কামনার বিপরীতে জীবনমুক্তির পথ

‘কামনাকে জয় করতে হবে – এটাও কি মনের এক কামনা নয়? এমন কামনা কেন জাগে একজনের মনে?’ নন্দের স্ত্রী সুন্দরীর আকুতিভরা এমন কটাক্ষ যেন জৈব-বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ না করে পারে না। কামনা-বাসনা, ভোগ-বিলাসে মগ্ন সুন্দরীর জীবনকে কীভাবে বুদ্ধের বৈরাগ্যের নির্বাণ-বাণী আতঙ্কিত করে তুলছিল তা ফুটে উঠেছে কোথায় জলে মরাল চলে নাটকে। গত ১৯ নভেম্বর, ২০২১ 888sport appর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটকটির উদ্বোধন প্রদর্শনী হয়। সংস্কৃত অশ্বঘোষের সৌন্দরানন্দ কাব্যের আশ্রয়ে মোহন রাকেশ হিন্দিতে রচনা করেন লেহরোঁ কা রাজহংস নাটকটি। হিন্দি থেকে বাংলায় 888sport app download apk latest version করেছেন অংশুমান ভৌমিক। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাট্যম রেপার্টরী নাটকটি প্রযোজনা করেছে। উদ্বোধনী প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে নাটকটির উৎসমূল, নাট্যায়ন ও 888sport app download apk latest version, উপস্থাপন-বৈচিত্র্য, মঞ্চ-আলো-অভিনয়, নান্দনিকতা ও দর্শকের উপযোগিতা অন্বেষণই লেখাটির মূল লক্ষ্য।

নাট্যম রেপার্টরী একটি পেশাদার থিয়েটারচর্চার সংগঠন। ২০১০ সালে সমমনা কিছু তরুণ 888sport appয় প্রতিষ্ঠা করেন এ-নাট্যদল। শুরু থেকেই তাদের প্রযোজনা দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে। নাট্যম রেপার্টরীর দমের মাদার নাটকটি 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভৈরব অঞ্চলের মাদারিয়া সম্প্রদায়ের সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধুনিক নির্মাণ দমের মাদার দর্শকের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। নাট্যম তাদের সপ্তম প্রযোজনা হিসেবে সদ্য মঞ্চে এনেছে কোথায় জলে মরাল চলে।

এ-নাটকের মূল উৎস অশ্বঘোষের সংস্কৃত সৌন্দরানন্দ কাব্য। অশ্বঘোষ সংস্কৃত 888sport live footballের একজন কবি, সাধক ও নাট্যকার। তিনিই প্রথম 888sport live footballে গৌতম বুদ্ধের জীবনীকাব্য বুদ্ধচরিতম রচনা করেছেন। এখন পর্যন্ত গৌতম বুদ্ধের জীবনচরিতের মূল তথ্যসূত্র হিসেবে এ-কাব্যকেই ধরা হয়ে থাকে। তাছাড়া তাঁর শারিপত্র প্রকরণ বহুল পরিচিত নাটক।

সৌন্দরানন্দ কাব্যটি আঠারোটি সর্গে বিভক্ত। বুদ্ধের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ কীভাবে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হলেন, তা এ-মহাকাব্যের বিষয়বস্তু। তবে এ-কাব্য ভারতীয় সূত্রে অশ্বঘোষের মনে করা হলেও তিব্বত ও চৈনিক সূত্রে তা স্বীকার করা হয় না। এ-কাব্যের প্রথম সর্গে কপিলাবস্তু সৃষ্টির ইতিহাস এবং দ্বিতীয় সর্গে রাজা শুদ্ধোধনের জীবনকাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। তৃতীয় সর্গে তপস্যা-সাধনার পরিচয় থাকলেও চতুর্থ সর্গে এসে পূর্ণভাবে বুদ্ধের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ ও তাঁর স্ত্রী সুন্দরীর বিলাসবহুল জীবনের পরিচয় ফুটে ওঠে। তাঁদের জীবনের লক্ষ্য যেন দেবতা অনঙ্গ; রতি, প্রেম, আনন্দ। ষষ্ঠ সর্গে এসে নন্দের অনেকটা অমতেই তাঁকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করা হয়। নন্দের হাতে ভিক্ষাপাত্র তুলে দিয়ে বলা হয় – ‘জরার মতো সৌন্দর্যের শত্রু কেউ নেই, রোগের মতো সংকট নেই, মৃত্যুর মতো বিপদ নেই।’ (সৌন্দরানন্দ ৫/২৭) তাই জীবনে নির্বাণই মুখ্য। সপ্তম সর্গে নন্দ অনুশোচনায় দগ্ধ। অষ্টম সর্গে নন্দ বলছেন – ‘অরণ্য জীবনের আনন্দে আমার চিত্ত বিমুখ। আমি গৃহে ফিরে যেতে চাই। রাজলক্ষ্মী থেকে বঞ্চিত হয়ে রাজা আনন্দ পান না, আমিও আমার প্রিয়াকে ছেড়ে কোনো তৃপ্তি পাই না। (সৌন্দরানন্দ ৮/১৩) তখন বুদ্ধের শিষ্য বলেন, ‘আপনি শুভ ও অশুভের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পান না; ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়ে আপনার মন নিবিষ্ট, অন্তর্দৃষ্টিও আপনার নেই। তাই আপনি পরমতম কল্যাণের মধ্যেও শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না।’ (সৌন্দরানন্দ ৮/২৩)। রমণী যখন মোহনীয় তখন তারা অন্যের মনে মোহ সঞ্চার করে, যখন মোহমুক্ত তখন অন্যের কাছে ভয়ের কারণ হয়; সমস্ত পাপ ও সংকটের উৎস এই রমণীর সেবা কীরূপে সংগত হতে পারে। (সৌন্দরানন্দ ৮/৩২)। এভাবে নানা উপদেশ দিয়ে বুদ্ধ শিষ্য নন্দকে বাসনার অসারতা প্রমাণ করেন। নানা কাহিনি-উপকাহিনি ও ধর্মোপদেশের মধ্য দিয়ে কাব্যটি এগিয়ে চলে। বুদ্ধ বলেন, ‘ইন্দ্রিয় শাসন বিষয়ে মানুষের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত; অসংযত ইন্দ্রিয় দুঃখ সৃষ্টি করে এবং তা পুনর্জন্মেরও কারণ।’ (সৌন্দরানন্দ ১৩/৫৪) কাব্যের শেষে এসে নন্দের প্রকাশ, ‘আমার ইন্দ্রিয়গণের

উচ্ছৃঙ্খলতায় আমি যে কামবিষ পান করেছিলাম, আপনার উপদেশের মহৌষধে তা থেকে আমি আরোগ্য লাভ করেছি।’ (সৌন্দরানন্দ ১৮/৯) এভাবে নন্দের বৌদ্ধধর্মে সমর্পণের মধ্য দিয়ে কাব্যটির সমাপ্তি ঘটে।

এ-কাহিনি নিয়ে মোহন রাকেশ (১৯২৫-৭২) রচনা করেছেন নাটক লেহরোঁ কা রাজহংস। এ-নাটকে সংস্কৃত 888sport live footballের রাজহংস প্রতীকে মানবমনের বাসনাকে প্রতীকায়িত করেছেন তিনি। মোহন রাকেশ ১৯৫০ সালের দিকে হিন্দি 888sport live footballে সৃষ্ট ‘নয়া কাহিনি’ 888sport live football মুভমেন্টের একজন পথপ্রদর্শক। তিনি ইউরোপীয় বাস্তববাদী ধারায় অনেকটা প্রভাবিত ছিলেন। মাত্র তিনটি নাটক রচনার মাধ্যমে তিনি নাট্যজগতে অমর অক্ষয়রূপে বিরাজমান হয়ে আছেন। নাটকগুলো হলো – আষাঢ় কা একদিন (১৯৫৮), লেহরোঁ কা রাজহংস (১৯৬৩) এবং আধে আধুরে (১৯৬৯)। এছাড়া তিনি গল্প-888sport alternative linkও রচনা করেছেন। কলকাতার হিন্দি নাটকের দল ‘অনামিকা’ মোহন রাকেশের তিনটি নাট্য প্রযোজনা করেন। নাটকগুলো ষাট ও সত্তরের দশকে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীকালে ভারতে প্রথম সারির অনেকই দলই তাঁর নাটক প্রযোজনা করেছে। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাও তাঁর নাটক প্রযোজনা করেছে।

মোহন রাকেশের হিন্দি লেহরোঁ কা রাজহংস নাটকটির বাংলা 888sport app download apk latest version করেছেন প্রখ্যাত নাট্যসমালোচক অংশুমান ভৌমিক। বাংলায় নাটকটির তিনি নামকরণ করেছেন কোথায় জলে মরাল চলে। মরাল মানে রাজহংস। 888sport app download apk latest versionক অংশুমান ভৌমিক রাজহংসের জলকেলির আনন্দ-সম্ভোগের প্রতীক ধরে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘কোন দেশে’ 888sport app download apkর লাইন ব্যবহারে প্রতীকী ভাব প্রকাশ করেছেন। ড. আইরিন পারভীন লোপা নির্দেশনায় ভাঙাগড়ায় নতুন এক ভাষা তৈরি করেছেন। নাট্যম রেপার্টরী-প্রযোজিত এ-নাটকের কাহিনিতে দেখা যায়, গৌতম বুদ্ধ যখন নির্বাণশেষে কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদে ফিরে একে একে সবাইকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করছিলেন, তখন তাঁরই জ্ঞাতিভাই নন্দের স্ত্রী সুন্দরী ভোগবিলাস ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় কাটাচ্ছিলেন। নন্দ ও সুন্দরী শৃঙ্গার-আনন্দের মোহে ভাসছিলেন। সুন্দরীর কাছে ভোগ-লালসা, আনন্দ-সৌন্দর্য বড় ছিল। আনন্দ-হংসের জলকেলিকে কোনো ছায়া যেন আটক দিতে না পারে; নির্বাণ-বৈরাগ্য যদি জীবনের আনন্দকে নিভিয়ে দেয়, তাই সুন্দরী আয়োজন করেন কামোৎসবের। যেখানে নগরীর গণ্যমান্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। অতিথি আপ্যায়নের সমস্ত আয়োজন হয়। এরই মধ্যে সুন্দরী জানতে পারেন, অন্ধকার রাতে জলে ক্রীড়ারত রাজহংসদের ওপর কে যেন পাথর নিক্ষেপ করেছে। তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে অতিথিদের সেবার আয়োজন করতে থাকেন। অনেক আশা, অধীর আগ্রহ নিয়ে সুন্দরী অপেক্ষা করতে থাকেন; কিন্তু কেউ আসেন না। তারপরও তিনি হতাশ হন না। নিজে পুনরায় সাজতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন; কিন্তু শৃঙ্গারে সজ্জিত করে দেওয়ার মতো কাউকে পান না। স্বামী নন্দের সাহায্য পেলেও নন্দ যেন আনমনা, অমনোযোগী। কী এক গভীর ভাবনা তাঁকে ঘিরে রেখেছে। ধীরে ধীরে তাঁর কামোৎসব আয়োজন ব্যর্থ হতে থাকে। বুদ্ধবাণীর ডাকে যেন সবাই ঘরছাড়া হতে থাকেন। বুদ্ধের অনুগামী হয়ে নন্দও চলে যান। ধীরে ধীরে কীভাবে মোহগ্রস্ত অপরূপ 888sport promo code সুন্দরী সেই সমস্ত ইন্দ্রিয়জ সুখাদি পরিহার করে বৌদ্ধীয় ধ্যানকেই জীবনের সঙ্গী করে নেন, মুক্তির সাধনায় ব্যাপ্ত হন – এমনই আখ্যানের মঞ্চ-উপস্থাপন নানা সংবেদনশীলতায় উপস্থাপিত হতে থাকে।

গৌতম বুদ্ধ এমনই একজন মহামানব, যিনি রাজপ্রাসাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পরিত্যাগ করে মানবজাতির মুক্তির জন্য ভিক্ষার পাত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

মঞ্চে দেখা যায় নন্দের স্ত্রী সুন্দরীর বাসকক্ষ। মঞ্চের পেছনের অংশে মদিরাপানের উঁচুশালা মদিরাকোষ্ঠ। তার পাশেই আলো প্রজ্বালনের দীপাধার। বামপাশে মৎস্যাকার আসন। এ-আসনটি বেশিরভাগই শোবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। এ-আসনে লাগানো মৎস্য প্রতীকটি নানা অর্থব্যঞ্জনা তৈরি করে। আসনের পাশে একটি উজ্জ্বল দরজার সাজেশন। মঞ্চের ডানপাশেও এটি দরজা। সমস্ত নাট্যক্রিয়াটি এ-মঞ্চমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মঞ্চসজ্জার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পেছনে রঙিন সায়াক্লোমা। প্রসেনিয়াম মঞ্চের ডিজাইনেরই সমস্ত সেট।

নাটকটি শুরু হয় কামোৎসব আয়োজনের প্রস্তুতির মূল দিয়ে। শ্বেতাঙ্গ ও শ্যামাঙ্গ অগ্নিশলাকা দিয়ে দীপাধারে প্রদীপ জ্বালাচ্ছে। এমন সময় নন্দের স্ত্রী সুন্দরী অলকার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করছেন। সুন্দরী বলতে থাকেন – ‘রাতটা কাটুক, তারপর না হয় মনকে শুধোস। নগরনটী চন্দ্রিকার পায়ে তালে এই কক্ষের বায়ু সারারাত ধরে কেঁপে কেঁপে উঠুক। বায়ু কাঁপতে থাকুক, মদিরা দুলতে থাকুক। নগরনটীর বিলোল কটাক্ষে, দেহবল্লরীর শিহরণে! কপিলাবস্তুর যত রাজপুরুষ সারারাত এ মদিরা পান করবে। একেবারে ডুবে যাবে মণিমদিরায়।’

কিন্তু গৌতম বুদ্ধের বৈরাগ্যের বাণীর শক্তি তাঁকে সারাক্ষণ বিচলিত রাখে। সুন্দরী শুনতে পেয়েছেন বুদ্ধের মা দেবী যশোধরাও নাকি কামনা-বাসনা-সংসারত্যাগী বৈরাগী হয়ে গেছেন। এমন সময় উদ্যানের সরোবরে হাঁসের কলরব কানে ভেসে আসে। নির্দেশক পাপেটের সাহায্যে মঞ্চে হাঁসের প্রতীকী উপস্থাপন করেন। সুন্দরীর সংলাপ – ‘যা তোদের গৌতম বুদ্ধকে গিয়ে বল … কমল সরোবরের কাছে এসে ওদের কানের পাশে গিয়ে নির্বাণ আর অমরত্বের বাণী শোনাতে। ওরা হয় ঘাড় ঘুরিয়ে চকিতে ওকে দেখবে। তারপর দুলে ওঠা ঢেউ ফুলে ওঠা ঢেউ ওদের যেদিকে নিয়ে যায়, ভাসতে ভাসতে সেদিকেই চলে যাবে। সেদিন আর নদীর ধারে বসে উপদেশ বিলোনোর ইচ্ছে করবে না গৌতম বুদ্ধের। আমি তো চাই যে সেই দিনটা …’

অনূদিত এ-নাটকের সমস্তটা জুড়েই সুন্দরীর কামনা-বাসনা ও সৌন্দর্যচর্চার রূপরেখা ফুটে উঠেছে। মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চলনবিন্যাস অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ। কেউ যেন কমল সরোবরের জলে পাথর ছোড়ে। নির্দেশক প্রতীকী অর্থে কামনা-বাসনা নিরোধ সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। বহুমাত্রিক নানা ব্যঞ্জনা তৈরি হয়েছে দৃশ্যে। অলকা এসে জানান, রাঁজহাস নয়, সরোবরের জলে নিজের ছায়ার ওপর কেউ পাথর ছুড়ছিল। তখনই ঘটনায় নতুন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। নানা নৈর্ব্যক্তিক ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলে। একসময় নন্দ এসে উপস্থিত হন সুন্দরীর সামনে। চারদিকের প্রকৃতি যেন একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে। নন্দ বিচলিত হলেও সুন্দরীর প্রেমের মদিরাতেই যেন ডুবে থাকতে চান। ধীরে ধীরে কামোৎসবের অতিথিদের আগমনের আশা ভঙ্গ হতে থাকে। নন্দ বর্ণনা করতে থাকেন যশোধরার ভিক্ষুণী হয়ে যাওয়ার কথা। তিনিও নিজের মনের ভেতরে যেন দুর্বলতা অনুভব করেন। শুরু হতে থাকে নন্দ-সুন্দরীর মধ্যে মনোগত নানা দ্বন্দ্ব। একদিকে প্রবৃত্তির দাসত্ব, আরেকদিকে মানবমুক্তি। তারপরও অতিথিহীন কামোৎসব এগিয়ে চলে। একসময় মৈত্রেয় এসে এ-উৎসব বন্ধের কথা বললেও সুন্দরী কামোৎসব আয়োজনের পক্ষেই দাঁড়ান। দুজনের মধ্যে শুরু হয় টানাপড়েন।

সুন্দরী : একটা কথা ছিল।

নন্দ      : বলো।

সুন্দরী : রাখবে, কথা দাও।

নন্দ      : তোমার কোন কথাটা রাখিনি, বলো তো?

সুন্দরী : কথা দাও, কাল রাতে যা হয়েছে সব তুমি ভুলে যাবে।

নন্দ : কাল রাতে কিছু হয়েছে বলে আমার তো মনেই পড়ছে না।

সুন্দরী : ওসব নিয়ে তুমি ভাববেও না।

নন্দ : এটা নিজেকে ভালো করে বললে ভালো হয় না। তুমি তো এখনো ওসব নিয়ে …

সুন্দরী : আর কোনো দিন আমাকে মনে করাবে না।

নন্দ : মনে থাকলে তো মনে করাব!

মুকুরে নিজের মুখ দেখতে দেখতে মাথার কাছে হাত নিয়ে গিয়ে ললাটতিলক আঁকতে শুরু করেন সুন্দরী। মঞ্চে মুকুরের প্রতিবিম্বে যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মুখ। তখনই দূর থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু আর ভিক্ষুণীদের সামগান ভেসে আসে। সুন্দরী থমকে যান। সেই সামগান ক্রমশ কাছে আসতে থাকে – ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি … সংঘং শরণং গচ্ছামি … ধম্মং শরণং গচ্ছামি …।’ এই সামগান যেন নন্দকেও উতলা করে দেয়। তাই তো সুন্দরী বলে ওঠেন, ‘মুকুর নড়ে গেছে। এতটুকুনি সময় স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারো না তুমি?’ বৌদ্ধভিক্ষুদের সামগান কাছে আসতে আসতে থেমে যায়। নন্দের হাত থেকে মুকুর পড়ে ভেঙে যায়।

রাতে একসময় নন্দ চলে যান। সুন্দরী ক্লান্ত হয়ে মৎস্যাসনের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু নন্দ যখন ফেরেন তখন তিনি আর আগের নন্দ নেই। তাঁর মাথা মুণ্ডানো এবং গায়ে আঘাতের চিহ্ন। নন্দকে দেখে সুন্দরী আর্তচিৎকারে দিগি¦দিক প্রকম্পিত করে তোলেন। সরোবরের সেই রাজহংসগুলোকে আর খুঁজে পান না সুন্দরী। এরই মধ্যে সুন্দরীর কাছের মানুষ অলকাও বৌদ্ধভিক্ষুণী হয়ে গেছে। কী করবেন এখন সুন্দরী! অন্যদিকে আত্মদ্বন্দ্বে বিভোর হয়ে ওঠেন নন্দ। বুদ্ধের প্রধান শিষ্য আনন্দের সঙ্গে যেন প্রশ্নের বাহাস চলে।

নন্দ : ওই কথার খেলা খেলবার জন্যে তোমায় আর আটকে রাখতে চাই না।

আনন্দ : আমায় আটকে রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না নন্দ। যাকে তুমি আটকে রেখেছো তিনিই দ্বিতীয় কেউ।

নন্দ : কথা ঘুরিয়ো না ভিক্ষু। কে সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি? কাকে আটকে রেখেছি আমি?

একসময় নন্দ যেন উন্মাদ হয়ে যান। নিজেকে বলতে থাকেন, ‘888sport sign up bonusকে এত ভয় পাও কেন, নন্দ? 888sport sign up bonusকে কেন বি888sport sign up bonusর মদিরায় ডুবিয়ে দিতে চাও তুমি?’ দূর থেকে বৌদ্ধ সামগান শুনতে পাওয়া যায়। গৌতম বুদ্ধ হেঁটে চলেছেন সামনের দিকে, পেছনের সারিতে একে একে যোগ হতে থাকেন রাজপ্রসাদের সবাই। সে-যাত্রায় নন্দও যোগ দেন। সুন্দরী একে একে শরীরের গহনাগুলো খুলতে থাকেন। সমস্ত কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে বসে যান বৌদ্ধধ্যানে আর পেছনে সামগান বাজতে থাকে। এভাবেই পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে চলে নাটক।

নাটকের প্রধান তিনটি চরিত্র : নন্দ – বুদ্ধের বৈমাত্রেয় ভাই ও রাজকুমার, সুন্দরী – নন্দের মহিষী এবং গৌতম বুদ্ধ। যদিও গৌতম বুদ্ধকে শুধু শেষ দৃশ্যে সংলাপহীন দেখা যায়; কিন্তু নাটকের সর্বত্র নানা রূপকে তাঁর উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে। নন্দ চরিত্রে শুভাশীষ দত্ত তন্ময় সাত্ত্বিক অভিনয়ের প্রাণান্তর প্রচেষ্টার পরিচয় দিয়েছেন। সংলাপ উচ্চারণে, প্রক্ষেপণ, মডুলেশন কিংবা ঝোঁকের প্রতিও ছিল তাঁর সচেতন প্রয়াস। সুন্দরী চরিত্রে সঙ্গীতা চৌধুরী সংলাপ, চলন, নৃত্য ও সজ্জায় যে রং-আভিজাত্য তৈরি করেছেন, তা অতুলনীয়। চরিত্রাভিনয়েও নানা বৈচিত্র্য তৈরি করেছেন তিনি। এছাড়া 888sport app চরিত্রে শাকিল আহমেদ, মো. ফখরুজ্জামান চৌধুরী, খুরশীদ আলম, শিমুল সাইফুল ইসলাম, মিথিলা চক্রবর্তী, লাভলী আক্তার, দোলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, করবী দাসের অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রাচীন ভারতের জীবনচিত্র। নাটকের মঞ্চপরিকল্পনায় ছিলেন অসীম দাশ, আবহ সংগীত পরিকল্পনায় শেখ জসিম এবং আলোকে মো. বজলু রহমান।

নাটকটির অসাধারণ অলংকার সংলাপ। কিছু সংলাপকে সুভাষিত উক্তি হিসেবেই গণ্য করা যেতে পারে – ‘হাতের কাছেই এলো না হাতছাড়া হবে কী করে’, ‘জানোই তো প্রিয়ে এমন করে বিঁধলে কেন হিয়ে’, ‘মনে থাকলে মনে করাবো’ ইত্যাদি। নাটকের প্রপস ব্যবহারেও প্রাচীন ভারতের জীবনকে ধরার প্রয়াস ছিল।

নাটকের নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধ সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ তপস্যা এবং নির্বাণ লাভ করার পর স্বভূমিতে ফিরে এসেছেন। তাঁকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল কপিলাবস্তুর সকলে। রাজকুমার নন্দের স্ত্রী সুন্দরীর এই বিষয়ে কোনো আকর্ষণ নেই। ওই রাতেই সুন্দরী নন্দের বাসভবনে কামোৎসবের আয়োজন করেছেন আর সেখানে কপিলাবস্তুর অভিজাত সম্প্রদায়ের সকলে আমন্ত্রিত। সুন্দরীর তত্ত্বাবধানে সেজে উঠেছে কপিলাবস্তুর রাজভবন। শুরু হয় জাগতিক মোহ আর অপার্থিব বোধের সংঘাত। … প্রায় তিন হাজার বছরের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্রের আবহ হুবহু তুলে ধরার প্রয়াসে সেট, পোশাক, সংগীত, অঙ্গ রচনাসহ অভিনয়েও সেই সময়কে ধারণের চেষ্টা করেছি। কতটা সফল দর্শক তার মূল্যায়ন করবেন, কারণ তাঁদের সন্তুটিই আমাদের সফলতা।’ (সুভ্যেনির)

এ-নাটকে ‘জাগতিক জীবন ক্ষণস্থায়ী’ – এমন ভাব ফুটে ওঠা স্বাভাবিক। এর কাহিনিবিন্যাসে অধিকতর রূপে রয়েছে অবদমিত 888sport promo codeর কামনা-বাসনা। সাধনা ও প্রেম-রতি-কামনার দ্বন্দ্ব নিয়ে নাটক 888sport appsে নতুন নয়। এ-বিষয় আশ্রিত রতি ও আরতির পালা, নীলাখ্যান, দমের মাদার, তপস্বী ও তরঙ্গিনীসহ অনেক নাটকই 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে আলোচিত। তবে কোথায় জলে মরাল চলে নাটকটি বিশেষভাবে গুরুত্ববহ।

প্রসেনিয়াম মঞ্চে চরিত্রাভিনয় ধারায় নাটকটি উপস্থাপন করা হয়েছে। হৃদয়স্পর্শী বিষয়, রাজপ্রাসাদীয় সাজেস্টিক নান্দনিক মঞ্চবিন্যাস, জৌলুসপূর্ণ বাহারি পোশাক, মানবীয় আবেগঘন পরিমিত মাত্রার অভিনয়ে থিয়েটারটি হয়ে উঠেছে অনবদ্য 888sport live chat। সুন্দরীকে নন্দ সাজাতে গিয়ে যেন সাজাতে পারেন না, ডাক শুনতে পান বুদ্ধবাণীর। সুন্দরী যখন শৃঙ্গারে সজ্জিত হচ্ছে তখন পেছনে ভিক্ষার পাত্র হাতে ভিক্ষু। সুন্দরী ঘুম থেকে জেগে স্বামী নন্দকে মুণ্ডিত

মাথায় দেখে আর্তচিৎকারে ফেটে পড়েন – এরকম নানা নাটকীয় মুহূর্ত নাটকটিকে করে তুলেছে হৃদয়স্পর্শী। অভিনয়ে যেমন মজার ভাঙা-জোড়া, বৈপরীত্য আছে, তেমনি নির্দেশকেরও নানা প্রতীকবাদী টুইস্ট লক্ষণীয়, আছে নানা শ্লেষ। এ যেন অলংকৃত দৃশ্যরূপ। দৃশ্যের নানা কাব্যময় ব্যঞ্জনা দর্শকের হৃদয়ের মর্মমূলে আঘাত করে। ‘বুদ্ধং শরং গচ্ছামি’র নানা প্রতীকে, নানা রূপকে ব্যবহার যেন আবেগকে আপ্লুত করে। কামনার সঙ্গে মুক্তির দ্বন্দ্বে মানবমুক্তিই জয়ী হয়। বুদ্ধধর্মীয় দর্শন কোনোভাবে স্পষ্ট করলে দ্বন্দ্বটা আরো স্পষ্ট হতো। মিউজিক নিয়ে ভাবার আছে। আলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে।

কোথায় জলে মরাল চলে অত্যন্ত কালারফুল প্রেজেন্টেশন। সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত শৈল্পিক পরিবেশনা। 888sport appsের নাটক হাজার বছরের। হাজারো অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে বাংলা নাট্য এগিয়ে চলুক বিশ্ব-অভিমুখে।

ছবি : লেখক