আফজাল হোসেন
সাংবাদিকতা আমার ক্যামেরায়
পাভেল রহমান
মাওলা ব্রাদার্স
888sport app, ২০১৬
১৫০০ টাকা
তাকে নিয়ে আমরা প্রায়ই হাসাহাসি করতাম। বন্ধুত্বের অধিকারে হাসাহাসি। হাসাহাসির কারণ ঠিক না বেঠিক হিসাব করা হয়নি। পেশার প্রতি তার যে-আত্মনিবেদন তা বুঝে ওঠার বয়স তখন নয়।
এখন বুঝতে পারি, ওই বয়সে যতটা নিবেদিত হওয়ার সাধ্য তার ছিল, তা বিস্ময়কর। তখন বিস্ময় সৃষ্টির আকাঙক্ষায় সব সময় তার যে-ছটফটানি, তা বোঝার চেষ্টা ছিল না, তাই জানা সম্ভব হয়নি। উলটোটা ঘটেছে। আমরা ঠাট্টা করতাম। ওর নাম দিয়েছিলাম শকুন।
দেখলে হাসতাম, শকুন রহমান এলেন। কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার সন্ধান পাওয়া মাত্র বন্ধুত্ব, আড্ডা সব ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে যেতেন। বলতাম, শকুন রহমান গেলেন।
তখন কারো পেশা গড়ে ওঠেনি। অনেকেই চেষ্টা করছে, তবে হালকা-পাতলা। নেশা অনেক রকম ছিল। প্রায় সবাই যেটায় সবচেয়ে বেশি ডুবে থাকতে পছন্দ করতাম তা বন্ধুত্ব, সঙ্গ।
দিন শুরু হয়ে গেলে কাজের কথা ফেলে কখন কোথায় পরস্পরের সঙ্গে দেখা হবে, সে-ভাবনায় অস্থির থাকতাম। একসঙ্গে হওয়া মানে কীভাবে কখন সময় কেটে যায় বা যেত টের পাওয়া হতো না। আড্ডা ছিল সবার সবচেয়ে প্রিয়। পেটে খাওয়া না
থাকলেও চলত। আড্ডা ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়, ভাবতাম। আড্ডা ছিল সবার অক্সিজেন।
আমরা বন্ধু তবে পাভেল রহমানের অক্সিজেন ছিল আলাদা। আমাদের আড্ডাস্থল ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের খাবার-দাবার রেসেত্মারাঁ। বন্ধু-অন্ত:প্রাণ ফরিদুর রেজা সাগর সে-রেসেত্মারাঁর মালিক। মালিকের কক্ষটি সবসময় আমাদের জন্য উন্মুক্ত থাকত আর মালিক দাঁড়িয়ে থাকত রেসেত্মারাঁর সামনের ফুটপাতে।
নিজের বসার ঘর নিবেদন করে দেওয়া ছাড়াও সাগরের প্রশ্রয় ছিল নানারকম। আড্ডার কেন্দ্র ছিল সে অথচ সবসময় সবার মাঝখানে উপস্থিত থাকত না। ঘরে ঢুঁ দিত, উস্কে দিয়ে দিয়ে আড্ডা রাখত সচল। বন্ধুমহলে এমন একজনের উস্কানি, প্রশ্রয় না পেলে আড্ডা বা মিলিত হওয়ার আকর্ষণ থাকে না।
ধান ভানতে শিবের গীতের মতো নয়। পাভেল রহমানের কথা লিখতে আমাদের সে-আড্ডা, আড্ডার ধরন, বন্ধুত্বের নেশাগ্রস্ততার কথা জানান না দিলে চলবে না। সে-আড্ডা ছিল সবারই নিত্য-আকাঙক্ষার। ধ্যানজ্ঞান। বলেছি অক্সিজেন।
পাভেল ছিল ভিন্নরকম। আড্ডা পছন্দের ছিল; কিন্তু তা ধ্যানজ্ঞান অক্সিজেন নয়। বিরক্ত হতাম আমরা। থাকছে, হাসছে, জমিয়ে তোলার উপকরণ জোগাচ্ছে অথচ প্রায়ই সবার মনে হতো, সে থেকেও নেই। কটা বাজে, সময় জানতে চাইত আর মন খারাপ করে ফেলত। অন্ধকারমুখে বলত, সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কোথাও কিছু ঘটল না। আমি এখানে রয়েছি বলে হয়তো টের পাচ্ছি না।
সবাইকে বিরক্ত করে প্রায়ই সে জমানো আড্ডার মাঝখান থেকে হঠাৎ হয়রান হয়ে উঠে দাঁড়াত, আমি যাই। পাঁচ-সাতজনের মধ্যে একজন যাই বলা মানে আড্ডার ছন্দপতন। কেউ বলত না, যাস না পাভেল। জানা ছিল, যাই বলা মানে ও যাবেই। ওর ধারণা, এই ছোট্ট ঘরে বসে থাকলে বহু বড় ঘটনা হারিয়ে ফেলবে।
বড় ঘটনা মানে কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু, দুর্ঘটনা, কোথাও আচমকা চমকে দেওয়ার মতো কিছু ঘটেছে। বড় ঘটনা মানে সেসবের একটা ছবি।
দিন চলে যাচ্ছে, ভাবছে, অথচ সময় তখন দুপুর ১২টা। যেন ঘুম থেকে উঠেই তাঁর রক্তে অস্থিরতার নাচন শুরু হয়ে যেত। অস্থিরতা একটা খবরের ছবির জন্য।
বন্ধুত্ব ফেলে, চমৎকার আড্ডা ফেলে, ছোট্ট হোন্ডা চেপে লম্বা পাভেল শহর চষতে বেরিয়ে যেত। খুঁজে বেড়াত খবরের ছবি।
শকুন নামটা কেন, এতক্ষণে খানিকটা ধারণা পেয়ে যাওয়ার কথা। শকুন মৃত পশুর খোঁজ করে। পেয়ে গেলে সবচেয়ে সন্তুষ্ট। পাভেলকে ভাবা হতো তেমনই। জীবনের কোনো কিছুতে বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে মনে হয়নি। সবাই সবসময় খেয়াল করেছে – ও আছে ছবির খোঁজে। দুর্ঘটনা, সর্বনাশ, চমকের খোঁজে।
মানুষটা আচ্ছন্ন থেকেছে কাজের ঘোরে। সে-আচ্ছন্নতা, ঘোরে থাকা মনেপ্রাণে উপভোগও করেছে। এমন স্বভাবের প্রতি সমীহ ছিল না আমাদের। আমাদের ওড়া-ভাসার জীবনের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল বলে মনে হয়নি, তাই ভেবেছি, পাগলামো। জীবনের যেসব মুহূর্ত পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সবই উপভোগ করছি, সেসবে সে লোভহীন, আগ্রহ নেই, এ অস্বাভাবিকতা। শুধু ছবির টানে ছুটে বেড়ানোকে মনে করেছি স্বার্থপরতা।
বহু বছর গত হয়েছে। গত হয়েছে আমাদের মনমানসিকতার বহু কিছুই। এখনো বন্ধুরা একত্রিত হই সময় পেলে। সময় পেলে কথাটা যুক্ত হয়েছে এখনকার জীবনে। এখন কাজ ফেলে আড্ডা দেওয়ার কথা কেউ বললে চেহারায় অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠবে। এখন মনে হয়, বন্ধুদের মধ্যে যে লেখে, যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, অভিনয়, বাণিজ্য, চাকরি, যে যেটা করে, মুখ্য ভেবেই করে।
সব গৌণ করে, ভেবে ছবি তুলে নিজেকে প্রমাণের অন্ধ ঝোঁক ছিল পাভেলের। ছবি তোলা এতটা গুরুত্বপূর্ণ বা তাতে কত আনন্দ লুকিয়ে আছে জানার বা বোঝার চেষ্টা করা হয়নি, করিনি। তখনকার বয়স অনুযায়ী নেশার ঘোরে তার দৌড়ঝাঁপ দেখে শকুন সম্বোধনে তাকে বিশেস্নষণ করেই আনন্দ জুটেছে।
ক্যামেরার লেন্সে বিস্ময় ধরে রাখার নেশা। আমরা ভাবতাম, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, অন্যের সর্বনাশের মধ্যে নিজের আনন্দ খুঁজছে। ভাবা হয়নি, জীবনপ্রবাহে রয়েছে কতরকম বিস্ময়। মুহূর্তে সৃষ্টি হয়, মিলিয়ে যায় মুহূর্তেই। সে-মুহূর্ত ধরে রাখা আরো বিস্ময়কর। নিজের চোখ দিয়ে মুহূর্ত দেখা এবং দেখামাত্র ক্যামেরা ক্লিক করে ছবি তুলে ফেলা, বিষয়টি সামান্য নয়।
একটা ছবির উদাহরণ এখানে দেওয়া যাক। দুটো ট্রেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ট্রেনের ছাদে ঠাসাঠাসি মানুষ। এ-ছাদ থেকে ও-ছাদে যেতে একটা মানুষ লাফ দিয়েছে, এ-জীবনের নিত্যকার ঘটনা। সেটা ধারণের আগে মনে ধারণ করলে ছবিটা হতো না। চিত্রটি মুহূর্তের। শূন্যের মধ্যে লাফানো মানুষটাকে আটকে দিতে পারলে সে-ছবিটা হতে পারে আনন্দ। আনন্দ এবং বিস্ময় একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে একটা চিত্ররচনা অসাধারণত্বের দাবি করতে পারে।
আমি কোন ছবিটার কথা বলব…
খুঁজে পাওয়া স্বামী-স্ত্রী জনতার সামনেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন নিজেদের ফিরে পাওয়ার আনন্দে। তারা ভেবেছিলেন, উড়িরচরে কেউ আর বেঁচে নেই…।
ছবিটা প্রেম-ভালোবাসায় মুখরিত। চোখে সাদা-কালো অথচ মন খুঁজে পায় অজস্র রং। উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত 888sport promo code-পুরুষের সামনে খালি গায়ের এক মানুষ প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে শিশু কোলে এক 888sport promo codeকে।
ছবিটা পুরনো। নতুন করে কাঁদাতে পারে। আমরা কত কী ভুলে যাই। ছবি ইতিহাস হয়ে থাকে। সে-ছবি শুধু ঘটনার না হয়ে যদি বিশেষ ঘটনার হয়, তার আবেদন ইতিহাসের পাতার দিকে গড়িয়ে যায়। ইতিহাসের মতো জ্বলে থাকে, নিভে যায় না।
ঘটনা ১৯৯১ সালের। প্রলয়ঙ্করী সে-ঘূর্ণিঝড়ের কথা অনেকের হয়তো মনে নেই। ভুলো মনের সামনে ছবি হাজির হলে বর্তমান থেকে মুহূর্তেই মানুষটাকে সে-সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। বহুকাল পরেও একটা ছবির বেদনা মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলতে পারে। মানুষের অসহায়ত্বকে অনুভব করিয়ে দিতে পারে।
মুহূর্তের কথা বলেছিলাম, তার সন্ধানে না থাকলে, অনুভবে যদি মুহূর্তে পাওয়ার চর্চা না চলে ঘটনা ঘটবে এবং মিলিয়ে যাবে। সে-ঘটনা স্থিরচিত্রে পরিণত হবে না। ঘূর্ণিঝড়ে গ্রাম বিধ্বস্ত। সংসার বিলীন। মানুষের মধ্যে কেউ জীবিত, কেউ মৃত, কেউ নিখোঁজ। খাদ্য, আশ্রয়হীন মানুষ মৃতের জন্য শোকের চেয়ে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
পাভেলের ভাষায়, সেখানে শত-শত মানুষের ভিড় আহার আর চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায়। আমাদের বোট দেখে ছুটে এলো আরো দুর্গত মানুষ।
এমনি করে অসংখ্য অসাধারণ ছবির পেছনের গল্প বলা। একশর বেশি ছবি আর ছবির নেপথ্যের গল্প ছত্রিশটি। দেখা আর পড়ার বই, সাংবাদিকতা আমার ক্যামেরায়। এমন বই এই প্রথম। প্রথম বলছি, কারণ এমন গ্রন্থ দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি।
নেপথ্যে গল্প বলা; কিন্তু গল্প নয়। ঘটনা, ইতিহাস। দুভাবে বলা। ছবিতে আর লিখে। তাই আবেদন দ্বিগুণ। সেই ছবিটার কথা আবার টেনে আনা যাক। উড়িরচর শ্মশান হয়ে গেছে। বেঁচে থাকা মানুষ খাদ্য, সাহায্যের সন্ধানে অসহায়ের মতো ঘুরছে। কোলে শিশু নিয়ে এক মা দেখতে পায় নিখোঁজ হওয়া তার স্বামীকে। তিনদিন ধরে যাকে মৃত ভাবা হয়েছে সে-মানুষটা দূরে, সামনে দাঁড়িয়ে। জীবিত। স্বামীও দেখতে পেল স্ত্রীকে। দুজনে দৌড়ে এসে কাঁদতে-কাঁদতে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে।
পাভেল লিখেছে, দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলেন আবেগে-ভালোবাসায়। উপস্থিত চরবাসী বিস্মিত। এমন একটি মুহূর্ত, যা আমাদের বাঙালি মুসলমান সংস্কৃতিতে দেখা যায় না। দেখা যায় না স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য।
যা দেখা যায় না, অসংখ্য দেখিয়েছে পাভেল। পাভেলের দেখা অন্যের দেখাকেও বদলে দিতে পারে। বঙ্গবন্ধুর ছবিটার কথা বলি। তিনি জাতির পিতা। রাষ্ট্রনায়ক। নায়কোচিত বহু ছবি মানুষের দেখা। দীর্ঘকায়, সুদর্শন এবং সর্বদা সুবেশী ছিলেন। অন্যরকম ছবির ক্ষমতাও ভিন্নরকম। জানার বাইরে নতুন উপলব্ধি জাগিয়ে দিতে পারে।
জাতির পিতার একটা ঘরোয়া ছবি। সেই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অতি সাধারণ একটা ছবি। লুঙি পরা, সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে। হাতে তার প্রিয় পাইপ। সামনে অ্যাশট্রে।
পাভেলের লেখায় জানা যায়, ছবিটা তোলাতে রাগ করে ধমক দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট কি গেঞ্জি পরে ছবি তোলে? তোর পানিশমেন্ট হবে।
পাভেলের তখন দিশেহারা দশা। লিখেছে, পানিশমেন্টের হুঙ্কারে গলা শুকিয়েছে আগেই, এবার হাঁটুও কাঁপছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শরীফ আজিজ ছুটে এলেন। আমার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। ‘শরীফ আমার শার্টটা নিয়ে আয়’, বললেন বঙ্গবন্ধু। এবার আমার দিকে তাকালেন। বললেন, আমি শার্টটা পরব। তুই আমার আরেকটা ছবি তুলবি। এটাই তোর পানিশমেন্ট।
একটা ছবি আর তার সামান্য বর্ণনায় একজন মানুষকে নতুন করে জানা হয়। শুধু তাই নয়, যারা বিরুদ্ধবাদী তাদের চিমত্মা-চেতনায় গভীর রেখাপাত করতে পারে। ছবি সামান্য ছবি হয়ে থাকে না।
ছবি ও লেখার দ্বৈত নির্যাস গ্রন্থজুড়ে। এ-গ্রন্থ নতুন অভিজ্ঞতা। এ-গ্রন্থ বয়ে যাওয়া সময়কে আটকে রাখা, না-ভোলার জন্য। এ-গ্রন্থ আত্মজিজ্ঞাসা,
কৌতূহল-জাগানিয়া, জীবনকে সম্মানের চোখে দেখা মানুষদের সংগ্রহে রাখার জন্য।
হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী, তেমন একটি ছবির কথাই বলি…
পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে মিছিলে গিয়ে গুলিতে নিহত নূর হোসেনের কথা এভাবেই শুরু করেছে পাভেল। গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে গেছে সাদা-কালো একটা ছবি। ছবিটা বাঙালির অহঙ্কার হয়ে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে।
মুহূর্তের পর মুহূর্তকে বন্দি করেছে পাভেল। মনে হবে তার চোখ এড়িয়ে কোনো মুহূর্তই ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে পারেনি।
একশর বেশি ছবি থেকে মাত্র তিনটির সামান্য বর্ণনা করা হয়েছে। ভূমিকা পর্বে পাভেলের লেখায় মনে হয়, অসংখ্যের হাতছানি। ছবির হৃদস্পন্দন তার নিজের হৃৎস্পন্দনকে দ্রম্নততর করে। অস্থিরতা ঠেলে দেয় প্রশ্নের মুখে। নিজেই নিজের মুখোমুখি হয়ে যায় কলমে।
বন্যা, প্রলয়, সিডর, আইলা, আনন্দ-বেদনা কোন ছবি ছেড়ে কোন ছবিটার কথা বলি!
মাদার তেরেসা, রানী এলিজাবেথ, নেলসন ম্যান্ডেলা, বেনজির ভুট্টো, রাজীব গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা, অড্রে হেপবার্ন, ইয়াসির আরাফাত, পুতিন, ক্লিনটন, আমি কোন ছবির কথা বলব!
যেন সুতোর ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিটি ছবি তোলা। মুহূর্তের ছবি। তোলা সহজসাধ্য নয়। পাভেলের তোলা ছবিগুলো বলে দেয়, জীবন এক দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ। প্রায় প্রতিটি ছবি তোলার পেছনের যে-ঘটনা তা জানলে মনে হয়, মুহূর্ত খুঁজে বেড়াতে পারে মানুষ, মুহূর্ত সৃষ্টিও হয়, তাকে স্থির ধরে রাখতে যোগ্যতার সঙ্গে ভাগ্যেরও প্রয়োজন, যার নিষ্ঠা থাকে ভাগ্য তার কাছে ধরা দেয় সানন্দে।
ছবি আজকাল সবাই তুলতে পারে। আজকাল ক্যামেরা ফোনে গিয়ে ঢুকেছে। পলায়নের মতো মনে হয়। সময় অনেককিছু বদলে দিয়েছে। আলোকচিত্রের অনুভব আবেদন বদলাবে না। ছবি তোলার জন্য জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে ঢুকে পড়তে দ্বিধা হয় না, যার নাম নেশা, ঘোর।
পাভেল রহমান এক জায়গায় সে-বর্ণনা দিয়েছে এভাবে, ছবি তোলার সময়টা খুবই বিপজ্জনক। একটি ছবি তোলার মুহূর্তে হৃদস্পন্দন দ্রম্নত ওঠা-নামা করায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল। ছবি তো তোলা হলো, এখন বাঁচাতে হবে ফিল্মটা।
তখন ফিল্ম বাঁচানোর কাল ছিল। জীবন বাঁচিয়ে ছবি তোলা, তারপর ফিল্ম বাঁচানোর ঝুঁকি। সহজে অনুমান করা সম্ভব ছবি তোলা, সাংবাদিকতা সহজসাধ্য নয়।
সাংবাদিকতা আমার ক্যামেরায় এ-গ্রন্থ আনন্দ-উত্তেজনা আর শিউরে ওঠার ছবি ও ঘটনায় ভরপুর। প্রকাশ না হলে বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও জানা হতো না, কী অসাধ্য সাধন করেছে পাভেল রহমান। কীর্তিমান পাভেলের বই নেড়েচেড়ে আর পড়ে কেবলই মনে হতে থাকে, কাছের মানুষের প্রতি আমাদের মনোযোগ যথেষ্ট থাকে না কিংবা অবহেলা থাকে। বন্ধুত্ব এবং অবহেলা পাশাপাশি মানানসই নয়, তবু বিলম্বে এ-কথাটা অনুভূত হয়েছে, আমরা ভালোবাসতে জানি আবার অসচেতনতার অবহেলায় লতাপাতাও বাড়তে দিই।
এ-কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তখন ছবি তোলা সে তেমন কী কাজ বলে ভেবেছি। বইটা না বের হলে, ছবিগুলোর সঙ্গে লেখাগুলো না পড়া হলে জানা হতো না, আলোকচিত্রী পরিচয়ের ব্যাপ্তি কতখানি। প্রায় আকাশছোঁয়ার মতো।
এ-পরিচয়ের বিশেষ মর্যাদা যুক্ত হয়েছে তোমার হাতে। বন্ধু হিসেবে গর্ববোধ করি সবাই।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.