শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা 888sport live footballে জ্ঞানত বা অজ্ঞানত অনেকেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের উপস্থাপনা করেছেন। লাতিন আমেরিকার যে-888sport live footballধারা ম্যাজিক রিয়েলিজম নামে পরিচিত, যা আমাদের সবসময় এক প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় বা আমাদের সর্বদা বিভ্রান্ত করে, সেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের কিন্তু কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা গড়ে উঠতে পারেনি। পৃথিবীর বিভিন্ন 888sport live footballিকের 888sport live football থেকে বা গবেষণাবিদের গবেষণা থেকে যে-ধারণায় আমরা উপনীত হতে পারি তা চূড়ান্ত অস্বচ্ছ কিন্তু অনুভবযোগ্য।
প্রথমেই দেখা যাক ম্যাজিক রিয়েলিজমের concept-টা কী? ম্যাজিক রিয়েলিজম কথাটি প্রথম ব্যবহৃত হয় আলেহো কারপেনতিয়েরের লেখায় (লো রেয়াল মারাভিঝসো)। কারপেনতিয়ের এবং মিগেল আসচুরিয়াস চলিস্নশের দশকে 888sport alternative linkের প্রচলিত ফর্ম ভেঙে এক নতুন experiment/ expression-এর প্রক্রিয়া আরম্ভ করেন। এই প্রক্রিয়ায় পস্নট হয়ে যায় গৌণ – সত্যিই কি জীবন, সমাজ বা রাজনীতিতে কোনো সহজবোধ্য পস্নট থাকতে পারে? জীবন কি আমাদের সর্বদা সরলরেখায় চলে? সব সমস্যার সমাধান কি জীবনে সবসময় হয়? আর যদি তা না হয় তাহলে সত্যিকারের 888sport live footballেই বা তা কী করে হবে – কারণ 888sport live football যে জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। লেখার এই নতুন ধারায় সমস্যা, তার কিছু সমাধান, জটিল সম্পর্কসূত্র – এসব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এখানে সময়ের গতিপথ সতত পরিবর্তনশীল। পরবর্তীকালে এর অসামান্য প্রয়োগ আমরা দেখি হুলিও কোর্তাজারের হপ্সকচ বা মার্কেজের একশ বছরের নিঃসঙ্গতা বা একটি পূর্বঘোষিত মৃত্যুর কালপঞ্জিতে। ম্যাজিক রিয়েলিজমের উৎসের সম্বন্ধে যে দ্বিধা বা বিতর্ক আছে তা মূলত কিন্তু সুররিয়ালিজমের সমসাময়িক হওয়ার জন্য। আলেহো কারপেনতিয়েরের ওপরও রোহ বা 888sport app সুররিয়ালিস্টের প্রভাব লক্ষ করা যায়। আমারিল চানাডির ভাষায়, ‘while magic realism is based on an ordeal, even if irrational perspective, surrealism brings about artificial combination’.
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত বই বাস্তবের কুহক আর কুহকের বাস্তব-এ ম্যাজিক রিয়েলিজমের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বলেন, ‘(888sport alternative linkের) গড়ন যতই আঁটসাঁট আর সংযত হোক না কেন, এখানে কোনো একটি মাত্র আখ্যান সরলরেখা ধরে এগোয়নি। সেই অর্থে নেই তার সূচনা, মধ্যবর্তী সংঘাত ও জটিল গোলকধাঁধা, এবং তারপরে সব ধাঁধা, হেঁয়ালি ও সংঘর্ষের নিরসন – অর্থাৎ কোনো একটি মাত্র পস্নট তাতে নেই।’ ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো – সবকিছুই অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে মিশে গেছে। কোনটা বাস্তব আর কোনটা পরাবাস্তব বিচার করা অসম্ভব। কারণ অবশ্যই বেশিরভাগ লেখকের গল্পের মূলসূত্র কিন্তু ছোটবেলায় শোনা গল্পের 888sport sign up bonus। এই জাদুবাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়েলিজমের বাস্তবতা আমাদের থেকে ভিন্ন মানুষের বিশ্বে রচিত একটি আরোপিত চিমত্মার পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, এর প্রচেষ্টা আমাদেরই বিশ্বকে কখনো আমাদের ছোটবেলার চোখ দিয়ে দেখানো, কখনো বা অন্যের চোখ দিয়ে দেখানো। গভীর পাঠ করতে গেলে কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আমরা লক্ষ করি ম্যাজিক রিয়েলিজমের।
১. অতি অদ্ভুত একটি ম্যাজিক বা বেশ কিছু ম্যাজিকের সমষ্টি – এই মূল বৈশিষ্ট্য গোটা গল্পটিকে ধরে রাখে – গল্পের শিরদাঁড়া বলা চলে।
২. এরই পাশাপাশি চলবে এক বাস্তব – অধিকাংশ সময়েই এই বাস্তব হবে তীব্র এবং অস্বসিত্মকর। কখনো কখনো এই বাস্তবের আপেক্ষক্ষক তীব্রতা মুখ্য হয়ে ওঠে এবং এখানেই পার্থক্য হয়ে যায় অলীক পরাবাস্তবের (ম্যাজিক রিয়েলিজম) সঙ্গে সুররিয়ালিজম বা সাধারণ কল্পকাহিনির।
৩. এই দুই বাস্তবের টানাপড়েনে পাঠক বিহবল হন; কিন্তু তাঁরা বুঝতে বা আরো সহজ করে বললে অনুভব করতে পারেন এই বাস্তব আর পরাবাস্তবের নৈকট্য অথবা সময়বিশেষে এমনকি একই বিন্দুতে মিলন।
এছাড়া অন্য যে-কটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে তার মধ্যে প্রধান হলো প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা – তা micro বা macrocosm – যে-কোনো স্তরেই হতে পারে। সমস্ত সার্থক ম্যাজিক রিয়েলিজমের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু রাজনীতি – প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এবং শোষণ। এছাড়াও থেকে যায় কোনো বাঁধাধরা সময়ের কাঠামোতে গল্পের স্রোত ধরে না-রাখা।
ম্যাজিক রিয়েলিজমের যে-ধারা আমরা সচরাচর দেখতে পাই, অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শাখানদীতে না গিয়ে মূলধারার ম্যাজিক রিয়েলিজমে, সময়ের এক ব্রাউনিয়ান মোশন প্রায় বেশিরভাগ সার্থক বইয়ে অত্যন্ত সাধারণভাবে বর্তমান। সুতরাং এই বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করে কোনো আলোচনা হতে পারে না। তা হুয়ান রুলফোর পেদ্রো পারামো হতে পারে, হুলিও কোর্তাজারের হপ্সকচ হতে পারে অথবা মার্কেজের ক্রনিকল অব অ্যা ডেথ ফোরটোল্ড হতে পারে। পেদ্রো পারামো একটি মাইলফলক। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের অনুপ্রেরণা এই বই। হুয়ান প্রেসিদো তাঁর মাকে কথা দেন যে, একদিন তিনি শহরে ফিরে আসবেন – তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু যখন তিনি ফিরে আসেন সত্যিই ততদিনে সে-শহর ভূতের শহর হয়ে গেছে। গল্প এখানে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে অতীত থেকে আরো অতীতে, সেখান থেকে বর্তমান হয়ে সুদূর ভবিষ্যতে। ক্রনিকল অব অ্যা ডেথ ফোরটোল্ড নভেলাটি লেখা হচ্ছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক বছর পরে। ঘটনাটি সামান্য। একটি মেয়েকে তার স্বামী ফিরিয়ে দেয় বিয়ের রাতে, কারণ সে কুমারী নয়। মায়ের প্রচ- মারে মেয়েটি যার নাম বলে, তাকে খুন করার জন্য মেয়েটির দুই দাদা দুটি ধারালো ছোরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রাসত্মায় সবাইকে বলেও তারা যে, খুন করতেই বেরিয়েছে এবং খুনটি তারা সম্পন্নও করে। গোটা গল্পটি অনেক বছর পরে অতীতে ফিরে গিয়ে যেন ভবিষ্যতে বলা হয়েছে। ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্প যেন সময়ের এক দিগ্ভ্রান্ত ছোটাছুটির অনুসারী। চিলির লেখক হোর্হে এদুয়ার একবার বলেন, ‘আমাদের এই দেশগুলিতে লোকের 888sport sign up bonusশক্তি অত্যন্ত সাধারণ মানের। আমরা বিশেষ মনেও রাখতে পারি না আর চটপট ভুলে যেতে পারি না।’ ঠিক একইভাবে শুভরঞ্জন দাশগুপ্তকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মহাশ্বেতা দেবী আখতারুজ্জামানের 888sport live footballে 888sport sign up bonusনির্ভরতা সম্বন্ধে বলেন, ‘888sport sign up bonus অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় অতীতের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্বাসযোগ্য দলিল থাকা অত্যন্ত জরুরি।’ সুতরাং গল্পের এই অতীত থেকে বর্তমান এবং বর্তমান থেকে সুদূর অতীতে বারবার বিচরণ কি শুধু লাতিন আমেরিকার 888sport live footballের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? এ কি আমাদের মহাদেশেও একই রকমভাবে প্রযোজ্য নয়? তবে কি সমগ্র তৃতীয় বিশ্বের স্বাভাবিক শৈলী এই ম্যাজিক রিয়েলিজম? একশ বছরের নিঃসঙ্গতার (হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচুড) কথা বিবেচনা করুন। প্রথম পরিচ্ছেদেই সময় হয়ে উঠেছে গৌণ। এভাবে যে 888sport alternative link আরম্ভ করা যায় তা ইউরোপে বহুল প্রচারিত ছিল না। ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মনে পড়ছে ছোটবেলার কথা, যেখানে তিনি ছোটবেলায় জিপসিদের দেখতে গেছেন। সময়ের আর 888sport sign up bonusর এই দ্বৈরথ এক মাইলফলক হয়ে উঠল প্রারম্ভিক অধ্যায়ের জন্য। আবার খোয়াবনামার প্রথম পরিচ্ছেদেই চমক দিয়েছেন আখতারুজ্জামান। তমিজের বাপের মেঘ-তাড়ানো থেকে লেখক চলে যান সুদূর অতীতে – এতই সুদূর সে-অতীত যে, তখন তমিজের বাপের বা তার বাপেরই জন্ম হয়নি। তখন মারা যান মুনসি বরকতুলস্না শাহ, গোরা সেপাইদের গুলিতে। সেই যে গুলি লেগে তার গলায় ফুটো হয়েছিল, তা আর পূরণ হলো না। সেই থেকেই দিনের বেলা রোদের মধ্যে রোদ হয়ে তিনি ছড়িয়ে থাকেন বিলজুড়ে। পরক্ষণেই লেখক সময়কে নিয়ে যান ভবিষ্যতে – ‘এখন থেকে দুই বছর, সওয়া দুই বছর পর, না কি আড়াই তিন বছরই হবে। বিলের পানি মুছতে জেগে ওঠা ডাঙার এক কোণে চোরাবালিতে ডুবে মরলে তমিজের বাপটা উঠবে
কোথায়?’ সময়ের এই গতিময়তায় ছুটে চলে গল্প পার্বত্য স্রোতস্বিনীর মতো। সেই যে মুনসি বরকতুলস্না পড়ল গুলি খেয়ে, সে সেই বিলের ওপরই বসে থাকে। গোটা চত্বরটিই তার কব্জায়। শরাফত ম-লের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তমিজের বাপ নেহাতই নির্বুদ্ধিতায় সেই ‘সিথান’ দিয়ে যাওয়া-আসা করলে তার বউ একটা মরা মেয়ে প্রসব করে। সেই থেকে তমিজের বাপ মুনসিকে একটু দেখার লোভে রাতে ঘুম থেকে উঠে বিলের ধারে এসে উপস্থিত হয়। ঠিক যেভাবে লাতিন আমেরিকায় ম্যাজিক রিয়েলিজমের সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে ছোটবেলায় ঠাকুমা-দিদিমার কাছে গল্প শুনে, যেভাবে গল্প শুনে টেলিভিশন পূর্ববর্তী শিশুরা ঘুমাতে যেত আমাদের এই বাংলায়, ঠিক সেভাবে সেই ফর্ম অখ- রেখে আখতারুজ্জামান আমাদের নিয়ে গেছেন এই জাদুর দুনিয়ায়। সময়কে নিজের ইচ্ছামতো বিচরণ করতে দিয়েছেন – ‘যে সময় আমার কাছে কোনো নিশ্চিত বৈশিষ্ট্যে ধরা দেয় না, আমিই বা সেখানে বিশিষ্ট হব কোন শক্তিতে? আমার সময়ের দেওয়ালের ভেতর আমিই শুধু হাঁসফাঁস করি।’
গোটা বইয়েই বিচরণ করেছে মিথ, বিচরণ করেছে নানা লোককথা আর রয়েছে জ্যোৎস্না। প্রকৃতপক্ষে চাঁদ আর জ্যোৎস্না এই গল্পের লেটমোটিফ – এতোবার ফিরে ফিরে এসেছে ম্যাজিকের মতো যে, সমগ্র 888sport alternative linkে এক অতিপ্রাকৃত, সুররিয়ালিস্ট কিংবা ম্যাজিক রিয়েলিজমের ব্যবহার গল্পের কাঠামোকে যেন এক সুদৃঢ় কশেরুকা প্রদান করেছে। স্বপ্নের এই জগতে সবই বাস্তব মনে হয়। স্বপ্ন আর বাস্তব দুই পরস্পরবিরোধী না হয়ে পরস্পরনির্ভর এবং পরস্পর intermingled। কয়েকটা উদাহরণেই ধরা পড়ে এই চাঁদের বর্ণনা, এই জ্যোৎস্নার সর্বব্যাপী প্রশান্ত বিসত্মার। ‘বাইরে চাঁদের আলোয় উঠানে বসে হুঁকা টানছিল তমিজ। তামাকের ধোঁয়ায় নেশায় মাতাল জ্যোৎস্নার অনেকটাই খোলা দরজা পেয়ে ঘোরের ভেতরে ঢুকে কালচে লাল আলোতে হলুদ রং মিশিয়ে দেওয়ায় কুলসুমের মাথাটা হয়তো একটু ঘুরেই গেছিল।’ বা অন্যত্র পাই, ‘এখন তমিজের সামনে এই অন্ধকারে কুপির আলো থেকে হলদে জ্যোৎস্না ঝরতে শুরু করে। সেই জ্যোৎস্নায় ডুবুডুবু ধানক্ষেতের পাশে সরু আল, সরু আলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা জমাটবাঁধা জ্যোৎস্নাকে ছুঁতে গেলে সে সরে যায় মেঘের দিঘির ওদিকে, তমিজ তাকে ধরতে সেদিকে যেতেই সেই জমানো জ্যোৎস্না উড়াল দেয় মসের দিঘির ওপর, দিঘির গোলাপি পানির আভায় তার কালো মুখের ছায়া।’
‘মরিচ ক্ষেতে ঢুকে জ্যোৎস্না হয়ে গেছে হলদেটে সবুজ।’ তমিজের বাপ মরে যাওয়ার পর তার যুবতী বউ ভাবে, ‘সাত মাস্যার পোয়াতির মতো ভরা ভরা চাঁদটা যদি দশদিন আগে এমনি থাকে তো মানুষটা কি বিলের ধারে দলদলায় অমনি করে গড়িয়ে পড়ে?’ ফুলজান যখন ভাত চাওয়ার জন্য তার মেয়ের পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়, তার মেয়ে যেন নালিশ করে তমিজের মরে যাওয়া বাপের কাছে, ‘দেখো মা মারে।’ তখন দিগন্তরেখায় আসমান থেকে চাঁদ ঝোলে, চাঁদের বর্ণ হয়ে গেছে কালচে লাল, চাঁদের সর্বাঙ্গে কালচে লাল দাগ। ভয় হয় তার, তেভাগা-আন্দোলনে পুলিশের গুলি খেয়ে তমিজ চাঁদের ওপর চড়ে বসেনি তো! সেখানে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে সখিনা বলে, ‘মা হেঁসেলেতে ভাত চড়াচ্ছে।’ ফুলজান স্পষ্ট দেখে চাঁদের ওপর জোনাকির জ্বালে জ্বালে সেদ্ধ হচ্ছে আউশের রাঙা চাল। তবে কি চোরাবালিতে ডুবে মরা তার শ্বশুর ভাত রান্না করছে? সেখানে কৃষ্ণপক্ষের সেই রাতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তার মেয়ের মাথায় বিজবিজ করে তমিজের বাপ ঢুকিয়ে দিচ্ছে মুনসির কাছে পাওয়া শোলক।
চাঁদের আর জ্যোৎস্নার বর্ণনা দিতে গিয়ে আখতারুজ্জামান ঠিক যেন ম্যাজিকের মতোই রচনা করেছেন 888sport app download apk। প্রতিটি শব্দ পাঠককে মুগ্ধ করে, নিয়ে যায় যেন অন্য কোনো পৃথিবীতে। এর সঙ্গে রয়েছে স্বপ্ন। আখতারুজ্জামান গবেষক পথিক ঘোষের ভাষায় – ‘His use of the khoyab (dreams) trope to depict myths is meant to accomplish exactly that. He shows ‘Tameejer Baap’, a key character in the novel, encounters these fables in his dreams, thereby transforming those fictions into a reality of their own.’ গল্পের মিথকে এক স্বতন্ত্র বাস্তব করে বর্ণনা করা, এই তো ম্যাজিক রিয়েলিজমের একটা প্রধান সত্তা।
এই ম্যাজিকের পাশাপাশি রয়েছে ব্যঞ্জনাহীন বাস্তব। ১৯৪৩ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে গোটিয়া গ্রামে যখন আখতারুজ্জামানের জন্ম হয় তাঁর বাবা তখন দুর্ভিক্ষের রিলিফ বিতরণের কাজ করছিলেন। ডায়েরির পাতায় পেনসিলে অত্যন্ত নিরুচ্ছ্বাস এক লাইন লেখা ‘A male child is born at 11 pm’, বাবার কাছ থেকে এই সংসারে বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গিই উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন আখতারুজ্জামান। বাস্তবের রুক্ষতার সঙ্গে কোনো আপস করেননি তিনি। সমাজের অবক্ষয়, শূন্যগর্ভতা এবং ভীষণ রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়েও অনায়াসে মানবিকতার পরিত্যাগ তাঁর লেখায় উঠে এসেছে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে। যেন কিছুই হয়নি, এরকমটা না হলেই আশ্চর্য – ঠিক যেমনটি দেখতে পাই মার্কেজ, কোর্তাজার বা কারপেন্তিয়ারের লেখায়।
আখতারুজ্জামান নিজেই অন্যত্র বলেছেন, ‘ব্যাপার হচ্ছে আমি নির্দিষ্ট কোনো philosophy মাথায় রেখে reality দেখি না। reality-কে আমি ভেতর থেকে দেখতে চাই। কিন্তু আমি তো journalist না, reality মানে যা দেখতে পাচ্ছি কেবল তাই নয়। এর ভেতরকার স্বপ্ন, সাধ, সংকল্প, সংস্কার, কুসংস্কার সবই reality-র ভেতরকার reality। আমি মনে করি, মানুষের বাঁচা basically positive। মানুষ যে হাজার কষ্টের পরে বেঁচে আছে এটাই positive। তাকে আলাদাভাবে positive করে তোলার চেষ্টা করে লাভ নেই।’ সেই জন্যই সেন্টিমেন্টকে প্রশ্রয় দিয়ে জনপ্রিয় লেখক হওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। খোয়াবনামা এক ইতিহাস – যেখানে ধরা পড়েছে তেভাগা-আন্দোলন, 888sport appsের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, ঠিক সেরকমই ধরা পড়েছিল কলাচাষিদের কষ্ট, শোষণ আর বিদ্রোহের গল্প লাতিন আমেরিকার পরিপ্রেক্ষেতে। বই শেষ করার পরও পাঠক ধন্দে – নায়কই বা কে আর প্রতিনায়কই বা কে। এখানেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের সার্থকতা। জীবনে সব ঘটনার ব্যবচ্ছেদে নায়ক এবং প্রতিনায়ক পাওয়া যায় কি? কখনো কি কোনো সুস্পষ্ট বিভাজক টানা যায়? বরং বেশিরভাগ সময়ে আমরা পাই এক অস্বচ্ছ ক্যানভাস, যেখানে সব রং মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। বইটি কি ইতিহাস, না রাজনীতির? নাকি সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি? আগেই বলেছি যে, সাধারণভাবে ম্যাজিক রিয়েলিজমের ধারায় চোরাস্রোত থাকে রাজনীতির, থাকে শোষণের আর থাকে সামাজিক বৈষম্য। সেই মুনসিকে দেখার আশায় পথ হেঁটে চলে তমিজের বাপ। এই ফ্যান্টাসি চরিত্রের সন্ধানে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে তমিজের বাপ পড়ে যায় চোরাবালিতে – তলিয়ে যায় সে। মরার আগে সে দেখতে পায় মুনসিকে। আর দেখতে পায় পুড়ে-যাওয়া পাকুড়গাছ। চোরাবালিতে সেঁধিয়ে যায় নামহীন, পরিচয়হীন কত তমিজের বাপ দুবেলা পেটভরে ভাত খাবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে। এখানে লক্ষণীয় যে, তমিজের বাপের কোনো আইডেন্টিটি নেই, সে স্বপ্ন আহরণ করতে ব্যস্ত – ভালো করে ভাত খাবার স্বপ্ন। বাংলার দরিদ্র কপর্দকশূন্য কৃষকশ্রেণি ফসল ফলিয়েও মারা যায় দুমুঠো ভাতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে। কিন্তু তার উত্তরাধিকারী সখিনার আইডেন্টিটি আছে। এই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের যাবতীয় জ্ঞান, সংস্কার ও সর্বোপরি এক নতুন পৃথিবীর হসত্মান্তর; ঠিক এই ছবি আমরা পাই একশ বছরের নিঃসঙ্গতায়, যেখানে এক জিপসির সংস্কৃত ভাষায় লেখা বই পায় এবং অর্থ উদ্ধারে সমর্থ হয় দক্ষিণ আমেরিকার এক প্রত্যন্ত প্রদেশের চতুর্থ অরেলিয়ানো। স্বাধীনতা-উত্তর তৃতীয় বিশ্বের কৃষিজীবী গ্রামবাসীর যেমন ছিল না কোনো আইডেন্টিটি। আখতারুজ্জামান নিজেই বলছেন, ‘প্রত্যেক গ্রামগুলোতে একটা না একটা মিথ আছে, ভূত কিংবা জিন থাকে। সেটা আমি বিশ্বাস করি কি না করি তাতে কিছু যায়-আসে না। আমি তো ইতিহাস লিখতে বসিনি। যদি এটা বেশি বাস্তব হয়ে থাকে, এটা জীবনেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের জীবন তো স্বপ্নের মধ্য দিয়েই কাটছে।’ (প্রতিবেশী 888sport live football, জুন ১৯৯৬)। যদিও সুরাইয়া ইলিয়াস পরবর্তীকালে বলেন, ‘কত পড়াশোনা লেগেছে খোয়াবনামা লিখতে। দেশভাগের ইতিহাস, তেভাগার ইতিহাস, ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ইতিহাস, ধানচাষের কথা, সবচেয়ে বড়ো কথা 888sport appsের জন্য তাঁর আদর্শগত এবং emotional engagement’ পরবর্তীকালে মহাশ্বেতা দেবীর মুখেও একই কথা শুনতে পাই। প্রবীণ 888sport live footballিক আক্ষেপ করেছিলেন যে, এই ইতিহাসের কোনো মৌখিক দসত্মাবেজ রইল না। (888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ)… এতবড় বিশাল অভিজ্ঞতা – এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারত মহাকাব্যসদৃশ 888sport alternative link। এলো দুটি – চিলেকোঠার সেপাই আর খোয়াবনামা। এই 888sport alternative link দুটির একটিও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নয়, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ না হলে এই 888sport alternative link দুটি যতদূর সম্ভব লেখা হতো না।… যে গ্রামবাংলা রক্তাক্ত হয়ে গেল, কবরভূমি হয়ে গেল, কতজন প্রাণ দিলো, কতজন নিঃস্ব হয়ে গেল – তারা কী বলল সেই ওরাল ট্র্যাডিশন ধরে রাখা হলো না, তাদের কাছে যাওয়া হলো না কেন? রাজনীতি, মানুষে মানুষে বিভেদ – জাতি, ধর্ম এবং সামাজিক শ্রেণির ভিত্তিতে, আখতারুজ্জামান এর কোনোটিকে লুকোননি, লুকোলে তা বইটির প্রতি অবিচার করা হতো, অবিচার করা হতো ইতিহাসের প্রতি। সময়ে সময়ে মনে পড়িয়ে দেন তিনি সাদাত হাসান মান্টোকে। এই ক্ষমতার লড়াই যেখানে কতিপয় হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমতা হসত্মান্তরিত হচ্ছে কতিপয় মুসলমান পরিবারের হাতে। এখানে চাষা, মাঝি অমত্ম্যজ শ্রেণির লোকেদের জীবন পালটায় না, তাদের দারিদ্র্য থেকে যায় অপরিবর্তিত। যে-স্বপ্ন তাদের দেখানো হয়েছিল, সেই খোয়াব অধরাই থেকে যায় দেশভাগের পর। বৈকুণ্ঠ খুন হয়ে যাওয়ার সময় গলায় ছুরির আঘাত নিয়েও স্পষ্ট দেখতে পায় কুলসুমের মুখ। তমিজের বাপের মেয়ের বয়সী বউয়ের মেঘলা ছায়া পড়া মুখে, ঠোঁটে গুনগুন গান থামিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘হামার আম খাবার পারো আর এটি পানি খালে জাত যায় কিসক?’ কী উত্তর দেবে সে? কী উত্তর দেবো আমরা? মানবিকতার, সভ্যতার অহংকারের ওপর এ এক নির্মম কশাঘাত। বৈকুণ্ঠের খোয়াব দেখার মুরোদ কুলসুমের জানা আছে। বৈকুণ্ঠ তার বাড়িতে আম, মুড়ি এমনকি গুড় অবধি খেয়েছে, কিন্তু জল খায়নি কোনোদিন। ‘জাতের ব্যারাম থাকলে খোয়াব আর কদ্দূর হবে?’
ম্যাজিক রিয়েলিজম বলতে গিয়ে আমরা বারবার ফিরে আসি মার্কেজের আলোচনায় এবং খোয়াবনামার তুলনা করি মার্কেজের লেখার সঙ্গে, কারণ মার্কেজই এই ঘরানার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক, অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবশ্যই। রোজমেরি গোরিং লিখছেন ‘…the practice of rendering possible events as if they were common place, spinning from one fantastic hyperbolic happening along a torment of narrative’। অসাধারণ ম্যাজিক্যাল এসব ঘটনা ঘটা যেন অসম্ভব কিছুই নয়, আবার অপার্থিব অধিবৃত্তীয় ঘটনাবলি যেন মূল আখ্যানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকৃতি হয়ে গেছে। ইতিহাস আর ম্যাজিক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এখানে আমাদের চিমত্মা করতে হবে সমগ্র তৃতীয় বিশ্বের 888sport live footballে এই ধারার প্রয়োগে এমন আশ্চর্য সমাপতনের কারণ কী? কীভাবে পেদ্রো পারামোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় একশ বছরের নিঃসঙ্গতার অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়া বা তমিজের বাপ অথবা অবনঠাকুরের বুড়ো আংলা বা রাজকাহিনি? কীভাবে
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রামেত্মর দাদু-দিদিমা, ঠাকুরমা-ঠাকুরদারা একই ধরনের গল্প শোনাতে পারেন নাতি-নাতনিদের – তাদের বাস্তব পৃথিবীতে এক কল্পনার জগৎ তৈরি করতে পারেন, যেখানে তখন বাস্তব আর পরাবাস্তবে কোনো পার্থক্য থাকে না? তমিজের মেয়ে সখিনা পায় পুঁথির সন্ধান। এই সেই পুঁথি, যা একশ বছরের নিঃসঙ্গতায় জিপসি জাদুকর মেলকুইদ সঁপে দিয়েছিল চতুর্থ অরেলিয়ানোর হাতে। এই সেই পুঁথি, যা কেরামত আলি উলটেপালটে দেখেছিল। ‘বইয়ের পাতা ওলটায় আর কেরামত আলি দেখে কোনোখানে কোনো শোলোকই নাই। খাকি রঙের কাগজে বইয়ের মলাট সেলাই করা, সেখানে কার কাঁচা হাতের লেখা খাবনামা, ফালনামা ও তাবির।’
একে ঠিক কোন genre-এর 888sport alternative link বলা উচিত? এ কি ম্যাজিক রিয়েলিজম না এক্সিস্টেন্সিয়ালিজম, না শুধুই রিয়েলিজম? নাকি সবকটা genre-কে ছুঁয়ে গেছে এই 888sport alternative link। লেখকের উদ্দেশ্য পাঠককে শুধু এক রূপকথার গল্পের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়। তার বাস্তব এবং রাজনৈতিক অসিত্মত্ব ও বিশ্বাসের ভিত্তিটি নাড়িয়ে তাকে চরম অস্বসিত্মর মধ্যে ফেলা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই প্ররোচনা পাঠককে 888sport alternative linkশেষে এক মানসিক শান্তির যে ঊর্ণনাভ জালবিন্যাসে বাধাদান করে, সাধারণ পাঠকের 888sport alternative linkশেষে যে প্রত্যাশা ঔপন্যাসিকের কাছে থাকে সমস্ত সমস্যার সমাধানের, তা থেকে দুটি 888sport alternative linkেই বঞ্চিত করেছেন আখতারুজ্জামান। তাঁর সাফল্য 888sport free betয় নয়, পাঠকের গুণমুগ্ধতায়। সমসাময়িক লেখকরা যখন পাঠকের মর্জিমাফিক লিখে সুনাম এবং অর্থ সংগ্রহে ব্যস্ত, তখন স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন তিনি। 888sport free bet নগণ্য, শুধুই 888sport live footballমূল্য, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবির ওপর তৈরি করেন এই শাশ্বত 888sport live football। ঠিক যেমন কাফকা মাত্র তিনটি 888sport alternative link লিখে বা আলব্যের কামু মাত্র চারটি সম্পূর্ণ (এবং একটি অসম্পূর্ণ) 888sport alternative link লিখে, এমনকি ম্যাজিক রিয়েলিজমের সর্বময় শাসনকর্তা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ মাত্র ছটি 888sport alternative link আর ছটি নভেলা লিখে শ্রেষ্ঠত্বে উন্নীত হন, ঠিক তেমনই মাত্র দুটি 888sport alternative link আর গোটা তিরিশেক গল্পের এই শক্ত জমিতে দাঁড়িয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অনায়াসে লাভ করেন 888sport live footballিক অমরত্ব।
তথ্যপঞ্জি
১. বাস্তবের কুহক আর কুহকের বাস্তব, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
২. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংশয়ে ও স্বপ্নে, নির্মল ঘোষ।
৩. Magical realism, the fantastic : Resolved versus unresolved antinomy, Amaryll Chanady.
৪. Marvellous Realism, the way out of negritude, Caribbean studies, Michael J Dash.
৫. Outlook, April 23, 2001, Subhoranjan Dasgupta interviews Mahasweta Devi.
৬। Akhtarujjaman Elias : Beyond the Lived Time of Nationhood : Pothik Ghosh.
৭. One Hundred Years of Solitude, Gabriel Garcia Marquez.
৮. Pedro Paramor, Juan Rulfo. r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.