কুয়াশামুক্ত এক অপূর্ব উপাখ্যানকথা

এ-সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কথাকার অমর মিত্র তাঁর সাম্প্রতিক 888sport alternative link মোমেনশাহী উপাখ্যান পাঠে আমরা অনেকেই বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছি। কিংবদন্তি অথবা প্রত্নপুরাণ তাঁর বহু উল্লেখযোগ্য রচনার প্রেরণাস্বরূপ। ধ্রুবপুত্র, অশ্বচরিত, ধনপতির চর, মেলার দিকে ঘর প্রভৃতি 888sport alternative link-গল্পে তিনি কিংবদন্তি বা  প্রত্নপুরাণের সদ্ব্যবহার করেছেন। এক সাম্প্রতিক রচনায় তিনি বলেন – ‘আমার নিজের গল্প ও 888sport alternative linkে কিংবদন্তি, পুরাণ-প্রতিমা বা প্রত্ন-প্রতিমা নানা ভাবে এসে গেছে। এখন মনে হয় সারাজীবন এই চর্চাই করেছি।’ প্রসঙ্গত, তিনি বলেন, ভেরিয়ার এলুইনের রচনা তাঁকে এ-ব্যাপারে আকৃষ্ট করেছে। এটাও বলেন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, দেবেশ রায় প্রভৃতি কথাকার এ-ব্যাপারে তাঁর পূর্বসূরি। তবে অমরের শৈলী বা বিন্যাস অবশ্যই স্বাতন্ত্র্যবাহী। বিভূতি থেকে দেবেশ – মেলে না। স্বতন্ত্র শৈলী।

মিথ হলো এক ধরনের গল্প অথবা গল্পপ্রতিম – ন্যারেটিভ সিকোয়েন্স, যা সাধারণত ঐতিহ্যপ্রাপ্ত, লেখক অজ্ঞাত। মিথের মাধ্যমে একটি সংস্কৃতি মানব এবং প্রাকৃতিক সংঘটন সম্পর্কে সামাজিক রীতিনীতি বা বিবরণকে স্পষ্টত-অস্পষ্টত অনুমোদন জানায়। তবে এই মিথ নানা অর্থে ব্যবহৃত। সুবিধার্থে তা বিচার সম্ভব (rationalist) এবং রোমান্টিক – এই দুই ভাগে ভাগ করা চলে। 888sport live footballে এই দ্বিতীয় ধরন প্রাধান্য পায়। মিথের গল্প প্রকাশ করে গভীরতর অর্থ, যার সাহায্যে জীবনের মৌল বিশ্বাস (যথা – মৃত্যু, অনৈসর্গিকতা) যা সমষ্টিজনে ফুটে ওঠে। (Oxford Dictionary of Literary Terms, C. Baldick, Pg. 217-18)

তাহলে ‘লিজেন্ড’ কী? এ হলো একটি গল্প অথবা গল্পগুচ্ছ, যার মাধ্যম জনপ্রিয় মৌখিক ঐতিহ্য, যাতে অতিশয়োক্তি মারফত কোনো বাস্তব বা ঐতিহাসিক ব্যক্তির কথা বলা হয়। লিজেন্ডে ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকে, তবে স্পষ্টভাবে বলা যায় না। রাজা আর্থার ও তাঁর নাইটদের গল্প এরকম। (পূর্বোক্ত, ৮৫)। তবে মিথ বা লিজেন্ড থেকে যাত্রা শুরু করে কথাকার সমসাময়িকতার সঙ্গে তা মিলিয়ে দিতে পারেন, সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে যাত্রাপথ, স্থান, কাল, প্রসঙ্গ এগিয়ে আনতে পারেন।

মোমেনশাহী উপাখ্যান 888sport alternative linkের সূচনায় অমর জানিয়ে দেন, গীতিকার কাহিনি আশ্রয় করে জীবনমহিমা লেখার সাধ ছিল। চার বছর আগে ভাবনা ছিল মৈমনসিং গীতিকার সীমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে সেটি। কিন্তু অমরের বাবা ঋণ সালিশী বোর্ডের শুনানি করে বেড়াতেন সমগ্র ময়মনসিংহের গ্রামে গ্রামে। মায়ের কাছে শুনেছেন নেত্রকোনা, পূর্বধলা, কংস নদী, গারো পাহাড়ের কথা। বাবার কাছে ঋণগ্রস্ত চাষিদের কথা। মায়ের কাছে তেতাল্লিশের মন্বন্তরের কথা। লেখক সন্ধানসূত্রে জানলেন ময়মনসিংহের কৃষক বিদ্রোহ, হাতিখেদা বিদ্রোহ, টঙ্ক প্রথাবিরোধী আন্দোলন প্রভৃতির কথা। ফলে এ-888sport alternative linkের যাত্রা শুরু গীতিকায়, ক্রমশ গল্পে ঢুকে পড়ে পরবর্তী বিপন্নতা ও আন্দোলনের কথা। অমর নিজেও পূর্ববঙ্গ গীতিকা স্টাইলে কিছু শ্লোক সন্নিবিষ্ট করেন এ-লেখায়। এভাবে 888sport alternative linkটি অভিনবত্ব পায়। অমর সচেতনভাবেই 888sport alternative linkটির নাম দেন মোমেনশাহী উপাখ্যান। অর্থাৎ গীতিকা থেকে যাত্রা শুরু আর আধুনিক প্রসঙ্গে সমাপ্তি। তাছাড়া বইটির সর্বশেষ অংশে আছে – ‘কালানুক্রম’, যাতে ১২৮০ থেকে  ১৯৮৪-র কথা। পাঠকের মনে পড়বে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়-বিরচিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথার শেষ কথাগুলি – ‘উপকথার কোপাইকে ইতিহাসের গঙ্গায় মিশিয়ে দেবার পথ কাটছে। নতুন হাঁসুলী বাঁক।’ আলোচ্য 888sport alternative linkটি প্রসঙ্গে পাঠক বলতে পারেন – উপকথার ময়মনসিংহকে ইতিহাসের নদীতে মিশিয়ে দেওয়ার পথ কাটছে। নতুন ময়মনসিংহ। কতটুকু সে-কাজে অমর মিত্র সফল সে-কথা উঠবে। কিন্তু প্রয়াসে যে-যত্ন এবং কৌশলে যে-নিপুণত্ব তা পাঠকের ভালো লাগার কথা। বিস্ময় ও আনন্দের কথা।  

১৯২৩-এ দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তরফে সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন মৈমনসিং গীতিকা। এক্ষেত্রে সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে-র অবদান 888sport app download for androidীয়। দীনেশচন্দ্র পূর্ব ময়মনসিংহের সমস্ত গ্রামের মানচিত্রও রচনা করেন ইংরেজি 888sport app download apk latest versionের ভূমিকায়। চন্দ্রকুমার দে-সংগৃহীত পালাগুলো হলো – মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, দেওয়ানা মদিনা, ধোপার পাট, মইষাল বন্ধু, ভেলুয়া, কমলা রানীর গান, দেওয়ান ঈশা খাঁ মসনদ আমিন, ফিরোজ খাঁ দেওয়ান, আয়না বিবি, শ্যাম রায়ের পালা, শিলা দেবী, আঁধা বন্ধু … বারমাসী, রতন ঠাকুরের পালা, পীর বাতাসী, সোনা রায়ের …, ভাওয়াইয়া রাজার কাহিনী। এর মধ্যে কয়েকটিকে অমরবাবু ব্যবহার করেছেন 888sport alternative linkটিতে। যেমন – কমলা, কমলা রানীর গান, আয়না বিবি প্রভৃতি। 888sport alternative linkের সংহতি রক্ষার্থে এই নির্বাচন। দীনেশচন্দ্র পূর্ব ময়মনসিংহের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, গীতিকাবর্ণিত 888sport promo code চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি উল্লেখ করেন। এই প্রসঙ্গায়ন মিথ ও লিজেন্ডের ভিত্তিগত ইতিহাস অনুধাবনে সহায়ক।

এবার মোমেনশাহী উপাখ্যান 888sport alternative linkটির মধ্যে দৃষ্টি দেওয়া যাক। এ-888sport alternative linkের তিনটি পরব – ক. পাতাল আন্ধার বৃত্তান্ত (১-১৯); খ. লীলাবতী, খবরিয়া ও আয়না বিবির বৃত্তান্ত (১-১৬); গ. বুনো হাঁসের উড়াল (১-১৯)। প্রথম পর্বের প্রস্তাবনায় বিপুল সোম ফিরছে সোমেশ্বরী উপনিবেশ থেকে – ট্রেনে, অটো বা রিকশায় দমদম হয়ে টালা পার্ক, বেলগাছিয়া। বিপুল নানা স্থানে থাকতে থাকতে এখন দু-কামরার ফ্ল্যাটবাড়িতে থিতু হয়েছে। সব রেখে এসেছে ওপারে, গালিভার হয়ে গেছে লিলিপুট। বিপুলের মেয়ে কাজলরেখা (গীতিকার একটি চরিত্র), দিদি চন্দ্রলেখা, বাবা নদীরাম সোম। বিপুল গিয়েছিল সোমেশ্বরী কলোনিতে জ্ঞাতি সুধীন্দ্র সোমের কাছে। সুধীন্দ্র নেত্রকোনার কবি অধরচন্দ্র … জীবন নিয়ে একটি 888sport alternative link লিখেছেন, পড়তে দিয়েছেন বিপুলকে। সুধীন্দ্রের ছেলে প্লাবন থাকে মার্কিন  দেশে, তারা আর দেশে আসে না মায়ের মৃত্যুর পর। সুধীন্দ্র বা তাঁর স্ত্রী মৃত কুমুদিনী মার্কিন দেশে যেতে চায়নি। বিপুল তার বাসায় ফেরার পথে দিঘির নাম দেয় কমলা সায়র। এভাবে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের কথোপকথন চলার সূচনা হয়।

সুধীন্দ্র সোম, প্রাক্তন ক্যানেল ডেভেলপমেন্ট অফিসার আত্মপরিচয় দিতে দিতে জানান, ১৩৫৭-র দাঙ্গার পর এপারে আসেন। মৃত স্ত্রীর কথা মনে পড়ে, পূর্ণিমার মতো রূপ (তুলনীয় কমলার রূপ) অধরচন্দ্রও এক রচয়িতা। কুমুদিনী 888sport sign up bonus আর কমলা বৃত্তান্ত – ব্যক্তিজীবন ও লোকজীবন একসঙ্গে চলতে থাকে। গারো পাহাড়ের কোলে তালুকদারের বয়স্থা কন্যা, খবরিয়া বাণেশ্বর, গণৎকার, খবরিয়া কেবল খবর বানায়। সুধীন্দ্র জিজ্ঞেস করত স্ত্রীকে রানী কমলা আর রূপবতীর কথা। গণৎকারের তিন বউ গুনগুন করছে – পাহাড় আর নদী নিয়ে। তালুকদার কন্যার ভাগ্যগণনা করতে যায় বামুন ত্রিলোচন গণৎকার, খবরিয়া তার সঙ্গী। গণৎকার আর জোয়ান হাজংয়ের কথা। মনা সর্দার কথা। লীলাবতীকে নিয়ে জোয়ানের পলায়ন-ইচ্ছা। হাজং পাহাড়িয়ারা হয়ে ওঠে মহাবিশ্বের অংশ। খবরিয়া ও সুধীন্দ্র কথা, সে আবার তাঁর নিজ সৃষ্টি। কমলা ও গয়লানি কথা। ভাবী স্বামী হবে কন্দর্প বিয়ার পর। খবরিয়া ও গণৎকারের প্রয়াসে বুড়ার সঙ্গে বিয়ে। ঈশা খাঁর রাজত্বকাল। নদী প্রজাদের চোখের জল বয়ে নিয়ে চলে। কিন্তু মানুষ চায় দুঃখ আর শোকের চূড়ান্ত অবসান। সুধীন্দ্র কুমুদিনীর কথায় অধরচন্দ্রের  কমলা কাহিনি। গয়লানি ফন্দি-ফিকিরে কমলার সুখ অবসান চায়। দিঘির টুই ঘরে রাজা এবং কমলার প্রেমালাপ। দিঘি আর জলের কথাই লিখতে চান সুধীন্দ্র। সুধীন্দ্রর বাড়ির সামনে বিল ভরাট করে কলোনি। গল্পের নানা স্তর। দিঘির অনিবার্য ধ্বংস, সুধীন্দ্র ও প্রমোটার বিবাদ। উন্নয়নের নামে পুকুর ভরাট। ১৪নং-এ আবার গল্প গীতিকায়। বিপন্ন সুধীন্দ্র ও কুমুদিনী। লীলাবতীরে নিয়ে পালায় এক বামুন। কংস নদী মুখ ঘুরিয়ে চলে অন্য পথে। বুড়ো দাঁড়কাক সব কথা নিয়ে উড়াল দেয় অন্ধকারে। গল্প মাঝে মধ্যে চলে আসে সাম্প্রতিকে, ফিরে যায় গীতিকায়। ১৭ অধ্যায় অর্ধেক সাম্প্রতিক। তারপর জানকীনাথ রানী কমলা ও কবি অধরচন্দ্র। নানা লোকবিশ্বাস। সুনামগঞ্জে টিয়া ও ময়না, রানীর দুই দাসী। রানীর ক্রমান্বয় তলদেশ যাত্রা, রানীর অবসাদ, কুমুদিনীর বিদায়। জলহীন বসতি। সুধীন্দ্রর হাহাকার … ‘পৃথিবীময় এখন ধর্মান্ধ আর সমাজ বিরোধী শক্তি প্রবল, তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে সব’ (১১৭ )। সুধীন্দ্র আচমকা অদৃশ্য হয়ে যায়। গ্রন্থনার চমৎকারিত্ব, অতীত ও বর্তমানের চকিত গতায়াত অপূর্ব।

দ্বিতীয় পর্বের নাম – লীলাবতী, খবরিয়া ও আয়না বিবির বৃত্তান্ত। এই নামে গন্ধ আছে পূর্বোক্ত গীতিকার। এ-পর্বে উপাখ্যান গীতিকার পুরাতন খাত ছেড়ে নতুন পথে চলতে চায়, যা লেখকের অভীপ্সা। সুধীন্দ্র নিরুদ্দেশ ছয় মাস। বিপুল চলেছে নেত্রকোনা, শিকড়ের সন্ধানে। সুধীন্দ্র তার রচনায় বলে গেছে এ তার ও তার স্ত্রীর কল্পিত নব গীতিকা। শিকড়ের সন্ধানের আকুতি সবার থাকে না, সুধীন্দ্র বা বিপুলের তা আছে। বিপুল স্ত্রী অজন্তাকে বলে – মলুয়া, মহুয়া, আয়না বিবির পালা, স্রষ্টা কবিগণের কথা। এই পর্বে নব খবরিয়া ইমতিয়াজ আলি চন্দ্রকুমার যে এয়ারপোর্টে বিপুলকে নেত্রকোনা নিয়ে চলে। আকস্মিকতা আছে। সুধীন্দ্রর বসত সন্নিকটে সায়র এবং আগ্রাসী উন্নয়নের গল্প থেকে নব গীতিকাতে ধীরে সঞ্চারিত হতে থাকে ময়মনসিংহকেন্দ্রিক রাজনৈতিকতা। ইমতিয়াজ সূত্রে বাংলার অধ্যাপক অনুপ সরকার ও অন্যদের কথা। খবরিয়া যেমন জানে বিপুলের মেয়ে কাজলরেখার কথা, তেমনি হাজং বিদ্রোহের কথা, রাশিমণি হাজংয়ের কথা। হাতিখেদার প্রসঙ্গ আছে প্রাচীন গীতিকায় (যেমন – হাতিখেদার গান)। কিন্তু স্বাধীনতাপূর্ব হাতিখেদার কথা, হাজং কৃষকদের বিদ্রোহ, জমির টঙ্কপ্রথার বিরুদ্ধে রাশিমণির মৃত্যু, কুমুদিনীর বিদ্রোহ সংযুক্ত করে দেন লেখক তাঁর অসামান্য অসামান্য মায়াবাস্তব রচনাদক্ষতায়। ট্রেনপথে বিপুল কেনে ‘ময়মনসিঙের কিসসা’ (বাণেশ্বর গাজী), যাত্রী মহিলার সঙ্গে কথালাপে লেখক দেখান কিস্সার সব মিথ্যা নয়, ফ্যাক্ট তো বটে, যা মিথ, লিজেন্ড আলোচনায় একালের পণ্ডিতরাও বলেন। বিদ্রোহ পরিচয় সূত্রে এলো মণি সিংহের কথা, কমিউনিস্ট পার্টি, ভাষা-আন্দোলন, আইয়ুবশাহির কাল, মুক্তিযুদ্ধ – এভাবে উপকথার নদী এসে যায় ইতিহাস আশ্রয়ে। এভাবে – ‘সময় ছুটছে অসময়ের দিকে’, অতীতের দিকে যায় আসে বর্তমান। ‘মূল গীতিকার সঙ্গে তার মিল আছে কম’ (২,১৪১) তার, অর্থাৎ চল্লিশ ও পরবর্তী লড়াইয়ের কথা। দেশটা অর্থাৎ 888sport appsকে তারা মুসলমানের দেশ করতে চায় – এ তো পরের বৃত্তান্ত। এসে যায় – ‘কমিউনিজমের প্রতি মানুষের বিশ্বাস টলে গেছে’ – এসব কথাও। ‘হাতিদের নিয়ে পাহাড় পিছিয়ে যেতে থাকে’ – উপকথার এলাকা ছাড়তে ছাড়তে গল্প চলে সুপার ন্যাচারাল পথ বেয়ে। গারো পাহাড়ের চোখের পানি থেকেই জন্ম সিমসাং নদীর। হাতি জন্মায় গারো পাহাড়ের গা থেকে। লীলাবতীর কথা এলো, এলো অথৈচন্দ্র কথা। এলো এক পণ্ডিত মানুষ পুঁথিপত্র হাতে (সুধীন্দ্র) বনপথে, হারিয়ে যায় কুয়াশায়। ‘টায়েমের ইধার উধার হয়।’ উপনিবেশকারীদের কীর্তিকথা, ৬৮৬ বঙ্গাব্দে মেঘালয় রাজ্যের পূর্বে সুসঙ্গ পরগণার পত্তন, জাতীয় জাগরণ, মৎস্যকন্যা বিবরণ, লীলাবতীর অচরিতার্থ কাম-বাসনা, বাণেশ্বরের খবর সংগ্রহে পটুত্ব, যুবতী 888sport promo codeর খবরে সংবাদপত্রের কাটতি – এই আলোচনার মধ্যেই অতীন সরকার তার বড়দা নীতিন সরকারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। ‘কুয়াশা’র অপূর্ব মোটিফ ব্যবহৃত অতীত ও বর্তমানের যোগসূত্র রচনায়। ‘তাঁরে আমি বললাম গীতিকা যেমন সত্য, টঙ্ক আন্দোলন, হাতিখেদা বিদ্রোহ সত্য, গীতিকা রচনায় সত্য, কবি মানসে সত্য, কিন্তু বিদ্রোহ বিপ্লব যে সব ঘটেছিল তাই সত্য’ (পৃ ১৬৪) – এ-বিশ্বাস লেখকের (যদিও তা অন্যের কথায়), তেমনি পণ্ডিতদের। ‘ময়মনসিংহ শুধু গীতিকার দেশ নয় মশায়, তার মাটি কত মানুষের মিছিলে মিছিলে কেঁপেছে’ (পৃ ১৬৫)। পাহাড় এককালে উড়ে বেড়াত। হাতিখেদার আন্দোলন সভা হাজংপল্লিতে। অলৌকিক ও লৌকিকের আশ্চর্য মিলন। হাতির পায়ে পিষে মনা সর্দারের মৃত্যু, পুলিশের অত্যাচারে আন্দোলননেতার মৃত্যু মিশে যায়। মেঘ হলো পাহাড়ের ডানা, হস্তির ডানা – এ হলো  পুরাকালের  কথা।  আবার  লোককাহিনি  বিদ্বেষ কথাও (পৃ ১৭৬)    আছে।   কমিউনিস্ট   পার্টির   সম্মেলন   (১৯৪৫)    প্রভৃতি সূত্রে আবেগতপ্ত অতীন সরকার বলে – ‘গীতিকার ভিতরে হাজং বিদ্রোহ আর টঙ্ক ঘুমাইয়া আছে, তারে জাগাইতে তো পুনঃলিখন (পৃ ১৭৭)’ – এ হলো লেখক অমর মিত্রর মনের কথা। বিপুল এসেছিল কমলা সায়র, সোমেশ্বরী নদী দেখতে (জানকী সিংহের গল্প লিখেছিল অধর), অতীনের মাসি ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় মেঘালয়ের বাঘমারা দিয়ে ভারতে ঢোকেন। কুয়াশাবৃত ইতিহাস কখনো পিছিয়ে যায়, খ্রিষ্টপুরাণ-কথিত নোয়ার নৌকোকথায়। মহুয়া সুন্দরীর সিনেমা বিজ্ঞাপন, কবি চন্দ্রাবতী কথা, আমেরিকাবাসী সুধীন্দ্র পুত্র প্লাবন, অস্থির মিঞা, মুক্তিযুদ্ধ – গীতিকা থেকে ইতিহাস এগোতে থাকে সাম্প্রতিকে। কাহিনিতে কাহিনি যোগ হয়, অতীনের কাহিনি, সুধীন্দ্রর কাহিনি, ছোট নদী থেকে বড় নদী হয়, আবার একই কিস্সা কতরকমে লেখা হয় (পৃ ১৮৭)। বিপুল সোম বন্দুকধারী সেপাই নিয়ে টঙ্ক আদায় করত আর বিপুল সোম – সব মিলিয়ে দেন। ১৮৭৯ সালে হাতিখেদা আইন, হাজংদের জীবিকা, খেদা ধ্বংস, টঙ্কপ্রথা – এ এক ‘অনিশ্চয় যাত্রা’। ‘গ্রামে গ্রামে গঞ্জে গঞ্জে গীতিকথা নিয়ে জন্মাচ্ছে মানুষ মানুষী’ (পৃ ১৯৫), জলদেবতা, সায়র রক্ষায় সুধীন্দ্র, প্রাচীন সায়র কাহিনি, ব্রিটিশবিরোধী ইতিহাস, বুদ্ধ ভগবান কথা, টঙ্ক আন্দোলন নেত্রী রাশিমণি যে প্রাণ দেয় মিলিটারির হাতে, পাহাড়ের মতো নদীর ফিরে আসা, জিনে ধরা মানুষ, অতীত থেকে বর্তমানে। তাই বোধহয় – ‘ফেরেস্তারা পালা গায়, গীতিকা রচনা করে।’ ললিত হাজংকথা এ-কালের, আয়না বিবি, লীলাবতী সেকালের, মেয়েমানুষের অধিকার, গল্প ফিরে যায় কখনো প্রেম উপাখ্যানে (১৫ অধ্যায়), গীতিকা-রচয়িতাকথা, কুয়াশা থেকে বেরিয়ে আসে অতীতের মানুষ। মলুয়া কাহিনিতে খাজনা আর টঙ্ক প্রথার কথা নেই, পরে এলো রাশিমণি ও কুমুদিনী, মণি সিংহের আওয়াজ (টঙ্কপ্রথার উচ্ছেদ চাই), মলুয়ার গল্পে দুঃখিনী 888sport promo code, রাশিমণির গল্পে বিদ্রোহিনী শহিদ 888sport promo code, রুশ বিপ্লব আর ময়মনসিংহে চাষি বিপ্লব প্রসঙ্গ যুক্ত হয়। জন্ম-জন্মান্তর কথা। গোর্কি এই কারণেই পুরাকথা সংগ্রহের গুরুত্বের কথা বলেছিলেন।

তৃতীয় পর্বের নাম দেওয়া হয় – ‘বুনো হাঁসের উড়াল’ – উনিশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। এরকম নাম দেওয়ার কারণ – বিদ্রোহের নেতাদের – মণি সিংহ, ললিত সরকার (ললিত হাজং)-কে লেখক বুনো হাঁস বলেছেন, যারা উড়ে যেত গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। লেখক বলে নিচ্ছেন শেরপুরের বিপ্লব, সাধু করিম শাহ, যিনি পাগলপন্থী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা যাদের কথা/ ইতিহাস একাল, গৌতম ভদ্রের বইতে ধরা আছে। পাগলপন্থীরা ‘সব মানুষ ভাই ভাই’ বিশ্বাস করত। মণি সিংহ বলতে থাকেন, করিম শাহর ইন্তেকাল, টিপু শাহর নেতৃত্ব, কাছারি দখল, পরে জকু পাথর, দেবরাজ পাথরের বিপ্লব প্রয়াস। হাতিখেদা বিপ্লব, নিজ পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, বিপ্লবের ডাক,  সুসঙ্গ   থেকেই   বিপ্লবের   শুরু,   রাশিয়ার   বিপ্লবের   ধাঁচে।   কথোপকথনে খবরিয়া, মণি, প্রবুদ্ধ, সুবুদ্ধ চাষাদের অভ্যুত্থানের কথা বলে – ‘গারো পাহাড় যেন এগিয়ে আসছে ক্রমশ।’ একজন লেনিনের দরকার ছিল, মণি সিংহের প্রত্যাশা কবির মতোই। টঙ্কপ্রথা রদ করার গর্জন ওঠে। বিরিশিরি গারো মিউজিয়ামে গিয়ে বিপুল আর অতীন দেখে প্রাচীন বিপ্লবের পদচিহ্ন, বহেরাতলী গ্রামে গিয়ে দেখে রাশিমণি হাজংয়ের মূর্তি। নতুন পালা লেখা হয় এ-বিদ্রোহ নিয়ে। কুয়াশার আড়াল থেকে জেগে ওঠে অতীত কাহিনি। মণি সিংহ অধরা, ‘শাদা ঘুড়ায়/ উড়ে যায়।’ নিগৃহীত 888sport promo codeর প্রতীক মলুয়া, রাশিয়া, ক্ষুদিরাম, রাইটার্স অলিন্দে বিনয় বাদল দীনেশের প্রয়াস, মেটেবুরুজে শ্রমিক-আন্দোলন – এসব যেন কুয়াশার আড়ালে মেঘের আড়ালে যুদ্ধের গল্প। অলৌকিকত্বের, গীতিকা-ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ততায় বলা হতে থাকে ইতিহাসের কথা। কবির ভূমি নেত্রকোনা জেগে ওঠে ইতিহাস ভূমি রূপে। কবির কাজ – খবর লুকিয়ে খবর, পালার ভিতরে পালা, গানের ভিতরে গান – যা মলুয়া আর চাঁদ বিনোদের কাহিনিতে (পৃ ২২৯)। কুয়াশার মধ্যে স্পষ্ট হয় বিনোদ আর কোড়া পঙ্খির কথা, মলুয়ার জল সইতে আসা, খত পাঠায় মলুয়া – কবিত্বের কথা বলতে বলতে খবরিয়া আসে আইথর গ্রামে, চন্দ্রকুমার দে-র গ্রাম। ওঠে পাকিস্তানের কথা, গিয়াসুদ্দিনের কথা। সংবাদ হয়ে ওঠে 888sport app download apk, খবরের প্রকার ভেদ হয়, পঙ্খি কথা বলে ওঠে, হাতি ও পাহাড় এগিয়ে আসে, জঙ্গল এগিয়ে আসে, স্বপ্ন হয়ে ওঠে বাস্তব। অলৌকিকের আশ্রয়ে লেখক বলে চলেন হাজং বিদ্রোহের কথা। খবরিয়া সিপাহী হরিশচন্দ্রের কাছ থেকে চাষিদের বিদ্রোহকথা শোনে। চুক্তিপ্রথায় চাষ-টঙ্কবিরোধী আন্দোলন যা অচর্চিত প্রায়, অথচ  ঐতিহাসিক,  আশ্চর্য বয়ানে আসে হলুদ পঙ্খি, খবরিয়া, পেয়াদা প্রভৃতির পালাসুলভ কথাবার্তায়। অলৌকিকত্বে যেমন ইতিহাস, ইতিহাসের বয়নে অলৌকিকত্ব। অতীন সরকারের কাহিনি – ইতিহাস, প্রবুদ্ধ সুবুদ্ধর বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কুয়াশার বেড়ে যাওয়া, পাহাড়ের এগোন পিছোন। এইখানে লেখক সত্যের প্রকারভেদ আনেন – প্রবুদ্ধ সুবুদ্ধ সুধীন্দ্র সোমের বৃত্তান্তর দুটি  চরিত্র, রানির সায়র খনন, একই সঙ্গে সফলতা ও বিফলতা, যা ঘটেছে, যা ঘটার ছিল, যা ভবিতব্য – সব মিলেমিশে আছে।

পঞ্চম অধ্যায়ে শ্রীমন্ত, তারপর গোপাল, তার দুই কন্যা – রুমি ঝুমি, পিঠা খাওয়ার নিমন্ত্রণ, আবার জঙ্গি, সন্ত্রাসী, তল্লাশ – কিছু বলা যাবে না, কিছু ফুটে উঠবে – ‘জটিলতায় ভরা সব’। ভালোবাসার সুগন্ধ, বিবাহের গান, গ্রাম হারিয়ে যাওয়া, আশুথতলী, কুসুমতলী, সুবুদ্ধ, প্রবুদ্ধ, গারো পাহাড়ের এগিয়ে আসা, পিছিয়ে যাওয়া – দুই-ই সত্য। অতীনের হাতে পাণ্ডুলিপি, যাতে এই জটিল বৃত্তান্ত, কুয়াশার মধ্যে সত্য, সত্য আসা-যাওয়া করে তাতে, 888sport sign up bonus, ইতিহাস, ইতিহাসের কল্পনা তিনশো বছর ধরে রচনা করে চলেছে এক ভিন্ন দেশি কবিত্ব। এই 888sport alternative linkে পাণ্ডুলিপিতে অঙ্কিত সত্যের জটিল সংকেত পাঠককে মার্কেজ-রচিত ‘একশত বছরের নিঃসঙ্গতা’ বিধৃত বেদেদের পুঁথি যাতে একশ বছরের নিঃসঙ্গতার বয়ান, তা মনে করিয়ে দেয়। অতীনের দাদা নীতিন আবার শ্রদ্ধেয় এক  মুক্তিযোদ্ধা। পিতৃভূমির ইতিহাস বলে দুই ভাই – ‘ময়মনসিংহ গীতিকার বাইরের আখ্যান এই কাহিনি’ (পৃ ২৫৭)। ফিরে আসে মণি সিংহের কথা, রুশ বিপ্লব-অনুপ্রাণিত চাষিরা বিশ্বাস করতে শুরু যে – ‘বিপ্লব আমাদের দুয়ারে।’ সপ্তম অধ্যায়ে স্পষ্টতরভাবে টঙ্ক-আন্দোলনের পাঁচ দফা দাবির কথা ওঠে। বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা মণি ও ললিত লেনিনের কথা শোনান। তারপর কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ, চাষার মনে ক্ষোভ, মণি সিংহের মুক্তি (১৯৪২), নিবারণ পণ্ডিতের গান, ১৯৪৫-এ নেত্রকোনা সম্মেলন, অন্যদিকে অতীন হয়ে উঠতে চায় নবপুঁথিকার।

সুধীন্দ্র – ‘এক রহস্য নির্মাণ।’ মহাভারতের জয়কাব্য, ভবিষ্যতের কবি ‘আপডেট’ দিয়ে যায়। আর কুয়াশা আবৃত বিশ্ব, অনন্ত কুয়াশা। এই প্রাচীন কুয়াশার শেষ নেই। অতীন ও বিপুল – গণহত্যার প্রসঙ্গে গারো রাজাদের কথা বলে, ‘আরণ্যকে’ আদিবাসী রাজাদের কথা 888sport app download for android করে, ভুলোয় পাওয়া মানুষ, সংগ্রামী, কবি – সমস্তটা কেমন বাস্তব অবাস্তবের সীমারেখা ভেদ করে যাচ্ছে (পৃ ২৬৩)। কুয়াশা প্রবেশ 888sport sign up bonusর ভিতরে। কুয়াশার মোটিফের মধ্যে অতীন পথ খোঁজে, গারো পাহাড়ের ভূমিকম্পে ওদের জন্ম, গারো রাজার দুর্গ, অতিবৃদ্ধ এক গারো পুরুষ – যেন এক বহুবর্ণ ফুল পাতায় ভরা অচেনা বৃক্ষ (পৃ ২৬৬)। পাকিস্তানি খান সেনারা একটা প্রজন্ম শেষ করে যায়, অতীন কবি কল্পনায় ‘জলের ভিতরে ঝাঁকের মাছের এক একটির মতো’ (পৃ ২৬৮)। মানুষের অদম্যতার কাহিনি শেষ হয় না। কুয়াশার ভিতর থেকে তা ক্রমাগত বেরিয়ে আসতে থাকে (পৃ ২৬৯)। নবম অধ্যায়ে অতীন ও রুমি-ঝুমির কথোপকথনে প্রেমের, অনুরাগের বৃত্তান্তে ভেসে ওঠে হাজং বিদ্রোহ, হাতিখেদা বিদ্রোহকথা। দু-বোনই শুনেছে কমলা সায়রের কথা। বিপ্লব তো প্রেম, তা তো সুন্দর; যুগে যুগে মানুষ তার বন্দনা করে, অভ্যর্থনা করে, বিপ্লব আসে, কখনো তা কুয়াশায় মিলিয়ে যায়, আবার আসে। অতীন, নীতিন নেত্রকোনা কৃষক সম্মেলনের কথা 888sport app download for android করেন। উপস্থিত মানুষজন বিশ্বাস করতে থাকে – ‘মানুষের রাস্তাই হবে গারো পাহাড়ের রাস্তা।’ সোমেশ্বর পাঠক, সুধীন্দ্র, গারো রাজা যুগ পরম্পরায় সংগ্রামী মানুষ আসে, যায়, ‘আকাশের তারা হয়ে যায়। হলুদ পঙ্খী এসে খবর দিয়ে যায় কুয়াশা ঘেরা কুয়াশায় গড়া বাড়িতে।’ মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসে একাদশ অধ্যায়ে, রূপকথা বর্ণনার ঢংয়ে লেখক কুয়াশাবৃত মানববৃত্তান্ত বলে চলেন। গারো রাজার সামনে অতীন, সোমেশ্বর গারো রাজাকে আলিঙ্গন করেন। পাণ্ডুলিপিতে বিধৃত সংগ্রামকথা, ভালোবাসার কথা, বসন্ত এসে যাওয়ার বার্তা। গুরুপদ চন্দ্র কামরূপ কামাক্ষ্যা থেকে তন্ত্রমন্ত্র শিখে-আসা মানুষ। সাহেবরাও জানে মানুষের ভিতরে দেবতা ও শয়তানের লোককথা। সব সত্যি কথা। মলুয়া পালার অন্তর্নিহিত সত্য, হাজং বিদ্রোহের মর্ম সত্য, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি, কুমুদিনী, লঙ্কেশ্বর হাজংয়ের বুড়িমা, তেভাগা আন্দোলনের রাশিমণি সবই সত্য, আবার কুয়াশা আবৃত। মানুষের ভিতরে বসত করে অন্ধকার, তাই রাশিমণি কুমুদিনীর বিপদের কথা শুনে বিভ্রান্ত। রাশিমণি আর সুরেন্দ্র হাজং শহিদ হলো যুদ্ধে। ডেমনের জয় হয়, যদিও তা চিরস্থায়ী নয়। সাইবেরিয়ার বুনো হংসী বলে – ‘পুরোন কথা ভুলে যা/ জল আমাদের সই/ সারাটা দিন হাঁসের পাল/ জলের ভিতর রই।’

রুমি-ঝুমি, চাঁদবিনোদ, খবরিয়া, বুনো হংসী, ব্ল্যাকি, সোমেশ্বর পাঠক, বিপুল, অতীন, নীতিন চলে আসে জীবনের প্রকাশ্য নাট্যে। লুক্কায়িত কাহিনির অবিনশ্বরত্ব। টঙ্কবিরোধী আন্দোলনে আত্মবলিদান – সেটাও শেষ কথা নয়। কুয়াশায় হারিয়ে যাওয়া জীবন ও কাহিনি আসে,  নতুন দিনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।

888sport alternative linkটির চমৎকৃতির কথা বোঝাতে গেলে এর অন্তর্গত বয়ানের দু-চার কথা বলা দরকার মনে হয়। একজন আলোচক বলেছিলেন, ‘আমরা যখন কোনো রচনার টেকনিক নিয়ে কিছু কথা বলি তখন স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে সব কথা।’ (মার্ক স্কোরার)

888sport alternative link শুরু হয় সোমেশ্বরী উপনিবেশ থেকে প্রত্যাগত বিপুল সোমের ব্যক্তিগত জীবন থিতু হবার প্রসঙ্গ দিয়ে। তাঁর জ্ঞাতি সুধীন্দ্র সোম-বিরচিত কবি অধরচন্দ্রের আখ্যান কাব্য নিয়ে 888sport alternative linkের পাণ্ডুলিপি হাতে ফিরে আসা। সুধীন্দ্রর বৃত্তান্ত, নিরুদ্দেশ হওয়া থেকে  উপনিবেশে উন্নয়নের নামে আগ্রাসন। এবার গল্প ঢুকে যায় মৈমনসিং গীতিকায়। বিপুল এক সময় বেরিয়ে পড়ে নেত্রকোনার দিকে, শিকড়ের সন্ধানে। পথে পথে দেখা নানা জীবিত ও মৃত মানুষের সঙ্গে। আর ক্রমশ কুয়াশার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে গারো পাহাড় অঞ্চলে হাতিখেদা বিদ্রোহ, টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ  প্রভৃতি। ঔপন্যাসিক এভাবে বলতে চান নানাবিধ অন্ধকার ও আলোর নিরন্তর প্রত্যাশাকথা। লৌকিক গীতিকা, কল্পজগৎ, ইতিহাস, রাজনীতি ও তার বিস্তার – ব্যক্তিগত থেকে বিশ্বগত আখ্যান। আর রচিত হয় অনবদ্য বৃত্তান্ত। এই ‘Wonderful mosaics of incident and Impression’ (চেখভ প্রসঙ্গে Richard Hare), পরিণত বয়সে অমর মিত্র যে-উপাখ্যান কৌশল উপস্থিত করলেন তার দক্ষতা সত্যই অতুলনীয়। অমর ইতোপূর্বে লিখেছেন – একটি নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান এবং পুনরুত্থান। মোমেনশাহী উপাখ্যান আর এক নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান এবং পুনরুত্থান সম্ভাবনার রচনা, সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই।

888sport alternative linkের ভাষা প্রসঙ্গে বলি। লেখক মৈমনসিং গীতিকার ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং প্রয়োজনবোধে নিজে রচনা করেছেন অনেক কাব্যিক অনুচ্ছেদ, যা প্রাচীন ও নবীনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। মাঝে মধ্যে এসেছে রূপকথাভঙ্গিমা, কথকশৈলী। যেমন – ‘কহ কহ খবরিয়া, পুরাটা কহ, ধামা ভরা চাউল দিব …’ ইত্যাদি। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাষাবাহী সংলাপ – ‘তুমু মুরে বীজ দিয়া যাও বাণেশ্বর খবরিয়া, মুর পেটে একটা বাঁচুক।’ আবার – অন্য ধাঁচ – ‘গয়লানি লো গয়লানি, ভর যৈবনে ঢলানি।’ পদ্যে কথন আছে মাঝে মধ্যে। উপমা চয়নে আছে বিশিষ্টতা –

ক) গর্ভবতী হলে পক্ব সীতাফলের গন্ধ।

খ) (যৈবন) জষ্টি মাসের আমের মতো পাকতিছে বছর বছর।

গ) নগরে এখন দুঃখ পাখির ডানার ছায়া ব্যপ্ত হয়ে আছে।

ঘ) অন্ধকারে হাওর এক্সপ্রেস যেন ১৯৪৭-এর দিকে ছুটছিল।

ঙ) গারো পাহাড়ের চোখের পানি থেকেই তো সিমসাং নদীর জন্ম।

লেখক বলেছেন (পৃ ২২৭) – এখানে আছে – ‘পালার ভিতরে পালা, খবর লুকিয়ে খবর, গানের ভিতরে গান।’

আবার প্রয়োজনে ব্যবহৃত রবীন্দ্র ও আধুনিক গান, যেমন – আধুনিক – ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’ – রবীন্দ্র – ‘এ কি সত্য সকলি সত্য …’। বিবাহের গান – ‘লীলাবালি লীলাবালি’ (যা ঋত্বিকও ব্যবহার করেছেন)। আছে নেত্রকোনা কৃষক সম্মেলন উপলক্ষে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। কুয়াশার মোটিফ  ব্যবহারের তুলনা নেই। আঙ্গিকগত কথাকৌশলের সামান্য কিছু বললাম। পরিণত বয়সে ঔপন্যাসিক যে-রচনাটি আমাদের দিলেন তাতে রয়েছে অনেক পরিশ্রমের স্বাক্ষর, সে-পরিশ্রম কোথাও যান্ত্রিক নয়, স্বাভাবিক নদীপ্রবাহে পাঠককে এগিয়ে নিয়ে চলে, কুয়াশা থেকে প্রত্যাশার দিকে। সে-প্রত্যাশা সত্যও বটে, আর স্বপ্নকল্পনাই জীবনসংগ্রামের যুগাতিক্রমী হাতিয়ার।