কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত কায়মনোবাক্যে গল্পকার, – গল্প বিনে তাঁর আর আরাধনা নেই। সেই মানুষটি এখন ৭৫-এর কাছাকাছি চলে এসেছেন, জন্ম তাঁর ১৯৩৯-এ! তিনি গল্পসৃজনে মত্ত হন ষাটের দশকের একবারে গোড়া থেকেই, – দুর্বিনীত কাল (১৯৬৫), বহে না সুবাতাস (১৯৬৫), সীতাংশু, তোর সমস্ত কথা (১৯৬৯) নামের গল্পগ্রন্থ তখনই প্রকাশ করেন। তারপর লেখাজোখা থেকে তিনি দুই দশকের মতো লম্বা একটা বিরতি নেন। নয় দশকের গোড়া থেকে আবারো গল্প লিখতে থাকেন। তাঁর গল্পগ্রন্থ ১১টির মতো। তিনি শুধু গল্পই লিখছেন। মনিরা কায়েস ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠিত গল্পকার পাওয়াই মুশকিল, যিনি তাঁর জীবন পার করেছেন শুধু গল্প লিখে। তার মানে তিনি আমাদের একজন সার্বিক-গল্পকার।
তিনি যখন গল্প লেখা শুরু করেন, তখন এই জনপদে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটছে। তবে এ-উত্থান ছিল একান্তই রাজনৈতিক, তখন জোয়ার আসছে শ্রমজীবীদের ক্ষমতা দখলের। এ-গল্পকার সেদিকে যাননি। তিনি 888sport live chatের স্বাধীনতা চান, সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধেই তাঁর নির্মোহ প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়। 888sport live chatের জগৎকে ভালোবেসে মুক্ত-স্বাধীন চৈতন্য চান তিনি – 888sport live chatের জন্য 888sport live chatই কামনা করেন। মার্কসবাদ নামের গরিবি আধিপত্যবাদী দর্শন তাঁকে আপ্লুুত করে বলে মনে হয় না! তাই তাঁর সাধনার জায়গাটা বড়ো কোলাহলময়, চৈতন্যমুখর। তিনি সামাজিক দ্বন্দ্ব দেখেন, তবে স্বাধীনভাবে মানুষের বিকাশের সেই দ্বন্দ্বের জায়গাটি মোহনীয় করে রেখেছেন।
তিনি প্রথমতই গল্পে নজর দেন, একটা গল্প সৃজনের দিকেই তাঁর 888sport live footballিক বাসনা সজাগ রাখেন। তিনি তাঁর সৃজিত ভাষাকে প্রথাগত ধারণা থেকে আলাদা করেন, গল্পে যেন কাব্যময়তার জাদু বিস্তার করতে থাকেন তিনি। এ হচ্ছে একধরনের শৈল্পিক সাংবাদিকতা, কথা888sport live chatের কুশলতা। তাঁর বর্ণনায় যেমন আছে নিজস্বতা, তেমনি তাঁর বাক্যের ধরনও আলাদা। অহেতুক কথা খরচ করেন না, ডায়ালগ দেওয়ায় থাকেন হিসাবী। উপমাই যেন গল্প, – পাঠকের কাছে গল্প এভাবে থ্রো করেন তিনি, যেখানে বাণী নয়, পাঠক তাঁর মেজাজে কোনো-না-কোনো মেসেজ সৃজন করতে বাধ্য হন। তিনি তাঁর বাসনার জায়গাটা পরিষ্কার করে বলতে চান। তবে তিনি তা একেবারে ষোলো আনা খোলাসা করেন না। 888sport live chatের ঘোর তিনি তৈরি করতে জানেন। তাঁর গল্পে পাঠস্বাদুতা পরখ করতে যাওয়া ঠিক নয়। গল্প তিনি জ্ঞানে-ধ্যানে রাখেন, তবে এর ভেতরকার জমজমাট ভাবটি তাঁর আছে বলে মনে করা মুশকিলই।
এবার তাঁর সৃজিত কিছু গল্প নিয়ে কথা বলব। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ দুর্বিনীত কালের প্রথম গল্প ‘পরমাত্মীয়’। সে এক গল্প বটে। কতদিকে যে একে নেওয়া যায়। সময়টাও ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ আইয়ুব খান তখন সবেমাত্র ক্ষমতা নিয়েছেন। শাসনে ম্যাজিক দেখানোর ধান্ধা তখন শুরু হয়েছে। মৌলিকতার বারোটা বাজছে। কিন্তু ওপরে ওপরে অনেককিছু দেখানোর প্রয়াস তাদের আছে। এমনই সময়ের গল্প সেসব। গল্পটির নানান তল আছে, – এটিকে স্রেফ সখিতার গল্প বলা যেতে পারে। হতে পারে তা কাব্যগল্প, দেশভাগের গল্প। কিংবা কেউ একে পুরুষ-পুরুষ প্রেমের গল্পও বলতে পারেন। ভাষার অপার রাজত্বের গল্প বললে বেশি কিছু বলা হয় না। সাঈদ আর শ্রীমন্ত পরস্পর কথা বলে। একটা সময়ের গল্প। সৃজনশীলতার গল্প। পরস্পরকে কাছে রাখার গল্প। কিন্তু তারা একসময় যার-যার স্বজাতীয় পাড়ার দিকে চলে যায়। অথবা তারা কখনো যায় না, একের ভেতর অন্যের চলাচল দেখে। বড়োবেলায় বসে ছোটকালকে ছুঁয়ে দেখে। এ এক মানবিক সংকটের গল্প হয়ে রয়। আমরা বারবার, বহুবার তাঁর গল্পে সেসব দেখি। এমনকি ‘ফিরে যাও জ্যোৎস্না’য় তো তা যেন আছেই। একই গল্পের এক্সটেনশন যেন তা। এখানে কিছু চরিত্র হারিয়ে যাওয়া জীবনকে খুঁজে বেড়ায়। তাঁর গল্পে একধরনের স্বাধীনতার মায়াবী আবহ থাকে। যেমন তাঁর গল্প ‘রংরাজ ফেরে না’র নামটিই কত রোদনমুখর। বন্যপ্রাণীকে সিম্বলে নিয়ে স্বাধীনতার অতি চমৎকার বয়ান আছে এখানে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু গল্প লিখেছেন তিনি। ‘দিন ফুরানোর খেলা’, ‘আমৃত্যু আজীবন’, ‘শূন্য গগনবিহারী’, ‘কালপুরুষ’, ‘মুক্তিযোদ্ধারা’ – এসব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা তাঁর গল্প। তিনি যেন অনেকটা দূর থেকে, অনেকটা দ্বিধা নিয়েই মুক্তিযুদ্ধকে দেখছেন। সেখানে কোনো গোলাগুলি, মারামারি, হত্যা, ধর্ষণ নেই। একধরনের রক্তাক্ত সত্যকে তিনি প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর বোধের কাছে নিজেকেই যেন দেখছেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধের বিকল্প সত্য যেন আমরা পাই। নানাভাবে যুদ্ধ আমাদের ভেতর জায়মান হয়, – যেমন, ‘আমৃত্যু আজীবন’ নামের গল্পে যুদ্ধাপরাধী হিংস্র মানুষদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়, আমরা তাদের ভুলি না, তাদের আত্মীয়স্বজন লজ্জায় থাকতে বাধ্য হয়। ‘মুক্তিযোদ্ধারা’ নামের গল্পটি ‘আমৃত্যু আজীবন’ গল্পের বিপরীতধারার গল্প, যে-গল্পে মুক্তিযোদ্ধার অহঙ্কার অঙ্কিত হয়। ‘আমার ফুরানোর কাল’ গল্পে এক বালকের আশপাশ দেখার-বোঝার-জানার ভেতর দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধকে 888sport app download for android করি। আবার এমন কিছু গল্প আছে, যা দিয়ে সময় চিহ্নিত হয়। যেমন, ষাটের প্রথমদিকে প্রকাশিত ‘একজন পুরু চাই’ গল্পটির কথাই ধরা যাক, – ষাটের দশকের সেই নিপীড়ন-কালের একটি প্রতিবাদী গল্প এটি। সত্য-প্রকাশের ধরন আলাদা, প্রতিবাদ আলাদা। একটা সময়, বিশ্বাস, আচরণকে তছনছ করার বাসনা আছে এখানে। সমকাল নামের 888sport live footballপত্রিকায় প্রকাশও ছিল সাহসের এক ব্যাপার। ‘গল্পকল্প আর বাঁচামরার’ গল্পে আধুনিকতার নানান অনুষঙ্গ এসেছে। এই নামের গল্পটির কথাই ধরা যাক। সেখানে চিরচেনা জীবন হারিয়ে যাচ্ছে; আধুনিক জীবনের নানান জিনিস, সমাজ আর ব্যক্তিকে তাঁর চেনাজানা জীবন থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। ধূর্ত-বাণিজ্যপুঁজি জীবনকে নানান বাঁকে নিমজ্জনে ব্যস্ত। ‘শবশোভাযাত্রা’ আর ‘স্বপ্ন888sport sign up bonusগাথা’ এমনই 888sport sign up bonus হারানোর গল্প। নানান উপমা তাঁর গল্পে আসে – জ্যোৎস্না, চাঁদ, আকাশ প্রভৃতি বারবার তাঁর গল্পে দেখি। এমনকি তাঁর গল্পের নামও এমনতর কথায় ঠাসা – ‘শূন্য গগনবিহারী’, ‘নামহীন ফিরিবে সে নীল জ্যোৎস্নায়’, ‘চন্দ্রালোকে ছায়াহীন’, ‘ফিরিয়ে দাও জোৎস্না’, ‘প্লাবনভূমি’, ‘গোলাপের নির্বাসন’ ইত্যাদি এমনই সব গল্প। তাঁর গল্পে নামহীনতাও এক মজার জিনিস!
জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পপাঠে সাধারণত এটাই মনে হয় যে, তিনি গল্প দ্বারা প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষত জারিত হন। একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কিংবা আকাঙ্ক্ষার এক বিস্তার ঘটান তিনি। গল্পটি শুরু হয় অনেক কথার ভেতর একটা কথা দিয়ে এবং এর আগপাছ অনেক কথা জড়িত থাকে। সে-কথাই আমরা পাঠক হিসেবে যথার্থ ধরে নিই। আমরা কখনো মজা পাই, ভাবনায় আক্রান্ত হই। গল্পের নানান অনুষঙ্গে, এর ডেসপারেটনেসে আমরা মোহিত হই। এটা তাঁর অনেক গল্পেই আছে। ‘পুনরুদ্ধার’ নামের গল্পে আমরা যেন লেখকের একটা নিজস্ব সত্তা পাই। নিজেকে নির্মাণের কিংবা প্রতিস্থাপনের একটা ক্রোধ তিনি নির্মাণ করেন। বলা যায়, সমন্বিত ক্রোধই এ-গল্পের প্রধান অনুষঙ্গ। গল্পের কথকতা ১৯৬৯-এর দিকের। সময়টি আমাদের রাজনৈতিক জীবনের এক সন্ধিক্ষণের কথা 888sport app download for android করায়। এতে আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের ক্রোধ, একটা উদ্ধার, এমনকি একটা পুনরুদ্ধার লক্ষ করি। এখানেও পরস্পর দুদলের ভেতর হা-ডু-ডু খেলার ভেতর দিয়ে স্বাতন্ত্র্য, ক্রোধ, জ্বালা, আত্মশান্তির এক মহড়া দেখি যেন। একটা গ্রামের নিজস্ব ক্রোধ খুঁজে পাওয়ার সমন্বিত প্রয়াসে যেন আমরা আবারো জেগে ওঠার তাড়না বোধ করি।
গল্পটির শুরু এরকম – ‘শহর এখান থেকে অনেক দূর’। আমরা শুরুর এ-বাক্য দিয়ে একধরনের বাক্যস্থিত ইলিউশনে পড়ি। মনে হবে, শহর আর গ্রামের গল্প-সংক্রান্ত কথকতার আগে ও পরে অনেক কথা আছে। সত্যিই আমরা তাই দেখি। তবে গল্পটির ভাষাকৌশল অনেকটাই সাদামাটা, – অনেকটা অলঙ্কারহীনভাবে, শব্দের স্বতঃস্ফূর্ত আয়োজনে, একেবারে গল্পকাহিনির ছলে গল্পটি এগিয়ে যায়। তবে আমরা শেষতক চমৎকার এক স্বাদময় ক্রোধের মুখোমুখি হই, নিজেকে এক দারুণ অবস্থায় যেন আবিষ্কার করতে পারি। গল্পের পাঠক ভাষার সহজিয়া মাধুর্যে আলাদা এক রূপলাবণ্যের স্বাদ পাবেন, গল্পের সময় নির্ণয় করতে পারেন।
যখন তাঁর ‘ধ্রুব’ নামের গল্পটি পাঠ করব, তখন আমরা ডায়েরি ধরনের একটা আবহের মুখোমুখি হতে থাকি। এমন এক সহজিয়া রূপ পাই, যেখানে আমরা গল্পকারের জীবনের আলাদা স্বাদ-গন্ধ পেতে থাকি। তিনি গল্পের একটা আলাদা জগতের সন্ধান দিয়ে যেতে থাকেন। এখানে আমরা গল্পের আলাদা রূপের চেয়ে গল্পকারের জীবনের উষ্ণতায় স্নিগ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করি। বলা যায়, আলাদা এক গল্পকাঠামোর ভেতর আমরা ডুবে যেতে পারি। গল্পকারকে যেন অসহায় এক কথকের ভূমিকায় দেখতে পাই। আমরা যে ধারণা, তেজ, কিংবা গল্পের নান্দনিকতার মুখোমুখি হই, এখানে তা ব্যাহত হয়। মনে হয়, আমরা এই জ্যোতিপ্রকাশকে যেন প্রায় অচেনা হতে দেখি। চেনা মানুষ কদাচিত অচেনা হওয়ার মনোযন্ত্রণায় ভেঙে যেন-বা গুঁড়োগুঁড়ো হতে থাকে। এমনই জীবনবর্ণনার গল্প ‘বাইরে’। এটি বিদেশে জীবনযাপনের এক ধারাবর্ণনা। আমরা গল্পকারের সঙ্গে মিলেমিশে সেসবই জানি কেবল। এক্ষেত্রে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত সম্পর্কে এমন ধারণা করা যায়, তিনি যখনই নিজস্ব 888sport sign up bonusকথায় মজে যান, তখনই তিনি তাঁর সাধনালব্ধ গল্পভুবন থেকে নিজেকে বিযুক্ত করতে বাধ্য হন। বলা যায়, এটা তাঁর এমন এক আরোপিত প্রক্রিয়া যে, আমরা একজন গল্পকারকে তাঁর চেনা রাস্তা থেকে হারিয়ে যেতে দেখি। আমরা মুগ্ধ হই, বিষণ্ণতায় কাঁপি। তেমনি নিজেকে বারবার খুঁজে দেখার গল্প ‘মন্বন্তর’। এতে মন্বন্তরবিষয়ক মানুষের অভাব, ক্ষয়, পীড়ন, হাহাকার দারুণভাবে উঠে আসে; কিন্তু তা আসলে হয় কি? পরীক্ষিত নামের অতিচেনা চরিত্রটি এখানে এক মানবিক প্রতীক হয়ে আছে। তবে অন্যসব গল্পের মতো এর ভাষাও বেশ কাব্যিক – হৃদয় বারবার মথিত হয়। আমরা ক্রমাগত এক বিষণ্ণণ-রোমাঞ্চ দ্বারা আক্রান্ত হই। আমরা ভারাক্রান্ত অবস্থা থেকে নিজেকে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাই। আমরা গল্পের আরেক জায়গা-জমিন প্রত্যক্ষ করি। ‘রোবট’ও তেমনি এক ব্যক্তিজীবনের 888sport sign up bonusময়তার কথকতা।
‘বিচার চাই’, ‘সম্রাট’, ‘দিন ফুরানোর খেলা’, ‘অমল তরণী’, ‘888sport sign up bonusময়’, ‘প্রতিবিপ্লবী’ একেবারে অন্যধরনের গল্প বলে ধরা উচিত। বলা যায়, গল্পকারের প্রকৃত শক্তি, মেধা, উষ্ণতা যেন এই গল্পসমূহে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ‘বিচার চাই’, সম্রাট এক যুবকের অধিকার প্রতিষ্ঠার গল্প, ক্রোধ বিস্তারের গল্প, যেন নিজের স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রকাশের এক দীপ্র আকাঙ্ক্ষার কথকতা এটি। গল্পটির শুরুতে মনে হবে, আমরা কোনো বৈদিক সাধনা প্রতিষ্ঠার মুখোমুখি হচ্ছি। এর ভাষাও যেন সান্ধ্যভাষার প্রতিরূপ। কোনো এক যুবক এক যুবতীর পাণিপ্রার্থী হয়। কিন্তু সম্রাট বা জনপদ-আশ্রিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তা মানবে কেন? সম্রাট মনে করেন, যুবকের সে-অধিকার নেই। কাজেই তাকে তিনি সাবধানবাণী শোনান। যুবক তাকে সুখে রাখতে পারবে না। কথক ওই যুবকসহ তার মান-মর্যাদা, আত্মীয়-পরিজন, বাগিচা, মাঠ, পালঙ্ক, মাছভর্তি পুকুর দেখে আসতে বলে। যুবক তার প্রাকৃত জীবনের নানান জিনিস কথককে প্রত্যক্ষ করায়, আত্মীয়স্বজন, বাগান দেখায়; কিন্তু সম্রাটের তাতে মন ভরে না। বরং যুবকের জীর্ণ ইটের স্তূপ, এর অট্টালিকা, ফসলহীন মাঠ, মৃত বৃক্ষের বাগিচা, মৃত্যুপথযাত্রী প্রতিবেশীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে। কাজেই কোনোভাবেই তার কাছে কন্যা সম্প্রদান করবেন না বলে মত প্রকাশ করেন সম্রাট। ঠিক এ-জায়গায় জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাঁর গল্পভুবনের সত্য উচ্চারণে প্রবৃত্ত হন। যুবকের মাধ্যমে তিনি তাঁর স্বজাতিবোধ, প্রেম, জীবনের সারবত্তা প্রকাশ করতে চান। যুবক বলে, এই তার সব। ১৯৬৯ সালে লেখা গল্পে আমরা যেন জায়মান বাঙালি জাতীয়তাবোধের এক স্মারক প্রত্যক্ষ করি। আমরা গল্পকারের জেদ দ্বারা জারিত হই, রোমাঞ্চ বোধ করি। গল্পের এ-ই প্রতীকময়তা সর্বজনীন এক প্রেরণা হয়ে রয়। এখানে গল্পকারের মার্জিত ডেসপারেটনেসও প্রকাশ পেয়েছে। গল্পটির ভাষাও চলমান ভাষাকৌশলকে অতিক্রম করতে থাকে। গল্পের নিজস্ব শক্তি সম্পর্কে আমরা ভাবতে পারি। আমরা গল্পলেখার কলাকৌশলের বোধ নির্মাণে প্রবৃত্ত হই। তিনি গল্পের বর্ণনায় আগে-পরে অনেক কথা সাংকেতিকতায় বলেন। ‘আপন পরের সুখ দুঃখ’ নামের গল্পের 888sport promo codeর নানান মানসিক জটিলতা, পর-অপর কথা, হাহাকার, সরল গার্হস্থ্য সুখ-দুঃখ, সহজ বর্ণনা ও যৌনতার অনেক দিক-বিষয় থাকলেও অনেক গোপন বা না-বলা কথায় তা অচেনা গল্প হয়েছে যেন! এখানে জৈবিক তৃষ্ণা সরাসরি প্রকাশ পেয়েছে! মানবিক অনুভূতির এক গল্প ‘নীল রাত্রি’। কথক আর এক 888sport promo codeর পরস্পরের দায়িত্ববোধ এখানে আছে। এখানে পর-প্রেম বা পরকীয়া, বিকল্প প্রেম, মানুষের প্রতি দায়িত্ব, সচেতনতা বোধ, ভালোবাসার এক বোধ প্রকাশ পেয়েছে। গল্পটির সাংকেতিকতা দারুণ সুন্দর। গল্পকারের পরিমিতিবোধও দারুণ লেগেছে।
‘অমল তরণী’র শুরুটা বড়ো মজার – অনেক কথা যেন আগে-পরে আছেই। পুলের ওপর একটা গাড়ি ওঠে আর নিচে নৌকায় আমরা আরেক জীবন দেখি। গল্পের নানাবিধ ভাবনায় ক্রমাগত আলাদা জগৎ নির্মাণের নানাবিধ অনুষঙ্গ আমরা বুঝতে পারি। একটা জাতির ক্ষয়ের চিহ্ন এখানে নির্মিত হয়। আশুতোষরা ভিটেমাটি ছেড়ে যায়, পেছনে রেখে যায় এক রক্তাক্ত বাল্য888sport sign up bonus। এমনই জান্তব কথকতার এক প্রতিচ্ছবি হয় এ-গল্প। কাব্যিক দ্যোতনায় এর অঙ্গ একেবারে ভরপুর। ‘888sport sign up bonusময়’ নামের গল্পটি জীবনের প্রতি, বলা যায়, পুষ্প-আশ্রিত মানবিক জীবনের প্রতি এক চমৎকার আলেখ্য। লেখকের সঙ্গে পুষ্পের যে চমৎকার নান্দনিক সম্পর্ক আছে, তারও যেন স্পর্শ পেতে থাকি আমরা। আমাদের জীবন যেমন 888sport sign up bonusবিযুক্ত কোনো জৈবিক পদার্থ নয়, তেমনি পুষ্পবিহীন কষকষে জীবনযাপনও নয়। কথকের পুষ্পপ্রেম নিয়ে গল্পের শুরু। কিন্তু এখানেও সামাজিক অনাচার, লোভ ও আদর্শের দ্যুতি আমরা লক্ষ করি। এক নান্দনিক প্রতীকময়তার স্নিগ্ধ পরশে আমরা মোহিত হই। এমন বাক্যমাধুর্যও আমরা পাই যে, আশা এবং 888sport sign up bonus – এ-ই আমাদের জীবন। এখানে আশা হচ্ছে, এই চলমান জীবনের কথকতা আর 888sport sign up bonus হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর প্রতি একধরনের রক্তাক্ত টান অনুভব করা যায়। আমরা এক্ষেত্রে জ্যোতিপ্রকাশের ১৯৬৯ সালের প্রতি মোহাচ্ছন্নতা লক্ষ করি। এই লেখকের জীবনে ১৯৬৯ সালই বোধকরি সবচেয়ে ফলবান এক কাল।
‘দিন ফুরানোর খেলা’ শিরোনামের গল্পটির শুরুটা আমরা খানিক পাঠ করি – ‘হা হা রবে ওরা ছুটে আসে। পুকুরের পাড় দিয়ে, খোলা মাঠের বুক বেয়ে, জঙ্গলের ভেতর থেকে। চুন-কালিতে অাঁকা বিকৃত মুখ, হাতে রক্তের লালে মুঠি করা তলোয়ার। ওরা কালান্তক যম, … আমরা এভাবেই এক কাব্যজগতের ভেতর নিমজ্জিত হই। এমন এক হিংস্র জীবন প্রত্যক্ষ করতে থাকি, যেন জাতিগতভাবে আমরা সহসাই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যেতে থাকব। এ-গল্পে তিনি দারুণ হিসাবী, গল্পের এমন এক জগৎ নির্মাণে যেন আমরা পুনঃপুনঃ আকাঙ্ক্ষী হই। শব্দের, যতিচিহ্নের, এমনকি শব্দের মাঝখানে বিরাজমান নীরবতার পরশে আমরা ভাবিত হই। জাতিগতভাবে আমরা যে অর্জনের প্রয়াসী হতে পেরেছিলাম এর ফলেই আমরা যেন এখানে ক্ষণে ক্ষণে ভগ্নস্রোতে ডুবে যেতে দেখি। যেন সবই কোনো এক চোরাবালিতে ক্ষয়ে যাচ্ছে। দস্যু-তস্করেরা যেন সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।’ গল্পটির শেষে এক জান্তব অন্ধকার নামে, কথকরূপী সে সেই অন্ধকারে চুপ করে বসে থাকে। গল্পকার এভাবেই আমাদের এক চলমান অন্ধকারের অংশ করে দেন। আমরা ভয়ে দীর্ঘকাল যেন জড়োসড়ো হয়ে থাকি। আমরা কোনো উদ্ধার দেখি না। এ এক নিষ্ঠুর সত্যের মুখোমুখি ছাড়া কিছুই নয়। তবে এ-গল্পপাঠে কোনো কোনো পাঠকের হুয়ান রুলফোর কথা888sport live footballের নির্মাণকৌশল মনে পড়তে পারে। ‘প্রতিবিপ্লবী’ নামের গল্পটি একটা প্রতিষ্ঠানটাকে ঘিরে মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিস্তৃতির সমাহার। আমি কথকরূপী দেশের জটিল অবস্থার জন্য একজন চাকরিপ্রার্থী নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবেশেষে ভাইভা-বোর্ডের সামনে হাজিরা দেয়। কিন্তু দেশে তখন ‘কর্মসূচি’ চলছে। আশির দশকের ‘কর্মসূচি’ মানেই হচ্ছে হরতাল। কিন্তু সামরিক প্রশাসক হরতাল শব্দটিও উচ্চারণে বাধা প্রদান করেন। এমনই এক সময়ের আবহ বেশ প্রতীকীভাবে তিনি নির্মাণ করেছেন।
এবার আমার অত্যন্ত প্রিয় এক গল্প কেষ্টযাত্রা নিয়ে কিছু কথা বলব; এবং তা করতে গিয়ে অবশেষে আমায় এমন সিদ্ধান্তেই স্থির থাকতে হলো যে, কেষ্টযাত্রা যতবারই পড়ব, ততবারই এর ভেতরকার নান্দনিকতা নতুন করে আমায় জারিত করবে! এ-গল্পটি তাঁর প্রথম দিককার গ্রন্থেই পড়েছি মনে হয়। এটি তাঁর প্রথম বা দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থে পড়েছিলাম! ঠিক মনে করতে পারছি না। প্রথমেই গল্পটির শিরোনাম আমায় চমকে দেয়, মনে হয়, এ এমন এক জীবনযুদ্ধ যা ক্রমাগত একটা বিশাল ক্যানভাসের সামনে আমায় দাঁড় করিয়ে দেয়। একজন কেষ্টবাবু একটা যাত্রা শুরু করেন, মনে হতে পারে এ যাত্রা888sport live chatের যাত্রা! আসলে তা নয়। একে একটা গমন বলা যায়, একদিনের গমন, বিকেলের দিকে গাঁয়ে অতি সাধারণ একটা জামা গায়ে মেজছেলে সুখেনসহ তিনি বাজারে যান। নাম তার মহিমাগঞ্জ – গ্রাম-গ্রাম গন্ধে ঠাসা এক বাজার। তার কাজ কী ছিল তা নির্ণয় করতে গেলে হয়তো তা জানা যায় বা যায় না। তিনি ছেলেকে মনে হয় জীবন দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন! সে-জীবন খরিদদার, পাওনাদার, হতাশাদার কর্তৃক ভরপুর, নাকি তা নুয়ে-আসা ব্যর্থতার জীবন, তা-ই দেখানোর খায়েশ। তিনি যে আসলে কী কী দেখাতে চেয়েছিলেন তা আমরা শেষতক পাই না, তিনি নফরত্ব লালন করতেই বাধ্য হন। হয়তো রাজা হওয়ার বাসনা যে-জীবনের তা যায় না, অথবা বড়ো স্বপ্ন দেখাই একটা ভুল ব্যাপার, তাই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়।
একজন গল্পকার কতভাবে জীবনকে চেনাতে পারেন, তারই এক ল্যান্ডস্কেপ এটি। অথচ এর শুরুটা হচ্ছে সংবাদপ্রদানকারী এক সাদামাটা ডায়ালগ দিয়ে, – সেখানে তিনবারের বার কেষ্টবাবু জামাটা পুরোপুরি গায়ে দিলেন। অতিসাধারণ সংবাদ। 888sport world cup rateমুখর এক গল্প হতে পারত এটি। এর ভেতরকার শক্তিও ষাটের দশকের অতিসাধারণ এক জীবনব্যবস্থামুখর। অথচ আমরা যখন ধীরে ধীরে কেষ্টবাবুর সহযাত্রী হতে থাকি, তখন গল্পের পরতে পরতে বিপুল জীবন উদ্ভাসিত হয়। আমরা একে একধরনের জীবনব্যবস্থা বলতে পারি, তার ভেতরকার হাহাকার বলতে পারি, ধীরে ধীরে যা খোলাসা হয়। কেষ্টবাবু মেজাজে যে সৌখিন, অন্তত জীবনের নানান জিনিস প্রাপ্তির বাসনায় তা মনে হয়। যেমন, তার ফুলহাতা জামার ওপরের বোতামটি ক্রিমেন্টাজের; তার বাদে সব বোতামই সাদামাটা। এই বোতাম দিয়ে একটা সাংকেতিকতার মুখোমুখি হই আমরা। সেই সাংকেতিকময় জীবন দেখতে হলে সবটুকু গল্পই পড়ে নিতে হবে। তার জীবনের শুরুতে একটা পাওনা ছিল, আজ তা মনেও করতে পারেন না, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। যেন তার প্রথম বোতামটির মতোই – শুরুতেই তা শেষ হয়ে গেল। যেভাবে শেষ হলো, তাতে তার ছেলেটাকে পর্যন্ত স্কুলে পড়াতে পারেন না তিনি।
এখন তিনি কী করেন? হোমিওপ্যাথির ওষুধপত্র সাপ্লাই দেন, এসবের বইও দেন। এসব তিনি অর্ডার হিসেবে নেন; কিন্তু সময়মতো তা পৌঁছাতে পারেন না। অথবা অভাবের তাড়নায় তিনি টাকা-কড়ি মেরে দেওয়ার ধান্ধায় থাকেন। নিজের মান বাঁচাতে পাওনাদারদের কাছ থেকে দূরে দূরেও থাকেন। তার নিজের পাওনা আদায় করতেও সমস্যা হয়। এ-পথ সে-পথ ঘুরে জীবন চালাতে চান তিনি – কিন্তু তা আর পারছেন না। বিকেলের পুরোটায় তিনি বাজারে ঘুরে রাতের ট্রেনে বাড়ি আসতে চান। তখনই তিনি রেলস্টেশনে নিরু মাস্টার আর স্টেশন মাস্টারের খপ্পরে পড়েন। তিনি মাস্টারের কাছ থেকে টাকা নিলেও চাহিদা অনুযায়ী হোমিওপ্যাথির বই দিতে পারেন না। তাই তারা কেষ্টবাবুকে অপমানও করে। তার ছেলেটা তা দেখেও ফেলে, তাতে তার লজ্জার সীমা থাকে না। ছেলেকে তিনি নিষেধ করেন তা কাউকে যেন সে না বলে! গল্প শেষ হয়। আমরা বলতে পারি, যেভাবে তা শেষ হয়, তা যেন বারবার শুরুই হয়। আবারো একই কথা বলতে হয়। তাঁর এ-গল্পের শুরুটা বিশাল এক উদ্ভাসন দিয়ে, যেন তিনি সংবাদমুখর ঘটনা বা ফিকশন বলছেন। বাক্য তেমন বড়ো নয়, কাটা কাটা। অনেক ফুটেজ জোড়াতালি দেওয়ার মতোই। গল্পেরও যে সম্পাদকীয় থাকতে পারে, মানে, তা পুরো সম্পাদকীয় সারাৎসার হয়, এ-গল্প তারই এক নজির। তিনি বাক্য নির্মাণে খুবই পটু। গল্পের খালি জায়গাসমূহ বাক্য দিয়ে উর্বর ক্ষেত্র করে ফেলেন। আমরা এখানে আলোকময় কিছু আবহ দেখি, আবার অন্ধকারে পরিপূর্ণ কিছু এলাকাও দেখি। কেষ্টবাবু আলো চান। তার জীবন আলোর বন্যা বয়ে যাওয়ার মতো হতে পারত; কিন্তু তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই অন্ধকারের সন্ধানে থাকেন। কারণ আলোতেই সব পাওনাদার যেন তাকে ছেঁকে ধরবে! কিন্তু তিনি মধ্যবিত্ত-আড়ালের জন্য রীতিমতো তৎপর থাকেন। তিনি যে রাজা হতে চেয়েছিলেন, বা রাজা হওয়ার উদ্ভাসন তার ভেতরে আছে, তা একফোঁটাও ভোলেন না। তাই তো তিনি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর কথা বলেন। যে-জীবন ফেলে এসেছেন তার কথা বলেন। স্বপ্নই তার জীবন; কিন্তু সে-জীবন আর তার পাওয়া হয় না। আমরা এ-গল্পের শেষ লাইনগুলো আবার 888sport app download for android করতে পারি – ‘কেষ্টবাবু ফাঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সোজা রাস্তা ছেড়ে ঘুর-রাস্তায় হেঁটে। আলো ছেড়ে অন্ধকারে এসে। কেননা, ওঁর কিছু দেনা আছে দেখা গেল। তবে হ্যাঁ, কেষ্টবাবুর কিছু পাওনাও ছিল। না, অমূল্য ডাক্তারের কাছে নয়, অন্য কোথাও। কোথায় তা কেষ্টবাবু জন্মের সময় জানতেন, এখন আর জানেন না। আর যাত্রার নফররা তা জানেও না।’
তিনি গল্পে স্বভাবত ডায়ালগ তেমন ব্যবহার করেন না। তবে এ-গল্পে ডায়ালগ ব্যবহারের পরিমিতিবোধের সঙ্গে আছে মুন্শিয়ানা। যেন কথার এক জগৎ বসেছে এখানে। কেষ্টবাবু ছেলে নিয়ে ঘুরছেন, দেখছেন, নিজের জগৎ নিয়ে হাহাকারে আছেন, কিন্তু কথা তার থামে না। বর্ণনায়ও কথা আছে। না-কথাতেও কথা আছে – যেন তা এক কথাসরিৎসাগর!
এখানেই ছোটগল্পের দাপট প্রকাশ পায়। তিনি ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা দ্বারা তাঁর গল্প ভরাট করেননি। তিনি তাঁর উপমায়, উৎপ্রেক্ষায়, সাংকেতিকতায় তা আমাদের বারবার জানাচ্ছেন। আমরা এ-গল্পে জ্যোতিপ্রকাশের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য হবো। কারণ তাতে জীবনের যে-ঘ্রাণ, যে-প্রাণ, যে-দীর্ঘশ্বাস লেগে আছে, তা ছোটগল্পেই থাকে। যখন আমরা আরো আরো জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত পাঠ করি, তখনই এমন এক গল্পকারের সন্ধান করতে পারি, যেখানে বোঝা যায়, গল্প হচ্ছে নিত্যসাধনার এক ব্যাপার। এর প্রকৃত কম্পোজিশন এমনি এমনি তৈরি হয় না। এর জন্য সাধনা যেমন দরকার, তেমনি থাকতে হয় গল্পভাবনার মেধা। এতে কাহিনির সৃজনশীলতাই শুধু তৈরি হয় না, বরং এতে জীবনের অনেক বড়ো ব্যাপারই প্রকাশ পেতে থাকে। গল্প তো ছোট প্রাণ ছোট ব্যথার কোনো রূপ নয়, বরং এতে জীবনের বিশাল প্রত্যয়ই প্রকাশ পায়। পাঠকের ধারণার অনেক পরিবর্তনের দায়িত্বও তিনি নেন। কখনো কখনো তিনি আলাদা ভাষাভঙ্গিমা নির্মাণ করতে পারেন। জীবনের এই সত্য প্রকাশে তাঁর দ্বিধা আছে বলেও মনে হয় না। একটা গল্প তিনি বলে যান ধারণা করলেও এখানে অনেক গল্পই তিনি বলতে থাকেন। আর সেই বলা গল্প এক গল্পের ভেতরই মিশে থাকে। এক রঙে অনেক রং আমরা পাই। আমরা শেষ পর্যন্ত এ-কথা বলতে পারি, তার সর্বাঙ্গে এক গল্পকারের নেশা মিশে আছে। আমরা সে-নেশায় অবগাহন করতে পারি। জীবন চলে গেলেও জীবনের ফাঁকে ফাঁকে যেমন জীবন লেগে থাকে, তেমনি গল্পের পরও গল্পের ভেতর আরো আরো গল্প জিইয়ে রাখা যায়। আমরা তার প্রায়-গল্পকেই সে-ধরনের গল্প বলতে চাই। গল্পজনিত এত এত হতাশার কথা থাকলেও আমরা তাঁর গল্পের জায়গা-জমিন থেকে আমাদের সত্তাকে প্রায়ই আলাদা করতে পারি না।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.