ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী হলো চায়ের নাম। আরো কত তার নাম, কত দেমাগ! হাজার হাজার বছর ধরে সে তার এই নাম, যশ, প্রতিপত্তি, রূপ ও যৌবন কুড়িয়েছে। আর এখনো সে অনন্তযৌবনা, রূপসী, গুণবতী, ক্ষুরধার রসবতী। সে নিজে যেমন রসময়ী পরকেও করে রসসিক্ত ও বোধসম্পন্ন।
ওর দর্শনপ্রার্থী হয়ে গত শ্রাবণের এক সকালে চলে যাই ওয়াগ্গা। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই সড়ক ধরে আমার গ্রামের অদূর দিয়ে চন্দ্রঘোনার পরেই ওয়াগ্গা। এক ঘণ্টায় আয়েশ করে পৌঁছলাম। মাত্র চল্লিশ মাইল দূরত্ব। পাহাড় ও নদীর মায়ার খেলা সেখানে অনুভব করা যায়। সেই পাহাড়ের নাম সীতা পাহাড়, নদীর নাম কর্ণফুলী। কর্ণফুলীর বাঁ দিকে সীতা পাহাড়ের পদপ্রান্তে ওয়াগ্গা চা-বাগান। আপনি হয়ত দেখেছেন নদীর এপার থেকে, সেই দেখা বলা যায় অসমাপ্ত, অর্ধসমাপ্ত বা সে-রকম অন্য কিছু।
শ্রাবণ মাস কিন্ত্ত অঝোর ধারা ছিল না। সজল হাওয়া আর জলভরা মেঘের আনাগোনা ছিল। হাল্কা সাদা মেঘের পানসিও ছিল। কাজেই যে-কোনো সময় দুশ্-এক পশলা বৃষ্টি নেমে আসার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। ইলশে গুঁড়ো বৃষ্টি বা বৃষ্টির ধুলো উড়ে গেছে দুশ্বার। রোদের মেখলার সঙ্গে সোনালি রেণুর ঐশ্বর্য ভেসে গেল আমাদের চকিত করে। এমন বৃষ্টির ধুলোয় পথ চলার সম্ভোগই অসাধারণ আর অসচরাচর। তাতে অবগাহনের অনুরাগও রোমাঞ্চকর।
ঘ্রাণসম্রাজ্ঞীর অভিসারে যেতে গিয়ে হারাতে হলো সদ্য পরিচিত এক বিদুষী মহিলার দুর্নিবার সান্নিধ্য। প্রবল অনিচ্ছায় তাঁকে ফেলে চলে যেতে হলো। মন ও হূদয় মানেনি। কিন্ত্ত আগের দিন কথা দিয়েছি চা-বাগানের মালিক বয়স্যকে। আগের দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই
কবি আকতার হোসাইন ও কামরুল হাসান বাদল গাড়িতে অপেক্ষা করছে চকবাজারের শিখ গুরুদুয়ারা মন্দিরের সামনে। পাশেই বড়দির বাসায় আমি উঠেছি 888sport app থেকে এসে।
মোবাইলে ডাকছে, বিপ্রদা, চলে আসুন। ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী বিমুখ হলে মানভঞ্জন খুব কঠিন হয়ে যাবে। ওর দেমাগও রাজেন্দ্রাণী মাফিক।
আগের দিন আমি ওদের ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী নামটির কথা বলেছি। চট্টগ্রামের শৈলী প্রকাশনা অফিসের আড্ডায়। কবি রাশেদ রউফ তার জিম্মাদার। জিম্মাদার বলছি এজন্য যে শৈলীর মালিক খুব সম্ভবত তার সদ্য প্রয়াত পত্নী শামীম আকতার শিমু।
শ্যামপর্ণী, অতন্দ্রী, গিরিভিৎ, শ্লেষ্মারি, চা, চায়, টে, টি ওরফে ঘ্রাণসম্রাজ্ঞীর জয় হলো। একজনকে ফেলে আরেকজনের প্রবল আকর্ষণে ছুটলাম। মানবীকে ফেলে অমানবীর সাহচর্যে। বেরিয়ে পড়লাম। আকতারের গাড়িতে করে মেহেদীবাগ গিয়ে কবি রাশেদ রউফকে নিলাম। আমাদের সঙ্গে কবি ওমর কায়সারের সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে ভোরের কাগজের জরুরি কাজে তাকে অনিচ্ছায় হারাতে হলো।
গাড়ি ছুটল চিত্ত গৌং বা চট্টগ্রাম ছেড়ে। কালুরঘাটের কাছে কাপ্তাই সড়কের মুখে আরেকটি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন আমিনুর রশীদ কাদেরী ও খুরশিদ কাদেরী, দুশ্ভাই। ওয়াগ্গা চা-বাগানের মালিক ওরা। ওদের গাড়িতে দুশ্জন হওয়াতে আমি গিয়ে সমতা ঠিক রাখলাম। আর আমিনুর রশীদ থেকে চা-বাগান সম্পর্কে জানা যাবে। চলতে চলতে থলে ভরে নেব। অনেকে অনেক কিছু জমায়। আমি না-হয় কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় গিয়ে সমুদ্রস্নান না করে স্নান-জমানোর মতো তেমন কিছু জমিয়ে নেব।
গাড়িতে বসে আমিনুর রশীদ চায়ের কিংবদন্তি উপাখ্যানটি বললেন। শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর ্লচিরঞ্জীব বনৌষধিশ্তে একই কথা লিখেছেন। ৪৯৫ সালে চীন দেশে বোধিসত্ত্বের মৃত্যু হয়। তিনি খুব বড় তপস্বী ছিলেন। প্রায় সময় সমাধিস্থ থাকতেন। সমাধিতে বসে একবার তাঁর এতই ঘুম পাচ্ছিল যে ধ্যানে একাগ্রতা আসছিল না। তখন তিনি হঠাৎ খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে দুশ্চোখের পাতা কেটে মাটিতে ফেলে দেন। মাটিতে পড়া চোখের পাতা থেকে একটি গাছ জন্মে। একদিন ওই গাছের কিছু পাতা বোধিসত্ত্ব খেয়ে নেন এবং তা ধ্যানের সহায়ক হয়। অর্থাৎ তাঁর নিদ্রা চলে যায় একথা অনুভব করতে পারলেন। তখন তিনি ওই গাছের গুণ ও প্রয়োগের কথা শিষ্যদের বলেন। এই গাছই চা। সে অতন্দ্রী। তন্দ্রাহরণী।
কাদেরী-ভাইদের বললাম, চা-কে আমরা আমাদেরও জাতীয় পানীয় বলতে পারি। শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ বা নিভৃত পাহাড়ি পল্লীতেও ওর প্রবল পরাক্রম। অতিথিকে এক কাপ চা না দিলেই নয়। রাতে চা না খেলে পড়ুয়াদের চোখ ঢলে পড়ে। অফিসে বাবু সাহেবদের চা ছাড়া চোখ না বুজে ভাবুন তো! চায়ের দোকানের আড্ডার আকর্ষণ! চায়ের কাপে ঝড়!
মহামুনি পাহাড়তলি থেকে টিলা বা ছোট পাহাড়ের সৌন্দর্যের ঢেউ-এর শুরু। তারপর রাঙ্গুনীয়ার মুড়া, ডানদিকে কাঁইচা বা কর্ণফুলী। তারপর চন্দ্রঘোনা থেকে পাহাড়ের রাজ্য শুরু। বাঁ দিকে ফেলে যাচ্ছি গুমাই বিল। ধানচাষের কাজ শেষ। ওয়াগ্গা পৌঁছার একটু আগে চন্দ্রঘোনা শেষ না হতেই ডানদিকে কর্ণফুলী এবার ছবি হয়ে গেল। অথবা রমণীর মতো শুয়ে আছে। সাপের মতো বলে উপমা দিলে ভয়ে শরীর শিরশির করে ওঠে। বাঁ দিকে পাহাড়, সেই পাহাড়ের উরুদেশে আঁকাবাঁকা বাঁধানো কাপ্তাই সড়ক। গাছপালা, ঝোপঝাড় ও বসতবাড়ি তাদের জায়গায় রেখে হু-হু ছুটছে আমাদের বাহন-দুশ্টি। নদীর ওপারে বৃষ্টি দিতে দিতে ছুটে চলেছে পয়োধর-সদৃশ মেঘ।
এই চিত্র ওয়াগ্গা ছেড়েও বহুদূর এগিয়ে গেছে। সামনে বাঁ দিকে চা-বাগানের অফিস। সঙ্গে বিশ্রাম ও রাতযাপনের বাংলো। বাগানে পেয়ারা ধরে আছে, ফুল ফুটে আছে। ডাঁসা ও পাকা পেয়ারা থাকতে কলাবতী রস্ট্রেটার দিকে গেলাম না। আকতার, রাশেদ ও বাদল লাল-হলুদ ফুলটা সম্পর্কে জানতে চাইল। অফিসের পাশে ঝাড় করেছে। কলাবতীতে এরকম ঝাড়ে খুব মানায়। লম্বা একটি ডাঁটিতে দুশ্দিকে কোনাকৃতি বা পানের খিলির মতো। লালের মাথায় হলুদ। ওপাশে শিউলি আছে। জেফির লিলি বা ঘাসফুল আছে। আগে পেয়ারার স্বাদ নেই, তারপর ফুলের গন্ধ নেব। ওদিক থেকে চায়ের ঘ্রাণ আসছে। মেশিনঘর থেকে। পেয়ারা নিয়ে চা খেতে এলাম। বুড়ো অং তোয়াই চীন চা বানিয়ে এনে দিল। মমতা দিয়ে বানিয়েছে। লেবু ঘ্রাণের ঘাস দিয়েছে, সামান্য চিনিও। 888sport appsে সুগন্ধি চা হয় না। চীন, জাপান ও ভারতের দার্জিলিঙের সুরভি চা আমাদের নেই। অং তোয়াই সে অভাব পুষিয়ে দিয়েছে ঘাসের ঘ্রাণ যোগ করে। অং তোয়াই বলল, এর নাম লাপ্পে।
বার্মায় চা-কে লাপ্পে বলে। বর্মী ও মারমা ভাষা একরকম। ইয়াঙ্গুনের এক পেগোডায় লাপ্পে খেয়েছি। পাট শাকের পাতা না কুটে শুকনো শুকনো করে ভাজলে যেমন হয় সে-রকম লাপ্পে। লিকার ছাড়া। ভাতের পর অল্প লাপ্পে ওরা খায় সম্ভবত তন্দ্রা বা আলসেমি দূরে ঠেলে রাখার জন্য। চায়ের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এই গুণ সম্পর্কে একবারও সন্দেহ দেখা দেয়নি। এজন্য চায়ের গুণবাচক নাম ্লঅতন্দ্রীশ্।
চা খেয়ে অফিসের পেছনে মেশিনঘরে গেলাম। জালের ওপর সদ্য তোলা চা-পাতা বিছিয়ে দিয়ে জালের নিচের সুড়ঙ্গ পথে এদিক-ওদিক থেকে পর্যায়ক্রমে পাখার তীব্র হাওয়া দিয়ে পাতা শুকোচ্ছে। ভেতরের ঘরে চা তৈরির পরের ধাপের মেশিন। একটি মেশিনে পাতাগুলো দিলে মেশিন নিজেই ্লদুটি পাতা একটি কুঁড়িশ্ রেখে বাড়তি পাতা ও ডাঁটি ফেলে দেবে। চা শ্রমিকেরা দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলে বাগান থেকে। এটিই নিয়ম। অসতর্ক মুহূর্তে বা দ্রুত কাজ করতে গিয়ে তিনটি বা চারটি পাতা ও একটি কুঁড়ি উঠে এলে চিন্তা নেই। ঐ মেশিনে দিয়ে ঠিক করে নেবে। বাড়তি পাতাটা সে ফেলে দেবে। মেশিনের নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসবে।
মূল মেশিনে গুঁড়ো বা কোলন হয়ে চা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ওদিকে আরো মেশিন আছে। এর আগের ধাপের মেশিন পাতা ও ডাঁটির বর্জ্য আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসে। একেবারে রোঁয়া রোঁয়া। এগুলো গাছের সার হয়। কিছু আছে রেখে দিতে হয়। আবগারি বিভাগের লোক এসে পুড়িয়ে ফেলে। এর উদ্দেশ্য হলো এই বর্জ্যগুলো যাতে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে না পারে, বাজারজাত হয়ে না যায়। এসব নানা প্রত্র্কিয়া। আমিও কি এতসব আগে জানতাম ছাই! দেখেও কি সব মনে রাখতে পেরেছি। না, রাখা যায়!
আহা ঘ্রাণ! সারা মেশিনঘর ঘ্রাণসম্রাজ্ঞীর গন্ধে মাতোয়ারা। আমার নাক-বুক ঘ্রাণে প্লবমান। আমার মেয়ে মেঘনা বলে, শুকনো চায়ের ঘ্রাণ জগতের শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি। ঘ্রাণরানীর সৌরভ আমাকে নিষিক্ত করে দিল। তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হয়ে সর্বহারা। পরিভোগশেষে শান্ত হওয়া। এমন আবেশ-বিহ্বলতা আর কে দিতে পারে!
চায়ের পরিবার ছোট নয়। এই পরিবারের গর্বিত অন্য সদস্যরাও দিগ্বিজয়ী। এরা হলো-১. চেরি, হর্থন ও গোলাপ; ২. পিচ, পিয়ার্স ও আপেল; ৩. ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী চা। এই তিন শাখায় এরা বিভক্ত। একই গোত্রের তিন পরিবারের কৃতী সন্তান সকলেই। প্রকৃতির অবাধ রাজ্য থেকে এদের একে একে তুলে এনে মানুষ তার পরিভোগ স্পৃহা পূর্ণ করেছে।
অফিস থেকে বেরিয়ে ঘাটে গেলাম। ঘাটের উজান দিকে নদীর পাড়ে দেখা যাচ্ছে জুম রেস্তোরাঁ। নদীর কূলে যেন ঝুলে আছে। বসে বসে খাওয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা। চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে বা প্রাইভেট কারে
এসে কেউ কেউ সন্ধ্যে কাটিয়ে যায় এখানে। দ্রুতগামী বিরতিহীন বাস আছে। সাধারণ বাস আছে। দ্বিগুণ ভাড়ায় বিলাসবহুল বাসও আছে। সকালে এসে পুরো এলাকা ঘুরে বিকেলে আবার চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যাওয়া যায়।
এখান থেকে সাম্পানে করে উজানে চিৎমরম। প্রাচীন এক বৌদ্ধ বিহার এই চিৎমরম। সাম্পানে আধ ঘণ্টার মতো লাগবে। নদীর দুশ্ধারে পাহাড়, সেই বিখ্যাত সীতা পাহাড়। পাহাড়ে একটা বাঁকের মতো আছে। নৌকো বা সাম্পানে গেলে মাঝিরা বলে দেবে এই বাঁকের নাম-বিজইন্যার বাঁক। প্রখর গরমেও এখানে ঠান্ডা হাওয়ার ব্যজন হয়। এজন্যই বহুকাল আগেই এর এই নাম হয়েছে। আমরা ছেলেবেলায় রাঙ্গুনীয়ার ইছামতী গ্রাম থেকে গুদারা নৌকোয় করে দলবল নিয়ে চিৎমরম যেতাম। চিৎমরমের শাক্যমুনি বুদ্ধ জাগ্রত। লোকে মানৎ করে। বৌদ্ধরা এখানে এসে শ্রামণ হয়। মানৎ রাখতে আসে। থাকার জন্য যাত্রীঘর আছে। বুদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা ও আশ্বিনী পূর্ণিমায় উৎসব ও মেলা হয়। আমার কয়েকটি গল্প আছে এই এলাকা নিয়ে। ্লমাতঙ্গ কবিশ্, ্লভালুকের সঙ্গে শিকারির আলাপশ্, ্লচন্দ্রমল্লিকাশ্, ্লবনের ভেতরে অদ্ভুত রেস্তোরাঁশ্ প্রভৃতি গল্প এই এলাকায় ঘটেছিল।
আমার কাছে এই এলাকা এখনো স্বপ্নে ধরা দেয়। আমি সীতা পাহাড় বেয়ে উঠছি। একদিক থেকে বন, লতাপাতা, গাছপালা ঠেলে ওঠার পর শিখরে গিয়ে দেখি অন্য ঢালটি খাড়া। নামা খুব কঠিন। ্লনির্বাসনশ্ গল্পটি বড়, তাতে এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। আমি এই এলাকায় অনেকবার এসেছি। চিৎমরম অনেকবার ঘুরেছি। ছেলেবেলায় রাত কাটিয়েছি যাত্রীশালায়। কাপ্তাই রাস্তা থেকে ওয়াগ্গা ও কাপ্তাই-এর মাঝামাঝি জায়গায় চিৎমরম। সাম্পানে নদী পেরিয়ে ওপাড়েই। কর্ণফুলীর পানি এখানে সত্যিই স্বচ্ছ, নীল। বর্ষায় ঘোলা থাকে। চন্দ্রঘোনা কাগজ কলের কস্টিক সোডার বর্জ্য জোয়ারে অল্পস্বল্প নিয়ে আসে। তা এই অনাচারের দেশে কে আর এসব অন্যায় বন্ধ করবে! সরকার, পরিবেশ মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল? ফু!
ওয়াগ্গা ঘাট বাগানের বোটে পার হলাম। চিরসবুজ ঝাড়ময় গাছ চা। স্বাভাবিক রীতিতে বাড়তে দিলে ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। কিন্ত্ত তা হতে দেওয়া হয় না। ছেঁটে, পাতা তুলে এর বৃদ্ধি রোধ করা হয় বা হয়ে যায়। একটি গোড়া থেকে অনেকগুলো ডাল বেরিয়ে বুকসমান উঁচু হতে দেওয়া হয়।
নদীর কূল বেয়ে উঠেই ওর মুখোমুখি হলাম। পাহাড়ের ঢালুতে বা থলিতে গুচ্ছ গুচ্ছ সারিবদ্ধ চা গাছ। মাথার ওপর ছায়াদার শিরীষ, কড়ই, নীল (ইন্ডিগোফেরা জাভানিকা বা ই. সুমাত্রানারা), মাঝে মাঝে মেঘ শিরীষ (আলবিজিয়া রিচার্ডিয়ানা) বাহু ও ওড়না উড়িয়ে ছায়া দিচ্ছে। তারই মাঝে এখানে-ওখানে নিচু ডাল বিস্তার করা গোলাপি ক্যাসিয়া, ইপিল ইপিল ও কৃষ্ঞচূড়া। সবার কাজ ঘ্রাণসম্রাজ্ঞীকে ছায়া ও মায়া দেওয়া। প্রবল রোদ থেকে ওকে রক্ষা করতে হয়। শিরীষ গাছকে ইংরেজিতে বলে উম্যানশ্স টাং। হলো না, হওয়া উচিত ্লমেয়েদের আঁচল বা ওড়নাশ্। শিশু গাছও আছে। চায়ের শ্রমিকেরা বলে চা গাছের ছায়াতরুরা হলো সাত বোন-কড়ই (আলবিজিয়া লেবেক), শীল কড়ই (আ. অড্রেটিসিমা), চাকুয়া কড়ই (আ. গ্যাসবলেই), চিতাইয়া কড়ই (আ. জুলিব্রিসিয়াম), চিনে কড়ই (আ. জিগিয়া), মালাকানা (ডরিস বোবাস্টা) ও শিশু (ডালবার্জিয়া শিশু)। খুব সুন্দরী এই সাত বোন। আরো আছে এখন আকাশমনি (অ্যাকেশিয়া অলিকলিফরমিস) পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চল থেকে আসা আরেক মধ্যম উচ্চতার ছায়াতরু। বর্ষায় ভারি সুগন্ধি সোনালি মঞ্জরি হয়ে ফোটে। এর অন্য নাম সোনাঝুরি। এসব গাছ ঝড় প্রতিরোধক, বাতাসের প্রবল গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আর বাতাসের দিক পরিবর্তনকারী। এদের ঝরা পাতা প্রাকৃতিক সার। সবচেয়ে বড় কথা চা-কুমারী কোমলাঙ্গী, সূর্যের প্রখর রোদ তার স্বাভাবিক চা বা উন্নতমানের চা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে, পানের জন্য যেমন দরকার বরোজ।
সমতল থেকে পাঁচশ মিটার পর্যন্ত উঁচু পাহাড়ের গায়ে চা হয়। প্রচুর বৃষ্টি চাই, কিন্ত্ত গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেভাবে পাহাড়ের গায়ে ধাপ সৃষ্টি করে শ্যামপর্ণী ওরফে চা গাছ রোয়া হয়। আর ওরা যেন স্তবকে স্তবকে সাজানো সবুজ স্তন, বিশ্রামরত হাজারো সবুজ ভেড়া। অথবা সবুজ মেঘের বিপুল অচল বিস্তার।
চা-বাগানের সৌন্দর্য মনমাতানো, পাগল করা, শিহরণ জাগানিয়া, কল্পনা উদ্রেককারী, অনুরাগ সৃষ্টিকারী, চক্ষু বিনোদক-এমন অনেক কিছু বলা যায়। বিশ্রাম সুখসেবার জন্য চায়ের ঝাড় অনন্য। ভালোবাসা করার আদর্শ নিভৃত প্রাকৃতিক পরিবেশ। কাব্য ও সংগীত রচনার আদর্শস্থল হতে পারে, চিত্রকরের জন্য লোভনীয়, ভাবুকদের জন্য স্বর্গ। ছোট পাখি ও ছোট জীবজন্ত্তর জন্য অভয়ারণ্য। অর্থকরী তো বটেই।
এই গণের ৪৫টি চিরসবুজ প্রজাতি এশিয়া মহাদেশের উষ্ঞ ও নাতিশীতোষ্ঞ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ক্যামেলিয়া চিনেনসিস কুনটজ শ্রেষ্ঠ। এটি বর্তমানে ব্যবহূত চায়ের গাছ। এর চাষ হচ্ছে সর্বত্র। এছাড়া ক্যামেলিয়া জাপোনিকা, ক্যামেলিয়া কিসি ওয়াল গাছগুলো ভারতের বিভিন্ন স্থানে ও ভারতের বাইরে জন্মে। এই দুশ্টি লাগানো হয় এবং অযত্নসম্ভূতও হয়। কোথাও কোথাও এগুলোর পাতাও চা পাতার বদলে ব্যবহূত হয়। ক্যামেলিয়া জাপোনিকা ও ক্যামেলিয়া সাসানকোয়া সৌন্দর্যবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হয়ে থাকে। ফুলের বাগানে বা বেড়ার কাজে এগুলো খুব মানানসই। আপনার বাগানে এমন একটি ঝাড় আপনাকে গর্বিত করে তুলবে। করে দেখুন।
চায়ের পাতা সংগ্রহ করা এবং তা থেকে বিভিন্ন প্রকারের চা তৈরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রত্র্কিয়া আছে। প্রচুর গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আধুনিকীকরণের চেষ্টা অব্যাহত। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে পাতা তোলা হয়। তা থেকে তৈরি হয় চার-পাঁচ রকমের চা, যেমন ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, ওলং টি, ব্রিক টি, লেটপেট টি। আমাদের দেশে ব্ল্যাক টি বেশি। তাজা চায়ের পাতায় প্রায় ২২% ট্যানিন থাকে আর তৈরি চায়ে থাকে ১২% ট্যানিন।
চা পাতা সুসিদ্ধ ফোটানো পানিতে ভিজিয়ে (তিন মিনিট) রেখে তারপর সেটিকে ছেঁকে তাতে পরিমাণমতো দুধ ও চিনি মিশিয়ে পান করা হয়। এর দ্বারা দেখা যায় চায়ের ট্যানিন অল্পমাত্রায় তৈরি জলীয় চায়ে আসে। চায়ের মধ্যে ট্যানিন যত কম আসে ততই ভালো। সে জন্য চা কখনো ফুটিয়ে খেতে নেই। আবার তৈরি চা বেশিক্ষণ রেখে অথবা বেশিক্ষণ রাখার পর আবার গরম করে খাওয়া অনুচিত। চা তৈরির সেরা উপায় হলো, চীনা মাটির পটটি প্রথমে ফুটন্ত পানিতে ধুয়ে এবং ভালো করে মুছে তাতে চার কাপ চা বানাতে হলে পাঁচ চামচ পাতা-চা দিয়ে তিন মিনিট ঢেকে রাখা। বলা হয় বাড়তি এক চামচ হলো পটের জন্য। চায়ের কাপও সেদ্ধ পানিতে ধুয়ে মুছে চা ঢালা উচিত। এভাবে দার্জিলিং
চা বানানোর নিয়ম। কোলন চা বা ব্ল্যাক টি চার কাপের জন্য পাঁচ চামচ দেওয়া চলবে না। তখন চা-পাতা দিতে হবে তিন চামচ বা দুশ্চামচ।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে চায়ের ব্যবহার শুরু। আসাম, নেপাল ও ভুটানে আরো আগে ব্যবহার শুরু হতে পারে। তবে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত চা ছিল বিশেষ করে শহুরে ভদ্র পানীয়।
১৮৩৫ সালে ইংরেজরা ভারতে চা চাষ শুরু করে। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে ্লস্ক্যানস পাইওনিয়ার টি স্টেটশ্ বাগানটি তৈরি হয় বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব ও বাঘঘোনা-লালখান বাজার এলাকার টিলা অঞ্চলে। সিলেটের মালনিছড়া চা-বাগান হয় ১৮৫৪ সালে। কাজেই 888sport appsের প্রথম চা-বাগান চট্টগ্রামে শুরু হয়। আর একটি তথ্যে জানা যায়, ১৮২৮ সালে চট্টগ্রামের কোদালা চা-বাগানের জন্য জমি লিজ নেওয়া হয়। এই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ চলছে। অচিরে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে পারব আশা করি। ততদিন পাঠিকা ও পাঠকবর্গ উপরোক্ত তথ্যে সন্ত্তষ্ট থাকুন।
চীন সম্রাট সিন নাং খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে চীনে চায়ের প্রচলন করেন। জাপানে চা যায় ৯০০ খ্রিষ্টাব্দে। ডাচ বণিকেরা ইন্দোনেশিয়ায় চা নেয় ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে। ভারতে ইংরেজদের দ্বারা আসে ১৮৩৫ সালে 888sport apps, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কে ১৮৪০ সালে ইংরেজরা চায়ের প্রচলন করে। আবার দেখা যায় ডাচ বণিকেরা ১৬১০ সালে। ইউরোপে চা নিয়ে যায় চীন থেকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও সুদূর আমেরিকায় চা জনপ্রিয়তা লাভ করে।
চা গাছ সাধারণত ১০০ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে পাতা দিতে থাকে। কোথাও কোথাও ১৫০ বছর পর্যন্ত পাতা দিতে দেখা যায়। বীজ লম্বাটে, বাইরের আবরণ খুব শক্ত।
গাছ খুব ঘনসন্নিবিষ্ট। ফলে পাতার আকার বিভিন্ন প্রকার হয়। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের, লম্বাটে, কিনারা অল্প কাটা কাটা। পাতার ভেতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ আছে, তার মধ্যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে। এর জন্য চা স্বাদযুক্ত ও সুগন্ধময়। নরম পাতায় অল্প রোঁয়া থাকে, বড় হলে থাকে না। গাছ যখন ছোট থাকে তখন এর ডগা ভেঙে দিয়ে গাছকে ঝোপাল করা হয়। গাছ বড় হলে তার থেকে কুঁড়ি পাতা বা দুশ্টি পাতা একটি কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়। সবক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না, অবস্থাভেদে ভিন্ন ব্যবস্থা হয়। ৮-১০ দিনে আবার নতুন পাতা গজায় এবং আবার পাতা সংগ্রহ করতে হয়। শীতে চা পাতা তোলা কমে যায়। প্রাক গ্রীষ্মে আবার শুরু হয়।
পাতা তোলার কাজ প্রায় সব দেশে মেয়েরা সুনিপুণভাবে করে। ওয়াগ্গা চা বাগানে নিয়মিত ৬৫ জন মহিলা শ্রমিক আছে। এছাড়া আছে অনিয়মিত মেয়ে শ্রমিক। স্থানীয় মারমা মহিলারাও এখন চা পাতা সংগ্রহ করে। হাতেই এই কাজ চলে। পিঠে ঝুড়ি বাঁধা, মাথার পাগড়িতে দড়ি দিয়ে ঝুড়ি ঝুলিয়ে চা পাতা ছিঁড়ে পেছনের ঝুড়িতে রাখার ছবি সবাই দেখেছেন। অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে। মেয়েরা কাজ গুটিয়ে নিয়ে হাঁটা দিয়েছে। দুপুরের খাবার সময়। আমরাও বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য টিলা অফিসের বাংলোয় ছুটছি। বেনেবৌ ও সোনাবৌ ডাকছে। দূরে একটা হাঁড়িচাচা ক্যাঁচ ক্যাঁচ করছে।
চা-বাগানে অনেক পাখি। বুলবুলি নিচু ছায়াদার গাছে ঝুলে পোকা বা ফুলের মধু খাচ্ছে। টুনটুনি ডাকছে ধাতব গলায় ঠাস ঠাস। শালিক, ঘুঘু, মাছরাঙা, টিয়ে তো আছেই। মাছরাঙা শুধু মাছ নয় পোকা, ব্যাঙও খায়।
আমিনুর রশীদ মোজার মধ্যে পাতলুনের প্রান্ত গুঁজে নিয়েছেন। তিন কবি শব্দ বা চিত্রকল্প বানাতে বানাতে মাথায় রুমাল দিয়ে জোরে এগিয়ে যাচ্ছেন। চা-কে ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী বলে ডেকেছি শুনে আমিনুর রশীদ খুব খুশি। উজানছড়ি ছড়া ফেলে এলাম। ১৯৬৬ সালে এখানে বনভোজন করতে এসে মোকাররম, শাহজাহান ও আমি হাতির পাল্লায় পড়েছিলাম। সঙ্গে আরো একজন ছিল। ছড়ার মুখে কর্ণফুলীতে নেমেছিলাম দুপুরের স্নান করতে। আর ছিল আমার ক্যাসেট প্লেয়ার সঙ্গী। ব্যস, ছড়ার কূলে দাঁড়িয়ে হাতির সে কী তর্জন ও গর্জন! ভয়ে আমরা সিঁটিয়ে গেলাম। কোনোমতে নদীর কূলের সঙ্গে পাহাড়ের ঢালুতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওদিকে খাড়া পাড়, এগোনো যায় না। একমাত্র চলার পথে হাতির বৃংহণ। এক মারমা পথচারী ছুটে এল আমাদের কাছে। সেও হাতির ভয়ে পালিয়ে এসেছে। বলল, ভয় নেই, হাতি আর এখানে আসবে না। কিন্ত্ত তোমরা এই ভর দুপুরে এখানে এসেছ কেন? এখানে দুপুরে ওরা স্নান করতে আসে। একটু চুপ করে থাকো। হাতিকে ক্ষেপাতে নেই। তখন আমি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র।
সেই বিপদ ও রোমাঞ্চকর 888sport sign up bonus এখনো আমাকে মুগ্ধ করে। শেষে ওপার থেকে একটা নৌকো এসে আমাদের উদ্ধার করে। সমস্ত ভয়ের অবসান হলো। এখনো এখানে হাতি আছে। আমিনুর রশীদ আগের দিন বারবার বলে দিয়েছেন এখানে এসে যেন ভুলেও হাতি, বাঘ ও জোঁকের নাম না নেই। নাম নিলেই ওরা চলে আসে।
টিলা অফিসে গিয়ে মাথার চুল মুছে নিলাম রুমাল দিয়ে। একতলা পাকা ঘর। চট্টগ্রামে বারবার ভূমিকম্পে দেয়াল কয়েক জায়গায় ফেটে গেছে। ভালোভাবেই ফেটেছে। অফিসের পেছনে ক্রমশ খাড়া হয়ে উঠেছে পাহাড়। তার ঢালুতে পেয়ারা, আম, কাঁঠাল গাছ রয়েছে। অফিসের সামনে ও নিচে নাগকেশর, কাঞ্চন, আলমেন্ডা, চীনে চেরির গাছ। হালকা বৃষ্টির চাদর ছায়াতরু ও চা গাছের মাঝখানে বৃষ্টিজালের মায়া সৃষ্টি করেছে। আহা, এমন শোভা কতদিন পরে দেখছি! পূর্বদিকে সীতা পাহাড় মেঘে 888sport app। ওখানেও মেঘের সুখসম্ভোগ শুরু হয়েছে নিরুৎপাতে। আকাশ তো পৃথিবীর স্তন, বৃষ্টি সেখানে উৎপাত একটু বেশিই করবে।
আধুনিককালে চা-কে হূদরোগ ও ক্যান্সার-বিরোধী বলা হচ্ছে। জ্বরে, তরুণ সর্দিতে, ঠান্ডা লাগলে চা উপকারী।
ইউনানী মতে চা হূদরোগ (বুক ধড়ফড়), দুঃখ ও ভ্রম নিবারণে উপকারী। মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করে বলে চা শ্রান্তিনাশক। উষ্ঞতাজনন, তারল্যজনন ও ব্যাকুলতা আনা গুণের জন্য পক্ষবধ, কাস, কৃচ্ছ্রশ্বাস, রক্তাল্পতা এবং জলোদরে উপকারী। মূত্র সৃষ্টিকারী বলে চা কামলা ও মূত্ররোধে কাজ করে। পাতা বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে গ্রন্থি ও অর্শের বেদনা দূর হয়। এছাড়া আছে পাচন, সারক, বিলয়ন, ঘর্মকারক, মিথ্যা তৃষ্ঞানিগ্রহণ গুণাবলি। ক্লান্তি ও চিন্তাকে দূর করে। চা অনিদ্রা ও রুক্ষতা উৎপন্ন করে এবং তা নিবারণের জন্য দুধ ও চিনি দ্বারা সেবন বিধেয়।
চীন, জাপান ও মিয়ানমারে চা পাতা ভিজিয়ে দুধ-চিনি ছাড়া কাপের পর কাপ চা সারাদিন পান চলে। এতে পেটে অ্যাসিড হওয়া দূর হয়। তাদের মতে চা ওষুধ। বলকারক, শ্রান্তি নিবারক, উত্তেজক, ঘুমনাশক। আমাদের দেশে কবিরাজি মতে চা ক্লান্তিতে, রাক্ষুসে খিদেয়, তরুণ সর্দিতে, গলা বসায়, ঢুলুনি রোগে, শ্লেষ্মার প্রকোপে, চোখ ওঠায়, চুল ওঠায় খুব উপকারী। অম্বলের ধাত থাকলে চায়ে চিনি নিষিদ্ধ। আমিনুর রশীদ চা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে বললেন, আর লিখে লোকদের জানাতে। বৃষ্টিও থেমেছে। চাই তোয়াই অং ওর বাড়ি থেকে এক বোতল পানীয় এনে দিল। ওদের ঘরে বানানো। চমৎকার সুঘ্রাণ ও স্বাদ। আবার এলে ওর বাড়িতে যাব বললাম। ওখানে থাকব কয়েকটি দিন। আমার 888sport alternative linkের ভাবনা চলছে ওই অঞ্চল নিয়ে।
চীনের তাং কবি লোটাং লিখেছেন, ্লপ্রথম কাপ (দুধ-চিনি ছাড়া) আমার ঠোঁট ও গলা ভেজায়, দ্বিতীয় কাপ আমার একাকিত্ব দূর করে, তৃতীয় কাপ নীরস অন্ত্রের খোঁজ করে এবং দেখে যে সেখানে অদ্ভুত ভাবনির্দেশক পাঁচ হাজার প্রস্থ বই, চতুর্থ কাপ আমাকে ঘর্মাক্ত করে আর তাতে শরীরের সব দূষিত বস্তু রোমকূপ দিয়ে বেরিয়ে আসে, পঞ্চম কাপে আমি পবিত্র হই, ষষ্ঠ কাপ আমাকে অমরত্বে নিয়ে যায়। সপ্তম কাপ-আহা, কিন্ত্ত আমি আর পারি না, আমি শুধু ঠান্ডা বাতাসের শ্বাস অনুভব করি যা আমার জামার ভেতর দিয়ে উঠে আসে। হোরাইজান (এষক্ষতভড়তশ) কোথায়? আমাকে মধুর সমীরণের ওপর চড়তে দাও আর হাওয়া ও পানির ওপর দিয়ে ভাসতে দাও।শ্
এর কাছাকাছি অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল টোকিও শহরের ওফুকাই মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে চা-উৎসবে চা-সুন্দরীদের দেওয়া চা পান করে। সে অন্য কাহিনী। আশ্চর্য এক স্বপ্ন বললে বেশি বলা হবে না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.