কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ

লায়লা জামান

গত শতকের আশির দশকের প্রথম চার বছর গবেষণাকর্মের সূত্রে কলকাতায় থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। এ-সময়টি আমার জীবনের সুবর্ণকাল।

এ-সময়ে অনেক গুণীজনের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, অনেককেই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের ব্যক্তিত্বের নানা দিক, তাঁদের নিরাভরণ সাধারণ জীবনযাপন ও পান্ডিত্যের ছটায় মুগ্ধ হয়েছি। এই পরিচয়ের ও ঘনিষ্ঠতার ছায়া পড়েছে আমার জীবনে। নতুন করে জেনেছি অনেক কিছু, আমার নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও হয়তো গড়ে উঠেছে। ভালো একটি বই পড়লে, একটা সুন্দর গান শুনলে, ভালো সিনেমা-নাটক-চিত্রকর্ম দেখলে তার রেশ মনে দীর্ঘকাল থেকে যায়। ওই সময়ের রেশ এখনো আমার মধ্যে অনুরণিত হয়।

আমার জীবনে ওই সুবর্ণ সময়ের পরিচিত গুণীজনদের একজন লীলা রায়। তাঁর পূর্বজরা ছিলেন জার্মান; নানা জায়গা ঘুরে শেষ পর্যন্ত মার্কিন দেশের টেক্সাসে থিতু হয় ওই পরিবার। ১৯১০ সালের ৭ আগস্ট লীলা জন্মেছিলেন। মার্কিন মা-বাবা নাম রেখেছিলেন অ্যালিস ভার্জিনিয়া। পরিবারের পদবি অর্নডর্ফ।

উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। স্কুলশিক্ষক মা ছিলেন সংগীতে পারদর্শী, ছবি অাঁকতেন ও ভাস্কর্য তৈরি করতেন। 888sport sign up bonusচারণ করে লীলা লিখেছেন, ছোটবেলা থেকে মায়ের দেখাদেখি লুকিয়ে লুকিয়ে 888sport app download apk লিখতেন; বলেছেন :

এখনও লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে আসছি। লুকিয়ে রেখেছি। লুকিয়েই রাখব। কেননা ওটা এমন জিনিষ সেটা ফুলের মতো ফোটে এবং ঝরে যায়।

(সুরজিৎ দাশগুপ্ত, লীলা রায়, পৃ ২)

অবশ্য পরে তাঁর এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছিল।

লীলার 888sport sign up bonusকথায় পারিবারিক মূল্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায় :

আমাদের খাবার-ঘর ছিল প্রকান্ড বড়ো। লম্বা একটা টেবিলের এক মাথায় ঠাকুরমা অন্য মাথায় ঠাকুরদা। দুই দিকে বসতাম আমরা। খামারবাড়িতে যাঁরা কাজ করতেন তাঁরাও আমাদের সঙ্গে খেতে বসতেন। কোনো ভেদাভেদ ছিল না।

পারিবারিক পরিবেশ প্রসঙ্গে লিখেছেন :

বাড়ির বারান্দা ছিল বিরাট, প্রশস্ত।… বারান্দায় একটা কাঠের দোলা।… এক তরুণ ভদ্রলোক দোলায় বসে অ্যাকর্ডিয়ন বাজাতেন। মেক্সিকান সুর।… বসবার ঘরে ছিল পিয়ানো। রবিবার সকালে সেখানে একত্র হয়ে ধর্মসংগীত গাওয়া হত। পিয়ানো বাজাতেন আমার মা।

আরো লিখেছেন : বাড়িতে একটা পুকুর ছিল। পুকুরের মাঝখানে একটা ছোট দ্বীপও ছিল। দ্বীপে যাওয়ার জন্য ছিল অর্ধচন্দ্রের মতো একটা পুল। পুকুরের এক পাশে একটা উইলো গাছ। উইলো গাছের লম্বা লম্বা সরু সরু ডালগুলো লাঠির মতো ঝুলে থাকত। গাছটি ছিল ঘন পল্লবিত। তবুও গাছের ভিতর দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ত জলের উপর। ঠাকুরমা আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে বলতেন, ‘এইখানে ডুব দাও, আলোর আশীর্বাদ নাও।’

লীলা রায় ১৯২৬-এ স্কুলের পাঠ শেষ করে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্কুলেই জার্মান ও ফরাসি ভাষা শিখেছিলেন, স্প্যানিশ শেখেন বাড়ির পরিচারিকার কাছ থেকে। নানা ভাষা শেখা পরবর্তীকালের 888sport app download apk latest versionক লীলা রায়কে সহায়তা করেছিল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ অসমাপ্ত রেখে নিউইয়র্কে চলে যান বিখ্যাত এক সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিতে। লীলার আগ্রহের বিষয় ছিল সংগীতের তাত্ত্বিক দিক, আর মাস্টারমশাই চান তাঁকে পরিবেশক হিসেবে তৈরি করতে। ১৯২৯ সালে আমেরিকায় বড় আকারের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। এ-সময়ে লীলা সমাজসেবা শুরু করেন। তখন দুই বন্ধুর সঙ্গে ইউরোপের এক সংগীতোৎসবে যোগ দেওয়ার প্রস্ত্ততি নেন। বন্ধুরা না এলে তিনি একাই লন্ডনে আসেন। সংগীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার জন্য ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে সংগীতবিষয়ক 888sport free bet loginের সন্ধান করেন। সন্ধান করতে করতে পূর্বাঞ্চলীয় সংগীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখা দেয়। তখনই ভবানী ভট্টাচার্য নামে এক বাঙালি যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ভবানী সো মেনি হাঙ্গারস ও মিউজিক ফর মোহিনী নামে দুটো 888sport alternative link লেখেন। ভবানী তাঁকে ভারতীয় সংগীত সম্পর্কে ধারণা দেন। তাঁর কাছ থেকে ভারতীয় সংগীতজ্ঞদের একটা তালিকা নিয়ে তিনি ভারত-যাত্রা করেন। সঙ্গে ছিল ভবানীর বন্ধু অন্নদাশঙ্কর রায়ের ঠিকানা।

‘ভুবন ভ্রমিয়া শেষে’ নতুন দেশ ভারতবর্ষে এসে পৌঁছলেন অ্যালিস ভার্জিনিয়া। বোম্বাইতে তিনি বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডের সঙ্গে পরিচিত হলেন। তাঁর পরামর্শে উত্তর ভারতীয় সংগীত সম্পর্কে জানার জন্য লীলা প্রথমে কলকাতা, পরে লখ্নউ ও বারাণসী যাবেন বলে স্থির করেন। অজানা কলকাতায় পৌঁছে যোগাযোগ করলেন বাঙালি আইসিএস অফিসার অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে। অন্নদাশঙ্কর তাঁর চাকরিস্থল বহরমপুরে বিদেশিনীকে আমন্ত্রণ জানালেন। লীলা বহরমপুর গিয়ে অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। বেড়ানোর ফাঁকে দুজনে দুজনার পারিবারিক পরিচয়, আগ্রহের বিষয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানলেন। লীলার কলকাতায় ফেরার পর দুজনের পত্রালাপ চলতে থাকে। অন্নদাশঙ্কর লীলাকে রাঁচিতে ডাকলেন। তিনি পুজোর ছুটিতে রাঁচিতে বন্ধুর বাড়িতে থাকবেন। লীলাও গেলেন। এখানেও বন্ধু ও বন্ধুপত্নীসমেত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। রাঁচিতেই তিনি লীলাকে বিয়ে করার ঘোষণা দেন। মাত্র দশ দিনের পরিচয়ে অন্নদাশঙ্করের এই ঘোষণায় পাত্রীসহ উপস্থিত প্রত্যেকেই বিস্মিত। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে লীলা এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে দিলেন। দুই পরিবারের অমতে ২৩ অক্টোবর ১৯৩০-এ তাঁদের বিয়ে হলো। অন্নদাশঙ্কর নববধূর নাম দিলেন লীলা রায়। বিয়ের আগে থেকেই ব্রিটিশ সরকারের চাকুরে হওয়ার কারণে অন্নদাশঙ্কর রায় অনেক লেখা লীলাময় রায় ছদ্মনামে লিখতেন।

আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক নিরঞ্জন হালদারের মাধ্যমে লীলা রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় সম্ভবত ১৯৮২ সালের দিকে। নিরঞ্জনদা তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কলকাতা শাখার সেক্রেটারি। নিয়মিত লেখেন অধিকারবঞ্চিত মানুষ, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। সুধীন দত্ত সম্পর্কে 888sport liveগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। আমরা তখন ওঁর বাড়িতে থাকি।

অন্নদাশঙ্কর রায়ের নাম ছোটবেলা থেকেই জানি, কলকাতায় বেড়াতে গেলে আমার মা অনেক বই কিনে দিতেন। তার মধ্যে অন্নদাশঙ্করের রাঙা ধানের খৈ ও উড়কি ধানের মুড়কি বইদুটো ছিল। ‘তেলের শিশি ভাঙলো বলে/ খুকুর পরে রাগ করো/ তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ ভারত ভেঙে ভাগ করো/ তার বেলা?’ ছড়াটি ওই সময়ে পড়েছিলাম। লীলা রায়কে নামে চিনি-জানি – 888sport app download apk latest versionসহ বিভিন্ন 888sport live footballচর্চা করেন।

আমরা শান্তিনিকেতন যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। নিরঞ্জনদাকে জানালে তিনি বলেন, লীলা রায় প্রতি মাসেই যান, আমরা ওঁর সঙ্গে যেতে পারি। খানিকটা সংকোচ নিয়ে বিকেলে নিরঞ্জনদার সঙ্গে অন্নদাশঙ্কর রায়ের বালিগঞ্জের ‘সুখবতী’ অ্যাপার্টমেন্টসে গেলাম। নামটা অন্নদাশঙ্করের দেওয়া। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। নিরঞ্জনদা আমাদের পরিচয় দিয়ে জানালেন, ‘ওরা চট্টগ্রাম থেকে এসেছে।’ রায় দম্পতিও চাকরিসূত্রে একসময় চট্টগ্রামে ছিলেন। চারণ করলেন চট্টগ্রামের 888sport sign up bonus। আবুল ফজল সাহেব কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলেন। আমাদের শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পরিকল্পনা শুনে লীলা রায় জানালেন, আমরা ওঁর সঙ্গে যেতে পারব; থাকতেও পারব ওঁর বাড়িতে।

নির্দিষ্ট দিনে আমরা ট্যাক্সিতে ওঁকে তুলে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে গেলাম। খুবই সাধারণ বেশে তিনি ট্যাক্সিতে উঠলেন। আমাদের ট্রেন ছিল বিশ্বভারতী এক্সপ্রেস। প্রথমদিকে ওঁর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপ হচ্ছিল, আস্তে আস্তে বিস্তৃত হলো। তাঁকে যতই দেখছিলাম, ততই তাঁর অন্তরের ঐশ্বর্য অাঁচ করতে পারছিলাম। ট্রেন বর্ধমান স্টেশনে গেলে তিন কাপ কফি কিনলেন ইকবালের, আমার আর নিজের জন্যে। ব্যাগ থেকে বিস্কিট বের করে কফির সঙ্গে খেতে দিলেন। বোলপুর স্টেশনে নেমে দুটো রিক্শায় একটাতে আমি আর লীলা রায়, দ্বিতীয়টিতে ইকবাল, তাঁদের বাড়িতে পৌঁছোলাম। পথে রিক্শা থামিয়ে তিনি দই আর পাউরুটি কিনলেন, আমাদের রাতের খাবার।

সেবাপল্লীতে অনেকটা জায়গার ওপর ওঁর ছোট্ট বাড়ি। বাইরে সুন্দর বাগান। রাতে শোবার সময়ে প্রধান শোবার ঘরটি আমাদের ছেড়ে দিলেন, নিজে বেছে নিলেন ডাইনিং স্পেসে ছোট তক্তপোশের ওপর বিছানা। এই বিছানাতেই তাঁর লেখাপড়াও চলছিল। শান্তিনিকেতনে তিনি শুধু আমাদের আমন্ত্রয়িত্রী ছিলেন না, প্রদর্শিকাও ছিলেন। পরের দিন প্রাতরাশ শেষে তিনি তাঁর বাড়ির কেয়ারটেকারকে (রিক্শাওয়ালা) বললেন জায়গাটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখাতে। আমরা রামকিঙ্করের ভাস্কর্যগুলো দেখলাম, আমাদের সঙ্গে ছিলেন শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত ভাস্কর প্রভাস সেন। সংগীত ভবনের সংগীতের ক্লাস নিচ্ছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রভবন ও রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি বাড়ি উত্তরায়ণ চত্বরে – পুনশ্চ, শ্যামলী, উদয়ন, কোনার্ক ও উদীচী – দেখে ফিরে এলাম। কী দেখেছি এবং কেমন লাগলো জিজ্ঞেস করলেন লীলা রায়। জানালেন, প্রথম দর্শনে ওঁর কাছে শান্তিনিকেতন তীর্থ মনে হয়েছিল। দুপুরে খাবার ব্যবস্থা বাইরে। খেতে খেতে অনেক গল্প হলো। ফেরার সময়ে বৃষ্টি, সঙ্গে ছাতা নেই, তিনি বললেন ‘চল দৌড়ে যাই, বিবিদির (ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী) সঙ্গে বৃষ্টিতে এভাবেই দৌড়াতাম।’ বিকেলে ওঁর সঙ্গে আমরা বেরোলাম। বিখ্যাত কালোর দোকানের সামনে (শান্তিনিকেতনের সর্বজনপরিচিত চায়ের দোকান) চা আর রসগোল্লা খেলাম। গোধূলির আলোতে খেতে খেতে শান্তিনিকেতনের গল্প করছিলেন; রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের গল্প। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে স্থায়ীভাবে শান্তিনিকেতনে থাকার আহবান জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এখানে লীলাকে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ বেছে নিতে বলেছিলেন। তাঁরা যখন শান্তিনিকেতনে বাস করতে এলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ আর নেই, কিন্তু শান্তিনিকেতন তো আছে।

রাতে লীলা রায়কে ইকবাল ওর পরিকল্পনার কথা জানালো। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের যাঁদের পত্রালাপ হয়েছিল, তাঁদের পত্রের কিছু মূল কপি ও কিছু অনুলিপি রবীন্দ্রভবনে আছে। এগুলি সংগ্রহ করে একটা সংকলন করবে। তিনি কাজটিকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে ওকে উৎসাহিত করলেন। ওঁর বাংলা শেখার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি জানালেন, রান্নাঘর ওঁর বাংলা শেখার প্রথম পাঠশালা, প্রথম শিক্ষক গৃহকর্মী সাহেবান বিবি। নওগাঁয় বাসকালে মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের কাছে কিছুদিন বাংলা শিখেছিলেন। পরে সন্তানেরা যখন বাংলা পড়ত, সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পড়তেন; এভাবে কিছুটা এগিয়েছিল। বউঠান (প্রতিমা দেবী) ও বিবিদি (ইন্দিরা দেবী) উদ্যোগী হয়ে শান্তিনিকেতনে ‘আলাপিনী’ নামে মহিলা সমিতি গঠন করেন। প্রথমে বীণা বসু ছিলেন সম্পাদিকা, পরে লীলা রায়। বউঠানের অনুরোধে লীলা রায় উদ্যোগী হয়ে আলাপিনীর সম্মিলিত প্রয়াসে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ‘শ্যামলী’তে ‘আনন্দ পাঠশালা’ শুরু করেন। লীলা ও আলাপিনীর অন্য সদস্যগণ পাশের গ্রামে গিয়ে   সন্তান পালন ও স্বাস্থ্যরক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রামের মহিলাদের পরামর্শ দিতেন।

গল্পে গল্পে ১৯৫৩ সালের 888sport live footballমেলার প্রসঙ্গ এলো, প্রধান উদ্যোক্তা অন্নদাশঙ্কর রায়, সহযোগীদের মধ্যে লীলা রায়ও ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে-চারজন 888sport live footballিক মেলায় যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মাঝে তাঁর ভাষাশিক্ষক মনসুরউদ্দীনও ছিলেন। শান্তিনিকেতনের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি ইলামবাজারে অজয় নদীর তীরে বাউলদের আস্তানার কথা বলেন। ওখানকার প্রবীণ বাউল নবনী দাস ও তাঁর পুত্র পূর্ণচন্দ্র দাসের সঙ্গে ওঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল।

888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রামে বাউল পূর্ণচন্দ্র দাসের অনুষ্ঠান দেখেছি। একবার টেরাকোটার কাজ দেখার জন্য ইলামবাজারেও গিয়েছিলাম। লীলা রায় গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজি সহজপাঠের পান্ডুলিপি তৈরি করছেন। বইটি মা ও ছেলে পুণ্যশ্লোক মিলে লিখেছিলেন। রবীন্দ্রভবনে সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে দেখা হলো। কলকাতার বিখ্যাত প্রকাশক ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের দোকান সুবর্ণরেখার মালিক ও 888sport live footballিক মহলের ঘনিষ্ঠজন ইন্দ্রনাথ মজুমদারের সাক্ষাৎ পেলাম। ওখানে সুবর্ণরেখার শাখা করার প্রস্ত্ততি নিচ্ছেন। লীলা আমাদের প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। বিকেলে গেলাম। ওঁর পুত্র অভ্যর্থনা জানালেন। প্রভাতকুমার অ্যালঝেইমারে ভুগছেন, বারান্দায় একটা ইজিচেয়ারে বসে আছেন। ইকবাল ওর নাম বলাতে চিনতে পেরে বললেন, ‘তুমি আমায় একটা চিঠি লিখেছিলে।’ পুরনো কথা তাঁর মনে আছে, নতুন কিছুই মনে থাকে না। ছেলের সঙ্গে ওঁর পড়ার ঘরে গেলাম, উইপোকা ওঁর বহু পান্ডুলিপি নষ্ট করেছে।

বাড়ি ফিরে তাঁকে সারাদিনের গল্প বলতাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কবিকে লেখা কার কার চিঠি পাওয়া গেছে। শান্তিনিকেতনে বাসকালে কয়েকটা দিন আমাদের প্রতি লীলা রায়ের মনোযোগ ও আতিথেয়তা আমাদের মুগ্ধ করেছিল। কলকাতায় ফেরার দিন ভোররাতে আমাকে ডেকে ছাদে নিয়ে গেলেন তারা দেখার উদ্দেশ্যে। কয়েকটি তারাও চেনালেন। ভোরবেলায় দুটো রিক্শায় স্টেশনে রওনা হলাম। এবার বোলপুর নয়, গন্তব্য প্রান্তিক স্টেশন। উদ্দেশ্য আমাদের কোপাই নদী দেখানো। আকাশে সূর্য ওঠার প্রস্ত্ততি চলছে, লাল আভা, রবীন্দ্রনাথের ‘ছোট নদী’র পাশ দিয়ে যাচ্ছি। নদীর পাড়ে শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা বসে আছে। আমি আর লীলা রায় পাশাপাশি এক রিক্শায়। আকাশ ও নদী মিলে যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে, তাতে মুগ্ধ আমি অনেকক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখনো আমার 888sport sign up bonusতে সেই দৃশ্য অমলিন। প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছে দেখি প্ল্যাটফর্ম নেই। লীলা রায়ের ট্রেনে উঠতে খুব কষ্ট হয়েছিল। কষ্টের কথাটুকু ওঁর অজানা ছিল না। প্রকৃতির এই অনবদ্য সৌন্দর্য আমাদের দেখানোর জন্যই তাঁর এই কষ্টস্বীকার।

আমার জন্য আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। ট্রেনে বসার জায়গা নেই, একজন কমবয়সী ছেলে ওঁকে জায়গা ছেড়ে দিলো। খালি জায়গায় তিনি বারবার আমাকে বসানোর চেষ্টা করছেন; তখন ওঁর বয়স তিহাত্তর, আমার সাতাশ। লীলার বক্তব্য, ওঁদের অভ্যেস আছে। স্বয়ং বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য অম্লান দত্তকেও বসার জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। আমি যখন তাঁকে বোঝালাম, আমি বসলে ছেলেটি অশোভন মন্তব্য করবে, তখন তিনি বসলেন।

শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পর আমি মাঝে মাঝে লীলা রায়ের ফ্ল্যাটে যেতাম। তিনি তাঁর লেখার গল্প করতেন, তাঁর অতীতের গল্প করতেন। মাতৃভূমি ত্যাগের চল্লিশ বছর পর মাকে দেখতে আমেরিকা গিয়েছিলেন। অসুস্থ মা মেয়েকে চিনতে পারেননি। দেখা না হলেও মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে তাঁর পত্রালাপ হতো।

আমার সঙ্গে সন্তানদের গল্প করতেন – পুত্র পুণ্যশ্লোক, আনন্দরূপ, কন্যা জয়া ও তৃপ্তির গল্প। পুণ্যশ্লোক ও তৃপ্তিকে আমি ওঁদের বাড়িতে দেখি। তৃপ্তির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। তৃপ্তি তখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।

মেয়েদের প্রসঙ্গে মায়ের অভিমান – কলকাতায় দর্জি  শস্তা বলে মেয়েরা শুধু দর্জিবাড়ির জন্য কলকাতা আসে। বড় পুত্রের প্রসঙ্গ ওঠায় আপ্তবাক্য বলেছিলেন : পরীক্ষায় সব সময়ে প্রথম হওয়া ভালো নয়, জীবনে এর ব্যত্যয় ঘটলে সে মেনে নিতে পারে না।  একবার ওঁর জন্মদিনে নাতনির পাঠানো উপহার দেখালেন। একটা বার্থডে কার্ডে নেকলেস এঁকে নাতনি আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে।

কোনো ব্যাপারে অন্নদাশঙ্কর অসহিষ্ণু হলে তিনি কুণ্ঠা প্রকাশ করতেন। মাঝে মাঝে সরস মন্তব্যও করতেন; আশি বছরের বুড়ো বিদ্রোহ করেছে। অনুচ্চস্বরে তিনি প্রচুর গল্প বলে যেতেন। পূর্বাপর বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে নিজের মন্তব্য তুলে ধরতেন। মাঝে মাঝে এ-কথাও বলতেন, ‘তোমার মনে হচ্ছে বুড়ি শুধু বকবক করছে।’ প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছি, আমি ওঁর সান্নিধ্যলাভে ধন্য হয়েছি। ওঁর কথা থেকেই উপলব্ধি করি, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য দুই একাকার হয়ে তাঁর জীবনাদর্শ গড়ে উঠেছে। আমার কলকাতা বাসকালে সন্ধের পরে এক বিখ্যাত কবির কন্যা থিয়েটার রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন, পুলিশ জোর করে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয় ভাসমান পতিতা সন্দেহে। এই ঘটনায় সুধী সমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়া ঘটেছিল, সরব হয়েছিল পত্রিকাগুলো। ঘটনার নিন্দা করেও লীলা রায় মন্তব্য করেছিলেন মেয়েটির উদ্দেশে – ‘এত পশ্চিমা দেশে ঘুরেছে, ওর তো জানার কথা শিকাগোর মতো জায়গায়ও কোনো কোনো এলাকায় সন্ধের পরে মেয়েরা ব্যাগে পিস্তল রাখে।’

আমি দেখেছি তিহাত্তর বছর বয়সে ব্যাংকের কাজ, ইলেকট্রিক বিল দেওয়া ইত্যাদি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে নিজেই করতেন।

888sport live footballিক হওয়ার অভিপ্রায়ে 888sport live footballিক অন্নদাশঙ্কর রায়কে বিয়ে করেননি লীলা রায়। প্রথম দিকে তিনি বলতেন, ‘উনি করেন 888sport live footballের সেবা, আমি করি 888sport live footballিকের সেবা।’ তবে 888sport live footballের প্রতি অনুরাগ ছিল; লুকিয়ে 888sport app download apk লিখতেন। আইসিএস স্বামী অন্নদাশঙ্করের চাকরিসূত্রে পশ্চিম ও পূর্ববঙ্গের বহু শহর ঘুরেছেন। এই সময়েই বাঙালির যাপিত জীবন, মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেছে। ১৯৩৩-এ 888sport app বাসকালে বিদ্বৎসমাজের সংস্পর্শে আসেন।

888sport appয় তখন ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলার শুনানি শুরু হয়; পত্রপত্রিকার মুখ্য বিষয় এই মামলা। স্বামীর সঙ্গে লীলা কোর্টে যেতেন মামলার সওয়াল-জবাব শুনতে, কিন্তু অধিকাংশ বাংলাই তিনি বুঝতে পারতেন না। এই সময়ে সত্যেন বসু তাঁকে বলেন, যে-ভাষার 888sport live football সে-ভাষায় পড়লেই তার রস আস্বাদন করা যায়। এই উপলব্ধি থেকে তিনি নতুন করে বাংলা শেখা শুরু করলেন। শুধু পড়া নয়। লেখার জন্যও প্রস্ত্ততি গ্রহণ করলেন।

মননশীল রচনার মাধ্যমে তাঁর 888sport live footballজীবনে প্রবেশ। শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পরে তিনি শরৎ-888sport live football সম্পর্কে যে-888sport live রচনা করেন, সেটি ছিল তাঁর প্রথম 888sport live। পি.ই.এনের মুখপত্রে এই রচনাপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর সমালোচক জীবনের সূচনা।

কবিপ্রয়াণে পত্রপত্রিকার লেখাজোখা অবলম্বনে রবীন্দ্রবিষয়ক নিবন্ধ তৈরি করেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 888sport live footballিক পরিচয় সর্বপ্রথম তুলে ধরেন লীলা রায়।

এই কালপর্বটি তাঁর 888sport live footballচর্চার সূচনালগ্ন। তখনো স্বল্পখ্যাত সোমেন চন্দের গল্প নিয়ে আলোচনা প্রকাশ করেন। নবীন লেখকদের 888sport live chatকর্মকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। পূর্ববাংলার চারজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবির সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোকপাত করেন তিনি এবং কলকাতার তিনজনের 888sport app download apkর আধুনিক প্রবণতা শনাক্ত করেন।

তিনি স্থির করেন, স্বামীর বদলির চাকরি উপলক্ষে যেখানে যাবেন সেখানকার লেখকদের সম্পর্কে লিখবেন। এইভাবে বীরভূমে তারাশঙ্করের 888sport alternative link নিয়ে এবং ময়মনসিংহে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও দক্ষিণারঞ্জন মিত্র-মজুমদারের শিশু888sport live football বিষয়ে সমালোচনা লেখেন। ময়মনসিংহে রচিত আরেকটি নিবন্ধে দীনেশচন্দ্র সেন-সম্পাদিত মৈমনসিং-গীতিকার অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি সন্ধান করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমৃতস্যপুত্রাঃ, সহরতলী, চিহ্ন, সহরবাসের ইতিকথা, দর্পণ প্রভৃতি 888sport alternative link এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র ও অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের রচনা নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। নজরুলের তিপ্পান্নতম জন্মদিনে গান ও 888sport live footballকর্মের অনন্যতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। পি.ই.এনের পত্রিকায় দুই বাংলার লেখকদের বিষয়ে রচনা করেন নিবন্ধ। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের হারামণি আলোচনা করেন উপযুক্ত উদ্ধৃতিসমেত। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে তাঁর 888sport live football-888sport live chatের বিশিষ্টতা শনাক্ত করেন। বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর অভিনীত নাটক সম্পর্কেও প্রকাশ করেন সমালোচনা।

উল্লিখিত রচনাদি ছাড়াও লীলা রায় অসংখ্য 888sport live প্রণয়ন করেন। পি.ই.এনের সম্পাদিকা সোফিয়া ওয়াদিয়ার উৎসাহ ও আগ্রহে লীলা 888sport live footballচর্চায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি লীলাকে উদ্বুদ্ধ করেন, বহু রচনা পি.ই.এনের মুখপত্রে নিয়মিত প্রকাশ করেছেন। লীলার 888sport live footballজীবনের সূচনালগ্নে সোফিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান ছিল।

888sport live footballজীবনে 888sport app download apk latest versionক হিসেবে লীলা রায় সর্বাধিক পরিচিতি ও সম্মান লাভ করেছিলেন। অন্নদাশঙ্কর-রচিত ও পি.ই.এন. থেকে প্রকাশিত Bengali Literature : A Historical Survey নামে বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসের বাংলা কাব্যের উদ্ধৃতিগুলোর 888sport app download apk latest version করেন লীলা রায়। এটিই তাঁর প্রথম 888sport app download apk latest version। প্রথম প্রথম ছোটগল্প 888sport app download apk latest version করে স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড প্রভৃতি দৈনিক পত্রিকার ক্রোড়পত্র ও ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে মুদ্রিত করেন, এগুলো পাঠকসমাজে সমাদৃত হয়। পি.ই.এন.-প্রকাশিত লীলার 888sport liveগুলো ইংরেজিতে A Challenging Decade : Bengali Literature in the Forties নামে ডি.এম. লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর 888sport app download apk latest versionগ্রন্থ Broken Bread-এ বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার, বুদ্ধদেব বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর, সুবোধ ঘোষ ও নরেন্দ্র মিত্রের গল্প অনূদিত হয়েছিল। ক্ষিতিমোহন সেনের বাংলার বাউল The Bauls of Bengal নামে 888sport app download apk latest version করেন। এই পর্বেই লীলা বাউল জীবন ও সাধনা সম্পর্কে আগ্রহী হন। অধ্যাপক সুজিৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের (সংস্কৃত ও পালি ভাষায় বিশেষজ্ঞ) নির্বাচিত একগুচ্ছ সংস্কৃত শ্লোকের ইংরেজি 888sport app download apk latest version করেন  The Path of Universal Love নাম দিয়ে; গ্রন্থটি বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত হয়। বিনোবা ভাবের অনুসারী ভূদানযজ্ঞ-কর্মীদের অনুরোধে ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশটি সহজ বাংলায় 888sport app download apk latest version করেন। ইউনেস্কোর বিশ্ব888sport live footballের 888sport app download apk latest versionের তালিকায় সতীনাথ ভাদুড়ীর জাগরী গ্রন্থটি ছিল, গ্রন্থটি ইংরেজি 888sport app download apk latest versionের দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর।

১৯৬১ সালে রোমে অনুষ্ঠিত রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স অন ট্রান্সলেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে লীলা রায় আমন্ত্রিত হন। ফিরে এসে তিনি মন্তব্য করেন, 888sport app download apk latest versionের মাধ্যমেই ভারতের আঞ্চলিক ভাষার 888sport live football ভিন্নভাষী পাঠকের কাছে পরিচিত হতে পারে। 888sport app download apk latest versionের কাজটিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং 888sport app পেশার মতো এই পেশায় পঠনপাঠনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এই সময়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার 888sport app download apk latest versionের জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ আসে। ওড়িয়া 888sport live footballিক কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহীর লেখা মাটির মনিষ স্বয়ং লেখক ও অন্নদাশঙ্কর রায়ের সহযোগিতায় A House Undivided নামে তিনি ভাষান্তর করেন। বনফুলের অনুরোধে তাঁর 888sport alternative link ভুবন সোমও 888sport app download apk latest version করেন। লীলা রায়ের 888sport app download apk latest version-888sport live footballের তালিকা দীর্ঘ। কখনো অনুরোধে, কখনো স্বেচ্ছায় তিনি ভাষান্তরে লিপ্ত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে ট্রান্সলেটর সোসাইটি অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। লীলা রায় হন সভাপতি। এই সময় On Translation নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন।

লীলা রায় live chat 888sport-জগতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন। সত্যজিৎ রায়ের অশনিসংকেত থেকে ঘরে-বাইরে পর্যন্ত সব live chat 888sportের ইংরেজি সাবটাইটেল লেখেন। পথের পাঁচালি চিত্রনাট্যের ইংরেজি 888sport app download apk latest version করেন। ফটিকচাঁদের তরজমা করেন।

গদ্যের সঙ্গে 888sport app download apk 888sport app download apk latest versionে হাত দেন, বাংলা থেকে ইংরেজি এবং বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায়। লীলা রায়-রচিত ইংরেজি 888sport app download apk দেশে ও বিদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর একটি 888sport app download apkর সংকলন Entrance প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর প্রথম 888sport app download apkর বই। বিদেশি পত্র-পত্রিকায় তাঁর ইংরেজি 888sport live ও আলোচনা প্রকাশিত হয়েছিল। জীবনের শেষের দিকে তিনি বাংলায় 888sport app download apk লেখা শুরু করেন এবং তা পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার জন্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়নি।

লীলা রায় প্রচ্ছদ888sport live chatী হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। অন্নদাশঙ্করের ছড়ার বই উড়কি ধানের মুড়কি থেকে শুরু করে তাঁর সব বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন লীলা রায়। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড লিঙ্গুইস্টিকসের জন্য পুত্র পুণ্যশ্লোক Bengali Language Handbook লেখার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বাংলা 888sport live footballের অংশটুকু মাকে লেখার অনুরোধ জানান। তিনি প্রাচীন ও আধুনিক বাংলা 888sport live footballের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রণয়ন করেন। উদয়শঙ্করের অনুরোধে তিনি ইংরেজিতে তাঁর আত্মজীবনীর অনুলিখিত রূপ My Life and Art নামে পান্ডুলিপি তৈরি করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিয়েছেন। পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বক্তৃতা Formative Influences in the Life of Tagore উল্লেখযোগ্য।

লীলা রায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেছেন জীবনের শুরু থেকে। প্রথম জীবনে আমেরিকার দুর্দিনে সমাজসেবায় নেমেছেন, তা আজীবন অব্যাহত ছিল। আইসিএসের স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন, সবখানেই আর্তের সেবা করেছেন। বাঁকুড়ায় মহিলা সমিতি করে সমিতির সদস্যদের ধাত্রীবিদ্যা প্রশিক্ষণে অনুপ্রাণিত করার জন্য নিজেও প্রশিক্ষণ নেন। হাসপাতালে রুগ্ণ শিশুদের পরিচর্যা পর্যায়ক্রমে সমস্ত সদস্যের মধ্যে ভাগ করে দেন, তিনি নিজেও পরিচর্যায় সক্রিয় অংশ নিতেন। শান্তিনিকেতনে বিনোবা ভাবের সর্বোদয়ের আদর্শে রুক্ষ রাঢ় বাংলার মাঠে মাঠে ঘুরেছেন ভূমিহীন মানুষের স্বার্থে। বাঁকুড়ার জজ সাহেবের বাংলোতে চরকা কেন্দ্র স্থাপন করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ে তাঁর সহায়তায় চরকা থেকে সুতো কেটে বিক্রি করে দরিদ্র মহিলারা তাদের আয়ের ব্যবস্থা করে।

মাত্র বিশ বছর বয়সে ভারতে এসেছিলেন তিনি। ভারতে দীর্ঘদিন বাস করেও তাঁর নিজের মাতৃভাষা, সংগীত, 888sport live football ও ধর্ম 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে লালন করেছেন। শান্তিনিকেতনে এক শারদসন্ধ্যায় বিখ্যাত পাশ্চাত্য সংগীতজ্ঞ লুডভিগ ফন বিটোফেনের সৃষ্টি কোরালসহ নাইন্থ সিম্ফনি বিষয়ে আলোচনা করেন। গ্রামোফোনের রেকর্ড বাজিয়ে এক একটি মুভমেন্টের ভাবার্থ ও বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে  শান্তিনিকেতনের প্রবাসী ছাত্রীদের নিয়ে খ্রিষ্টোৎসব করেন। এই উৎসব করে তৃপ্তি পেয়েছিলেন, মাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, বংশের বিশ্বাস নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন তিনি।

১৯৯২ সালের ৬ অক্টোবর (অক্টোবরের এই তারিখে অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে লীলার বাগ্দান হয়েছিল) কর্কটরোগে আক্রান্ত লীলা রায় হুইলচেয়ারে বসে টেলিভিশনে বিসর্জনের বাজনা শুনছিলেন। হাত-দুটো কপালে ঠেকিয়ে সবার অগোচরে এই নিরহংকার মানুষটি নিশ্চুপ বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।

লীলা রায় তাঁর সমগ্র জীবনে 888sport live footballচর্চা করে, মানুষকে মর্যাদা দিয়ে, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি দেখিয়ে, সকল সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে, ব্যক্তিজীবনে বিলাসিতা বর্জন করে সাধারণ মানুষের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। অন্নদাশঙ্কর বলেছেন, ‘আমার প্রধান কাজ সৃষ্টি, সৃষ্টি করি আর একটুর পর একটু মুক্ত হই, তবু আমাকে কখনও কখনও সৃষ্টির কাজ সরিয়ে রেখে দেশের ও কালের ভাবনার ভাগ নিতে ও দিতে হয়। নইলে আমি হব পলায়নবাদী।’ স্বামীর এই আদর্শকেই লীলা তাঁর জীবনের ধ্রুবতারা করে, নিজের জীবনে গভীরভাবে বেঁধেছিলেন।

 

সহায়ক-সূত্র

সুরজিৎ দাশগুপ্ত, লীলা রায়, কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০১০।

ধীমান দাশগুপ্ত, ‘আপন কথা’ (অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাক্ষাৎকার), মনস্বী অন্নদাশঙ্কর, কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৪০২ বঙ্গাব্দ।