কালের সমীক্ষা, কালস্রষ্টার সমীক্ষা

মাসুদ রহমান

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিবছর কুষ্টিয়ার শিলাইদহকেন্দ্রিক জাতীয় অনুষ্ঠানে সরকারিভাবে 888sport app download for androidিকা বের করা হয়। কয়েক বছর সেটি সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলাম আমি। 888sport app download for androidপত্রটিতে নবীন-প্রবীণ, স্থানীয় ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিসম্পন্ন লেখকদের সম্মিলন ঘটানোর চেষ্টা করতাম। ২০১৬ সালের কথা। মনস্থ করলাম, এবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের লেখা নেব। উনি আমার সরাসরি শিক্ষক নন, কোনোদিন আলাপ-পরিচয়ও হয়নি। নম্বর জোগাড় করে দুরুদুরু বুকে তাঁকে এক বিকেলে সেলফোনে কল করলাম। প্রার্থনাপূরণ পরের কথা, আমার মতো উটকো মানুষকে তিনি কীভাবে গ্রহণ করবেন, আনসেভড নম্বর রিসিভই করবেন কি না Ñ এসব নিয়ে উত্তেজনা-দুর্ভাবনা পেয়ে বসেছিল। কয়েকবার রিং বাজার পর রিসিভ হওয়ার শব্দটাও যেন বেশ সময় নিয়ে হলো। তারপর সেই জলদগম্ভীর কণ্ঠ Ñ ‘হ্যালো।’ আমি নাম-পরিচয় দিয়ে ফোন করার কারণটা কোনোরকমে বলতেই উনি আমাকে থামিয়ে দিলেন। থামিয়ে দিলেন, কেটে দিলেন না। বললেন : ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি, কথা ভালোভাবে শুনতে পারছি না, ঘণ্টাতিনেক পরে ফোন করতে হবে।’ মাইক্রোফোন যন্ত্র বা সম্মিলিত মানুষের গুঞ্জনের মতো কিছু ধ্বনিপ্রতিবন্ধ আমার কানেও আসছিল। ভেবেছিলাম আমার অন্তরের উত্তেজনা হয়তো শ্রবণে জটিলতা সৃষ্টি করছে। তো বাঁচা গেল ফোন রাখতে হলো বলে। সেইসঙ্গে প্রাথমিক ভয়-অস্বস্তিও দূর হলো। এতো বড়ো একজন ব্যক্তি, কী সহজভাবেই না কথা বললেন! কণ্ঠস্বরের গাম্ভীর্যের মাঝেও সৌজন্যের সুর শ্রুত হয়েছিল।

রাতে আবার কথা হলো। আমার বক্তব্য শুনলেন। লেখা দেবেন। তবে একেবারে নতুন লেখা নয় (অতোটা আমিও আশা করিনি), পুরনো একটা লেখা কিছুটা সংশোধন করে নিতে হবে। আমি মহানন্দে রাজি। সেই সুবাদে আরো দু-একদিন সামান্য হলেও কথা বলার সুযোগ হলো। কিন্তু এতো সহজেই সবকিছু শেষ হলো না। একটু গোল বাধলো। আর সে-কারণেই তাঁকে আরেকটু ভালোভাবে চেনার সুযোগ হলো।

প্রথম সমস্যা, লেখাটা বেশ বড়ো। 888sport app download for androidিকাগুলোর সাধারণভাবে একটা আয়তন থাকত। আরো লেখকের লেখাও তো যাবে সংকলনে। দ্বিতীয়ত, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের লেখায় রবীন্দ্রবিদূষণের বিবরণের এক পর্যায়ে দু-একজন ব্যক্তি ও বিষয়ে এমন কিছু কথা, এমনভাবে এসেছে, যা এরকম সরকারি প্রকাশনায় রাখা একটু অস্বস্তিকরও। বেশ বিপন্নই বোধ করলাম। এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে প্রায়শই যা করি, তাই করলাম। গিয়ে ধরলাম আমার শিক্ষাগুরু আবুল আহসান চৌধুরীকে। স্যার সব শুনলেন। সেদিনও সন্ধ্যা পার হয়েছে। স্যার ফোন করলেন আনিসুজ্জামান স্যারকে। আমার প্রথমদিনের আলাপের মতোই ঘটনা ঘটল। আনিস স্যার কোনো এক সভায় আছেন। চৌধুরী স্যার বললেন : ‘ঘণ্টাদুয়েক পর আনিস স্যারকে ফোন করতে হবে, মনে করিয়ে দিও।’ ঘড়ি দেখে হিসাব করলাম, সেটা তবে করতে হবে রাত ৯টায়। কিন্তু তার আগেই একটা রিংটোন দেখেই স্যার সচকিতে বললেন : ‘আনিস স্যার!’ আমি পাশে বসে শুধু এ-পারের কথা শুনলাম। আমার সমস্যা নিয়ে কথা হলো সামান্যই Ñ লেখাটা একটু বড়ো হয়ে গেছে বলে স্যার জানালেন Ñ এটুকুই শুনলাম। আনিস স্যার কী জবাব দিলেন জানি না। আলাপ গড়িয়ে চললো মধ্যযুগ কি উনিশ শতক, দুর্লভ কোনো পত্রিকা কোথায় পাওয়া যেতে পারে, আসন্ন কোনো সম্মেলন Ñ এসব নিয়ে। কিছু সময় পর স্যারদের ফোনালাপ শেষ হলো। চৌধুরী স্যার জানালেন : ‘তোমার কাজ হয়ে গেল! ছোটখাটো একটা 888sport live পেয়ে যাবে।’ শুধু বড়ো হয়ে গেছে Ñ এই সমস্যাটা শুনেই আনিস স্যার অন্য একটি লেখা দিতে সম্মত হলেন! বিরক্ত হওয়ার কথাই তো ছিল; তাহলে এ কদিন কেন বললাম না, টুকটাক সংশোধনীর কাজও যে করা হলো।

তবে এতো সহজেও সবটা হলো না। আমার পাঠানো সম্মানীর চেক ভাঙানো নিয়ে সমস্যা হলো। ফোনে সে-কথা জানিয়ে আনিস স্যার চেকটা ডাকযোগে ফেরত পাঠালেন। সঙ্গে মুক্তোদানার মতো অক্ষরে ছোট্ট চিঠি। আমি তখন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা কথা888sport live footballিক মোজাফ্ফর হোসেনকে ধরলাম; স্যারের হাতে যেন সম্মানীটা নগদ অর্থে দিয়ে আসে। স্নেহভাজন মোজাফ্ফর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কাজটি সম্পন্ন করে আসে। তারপর আমাকে জানায় যে, আমি যেন স্যারের সঙ্গে কথা বলি এই সম্মানী আর সৌজন্য কপি পৌঁছানো নিয়ে। আমি বললাম, ‘তুমি দিয়ে এসেছ, হলোই তো। এতো বড়ো এবং ব্যস্ত মানুষকে এই সামান্য বিষয়ে ফোন করা কি ঠিক হবে?’ মোজাফ্ফর বলল, ‘আপনি না করলেও স্যার যেরূপ সৌজন্যপরায়ণ মানুষ, আপনাকেই ফোনে জানাবেন।’ আমি সে-কথা বিশ্বাস করিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আনিস স্যারের ফোন Ñ প্রাপ্তিসংবাদ দিয়ে ধন্যবাদ জানালেন।

বেশ সময় নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি দিলাম বটে, কিন্তু এটিকে আত্মপ্রচার ভাববার সুযোগ বোধ করিনি। কারণ আমাকে বিজ্ঞাপিত করার কিছু তো নেই এ-ঘটনায়। আনিস স্যার সম্পর্কেই কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হলো। যথা : তাঁকে আমরা মিটিং-আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিলাম;  সাধারণের সঙ্গেও অসাধারণ রকম সহজ আচরণ করতেন এই মহান ব্যক্তিত্ব; অপরিচিতের অশিষ্ট কর্মেও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন না; ফোনকল রিসিভ না করার মধ্য দিয়ে নিজের দর বাড়াতেন না। প্রাসঙ্গিক আরেকটি তথ্যও জানা গেল, অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ছিল স্নেহ-888sport apk download apk latest versionর বিশেষ সম্পর্ক। আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থী নন, প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী নন, তবু এই যে সম্পর্কটি গড়ে উঠেছিল তার কারণ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সমধর্মী। পঠন-পাঠন, গবেষণা-প্রকাশনাই হচ্ছে তাঁদের বন্ধনের সূত্র।

তবে দুজন দু-সময়ের মানুষ। একটু সময়ের ধারাবাহিকতায় দেখাতে চেষ্টা করি। খ্যাতিমান গবেষক নীহাররঞ্জন রায় জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান-পর্বে বিদ্যায়তনিক গবেষণা-পাণ্ডুলিপি মূল্যায়ন করতে গিয়ে পূর্ববাংলার শ্রম-নিষ্ঠা-বুদ্ধি-বোধ-কল্পনা-দৃষ্টিভঙ্গির ‘অর্থগত বিবর্তন’ ও ‘বৈপ্লবিক উদ্দীপনা’র আভাস পেতেন। আনিসুজ্জামানের ‘ইংরেজ আমলের বাংলা 888sport live footballে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা (১৭৫৭Ñ১৯১৮)’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ পাঠে বলেন : ‘…তরুণ গবেষকের [আনিসুজ্জামান] শ্রম, নিষ্ঠা ও অনুসন্ধিৎসায়, তাঁর তথ্যসংগ্রহের শৃঙ্খলায়, তাঁর তথ্যনির্ভর যুক্তিতে, সর্বোপরি তাঁর স্বচ্ছ মুক্তবুদ্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির ঔদার্যে সাতিশয় প্রীত ও বিস্মিত হয়েছিলাম।’ (মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football, ২০১২, পৃ ১৩) নীহাররঞ্জন রায় কথাগুলো লিখেছিলেন 888sport apps যখন ‘উপজীত’ হচ্ছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের কালে (২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)। সেদিনের তরুণ গবেষক আনিসুজ্জামান পরবর্তী শতকের শুরুতে পরবর্তী প্রজন্মের গবেষক আবুল আহসান চৌধুরীর পঞ্চাশ-পূর্তিতে (২০০৩) লেখেন :

আবুল আহসান চৌধুরীর প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, অনেক পরিশ্রম করে তিনি মূল্যবান দলিল ও উপকরণ সংগ্রহ করেন, তারপর লেখেন তার ভিত্তিতে। পূর্বগামীদের প্রতি 888sport apk download apk latest version রেখেও তাঁদের প্রদত্ত তথ্য ও বর্ণিত মত যাচাই করে লেখেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। প্রকৃত গবেষকের কাজের প্রণালি এমনই হয়ে থাকে। … রচনা স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল, তাঁর তথ্যপ্রদানের ধরন সুসংবদ্ধ, তাঁর বক্তব্য যুক্তিপূর্ণ, তাঁর বিশ্লেষণ সুশৃঙ্খল। (পৃ ১০১-১০২) 

এ যেন নীহাররঞ্জন রায়ের কথারই অনুরণন। আবুল আহসান চৌধুরীর যে-কোনো গবেষণাধর্মী লেখা পাঠে এমতো মন্তব্য করা যাবে। আমাদের উদ্ধৃত আনিসুজ্জামানের বক্তব্যটি ছিল শামসুজ্জামান খান-সম্পাদিত আবুল আহসান চৌধুরী পঞ্চাশ বছর পূর্তি সংবর্ধন গ্রন্থ সুবর্ণরেখার আলপনার ‘অভিনন্দন’ শিরোনামের লেখার অংশ। এছাড়া আনিসুজ্জামান আবুল আহসান চৌধুরীর একাধিক বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন, সম্পাদিত একাধিক বইয়ে লেখা দিয়েছেন। দুই প্রজন্মের এই দুই গবেষকের পরম্পরা বিষয়ে আরেকটি প্রদেয় তথ্য এই যে, আনিসুজ্জামান পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত ‘আনন্দ 888sport app download bd’ (২০১৭) লাভ করলে সেখানকার আনন্দবাজার পত্রিকা সংবাদটি প্রকাশের কালে এপার বাংলা থেকে আবুল আহসান চৌধুরীর মন্তব্য যুক্ত করে।

কাজেই আবুল আহসান-রচিত আনিসুজ্জামান : কালের সমীক্ষা গ্রন্থটি বোদ্ধাজনদের আগ্রহের প্রকাশনা হবে, এ-কথা বলাই যায়। আশা করা যেতেই পারে যে, আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর স্বল্পকাল পরে প্রকাশিত বলে 888sport sign up bonusসূত্রে বেদনার আবহ যেমন থাকবে, তেমনি মনীষার সত্যনিষ্ঠ মূল্যায়নও লভ্য। পাঠকের সে-আশা অপূরিত থাকেনি।

বইটি প্রধানত চারটি 888sport liveের সমাহার। যথা : ‘বাঙালি 888sport promo codeর আলেখ্য’, ‘মনীষী-বীক্ষণের চালচিত্র’, ‘888sport sign up bonusকথনের পরম্পরা’, ‘ইহজাগতিকতা : স্বরূপ ও বাস্তবতা’। পরিশিষ্টের ‘আনিসুজ্জামানের অগ্রন্থিত তিনটি রচনা’ বলে বর্ণিত লেখাগুলো এক অর্থে গ্রন্থিত লেখা। প্রথম দুটো আবুল আহসান চৌধুরীরই বইয়ে মুদ্রিত Ñ  ভাষা-আন্দোলনের দলিল (১৯৯৮) গ্রন্থের ‘মুখবন্ধ’ ও কাজী মোতাহার হোসেন : মুক্তজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ (২০১৯; বর্তমান গ্রন্থে মুদ্রিত ২০০৯ সালটি মুদ্রণপ্রমাদ) গ্রন্থের ‘ভূমিকা’। ‘অভিনন্দন’ শিরোনামের রচনাটির পরিচয় ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছে। আরো রয়েছে গ্রন্থকারকে লিখিত আনিসুজ্জামানের একটি অপ্রকাশিত চিঠি।

প্রথম 888sport live ‘বাঙালি 888sport promo codeর আলেখ্য’ পাঠকালে একটু বিস্মিত হতে হয়। বাঙালি 888sport promo code : 888sport live footballে ও সমাজে (২০০০) নামে একটি ক্ষুদ্রায়তন গ্রন্থের কথা অনেকেরই মনে পড়বে। কয়েকজন মহীয়সীর ওপর একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনার কথাও 888sport app download for androidে আসবে। কিন্তু সবমিলিয়ে 888sport promo code নিয়ে আনিসুজ্জামান যে এতো পরিমাণ লিখে গেছেন তা অধ্যাপক চৌধুরীর এই 888sport liveের আলোয় ধরা পড়লো। 888sport promo code বিষয়ে আবুল আহসান চৌধুরীর নিজের কাজও কম নয়। ‘হার্মিট বা উদাসীন’-প্রণেতা আজিজন্নেছা খাতুনের জীবনী (আজিজন্নেসা খাতুন, ১৯৯৫) প্রণয়ন করেছেন Ñ ‘ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলায় 888sport app download apk 888sport app download apk latest versionের ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম 888sport promo code-888sport app download apk latest versionক।’ (পৃ ৩৮) অধ্যাপক চৌধুরীর সুফিয়া কামাল : অন্তরঙ্গ আত্মভাষ্য (২০১০) পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। আনিসুজ্জামান মানদা দেবীকে নিয়ে আলোচনা করেছেন আর আবুল আহসান চৌধুরী ওই শিক্ষিত-ভাগ্যবিড়ম্বিতের শিক্ষিতা-পতিতার আত্মচরিতই শুধু নয়, ওই আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থে উল্লিøখিত পুরুষচরিত্র রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যয় ও মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আত্মকথা’-‘মর্ম্মকথা’ শিরোনামের দুষ্প্রাপ্য বই সম্মাদনাক্রমে প্রকাশ করেছেন, যার মধ্য দিয়ে 888sport promo codeকে কেন্দ্র করে সেকালের ব্যক্তিজীবন ও সমাজমানসের পূর্ণরূপ দৃশ্যমান হয়েছে। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নিয়েও আবুল আহসানের মূল্যবান রচনা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আনিসুজ্জামানের 888sport promo codeবিষয়ক অনেক লেখার প্রবর্ধিত-পরিপূরক কাজ করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। কাজেই গ্রন্থকারের এ-বিষয়ে আলোচনার প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে। 

আবুল আহসান দেখিয়েছেন প্রাচীন-মধ্যযুগের 888sport live football চয়ন করে আনিসুজ্জামান সে-কালের 888sport promo codeর পূর্ণ অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং এইসব অন্দর-বাহিরের উদাহরণ জনজীবনভিত্তিক প্রকৃত ইতিহাসই নির্মাণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিককালের সমাজের 888sport promo codeবিষয়ক মনোভঙ্গি এবং সাধারণ ও সংগ্রামী 888sport promo codeদের অবস্থানও আলোচিত-উদ্ভাসিত হয়েছে আনিসুজ্জামানের আলোচনায়,

গ্রন্থ-সম্পাদনায় ও স্মারক গ্রন্থাবলি প্রকাশে। যথারীতি ঊনবিংশ শতকে বিবাহ-শিক্ষা-সংস্কার ইত্যাদির সূত্রে 888sport promo code নিয়ে যে সামাজিক আবর্তন-বিবর্তন চলেছিল তার বিবরণ পেশ ও পর্যালোচনাও আনিসুজ্জামানের আলোচ্য হয়েছে। তবে বিংশ শতকের কিছু মুসলিম মহীয়সী নিয়ে আনিসুজ্জামানের তাৎপর্যবহ কাজ থাকলেও, পূর্ববর্তী শতকে মুসলমান সমাজে 888sport promo codeর অবস্থান ও ভাবনাচিন্তা নিয়ে পরিপূর্ণ আলোচনায় যাননি। যদিও তাঁর পিএইচ.ডি গবেষণায় ও মুসলিম মানসের স্বরূপবিষয়ক আলোচনা এ নিয়ে প্রসঙ্গক্রমে যৎসামান্য কথা এসেছে। এ-প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন : ‘কারণটা হচ্ছে আমাদের লেখকদের মধ্যে ওই সময়ে বেগম রোকেয়া ছাড়া আর কোনো 888sport promo codeকেই পাই নি।’ (আনিসুজ্জামান : দীপ্র মনীষা, ২০১৫, পৃ ৪৪)  কিন্তু যে-আলোচনার নাম ‘উনিশ শতকের শিক্ষিত বাঙালির দৃষ্টিতে 888sport promo code’ সেখানেও এ-অংশের অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর আলোচনায় সেই ফাঁকটুকু পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। মুনশী মেহেরুল্লাহর কর্মপ্রয়াস, মীর মশাররফের রচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি আজিজন্নেছা, ফয়জনুনেসা, তাহেরণ নেছা, ছহিফা বিবি, হবিবুন্নেছা প্রভৃতি চেনা-অচেনা, বিস্মৃতপ্রায় মুসলিম 888sport promo codeর রচনা ও কর্মের উল্লেখ এবং নাতিদীর্ঘ বিবরণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধিৎসুদের আগ্রহী করে তুলবে।

‘মনীষী-বীক্ষণের চালচিত্র’ 888sport liveে মূলত আনিসুজ্জামানের গোটাছয়েক বইয়ে বিধৃত বিভিন্ন মনীষীকে নিয়ে লেখা মূল্যায়ন ও 888sport sign up bonusচারণ বিশ্লেষণ করেছেন, তুলে ধরেছেন চুম্বক অংশ। বইগুলোর নাম : আমার চোখে (১৯৯৯), পূর্বগামী (২০০০), 888sport app download for android ও বরণ (২০১৮), ইহজাগতিকতা ও 888sport app (২০১২), 888sport sign up bonusর মানুষ (২০২১) ও চেনা মানুষের মুখ (২০১৩)। আলোচনার শুরুতে আবুল আহসান চৌধুরী আনিসুজ্জামানের এ-জাতীয় রচনাকে দুটি ভাগে বিন্যস্ত করে দেখিয়েছেন Ñ ‘জন্মপূর্বের খ্যাত-কীর্তি বাঙালি মনীষী ও 888sport live footballসেবী’ ও ‘যাঁদের তিনি চাক্ষুষ করেছেন, সান্নিধ্য-সাহচর্য-সখ্য-পরিচয় ছিল যাঁদের সঙ্গে।’ দেখা গেল এ-দুটো তালিকা সুদীর্ঘ, যার মধ্য দিয়ে আনিসুজ্জামান তাঁর কালের সমীক্ষা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই সেরেছেন। কিন্তু আবুল আহসানের আলোচনায় প্রথম ভাগের মনীষী প্রসঙ্গ বেশ কম এসেছে। একেবারে ‘জন্মপূর্বে’ জীবনকাল শেষ হয়েছে এমন মনীষীর মধ্যে শুধু বেগম রোকেয়া আছেন। পূর্ববর্তী প্রজন্ম হিসেবে ধরলে আবুল হাশিম, মোহাম্মদ আকরম খাঁর আনিসুজ্জামান-বিবেচনা দেখানো হয়েছে। বিদ্যাসাগর কিংবা অক্ষয়কুমার দত্তের মতো কারো কারো কথা অন্য আলোচনায় ভিন্ন প্রসঙ্গে কিছুটা এসেছে। বিদ্যাসাগর ও 888sport app (২০১৮) গ্রন্থের নাম ও আলোচ্য ব্যক্তিদের তালিকা দিলেও নিজের আলোচনায় আনেননি। অথচ মুনীর চৌধুরী নামে ক্ষীণতনু একটি বই এবং 888sport sign up bonusর মানুষে 888sport sign up bonusচারণ থাকা সত্ত্বেও আবুল আহসান চৌধুরী চেনা মানুষের মুখে মুনীর চৌধুরী নিয়ে কোনো লেখা না থাকায় ধারণা করেছেন, ‘পাঠক হতাশ হতে পারেন।’ (পৃ ৬৯) কিন্তু এই 888sport live বা বইয়ের পাঠক নিশ্চিতভাবে হতাশ হবেন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল নিয়ে আনিসুজ্জামানের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে কোনো মত-মন্তব্য না থাকায়। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আনিসুজ্জামানের রচনা ও কর্ম এতোটাই যে, সেটি নিয়ে একটি পৃথক 888sport liveই হতে পারত। আবুল আহসান চৌধুরী নিজেও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে মানে ও পরিমাণে বেশ কাজ করেছেন; তাঁর সম্পাদিত রবীন্দ্রবিষয়ক গ্রন্থে আনিসুজ্জামান লেখাও দিয়েছেন। কাজেই এ-বিষয়ে আবুল আহসানের একটি 888sport live পাঠকের প্রত্যাশিত ছিল। নজরুল বিষয়ে আনিসুজ্জামানের লেখাজোখা অপেক্ষাকৃত কম হলেও যতটুকু আছে সেটুকুও তাৎপর্যপূর্ণ। আনিসুজ্জামনের বাঙালি 888sport promo code : 888sport live footballে ও সমাজে বিশ শতকের বাঙালি 888sport promo codeবিষয়ক আলোচনা না থাকার কারণে আবুল আহসান বলেছিলেন : ‘… এই পর্বটি সংযোজিত হলে আলোচনার বিষয়টি পূর্ণতা পেতো।’ (পৃ ২১) বাঙালি সংস্কৃতি ও 888sport apps নামীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও প্রকৃতির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল যেভাবে জড়িয়ে আছেন, তাতে এ-দুজনের বাদ পড়া নিয়ে আমরাও একই মন্তব্য করতে চাই।

সম্ভবত আলোচনা দীর্ঘায়তন না করার সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচিত কিছু মনীষী-মূল্যায়ন প্রসঙ্গে আবুল আহসান মন্তব্য করে গেছেন। তবে সেগুলো অবশ্যই তাৎপর্যবহ। প্রায়শ তিনি তথ্য যুক্ত করে আলোচনাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন, মতান্তর থাকলে তা যুক্তিসহ পেশ করে পাঠকের ভাবনাকে প্রসারিত করেছেন। এ-সময় লক্ষ করা গেছে, বিস্মৃতপ্রায় ব্যক্তি-বিষয়কে তুলে ধরা কিংবা তথ্য-প্রমাণযোগে কোনো নবমূল্যায়ন পাওয়া গেলে গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী বিষয়টিকে বিশেষভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। যেমন, চিত্রকর কামরুল হাসান প্রসঙ্গে ‘বিচিত্র ও অজ্ঞাত তথ্যের সমন্বয়ে’ (পৃ ৪৪) ‘একটি জীবনালেখ্য রচনার সূত্র পাওয়া’ গেল। পুঁথিবিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক বিস্মৃত লেখক নিয়ে রচিত নিবন্ধটি সম্পর্কে বলেন, ‘একমাত্র এই রচনা থেকেই আবদুল গফুর সিদ্দিকীর জীবন ও কর্মের প্রামাণ্য উপকরণ পাওয়া যায়।’ (পৃ ৬৬) এসব মন্তব্যে পরিশ্রমী ও প্রকৃত গবেষকের তথ্য-উদ্ধারের

আবেগ-আনন্দ অভিব্যক্ত হয়েছে।

তবে এই 888sport liveটির আষ্টেপৃষ্ঠে আবেগ মাখানো আছে, যা

তত্ত্ব-তথ্য-বিচারের শুষ্কতার মধ্যে প্রাণতা যোগ করেছে, বক্তব্যকে করেছে হৃদয়ছোঁয়া। যেমন শুরুটা করেছেন এভাবে :

888sport sign up bonusই হারিয়ে যাওয়া সময় ও মানুষকে ফিরিয়ে আনে। ‘888sport sign up bonus সততই সুখের’ Ñ প্রবচনতুল্য এই কথাটির দ্যোতনা অস্বীকার না করেও বলা যায়, এই সুখের আড়ালে আবার লুকিয়ে

থাকে কতো না দুঃখের ইতিহাস, শোক-বেদনা-বিচ্ছেদের দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকার Ñ বিস্ময়ের জাগরণ, লুপ্ত রত্নের উদ্ঘাটন। (পৃ ৪১)

তারপর আনিসুজ্জামানের 888sport sign up bonusর সরণি হয়ে চলেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। সে-পথটিতে আমাদেরও পরি888sport slot game করিয়েছেন, সুদক্ষ সফর-সহায়কের মতো পথ-পর্থপার্শ্বের দ্রষ্টব্য দেখিয়ে গেছেন। আর শেষ করেছেন হৃদয়দ্রাবী উচ্চারণে : ‘২০২০-এর ১৪ মে কালান্তক করোনা-কালে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নিজেই 888sport sign up bonus হয়ে গেলেন। এখন ‘চেনা মানুষের মুখ’ হিসেবে তাঁর সম্পর্কেই অন্যদের 888sport sign up bonusচর্চার পালা।’ (পৃ ৭০)

আনিসুজ্জামানের 888sport sign up bonusচারণার একটি দীর্ঘ ও ধারাবাহিক পালা তাঁর ত্রয়ী গ্রন্থনা কাল নিরবধি (২০০৩), আমার একাত্তর (১৯৯৭), বিপুলা পৃথিবী (২০১৫) নিয়ে আবুল আহসান চৌধুরীর তৃতীয় 888sport live ‘888sport sign up bonusকথনের পরম্পরা’। জন্ম-পরিবেশ থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষতক বিস্তৃত আত্মকথার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা আঁকা হয়েছে 888sport liveটিতে।

আনিসুজ্জামানের 888sport promo codeবিষয়ক রচনা প্রসঙ্গে আবুল আহসান যথার্থই বলেছিলেন : ‘কী হিন্দু কী মুসলমান Ñ যাঁদের প্রসঙ্গ এসেছে, যেসব 888sport promo codeর কথা তিনি লিখেছেন, তাঁরা প্রায় সবাই শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের Ñ সেখানে নিম্নবিত্তের একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ (পৃ ১৯) এ-কথা মনীষী-বীক্ষণের তালিকার ক্ষেত্রেও সত্য এবং তা অনুমিতই ছিল, তবে একই কথা অনেকটাই খাটে 888sport sign up bonusকথনের ক্ষেত্রেও। বিষয়টি আনিসুজ্জামানের উচ্চমন্যতা কিংবা তার বিপরীত বৈশিষ্ট্য হীনম্মন্যতা থেকে ঘটেছে, এমনটি আমাদের বক্তব্য নয়।  বৈপরীত্যের ব্যঞ্জনা থাকলেও দুটো বিষয়ই নেতিবাচক। বস্তুত আনিসুজ্জামানের এটিই স্বভাবগত সহজতা আর সততা, যা তাঁর লেখাকে দিয়েছে সমৃদ্ধি।

এ-পর্যায়ে নিম্নবর্গ নিয়ে ইদানীংকার তত্ত্ব ও দৃষ্টিকোণ নিয়ে আনিসুজ্জামানের বক্তব্য-বিশ্বাসের একটু নির্যাস অন্য উৎস থেকে এখানে নেওয়া যেতে পারে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, 888sport live footballে তো সমাজের প্রতিফলন থাকে, তা তাঁর 888sport live footballালোচনায় সমাজের দুই দুর্বল শ্রেণি প্রান্তজন ও 888sport promo codeদের প্রতিনিধিত্ব আছে বলে মনে করেন কি না। আনিসুজ্জামান জবাব দিয়েছিলেন : ‘আসলে নিম্নবর্গের ভাবনা তো তেমন দেখি না। নিম্নবর্গের কাজ দেখি।’ (আনিসুজ্জামান : দীপ্র মনীষা, ২০১৫, পৃ ৪৪) সৈয়দ মনজুরুলের যুক্তি : ‘কাজেই তো ভাবনার প্রতিফলন ঘটে।’ (উৎস : পূর্বোক্ত)। তখন আনিসুজ্জামানের ব্যাখ্যা : ‘না, আমি যেটা বলছি, নিম্নবর্গ যখন একটা অর্থনৈতিক কাজের মধ্যে আছে, চাষবাস, কাপড়ের উৎপাদন ইত্যাদি ইত্যাদি, এটার পেছনে চিন্তার ব্যাপারটা ওইভাবে কাজ করে না যেভাবে নিম্নবর্গ ঐতিহাসিকদের চিন্তায় কাজ করে। … তাঁরা নিম্নবর্গীয়ের হয়ে ভাবার দায়িত্বটা নিয়েছেন এবং তাঁরা সেটা করছেন।’ (উৎস : পূর্বোক্ত)

আবুল আহসান চৌধুরীর উদ্ধৃতি চয়নে আনিসুজ্জামানের এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের পরোক্ষ প্রমাণ মিলেছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 888sport sign up bonusচারণার অংশ থেকে। শরণার্থী ক্যাম্পে একজন রুগ্ণ মায়ের করুণ মর্মস্পর্শী কাহিনিটি আবুল আহসান চৌধুরী তুলে দিয়েছেন। তাতে আমরা বুঝতে পারি, জোর করে নিম্নবর্গ, মজলুম-শোষিত শ্রেণির বর্ণনায় অতিউৎসাহী হতেন না আনিসুজ্জামান। যেমনটি দেখেছেন, ব্যক্তি অনুভবে তা ব্যক্ত করতেন। তত্ত্ব বা পদ্ধতির কাঠামোয় উপস্থাপনায় না গিয়ে চিত্রাত্মক বর্ণনার কারণেই তো তাঁর দীর্ঘ 888sport sign up bonusকথা দীর্ঘদিন ধরে যখন পত্রিকার পাতায় বের হতো, তখন পাঠক ধারাবাহিক 888sport alternative link পড়ার মতো আগ্রহ নিয়েই তা পাঠ করে গেছেন। আনিসুজ্জামানের 888sport sign up bonusচারণা যখন স্বাধিকার-স্বাধীনতায় উদ্গ্রীব বাঙালি জীবনের প্রাণবাজি-রাখা সংগ্রামের পর্বে এসেছে, তখন তো অনেক দৃশ্যপটে তিনিই নায়কের কিংবা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংগঠনিক ভূমিকা কিংবা স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সংবিধান প্রণয়নের মতো ঘটনার সঙ্গে যুক্ততায় নিজেকে সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে বর্ণনা করছেন আর সহচরদের দিয়েছেন সম্যক মর্যাদা। আবুল আহসানের যথার্থ বিচারে আনিসুজ্জামান অহমকে ছাপিয়ে নিজেকে নয়, কালকে নায়ক করে বর্ণনা করেছেন। তবে সমাজ-সমকাল মানসের মাঝে ব্যক্তিক সত্তা যে একেবারে প্রচ্ছন্ন করেছিলেন তা-ও নয়। যেমন প্রবাস-পর্বের প্রসঙ্গে আবুল আহসানের পর্যবেক্ষণ :

প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির চেয়ে মানুষ ও তার সংস্কৃতির প্রতি তাঁর নজর পড়েছে বেশি। বিদগ্ধ নাগরিক মন নিয়ে তিনি এসব পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে এ-কথাও কবুল করতে হয়, যত দূরেই তিনি যান না কেন, দূর প্রবাসে নাড়ির টান অনুভব করেছেন স্বদেশ ও স্বজনের জন্যে। (পৃ ৮২)

স্বদেশ ও স্বজনের জন্যে এই টান নিয়ত অনুভব করার কারণেই আনিসুজ্জামান কালস্রষ্টা হয়েছেন। কাল নিরবধি সম্পর্কে বলা হলেও আনিসুজ্জামানের আত্মকথা বিষয়ে আবুল আহসানের এই মন্তব্য

পুরো আত্মকথনের ক্ষেত্রে যথাপ্রযুক্ত বলে আমরা মনে করি :

‘… অনেক ব্যক্তির 888sport sign up bonusভাষ্য তার জীবন ছাপিয়ে হয়ে ওঠে কালের দলিল Ñ সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের যথার্থ উপকরণ।’ (পৃ ৭২)

আলোচ্য গ্রন্থের শেষ 888sport live ‘ইহজাগতিকতা : স্বরূপ ও বাস্তবতা’ ১৯৮০ সালে 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে ‘ইহজাগতিকতা’ শিরোনামে আনিসুজ্জামান-প্রদত্ত সাইদুর রহমান ফাউন্ডেশন বক্তৃতার এক সারগর্ভ আলোচনা। আলোচক শুধু  ইহজাগতিকতা ও 888sport app (২০১২) গ্রন্থের প্রথম 888sport liveটি ব্যবহার করেছেন। প্রসঙ্গ দেখে বিশেষ কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আনিসুজ্জামান নিঃসন্দেহে প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু এরকম বিষয়-শিরোনামে তাঁর লেখা তেমন একটা তো আমরা পাইনি। শিরোনাম দেখে স্বতোই মনে পড়ে যায়, একই নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপকের কথা। যা হোক, 888sport liveটি পড়া শুরু করলে অচিরেই চেনা আনিসুজ্জামানকে পাওয়া যায়। ইহজাগতিকতার চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য উল্লেখ ও অনুবিবর্তনের বিবরণে মাঝেমধ্যেই বাঙালি সমাজ ও 888sport apps প্রেক্ষাপটে তাকিয়েছেন প্রাবন্ধিক।

আনিসুজ্জামান 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের মধ্যে দেখেছিলেন ‘পারলৌকিক বিষয় থেকে ইহলৌকিক বিষয়কে পৃথক করার সচেতন প্রয়াস।’ তবে সেই সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে দেখেছেন পাছে লোকে নাস্তিকতা বলে, এই ভয়ে রাষ্ট্র ইহজাগতিকতা থেকে সরতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা তো বটেই, ধর্মীয় সহনশীলতা এমনকি ‘সকল ধর্মমতের সমান অধিকার’ থাকার বিষয় থেকেও সরে আসার মতো পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগ্রহোদ্দীপক 888sport liveটি প্রথাবদ্ধ 888sport liveের সূত্র মেনেই যে লিখেছিলেন, তা আবুল আহসানের আলোচনাতেও ধরা পড়ে। ইহজাগতিকতার একটি সংজ্ঞা প্রদান ও প্রাচীনকাল থেকে সেটি কীভাবে মানবসমাজে উপ্ত-অঙ্কুরিত-উদ্গত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। বেশ উপভোগ্য ও অনুভববেদ্য সে-বর্ণনা। পুরাকালে মৃতের সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী বা দাসদাসী দেবার প্রথার মধ্যে ‘ইহজীবনকে দেখা হয়েছিল মর্ত্য জীবনের প্রসার হিসেবেই’ Ñ গ্রন্থকার-উদ্ধৃত এই অংশটি নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তবে ‘কাকে আমরা ইহজাগতিকতা বলবো’, অর্থাৎ সংজ্ঞা নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রন্থকার আনিসুজ্জামানের ‘গুছিয়ে … চমৎকার ব্যাখ্যা’ দেখেছেন যেখানে, সে-অংশে আমাদের একটি পর্যবেক্ষণ আছে। নিঃসন্দেহে ইহজাগতিকতা ‘জগৎ জীবন সম্পর্কে এ এক সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি’, যে-চিন্তাভাবনায় পরলোক-পরকাল, অতিপ্রাকৃত-আত্মা প্রশ্রয় পায় না Ñ ‘মানব জীবনের সাধনাই ইহজাগতিকতার মূল কথা।’ কিন্তু এর আগে শুরুতেই অর্থাৎ 888sport liveটির প্রথম বাক্যে আনিসুজ্জামান যে বলেছিলেন, ‘যে-জগৎ ইন্দ্রিয়গোচর ও যুক্তিগ্রাহ্য এবং যে-জীবন জন্ম ও মৃত্যুর সীমায় আবদ্ধ, সেই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে উৎকণ্ঠাকেই বলা যায় ইহজাগতিকতা।’ (পৃ ৮৫) এই ‘উৎকণ্ঠা’ শব্দেই আমাদের আপত্তি। পরলোকবিশ্বাসীদের চিরসঙ্গী উৎকণ্ঠা; কিন্তু বস্তুবাদজাত ইহজাগতিকতার সংজ্ঞায় উতল-ব্যাকুলতা-উদ্বেগের প্রতিশব্দ ‘উৎকণ্ঠা’ কী যথাযথ? আনিসুজ্জামানের পরবর্তীকালে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য-বিবরণও Ñ যার সারাৎসার আমরা আগেই উল্লেখ

করেছি Ñ শব্দটিকে অনুমোদন করে না।

স্বীকার করতে হয়, আনিসুজ্জামানের এই আলোচনা কিছুটা বিক্ষিপ্তির লক্ষণাক্রান্ত। রামায়ণ প্রসঙ্গ থেকে একবারে উনিশ শতকের আলোচনায় এসেছে একক ব্যক্তিত্ব অক্ষয়কুমার দত্তের একাকিত্ব, আর 888sport live footballে এর প্রকাশ বলতে শুধুই রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গের চরিত্র জগমোহন। শেষোক্ত অনুষঙ্গ এসেছিল ধর্মবিশ্বাস ও ইহজাগতিকতার  পরস্পরবিরোধিতা প্রসঙ্গে। আনিসুজ্জামানের এই 888sport live আলোচনার সূত্রে আবুল আহসান চৌধুরী বাঙালি সমাজে ইহজাগতিকতার উদ্ভব ও পরিণতি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি লালন সাঁই তথা মরমি সাধকের গান বা বাণীতে ‘ইহজাগতিকতার স্পষ্ট আভাস’ দেখতে পেয়েছেন, উদাহরণও যোগ করেছেন। বিপরীতে বলেছেন : ‘বাংলার বিদ্বৎসমাজেও ইহজাগতিকতার স্পর্শ কিছু-পরিমাণে লেগেছিল, তবে তা আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার দিক থেকে লোকায়ত জীবনের দৃষ্টান্তের তুলনায় যথেষ্ট দুর্বল ও কৃত্রিম।’ (পৃ ৮৪) জনাব চৌধুরীর আলোচনায় এক বড়ো প্রাপ্তি অজিত দত্তের ‘নাস্তিক’ নামের বিস্মৃতপ্রায় সনেটটি পড়ার সুযোগ। কাজী মোতাহার হোসেনের ‘নাস্তিকের ধর্ম’ 888sport live উল্লেখের সূত্র ধরে ইহজীবনকে

যথাযথভাবে মূল্য দিতে ইচ্ছুক ১৯২৬ সালে 888sport appয় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম 888sport live football সমাজে’র কুশীলবদের কথা ও কাজের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তবে এঁদের সবাই যে সর্বার্থে-সর্বদা সার্বিকভাবে ইহজাগতিকতাকে ধারণ করতে পেরেছিলেন তা নয়। আনিসুজ্জামান প্রাচীন

গ্রিস-ভারত, আধুনিক ইউরোপের জঙ্গম জীবনের সূত্রে ইহজাগতিকতা নিয়ে বলেছেন বটে; কিন্তু সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ একেবারেই আলোচনায় আনেননি। অথচ এর তাত্ত্বিক ও সমর্থকদের কাছে ইহজাগতিকতা আবশ্যিকভাবে গুরুত্ব পায়। আবুল আহসান চৌধুরী সে-কথা উল্লেখের পাশাপাশি, আমাদের দেশের সমাজতান্ত্রিক অনেকের পরবর্তীকালের পশ্চাদ্পসরণের কথাও উল্লেখ করেছেন। মার্কসবাদী মন্ত্রীর ‘সবার আগে আমি হিন্দু, তারপর ব্রাহ্মণ সন্তান, তারপর কিন্তু আমি কমিউনিস্ট’ বলে ঘোষণার পাশাপাশি মুসলমান বুদ্ধিজীবীর ‘আমি প্রথমে মুসলমান’ বলে দাবির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন (পৃ ৯১)। আগেই বলেছি, উনিশ শতকের মনীষীদের প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান শুধু অক্ষয়কুমার দত্তের কথা বলেছেন। আবুল আহসান চৌধুরী অক্ষয় দত্তের বিখ্যাত সমীকরণের ‘জোরালো সওয়াল’-এর কালাতিক্রমী প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন, তবে ‘এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি ইহজাগতিকতাবাদীর পরিণতি দেখে বিচলিত’ হয়েছেন (পৃ ৮৮)। কারণ, তিনি নাকি ‘গৃহপ্রতিষ্ঠিত নারায়ণের নিকট সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিতেন। ঈশ্বরের আকার নিরাকার তত্ত্ব সম্বন্ধেও তাহার মত স্থির ছিল না।’ (পৃ ৮৭-৮৮) এক ঊর্ধ্বকমাবদ্ধ বক্তব্যটি অক্ষয়চরিতকার নকুড়চন্দ্র বিশ্বাসের, যা খুব কম জনের বিশ্বাস আদায় করতে পেরেছে। কারণ অক্ষয় দত্তের সামগ্রিক লেখালেখি ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এ-বর্ণনা মেলে না। তাঁর বাড়িতে গতায়াত ছিল এমন অনেকের 888sport sign up bonusচারণ থেকে এর বিপরীত সাক্ষ্যই মেলে। বালির বিখ্যাত শোভনোদ্যান নামক বাড়িতে অন্তত

পূজা-অর্চনার জন্যে কোনো মূর্তি ছিল না। তাঁর শয়নকক্ষে শোভা পেতো ডারউইন-নিউটনের ছবি। জাস্টিস সারদাচরণ মিত্রের সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে পীড়াগ্রস্ত অক্ষয়কুমার উইল তৈরি করান যাতে বেশকিছু অংশ জ্ঞান888sport apk-আলোচনার জন্যে বরাদ্দ ছিল এবং সে-উইলের মুসাবিদায় ‘শ্রী হরি’ লেখা দেখে বিরক্ত হন, পরিবর্তে ‘বিশ্ববীজ’ লিখতে বলেন। এমন নির্দেশনাও দিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়

এবং ছয় ঘণ্টা পর সৎকার করা হয়। এই ইহমনস্ক পরিণতি আমাদের বিচলিত নয়, বিস্মিত করে। আনিসুজ্জামান অক্ষয় প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন : ‘… একজন উৎকেন্দ্রিক ব্যক্তির বুদ্ধিও

লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে রইল, সমাজে কোনো আবর্ত সৃষ্টি করতে সমর্থ হল না।’ (ইহজাগতিকতা ও 888sport app, ২০১২, পৃ ১৮)

তবে অধ্যাপক চৌধুরীর মতো আনিসুজ্জামানের এই আলোচনায় বিদ্যাসাগরের নামোল্লেখ না থাকা আমাদের বিস্মিত করে। গ্রন্থকার যথার্থই বলেছেন : ‘…উনিশ শতকে যে মুষ্টিমেয় মনীষী ইহজাগতিকতা-পথের যাত্রী ছিলেন, সেখানে বিদ্যাসাগরের নামই তো সবার আগে উচ্চারিত হওয়ার কথা।’ (পৃ ৮৮) অবশ্য বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ ওই কথাটি টেনে আনবেন যে, তিনি চিঠির ওপরে দেবশরণ করতেন। আরো যেমন জোরেশোরে জানানো হয়, রামমোহন রায় কখনো পৈতা ফেলেননি আর মৃত্যুর আগে ‘ওঁ’ জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন। সেসবের সত্যতা নিঃসংশয়ভাবে নিরূপিত হয়নি, তবে তিনি ধর্মগ্রন্থ 888sport app download apk latest version করেছিলেন, আপাতভাবে ধর্মসমন্বয়ের প্রবক্তা ছিলেন; কিন্তু এ-ও সত্য, ইহজাগতিকবাদীদের যেসব কর্মকাণ্ড তার কিছু প্রবলভাবে প্রথম রামমোহনের মধ্যেই দেখা গিয়েছিল। আসলে ইহজাগতিকতা যেহেতু 888sport apk নয়, দর্শনমাত্র এবং এই ইহজগতে আমাদের বিচরণ সামান্য ক্ষেত্রে, জীবন সামান্য সময়ের জন্যে, তার বাইরে

অদেখা-অচেনা অসীম সৃষ্টিজগৎ রয়েছে ও আছে চিরচলিষ্ণু মহাকাল, তাই সামান্য ইহজীবনকে কেন্দ্র করে যে-ভাবনা তা সবসময় থির থাকে না নিজ জীবনেই। এবং ‘উৎকণ্ঠা’র কারণ হয় জীবন ও জগৎ পারের সময় ও ক্ষেত্র। তাই এতো বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব। সব নিয়েই নির্মোহ আলোচনা দরকার। আনিসুজ্জামানের 888sport live নিয়ে আলোচনাশেষে অধ্যাপক আহসান বলেছেন : ‘বঙ্গীয় জনপদে ইহজাগতিকতাবাদের উন্মেষ-স্বরূপ-সমস্যা বিষয়ে বিশদ আলোচনার প্রেরণা-সূত্র হিসেবে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের এই রচনাটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।’ (পৃ ৯২) আমাদের বিশ্বাস, সে-বিশদ আলোচনা প্রাজ্ঞ গবেষক আবুল আহসান চৌধুরীর মাধ্যমেও সম্পন্ন হতে পারে। সে-বিষয়ে তাঁর অধিকার রয়েছে।

আবুল আহসান চৌধুরী সত্যসন্ধিৎসু গবেষক। হারিয়ে যাওয়া বা বিস্মৃতপ্রায় তথ্য উদ্ধারক্রমে উপস্থাপনে তাঁর আনন্দ। আর সে-উপস্থাপনা পাঠকের কাছে আনন্দময় হয়েই দেখা দেয়। কারণ অনুভববেদ্য-উপভোগ্য তাঁর পরিবেশনা। এ-বইটিও সে-বৈশিষ্ট্যের নিদর্শন বাড়িয়েছে। বিষয়োচিত যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ধরে রেখেই প্রচলিত আরবি-ফারসি মিশিয়েছেন তৎসম শব্দের সঙ্গে, যা বক্তব্যকে বাক্সময় করে তুলেছে। কিছুটা সহজ, কিছুটা কথ্য শব্দযোগে, মজলিশি বাক্যবিন্যাসে আলোচনাকে করেছেন মনোজ্ঞ। ‘সড়োগড়ো’, ‘দড়’, ‘তামাম-শুদ’, ‘গরমিল’, ‘শরম’, ‘ওজারতি’, ‘আগুপাছু’, ‘তরজমা’, ‘আফসানা’, ‘কবুল’, ‘জমানা’ ইত্যাদি নানা মেজাজের ও বিশেষ দ্যোতনা সৃষ্টিকারী প্রচলিত বিদেশি ও কথ্য শব্দ যে গবেষণাধর্মী 888sport liveে তৎসম-তদ্ভব শব্দের পাশে অনায়াসে স্থান করে নিতে পারে, সে-ভাষাশৈলী আবুল আহসান চৌধুরীর গদ্যই দেখিয়ে দিলো। দুটো বাক্যের উদাহরণ দিই।           

ক. … এঁরাও কোনো না কোনো ভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, কবুল করতে হয়। (পৃ ৩৯)

খ.  তাঁর জীবন স্পর্শ করেছে রাষ্ট্রীয় তিন জমানাকে। (পৃ ৭২)

 শেষের উদাহরণটি লক্ষণীয়। ‘যুগ’ শব্দের ফারসি সহি উচ্চারণ ‘জমানা’ই বটে। আমাদের দেশে স্বরসংগতিক্রমে ‘জামানা’ই অধিক প্রচলিত। জনাব আহসান মূলানুগত্য যতটা নয়, তার চেয়ে ভাষাভঙ্গিতে শৈলী-স্বাদ আনার অধিক তাগিদে ‘জমানা’ ব্যবহার করলেন।

আবার কাব্যপঙ্ক্তি, প্রবাদ ইত্যাদি যোগ করেও ভাষাকে কার্যকর ও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছেন। দুটি উদাহরণ দিই। আনিসুজ্জামানের সঙ্গে নিজের সমৃদ্ধ যোগাযোগের স্বল্পতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্র-গীতবাণীযোগে বলেছেন : ‘অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়।’ (পৃ ৯) অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের লেখালেখি বা বিদ্যায়তনিক কাজ না করে শুধু আলাপ-আলোচনায় জ্ঞান বিতরণের প্রসঙ্গে ঈশ্বর গুপ্ত সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের মন্তব্য একটু ঘুরিয়ে বলেছেন : ‘একটি প্রতিভা আড্ডাতেই ফুরাইল।’ (পৃ ৬৭) বঙ্কিমের ভাষ্য ছিল : ‘এতটা প্রতিভা ইয়ারকিতেই ফুরাইল।’ এরকম বর্ণনা সহৃদয় হৃদয়সংবাদী পাঠকের চিত্তে তন্ময়তা আনে।

শুরুর দিকে আবুল আহসান চৌধুরীর গবেষণার প্রকৃতি সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের অভিমতে দেখেছি, ‘পূর্বগামীদের প্রতি 888sport apk download apk latest version রেখেও তাঁদের প্রদত্ত তথ্য ও বর্ণিত মত যাচাই করে লেখেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে।’ সেটি এই বইতেও ঘটেছে অনেক সময়। পুরো বইটাই তো আনিসুজ্জামানের প্রতি 888sport app download for android-888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য। কিন্তু এতোক্ষণের আলোচনায় আমাদের চোখে পড়েছে ভিন্নমত প্রদানে কিংবা অশুদ্ধি সংশোধনে জনাব চৌধুরী দ্বিধা করেননি। এখানে আরো কয়েকটি উদাহরণ দিতে চাই। 888sport app download for android ও বরণ বইয়ের প্রসঙ্গে বলেছেন : ‘তবে বলতে দ্বিধা রাখা উচিত নয় Ñ মুহম্মদ আবদুল হাই ও সিকান্দার আবু জাফর 888sport app download for android পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করে না।’ (পৃ ৫৫) চেনা মানুষের মুখ বইয়ের আলোচনায় বলেছেন : ‘বইয়ের দু-একটি তথ্যে গরমিল চোখে পড়ে।’ (পৃ ৬৯) তারপর আকরম খাঁর গ্রন্থের নাম এবং কোহিনূর-সম্পাদকের নামের বানানের সংশোধনী দিয়েছেন। আরেকটি সমালোচনাধর্মী বক্তব্য উল্লেখণীয় বোধ করছি। 888sport app download for android ও বরণ শিরোনামের বইতে প্রতিষ্ঠিত-সুপরিচিত গুণী ব্যক্তিদের কাতারে ‘যাঁদের পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না’ (পৃ ৫২) এমন ‘অজ্ঞাত কারো সম্পর্কে আলোচনা প্রকাশ কতোটুকু সমর্থিত হতে পারে’ (পৃ ৫৩), তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এটুকু অনুমোদন করেছেন : ‘কোনো বিবেচনায় হয়তো কাউকে বই উৎসর্গ করা যায়।’ (পৃ ৫৩)

আলোচনার শেষে এসে বইয়ের প্রথমদিককার এই প্রথা অর্থাৎ উৎসর্গ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আনিসুজ্জামানের প্রয়াণকাল মাত্র বছর পেরিয়েছে। তাঁর মতো বড়োমাপের মানুষের বিয়োগব্যথা এতো দ্রুত উপশম হওয়ার নয়। তাই নির্মোহ-যুক্তিসহ আলোচনার বই হলেও আনিসুজ্জামান : কালের সমীক্ষা গ্রন্থখানির প্রারম্ভ কিংবা পরিশিষ্টের স্মারকসমূহ, লেখকের 888sport sign up bonusকাতর ‘নিবেদন’ একটা বেদনার পরিমণ্ডল তৈরি করেছে। আলোচনার মাঝে মধ্যেও তার ছায়াপাত ঘটেছে। আরেকটি বেদনাবিধুর পৃষ্ঠা হয়েছে এর উৎসর্গপত্র। সাধারণত আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর গ্রন্থ উৎসর্গ করে থাকেন বিবেচনাসাপেক্ষে। বই ও ব্যক্তির যথাসম্ভব সামঞ্জস্য রাখেন। যেমন, বঙ্গীয়-888sport live football-পরিষৎ কর্তৃক প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেন-সম্পাদিত হিতকরী : উনিশ শতকের দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা (১৪২২) সংগ্রহ-সংকলন গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন 888sport apk download apk latest versionস্পদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। সবসময় হয়তো এরকমটি হয়নি পরিচয়ের দাবিতে কিংবা স্নেহপ্রীতির উপরোধে। তবে আমাদের আলোচ্য বইটিও যথাযোগ্য ব্যক্তিকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। করেছিলেন আনিসুজ্জামানের সুযোগ্য ছাত্র, একই রকমের পরিশ্রমী-বস্তুনির্ভর-নির্মোহ এক গবেষক-প্রাবন্ধিককে। তবে ‘উৎসর্গ/ অধ্যাপক ভূঁইয়া ইকবাল’ Ñ একটি সাদা পৃষ্ঠার মাঝখানে সামান্য অংশ জুড়ে থাকা এই কালো লিপিমালা বেদনাবিধুর করে তুলেছে বইটির প্রকাশনাকে। এ-বই প্রকাশ পেয়েছিল ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে। ভূঁইয়া ইকবাল জুলাই মাসে বিগত হলেন করোনার কারণেই।

আবেগ এড়িয়ে শেষকথা বলি। আনিসুজ্জামানের স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬) বইটির 888sport live 888sport free bet ছিল চার Ñ ক্ষীণকায় পুস্তকটি প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগের, অর্থাৎ সমগ্র বাঙালি জীবনের কালভিত্তিক সমীক্ষা; চারটি 888sport live দিয়ে আনিসুজ্জামান নামক কালস্রষ্টার সমীক্ষা করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। ভবিষ্যতে আনিসুজ্জামানকে নিয়ে গবেষণা হবে নিশ্চিত করেই বলা যায়। আবুল আহসান চৌধুরীর এ-বই গবেষকদের বিশেষ সহায়ক হবে, তবে প্লেজিয়ারিজম-প্রিয়তার এই যুগে সবাই যে যথাযথভাবে ঋণ স্বীকার করবেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।