মোবাশ্বিবর আলম মজুমদার
ঘুরে বেড়াই ঘুরে বেড়াই
গাছের দিকে মেঘের দিকে
বেলা শেষের নদীর দিকে
পথে চেনে না পথের মানুষ
ঘুরে বেড়াই ঘুরে বেড়াই
তোমার পাশে এবং তোমার ছায়ার পাশে।
– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মাছের গতিবিধিতে যে-সুর আছে সেটা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পরখ করেন রুহুল করিম রুমী। এবারের প্রদর্শনীতে তাঁর মুখচ্ছবি চিত্রণের পাশাপাশি হাজির করেছেন জ্যামিতিক
আকৃতির বিন্যাস। রুমীর চিত্রকলায় তিন ধরনের বিষয় দেখা যায়। একটি হলো,অচেনা-অদেখা মানুষের হঠাৎ-দেখা মুখ, মাছের বিসত্মৃত আনাগোনা, ক্যাকটাস গাছের ঊর্ধ্বমুখী গতি। এ সবকিছু রেখার সাবলীল প্রয়োগে উপস্থাপিত। আমরা প্রতিদিন হাজারো মানুষের মুখ দেখি। বারবার ফিরে আবার দেখি না নির্দিষ্ট কোনো মুখ ছাড়া। রুমীর ছাপচিত্রের মুখে হঠাৎ দেখা মানুষকে পাওয়া যায়। করুণ চাহনি, হতবাক করা দৃষ্টির মাঝে সরল মানুষের মুখের উপস্থাপন দেখা যায়। ছবির মানুষের চেহারার সঙ্গে বাস্তবের চেহারার খুব মিল পাওয়া যায় না। এই মানুষের মুখগুলোতে আছে হালকা আস্তর, মুখের আড়ালে আরেকটি মুখ। মানুষ প্রকৃতই এমন। তার আসল রূপ ঢেকে বাইরে নতুন এক মুখ তৈরি করে। রুমী তার আগের কাজে মানুষের মুখের অভিব্যক্তি উপস্থাপন করেছেন। এ-প্রদর্শনীতে সেসব কাজের অল্পকয়টি রেখেছেন। নানান রঙের ছাপচিত্র নির্মাণে রুমী পারদর্শিতা দেখিয়েছেন মাছ ও ক্যাকটাসের কাজগুলোতে। দুই, তিন, চার স্তরের ছাপ নিয়ে একটি ছবি সম্পন্ন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। রুহুল করিম রুমী সে সময়সাপেক্ষ কাজটিই করেন। সমান কাঠের পাটাতনে বুনোট দেখা যায় আড়াআড়িভাবে। রুমীর ক্যাকটাসের কাজগুলোতে দেখা যায় উলস্নম্ব ও কৌণিক রেখার ব্যবহার। তাঁর কাজে বিশেষভাবে লক্ষণীয় কৌণিক রেখার সাবলীল ব্যবস্থাপনা। কাঠখোদাই, এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, লিথো সব মাধ্যমেই তাঁর রেখার গতি এবং সাবলীলতা বজায় রেখেছেন। কালো, বাদামি আর কাগজের সাদা রঙের ব্যবহারে ছাপচিত্রে যে-আলোছায়ার ব্যবহার দেখিয়েছেন, তাতে বিষয়ের মূলভাব ফুটে উঠেছে। কৌণিক রেখার ব্যবহারে গড়ে-ওঠা জ্যামিতির গড়ন মাছের গতিশীল চলাচল নির্দেশ করেছে। রুমীর কিছু চিত্ররচনার ভাষা সরল। মূর্ত ও আধাবিমূর্ত ভাব প্রকাশ করে। জ্যামিতির সঙ্গে প্রকৃতির সমন্বিত এক রূপ রয়েছে, তা দেখা যায় মাছ ও ক্যাকটাসের কাজগুলোতে।
বিষয় হিসেবে ক্যাকটাসকে বেছে নেওয়া রুমীর চিত্রভুবনে নতুন হিসেবে পাওয়া যায়। নতুন এক বিন্যাসে চিত্রতল সাজিয়ে ক্যাকটাসের কাঁটা আর অবিন্যস্ত গড়ন রুমী স্পষ্টভাবেই তুলে এনেছেন। ক্যাকটাস আর মানুষ – দুটির মধ্যে গড়নগত ঐক্য আছে; ক্যাকটাসের কাঁটায় একরকম সৌন্দর্য আছে। তাঁর গড়নের বাইরে সে-কাঁটা প্রকাশিত। মানুষের কুৎসিত দিকটাই তার কাঁটা, যেটি অদৃশ্য। রুহুল ক্যাকটাসকে দৃশ্যমান করেন। মানুষকে মনে করিয়ে দেন – তোমার কাঁটাগুলো লুকিয়ে রাখো। রুমীর কাজের কৌশলে নতুনত্ব আছে। ভিন্ন কৌশলে নয়, প্রথাগত ছাপচিত্র রচনার পদ্ধতিতেই তিনি কাজ করেন। তাতে নতুনত্ব এনেছেন কাঠের বুনোট, ফোড়ন, জালের বুনোট অবিকল রেখে দিয়ে। এসব বুনোট-ছবিতে অমসৃণ তলের দেখার আনন্দ সৃষ্টি করেছেন।
রুহুল করিম এবারের ৪৬টি কাজে সূক্ষ্ম বুনোট ব্যবহার করেছেন। 888sport live chatকলার ইতিহাসে ছাপচিত্রের প্রচলন অতিপ্রাচীন। কাঠ, পাথর, তামা, দসত্মা, রাবারশিট খুঁচিয়ে 888sport live chat সৃষ্টি করার পদ্ধতি 888sport live chatীরা আঠারো শতকের শেষে শুরু করেছেন। 888sport appsে ছাপচিত্রচর্চার শুরু হয় পটুয়া 888sport live chatী কামরুল হাসান, 888sport live chatগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ ও মোহাম্মদ কিবরিয়ার হাত ধরে। তাঁরা 888sport live chatসৃষ্টির এ-মাধ্যম বিকাশের জন্য কাজ করে এ-মাধ্যমকে এগিয়ে নিয়েছেন, যা একেবারে সাম্প্রতিকতম সময়ে তরুণদের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে। রুহুল করিম রুমী সে-তরুণদের একজন। তাঁর ছাপচিত্রচর্চার অধ্যবসায় প্রদর্শিত কাজে দেখা যায়। 888sport live chatের অধ্যবসায়ের জায়গায় রুমী নিজেকে অব্যাহত রাখতে চান। বিষয়বর্ণনায় বৈচিত্র্য আর নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে ছাপচিত্রের বিষয়কে নতুনভাবে শক্তি জুগিয়েছেন। একটি বিষয়ের সঙ্গে রুমী একমত হবেন যে, মাছকে বিষয় করে সৃষ্ট 888sport live chatকর্মগুলোকে 888sport live chatগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের কাজ বলে ভ্রম হয়। রং-রেখার প্রয়োগ একরকম চেনা সফিউদ্দীন আহমেদের কাজের ‘মাছ ধরার জাল’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। পাঠক, রুহুল করিম রুমীর কিছু কাজের বিসত্মারিত বিশেস্নষণে গিয়ে আমরা কাজের উপস্থাপনা ও ধরন সম্পর্কে জেনে নিই – ক্যাকটাস ৩, ৪, ৫ ও ৬ ছবিতে সেপিয়া গ্রিন ও ব্রাউন কালারের সঙ্গে কালো রং ব্যবহার করেছেন। হালকা ও গাঢ় রঙের বিপরীত এ-উপস্থাপনা বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছে। ‘কম্পোজিশন’ শিরোনামের বেশ কয়টি কাজের মধ্যে জ্যামিতিক আকৃতি একটি আরেকটির সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করেছে। বলা যায়, রুমী এসব ক্ষেত্রে হালকা ও গাঢ় রঙের বৈপরীত্য বিষয়কে আলাদা করে উপস্থাপন করেছেন। অন্যদিকে ‘রিদম অব ওয়াটার’, ‘সং অব ওয়াটার’ ছবিগুলোতে মাছ ও জলের কোলাহলকে আমরা স্পষ্টভাবেই দেখতে পাই। ছাপচিত্রের নবীন এই পথিকৃৎকে আমরা স্বাগত জানাই নতুন নতুন নিরীক্ষার ভুবনে। গত ২১ এপ্রিল গ্যালারি চিত্রকে শুরু হওয়া এ-প্রদর্শনী শেষ হয়েছে ৫ মে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.