কাব্য-প্রবক্তার দৃষ্টিকোণে

শহীদ ইকবাল

888sport app download apkর অপরূপত্ব অনেক রকমের। কবির হাতে অনুভবের অপরিহার্য উচ্চারণটুকু শামিল হয় ভাষার প্রতীকে। এই প্রতীকে বহুবিস্তর স্বপ্ন প্রতিপাদ্য থাকে। পুরাণ-প্রত্ন অবিনাশী হয়ে ওঠে। জ্যাক লাঁকা ভাষার সঙ্গে স্বপ্নমাখা জীবনকে মিলিয়ে মনের অন্দর-সদরের, গোপন-উন্মুক্ততার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। মনের কোণের আয়নাকে কোনো ধ্বনি-প্রতীকে বাইরের প্রতিবেশের সঙ্গে সংযোগ করেছেন। তাতে আছে সামগ্রিক চেতনার প্রয়াস। যিনি কবি – তাঁর এ-চেতনা কারো কারো কাছে ‘অবজেক্টিভ কোরিলেটিভ’, কারো কাছে বিপরীতে ‘ইমোটিভ’ বা আবেগোদ্দীপক ভূমিকায় প্রদর্শিত। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করি। টি এস এলিয়টের The Sacred Wood থেকে পড়লে দেখা যায় : ‘Poetry is not a turning loose of emotion, but an escape from emotion; it is not the expression of personality, but an escape from personality. But, of course, only those who have personality and emotions know what it means to want to escape from these things.’ আবেগের বিপরীতে নিরাবেগ প্রস্তাবনায় কবি সৃষ্টির প্রত্যয়কে নির্ধারণ করেছেন। 888sport app download apk মন্ময় আবেগের বিপরীতে তন্ময় ও নৈর্ব্যক্তিক বাস্তব প্রেরণাটি গ্রহণ করে, সেজন্য সে-শরীরে বহন করে অনেক রহস্যময় প্রতীক, পুরাণ ও মৌহূর্তিক ইমেজ। ইমেজিস্টরাও এ-প্রেরণাটি গ্রহণ করেছেন ‘কঠিন বাস্তব আনার’ প্রত্যয়ে। এক ধরনের প্রত্যক্ষতাও তাতে আছে – যেখানে শব্দ নির্ধারিত, নির্বাচিত এবং ঘনত্বে ব্যঞ্জিত। রক্তিম এবং তান্ডবময় দ্বন্দ্বাত্মক জীবনের চিহ্নিত প্রদাহ। এরূপ পঙ্ক্তিমালায় প্রকরণ সম্পর্কে বলা যায় : ‘নিরঙ্কুশ অনিবার্য শব্দ প্রয়োগ করতে হবে; প্রয়োজনবোধে চলতি বাগধারা পরম্পরায় রচনা করতে হবে, ছন্দস্পন্দনের পরম্পরা অনুযায়ী নয়; চিত্রকল্পের বিষয়ে নিবিড় রূপদান…।’ বিপরীতে আবেগোদ্দীপক ভাষার পক্ষে আই এ রিচার্ডস তার প্রতিবেশ নিরূপণের ক্ষেত্রে বিষয়-প্রবণতায় ভাষার আবেগি সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। কল্পসৌন্দর্যই সেখানে মুখ্য। অবচেতন বা নিজ্ঞানসত্তায় স্বপ্ন তথা যৌনবিহার অহং-রূপটি এক কল্পপ্রতিমার ধারণার জন্ম দেয়। কল্পনা বা আবেগই সেখানে মুখ্য। রুদ্রর 888sport app download apkপাঠের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও মূল্যায়নের এমন তাত্ত্বিক ধারণা মনে আসে। কারণ, 888sport app download apk স্থির কোনো প্রকরণ নয়। আর যিনি লেখক, কার্যত 888sport app download apk রচনার পর তাঁর মৃত্যু ঘটে [রোল বার্থ-কথিত ‘death of the author’]। তখন এক একটি লেখা পাঠকের বিবেচনায় হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র আধার। ‘লেখকের মৃত্যু’ কথাটি আক্ষরিক হলেও লেখকের দর্পিত মুখ বা বিচূর্ণ সত্তার ক্লেশ তাতে জেগে থাকে, যা পাঠকের কাছে বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে। উপভোগের আলিঙ্গন মস্তিষ্কভেদে ভিন্ন, চেতনার স্তরও আলাদা – সেখানে লেখকের মৃত্যু পাঠকের কাছে অনেকভাবেই ঘটতে থাকে। বোধ করি সেটিই লেখকের সাফল্য। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৯৫৬-৯১) কবি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, দশক বিবেচনায় সময় তাঁর সত্তর, হিমেল  বরকত-সম্পাদিত 888sport app download apkসমগ্র বেরিয়েছে এ-বছরই বইমেলায়, যদিও এর আগেও তাঁর রচনা পাঠকসমক্ষে বেশ প্রতাপের সঙ্গেই এসেছে। সুসম্পাদিত এবং তথ্যনিষ্ঠ বর্তমান গ্রন্থটি রুদ্রর 888sport live chatপ্রতিভার এক আলোকিত মহার্ঘ্য। রাগি, সাহসী, দুর্মর রুদ্র অকালপ্রয়াত হলেও যে-888sport app download apkবিস্ময় আমাদের 888sport app download apkঙ্গনে প্রদর্শিত হয়েছে, তা চিরসমুজ্জ্বল।

 

দুই

উপদ্রুত উপকূল নামকরণের ভেতরেই রুদ্র 888sport app download apkর ভরকেন্দ্রে জুড়ে দেন ‘নির্বাসিত’ সময়ের আখ্যান। 888sport app download apk ‘উপদ্রুত’ নয় কিন্তু কবির দৃষ্টিকোণটি গড়ে ওঠে উপদ্রুতকে প্রতিঘাত করে। পক্ষে থাকেন উপদ্রুত মানুষের। প্রান্তিক, বঞ্চিত, অপহৃত, বৈষম্য শব্দগুলো – উপদ্রুতের ব্যানারে খচিত। নামটি লক্ষ্যহীন নয়। কখনো চিন্তাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। বুদ্ধির শাসনে তাঁর 888sport app download apk জমে ওঠে। ইমেজ স্ফটিকস্বচ্ছ হয়। ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ অপরিচিত হয় না। সকলের কাছে পৌঁছায়। এক সফল বক্তব্যে হাজির হন কবি। আগে এরকম বলেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম। পরে সুকান্ত ভট্টাচার্য। 888sport appsে রুদ্র নিঃশঙ্ক হয়ে  এ-প্রকরণটি হাতে নেন। সত্তরের প্রারম্ভ থেকেই একটি নতুন স্বরে চিহ্নিত হন তিনি। আমৃত্যু সেভাবেই সচকিত। রুদ্র যেভাবে তাঁর চেতনার পুনর্গঠন করেন, অর্জন করেন কাঙ্ক্ষিত শক্তি, সে-ধারাটি মায়াকভস্কি, পল অ্যালুয়ার, পাবলো নেরুদার। তাঁর কাছে সামাজিক ইতিহাস, আর্থ-ইতিহাস, সমাজের                          স্তরবিন্যাসতত্ত্ব অধ্যয়নের বিষয় নয়, কিন্তু দৃশ্যমান সমাজের ভেতরেই সে-অধ্যয়নটি পেয়ে যান তিনি। 888sport app download apkর শক্তি হয়ে ওঠে প্রকাশের শক্তি। পঙ্ক্তিগুচ্ছের উত্তাপ মানুষের পক্ষে, ‘অপরে’র (otherness) পক্ষে। কারণ নিয়ে, প্রশ্ন নিয়ে, জিজ্ঞাসা নিয়ে – পঙ্ক্তির শক্তি দৃঢ়তর হয়। সভ্যতা ও মানুষ অদ্বিতীয় সত্তা, চেতনার প্রথম স্তরে বিবেচ্য সমাজ, উত্তরিত স্তরে (দ্বিতীয় সত্তায়) প্রশ্নশীল বৈষম্য যে-ভিত্তিকাঠামো সরাসরি অস্বীকার, এর পরের স্তরে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের কেন্দ্র অস্বীকার। ক্রমশ 888sport app download apk হয়ে উঠেছিল মুক্তির পতাকার উদ্ভাস। উপদ্রুত উপকূল থেকে ছোবল শত 888sport app download apkর পঙ্ক্তিতে ভর করে তপ্ত নিঃশ্বাস আর উদার উদ্যাপনের আকাঙ্ক্ষা :

এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না –

তন্দ্রার ভেতরে শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,

নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,

মুন্ডুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বীভৎস শরীর

ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে – আমি ঘুমুতে পারি না, আমি

ঘুমুতে পারি না…

এটি কি 888sport app download apk? উপরিউক্ত এলিয়টীয় সংজ্ঞার্থটি মিলিয়ে কি এর অর্থ করা যায়? আবেগ-উদ্দীপনা নাকি আবেগ অস্বীকৃত বুদ্ধির প্রস্রবণ এখানে নির্ণীত? আবেগ স্বীকার্য হলে কেন্দ্রে কোনটি? নাকি মিশ্র অবভাস এই 888sport app download apk। এখানে চোখ>ধর্ষিতা>মানুষের পচা লাশ>মুন্ডুহীন বালিকা অভিন্ন হয়ে উঠেছে। কার পক্ষে? নিশ্চয়ই অভিজাত বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা-কর্তৃত্ব যাদের নিয়ন্ত্রণে তারা নন। 888sport free betগরিষ্ঠ প্রান্তিক (peripheral), জনতা (mass) – নিশ্চয়ই সমাজে নিম্নবর্গজাত (sabaltern) বলে অভিহিত। শ্রেণিসমাজ-অর্থনীতির ইতালীয় দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসি, বিশ শতকের প্রথম কয়েকটি দশক তিনি দেখেছেন। অনেক পরে তাঁর শ্রেণিসমাজতত্ত্বের নিম্নবর্গের চেতনা পাঠরূপে গৃহীত হয়। কবিদের চোখের সমাজতত্ত্বে আটকানো নয়, 888sport app download apkও তত্ত্বের জিনিস নয়; কিন্তু উদ্যাপনটি তত্ত্বে সংঘটিত হতে পারে। গ্রামসির সমাজে অনেক কিছু হচ্ছিল তখন, বিশেষ করে রাজনৈতিক সমাজ-অর্থনীতি-দর্শনের পরিবর্তন। ফলে 888sport app download apkর ভেতরে ইমেজ, বাস্তববাদ, প্রতীকবাদ আসে এনলাইটেনমেন্টের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে রুশ বিপ্লব, উপনিবেশ বা আগ্রাসনের আঘাত, শিক্ষা-সংস্কৃতির পণ্যায়ন, ‘যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ঔপনিবেশিক অত্যাচারী ইংরেজের তৈরি শিক্ষাপদ্ধতি। গোলাম বানানোর যন্ত্র। যার ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এক হৃদয়হীন আচারের ধর্ম। ধর্ম নয়, ধর্মের পোশাক’ [মানুষের মানচিত্রের স্বীকারোক্তি]। ইত্যাকার প্রশ্ন-জিজ্ঞাসার ভেতরে কবিসত্তাটি গড়ে উঠলে, পক্ষপাতিত্ব দ্বারা নিষ্পিষ্ট কি তা? অভিপ্রেত সুন্দর বা সৌন্দর্যের বিভাব কাকে বলে? নিষ্ঠুরতার স্তূপে ক্রন্দন থাকে, অনাচার-উপদ্রব থাকে  –  তারও প্রকাশ 888sport app download apkয় ঘটতে পারে, উপলভ্য সৌন্দর্যের হাতছানি সেখানে অন্য মাত্রার। কষ্ট-ক্লেদ-কান্নার স্বর যতই পরিচিত হোক, বিশ্বকে ক্রন্দনরত করুক – কবিরা তাকে প্রকাশ করেন তীব্রতার অঙ্কে – সেখানে কি জমে না সৌন্দর্যের বিভাব! কিংবা বিভাগের ভেতরে গড়া রং-রূপ অপরকে কি হাতছানি দিয়ে প্রতিক্রিয়াসাপেক্ষ করে তোলে না? রুদ্রর লাইনগুলো প্রত্যক্ষ। অনেক বেশি জীবিত। প্রভূত মাত্রায় কাছের। বহু মানুষকে বাণীটুকু প্রলুব্ধ করে। তা হয়তো সৌন্দর্য মনে না করি। কিন্তু ধ্বনির শক্তি, নিরঙ্কুশ নিংড়ানো শব্দার্থ, অর্থের যূথবদ্ধ সংক্ষোভ, চাপল্যময় ছন্দের ভেতরে ক্রোধ, শীলিত সন্ধিৎসা, অপার আক্রোশের সৌন্দর্য, চরণাবদ্ধ রূপলীলার সার্বিক মানুষী প্রবণতা আর জীবনের সন্তপ্ততা কি 888sport app download apk করে তোলেনি? স্পষ্ট উচ্চারণগুলি প্রবলভাবে চাবুক পেটায়, নিকৃষ্ট মৃত্যুর পক্ষে দাঁড়ায়, হাহাকারের ভেতরে তৈরি করে মানবতার পক্ষের অনিন্দ্যময়তার অভিমুখ – ‘আমি’ পরিণত হয় ‘যৌগিক আমি’তে, অভিন্ন আর্তস্বর কূলপ্লাবী হয়ে ওঠে, এককণ্ঠের স্রোতরেখা রচনা করে। রুদ্র ধারালো হন বলেই, ধার ছুঁয়ে চলে প্রতিটি প্রান্ত, এতে পিছুটান নেই, চেতনাতে সবটুকু নির্দ্বন্দ্ব, সজ্ঞানস্তর থেকে নির্জ্ঞানস্তরটিও একই সাড়ায় সমুপস্থিত হয়ে এক অনুভবের কথা বলে। আবেগের নির্যাসটুকু সমর্পিত হয় মানুষের পক্ষে, যে-মানুষ অপার সম্ভাবনার ও নিঃশেষ সৌন্দর্যের। যারা তা রুদ্ধ করে, হত করে, তাদের বিপক্ষে সোচ্চার। উপসংহারে রইলো, সব মানুষের জন্য জয়োল্লাস, সভ্যতা ও সৌন্দর্য এক আখরে লেখা, প্রকৃতির পক্ষের ধ্যানও তাই। যেহেতু, মানুষের সর্বোচ্চ রূপটিতেই প্রকৃতি সজ্জিত, মুখ্য ও প্রতিপাদ্য মানবকুল – তবে তাই সত্য হোক। সে-সত্যেই প্রতিষ্ঠিত হোক কবিবাণী। সমস্ত উৎপ্রেক্ষা তাকেই বরমাল্য দিক। কালে-কালোত্তরে তা নিরূপিত এবং সেখানেই একত্রিত থাকা কবির প্রধান দায় – প্রকাশভঙ্গিত্বটিও তাই, প্রকাশের ভেতরের প্রবণতাও তাই। সেই সৌন্দর্যই কবির সৌন্দর্য। রবীন্দ্রনাথ, শেলি, কিটসও একই প্রবণতায়। ওয়ার্ডসওয়াথের প্রকৃতি কিন্তু বিশেষ অর্থে মানুষের, মানুষ ছাড়া সবকিছুই ‘অপার অন্ধকার’। জীবনানন্দ দাশও ‘নক্ষত্রের রূপালী আগুন ভরা রাতে’র ভেতরে মানুষকেই দেখেছেন। বস্ত্তত, প্রবণতায় তারা ভিন্ন, কিন্তু সৌন্দর্যে, বিভাব রচনায়, কোনো কবিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। রুদ্র থেকে আরেকটি 888sport app download apkর উদ্ধৃতি :

বদলে যাচ্ছে এই গ্রামখানি, নদীটির তীর

কপালের নিচে সরল চক্ষু বদলে যাচ্ছে।

 

কিশোরীর ঝাঁক দল বেঁধে আর খেলতে আসে না।

হাতের ভেতরে মমতার হাত, স্বাতির পৃথিবী

বদলে যাচ্ছে – বদলে যাচ্ছে – বদলে যাচ্ছে।

…      …          …

আমার গ্রামের নদীটির মতো তোমার দুচোখে

কেন বালুচর জেগে ওঠে স্বাতি, কেন শূন্যতা?

সুস্থতা চাও – কোথায় স্বস্তি, কোথায় সলিল?

এইটুকু মদ গরল পানীয় পারে কি ভেজাতে

পৃথিবীর চেয়ে আরো বড়ো এক পোড়া মরুভূমি?

 

বদলে যাচ্ছে বদলে যাচ্ছে  –

রূপশালী ধান গ্রামটিরে আমি বাঁচাতে পারি না,

আঙুলের ফাঁক গ’লে নেমে যায় বাসনার জল

রাখতে পারি না করপুটে প্রিয় স্বপ্ন আমার।

‘কাঁচের গেলাশে উপচানো মদ’ থেকে কিয়দংশ পড়ে নিলে দেখা যায় চিরপরিচিত নিবিড় গ্রাম। ‘গ্রাম’ময় 888sport app download apkর ভেতরে চোখের সুখ-স্বপ্ন-উপাচার নির্মিত পৌরাণিক স্বস্তি, বিন্যস্ত সুখের সীমানায় অমোঘ উৎসবের উল্লাস। মানব থেকে যায় তাতে। কিন্তু ‘সরল চক্ষু’ আর নেই। নেই স্বস্তিটুকুও। গ্রাস করেছে সুখ, গমন করেছে স্বপ্ন। কারা? নগর। রক্ত তাই এখন ‘কাঁচের গেলাশে উপচানো মদ’। ‘উপচানো মদে’ সব কি পরিশুদ্ধ হবে? ইমেজাশ্রিত কারুণ্য, উপচানো মদ, কবির ক্রুদ্ধতার কেন্দ্র। হতাশা ও ক্ষেদের তরল ভূমি। পালটে যাওয়া উপাদানের ক্রম-বিবরণ ক্রমাগত দখলে নেয় তার কষ্টকে। ক্ষরণের ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ এই উপচানো মদ। কাচের গ্লাসে [গেলাশ] তা আরো মৌলিক ইমেজখন্ডের নিরলঙ্কার দ্যোতনা। কিন্তু তুমুল আশ্চর্যে পড়ে নিই বিষয়ের বাইরে – এর ভেতরের নির্মল 888sport app download apk। শক্তিটুকু প্রকৃত কবির। যার ভূমি ও মাটির শ্বাস লোকজ, উদ্বেল-আখরসমূহ তুমুল জীবনসাপেক্ষ। ব্যর্থ করপুট, স্বপ্নের স্থবিরত্ব কবির ‘নাইটমেয়ার’। ব্যাকুল তাঁর প্রতিটি বাতাস, প্রতিটি নদী,  প্রেমিকা স্বাতি আর বাসনামাখা আনন্দ। এটি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে চরণবিচ্ছুরিত অভিজ্ঞানে। ফিরে চাই স্বর্ণগ্রামে ভূমিসন্তানের অনিঃশেষ কলরোল চিহ্নিত। ‘হারাই হরিণপুর’, ‘একজোড়া অন্ধ পাখি’, ‘নিখিলের অনন্ত অঙ্গন’, ‘গহিন গাঙের জল’ প্রভৃতি একরকম ভাবনার স্পেলের বিন্যাস। ‘আমি’ মিশে গেছে উত্তাপ-উঁচানো সময়ের 888sport app download for androidীয় ময়দানে – সেখানে আনখাগ্র ছুঁয়ে-ছেনে ভরে উঠেছে নিজস্ব আঙিনা। ‘লহ এ নগর, ফিরে দাও স্বর্ণগ্রাম’ – আখ্যান। এ-কাব্যটির ভাষাপুটে লোকজ তৃষ্ণার অগ্নি যেন একাকিত্বের ঘরে বাসা বেঁধেছে। একাকী মন ও একক চোখ কখনো দুরবিনে, কখনো অনুবীক্ষণে পরিপূর্ণ এক  ‘অপূর্ববস্ত্ত-নির্মাণ’ রচনা করে। উপর্যুক্ত 888sport app download apkয় স্বভাব-বর্ণনার ভেতর দিয়ে সৌন্দর্য পুনর্গঠিত হয়, চিত্তের চমক প্রসারিত হয়। কবিচিত্ত ও সমাজচিত্তের অদ্বৈত রূপ চিত্তে নবরস সৃষ্টি করে। প্রকাশপদ্ধতিটিও স্বতন্ত্র। অর্থগৌরবই এখানে মুখ্য। এটি তৈরি হয়েছে ব্যক্তিঅবক্ষয়জাত দর্শনের উপলব্ধি থেকে।

 

তিন

রুদ্রর 888sport app download apkর উত্তুঙ্গ অবস্থান মানুষের মানচিত্র কাব্যটিতে। কমিটেড এবং তুমুল ‘বেদনায় অন্তর করিয়া বিদারিত’। সমব্যথী কবি। ঠিক বিপরীত অর্থে অনুমান করি ‘অন্তরে রুদ্ধ শক্তির পীড়া’। কবির শক্তি বিদীর্ণ। অর্থ তাৎপর্যময় একটানা বত্রিশটি নামহীন 888sport app download apk, একসুতোয় আটকানো – মানুষের মানচিত্ররূপে। স্বীকারোক্তিসমেত গড়ে ওঠে স্তবকগুচ্ছ। তাতে দানা বাঁধে তুফান দিন :

পাখির নাহান ডাকো। মাঝরাতে ডাক দাও পাখির গলায়।

আমি কি বুঝি না ভাবো? কাতলা মাছের মতো ঘাই

মারে বুকে,

ওই ডাক ঘাই মারে রক্তে-মাংসে। ভাবো ঘরে আছি খুব

সুখে।

আহারে পোড়া সুখ – তুফানের গাঙ দেখে মাঝি সে পালায়।

নিরহঙ্কার দৃষ্টিপাতে উত্তর-উপনিবেশ চেতনাটি অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। শস্য-শ্যামল প্রকৃতি অস্তিত্বে ও জাতীয়তায় গাথা। কবি তাতে বরমাল্য দেন। নিকটতম হন ডায়ালেক্টের ভেতর। ঘনিষ্ঠতায় আত্মার সংলগ্নতায় কাব্যরস বিরল আস্বাদে উপভোগ্য হয়। স্ফূর্তিতে ঢেলে দেয় জন্ম-যৌবনের সবটুকু অপরূপত্ব এ-চেতনা সাতচল্লিশ-পরবর্তী সময়ে ক্রমশ অধিকৃত হয়। রুদ্রর এ-অধিকৃতি সবকিছু আত্মস্থ করে। এ আত্মস্থতায় প্রধান হয়ে ওঠে ‘অপর’ চেতনা। শ্রেণিচেতনাও। বক্ষ্যমাণ কাব্যে যা উত্তুঙ্গ পর্যায় স্পর্শ করেছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রে আপন সত্তার স্ব-স্বীকৃতি এবং শ্রেণিচ্যুতির ভেতরে অস্তিত্বের উদ্যাপন। প্রান্তিক কে? কেন সে প্রান্তিকরূপে সমাজে শ্রেণিচ্যুত। কর্তৃত্বের বিপরীতে প্রান্তিকের আস্তিত্বিক অভিব্যক্তি বিষয়ীরূপে ধরা পড়ে। তাতে কাব্যবিভাব হয়ে পড়ে আরো সংহত, ঋজু। বৈষম্য স্থানচ্যুত করে শ্রমজীবী-প্রান্তিককে কর্তৃত্ব প্রদান, তার সংস্কৃতির সরল সুখকে গ্রহণ করার সংকল্প গৃহীত। কারণ, এইটিই প্রকৃত জীবন-সংস্কৃতি। দ্বান্দ্বিক সমাজের অভিমুখটুকুর নেতৃত্ব দেয় এই শ্রমী সমাজ-সংস্কৃতি। প্রথা, ভোগবাদী আচরণ, নিশ্চল স্থবিরত্ব, বুর্জোয়া ভুঁইফোঁড় সংস্কৃতি ওপর-কাঠামোতে চাকচিক্য ও জৌলুস আনলেও মৌলিক স্তরে কোনো সফল সূচক তৈরি করতে সমর্থ নয়। কারণ, প্রথাগত আচরণের বাইরে সচল পরিবর্তনের সে বিরোধী। স্থবিরত্ব কাটিয়ে 888sport free betগরিষ্ঠ মানুষের সম্মিলিত শক্তিকে নেতৃত্ব দিলে কর্তৃত্ব থাকে না, জড়তা ভাঙলে শোষণ ও ক্ষমতার কেন্দ্র ধসে পড়ে। ‘ধর্ম আফিমের ন্যায়’ তাতেই শোষণের শক্তি দৃঢ়তর হয়। নিশ্চল সমাজে মুষ্টিমেয়ের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিক এর বিপরীতে 888sport free betগরিষ্ঠের ক্ষমতায়ন, তার লোকজ সংস্কৃতির অভিপ্রায়ের প্রসার ও স্বীকৃতি, নিশ্চলতাকে অস্বীকার করে দ্বন্দ্বগত অভিমুখে সমাজের প্রকৃত শক্তিকে চারিয়ে দেওয়া, ধর্মকে জীবনবাদী প্রয়াসে ব্যবহারিক জীবনের অংশ করা, প্রকৃত জাতিসত্তার পরিচয়ে বিবর্তনমুখী আচরণের ভেতর দিয়ে স্বপ্ন ও বাস্তবের মোকাবিলা করা, ‘অর্ধেক তার করিয়াছে 888sport promo code’র অধিকার ও সাম্যতা আনয়নের তত্ত্বটি প্রাচ্যীয় ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে। আর সে পক্ষেই সংস্কৃতির দ্বন্দ্বাত্মক অভিমুখ রচনা। কবি সমাজ নিঃশ্বাসটুকু চিনে ফেলেন, গোড়ায়। তাই ভুঁইফোঁড় নগরে নয়, স্থবির ফ্যাশনদুরস্ত চাকচিক্যে নয়, আরোপিত পণ্য-সংস্কৃতিতে নয়; ফিরতে চান স্বর্ণগ্রামে – যেখানে ‘পাখির নাহান ডাকো’, যেখানে ‘মাঝরাতে ডাক দাও পাখির গলায়’। এ ডাক মধুগন্ধে ভরা। নির্মল বায়ু ও প্রশ্বাসে বাঁচা। সম্মিলিত সংস্কৃতিতে বাঁচা। স্থবিরত্ব বা কর্তৃত্বের বিপরীতে দ্বন্দ্বাত্মক অভিমুখে চলা। তাই তো লোকজীবনের দস্ত্তর। প্রথা, গোষ্ঠিতাকে অস্বীকার করে মানুষের নিরন্তর সম্মুখগামী ঐক্যসূত্রটি চিহ্নিত করা। সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিন্নতাই তো জাতির স্বাতন্ত্র্য। নবায়ন ও নতুনত্বই তার সার। রুদ্রর 888sport app download apkর প্রধান শক্তি জনসংস্কৃতির মূলে ফেরা, কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে বৈষম্য নয়, সাম্যের দর্শন প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য তাঁর প্রেরণা ‘মাঝির ডাক’, যে-ডাকে তাঁর অস্থিমজ্জা কেঁপে ওঠে, রক্তমাংসে প্লাবন তোলে। এ জেনুইনিটি কালে কালোত্তরের কথকগণ সৃজন করেছেন। ‘মূল’, ‘শেকড়’, ‘অস্তিত্ব’, ‘সত্তা’ একটি বন্ধন। পরিচিতি। রুদ্ধদ্বার ভাঙার প্রেরণা। মুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার শক্তি। ‘উপনিবেশ’ একটি মুখস্থ পাঠ। দাসত্ব আর বন্ধ্যত্বের বন্দিশালা। মানুষের মানচিত্র রচনার প্রাক্কালে রুদ্র বলেছেন : ‘একটার পর একটা খাঁচা নির্মাণ করেছি আমরা। আবার সে-খাঁচা ভেঙে নোতুন খাঁচা বানিয়েছি। আবার খাঁচা ভেঙেছি – আবার খাঁচা বানিয়েছি। খাঁচার পর খাঁচায় আটকা পড়তে পড়তে, খাঁচার আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, টুকরো টুকরো হয়ে আজ আমরা একা হয়ে গেছি। প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি। কী ভয়ংকর এক একাকিত্ব! কী নির্মম এই বাস্তবহীনতা!! কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা!!!’ তিনি আরও বলেন : ‘আমাদের কৃষকেরা শূন্য পাকস্থলি আর বুকে ক্ষয়কাশ নিয়ে মাঠে যায়। আমাদের 888sport promo codeরা ক্ষুধায় পীড়িত। হাড্ডিসার। লাবণ্যহীন। আমাদের শ্রমিকরা স্বাস্থ্যহীন। আমাদের শিশুরা অপুষ্ট, বীভৎস করুণ। আমাদের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধা, অকালমৃত্যু আর দীর্ঘশ্বাসের সমুদ্রে ডুবে আছে। পৃথিবীর যুদ্ধবাজ লোকদের জটিল পরিচালনায়, ষড়যন্ত্রে আর নির্মমতায় আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা আর চরম অসহায়ত্বের আবর্তে আটকা পড়েছি। কী বেদনাময় এ-অনিশ্চয়তা! কী বীভৎস এই ভালোবাসাহীনতা!! কী নির্মম এই স্বপ্নহীনতা!!!’ কমিটমেন্টের এই স্বর তাঁর 888sport app download apkর নির্মাণভিত্তি। নির্ভার উপমা ও উৎপ্রেক্ষা কিংবা সাধারণ অর্থে শব্দের পর শব্দ তৈরি করছে কাব্যবিভাব। স্বভাবোক্তির প্রচল ধারা তাঁর 888sport app download apkয় অক্ষুণ্ণ থাকলেও চলমান সময়ের ভেতরে তা পেয়েছে স্বতন্ত্র অর্থগরিমা। কবি-স্বীকারোক্তির ভেতরে বলা আছে :

আমি একা। এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা। আমার অন্তর রক্তাক্ত। আমার মস্তিষ্ক জর্জরিত। আমার শরীর লাবণ্যহীন। আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত। আমার জিভ কাটা। তবু এক নোতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে। আমাকে তাড়ায়। [ইটালিকস করা শব্দ আলোচনার প্রয়োজনে]

এই ‘আমি’ এবং যৌগ ‘আমার’ 888sport app download apkর রুদ্রকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে? উদ্ধৃতি :

সোনার খাঁচায় বেঁধে রেখেছে পাখিটি, পায়ে সোনার

শিকল।

আহারে রঙিলা খাঁচা! দেখতে কি অপরূপ পাখির ঘর,

পাখির আকাশ আজ বাঁধা প’ড়ে আছে ওই খাঁচার

ভিতর।

বুনো গান ভুলে গেছে, শিখেছে নোতুন বুলি, নয় কোলাহল।

প্রতীকময় বন্ধনরজ্জুটি সংসারে আছে, সর্বত্রই আছে। সেটি ভাঙতে হলে, পুনর্নির্মাণ করতে হলে, চিন্তায় আটকাতে হলে, আনন্দময় করতে হলে কোনো শক্তির ‘নিয়ন্ত্রণ’ চলে কী? তাহলে সভ্যতা কীভাবে নির্মিত হলো। কীভাবেই বা তা সামনে এগোবে! প্রশ্নশীল কবি পুনর্বার ফেরেন প্রশ্নে। তাই তো ক্রোধে গর্জে ওঠেন, সংলাপে গড়েন ভূমি-ভাষা, উত্তপ্ত হয়ে নিজেই যেন দাঁড়ান জনতার পাশে, তুলে দেন তার ক্ষমতা :

থামা, খানকির পোলা তোর ইলা-বিলা থামা। মানুষের ঢল

দ্যাখ নোনা দইয়ের মতো কূল ভেঙে কেমন গর্জায়ে ওঠে।

কেমন শিমুল দ্যাখ, রক্তজবা কিরকম রাঙা হয়ে ফোটে।

খুনের বদলে খুন, জুলুম চালালে নেবো জুলুমে বদল  –

এভাবে দায় ও অধিকার হয়ে ওঠে 888sport app download apk। 888sport app download apkর স্বর ও ধরন পালটায়। রুদ্র ‘ইশতেহার’ তৈরি করে ফেলেন। এ কী নান্দনিক অভিজ্ঞানের জন্য প্রতিবন্ধক! ‘Art for Art’s Sake’ কথাটি চুলোয় যায়! রুদ্র 888sport live chatের এ-তত্ত্বের তোয়াক্কা করেননি। 888sport live chatকে করেছেন অস্ত্র। বেছে নেন স্বচেতনার ধর্মটি। ‘মাইসেলফনেস’ হয়ে নন্দনের জগৎ সৃজন করেন। ‘দুর্ভিক্ষ আর দুঃশাসন যার নিভৃত বাসনাগুলো/ দুমড়ে মুচড়ে তছনছ করছে’ – এটি কি 888sport app download apkর 888sport live chat? এ-প্রশ্নে 888sport app download for android নিই নন্দনতাত্ত্বিক বুচারের :

The sting of the pain, the disquiet and unrest arise from the selfish element which in the world of reality clings to these emotions. The pain is expelled when the taint of egoism is removed. [বাস্তব জগতের ভাবের সঙ্গে যে-স্বার্থ জড়িত থাকে, তা থেকেই অস্থিরতা, অশান্তি ও বেদনার দংশন তৈরি হয়। সে-স্বার্থ বা অহং দোষমুক্ত হলে বেদনাও তিরোহিত হয়।]

রুদ্র বেদনার দংশন থেকে মুক্তি পেতেই চেয়েছেন। এতেই তাঁর আনন্দ। ‘ক্যাথারসিস’ তা-ই। রসাধারও তাই। এভাবে রুদ্র যে নন্দনলোকের সৃজন ও প্রতিষ্ঠা করেন, সেটি শুধুই তত্ত্ব নয়, ফিরে যাওয়া নয়, প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ফিরে পাওয়া সহজাত প্রকৃতির জন্য আকুতি। সেজন্য পঙ্ক্তিমালায় তাঁর ব্যবহার্য রূপ-নিশানা : 888sport sign up bonus, তর্পণ, অলৌকিক প্রকৃতি, নস্টালজিয়া, অবসেশন প্রভৃতি। ইত্যাকার উপাদানে তিনি 888sport appsের 888sport app download apkধারায় এক স্বতন্ত্র ভূ-ভাগ রচনা করেন। এ ভূখন্ড নিশ্চয়ই নিজের – সেটি ভাষা ও বিভাবের চিরচাঞ্চল্যে মুদ্রিত। অভিব্যক্তিতেও তুমুল, ক্ষুরধার – প্লাবনমুখীও। এক্ষেত্রে রুদ্র 888sport app download apkর শব্দে হয়ে ওঠেন জহুরি, সোচ্চার শব্দধনুকী সৈনিক। এটি আরো সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে শেষদিকের দিয়েছিলে সকল আকাশ ও মৌলিক মুখোশ কাব্যে। রুদ্রর বদল ঘটানোর পরিপ্রেক্ষিত এতে আছে; কিন্তু তাঁর বিচিত্রপ্রবণতার স্বরূপ নির্ণয় হয় অগ্রন্থিত বিপুল রচনায়।

 

চার

ছোবলের পর বেপরোয়াভাবে চলা রুদ্রর জীবন নানাভাবে কাব্যময়। তাঁর রং ও রূপের খেলায় স্বতঃশ্চল। এই স্বতঃশ্চাঞ্চল্য ধরা পড়ে নানাসময়ে লেখা প্রচুর অগ্রন্থিত 888sport app download apkয়, গল্পসিরিজে, গানে, কাব্যনাট্যে। নিজেই তিনি এসব আঙ্গিক নির্মাণ করেন। নিশ্চয়ই এর পেছনে একটি পাঠ আছে। কেননা, কোনো আঙ্গিকই সমাজদ্বন্দ্বের বাইরের নয়। প্রকরণ তো একটি প্রবণতাও বটে। এই প্রবণতায় পুনর্গঠিত রুদ্রর ভিন্ন স্বর। নতুন রুপালিরেখা বলে তার পাঠও আলাদা, ভিন্ন প্রতিপাদ্যের।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ আনখাগ্র কবি, সেটি প্রতিষ্ঠিত করা  এ-888sport liveের উদ্দেশ্য নয়। কবি ও 888sport app download apkই তাঁকে সে-অভিধাটি পাইয়ে দেয়। আজকে মৃত্যুর পরও আমাদের হাতে অনিবার্য হয়েছে যে স্বর্ণমুদ্রা, তার সমাজ নিহিতার্থ কী, কেন তিনি 888sport appsের 888sport app download apkর মৃত্যুঞ্জয়ী কবি, কেন তাঁর 888sport app download apkসমগ্র মেলে দেয় অপার শক্তি ও সম্ভাবনার উপলব্ধ আকস্মিকসমূহ! সর্বদা তিনি যে কঠোর জীবনের কথাই লিখেছেন, তা নয়। বরাবর যে একটি সুরেই গান করেছেন তাও নয়। রুদ্র সৃষ্টিশীল থেকেছেন অলৌকিক আনন্দের উৎসারণে। এ সৃষ্টিশীলতায় উপভোগ আছে, ঋষিমন্ত্রের সুখ আছে, অধ্যাত্ম্য অবিনাশী কৃতিও আছে। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য কী? তাতে তার সংস্কৃতির প্রকাশইবা ঘটে কীরূপে। এ সংস্কৃতির বিবর্তনের ধরন কী? জনসংস্কৃতির মুখ্য অবকাশ কী? অধ্যাত্ম্যমন্ত্রের শখ ও সাধনা এ আলো-হাওয়া-প্রকৃতিতে কীভাবে বাঁধা। সেটি তুলে আনার উপায় ও উপলভ্য কী। রুদ্রর কবিভাষা সে-কাজটি সম্পন্ন করেছে। নিরঙ্কুশভাবে করেছে। নৈমিত্তিক হয়েও তা হয়ে উঠেছে নিরাবলম্ব। নির্জ্ঞানলোকে পৌঁছেছে তাঁর সজ্ঞান-সাধনা। নিরালোকে চালিয়ে দিয়েছেন তিনি দিব্যরথের চাকা। এ লক্ষ্যে আমরা প্রচুর উপাদান যেমন খুঁজে পাই তাঁর অগ্রন্থিত 888sport app download apkয়, তেমনি শব্দযুদ্ধের ভেতরে শানিয়ে তোলেন তিনি সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের স্বরূপ-আলেখ্য। এ স্বরূপ-সন্ধান তার লক্ষ্য ছিল না, বেপরোয়া-বোহেমীয় রুদ্র সচেতন অভিজ্ঞানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কিছু করেননি। 888sport app download apk তাঁর অবলম্বন-আরাধনা-লৌকিক বিহার। এ পরি888sport slot gameের ভেতরেই তিনি হয়ে ওঠেন অলৌকিক আনন্দের সারথি। 888sport app download apkয় নিরঙ্কুশ হয়ে ওঠার ক্ষমতা তাই তাঁর জন্মমৃত্যুর উল্লাস। কার্যত, তাই বেঁচে থাকা। সেভাবেই আলো আর আলোর পথের যাত্রীদের খুঁজে চলা। অগ্রন্থিত 888sport app download apkর খররৌদ্রের ভেতরেই বাউলিয়ানার রীতি, বাউল বাসর গড়ে উঠেছে। আবার বিষ বিরিক্ষের বীজ কাব্যনাট্যের ফর্মেও তাঁর প্রকাশশীল প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে চিররূপময়। বিভিন্ন সময়ে লেখা অগ্রন্থিত 888sport app download apk থেকে :

ক.

তোমার সাগর বুকের নিবিড় চর নিসর্গ

গ্রাস করে নেমে যাচ্ছে ঠিকানাবিহীন প্রবাসে

হে সিন্দাবাদ, মাল্লার জলজ চোখে নীল অনিদ্রার

মাতাল পালে থেমে আছে মৌসুমি আকাশ

এখন প্রতিধ্বনি থেকে সশরীরী বিশ্বাস

জেগে ওঠো ধ্বনিময় –

খ.

আজ, নয় কাল, নয় একদিন

পথ শেষে গন্তব্যের চূড়া দেখে তরুতলে কুড়াবো বকুল,

জীবনের সমস্ত কালো মেঘ ভেসে যাবে হিমেল বাতাসে।

 

গ.

প্রতিটি দিনের শেষে

ব্যস্ততার ঘামে ভিজে, গায়ে মেখে প্রয়োজনের ধুলো ও বালি

চোখের গভীরে এক গহিন খোয়াব

ফিরে এসে দেখে যাই ঘাসের গালিচাখানি –

তুমি জানো, ঘাস নয়

ঘাসেরো অধিক এক সবুজের টানে

আসি আমি।

আর সে সবুজ থাকে নির্জন দিঘির মতো

তোমার দুচোখে

সত্তরেই তাঁর 888sport app download apk উৎকৃষ্ট মাত্রা পেয়ে গেলে আশিতে তা স্বতঃধার, অনেক 888sport app download apkই লেখা হয়, বৈভবের উৎসবে গুণত্বও পান তিনি; মিঠেখালি-মংলা-বাগেরহাট-888sport appর আবাস, নিয়তই তাঁকে দেয় অনেক 888sport app download apk, 888sport app download apkর গড়া চেতনার প্রতিমূর্তি অনেকদূর তার ব্যাপ্তি-বিস্তৃতি; ক্রমশ তারই প্রতিক্রিয়া – এই সমাজ ও রাষ্ট্রে গৃহীত। মেরুদন্ড সোজা, কলমে বিপ্লবী। সমাজ শোষক-স্বৈরাচারের অশনি, রাষ্ট্রের দানব; বিপরীতে জনতার হাতিয়ার। নিরঙ্কুশ প্রেমিক, অলৌকিক বাউল – এমন নানা অভিধায় সম্পূর্ণায়ত রুদ্র। তাঁর নানা সময়ের লেখা উপর্যুক্ত 888sport app download apkসমূহ কখনো মংলায়, কখনো 888sport appয় – সত্যিকার কবির চান্দ্র-প্রতিলিপি। কী পাই তাতে? নেই শুধুই প্রতিকার, শ্রেণির হাহাকার। 888sport app download apk কখনো নিছক নন্দনেরও। প্রেমিকার প্রলয়ের উল্লাসও। বাউলিয়ানার মন্দ্ররূপ, কোমলতার তীব্র আকর্ষণ, প্রহরীর বন্দনার ক্লেশ কী নয় তা! পঙ্ক্তির কৌমার্য যেন চিরপ্রসূণ। সুকুমার।

রুদ্র এসব 888sport app download apkয় উচ্চমাত্রা স্পর্শ করেছেন। উপভোগ্য এবং অন্তহীন অনুভবে তা দুর্মর আলোকোজ্জ্বল। ধ্বনির ঝংকার এবং অভ্যন্তরীণ স্পন্দন তাতে অনতিক্রম্য নয়, বহুদূর ব্যাপ্ত। জগতের সমস্ত আলোকরশ্মি তা গ্রহণ করেছে। খুব প্রিয় দুটো 888sport app download apkর কিছু লাইন ধরে রুদ্রকে আরো মহার্ঘ্য করে তুলি। 888sport app download apk দুটির নাম ‘অভিমানের খেয়া’ এবং ‘খতিয়ান’। প্রথমেই ‘খতিয়ান’ থেকে :

ডেকে ওঠো যদি 888sport sign up bonusভেজা ম্লান স্বরে

উড়াও নীরবে নিভৃত রুমালখানা।

পাখিরা ফিরবে পথ চিনে চিনে ঘরে,

আমারি কেবল থাকবে না পথ জানা

 

‘অভিমানের খেয়া’ থেকে :

এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,

পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত

পারিজাতহীন কঠিন পাথরে।

প্রাপ্য পাইনি করাল দুপুরে,

নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা –

এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!

কিছুটা তো চাই – হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ,

অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,

কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই।

সত্যিকার অর্থে, কোনো 888sport app download apkর অংশবিশেষে পুরো 888sport app download apk-রস আহৃত হয় না। এখানে তুলে ধরা 888sport app download apkপঙ্ক্তি কিরূপে উপভোগ্য তার কিয়ৎ নমুনা প্রকাশ করে লেখাটির সমাপ্তি ঘটাতে চাই। এক তুমুল প্রার্থনা ও অসীম প্রণোদনা নিয়ে পুনর্গঠিত ‘খতিয়ানে’র পঙ্ক্তিবিশেষ। কিরূপে? ছবিটি 888sport sign up bonusকণ্টকিত। রুমালগন্ধীও। রুমাল এখানে ইমেজাশ্রিত। প্রভূত দাপটের সঙ্গে একীকৃত। তাকে বিশেষায়িত করা হয়েছে নীরব ও নিভৃত শব্দযোজনায়। ‘ডেকে ওঠা’র প্রত্যয়টি আহবান নয় শুধু, প্রণয়ের এবং ঈষৎ বিরহতাপিত। যেখানে স্বচ্ছন্দে দন্ডায়মান প্রেমিকা। যিনি রুমালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওথেলোর প্রণয়-অবলম্বী যেন এ-রুমাল। আর সেটি তো পৃথিবীজুড়ে প্রণয়কামীদের সন্দেহ আর থরোথরো দ্বিধার প্রলাপন। এখানে তা পেয়েছে অনাদ্যন্ত রূপ। প্রান্তিক স্বরে তা ভেতরে ভেতরে দুর্বিনীত এবং মায়াবী ভাবনার অভিমুখে প্রকাশ্য। কিন্তু এসব গৎবাঁধা স্বরে আটকায় না। তিনি দ্যোতিত হন পরিস্রুত দার্ঢ্যে। সময়ক্লিষ্ট কোমল ও জটিল উপাচারে। তাতে বঙ্কিম হয়ে ওঠে দৃষ্টিপাত। স্বরে আসে গহিনতা। সুরের কার্নিশে জমে ওঠে তীব্র মাদকতা। সংশ্লেষের রঙের ফেরারি দ্যোতনা।

 

পাঁচ

888sport app download apkর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে রুদ্র প্রত্যক্ষতর হন প্রধানত ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ নামক চেতনা থেকে। সেটি চেতনগন্ধী স্বরের ক্রুদ্ধ উপাত্ত। এর বাইরে কলোত্তীর্ণ পাড়ভাঙা চিৎকারও তার আছে। আর অন্ধকার মনের 888sport sign up bonusভেজা বিবরণও তো কম নয়। পূর্ণ কবির অবচেতন মন কেমন? স্বপ্নই-বা কেমন? কীভাবে তিনি আর্কেটাইপ নির্মাণ করেন। প্রত্নমনের কাঠামোতে পুরাণের যোগ কোন ইঙ্গিতে! সে কি একটি তুমুল পাঠ? আবার উত্তর-উপনিবেশ দর্শনে রুদ্র আরো অধিকতর রূপে প্রতিষ্ঠিত। কারণ, ‘বৈপরীত্য তত্ত্ব’-এর ছোট/ বড়, কেন্দ্র/ প্রান্তের সাংস্কৃতিক-সম্পাত রুদ্রপাঠে সূক্ষ্ম ও তীব্র হয়ে ধরা পড়ে, যা ফরাসি দার্শনিক, মনোবিদ রেচেড অব দ্য আর্থের প্রণেতা ফ্রাঞ্জ ফ্রানোর দ্য ব্ল্যাক স্কিন হোয়াইট মাস্কের ফর্মেও ফেলা যায় এবং এক পর্যায়ে তা জাক ল্যাঁকার ভাষাচিন্তার ধারণায়ও পৌঁছাতে সমর্থ। এর ভেতরেই মার্কসীয় লেখকের ‘কার্নিভাল’ ধারণার বৈশিষ্ট্যও প্রক্ষেপিত হওয়া সম্ভব। যা হোক, সর্বোপরি  ‘এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,/ পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত/ পারিজাতহীন কঠিন পাথরে’ কিংবা ‘ডেকে ওঠো যদি 888sport sign up bonusভেজা ম্লান স্বরে/ উড়াও নীরবে নিভৃত রুমালখানা’ – অনবদ্য এসব পঙ্ক্তিতে অবচেতন মনের অন্তর্নিহিত প্রতীকী সত্তা আদিকল্প বা আর্কেটাইপের ভিত্তিতেই যে গড়ে ওঠে, তাতে সন্দেহ কী! ফ্রয়েডের শিষ্য মনোবিদ কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙের অবচেতন ধারণার যে-‘ছায়া’র আবির্ভাব ঘটে সেখানে পুরুষমূর্তির বিপরীতে তা প্রতীকায়িত-চিহ্নিত। মানুষের অবচেতন মনের যে-চিত্র তা শুধু স্বপ্নই ধারণ করতে পারে। চেতন-মন সামাজিক নানা কারণে তা অস্বীকার করে বা অনিচ্ছুক মেনে নেয়। অবচেতন মনেই থাকে সমুদ্রের মতো সুবিশাল 888sport sign up bonusবীজ, যা স্বপ্নই ধারণ করতে সমর্থ। পূর্ণকবিই কার্যত এ-888sport sign up bonusবীজের ফসল ফলায়। রুদ্রর ‘888sport sign up bonusভেজা ম্লান স্বরের আহবান’ আর ‘পরাজিত প্রেমের তনুর তিমির’ চৈতন্যের বহুস্তরীভূত অবচেতন সত্তা। এমনটা শুধু রুদ্র নয়, 888sport app download apkর কেন্দ্রে খ্যাতিমান কবিগণ বস্ত্ত-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তা গ্রহণ করেন। এভাবে রুদ্র তাঁর পঙ্ক্তিতে সৃষ্টি করেন মনোবৈজ্ঞানিক সূত্রের কালাতিক্রমী পাঠ, যা তাঁকে করে তোলে চিরায়ত কবি, প্রেম888sport sign up bonus ও আদিমাতার প্রত্নস্বরূপে।

 

ছ­য়

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ 888sport appsের 888sport app download apkয় অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ কবি। উপর্যুক্ত অংশে তাঁর 888sport app download apkপাঠের কিছু চৌম্বকসূত্র নির্ণয়ের প্রয়াস পাওয়া গেছে; পাশাপাশি তাঁর 888sport app download apkয় ক্রমোন্নতি, আঙ্গিকের পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষা নিয়ে কিছু                  ইঙ্গিত তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। রুদ্র সবক্ষেত্রে হয়তো তাৎপর্যপূর্ণ নন কিন্তু বেশ কিছু কালজয়ী 888sport app download apkয় দুর্মর ও তীক্ষ্ণ মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘খুঁটিনাটি খুনসুটি’ বা, ‘অভিমানের খেয়া’ই শুধু নয়, এ-ধরনের অনেক 888sport app download apkয় তিনি হয়ে ওঠেন সিরিয়াস  কাব্য-প্রবক্তা। বারান্তরে তা আরো প্রমাণের সুযোগ রয়ে যায়।