনি কাবিরকে একজন বিদেশিনীর সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবনের বেলায় সমস্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সন্তানের নাম রাখা নিয়ে মতান্তরে তবে কি তার সূচনা হলো। নাহ্, তা হবে কেন। সেদিনের মতো আজো তাই মনে মনে বলল, আই ডোন্ট কেয়ার – ভালোবাসার জয় হোক। তবে জয়ের ঘোষণা দেওয়ার আগে বউয়ের গালে মৃদু টোকা দিয়ে বলল
: অ্যাকাউন্ট্যান্সিও এক ধরনের 888sport app download apk, বুঝলে? আর সেই 888sport app download apk আমি যখন ভালো বুঝি, তখন বুঝতেই হবে আমার ঝুড়িতেও অনেক ভালো নাম আছে।
: থাকতে পারে, তবে তা তোমার ওই হিসাবের মতোই নিরস হবে।
: কী যে বলো না তুমি। আমি রাখব বাংলা নাম। বাংলা খুব মিষ্টি ভাষা। সমৃদ্ধ তো বটেই। অনেক সুন্দর নাম আছে আমাদের।
: স্প্যানিসের চেয়েও সমৃদ্ধ ভাষা?
এঞ্জেলার কণ্ঠে অবিশ্বাস। কাবির তখন একটু ধন্ধে পড়ে। স্প্যানিশ পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলোর একটি। তবে বাংলার চেয়ে কতটা সমৃদ্ধ তা সে জানে না। জবাব দিলো –
: তা বলতে পারব না। তবে বাংলাও অনেক বনেদি ভাষা – সংস্কৃত থেকে এর উৎপত্তি। এই ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে 888sport live footballে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন।
: তাই নাকি?
কিছুটা অবিশ্বাস যেন এঞ্জেলার গলায়। কাবির ভাবল বিশ্বাসে মিলায় বস্ত্ত তর্কে বহুদূর। বলল,
: হ্যাঁ, তাই। তবে সেসব বড় কথা নয়। স্প্যানিস বাংলা ইংরেজি যাই হোক না কেন, সুন্দর একটি নামই বড় কথা। তা কী নাম রাখবে ভেবেছ?
: রড্রিগুয়েজ। ও পেটে আসার পরই আমি ঠিক করে রেখেছি।
কাবির কিছু বলল না। আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডে জন্মের পরপরই নবজাতকের নাম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। রড্রিগুয়েজের বয়স তখন মাত্র একদিন। আর ওই সময় তার কর্মক্ষেত্র লন্ডনের জেমস কুপারে। এখনকার মতো ওই ষাটের দশকেও বাঙালিরা যেখানে থাকত, ঈস্ট লন্ডনে, সেখানে কাবির বেশি পয়সা খরচ করে বাসা নিয়েছিল সাদা এলাকায়। রিচমন্ডে। পরদিনই সে স্থানীয় মেয়রের দপ্তরে ছেলের জন্মনিবন্ধন করে এলো। নিজস্বতা থেকে সেই কি পিছু হটার শুরু? নাহ। এখন সে জানে, তার আরম্ভ আরো আগে। যখন থেকে কবির আহমেদ শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর সাদা সহকর্মীদের মুখে কাবির আমেদ হতে শুরু করেছিল।
ফোনে আলফানসো বলল,
: ড্যাড, তুমি কি আসছ আমার এখানে?
: হিসাবমতো তো তোমাদের সঙ্গেই আজ দিনটা কাটানোর কথা। গত রোববার রড্রিগুয়েজের ওখানে খুব মজা হলো। তা আসছি কিনা জিজ্ঞেস করছ কেন। কোনো সমস্যা?
: না, সমস্যা নয়। তুমি আগামী সপ্তাহে এসো।
: কেন, তোমরা কি বেরুচ্ছ?
: না। সকালে মম্ ফোনে বলল সে আসছে।
: ও।
বুকটা খালি হয়ে গেল কাবিরের। এঞ্জেলা আসছে যখন, তখন তার তো আর সেখানে যাওয়া চলে না। ছেলেদের সঙ্গে বাবা-মায়ের ব্যবস্থাটা এমন যে, একেক উইকএন্ড তারা একেক ছেলের সঙ্গে কাটাবে। সে হিসাবে কাবিরের আজ আলফানসোর সঙ্গে কাটানোর কথা। তাদের যদি অন্য ব্যস্ততা থাকে, তবে ওই সপ্তাহ মার যাবে। সেক্ষেত্রে ঘরে বসে থাকা অথবা অন্য কিছু করা ছাড়া বিকল্প নেই। রুটিন অনুযায়ী আজ এঞ্জেলার থাকবার কথা রড্রিগুয়েজদের সঙ্গে। তারা সময় না দিতে পারলে তার যা ভালো লাগে তাই করতে পারে। তাই বলে কাবিরের বরাদ্দ মারতে আলফানসোর বাসায় হানা কেন।
; কিছু মনে করলে বাবা? মাকে তো জানোই। আমাদের ঘরে আজকের উইকএন্ড তোমার তা 888sport app download for android করানোর পরও কোনো গুরত্ব দিলো না। বলল, তোমার নাকি অনেক ফ্যান, তাদেরই সময় দিতে পারছ না। আমার এখানে না এলেও নাকি তোমার সময় কাটাতে অসুবিধা নেই।
: এ হচ্ছে তোমার মায়ের আমাকে নিয়ে চিরকালের পরিহাস। আমার ভক্ত কোথায় – আমি কি কোনো সেলিব্রেটি।
: সে তো অবশ্যই। তবে কথাটা মম্ সে-অর্থে বলেনি। বলল, মাদ্রিদে এখন নাকি তোমার অনেক স্বজাতির আগমন হয়েছে আর তাদেরকে নিয়ে তোমার সময় ভালোই কাটে।
: আমার স্বজাতি মানে? আলফানসো তুমি ভালো করেই জানো, আমি রেসিজম একদম পছন্দ করি না। যত্তসব রাবিশ।
: রাগ করো না বাবা। কথাটা মম্ সেভাবে বলেনি। মাদ্রিদে এখন অনেক বেঙ্গলি পিপ্ল দেখা যায়। এই দেশে তুমি তাদের মোস্ট অগ্রজ বলে তারা নানা পরামর্শের জন্য তোমার কাছে আসে। ইন ফ্যাক্ট, তুমি নাকি তাদের ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছ? তোমার নাকি টাকা ছাড়া ডানে-বাঁয়ে তাকাবার সময় নেই?
: এ তো অনেক বড় সংবাদ। তোমার মা দিলো বুঝি।
: হ্যাঁ, সেরকমই তো বলল।
: তুমিও তা বিশ্বাস করলে? আমার এই বয়েস আর আমি কি ল’ইয়ার নাকি? দুবেলা রেঁধে খেতে যেখানে আমার কষ্ট হয়।
: কৃপণতা ছাড়ো, কষ্ট কমে যাবে। তোমার কি টাকার অভাব? দুবেলা ইচ্ছা করলে তুমি রেস্টুরেন্টে খেতে পারো। খালি চিনেছ পয়সা, মম্ কি আর তোমাকে এমনি ছেড়েছে?
: এই সকালে আমার মেজাজ চড়িও না আলফানসো।
উত্তেজিত শোনায় কাবিরের কণ্ঠ। ছেলে তখন তাকে বলে,
: স্যরি ড্যাড।
: ঠিক আছে। আজ তাহলে আর আমি আসছি না।
: কিছু মনে করলে ড্যাড?
: মন একটু খারাপ হলো বইকি, তবে কিছু মনে করিনি।
মন কাবিরের খারাপ হয়েছে সত্যি, তবে তা নিজের জন্য নয় - আলফানসোর মেয়ে দুটোর জন্য। তারা তাদের দাদুকে খুবই পছন্দ করে, যতটা না দাদিকে। তার উপস্থিতিতে অল্পবয়সী এই নাতনি দুটোর মাঝে হুল্লোড় পড়ে যায়। টেলিফোন ছেড়ে দিয়ে কাবির তাদের জন্য কেনা চকোলেটের কৌটার দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবল ঠিক আছে – এর পরেরবার নিয়ে যাবে।
কাবিরের মাঝে মাঝে মনে হয়, ছেলেরা তার মাকে বেশি টানে। আবার পরমুহূর্তেই ভাবে, তা তো হওয়া উচিত নয়। পিতৃভূমি ছেড়ে সে তাদের কাছে পড়ে আছে। 888sport appর সাভারে তাদের তালুকদারির মতো আছে এখনো। ভাইবোনরা সেখানে প্রতিষ্ঠিত। দেশে সবার মাঝে সে ভালোই থাকতে পারে। এমনকি তার পুরনো পেশায় ফিরে যাওয়াটাও কঠিন কিছু নয়। কিন্তু কোন টান যে তাকে গাথল প্রবাসে।
যৌবনে কাবিরের অনেক সঙ্গী ছিল লন্ডন, মাদ্রিদে। এঞ্জেলার সঙ্গে কাটাকাটি হওয়ার পর কয়েক বছর গেছে তার তার চেয়ে অর্ধেক বয়সী এক ফিলিপিনোর সঙ্গে লিভিং টুগেদার করে। সে ছিল সত্যিকার অর্থে এক অতি ঘন আদি সময়। এখন সময় যায় লাইব্রেরিতে বই পড়ে, ঘর বিছানা সাফ-সুতরোতে। বাঁচার জন্য খাবার মৌলিক বস্ত্ত হলেও রান্না কাবিরের আগ্রহের বিষয় নয়। সে খিচুরির মতো একটা কিছু রাঁধতে পারে। ফিলিপিনো 888sport promo codeটি তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর অনেকদিন হলো প্রতি রাতে সে তাই খেয়ে যাচ্ছে। বয়সী মানুষ কাবির। কয়েকপদী রান্না তার জন্য পরিশ্রম বইকি। নাকি এঞ্জেলার অভিযোগই ঠিক – অর্থ ব্যয়ে তার চিরকালের কার্পণ্য।
আলফানসোর বাসায় যখন যাওয়া হলো না, কাবির ভাবল গ্রামের দিকে যাবে। মাদ্রিদ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে পুয়ের্তা দ্য সোলে তার ছোট্ট একটি বাড়ি রয়েছে। খালি। দু-এক মাসে এক-আধবার যায় সে সেখানে। ভালো লাগলে সারাদিন কেটে যায়। রাতও। না হলে অন্তত একটি বেলা কাটায় সেখানে। ভালোবাসার দিনে বড় শখে করেছিল। কান্ট্রিসাইডে সেকেন্ড হোমের প্রতি এঞ্জেলার ছিল তীব্র আকর্ষণ। সবই আজ 888sport sign up bonus। কাবির বন্ধু নিকোলাসকে ফোন করে, যদি সে সঙ্গী হয়। নিকোলাসকে পাওয়া গেলে তার গাড়িও পাওয়া যাবে। কাবিরের নিজের গাড়ি আছে। ফরাসি পুজো। কিন্তু যথাসম্ভম তা কম ব্যবহার করে। এও যে এক ধরনের কার্পণ্য তা বুঝেও কাবির বরাবরই সুযোগ নেয়। নিকোলাস ফোন ধরলে জিজ্ঞেস করে –
: হ্যালো ফ্রেন্ড, ফ্রি আছো নাকি?
: কেন?
: যাবে নাকি গ্রামের দিকে? অনেকদিন বার হপিং হয় না।
এ-বার থেকে সে-বার ঘুরে ঘুরে বিয়ার পান তাদের দুজনেরই প্রিয়। কিন্তু নিকোলাস তাতে কান দেয় না। সে ভালো করেই জানে, কাবিরের গ্রামের দিকে যাওয়া মানেই তার কান্ট্রিসাইডের বাড়ি ভিজিট। উত্তর দেয় –
: অল্প সময়ের জন্য হলে যাওয়া যেতে পারে।
: গুড। তা আমি তুলব না তুমি আসবে গাড়ি নিয়ে। তোমাকে নিতে গেলে তো উলটো দিকে যেতে হয়।
: আমার গাড়ি ওয়ার্কশপে।
: কেন, কী হয়েছিল?
: দরজায় ক্র্যাচ পড়েছে। কে যে ফেলল।
: তাহলে তো সমস্যা হয়ে গেল।
: সমস্যা হলে যাওয়ার দরকার নেই।
: আচ্ছা।
ফোন রেখে কাবির ভাবে, নিকোলাস কী মনে করল কে জানে। সে নিজেও তো ওকে তুলে নিতে পারত। কাবিরই বা কী করবে। গ্রামের বাড়িতে যাওটা তার তত জরুরি নয়। যাতায়াতে মিছেমিছি আশি কিলোমিটার তেল পোড়ানো। আলফানসোর বাসার পালাটা মার গেল বলেই তো একটু জট লেগে গেল। ঘরেই বা এখন সে থাকে কী করে?
কাবির বেরিয়ে পড়ে। কাছেই রেটিরো আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো স্টেশন। সিমেট্রিতেই তাহলে যাওয়া যাক। একটি জন্মের সূচনায় এঞ্জেলার সঙ্গে তার মৃদু মতান্তরের শুরু। সে-যাত্রায় পুত্রের নামকরণে সে ছাড় দিয়েছিল। কিন্তু অনাগত মৃত্যুকে বিবেচনায় নিয়ে এটারনাল রেস্টিং প্লেস নির্বাচনে ঘোরতর সংঘাত বেধে গেল। কাবির চাইল মুসলিম সেকশনে কবরের জন্য জায়গা রাখতে; সেখানে এঞ্জেলার দাবি, তাদের গ্রেভইয়ার্ড হবে ক্যাথলিক সিমেট্রিতে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, তাও খ্রিষ্টান রীতিতে। সে বলল,
: মুসলিম গড খ্রিষ্টান গড বলে আলাদা কিছু নেই। গড একজনই। মরলে সবাই ওই একজনের কাছেই যাব।
: তাহলে?
: তাহলে আর কী? ক্যাথলিক সিমেট্রিতে জায়গা নাও। আর রড্রিগুয়েজ আলফানসো তো তোমার ওই মোহাম্মেদ নয়।
: তারা মোহাম্মেদ নয় এ-প্রসঙ্গ আসছে কেন?
: আসছে এজন্য যে, আমার কোলে ওরা দুভাই মুসলিম হিসেবে বড় হয়নি। ওরা ওদের মায়ের সঙ্গে ক্যাথলিক সিমেট্রিতে সমাহিত হবে।
খুব শান্তস্বরে জবাব দেয় এঞ্জেলা।
বিয়ের তখন তাদের প্রায় তিরিশ বছর। ভালোবাসার অনেকটাই ততদিনে ফিকে হতে শুরু করেছে। তবু কাবিরের হৃদয় দুমড়ে যেতে চায়। এই এঞ্জেলা তার একেবারেই অচেনা। কী বলছে সে। পুত্ররা তাদের বাবারটা গ্রহণ করবে – কাবিরের এই চাওয়া কি অস্বাভাবিক?
কাবির মেট্রোতে পনেরো মিনিটেই সিমেট্রিতে এসে পৌঁছাল। রোববারের সকালে সেখানে তখন 888sport promo code-পুরুষের 888sport free bet কম নয়। পুরো পরিবার নিয়েও হাজির হয়েছে কেউ কেউ। আগতদের বেশিরভাগের হাতেই ফুল। অনেকেই তা আবার সমাধিতে অর্পণ করে নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সমাধিস্থল সবুজ ঘাসে ছাওয়া। ঘাসের ওপর ইতস্তত ছড়ানো ওক গাছের পাতা। মাঝে মাঝে ঝাঁকড়া পাইন গাছ আর সারা সমাধি জুড়ে পায়ে চলার বাঁধানো রাস্তা। নীরব সমাধিস্থলে কাবিরের আত্মা জুড়িয়ে যায়।
সে আস্তে আস্তে মুসলিম সেকশনের দিকে হাঁটতে থাকে। সেখানে কবরের জন্য জায়গা কিনেছে কাবির। দুছেলে আর তার নিজের জন্য। তিনটি কবর পাশাপাশি। মাঝেরটি তার। যেতে যেতে কাবির ভাবে, ছেলেরা কি তার চাওয়ার মূল্য দেবে? জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে সে ভালোই বুঝতে পারে, সন্তানরা তাকে বিদেশি ভাবে। মাকে নয়। যে-বাবা নিজের দেশ, স্বজন ছেড়ে সারা জীবন তাদের মায়ায় পরভূমে থাকল, তার বিশ্বাস কি রড্রিগুয়েজ আলফানসো অনন্ত জীবনে ধারণ করবে? না, তারা পরিচয়ের সংকটে থাকবে? তাহলে কি কাবিরের পিতার কথাই সত্যি হবে? পৃথিবী এত যে এগুলো – নানা জাতির নর-888sport promo codeতে কত না মিলন, তবু এ-জিজ্ঞাসার জবাব আজ অবধি কাবিরের কাছে নেই। এখানে সে একটু ধন্ধে আছে। মানুষের জীবনের সিদ্ধান্ত তার নিজের। কাবির তাহলে তার পরিণত দুছেলে কোন বিশ্বাস অাঁকড়ে ধরবে তা নিয়ে এত ভাবছে কেন।
মুসলিম সেকশনে পৌঁছে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থেকে ভাবনার মাঝে মানুষের আসা-যাওয়া দেখে। দেখে কবরগুলোর জন্য নির্ধারিত স্থান। তিনটে কবর পাশাপাশি। সেখানে কি অনন্ত জীবনে সে রড্রিগুয়েজ আলফানসোকে পাশে পাবে? এ-প্রশেণর নিশ্চিত জবাব তার কাছে নেই। তার মাথায় নিঃশব্দে খসে পড়ে ওক গাছের পাতা। কাবির তা খেয়াল করতে পারে না।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.