হারামজাদীকে পেলে হয় …।
অন্ধকার ঠাণ্ডা-ক্যান্টিনের এক কোণে রাখা পাতলা কাঠের টেবিলটা যেন আর্তনাদ করে উঠল। চায়ের জন্যে বাড়তি চিনি রাখার সবুজ প্ল্যাস্টিকের বাটিটা উল্টে পড়ল মেঝের উপর … হারামজাদীকে একবার পেলে হয় … আমি ভাঙ্গা ফ্যাঁস-ফেঁসে কর্কশ গলায় প্রায় হুঙ্কার ছেড়ে চেয়ারে বসলাম। সারাটা ক্যান্টিন থৈ থৈ করছে ভীড়ে, কিন্তু একটি বেয়ারা চোখের পলকে আমার টেবিলে হাজির হ’ল। এটি মধুদার চার-নম্বরী আমদানী – নামটা বড় দরবারী – বীরবল! টেবিলের কাঠে রীতিমত একটা চড় মেরে বললাম, গোটা চারেক কলা, একটা পেস্ট্রি আর আইস-কোল্ড ফান্টা এক বোতল! অর্ডার নিয়ে ছোড়া কাউন্টারের দিকটায় এগিয়ে যাচ্ছিল, আমি আবার ওকে ডেকে বললাম, এই শোন্, পাঁচটা ক্যাপস্টান সিগ্রেটও আনিস সবার শেষে, বুঝলি? – বুঝলাম! এই রকম একটা অঙ্গভঙ্গী করে বীরবল চলে গেল – সম্ভবত ক্যান্টিনের ভাঁড়ার ঘরের দিকে।
গোলাপফুল আঁকা কভারের খাতাটা যেন দড়াম্ করে আছড়ে পড়ল টেবিলের ওপর। জুতোর সোলের তলায় প্ল্যাস্টিকের সুগার-পটখানা পট পট করে গুঁড়িয়ে যেতে থাকল। ক’টা অশ্লীল কথা বেরিয়ে এল আমার মুখ থেকে। মেজাজটাই আমার খিঁচড়ে গেছে আজ। পলিটিক্যাল সায়েন্সের ক্লাস থেকে একটা ছুঁড়ে মারা চাকুর মতই বেরিয়ে এসেছি। কান দু’টো ঝাঁঝাঁ করছে। খুলির ভেতরকার মগজটুকু যেন গলে যাওয়া সীসের মত টগবগ করে ফুটছে। যেন একটু পরেই দুই কানের দুটো ফুটো দিয়ে বেবাক মগজ হুড়হুড় ক’রে বেরিয়ে আসবে।
এত বড় সাহস ঐ খানকির? ঐ ভরা ক্লাসের মধ্যে জ্যাঠা আঙ্গুল দেখায় মন্নান মজুমদারকে। ছি ছি ছি। কী লজ্জার কথা, কী ঘেন্নার ব্যাপার। কে জানে কেউ এই বিশ্রী দৃশ্যটা দেখে ফেলেছে কি না!
জীনাত, মানে জীনাত সুলতানা আমার পাশের বেঞ্চের মেয়েদের অংশে বসেছে। কাজেই বাঁ দিকে সামান্য মুখ ঘোরালেই তার চোখ আমার মুখের ওপর পড়তে বাধ্য। হ’লও তাই। নতুন মাস্টারটা আধ ঘণ্টা ধরে রোল কল করে যাবার পর পরই পেছনের দিকে বসা ছোড়াগুলো হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কাজেই গোলমাল ক্লাসে প্রায় হচ্ছিলই না। জীনাতকে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করছিলাম আমি। সে তার গোলাপী গালের ওপর রং করা নখ ঘষছিল কেবল। স্যার তখন শুরু করে দিয়েছে ম্যালথেশিয়ান থিয়োরি অব পপুলেশন। আমার পাশে বসা নোয়াখালির মৌলবি আর জাম্বিয়ান ছোঁড়াটি টুকটুক করে নোট দিচ্ছে খাতায়। কথায় কথায় সভেরিং-সভেরিং করে বলে এই নতুন প্রফেসরের লেক্চার আমার কাছে কুইনিনের মত তেতো লাগে। তাছাড়া আমি খুব শুদ্ধ করে ইংরিজি লিখতেও পারি না। তাই, স্যারকে দেখাবার জন্যে মাঝেমধ্যে ভান করছিলাম লেখার। যেন দারুণ ব্যস্ততার সঙ্গে সমানে লিখে যাচ্ছি। তা যাই হোক আমার নজর তখন আঠার মত আটকে আছে জীনাত সুলতানার ঘোর গোলাপী গালের চামড়ায়। জীনাত তা টের পেয়েছিল। কিন্তু টের পেলে কি হবে, এমন ভাব সে করছিল যেন কোথাকার কোন নবাবজাদী দয়া করে এসে মাজা রেখেছেন একরাশ বাজে ছেলেমেয়ের দঙ্গলে। কিন্তু রংবাজি সে যতই দেখাক, এই শ্রীমান, এই মন্নান মজুমদার জানে, চোরা চোখে তাকাবার ব্যাপারে দারুণ চৌকশ ঐ ধারাল মেয়েটি। তাকাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিল জীনাত। ক্লাস শেষ হবার মিনিটখানেক আগে তৃতীয়বারের জন্যে ওর সঙ্গে আমার চোখাচোখি হ’ল। আমি চোখ মারলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্রী ঘটনা। বই খাতা গোছাতে গোছাতে জীনাত সোজাসুজি আমার দিকে তাকাল। তারপর ভয়ানক খারাপ মুখভঙ্গী করে আমাকে জ্যাঠা আঙ্গুল দেখাল।
তার অর্থ এই যে, জীনাত সুলতানাকে চোখ মারবার রাইট নেই মন্নান মজুমদারের। আধা পয়সা দাম নেই। ক্লাস শেষের ঘণ্টা পড়ল। আমি প্রায় বাহ্য-জ্ঞানশূন্যের মত বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেমাগটা জবর গরম হ’য়ে গেছে। অন্যদিন ক্লাস ফুরলে শেয়াল-ডাক ডাকি, শিস্ মারি অথবা করিডোরের মাল্মেয়েদের পাছার মাপ নিই। আজ আর কিচ্ছু ভাল লাগল না আমার। পেছনের সিঁড়ি দিয়ে প্রায় চোরের মত পালিয়ে এসে মধুতে বসলাম।
টিফিন সেরে শূন্য ফান্টার বোতলের মধ্যে সিগ্রেটের ধোঁয়া ভরছি এমন সময় কলিমুল্লা এল। – কী হীরো, বোতলডারে উড়াবা নাকি? বসতে বসতে বলল সে।
হারামজাদীটাকে একবার – আমি সোজা হ’য়ে বসে বলি – আচ্ছা ঠিকঠাক বল তো, বডিবিলডিং নিয়ে থাকি বলে আমার চেহারাটা কি ভিলেনের মত লাগে?
– ক্যান্ ? একথা ক্যান্ হঠাৎ! কলিমুল্লা অবাক হ’য়ে আমার দিকে তাকায়।
আমি এক সিগ্রেটের আগুনে আরেকটি ধরিয়ে অন্য একটা সিগ্রেট বাড়িয়ে ধরি ওর দিকে। এক মুখ ধোঁয়া মাথার ওপর উড়িয়ে দিয়ে আবার বলে কলিমুল্লা – এনিথিং রং – আই মীন – সাংঘাতিক কিছু ঘইটা গেছে মালুম হইতেছে। … জবর উত্তেজিত মনে হইতেছে তরে?
– ইংলিশের জীনাত সুলতানা আমাকে ইন্সাল্ট করেছে। আমি এবার বললাম খুব আস্তে আস্তে।
– ইন্সাল্ট করছে!
– হুঁ!
– তরে!
– হুম।
– ক্যান্?
কলিমুল্লার সওয়ালের কায়দা দেখলে গা জ্বলে যায় আমার। কথায় কথায় কেবল ক্যান্ – ক্যান্ – ক্যান্!
আমি চুপ করে বসে সিগ্রেট খেতে লাগলাম। আমার মনের অবস্থা টের পেয়ে গেল কলিমুল্লা। এই নীরবতার গূঢ় অর্থ যে কি কলিমুল্লার তা অজানা নয়। আমি আচমকাই যে ওর যাত্রার রাজার মত চুলের ঝুঁটিটা ধরে বেধড়ক পিটুতে শুরু করে দিতে পারি তাতে বিন্দুমাত্র অসম্ভব নেই। আমার মত ও-ও তাই নীরব হ’য়ে গেল। এমনকি সিগ্রেটও যে খেতে লাগল তাও প্রায় নিঃশব্দে। আমি কি ভেবে ওর কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলব; ঠিক কোনখান থেকে আমার বক্তব্য শুরু করব তাই চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল কলিমুল্লা। বলল, এক্সক্যুজ মী মন্নান, টিউটোরিয়াল এখন। বুঝবারই পারস। অল রাইট – আবার দেখা হইব।
কলিমুল্লা যেন প্লেন ফেল করছে – এই রকম তাড়াতাড়ি ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেল। ক্যান্টিনটা ভীষণ ফাকা হ’য়ে গেছে এখন। আমি কি উঠব এখন? চিন্তা করে দেখলাম – বসে থাকাই ভাল। ভীড় থাকলে মধুদার চোখ ফাঁকি দিয়ে ইজিলি কেটে পড়া যেত। কিন্তু টিফিন-পিরিয়ডের শেষে আবার শুরু হ’য়ে গেছে ক্লাস। সারাটা ক্যান্টিনে পাঁচ-ছজনের বেশী ছেলে নেই। আড়চোখে মধুদা আমায় দেখছে। জবেদ আলি আর বীরবল তাকিয়ে আছে শকুনের মত। নাঃ – টাকা দেড়েকের মত গচ্চা দিতেই হচ্ছে! –
এই মুহূর্তে, এই মধুর রেস্তোরাঁয় বসে মনটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেল আমার। আরে ধেৎ, এর কোনো মানেই হয় না। ঠিক এই মুহূর্তে, নিজের ওপর, নিজের বাপ-মা ভাই বোনের ওপর দারুণ রাগ হ’ল আমার। আমাকে কেউ দেখতে পারে না, কেউ চায় না। কেউ না। আমার পোস্ট-মাস্টার বাপের কটাকাই বা মাসিক মাইনে; তবুও গেঁয়ো কলেজ থেকে আমি যখন সেকেণ্ড ডিভিশনে আই. এ. পাশ করলাম – তখন সেই-ই খুশি হ’ল সব চাইতে বেশী। বলল – ব্যস্, এবার ইউনিভার্সিটিতে পড়বি 888sport app গিয়ে। মেজ ভাই পশ্চিম পাকিস্তানে মিলিটারির চাকুরী করে। ছুটিতে দেশে এসেছে। বলল, কি দরকার ইউনিভার্সিটির? এখানকার কলেজেই বি. এ.-তে ভর্তি হ’য়ে যাক। ইউনিভার্সিটির খরচ না হাতির খরচ। এত টাকা কোথায়? – সেজ ভাই বি. এসসি. পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে বসে আছে – বলল – তোমরা সবাই বড় বাজে কথা বলতে পার। একটা ছেলে ভাল শিক্ষা নেবে, তার জন্যে তাকে উৎসাহ দাও। খামকা খরচার জন্যে ভেবে মাথা গরম করছ। আমি বলি – মন্নান সোশিওলজিতে অনার্স নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে অ্যাডমিশান নিক; হলে যাতে সিট পায় সে চেষ্টা আমি করব। মাসে ওকে একশ করে টাকা পাঠালেই তিনটে বছর ওর হেসেখেলে কেটে যাবে! –
রাবা খুশি হ’ল সেজ ভাইয়ের কথায়। বলল – ঠিক ঠিক। মাসে আমি দেবো পঞ্চাশ আর মেজ ভাইকে বলল – তুই দিবি পঞ্চাশ! – এই ভাবে বন্দোবস্ত করে তারা তো আমায় 888sport app পাঠাল। কিন্তু কসম খেয়ে বলছি – 888sport app ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে বিদ্যার জাহাজ হবার ইচ্ছে আমার কস্মিনকালেও ছিল না। ছেলেবেলা থেকে ডনবৈঠক করি, মুগুর ভাঁজি। ভোরে বাড়ির সবাই যখন মাখন রুটি সহযোগে চা খায়, আমি তখন খাই ভিজে ছোলা আর আখের গুড়। একটি কথা আমি গোড়া থেকেই বিশ্বাস করি যে, গতরে ক্ষ্যাপা মোষের মত তাগদ না থাকলে এই দুনিয়ায় আমার দাম নেই এক নয়া পয়সাও। বাচ্চু ওস্তাদ বলত : শরীরটাকে শানের মত শক্ত রাখবে, ডঙ্কা মেরে ঘুরে বেড়াবে তামাম দুনিয়া। জলে-জঙ্গলে যেখানেই যাও কদর তোমার সর্বত্র। শরীরকে গড়ে পিটে লোহার মত শক্ত বানাব, এর চেয়ে গভীর পরিকল্পনা সত্যি আমি কখনো করিনি।
কিন্তু পাড়াগাঁয় কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে প্রায় জোর করে 888sport app পাঠান হ’ল পণ্ডিত বানাবার চেষ্টায়।
888sport app এলাম। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। কথা দু’টি শুনতে খুব সহজ লাগে তাই না? কিন্তু ইউনিভার্সিটির খাতায় নাম তুলতে গিয়ে আমাকে যে ঝকমারি পোয়াতে হ’ল – সে যাতনা বোঝাতে গিয়ে গর্ভ-যন্ত্রণা ছাড়া আর কোন জুৎসই শব্দ আমি আজও পর্যন্ত হাতড়ে পাইনি। যা হোক 888sport appয় এসে টি অ্যাণ্ড টি কলোনিতে বাবার বাল্যবন্ধুর বাসায় উঠেছিলাম। সেখান থেকে শুরু হ’ল ভর্তি হবার পাঁয়তারা। আই. এ-র সার্টিফিকেট তখনো দেয়নি। শুনলাম বোর্ডের দপ্তর থেকে টেস্টিমোনিয়াল আনতে হবে। যাহোক তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, টেস্টিমোনিয়াল, ইস্কুলের হেডমাস্টার, কলেজের প্রিন্সিপ্যালের কাছ থেকে আরো প্রচুর হাবিজাবি এইসব জোগাড় করতে প্রাণান্ত। এ সময়কার দু’টি মজার ব্যাপার আমার সারা জীবন মনে থাকবে। এক – বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্যে অপরিহার্য, নিজ এলাকায় যে চেয়ারম্যানের কাছে থেকে ক্যারেকটার সার্টিফিকেট আনতে হল – তার মত চরিত্রহীন লোক আমি দুটি দেখিনি। দুই – ভর্তির আগে ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপকদের সামনে যে ইন্টারভ্যূ দিলাম তাতে এক বেঁটে মোটা ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করেছিলেন : তোমার নাম মন্নান মজুমদার না হয়ে যদি প্রাণনাথ মুন্শী হত তবে তুমি কি করতে?
আমাদের কলেজ থেকে আরো বেশ ক’জন ছেলেমেয়ে ভর্তি হল বিভিন্ন বিভাগে। ক’জন অনায়াসেই হলে সীট্ পেয়ে গেল। কি করে পেল তা তারাই জানে, কিন্তু আমি কোন সীট পেলাম না। কেন পেলাম না, তা আমি জানি না। তবে কয়েকটি আশ্চর্য হবার মত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম আমি ইউনিভার্সিটিতে। আগে জানতাম ফার্স্ট-ডিভিশন আর হায়ার সেকেণ্ড-ডিভিশানের ছেলেমেয়ে ছাড়া কোনো মতেই এখানে ভর্তি হওয়া যায় না। কিন্তু, দেখলাম, আমার চেনাজানা বেশ ক’টি ছেলেমেয়ে থার্ড ডিভিশনে আই. এ. পাশ করলেও বেশ ডাঁটে ভর্তি হয়ে গেল। কেউ কেউ এদের মধ্যে আবার ভাল সীটও পেয়ে গেল – ফাউ।
ছাত্র হিসেবে আমি খুব যে একটা, কি বলে – মেধাবী – এমন বাজে কথা আমি কখনো বলব না। তবে জীবনে ফেল করিনি কোনো পরীক্ষাতেই। একবার একটা স্কুল মাস্টারকে ঠ্যাঙ্গানো ছাড়া আমার তেমন কোনো খারাপ রেকর্ডও নেই। কিন্তু কি জানি কেন, একটি পুরনো হলের কদর্যদর্শন প্রভোস্ট আমার দিকে না তাকিয়েই ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল – সীট নেই! – অ্যাপ্লাই করে রাখো, পরে দেখা যাবে।
অথচ কী আশ্চর্য আমি জানতাম – তখনও বেশ কিছু সীট সে হলে খালি আছে। আরো জানতাম, ছাত্র নয় – এমন প্রায় এক ডজন লোক হলে বসবাস করছে বিনে ভাড়াটে হয়ে প্রায় আবহমান কাল ধরে। আরো অনেক খবরই রাখতাম সেই হলের; কিন্তু সীট হ’ল না আমার।
তা যাই হোক, ক্লাশে যাতায়াত শুরু করলাম দারুণ ফুর্তির সঙ্গে। বাপরে, যা’তা কথা নয়, – ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট। রক্ত যেন টগবগ করে ফোটে। টি অ্যাণ্ড টি কলোনী থেকে যখন বাসে চাপি, সাংঘাতিক স্লো মনে হয় বাসগুলোকে। মনে হয়, একটা জেটপ্লেনের মত শাঁ করে উড়ে চলে যাই নীলক্ষেতের মোড়ে। কলোনীর আঁটসাট সালোয়ার কামিজ পরা ইস্কুলের মেয়েগুলো আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে সকালে-বিকালে। দেখতে খুব একটা উত্তমকুমার না হলেও স্বাস্থ্যটা তো আর ডাস্টবীনে ফেলে দেবার মত নয়। আর সতেরো থেকে সাতচল্লিশ বছরের মেয়েরা তো আগে দেখে পুরুষের বুক তার পরে মুখ। কাজেই সারা-কলোনীর রংবেরঙের মেয়েদের সাথে জান্লাবাজিটা আমার বেশ জমেই উঠল। একদিন এক ঘুঁষিতে এক রিকশাঅলার একটা দাঁত খসিয়ে দিয়ে পাড়ার রকবাজ ছোঁড়াদের সর্দারিও পেয়ে গেলাম। তিন মাসের মধ্যে পাড়ার এবং আরো তিন মাসের মধ্যে ইউনিভার্সিটির হীরো বনে গেল মহব্বত নগরের ছাবেদালি পোস্টমাস্টারের ছেলে মন্নান মজুমদার।
দেশ থেকে বাবা চিঠি লেখে – বাবা মন্নান, ভালভাবে পড়াশোনা করিও। রমজান ভাইয়ের সঙ্গে বেয়াদবি করিও না। বাবা আমার, তুমি সর্বদাই 888sport app download for android রাখিও যে তোমাকে মানুষ হইতে হইবে। – বাবার সব চিঠিই সেই এক ভাব আর এক ভাষায় লেখা। দিন-তারিখ বদলে দিলে তার আগের চিঠিকে পরের এবং পরের চিঠিকে আগের বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। তাই, দেশ থেকে বাবার চিঠি এলে আমি তা পড়তাম না। বাবার ঐ এক বুলি হয়েছে – তোমাকে মানুষ হইতে হইবে। – মানুষ হইতে হইবে – এ রকম তাজ্জব কথা মাইরি আমি আর কখনো শুনিনি।
সবকিছু বেশ ভালই চলছিল; কিন্তু মহব্বত নগর থেকে জাহাঙ্গীর নগরে এসে আমি বদ হয়ে গেলাম। 888sport appর বাতাস গায়ে লেগে ইতিমধ্যেই বদলে গিয়েছিলাম দারুণ। প্যান্ট-জামা আঁটো হতে শুরু করল, চুলকে ছোট করতে করতে এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছি এখন, যে চিরুণীর দরকার হয় না। স্বাস্থ্যটি তো আগে থেকেই ভাল। এখন রাজধানীর জলে বাতাসে তাতে যেন আলাদা জেল্লা ধরতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেও কথায়বার্তায় ছিলাম ভীষণ গ্রাম্য। এখন 888sport appর চলতি ভাষাকে মার্কিনি-স্ল্যাং-এর সঙ্গে মিশিয়ে এমন মিকশ্চার-জবান্ শিখে ফেলেছি যে নিজেই একেক সময় আশ্চর্য হয়ে যাই। জড়তার লেশমাত্র এখন আমার মধ্যে নেই। এখন আমি লাইব্রেরির ন্যাড়া-বাগানটার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পেচ্ছাব করতে পারি।
আরো অনেক কিছুই আমি করতে পারি, কিন্তু তার দরকার হয় না। এমনিতেই সবাই বেজায় খাতির করে আমাকে। রোজকার বাসভাড়া ছাড়া আমার – বলতে গেলে – আর কোনো খরচার বালাই নেই। সীট যদিও কোনো হলেই মেলেনি কিন্তু সব হলেই আমার অবাধ গতি। ইয়ার গজিয়েছে এস. এম. হল থেকে শুরু করে জিন্না হল পর্যন্ত। বডির দৌলতে 888sport app হলের ডাইনিং রুমে যখন ইচ্ছে খাই – কেউ কিছু বলে না। এফ এইচ হলের লণ্ড্রীতে কাপড় ধোয়াই – ফ্রী, জিন্না-হলের সেলুনে চুল কাটাই – সেখানেও পয়সা খরচ নেই।
অবশ্যি বলাকার মোড়ে কিংবা নিউ মারকেটে যখন ফিল্ডিং মারতে বেরোই, জুতো জোড়াটা তখন পলিশড্ না হলে জমে না। তখন পলিশঅলাকে দক্ষিণা দিতে হয় পাকির পনেরো নয়া পয়সা। সঙ্গে ইয়ার-দোস্ত যদি থাকে তবে পয়সাটা তাকেই দিতে হয়। কিন্তু সুবিধে শুধু এইটুকুই নয়; মাসল শো করে সাংঘাতিক রকমের ক’টা বড়লোকের ছেলের সাথে খাতির হয়েছে আমার। সকালে যদি কালো রঙের অস্টিনে করে ক্লাশে আসে তো বিকেলে আসবে টকটকে লাল ফোক্স ওয়াগেনে। মাঝে মাঝে হেথায় হোথায় লিফট দেয় অবশ্যি; কিন্তু ওসব দামী গাড়ির নরম গদিতে মাথা এলিয়ে ভুস করে পাঁচ দশ মাইল চলে যাওয়ার মধ্যে কোনো থ্রীল নেই। ইসপাহানী-হাউসের মালাঠি আমার নতুন বন্ধু। ওর ভেসপাটা যেদিন পাই সেদিন মনে হয় – হেঁটে চলা তেল চিটচিটে হাজার মানুষকে ধুলো ছিটিয়ে বেহেশতের দরজার দিকে উড়ে চলেছি আমি। তাছাড়া রশিদের বিলেত থেকে আনা বুশশার্ট, কাহারের গগল্স, সাঈদের টেট্রনের প্যান্ট আর আবুর দেড়শো টাকা দামের পুলোভারে দিনগুলো আমার প্রিন্সের মতই কেটে যাচ্ছিল।
কিন্তু শাহ্ আমাকে ফাঁসিয়ে দিলে। ব্যাটা নিজে এক
বিশ^-বদমাশ -; আমাকেও অল্পদিনে এক নম্বরের লম্পট বানিয়ে ছেড়ে দিল। ছেলেবেলায় যখন বাচ্চু-ওস্তাদের আখ্ড়ায় গিয়ে বুকডন দিতাম, দৌড়ঝাঁপ করতাম তখন ওস্তাদজী বলত : হুঁশিয়ার। মদ আর মেয়েমানুষ – এই দুই জিনিস থেকে হুঁশিয়ার! এই দুই সর্বনেশে জিনিসকে হারাম করতে না পারলে কস্মিনকালেও তোমার বডি হবে না। – কিন্তু 888sport appয় এসে এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মদ আর মাগিতে পাকাপাকি ভাবে আসক্ত হ’য়ে পড়লাম।
মহব্বত নগরের বন্ধুরা, দেশে থাকতে কি যেন একটা নাম দিয়েছিল আমার? কি যেন, – ঐ যে হ্যাঁ – 888sport promo codeবিমুখ। 888sport app এসে, বিশেষ করে শাহরিয়ারের সাথে দোস্তি হয়ে একেবারে উল্টেই গেলাম। শাহ্র সঙ্গে চলাফেরা করে আমার কি হ’ল? না, কারো বাড়ির ছাদে – কার্নিশে মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি-ব্লাউজ অথবা পেটিকোট ঝুলতে দেখলেই বুকের ভেতরটা গুড় গুড় করে ওঠে। মনে হয়, ইশ্ – মনে হয় রোববার সন্ধ্যায় সারা জিন্না-অ্যাভিন্যুতে যতগুলো মেয়ে বেড়াতে বেরোয় তাদের সবকটাকে বগলদাবা করে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। চিন্তা করি আমার কপালটাই খারাপ। এই যে তামাম 888sport app শহরে লাখ লাখ টেডি মেয়ে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলোর সবকটাকে কোনোদিনই আমি চুমো খেতে পারব না। ফিউচারে বিয়ে-শাদী করলেও হালার একটা মাত্র মেয়েকে বউ বানিয়ে সংসার করতে হবে পুরো জীবন। অথচ, যেদিকে তাকান যায়, গণ্ডায় গণ্ডায় মেয়ে, দঙ্গলে দঙ্গলে মেয়ে। ধুৎ! এর কোনো মানে হয় না। ভাবি আর ভাবি। আর দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ি। শাহ্র সাথে খাতির হবার পর এমন কত লক্ষ দীর্ঘশ্বাস যে আমার বাজে-খরচা হয়ে গেছে, তার হিসেব আমি রাখিনি।
মদ আর মেয়েমানুষ। মেয়েমানুষ আর মদ। ছেলেবেলায় একবার এক সাধুর আখড়ায় গিয়ে গাঁজা খেয়েছিলাম। আট আনা পয়সা দিতেই সাধুবাবা পরম নিষ্ঠা সহকারে একটা সিগ্রেটের সব মশলা ফেলে দিয়ে তাতে গাঁজা ভরে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। বলে দিয়েছিল – কষে টানো। ধোঁয়া বের করে দিও না! বাড়ি গিয়ে এক বাটি গরম দুধ খাবে তাহলে খোয়ারি হবে জোর। কিন্তু কিসের নেশা কিসের কি? দিব্যি রোজকার মত বাড়ির সবার সঙ্গে রাত্রির খাওয়া সারলাম। সেজ ভাইয়ের দেরাজ থেকে ন্যাংটো-মেয়ে লোকের ছবিঅলা ইংরিজি পত্রিকা চুরি করে পড়লাম। নেশাও না, কিছুই না। গাঁজা ভাঙেও ভেজাল চলেছে নাকি কে জানে। যাহোক সেইদিন সেই গাঁজা খাবার পর থেকে ওসব জিনিসের প্রতি আমার রাগ বা বিরাগ কিছুই ছিল না।
শাহ্ একদিন আমাকে হেনরিয়েটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। সে ধানমণ্ডির এক খান্কি অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান। এবং হেনরিয়েটার ঘরে ঢুকেই বয়ে গেলাম আমি। শালি বাংলা মদের বোতল পেলে বাপ দাদার নাম ভুলে যেত। প্রথম প্রথম টাকাটা আশ্টা ধরে দিতাম হেনরিয়েটাকে। পরে কেবল এক বোতল দিশি মাল আর প্যাকেটখানেক পলমল সিগ্রেট দিলেই বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে করসেটের ফিতে খুলতে শুরু করত। মাগির চেহারাটা বেশ ডগ্মগানো? ফিগারটাও ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেবার মত নয়; কিন্তু ওর পা থেকে মাথা অব্দি এক রকম বোঁটকা গন্ধ ভুর ভুর করত। তবু চুমো খেতাম ওকে। চিৎ হয়ে শুয়ে বুকের ওপর রেখে আদর করতাম ওর উলঙ্গ শরীরকে। আদর করতাম আর মদ খেতাম। মদ আর খিস্তি।
কি করে যে কি সব হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। একদিন বাথরুমের খাটো আয়নায় নিজের মুখখানাকে দেখে আঁতকে উঠলাম আমি। চোখের নীচে আমার এত কালি জমেছে কবে? গালের ওপরকার ঐ ফুস্কুড়িগুলোই বা কবে গজাল? কিন্তু একটা কথা আমি বেশ ভালই বুঝতে পারলাম, ফেরার পথ আর আমার নেই। কারণ শাহ্ আমাকে নামার পথেই চলতে শিখিয়েছে – উঠবার পথের ঠিকানা দেয়নি। মনে করলাম, ফেরার পথ আর আমার নেই। দেখতে দেখতে সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এল।
শাহ্কে বললাম – ওস্তাদ, পরীক্ষা তো এসে পড়ল। এখন উপায় কি? শাহ্ বলল, নোট বইয়ের খাতা কাটুম। আমি বললাম, ধুস্? – ধরা পড়লে লটকে দেবে। জিন্দেগী বরবাদ। শাহ্ বলল, – তাহলে ফুর্তি-ফার্তির খুরে স্যালুট মার কিছুদিনের লাইগা। কিছু স্টাডি-উডি কইরা দেখা যাউক। সাবসিডিয়ারিতে তিরিশ মার্ক উঠলেই তো পাস্; একটা ঘোড়াও বি-এ পাস করবার পারে। হেনরিয়েটার ঘরে বসে মদ খেতে খেতে একদিন আমরা ওইসব কথাবার্তা বলছিলাম। কিন্তু আমার মনে ছিল অন্য চিন্তা। শাহ্ আর যাই করুক – পার্সেন্টেজে টাইট্ রেখেছে। আমার বোধ করি টেনে হিঁচড়েও চল্লিশের বেশী উঠবে না। অথচ পরীক্ষা দিতে গেলে কমসে কম পঁচাত্তর পার্সেন্ট থাকতেই হবে শতকরা। সেদিন সন্ধ্যায় ঝড়বাদল। মাথায় করেই টি অ্যাণ্ড টি কলোনীতে ফিরলাম। আস্তানায় এসে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা পাঠ্যপুস্তকগুলোয় হাত দিতেই গুড়-গুড় করে উঠল বুকখানা। কতদিন এগুলো ছুঁইনি!
কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে গুলি মারো – ডিপার্টমেন্টের কেরানিটা বদামি শুরু করল। ভেবেছিলাম চা-সিগ্রেট খাইয়ে ফায়দা ওঠাবো; কিন্তু ব্যাটা ভারি ত্যাঁদোড়। বলল – মাপ চাই। এতবড় অন্যায় আমি করতে পারব না। কত কাকুতি মিনতি, কত অনুরোধ উপরোধ। নরম হয় না তো হয়ই না। শেষে রক্ত চড়ে গেল মাথায়। পকেট থেকে ড্যাগার বের করে বললাম – ওসব ছেঁদো কথা শিকেয় তুলে রাখ। পার্সেন্টেজ মেকাপ করে রাখ – টাকা পাবে। বাড়ি যাচ্ছি তোমার টাকার জন্য। এসে যেন দেখি ঠিকঠাক নাম ঝুলছে বোর্ডে। নইলে – ড্যাগারটা আবার আমার হাতে ঝিকিয়ে উঠল। – কেরানী ব্যাটা ম্যালেরিয়ার রোগীর মত কাঁপতে লাগল সমানে। আমি ফৌজি-হাঁটা হেঁটে অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
মহব্বত নগরে – মানে বাড়িতে এসে ভেবেছিলাম, নিশ্চিন্তে ক’টা দিন পড়াশোনা করে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে 888sport app ফেরা যাবে। কিন্তু পড়াশোনাতে মন বসাতে পারলাম কৈ। পার্সেন্টেজের আতঙ্ক একটা অতিকায় মাকড়শার মত আমার মগজের মধ্যে এক ভয়ানক জাল বুনতে লাগল। অথচ কি নিদারুণ ব্যাপার দ্যাখো, বাড়িসুদ্ধ মানুষ জানে, আমি পরীক্ষার জন্যে খুব ভাল প্রিপারেশান নিচ্ছি। 888sport appয় পড়াশোনা বিঘ্নিত হ’তে পারে মনে করে আমি দেশগাঁয়ের নিরিবিলিতে চলে এসেছি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করবার জন্যে।
888sport free bet login সঙ্গে কিছু ছিল। ছিল কিছু নোট আর টিউটোরিয়ালের বাসি খাতাও। সকাল সন্ধ্যা সেই সব নাড়াচাড়া করি অকারণে। মন বসাতে পারি না বইয়ে। বাবা এক দিন বলল, কি হয়েছে তোর। মুখখানাকে সব সময় অমন গম্ভীর ক’রে রাখিস কেন? কেমন ঠাণ্ডা, ভেজা, চুপচাপ। আমি ম্লান হেসে তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টায় প্রায় ঘামতে থাকি। হয়ত, মা এসে আমার মুখ রক্ষা করেন হঠাৎ। বলেন, কিসের আবার গম্ভীর হয়ে থাকবে; সামনে এতবড় একটা পরীক্ষা তাই তোমার যত বেহুদা কথা গো! –
সামনে এতবড় একটা পরীক্ষা। ভালমন্দ একটু না খেলে এসময়টা চলবে কেন? তাছাড়া আরো কত খরচ। 888sport app যাবার আগে মা চুপ করে একশ’ টাকার তিনটে নোট আমার প্যান্টের পকেটে গুঁজে দিল। বলল, নিত্যি ভোরবেলা এট্টু মাখন খাস, এট্টু ছানা খাস, মগজটা ঠাণ্ডা থাকবে। এ টাকার কথা যেন তোর বাবা জানে না -। শেষের কথাটি মা উচ্চারণ করল প্রায় ফিসফিস ক’রে।
কিন্তু ঘাপলা দ্যাখো; 888sport appয় পৌঁছে প্রথমে টি অ্যাণ্ড টি কলোনীতে না গিয়ে ধানমণ্ডিতে গেলাম। তখন সকাল। হেন্রিয়েটা তখনও একটা কুকুরের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। এইমাত্র, বাবুর্চি বোধকরি বেড্টি দিয়ে গেছে তেপায়ার ওপর। আমার জুতোর শব্দে ধড়মড় ক’রে উঠে বসল হেনরিয়েটা। – গুডমর্নিং হেনরি! – আমি কাঁধে ফেলে রাখা ব্লেজারখানা চেয়ারের হাতলের ওপর রাখতে রাখতে বললাম। – মর্নিং! হেন্রিয়েটা বিছানার ওপর জোড়াসন করে বসল। চোখ কচলাতে কচলাতে বলল : তাহলে বেঁচে আছ দেখছি। আমি ভাবলাম গুণ্ডামী করতে গিয়ে কোথায় কার ড্যাগার খেয়ে ফিনিশ হয়ে গেছ! –
আমি হেনরিয়েটার হাত ধরতে গেলাম। সরে গেল সে। বলল – আমাকে ছুঁয়ো না ডারলিং প্লীজ! – কেন, ছুঁলে জাত যাবে নাকি? – আমি হাসতে হাসতে বলি। কিন্তু আমার হাসির সমর্থনে হাসির রেখা ফুটে উঠল না তার কালো ঠোঁটে। বাবুর্চিকে ডেকে আমার জন্যে চা-নাশতা দিতে বলে হেনরিয়েটা আমাকে লক্ষ্য করে বলল – শাহ্ বলল তুমি বাড়ি চলে গেছ। তা কবে এলে? – আমি বললাম – এই তো মাত্র! – এইমাত্র? – হ্যাঁ, এই তো রেলস্টেশন থেকে সোজা আসছি তোমার এখানে। কথা শেষ করে আমি পকেট থেকে সিগ্রেটের প্যাকেট বের করলাম। একটা নিজে ধরিয়ে অন্যটা বাড়িয়ে ধরলাম ওর দিকে। – থ্যাংক ইউ, এখন সিগ্রেট খাবো না। হঠাৎ বিরস হয়ে উঠল হেনরিয়েটার মুখ। চায়ের খালি পেয়ালাটা পাশের তেপায়ার ওপর রাখতে রাখতে আবার বলল – ভাল ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেছ?
হো হো করে হেসে উঠলাম এবার আমি। নিশ্চয়ই এ রাত্তিরে কোনো কালো সায়েবের গলা জড়িয়ে ধরে পেগের পর পেগ্ খেয়েছে। নিশ্চয়ই বেশি গিলেছিল – সারা রাতেও তাই নেশা কাটেনি। আমি চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে হেনরিয়েটাকে ধরলাম। তারপর দু’হাত ধরে কোলে তুলে নিলাম ওর বোঁটকা গন্ধ ভরা হালকা দেহখানা। প্রাণপণে চুমো খেতে গেলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য, ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে আমার কোল থেকে ছিটকে পড়ে গেল সে খাটের ওপর। তারপর চেঁচিয়ে বলল – তুমি কি কালা, তুমি কি কোনো কথা শুনতে পাও না? – বলছি যে আমাকে তুমি ছুঁয়ো না। কানে যায় না আমার কথা?
তার মানে? – আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবার। আরে, এ বেশ্যা মাগির আবার কি হল। ছুঁতে দিচ্ছে না কেন? বাড়ি যাবার আগের রাত্রিতেও তো একদম ন্যাংটো হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল আমার কোমর জড়িয়ে ধরে। আজ আবার এমন আজগুবি আচরণ কেন? সিগ্রেটটা পর্যন্ত খাচ্ছে না। বললাম – এসবের মানে? হেনরিয়েটা তখন বিছানা থেকে উঠে সিøপিং গাউনের ফিতে বাঁধছে অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে। আমার কথা ক’টা যেন তার কানেই যায়নি। কিছুক্ষণ পরে বলল – শোনো মজুমদার, বলি বলি করেও কথাটা এতদিন তোমায় বলিনি। বলিনি তার আরো কারণ – ব্যাপারটা বুঝতেও আমার দেরি হয়েছে। শাহ্ যেদিন খুলে বলল সেদিনই তো সব কিছু বুঝতে পারলাম! – কী বুঝতে পারলে? – কী বলছ তুমি এসব? আমি চায়ের কাপখানা সশব্দে টেবিলের ওপর রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। আমি তোমার আচার-ব্যবহার,
কথা-বার্তার মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছিনে।
আমার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে হেনরিয়েটা বলল – তুমি আমার বন্ধু। চিরদিনই আমার বন্ধু। কিন্তু বন্ধু শুধু তুমিই, তোমার ঐ সর্বনাশা ব্যাধি আমার বন্ধু হতে পারে না! – কী এসব আবোল তাবোল বকছ তুমি? – আমি প্রায় আমতা আমতা করে বলি।
– তোমার ঠোঁট, গাল আর দু’হাতের ফুস্কুড়িগুলো যাকে একজিমা বলে এতদিন চালিয়ে এসেছ, তা আসলে সিফিলিস্ ছাড়া আর কিছুই নয়।
: সিফিলিস?
: হ্যাঁ!
: কে বলল?
: প্রথমে আমার মন – তারপর তোমার বন্ধু – শাহ্ – শাহরিয়ার খাঁ! একবার আমার মনে হয়েছিল – একটা প্রচণ্ড লাথি মেরে অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান বেশ্যাটার পাছা থেঁতলে দিই। কিন্তু কিছুই করলাম না। একটা বেত-খাওয়া ঘেয়ো কুত্তার মত বেরিয়ে এলাম বাইরে!
ধানমণ্ডি থেকে টি অ্যাণ্ড টি কলোনী – তারপর সেখান থেকে ইউনিভার্সিটি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যেন কয়েকটা বছর পেরিয়ে এলাম আমি। ডিপার্টমেন্টে এসে দেখি – কী তাজ্জব, কী তাজ্জব, – কেরানী ব্যাটা আমার পার্সেন্টেজ মেকাপ করে রেখেছে টায়ে টায়ে। বেজায় খুশি হয়ে ওকে দশটা টাকা বের করে দিলাম। ঘুষ পেয়ে ব্যাটা এক গাল হাসল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারব – এ আনন্দ আমার মিলিয়ে গেছে অন্য আতঙ্কে। আতঙ্কে আর ঘেন্নায়।
ঠোঁটের, গালের আর হাতের ফুস্কুড়িগুলো আমি ডক্টর করিমকে দেখিয়েছি তিন মাস আগে। কে না জানে ডক্টর বাসিতের মত চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ সারা দুনিয়াতেই এক ডজনের বেশি নেই। ও তো আমার পায়খানা, প্রস্রাব, থুথু, কাশি সব পরীক্ষা করে দেখে সাফ বলে দিল – এক্জিমা। – অথচ শাহ্ হেনরিয়েটা – দাঁতে দাঁত চাপলাম আমি তারপর প্রায় ভুল করেই পলিটিক্যাল সায়েন্স ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। আগেকার অনার্স-এর জরুরী ক্লাস মিস্ করেছিলাম। এখন এই ক্লাসে এসে সেই খাবসুরত ছেমরিটাকে দেখতে পেলাম। দেখি – একেবারে আমার পাশাপাশি মেয়েদের এলাকা আলো হয়ে গেছে মাগির জেল্লায়।
নিজের চোখ দুটির মধ্যে পেচ্ছাব করে দিতে ইচ্ছে করল আমার। সত্যি, আমি একটা জানোয়ার হয়ে গেছি। ভাল জিনিস, সুন্দর জিনিস আমার চোখে পড়ে না। এই যে সারাটা আর্টস-বিল্ডিং জুড়ে হাজারটা মেয়ে মাজা নাচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে – এগুলো আমার নজরে পড়ে না কেন! শুনেছি, না না শুনবো কেন – নিজের চোখেই দেখেছি – এদের মধ্যেও কয়েক ডজন ভাড়াটে মেয়ে আছে। একবার নয়, অনেকবার দেখেছি রোকেয়া হলের ক’টা ভূতুড়ে-চেহারার মেয়ে শাহ্র গাড়ীর মধ্যে হুটোপুটি করছে। টাঙ্গাইলের একটি বেঁটে মত মেয়েকে তো শাহ্ একদিন সন্ধ্যার সময় লাইব্রেরির বাগানেই জড়িয়ে ধরল। তারপর -; কিন্তু যাই বল না কেন, ঐ মেয়েটি মানে ঐ জীনাত সুলতানার মত মেয়ে কখনো নষ্টামী করতে পারে না। শুনেছি ডজন ডজন গুড্ বয় নিজেদের গাড়ি নিয়ে রোজ ওর গাড়ির পেছনে পেছনে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত এগিয়ে যায়; কিন্তু ঐ পর্যন্তই। আসলে ঐ চশমা পরা ছোঁড়াগুলো একদিনও, একটু কথা পর্যন্ত বলতে পারেনি জীনাত সুলতানার সাথে। – ঠিক। ঠিক! – প্রেমেই যদি পড় – তো এই রকম ডাঁটের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা উচিত।
চোখ মারতে শুরু করলাম জীনাত সুলতানাকে। ও আমার পাশের বেঞ্চের মেয়েদের অংশে বসেছে; কাজেই বাঁ দিকে সামান্য ঘোরালেই তার চোখ আমার মুখের ওপর পড়তে বাধ্য। হলও তাই। … নতুন প্রফেসরটি সাপের মন্তরের মত
ম্যালথেশিয়ান থিয়োরি অব পপুলেশন বোঝাচ্ছিল। আমার পাশে টুপিপরা নোয়াখালির মৌলবি আর জাম্বিয়ান ছোঁড়াটি টুকটুক করে নোট নিচ্ছিল। ও পাশে বর্শার ফলার মত রঙিন নখ দিয়ে গাল খুঁটছিল জীনাত সুলতানা। ক্লাশ ফুরোবার মিনিট খানেক আগে তৃতীয় বারের জন্যে ওর সঙ্গে আমার চোখাচোখি হ’ল। ব্যাস্ – আমিও চোখ মারলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশ্রী ঘটনা। – জীনাত সুলতানা আমাকে তার জ্যাঠা আঙ্গুল দেখাল ভয়ানক খারাপ মুখভঙ্গী করে।
অর্থাৎ? অর্থাৎ জীনাত সুলতানার মত ধনী, রূপসী, মসৃণ মেয়েকে চোখ মেরে প্রেম নিবেদন করার রাইট নেই মহব্বত নগরের মন্নান মজুমদারের। অর্থাৎ তোমার বডি যত নকরাই হোক না কেন, জীনাত সুলতানার মত মেয়ের কাছে তুমি একটা ঘেয়ো-কুত্তা ছাড়া আর কিছুই নও।
কী তোমার দাম? কীসের তোমার অধিকার? হেনরিয়েটার মত বাজারে-মেয়েই যাকে খারাপ রোগের রোগী সন্দেহে ভিখিরির মত ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে, জীনাত সুলতানাকে সে চোখ মারে কোন্ অধিকারে!
বড় বড় পা ফেলে করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ি ভেঙে পেছন দিকে মধুর ক্যান্টিনে চলে এলাম আমি। জীনাতের ধারাল, রংকরা নখঅলা জ্যাঠা আঙ্গুল দেখে রাগে দুঃখে লজ্জায় মধুর দোকানে বসেছিলাম। হাজারে হাজারে লাখে লাখে নষ্ট-চিন্তার ঘায়ে ফাটা বেলুনের মত চুপ্সে যাচ্ছিলাম। বিকেল হয়ে এসেছে।
আর্টস-বিল্ডিংয়ের চারধার ভীষণ ফাঁকা। লাইব্রেরির পেছনে কুলি-বস্তীতে রান্নার ধোঁয়া উঠছে কু-লী পাকিয়ে পাকিয়ে। ক’জোডা ন্যাতানো, ঠাণ্ডা, নিরক্ত ছোকরা-ছুক্রি তেঁতুলতলায় দাঁড়িয়ে পিরিতের আলাপ করছে। – মধুদার রেস্তোরাঁয় আবার দু’জন চারজন করে খদ্দের আসতে শুরু করেছে এখন। এখন, এ বেলা ফার্স্ট-ইয়ার সেকে- ইয়ারের কোনো ছাত্রই আর মধুতে আসবে না। এখন আসবে তারাই, যারা বছর দুয়েক আগে ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে বেরিয়ে গেছে। নতুন কলেজের প্রফেসর, কোনো 888sport live football পত্রিকার নবীন সম্পাদক, কবি, আঁকিয়ে – এমনি সব মানুষে একটু পরেই প্রায় ভরে যাবে সারাটা রেস্তোরাঁ।
সত্যি বলতে কি, এই রাইটার আর আর্টিস্টগুলোকে দেখতে পারিনে। কি সব মাথামু-ু আওড়ায় – কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু আজ আমার কি হয়েছে, ক্যান্টিনের এক কোণে রাখা চেয়ার ছেড়ে একটুও উঠতে ইচ্ছে করছে না। কে যেন, কারা যেন, একটা প্রকা- গায়েবী শিকল দিয়ে আমার সবল-শক্ত পা জোড়াকে মেঝের শাদা পাথরের সঙ্গে চিরতরে এঁটে দিয়েছে। আবার আরো এক পেয়ালা চা দিতে বলব কিনা ভাবছি, এমন সময় কলিমুল্লা ঢুকল – রেস্তোরাঁয়। কলিমুল্লার সঙ্গে এ কে? – কী আশ্চর্য। – কলিমুল্লার পেছনে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করল জীনাত সুলতানা আর – আসরার চৌধুরী। প্রায় পাশাপাশি হেঁটে আসতে আসতে তারা আমার তিন দিকে দাঁড়াল। –
ব্যাপার কিছুটা আঁচ করতে পেরে … ড্যাগারটা বের করবার জন্যে পকেটে হাত ঢুকিয়েছি … প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আসরারের লোহার পাঞ্চ লাগান মুঠোটা আমার ঘাড়ের ওপর প্রচ- আঘাত হানল। চাকুটা বের করে আনবার আগেই – আসরারের দ্বিতীয় ঘুষিতে – মনে হল – আমার সমস্তটা চোয়াল খসে পড়েছে। – দু-তিনটে চেয়ার সঙ্গে করে ফ্লোরের উপর লুটিয়ে পড়লাম আমি।
চেতনা লোপ পাবার সেকে- কয়েক আগে কলিমুল্লা, আসরার আর জীনাত সুলতানার কয়েকটি সংলাপ আমার কানে এসেছিল :
কলিমুল্লা – হারামজাদার সাহস কত? বাঘের গর্তে মাথা ঢুকাইছে। এখন বোঝো। জীনাত – দূর আসু ভাই। এত জোরেই মারতে হয়? মরে যাবে না ত? আসরার – আমার আর সময় নেই জিনু -। আমাদের ক্লাবে আজ এক নিগ্রো বক্সার এসেছে। ওর সঙ্গে আমি ছাড়া আর কে লড়বে বলো। সি ইউ টুমরো।
– কী আশ্চর্য – কী আশ্চর্য – এ আমি কোথায় এলাম। … চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। মাঝে মাঝে কী দুর্ভেদ্য জঙ্গল? এক জায়গায় দেখা যাচ্ছে – ভয়ংকর শব্দ করে যাচ্ছে এক তীব্রস্রোতা নদী। সে নদীতে কি বিরাট বিরাট কুমির, হাঙর, জলহস্তী … বাপরে – মাঠের দূর্বাঘাসগুলো দেখেছ? – কেমন তরোয়ালের মত ধার – ইস! কী সর্বনাশ! – পাহাড়ের মত গিরগিটিটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে না! – গিরগিটি নয়, গিরগিটি নয় – ডাইনোসর। ডাইনোসরের গল্প আমি ছেলেবেলায় ভূগোলের বইয়ে পড়েছিলাম – ছবিও দেখেছিলাম। – ডাইনোসরটা আমার দিকে দৌড়ে আসছে। – একি? – আমার গা-ভর্তি এত লোম কেন? – নখগুলো কেন এমন পাগলা কুকুরের মত। … আমি ভেড়ার ছালের পোশাক পরেছি নাকি? – বাঃ বাঃ – আমার হাতে এই চমৎকার পাথরের বর্শাটা আবার কে দিয়ে গেল? …
… আমি প্রাণপণে দৌড়ে চলেছি এবার বরফে 888sport app মাঠের ওপর দিয়ে। – পেছনে ছুটে আসছে সেই মূর্তিমান-বিভীষিকা, – সেই পর্বতদেহী-কদাকার ডাইনোসর।
হঠাৎ কখন জানি না, – দেখি আমি বিরাট কাঠের কপাটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি। পাহাড়ের মধ্যে বার্নিশ করা শক্ত কাঠের পাল্লা। তাতে চকচকে দুটো পেতলের আংটা লাগানো। … আংটা ধরে টান দিতেই পাল্লাটা খুলে গেল। ‑ অন্ধকার ঠাণ্ডা-স্যাঁতসেঁতে একটা গুহা। আমি সেই আঁধার গুহার মধ্যে ঢুকে ভেতরে থেকে পাল্লা বন্ধ করে দিলাম ক্ষিপ্রহাতে। …
বাইরে সেই অতিকায়-ডাইনোসরের সে কি আস্ফালন।
আবু কায়সার
জন্ম ১৯৪৫ সালে ১২ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত জিয়াগঞ্জে। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস 888sport appsের টাঙ্গাইলে। কবি ও কথা888sport live chatী। 888sport app বিশ^বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকীতে সহ-সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক ও 888sport live football সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশু888sport live football 888sport app download bd, নুরুল কাদের ফাউন্ডেশন শিশু888sport live football 888sport app download bd, মুক্তিযোদ্ধা লেখক 888sport app download bd, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৫ সালে তিনি প্রয়াত হন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.