কালঘুম

এতোদিন আমাকে নিয়ে

কারো কোনো উদ্বেগ-ই ছিল না।

পরিবারের একটা প্রায়ান্ধ মানুষ

কোথায় কীভাবে আছে

এ-নিয়ে কেউ ভাবতো না।

কারণ ছেলে-মেয়েদের ধারণা ছিল

আব্বা ঘরের যেখানেই থাকুন

বই নিয়েই আছেন

               সজাগ।

কেবল আহার-বিহারের সময়

স্ত্রী একটু তাগাদা দিতেন

বলতেন ওঠ…

যেন একটা পাথরকে ঠেলে গড়িয়ে

নাইতে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমার খাওয়া হয়ে গেলে

এ-বাড়ির সবাই ঝাঁকবেঁধে

ডাইনিং টেবিলে উবু হয়ে পড়ত

যেন ক্ষুধার্ত বুনো হাঁসের দল

স্ব-শব্দে নেমে এসেছে মেদীর হাওরে।

তাদের বাছবিচারহীন গেলার শব্দ

আমি পাশের ঘরে

সিগারেট টানতে টানতে শুনতে পেতাম।

সবাই ভাবত আমি এদের দলের কেউ নই।

আমার ব্যাপারে কত সহজে তারা

প্রকৃত সত্যে পৌঁছে গেছে,

দল নেই

            বল নেই

                চলাচল নেই

এরকম একজন মানুষ আছে আমাদের পরিবারে।

কিন্তু আমার স্ত্রী

আমার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে চাননি

পঞ্চাশ বছর একসাথে থাকলে যে নির্ভরতা গড়ে ওঠে

তা তার মধ্যে নেই।

কে জানে

তিনি হয়তো ভাবেন আমার বালিশের নিচে

কোনো সম্পর্কবিনাশী সর্বনাশ লুকিয়ে রেখেছি।

আমার কোনো অনিদ্রা রোগ নেই বলে

আমার স্ত্রীর অনুযোগের অন্ত নেই

আমি বালিশে মাথা রাখলেই নাকি ঘুমিয়ে পড়ি

এটা যে একটা নালিশ হতে পারে

তা আমার আদতেই জানা ছিল না।

আগে বলতেন Ñ

আমি পশুর মতো ঘুমাই

আর দিনমান জেগে স্বপ্ন দেখি।

আমি যে মানুষ নই

এ-ব্যাপারে আমার সহধর্মিণীর

তিলমাত্র সন্দেহ নেই

তেমন অভিযোগও নেই।

সম্প্রতি তিনি আমাকে নিয়ে ভীত

তার ধারণা – দিবসযামিনী আমি ঘুমিয়ে-ই চলেছি

আমার চোখ খোলা থাকলেও

আমি নাকি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।

চিকিৎসায় আমি ভালো হব না

এটাও তিনি জানেন

তিনি আমাকে জাগাতে চান।

আমি ভাবি এ-কালঘুম থেকে

যদি আমি দৈব কারণে জেগে যাই

আমার পরিবার-পরিজন

আমার স্ত্রীকে

আমি কি আগের জায়গায় ফিরে পাব?

২৭ জুন ২০০৪