গোলাপসংগ্রহ
আবদুশ শাকুর
মাওলা ব্রাদার্স
888sport app, ২০০৪
দাম : ৭৫০.০০
আবদুশ শাকুর-রচিত গোলাপসংগ্রহ গোলাপ-বিষয়ে একটি আকর গ্রন্থ। লেখক গোলাপ-বিষয়ে বিচিত্র তথ্য সন্নিবেশ করেছেন এ-বইয়ে। কবি বেলাল চৌধুরী লেখকের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। একটি বিষয়কে ধরে এমন চমৎকার সাক্ষাৎকার আমি কাছাকাছি সময়ে পড়িনি। লেখকের পরিশ্রম, জানার পরিধি এবং ভাষার সরস ও তির্যক ভঙ্গি এই বইয়ে এক নানামাত্রিক সংযোজন।
বইয়ে পাঁচটি অধ্যায় আছে। প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে আছে অনুশিরোনাম। যেমন, প্রথম অধ্যায় : গোলাপের ইতিবৃত্ত – সঙ্গে আছে গোলাপ বিসংবাদ ও গোলাপচিত্র। দ্বিতীয় অধ্যায় : গোলাপ নিয়ে আলাপসালাপ : অনুশিরোনাম হলো – কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে গোলাপ নিয়ে একদিন ও গোলাপচিত্র। তৃতীয় অধ্যায় : ছোটগল্প – পটভূমিতে গোলাপ : অনুশিরোনাম হলো – গোলাপধোলাই, ফানুস ও গোলাপচিত্র। চতুর্থ অধ্যায় : রচনা: প্রসঙ্গ গোলাপ: অনুশিরোনাম – পরগাছা, বুনোগোলাপের সুখদুখ, দশ মিনিটে গোলাপের কথা। পঞ্চম অধ্যায় : আরো গোলাপ ও গোলাপচিত্র।
বইয়ের শুরু হয়েছে ‘গোলাপ বিসংবাদ’ শিরোনাম দিয়ে। 888sport live footballে গোলাপ কত ভাষায় কত কবি-888sport live footballিকের হাতে কত অসাধারণ অনুভব এবং চিত্রকল্পে বর্ণিত হয়েছে তার যেমন উল্লেখ আছে, তেমনি এ-অধ্যায় শেষ হয়েছে গোলাপের সমাজতত্ত্ব দিয়ে। 888sport live football ছাড়াও ইতিহাস, পুরাণ, রূপকথা ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে গোলাপের উপস্থিতি দেখিয়ে লেখক এ-ফুলের সর্বজনীন আবেদনকে উন্মোচিত করেছেন। গোলাপকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন লেখক। তিনি বলেছেন, গোলাপ নগ্নতা ও যৌনতার পরিপূরক। তাঁর মতে, “অন্য কোনো ফুল দেখে রিলকে বলতে পারতেন না ‘আবৃত অথচ নগ্ন’।” এমনকি স্পেনীয় কবি হোয়ান রামোন হিমেনেথ বিস¥য় প্রকাশ করতেন না এভাবে, ‘গোলাপ কী করে ছিল আবৃত অথচ নগ্ন একই সময়ে?’ 888sport appsের একজন কবির পঙ্ক্তি এমন, ‘জীবনযাপন ছেড়ে গোলাপের কাছে যায় কবি।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘মানবকল্পিত সকল কামনার আধার বলেই প্রেমিকশ্রেষ্ঠ ওমর খৈয়ামের কাছে গোলাপ নিজের মনের ঐকান্তিক ভালোবাসা,
অন্তর্লীন বিষাদ, গহীন ভিতরের অন্তরপ্লাবী সুখ, ভবিষ্যতের নিতান্ত নিরাশার প্রেক্ষাপটে বর্তমানের একান্ত আশা, এমনকি জীবনের পরে মরণেরও কাক্সিক্ষত সঙ্গী। প্রিয়তমা সাকীকে তো গোলাপ ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয় না ওমরের : ‘আমি যেন দেখি সখী তোমারই ও মুখ/ আলো করে আছে ওই! গোলাপের বুক।’ লেখক দেখিয়েছেন পদ¥ হিন্দুধর্মের অনুষঙ্গের ফুল, আর ‘গোলাপের উজ্জ্বল আবির্ভাব মানুষের ইন্দ্রিয়জ প্রেমের উজ্জ্বল সখার ভূমিকায়।’ তিনি আরো দেখিয়েছেন সাদা লিলিও ধর্মীয় অনুষঙ্গের ফুল। লিখেছেন : ‘গির্জার যাজকগণ লোকাতীত ভালোবাসার মহিমা কীর্তন করে হেঁকেছেন : লিলিক্ষেত্রের প্রতি নেত্রপাত কর। প্রতিপক্ষে জনপদের চারণগণ লৌকিক প্রেমের জয়গান গেয়ে ডেকেছেন : গোলাপের রূপমাধুরী পান কর।’
এই অধ্যায়ে লেখক গোলাপ ও গজলের অনুষঙ্গে লিখেছেন : ‘আসল কথা কাব্যজগতের ঐহিক প্রেমের একমাত্র ঘরানা গজলই মেলে পুষ্পভুবনের জাগতিক প্রেমের একমাত্র সখী গোলাপের সঙ্গে।’ কারণ লেখকের মতে, গোলাপে যেমন আছে দৈহিক প্রেমের অবিমিশ্র প্রেরণা, তেমনি গজলও শরীরী প্রেমের অভিব্যক্তি। বলা যায় গজল শব্দার্থগত সত্তা, গোলাপ নন্দনতত্ত্বগত সত্তা – মানুষের ঐহিক প্রেমের ল্যান্ডস্কেপ গোলাপ আর সাউন্ডস্কেপ গজল।
আর একটি তথ্যবিপ্লব-কেন্দ্রিক। লেখকের ভাষ্য এই যে, গোলাপ-বিপ্লব ও ফরাসি-বিপ্লব ১৭৮৯ সালে সূচিত হয়। ওই বছরে ‘সেটারস ক্রিমসন চায়না’ নামের চীন দেশের গোলাপটি ইউরোপে আসে। এই গোলাপটি কলকাতা থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক জাহাজের ক্যাপ্টেন নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেটি কোম্পানির ডিরেক্টর গিলবার্ট স্লেটারকে উপহার দিয়েছিলেন।
লেখক এই অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে, গোলাপ-সম্পর্কে প্রথম গ্রন্থ রচিত হয় ১৭৯৯ সালে। লিখেছেন ম্যারি ল্যা›স। এই বইয়ে নব্বইটি ছবি ছিল। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গোলাপ-বিষয়ক বই বলে সমাদৃত হয় ফরাসি চিত্র888sport live chatী র্যদুতের আঁকা লে রোজ বইটি। ১৮১৭ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে তিন খণ্ডে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই অধ্যায়ে লেখক ইংরেজ ও ফরাসি জাতির গোলাপের প্রতি ভালোবাসার অনেক তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এখনো ইংল্যান্ডের সরকারি ফুল গোলাপ। ইংল্যান্ডবাসী গোলাপকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দিয়েছে। তিনি আধুনিক গোলাপের গন্ধদারিদ্র্যের কথাও উল্লেখ করেছেন চমৎকার বর্ণনায়।
লেখক এই অধ্যায় শেষ করেছেন গোলাপের সমাজতত্ত্ব দিয়ে। বলেছেন, কীভাবে সাধারণ দরিদ্র মানুষের মনেও ফুলের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। লেখকের বাগান থেকে একটি ফুল চায় ভিখারিনিও। কিংবা ইট-ভাঙা-888sport promo code। বলে, একটা ফুল আমারেও দ্যাও না, বাবা! – তোমার আবার কী কাজে লাগবে ফুল? – কামে না লাগলেও এমন একটা সোন্দর জিনিস কার না বালা লাগে – আমরাও তো মানুষ।’ লেখক লিখছেন,
‘আমি রমণীটির ভিতরে ডি-হিউম্যানাইজেশনের জেরটাই বিশেষভাবে প্রণিধান করছিলাম – যে-জন্যে বেচারির নিজেকে কেবলি ‘মানুষ’ বলে দাবি করতে হচ্ছিল। এই মানুষের ফুলের চেয়েও বেশি প্রয়োজন ক্ষুধার নিবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় – ‘ফুলের শখ পেটের জ্বালার সঙ্গে জবরদস্তিতে সমকক্ষ নয়… ক্ষুধার সময়ে বকুলের চেয়ে বার্তাকুর দাম বেশি হয়।’ সে-কারণে কবি গোলাপের পক্ষ ত্যাগ করে লেখেন: ‘গোলাপের বিপরীতে কবি তাই চললেন একা।’ লেখক রসিকতা করে লিখেছেন, ‘গোলাপের বিপরীতে এত বেশি লোক চলে যে ও-পথে একা চলা কবির পক্ষে সম্ভবও নয়।’ আসলে এটাতো সত্যি ফুল ও খাদ্য পরস্পরের পরিপূরক। গোলাপের সমাজতত্ত্ব এড়িয়ে শুধু এর সৌন্দর্যের বয়ান লেখকের কাম্য ছিল না। তাই তিনি গোলাপের সৌন্দর্য গণমানুষের হৃদয়কেও যে ভরিয়ে দেয় সে-সত্য থেকে সরে আসেননি। এখানেই তাঁর অনুভবের ঋদ্ধি।
দুই
কত বিচিত্র তথ্য যে আছে এ-বইয়ে, তা বলে শেষ করা যাবে না। এ-বই যেন ‘গোলাপ-এনসাইক্লোপেডিয়া’। ভাবতে অবাক লাগে, একজন মানুষ এককভাবে এত বিচিত্র তথ্য সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করেছেন এ-বই। এত অজানা তথ্যের সমাহারে পূর্ণ হয়ে ওঠে গোলাপ নিয়ে পাঠকের তৃষ্ণা। কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের শিরোনাম, ‘কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে গোলাপ নিয়ে একদিন’। এই সাক্ষাৎকারে লেখক অজস্র খুঁটিনাটি বিষয়ের অবতারণা করে প্রাণবন্ত করেছেন সাক্ষাৎকারটি।
লেখক জানাচ্ছেন : ‘যে-সংস্কৃতিতে নর888sport promo codeর খোলামেলা কথা বলার অধিকার ছিল না, তাদের কথা বলার ভার পড়েছিল ফুলের ওপর।’ অর্থাৎ প্রেমের সংকেত হিসেবে ফুলকে ব্যবহার করা হতো। এর চর্চা মূলত হতো হারেমে। একজন তরুণ পাণিপ্রার্থী জানত যে, আইরিস নামের ফুলটি ‘না’ সংকেতের, আর নীল ফুলটি ছিল হ্যাঁ-সংকেতের প্রতীক। যাকে ফুল পাঠানো হতো সে ফুলটি ঠোঁটে ছোঁয়ালে উত্তরটা ছিল ‘হ্যাঁ’। আর ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ফেললে উত্তর হতো ‘না’। লেখক বলছেন, সেই সময়ে প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে টেলিফোনের বিকল্প ছিল ফুলসংকেত। আর প্রেমের ক্ষেত্রে গোলাপ তো কাক্সিক্ষত ফুল।
গোলাপের কাঁটা আসলে কাঁটা নয়, এ-তথ্য জানিয়েছেন লেখক। বেলাল চৌধুরী বলছেন, ‘তবে গোলাপের কাঁটা কিন্তু মারাত্মক মামা।’ লেখক বলছেন, ‘মারাত্মক হলেও মেকি। কারণ, শাখায় থাকলেও ওটা শাখাকণ্টক নয়, পত্রকণ্টক মাত্র – অর্থাৎ থর্ন নয়, স্পাইন। লেখক বলছেন, আধুনিক গোলাপ আসলে একটা পরগাছা এবং শোষক। কারণ, ‘আধুনিক গোলাপ হয়ে ওঠে আলোকোজ্জ্বল মহানগর আর এলাকার জংলা গোলাপঝাড় বনে যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন গণ্ডগ্রাম।’ একই সঙ্গে লেখক তাঁর চমৎকার ব্যঙ্গরসাত্মক ভঙ্গিতে গোলাপকে মিলিয়েছেন এভাবে, ‘অতঃপর প্রথমটি হয়ে যায় প্রথম বিশ্ব আর দ্বিতীয়টি তৃতীয় বিশ্ব¦।’ গোলাপ-প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লেখক অন্য ফুলের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। যেমন, এই যে বাগান মাত করা এত রঙের বাহার দেখি আমরা মুসায়েন্ডাতে – সেগুলো কিন্তু ফুল নয়, ফুলের
পাপড়িও নয়, ফুলের রক্ষাকর্তা সেপাল বা বৃত্যাংশমাত্র।’ আবার বোগেনভেলিয়া-প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই কালটিভারটির ফুল বলতে রঙিন কাগজের মতো যেগুলি আমরা দেখি – সেগুলি কিন্তু ফুল নয়, ফুলের নিকটতম আবরণী কিংবা দেহরক্ষী ব্যাক্ট বা পুষ্পধর-মঞ্জুরী।’ লেখক হল্যান্ডের রূপসী টিউলিপের ব্যবসায়িক কীর্তির কথা বলেছেন – ‘আমস্টার্ডামকে ইউরোপের রাজধানীর খ্যাতি এনে দিয়ে থাকে – তবে ঊনবিংশ শতকে টিউলিপ ফুলটি হল্যান্ডকে ‘ইউরোপের বাগান’ উপাধিটি এনে দিয়েছে। তবে বেলাল চৌধুরীর প্রশ্ন ছিল, ‘টিউলিপও ভালোবাসা জানাতো? গোলাপের মতো?’ লেখকের সাফ জবাব, গোলাপের মতো ভালোবাসা জানাবার ক্ষমতা অন্য ফুলের নেই। সঙ্গে সঙ্গে লেখক এ-তথ্যও দিয়েছেন যে, টিউলিপ হল্যান্ডের শেয়ারবাজারে ধস নামিয়েছিল ১৬৩৭ সালে। গোলাপ কখনো এমন অপকর্ম করেনি। লেখক জানিয়েছেন, গোলাপের জন্য কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এমন তথ্য ফুলের ইতিহাসে নেই, কিন্তু ক্যামেলিয়ার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে একাধিক ব্যক্তি। গোলাপ-আলোচনা-প্রসঙ্গে লেখক 888sport appsের জাতীয় ফুল শাপলা-সম্পর্কেও চমৎকার আলোচনা করেছেন। তাঁর কাছ থেকেই জানতে
পারলাম যে, বাংলা ভাষার অভিধানগুলোতে শাপলা শব্দটির ভুক্তি নেই। এমনকি অন্য শব্দের অধীনে শাপলা শব্দের কোনো স্থান নেই। ভাবতে পারিনি এই বই পড়তে গিয়ে এমন একটি প্রসঙ্গের মুখোমুখি হবো। অবাক না হয়ে পারিনি।
এ-বইয়ের বিচিত্র সব তথ্যের কথা উল্লেখ করে শেষ করা যাবে না। আলোচনা দীর্ঘ হতে থাকবে নিঃসন্দেহে। ফলে রাশ তো এক জায়গায় টানতে হবে। তারপরও আরো দু-একটা কথা। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গোলাপের নাম দিয়েছিলেন – ‘গোলাবলাল গন্ধ্যোপাধ্যায়’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে বিভিন্ন দেশ থেকে গোলাপ-চারা এনে বাগান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ গোলাপ ফুলের ব্যবসা-প্রসঙ্গে প্রিয়নাথ সেনকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘এ অঞ্চলের নদীতীরের বেলে জমি গোলাপের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল ংড়রষ… গোলাপের ব্যবসায় তোমার মতো সৌন্দর্যপিপাসুর উপযুক্ত হতে পারে -।’ লেখক জানিয়েছেন, ‘মোগলরা যেমন গোলাপকে বঙ্গদেশ পর্যন্ত আনেনি তেমনি পাকিস্তানিরাও পুষ্পটিকে পূর্ববঙ্গ পর্যন্ত আনেনি।’ কবি বেলাল চৌধুরী বলেছেন, ‘এ দেশে আধুনিক গোলাপের চর্চা যেন দেশটা স্বাধীন হবারই অপেক্ষায় ছিল।’
এ-গ্রন্থের একটি অধ্যায় ‘ছোটগল্প: পটভূমিতে গোলাপ’। গল্প তিনটির নাম গোলাপধোলাই, ফানুস ও গোলাপচিত্র। বইয়ের শেষ দিকে আরো দুটি অধ্যায় আছে। একটির নাম ‘বুনো গোলাপের সুখদুখ,’ অন্যটি ‘আরো গোলাপ’। প্রথম অধ্যায়টি সূচিত হয়েছে এভাবে: ‘গোলাপ বলতেই আমি দুজন গোলাপকে দেখি : একজন বিলাসিনী, একজন বিলাপিনী।… আগে বুনোগোলাপের খবর কওয়া যাক। আমার যে প্রথমে ওকেই মনে পড়ে, ওই বিলাপিনীকে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, রোজা ক্লিনোফিলা। ভূমণ্ডলের সবচেয়ে উষ্ণমণ্ডলীয় এই বুনোগোলাপটি ফুটত ইস্ট বেঙ্গলের, মানে আমাদের 888sport appsেরই বুকে। ঋজু, বলিষ্ঠ সেই প্রজাতিটি ছিল অর্ধ-লতানে গুল্মশ্রেণির।… বন্যেয় সেই বন্য গোলাপগুল্ম এতই উষ্ণমণ্ডলীয় ছিল যে, সে খালবিলের জলাভূমিতেই জন্মাত বেশি এবং বর্ষাকালে, নিজে আকণ্ঠ-জলে ডুবেও জলের ওপর তুলে রাখত শুধু তার পুষ্পিত শাখাগুলো।’ তবে দুঃখের বিষয় যে, পরবর্তী সময়ে এই প্রজাতির গোলাপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। লেখক আরেকটি চমৎকার তথ্য
দিয়েছেন : ‘বন্যগোলাপ থেকে উদ্যানগোলাপ, প্রাচ্য ও প্রতীচ্য গোলাপের পরিণয় এবং
আধুনিক গোলাপের জন্ম।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘চলতি শতকে উদ্যানগোলাপের চোখধাঁধানো ঊর্ধ্বগতি অর্জিত হয়েছে বুনোগোলাপের চোখভেজানো অধঃগতির বিনিময়ে।’ এভাবে বুনোগোলাপের রূপান্তরের চমৎকার বর্ণনা আছে এই অধ্যায়ে।
আর ‘দশ মিনিটে গোলাপের কথা’ অধ্যায়ে আছে নানা তথ্য : ১. প্রেমিকা ভিনাসের পা থেকে কাঁটার ঘায়ে যে-রক্ত ঝরেছিল, সে-রক্ত হয়ে ওঠে গোলাপ। ২. পুরাণে আরো আছে যে, ভিনাসের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সিবিল তার প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে সৃষ্টি করেন গোলাপকে। ৩. কেউ বলেন প্রেমের দেবতা কিউপিডের হাসির প্রকাশ গোলাপ। ৪. আর একটি উপকথা এমন যে, সাদা গোলাপ স্বর্গে ফুটেছিল। ইভ তাকে চু¤¦ন করতে গেলে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ৫. আরব্য উপাখ্যানে আছে, পদ¥ফুল রাতে ঘুমায়, তাই ঈশ্বর রাতদিন ফুটে থাকা গোলাপ সৃষ্টি করেন।
এমন আরো তথ্য আছে উপকথা, পুরাণ-প্রসঙ্গে। লেখক ইতিহাস থেকেও তথ্য দিতে ছাড়েননি। যেমন : ১. মানুষের আবির্ভাব দশ লক্ষ বছর আগে। আর গোলাপের আবির্ভাব তিনশ থেকে ছয়শ লক্ষ বছর আগে। ২. ইউরোপে গোলাপ প্রথমে যায় গ্রিসে, তারপর রোমে। ৩. রোমান সৈনিকরা গোলাপের মালা পরে যুদ্ধে যেতেন, আর যুদ্ধে জিতলে রথ থাকত গোলাপসজ্জিত। মিশর থেকে গোলাপ-পাপড়ি নৌকায় করে আমদানি করা হতো। ৪. ভারতবর্ষে গোলাপ নিয়ে আসেন মোগল সম্রাট আকবর। ৫. বঙ্গদেশে গোলাপ আসে ব্রিটিশ আমলে, উপনিবেশের সূত্রে। ৬. ১৯৮২ সালে 888sport apps জাতীয় গোলাপ-সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু হয় গোলাপ-প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ও প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতার পরে 888sport appsে গোলাপচর্চা শুরু হয় এবং দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। বেশ কয়েকজন বাঙালির হাতে গোলাপের সংকরায়ণও ঘটে। সংকরায়িত নতুন গোলাপ 888sport appsের গোলাপচর্চার বড় অবদান।
তিন
এই বইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য দিক তার ভাষা। লেখকের শব্দমনস্কতার দৃষ্টান্ত যেমন পাওয়া যায়, তেমনি কৌতুকরসে সমৃদ্ধ বাক্যের পাশাপাশি আলোচনার গভীরতা ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে বাক্যের দৃঢ়বদ্ধ গাঁথুনি পরিস্ফুট হতে দেখা যায়। কখনো তির্যক শ্লেষের ভাষা, কখনো প্রেম-প্রকাশে ভাষার কমনীয়তা বইটিতে ঈর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
তবে বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার-প্রসঙ্গে কোথাও কোথাও ভাষা আড়ষ্ট এবং কৃত্রিম মনে হয়েছে। ঠিক মুখের ভাষায় কথোপকথনের আমেজ পাওয়া যায় না। তবে শেষ করি লেখকের আহ্বান দিয়ে – ‘মনের অঙ্গনে গোলাপ ফোটাতে হলে জমিনের কোণেও গোলাপ ফোটাতে হবে।’ গৃহকোণের কোথাও দুটো গাছ লাগালেও দৃষ্টিনন্দিত হবে। মনের অঙ্গনকে বিকশিত করতে হলে জমিনও চাই। গোলআলু, বরবটির কাছে সবটুকু বিকিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অপূর্ব এ-বইটির প্রকাশনা করেছে মাওলা ব্রাদার্স। তাদেরকে ধন্যবাদ। য়এক জাহাজের ক্যাপ্টেন নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেটি কোম্পানির ডিরেক্টর গিলবার্ট স্লেটারকে উপহার দিয়েছিলেন।
লেখক এই অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে, গোলাপ-সম্পর্কে প্রথম গ্রন্থ রচিত হয় ১৭৯৯ সালে। লিখেছেন ম্যারি ল্যা›স। এই বইয়ে নব্বইটি ছবি ছিল। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গোলাপ-বিষয়ক বই বলে সমাদৃত হয় ফরাসি চিত্র888sport live chatী র্যদুতের আঁকা লে রোজ বইটি। ১৮১৭ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে তিন খণ্ডে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই অধ্যায়ে লেখক ইংরেজ ও ফরাসি জাতির গোলাপের প্রতি ভালোবাসার অনেক তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এখনো ইংল্যান্ডের সরকারি ফুল গোলাপ। ইংল্যান্ডবাসী গোলাপকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দিয়েছে। তিনি আধুনিক গোলাপের গন্ধদারিদ্র্যের কথাও উল্লেখ করেছেন চমৎকার বর্ণনায়।
লেখক এই অধ্যায় শেষ করেছেন গোলাপের সমাজতত্ত্ব দিয়ে। বলেছেন, কীভাবে সাধারণ দরিদ্র মানুষের মনেও ফুলের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। লেখকের বাগান থেকে একটি ফুল চায় ভিখারিনিও। কিংবা ইট-ভাঙা-888sport promo code। বলে, একটা ফুল আমারেও দ্যাও না, বাবা! – তোমার আবার কী কাজে লাগবে ফুল? – কামে না লাগলেও এমন একটা সোন্দর জিনিস কার না বালা লাগে – আমরাও তো মানুষ।’ লেখক লিখছেন,
‘আমি রমণীটির ভিতরে ডি-হিউম্যানাইজেশনের জেরটাই বিশেষভাবে প্রণিধান করছিলাম – যে-জন্যে বেচারির নিজেকে কেবলি ‘মানুষ’ বলে দাবি করতে হচ্ছিল। এই মানুষের ফুলের চেয়েও বেশি প্রয়োজন ক্ষুধার নিবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় – ‘ফুলের শখ পেটের জ্বালার সঙ্গে জবরদস্তিতে সমকক্ষ নয়… ক্ষুধার সময়ে বকুলের চেয়ে বার্তাকুর দাম বেশি হয়।’ সে-কারণে কবি গোলাপের পক্ষ ত্যাগ করে লেখেন: ‘গোলাপের বিপরীতে কবি তাই চললেন একা।’ লেখক রসিকতা করে লিখেছেন, ‘গোলাপের বিপরীতে এত বেশি লোক চলে যে ও-পথে একা চলা কবির পক্ষে সম্ভবও নয়।’ আসলে এটাতো সত্যি ফুল ও খাদ্য পরস্পরের পরিপূরক। গোলাপের সমাজতত্ত্ব এড়িয়ে শুধু এর সৌন্দর্যের বয়ান লেখকের কাম্য ছিল না। তাই তিনি গোলাপের সৌন্দর্য গণমানুষের হৃদয়কেও যে ভরিয়ে দেয় সে-সত্য থেকে সরে আসেননি। এখানেই তাঁর অনুভবের ঋদ্ধি।
দুই
কত বিচিত্র তথ্য যে আছে এ-বইয়ে, তা বলে শেষ করা যাবে না। এ-বই যেন ‘গোলাপ-এনসাইক্লোপেডিয়া’। ভাবতে অবাক লাগে, একজন মানুষ এককভাবে এত বিচিত্র তথ্য সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করেছেন এ-বই। এত অজানা তথ্যের সমাহারে পূর্ণ হয়ে ওঠে গোলাপ নিয়ে পাঠকের তৃষ্ণা। কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের শিরোনাম, ‘কবি বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে গোলাপ নিয়ে একদিন’। এই সাক্ষাৎকারে লেখক অজস্র খুঁটিনাটি বিষয়ের অবতারণা করে প্রাণবন্ত করেছেন সাক্ষাৎকারটি।
লেখক জানাচ্ছেন : ‘যে-সংস্কৃতিতে নর888sport promo codeর খোলামেলা কথা বলার অধিকার ছিল না, তাদের কথা বলার ভার পড়েছিল ফুলের ওপর।’ অর্থাৎ প্রেমের সংকেত হিসেবে ফুলকে ব্যবহার করা হতো। এর চর্চা মূলত হতো হারেমে। একজন তরুণ পাণিপ্রার্থী জানত যে, আইরিস নামের ফুলটি ‘না’ সংকেতের, আর নীল ফুলটি ছিল হ্যাঁ-সংকেতের প্রতীক। যাকে ফুল পাঠানো হতো সে ফুলটি ঠোঁটে ছোঁয়ালে উত্তরটা ছিল ‘হ্যাঁ’। আর ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ফেললে উত্তর হতো ‘না’। লেখক বলছেন, সেই সময়ে প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে টেলিফোনের বিকল্প ছিল ফুলসংকেত। আর প্রেমের ক্ষেত্রে গোলাপ তো কাক্সিক্ষত ফুল।
গোলাপের কাঁটা আসলে কাঁটা নয়, এ-তথ্য জানিয়েছেন লেখক। বেলাল চৌধুরী বলছেন, ‘তবে গোলাপের কাঁটা কিন্তু মারাত্মক মামা।’ লেখক বলছেন, ‘মারাত্মক হলেও মেকি। কারণ, শাখায় থাকলেও ওটা শাখাকণ্টক নয়, পত্রকণ্টক মাত্র – অর্থাৎ থর্ন নয়, স্পাইন। লেখক বলছেন, আধুনিক গোলাপ আসলে একটা পরগাছা এবং শোষক। কারণ, ‘আধুনিক গোলাপ হয়ে ওঠে আলোকোজ্জ্বল মহানগর আর এলাকার জংলা গোলাপঝাড় বনে যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন গণ্ডগ্রাম।’ একই সঙ্গে লেখক তাঁর চমৎকার ব্যঙ্গরসাত্মক ভঙ্গিতে গোলাপকে মিলিয়েছেন এভাবে, ‘অতঃপর প্রথমটি হয়ে যায় প্রথম বিশ্ব আর দ্বিতীয়টি তৃতীয় বিশ্ব¦।’ গোলাপ-প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লেখক অন্য ফুলের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। যেমন, এই যে বাগান মাত করা এত রঙের বাহার দেখি আমরা মুসায়েন্ডাতে – সেগুলো কিন্তু ফুল নয়, ফুলের
পাপড়িও নয়, ফুলের রক্ষাকর্তা সেপাল বা বৃত্যাংশমাত্র।’ আবার বোগেনভেলিয়া-প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই কালটিভারটির ফুল বলতে রঙিন কাগজের মতো যেগুলি আমরা দেখি – সেগুলি কিন্তু ফুল নয়, ফুলের নিকটতম আবরণী কিংবা দেহরক্ষী ব্যাক্ট বা পুষ্পধর-মঞ্জুরী।’ লেখক হল্যান্ডের রূপসী টিউলিপের ব্যবসায়িক কীর্তির কথা বলেছেন – ‘আমস্টার্ডামকে ইউরোপের রাজধানীর খ্যাতি এনে দিয়ে থাকে – তবে ঊনবিংশ শতকে টিউলিপ ফুলটি হল্যান্ডকে ‘ইউরোপের বাগান’ উপাধিটি এনে দিয়েছে। তবে বেলাল চৌধুরীর প্রশ্ন ছিল, ‘টিউলিপও ভালোবাসা জানাতো? গোলাপের মতো?’ লেখকের সাফ জবাব, গোলাপের মতো ভালোবাসা জানাবার ক্ষমতা অন্য ফুলের নেই। সঙ্গে সঙ্গে লেখক এ-তথ্যও দিয়েছেন যে, টিউলিপ হল্যান্ডের শেয়ারবাজারে ধস নামিয়েছিল ১৬৩৭ সালে। গোলাপ কখনো এমন অপকর্ম করেনি। লেখক জানিয়েছেন, গোলাপের জন্য কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এমন তথ্য ফুলের ইতিহাসে নেই, কিন্তু ক্যামেলিয়ার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে একাধিক ব্যক্তি। গোলাপ-আলোচনা-প্রসঙ্গে লেখক 888sport appsের জাতীয় ফুল শাপলা-সম্পর্কেও চমৎকার আলোচনা করেছেন। তাঁর কাছ থেকেই জানতে
পারলাম যে, বাংলা ভাষার অভিধানগুলোতে শাপলা শব্দটির ভুক্তি নেই। এমনকি অন্য শব্দের অধীনে শাপলা শব্দের কোনো স্থান নেই। ভাবতে পারিনি এই বই পড়তে গিয়ে এমন একটি প্রসঙ্গের মুখোমুখি হবো। অবাক না হয়ে পারিনি।
এ-বইয়ের বিচিত্র সব তথ্যের কথা উল্লেখ করে শেষ করা যাবে না। আলোচনা দীর্ঘ হতে থাকবে নিঃসন্দেহে। ফলে রাশ তো এক জায়গায় টানতে হবে। তারপরও আরো দু-একটা কথা। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গোলাপের নাম দিয়েছিলেন – ‘গোলাবলাল গন্ধ্যোপাধ্যায়’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে বিভিন্ন দেশ থেকে গোলাপ-চারা এনে বাগান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ গোলাপ ফুলের ব্যবসা-প্রসঙ্গে প্রিয়নাথ সেনকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘এ অঞ্চলের নদীতীরের বেলে জমি গোলাপের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল ংড়রষ… গোলাপের ব্যবসায় তোমার মতো সৌন্দর্যপিপাসুর উপযুক্ত হতে পারে -।’ লেখক জানিয়েছেন, ‘মোগলরা যেমন গোলাপকে বঙ্গদেশ পর্যন্ত আনেনি তেমনি পাকিস্তানিরাও পুষ্পটিকে পূর্ববঙ্গ পর্যন্ত আনেনি।’ কবি বেলাল চৌধুরী বলেছেন, ‘এ দেশে আধুনিক গোলাপের চর্চা যেন দেশটা স্বাধীন হবারই অপেক্ষায় ছিল।’
এ-গ্রন্থের একটি অধ্যায় ‘ছোটগল্প: পটভূমিতে গোলাপ’। গল্প তিনটির নাম গোলাপধোলাই, ফানুস ও গোলাপচিত্র। বইয়ের শেষ দিকে আরো দুটি অধ্যায় আছে। একটির নাম ‘বুনো গোলাপের সুখদুখ,’ অন্যটি ‘আরো গোলাপ’। প্রথম অধ্যায়টি সূচিত হয়েছে এভাবে: ‘গোলাপ বলতেই আমি দুজন গোলাপকে দেখি : একজন বিলাসিনী, একজন বিলাপিনী।… আগে বুনোগোলাপের খবর কওয়া যাক। আমার যে প্রথমে ওকেই মনে পড়ে, ওই বিলাপিনীকে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, রোজা ক্লিনোফিলা। ভূমণ্ডলের সবচেয়ে উষ্ণমণ্ডলীয় এই বুনোগোলাপটি ফুটত ইস্ট বেঙ্গলের, মানে আমাদের 888sport appsেরই বুকে। ঋজু, বলিষ্ঠ সেই প্রজাতিটি ছিল অর্ধ-লতানে গুল্মশ্রেণির।… বন্যেয় সেই বন্য গোলাপগুল্ম এতই উষ্ণমণ্ডলীয় ছিল যে, সে খালবিলের জলাভূমিতেই জন্মাত বেশি এবং বর্ষাকালে, নিজে আকণ্ঠ-জলে ডুবেও জলের ওপর তুলে রাখত শুধু তার পুষ্পিত শাখাগুলো।’ তবে দুঃখের বিষয় যে, পরবর্তী সময়ে এই প্রজাতির গোলাপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। লেখক আরেকটি চমৎকার তথ্য
দিয়েছেন : ‘বন্যগোলাপ থেকে উদ্যানগোলাপ, প্রাচ্য ও প্রতীচ্য গোলাপের পরিণয় এবং
আধুনিক গোলাপের জন্ম।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘চলতি শতকে উদ্যানগোলাপের চোখধাঁধানো ঊর্ধ্বগতি অর্জিত হয়েছে বুনোগোলাপের চোখভেজানো অধঃগতির বিনিময়ে।’ এভাবে বুনোগোলাপের রূপান্তরের চমৎকার বর্ণনা আছে এই অধ্যায়ে।
আর ‘দশ মিনিটে গোলাপের কথা’ অধ্যায়ে আছে নানা তথ্য : ১. প্রেমিকা ভিনাসের পা থেকে কাঁটার ঘায়ে যে-রক্ত ঝরেছিল, সে-রক্ত হয়ে ওঠে গোলাপ। ২. পুরাণে আরো আছে যে, ভিনাসের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সিবিল তার প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে সৃষ্টি করেন গোলাপকে। ৩. কেউ বলেন প্রেমের দেবতা কিউপিডের হাসির প্রকাশ গোলাপ। ৪. আর একটি উপকথা এমন যে, সাদা গোলাপ স্বর্গে ফুটেছিল। ইভ তাকে চু¤¦ন করতে গেলে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ৫. আরব্য উপাখ্যানে আছে, পদ¥ফুল রাতে ঘুমায়, তাই ঈশ্বর রাতদিন ফুটে থাকা গোলাপ সৃষ্টি করেন।
এমন আরো তথ্য আছে উপকথা, পুরাণ-প্রসঙ্গে। লেখক ইতিহাস থেকেও তথ্য দিতে ছাড়েননি। যেমন : ১. মানুষের আবির্ভাব দশ লক্ষ বছর আগে। আর গোলাপের আবির্ভাব তিনশ থেকে ছয়শ লক্ষ বছর আগে। ২. ইউরোপে গোলাপ প্রথমে যায় গ্রিসে, তারপর রোমে। ৩. রোমান সৈনিকরা গোলাপের মালা পরে যুদ্ধে যেতেন, আর যুদ্ধে জিতলে রথ থাকত গোলাপসজ্জিত। মিশর থেকে গোলাপ-পাপড়ি নৌকায় করে আমদানি করা হতো। ৪. ভারতবর্ষে গোলাপ নিয়ে আসেন মোগল সম্রাট আকবর। ৫. বঙ্গদেশে গোলাপ আসে ব্রিটিশ আমলে, উপনিবেশের সূত্রে। ৬. ১৯৮২ সালে 888sport apps জাতীয় গোলাপ-সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু হয় গোলাপ-প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ও প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতার পরে 888sport appsে গোলাপচর্চা শুরু হয় এবং দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। বেশ কয়েকজন বাঙালির হাতে গোলাপের সংকরায়ণও ঘটে। সংকরায়িত নতুন গোলাপ 888sport appsের গোলাপচর্চার বড় অবদান।
তিন
এই বইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য দিক তার ভাষা। লেখকের শব্দমনস্কতার দৃষ্টান্ত যেমন পাওয়া যায়, তেমনি কৌতুকরসে সমৃদ্ধ বাক্যের পাশাপাশি আলোচনার গভীরতা ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে বাক্যের দৃঢ়বদ্ধ গাঁথুনি পরিস্ফুট হতে দেখা যায়। কখনো তির্যক শ্লেষের ভাষা, কখনো প্রেম-প্রকাশে ভাষার কমনীয়তা বইটিতে ঈর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
তবে বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার-প্রসঙ্গে কোথাও কোথাও ভাষা আড়ষ্ট এবং কৃত্রিম মনে হয়েছে। ঠিক মুখের ভাষায় কথোপকথনের আমেজ পাওয়া যায় না। তবে শেষ করি লেখকের আহ্বান দিয়ে – ‘মনের অঙ্গনে গোলাপ ফোটাতে হলে জমিনের কোণেও গোলাপ ফোটাতে হবে।’ গৃহকোণের কোথাও দুটো গাছ লাগালেও দৃষ্টিনন্দিত হবে। মনের অঙ্গনকে বিকশিত করতে হলে জমিনও চাই। গোলআলু, বরবটির কাছে সবটুকু বিকিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অপূর্ব এ-বইটির প্রকাশনা করেছে মাওলা ব্রাদার্স। তাদেরকে ধন্যবাদ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.