খোয়াবনামা : মঞ্চে মহাকাব্যিক বিস্তার

রিচার্ড শেখনার পারফরম্যান্স তত্ত্বে যেমন মঞ্চের রিচুয়ালকে ভেঙে দিয়েছেন, প্রাচ্যনাট তাদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা খোয়াবনামা নাটকে মঞ্চের প্রচলিত দৃশ্যরীতিকেও তেমনি ভেঙে দিয়েছে। 888sport alternative linkের মহাকাব্যিক বিস্তারের মতো নাট্যদৃশ্যেও যে মহাকাব্যিক বিন্যাস করা যায় তা নিরীক্ষা করেছেন তাঁরা। চরিত্র, সংলাপ ও দ্বন্দ্ব তৈরির বিপরীতে বিশাল ক্যানভাসে নির্মাণ করেছেন জনপদের জীবনসংগ্রাম। এ-নাটকটি 888sport appsের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা 888sport alternative link অবলম্বনে নির্মিত। নাট্যরূপ দিয়েছেন শওকত হোসেন সজীব। নাটকটির নির্দেশনায় কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। সম্প্রতি গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২২-এ ২৪শে অক্টোবর সন্ধ্যায় 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমির মূলমঞ্চে নাটকটি প্রদর্শিত হয়।

বাংলা 888sport live footballের অনন্য সংযোজন আখতারুজ্জামান   ইলিয়াসের  খোয়াবনামা।  এ-888sport alternative linkটি ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তানের দেশভাগ-পূর্ব ও পরবর্তী কয়েক বছরের সময়কাল নিয়ে রচিত। বগুড়ার কাৎলাহার বিলের উপকণ্ঠের বসতিই এর প্লট; কাৎলাহার বিল-তীরবর্তী মানুষের জীবনসংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মিশ্রণে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত। জনপদবাসীর সংগ্রাম,   শোষণ, শাসন, দাসত্ব, আধিপত্য ও সমকালীন পুঁজিবাদী বাস্তবতা; সংগ্রামের বহুমাত্রিক কাহিনি এতে রূপায়িত। এর ন্যারেটিভিটি বর্ণনাতেই শুধু নয়; বরং বক্তব্য, ভাষা, নির্মিতি, স্থান-কাল, নৈর্ব্যক্তিকতা-মায়া বিস্তারসহ নানা উপকরণের অদ্বৈত গ্রন্থনসূত্রে উদ্ভাসিত। 888sport alternative linkটি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে 888sport appর মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। একই বছর কলকাতার নয়া উদ্যোগ প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হয়। ওই বছরই 888sport alternative linkটি প্রফুল্ল কুমার সরকার 888sport sign up bonus আনন্দ 888sport app download bd ও সাদাত আলী আকন্দ 888sport app download bd লাভ করে। পরে গ্রন্থটি আনন্দ 888sport app download bdেও ভূষিত হয়। 888sport alternative linkটি ইতিহাসের সঙ্গে জনপদের জীবন-সংগ্রামের মিশেলে বাঙালি জনসংস্কৃতির চিত্রল উপস্থাপনায় প্রায় সকলের কাছে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে।

বাখতিনের আখ্যানতত্ত্বের আলোকে দেখা যায়, এই 888sport alternative linkের রয়েছে বহুস্বরসংগতি বা পলিফেনি। এই আখ্যান হয়ে উঠেছে অনেক স্বরের সমন্বিত স্বর। এ-888sport alternative linkে মানবজীবন সংগ্রাম, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোয় বিবৃত। জেমস জয়েস ইউলিসিসে যেমন দেবত্ব-নায়কত্ব ভেঙে মানবচরিত্রকে উদ্ভাসিত করেছেন এ-888sport alternative linkেও জীবন দ্বন্দ্বের অনিবার্য সংগতি উপস্থাপিত হয়েছে। লেখনীয় দার্শনিক দৃষ্টিকোণে প্রাধান্য পেয়েছে মার্কসবাদী শ্রেণিসংগ্রাম, ফ্রয়েডের মনোবিকলন, জাদুবাস্তবতা, সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গের জীবনসংগ্রাম। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি 888sport alternative linkের কুবেরের মতোই যেন এ-আখ্যানের তমিজ চরিত্র। স্যামুয়েল বেকেটের মতোও নির্জ্ঞানীয় জটিল। অ্যাবসার্ডের বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যগত  দিকচিহ্নহীন।

প্রাচ্যনাট করোনা-পূর্ব সময়ে  প্রযোজনা করেছে খোয়াবনামা নাটকটি। তারপর হঠাৎ করোনা মহামারিতে পৃথিবী স্থবির হয়ে গিয়েছিল। প্রাচ্যনাট সবসময়ই দর্শকদের নানা বৈচিত্র্যময় নাটক উপহার দিয়ে এসেছে। এ-দলের সার্কাস সার্কাস 888sport appsের নাট্যেতিহাসে মাইলফলক প্রযোজনা। দেশবিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে মৌলবাদী আগ্রাসনে যখন পূর্ববাংলার সংস্কৃতি ধ্বংসের পথে সে-সময়ের বেদনাঘন আখ্যানে নির্মিত এ-নাটকটি দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। তাদের কইন্যা নাটকটিও পিরবাদী জীবনবাস্তবতায় মানুষের মানবিক পরিণতিকেই চিহ্নিত করে। তাদের অধিকাংশ নাটকেই দেশ, সংস্কৃতি ও জীবনসংগ্রাম প্রধান হয়ে ওঠে। খোয়াবনামা নাটকও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচ্যনাটের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলি হলো – মান্দার, অ্যা ম্যান ফর অল সিজনস, কিনু কাহারের থেটার, পুনর্জন্ম, বনমানুষ, ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি পুলসিরাত ইত্যাদি।

খোয়াবনামা নাটকের কাহিনি গড়ে   উঠেছে   বগুড়ার   কাৎলাহার বিল-তীরবর্তী অঞ্চল গিরিরডাঙা, নিজগিরি ডাঙা, গোলাবাড়িহাট ইত্যাদি জনপদের মানুষকে ঘিরে। মূল 888sport alternative linkের সমগ্রতা ধারণ না করলেও এ-নাটক প্রতিনিধিত্বশীল অংশবিশেষ। পাঠক ভবানী ও দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে তমিজের বাপের অবস্থান থেকে তমিজের জীবনসংগ্রাম ও কুলসুমের পরিণতি পর্যন্ত বিবৃত। শওকত হোসেন সজীবের নাট্যরূপে কাহিনির পরি888sport slot game ও সংলাপ ঝরঝরে। সময়ের পরি888sport slot gameও একটি ঐক্যের মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত। এই উপস্থাপনা 888sport alternative linkের মূলসুর ও আবেগকেই উসকে দিয়েছে।

নাট্য পরিবেশনাটি আবহমান বাংলার নাট্যরীতির বর্ণনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। বর্ণনার মধ্যে কোরিওগ্রাফিতে ফুটে উঠতে থাকে ফকির-সন্ন্যাস বিদ্রোহের নানা প্রতীকী বাস্তবতা। মঞ্চে উঠে আসে ভবানী পাঠক। উপনিবেশ শোষণের বিরুদ্ধে যা ছিল প্রথম প্রতিবাদ। কোরাস শেষ হলে মঞ্চে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তমিজের বাপকে। তমিজের বাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখছে। বিলের ধারে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে যে-বসতির সূচনা হয়েছিল সেখানে আজ কোম্পানির সরদারের হাতে খুন হয় মানুষ। আজ চারদিকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস। তমিজের বাপ যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখে পূর্বপুরুষের জরাজীর্ণ বই। পান্তা ভাতের সানকিটা একটু পড়ে গেলে তমিজের বাপ বলে ওঠে, ‘তুই হামার ভাতেত পাও দিস? এই নাপাক ভাত হামি এখন মুখোত তুলি ক্যাংকা কর‌্যা?’ ঘাত-প্রতিঘাতে এগিয়ে চলে এ-জনপদের কাহিনি। মুনসি যেন এ-বিলের মালিক। বিলের উত্তরে পাকুড়গাছের তলে আসন নিয়ে বিল শাসন করত মুনসি। একসময় তার নির্দেশেই চলত বিলের মাঝিত্ব। ভূমিকম্প, বন্যা নানা ঘটনায় সমাজের কত পরিবর্তন ঘটে। একসময় বিলের মালিকানা চলে যায় জমিদারের হাতে। ক্ষমতার প্রভাবে মাঝি পেশারও রদবদল হয়। চেরাগ আলি ফকির মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে ফেরে। আর তমিজের বাপ ঘুমের মধ্যে যেন পাকুড়গাছের মুনসিকে দেখতে পায়। অপরদিকে দরিদ্র তমিজ স্বপ্ন দেখে একখণ্ড জমির। তেভাগার কবি কেরামত কী কারণে যেন ঘুরে ফেরে। চেরাগ আলির নাতনি কুলসুম খোয়াবে কার যেন ছায়া দেখতে পায়। রাজনৈতিক নানা পরিবর্তন ঘটে। একসময় দেশি সাহেবরা নতুন রাষ্ট্র বানায়। এ-জনপদে তখন দেশি সাহেবদের ক্ষমতা। হিন্দু জমিদার চলে গেলেও মানুষ নিজের মাটি ও পানির অধিকার ফিরে পায় না। তমিজের বাপ পাকুড়গাছকে আর ফিরে পায় না। ভবানী পাঠকও এগিয়ে আসে না। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে নতুন করে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের সংঘাত। খুন হয়। তেভাগার খোঁজে তমিজ তখন ছুটে চলেছে নিরুদ্দেশে। একসময় কুলসুমও খুন হয়। অভাব-দারিদ্র্য ঘিরে থাকে তাদের। ফুলজানের গর্ভে তমিজের ঔরসজাত কন্যা সখিনা যেন বিলের উত্তরে দেখতে পায় হেঁসেলে বলকানো ভাতের দৃশ্য। এভাবেই গল্পকথন এগিয়ে চলে।

প্রসেনিয়াম মঞ্চধারায় নাটকটি উপস্থাপিত। শুরুতেই দেখা যায় – মঞ্চে বিশালাকৃতির একটি পাকুড়গাছের সাজেশন। তার নিচে ও সামনের খোলা জায়গাটিই অভিনয়স্থান। এবিএস জেমের মঞ্চ ডিজাইনে ফুটে উঠতে থাকে কাৎলাহার বিলের পাশের জীবনযাত্রা। এ-নাটকের কাহিনি অত্যন্ত কমপ্লেক্স। সময়, স্থান ও কালের পরি888sport slot game এক সূত্রে গাঁথা। গ্রিক নাট্যতত্ত্বের প্রথাগত ঐক্য এতে নেই। ভাষায় যত সহজে সময়ের পরি888sport slot game করা যায়, একটি ক্ষুদ্রায়তন মঞ্চে ততটা সময়ের পরি888sport slot game সম্ভব নয়। নির্দেশক নাট্যটি নির্মাণে 888sport alternative linkের কাহিনির মহাবিস্তারের মতো বিশাল ক্যানভাসকে ধারণ করেছেন। মঞ্চের প্রতিটি দৃশ্যের ভেতরেই উল্লিখিত গ্রামের অসংখ্য দৃশ্য-প্রতীক নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে গ্রামের অসংখ্য চিত্রের রূপায়ণ করেছেন নির্দেশক। নির্দেশক নির্ভর করেছেন অভিনেতার শারীরিক ভঙ্গি, কোরিওগ্রাফি ও প্রপসের ওপর। কোনো সুনির্দিষ্ট চরিত্র কিংবা গল্প বা সংলাপভিত্তিক দৃশ্য নির্মাণ করেননি। এসএম সুলতানের গ্রামীণ চিত্রকল্পের মতো অসংখ্য ইমেজ দিয়ে গ্রামের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। বর্ণনাত্মক রীতিতে উপস্থাপিত হলেও চরিত্রাভিনয়, কোরিওগ্রাফি ও সংগীতের অসামান্য সংযোজন ঘটেছে নাটকে। 

এই নাটকে ৪৫ জনের বেশি অভিনেতা অভিনয় করেছেন। সাইম বিন মুজিব ‘তমিজের বাপ’ চরিত্র নির্মাণে বাস্তবতাবাদী রূপকেই বেছে নিয়েছেন। গায়ে তাঁর গাঢ় রঙের ফতুয়া ধরনের পাঞ্জাবি। গলায় হালকা সবুজ রঙের উত্তরীয়। মুখভর্তি দাঁড়ি। চোখে-মুখে নিদ্রালু ভাব। বড় উদ্ভট ও রহস্যময় চরিত্র তমিজের বাপ। বন্দনার পর নাটকটি শুরুই হয় তমিজের বাপের ক্ষুধার্ত অবস্থায় শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখার মধ্য দিয়ে। কিন্তু তমিজের বাপের প্রকৃত নাম কী তা জানা যায় না। তবে তমিজের বাপের ভাষায় পাওয়া যায় তার কয়েক পূর্বপুরুষের কথা। এই গ্রামে বসতি স্থাপনের নানা প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ পাওয়া যায়। তমিজের বাপ যেন অতিপ্রাকৃত স্বপ্ন দেখে বেড়ায়। সে ঘুমের মধ্যে হাটে। সে যেন কথা বলে চলে বিলের উত্তরে পাকুড়গাছে বসে থাকা মুনসির সঙ্গে। সে ছিল পেশায় একজন মাঝি। সাইম বাস্তবধর্মী অঙ্গভঙ্গি ও সংলাপের স্বরের সঙ্গে যেন সাত্তিক দৃঢ়তায় মঞ্চে অনবদ্য করে তুলেছিলেন চরিত্রটি। নাটকের শেষে ইটখোলা বানানোর জন্য পাকুড়গাছ কেটে ফেললে তমিজের বাপ খুব বেদনার্ত হয়ে ওঠে – ‘পাকুড়গাছ নাই রে, ফকির বাহিরিলো তার না থাকে উদ্দিশ। দুয়ারে দাঁড়ায়ে ঘোড়া করিলো কুর্নিশ। দুলদুল উড়াল দিলো নাহিক উদ্দিশ।’

কুলসুম চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাহানা রহমান সুমি। কুলসুম সৎ ছেলে তমিজের প্রায় সমবয়সী। কুলসুমের গন্ধ শোঁকার অসাধারণ ক্ষমতা। অভাবের সময় খাবারের গন্ধ শুঁকেই সে পেট ভরে নিতে পারে। জীবন-দারিদ্র্যে অতিষ্ঠ কুলসুমের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনাও লক্ষ করা যায়। দেশবিভাজনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিবাদে খুন হলে তার মধ্যে মানবীয় চেতনাই বড় রূপে দেখা যায়। নাটকের তার উৎকণ্ঠিত রূপ আঘাত হানে – ‘রাত্রিবেলা কামারপাড়াত কারা যেন আগুন লাগ্যা গেছে। নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর বল্যা বল্যা ফেরে। তয় কামাররা একজোট হয়্যা আবার বান্দে মাতরম কয়া ওগো তাড়া করিছে। কামারের ঘরততো অস্ত্রোর অভাব লাই, তাই হামলা বেশিক্ষণ করা পারে লাই।’ অত্যন্ত সহজ-সরল প্রাণবন্ত মেধাদীপ্ত অভিনয় সাহানা রহমান সুমির।

তমিজ চরিত্রটি এ-নাটকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। এ-চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. সোহেল রানা। বাবার মাঝি পেশার সূত্র ধরেই সে মাঝি। কিন্তু কাৎলাহার বিল জোতদার শরাফত মণ্ডল দখলে নেওয়ার পর থেকে সে অন্যের জমিতে গতর খাটিয়ে জীবনধারণ করছে। নাটকে শোষিত মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র তমিজ। তমিজের নিজের গতর বা দেহ ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। সে চায় জমির মালিক হতে। তাই নিজের বিয়ের আসরেও তমিজ বলে উঠেছে – ‘বড়ো বেটির নামে হুরমতুল্লা বুড়া জমির ভাগ লিখ্যা না দিলে হামি লিকার আসর থ্যাকা উঠি যাবো।’ নাটকের শেষে তমিজ অত্যন্ত প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।

বর্ণাত্মক অভিনয়ের ধারায় বর্ণনা ও চরিত্রাভিনয়ের মিশেলে নাটকটি উপস্থাপিত। শশাংক সাহা ‘শরাফত মন্ডল’ চরিত্রে পুঁজিবাদী মানসিকতাকেই রূপায়ণ করেছেন। বিলের পাশের  অধিকাংশ জমি এই শরাফতের। কীভাবে শরাফত এত জমির মালিক হয়েছে। কেন বড়লোক চিরকাল বড়লোকই থাকে আর দরিদ্র চিরকালই দরিদ্র। মার্কসবাদী বুর্জোয়া পুঁজিবাদী নানা ভাবনা এর পরতে পরতে। অর্থনৈতিক শোষণের রূপরেখা অত্যন্ত সংবদনশীলতায় তুলে ধরেছেন নাট্যকার। শরাফতের ছেলে আব্দুর কাদেরও বাবার মতোই পুঁজিবাদী আধিপত্যকামী। সে ইটভাটা দিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করে।

তানজি কুন ‘চেরাগ আলি ফকির’ চরিত্র রূপায়ণে বাস্তববাদিতার আশ্রয় নিয়েছেন। সাবলীল তাঁর চলন। ফুলজান চরিত্রে চেতনা রহমান ভাষা, বৈকুণ্ঠ চরিত্রে নিলয় দেবনাথ, কেরামত চরিত্রে সাখাওয়াত হোসেন রিজভী, আজিজ চরিত্রে সাইদুর রহমান শাহীন, কাদের চরিত্রে মিতুল রহমান, হুমমুল্লা চরিত্রে ঊর্মি সাহা রায়, ছোট মিয়া চরিত্রে শওকত হোসেন সজীব; মাঝিসহ 888sport app চরিত্রে আরিফ রেজা খান, বুলবুল আহমেদ, মুরতাজা যুবাইর, আরিফুল ইসলাম রুবেল, তৃপ্তি রানি, ডায়না ম্যারেলিন, নায়ীমী নাফসীন, আহমেদ সাকি, তাহাদিল আহমেদ, সাগর বড়ুয়া নয়ন, শ্রাবণ শামীম, মনিরুল ইসলাম রুবেল, এ কে এম ইতমাম, রকি খান, তৌফিকুর রহমান রেইন, উচ্ছ্বাস তালুকদার প্রমুখের অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে কাৎলাহার বিল-তীরবর্তী জীবনসংগ্রাম।

নির্দেশক কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন বলেন, বিশ বছর শেষ করে পঁচিশ বছরের প্রাক্কালে একটা বিশাল প্রেক্ষাপটে কিছু করার প্রয়াসে খোয়াবনামা নিয়ে কাজ করার তাগিদ তৈরি হয়। এখনকার প্রজন্মের কাছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস দুর্বোধ্য ধোঁয়াশা। বই পড়ার অভ্যাসই যেখানে দিন দিন আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে – সেখানে ইলিয়াসের লেখার সঙ্গে নিজেদের পরিচিত করে তোলা এবং অধিকাংশ নবীন অভিনেতাদের নিয়ে নাটক নির্মাণ বেশ কষ্টসাধ্য। … বগুড়া জেলার বাঙালি নদীর আশপাশে কিছু গ্রামের মানুষের কাহিনির মাধ্যমে 888sport appsের ইতিহাসের একটা অংশকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ভূখণ্ডে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে থাকা মানুষের যাপিত জীবনের এক ছবি আঁকা হয়েছে এই 888sport alternative linkে। নির্দেশক হিসেবে মঞ্চে উপস্থাপন করতে চেয়েছি সাধারণ মানুষের জীবন যাপন, শ্রেণিবৈষম্য ও দ্বন্দ্ব, অসহায়ত্ব, ক্ষোভ, কাম, ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ, তেভাগা আন্দোলন, দেশভাগের ডামাডোল, গ্রামীণ জনপদের বিশ্বাস কিংবা কুসংস্কার। গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নাম-না-জানা মানুষের না-বলা গল্প। যে-খোয়াবনামা একদিন বেহাত হয়ে গেছে আমাদের হাত থেকে, তারপরও খোয়াবই এগিয়ে নেয় মানুষকে। খোয়াব দেখা মানুষই নমস্য। (সুভ্যেনির)

নীল কামরুলের সংগীত পরিচালনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে কাৎলাহার বিলের তীরবর্তী মানুষের আবেগ। সমস্ত নাটকেই মিউজিক ও হামিং। সংগীতের নিনাদে ঘটনা ও চরিত্রের আবেগ যেন দর্শকহৃদয়ের অতল ছুঁয়ে যায়। নানা গান ব্যবহৃত হয়েছে। ‘গোল করো না তমিজের বাপ ঘুমায়’ গানের ধুয়া হয়ে বারবার বেজেছে। এর কাহিনিতে বিধৃত হয়েছে ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহ-বিষয়ক শ্রুতি, লোককথা, জোতদারি সমাজব্যবস্থা, মুসলিম লীগের রাজনীতি, তেভাগা আন্দোলন, হিন্দু-মুসলমান দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক, দেশভাগ, মানুষের অসহায়ত্ব, কাম-ক্রোধ, আধিপত্য-ক্ষমতা, মানবিক সম্পর্ক। সম্ভবত সে-কারণেই নির্দেশক একক চরিত্র কিংবা ঘটনার বিকাশের বিপরীতে শারীরিক ক্রিয়ানির্ভর দৃশ্য ইমেজ তৈরিতে তৎপর ছিলেন। ঠান্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় মঞ্চে সৃষ্টি হয়েছে আলো-আঁধারির মায়াময় পরিবেশ। আলোয় বাস্তববাদী নাট্যবৃত্তের সময়কালকেই ধরতে চাওয়া হয়েছে। ঔজ্জ্বল্যের বিপরীতে প্রায় নিষ্প্রভ আলোর মায়ায় আবেগ প্রকাশিত। বিলকিস জাহান জবা পোশাকের রং নির্বাচনে জনপদের ধূসর জীবনযাত্রাকে তুলে ধরেছেন। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাজেস্টিক রীতিকেই প্রয়োগ করেছেন। মঞ্চালোয় পোশাক কখনো কখনো তামাটে রূপও ধারণ করেছে। জীবনসংগ্রামের পরিশ্রমে ক্লান্ত-রিক্ত-ঔজ্জ্বল্যহীন বৈচিত্র্য বিধৃত হয়েছে।

নাটকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ নানা প্রপস ব্যবহার করা হয়েছে। কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে ভবানী পাঠকের ঘোড়ায় চড়ার আলেখ্য।

অভিনেতা-অভিনেত্রীরা শারীরিক ভঙ্গিতে কখনো ঘোড়া, কখনো ট্রেন নির্মাণ করেছেন। ভাতে পা দেওয়া সামাজিক নানা সংস্কার ও বিশ্বাস নাটকের পরতে পরতে। এ-নাটকে কোরিওগ্রাফি দৃশ্য নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিলের মাঝে মাছের চলন যখন কোরিওগ্রাফিতে ফুটে ওঠে তখন 888sport live chatবোধের নতুন মাত্রা উদ্ভাসিত হয়। নানা অঙ্গভঙ্গি, নানা প্রপস, নানা দৃশ্যালংকার নাটকটিকে মুখর করে তুলেছে। যখন খুন হয় তখন দেবী দুর্গার কাছে সমর্পণের দৃশ্যটি হৃদয়ের মর্মমূলে প্রবেশ করে। হারিকেন প্রতীক, রাতের অন্ধকারে টর্চ জ¦ালানোর দৃশ্য নানা বৈচিত্র্য বিধৃত করে।

৫৯টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত 888sport alternative linkকে নাট্যকার নিয়ে এসেছেন ১৭টি দৃশ্যে। নাটকের ভাষা আঞ্চলিক। 888sport alternative linkের মতোই নাট্যদৃশ্যে অলংকার, উপমা, চিত্রকল্প কিংবা নৈর্ব্যক্তিকতা তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলেন নির্দেশক। উপনিবেশের বাস্তবতায় নিঃস্ব মানুষের জীবনসংগ্রাম মানবিক তুলির আঁচড়ে বিধৃত এ-নাটকে। নিম্নশ্রেণির মানুষ যে চিরকালীনই শোষণ, বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার তা এ-গল্পের প্রতিটি চরিত্রের পরতে পরতে। চরিত্রের আবেগ ও পরিস্থিতি সৃষ্টিতে কোরিওগ্রাফি ব্যবহার দর্শকের ভাবাবেগে আঘাত হানে। অধিকাংশ চরিত্রের বাস্তববাদী অভিনয় যেন কাৎলাহারের জলকেই ছুঁয়ে দিয়েছে। জীবনদৃশ্যের করুণতার শৈল্পিক রূপ মানবতাবোধে উদ্দীপিত করে। নাটকে যেমন ফকির-সন্ন্যাস বিদ্রোহ থেকে শুরু করে জমিদারি সামন্তবাদ, তেভাগা আন্দোলন, দেশবিভাজন, পাকিস্তানি আধিপত্য আছে, তেমনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির রূপরেখায় মহত্ত্বের রূপরেখাই দৃশ্যমান হয়েছে। উপনিবেশ শাসনে সৃষ্ট পুঁজিবাদী শক্তি কীভাবে মানবজীবনকে ধ্বংস করে তার প্রতীকীরূপ এখানে সুস্পষ্ট। নাটকে প্রতিটি ঘটনা দেখানোর মধ্যেও একধরনের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ লক্ষণীয়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙালির জীবন ও মানসসত্তা এখানে একাকার।